Saturday, January 23, 2021

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

জয় হিন্দ

সম্পাদকীয়

মনন স্রোত। মননের এক ধারাবাহিক স্রোত। এই নামকরণের পুরোধা এই রাজ্যের বিশিষ্ট ছড়াকার, চিত্রশিল্পী শ্রদ্ধেয় বিনয় শীল। তিনি একনিষ্ঠ কবিতা উপাসক। সৎ, পরিশ্রমী এবং নিষ্ঠাবান বিরল মানুষ। রাজ্যের সাহিত্যজগতে তিনি প্রবীণ মানুষ। এ যাবৎ অনেক কবিদের কাব্যপথের সারথী তিনি। ছড়া নির্মাণে তিনি অনন্য। এই রাজ্যে এরকম শিল্প উপাসক বিরল। আমরা আমাদের এই সংখ্যায় কবি বিনয় শীলকে বিশেষ শিল্প উপাসক হিসাবে সন্মান জানালাম।

আজ ২৩ শে জানুয়ারী। ভারতীয় ঈশ্বরের জন্মদিন। মহান দিনে মনন স্রোত প্রকাশ করতে পেরে আমরা গৌরবান্বিত। নেতাজির আদর্শে আমরা যাতে ভালো মানুষদের সেবাব্রত হতে পারি এই শুভকামনা প্রার্থণা করি। যারা এই বিশেষ সংখ্যাটিতে লিখলেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা। যাবতীয় ভুলত্রুটি সম্পাদকের একার। মার্জনাপূর্বক সহযোগিতা চাইছি। সকলে ভালো থাকুন। মনন স্রোতের শুভেচ্ছা নিন।

জয় হিন্দ

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

সূচীপত্র

বিটু মজুমদার

কবি বিটু মজুমদারের জোড়া কবিতা

১. স্বপ্নের বন্ধু  

সে দিন আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম
পুরানো এক স্বপ্নের সিঁড়িতে,
হঠাৎ চেয়ে দেখলাম তুমি
দাঁড়িয়ে আছো গোলাপ বনে ।

ফুটন্ত গোলাপের সাথে মিশে
চেহারা'টা হয়েছে আরও মিষ্টি,
চোঁখে চোঁখ রাখতে পারিনি
ঝাপসা হয়ে এসেছিল দৃষ্টি ।

আলোক বর্ষ পরে আবার যখন
দেখলাম তোমায় স্বপ্ন ঘোরে,
ইচ্ছা হলো জড়িয়ে ধরি
মাধুরি লতার মতন করে ।

টপকে গেলাম তোমার কাছে
তুমি ধরা দিলেনা প্রিয়া,
কোথায় যেন হারিয়ে গেলে
ভেঙে দিয়ে হিয়া 


২. কন্যা বাঁচাও কন্যা পড়াও


কন্যা বাঁচাও, কন্যা পড়াও,
কন্যা হত্যা রোধে রুখে দাঁড়াও।।
কন্যারা হয় বধূ ভগ্নিমাতা,
পুরুষ-নারীর জন্মদাতা।
রোগে শোকে তারাই পবিত্রতা,
তাদের আরো শক্তি জোগাও।।

মায়ের পেটে আছে যে ভ্রুন কন্যা।
তাকে হত্যার কত পরিকল্পনা।
খুনি পিতা-মাতা চায়না কন্যা।
তাদের কঠোর শাস্তি দাও।।

কন্যা আছে প্রতি ঘরে, 
সব দেশে সব পরিবারে।
কন্যা নাই সৃষ্টি নাই শান্তি হবে চির উদ্ধাও।।

প্রতিদিন কন্যা হচ্ছে নিধন,
চলছে শোষণ আর নির্যাতন।
পনের শিকার হয়ে পড়ছে কন্যা,
হিংস্র অসুরদের ঘুম ভাঙাও ।।


সজীব পাল

কবি সজীব পালের জোড়া কবিতা

১. ব্যর্থতার প্রতীক 

কী নাম ? কৃষ্ণচূড়া? বকুল ফুল?
আমরা কেউই তার নাম জানি না!
চোখ তার দিঘির জলের পদ্মকমল
যেখানে লেখা নিশীথ পাখির গান।


২. হেমন্তের সংসারে 

হেমন্তের সংসারে তোমাকে দেখেছি,
হেমন্তের মতো সবুজ থেকে হলুদ হতে।
তোমাকে দেখেছি নির্জন গলির পথে,
এই আমাকেই ঘৃণা করে চলে যেতে ।
ফুলের রেণুর মতো নীরবে ঝরলে 
প্রশ্বাসে বাড়ালে কি কষ্ট!
এই দারুণ বিষাদে নদীর মতো শুকালে ,
খাঁচার পাখির মতো হারালে,
লোকালে দূরত্বে খুব;
বুঝবে কে ছিলাম আমি তোমার ভেতর!
বুকের রক্ত মাংস কতটুকু খেয়েছি!
বুঝবে সজনী তুমি বুঝবে।
চোখ তো মানুষের সব নয় ?
তবুও তোমার চোখেই দেখেছি ,
প্রণয়ের ভাস্কর্য,শিল্পীর মৃত্যু ।

অতনু রায় চৌধুরী

কবি অতনু রায় চৌধুরীর জোড়া কবিতা

১.অপেক্ষা

আমি শূন্যতায় বেঁচে আছি
একাকীত্বের কাছাকাছি ।
জমা হাজারো অভিমান কিংবা আবদার । 
আমার স্বপ্নের ঘর ভাঙছে রোজ
হচ্ছে জীবন ছারখার ।
তবুও এই শহরে‌ বুকে, চলছি হাসি মুখে 
অপেক্ষা সময় বদলাবার ।
এই কঠিন সময় অতীত হবে
হয়তো সু'দিন আসবে আবার ।


২. বন্ধুত্ব

চলার পথে যখন হঠাৎই মনখারাপ 
কিংবা হাজারো সমস্যা জীবনে ।
তখন একটা বন্ধু ঠিক ই লাগে ।
কেউ সেই বন্ধু পেয়ে যায় 
আবার কেউ পুরো জীবন সেই বন্ধুকে খুঁজে বেড়ায়।
বন্ধুত্ব লিঙ্গ ভেদাভেদ বুঝে না
বন্ধুত্বের মাঝে থাকে না জাতি ভেদাভেদ ।
বন্ধুত্ব সমবয়সী দেখে হয় না 
আসলে দুঃসময়ে বন্ধুত্বের প্রয়োজনটা অনেক ।

জগন্নাথ বনিক

কবি জগন্নাথ বনিকের জোড়া কবিতা
 
১. দুর্ঘটনা 

দুর্ঘটনা একটি সামাজিক ব‍্যাধি,
হচ্ছে তো আজ অনবরত।
মায়ের কোল যে খালি হচ্ছে,
প্রতিটা  দিনের মতো ।।

বাবা, মা, হারাচ্ছেন ছেলে মেয়েদের,
আপনজন হারাচ্ছেন  আজ সবাই।
দুর্ঘটনা যে  থামছে না  আজও, 
কী হবে এখন মোদের বাঁচার উপায় ।।

দুর্ঘটনায় আজ পঙ্গুত্ব হয়ে  আছেন,
 অনেকেই  ঘরে  বন্ধী।
মৃত্যু তাদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে,
হারিয়েছে অনেকেই জীবন সঙ্গী ।।

