Sunday, September 24, 2023

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা
.
বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷
আর কথা আসে না!
শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো
বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা।
তবু দেখি যন্ত্রণা...
যদি কোনো হস্তরেখাবিদ-
বলে দিত সত্য।
আমি ব্যোমকেশ হয়ে
খুঁজে নিতাম মৃত্যু।
প্রেমিকের দেওয়া লাল ওড়না
যার বিঁধেছে গলায়,
ছিড়ে গেছে যার শ্বাসনালী,
তাকে বলে দিতাম সত্য।
হয়তো, হাতের রেখায় মিলে যেত শব্দ।
মা-র দাঁতে ছিড়ে দেওয়া লাল সুতোয়
বুনেছি যে রুমাল-
তাতে মুছে নিতাম রক্ত দাগ, আর
উড়িয়ে দিতাম আদরে।
মেঘের পিঠে চাবুক পিটিয়ে
প্রার্থনা পৌঁছে যেত ঈশ্বরের ঘরে।
 
                                            

Tuesday, September 19, 2023

বিনয় শীল

চন্দ্রযান-৩

২০২৩-এর
মধ্যিখানে।
১৪ই জুলাই
আকাশ পানে।

এ ভারতের 
গৌরব গাঁথা
চন্দ্রযানের 
গমন কথা।

২৩শে আগস্ট 
সন্ধ্যা ছয়।
বিক্রম' করল 
চন্দ্র জয়।

যাচাই করবে
চাঁদের মাটি।
আরো যত 
খুঁটিনাটি।

বেজায় খুশি 
ভারত মিত্র।
শত্রু বলছে- 
গ্রাফিক্স চিত্র।

যে যা ভাবুক, 
সত্য অটুট্।
ভারত মাথে 
চন্দ্র মুকুট।

ভারত মেধা*
সফল, পূর্ণ।
অহংকারীর 
দর্প চূর্ণ।

বিশ্বটিকে 
অবাক করে। 
ভারত 'প্রজ্ঞান'
চাঁদের ঘরে।

ভারত গলায় 
বিজয়মালা।
এতেই কারোর
গাত্র জ্বালা।

ধন্য মোদের 
'ইসরো'
ভারত মাতার 
জয় হো।

Saturday, September 2, 2023

সুমন কান্তি সাহা

শৈশব


সুমন কান্তি সাহা


একদিন মনে হয় সেই শৈশবকালে চলে যাই!
.
শৈশবই আনন্দের।
এ নিষ্ঠুর সমাজে কিছুই পাই না
সে যেন বুঝেই না পৃথিবী কি দিতে চলেছে তাকে।
.
পিতামাতার কাছ থেকেই শিখে
জগত দেখা
.
হুট করে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে সে শৈশবে।
আনন্দ আর আদর পেতে ইচ্ছা করে বড়।
.
শিশু দেখলেই অনুভূতি জেগে উঠে আজ। 
তখন মনে হয় চলে যাই সে অবুঝের দুনিয়ায়।
যেখানে থাকবে না, লোভ ভয়, হিংসা।
র'বে শুধুই ভালোবাসা আর স্নেহ।

উর্মি সাহা

অবিশ্বাস্য

আমি মৃত্যুর মুখোমুখি বসে
কথা শুনেছি এক সজোর যাত্রার।
ভরা বাজারে নারীর মুখে, সুখের বদলে-
দেখেছি পূর্নগ্রাস সূর্যগ্রহণ।
দেখেছি শরীরের ভেজা চোখ,
রোমকূপের লাল রেণু,
আর টিপ পড়া গোলাপি মুখ।
বেলা ফুরিয়ে গেলে-
ফকির বেশে মায়া আসে
পাশে বসে, কথা বলে-
দেখে যায় আমার লাল কালো মুখ।
আমার পাথর শরীর ভেঙে ফেলে,
মূর্তি গড়ে, নিয়ে যায়।
ঠিক হয় দিনক্ষণ-
শুরু হয় নবজন্ম।
অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য! অবিশ্বাস্য!
আবারও এক নতুন জন্ম-
শুরু হয় ভাঙ্গা গড়ার কাজ;
মুক আর বধিরের মত আমি আবার দেখি-
ডাক দেই নতুবা জড়িয়ে ধরি!
                                       

Thursday, June 29, 2023

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

কবিতার গোপনকথা সংসাররূপ জলাশয়ে মেশা এক ক্ষরস্রোতা নদী। চোরাবালির মতো প্রতিটি লাইন। কোথায় কে কতটুকু ডুবতে পারে, তা নির্ভর করছে ওজনের উপর। আমি উপরেই হেঁটে আসি হালকা বলে। বিনম্র বলছি এ সংখ্যাটি অতি স্বল্প এবং কিছু সংখ্যক নতুনমুখ। মার্জনাপূর্বক পাঠের আমন্ত্রণ জানাই। সারা রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকার বাছাইকৃত তরুণ প্রজন্মের কবি। স্কুল পড়ুয়া প্রতিভা প্রকাশের এক অনু উদ্যোগ রয়েছে এতে। যারা লিখেছেন, তাঁরা আরও লিখবেন আজীবন লিখবেন - এ আশাটুকু বুকে রাখি। সবাইকে কৃতজ্ঞতা। প্রণতি।

শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত 


মনন স্রোত - জুন - ২০২৩

দেবজিৎ সাহা

পিতৃশোক

ক'দিন আগে দাদু মারা গেলেন। মৃত্যুর আগের রাতেও কত কথা বললেন। এ দুঃখ সামলানোর ভেতরই আমার বাবা অসুস্থ। শুনলাম বাবার অষ্ট্রেলিয়ান জণ্ডিশ। বাইরে কোথাও নিয়ে চিকিৎসা করালো সকলে, বাবা কোনোভাবেই সুস্থ হয়নি।  পরবর্তী সময়ে আমাদের রাজ্যের ডাক্তারদের অধীনে বাবার চিকিৎসা চলতে থাকে। একমাস বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি রাখা হলো। আমার বয়স তখন খুবই কম। কোনোকিছুই বুঝছি না। তখন শুধু এতটুকু বুঝেছিলাম বাবার খারাপ একটি অসুখ করেছে, তবে সবাই বলছে সুস্থ হয়ে যাবে। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর, একদিন সকাল নয়টায় আমার দিদা হাসপাতাল থেকে কাঁদতে কাঁদতে ফোন করলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম বাবা সুস্থ আছে কি না! দিদা বললেন সুস্থ আছেন। বাবা ঠিক আছেন। তবু দিদা কাঁদছেন। কেন কাঁদছেন তখন বুঝতে পারছিলাম না। তার কিছুক্ষণ পর আমাদের বাড়ির সামনের রাস্তাটি থেকে কিছু আওয়াজ আসছে। আমি দৌঁড়ে গিয়ে দেখি সবাই আমার বাবাকে শুইয়ে সবাই আগলে ধরে আনছে। আমি তখন বুঝেছি বাবা আমাকে ছেড়ে চলে গেছেন। আমার মা কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেছেন। সেদিন থেকে এক অন্য জীবন হয়ে গেছে আমার। যে জীবনে বাবা নেই।  

অমিত রুদ্র পাল

বৃষ্টি

তুমি কি আমার বৃষ্টি হবে
আমার শুষ্ক
অপতিত বুকে
অবিশ্রান্ত ধারা হবে?
 
তুমি অবশ্য চাইলে 
ঝরণা হতে পারো,
ভোরের কলরবে
মধুর কলতানে 
ঘর ফেরার পাখি 
হতে পারো।

জয়িতা দে


মা

'মা' শব্দটি ছোট্ট হলেও ব্যাপকতায় বিশাল।
দশমাস দশদিন গর্ভধারণের শক্তি তুমি,
তোমার স্নেহরসসিক্ত সুধাপানে লালিত হ‌ই মোরা।
মাগো, তোমার জন্য জীবনের প্রতিটা দিন অমূল্য;
তোমার শাসনে যেমন ভালোবাসার পরশ পাই,
তেমনি সারাজীবন পাশে থেকে শক্তি জোগাও তুমি।
সংসারের সকল কাজের পরেও পাও শুধুই লাঞ্ছনা;
বুঝে না তোমায় কেউ - তুমি যে ত্যাগের প্রতিমূর্তি।
তুমিই পথচলার শুরু, মোদের প্রথম শিক্ষাগুরু,
তুমিও যে ধরিত্রীমায়ের ন্যায় স্নিগ্ধ আর সহনশীলা;
হয়তো তোমার নামের অনেক প্রতিশব্দ রয়েছে-
কিন্তু,'মা' এই ছোট্ট শব্দটিতেই মাথা ঝুঁকাই সর্বদা।

      ‌‌              

সায়ন পাল

মুক্ততা

মনের গহীনে অস্পষ্ট মুখের আভা,
পরিচিত তবে খানিকটা পুরোনো।
সেই কবে দুরন্ত বিকেলে উড়ন্ত আঁচল,
শেষ চিহ্ন রেখে গিয়েছিল তারপর কি রেখেছে খোঁজ কখনো!
না, মনের অতল হতে কোন অতীত ভেসে আসে না।
বাস্তবতার মোড়ক অতীতের উপর ঢাকনা ফেলেছে,
মুছে নিয়েছে চোখের জল।
তবুও মিলনমুখি বসন্তের সমীরণে,
বাতাসে উদাসীনতার গন্ধ আসে।
কিন্তু ওই যে বললাম বাস্তবতা,
ভয়ংকরী রূপে যেন তাকে দূরে ঠেলে দেয়।
বিষাদের বিষে অমৃত ভাব আনে।
একলা মন আর ওই নীলাভ আকাশ মুখোমুখি,
শত পক্ষী উড়ে গেলেও একাকীত্বে ডুবে আছে ওই আকাশ,
তবুও বিষাদ নেই আছে মুক্ততার আশ্বাস।

সৈকত মজুমদার

দয়া চাই না

এখন আমার মনে হচ্ছে
চলাফেরা করতে পারি না বলে
আমি হুইল চেয়ার এ বসা বলে
ভালোবাসার নামে তুমি
আমায় দয়া করেছ এতদিন!

কারো দয়া চাইনি, 
আজীবন ভালোবাসা চেয়েছি 
আর আমি উপেক্ষা পেয়েছি!

নন্দিতা দাস চৌধুরী

অন্তহীন ছায়া
.

শ্রাবণ  ঘেঁষা সহজিয়া ভালোবাসা পেলে মরা নদীও প্রবাহিনী,
শুরুটা অবারিত  মুক্ত মাঠ , 
শেষটা প্রশান্তির  কুলায় ফেরা হলেও প্রথম যৌবনের  রাত প্রেমের অলিখিত  তরঙ্গ, 
অকাল  কালবৈশাখী, 
একরাশ  মুগ্ধতার  গোধূলি সিঁথি ভরে অনুরাগ কুমকুম , 
সবুজ  আঁচলে আগলে রাখা অনাবিল  স্নিগ্ধ বিনম্র  বৈধটুকু,
অদৃষ্টের কালবৈশাখী  ক্ষণিকেই দুমড়ে মুচড়ে পায়ের অক্ষর মুছে দেয়,
মুঠো ভরা পৃথিবী মুহূর্তেই  নৈঃশব্দের  অন্তহীন  মূর্তিমান ছায়া।

শ্রীমান দাস

রিজার্ভেশন চিত্র

এ আমাদের রিজার্ভেশন
এ আমাদের 'হীরা'
এর উপরেই টপকে চলে
হাঁটা দোকানীরা ।

একের ভেতর চারের বুলি
বিজ্ঞাপণের ঢেউ,
বুলির খুলি ঘেঁটে ঘুঁটে
সার পায়নি কেউ ।

তৎকাল'র পেটে ব্যথা
এ,সি'র ভীষণ জ্বর,
জেনারেলেই লুটে আছে
রিজার্ভেশন দর।

যাত্রী নাছোড় ধর্মঘটী
ওয়াশরুমের গেটে ,
রিজার্ভেশন মানে খোঁজে
চিপছে যে তলপেটে।

বুলি ঝাড়া চুড়ামণি
দেখো নয়ন মেলে
তোমার লৌহশকট কেমন
চলছে হেলে দুলে।

অমিত কুমার নাথ

রুদ্র আর নেই
.
রুদ্র শুধু ভালোবেসেছিল আকাশ সমুদ্র এক করে,
তবে কাকে, 
সে কোন ঝিনুক নয়,
লবনাক্ত জলের সাথে তার প্রেমের সখ্যতা গড়ে উঠেনি কখনো,
নিজকে নিজে জিজ্ঞেস করলে আজ আর কোন উত্তর আসেনা প্রান্ত থেকে।
সে আবেশ কেটে গেছে, ভরে গেছে কাঁটা ঝোপঝাড়ে,
রুদ্র বেদুইন হয়ে ঘুরছে অনির্দিষ্ট ভবিষ্যতের দিকে,
মিথ্যে এই জীবনের সংলাপ বয়ে আনে মরুঝড়।
ভালো আছে তারাই যারা কফিনে রঙ মাখতো,
এতোবার উল্টেপাল্টে ঠিকুজি যাচাই সবই মিথ্যে
হাতের আঁকিবুঁকি আঁকা আর জীবনের বেনামি গলিপথ সম্পূর্ণ ভিন্ন, 
আজ রুদ্রের কোন আকাশ নেই, নেই কোন সমুদ্র 
শুধু আছে একটা পাহাড়...
একটা নাম কতটুকু আর নিজের অস্তিত্ব ধরে রাখতে পারে,
সে তো কোপারনিকাস নয়, নয় সে কলম্বাস
সব আবিষ্কার মিথ্যে করে রুদ্র জেগে থাকবে
এক বেনামি ইতিহাস হয়ে...

মাধুরী সরকার

তুমি আমি মিলে

আমার এলো চুলের ভাঁজে সেদিন 
তুমি উপলব্ধি করেছো এ প্রেম মোহের নয়,
এ প্রেম আবেগের।
আমার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিলে একটু একটু করে,
অনন্তের পথে ভাবিকালের অঙ্গীকারে। 

অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আমরা
অতিক্রম করে এসেছি অনেকটা পথ,
এভাবেই হেঁটে যেতে পারবো অন্তিম পা অব্দি 
এ আমার দৃঢ় বিশ্বাস। 

সেদিনের সূর্যোদয়ে সবুজঘাসে শিশিরের ছোঁয়া জানে
বিন্দু বিন্দু করে কতটা সোহাগ ঢেলেছে 
আমাদের নির্জন সবুজ গালিচায়।

এ পথ পাড়ি দিতে চাই তুমি আমি মিলে
 জীবনের অন্তিম মুহুর্ত পর্যন্ত। 

এ শুধু কথার কথা নয়,
এ প্রেমে একদিন রচিত হবে প্রেমের মহাকাব্য।

প্রতীচি ভৌমিক

আমার বর্ষা প্রেমে অপ্রেমে

আমার বর্ষা আসে কবিতায় গানে
বৃষ্টির ধারায় নামে প্লাবন--কবিতায় বন্যা 
বিরহী বিষম জ্বালায় মিলন মধু প্রাণে।

বর্ষার মেঘের ঘোরতর স্পর্ধা-- লুকায় সূর্য।
তোমার আধা ঢাকা মুখ 
এক ফালি হাসি মিলায়  পুবাকাশে--
অন্ধকারে হারাও তুমি অন্তস্থলে জেগে।
শুধু তোমার গায়ের গন্ধ আসে চাঁপার তীব্র সুবাসে।

বর্ষা মানে কদম ফুল তোমারই জন্য।
বর্ষা মানেই হঠাৎ ছোটবেলা,,,,
ঘরের ভেতর থেকে আকাশ দেখা 
চাঁদনী রাতের অবসান,
ঘরের মেঝেয় পাতা কলস
স্থান চ্যুতির ভয়, কিছু ব্যথা কিছু ভালোবাসা,
কিছু বা আধভেজা রাত।

বর্ষা মানেই চিতায় ঘৃতাহুতি, সোদামাটির গন্ধ 
আর জুম  পাহাড়ে মাদল,,,,,
ঘন ঘোর বাদল,,,,,

বর্ষা মানেই ঘুঙুরু পায়ে অবিরাম নৃত্য-- দুরন্ত বালিকা
বর্ষা মানেই প্রকৃতির মিলন বেলা।
জল থই থই পানা পুকুর, ব্যাঙের কনসার্ট, জোনাকি জ্বলা রাত।

বর্ষা মানে, ডিজে লাকড়ির ঘন ধোঁয়ার ঢল
মায়ের চোখে জল।
বর্ষা মানে একটি কচি মুখ ক্যানভাসে আঁকা
জামার ভেতর পুঁথিপত্র মাথায় কচুর পাতা।

ভাবতে বসে হঠাৎ প্রচন্ড ঝড়ে দমকা হাওয়ায় দরজা খুলে গেলে----- 
বর্ষা মানে উপচে পড়া জল নিয়নের বাতি,
এক ফালি আকাশ,ভেজা দাঁড় কাক দু চারটি 
আর ছোট্ট  একটি ব্যালকনি।
     
           

শুভ্রা দেব

বিদ্যাজ্যোতি
            
বাবা ডাকের দিন যে গেছে
বাংলা তাই ব্যাকডেটেড,
মাম্মী ডেডির যুগ পড়েছে
ইংরেজি হচ্ছে আপ টু ডেট।

যেমন তেমন করে ভাই 
অ, আ , ক , খ -র দিন পেরোয়,
মুখে ইংরেজি নামের বড়াই
অষ্টমেও দেখি খুশি বেজায় !

