Friday, July 30, 2021

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম!

সম্পাদকীয় কলাম

এ যাবৎ এ পথে হেঁটে গেছে যারা, তাঁদের শুভেচ্ছা। এ পথ বড় দুর্গম। আমাদের যাত্রাপথ ক্রমশঃ দুর্গম হয়ে যাচ্ছে আরও। 

সময়ে অসময়ে যাদের নির্দেশনা মনে পড়ে, তাঁদের প্রণাম। নির্দেশনা পথ ঠিক করে দেয়। ভেতর ভেতর মনে হয় বন্ধুর পথ। দিনশেষে আমরা পা কাটতে কাটতে হাঁটি।

আমাদের না হেঁটে উপায় নেই। যা যেয়ে উপায় নেই। আমরা অসহায়ের মতো হাঁটছি। হেঁটে যাচ্ছি গন্তব্যের দিকে। সব আয়োজন ফুরিয়ে এলে নতুন সম্পাদকীয় হবে ভাবনার, জীবনের, দেশের।

জুলাই সংখ্যাটি এমনই। যারা লিখলেন তাঁদের কৃতজ্ঞতা। দোষত্রুটি সম্পাদকের। ক্ষমাসুন্দর মনোভাবের পাঠকদের কুর্ণিশ।

জয় হিন্দ

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

মনন স্রোত | সংখ্যা

দীপক দাস

কী পড়ব কেন পড়ব!

মাছির মাথার  চতুর্দিকে চোখ বসানো তাই সে একই সময়ে তার চারদিকের পৃথিবীকে  দেখতে পায়,মানুষের  মাত্র দুটি চোখ তাও আবার সামনে বসানো।তাই মানুষ শুধু সামনের দিকটাই দেখতে পায়। তাই" আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ পেয়ে নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন- " আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি বা দুটি নয়,মনের চোখ বাড়ানো কমানো তো সম্পূর্ণ  আমার হাতে"।  তাহলে চোখ বাড়াবার পন্থাটা কী? অবশ্যই উত্তর  হবে বই পড়ে।
" বারট্রান্ড রাসেল" বলেছেন- " সংসারে জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে,মনের ভেতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া"। কিন্তু  প্রশ্ন, এই অপরূপ  ভুবন সৃষ্টি  করি কী প্রকারে?
তাই ওমর খৈয়াম বলেছেন-
      Here with a loap of bread
          beneath the bough
      A Flash of wine,a book  of
          verse and thou
    Beside me singing is the wilderness
        and wilderness is paradise enow
" রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে, প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে আসবে, কিন্তু  বইখানা অনন্ত  যৌবনা যদি তেমন বই হয়।"
খৈয়াম  ছিলেন মুসলমান।মুসলমানের প্রথম বই কোরানের সর্ব প্রথম যে বাণী তাতে আছে" অল্লাম বিল কলমি"। অর্থাৎ  আল্লা মানুষকে  জ্ঞান দান করেছেন কলমের মাধ্যমে,  আর কলমের আশ্রয়  তো বই। বাইবেল শব্দের  অর্থ বই।আরো অনেক শ্রেষ্ঠ মানুষ বইয়ের  উপযোগিতা  সম্পর্কে  নানা কথা বলেছেন। যেমন রবীন্দ্রনাথ  বলেছেন-
" বিদ্যুৎকে মানুষ লোহার তারে বাঁধিয়াছে  কিন্তু কে জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দের মধ্যে বাঁধিতে পারিবে।কে জানিত সংগীতকে, হৃদয়ের আশাকে,জাগ্রত আত্মার  আনন্দধ্বনিকে,আকাশের দৈববাণীকে সে কাগজে মুড়িয়া   রাখিবে।কে জানিত মানুষ অতীতকে বর্তমানে বন্দী করিবে। অতল স্পর্শ কাল সমুদ্রের  উপর একখানি  " বই" দিয়া সাঁকো বাঁধিবে"।
টলষ্টয় বলেছেন" জীবনে মাত্র তিনটে জিনিষের প্রয়োজন বই, বই এবং বই"।
গোর্কি বলেছেন- " আমার মধ্যে উত্তম  বলে যদি কিছু থাকে তার জন্য আমি বইয়ের কাছে ঋণী"।
লেনিনের সেই বিখ্যাত  উক্তি " বই ধরো ওটা হাতিয়ার "।
এ প্রবন্ধে বই বলতে মূলত সাহিত্য  বিষয়ক  বইয়ের উপর আলোচনা সীমাবদ্ধ  থাকবে।অন্যান্য  বইয়ের মাধ্যমে  আমরা নানা বিষয় সম্পর্কে  জ্ঞান  লাভ করি যেমন ভূগোল বই আমাদের  ভৌগোলিক   জ্ঞান  দেয়। কিন্তু মানুষ হওয়ার শিক্ষা  আমরা পাই একমাত্র  সাহিত্য  পাঠ করে।
এই যে এতগুলি উদাহরণ  ব্যবহার করলাম,  কেউ কী এইসব উদাহরণ  পড়ে বই পড়েন।তা তো নয়।তাহলে বই পড়া শুরু হয় কিভাবে  বা শুরু করানো যায় কিভাবে?  কোন বয়সে কী ধরনের বই পড়া উচিত, কে ঠিক করে দেবে? এই প্রশ্নগুলির উত্তর  খোঁজা যাক।

সায়ন পাল

বেইমান পাখি

পাখি তুই কোথায় যাবি,
বল কার সঙ্গ দিবি?
তুই পাখি বড়ই বেইমান,
আমার চালাঘরে এখনো লেখা তোর নাম।
আহা কত আহ্লাদ কত সুখ
ভালোবাসার প্রতি কনায় নাই দেখি তোর মুখ।
ভালো সেজে বাসায় ঘুরে ভালোবাসা,
এত সুখ কেন এই ভালবাসায়!
প্রেমের দিন আজ গত হল
বর্তমান আজ অতীত হলো।
তোর পাশেতে সেদিন ও ছিলাম আমি
আজ কার মন টা তোর কাছে এত দামি?
আমাতে আজও তোকে দেখতে পাবি
তোর মন শহরে কি পাব আমার ছবি?

প্রণব দাস

একমুঠো স্বপ্ন
             
নিশাচরীরা গর্তের সন্ধানে অনুতাপ মেটায়,
গবেটগিরি আজও চলে ফেইক প্রোমিস এর বন্যায়।
রাস্তার বুকে হাজার ওয়ারিয়র,পদধূলিতে কাঁপছে ভূধর,
যৌবনের আগুনে ছাই তাই,আজকের এই প্রহর।

বিশ্বাসটা আজও আছে,তবে সকালটা চাই,
বেম্বো স্টিকটা কাঁধে নড়ে,সেই বসন্তের আশায়।

সুধীর দাস

হঠাৎ দেখতে পেলাম


সেদিন হঠাৎ পেলাম দেখতে
আরে কোনো প্রেয়সী কিংবা মায়াবিনীকে নয় ;
রাস্তার ধারে ঘুরপাক করা নিরীহ বাচ্ছা।
পিঠে একটা প্লাস্টিকের বস্তা ,
কিন্তু তার চোখে যেন অজস্র স্বপ্ন ডানা বাধে।
ছেঁড়া প্যান্ট, ময়লাযুক্ত ছেড়া শার্ট ,
তবুও সে নির্দ্বিধায় করে বাবুয়ানার চালচলন।
লেখাপড়া ফাস্টক্লাস, চলাফেরা স্বপ্নেতে হাইক্লাশ।
নির্দিধায় সে ভালো ছাত্র,
ভাগ্যের পরিহাস তাকে আজ করলো উপহাসের পাত্র।
তবুও নেই তার লজ্জা , নেই কোনো ভয় ,
নিজের উপার্জনে করে ভোজন, রাস্তায় ঘুমায় করে রাত্রিদিন ঝড়-তুফান সয়।
ধরনীই মাতৃতুল্য, এই মাটি তার রাজার পালঙ্ক।
চোখের জল বর্ষিত হয় না।
হয় না কোনো আপশোস।
এ সমাজ বড়ই নিষ্ঠুর ।
রাস্তার কুকুর তার বন্ধু, রাতের তারারা তার সঙ্গী।

পান্থ দাস

কোভিড
     
ইঙ্গিত ছিলো অনেক
যাও সামলে সময় থাকতে,
রইবেনা কোন অস্তিত্ব
থাকবে সবাই কাঁপতে ৷

দুঃস্বপ্ন আজ সত্যি
ভুগছে সকল অনাহারে সঠিক,
বদলায় রঙ ক্ষনে ক্ষনে, যেন গিরগিটি
বিপন্ন করবে সব, মানুষ খেকো এই কোভিড ৷