পঙ্গুত্ব জীবনটা কে ভালো বাসে না, 
অনেকেই  আপন মনে ।
দূর্ঘটনায়  আহত ব‍্যাক্তিরা বেঁচে থাকেন, 
জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ।।

ভালো থাকুক বিশ্ব পৃথিবী,
ভালো থাকুক আপনজন।
আর যেন না দেখতে পাই, 
দুর্ঘটনার মতো প্রতিবেদন ।।


২. বর্ণমালা 

মায়ের কোলে ভূমিষ্ঠ হয়ে প্রথম যেদিন,
দেখেছি পৃথিবীর আলো।
চিৎকার করে কান্না করেছি,
অন্ধকারের চেয়ে পৃথিবীর আলো,
অনেক বেশি  ভালো ।।

পৃথিবীর আলো দেখার পরে, 
দেখেছি  মায়ের  মুখ।
সুন্দর এই নির্মল পৃথিবী, 
চারিদিকে অপরুপা রুপ।।

জ্ঞানের আলো ছড়াবো বলে, 
মায়ের কাছে দেখেছি প্রথম বর্ণমালার বই।
অ, আ, ক, খ, দেখেছি প্রথম,
স্বরবর্ণের, ব‍্যঞ্জনবর্ণের, আরও ছড়া গল্পের বই।।

কাঁধে ব‍্যাগ ঝুলিয়ে প্রথম যেদিন,
গিয়েছিলাম  মোর স্কুলে।
শিক্ষক, শিক্ষকা, এবং ছাত্র, ছাত্রীর দিকে , 
তাকিয়ে  রইলাম  আমি  অবাক চোখে ।।

পঠন, পাঠন দেখেছি প্রথম , 
পেয়েছি  বিদ‍্যার শিক্ষা । 
জ্ঞানের আলো ছড়াবো বলে , 
করেছিলাম  মোর প্রতিজ্ঞা ।

সুকান্ত বসু

কবি সুকান্ত বসুর জোড়া কবিতা

১. খুঁজে বেড়াই
     
প্রেম ছিল ভোরের শিশিরে,
সেই পড়ন্ত বিকেলের সূর্যাস্তে।
বর্ষার স্যাঁতস্যাঁতে পুকুর পাড়ে,
ফুল বাগানের দৈর্ঘ্য-প্রস্থে।
জোনাকিরা ঘোরাফেরা করতো,
পূর্ণিমার জোছনা ভরা রাতে।
যখন তুমি ফুল কুড়োতে বের হতে,
সেই সোনালি শারদ প্রাতেঃ।
ফেরত চাইছি সেই দিনগুলি,
ময়ূর-ময়ূরীরা পেখম মেলতো যখন।
পারবে কি ফিরিয়ে দিতে,
সেই দিনগুলি আবার এখন।
ছাব্বিশটি বসন্ত পথ চেয়ে,
বসে আছি তোমার।
ভাবছি এবার আগের মতো,
প্রেমে পড়বো আবার।


২. শীতের সকাল         

প্রকৃতির পালা বদলে আসে,
কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের সকাল।
রাতের ঘন নিস্তব্ধতা কাটিয়ে,
শুরু করা আরেকটি নতুন দিন।
শীতের শীতল শিশির বিন্দু,
দূর্বা ঘাসের কচি ডগায়।
শিশুরা ঠান্ডা থেকে মুক্তি পেতে,
রোদে বসে করতো খেলা।
খেজুর গাছ থেকে গাছিরা,
নামিয়ে আনতো রসের হাঁড়ি।
চাদরের ভেতর থেকে,
হাত বের না করার চরম সুখ।
পৌষ পার্বনে থাকতো,
পিঠা-পুলি ও নানা অনুষ্ঠান।
আজও মনের অলিগলিতে ঘোরে,
সেই সোনাঝরা দিনগুলি।

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

কবি উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্যের জোড়া কবিতা

১. এপার থেকে ওপার

যতদিন না মাথার কাছে
একটা হৃষ্টপুষ্ট তুলসী গাছ
শোভা পায়,
ততদিন একটা ইঁদুরও বেহিসেবি হয়ে
গা ঘেঁষে পালাতে চোখে পড়ে না।
মানুষ তো ঐ আকাশের মেঘ।

আমি দেখেছি,
সেই শেষবার ঘুমিয়ে গেলে,
শকুনও কতটা আহ্লাদে বুকের উপর দাঁড়ায়।
শুধু মানুষগুলোকে দেখি বকেয়া ঋণের কিস্তি নিয়ে কানাঘুষো করছে!

চোখ বুজে নদী পার করার পর,
মানুষ ওপারে এলোপাথাড়ি শান্তি পায়।
এপারে ভীড় বাসে সময়ের বড্ড তারাহুড়ো।

২. সময় অসময়

সেই যে ভালোবাসার মহোৎসবে
তোমার নিষ্ঠুর হাসি
আমাকে দু'কোটি কান্না প্রস্তাব করেছিল,
তার একটাও এখনো অবধি 
শুরু করা হয়নি।
যোগ্য একটা শূন্য ঘরের বড্ড অভাব!
তোমার চোখের সাথে মুখের,
কোনো কোনো দিন আমি দূর দূর মিল খুঁজে পাই না।
আবার হয়তো এইসব আমার
এই জন্মের শ্রেষ্ঠ ভুল।
তবে ঈশ্বর না করুক!

পৃথিবী বলতে মানুষ যতটুকু বোঝে,
তোমার চোখে আমি তার দ্বিগুণ দেখেছি।
শুধু তুমি আমায় খুন করে ফেলছ মনে পড়লে
সেভাবে আর বাঁচতে রূচি পাই না।
নাহলে সময়ে অসময়ে সবাই ই তো
হাসার অধিকার রাখে।

গৌতম দাস

কবি গৌতম দাসের জোড়া কবিতা

১. তোমায় ভালোবেসে

নীরপূর্ণ পুকুরে ব্যাঙঢিঁল ছুড়েছি ,
বিরহের সাগরে ডুবুরি সেজেছি আমি
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
জলন্ত বহ্নিতে মুক্ত  চিত্তে হাত রেখেছি।
জ্যোৎস্নাময় যামিনীতে তন্দ্রাহারা হয়েছি;
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
নির্জন পথের স্তব্ধতা মেপেছি আমি
অহংকারের সিংহাসনে বসেছি;
শুধু তোমায় ভালোবেসে।
ক্ষুধাকে শিকার বিদ্যা শিখেছি আমি,
তোমার চাঁদমুখের হাসিতে নিজেকে হারিয়েছি
উত্তপ্ত মরুভূমিতে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করেছি;
 শুধু তোমায় ভালোবেসে।
আজ এই শুভ ক্ষণে তোমার শূন্য উপস্থিতি
অকৃত্রিম ভালোবাসার এই নির্মম পরিণতি?
আহা! উন্মুক্ত চিত্তও আজ দ্বিধাবোধ করছে
কন্ঠরোধ হয়েছে তার,বলতে সে অক্ষম
শুধু তোমায় ভালোবেসে।