আগাছা ছাটাই বন্ধ তাই
শিক্ষা দীক্ষা লাফিয়ে বেড়ায়,
শাসন বারণের চিন্তা নাই
শ্রদ্ধাভক্তি আজ চুলোয় যায়  ।

করোনাকালীন ঘোর সূচনায়
ক্লাস চলে মুঠো পথে,
অনলাইন ক্লাসের নয়া জমানায়
ছাত্র শিক্ষক যে যার পথে।

বনেদীয়ানা হাওয়া লেগে 
বঙ্গ লেখতে অঙ্গ ফাটে ,
মধ্যবৃত্ত চলছে বেগে
বিদ্যাজ্যোতির তকমা এঁটে।

মৌসুমী রায়

রাধারাণী

অন্ধকারে ছাদের উপর
জোনাকিদের লুকোচুরি দেখতে দেখতে
ঝুপ্পুস করে বৃষ্টি এলো
ছুট্টে নীচে নেমেই তন্ন তন্ন করে খুঁজলাম
বৃষ্টি নামার আগে সোহাগি ঝড়টা,
কোথায় যে হারালো? 
জানালার গরাদে মাথা রেখে মনে পড়ছে
কত সাধ ছিলো "রাধারাণী " হব
তোর দেওয়া তুলসীমালা গলায়
গ্রামের মাঠে জলে কাদায় বনবাদাড়ে
তোর পিছু পিছু যাব।
তুই আঁচল আমার ভরে দিবি
বেগুনী কচুরিপানা ফুলে
আমিও তোকে আড়াল দেবো,
আমার কোলে ক্লান্ত হয়ে শুলে।
বাজের আওয়াজ স্বপ্ন ভাঙ্গায়
কবেই দু'জন ছিটকে গেছি
তুই আমায় গেছিস কবেই ভুলে।

হরিনারায়ন সেনগুপ্ত

দেবতা করোনা আমায়

তোমাদের মহানুভবতার কাছে,
বিনম্র মিনতি আমার– 
মহিমা চন্দন লেপে , পুষ্পার্ঘ্য দিয়ে,
এই অকিঞ্চন সত্ত্বা স্বরূপে
দেবত্ব করো না আরোপ।
ঢাক ঢোল কাঁসর ঘন্টা এত,
এত সম্মিলিত উচ্চকিত ধ্বনি–
কোন কোন দেবতার ,
তবুও সহজে ভাঙ্গে না ঘুম।
দেবত্বের কি অদ্ভুত বিড়ম্বনা–
দীর্ঘকাল ঘুমিয়েই কাটায়।
মানুষ ধূপ পোড়ায় , ঘি জ্বালায়,
নিত্য নতুন কামনা বাসনায়–
করে রাশি রাশি কুসুম চয়ন।
কোরকের অকাল মৃত্যু হয়–
ব্যথা পায় মূর্ছা যায় ফুলেদের মা।
ঘরে ঘরে সন্তানহারা জননীর
হাহাকার শোনা যায়,
ওঠে শুধু ক্রন্দনরোল ;
দেবতারা তবু থাকে
নিস্পৃহ নির্লিপ্ত নির্বিকার।
এখন দুঃখ যন্ত্রনায় সদা কাতর
একজন দরদী মানুষ
তার চে' বহু প্রার্থিত আমার।

সুস্মিতা মহাজন

খেয়ালিপোলাও 

আলোর কাছাকাছি যেতে অনেকটা পথ বাকি,
কঠিন আঁকাবাঁকা পথ।
হারিয়ে যাওয়া প্রতিনিয়ত,
ভয় পেরিয়ে এককদম এগিয়ে। 
সহজ অধ্যায় ছেড়ে কঠোর পাঠ,
একটা পুরো বই ছাপিয়ে যাবে শেষ।
গল্পটা নিতান্তই অজানা, 
অজস্র নতুনত্বের ছোঁয়া গায়ে।
হাসতে গিয়ে নয়ন ঝরে ঝর্ণার, 
সমুদ্রে ঠিকানাহীন তার উপসংহার। 
চলতি পথে হোঁচট খেয়ে স্বপ্ন ভাঙ্গে, 
বাস্তবতায় অলীক কিছু খেয়ালিপোলাও।

চন্দন পাল

কবুলনামা

শুনেছি,
প্রীত, প্রীতমের চোখ পড়তে পারে।
পারে নারী, পুরুষেরও।
কবিতা, তুইও কি পারিস?
কখনো যদি, সামনে এসে দাঁড়াস পড়ে নিবি কি তুই! 
আমার চোখের সব আ-কথা কু-কথা?
মুখ ফোটে বলিনি যা সঙ্গীকে, তাও বুঝে যাবি?

ধুৎ তবে, সব মিছে! সব মিছে!
আমার কচুর বুদ্ধিও নেই, কখনো চোখ পড়িনি। 
যে কথাগুলো পাতায় পাতায় ফেলে এসেছি। 
সব ভুল, 
শিরোনাম ধরে ধরে তুই তুলে ধরিস না।
বিনীতই বলছি,  ব্রীড়ায় মরে যাবো---!
সত্যি । তারচে' তুই বরং ---  দূরেই থাক। 
আমি কল্পনায় বাকি বসন্ত ক'টা, চাপহীন এঁকে যাই ।

তাপস শীল

সন্তানের জন্য 


অতুল'দা  বিয়ের মাসখানেক পর সিগারেট টানতে গিয়ে বৌয়ের কাছে ধরা পরে, যদিও অভ্যাসটা অনেক আগের ছিল কিন্তু এবার হাতে -নাতে। সিগারেট নিয়ে  অতুল'দার বৌ তাঁর উপর  দু'তিন দিন ধরে মনমালিন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অতুল'দার  মা - বাবা ও অতুল'দাকে সিগারেট টানা নিয়ে  বকাবকি করলে অতুল'দা  স্পষ্ট জানিয়ে দেন তিনি সিগারেট ছাড়তে পারবে না।

বিয়ের  বছর চারেক পর অতুল'দা অফিস থেকে আসার পর তার মেয়ে ফুচকি কে যখন কোলে নিয়ে আদর করে ঠিক তখন ফুচকি বলে বাবা তোমার মুখে সিগারেটের গন্ধ।  এই গন্ধটা আমার একদম ভালো লাগে না বাবা। তখন অতুল'দার হৃদয় মায়াবী হয়ে মেয়েকে কোল থেকে নামিয়ে সিগারেটের প্যাকেট টা হাতে নিয়ে  বাইরে ডাস্টবিন্টে ফেলে দেয় এবং মনে মনে বলে  যে অভ্যাসটা আমার মা-বাবা,এমনকি তোর মা পর্যন্ত শত চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারেনি আজ তোর এক কথায় চিরোদিনের জন্য সিগারেট ছেড়ে দিলাম ফুচকি।

রুপন সূত্রধর

পরমহংস

পরমহংস নমঃ নমঃ
তব আলোকে 
আলোকিত জগৎ। 

তব আগমন ধরা বুকে
নতুন দিশায়
ধর্মের আলোঘর। 

প্রান বাঁচে,নয়ন জুড়ায় 
তব ছবিপটে
আলোক জীবন।

সরল কথা, জীবন সুধায়
ভুবন মোহিত 
জগৎ সংসার।

ধর্মের বিস্তার, সারথি বিবেক,
জয়গান রচিত
কলির অবতারে।

অভীককুমার দে

জীবনের জন্য 

আমার কোনও গন্তব্য নেই
কেবল আছে অভিমুখ, 

মাটি থেকে পা 
উপরে ওঠানোর জন্য
সঞ্চয় করি একাগ্রতা;

এক পা শূন্যে উঠে এলে
অপর পায়ের কাছে জীবনের বিশ্বাস 
শ্বাসটুকু চেয়ে নিই শূন্য থেকে।

পা যদি পুনরায় নেমে আসে
অন্তহীন পথের পথিক আমি,

যেতে চাই প্রকৃতির কাছে।

Wednesday, May 31, 2023

স্বাগতম!

সম্পাদকীয়

কবিতার পথ গম্ভীর, বাবার মতো। কবিতা প্রেমিকার মতো অভিমানী। মায়ের মতো সরল। এ ত্রিভূজের ভেতর যে সাহিত্যসাধনা, তাদের ভেতর যারা কবি, তাঁদের এ বৈরাগ্যকে সতত নমস্কার।

এ সংখ্যাটি এ কথাই বলছে। যারা লিখেছেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা। সংখ্যা সীমাবদ্ধতার জন্য, যাদের লেখা আমরা নিতে পারিনি তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ও আগামীর জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

বিনম্ন
জয় দেবনাথ
সম্পাদক, মনন স্রোত

মনন স্রোত - মে ২০২৩

রুপন সূত্রধর

কালবৈশাখী

বৃষ্টির সৃষ্টি ধুলো রথে ছুটিয়েছে ঘোড়া 
কালবৈশাখী পাথর বরফ গোলায়।
গরমে হাঁসফাঁস জীবন শান্তির 
মুষলধারা খোঁজে ক্ষণে ক্ষণে। 
মেঘেরা হেসে হেসে উড়ে যায় 
মুষলধারে ঝরার নাটক করে। 
অগোছালো করে যায় জীবন
পৃথিবীর মহারণে বজ্রবিদ্যুৎ বাণে।
তবুও কালবৈশাখীর আহবান
মানববন্ধনে হৃদয়ের টানে।  
মেঘ আর পৃথিবীর চিরপ্রেম 
বৃষ্টি বহন করে আজীবন ভরে। 
পৃথিবীর কৃএিম আলো বাহার ক্ষনিক 
 আদিম অন্ধকারে,হারিকেন জ্বলে, 
কালবৈশাখী মায়াবী রাতে।
                        

দুলাল চক্রবর্তী

প্রকৃত ভালোবাসা 

ভালোবাসা দিবস বলে কিছু
নির্দিষ্ট দিন প্রয়োজন নাই,
মনের টানে প্রাণের আবেগেই
চিরদিন ভালোবেসে যাই।

মন প্রাণ যখন কাছাকাছি আসে
নীরেট আংটির মত সে ভালোবাসা,
মন প্রাণ সঁপে সঙ্গী হিসেবে
চিরকাল যেন পাবার আশা।

প্রকৃত ভালোবাসা বড় দুর্লভ বস্তু
ওকে খুঁজে নিতে হয় মনে প্রানে,
সেতো গালা ভর্তি সোনার বালা নয়
শুধু সহানুভূতি আর করুনা জানে।

কোন দাম দিয়ে কেনা তো যায় না
বাজারের কোন পণ্য নয়,
হৃদয়ে জাগে যদি ভালোবাসা
সেটা বজ্র কঠিন হয়।

ভালোবাসার মাঝে যে সম্পর্ক
পাশাপাশি চিরজীবন থাকা,
অটুট বন্ধনে জড়িয়ে থেকে
আজীবন মনে বেঁধে রাখা।

অগ্রদীপ দত্ত

সত্যের অন্বেষন

এত কাল যাহাকে খুঁজি,
 সে আজ ডুব দিয়াছে নিশিথের আঁধারে,
 আর ধূসর বনের মিথ্যার পাহাড়ে,
 নেই কোনো বাস্তব সত্য প্রান প্রাণীর স্পন্দন আর আস্বাদন,
 তবুও অন্বেষন লাঠি হাতে চড়াই ভুলে ভরা পাহাড়ে।

 চারিদিকে মিথ্যা যেন ঘর বুনেছে,
 আমারে ডাকে তাহারা অতিথ্য গ্রহনে,
বশ করিতে জানে আপন সাজিয়ে৷
কাহারে খুঁজি কে জানে,
  বলা যায় সত্যের স্বাদ অন্বেষনে৷



রাহুল শীল


দৃশ্য
       
বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে দেখে যে কাঁদবে সে একজন শিশু,
একই দৃশ্য দেখে যে কবিতা লিখবে সে একজন কবি,
আর যে মিথুনের বাসনা করবে সে একজন প্রজননক্ষম পুরুষ‌।

এই তিনজনের মধ্যে আমি ও তুমি এক একটি পর্যায়,
আর তিনটি মুহূর্ত পরিচালনায় আছে একজন করে অদৃশ্য নারী।

সৌরভ দেবনাথ

তোমার আমি

চারিদিকে কত বাধা 
আমার আর তোমার মাঝে 
কবে যে তোমাকে পাবো
বাঁধাহীন ভাবে আমার কাছে 
হয়তো মাঝে মাঝে আমাদের 
লেগে থাকে ঝিজড়া 
দিন শেষে আবার পারিনা 
একজন আরেকজন কে ছাড়া
আমি চিরকাল যেতে চাই 
তোমার পাশে থেকে 
সারাজীবন কাটাবো একসাথে 
তোমার হাতে হাত রেখে 
তোমার মনের খুশিতে 
ফুটে উঠে আমার মুখের হাসি 
আমার মন বলে শুধু 
তোমায় ভালোবাসি, তোমায় ভালোবাসি

বিশ্বজিৎ মানিক

এখানেও খুব অন্ধকার
       

আমি আমার হাতে কবিতাগুলি লিখছি
নির্জন একাকী একটা ঘরের ভেতর থেকে ৷

ঘরের ভেতরে খুব অন্ধকার ,
তাই অস্পষ্ট কবিতার লেখাগুলি ক্ষমা করবেন ৷

কিন্তু এই মধ্য অহে ঘরের বাইরে
আমি খুব ভীত আলোর কাছে যেতে ৷
তবুও আমি আমার চোখ খুললাম,
ঘরের বাইরে তাকালাম আলোর দিকে ৷
আমার চোখ আলোর পথ অনুসরণ করল ৷
আমি সাবধানে পা ফেললাম ঘরের বাইরে
কখনো আস্তে কখনো তাড়িয়ে হাঁটতে চাইছি
যা কিছু দেখলাম যা কিছু শুনলাম তা সব নিয়ে৷ 
,
কিন্তু আমি আমার হাতের উপর দাঁড়াতে পারছি না ৷

আমি তুমি ও সে-র মধ্যে,
আমি শুধু আগের আমি নেই বুঝেছি
মনের ভেতর ভয় ঢোকার পর থেকে ৷

তাই আমি দেখছি এখানেও খুব অন্ধকার ৷

সপ্তশ্রী কর্মকার

বারুদ
 

ছাদে যখন মাছি দেখি,
বুঝি, প্রেমিকের ঘাম মাখা শার্টটা ঝুলে আছে!
অথচ শহরের বিকেল জুড়ে শুধুই বসন্ত ,
তখন বেলী ফুল খোপায় জড়িয়ে প্রেমিককে বুকে আগলে নিই,

 তার আদর মাখা ভাবনাগুলো বারুদে মিশে গিয়ে ...
 সন্ধ্যার স্নানঘরে ঠেলে দেয় আমায়, 

আর চৈত্রে পুড়ে খাক হওয়া কাব্যকে গান করে তোলে সে।

গৌতম মজুমদার

ঘুম বিক্রি

গভীর নিদ্রায় নিদ্রিত সবাই
চোখে মুখে থাকে ক্লান্তি,
সুখ দুখ ভূলে শিয়রে দাড়ায়ে
সারা রাত জাগে শান্তি।

সারা দেশময় ঘুমাতো সবাই
তেল দিয়ে নাকে কানে,
ভোর হলে সবার ঘুম ভেঙ্গে যেতো
পাখিদের কলতানে।

অশান্তি ভাবিল -- "মানুষের থেকে
যদি পারি ঘুম কিনতে,
সারাটি জীবন কেটে যাবে মোর
থাকবেনা আর চিন্তে।"

অশান্তি আসিল ঘুম কিনিতে
কাড়ি কাড়ি টাকা লয়ে,
ব্যবসা তাহার জমিয়া উঠিল
মানুষেরে বলে কয়ে।

মনুষ্য জাতি বড়ই যে লোভী
অশান্তির আছে জানা,
অর্থের মোহে ঘুম বিক্রিতে
করেনিকো কেউ মানা।

শান্তি কহিল-- "ওহে মনুষ্য,
রাত দিন জাগি আমি,
আমাকে তাড়াইয়া অশান্তি আজ
তোমাদের কাছেই দামী?"

