Thursday, August 13, 2020

ভাতৃত্ববোধ আরও সুদৃঢ় হবে এটাই হোক এই স্বাধীনতা দিবসের অঙ্গীকার।

সম্পাদকীয়

সম্প্রীতির সুতোয় বাঁধা হোক রাখী। সম্প্রীতিতেই গড়ে উঠুক ভাতৃত্ববোধ। পরিবার থেকে ছড়িয়ে যাক, সমাজ, দেশ পৃথিবীতে।

এভাবেই স্বাধীনতা আসুক অনন্তকাল। দেশের চুয়াত্তর তম স্বাধীনতা মুহুর্তের মহান লগ্নে মনন স্রোত তার লেখক, কবি, সহযোগি ও স্বেচ্ছাসেবীদের অভিনন্দন জানাচ্ছে।

রাখীর সুতো আর স্বাধীনতার রঙ মিলে এক স্নিগ্ধ আবেগ সংকলন এটি। কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি সকলকে। ভুল ত্রুটির সকল দায়ভার আমার। মার্জনাপূর্বক পাঠ করার আবেদন করে ইতি টানলাম।

জয় হিন্দ

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত 

মনন স্রোত আয়োজিত জাতীয় আলোচনাচক্র || ১৫ এবং ১৬ই আগষ্ট ২০২০

বন্ধন দৃঢ় হোক, সুতায় সুতায় || ছবিতে মনন স্রোত মডেল শিল্পী সুমন || ক্যামেরায় : রাহুল বিশ্বাস

সুধীর দাস

  রাখীবন্ধন
  

বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি, সুঢ়সুঢ়ি ডাক দিয়ে কনকনে ঠান্ডা বাতাস বয়ে-ই চলল অবিরাম, হঠাৎ হঠাৎ বিদুৎ এর ঝলকানি, কালো অন্ধকার রাত, নিদ্রাহীন দুচোখে তাকিয়ে আছে ঐ রাস্তার দিকে অভাগিনী রাখী ঘরের দাওয়ায় বসে । আসবে সে এই সরু গলি পথে । এসে ডাকবে আয় রে আমার পাগলি বোন বাধ আমায় রাখী। সম্পূর্ণ কর বন্ধন। রাখী অপেক্ষারত বন্ধনের জন্য। তার মনে যেন অব্যক্ত অনেক কথা জমে আছে দাদাকে বলবে বলে। দাদা ওকে কথা দিয়েছে আসবে আজ। তার জন্য নিয়ে আসবে গিফ্ট। সে শুধু তার মনে এই অব্যক্ত আশা নিয়েই এই দিনটা আসলেই বসে থাকে দাদার আশায় ঘরের দাওয়ায়।
         কিন্তু কে বলবে তাকে? কে বোঝাবে তাকে? কে শান্তনা দেবে তাকে? কে আদর করে ডাকবে? কে তাকে আদর করে খাইয়ে দেবে? সে যে নেই এখানে। চলে গেছে অনেক দূরে যেখানে তারারা খেলা করে, মিট মিট করে জ্বলে আর পৃথিবীকে আলোকিত করে।
আজ সেখান থেকেই বন্ধন রাখীকে দেখছে।

ঝুমা সরকার

নারীর কবর সন্মান

একটা মেয়ে হলে ধর্ষিতা দোষটা হয় পার্টির ।
বলছি কী বাপু? মন্ত্রীরা কি বলেছিল করো বলৎকার নারীর ।।

দোষটা না হয় পরে ই দিও আগে মানুষরূপী অসুর গুলি করো মানুষ ।
পার্টি পার্টি করতে করতে ভুলে যাচ্ছ কার গুন কার দোষ ।।

তোমাদের এই দোষ গুনের ঘূর্ণপাকে হচ্ছে কত মেয়ের জীবন কালো।
দোষারূপ বন্ধ করে চলো করি নারীর জীবন একটু আলো।।

রাস্তা ঘাটে একা দেখলে নারীর করব না ধর্মনাশ।
ঘরে তো মেয়ে আছে আমার ও হতে পারে তার ও সম্মান হ্রাস ।।

বেশি না হয় একটু একটু করে করব নারীর কদর।
চলো না আজ করি প্রতীক্ষা করব না আর কোনো নারীর অনাদর।।



শিপ্রা দেবনাথ

রাখী বন্ধন 

রাখী পূর্ণিমার সকাল বয়ে আনে এক মধুর আবেদন, 
তৈরী করে ভাই বোনের সম্পর্কের এক নতুন সমীকরণ। 
ভাইয়ের আগমনে বোনের মনে আসে প্রীতি, 
মেঘের ফাঁকে ফাঁকে, সূর্য যেন দেয় উঁকি। 
রাখী বন্ধন হলো, ভাই বোনের সম্পর্কের এক অটুট বাঁধন, 
রক্ত ও মায়ার টানে জাগে, হৃদয়ের স্পন্দন 
যুগ যুগে থেকে যাবে, এই ভাতৃত্বের বন্ধন । 
রাখী বন্ধন মানে, শুধু একটি সুতো বাঁধা নয়     
ভাইয়ের বিপদে বোন সর্বদাই থাকবে পাশে..... 
আর, বোনের বিপদে ভাই সবার আগে এগিয়ে আসবে, এ-ই প্রতিজ্ঞা করা  ।  
বোনের হাজারো বায়না পূরণ করতে 
ভাই সর্বদাই সচেষ্ট থাকবে। 
রাখী বন্ধন মানে, ভাইয়ের মঙ্গলকামনা করা, 
নিজের বোনকে আজীবন রক্ষা করার প্রতিজ্ঞা করা। 
ভাই বোনের মধ্যে অপ্রকাশ্য এক ভালোবাসা...... 
পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর সম্পর্ক হলো ভাই বোনের ভালোবাসা, 
যার সঙ্গে অন্য কারো ভালোবাসার 
তুলনা হয় না।    

প্রীতম শীল

সামান্য রাখী

আচ্ছা মৃত বোন রাখীবন্ধনের সুঁতো কিনতে পারে?
আমি সেই বোনের কথা বলছি, গলির মোরে ধর্ষন করলো যারে।
আচ্ছা ধর্ষকের কি বোন থাকতে পারেনা?
না মানে,  দাদা দাদা বললেও কেন তাড়া ছাড়েনা?
আচ্ছা রাখীবন্ধন কি শুধুই উৎসব,
না মানে এটারো একটা ইতিহাস আছে!
হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই, কোনো ভেদাভেদ নাই,
বলবো গিয়ে কার কাছে?
আচ্ছা এ রাখীর কি কোনো মানে আছে?
বন্ধনের দৃঢ়তা আর কোথায়।
তবে সামান্য সুঁতোর রাখিতে,
কি এমন আসে যায়।

নন্দিতা চক্রবর্তী

মিলন মধুর

কাঁদে 'বিষের বাঁশী' , কাঁদে'ছায়ানট'
তাঁর দিকে চেয়ে কাঁদে
'সোনার তরী'র ঋষি বট।
ঝুড়িতে তাঁর নেমে আসা
দৃঢ়তার চির আহ্বান-
বুঝি আজ মাঠে ঘাটে 
হারায় সে নিজের সম্মান!