২. দাদুর শেষ ইচ্ছা
                                                               
কীরে অন্ধকার ঐসেরে নাতি।
তাড়াতাড়ি জ্বালা একটা মোমবাতি।
কই যে কিতা করস্।
সারাদিন শুধু বই পড়স্।
আমার মাথা  এমনই চড়া।
বাদ্ দেলা তর্ লেহাপড়া।
অ দাদু এই পিঁড়িডাত্ ঠান্ডা  মাথায় বৌ।
কিতা কইবা কৌ।
তরে কইছিনা সকালে ক্ষেত যাইবি।।
আর দুপরে দুইল্ল্যা পান্তাভাত খাইবি।
পইড়া কী চাকরি পাইবি?
আমার বয়স ঐল আশি।
কবে জানি হই  স্বর্গবাসী।
ঐ একটা কথা শুন্ নাতি।
তুই আমার বংশের শেষ বাতি।
বয়স তর চৌদ্দ, কেউ কয়না মন্দ।
অহনে তর পড়া একবারে বন্ধ।
বুড়া বয়সে আমার শেষ ইচ্ছা।
তরে করাইতাম বিয়া।
নাতি বউ এর ভাত খাইতাম
তর শ্বশুর বাইত্ গিয়া।
না !দাদু করন যাইতনা এই বিয়া।
আগে লেহাপড়া শেষ করি
হাতো সময় আছে ভুরিভুরি।
কিতা?
বড় কথা কস্ সুডু মুখ দিয়া।
আমার মরা মুখ দ্যাখবি শ্মশান গিয়া।
না!না!দাদু পূরণ করুম তোমার  আশা।
দুঃখ ডা এহান-
তুমি বুঝলানা আমার মনের ভাষা।
ভাবছিলাম বড় ঐয়্যা চাকরি করুম।
অহনে অকালে বিয়া কইরা
একবারে মরুম দাদু!
একবারে মরুম।         
     

প্রীতম শীল

কবি প্রীতম শীলের জোড়া কবিতা

১. পাষাণ প্রিয়া

অন্ধকার গলিতে হারিয়ে যেতে দেখেছি,
কতো সুন্দর যৌবন।
আমিও আজ রঙ্গিন নেশায় আসক্ত,
ভেঙ্গেছে যখন মন।
সেদিন আমিও দুঃখ পেয়েছি,
দেখে যৌবনের মৃত্যু।
আজ আমি উল্লাসে মন খুলে হাসি,
কষ্ট হলেও বলছি সত্য।
হ্যাঁ হ্যাঁ হ্যাঁ সবই তোর জন্য,
তোকে ভুলে থাকার জন্য।
আচ্ছা তুই কি বলতে পারিস,
কিসের অহংকারে তুই ধন্য।
জানি আমি তুই কিচ্ছু বলতে পারবিনা,
তাও জানি কেন পারবিনা?
কারন তুইও আজ নেশায় আসক্ত, 
অর্থের মোহে,একদম মিথ্যা বলবিনা।
আমি দেখেছি বহু অর্থ হেরেছে,
প্রিয় ভালোবাসার কাছে।
তুই পাষাণী এমন নিষ্টুর,
এ সব তোর কাছে মিছে।



২. মাতাল স্বপ্ন

আচ্ছা নেশা কি মানুষকে তার,
দুঃখ সত্যি ভোলাতে পারে?
কই আমি প্রতি রাতে নেশা করেও,
বুকের মাঝে হৃদয় ভাঙ্গি হাহাকারে।

আমি মাতাল হয়ে বিছানায় পরে থাকি,
খাবার টুকুও পরে থাকে টেবিলে।
অর্ধরাত্রিতে চিৎকার দিয়ে উঠি আমি,
কি এমন ভালোবাসার অভাব দিলে।

ও ঘর থেকে মা ছুটে এসে পাশে বসে,
আমি মায়ের কোলে মাথা রেখেও কাঁদি।
আচ্ছা আমি কি তোমার সাথে শুধুই,
মাতাল হয়ে ঘুমন্ত চোখে স্বপ্নের বাসর বাঁধি।

জানি এ জীবনে এমন স্বপ্ন আকাশ কসুম,
তবুও আমি দেখতে ভালোবাসি।
আমার নেশার জগত হলেও,
আমি কিন্তু তোমায় সত্যি ভীষণ ভালোবাসি।

আমার মা আমার চোখের জল মুছে দিয়ে,
সান্তনা দেয় আমি তোর পাশে আছি।
এই ভালোবাসার জোড়েই আমি হয়তো,
এই রঙ্গিন দুনিয়াতে মরে মরেও বেঁচে আছি।

দিপিকা রায়

কবি দিপিকা রায়ের জোড়া কবিতা

১. ট্রাফিক

ধবধবে সাদা পোশাকে
রাস্তার মোড়ে ভেসে আসে, 
ওই কোমল সিটির উত্তেজনা। 
কে জানি দাঁড়ায়ে হাত নাড়ে। 
আর বিরক্তিকর গাড়িগুলো
বসে বসে সময় গুনে। 
কিন্তু এই বিরক্তির গভীরে
নিজের জীবনটা তুচ্ছ হয়ে যায়। 
আর বিমুখতা হয় এই সিটির ধ্বনি। 
ভুলে যাই আমরা, 
এই রক্ষাকবচ আছে বলেই
আজও দেহে প্রাণ আছে। 

কত দিন কত রাত, 
এই পথকেই করলো ওঁদের ঘর। 
কত তপ্ত শিখা অঙ্গে অঙ্গে
বাহিত হয় ওঁদের। 
কত বর্ষিত মেঘের ছাদে
সৃষ্টি করে আশ্রয়স্থল। 
তবুও ওই সিগন্যাল পথে
ব্রেক ধরতেই, 
আবারও ফিসফিসানো থাকেই। 

পরিজনহীন সংসার সাজায়, 
পথ যাত্রীদের সঙ্গী করে। 
গোছানো নিজের সংসার ভুলে, 
কাটিয়ে দেয় জীবন
বিপদমুক্ত মনুষ্য জাতিকে নিয়েই। 

ঘোর কুয়াশার অন্ধকারেও
বেজে উঠে সিটির আওয়াজ। 
পৌঁছে দিতে আমাদের
সুরক্ষিত এপার থেকে ওপার। 
ওদের তৎপরতায় আজ সুরক্ষিত আমরা, 
যার দায়িত্বের বাড়ন্ত হাত চিরদিন
একটা স্যালুট তো হবেই
অন্তরের কৃতজ্ঞতা থেকে।


২. বিচ্ছেদ

ক্ষুদ্র পাথর চাপা হিমালয় শৃঙ্গ
ভাঙছে আজ প্রতিমুহূর্ত। 
বইছে বাতাস, উতাল পাতাল
এই শৃঙ্গভুমি। 
উন্মাদ হাওয়ায় ভাসছে আজ
বিন্দু বিন্দু জলের ঘ্রাণ। 
বিরহকন্টকে দ্বি-খন্ডিত এ বুক
অশ্রুশয্যায় বিভোর নিদ্রা, 
শুধু স্বপ্নে সজ্জিত প্রেম হৃদয়।

অন্ধকার আলোয় পথ খুঁজে
বিলীন হয় স্মৃতির অস্তিত্ব। 
নিশ্চিহ্ন ভগ্ন এই পর্বত চুড়া
তবু মৃদু শিখায় জলন্ত
খন্ডিত হৃদয় খানা।