আকার এখন মহামারি
ধুঁকছে পুরো বিশ্ব,
পাশানের মতো রয়েছে দাড়িয়ে
ডাক্তার, নার্স সমস্ত ৷

রক্ষার ভারটা বেশি বটে
তবে ছাড়তে নারাজ হাল,
জোর থাকবে শুধু মনে
আর সময়টা দেখবে না হয় কপাল ৷

দিপিকা রায়

কিছু কথা ছিল


নিলা আর রুদ্র বছর দুয়েক হল তাদের বিয়ে হয়েছে । ওদের বিয়েটা ছিল লাভ ম্যারেজ । তিন বছর জমিয়ে প্রেম করে এরপর বিয়ে টা করল। নিলার বাড়ির মানুষের কিছুটা অমত ছিল ঠিকই।  কিন্তু কথায় আছে না , "ভালোবাসার সামনে সবাইকে একদিন হার মানতেই হয়"। তেমনি নিলার পরিবার কে ও তাদের ভালোবাসার সামনে হার মেনে রুদ্র কে জামাই হিসেবে মানতেই হল। 
 রুদ্র একটা প্রাইভেট কোম্পানি তে চাকরি করে। এই কাজের সূত্রে রুদ্র কে বাইরে বাইরেই থাকতে হয়। আগে একা থাকতে হতো, রান্নাবান্না ও একাই করতে হতো। কিন্তু এখন সাথে নিলা আছে।  দুইজনে মিলে তাদের এই ছোট্ট সংসার টা ভালোভাবেই গুছিয়ে নিল।বিয়ের আগে যেমন ওদের মধ্যে গভীর ভালোবাসা ছিল তেমনি বিয়ের পর ভালোবাসা টা গভীর থেকেও আরও গভীরতম হয়ে উঠলো। 

একদিন সকালে নিলা দেখলো রুদ্র অফিসে যায় নি। 
নিলা - কি হল আজ অফিস যাবে না। 
রুদ্র- না আজ শরীর টা একটু খারাপ লাগছে। তাই আজ অফিসে যাচ্ছি না। 
নিলা- এ মাঃ কি হল তোমার? জ্বর হয়েছে নাকি? 
রুদ্র- আরে না জ্বর না। এমনি শরীর টা একটু মেজমেজ করছে। একটু বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে। 
নিলা- আচ্ছা, তাহলে আমি চা আর ব্রেকফাস্ট দিচ্ছি। তুমি খেয়ে একটু বিশ্রাম করো। 

নিলা রুদ্রের জন্য চা আর ডিম টোস্ট আনলো। ডিম টোস্ট ওর খুব পছন্দের। 

নিলা - এই নাও, ব্রেকফাস্ট করে নিয়ে একটু বিশ্রাম করো। 

রুদ্র ব্রেকফাস্ট করে রুমে চলে গেল। 
সেদিন নিলার একটু কেমন জানি মনে হল। কারণ , আজ পর্যন্ত কোনোদিন রুদ্র  নিলা কে একা রেখে ব্রেকফাস্ট করেনি , একসাথেই করতো সবসময়। নিলার হাজার টা কাজ থাকলেও রুদ্র একটা বাইট হলেও নিলাকে খাইয়ে দিত । কিন্তু আজ রুদ্র একবারও জিজ্ঞেসা করলো না! 
নিলা ভাবছে, হয়তো ওর শরীর খারাপ তার জন্য জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছে। এইসব ভাবনায় নিলা বেশি পাত্তা না দিয়ে নিজের কাজ করতে থাকে। 

  দুপুর দু টো  রুদ্র স্নান সেরে  জানালার দিকে তাকিয়ে কি যেন ভাবছে।
আর এইদিকে নিলা সব কাজ সেরে, দুপুরের খাবারটা নিয়ে এল। 

নিলা- এই শুনছো ! টেবিলে খাবার টা দিয়েছি এসে খেয়ে নেও। আমি রান্নাঘরের কাজটা সেরে খাবো। তুমি তাড়াতাড়ি এসো। 

এই কথা বলার পর নিলা রান্না ঘরে চলে গেল। নিলার কথা যেন রুদ্র  শুনতেই পাই নি। সে আপন মনে কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। 
প্রায় আধ  ঘন্টা পর নিলা রান্না ঘর থেকে আসলো। 
এসে দেখলো, 

নিলা -  কি গো ,, এই শুনছো! 
রুদ্র- হ্যা বলো। কি হয়েছে? 
নিলা- সেটা তো আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি, কি হয়েছে তোমার? 
রুদ্র- আমার আবার কি হবে? 
নিলা- তাহলে, টেবিলে যে খাবার টা আমি আধ ঘন্টা আগে রেখে গিয়েছিলাম, তোমাকে বারবার বলেছি খেয়ে নিতে। তুমি খাও নি কেন?
রুদ্র- ওঃ সেই কথা। আমি তখন শুনতে পাই নি। ঠিক আছে এখন খেয়ে নিচ্ছি। 

রুদ্র খাবার টেবিলে সামনে গেল, চেয়ারে বসে খাবার টা মুখে দিতেই, 

নিলা - 'দাঁড়াও। '
রুদ্র- আবার কি হল! এতক্ষণ বলছো খাবার খাই নি কেন, আর এখন খেতে যাবো তো বারণ করছো। 
নিলা -  তোমার কি হয়েছে গো ! বলো না আমায়। 
তুমি এমন  করছো কেন? 
রুদ্র- আচ্ছা ঝামেলা তো। খেলেও দোষ, না খেলেও দোষ! 
নিলা -  তুমি ঠান্ডা খাবার কখনো পছন্দ করো না।খাবার একটু ঠান্ডা হলে সারা ঘর মাথায় তুলে নিতে। আর আজ এই ঠান্ডা খাবার কিভাবে খেয়ে নিচ্ছ  তুমি। 
রুদ্র -  না মানে,,, খাবার এতটা ও ঠান্ডা হয় নি যে খেতে পারবো না। আর তুমি আবার গরম করে আনবে তাই ভাবলাম খেয়েই নেই। 
নিলা - খাবার টা দাও, আমি গরম করে আনি। 

নিলা খাবার টা গরম করে রুদ্র কে দিল। এরপর রুদ্র খাবার খেয়ে দেয়ে রুমে শুতে চলে গেল। নিলা খাবার টেবিলের সামনেই বসে কি কি যেন ভাবছে! 
রাত ৮ টা । রুদ্র নিলাকে ডাক দেয়। 

রুদ্র- নিলা এই নিলা শুনো একটু। 
নিলা- হ্যাঁ বলো। কি হয়েছে ! 
রুদ্র - বলছিলাম আমি রাতে খাবো না । তুমি খেয়ে নিয়ো । 
নিলা- কিন্তু কেন? শরীর খারাপ লাগছে? ডক্তর ডাকবো? 
রুদ্র- না না শরীর খারাপ লাগছে না। এমনি ক্ষিধে নেই। তাই খাবো না। 
নিলা- ক্ষিধে নেই বললেই কি হবে! তোমার পছন্দের পনির রান্না করছি একটু খেয়ে নিয়ও । 
রুদ্র-  দেখো নিলা বিরক্ত করো না। একবার বলছি তো খাবো না। বারবার জোড় করছো কেন ! এখন যাও। আমার কিছু কাজ করতে হবে। 

এই বলে রুদ্র তার ল্যাপটপ নিয়ে বসে পরলো। আর নিলা চোখে জল নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এল। নিলা এখন খুব চিন্তায় পরেছে। রুদ্রর কি হয়েছে। এত বছরে রুদ্র কোনোদিন ওর সাথে এমনভাবে কথা বলে নি। কিন্তু আজ কি হল! 
রাতে নিলা কিছু রান্নাও করলো না। আর না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো। হঠাৎ মাঝরাতে নিলার ঘুম ভেঙে যায়। তখন বাজে রাত ১ টা। নিলার ঘুম ভাঙতেই দেখে রুদ্র এখনও ঘুমায় নি। এত রাতেও  মোবাইলে  কি যেন করছে । আর একা একাই মুচকি হাসছে। 

নিলা- এই,, কি গো। তুমি এখনও ঘুমাও নি। কি করছো এতক্ষণ ধরে? 
রুদ্র-  ক..... ই কিছু না তো। এমনি ঘুম আসছিল না। তাই মোবাইল দেখছিলাম। শেষ মোবাইল দেখা। চলো ঘুমিয়ে পরি। 