কি গান গেয়েছ কবি?
কি ছিল তোমার পরিচয়?
ভুলে গেছি!!!
অবাক হলে কি ?
এই কি প্রথম অবক্ষয়?

তোমার মৃত্যুর ঘটায়
কান্না ভরা আকাশের 
সাক্ষী ছিল যাঁরা
তাদের ও দিন হল সারা
তাঁরা ও মৃত্যুর অতিথি আজ
পরেছিলে তুমি তাঁদের হাতে
'কবীন্দ্র'-  পরম তাজ,
পূজার প্রদীপ  সেই হাতে।
বীরের আবাহনে বাজে তূর্য বাজে ভেরি
তেমনি বেজেছে বাঁশি
হোকনা সে বিষের বাঁশরী

সেকাল থেকে বহুদূর বহুপথ বেয়ে
কত শ্রাবণের ধারা গেছে
অকূল সাগরে ধেয়ে
কিছু চিহ্ন নাই সেই দিনের-
আজ অপেক্ষা শুধু, শুধু উদযাপনের-

কে তুমি ???
নাই পরিচয়!!
শুধু মনে হয় - 
২৫শে বৈশাখ আর ২২শে শ্রাবণ
বড় ই রাবীন্দ্রিক!
তোমাকে নাইবা জানি
তবু 'নূতন' আবার দেখা দিক
এতেই আমরা 'অভিজাত'-

কবি!এ তো তোমার ই জয়!
তোমাকে ভেবে ই যদি 'অভিজাত' হয়- 
সেই তো অনন্য পরিচয়!
হোকনা তবে এক নতুন সাধন,
কাছে হোক হারানো 'দূর' 
একালে-সেকালে, তোমাতে-আমাতে
এই হোক মিলন মধুর!

অতনু রায় চৌধুরী

অপেক্ষা

হারিয়ে যাওয়া দিন গুলো ফিরে আর আসে না 
হাসি আনন্দে কাটানো মুহূর্ত ছবির ফ্রেমে হচ্ছে কেবল ঝাপসা ।
ভিন্ন আজ সবাই, ভিন্ন ভিন্ন বাড়ি 
বছর জুড়ে কেবল মিলেমিশে আনন্দের অপেক্ষা করি ।
তবুও পাই না সকলকে কাছে , 
কেউ দেশ ছেড়ে বিদেশ চলে গেছে ।
কেউ বা ভীষণ ব্যস্ত,
আবার কারোর হয়েছে বয়স তাই থাকে অসুস্থ ।
এইভাবেই কাটছে সময় ,
টিকে আছে কেবল সম্পর্ক ।
কাছের মানুষগুলো থেকেও আজ 
মাঝখানে বেড়ে চলছে কেবল দূরত্ব ।
হয়তো একটা সময় পরে চিনবে না, 
নতুন প্রজন্ম নিজের মানুষগুলোকে।
পাশে দিয়ে হেঁটে যাবে, 
অচেনা মানুষ রূপে ।

সাগর চৌধুরী

কাব্য প্রচেষ্টা  

শুধু অন্ধকার বাসা বাঁধে জীবনের পথে, 
কবিতায় বলে যায় তার গল্প I
বাক্যহারা কবি সুর বাঁধে নীরবে,
বিষন্নতা কুড়েঁ খায় আমাদের জীবন I
ঠিক এরকমই শব্দ খুঁজছিল সে
এলোমেলো অগোছালো I
জানি না কি ছিল তার মনে !
শুধু শব্দবিন্যাশই  যদি কবিতার মর্মকথা হয়;
শুধু মধুরতা যদি কবিতার চরিত্র হয়;
তবে বোধ তো কবিতার রক্ত I
আজ সেই বোধের অভাব তার লেখায় I
যেন কবিতা রক্ত প্ৰবাহহীন বিষন্ন বিবর্ণ লাশ হয়ে কাফনবন্দি I
শুধু রয়ে গেছে আতরের সুবাস,
আর কবরের বুকে কিছু ফুল ফোটার সম্ভবনা I

মোহাজির হুসেইনচৌধুরী

দূষণের কথকতা
     
একটা কালো সাপ ইদানীং 
শিরা ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় 
একটা নদী তার চঞ্চল বুকে 
তাকে সেল্যুট জানাচ্ছে অহরহ 
দর্শকেরা উৎকণ্ঠায় বিনিদ্র রাত 
ভিড় জমছে নদীর দুকূল ছেপে... 

গাছের উপর দাঁড়িয়ে একটা বেড়াল 
অন্ধকার চকচকে চোখে 
তারিয়ে নিচ্ছে উপভোগ 
কুকুরের জিভে লালা ঝুলছে... 

আমরা অতি সভ্যরা দূরবীন টেনে 
দূষণের পরিমাপ লিখতে ব্যস্ত 
রাশি রাশি খাতার পাতা 
ভরে ওঠছে জঞ্জালে... 
শুকিয়ে গেছে ভালবাসার নদী 
ধু ধু বালু উড়ে গিয়ে ম্রিয়মান 
দৃষ্টির স্বচ্ছতা।

পূজা মুজমদার

কথামালা 

তুমি না এলেই পাল্টে যায় রোদ্দুর মাখা ডায়েরির পাতা, 
ভীষণ হাপিত্যেশে মুখিয়ে উঠে প্রকৃতি। 
স্ফুলিঙ্গের মায়ায় উজাড় জীবন-অরণ্য, 
কোথাকার কোন সুরে কে বাজায় বেসুরো অভিমান।

কবেকার কথামালার বুনন বাধিয়ে আজ সুখী মানুষ, 
অজস্র মায়ার নিলাম তুলে ফাঁকা হাটের খদ্দের।
দুমুঠো ছাই ছুড়ে কপটতার দরজায় খিল এটে দিয়ো প্রিয়, 
বনস্পতির দেশ এখন রিক্ততায় ঠাসা।

জলছায়ার গভীরে মগ্নতায় তার নগ্ন শিহরণ,
প্রাক্তন জোনাকীর আলোয় ভাসে ভূত-ভবিষ্যত। 
দোলকের তালে দুলে আজন্মের ভার, 
তবু সে কিনে নেয় সাদাকালো সব ফানুস ।

মিয়ম্রাণ আলোক শিখার মতো কাঁপা কাঁপা ঠোঁট , 
দমকে উঠে হাজার বার ভালোবাসি বলে। 
মস্তিষ্কের জাল কেটে বেড়োয় অভিশপ্ত মাকড়সা,
মিথ্যে আশ্বাস পরিণত হয় স্রষ্টার বিধানে। 
বলো, কি বলে একে!