লিটন শব্দকর

কবি লিটন শব্দকরের জোড়া কবিতা

১. ধুলোমেঘ

অনেক বছর আগে
গাঁয়ের বাড়িতে পোষা
হাঁস,মুরগী,ছাগল গোরু
এসবের কথা মনে পড়ে,
দাদুর ইচ্ছেতেই সেগুলি বিক্রি করে
কীর্তনীয়া পরেশ জেঠুর চিকিৎসার টাকা জোগাড় হয়েছিলো।
তারপর দু'চারজন আমাকে বললো
-তোকে বড় নদীতে জুুুরিন্দা নৌকো চড়িয়ে আনবো,
অনেক শব্দমালা আর
শিশিরের অবসর দেবো আর ভালোবাসা।
আমি যখন উৎসাহে আর
বহু কষ্টে উচ্চারণ করলাম
ভা-লো-বা-সা,
তখন টের পেলাম গ্রহ জুড়েই শুধু
একের পর এক রাত্রি ভ্রমণ খেলা।
চোখ সব ধুলো মেনে নিল
সারাটাদিন আমি সানগ্লাস পড়তেই ভুলে গেলাম।


২. না লেখা কবিতার আদর

বলার তো ছিল যদিও সব অকারণ
বাতাসে এখনো শুধুই ফুলেল বারণ।
তাই সুরেলা ঢেউ আশ্চর্য কুয়াশাকে
আপন ভেবেই 'প্রিয়' বলে ডেকেছে,
নীল রং রইল পড়ে সমুদ্রের জলে
প্র‍য়োজন আজ দু'বেলাই সেজেছে
মরসুমি আয়নায় দাঁড়িয়ে
-একবেলা রূপসী একবেলা উপোসি,
অক্ষরমালারা চুপ,সন্ধ্যেয় ঘরে ফিরে
যত্ন চারাগাছ পোঁতে আশ্চর্য সুরচাষী।
গল্পে শোনা নৌকোর পালে করে
মন্ত্রমুগ্ধ হাওয়া জানালার বন্ধু হবে
সে আশা ঠোঁটে নিয়ে নিরুদ্দেশ
সব কুয়াশার রাত ও জ্যোৎস্নারা,
জোর ভল্যুমের গান বেজে যায়
শাখায় জেগে আছে শালিকেরা।

প্রসেনজিৎ দে

কবি প্রসেনজিৎ দে'র জোড়া কবিতা

১. দাম্ভিক

লোকে লোকারণ্য যে শহরে 
কেউ নিজের স্থান খুঁজে পায় না 
তার ঈষৎ লাল চোখে 
ধৈর্য আর মহত্বের অপেক্ষা রাখে কোথায়!

এই শহর ব্যস্ততার,
সুখ-দুঃখের আদান-প্রদান ঘটে।
যে মন পুষে রাখে অহংজ্ঞান
সে শহরের জঞ্জালের মতো।
জঞ্জাল হারিয়ে যায়
হারিয়ে যেতে হয় তাকেও।

লোকের ভিড়ে নিজেকে খোঁজা কঠিন।
পরিযায়ী পাখিরা মিশরে যায় আর আসে।


২. নৈরাশ্য                

শরীর জুড়ে কালো মেঘ বাঁধলে
বৃষ্টি নামে..
আকাশের মতো তুমুল বৃষ্টি,
জোয়ার আসে বুকের মাঝে।

গাছের ডালের মতো ভেঙ্গে পড়ে স্বপ্ন গুলি,
মরে যায়..

সময়ের পর সময় এলে নতুন স্বপ্ন দেখি।
যেভাবে গাছেদের নতুন ডালপালা বেরিয়ে আসে।


শিপ্রা দেবনাথ

কবি শিপ্রা দেবনাথের জোড়া কবিতা

১. এই তো জীবন

সময়ের সাথে সাথে হারিয়ে যায় 
জীবনের অনেক স্মৃতি, 
এটাই হল প্রকৃতির এক 
আশ্চর্যজনক রীতি। 
কখনো আশার আলো 
মনে জাগায় শিহরণ, 
আবার হতাশা কখনো 
করে আনন্দ হরণ। 
অপূর্ণ আশা কতো
থেকে যায় মনে, 
সব সপ্ন হয়না পূরণ 
সবার জীবনে। 
আজ চারিদিকে শুধু ছড়িয়ে আছে 
নিঃসঙ্গতার আভাস, 
মেঘলা আকাশটি ও যেন কেমন 
নিস্তব্ধ ও উদাস। 
সময়ের সাথে হারিয়ে যায় 
চেনা জীবনের ছন্দ, 
এখন বুঝতে শিখে গেছি 
কোনটা ভালো কোনটা মন্দ। 


২. স্মৃতি কথা 

জীবনে কখনো আর আসবে না ফিরে, 
সপ্ন যেগুলো মোরে রেখেছিল ঘিরে। 
লেখার জন্য কলম থাকলেও যায়না সব লেখা, 
অনেক কিছু আছে বাকী যা হয়নি বলা....... 
বাস্তবে যার কোথাও নেই কোন অস্তিত্ব, 
সপ্নেতে চলে শুধু তারই রাজত্ব। 
ভোর সকালে দেখা সপ্ন সত্যিই হয় পূরণ, 
মা'র মুখে 'হ্যাঁ' কথাটা শুনতে লাগতো দারুণ। 
ভুলিনি আমি আজও সেসব দিনের 'স্মৃতি কথা'
বিদায় কালে জানাতে চাই হৃদয়ের ব্যথা। 

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

কবি মিঠু মল্লিক বৈদ্য'র জোড়া কবিতা

১. আগমনীর প্রতিচ্ছবি

সবে দেখো চেয়ে,
সেজেছে আজ সে নববধূর সাজে।
রামধনুর সাতরঙ্গেতে সাজিয়ে আপনারে
নেমেছে ভুবনে পুঞ্জ মেঘের কোলে ভেসে।

পড়নে ময়ূরপঙ্খী,তণ্বী অপরূপী!
শিউলীর শুভ্র পরিমলে
মধুমঞ্জুরীর রমনীয়তায়,
তুমি প্রাণোচ্ছ্বলা।

রৌদ্রছায়ার মায়াবী খেলা,
নীলাকাশে সাদা মেঘেরভেলা,
অদূরে কাশফুলের সিগ্ধতায়
 মোহনীয় তুমি।

দখিণ সমীরণ,মুক্ত বাতায়ন;
নির্মল জোছনা ভরা নীরব যামিনী;
সবুজ ক্ষেতে সোনালী আলোর ঝিকিমিকি
তুমি আসমানী পরী।

শিশির ভেজা ঘাস,শিউলীর আস্তর
প্রভাত রবির চিক্কণ আভায়
যেন মুক্তাদ‍্যুতির
আলোকঝর্ণা।

অদূরের শান্ত জলে মেঘভেলার ছায়া,
বিলে শাপলা শালুকের মৌ-মৌ সুভাস,
ছুটির আমন্ত্রণ,উৎসবের হাতছানি
শরৎরানী তুমি ;আগমনীর প্রতিচ্ছবি।


২. দামাল ছেলে অম্লান

আদুরে সোনা,মায়ের চোখের মনি
যতনে বেড়ে উঠা,শৈশব পেরিয়ে কৈশোর,
আপন খেয়ালে বুনে স্বপ্নের বীজ।
মায়ের আঁচল,স্নেহভরা চাঁদোয়াতল,
বাবার রাঙ্গাচোখে নিখাদ ভালোবাসা 
খোঁজেছে নিরন্তর।