চোখে জল ফেলে শান্তি যে গেল
অশান্তি আসিল দেশে,
হঠাৎ রক্তে রাঙিয়া উঠিল
অশান্তির খুন সন্ত্রাসে।

চোখের ঘুম সবাই বিক্রি করিয়া
জেগে থাকে দিনে রাতে,
কখন যে কার মুন্ডটা যাবে
অশান্তির কালো হাতে।

চোখে নেই ঘুম আজ আর কারো
চোখ খোলা রাখে সবে,
অশান্তির আগুন দাবানলের মতো
জ্বলে উঠে কখন কবে ?

রিয়া রায়

বিষাক্ততা সর্বত্র

Toxic মানে বিষাক্ত 
আমাদের সমাজ এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে খুব সহজেই কাউকে toxic বলে দেওয়া যায়। খুব সহজেই কোনো সম্পকর্কে বিষাক্ত বলে দেওয়া যায়। আর অনাহেসেই কারোর চিন্তা বা অনুভুতিগুলোকে বিষাক্ত বা so called toxic শব্দের আবরণে মুড়ে দেওয়া যায়।কখনো উল্টে সেই মানুষটার চিন্তার কারণ বা ঐ সম্পর্কের ঘুলিয়ে যাওয়ার কারন খুঁজেই দেখতে চাই না। কারন বিষাক্ত শব্দে তো আর কোনো হেয় নেই ,এটা তো আজকাল কত সাধারন তাই না? আর এই শব্দটার সাথে সাথে কিছু অনুভুতিকে এতটা নগন্য করে দিয়েছে ,কারা? জানো ?আমাদের এই সমাজ। মানে সমাজে থাকা তুমি আর আমি। কিন্তু কোনোদিন কি ভেবে দেখেছি কারোর ওরকম চিন্তার বা অনুভুতির কারন কি? 
আজকাল অপসারন আর প্রতিস্থাপন করাকে যেমন খুব সহজ এক জিনিস বলে গণ্য করে সবাই। কি সহজেই বলে দেয় এটা না হলে ওটা করে নিবি। আরে ওটা চলে গেছে তো কি অন্যটা নিয়ে নিবি। নিলেই তো হয় একটু মানিয়ে, সবকিছু কি তোর মতো হওয়া চায়? 
- আর যখন তুমি মানিয়ে নিতে পারবে না ঠিক তখনই চারিদিক থেকে একটা বড়সড় ধাব্বা এসে জুড়বে তোমার নামের সাথে তা হল- toxic । 
কিন্তু কি করে মানিয়ে নেবে বলো তো? সেগুলোর সাথে যা তোমার চিন্তারও বাইরে ছিল। এই যেমন তোমার কোনো প্রিয় জামা।হয়তো সেটা প্রয়োজনে এখন আর আসে না কিন্তু এইটার সাথে হাজারো স্মৃতি জড়িয়ে, সেটাকে দেখলেই তোমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে বা নিমেশেই তুমি একটু হারিয়ে যাও মিষ্টি চিন্তার ভিড়ে , কিন্তু কিন্তু highlighted কিন্তু একটা কথায় হবে সেটা তোমার এখন আর প্রয়োজনে আসে না।তাই যার দরকার এমন কাউকে দিয়ে দাও। কিন্তু যখনই তুমি দিতে চাও না সেটা বোঝাবে ঠিক তখনই তুমি হয়ে দাঁড়াবে স্বার্থপর , হিংসুটে আর বিষাক্ত। কিন্তু কেউ এটা জানতে বা বুঝতে চাইবেই না যে হয়তো এইটার জায়গায় অন্য কোনো দামি জামাটা চাইলে দিয়েও দিতে হলে। কিন্তু তোমাকে বোঝার এতো সময় এখনকার সমাজের নেই। কারন সবাই সবার মতো ব্যস্ত আর সুযোগে তোমার একদুটো কথা শুনেই judge(বিচার) করতে সময় চলে যায়। 
আজকাল তো আর এক বেশ ট্রেন্ডিং গল্প চলছে টিভির পর্দায় বলো আর সমাজে, ধরো দুই জনের সম্পর্কের মাঝে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ক সমস্যায় সম্পর্কের তালবদল হলে আর দ্বিতীয়ক্ষণে তৃতীয়ব্যক্তির আগমন আর সেই হয়ে দাঁড়ায় গল্পের সঠিক আর প্রধান চরিত্র। আর অন্যদিকে , বাদ পড়া চরিত্র, তার না পাওয়া স্বপ্নের ভাঙ্গা টুকরো আর অনুভুতিগুলোকে নিয়ে হয়ে দাঁড়ায় ভিলেন। কেন বলতো সে ভিলেন? আধিকার তো তারই ছিলো সে কেন ছেড়ে দেবে আর এতো সহজ সব ছেড়ে দেওয়া? কিন্তু যেই সে ছেড়ে দেবে না তবেই সে হয়ে দাঁড়ায় একটা toxic personality। গল্প কী এখানেই শেষ হয় ? সে যদি ছেড়েও দেয় তবে সে হয়ে দাঁড়াবে এক দুর্বল চরিত্র হয়ে আর আমরা জানি দুর্বল চরিত্রের ভুমিকা আর কজনই মনে রাখে? 
তাই আমার মনে হয় এই সমাজে নিজের আধিকার আর নিজেকে হারিয়ে যেতে না দিতে হয় ,তবে এই toxicity ভার নিয়ে রাখায় ভালো নিজের কাধে কারন অম্নিতেও কেউ তোমার গুন গায়বে আর তম্নিতেও কেউ তোমার দিক বুঝবে না। এরচেয়ে toxic হয়ে নিজের ভালোলাগা নিজের কাছে রাখা ঢেড় ভালো। 

মৌসুমী গোয়ালা

সব পারি না

আমি নারী, আমি সব পারি না।
   
পারি না, ভিড় ঠাসা বাসে ট্রেনে অপ্রত্যাশিতভাবে শরীর ছুঁতে।
লোক সমারোহে কোন স্ত্রীলোককে কেন্দ্র করে ভিড়ের মাত্রা বাড়িয়ে তুলতে।

পারি না, মধ্যরাতে মানসিক ভারসাম্যহীনাকে অঙ্কশায়িনী করতে।
বস্তি কিংবা ফুটপাত থেকে তুলে এনে লোভ, রিরংসা উগড়ে দিতে।

পারি না, পণপ্রথার ছোঁবলে তাজা প্রাণ কেড়ে নিতে।
আপাদমস্তক গ্লানীতে ডুবিয়ে জীবন্তলাশ বানাতে।

পারি না, সমাজের দোহাই দিয়ে প্রাণচাঞ্চল্যকে নিশ্চল হতে দেখতে।
তন্বীর রঙিন স্বপ্নগুলোকে ধূসর কালোয় ঢাকতে।

পারি না, পৃথিবীর আলো দেখা সদ্যজাতকে আস্তাকুড়ে ছুঁড়ে ফেলতে।
নিমেষে দেহাবয়বের সৌন্দর্যকে অ্যাসিডে ঝলসাতে।

আমি , এসবের কিছুই করতে পারি না।
আর পারি না, নারী বলেই।

অচিন পাখি

পা

পৃথিবী প্রতিদিন হাঁটছে 
মায়ের কাঁধের উপর।
সংসারের সব সুখ নিয়ে আসেন বাবা।
বাবার পা দেখে ভাবি,
এখনো কতো পথ আমার অতিক্রম করা বাকি!

অভিজিৎ রায়

হায়রে সমাজ 

অনেক গরীব খেতে পারছে না ভাত
আর কেউ নাইট ক্লাবে কাটাচ্ছে রাত

কত না দেখছি নাটক এখানে
বুঝে না কেউ একদিন তো যাবে স্বশানে

কেউ বা ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে খায় 
আর কেউ গরীবদের চুষে বেড়ায়

টাকা তো কামায় করে সবাই
কতজনই বা গরীবের পাশে দাঁড়ায়

কত বাবা-মা না খেয়ে পড়ে আছে রাস্তায়
আবার কত শিশু ছোট বেলায় মা বাবা হারায়


 মানুষ কোটিপতি হয় গরীবের কাঁধে চড়ে 
সেই কোটিপতিই গরীবের সব নিচ্ছে কেড়ে


সততার নেই কোন দাম না আছে সন্মান
সৎ মানুষ হলে সহ্য করতে হয় অপমান।

দেবাশিস দাস

ব্রহ্মপুত্র

                         
পাটাতন সরিয়ে দিলে উঁকি দেয় 
অবশিষ্ট ব্রহ্মপুত্র নদ।

সমান্তরাল। নিষিদ্ধ এক যাত্রা।।

আজীবন অভিশাপ বয়ে বেড়ায় যে নদ
তার নির্জন বুকে-  তীব্র হাহাকার!

মানুষের অভাব।

আত্মমুখী এই পুরুষটিকে  
আমি তাই , মা' বলে ডাকি…

সংগীত শীল

দিবাকর


বৈশাখের সোনালী আভায়, 
বহির্বিশ্বে আনন্দের ঢেউ ভেসে আসে।

রবীন্দ্রস্মৃতিবিজড়িত সাড়ম্বরের কথা 
উদিত সূর্য জানান দিয়ে যায় প্রকৃতিকে।

মনের দৌড় গোড়ায় বিপুল উচ্ছাস আছড়ে পড়ে,
প্রকৃতির বাঁধা ভাঙ্গা দৃশ্য দেখে হৃদয়ে কল্লোল বাজে।

উত্তরণের পথে ধাবিত হয় স্বপ্ন,
রবির শালীন রূপ অসীমতার দিকে নিয়ে যায়,
জীবন মঞ্চে আমি ভিত্তিভূমি রচনা করি।

প্রণব দাস

একমুঠো_স্বপ্ন
            

নিশাচরীরা গর্তের সন্ধানে অনুতাপ মেটায়,
গবেটগিরি আজও চলে ফেইক প্রোমিস এর বন্যায়।
রাস্তার বুকে হাজার ওয়ারিয়র,পদধূলিতে কাঁপছে ভূধর,
যৌবনের আগুনে ছাই তাই,আজকের এই প্রহর।

বিশ্বাসটা আজও আছে,তবে সকালটা চাই,
বেম্বো স্টিকটা কাঁধে নড়ে,সেই বসন্তের আশায়।

রাকেশ দেবনাথ

বাকি ইতিহাস
                           
           
ইতিহাস থেকে কল্লোল শুনে
স্মৃতির পাতা উগরে দেখি ।
হাজার বছর ধরে
জমতে থাকা অভিমানগুলি
আজ ভিড় করেছে
মনের জাতীয়সড়কে।
স্মৃতিগুলি মিছিল করে জানতে চায়
তোমার আমার শরীর ছোঁয়ার
 বাকি ইতিহাস।

আমার মনে জমিয়ে রাখা
 সব সরকারি নথি
ধূলির সাথে খেলা করে
পাল্টে গেছে এক পলকে।
মনের মাঝে পূর্ণচাঁদ
আধখানা হয়ে লটকে আছে
সিলিং আর সেফটিফিনে।
 আমার মনের আঁতুড়ঘরের
 অপুষ্ট স্মৃতিগুলি আজও
মরুভূমির ধুধু বালুর চড়ে
 ফণীমনসার ভিড়ে 
তোমায় খুঁজে।
 জনপ্রিয়তার আড়ালে থাকা
 তোমার কাছে জানতে চায়
 হাজার বছর আগের
 তোমার আমার শরীর ছোঁয়ার
 বাকি ইতিহাস।

সায়ন পাল

মুক্ততা

মনের গহীনে অস্পষ্ট মুখের আভা,
পরিচিত তবে খানিকটা পুরোনো।
সেই কবে দুরন্ত বিকেলে উড়ন্ত আঁচল,
শেষ চিহ্ন রেখে গিয়েছিল তারপর কি রেখেছে খোঁজ কখনো!
না, মনের অতল হতে কোন অতীত ভেসে আসে না।
বাস্তবতার মোড়ক অতীতের উপর ঢাকনা ফেলেছে,
মুছে নিয়েছে চোখের জল।
তবুও মিলনমুখি বসন্তের সমীরণে,
বাতাসে উদাসীনতার গন্ধ আসে।
কিন্তু ওই যে বললাম বাস্তবতা,
ভয়ংকরী রূপে যেন তাকে দূরে ঠেলে দেয়।
বিষাদের বিষে অমৃত ভাব আনে।
একলা মন আর ওই নীলাভ আকাশ মুখোমুখি,
শত পক্ষী উড়ে গেলেও একাকীত্বে ডুবে আছে ওই আকাশ,
তবুও বিষাদ নেই আছে মুক্ততার আশ্বাস।

ভবানী বিশ্বাস

তোমারে পাইবার পর

তোমারে পাইবার আগে 
শেষ কবে কানছিলাম
মনে নাই। 

মাইনসে আঘাত দিলে
কান্দা আইয়ে না। 

দুইদিন উপাস থাকলেও 
খবর কয় না পেট। 

চলতে না পারলেও
কেমন দিব্যি চইলা যায় দিন। 

তবুও, চোখ দিয়া বাইরয়না জল। 

অথচ তোমার ভালবাসা পাইবার পর 
মাজরাইতে বুক চাইপ্যা ধইরা কেমন 
বন্যা ভাসাই...