বিধান পাল

জীবনে সূর্য্য 

নীল গগনে সূর্যির আনা,
পড়ি' বক্ষে রা্ঙা জামা ,
সুভা হতে চেয়ে থাকো ,
মোদের সুখ-দুঃখ দেখো।

তব বিভায় মুগ্ধ আমি ,
মুগ্ধ তব লৌকিকতায়,
ঊষা হতে গোধূলী বেলায়,
চতুর্দিকের রঙের মেলায় ।

এটাই তোমার প্রিয় খেলা
সারাবেলা সারাবেলা,
এটাই তব নিয়মানুবর্তিতা,
কী বিস্ময় দেয় যে তা !

তুমি রঙের জাদুয় জাদু কর,
বনে সবাইর ত্রাণকর্তা ।
তোমার জন্যে সৃষ্টি  মনোহর,
হে , সর্বপ্রাণের  জীবন স্বত্তা !

সৃষ্টির সেই সময়ের শুরুতে , এই অর্থে ,
আলো জমকালো ছড়িয়ে দিলে নিঃস্বার্থে !

ধন্য তুমি তাই, পুণ্য তুমি তাই,
তোমার জন্যই আকাশে আলোর উদ্দামতা পাই ।

দাও মোরে আরো একরত্তি আলো সহজে,
পেতে আরো শক্তি,এ মহাজীবন লিখতে কাব্যের কাগজে ।

ইউসুফ আলম

অপেক্ষার রামধনু

এমনি কোনো এক বিবর্ণ উদাসী সকালে…
ভেজা কাক হয়ে তুমি-আমি,ক্যান্টিন ছিল সাক্ষী ।
আমাকে তোমার চাদরে মোড়ে নিয়ে…
উষ্ণতায় বুজেছিলাম আঁখি ।

খুঁজেছিলাম দীর্ঘশ্বাসের জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন-
কোনো এক অচেনা পাহাড়, মুক্তোমাখা দুর্বাদল,
তোমার গাল বেয়ে নেমে আসা অবাধ্য ঝর্ণাধারা..
নিস্তব্ধতার কোলাহলে শুধু আদরের মাখামাখি ।

কোনো শব্দ ছিল না, ঠোঁট ও ছিল ক্লান্ত,
চা এর কাপ থেকে ধোঁয়া উঠা ও শেষ হয়ে গেছে,
আকাশের নৃশংস গুঞ্জন,ঠোঁটের কোণে আলতো হাসি_
”মনের আকাশে তখনো রামধনু উঠা ছিল বাকি“।

মুহূর্তে ঘন্টা কাটিয়ে যখন পঁয়ষট্টি প্রতি কিলোমিটার
বৃষ্টি তখন বড় বড় ঢিল ছুঁড়ছিলো মুখে..
আধভেজা চুল, মুখ লুকিয়ে আমার পিঠে _ কাঁপছিলে তুমি …

শুনো…
রামধনুটা তোমার থাকুক, আমি বৃষ্টিকেই রাখি ।

মাহমুদ মুকিত

অপূর্ণতা 

 আমার চোখে পুরাতন চশমা
ঘোলা লাগে সব
চোখের যতই বয়স হচ্ছে
ঝরাচ্ছে জল ঝপা ঝপ।
ধূলিমাখা এই পথের প্রান্তে 
বাঁশের সাঁকোর মাঝে
মেঘ রাঙানো আভা পড়েছে
লালচে কালো সাঁঝে। 
পানকৌড়ি সব ফিরছে ঘরে 
ক্লান্ত দিনের শেষে
শিশির কণা জড়াচ্ছে ঘাসে
নিবিড় এক আবেশে। 
ভাঙা চশমার ঘোলা কাঁচে
ঘোলা আমার আকাশ 
চোখের বুঝি সময় শেষ
তবু মিটলো না জীবনের আশ। 

গোপাল বনিক

 মনুষ্যত্ব
                                     
মাগো মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে মানুষ হতে পারলাম কোই। 
স্বার্থ নিয়ে মগ্ন সবাই আত্মসুখেই মজে রই। 
নিজেই নিজের আত্ম প্রচার নিজেকে নিয়েই মগ্ন বেশ। 
অন্যের কথা ভাবতে গেলেই এখন আমার বেলা শেষ। 
আমি খাই আমি বাঁচি অন্য সবাই চুলোয় যাক। 
নীতিকথার জ্ঞান গল্প এইসব বই এর পাতায় থাক। 
কার ঘরে চাল বাড়ন্ত এইসব জেনে আমার কি, 
গরম ভাতে চাই যে আমার দেশি গরুর গাঁওয়া ঘি। 
গরিব মরে ক্ষুধার জ্বালায় এইসব তাদের কর্মফল, 
মন্ডামিঠাই মাছ মাংসে আমি বাড়াই দেহের বল।
প্রতিষ্ঠা আর প্রতিপত্তি এইসব আমার প্রাপ্য হউক, 
দুঃখী যে জন মরুক সেইজন, মনুষত্ব মিথ্যে হউক। 
মা তু্ই জন্ম দিয়েই ক্ষান্ত হলি শিক্ষা দিতে পারলি কোই, 
তাইতো মা তু্ই নিত্য দুঃখী, এই দুঃখ তোর ঘুচলো কোই? 
                     

আকাশ ধর

হয়তো অজানা

কেন জানিনা,
 আমার নয়ন শুধু তোমাকেই খোঁজে, প্রতিবারে।
কেন জানিনা,
আমার হৃদয় শুধু তোমার কথাই বলে, চুপিসারে
কেন জানিনা,
আমার হৃদপিন্ডের কম্পন বেড়ে যায়, তোমায় দেখে।
কেন জানিনা,
আমার মন অন্য কোথাও যেতে চায় না, তোমায় রেখে।
কেন জানিনা,
আমার কর্ণ কেন শুনতে চায় না, তোমায় নিয়ে মন্দ।
কেন জানিনা,
আমার ভাবনা কেন লিখে যায়, তোমায় নিয়ে ছন্দ।
কেন জানিনা,
মন চায় ফিরে যেতে, বছর খানেক আগে।
কেন জানিনা,
মন শুধু ঈশ্বরের কাছে, তোমারে হৃদয়টুকু মাগে।