এই বলে রুদ্র মোবাইল টা রেখে ঘুমিয়ে পরে । আর নিলার মনে কেমন যেন এক সন্দেহ বাঁসা বাঁধতে থাকে। এই  ক বছরে নিলা কোনোদিন ওকে সন্দেহ করে নি, কিন্তু আজ কেন জানি নিলার মনে এই সন্দেহের সৃষ্টি। নিলা মন খারাপ করে ঘুমিয়ে পরলো। 

পরের দিন রবিবার। প্রায় রবিবারে নিলা আর রুদ্র বাইরে ঘুরতে যায়। আর দুপুরের খাবারটাও তারা দুইজন বাইরেই খায়। আজ সকালে নিলার উঠতে অনেকটা দেরী হয়ে গেল। অন্যদিন রুদ্রর অফিস থাকে বলে তাড়াতাড়ি ঘুম ভাঙে।আজ রবিবার, তাই একটু দেরী করে উঠলো। প্রায় নয় টা বাজে নিলার ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে রুদ্র ঘরে নেই। নিলা তো চিন্তায় পরে গেল এত সকাল সকাল ও কোথায় গেল। এরপর নিলা রুদ্র কে ফোন করে। 

রুদ্র-  হ্যালো। 
নিলা- তুমি কোথায়? 
রুদ্র- এই তো আমি অফিসে। তুমি তো ঘুমিয়ে ছিলে তাই আর ডাক দিলাম না। 
নিলা- আজ না রবিবার! রবিবারে কোন অফিস খোলা থাকে! 
রুদ্র- না, সাইটের কিছু কাজ ছিল। তাই আসতে হল। 
নিলা- তুমি বাড়ি ফিরবে কখন? 
রুদ্র- এখনও বলতে পারছি না। হয়তো রাত হতে পারে। 
নিলা- কি! তোমার রাত হবে? রবিবারে না আমরা  ঘুরতে যাই ! 
রুদ্র-  কিন্তু আজ তো হবে না। কাজের অনেক চাপ। এখন আমি রাখছি পরে ফোন করবো। 
নিলা-  এই শোনো। হ্যা.... লো। হ্যালো। 

রুদ্র ততক্ষণে ফোন টা কেটে দিয়েছে। 
নিলা খাটে বসে কান্না করছে।সে একা একাই বিরবির করছে, -

নিলা -  'হঠাৎ করে রুদ্র এমন করছে কেন ?' 'তাহলে কি ওর জীবনে অন্য কেউ! '
না না ছি ছি এইসব আমি কি ভাবছি! রুদ্র আমাকে খুব ভালোবাসে।  ও এমন কাজ করতেই পারে না। 

এইসব ভাবতে ভাবতে নিলা আজ কোনো রান্না করেনি। সারাদিনে যেই মানুষ টা অনেকবার ফোন করতো সে আজ সারাটা দিন চলে গেল কিন্তু একটা ফোনও করল না ! নিলা ফোন করেছিল কিন্তু রিসিভ করে নি । 

যাইহোক
রুদ্র যেহেতু রাতে আসবে বলেছে তো একবারে রাতেই নিলা রুদ্রের পছন্দের পনির রান্না করবে। 

সন্ধ্যা সাত টা নিলা রান্না টা বসিয়ে দিল। নিলা জানে রুদ্রর বাড়ি ফিরতে প্রায় সাড়ে সাত টা বা আট টা বেজে যায়। তাই তাড়াতাড়ি নিলা রান্না টা বসিয়ে দিল। রাত আট টা নিলার রান্না শেষ। কিন্তু রুদ্র এখনও বাড়ি ফিরলো না। রাত ৯ টা, এখনও ওর কোনো পাত্তা নেই। নিলা রুদ্র কে ফোন করছে কিন্তু ফোনটা রিসিভ করলো না। 
ঠিক রাত দশ টা , হঠাৎ ঘরের বেল বাজলো । নিলা দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিল । 

নিলা- কি গো তোমার আসতে এত দেরী হল যে। কতবার  তোমায় ফোন করেছি। একটা বার তো রিসিভ করতে পারতে?
রুদ্র- আরে কাজের একটু চাপ ছিল তাই দেরী হয়ে গেছে। আর তোমার কলটা ও দেখতে পাই নি।
নিলা-  ঠিক আছে।  আমি খাবার গরম করছি, তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো। 
রুদ্র-  নিলা শোনো। বলছি যে, আজ আর খাবো না ক্ষিধে নেই। 
নিলা- ক্ষিধে নেই মানে? কালও তো খেলে না, সকালে ও না খেয়ে চলে গেলে। এখন বলছো ক্ষিধে নেই! আজ তোমার পছন্দের পনির রান্না করেছি। অল্প একটু খেয়ে নাও। 
রুদ্র- না গো। অফিসে অনেক দেরী হয়েছিল তো, তাই আমি বাইরে খেয়ে নিয়েছি। 
নিলা- ওঃ তুমি বাইরে খেয়েছো? এইদিকে সারাদিন আমি না খেয়ে তোমার জন্য বসে আছি। কখন তুমি আসবে আর এক সাথে খাবো। এখন বলছো বাইরে খেয়ে নিয়েছো । 
ঠিক আছে। 
রুদ্র- তুমি সারাদিন না খেয়ে কেন ছিলে। আমি তো বলেছিলাম আমার আসতে দেরী হবে। 
নিলা- হ্যাঁ বলেছিলে তো। কিন্তু এইটা তো বলো নি যে তুমি রাতে বাইরে থেকে খেয়ে  ফিরবে। 
রুদ্র- আচ্ছা এখন এইসব ছাড়ো। যাও, খেয়ে শুয়ে পরো। 
নিলা-  হুমম। 

এই কথা বলে রুদ্র রুমে চলে যায় । আর নিলা মন খারাপ করে ড্রইংরুমে বসে আছে। প্রায় এক ঘন্টা পর নিলা রুমে গেল। গিয়ে দেখে রুদ্র আবার মোবাইলে কি যেন দেখছে। নিলার সন্দেহ টা আরও গভীর হতে থাকে। 

নিলা-  এই শোনছো। কি গো। 
রুদ্র- হ্যাঁ বলো।
নিলা- তুমি এখনও ঘুমাও নি। এত রাতে মোবাইলে কি করছো! 
রুদ্র- কিছু না। একটু কাজ করছিলাম। 
নিলা- আগে তো তোমার মোবাইলে তেমন কোনো কাজ থাকতো না। তবে এই দুইদিন ধরে দেখছি মোবাইলে অনেক বেশিই কাজ থাকে।
রুদ্র- তুমি কি বলতে চাও? ঘুরিয়ে ফিরিয়ে না বলে সরাসরি বলো। 
নিলা- না কিছু না। ঠিক আছে, তাহলে তুমি তোমার কাজ করো। আমি ঘুমাই। 
রুদ্র- ঠিক আছে। 

নিলার চোখের কোনে জলের ঢেউ। মন টা ও কেমন যেন উথাল পাথাল করছে। দু চোখে ঘুম নেই। নিলা কিছুক্ষণ পর পর ঘাড় টা ঘুরিয়ে শুধু রুদ্র কে দেখছে। ও যেন মোবাইলে একদম ডুবে আছে। নিলা কিছু বলতেও পারছে না, সইতেও পারছে না। যাইহোক অনেক অস্থিরতার পর দু চোখের পাতা এক করলো নিলা। 

প্রায় কুড়ি, পঁচিশ দিন এইভাবেই নিলা আর রুদ্রর সংসার টা চলতে থাকে। রুদ্র সকালে কোনোভাবে নাকে মুখে কিছু দিয়ে বেরিয়ে যায়। আবার অনেক রাতে বাড়ি ফেরে। কখনো তো রাত এগারো টা ও বেজে যায় বাড়ি ফিরতে। মাঝে মাঝে রুদ্রর  ভালো লাগলে রাতের খাবার খেয়ে নিত। এরপর সেই মোবাইলে রাতের পর রাত ডুবে থাকতো। নিলা কিছু বললে ও কেমন যেন শুনেও না শুনার মতো করে থাকতো। নিলা বুঝে উঠতে পারছিল না কি করবে। 

কিন্তু একদিন যখন নিলা দেখলো রাত দু টো বাজে তখনও রুদ্র ঘুমাই নি। মোবাইলে কার সাথে জানি ব্যাস্ত। তখন নিলার ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেল। রাতে কোনো ঝামেলা করলো না। পরেরদিন রীতিমতো রুদ্র অফিসে গেল। রাত দশ টায় রুদ্র বাড়ি ফিরল। রুদ্র রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাটে বসল। 