পান্থ দাস

একলা

তারা মাখা রাতে
মায়াবী মন
চায় যে তোমাকে,

দিগন্ত স্বপ্ন
খুঁজতে গিয়ে
হারিয়েছি যে তোমাতে।

খুঁজি
একলা দিনে তোমায়
প্রহর যে শেষে,

অপেক্ষায় 
মন ডুবে
চাঁদের পাহাড়ে যে মিশে।

Saturday, April 29, 2023

মনন স্রোত

সম্পাদকীয়

জগতে মানুষ কেন অমর হতে চাইবে! জীবন নাকি যন্ত্রণাময়, অতিষ্ঠ। জ্বালাপোঁড়ায় ছটফট করতে করতে যাপন, জীবনের। এ পথচলা শেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার মৃত্যু। জীবনের ক্ষেত্রে মৃত্যু বড় গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যু ভিন্ন এত নির্ভুল, স্বচ্ছ বিষয় জগতে আর নেই। এটিকে উপেক্ষা করার সাধ্য নাই। অমরত্বের কোনো বাস্তবতা নেই। এরপরও অমরত্বের কথা আসে। কেন আসে, কিভাবে আসে, এ জিজ্ঞাসা সকলের প্রায়।
.
প্রতিটি দর্শন মৃত্যুকে সম্মান দিয়েছে। প্রাণী মাত্রই তাঁকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক। এ সংখ্যাটি প্রকাশ করার সময় মনে মনে মন্ত্রের মতো জপ হয়েছে এটি। মন্ত্র মানে মননাৎ ত্রায়তে। মৃত্যুকেই মনে করা। ধন্যবাদ যারা লিখেছেন। কৃতজ্ঞ সকলের কাছে।

বিনম্র
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

মনন স্রোত - এপ্রিল

সান্তা দেবনাথ

লাল বেনারসি

উঠানে তখন ভাদ্র মাসের প্রখর রোদ। ফকফকা সোনালী আলো। কাঁঠাল গাছের পাতার সুন্দর নকশা করে পড়ছে রোদ। তখনো দু তিনটে কাক ডেকে যাচ্ছে। অথচ সুমতি কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। চারদিকে এত আলো কিন্তু সুমতির দুচোখে শুধুই অন্ধকার। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হতে চলল সুভাষ বাড়ি এসে  'সুমতি সুৃমতি...' বলে ডাকছে কারোর কোনো সাড়া নেই। ঘরে ডুকতেই দেখল মেঝেতে সুমতি শুয়ে আছে। সুভাষ একটু হেসে বলল' কি সুমতি এতো ডাকলাম শুনতেই পেলে না। এই বলে সে সুমতিকে ছুয়ে অবাক হয়ে গেল,শরীর সাপের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। মুখটা ঘোরালে দেখতে  পেল ঠোঁটের কোণে লালারস ঝরে পরে শুকিয়ে আছে। আর বুঝতে বাকি রইল না।

   সুভাষের চোখের সামনে ভাসতে লাগল বারো বছর আগের অগ্রহায়ণ মাসে সে একটি সুন্দরী কন্যাকে দেখতে যায়। লাল টকটকে শাড়ি পড়ে কন্যাটি পানের বাটা হাতে সামনে এসে দাঁড়াল। প্রথম দেখাতেই সুভাষ ও তার মায়ের সুমতিকে বেশ ভালো লেগে যায়। সুমতি বউ হয়ে যখন প্রথম শ্বশুর বাড়ি আসে তখন পাড়া পরসি সবাই সুভাসের মায়ের পছন্দের বেশ প্রশংসা করে। একজন প্রতিবেশী বলেন' সুভাষের বউ যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা।' আর একজন বলেন ' এ পাড়াতে এ বউকে টেক্কা দেবে এমন বউ আর একটা আছে?'তা শুনে সুভাষের মায়ের গর্বে বুক ভরে যায়।তিনি বউমার খুব খাতির যত্ন করেন।কিন্তু এত সুখ সুমতির কপালে সয় নি।সুমতির জরায়ুতে টিউমার অপারেশন হওয়ার ফলে সে বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা হারায়। তারপর থেকে সুভাষের মা তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেন।সুমতি ও বলেছিল।কিন্তু সুভাষ বিয়ে করতে রাজি হয়নি।সুভাষ সুমতিকে বলে ' দেখো সুমতি কত বাচ্চা মাতৃহীন পিতৃহীন রাস্তায় অনাথ আশ্রমে বড় হয়ে উঠছে। তাদের থেকে তো আমরা একটা বাচ্চা নিয়ে আসতে পারি।সুমতি এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সুভাষের মা রাজি হননি।তিনি বলেন 'আমি আমার নিজের নাতি নাতনি চাই, আমার বংশধর চাই। ওসব চালচুলোহীন রাস্তার ছেলে মেয়ে এনে আমার বাড়িতে ফেলবে। আমি বেঁচে থাকতে তা হচ্ছে না বাপু।' সুতরাং এ প্রস্তাব এখানেই চাপা পরে যায়।
 
    তারপর কয়েক বছর পর হঠাৎ সুভাষের বদলির অর্ডার আসে। আগরতলা থেকে বদলি হয়ে যায় মনুতে।সুভাষ তার সাথে সুমতিকেও নিয়ে যেতে চায়,সুমতি যেতে রাজি হয়নি।সুভাষ চলে যায় সুমতি সদর দরজা পর্যন্ত স্বামীকে এগিয়ে দেয়। যতটুক পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় সুমতি তাকিয়ে থাকে। গাড়ি চলে গেলে সুমতি নীরবে চোখের জল মুছে। তার স্বামীর সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। যেদিন সুভাষ খেতে বসে মাকে বলছিল ' মা আমার তো মনুতে বদলি হয়ে গিয়েছে, ভাবছি তোমাকে আর সুমতিকে নিয়ে যাব।আর আমি সেখানে ঘর ভাড়া ও নিয়েছি। তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।' তখন সুভাষের মা বলেন ' না বাবু আমি তোমাদের সাথে যাচ্ছি না।এখানে ঘর বাড়ি ফেলে ওখানে গিয়ে আমি থাকতে পারব না।তোমরাই বরং যাও।' সুভাষ বলে ' আমরা ওখানে থাকব আর তুমি এখানে একা থাকবে। যদি তোমার অসুখ বিসুখ হয় কে দেখবে।' মা বলল ' আমাকে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। আমি থাকতে পারব।' এত বলার পরও তিনি রাজি হননি। সুভাষ উঠে চলে যায়। সুমতি এটো থালা বাটি নিয়ে যায়। শাশুড়ি সুমতিকে ডেকে বলে ' দেখো বউমা, বাবু তোমাকে নিয়ে যাবে বলছে তুমি কিন্তু আবার চলে যেও না।তুমি তো আর আমাদের বংশধর দিতে পারবে না।আজ এতবছর ধরে বলছি বিয়ে কর করলো না। তোমার কাছে থাকলে তোমার মায়া কাটাতে পারবে না। এখন কিছু দিন তোমার থেকে দূরে থাকলে তোমার মায়া কাটাতে পারবে। পুরুষ মানুষ তো একা থাকলে মন পরিবর্তন হবে।' সুমতি মৃদুস্বরে বলে ' ঠিক আছে।' তারপর সে সুভাষকে বলেছে ' মা বয়স্ক মানুষ ওনাকে ছেড়ে যেতে আমার মন মানছে না। তাছাড়া তুমি তো প্রতি শনি রবিবারে আসবেই। এখন তুমি একাই যাও।

   শনিবার দিন সুভাষের আসার কথা। সুমতি সকাল থেকে সুভাষ যা যা খেতে ভালোবাসে সব কিছুই রান্না করেছে। কিন্তু সেদিন সুভাষ আসে নি। সন্ধ্যা সময় সুমতিকে ফোন করে বলে ' সরি, আজ আসতে পারছি না  জরুরি কাজে আটকে গেছি কাল আসবো।' এই বলে সুভাষ ফোন রেখে দিল। সুমতির চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গাল বেয়ে পরে। তা দেখে শাশুড়ি মনে মনে খুশি হয় ভাবে ' ছেলের মন ফিরেছে।' সুমতিও যেন সুভাষের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে ভাবে হয়তো তার খারাপ লাগবে ভেবে সুভাষ আর দ্বিতীয় বিয়ে করে নি। সেদিন রাতে আর সুমতির ঘুম আসে নি। পরের দিন সকালে সুমতি ঘরে থাকা ইঁদুর মারার ঔষধ খেয়ে সুভাষের জীবন থেকে চিরতরে সরে যায়।
   
   সুমতিকে লাল বেনারসি পড়িয়ে, পায়ে আলতা,  সিঁথিতে লাল সিঁদুর পড়িয়ে দেয় সুভাষ। সে সুমতির দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবে ' এ যেন সেই ১৫ বছরের বালিকা সুমতি আজ আবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। তার সত্যি কারের শ্বশুর বাড়ি। যেখান থেকে সে আর কখনো ফিরে আসবে না, কেউ ফিরে না সে ও ফিরবে না। যেমন ভাবে সুমতি এবাড়িতে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে যাচ্ছে। কোথাও কোনো পিছুটান নেই। সব বন্ধন ছিন্ন করে চলে যাচ্ছে।

পূজা মজুমদার

প্রথম দেখা

তোমাকে প্রথম দেখার আজ এই দিনে ধরণীর বুকে জন্মেছে এক নতুন ইতিহাস,
থেমে গিয়েিছলো সময়ের চাকা, থেমে গিয়েছিলো নদীর স্রোত।
থমকে গিয়েছে মহাকাল, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে  বিরহে
গাঁথা সব কবিতার পঙক্তিমালা।
পাশাপাশি থাকার  নিঃশ্বাস ছড়িয়েছিলো কিছুটা বেশি উত্তাপ!

ঙচুপ করে ছিলাম । দুজনে দুজনকে জাপটে রেখেছিলাম কিছুসময়।  ভালো লাগা আর ভালোবাসার চাওনিতে আচ্ছন্ন ছিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে । সে এক অন্য রকম চাহনি।  যে চাহনিতে অনেক কিছুই বদলে যায় আমাদের।

গৌতম মজুমদার

আমার মা
.
মাগো,তুমি কোন জাতেরি মা?
নিজ সন্তানকে করছো ক্ষত বিক্ষত।
হিংসা ক্ষোভে কেউকি বাঁচে মা?
সব মায়েরা নয়কো তোমার মতো।
    
আমার মা তো হাসি মুখে সুধায়
"খোকা তুই করিসনা কো ভয়,
আশীষ আমার সঙ্গে যে তোর আছে
এ বিশ্বটা করবি যে তুই জয় ।"

রাগ করে মা বকুনি দিত যখন
অভিমানে চাইনি খেতে ভাত,
খাবার নিয়ে মুখের সামনে ধরে
বাড়িয়ে দিত সোহাগ মাখা হাত।

জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বক তাম যখন
মাথার কাছে জাগতো সারা রাত,
উপোস করে ঠাকুর ঘরে গিয়ে
রোগ সারিয়ে করতো বাজিমাত।

যেদিন মাকে রাখি বৃদ্ধাশ্রমে --
জড়িয়ে মোর গালে চুমু খেয়ে
হেসে বলে -- "সাবধানে যাস খোকা",
মুখপানে মোর রইলো শুধু চেয়ে।

সব চাহিদা পূরণ করতো মা --
হৃদপিন্ডটা চাইতেই হেসে বলে --
"এ আর এমন কি চেয়েছিস খোকা,
নিয়ে নে না বুক থেকে মোর খুলে।"

হৃদপিন্ডটা তুলে নিলাম হাতে
মা যে আমার বড্ড ভীষণ বোকা,
দৌড়তে গিয়ে রাস্তায় গেলাম পড়ে
হৃদপিন্ডটা হঠাৎ উঠলো বলে --
"তোর কোথাও লাগেনি তো খোকা ?"

চমকে উঠি মায়ের কষ্ট শুনে --
বললাম, আমায় --"ক্ষমা করো মা --
এ ভুবনে তোমার অধম খোকা
আজও তোমায় চিনতে পারলো না।"

পায়েল সাহা

ইন্টারনেট 

ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
হোয়াট ইজ ইন্টারনেট? 
সারা বিশ্বকে করে কানেক্ট,
ইট ইজ ইন্টারনেট।

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুকে তোমার মাধ্যমে করে কানেক্ট,
শুরু হলো হাজারো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আর ইনবক্সে কমেন্ট।
      ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
ইউটিউব, ইনস্টাগ্ৰাম চলে না তো তোমায় ছাড়া।
নেট প্যাক শেষ হলে মানুষ হয়ে যায় দিশেহারা।।
মনের কথা হোক বা দুঃখের কথা,
সামনাসামনি কাউকে বলতে পারি না যেটা।
মোবাইল ফোন এ দেখে হোয়াটসঅ্যাপ আর মেসেজ বক্সটা,
 নিঃদ্বিধায় মন খুলে বলতে পারি সেটা।।
ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
হয়তো তোমার মাধ্যমে উপলব্ধি করি ক্ষনিকের আনন্দটা।
এইভাবেই সারা জীবন টিকিয়ে রেখো হাজারো মানুষের বন্ধুত্বটা।

বিশ্বজিৎ মানিক

মুক্ত আলোর পথে
.
আর কতকাল আবেগ হত্যা করে
অজ্ঞতার অন্ধ পথে
হেঁটে বেড়াবে উদ্ভ্রান্তের মতো?
আর কতকাল?
বরং,তার চেয়ে এসো খোলা ছাদে ৷
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেবে
এক ঝলক শীতল বাতাস
তোমার স্নিগ্ধ মায়াবী চোখে৷
আকাশ পাড়ে চেয়ে দেখো
জ্যোৎস্নার আলো ভেসে যাচ্ছে চারিদিক ৷
ছাদের কোণে শিউলি গাছটার
পাতার আড়ালে।
মধুর সুরে গান গেয়ে যাচ্ছে
নাইটেঙ্গেল৷
দূরের ওই আকাশ ডানা মেলেছে
পূর্ণ চাঁদের রূপালি আলোয় ৷
হাতছানি দিয়ে বারবার ডাকছে তোমায় ,
যেন তুমি বেরিয়ে পড়ো 
মুক্ত আলোর পথে ৷

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

বৃষ্টি চেনে ভালোবাসার শরীর
.
ঝলসে দেওয়া দাবদাহের গদ্যে
বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে 
বৃষ্টির দামালপনায় সাদা আবীর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে
এক অচেনা আনন্দ বিস্ময়ভরা চোখে দেখতে থাকে সেসব

পথের কোণের বটগাছটার গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে ভালোবাসা
ভেজা যৌনতার বিন্দু বিন্দু আদরে ভালোবাসার রঙ লাল
কাঁপা আবেগ বৃষ্টির মতোই শরীর মাতায়
একটা খোলা পৃথিবী দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে থাকে ওদের 

কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া ফোঁটায় যেন আসমানী রঙ
ডানা মেলে উড়ে যাওয়া মেঘ দেখতে থাকে দুষ্টু চোখে
প্রাণের ক্লোরোফিল জমতে থাকে কোষে কোষে
একটা আদিম পৃথিবী সামনে এসে দাঁড়ায়
বটগাছটা ডালপালা মেলে ওদের লজ্জা ঢাকতে থাকলে 
বৃষ্টির আলপনায় ভালোবাসা সব পেয়েছির গল্প বলে দুদন্ড। 

জয়িতা দে

সর্বংসহা
.          
আমি নারী,তাই-
আমি নির্যাতিত নিপীড়িত,
অবলুন্ঠিত অবহেলিত।
আমি নারী তাই-
আমাকে দেওয়া হয় অপবাদ।
যদি করি অন্যায়ের প্রতিবাদ
তবে সমাজ আমায় দেয় অসভ্য মেয়ের তকমা।
আমি নারী তাই-
আমাকে নিয়ে হয় নানান রঙ্গ তামাশা।
মাতৃগর্ভে ভ্রূণ অবস্থায় হয় আমার নিধন।
ছুঁড়ে ফেলে দেয় আবর্জনার স্তূপে
ছিঁড়ে খায় শেয়াল কুকুরের দল।
আমি নারী তাই-
রাত বেরাতে একা চলতে গিয়ে ভয়ে থাকি।
কারণ সমাজের লোলুপ কামনার দৃষ্টিতে দগ্ধ হতে হ‌য়
হিংস্র হায়েনার দল নারীমাংসলোভে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আমি রিক্ত, আমি শূন্য তাই-
এ জীবন হবে না কখনো পূর্ন।
আমি নারী ,আমি সর্বংসহা।
বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে সেই আগুনে
যেমন পুড়িয়ে দিতে পারি, তেমনি রণরঙ্গিনী রূপে শুধরে দিতে পারি সমাজের বিকৃত মানসিকতাকে।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

এলোমেলো পৃথিবী
.
আমার সাজানো পৃথিবীটা আজ
কেমন যেন এলোমেলো,
সাদা কালো জীবনে স-বটুকু বিবর্ণ 
পাতা ঝরা গাছের মতো ;অস্তিত্বের সংকটে।