দামাল কিশোর,গন্ডীবদ্ধতা বেমানান
বিদ‍্যালয় শিক্ষা চুকিয়ে নতুন উদ‍্যমে জীবনগঠন,
জলপাই রঙ্গের পোষাক,দেশমাটির টানে
উত্তাল হৃদয়,
ছুটে যায় সীমান্তে,মায়ের বরপুত্রের বেশে।

পাড়া গাঁয়ের দুরন্ত ছেলে,আজ রক্ষী দেশজননীর
নির্ভীক সৈনিক হয়ে কখনো সিয়াচান,
কখনো দেশের স্বর্গপুরীর সীমান্ত ঘেঁসে সঠান দাঁড়িয়ে,
হাতে দুর্জয় রাইফেল,পরোয়া নেই মৃত্যুর।
জাগ্রত মন,পিছু টান যত দিয়েছে বিসর্জন 
আগলে মাটি উর্ধ্বকন্ঠে বলে 'দেশ আমার খাঁটি।"

সোনার ছেলে,ভয় করেনা কোন কিছুতেই 
ভেঙ্গে দিতে চায় সকল মহড়া
ভারতীকে নিয়ে যারা আঁকে পাপের খসড়া।
যোদ্ধা,রণরুদ্র,অসীম সাহসী
দুর্বার পথচলা,মৃত‍্যুভয় শূন‍্য অভী সে আজ
আমার গাঁয়ের সেই দামাল ছেলে অম্লান।

অসীম দেববর্মা

কবি অসীম দেববর্মার জোড়া কবিতা

১. যা  হারিয়েছি 
            
যা হারিয়েছি
তোমাতে তা পেয়েছি, 
কোনো কিছুর অভাব নেই
তুমি পূর্ণ তাই! 
আমি অপূর্ণ্যের শূন্য কলসি
তোমার কাছে বারে বারে আসি, 
আমার যা কিছু আছে রাখতে চাই
তোমার পদতলে
তোমার মনের আঙিনা থেকে পাঠিয়ে দিওনা অপছন্দের দলে। 
আমার আঁধার জীবনে 
তুমি এলে আলোর দিগদর্শনে
তোমার ঐশ্বর্য
দেখে হই আশ্চর্য, 
প্রেমের পরশমণি
চিরদিনের জন্য করবে কী আমারে আপনি। 


২.আমি এক
               
আমি এক আধুলি কবি
কী লিখি মনে মনে ভাবি! 
ছন্দের বোল জানি না
তবুও লিখতে থামি না, 
যা আসে মনে
লিখি লেখার লিখনে
হয়তো আমার লেখা 
যদি হয় কেউর মনের কথা। 
উলট্ - পালট্ মুখের বুলি
আবোল - তাবোল খাতায় তুলি
পড়াশুনায় বড়ই কাঁচা
জ্ঞানীর পাল্লায় অক্ষরহীন গালিচা। 


মনচলি চক্রবর্তী

কবি মনচলি চক্রবর্তীর জোড়া কবিতা

১.পরিযায়ী

পরিযায়ী শ্রমিকের দল
আজ ফিরছে ঘরে 
ওরা গড়েছে শহুরে ইমারত
বহু মাস বহু বছর ধরে
যুগে যুগে হাড়ভাঙ্গা
শ্রমের বিনিময়ে গড়েচলেছে 
সভ্যতার শিখর
কেউ কি রেখেছে সে খবর?

২. মেঘলা আকাশ  

মেঘলা আকাশ
মন আনচান
বিরহের বুঝি 
হল অবসান 
মেঘ গর্জায় 
বুক দুরুদুরু
হৃদয় তুফান 
এই বুঝি শুরু 
এসো বরষন
ধুয়ে দাও মন
মুছে দাও আজ
বিষাদের ক্ষন
চাতকেরা হোক
পিপাসা মুক্ত
ধরনী তুমি হও
বরষ সিক্ত
অবগুন্ঠন  খুলেছে যে আজ
মেঘবালিকার অপরুপ সাজ।

আলগমীর কবীর

কবি আলগমীর কবীরের জোড়া কবিতা

১. ভুলতে পারিনা প্রিয়

হঠাৎ করে কখন যেনো
তোমার কথা মনে পড়ে যায়।
সেই দিনের কথাগুলো মনে করে
অশ্রু এসে দুচোখ ভিজিয়ে দেয়।
তখন আমি কাগজ কলম নিয়ে বসে
কি যেনো লিখতে থাকি।
বার বার তোমারি ছবি
চোখের পাতায় ভাসতে থাকে।
আমি কোথায় যেনো হারিয়ে যাই
তারই মাঝে শুধু তোমাকে খুঁজে পাই।


১. হারানোর ভয়

আমি হারাতে চাইনা তোমাকে
হারানোর ভয়ে যেনো আমি
পাগল হয়ে যাই।
তুমি হারিয়ে গেলেও 
তোমাকে কাছে রাখতে চাই।
যদি কভু দূরে চলে যাও
দিবনা তোমায় যেতে আমি।
তুমি যে আমার কাছে
আমার থেকেও বেশী দামী। 
তোমায় আকড়ে ধরে রাকবো
বেঁধে রাখব বইয়ের পাতায়
লেখা হয়ে থাকবে তুমি
আমার ঐ ডায়েরির খাতায়।


গোপাল দে

কবি গোপাল দে'র জোড়া কবিতা

১. চেনা ছন্দে

সেদিন মধ্যরাত্রিতে ও নির্ঘুম ছিল
চোখের দুটি পাতা।
স্বপ্নবিভোর দুই চোখে ক্রমশ
দুঃস্বপ্নরা বাঁধছিল হতাশার ডানা। 
মধ্যরাত্রির নিস্তব্ধতায় শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছিল তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
কুয়াশার চাদর ভেদ করে 
অন্ধকারের বীভৎসতার মাঝে
রঙিন আলো নিয়ে হঠাৎ তোমার উপস্থিতি। 
মনোবীণার তারে হঠাৎ ঝংকৃত হলো 
লক্ষ-কোটি সুরের তান। 
বিরহের তানপুরাটা শক্তি হারালো
আর বেজে উঠল সুরেলা এক বাঁশি। 
যে সুরে খুঁজে পেলাম আমার সব চাওয়া, আবদার আর তৃপ্তির স্বাদ।
চেনা ছন্দে আবার গতিময় হলো
ছোট্ট একটি জীবন।


২. শৈশবের হাতছানি       

আলো-আঁধারি পথে 
জীবনের সন্ধানে 
একটু একটু করে মনের অজান্তে
শৈশব নিল চিরবিদায়। 
কারো দায়িত্ব হয়ে থাকার
সেই সময় আজ অস্তিত্বহীন। 
দায়িত্বভারপূর্ণ চারপাশ থেকে
ভেসে আসে শত আবদার আর অধিকার। 
প্রতিদিন নতুনত্বের চাহিদায় 
দুর্বিষহ প্রতিটি ক্ষণ।
আপন খেয়ালে সেইক্ষণে
মনের গহীনে ডানা মেলে ধরে শৈশব। 
রোমান্টিকতায় জল ঢেলে
বাস্তবতার কাঁটা তখন বিঁধে যায়
শরীরের প্রতিটি শিরা-উপশিরায়। 
শৈশবের সেই হাতছানি 
এখন শুধুই মরুভূমির মরীচিকা। 
শান্ত স্নিগ্ধ আলোক ঝলমল
শৈশবের সেই শহরে 
এখন অন্ধকারের তীব্রতা। 
সময় যুদ্ধে এখন জয়ী 
শুধু বাস্তবতা।