নিলা- নিশ্চয় বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো? তাই না? 
রুদ্র- হ্যাঁ মানে,,,, কাজ ছিল তো তাই একেবারে খেয়েই ফিরলাম। 
নিলা-  আচ্ছা। ভালো কথা। তবে তোমার সাথে কিছু কথা আছে আমার। 
রুদ্র-  হ্যাঁ বলো। কি কথা। 
নিলা-  তুমি কি মোবাইল টা রাখবে? না হয় আমি এখনি এটা ভেঙে দেবো। 
রুদ্র- আরে বাবা কি হয়েছে এত রাগ দেখাচ্ছো কেন? ঠিক আছে, নাও মোবাইল রাখলাম। এইবার বলো কি বলবে। 
নিলা- তোমার কি হয়েছে এইটাই জানতে চাই ! 
রুদ্র- আমার আবার কি হবে! আমি তো ভালোই আছি। 
নিলা- তুমি হয়তো ভালো আছো। কিন্তু আমি ভালো নেই। 
রুদ্র- কেন? তোমার শরীর খারাপ? 
নিলা- না শরীর না। শরীর খারাপ হলে সেটা সময়মতো ঠিক হয়ে যেতো। কিন্তু মনের আঘাত কখনো কোনো ঔষধে ঠিক হয় না। 
রুদ্র- ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে কথা না বলে সোজাসুজি বলো কি হয়েছে। 
নিলা-  আচ্ছা আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিল বলো তো? আজ প্রায় এক মাস ধরে তুমি আমার সাথে ঠিক করে কথা বলছো না। আমাকে ছাড়া যেই মানুষটা এক কাপ চা ও মুখে দিতো না, সে এখন প্রতি রাতে বাইরে ডিনার করে বাড়ি ফিরে। প্রত্যেক দিন যেই মানুষ টা কিছুক্ষণ পর পর আমায় ফোন দিত। এখন দিনে একবারও তার ফোন আসে না। রাতে আমায় জড়িয়ে না ধরে ঘুমালে যার ঘুম আসতো না, সে এখন রাতের পর রাত মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। এইসবের মানে টা একটু বুঝিয়ে বলবে? 
রুদ্র-  আরে এইসব ছোটখাটো জিনিস কে এত বড়ো করছো কেন? এই কয়েকদিন কাজে ব্যস্ত আমি তাই এমন হচ্ছে। 
নিলা-  কিসের ব্যস্ততা তোমার?  এই  দুই বছরে এত ব্যস্ত কখনও তো দেখি নি। এখন খুব ব্যস্ত না ! মাঝ রাতে মোবাইল দেখে দেখে হাসো। এইটা তোমার ব্যস্ত? 
রুদ্র- নিলা তুমি ভুল বুঝছো আমায়। 
নিলা- না আমি একদম ভুল বুঝছি না। আমি আর পারছি না। বিশ্বাস করো তোমার এই ব্যবহার আমি আর নিতে পারছি না। তুমি যদি অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকো তাহলে আমাকে মুক্তি দিয়ে যাও। 
রুদ্র- পাগল হয়ে গেলে নাকি? কি সব ফালতু বলছো! 
নিলা- আমি ফালতু বলছি না। আমি ডিভোর্স চাই। আমাকে ডিভোর্স দিয়ে তুমি যেখানে খুশি যাও। 

রুদ্র নিলার পাশে গিয়ে হাতটা ধরলো। 

নিলা -  এই আমায় ছোঁবে  না তুমি। দূরে থাকো আমার থেকে। 
রুদ্র- আচ্ছা ঠিক আছে। আমি দূরেই আছি। কিন্তু ডিভোর্সের কথা বলবে না প্লিজ। তুমি আমায় ভুল বুঝছো । 
নিলা- 'আমি আর কিছু শুনতে চাই না। আমি কাল বাড়ি চলে যাবো। '

এই  বলে নিলা খাটের উপর থেকে বালিশ টা নিয়ে ড্রইংরুমে চলে এল। 

রুদ্র-  নিলা, এই নিলা,, শোনো আমার কথা। নিলা,,,,, 

নিলা কোনো কথায় শুনলো না। ড্রইংরুমে এসে মেঝেতে শুয়ে পরলো। নিলার চোখে ঘুম নেই। শুধুই কাঁদছে। 

রাত বারো টা। রুদ্র নিলার কাছে এল। 

নিলা- তুমি এখানে কেন? আমাকে একদম ছোঁবে  না। যাও এখান থেকে তুমি। 
রুদ্র - আচ্ছা আমি চলে যাবো কিন্তু তোমাকে কিছু দেখানোর আছে। দেখিয়ে চলে যাবো। 
নিলা- না আমি কিছু দেখবো না। যাও তুমি। 
রুদ্র- দেখবে না মানে কি। দেখতে তো তোমাকে হবেই। 

এই কথা বলে জোর করে রুদ্র নিলাকে  কোলে তুলে নিল। 

নিলা- এই ছাড়ো বলছি আমায়। ছাড়ো। 
রুদ্র- না ছাড়বো না। একদম চুপ থাকো। 

এরপর রুদ্র নিলাকে কোলে তুলে রুমে নিয়ে গেল। নিলা রুমে গিয়ে দেখে। মিটমিট করে চারদিকে আলো জ্বলছে। বিছানাটা গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে সাজানো। আর টেবিলের উপর কি সুন্দর একখানা কেক । অবশ্য কেক টা একদমই ছোটো, কিন্তু যে সুন্দর ভাবে কেকটা কে সাজানো হয়েছে, সেটা অনেক বড়ো কেক কেও হার মানায়। 
নিলা তো এইসব দেখে অবাক। কিছুই বুঝতে পারছে না। 

রুদ্র- শুভ বিবাহবার্ষিকী আমার মিষ্টি সোনা। 

নিলার চোখ দিয়ে জল পরছে। কি বলবে কিছু বুঝতে পারছে না। 

রুদ্র- এই পাগলি বউ আমার কাঁদছো  কেন। আজ আমাদের বিয়ের তিন বছর পূরণ হল। ভুলে গেলে? 

নিলা চুপ করে আছে। শুধু চোখ দিয়ে জল পরছে। 

রুদ্র- এইবার কান্না বন্ধ করো। আর তোমার মনে যত প্রশ্ন আছে আমি সব উত্তর দেবো। আগে কেক টা কাটি চলো। 

এরপর নিলা আর রুদ্র মিলে কেক টা কাটলো। 

রুদ্র- নিলা চোখ বন্ধ করো। 
নিলা- কেন? 
রুদ্র- আরে বাবা চোখ টা বন্ধ করোই না  । একটা সারপ্রাইজ আছে। 
নিলা - কী সারপ্রাইজ? 
রুদ্র- আগে চোখ বন্ধ করো, তারপর সারপ্রাইজ। 

নিলা চোখ বন্ধ করলো। 

রুদ্র তার পকেট থেকে কি যেন একটা বের করলো। 

রুদ্র- এইবার চোখ খোলো  । 

নিলা চোখ খোলে দেখে হাঁটু গেড়ে রুদ্র বসে আছে আর তার হাতে একটা হিরের আংটি।  এইসব দেখে নিলা কাঁদছে । রুদ্র নিলার হাত ধরে আংটি টা পরিয়ে দিল। এবং নিলার হাতে একটা চুমু দিল। 
নিলা রুদ্র কে জড়িয়ে ধরে। 

