Saturday, December 31, 2022

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

আমাদের কথা

মৃত্যুকে ভালোবাসা ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই। এটি অনিবার্য। জগতের কোনো প্রাণী মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। মৃত্যুর মতো স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। মৃত্যু বিষয়ক একটি জার্নালই আমাদের এ মাসের সংখ্যা। এটি একটি অমীমাংসিত জার্নাল। বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেট ও পুস্তক নির্ভর। বিন্দুমাত্র তথ্যও আমরা নিজেদের নয়। আপনারা পড়ুন। ভাবিদিনে এমন বিষয় ভিত্তিক জার্নাল প্রকাশ করা হবে কিনা তা আপনাদের মতামতের উপর নির্ভরশীল। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। 

মনন স্রোত জার্নাল : মৃত্যু

যাবতীয় তথ্যঋণ ও বিশদ বিবরণ

  1.  "Definition of death | Dictionary.com"। www.dictionary.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৬
  2.  http://www.dictionary.com/browse/death?s=t
  3.  Samir Hossain Mohammad; Gilbert Peter (২০১০)। "Concepts of Death: A key to our adjustment"।
  4.  "Crossing Over: How Science Is Redefining Life and Death"। Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৬
  5.  মেটকালফ, পিটার; হান্টিংটন, রিচার্ড (১৯৯১)। Celebrations of Death: The Anthropology of Mortuary Ritual। ক্যামব্রিজ প্রেস।
  6. ↑    Bondeson 2001
  7.  Aubrey D.N.J, de Grey (২০০৭)। "Life Span Extension Research and Public Debate: Societal Considerations" (PDF)। ডিওআই:10.2202/1941-6008.1011। সাইট সিয়ারX 10.1.1.395.745অবাধে প্রবেশযোগ্য। ১৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০০৯
  8. ↑   "WHO Report on the Global Tobacco Epidemic, 2008" (PDF)। WHO। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩। lay summary (৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)।

ভুল মৃত্যু সনাক্তকরণ ও একটি তথ্য

বিশ্বে মৃত বলে ঘোষণা করার পরে মৃত ব্যক্তি জীবিত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। অনেক সময় কয়েকদিন পরে তাদের কফিনে, বা যখন শ্বসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে তার আগে তারা জীবিত হয়ে উঠে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকে জনসাধারণের মাঝে ভুল করে জীবিত সমাধিস্থ করার ভয় কাজ করে এবং মৃত্যুর লক্ষণগুলির অনিশ্চয়তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। কবর দেওয়ার আগে জীবনের লক্ষণগুলির পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যার মধ্যে ছিল মৃতদেহের মুখে ভিনেগার এবং মরিচ ঢেলে দেয়া থেকে শুরু করে পায়ে বা মলদ্বারে লাল গরম পোকার প্রয়োগ করার মত পরীক্ষা। ১৮৯৫ সালে লেখক চিকিত্সক জে সি ওসলে দাবি করেছিলেন যে প্রতি বছর ইংল্যান্ডে এবং ওয়েলেসে প্রায় ২,৭০০ জন ব্যক্তিকে অকালে কবর দেওয়া হয়েছিল, যদিও অন্যরা এই অনুমানটি ৮০০ এর কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন। তথ্যটি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া। 

আইন ও মৃত্যু

যে কোনো দেশে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর আইনী কার্যক্রম থাকতে পারে যা বিভিন্ন বিচার বিভাগের মধ্যে পৃথক পৃথক হতেও পারে। একটি মৃত্যুর সনদপত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রদান করা হয়, সেট কোনও ডাক্তার দ্বারা, বা কোনও প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বারাও হতে পারে তবে সেক্ষেত্রে কোনও ডাক্তার মৃত্যুর ঘোষণার দেবার পরে তার জারি করা যেতে পারে।

ঋণ : উইকিপিডিয়া

মৃত্যু : বৌদ্ধ ধর্মমত

বৌদ্ধ মতবাদ ও অনুশীলনে মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৃত্যুর চিন্তাই সিদ্ধার্থ বুদ্ধকে অমৃত সন্ধানের পথে নামিয়েছিল এবং অবশেষে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্ররোচিত করেছিল। বৌদ্ধ মতবাদে, মৃত্যু মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণের মূল্যের স্মারক হিসাবে কাজ করে। মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম হওয়া একমাত্র অবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয় যেখানে কোনও ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। অতএব, মৃত্যুর মাধ্যমে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে সহায়তা করে যে কারও জীবনকে অবহেলা করা উচিত নয়।