হাসিতে সজীবতা! যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন,
মনের আড়ালে লুকিয়ে কান্না
ভালোলাগার পৃথিবীতে  একঘেয়েমি,
মনখারাপের দলেদের নির্লজ্জ লাফালাফি।

আনন্দ উৎসরা দূর-বহুদূর ;
নিঃসঙ্গতার ভয়ানক ঔদ্ধত‍্যতায় 
আবেগী বাঁশীটা বেজে উঠে বার বার ;
উদাসী চোখে ভেসে বেড়ায় ক্লান্ত স্বপ্নরা।

আমার সাজানো পৃথিবীটা আজ বড্ড এলোমেলো 
পাথরচাপা মনটা চঞ্চল হয়ে উঠে হঠাৎ  হঠাৎ,
রাতের ঘুমগুলি চুরি যায় বিবশতার হাতে ;
মুক্ত হাসিরা? হেরে গেছে সমর্পণের কাছে।

অভিজিৎ রায়

ঠাকুর তুমি কেমন জানি
.
ঠাকুর তুমি করছ কেন এত পরিহাস
চারিদিকের হিংসা নিন্দায় জীবন রুদ্ধশ্বাস

কেউ করছে ক্ষমতা বলে
তুমি করছ নানা ছলে

তবুও এত কঠোরতায় কাটিয়ে যাচ্ছি মোরা
সুন্দর পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় আমরা দিশেহারা

জানি না কেন মানুষ শুধু নিজের কথায় ভাবে
ঠাকুরকে না ডাকলে যে দুঃখ রয়ে যাবে।

বিপদে পড়লে ডাকবে শুধু সেটা কি কখনো হয়
তাই তো মানব জীবনে এত দুঃখ পেতে হয়

সুশান্ত সেন

কবিতা

কবিতা আমার পাগল করেছে দেখি
কবিতা আমায় আঁচড়ে কামড়ে খায়
কবিতা আমায় জ্বালায়, নিজেও জ্বলে
কবিতা আমার সঙ্গে সঙ্গে যায়।

মনকে বলেছি চুপ করে দেখ চেয়ে
জানান না দিয়ে সটকে পড়ব আমি
ঝাউবনে তাই চুপটি লুকিয়ে পড়ি
স্বাধীনতা পেয়ে সমুদ্র জলে নামি।

বিস্ময়ে দেখি ঢেউ এর মাথা জুড়ে
কবিতা আমার ধরে নিলো দুটি হাত
বুকের ভেতর জাপটিয়ে ধরে রেখে
বললো - তোমার কাছেই কাটাব রাত।

সঞ্জয় দত্ত

ঘড়ি
.
এখন বৃষ্টি হচ্ছে,
আরও কতদিন হবে?
আমার মতো এমন প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে অনেকে!
যাদের সংসার নামক পৃথিবী ধরার সময় হচ্ছে এবং
হবে যাদের!
বৃষ্টি হয়ে গেলে শীতল হয় পৃথিবী।
সমভাবে শীতল হই আমিও,
ক্লান্ত হয়ে শুয়ে যাই।
সকাল হতে হতেই ভুলে যাই 
দাগ কাটা গল্পের কথা,বৃষ্টি ঝড়া রাতের কথা,ক্লান্ত সন্ধির কথা।
এক বুক সান্ত্বনা নিয়ে পথ হাঁটি পৃথিবীর পথে।

এখনো হাঁটতে গিয়ে পিছলে পড়ে যাই,
কেউ একটু টেনে তুলেও দেয় না,
ব্যঙ্গ করে হাসে।
আমিও হেসে মুখ মিলিয়ে-নি, ঠিক স্লোগানের মতো।


   

বিপ্লব উরাং

কাঁহা বিপ্লব? 

দিন দিন সব কিছু
কেমন জানি হয়ে যাছে।
জোয়ানীর সেই  বিপ্লবের কথা,
বিপ্লবের সপন তেমন করে
আর মনে নাই পড়ে।

আওয়াজ গিলান দিনকে দিন
হাটে যায়েছে, হাটে যাছে।
যারা এতদিন বিপ্লবের কথা বলত
আইজ অরা বিপ্লবলে বেশি
মসনদ দখলের কথা ভাবছে।

অথচ অরাই বলত,এই মসনদ
হামদের নাই।
লড়হাই করে, বিপ্লব করে 
এই মসনদ দখলদারি দের হটাতে হবেক।
এদেরকে হটাতে নাই  পারলে
হামদের মত মানুষের অধিকার নাই মিলবেক।
হটাতে হবেক বিপ্লব করেই। 

মিন্তুক কা্ঁহা সেই  বিপ্লব? 
ভাবি ভাবতে থাকি।

উর্মি সাহা

মায়ের সিঁদুর 
.
বাবাকে দেখেছি, 
হাল খাতার হিসেবে গোটা সংসারটা মিলিয়ে নিয়েছে।
মাতৃভাষার মত হেডলাইন হয়েছে আমার,
মায়ের বাঁধানো শাখায় দীর্ঘায়ু হয়েছে।
আবার কখনো দেখেছি নারী সম্মানে পা দিয়েছে বাবা,
বাবা আমার প্রধানমন্ত্রী।
আবার সারথী আমার কৈশোরে
বাবা জৈষ্ঠ্যের কৃষ্ণচূড়া,
কখনো প্রখর অগ্নিমূর্তি।
বাবা হয়তো আমার মত ফাঁকি দিতে শিখেনি
নাকি শিখেছে!
হ্যাঁ! বাবা ফাঁকি দিতে জানে;
বাবাকে দেখি
শার্টের কলারটা খসে গেছে, তাও
ভোর রাতে অতি আদরে বুকে জড়ায় সেটা।
আর তা দেখে আমার চোখ জুড়ায়।
মাঝে মাঝে বলি 
বাবা আমার আলোকরশ্মি
মেঘ বিছানো আকাশ,
বাবা আমার হৃদয়পুরের
চিরহরিতের সোহাগ।
বাবা আমার মায়ের সিঁদুর
সংসার টানা শ্রমিক,
বাবা ঘরের শেষের আলো
বাবা ঘরের সুখ।

স্নেহাশীষ রায়

দিন সবারই ফেরে
.
দিন সবারই ফেরে,
দুঃখ সবারই কাটে
সুখ পাখিও আসে
পর্বতও যায় ভেসে
যৌবন যায় থেমে
চূড়ার পাথরও নামে
বৃক্ষও ছাই হয়
আলোয় কাটে ভয়
মিথ্যাও রয় না চাপা
অনন্তকে যায় মাপা
সাগরও বালিতে মিশে
পথিকও হারায় দিশে
সময় থাকেনা থেমে
তা তো সকলে জানে
তবু কেন বাহুবলে
শাসনের দিন গুনে?

বিজলী সাহা

বরষার ভরসায়
.
এখনো খুব মনে পড়ে তোকে, তোকে আর ভুলতে পারছি কই। পড়ন্ত বিকেলের আলো মাখা গায় আমার  আঁধার আসে নেমে। বিদঘুটে জমকালো আবছায়ায়ও আমি তোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই মায়ার আবেশে। 
এই শোন কোথায়  আছিস এখন? 
ভালো আছিসতো? 
সংসার করেছিস? 
জানি কোনো প্রশ্নের উত্তর হবে না এখন তবুও নিজের মনের সাথে কিছু কথা বলে যাই একান্তে। ভাবি আর পাতায় খেলি, হিসেব মেলাবার বেলা এখন কড়ি দিয়ে নয় মনের দাগ কাটা হিসেব। একের পর এক স্মৃতি গুলো ভাবনার আকাশে তারা হয়ে জ্বলজ্বলে হয়ে কেমন যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ বন্ধ করা ভালোবাসায় বুঝি কোন খাদ ছিলো। ঝিরঝির বাতাসেও বইছে আগুন হাওয়া। পাগল করা ভাটিয়ালি গানের সুর ভেসে আসে নিঃশব্দে। এখনো ভালোবাসি তোকে খুব তাই বলে মরণ আসে বারবার ডাক দিয়ে যায় সবার অলক্ষে। আষাঢ়ের  বরষা ভরসা হয়ে কাধে রাখে হাত ।আজও আছি পথের বাঁকে একটি পদ চিহ্নে।

সুজন দেবনাথ

তুমি আবার এসো বসন্ত
.
সব পাতা ঝরে পড়ে
রুক্ষ জীর্ণ অসহায় হয়ে,
হৈমন্তীর নির্মমতায়-- 
একাকি দাঁড়িয়ে যে বটবৃক্ষ টি,
তারে সবুজে সবুজে সাজাতে 
ফুলে-ফলে ভরাতে 
তুমি আবার এসো বসন্ত।

নব পল্লবে যে কুঁড়ি
আশায় গুণে চলেছিলো প্রহর,
আসবে সময় সে পাপড়ি ছড়াবে
কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি! 
তারে খানিকটা সুযোগ দিও 
যেন সে অকালে ঝরে না যায়,
তাই, তাই তুমি আবার এসো বসন্ত।

যে কোকিল টা ভুলে গেছে সুর, 
আর গাইছেনা গান,
তারে আরও এক যুগ বাঁচতে দিও।
যেন সে আবার ধরতে পারে সুর
নতুন গানে বাঁধুক দুটি প্রাণ
নিখাদ প্রেমে হোক আরেকটি তাজমহল,
তাই তুমি আবার এসো বসন্ত।

যে প্রমিক নাওয়া খাওয়া ভুলে
পাগলের বেসে দেশান্তরী,
তাকেও দিও সেই সঙ্গীনির খোঁজ।
প্রেয়সীর কন্ঠে সে যেন পায়
তার ঘরে ফেরার ঠিকানা।
পুনঃ মিলনের নতুন মালা সাজাতে 
তুমি আবার এসো বসন্ত।

সুস্মিতা দেবনাথ

চন্দ্রাহত

এমনই বাসন্তী সন্ধ্যায় 
তোমার হাতখানি রেখেছিলে 
আমার বাঁ হাত
বলেছিলে ভালোবাসবে ?

আধো আলো ছায়ায় 
সমুদ্রের উন্মত্ত ঢেউগুলোর আস্ফালনে 
আমার কন্ঠ ছিল নিশ্চুপ,

অজানা এক আর্কষণ 
পূর্ণিমার চাঁদকে সাথে নিয়ে 
নীরবে তোমার হাতটি ধরে 
বিভোর হয়ে হেঁটেছিলাম।

আজও হেঁটে চলেছি, বৃথা
বিরাম হীন মোহমুগ্ধ...

রুপন সূত্রধর

রুপকথা প্রেম
.
কারো জীবনে তুমি রুপকথার নায়িকা 
তোমাকে নিয়ে শত শত কবিতা।
দিবারাত্রি প্রেমিকের ভাবনায় বিচরণ 
তোমার চলার প্রতিক্ষণ কল্পনায়।

কখনো হাসাও,কখনও কাঁদাও
ভালোবাসার এক অপরুপ মহিমা।
আত্মাবিশ্বাস, ধ্যান, জ্ঞান চারিদিকে 
 তোমার ভালোবাসার মহিমা।


ছেলেটি ভাবনা বুকে, এবার পুজোয়
ভালোবাসি বলবে মুখে তোমায়।
সূর্যদয়ে জাগা প্রেম,রাএির স্বপ্ন জুড়ে 
  স্মৃতি বহন করে জীবন। 

রোজ দাড়িয়েছে সে মন্ডপে,হয়নি সাহস          
 তার দেবীময়ী রুপটি দেখে।
প্রেমের আগুনে, বিসর্জনে নেচেছে
 মা   হেসেছেন চুপটি করে।

খোলা মাঠে ঘাটে নীরবতায় পথ চলা
 অবুঝ প্রেমকাহিনী অসময়ে ফোনালাপ। 
সাহসী বালক, প্রেমের কথা বলে,
পরীপ্রেম বিচরণ জগৎ জুড়ে। 

কখনো কখনো জ্বলে অনল
তার ছবিতে যদি কেউ হাসে।
 তুমি যখন বাসা বাঁধো,অন্যমনে
অনন্তপ্রেম নিশিদিন বিরহে, কথা বলে।

তুমি যদি ভালোবেসে থেকে যেতে,
সুখ দুঃখের সাথী, বিশ্বাসী মনে,
ভালোবাসার অসুখ থেকে আগলে
রাখতাম হৃদয় নীড়ে বাসা বেঁধে। 

একটু ভালোবাসার খোঁজে আজীবন, 
ছলে ছলে জীবন চলে, সাথীহারা,
ভালোবাসার কার্বন সংলাপ নীরবে বলে,
 তুমি হবে একদিন, ওপারের জীবনে।

রূপা সাহা

ভালোবাসা আজও আমায় কাঁদায়
.
আমি তোমাকে শুধু ভালবেসে গেছি
তবু পাইনি কখনো তোমার মন,
পাবার জন্য প্রতি মুহূর্তে কেঁদেছি
নিঃশব্দে তোমার অগোচরে।

তুমি কথা দিয়েছিলে আর বলেছিলে
কখনো ছেড়ে যাবেনা আমায়,
তবে কেন এমন ভাবে ধোকা দিলে
  আর দিলে বুক ভরা বেদনা।
 
উজাড় করে দিতে চেয়েছিলাম
 তোমাকে আমার সর্ব সুখের ঠিকানা,
বিনা অপরাধে আজ তবু পাচ্ছি সাজা
  তাই কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

  মনে মনে তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন গেঁথেছি,
বিনিময়ে লাঞ্ছনা আর তিরস্কার
পুরস্কার হিসেবে তুমি দিয়ে গেলে।

চন্দন পাল

ওফ্ফ 
.
কবিতা তুই কি জানিস ক'জনকে ভাবসাগরে ডুবিয়ে মারছিস্ ! 
কি চাস তুই! প্রেমিকের জান্ না - বদনাম!!

বারবার ভুলে যাচ্ছি ঘুম, সমাজ, শেষমেশ জীবিকা।
অথচ সকাল হলেই ভাবি  সব ঠিক হয়ে যাবে।
নতুন সূর্য উঠেছে। ঝকঝকে আলোয় সব ভুলে শুরু হবে নতুন জীবন। 

কিন্তু কোথায় কি! আলো হেলে পড়তেই ভেসে উঠে তোর ছবি। 
পাগল হয়ে ছুটে যাই তোর কাছে, খুঁজি আশ্রয় ,
তুই কেন এত মায়াবী, চঞ্চলা, সম্মোহনী ?

হ্যঃ তুই হাসছিস্,  হাস্!
আর জনমে আমার শাপে তুই হবি কলম আর আমি কবিতা।

কুমার নচিকেতা শীল

কুমার নচিকেতা শীলের ইংরেজি কাব্য

O GOD
.
O God you are great and strong.
You made many beautiful things.
But there is nothing wrong !

 You can create and destroy.
 And a powerful, supreme lord.
 And made to creatures that is girl and boy.

You made many things on earth.
That's is really we need for life.
 And have two habit of death and birth.

You is great, wonder and powerful,
And gives us power that we really can.
And gives nature of wise and colourful.
              