নিলা- আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও  । 
রুদ্র- এই পাগলি আজকে এত সুন্দর রাতটা কি কেঁদে কেঁদে কাটিয়ে দেবে! অবশ্য তুমি কিন্তু আমাকে  বিবাহবার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানালে না। 
নিলা- শুভ বিবাহবার্ষিকী আমার পাগল বর। 
রুদ্র- আচ্ছা আমি বুঝি পাগল? পাগলামি তো তুমি করেছো ।  আর পাগল বলছো আমায়। 
নিলা- আমাকে ক্ষমা করে দাও । সরি । 
রুদ্র- আরে হয়েছে বাবা চুপ করো তো এইবার। 
নিলা- আচ্ছা আমাকে এইবার সবকিছু বলবে। 
রুদ্র- কি বলবো তোমায়। এই কয়েকটা দিন অনেক কষ্ট দিয়েছি তোমাকে। কিন্তু বিশ্বাস করো আমার কিছু করার ছিল না। তোমার মনে আছে, বিয়ের আগে একদিন কথায় কথায় তুমি আমাকে বলেছিলে , তোমাকে একটা হিরের আংটি দিতে। 
নিলা-  আমি এখন একদম সিউর তুমি পুরোপুরি পাগল হয়ে গেছো। তুমিও ভালো করে জানো ওইদিন আমাদের সব বন্ধুদের মাঝে মজা করতে করতে বলেছিলাম তোমায়। 
রুদ্র- আমি জানি তুমি মজা করেছিলে। কিন্তু আমারও ইচ্ছে হয় নিজের বউ কে ভালো  একটা উপহার দিতে। আর বিয়ের আগেও কোনোদিন তুমি আমার কাছে কিছু চাও নি। এমনকি বিয়ের পরেও একটা শাড়ি পর্যন্ত আমার কাছে চাইলে না তুমি। 
নিলা- চাওয়ার কি আছে। তুমি তো না চাইতেই আমার মনের কথা বুঝে নাও। কিছু বলার আগেই আমার জিনিস আমার সামনে থাকে। 
রুদ্র- আচ্ছা এখন কত ঢং। একটু আগে ডিভোর্স চাই ডিভোর্স চাই, মুক্তি চাই বলে চেঁচিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছিলে। আর এখন কি রোমান্টিক। 
নিলা -  এই আন্দোলন এখনও শেষ হয়নি। আগে বলো মাঝরাতে মোবাইলে কার সাথে কথা বলছিলে। 
রুদ্র - তোমার কপাল। আমি মাঝরাতে কারোর সাথে কথা বলিনি , বুঝেছো ! 
বিয়ের আগে তোমার মুখ থেকে হিরের আংটির কথা শুনে ভেবেছিলাম বিয়ের পর দেবো। কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি দুটো সংসার চালাতে আমি এইভাবে হিমসিম খাবো। এরমধ্যে বাড়িতে টাকা পাঠাতে হয়। আর ছোট ভাই কে হাত খরচের জন্য কিছু টাকা দিতে হয়। আবার এইদিকে আমাদের সংসার। সবই তো তুমি জানো। এইসব কিছুর পর হাতে যা টাকা থাকে সেটা জমিয়ে তোমার জন্য আংটি কিনতে কিনতে আমি তো বুড়ো হয়ে যাবে। আর এইবার তোমার জন্মদিনেও কিছু দিতে পারিনি । আর তুমি একটা সুতো পর্যন্ত চাইলে না আমার কাছে। তখনই আমি মনে মনে ঠিক করলাম এইবার আমাদের বিবাহবার্ষিকী তে তোমায় আমি হিরের আংটি দেবো। 
একদিন অফিসে কাজ করছিলাম।  তখন হঠাৎ স্যার আমাকে ডাকলো। ডেকে বলল নতুন একটা প্রজেক্ট এসেছে। এই প্রজেক্ট টা একমাসের মধ্যে শেষ করতে হবে। আর এরজন্য অফিস থেকে আমার সেলারির পাশে এক্সট্রা টাকা দেবে। কিন্তু দিন, রাত পরিশ্রম করতে হবে। আমি কিছু না বুঝে রাজি হয়ে গেলাম। ভাবলাম একমাস পর আমাদের বিবাহবার্ষিকী। তার মাঝে টাকা জমিয়ে তোমার জন্য আংটি ও কিনতে পারবো। তাই আমি ওভারটাইম কাজ করা শুরু করি। সকালে তাড়াতাড়ি চলে যাই রাতে ওভারটাইম কাজ করে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। এই প্রজেক্টের জন্য রবিবারেও আমার এক্সট্রা কাজ করতে হয়েছে। আর সারাদিন কাজের জন্য তোমার আংটি টা সিলেক্ট করতে পারি না। তাই রাতে বসে বসে দেখি কোন আংটি টা তোমার জন্য বেস্ট হবে।আর মাঝরাতে আমাকে যে মোবাইল ঘাটতে দেখতে ওইটা আমি  আমাদের প্রজেক্টের প্ল্যান টা দেখতাম। ল্যাপটপে দেখলে তোমার যদি ঘুম ভেঙে যায় । 
কিন্তু এইসবের মাঝে তোমার প্রতি আমি খেয়াল রাখতে পারিনি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়ো । 
নিলা -  তুমি ক্ষমা চাইছো কেন? ক্ষমাপ্রার্থী তো আমি। জীবনেও যাকে সন্দেহ করিনি আজ তার প্রতি সন্দেহ কেন যে মনে এল । ক্ষমা করে দাও আমায়  । 
রুদ্র- আচ্ছা, আমার মিষ্টি বউ হয়েছে । আর তাছাড়া তোমার জায়গায় যদি আমি থাকতাম হয়তো আমিও এমনই ভাবতাম। আসলে আমার ছোট্ট সংসার টা কে যেভাবে তুমি সাজিয়েছো, তাই তোমার জন্য ভালো একটা উপহার কিনবো ভেবে ভেবে তোমার কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। খেয়ালও রাখতে পারিনি নি তোমায়। কিন্তু এখন একদম পুরোপুরি খেয়াল রাখবো। 
নিলা-  আচ্ছা তাই বুঝি? 
কিন্তু আমার একটা কথা আছে। 
রুদ্র-  আবার কি কথা! সবই তো বললাম। 
নিলা- তুমি কখন এত সুন্দর করে সবকিছু সাজিয়েছো? সারাক্ষণ তো আমিই ছিলাম তোমার সাথে। 
রুদ্র- এই যে মুক্তি চাই মুক্তি চাই আন্দোলন করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলে। তখন সাজিয়েছি। কেক টা বড়ো আনতে পারিনি। এতক্ষণ রাখবো কোথায়। তাই ছোট্ট একটা কেক আনলাম। 

এই কথা শোনার পর নিলা রুদ্র কে জড়িয়ে ধরলো। 

রুদ্র-  আজ রাত টা কি এইভাবে জড়িয়ে ধরেই কাটিয়ে দেবে নাকি।
নিলা-  আচ্ছা তো আমার মিষ্টি বরের কি চাই শুনি। 
রুদ্র-  একটা চুমু তো দিতে পারো? এমনিতে বিবাহবার্ষিকী তে ভালো ভাবে শুভেচ্ছাও জানালে না। আর এখন একটা চুমু ও দিচ্ছ  না। 
নিলা - ওঃ আমার বরের চুমু লাগবে? 

এইকথা  বলার পর রুদ্র নিলা কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। 

নিলা - এই ছাড়ো বলছি ধরবে না আমায় । 
রুদ্র - আমার বউ কে আমি ধরেছি। তোমার কি? 
 
এই বলে রুদ্র নিলার কপালে একটা চুমু দিল। নিলার চোখ বন্ধ। 

রুদ্র- চোখ টা বন্ধ করলে কেন? 
এখন আমার চুমু টা কোথায়। 

নিলা রুদ্র কে গালে আলতো করে একটা চুমু দিল। 

রুদ্র-  আমি এখনও বাচ্চা তো। গালে চুমু দিয়েছো বাচ্চাদের মতো। 
নিলা - হে তুমি বাচ্চাই । 
রুদ্র - তবে রে,, এইদিকে এসো দেখাচ্ছি , আমি যে বাচ্চা। 

এই বলে রুদ্র নিলার হাতে ধরলো 
নিলা আস্তে আস্তে রুদ্র দিকে এগোতে থাকে। নিলার কোমল ঠোঁট রুদ্রর ঠোঁটে আলতো করে স্পর্শ করলো। 
সেদিন ছিল পূর্ণিমা রাত। মনে হচ্ছিল পূর্ণিমার জোৎস্নায় প্রকৃতিও যেন নিলা আর রুদ্রের মতো প্রেমলিলায় মগ্ন হয়ে  উঠলো।

শতাব্দী দেবনাথ

আপনময়তা 

নারী তুমি বলোতো তোমার 
কোনটা আসল ঘর? 
ছোট্টবেলায় বাবার বাঁধন নাকি যৌবনেতে স্বামীর ঘর !
নারী তোমার কে বা আপন
আর কে গো তোমার পর?
শিশু বেলা কাটলো তোমার 
মায়ের আঁচল,বাবার স্নেহের ছায়ায়, 
মাস ফুরিয়ে বছর ঘুরে 
বেড়ে উঠলে তাঁদের মায়ায়। 
যৌবনেতে ছাড়লে তুমি-
নিজ বাপ ও মায়ের ঘর, 
পর কে আপন করতে গিয়ে
তুমি নিজেই হলে পর। 
সাঙ্গ যখন জীবন তোমার 
পড়ল ভাটার দড়ির টান, 
ভুললো তোমায়  আপনজনা, 
 করলো তারাই অপমান।। 
শেষ পালাটা বৃদ্ধাশ্রমটাই 
 যে স্থান হবে তোমার, 
কার, জন্য করলে তুমি, ফেললে অশ্রুধার? 
তবুও কি বুঝলে না নারী 
কে ই বা আপন আর কে ই বা পর তোমার??