সুব্রত রায়

রাখি বন্ধন
           
 রাখি বন্ধন 
ভাইয়ের কপালে দেওয়া হয় ফুলচন্দন, হাতে পরিয়ে দেওয়া হয় সুতার বাধন । 
ভাই বোনের এই প্রীতি 
জগত সভায় এক সুখময় স্মৃতি। 
 শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে 
 বোনকে রক্ষার দায়িত্ব নেয় ভাই,হিন্দু ধর্ম মতে
 রাখিবন্ধনের আছে নানা কাহানি
 বঙ্গভঙ্গ প্রতিরোধ করার জন্য রবীন্দ্রনাথ ও থেমে থাকেনি, 
 হিন্দু মুসলিম ভাই বোনকে আহবান করেছিলেন
 রাখি বন্ধন উৎসব যেন সবাই পালন করেন। 
 রাখি বন্ধনের এই উৎসব
 অটুট রাখতে সবাইকে যেন হয় সরব
 জগত সভায় এই প্রীতি ভালোবাসা
 রাখি বন্ধন ই পারে দেখাতে আমাদের নতুন দিশা। 

চযন সাহা

বৃহন্নলা

আমার সাথে মিলবে দেখা অবশ্যই,
হাঁটে বাজারে কিংবা স্টেশন চত্ত্বরে, 
দেখার মতো কিছুই নেই আমাতে!
তবুও আমি হাস্যকৌতুক এর স্রোত!
জন্মের পরই বিতারিত!
কি ঘর কি পরিবার আর কি সমাজ!
আমায় আপন করতে,
সবারই লোক লজ্জার ভয়!
 সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি শুধুই গঠনে ভিন্নতা!
আমায় নিয়েই হাস্যকৌতুক, 
আমায় নিয়েই রুপকথা!

হাতের তালি,নৃত্য ভঙ্গি কিংবা গানের সুরেই;
হয়তো আমি পয়সা চাই লোকালয়ের ভীড়ে!
উপায় কী......?
নারী পুরুষ সমান বলে দাবী করে যে সমাজ,
তারাই আবার মানতে চায় না, 
আমাতেই নারী আমাতেই পুরুষ সত্ত্বার বাস!

নিস্পাপ প্রাণ গুলো যখন পৃথিবীতে আসে,
তখন এই পয়সা চাওয়া হাত গুলোই,
হয়ে উঠে আশীর্বাদী স্পর্শ!
কেউ আমায় কিন্নর বলে, 
কেউ আবার হিজরা বলে দেয় গালি! 
তোমরা কি জানো.....?
আমি দুর্বল নই অসহায় নই,
নই আমি নিরুপায় কোন অবলা!
আমি কালী আমিই দূর্গা!
আমিই মহাভারতের সেই বীর যোদ্ধা! 
                 বৃহন্নলা!

অসীম দেববর্মা

সীমানার রেখা মুছে গিয়ে হয়ে উঠুক অসীমান্তিক, 
সংকীর্ণতার বেড়াজাল ছিঁড়ে হোক ব্যাপ্তিক! 
রেশমি সুতার বাঁধন শুধু ভাইয়ের হাতে-ই নয় 
ধরণীর প্রত্যেক নর - নারী যেন রেশমি সুতার বাঁধনে আবদ্ধ রয়। 
বিশ্বাস, আশ্বাস, ভালোবাসা আর সম্প্রীতির উপকরণে মঙ্গল থালা সাজানো থাকুক, 
উপহারের থলিতে সবুজে সবুজ, শুদ্ধ বাতাস, মন মাতানো পাখির কূজন শুনতে পাওয়ার প্রতিশ্রুতি হয়ে জীবন জীবনের জন্য বাঁচুক!
উচুঁ - নীচু, ধনী - দরিদ্র, সম্প্রদায়ের দাগ ভুলে
হাতে হাত রেখে সবাই সু- ভ্রাতৃত্বের বন্ধনের দোলনে যেন দোলে, 
জীবন চারদিনের একবার চলে গেলে
আসবে কী আর আসবে না ফিরে আবার মেদিনীর কোলে? 
মনের ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে রাখির আসল ধর্ম মন্ত্র হয়ে লেখা থাক বুকে, 
প্রত্যেকে প্রত্যেকের জীবনের কারীগড় হয়ে ধরণীর তলে বাঁচুক সুখে! 

প্রণব দাস

বন্ধন
                  

দিনটা সোমবার। দুপুর গড়িয়ে বিকেল হবে হবে ভাব। আজ সকাল থেকেই প্রচন্ড গরম। মনে হচ্ছে সূর্য যেন আমার উপরেই চোখ রেখেছে। যে জায়গায় একবার স্নান করতাম এখন পাঁচবার স্নান করা বাধ্যতামূলক হয়ে পড়েছে। তবুও যেন গরম যায় কি যায়না। বিকেল চারটা থেকে ইংরেজি স্যারের বাড়ি। মিনিট দশেক আগে আমি বাড়ি থেকে বের হই। এই গরমের মধ্যে আড্ডা দেওয়া আমার একদম পছন্দ নয়। এক মিনিট আড্ডা দেওয়া থেকে এক মিনিট জলে ভিজে থাকলে যেন শরীরটা শান্তি পায়। তা যাইহোক,তারমধ্যে আমি আবার টি-শার্ট পরিনা। এই গরমে শরীর স্বেদে ভিজে গেলেও আমি ফুলহাতা শার্ট পরে বাড়ির বাইরে যাই। ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখা জন সিনার মত বডি বানাবো। তা আর হয় কৈ! এখন আমি ক্লাস ইলেভেনে। সেই ক্লাস নাইন থেকে আমার ওজন পঁয়তাল্লিশ থেকে বারেও না কমেও না। এই সেই করতে করতে নিজের হারকুলিস সাইকেলটা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম স্যারের বাড়ি যাবো বলে। মাঝ রাস্তায় ভৈরব টিলার গলিতে যেতেই ডাক পড়ল,,
-'অভী।'
আমি ভাবলাম এই সময়ে আবার কে ডাকলো। পেছনে ফিরে আমি সাইকেলটা থামিয়ে দেখলাম মৌ ডাক দিয়েছে। সামনে যেতেই,
-'কিরে কিছু ভুলে যাচ্ছিস নাকি?'
-'মানে? কি বলতে চাইছিস তুই?
আমি ভুলে যাচ্ছি এমন কি হতে পারে!'
-'মনে করে দেখ কি ভুলেছিস?'

         ঠোঁটে আঙুল চেপে ভাবতে লাগলাম কি ভুলছি আমি! তাড়াহুড়োর মধ্যে বললাম-
-'আমার কিছু মনে পড়ছে না। এবার তাড়াতাড়ি বলে ফেল কি ভুলছি আমি?'
-'আমি তোকে বলতে পারি তবে একটি শর্তে।'
-'শর্ত!'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ শর্ত।'
-'কেমন শর্ত শুনি?'
-'এটা শোনানো যাবে না, তার জন্য তোকে একটা কাজ করতে হবে।'
-'আচ্ছা বল কি করব?'
-' আগে দুচোখ বন্ধ কর।'
-'আচ্ছা ঠিক আছে বন্ধ করছি।'

ভাবতে লাগলাম হঠাৎ চোখ বন্ধ করার কথা বলল কেন মৌ! তবে যাই হোক মৌয়ের কথায় আমি দুচোখ বন্ধ করি। ঠিক তারপরই যখন মৌ আমাকে বলল-
-'এখন তোকে আরেকটা কাজ করতে হবে। তারপর পরই দেখবি সারপ্রাইজ।'

আমি খুব এক্সাইটেড হয়ে বললাম,
-'আচ্ছা তাড়াতাড়ি বল কি করতে হবে? এদিকে আবার আমার স্যারের বাড়ি দেরি হয়ে যাচ্ছে।'
-'তোর হাতটা উপরে তোল তারপর বলছি।'
-কেনরে,আবার হাত উপরে তুলবো কেন?'