তাপস শীল

একটি ফোনের প্রত্যাশা
.
সদ্য মহাবিদ্যালয় শেষ করে এসেছে অপরূপ। কিছু দিন বাড়িতে থাকার পর নতুন ডিগ্রি নেওয়ার জন্য শহর কোলকাতায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়া শুরু করে। নতুন শহর, নতুন আবহাওয়া, কলেজ, শিক্ষক সব কিছু মিলে অপরূপ কেমন জানি হিম সিম খাচ্ছিলো। হোস্টেলে অপ্ররূপ সঙ্গীহীন  সারাদিন বসে থাকতো এবং নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। 
একদিন  বিকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তার ফোন দেখছিলো হঠাৎ তার বান্ধবীর নাম্বারটা পেয়ে ফোন করে। বান্ধবী নাম সুরিয়া, অপরূপের পুরাতন কলেজে একসাথে পড়তো। ফোনের ওপাশ থেকে সুরিয়া ফোন তুলে কথোপকথন হচ্ছে দু'জনের মধ্যেই। অপরূপ তার হোস্টেল, কলেজ, নতুন পরিবেশ সম্পর্কে বলছে। সুরিয়া ও জানায় সে ও নাকি কোলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ডিগ্রি নেওয়ার জন্য হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। অপরূপ শুনে খুশিতে আত্মহারা দু'জনে একই 'বিষয়' নিয়ে পড়াশোনা করছে ভিন্ন জায়গায় । এই ভাবে তাদের কথোপকথন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টায় এগোচ্ছে। 

পরিক্ষা দিনক্ষন যত এগোচ্ছে তত তাদের কথোপকথন আরো বেড়ে চলেছে কারন সেই সময় অনলাইনে নোটের আদান প্রদান হচ্ছে । সুরিয়ার কলেজের বন্ধুরা তার এমন হাব ভাব দেখে তাকে ঠাট্টা করা শুরু করেছে। ওরা সুরিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে ফোনে কথা বলা ছেলেটির সম্পর্কে। সুরিয়াও কোন কিছু গোপন না করে অপরুপ সম্পর্কে বন্ধুদেরকে জানালো, অপরুপ তোদেরই মত বন্ধু কিন্তু সে অন্য আরেকটি  কলেজে পড়েছে। পড়াশোনার ব্যাপার নিয়ে বেশি কথা হয় ওর সাথে, অন্য একদিন তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।রাতে ফোনে সুরিয়া অপরূপকে কথা গুলি জানায় ও অপরুপকে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। অপরুপ ও কথা বলার জন্য রাজি হয় এবং  সুরিয়া বন্ধু অম্পি, গীতার সাথে একে অপরের পরিচয় করিয়ে নেয় ও নাম্বার আদান প্রদান করেন। 
অপরূপ সুরিয়াকে কখন যে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সেই নিজেও বুঝতে পারেনি।নিশাচরের মত রাতজেগে কতনা ভাব বিনিময় করত দু'জনেই । সুরিয়াকে অপরূপ তার মনের কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ভয়ে যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে পরিক্ষা শুরু হয়ে  যাচ্ছে দু'জনে ভেবে চিন্তে ঠিক করেছে পরিক্ষার শেষ অবধি কথা কম বলবে।
পরিক্ষা শেষেপ্রান্তে  অপরুপ সুরিয়ার বন্ধুদের কাছ থেকে সুরিয়া মনের কথা জানতে চাইলে ওরা জানায় সুরিয়া আজকাল অন্যমনস্ক থাকে, খাওয়ার সময় মত খাচ্ছে না সবার সাথে মিশে না একা একা থাকে। ব্যাস্ অপরুপ ধারণা করে নিলো যে সুরিয়া তাকে ভালোবাসতে শুরু করলো। 
কিছু দিন পর  তাদের পরিক্ষা শেষ হল। সুরিয়া ও তার বন্ধুরা ছুটিতে  দু'দিন বাদে বাড়ি চলে যাবে অপরুপকে ফোন করে জানায় ।  সুরিয়া বলে বাড়িতে আসলে ফোনে ঠিক করে কথা বলতে পারবেনা। একথা শুনে অপরুপ মনে মনে অনেক কষ্ট পায়। অপরুপ বললো ঠিক আছে যাও, হ্যাঁ রাতে একটা ফোন করবে তোমাকে কিছু কথা বলার আছে বলে অপরুপ লাইনটা কেটে দিলো।
সুরিয়া অপরূপ কি যে বলবে বললো তা নিয়ে ভাবনায় হতবাক হয়ে আছে।  সন্ধ্যায় নেমে এলো সুরিয়া অপরূপকে তার অসমাপ্ত কথা গুলো ফোনে জিগ্যেস করে। অপরূপ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে ব্যাকুল কন্ঠে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি সুরিয়া। সুরিয়া কথাটা শুনে অশ্রুসজল হয়ে বলে এই আমাদের বন্ধুত্বের পরিচয় অপরুপ? তখন অপরুপের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। অপরুপ অনেকক্ষ ধরে বুঝানোর পরও সুরিয়া কিছু না বলে অশ্রুসিক্ত হয়ে লাইনটা কেটে দিল।কারন সুরিয়াও মনে মনে তাকে খুব ভালোবাসতো।
 সারারাত অপরুপ সুরিয়ার কথা গুলি ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে মন খারাপ করে কান্নাকাটি করছে।

দু'দিন পর বাড়ি এসে সুরিয়া নিজেকে কন্ট্রোল করে  অপরূপ কে ফোন করে জানায় ভালো বন্ধু হয়ে পাশে থেকো অপরুপ। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।  তোমার প্রতি ভালোবাসার ফিলিংস আসে না আমার। কথা গুলি বলছে আর সুরিয়া চোখের জল ফেলছে তা অপরুপ ফোনের ওপাশে বুঝতে পারছে। অপরুপ বুঝতে পেরে সুরিয়া চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো আমাকে তিনমাস সময় দাও যদি তুমি আমার প্রতি ফিলিংস না আসে আমি আর কোন দিন তোমাকে ফোন করবোনা। সুরিয়া নিজের মনকে শক্ত করে অপরুপের চ্যালেঞ্জ কে সহমত করলো। তিনমাস! ঠিক আছে বলে লাইনটা কেটে দিলো। 
অপরুপ সুরিয়াকে ইমপ্রেস করার জন্য মাঝে মাঝে সুরিয়ার পছন্দের ডেরি মিল্ক নিয়ে  বাড়ি সামনে গিয়ে বাইকের হর্ণ বাজিয়ে তাকে দিয়ে আসতো আরো কতকি! সুরিয়ার বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো, সুরিয়া টিউশানে যাওয়ার পথে একটু কথা বলার জন্য। এভাবে দুমাস যাওয়ার পর সুরিয়া অপরূপকে বলে তোমার সাথে কথা না বললে আমার কিছু ভালো লাগছে না।  অপরুপ খুশিতে সুরিয়ার বন্ধু অম্পিকে ফোন করে কথা গুলি জানায়। অম্পিও বলে সুরিয়া অপরূপ সম্পর্কে অনেক কিছু শেয়ার করে, সে অপরুপ কে ভালো পায়। 

তিন মাস শেষ হওয়ার আর দিনেক পনেরো বাকি অপরুপ সুরিয়া থেকে কি উত্তর পাবে সেই কথা ভাবছে।এমন সময় সুরিয়া ফোন করে বলে অম্পির জন্মদিন আসছে দুদিন পর আমরা দুজন মিলে তার জন্মদিন পালন করে সারপ্রাইজ দেবো অপরূপ তার সাথে সহমত। সুরিয়া বললো দুদিন বাদে দেখা হচ্ছে ওখানে গিয়ে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে বলতে না বলতেই লাইনটা কাট হয়ে গেল। অপরূপ আর কল ব্যাক করেনি কারন সেই আগে জানতে পারে সুরিয়া তার বন্ধুকে জানিয়ে ছিলো, সে অপরূপকে ছাড়া  একমুহূর্ত ও ভালো লাগছেনা।

দুদিন পর কেক নিয়ে অম্পি বাড়িতে সুরিয়া ও অপরূপ উপস্থিত। অপরুপ মনে মনে ভাবছে আজ হয়তো তার প্রিয় মানুষটা তাকে মনের কথা বলবে। কেক হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে অম্পিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে  একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো দু'জনে কারন আগে থেকে কেউ  ফোনে করে জানায় নি। অম্পিও খুব খুশি কেক্ কাটলো সুরিয়ার হাত ধরে। সারাদিন খাওয়া-  দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত দিনে শেষে ফেরার সময় হয়ে এসেছে অপরূপ সুরিয়াকে বললো তুমি না আমাকে কিছু বলবে বলেছিলে? সুরিয়া অপরূপের  দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখের জল টপটপ করে ছেড়ে দিলো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে প্যাকেট থেকে রুমালটা বের করে দিলো। সুরিয়া বললো আজ অনেক দেরি হয়ে গেলো চলো বাড়ি যায়,যে কথা বললো বলেছিলাম তা ফোনে করে বলবো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে অম্পিকে বললো আজ ওঠি, আর অম্পি কানে কানে বললো অপরূপ দেখবে সুরিয়া তোমাকে ফোন দিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। এরপর অপরূপ হাসিমুখ হয়ে, দু'জনে দুজনার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল। বাড়ি গিয়ে ফোন করার জন্য বললো সুরিয়াকে।

সন্ধ্যা যত হচ্ছে অপরূপ সুরিয়াকে নিয়ে কত কি স্বপ্ন দেখছি আর  তার ভালোবাসা আজ স্বার্থক হতে যাচ্ছে কল্পনার জগতে  অনেক খুশি অপরূপ। কিন্তু রাত হয়ে গেলো ফোন আর আসে নি। অপরূপ ফোন করতে করতে শত চেষ্টা করে হতাশ, কেননা ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছে সুরিয়া । আজও অপরূপ প্রিয় মানুষের ফোনের প্রতিক্ষায় ।

মাধুরী সরকার

মুখোশ

মানুষ সবসময় ইচ্ছে করলেই 
মুখোশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না,
রাতদিন মুখোশের বেচা-কেনা...

এই যে অগণিত মুখ ,
দূর থেকে দেখে মনে হয়
নির্ভেজাল,দুঃখহীন আর সাদামাটা সব।

অথচ প্রতিটি মুখেই লুকিয়ে আছে মুখোশ
যান্ত্রিক মুখোশের ভীড়েই চলে 
নিদারুণ অসময়ে দিন বদলের সুর।

বাস্তবতার শহরজুড়ে মুখ-মুখোশের গন্ডীবদ্ধ প্রতিদিনকার সমাজ যাপন।
একের মধ্যে দু'য়ের বাস 
মনন চিন্তনে কেবল অভিনয়ের গোলক ধাঁধাঁ!

কত মুখ হাসি রেখে ঢেকে যায় ভগ্ন হৃদয়ের ক্ষত।
আমরা সবাই কেবল মুখোশ ফেরি করি 
সকাল থেকে রাত...

সুস্মিতা মহাজন

খেয়ালিপোলাও 

আলোর কাছাকাছি যেতে অনেকটা পথ বাকি,
কঠিন আঁকাবাঁকা পথ।
হারিয়ে যাওয়া প্রতিনিয়ত,
ভয় পেরিয়ে এককদম এগিয়ে। 
সহজ অধ্যায় ছেড়ে কঠোর পাঠ,
একটা পুরো বই ছাপিয়ে যাবে শেষ।
গল্পটা নিতান্তই অজানা, 
অজস্র নতুনত্বের ছোঁয়া গায়ে।
হাসতে গিয়ে নয়ন ঝরে ঝর্ণার, 
সমুদ্রে ঠিকানাহীন তার উপসংহার। 
চলতি পথে হোঁচট খেয়ে স্বপ্ন ভাঙ্গে, 
বাস্তবতায় অলীক কিছু খেয়ালিপোলাও।

মধুমিতা রায়

জন্মদিন ও একটি মেয়ে

মেয়েটিকে অনেকদিন পর দেখলাম
সামনাসামনি নয়,ছবিতে
রোগা হয়েছে কি! 

জন্মদিনের কেক হাতে
মলিন নিষ্প্রভ বিষন্ন ছবি

কোথাও একটা ধাক্কা লাগলো

দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে 
সমস্ত দরজাগুলো বন্ধ করে
সত্যি কি সে ভুলতে পেরেছে ছেলেটিকে!
নাকি!

আমিও ওকে কম গালি দিইনি মনে মনে
যে ছেলেটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল
প্রত্যাখানে
সে আমার বন্ধু ছিল।
গতবছরের জন্মদিনে মেয়েটির ঝলমলে মুখটা
কেন জানি মনে পড়ে গেল হঠাৎ ই।

তপা মজুমদার

প্রেমের জোয়ার

ঝিরিঝিরি বর্ষায় দুজন দুজনায়,
ভিজে যাই নীরবে সুপ্ত মোহনায়।
হাতে হাত রেখে -চোখের ভাষায়,
হারিয়ে যাই সংগোপনে প্রেম যমুনায়।
জোয়ার -ভাঁটার তোড়ে যাই  ভেসে ভেসে
কিনারা খঁুজি শেষে অধিক ভালোবেসে।
 চাঁদ,তারা সাথে তিথির লগন-
পাশে আছে ধ্রুবতারা হৃদ্ - পবন।
গুরুগুরু গর্জন আর বিদ্যুৎ চমক,
আকড়ে বাঁচি দুজন বুকের ফলক,
হাফিয়ে উঠি নকশায় দেখে চিত্রায়ণ, 
ধুলো -মাটি ই গড়া  এ কোন রূপায়ণ? 
ঝর্ণা স্নানে -শীতল দেহ নশ্বর,
তবু্ও হাঁটি সরিসৃপ- মোরা... অবিনশ্বর। 
মুক্ত বাতাসে মুগ্ধ ষড়রিপুর স্খলন-
উদাস -তপ্ততায় মাখা রিক্ত স্পন্দন।

        

আশিষ ভট্টাচার্য

এখানে প্রেম কোথায় বলো

প্রিয়াকে যদি যত্নে ভালোবাসো
তবে ধর্ষিতা ফের ধর্ষিতা কেন? 
তোমার যত্নের সেই প্রেম তবে
নিখুঁত ছিল না মোটেই ; 
কান পেতে শোনো ওই
শুদ্ধ বেহালাও গোঙাচ্ছে 
তোমার ভুল হাতে।
উল্লাসক্লান্ত এক নষ্ট পুরুষ 
ভালোবাসার মানেই বুঝলে না,
পাবে না তাই তুমি কোনদিন 
নীল যমুনার একবিন্দু ভালোবাসা।

Friday, March 31, 2023

মনন স্রোত, ত্রিপুরা

শ্রদ্ধাঞ্জলি | লিটল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত

শ্রদ্ধাঞ্জলি | কবি চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং

সম্পাদকীয়

চলে গেছেন লিটল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ, কঠিন জীবনের প্রহরী সন্দীপ দত্ত। তাঁর স্মৃতির প্রতি শুধুই শ্রদ্ধা। দেখানো পথেই আমাদের সম্পাদকীয় যাত্রা। এ ক্ষতি বড় ক্ষতি। রাজ্যের কবি চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং চলে গেলেন অকস্মাৎ। দুদিক সামলে উঠা বড়ই কঠিন। এ মতাবস্থায় আগরতলা বইমেলা। স্মরণের মঞ্চ মূলত। স্মরণ করি। বিনম্র শ্রদ্ধা।


জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

Wednesday, March 29, 2023

জবা চৌধুরী

স্বপ্ন-সেতু

কবিতা লিখতে বসলেই একটা স্বপ্নের সেতু দেখি ।
বর্ণমালাদের দৌড়-ঝাঁপ অবিচ্ছিন্ন মমতার হাত ধরে 
দিন-রাত মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেখানে,  
পাকা ধানের শব্দ আর সন্ধ্যাপ্রদীপ একসাথে গান গায় 
চোখের জলের নীরবতা ভাঙতে 
ডুবপুকুরে টুপ্ করে লাফিয়ে ওঠে অচেনা এক মাছরাঙা  
মন কেমনের গায়ে লাগে প্রাণের ঢেউ। লেখনী এগোয়। 

পাশ দিয়ে নূপুরে রুমঝুম তুলে কে যেন চলে যায় 
সে মুখ দেখা হয়না, তাকে শুধু কল্পনায় আঁকি। 
নিষিদ্ধপ্রেম জেনেও তার গায়ে মেখে দিই একমুঠো জোছনা
মেঠো দীর্ঘপথ পেরোনো সে এক অচেনা কৃষ্ণকলি 
ভাটিয়ালি গানের সুরে-তালে বেঁচে থাক তার চলা।
অক্ষর জুড়ে চলে আমার অনন্ত মালাগাঁথা 
দুঃখ ভুলে মন স্বপ্ন কুড়োনোর খেলায় মাতে। লেখনী এগোয়। 