মৃত্যু : খ্রীস্ট ধর্মমত

 খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের বিভিন্ন শাখা রয়েছে; মৃত্যুর উপর আধিক্যপূর্ণ মতাদর্শ পরবর্তী জীবনের জ্ঞান থেকে বৃদ্ধি পায়। অর্থ মৃত্যুর পর ব্যক্তি মরণশীলতা থেকে অমরত্বে বিচ্ছেদ ঘটাবে; তাদের আত্মা শরীর ছেড়ে আত্মার রাজ্যে প্রবেশ করে। দেহ ও আত্মার এই পৃথকীকরণের (অর্থাৎ মৃত্যু) পর পুনরুত্থান ঘটবে। যীশু খ্রিস্ট একই রূপান্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন যা তাঁর দেহকে তিন দিনের জন্য সমাধিতে রাখার পরে মূর্ত হয়েছিল। তাঁর মতো, প্রতিটি ব্যক্তির দেহ পুনরুত্থিত হবে এবং আত্মা এবং দেহকে একটি নিখুঁত আকারে পুনরুত্থিত করবে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যক্তির আত্মাকে মৃত্যু সহ্য করতে এবং মৃত্যুর পরে জীবনে রূপান্তরিত করতে দেয়।

মৃত্যু : সনাতন ধর্মমত

সনাতন ধর্মানুসারে, মৃত্যুকে অস্থায়ী জড় দেহ থেকে অমৃত জীব আত্মার পৃথক হয়ে থাকা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। আত্মাই জড়দেহের চেতনার কারণ বলে মনে করা হয়। আত্মা যখন এই শরীর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন দেহ আর চৈতন্য (জীবন) ধরে রাখতে পারে না। তখন ব্যাক্তি বৈষয়িক বাসনার অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। মৃত্যুর পর আত্মা কৃতকর্মের ফলের উপর ভিত্তি করে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন শরীরে প্রাপ্ত হয়। একে পুর্নজন্ম বলা হয়। মৃত্যুর সময় মনের বাসনা(শেষ চিন্তা) অনুযায়ী পুনর্জন্মে শরীর প্রাপ্ত হয়।

সাধারণত পুনজন্ম প্রক্রিয়ার ফলে (আত্মার স্থানান্তর) একজন তার আগের জীবনের সমস্ত স্মৃতি ভুলে যায়। কারণ প্রকৃতপক্ষে কোনো কিছুই মারা যায় না, অস্থায়ী জড় দেহ সর্বদা পরিবর্তিত হয়। এই জীবন এবং পরবর্তী উভয় ক্ষেত্রেই মৃত্যুর অর্থ কেবল পূর্বের অভিজ্ঞতা (বিগত পরিচয়) ভুলে যাওয়া। শুন্য থেকে শুরু।

মৃত্যু : ইসলাম ধর্মমত

ইসলামে বলা আছে ইসলামী রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পরেও জীবন আছে এবং এটি আখেরাত নামে পরিচিত। ইসলামে, একজন ব্যক্তি কখন মারা যায় তা আল্লাহই সিদ্ধান্ত নেন এবং বেশিরভাগ মুসলমান বিশ্বাস করেন যে যখন তারা মারা যায়, ইয়াওম আল-দিন, থেকে বিচারের দিন পর্যন্ত তারা কবরে থাকবে। বিচার সেখারে প্রধান।

মৃত্যু : ইহুী ধর্মমত

ইহুদী ধর্মের মতে পরকালীন জীবন নিয়ে বিভিন্ন ধরণের বিশ্বাস রয়েছে, তবে তাদের কেউই মৃত্যুর চেয়ে জীবনের পছন্দকে বিরোধিতা করে না। এটি আংশিক কারণ মৃত্যুর ফলে কোনও আদেশ পালন করার সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। চিরতরে বন্ধ বুঝানো হয়েছে।