         আমি ঠিক তাই করলাম। হাতটা উপরে তুলে মৌয়ের দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ততক্ষণে আমি অনুমান করে নিতে পেরেছিলাম যে আজতো রাখি পূর্ণিমা। মনের মধ্যে অদ্ভুত আনন্দ সঞ্চার হচ্ছিল। মৌ আমার হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। আনন্দে ছটফট আমি খুব খুশি। ঐ দিকে স্যারের বাড়ির দেরি হয়ে যাচ্ছে। এক মিনিট লেট হলেই স্যারের কথা শুনতে হয়। তার জন্য দেরি করলাম না। রাখি নিয়েই আমি চললাম স্যারের বাড়ির দিকে।
 
            আমাদের আগে ছিল গার্লস স্কুলের ব্যাচ। তাদের পড়ার শেষে এখন আমাদের পড়া শুরু হবে। রুমে ঢুকতেই বন্ধু বিদ্যুৎ আমাকে ডেকে বলল যে কে যেন আমাকে ডাকছে। আমি ওর কথা শুনে আবার গেটের বাইরে যাই। দেখলাম মধুরিমা ও প্রীতমা আমার জন্য রাখি নিয়ে অপেক্ষা করছে। সামনে যেতেই ওরা আমার হাতে রাখি পরিয়ে দেয়। বোনদের জন্য কোনো গিফটও নিতে পারলাম না। কারণ রাখি পূর্ণিমা নিয়ে পূর্বপ্রস্তুতি আমার কিছুই নেই। তবুও ছিল বোনদের জন্য হাজার ভালোবাসা।

         সত্যি যেন তাই, কিছু সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় কথা বলার অভাবে আর কিছু সম্পর্ক রয়ে যায় ভালোবাসার পরিপূর্ণতায়। ভাই-বোনের এই সুতোর বন্ধন যেন রাতের আকাশের ঐ পূর্ণিমার চাঁদের মতো দামি। বোনদের মুখের সেই মিষ্টি হাসিটা দেখে আমিও সেদিন ডুবেছিলাম অনন্তে । শুধু ভাই বোনের অদ্ভুত ভালোবাসার অনন্তে। সে অপূর্ব অনুভূতি এখনো আমার হৃদয়ে কড়া নাড়ে। সেদিন বোনদের চোখে ভেসে উঠছিল সেই লিরিক্যাল গানটা -

     "মেরা ভাই তু,মেরা ভাই তু।"

অন্তরা সাহা

পরাধীনতার শেকল

ভূমিষ্ট হবার পরই শুনলাম,
আমি নাকি ফেলনা,,
ছেলেবেলাতেই হাতের কাছে, 
খুন্তি কড়াই ছিল আমার খেলনা।

কৈশোরে পা দিতেই,
ছেলে-মেয়ের পার্থক্য বোঝালে,
পায়ে এক খানা ভারী,
পরাধীনতার শেকল পরিয়ে দিলে।

খুবই কষ্ট হতো,
এটা বহন করতে,,
সেই কথা কি,
আদৌ তোমরা জানতে?

যৌবন দোরগোড়ায় এসে,
কড়া নাড়ল যখন,,
পাঁচ দিন নাকি,
আমি অশুচি জানলাম তখন।

ভীষন ইচ্ছে ছিল যে,
বিমানটা আমার হাত ধরে উড়বে,,
ইচ্ছে ছিল সীমান্তে আমি দাঁড়াবো,
আর রাইফেলটা কাঁধে থাকবে।

আশা ছিল বাকি পথটা,
স্ব- ইচ্ছায় করবো পার,,
এবং স্বাধীনতা হবে,
পরম বন্ধু আমার।

বদলে আরেক খানা,
পরাধীনতার শেকল পরিয়ে দিলে,,
শশুরালয়ই নাকি,
জীবনের মূলমন্ত্র জানালে।

এখন আমার সাথে আর,
কথা বলে না ইচ্ছেগুলো,,
নির্বাক নামের বন্ধুটি,
আমার খুব আপন হলো।

সন্তান টাকে আমার,
অন্ধের যষ্ঠি ভেবেছিলাম,,
বৃদ্ধাশ্রম নামের শেকলটা শুধু,
পড়ার বাকি ছিল,সেটাও পরলাম।

অবশেষে জং ধরল,
শেকল গুলিতে যখন,,
ওই নীল দিগন্তে গিয়ে,
পরাধীনতা হাত ছাড়লো তখন। 
 
মৃত্যু তুমিই আজ শেখালে, 
প্রকৃত স্বাধীনতা কাকে বলে।

ঈশিতা পাল

রাখীর সূচনা

ভারতীয়দের গণমান্য  উৎসব 
নাম রাখীবন্ধন , 
সৃষ্টিকর্তা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। 

শ্রাবনের মাস যখন শুরু
 হল বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব, 
চারিদিকে শুরু হল জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। 

কবি কল্পনায় দেখেছেন
চারিদিকে বইছে শুধু রক্তের বন্যা,, 
তখন কবি হলেন আত্মহারা
হৃদয়ের মাঝারে উপস্থিত অকূট বেদনা। 

মনে উক্তি এল বাঁধতে হবে মানুষকে প্রীতির বন্ধনে,
সৃষ্টি করতে হবে ঐক্যতা 
ভোলাতে হবে যুদ্ধের মনোভাব। 

তখন  থেকে শুরু জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে
সাত রঙের সমাহার, সম্পর্কের অটুট বাঁধনের অঙ্গীকার রাখীবন্ধন উৎসব।

       