সেতু বানানোর শেষে বুক জুড়ে বয় মমতার স্নিগ্ধ ধারা    
মায়ের ভাষা শীতের চাদরের মতো জড়িয়ে ধরে আমায় 
মুগ্ধতার আবেশ আলো ঢেলে দেয় স্বপ্নের পথে  
আমি কল্কেপেড়ে শাড়িতে নিজেকে সাজাই 
বিভোর আমি পথ পেরোই --রোদ, বৃষ্টি, ঝড় 
নীল আকাশ মিশে যায় আমার সেতুপথে 
বসন্তশেষে আবার দাবদাহ আসবে জেনেও।

লেখনী শব্দ ছুঁয়ে থাকে --- সংগোপনে, স্বপ্ন দেখার ছলে।

পূজা মজুমদার

মেঘ বার্তা

এক একটি সময় পার হওয়া,
কিছু স্রোত ধরে রাখা
পাথর দিয়ে থেতো করা হলো
কয়েকটি কথা! 
পাতায় রাখা একফোঁটা বৃষ্টির জল ,
উপমা হয়ে হাঁটছে...
বিশ্বাসের মধ্যে লুকিয়া থাকা ঘাম ,
যার ওজন জানা নেই।
মুখের এঁটো কথা
হিংসার আলনাতে
ঝোলানো 
তৃষ্ণা মেটানো হলো সকালের 
আত্মভোলা মেঘ বার্তা নিয়ে এলো
সর্বহারা সংশয় 
মাটিতে কুড়িয়ে পেলাম
ভালোবাসার দানা ..
পৃথিবীর বাতাসে মিশে আছে শত-সহস্র বুকের দীর্ঘশ্বাস।

Tuesday, March 28, 2023

রাজীব চন্দ্র পাল

ইচ্ছে ডানা

ইচ্ছে করে
আমার যা কিছু নিজের সব বিলিয়ে দিই অকাতরে,
ইচ্ছে করে 
আমার যা কিছু ভালো সব ছড়িয়ে দিই অঙ্কুর করে,
ইচ্ছে করে
আমার সব হাসি দিয়ে হাসি ফোটাই নীড়ে নীড়ে,
ইচ্ছে করে
সকলের যত মন্দ আছে উড়িয়ে দিই ফুৎকারে,
ইচ্ছে করে
যার যত দহন আছে কুড়িয়ে আনি নিজের তরে,  
ইচ্ছে করে
যে আগন্তুক পথ হারায় পাথেয় হই তার তরে,
ইচ্ছে করে
সব মানুষকে আপন করি নিজের করে,
ইচ্ছে করে
আমার এই আমিটাকে উজাড় করি সকলের তরে।

দেবাশিস দাস

বিরুদ্ধতা
.
একটা ইমেজ থেকে জন্ম নেয় অনেকগুলো স্বেচ্ছামৃত্যু।

যেমন, ধানের খলা থেকে পিঁপড়ের পালানোর শব্দ
অথবা, ঝাড়াই এর পর ফেলে দেওয়া
অবাঞ্ছিত শস্য দানা বা মানুষ।

এভাবে একটা শীত চলে যায়।

মৃত্যু বা বিচ্ছেদের মতো স্বাভাবিক ঘটনা 
মানুষ আর শস্য দানার মতো গুরুত্ব হারিয়ে পড়ে থাকে শহরের ফুটপাতে  …

নন্দিতা দাস চৌধুরী

প্রতীক্ষার চিহ্ন 
.

খসে পড়া সম্পর্ক নদী হতে শিখিয়েছে,
অপেক্ষার প্রহরগুলো একাই গুমরে কাঁদে,

আজীবন শূন্যতা নিয়ে সন্ন্যাসী বিকেলকে বুকে আগলে রেখেই 
কন্টক পথ হাঁটা,

কত বসন্ত বর্ষা চলে যায় পাশ কেটে,
নক্ষত্র মাখা রাতের গন্ধ মেখে যায় কত কাল,
কখনো পেঁচার ডাকে ঘুম ভাঙে, 
একফালি চাঁদ বসে থাকে বারান্দায়, 

এ যেন দেবত্বের প্রতিভূ স্থাপন, 
নিয়মের স্রোত তো গড়ায় প্রতিক্ষণ,

শর্তহীন জড়িয়ে থাকা সে তো আদ্যোপান্ত ভগ্নাংশের সাথে,
স্মৃতির দাওয়ায় পড়ে থাকে এক প্রতীক্ষার চিহ্ন।

মিঠুন দেবনাথ

বিশ্বরূপের হাট
.
বিশ্বকোষে হাট বসেছে বাজার জুড়ে ঝড় ,
কেউ নিচ্ছে মুন্ডু গোটা কেউ নিচ্ছে ধর ।
কেউবা আবার দালাল সেজে ডলার দিনার ধরে ,
কেউবা আবার খুচরো নিয়ে চালা বস্তা ভরে ।
ঘুষ হয়েছে শ্বেত শব্দ সেলামী তাহার নাম ,
সুযোগ বুঝে পিঁপড়ে সেথায় নিচ্ছে চরম দাম ।
শেষের রাতে মোরগ ডাকে মাঝের রাতে পেঁচা ,
আড়াল থেকে তাকিয়ে দেখ চলছে কেনা বেচা ।
মাঝের পাতা যেমন তেমন সূচীপত্রে ধাঁধা ,
বস্তা পিঠে দৌঁড়ছে সেথায় দ্বিপদ যুক্ত গাধা ।
হাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে মরছে গাধা পায় না মরুর কুল ,
হাঁড়ে মাংসে একাকার বিকেল বেলায় ফুল !
মাঝের পাতা নাই বা হলো শেষেরপাতায় শোক , 
বিশ্বকোষের হৃদয় জুড়ে যাবর কাটার লোক ।
এমনি ওদের যায় না ধরা হরেক রকম সাজ ,
আলো আঁধার দুই বেলাতেই যাবর কাটার কাজ ।
কালো বেড়াল পথ কেটেছে দুই পা পিছে নাও ,
গন্ধ বুঝে সঙ্গ ছাড়ো বাঁচতে যদি চাও ।

সুস্মিতা মহাজন

কলঙ্ক 
.

একসাথে অনেকগুলো মনকে পুড়তে দিলাম,
শেষে বললাম ভালো থেকো!
জানি এগুলো ছাঁই হবে,
একটা সময় দমকা হাওয়ায় সবটা উড়ে যাবে।
কিছুটা আগুনের তাপের দাগ হবে শরীরে, 
জমাট বাঁধা কালো ছাঁইপোড়া দাগ।

পীযুষ রাউত

দোষ দেবো কাকে 

তিল তিল করে গড়ে তোলা,তিলোত্তমা না হয় না-ই বা হলো,আমার স্বপ্নের নির্মাণ
এই পর্ণকুটির, পরম শান্তির,সেই কবে থেকে দাউ
দাউ করে জ্বলছে, তখন বুঝিনি,এখন মর্মে মর্মে অনুভূত হচ্ছে ক্রোধ ও বিষাদ। কেননা তিনতলা 
দালানবাড়ির অনাবশ্যক লোভে আমিই স্বহস্তে সেদিন পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়েছি।সেই সে
আগুন রাবণের চিতার মতো আজো নিরবধি দাউ
দাউ করে জ্বলছে। এই সর্বনাশা লেলিহান আগুনকে একমাত্র আমিই বশে আনতে পারি 
আমার শত্রুকে আমিই বধ করতে পারি।কিন্তু পারছি কই? আর দোষের কথা যদি বলো,ভাবনাও
মননে দোষ দেবো কাকে?  দোষ দেবো  কাকে? 
দোষ, সেতো আমারই। দোষ সে তো আমারই
মহামূর্খ লোভের।

সুস্মিতা দেবনাথ

নারী ও নদী
.

রোজ রাতে মেয়েটির ঘুম ভেঙে যায়
কান পেতে কারো কান্নার শব্দ শুনে 
উঠে দাঁড়ায় অলিন্দে ,
না কাউকেই দেখতে পায় না...

ফিরে আসে ,
দেখে বিছানার পাশ দিয়ে 
কল কল শব্দে বয়ে যাচ্ছে নদী।

তাতে ডুব সাঁতার কাটছে 
হৃদয়ের জমাট কোলাহল
এক অদ্ভুত শূন্যতায়।

শুভ্রা দেব

বসন্ত বিলাস 
.
কুয়াশার চাদর গুটিয়ে 
প্রকৃতি পড়েছে সবুজ শাড়ী,
ঝড়াপাতার মর্মর শব্দে
কচিপাতার ঠোঁটে হাসির ঝিলিক।

রাঙা পলাশ ঘিরে 
বইছে প্রেমের জোয়ার, 
আবির মাখানো হাতে আঁকা
বুকভরা ভালোবাসার রেখা।

বসন্ত রাজের বিনিদ্র রাত কাটে
শীতের বিদায়ী সংবর্ধনায়,
কোকিলের কুহু রবে
অপ্রেমিকের গান বাজে।

তপ্ত উদাস নির্জন দুপুর 
স্বপ্ন বুনে রাশি রাশি ,
কখন মনে জাগবে ফাগুন 
প্রিয় মানুষের হাতের ছোঁয়ায়।

হলদে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে 
লুকানো মনের অভিলাষ,
খোঁপায় দুলানো কৃষ্ণচূড়া 
নীরব প্রেমের গল্প শোনায়।

আলমগীর কবীর

মৃত্যু 
.

আমরা প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্ত, প্রতি ঘন্টা,  প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড মৃত্যুবরন করি।

শুধু আমরা নয় আমাদের আশে পাশে অগণিত প্রিয়জন মৃত্যুর দিকে চলে যায় আমাদের চোখের সামনেই।

 আমরা একটুও ভাবিনা।  গভীর ভাবেতো একদমই নয়! আমাদের দিকে চেয়ে থাকে আমাদের পিতা মাতা....

কত স্বপ্ন দেখে, কত কি কল্পনা করে সাজিয়ে রাখে আমাদের জীবন, শুধু অপেক্ষা করে কোনো এক মুহুর্তের! 

ভরসাবিহীন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, আমাদের জীবন বেড়ে উঠার দিকে, 
আর আমরা ফুর্তির ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াই। 

কোথায় যাই, কেনো যাই কিছুই জানিনা
এদিকে শত ইচ্ছে, ভরসা, স্বপ্নের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমরা!

এমন অসংখ্য মৃত্যু হয় আমাদের জন্য আমরা বুঝিনা,
আমরা বুঝতে চাইনা,! 
ভুলে গেছি আমরা লাশের স্তুপের উপর বাস করি!

দিন দিন এতো মৃত্যু হয় যে বাতাসে শুধু দুর্গন্ধ
কিন্তুু আমরা এমনভাবে হারিয়ে গেছি আমরা কোনো গন্ধ পাইনা...!

রাজদ্বীপ সাহা

দহনে
.
জানি এবার যেতেই হবে,
ক্লান্ত সবাই। ঘুমালে সবে।
শেষ বিপ্লবে
ভেসে আসে বেদনার ডাক।

হঠাৎই জীবন তছনছ ঝড়ে,
জমি দিও তোমার কবরে —
আফিমের ঘোরে
ধীরে ধীরে বাড়ে সন্তাপ...

সাজিয়ে দিয়েছি তোমায় বর্ণে,
চোখ মেললেই, জ্বর নেই —
একদিন থামবেই
তুমিও সেদিন রাখবে হাত হাতে।

সন্তাপে পুড়ছে তাই প্রণয় —
রোজ চলে ভালো থাকার অভিনয়
শখ নয়
বালিশ ভেজানো, প্রতি রাতে...

লোকে ভাবে পলাতক ক্ষত,
সবই যাচ্ছে দূরে ক্রমাগত। 
হৃদয়ে ক্ষত
পোড়ার খবর কেউ রাখেনা মনে।

অবয়বের সংখ্যা বাড়ে ভোরে
তাই গান গাই বিষাদী সুরে —
যাচ্ছো দূরে
পুড়ছি তাই। তোমার দহনে...

মিঠুন রায়

কল্পদ্রুম
.
তোমার সচেতন চোখে পড়ে আছে নগ্নতার ছায়া।
ছায়া মাড়িয়েই সুবিধাবাদীরা স্বপ্ন দেখে মায়াবী সিংহাসনের।
দিন বদলের অভিনয় অবশেষে থমকে দাঁড়ায়।      কথা ও কবিতার  গ্লানি
আগামীর রাত নিশ্চিহ্ন করে দেয়  দুঃস্বপ্নের কল্পদ্রুমকে।
সুযোগ বুঝে সুবিধাবাদীরা  লুট করে আমার সর্বস্ব...

সঙ্ঘমিত্রা নিয়োগী

শীর্ণকায় সংসার
.
অনাহারের দিন ঘামের দরে বিক্রি হচ্ছে। 
রাত্রির গমগম বিলাস ছেড়ে সকাল 
  কারোর ঠোঁটে বাঁচবার দীর্ঘ আবদার, 
অবশ টেবিলে যন্ত্রণা বসে আছে চুপচাপ , 
 পরিচারিকা ধার নিয়েছিল
ঘুম ফুটো হয়ে যাওয়া সংসার জোড়া দিতে;
দেখতে পেলাম শিখাদির চোখে
   সংসার সুখ খেলছে
 উপন্যাস প্রকাশিত হবে
যে বেলায় শিশুরা পড়ছে রোদ, 
তুমুল প্রেক্ষাপট টেনে
ধার নেওয়া টাকা  ফেরত চেয়েছি, 
প্রকাশিতব্য উপন্যাসের কল্পনা ছিঁড়ে আমি অপলক তাকিয়ে
 শিখাদির চোখ থেকে 
ফাগুনের পাতার মতো 
 সংসার ঝুরঝুরে পড়ছে।।

নীলমণি দাস

শিশু
.
একটা শিশুর মুখ 
শান্ত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ,

একটা শিশুর কান্না 
সূর্য্যের শক্তিতে ভরপুর,

একটা শিশুর পেলব স্পর্শ
শিরায় শিরায় অনাবিল অনুভূতির স্রোত,

একটা শিশুর মিটিমিটি দৃষ্টি
হাজারো প্রশ্নের ছড়াছড়ি,

একটা শিশুর হাসি ভালোবাসার অমোঘ ব্যাপ্তি,

একটা শিশু আগামীর পথিক।

শ্রীমান দাস

ঘর   
.