মৃত্যু : লন্ডনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল

লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি জার্নাল থেকে কিছু অংশ ;
 ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ এই শ্বাশ্বত সত্য সকলেই জানেন। মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আগে থেকে মৃত্যুর আগমন ধ্বনি টের পাওয়া যায়? অন্তত, প্রিয়জনদের থেকে ভালভাবে বিদায় নিয়ে নেওয়া যায়। বাকি থাকা কাজ, সেরে ফেলা যায়। তবে, সত্যিই কি কেউ মৃত্যুর বিষয়ে আগে থেকে উপলব্ধি করতে পারে? কেউ যখন মারা যায়, তখন ঠিক কী ঘটে? এই সকল প্রশ্ন প্রায় সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে বিচলিত করেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান এই বিষয়ে খুবই কম জানতে পেরেছে। তবে, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করেছেন, কোনও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যু কিছু সঙ্কেত দেয়। যা থেকে বোঝা যায়, ওই ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন।

দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু বলা কঠিন। মৃত্যুর সঙ্কেত নাও মিলতে পারে। তবে, স্বাভাবিক মত্যু বা রোগভোগে মৃত্যুর ক্ষেত্রে, সাধারণত ওই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রস্তুতি তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত সময়ের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এমনটাই দাবি করেছেন এক ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট’এর চিকিৎসক। ডাক্তারি জীবনে অন্তত কয়েকশো মানুষেকে অত্যন্ত কাছ থেকে মরতে দেখেছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি রিসার্চ ফেলো সিমাস কোয়েল। এই বিষয় গবেষণা করেননি তিনি। তবে,ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই মৃত্যুকে পড়ে নিতে শিখেছেন তিনি। ‘দ্য কনভারসেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি মৃত্যু প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

এই চিকিত্সকেরমতে, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর আসে সেই দিনটি, যখন সেই ব্যক্তি পৃথিবীকে বিদায় জানান। সিমাস বলেছেন, মৃত্যুর আগে বিভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে একেবারে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। তবে, কারা চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন। তবে, সব সময় একেবারে নিখুঁতভাবে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী মেলে না। কারোর ক্ষেত্রে হয়তো মনে হল, তাঁর আয়ু আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন। তাঁর ক্ষেত্রে বাকি প্রক্রিয়াটি একদিনের মধ্যেও ঘটে যেতে পারে।

সিমাস কোয়েল বলেছেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ারের একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে, আমি মনে করি মৃত্যুর একটি প্রক্রিয়া আছে। আমাদের মৃত্যু ঘটার দুই সপ্তাহ আগে থেকে এটা শুরু হয়। এই সময় থেকে, মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এই সময় সাধারণত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের হাঁটতে কষ্ট হয়। সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে। অল্প অল্প করে তাদের ঘুমের সময় বাড়তে থাকে। ঘুমের মধ্যে আবার বারবার চমকে জেগে ওঠে। জীবনের শেষ দিনে, কোনো ট্যাবলেট গিলে নেওয়া বা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন ওই ব্যক্তি। আর তারপরই আসে চিরঘুম।’

মৃত্যুর সময় শরীরে ঠিক কী ঘটে, এই রহস্য এখনও অমীমাংসিত। তবে কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হতে শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে এন্ডোরফিনও। এই রাসায়নিকটি সাধারণত কোনও ব্যক্তির মধ্যে উচ্ছ্বাসের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন, এই রাসায়নিকটি নিঃসরণের কারণেই মৃত্যু প্রক্রিয়া চলাকালীন মানুষের ব্যথা-যন্ত্রনা কমে যায়। তবে, এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সিমাস বলেছেন, ‘মৃত্যুর আসল মুহূর্তটিকে বোঝা কঠিন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে কোনও মানুষের মানসিক চাপ, তাঁর শরীরের মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়। ক্যান্সার বা অন্য গুরুতর রোগে অসুস্থদের শরীরে প্রদাহ দেখা যায়।’