স্পৃহা ভট্টাচার্য্য

বেশি না, সেই গত বছরের রাখী পূর্ণিমার দিনের কথা। এই দিনটির জন্য প্রতিবছরের মত সে বছরও অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু এই বছর আমি আর আমার কিছু বান্ধবীরা মিলে এই দিনটাকে অন্যান্য বছরের মতো এঁকঘেয়ে ভাবে নয় বরং একটু অন্যরকম ভাবে পালন করতে চেয়েছিলাম।
অবশেষে চলে এলো রাখী পূর্নিমা।
আমাদের পরিকল্পনা ছিল রাখীর দিন আমাদের সীমান্তরক্ষী ভাইদের রাখি পড়াবো। যেমন ভাবা তেমন কাজ। সকাল সকাল উঠে স্নান সেরে বাড়িতে ভাইদের রাখী পড়িয়ে রওনা দিলাম আমরা সীমান্তের উদ্দেশ্যে। যথারীতি নির্দিষ্ট সময়ে সেখানে গিয়ে তাদের হাতে রাখী পরালাম। সেই সময় তাদের খুশি আর চোখের কোণে জল দেখে আমরা ঠিক করে ফেললাম যে এখন থেকে প্রতিবছর আমরা তাদের রাখী পরাতে আসবো। তারাও আমাদের রাখী নিয়ে খালি হাতে ফিরিয়ে দেয়নি, উপহার হিসাবে দিয়েছে আমাদের রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি যা ছিল আমাদের অনেক বড় পাওনা।
কিছুটা সময় তাদের সাথে ব্যতীত করার পর আমরা আবার বাড়ি ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ফেরার পথে জল তেষ্টা পাওয়ায় একটি দোকানে জল কিনতে গিয়ে হঠাৎ দেখি দোকানের সামনে বসে একটি ছোট্ট ছেলে কাদছে। ছেলেটির চোখের দিকে তাকাতেই কেমন যেনো একটা মায়া লেগে গেল। ছেলেটিকে জিজ্ঞেস করলাম "কিরে তোর নাম কি? আর তুই এখানে বসে কাদছিস কেন?" ছেলেটি চুপ করে আমার মুখের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বললো "দিদি আমাকে একটা রাখী দেবে?" ছোট্ট ছেলের আবদার ফেলতে পারলাম না। বললাম "কেন দেবোনা!? অবশ্যই দেবো।" এই বলে দোকান থেকে আমি তার জন্য একটা চকলেট কিনে তাকে দিতেই সে আমার হাত থেকে একটা রাখী এবং চকলেট টা কেড়ে নিয়ে দৌরোতে শুরু করলো। কৌতুহলবশত আমিও পেছন পেছন হেঁটে কিছুটা যাওয়ার পর দেখলাম সে একটা ছোট্ট ভাঙ্গাচোরা ঘরে প্রবেশ করে। চারিদিকের পরিবেশটা দেখে বুঝতে পেরেছিলাম সেটা মুসলমানদের বস্তি এলাকা। আমি তার ঘরের দরজা দিয়ে তাকাতেই দেখলাম তার একটা ছোট্ট বোনকে সে তার হাতের চকলেট টা দিয়ে রাখিটা পড়িয়ে দিল। এই দৃশ্য আমায় মুগ্ধ করে দিল, চোখে জল চলে এলো এটা দেখে। আমি কিছু না বলেই বেড়িয়ে চলে এলাম আর মনে মনে এই ছোট্ট শিশুটির তার বোনের প্রতি এতো ভালোবাসা দেখে অবাক হয়েছিলাম।
কিন্তু মনে মনে প্রশ্ন ছিল কেন সে এইভাবে পালিয়ে গেল আমার কাছ থেকে? আমি আবার সেই দোকানে গিয়ে দোকানদারকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি বললেন "দিদি আপনি ওই ছেলেটাকে রাখি কেন দিলেন? ওরা মুসলমান। ওদের কে রাখি বিক্রি করবে?" 
আমি বুঝতে পারলাম ধর্মকে রাখির মত পবিত্র বন্ধনের সাথে জড়িয়েছে এই সমাজ। মনে মনে ছোট্ট ছেলেটির জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল।
কিন্তু কিছুটা আনন্দিতও ছিলাম কারণ আমার এই ছোট্ট একটি রাখি ছেলেটি আর ছেলেটির ছোট্ট বোনটির মুখে হাসি এনে দিয়েছিল।
ওই কথায় আছেনা "God is great"। সেদিন হয়তো তাই ভগবান আমায় ছোট্ট ছেলেটির সাথে দেখা করিয়েছিল।
আবার সেদিন একটিবার প্রমান হয়ে গেল 'যার যখন যেটা পাওয়ার সে সেটা যেকোনো মূল্যেই পায়।'

প্রিয়াংকা শীল

স্বপ্নের রাজকুমার                                                

দেখেছিনু তোমায় সেদিন রাতে -
পূর্ণিমা সন্ধ্যায় আমার স্বপ্নতে।

তুমি এসেছিলে আমার স্বপ্নে -
আমার কল্পনার রাজকুমার রূপে ।

ঠিক তেমনি চোখ, তেমনি ঠোঁট, তেমনি চেহারা,
মুখ দেখে বোঝা যায় তুমি যে অনেক ভোলাভালা।

তোমার সাথে কথা বলে যাহা শান্তি পাই,               তেমন শান্তি যে পৃথিবীর আর কোথাও নাহি পাই ।

তুমি হলে বিধাতার দেওয়া এক সুন্দর উপহার -
 তুমি যে আমার সেই স্বপ্নেস্বপ্নের রাজকুমার ।

চাঁদপানা মুখটি যখন দেখি তোমার -
সব দুঃখ ভুলে যাই আমার ।

যখন তুমি মিষ্টি সুরে ডাক আমার নামটি ধরে -
মনটা যে আমার বড় আনন্দিত হয়ে পড়ে ।
কখনো তুমি কর রাগ --
কখনো কর অনেক সোহাগ ।

যখন তুমি কর আমার ওপর  রাগ -
আমি যে তোমার চোখে খুঁজে পাই আমার জন্য সোহাগ ।

এজন্য আমিও যে থাকতে পারিনা,                 তোমার উপর করে বেশি রাগ ।

কারণ, তুমি যে আমার স্বপ্নের রাজকুমার, আর আমার সোহাগ।

সঞ্জয় দত্ত

বর্ষার তান্ডব
           
গ্রীষ্মের পরিত্রাণে
বৃষ্টি কণা গুলো পাখা মেলে উড়ছে।
কখনো পড়ছে টপ টপ শব্দে,
আর কখনো ঝপ ঝপ।

যখন টপ টপ শব্দে সাড়া দেয়!
শুনতে বেশ লাগে।
ঝপ ঝপ শব্দে আজ..
মানুষের মন উজাড় করে।

পাখিগুলো আজ 
 ঘরে বসে কাঁদছে।
আর নিঃসঙ্গ মেঘগুলো
পুনরায় জমাট বাঁধছে।

 মাঝে মাঝে রবির হাসিতে
 বসুন্ধরার কলতান উঠে।
 কিন্তু সেই কলতান
আবার নিমিষেই বিলিন্ হয়ে যায়।

পিপিলিকার কষ্ট গুলো
যেন বুক চিড়ে বেড়িয়ে আসছে;
 উদারতা বলতে কিছু নেই!
 ভবিষ্যত তো ভেসে যাচ্ছে।