কৃষাণ নমঃ

স্বার্থপরতা

মন থেকে হেরে তুই যখন ভেঙ্গে পরেছিলিস
তখন নিজের মনকে শেষ করে দিতে চাইলি, 
তখন তোকে বন্ধুত্বের মাঝে আগলে রেখেছিলাম ।
এখন যখন আমার মৃত্যুতে তোর 
জীবনের সব বাঁধার পথ খুলে যাবে? 
যখন তোর দুঃখের সময় কেউ তোর পাশে ছিল না।
তখন তুই আমার বুকে মাথা রেখে কাঁদতিস 
আর এখন আমি তোকে ছেড়ে চলে গেলে! 
এই পৃথিবী ছেড়ে তোর অসহায় আকাশটা শান্ত হবে! 
তাহলেই বেশ চলে যাচ্ছি তোর আকাশটা ছেড়ে। 

সুপর্ণা কর

আমার একলা আকাশ

আমার একলা আকাশ আজ যেন সঙ্গীহীন,
তাইতো সে আজ বড়ই বেরঙিন।

ঐ আকাশে এখন আর রামধনু দেখা যায় না।
মেঘেরাও যেন আজ করেনা কোনো বায়না।।

আমার একলা আকাশে এখন জমে না কোনো মেঘ।
তাইতো আজ থমকে গিয়েছে ঝড়ের গতিবেগ।।

আমার একলা আকাশ ক্লান্ত ভীষণ প্রেমের মায়াজালে,
তাই সে আজ বাঁধা পড়েছে সময়ের বেড়াজালে।

আমার একলা আকাশের আজ রক্তবর্ণ আঁখি।
কারণ, সেখানে আর উড়ে না যে কোনো পাখি।।

আমার একলা আকাশের আজ বড্ডো অসুখ,
ফেকাশে হয়ে গিয়েছে তার ঐ মায়াবী মুখ।

সকল মায়া ছিন্ন করে সে আজ খুব‌ই একা।
আর এটাই হয়তো তার ভাগ্যবিধাতার লেখা।।

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী

লন্ঠন
                                                                        
চৈত্রের কালবৈশাখী ঝড়,
ঘরে ইলেকট্রিক আলো নেই।
তাকের উপর জ্বালিয়ে রাখা শেষ মোমবাতিটাও 
তার আলো নিভিয়ে দিতেই
সঙ্গী হল, সেই পুরনো ধুলোমাখা লন্ঠন।
যার সাথে ছেলেবেলার নানান স্মৃতি বিজড়িত।
 ধুলো ঝেড়ে তেলসহ জ্বালাতেই 
সেই পুরনো শীতল আভায় 
ঘরের চৌকোন স্বমহিমায় উদ্ভাসিত।
তুমি হারিকেন লন্ঠন।
বিপদের দিনে প্রকৃত বন্ধুর মতো বরাবরই হাতটা বাড়িয়ে দিয়েছো।
আজকাল 
লোকে বড়ই হেলা করে তোমায়,
ঘরের কোণে ঐ বাজে জায়গাটায় 
তোমাকে ঠাঁই দেয়।
 বিদ্যুৎ ইনভার্টার এর যুগ বলে কথা,
 এখন আর তোমার চর্চায় কি লাভ!
 স্বার্থান্বেষী সবাই আজ ব্যস্ত নিজের সুখে।
 ভুলে গেছি তাই পূর্বের ইতিকথা।
 তবুও তোমার ব্যথাহীন হৃদয় আলো দিয়ে যাচ্ছে
 যুগ-যুগান্তরে।
 যে আলোয় বইয়ের পাতা খুলে
 স্বপ্ন দেখেছিলাম বড় হবার,
সে আলোয় আজও খুঁজে বেড়াই
একমুঠো নিঃস্বার্থ সুখ।।

গৌতম মজুমদার

লড়াই

চেয়েছিলাম আমি পড়ে থাকা ঐ
পোড়া রুটি খানির অর্ধেক,
আহার করিয়া ক্ষুধা নিবারণে
করে নিতে পারি ভরপেট ।

কুড়িয়ে নিতে গিয়েছি তখন
দিয়েছি রুটিতে হাত,
অমনি একদল কুকুর আসিয়া 
বসিয়ে দিয়েছে দাঁত।

কুকুর টানছে একদিকে রুটি
আমি ধরেছি মুঠো ভরে,
ক্ষত বিক্ষত করে দেয় কুকুর
আমায় ঝাপটে ধরে।

ব্যথা যন্ত্রণায় চিৎকার করি
দূর থেকে হাসে মালিক,
বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যাই
রক্ত বেরোয় খানিক।

ভুখা পেট নিয়ে কুকুরে মানুষে
দ্বন্দ্বটা বাধে যত,
রুটির টুকরো ছুঁড়ে দিয়ে মালিক
আনন্দটা পায় তত।

লড়াইটা মোদের বাচাঁর জন্য
হিংসার জন্য নয়,
কুকুরে মানুষে লড়াই এখন
নিত্য নৈমিত্তিকই হয় ।

আলমগীর কবীর

গোপনীয় ইতিহাস

কোথায় সে গোপন ইতিহাস?
 যারা অস্ত্র হাতে কলম ধরলো জেলে করে বসবাস!

কোথায় সে গোপন ইতিহাস? 
যাদের জীবনের বিনিময়ে পেয়েছি এই খোলা আকাশ!

কোথায় সে গোপন ইতিহাস? 
জালিয়ান ওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডে প্রায় একহাজার জীবনের প্রাণনাশ!

কোথায় সে গোপন ইতিহাস? 
স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিশিখা সেই নেতাজী সুভাষ! 

কোথায় সে গোপন ইতিহাস? 
সাংবাদিক গৌরী লঙ্কেশ যিনি করিতেন সাপ্তাহিক পত্রিকা প্রকাশ!

আমি যুদ্ধের ময়দান থেকে ফেলছি শ্বাস 
পারো যদি বাহির করে দাও এদের ইতিহাস!!! 

রূপালী মান্না

নারী রূপে যোদ্ধা

মেয়েটা, কোনো সাধারণ মেয়ে না
মেয়েটা, নারী রূপে যোদ্ধা ।
একদিকে, সংসারী রমণী
অন্যদিকে, হাসপাতালে ডিউটিরত সেবিকা ।।

দায়িত্ব, কর্তব্য ও কোমল সেবায়
রোগীর মুখে ফোটায় হাসি ।
ক্লান্তির প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিলে, বলে-
সঙ্গে আছে আর্তদের আশীষ।।

বছর তিনেকের বাচ্চাটি তার ম্যাচুওর গিন্নি
সে যেন সব বোঝে,তার মায়ের জার্নি ।
সহকর্মীদেরও প্রিয় সে, একটু অভিমানী
মাটিতে পা রেখে সে আকাশ ছোঁবে জানি।।

হাসিখুশি, স্পষ্টবাদী, চঞ্চলা শুভশ্রী
সমাজ পরিবারে হয়ে উঠেছে আদর্শ নারী।
স্বামী তার কাছের বন্ধু, পরিবার তার আশা
এইভাবে এগিয়ে চলো নিয়ে সকলের ভালোবাসা।

সস্রাট শীল

প্রতিদ্বন্দ্বিতা
                  
সময়ের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা,
এইটাকি বড়ো নয়?
অন্যত্র কি প্রতিযোগিতার ঘুড়ি,
উড়াতেই হয়!
জীবন স্রোতে ছোঁয়া,
পেয়ে থাকি বারবার;
অন্যের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার,
সময় নেই আমার।
সময়ের সাথে লড়াই করেই,
হচ্ছি ভীষণ ক্লান্ত।
নিজের সাথেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা,
এটাই চরম সত্য।।




মিঠৃন রায়

পুরানো কথামালা

স্বপ্নে তোমাকে নিয়ে ঘুরে বেড়ায় নদীর ধারে
তোমার বদনখানা দেখে দিলদরিয়ায় বৈঠা ছেড়ে দেই।
খেয়াল নেই আমার জীবন-মরণেরও
শুধু স্বপ্ন দেখি উড়ন্ত বলাকার ন‍্যায় আকাশে ভেসে বেড়ায় তোমার সাথে,
অস্থিশূণ‍্য পাঁজরেও শুকনো রক্তে লেখা আছ তুমি।
 তোমার ভেজা মুখ দেখে ভুলে যাই নাওয়ার কথা,
শুধু মনে পড়ে ট‍্যাক্সি চড়ে একদিন  ঘুরে বেড়ায় গোবরডাঙার পথে।
নতুন সম্পর্কের অবগাহনে সেজে উঠুক  পুরানো কথামালা।