তোমার চৌহদ্দি জুড়ে অবিশ্বাসের দমকা হাওয়া,
এ প্রান্তে আমার আদর্শের জীর্ণ কুঁড়েঘর।

উন্মাদিনী ঝঞ্ঝা এসে নাড়া দেয় বারংবার,
আমি বুক পেতে আগলে রাখি ঘর।

হোক না এ ঘর জীর্ণ,থাক না দুঃসময়ের গ্লানি
তবু এ মায়ার আচ্ছাদন আপন বলেই জানি।

যে ঘর তুমি ভাঙতে চেয়ছো অবিশ্বাসী প্রলয়ে 
সে ঘর আমায় আশ্বস্ত করে প্রতিটি ভোরে।

তুমি যতই ছিঁটাও কালিমা - মিথ্যা অভিযোগ
তবু এ ঘর আমার কাছে প্রেরণাদায়ী মন্দির।

মুকুল রায়

গত্যন্তর নাই
.
এত গ্রামার মেনে হবেটা কী?
এই যে কোকিল গাইছে
ও কী গ্রামার বুঝে...
ও কী শুদ্ধ স্বর কোমল স্বর বোঝে?
অথচ ওর কুহুতানে কত তপ্ত হৃদয়ের জ্বালা সরে যায় কবির কবিতা সৃষ্টির প্রেরণা 
ওই যে কাল চুল মুন্ডুতে
আাড়ালে সাদাকে অস্বীকার করতে পারবে? 
কোনও দুরভিসন্ধি নেই, অকপটে বলতে পারবে?
গলা সপ্তমে চড়িয়ে লতা মুঙেশকর, কিশোর কুমার হতে চেয়েছ, অস্বীকার করতে পারবে?
মানুষ ভাবে এক, ভগবান করেন আরেক
সরল সাদাটে থাকতে চেয়েছ
তবু্ও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছ
সত্যি জেনেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছ
ভগবানের আরাধনায় মগ্ন হতে চেয়েছ হয়ত
শতাধিক কারণে শতবার তা ভন্ডুল হয়েছে
শতাধিক কারনে স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়েছে
জীবন-মৃত্যুর দোটানায় সদিচ্ছার অকাল মৃত্যু হয়েছে 
জীবনের চৌমুহনীতে এসে সিদ্ধান্তে দিশেহারা 
গত্যন্তর নাই সব মেনে নেওয়া ছাড়া।।

পঞ্চু পোড়েল

বসন্তের দ্বিপ্রহর
.
দূরে দেখি চেয়ে গ্রামের ছেলে মেয়ে
ব্যস্ত আবির খেলায়
একাকী নির্জনে গৃহের এক কোণে
শান্ত দুপুর বেলায়।
মনে ওঠে ঢেউ বুঝলো না কেউ
ভগ্ন হৃদয়ের ব্যথা
বোঝে শেষমেষ সুজলা পরিবেশ
আমার মনের কথা।
ওই দেখা যায় অরণ্যের গায়
আগুনের বহ্নিশিখা
ফাগুনের মাস শিমুল পলাশ
অরণ্যের সীমারেখা।
ফুলের সুবাস বয়ে আনে বাতাস
মৌমাছির ঘ্রাণ ভরে
গুনগুন গানে কত কথা প্রানে
চলে দীর্ঘ সময় ধরে।
করে ডাকাডাকি কত রকম পাখি
ক্লান্তি ভাঙা স্বরে
কপোত কপোতী প্রেমেতে আহুতি
নিজের বানানো ঘরে।

সৈকত মজুমদার

মেকি ভালোবাসা

আর এসো না
আর কখনো এসো না,
আমার সুখে অসুখে কিম্বা
আমার আনন্দে বিষাদে
বিরহ বিচ্ছেদে আর শশ্মানে
তোমাকে দেখতে চাই না;

তুমি আর কোনদিন এসো না,
তোমার মেকি ভালোবাসা চাই না
আমার এই অচল জীবনে। 

রূপঙ্কর পাল

একটি অন্ধকার রাত 
.
চারদিকটা আলোর বৃত্ত, মাঝে ছোট্ট অন্ধকার 
আলোকে যেনো জাপটে ধরে তা–
বহু কাহিনি রহস্যে ঘেরা, তবুও
সমাধানের সূত্রে রাত কেটে সূর্যোদয়,
কিন্তু, না মেলানো অংকের মত সবটা...
নিস্তব্ধ-নিরালা যাপন, গল্পের ভীড় চোখে
ঘুমহীন, আয়নায় অন্য চেহেরা – অদ্ভুত!
নিজেকে না চেনা, প্রশ্ন করা, উত্তর হাতড়ানো;
কোনো এক বোধ ঠিক মাথার উপর
খেলায় মেতে উঠে, একটা সময় মিলে যায়
তখন সূর্যটা ঠিক বুকের উপর, সম্পূর্ণ দিন।

আশিষ ভট্টাচার্য

বলো কী লাভ
.
এই দগ্ধ বসন্তে সংগীত! শিশু!
কোন কিছুই যে লাগে না ভালো,
ভোরের কাগজ খুললেই 
চারদিকে শুধু অগ্নিসংবাদ।

আমরা অর্জন করি প্রতারণা,
বর্জন করি না কিছুই ;
আজকাল ক্যাডার নার্সিং নেই বলেই
শিখতে পারি না ফুল ফোটানোর কলা,
মরার আগেই মরে যাই কতোবার।

বৈমানিক হয়ে কী লাভ 
না যদি হতে পারি সেই 
"মানুষের মত মানুষ" ?

চন্দন পাল

চৈত্র 
.
কাঠ ফাটা রোদের শ্বাসে মাঠঘাট যেন পিপাসায় মরে।  
বছর দেনায় শূণ্য গোলা, ঘর নিল কালবৈশাখী ঝরে।

ঢাকী ফিরা গাঁজন, হালখাতা, সন্ধিতে নববর্ষ বর্ষ অন্ত।
বাসন্তী পূজা সুদিন বোধন, অভাবেও যেন টুকরো বসন্ত।

পাড়ায় পাড়ায় চড়ক মেলা  কসরতে গাঁথে বড়শি পিঠে 
রিডেকশান আর চৈত্র সেল  উপচে পড়ে গড়ের মাঠে।

আলু তরমুজ মটর চরে, আমকুশি সাজনা ডালে ডালে, 
ঘরদোর মুছে ক্রান্তিকালে লাড়ু চিড়া দই সাজায় থালে।

প্রণব দাস

সার্পোউইস

মূর্খামির ইতিহাস বানায় হোলিজেন আর সেক্টারিয়ান,
ঢেউ যেদিন ব্রিজ বেয়ে যায়,সভ্যতা চায় মিউটেশান।
শীতের দরজায় ঠোক বসায়,আসে বসন্তের সমাগম-
যদি কেউ চিৎকার করে,শেষ বলে সাধারণ।

কোথাও যেন শূন্যতায় ঘিরে আছে চারপাশ,
কোথাও হৃদদরজায় শুধু ছাইয়ের বাস!
কোথাও ঘামে ব্যথা কষ্টরা পুড়ে যায় লেলিহান শিখায়
আর কোথাও নীরবতা চোখ মেলে যায় নীরবতার ঠিকানায়-
 
তবে বাস্তব যখন কঠোরতা হানে-
বাতাসের ডাক আসে এক উষ্ণ হাওয়ার,
এখনো ক্লান্ত হৃদয়ে সুবিশাল দীর্ঘশ্বাস
যখন বিষন্নতায় ছারখার আশপাশ!

তবে শান্তির একটা ঝড়ো বাতাস আসুক,
প্রবলাবেগে ভেসে যাবো অদ্ভুত মনোচ্ছাসে।

অপাংশু দেবনাথ

ধান্দা
.
রূপ বদলাতে বদলাতে চোখে মুখে প্রাজ্ঞতা আসে, 
চামড়ার ভেতর জেগেছে কৃপণ-কামুক মন।
.
ধান্দা বেঁচে বর্তে থাক ছলনার অভিসারে।

অনামিকা লস্কর

ভাঙ্গা স্বপ্নের গৃহিণী
.
ছোটবেলা বর বউ খেলার সময় 
গোপাল আমার বর হয়েছিল--
বড়ো হয়ে কতোবার বলেছি
আমি আর বউ হবো না। 
গোপাল বর হলো না, বরং আমি-! 
 
কথা হয়েছিল ঘরের চব্বিশটা দরজা জানালা দুজনে খুলবো বন্ধ করবো। 
বেসিন বাথরুম পালাক্রমে হবে পরিষ্কার, ঘরের সব কাজ দুজনে মিলে করবো। 
সব কথা ভুল ছিল, আমি গিন্নি হলাম
পাকা ভাবেই পুরো বাড়ির মালিকানা। 
বন্ধুদের সামনে যখন তখন যাবে না, তাইতো পরপুরুষের সামনে গিয়ে কি লাভ?  

বন্ধুর বউদের সঙ্গে আড্ডা গল্প সারেন
খুব মিশুকে আধুনিক মেয়ের সংজ্ঞা পাই। 
আমি আধুনিক মিশুকে হওয়ার স্বপ্ন দেখতেও ক্লান্ত বোধ করি। 

দক্ষিণ দিকের সব জানালা খুলে দেবে,রোজ দিন তাই করি। 
পাশের বাড়ির সুন্দরী বউটা পূজো সেরে ছাদে আসে, পায়চারী করে এদিক ওদিক। 
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রভাকরের আলোয় লাবণ্য প্রভার দর্শন ভালো লাগে। 
আমার খারাপ লাগে এটা বলিনি কোনোদিন ,বলতে ইচ্ছে করেনি।

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী

তখন মাঝ রাত
.
বিছানায় আমি একা নই।
পাশের বালিশে অদৃশ্য এক ঘুম-
ঘুম কথা বলে,
জড়িয়ে ধরে
চুমু খায়-
আর প্রতিটা চুমুর পর
আমি মধ্য রাতের ভূত হয়ে বসে থাকি
কবিতা লিখবো বলে।

উর্মি সাহা

জাদু-বাস্তব

আমার তালিকায় মুখ চেনা মেয়েগুলো অবহেলায় অনাদরে ভুগছে।
বিশেষ বিষের পেয়ালা চাইছে,
অনাহারে অভদ্রতায় জড়িয়ে নিয়েছে নিজের মনকে।
ভালোবাসায় ভালবেসে ছুরাঘাত দিচ্ছে, নয়তো নিচ্ছে।
নেতা মন্ত্রী আমলা দের মত এরা ভবিষ্যত বাণী জানে না,
কিন্তু; এরা ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝে গেছে!
এরা বুঝে গেছে-
চারিদিকে শুধু ম্যাজিক রিয়ালিজম।
তাই মেয়ে গুলো জানে, চৌমাথায় তাদের আরশোলার মত থেতলে লাথি মেরে ফেলবে সবাই।
তাই মা'কে বলে এসেছে ফিরতি পথে-
প্রাণ থাকতেও পারে
নাও থাকতে পারে। 
                                                          

সংগীত শীল

রাত্রি শেষে

সমস্ত পথের ধুলো মাড়িয়ে  
নতুন করে জীবন আঁকতে বসলাম,
তুমি ঠিক আগের মতই পাশে আছো মল্লিকা
তোমাকে ভুলে যেতে হয়নি
ভুলা সম্ভব না,
তোমায় নিয়ে আমার হৃদয়মননে 
তারুণ্যের খেলা; তাইতো মল্লিকাকুঞ্জে ভ্রমর উড়ে।

কত নিন্দা উপেক্ষা করেছি,
তবুও তোমার আমার দূরত্বে 
বিষন্নতার ছোঁয়াচ লাগতে দিইনি কখনো,
জাপটে ধরার প্রবল তৃষ্ণা
আজও আমাকে বেঁধে রেখেছে।

যেমন করে স্বপ্ন দেখিয়েছো আকাশছোঁয়ার
থেকেছো জীবনযুদ্ধের সাক্ষ্য হয়ে।
হেরে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে
তোমার কথা মনে পড়ছে;
এভাবেই উপসংহারে চিহ্নের দাগ রেখে যেও
আমিও এক এক সিঁড়ি বেয়ে যাব।

জিএম কামরুল হাসান


অভিমান!
.
অভিমান....
তুমি বড়ই নস্ট 
তোমার স্বভাবের বড় অভাব
তুমি তিলকে কর তাল, চেতন কে মাতাল
তুমি ঘুন পোকার মতো কুরে কুরে
নিশ্বাস করো বিশ্বাসের বেড়া
সোজা মানুষের অন্তরে ঢুকে কর ত্যাড়া!
অভিমান....
তুমি দাও বড় কস্ট
তোমার কারনে ঘর ভাঙ্গে যার তার
ছেড়ে যায় কার সব সম্পর্ক 
তুমি ঘন ঘন রং বদলাও ইচ্ছে মত
বর্ণচোরা সাপের মত তুমি 
তোমাকে বিশ্বাস করে বহু ঠকেছি!
অভিমান.....
তুমি গড়তে পারনি কোন বিশ্বাস
তুমি দুঃখ দিতে গড়েছো সেই ইতিহাস
আপন করেছি তোমায়, বোঝেনি ওরা
দূরে সরে যায় তাও বোঝেনা
ওরে নিষ্ঠুর ওরে হতভাগা হতচ্ছাড়া
সব কেড়ে নিয়েও কি তোর সাধ মিটেনা!

অভীককুমার দে

নীলপাখি

১)
নদীটি মুহুরীর মতোই
বৃষ্টি শেষের জলে সোনারোদের আলো

হতে পারে শূন্য
তবুও আকাশের জায়গা হয় 
বন্দর ছেড়ে উড়ে আসে মেঘ
এই বুকে-

ছবি-ছবি খেলা শেষে পালিয়ে যায় নীলপাখি।

২)
আমরা তাল খুঁজি পরগাছার কাছে
যত্তসব কোন্দল, এখানেই-
ঝুলন্ত দেহ, আহত নগর, শিকারী তারা 
ভয়াল রাত বিলি করছে নিয়মিত 

শূন্য বলেই, বুক থেকে তুলে রাখি সুখ
অথচ আকাশ ঢুকে পড়ছে, আকাশে-

নীলপাখিটি মাটির খোঁজে শেয়াল হয়ে যায়।

বিনয় শীল

বেয়াদপ
(রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে)

সুতা নাতার ধূয়া তুলে
যুদ্ধবাজরা শান্তি ভুলে
ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান দিয়ে
বোমার আঘাত হানছে।
গগনচুম্বী ভবন গুলো
বিকট শব্দে ভাঙছে ।।

যুদ্ধে তো নাই দাড়ি-কমা,
এদিক ওদিক ফেলছে বোমা,
বনভূমের দাবানল, 
শহর বুকে আনছে।
স্ব-জন হারা হয়ে মানুষ, 
অঝোর চোখে কানছে ।।

টেঙ্ক-মিসাইল-ফাইটার-বম্বার,
বিধ্বংসী সব অস্ত্র সম্ভার,
গুলি বৃষ্টি করতে সেনা,
ট্রিগার চেপে টানছে।
যুদ্ধ চাইতে শান্তি দামী,
কে কার কথা মানছে ।।

কামানের কি বিবরণ,
আগুন গোলার উদগীরণ,
জীবন ভূমি ধ্বংস করতে 
উল্কা বেগে ছুটছে।
এতেই কিছু বেয়াদপরা 
বেজায় মজা লুটছে ।।

মানবতার বন্ধু যারা,
সঙ্গোপনে জাগছে তারা,
অমানবিক ধ্বংস কান্ডে
ধৈর্য তাদের টুটছে।
চিতা সাজায় তোদের লাগি
কবর সারি খুঁড়ছে ।।

Tuesday, February 28, 2023

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

ভাষার মাসের শেষদিন। এ শেষের কোনো শেষ নেই। জগতের যত শেষ আছে, তার কোনো সীমা নেই। ফুরিয়ে যাওয়া যেন আরেক সম্ভাবনা। নতুন সম্ভাবনা। কবিতার নীরবতা জেগে উঠে উচ্চারণে, আবৃত্তি শেষে আবার নীরবতা। প্রকৃত নিয়ম কোনটি শব্দ, নাকি নীরবতা। এ প্রশ্নটির কাছেই যত জগৎজিজ্ঞাসা। অভিপ্রায়। অভিমান। মনখারাপি। এ স্বাভাবিক সত্যটুকুই কঠোর। শেষ কোনোদিন শেষ হবে না। এ ভান্ডার শেষ হবার নয়।

দেবব্রত চক্রবর্তী

নষ্টালজিয়া

এই চকচকা দেয়ালে ঘেরা
নকল পৃথিবীর অট্টালিকায় 
হারিয়ে বসেছি আমি,আমার
চিন্তাহীন ভাবনা-বিহীন রং
বেরঙের কাঁচা যৌবন।
নিয়মের কাছে বাহনা দিয়ে
বে-নিয়মের স্কুল জীবন।
একবেলা ঘুম চুরি করে
ঘুরতে যাওয়ার বন্ধুরা আজ
ব্যস্ত ভীষণ।
খেলার মাঠ,ডাকছে কাক
লাল সূর্য দীঘির পার
আম,কাঁঠাল,লিচু বাগান
দিন গুলো কি ফিরবে আর।

এখন হয়তো,জীবনের বাকী নেই কিছু আর,
না পাওয়ার 
যত আবদার
যা কিছু ছিল শুধুই আমার।
নুন পান্তা ভাতের জীবন আমার
হারিয়েছি শহরের কোলাহলে রোজ নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে
তাকাই আমি গ্রামের দিকে।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...