উর্মি সাহা

ছুঁই তবে 

পেন্ডুলামের সময় ঘোরে,
গতিবেগ হারায় অস্থিরতা
প্রেম গুলো সব মুক্ত হয়--
স্বাধীন হয় অবাধ্যতা।
শীতের কঠিন বৃষ্টির দাপটে,
জানালা খোঁজে গল্পের আপছা সৃষ্টি।
মিথ্যেবাদী প্রেম গুলো সব--,
অর্থ খোঁজে ভালোবাসা কি!
কৈশোর হারায়,বাধ্য-অবাধ্যতার বিশৃঙ্খলায়---
মৃত্যু হয় কাঁদা মত্ত উন্মাদের দৌড়।
চশমা গুজে যৌবন খুঁজে,আজকের প্রৌঢ়।
শতক পরিবর্তনে দায়ী বুঝি মানব??
আধুনিক বিজ্ঞান মস্তিষ্কই,,,
জন্ম দান করে ক্ষুদ্র যান্ত্রিক দানব।
আদর ভুলেছে অধিষ্ঠিত প্রজন্ম;
বিকৃত রুচিতে বাষ্পায়িত প্রেম জন্ম।
অসজ্জিত শরীর গুলো অর্থে ব্যবহৃত,
সময়ের অভিশাপে ভালোবাসা-ই অপরিপক্ক।
ডাইরি বোঝাই প্রেমিকরা এখন যান্ত্রিক,,
সত্যিই, কি এরাই প্রেমিক?? 
দুরত্বে বেঁচে থাকা রোমান্টিকতাই---
রাতের অন্ধকারের প্রশ্নে বাঁচে।
আর আমার ভালোবাসা প্রশ্ন তোলে,
ভালোবেসে এবার তোকে ছুঁই তবে ?

সম্রাট শীল

রাখী
       
রাখী যেন এক মৈত্রীর বন্ধন।
রাখীর দ্বারা গড়ে উঠে, এক অপূর্ব নিদর্শন।।
শ্রাবন মাসের পূর্নিমা তিথিতে,
এই রাখী উৎসব পালিত হয়।
রাখী উৎসব সত্যি,
আনন্দময়।।
রাখী মানে, বোনেরা-ভাইদের হাতে বেঁধে দেয়, রাঙ্গানো সুতোর সমাহার।
রাখীর স্পর্শে ভাই-বোনদের মাঝে সৃষ্টি হয় এক অটুট প্রতিজ্ঞার।
সেই রাখীর বন্ধনে আবদ্ধ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর গড়ে উঠিয়ে ছিলেন সৌভ্রাতৃত্বের ভিত।‌
বঙ্গভঙ্গের যখন হয়,সময় নিশ্চিত।।
রাখী বন্ধনের ফলে, মনে আসে আনন্দ, মনের খারাপ রিপু হয় চূর্ণ।
এই রাখী প্রিয়জন তথা বন্ধু-
বান্ধবের মঙ্গল কামনায় অনেক তাৎপর্যপূর্ণ।

পিয়াল দেবনাথ

রাখী বন্ধনের আহ্বান 

রবি ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বেরিয়ে পরলাম আজ,
উনার আদর্শেই চলো, করব মোরা কাজ।

রাখী হাতে নিয়ে চললাম দূর্গম পথে,
আসো বন্ধুগন তোমরা চলবে আমার সাথে।

মুসলিম ভাইটির হাতে আজ রাখী বন্ধন হবে,
ডাকব সেই খ্রীষ্টান ভাইকেও একতার উৎসবে।

চলো আজ হাত ধরে দেই আমরা কথা;
সকলে মিলে ঘুচিয়ে দেব ধর্ম ভেদ প্রথা।

রাখী পরাব সেই মেয়েকে,যে শিকার লোক নিন্দের;
সবাই শপথ নিলাম, রক্ষা করব সকল বোনদের।

রাখী পরাব সেই সৈনিক কে,যে দিতে চলেছে প্রাণ;
আর সেই স্বাস্থ্য কর্মীকে,যে চিরকাল করেছে ত্রাণ।

বাড়ির ছোট বোনটি বলে রাখী পরাবে সেও,
আমায় সে রক্ষা করবে,না করুক আর কেউ।

সৌরভ শীল

হলুদ সুতো
                                                       
হলদে রঙের বাদলি প্রাণ
 একসাথে চল সুর  মিলায়
 জয় বাংলার জয় গান,
হানাহানি সব ভুলে গিয়ে
একসাথে সব তাল মিলিয়ে
 গাইব জয়  গান ।
ডাকছে তোরে ভোরের পাখি   

মেল নাইরে আজ মনের আঁখি।
মনের দরজা খুলে আয়
হাতে হাত মিলিয়ে ভাই।
মনের দরজা খুলে দেখ
 আকাশ পানে খন্ড মেঘ
উড়ছে পাখি, হাজার সুরে দিচ্ছে ডাক
আজ মিলন দিনে, বিচ্ছেদ টা না হয় দূরে থাক।
বিলিয়ে দি রঙিন সুতো ,
মনের কথা জমছে কত।
 ভুলিয়ে দে আজ মনের বিষাদ
 দূরে যাক ধর্মের ‌জাতপাত।
এক ডালেতে হাজারো পাখি
চেয়ে দেখরে , মানুষ তোরা
 হানাহানি  করছে নাকি।
মিল রে মানুষ মিল রে আবার
 মিলন মঞ্চে একসাথে ।

দীনেশ দাস

মনের মতো
    

কী নামে ডাকি তোকে?
মেঘ,বৃষ্টি,নাকি শীত-গ্রীষ্মের খেলা?
চৈত্র,বৈশাখ,আষাঢ়,শ্রাবন না বসন্ত?
কোন নামে?

দূর-সুদূরের শ্যামল দিগন্ত?
না দিগম্ত পেরিয়ে বয়ে চলা সেই খরস্রোতা নদী?
নাকি 'কাশফুল'?
কোন নামে?

হঠাৎ বয়ে যাওয়া শীতল বাতাস?দখিনা হাওয়া?
বাতাসে ভেসে চলা ফুলের সৌরভ নাকি এক পশলা বৃষ্টি?
গ্রীষ্মের বুক ফাটানো প্রখর রোদ?নাকি শীতের মিঠে রোদ্দুর?
কোন নামে?

আকাশ?নাকি আকাশী আকাশে ভেসে চলা তুলো তুলো সাদা মেঘ?
নাকি উড়ে চলা সারি সারি বক,ফিঙ্গে,টিয়ে?
সুতো ছেঁড়া সেই রঙ্গিন ঘুড়ি?
কোন নামে?


সাত রঙ্গা রংধনু বলব?বা তার যেকোন একটি রং?
ঝড়?না প্রবল ঝড়ে পৃথিবীর বুকে আঁছড়ে পড়া বাজ?
নাকি মৃদু আলোয় বাঁশঝাড়ে পাখিদের কিচিমিচি?
কোন নামে?