ভারতীয় অতেন্দ্রীয়বাদ


ভারতের জাগ্গী বাসুদেব তথা সদগুরুর আলোচনা দেখতে পারি। তিনি বলেছেন;
মৃত্যুকে একটা গুরুতর রহস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুজরুক, দার্শনিক, ডাক্তার এবং কবিরা এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মৃত্যু অজানা এবং অজ্ঞেয় রয়ে গেছে - আপাতদৃষ্টিতে সকলের জন্য একটা বাধ্যতামূলক গন্তব্য। একমাত্র একজন অতীন্দ্রি়বাদী, যিনি জীবন এবং মৃত্যুর রেখার মধ্যে সচেতনভাবে পা রেখেছেন, তিনিই বলতে পারেন এই দুটো অতিক্রম করার জন্য কি করতে হয়, ও সেইদিকে প্রথম পদক্ষেপ রাখার প্রক্রিয়াটা আমাদের দিতে পারেন।
সদগুরু: আপনাকে এটা বুঝতে হবে: আপনি যা কিছুর অভিজ্ঞতা করতে পারেন, সেটাই জীবন। যাকে আপনি মৃত্যু বলেন তাও হ'ল জীবন। তাই, মৃত্যুর কি কোনো বিকল্প আছে? অবশ্যই আছে। আপনি মৃত্যু হিসেবে যেটা উল্লেখ করছেন তা হল জীবনের শেষ মুহূর্ত। সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন আপনি ভৌতিক দেহের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেন, আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে। আপনার জীবনের বাকি প্রায় সবকিছুই বহুবার ঘটতে পারে। কিন্তু এই একটা মাত্র জিনিস আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে এবং এটাই আপনার শেষ কাজ। আমি চাই আপনি মৃত্যুকে জীবন হিসাবে উপলব্ধি করুন, অন্য কিছু হিসাবে নয়। এটা আপনার জীবনের শেষ কাজ। এটা কি জরুরি নয় যে আপনি একে মধুর এবং চমৎকার ভাবে ঘটানোর চেষ্টা করবেন? আপনি যদি এর থেকে ভয় পান, আপনি যদি জীবনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হন এবং আপনি যদি এর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তবে স্বাভাবিকভাবে আপনি সেই সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলবেন।

আধ্যাত্মিক পথের লোকেরা তাদের মৃত্যুর সময়, তারিখ এবং স্থান নির্বাচন করেন। যোগী সর্বদা সময়ের আগে মৃত্যুর সময় এবং তারিখ জানতে চান। তিনি সেটা স্থির করেন। অনেক বছর আগে থেকেই তিনি বলে দেন, “এই তারিখে, এই সময় আমি চলে যাব,” এবং তিনি চলে যান, কারণ তিনি সচেতনভাবে চলে যাওয়ার জন্য নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরি করেন। শরীরের কোনও ক্ষতি না করে এই দেহটাকে সচেতনভাবে ত্যাগ করা, যেভাবে আপনি কাপড় ছাড়েন এবং চলে যান, আপনি আপনার শরীরটাকে সেইভাবে ত্যাগ করবেন এবং চলে যাবেন, আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে সেটা হবে আপনার জীবনের চূড়ান্ত সম্ভাবনা। যদি আপনার সচেতনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আপনি জানেন অস্তিত্ব হিসেবে আপনি এবং এই ভৌতিক শরীর হিসেবে আপনি যা সংগ্রহ করেছেন সেটা কোথায় সংযুক্ত, তখন আপনার সঠিক মুহূর্তে আপনি নিজেকে আলগা করতে পারবেন।

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না।
এটা কি আত্মহত্যা? নিশ্চিত ভাবে না। আত্মহত্যা হতাশা, ক্রোধ, ভয়, দুঃখ সহ্য করার ব্যর্থতা থেকে হয়। এটা না আত্মহত্যা আর না ইচ্ছামৃত্যু। এটা নিজের সমন্ধে এতটাই সচেতন হওয়া যে আপনি জানবেন কখন আপনি জীবনের চক্রটা সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন, এবং আপনাকে এর বাইরে বেরোতে হবে। এবং এটা মৃত্যুও নয়। এটা সমাধি নামে পরিচিত, যেখানে একজন মানুষ নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে সচেতনতা তৈরি করেছে নিজের জমানো শারীরিকতা থেকে নিজেকে আলাদা করতে। সচেতনতার সেই স্তরে, কারোর পক্ষে ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব। আপনি যদি সচেতনতার সেই স্তর অর্জন নাও করতে পারেন, আপনি যদি কিছু নির্দিষ্ট জিনিস পরিচালনা করতে পারেন তবে আপনি অন্তত নিজের সেই শেষ মুহূর্তটাকে অত্যন্ত মধুর, আনন্দদায়ক, সুখকর এবং আনন্দপূর্ণ করে তুলতে পারেন। .