রাজীব পাল

কবি রাজীব পালের জোড়া কবিতা

১. জটাধারী

মাটির গভীরে গাছের মূল আর শোষণ শিকড়ের প্রাচুর্য,
জল উঠায় পাতায় পাতায়, আলো মেখে করে আহার্য।

মাটির ধর্ম রত্ন ভান্ডার সব উজাড় করে দেওয়া,
গাছ বাবুর চলে সুযোগ বুঝে আকাশপানে বাওয়া।

আগার সুখে মত্ত এমন, গোড়ার খেয়াল রয় ভুলে,
ভেঙ্গে পড়ার দুঃস্বপ্ন তুফান ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলে।

রাজার রাজা বট গাছটি, বাড়ে গোড়ার খেয়ালে,
দীর্ঘজীবির স্বপ্ন সাজে ঠেস মূল, স্তম্ভ মূলে।

জটাধারী ওই বটের গুনে কত মানী গুণী লুটায় তলে,
ঢেঙ্গা ওই পাশের পড়শীর, জীবন যায় বিফলে।



২. তোমায় দেখবোই


কাছে আছো কিবা দূরে 
রাত প্রহরে একদিন দেখবোই, 
কবিকঙ্কণ পড়ে গলে 
প্রেমের মঞ্চে নাচবোই।
কাঙ্গালিনি কিবা রাজরানী 
তোমার তরে সাজবোই,
কাজল পাতায় তুলিকার সাথে 
তোমায় আমি আঁকবোই।
গায়ক পাখির গানের সুরে
বাগিচায় গান করবোই,
আর কত লুকিয়ে খেলে যাবে
একদিন তোমায় দেখবোই।
নিশ্বাস প্রশ্বাসের মালায় 
তোমায় আমি খুঁজবোই,
এই নিলয়ে যার আনাগোনা 
তাঁর হাতটি আমি ধরবোই।

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

কবি মোহাজির হুসেইন চৌধুরী'র জোড়া কবিতা

১. শব্দের অক্ষরে জীবন 

শব্দের  অক্ষর  আর অক্ষরের শব্দ 
এই নিয়ে যা সেজে ওঠে বিস্ময়ে
তা কবিতা নয় একটা জীবন। 
প্রতিক্ষণ নির্দ্বিধায় পার হয়ে যায় সেতু 
একটা অন্যরকম.... 
কখনও ঢোল পেটানো আওয়াজ
কখনও নীরব লজ্জাবতী অথবা
শেকড়বিহীন শূন্যলতা 

শব্দের দ্যোতক ধ্বনি তার মাঝে তুমি আমি
লটকে থাকি ঘুড়ির মাঞ্জা দেয়া সূতোর মতো 
শব্দ নাহলে জীবন কোথায় 
চাঁদের অক্ষর একলা রাত পোহায়
তবে নির্লিপ্ত নিরীক্ষণে দেখা যায়
মূল ওষুধের চেয়ে প্লাসিবো বা ফাইটমে 
দ্রুত অসুখ সেরে যায় 
স্যামুয়েল হ্যানিমেনের আশ্চর্য ভোজবাজি 
সব জেনেও রাতের গভীরে 
দুচোখের মণি দিয়ে সাজাই অক্ষর 
এ আমার সান্ত্বনা এ আমার প্রাণপ্রিয় খেলা 
এভাবেই একটা জীবন চলে যায় 
সচল থেকে অচলের দিকে.... 


২. ব্ল্যাকহোল বন্ধু

একটা ব্ল্যাকহোল আমার বন্ধু 
ইতস্তত ছড়ানো ছিটানো টেনশনগুলোকে
হা করে গিলে খেতে মাঝে মাঝে
নেমে আসে ধরণীর কাছাকাছি

আরও মরি কিংবা বাঁচি সে তো আয়ুর খেলা 
সে আমায় সঙ্গ দিয়ে সব অবাঞ্চিত 
তার মহাগহ্বরে টেনে নিয়ে যায়
তবু ক্ষুধায় কাতর আরও নিতে চায় আরও 
আমি দেই তাকে যতটা আমার নেই 
তার চেয়ে বেশি... উৎকন্ঠা...  উদ্ভট ভাবনা... 
তবে সচেতন করে দিয়ে গেছে বন্ধু 
তার ক্ষুধার খোরাক জোগাতে নাপারলে
আমাকেই টেনে নেবে একদিন। 
শুধু এই টেনশনে এখন আমি বেঁচে আছি 
জানিনা এ বন্ধুত্ব বাকি থাকবে কতদিন! 
হয়তো এ আমার কোন আপন জন
অন্যরূপে  অন্য পরিচয়ে...                  
                                                                                                                                                  

সনৎ কুমার কুন্ডু

কবি সনৎ কুমার কুন্ডু'র জোড়া কবিতা 

১. এক নন্দিনীর গদ্যোকথন

পতিত জমি আগাছায় পূর্ণ
আবাদী হবে বৃষ্টির উর্বরতায়
মাঠে নেমেছে কামুক শ্রমিক 
শুধু চলেছে কাম প্রচেষ্টা

পাকে পাকে লাঙ্গলের ফলা ঘুরিয়ে
নন্দিনীর বুকের অর্গল ভেঙ্গে
জৈবিক ক্ষুধা নিবৃতি করছে

ওর বুকের শক্ত বাঁধন
সদর্পে ফিরায়েছে নৃশংস 
লোলুপ অত্যাচারীদের হাত থেকে 
চাষাবাদ খেলায় মত্ত হয়েছিল সেদিন 
ওর বুকের শৃঙ্খলা নষ্ট করে 
শ্রী বিশ্রী করেছিল, 
হেনস্তা করেছিল নন্দিনীর 

পতিতকে পতিতায় রূপান্তরিত করে 
পরিতৃপ্ত হয়েছিল ওরা
এক বীভৎস চেহারা নন্দিনীর মানচিত্রে
মুখের ভাষা ও অঙ্গ শৈষ্ঠব চাষাবাদে 
তার নিজের চিন্তাচেতনাকে নষ্টভস্ট করেছিল সেদিন। 


২. মশা মাছির সংগ্রাম চলছে

ত নিচেয় আর  নামবে বলো..... 
নামের অক্ষর গুলো যে ধুয়ে মুছে ছায়া হয়ে গেল
কে রাখবে নতুন নাম
কে লিখবে প্রাচীন প্রথায় 
নিব কালির জীবন শ্বেত কণিকায় ভরা 
মেধা বলতে সব অপদার্থ যুগের সলীলে সমাধীস্হ
পাথরে পাথরে ঘষা আগুন-
নিভে গেছে, ক্ষয়ে ক্ষয়ে মসৃণ

কত নিচেয় আর  নামবে বলো.... 
ঘ্রাণ অঘ্রাণেই ছেড়েছে গ্রাম
মিছিমিছি ঘ্রাণ নিই মধু মাসে
গুঞ্জন নেই,মধু মক্ষীকারও খোঁজ নেই 
শুধু মশা-মাছির সংগ্রাম চলছে
নামতে নামতে নেমে গেছি অতল গহ্বরে
কত নিচেয় আর  নামবে বলো.....