পূজা মজুমদার

জমে থাকা ব্যথা

একটি কালো রাত,
একটি চিকন ব্যথা,
একটি বালিশ ভেজা কান্না,
অঘুমে জেগে থাকা।

তোমায় প্রতিফলনে মনে করা।

একটি আর্তনাদ,

একটি জমে থাকা ব্যথা।

একটি শহর চোখের জলে টইটম্বুর হওয়া,
তোমার শহরে আমার 
চোখের জলের বন্যা আসা।

একটি জমে থাকা ব্যথা।

মিঠুন দেবনাথ

স্বপ্নের রাজ‍্য 

এক দিন সব ছেড়ে ,
চলে যাব বহু দূরে ।
সেখানে থাকবে শুধু ,  
শান্তি আর শান্তি ।
হয়ত দুঃখ কষ্ট গুলি থাকবে ,
অনেক অনেক, অনেক  দূরে।

আপন পর বলে, 
থাকবেনা কো কেহ।
যে তোমাকে হিংসা ঘৃণা , 
আর করতে চাইবে হেয়।
 
থাকবেনা কোন মান অভিমান ,
দিবে না কেহ আড়ি।
সকলেই দিবে সমভাবে ,
সেই সপ্নের রাজ‍্যে পাড়ি।।

যার জন্য তুমি কাঁদতে,
বসে একা একা।
তোমার মনে হবেনা তখন,
একটু টান আর,
এক ফলক তাকে দেখা।।
 
না খেয়ে না শুয়ে ,
করেছ হাড় ভাঙ্গা শ্রম।
জমানো  ধন সম্পদ যায়নি সাথে ,
অচিরেই ভাঙ্গল যে ভ্রম।।

কাউকে মেরে কাউকে ধরে ,
কারো কারো মনে দিয়েছ কষ্ট।
মানবিকতা কে ভূলে গিয়ে , 
অধর্মের টানে হয়েছিলে পথভ্রষ্ট।।

সব কিছু ছেড়ে আজ ,
দিয়েছ সপ্নের রাজ‍্যে পারি।
পেছনে রয়েছে ধন সম্পদ, আপন পর ভালো খারাপ, 
আর সুখ দুঃখ সারি সারি।।

অভিজিৎ রায়

আমি রিকশা ওয়ালা

সারাদিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের পর 
যখন কর্কশ কন্টে কেউ ডাকে- এই রিকশা ওয়ালা যাবে?

আমি সত্তি বুজতে দিই না ওকে, 
যে তাঁর এই কথাটা কতটা আমার হৃদয়ে লাগে।।

সেই ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠলেই 
চিন্তা শুরু হয়ে যায়, 
আজকে দুমুঠো অন্ন কিভাবে জোগাবো।

আমি যদি পরিশ্রম করতে না পারি, 
কিভাবে পরিবারের সবার তৃষ্ণা মেটাবো?।।

শহরের সেই ব্যস্ততম রাজপথ আজ যেন ফাঁকা হয়ে উঠেছে।
করোনাতে চারদিকে শুধু মৃত্যুর বন্যা বইছে।।

আমার যে অনেক চিন্তা 
একে তো আমার বৃদ্ধ বাবা মা 
আজ যেখানে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে!

অন্যদিকে আমার ছেলেমেয়েরা মায়ের কাছে এসে কাঁদছে 

বলছে "মা আমরা আর স্কুলে যাবো না। 
স্কুলে আমাদের রিকশা ওয়ালার মেয়ে বলে ডাকছে"।।

অবাক লাগে না এই পৃথিবীর মানুষকে, 
যারা আজ জেগে ও ঘুমিয়ে আছে।

দেখতে পারছেনা কেউ 
আমার মত রিকশা ওয়ালা 
যে কত কষ্টে দিন কাটাচ্ছে।।

আমরা চাই মানুষের সামান্য একটু হাঁসি 
আর একটু ভালো ব্যবহার।

যার থেকে খুশি করতে পারবো আমাদের পরিবার।।

এই সমাজের মানুষ কি পারে না
 আমাদের একটু ভালো নজরে দেখতে?
সারাদিন আমরা যারা 
তীব্র ঝাঁঝালো রুদেপুড়ে মানুষের সেবাতে নিয়োজিত তাঁদের ভালোবাসতে।।

সজীব পাল

এখানে মৃত্যু আমার
------------------------------


সূর্যটা অস্ত গেলেই বুকটা কেমন যেন স্বজন হারানোর শোকের মতন কাতর হয়ে আসে আজকাল। শুষ্ক বুকে একটা মৃদু বাতাস বয়ে চলে দীর্ঘক্ষণ। আর এই বাতাসে মিশে আছে কত গোপন অসুখ। প্রতিদিনের অসুখের ভেতর বেঁচে আছি কিনা মরে গেছি, তা নিয়ে দারুণ দ্বিধায় আছি। 

গতকাল সন্ধ্যায় ছাদের উপর বসে ছিলাম বন্ধু সুশীলের সাথে। বলে রাখি আমাদের বাড়ির ছাদ নয়, সুশীলের বাড়ির ছাদ। জয় গোস্বামীর ভাষায় বললে, আমি হলাম নুনে ভাতের মানুষ। মাথা গোজার মতো একটা টিনের ছাউনি দেওয়া ঘর থাকলেও বৃষ্টি বাদলের দিন বড্ড কষ্ট দেয়। 
ছাদ থেকে সুধাংশুবাবুর উঠানের মৃত জাম গাছটা দেখা যায়। আজ প্রায় গাছটা এক বছরের মতো এইভাবেই ঠায় দাঁড়িয়ে। কিসের জোরে এমন দাঁড়িয়ে আছে বুঝি না। মানুষের মতো গাছও বোধহয় মায়ার দাস। মাটির মায়া গাছ ছেড়েছে, কিন্তু গাছের মায়া মাটি ছাড়েনি। এই পৃথিবী যাকে একবার আপন করেছে তাকে কাঁদিয়েছে বহুবার। আর এই কান্নার মাঝেই 'মায়া' নামক জঘন্য সুন্দর শব্দটি জড়িত।
আমি সুশীলকে বললাম, "আচ্ছা সুশীল সুধাংশু জ্যাঠু গাছটা কাটছে না কেনরে ? "

" কিভাবে কাটবে! "

" কিভাবে কাটবে মানে, করাতিদের টাকা দিলে তো একদিনেই কেটে দেয়! "

" সেটাই তো। জানিস গতরোববারে বাবা জ্যাঠুকে বাজার করে দিয়েছে! "

" কেন? কেন ?ওনার ছেলে না বিদেশ থাকে? "

 ওইদিন সুশীলের মুখে কথাটা শোনার পর আমার হৃদয়ের প্রতিটা রক্তনালী যেন ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। প্রচন্ড ব্যথা পেয়েছি ওইদিন। সারারাত এতটুকু ঘুম হয়নি। সংসার জুড়ে বিস্তৃত সহস্র দুঃখের খরস্রোত। এই স্রোতে যে পড়েছে সে পেয়েছে সমস্ত জীবন জুড়ে কেবল যন্ত্রণা। 
সুধাংশুবাবুর ছেলে শিবম বিদেশে কঠিন রোগে ভুগছিলেন, কিন্তু বাড়িতে জানায়নি। শুধু বাবা না খেয়ে মরবে বলে রোগ নিয়ে পরিশ্রম করেছে অক্লান্ত। 

আহারে সন্তান, বাবাকে দুবেলা যদি ক্ষুধায় রেখে নিজের চিকিৎসা করাতো আজ এই শেষকালে লোকটা দুবেলা ভাত খেয়ে মরতে পারতো। এবং সন্তান শোকে প্রতিদিন বুক ভাঙতো না। কে জানবে সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কঠিন! 