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না। আপনি যদি আপনার পুরো জীবনটায় একটা নির্দিষ্ট স্তরের সচেতনতা বজায় রাখেন,তবে চলে যাওয়ার মুহুর্তটাও সচেতনতার মধ্যে ঘটতে পারে। আপনি যদি অসচেতন ভাবে জীবনযাপন করেন এবং আপনি সেই মুহূর্তটায় সচেতন হওয়ার প্রত্যাশা করেন, এই ধরণের জিনিস মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে না।

আজকের রাতে এইটা অনুশীলন করুন, যাওয়ার শেষ মুহূর্তটা - আমি এটাকে যাওয়ার সময় বলি কারণ সেই শেষ মুহূর্তে আপনি জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমোতে চলেছেন - আপনার সচেতনতা বজায় রাখুন এবং দেখুন। এটা আপনার জীবন অভূতপূর্বভাবে বদলে দেবে। প্রতিদিন এটা একটা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করুন। সম্পূর্ণ অধ্যবসায়ের সাথে এটা করুন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি দেখবেন, আপনি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছেন, যেখানে শেষ মুহূর্ত অবধি আপনি সচেতন থাকছেন। আচমকাই, আপনার জীবন-সম্পর্কীয় সমস্ত কিছু, আপনার জীবনের মৌলিক গুণগুলো, কেবলমাত্র এই একটা সাধারণ কাজ করেই বদলে যাবে। আপনি যদি সচেতনতার সঙ্গে জেগে থাকা থেকে ঘুমের মধ্যে যেতে পারেন, তবে জীবন থেকে মৃত্যুর দিকে যাওয়ার সেই শেষ মুহূর্তটাও আপনার জন্য ভীষণ মধুরভাবে ঘটবে। আরও অন্যান্য পদ্ধতিও রয়েছে।

ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে মানুষ তাদের প্রিয়জনের মধ্যে মারা যাওয়া পছন্দ করতেন না, কারণ আপনি যদি নিজের পরিবারের মধ্যে মারা যান, তবে অনেক আবেগ এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি জীবনকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। আপনি এটাকে সুন্দরভাবে হতে দেবেন না। তাই লোকেরা দূর দূর স্থানে ভ্রমণ করতেন যা আধ্যাত্মিকভাবে প্রাণবন্ত বলে মনে করা হত এবং তারা নিজেদের দেহ সেই জায়গায় ত্যাগ করতে চাইতেন। এমনকি আজও, মানুষ এটা করে। পশ্চিমী দেশে এটা পুরোপুরি চিন্তার বাইরে হতে পারে কারণ সেখানকার মানুষ তাদের পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মারা যেতে চান। এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। একজন ব্যক্তির পক্ষে এমন একটা স্থান নির্বাচন করা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ, যা আধ্যাত্মিকভাবে অনুকুল, যা নির্দিষ্ট উপায় প্রাণবন্ত এবং যথাসম্ভব কৃপার সঙ্গে দেহ ত্যাগ করার জন্য আদর্শ। আপনি যদি কৃপার সঙ্গে জীবনযাপন করেন তবে মাধুর্য্যের সঙ্গে আপনার মারা যাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Friday, December 30, 2022

মৃত্যুর সজ্ঞা বিষয়ক প্রাথমিক কথা

বিজ্ঞানসম্মতভাবে মৃত্যুর সজ্ঞা দেওয়ার একটি বড় সমস্যা হলো, একে জীবন্ত অবস্থা হতে পৃথক করা। সময়ের যেকোনো মুহূর্তে, মৃত্যুকে এমন মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করা যায় যখন জীবন শেষ হয়ে আসে। কিন্তু কখন মৃত্যু হয়েছে সেটি বের করা কঠিন কারণ জীবনের সমাপ্তি সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে একই সময়ে ঘটে না। তাই মৃত্যুর সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন জীবন ও মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তাত্ত্বিক সীমানা। এই কাজটি কঠিন, কারণ জীবন কাকে বলে সে সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। আমরা নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে যার যা প্রয়োজন, তা পড়তে পারি। আসুন। 

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...