পূজা মজমুদার

কবি  পূজা মজুমদারের জোড়া কবিতা


১. আগলে রাখবো যত্নে

তোমার শরীরের সেই গন্ধটা যেনো আমায় ডাকছে,, আগলে রাখার কথা নিজেই বললে,, দিনশেষের ক্লান্তি ভরা চোখে , মুখে হাজার চুম্বন দিয়ে বলেছিলে "তুমি চাইলেও দূরে যেতে পারবে না"। সত্যি আমি ঔ একই জায়গায় রয়ে গেলাম।  দূর হতে চাইনা,,, আরোও গভীরে যেতে চাই। যেখান থেকে ফেরা যাবেনা। চাইলেও না। 

তোমার ছিলাম না তবে হয়ে গেলাম। 

তবে কি এটাই ভালোবাসা?  
যার সন্ধানে ছিলাম সে কি তুমি?? 
যেদিকে তাকাই তোমায় দেখি, হাওয়াতে গন্ধ পাই তোমার শরীরের। 


২. আমি অবাক

কি হয়েছিলো আজ?
দূরত্ব প্রয়োজন ছিলো,
তবে আজ এতো কাছে ছিলাম যে তোমার ঠোঁটের পাতলা আভরন আমার ঠোঁটে স্পর্শ হয়েছিলো,,
তোমার ওই   উষ্ণ স্পর্শে নিজেকে সঁপেছিলাম,, 
এর আগে কখনও কেউ এতো কাছে আসেনি,, আসতে দেইনি,,  দূরত্ব থাকার চেষ্টা বিফল ,, তোমার দুই  হাত ছিলো আমার গালে,, আর চোখে ছিলো অজানা নেশা,, কি নেশা?   আমার চুলের ভাঁজে তোমার চুম্বন, আমার গলায় তোমার গাল,, 
আর.....

আর তেমন কিছুনা,,, তবে এর আগে কেউ এতো কাছে আসেনি,, আসলেও চলে গিয়েছে একা করে। নিজের করে রাখেনি কেউ,, তবে তুমি রাখলে,, আর বললে সবার সামনে আমায় ভালোবাসি বলবে।


এমন করে কেউ বলেনি কেউ,, এমন করে কাছে টেনে নেয়নি কেউ। তুমি নিলে। আর চাওয়ার কিছু নেই,, তোমার শুরুটা হয়তো আমাকে দিয়ে না হলো তবে কথা দিলাম শেষটা আমিই রইবো। তোমায় নিজের করে আগলে রাখবো।



মাম্পী সরকার

কবি মাম্পী সরকারের জোড়া কবিতা

১. আক্ষেপ 

তুমি বিহীন জীবন আমার নির্ঝর শুষ্ক পাতা। 
মধুর স্মৃতিগাছায় আজ ভরাব না ডায়েরির খাতা।। 
আগমনে এনেছিলে সূর্যসম দৃপ্ত। 
ইচ্ছেগুলো আজ কেমন, হয়েছে অতৃপ্ত।। 
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন হাজার, বুনেছিলাম মনে। 
কোয়েল বুঝি ডাকল আবার, আমার মনের বনে।। 
তোমার ওই গহীন মনে, ছিল আমার বাস। 
নিঃস্বার্থে ভালোবেসেও, হয়েছি নিরাশ।। 
একাকীত্ব আজ আমার চৌদিকেতে ঘিরে। 
আশাগুলো আজ যেন, বাধা ছোট্ট নীড়ে।। 
অভিশপ্ত জীবন আমার চৌদিকেতে কালো। 
পড়ন্ত বিকেলেও খুঁজে পাইনি একফালি আলো।। 
সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো, বাগানে জোনাকি। 
বোলতা দেখে আমি, ভাবি মনে মক্ষী।। 
অঙ্গিরা ভেবে পিছু, ছুটি আঁকাবাঁকা। 
তন্দ্রাভঙ্গ হয়ে দেখি, ছিল পিপীলিকা।।
যতই অবহেলা আর করো যে উপেক্ষা। 
সায়াহ্নেও তোমার তরে করবো প্রতিক্ষা।। 
বিনিদ্র রাত্রি, চোখে তোমার প্রতিচ্ছবি। 
সাহিত্য সমাজে আমার তুমিই প্রিয় কবি।।


২. নবান্ন

সোনালী আলোয় সোনালী সকাল,
সোনালী ধানের ছোঁয়া।
হৃদয় আহ্নিকে জেগে উঠলো,
কৃষকের চাওয়া পাওয়া।

কাস্তে দড়ি নিয়ে হাতে
মাঠের পানে ধায়
দাঁড়িয়ে আলে দৃষ্টি পলকে
সফলতা খুঁজে পায়

রাতের পরে রাত জেগে
স্বপ্ন বুনেছিল
আকুলিত হৃদয় খানি
উচ্ছ্বাস খুঁজে পেল

ঝাড়াই মাড়াই সব সারিয়ে
শস্য আসলো ঘরে
চাষী বউয়ের খুশির হাওয়া 
ওষ্ঠে ঝরে পড়ে।

আল্পনাতে ভরা উনুন
তার উপরে সরা
বেস্ত সকল মা বোনেরা
হচ্ছে পিঠে গড়া।

সুপক্ক সুমিষ্ট ফল
বিবিধ উপাচার
পিঠে পুলি মিষ্টান্নাদি
নানাবিধ ফলার

বটবৃক্ষ তলে আজ
উপাচারে সজ্জিত
পুরোহিত বসে সেথায়
করছেন অর্চিত

রংবাহারী পুষ্পঢালি
সজ্জিত সিংহাসন
বিল্বপত্র ঘৃত মধু
যজ্ঞাহুতির দহন।

উলুধ্বনি শঙ্খধ্বনি
হৈ-হুল্লোড়ে ভরা
গীত নৃত্য চলছে সেথায়
সবাই আপনহারা

আরাধিল লক্ষীদেবী
সবাই মত্ত হয়ে
থাকে যেন দুধে ভাতে
ছেলেপুলে নিয়ে

উপাচার দিল তাতে
থালা ভরা অন্ন
গ্রামবাসীরা ব্রতী হলো
আজ যে নবান্ন।

দুলাল চক্রবর্তী

কবি দুলাল চক্রবর্ত্তীর জোড়া কবিতা

১.তোমারই জন্য

ওই কলমী শালুকের দেশে
আমার মনটা গেছে চুরি।
মায়াময়ী, মোহময়ী রাত!
রূপালী চাঁদের একরাশ আলো
নদীর ঢেউয়ে ঢেউয়ে 
অনাবিল এক আনন্দে
মনটা ভরে যায়।

নৌকায় আলো জ্বেলে মাঝিরা
হয়তোবা রান্নায় ব্যস্ত।
মাঝে মাঝে ভাটিয়ালি সুরে গান, 
মনটা যেন কেড়ে নেয়।
নদীর বুকটা যেন আনন্দে নাচছে
জোছনার স্বপ্নিল আলো পেয়ে।

চারিদিকে আলোর পসরা সাজিয়ে
প্রকৃতি যেন জানান দিচ্ছে--
আমি কত অপরূপা,
পরখ করে নিতে পারো।
মিট মিট তারার আলোয়
আর যেন মন ভরেনা,
চাঁদের আলোকে পেয়ে।