  রাতের খাবার খেয়ে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট ধরালাম। সুশীল সিগারেট খায় না। কিন্তু জোড় করলে বারণ করে না। যাক, আজকে আর টান দিতে বলিনি। কে জানে মনে মনে খুঁজছে কি না। 
আচ্ছা সুশীলের সম্পর্কে একটু বলে নিই।সুশীল একজন পুলিশের লোক। আমার সব বন্ধুরা প্রায় বিজনেস করে দেশের বাইরে প্রতিষ্ঠিত। কারোর সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। সুশীলই একমাত্র বন্ধুত্বের মায়া ছাড়তে পারেনি। সে অন্যদের মতো ভুলে গেলে আমাকে না খেয়েই মরতে হতো। সে আমাকে একজন দক্ষ বেকার বলে। কেন বলে তা জানি না। আমি কোনোদিন সফল নামক বস্তুটির স্পর্শ পাইনি। সারাটা জীবন অন্যের উপর নির্ভর করে চলেছি। 

শহরাঞ্চলে রাত্রি যত গভীর হয় নিজেকে তত খুঁজে পাওয়া যায়। নিস্তব্ধ গাঢ় অন্ধকার জানে কোন মানুষটা বিষাদ নদীর মাঝি। 

সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত হেঁটেছি। আর খুঁজে গেছি এই আমাকেই। সাদাত হোসাইন কি এই রাতকেই বলেছে, " আমাকে হারাতে দিলে নিখুঁজ বিজ্ঞপ্তিতে চেয়ে যাবে তোমার শহর। " যাই হোক আজকাল মানুষ বড্ড একা হয়ে যাচ্ছে। 

সুশীলের বাড়ি থেকে ফেরার পথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটে সেদিন। পাঠকদের সেটা না বললে জীবনের একটা বড় অংশ বাদ পড়ে যাবে। 
সোনামুড়া আমার বাড়ি। মানুষ যখন বিষাক্ত হয়ে যায় তখন সে নীল রূপ ধারণ করে। আমিও সে-ই বিষাক্ত মানুষ, তাই নিজেই নাম দিয়েছি নীল। হ্যা আমার নাম নীল , নীলদ্বীপ কুমার। 
বিশালগড় পেড়িয়ে একে একে সমস্ত প্যাসেঞ্জার নেমে যাচ্ছে। মিনিট কয়েকের  মধ্যে সমস্ত বাস শূন্য। শুধু আমি একা। হঠাৎ যুক্তিহীন ভয় গ্রাস করলো আমার জ্ঞানহীন মস্তিষ্ককে। 
মনে হলো যেন ড্রাইভার পর্যন্ত নেই। জানি পাঠক আমাকে পাগল ভাবছে। কিন্তু এমনটাই হয়েছে আমার সাথে। পৃথিবীর কিছু ঘটনা অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি। শুধু প্রত্যক্ষ ব্যক্তি ছাড়া কেউর কাছে বিশ্বাসযোগ্য নয়। 
সময় সম্ভবত রাত নয়টার কাছাকাছি। আমি অজ্ঞাত ভাবেই বললাম, কেউ লাইটটা একটু জ্বালান  প্লিজ। অনেকবার বললাম কিন্তু কেউ জ্বালায়নি। আরো মিনিট কয়েক পরে, আমার সামনে রোগা পাতলা মতো একজন তরুন দাঁড়িয়ে। আমি স্পষ্ট চিনতে পারলাম। এই সুধাংশুবাবুর ছেলে। আমার সমস্ত শরীর শিহরণ দিয়ে উঠলো। যার অনেক আগেই মৃত্যু হয়ে গেছে সে কেন ফিরে আসবে এখন! 

তরুণটি মৃদু ভারি কণ্ঠে বললেন, " নীল, আমাকে চিনতে পারছো? "

আমার কপালে ঘাম। শরীর কাঁপছে। বললাম, " আপনে তো মরে গেছেন! "

" হ্যাঁ মরে গেছি! কিন্তু বাবার জন্য ফিরে এসেছি। বাবা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে, ভীষণ! আপনে আমার বাবাকে একা ফেলে চলে এসেছেন? বাবাকে বাঁচান, প্লিজ বাঁচান বাবাকে! "

আমার চোখ ক্রমশ অন্ধকার হয়ে আসছে। কণ্ঠ ও তরুণটি পলকে অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। আর আমার অবচেতন মন আমাকে বলে যাচ্ছে, ' বাবাদের বাঁচাও। বাবারা ভীষণ কষ্ট পাচ্ছে! "
                                 

দেবাশিস চৌধুরী

বেদুরা কবিতা


(এক)
ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরে চলে এসেছে আলোর সাম্রাজ্য। সারা রাত ঘুমোতে দেয়নি আঁধার! আলো আঁধারের এই কুরুক্ষেত্রে আমি বলির পাঁঠা! 

(দুই)
সমবেত জয়ধ্বনি দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয় -- শ্রীমান ধর্ষক বক্তৃতার শুরুতেই বলে উঠে আমার মা ও বোনেরা! মুহুর্মুহু করতালিতে মুগ্ধ নগরীর নটিখানা! 

(তিন)
তুমি ভালোবেসেছো বলে আমি চোখ বন্ধ করে শুয়েছিলাম! জেগে দেখি কেউ নাই -- দেওয়ালে লেখা -- কুকুর হতে সাবধান!  

(চার)
একটি আধুনিক কবিতা ও একটি গ্লোবাইজাইড যুবতী ! উভয়ের নূন্যতম যোগ্যতার শর্তকে ইংরেজিতে বলে 'গ্লো'।

(পাঁচ)
মৌমির পায়ের চামড়া দেখে মনে মনে ভাবছি, ও বুঝি মুখে ক্রিম মাখে না! এই ভাবনাগুলোর  সমবেত নাম 'বেদুরা কবিতা'।

বিনয় শীল

অজ্ঞাত ভবিতব্য

এখন ওরা
শিকল পরা,
জন্মমাত্র পায় ।
ইচ্ছে করে
স্নেহ ভরে
পরায় বাপে মায় ।।১।।

মুক্তো ঝরা
মনোহরা
হাসী শিশুর মুখে ।
ছোটাছুটি
লুটোপুটি
করতো বিপুল সুখে ।।২।।

আকাশ পথে
মেঘের রথে
খেলতো বালক তথা ।
এখন সেইসব
সোনার শৈশব
কোন সেকেলের কথা ।।৩।।

বিকেল হতো
বালক যতো
খেলতো কত না !
সাঁঝের পরে
ফিরতো ঘরে
ডাকতো যখন মা ।।৪।।

ওমা ! এ কি
এখন দেখি
ভাবতে লাগে ডর ।
প্রতি গৃহ
শিশুর প্রিয়
মোবাইল মনিটর ।।৫।।

রাঙা ধূলো
স্বপ্ন গুলো
সদা শিশুর মনে ।
হায়! ক্যারিয়ার
নাই দেরি আর
যাবে নির্বাসনে ।।৬।।

গ্রুপে গ্রুপে
চুপে চুপে
মোবাইল দেখার ধুম ।
অধিক রাতে
আঁখির পাতে
আসেনা আর ঘুম ।।৭।।

বর্ষা শরৎ
আসে ফেরৎ
ঋতুর যোগ বিয়োগ ।
জীবন ভোরে
নেশার ঘোরে
ব্যার্থ উপভোগ ।।৮।।

অলির বেনু
পুষ্পরেণু
শূন্য সকল মেলা ।
অবশেষে
হারিয়ে গেছে
শিশুর সকাল বেলা ।।

এমনি করে
ঘরে ঘরে
তাড়া করে সবে ।
আমরা সভ্য ?
ভবিতব্য
জানিনা কি হবে !!৯।।

দুলাল চক্রবর্ত্তী

আমার আমি


জীবনটা গতিশীল
তড় তড় করে এগিয়ে চলছে
বিরাম বিহীন।
কোন এক সময়ে কারো করুণা
হয়তো প্রয়োজন ছিলো।
জানতে দিইনি কাউকে
কৃপার পাত্র হয়ে বাঁচতে চাইনি।
প্রতিকূলতার মাঝেও
মাথা তুলে দাঁড়িয়েছি।

প্রতিষ্ঠা!
জীবনে কে না চায়?
ছোট্ট বাবুই পাখিগুলি
বাসা তৈরী করে দিনে দিনে
নিজের বাসায় থাকবে বলে।
ময়ূর পেখম মেলে
বরষার জলধারা পেলে।
শিউলী ফুলগুলি ফুটতে থাকে
নিজের সুগন্ধ বিলাতে
শরতের আগমনে।

আমিও জেগে রবো
তোমার অপেক্ষায়
ধরা দেবে বলে আমার সুদিনে।

অভীককুমার দে

ভোগ বাদ

জাতির জন্য লড়তে পারি
জাতের লড়াই বন্ধ হোক,
পেটের ভেতর ভাঙা হাঁড়ি

মুখের কাছেই ধর্ম ভোগ !

দ্বেষ প্রেমের ঘন্টা গলায়
চড়ছে কারা সিং নেড়ে !
মরণ এখন ষোল কলায়

কৃষক পথে হাল ছেড়ে।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...