২.পরপারে

যেদিন আমি যাবো চলে,
বিদায় বেলার মালা খানি
আপন হাতে পড়িয়ে দিয়ো।

চাইনা বকুল,চাইনা শিউলি
চাইনা বেলি, চাইনা চাঁপা
যে কোনটায় গেঁথে দিয়ো
আমার গলার মালাখানি।

আকাশটা যে নীল হবে,
চাঁদের আলোয় ভরিয়ে যাবে,
সেই সময়ে আমার জন্য
দাঁড়িয়ে তুমি থেকো।

তোমার বুকের কান্না চেপে
ভালোবাসায় ভাসিয়ে দিয়ো,
পরপারে হবে দেখা
আমি প্রিয়া, তুমি প্রিয়।

নিলাঞ্জনা দেবনাথ

কবি নিলাঞ্জনা দেবনাথের জোড়া কবিতা

 ১. প্রথম স্নান

নদীর পাশের চর ধরে এগিয়েছে
বাল্যশিক্ষার ধাপ।সেই জলপথ ধরে 
কাবেরী ও আমায় স্নাত করেছে
আবার নৌকা ভাসিয়েছে
অপরিকল্পিত ঠিকানায়।

কম্পাসের কাঁটায় ভেসে গেছি
সুরমার বুকে ধলাই এর স্রোতে 
দিনের প্রথম আলোকে 
চকচকে মনুর বালুরাশি
আমায় হাতছানি দিয়েছিলো।

উপজাতি মায়ের আঁচলে মুখ মুছে
যাত্রা হাওড়ার দিকে। 
নিজ গতিপথ হারিয়ে সে আমায় বুকে ধরে না... 
তবে এবার বাঁক নেবো মুহুরীর দিকে...


২. জৈথাং

কার্ণিশে বসে খুঁজছি জৈথাং
জীবনের সব হারিয়ে গেছে
মাঘের উত্তরের হাওয়া দিকভ্রান্ত 
ধেয়ে আসে অশরীরি জানালায়। 
ওরা খুঁজে গরম কাপড়।
তবুও অপেক্ষা; কুয়াশার মিছিল 
বাঁশের বেড়ার ফাঁক 
ছোটো ছোটো আলো! 
আমিও ক্লান্ত শহরে উদভ্রান্ত
হেঁটে চলি জৈথাং এর পথে  -

মোঃ রুবেল

কবি মোঃ রুবেলের জোড়া কবিতা

১. নীল খাম

একটা নীল খামে বন্দী কিছু অব্যক্ত কথা।
যেগুলি তোমার কাছে মুক্ত বিহঙ্গের মতো পৌঁছাতে না পারায়--
 গুমরে মরছে আমার ভেতর।
নিস্তব্ধ রাত,চারিভিত জুড়ে ধেয়ে আসে গাঢ় অন্ধকার।
কারণ সমস্ত প্রতিশ্রুতি ভেঙ্গে,
ভালোবাসার আলোটা এখন ম্লান।
ভালোবাসা-বিচ্ছেদের তারে টান পড়ায় 
 সুর উঠে বিরহের।
অশ্রু সিক্ত নয়নযুগল
বাঁধন ভাঙ্গার আশকারায়।
ভালোবাসা বুঝি এমনও হয়?
জীবন্ত লাশের হত্যার কারিগরও হয়!


২. উষ্ণতা
                  
জ‍্যোৎস্না মাখা একটি নিঝুম রাত।
পুঞ্জিভূত অভিমানেরা অনুরোগের চাদরে ঢাকা।
অনাদরে থাকা আবদারেরা কোমল- উষ্ণতা ছড়ায় পুরো ঘর জুড়ে,
তোমাকে ভালোবাসবে বলে।
যা তোমাকে আগে এমন করে কখনো ভালোবাসা হয়নি।
যে আহত শব্দেরা দেওয়ালে লিপিবদ্ধ হয়েছিল,
সেগুলি মুছে নেব চিরতরে।
তোমাকে নিয়ে অনাহত শব্দের কবিতা বুনবো বলে।

Friday, January 22, 2021

দেবাশিস চৌধুরী

কবি দেবাশীস চৌধুরীর জোড়া কবিতা

১. লুলু -  ১

চোর চোর! পুলিশ পুলিশ! খেলছি
আমি দেখছি টুকেনের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে একটি শিশু; কালো কুচকুচে, চোখ দুটি খোলা জানালার মতো উদ্দাম--- গলার নীচ থেকে বুক পর্যন্ত ভারতের ম্যাপ হয়ে গেছে! ময়লা একটা জ্যাকেট ছেঁড়া জুতো! ঠোঁট দুটো যেন অভুক্ত পেটের মতো! আমি দেখছি শুধু দেখছি,  আমাকে বলছে-- আমি তোমার বাড়িত গেছলাম! 
লুলুকে জড়িয়ে ধরতেই-- আমার বুকের ভেতর বেজে উঠলো--- ভারত মাতা কি জয়!


২. স্বপ্নলেখা

স্বপ্ন দেখতে দেখতে ক্লান্ত
মনে প্রশ্ন আসে -- লেখা কি?
উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেদ পড়তে হলো
বেদ হল বেদনার উপকথা
ব্রহ্মা মুখ নিঃসৃত বাণী! 
গুরু বলেছেন মাতৃগর্ভ কারাগার
আমি স্বপ্নে দেখেছি স্বর্গ!
তাই ক্লান্তি দূরে ঠেলে 
আবার সেই স্বর্গে নিয়ে চলো মা!
আমি লিখতে চাই 
তোমার স্বর্গের উপন্যাস।

রণিতা নাথ

কবি রণিতা নাথের জোড়া কবিতা

১. বিচারক 

সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধি
কেবল হেঁটে যাওয়া...

ক্লান্ত বিকেল
ঠিকানা খোঁজে,
হতাশায় ডুব দিতে দিতেই 
দুটি চোখ
সময়ের তালে,

অথচ
বিচার করতে করতেই
সবাই বিচারক,

নিজের বিচারক কেউ নয় !

অন্তত মানুষ যদি
নিজের বিচারক হতো

পৃথিবী হতো 
মানুষের।




২. চেনা অচেনা

দ্রুত পাল্টাচ্ছে সব
পলকেই চেনা মুখগুলো 
কেমন অচেনা হয়ে যাচ্ছে, 
উলোট-পালোটের মাঝে চেনা শব্দেরা 
ভীড় জমায় মনের ক্যানভাসে।

প্রতিটি সকাল 
নতুন ভাবনাকে জাগিয়ে গেলেও
দিনের শেষে 
বিকেল হলেই 
অবহেলায় পড়ে থাকে অগোছালো কথা,
মাটির বুকে এলিয়ে পড়া 
ক্লান্ত রোদ যেন !

শেষ ঠিকানা খুঁজে
হেঁটে যায় পথিক,
অন্ধকারে দেখে এক বিভৎস মুখ, 
রাতআকাশের নীচে অচেনা পৃথিবী 
মেতে উঠে 
যে খেলায় ভোরের সূর্য 
ইতি টানে তার। 

তীর্যক আলো আর
আলোকিত পৃথিবী,তবুও
মনের আঁধার কাটে না বলেই 
দিনের আলোয় ধর্ষিতা মাটি,
কান্নায় বাতাস ভারী হয়
তারপর...


ঋতুবদলের তালে নাতিশীতোষ্ণ বাতাস 
বয়ে চলে 
পুনরায়...

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...