রাতের নীরবতাকে আরো গভীর করা ঝিঝির ডাক?নাকি মিটিমিটি দ্যুতি ছড়ানো মিষ্টি জোনাক?
রূপলী জোৎস্না বলব?না জোৎস্না ঢালা ঐ পূর্নিমার চাঁদ?
কোন নামে?

ছোটগল্প না বিশালতায় ভরা উপন্যাস?
গান না কবিতা?
কোন নামে ডাকি তোকে?
কোনটা চাই?

সাধন নমঃ

দিদি রাখী পড়াবি না!
                   
তুই বড় অভিমানী রে।
কথায় কথায় শুধু ঝগড়া, বিবাদ
আর বললেই অভিমানে ভরপুর। 
যা আমার সাথে কথা বলিস নে।

সে কথা আজ বহুদূর। 

ও হে ! আপনারা ভাবছেন আমি কে,কার কথা বলছি।
আমি চন্দ্রিমা সেন,অপু আমার ছোট ভাই।
সত্যি খুব মনে পরে,
দু-চোখে শুধু আগুন জ্বলে।

সেই দিন টা ছিল রাখীপূর্ণিমা তিথিতে ভরপুর,
বিচিত্র শোভায় শোভিত।
হঠাৎ করে সারাদিনের খুনসুটির পর,
অপুর সেই তৃপ্তিময় সুর,
দিদি রাখী পড়াবি না আমায়?

যদিও একটু অভিমানের সুরে বলা,
পড়াবো না তোর হাতে,পাশের বাড়ির চয়নকে পড়াবো।
দু-চোখে জলে ঢল ঢল অপু
স্নেহের মায়াজালে বাঁধিল আমায়।

স্বপ্ন সময়ের অবকাশে সেই যন্ত্রনা আবার
গুমরে কেঁদে উঠল অপুর বুকে।
চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারা ক্রান্ত,
প্রচন্ড ব্যথায় ছটফট করছিল অপু,
পাঁচটা বছর পর অপুর ব্যথা নিরসন হল,
পূর্নিমা তিথীর আগেই চলে গেল অপু,
মায়ার শক্ত বাঁধন ছিড়ে।

পড়াতে পারিনি সেইদিন,শুধু কেঁদেছি
বুক ফাটা কান্নায় ভেসেছি।
আজ এগারো বছর হয়ে গেল,অপু রাখী পড়ে নি,
আজও আমার কর্ণমূলে সেই সুর আব্দার করে বেড়ায়,
দিদি রাখী পড়াবি না আমায়?

গৌতম মজুমদার

ভাতৃ মিলন


আশি সালের জুন মাসে, ভাতৃ ঘাতী দাঙ্গা,
কোন কিছু বোঝার আগে, রক্তে মাটি রাঙা ।
শান্ত পাহাড় অশান্ত হলো, জ্বলছে চারিপাশে,
সৌভ্রাতৃত্ত্বের বিশাল সৌধ, ভাঙলো নিমেষে ।
কখনো বা পাহাড় কাঁদে, কান্না সমতলে,
দাঙ্গাবাজরা ঘর বাড়িতে, আগুন দিয়ে চলে ।
পাহাড়ীরা হত্যা করে, বাঙ্গালীদের ধরে,
বাঙ্গালীরা পাল্টা চালায়, উপজাতির ঘরে ।
পাহাড়ী বাঙ্গালী উভয় জাতির, রক্তে নামে ঢল,
হাজার হাজার লাশ ভেসে যায়, লাল গোমতীর জল ।
চারিদিকে করুণ চিত্কার, কোথাও কলরব,
কিসের নেশায় ? করছে কারা ? জানিনা এসব ।
' মার, ধর, কাট ' এই শব্দটি, আসছে শুধু কানে,
আতঙ্কিত আমরা সবাই, লুকিয়ে পড়ি বনে ।
বনের মাঝে শুনতে পেলাম, অনেক লোকের কান্না,
ভয়ে, ক্ষুধায় কাঁদছে সবাই, কয়দিন নেই রান্না ।
মা যে শিশুর কান্না থামায়, মুখটি চেপে ধরে,
শব্দ শুনে শত্রু পক্ষ, যদি এসে পড়ে ?
আমরা যেমন ভয়ে আছি, ওরাও আছে ভয়ে,
একই পথের পথিক মোরা, একজাতি না হয়ে ।
সবাই সবাইর দুঃখ শুনে, ভয় গিয়েছে উবে,
শত্রু বিনাশ করাই মোদের, আসল কার্য্য হবে ।
এই প্রতিজ্ঞা নিয়ে মোরা, হাতটি ধরি সবার,
শিশুর মুখে সর্ব প্রথম, দিতে হবে আহার ।
' আমরা ওরা ' এক সাথ হয়ে, ফিরে আসি ঘরে,
মা বোনেরা রান্না করে, খেলাম তৃপ্তি ভরে ।
জাতি উপজাতি আমরা, গেলাম সবই ভুলে,
' আমরা ওরা ' এ শব্দটি, দিলো সবাই তুলে ।
জোট বেধেছি আমরা সবাই, রক্ষা করি গ্রাম,
দাঙ্গাবাজদের রুখে দিয়ে, শান্তি ফেরালাম ।
হিংসা নিন্দা নেইকো এখন, মিলন মালা নিয়ে,
সৌ ভ্রাতৃত্ব গড়ে তুলি, ভালোবাসা দিয়ে ।
সব বোনেরা ভাইয়ের হাতে, পরায় এখন রাখী,
হাসি খুশী আমরা সবাই, যেন মুক্ত পাখি ।

গৌরাঙ্গ রক্ষিত

জানি তুমি আসবে না ফিরে

জানি তুমি আসবে না ফিরে , 
তবু পথ চেয়ে বসে থাকি ।
জানি তুমি বুঝবে না , 
কি হয় আমার এ জ্বালা । 

কত আশা ছিল তখন , 
এখন শুধুই অভিমান । 
কত হাসি ছিল তখন, 
এখন শুধুই অভিমান ।

কত স্বপ্ন ছিল তখন,
এখন শুধুই কষ্ট ।
কত ভালোবাসা ছিল তখন,
এখন শুধুই কষ্ট ।

জানি তুমি আসবে না ফিরে , 
তবু পথ চেয়ে বসে থাকি ।
জানি তুমি বুঝবে না , 
তোমায় কতটা ভালোবাসি ।

মোঃ রুবেল

একটা রাখি

একটা রাখি বন্ধন হোক সম্প্রীতির আসরে।
একটা রাখি বন্ধন হোক বিভেদকামী প্রতিরোধে।
একটা রাখি বন্ধন হোক সৌভ্রাতৃত্বের হাতে।
একটা রাখি বন্ধন হোক অযাচিত  ধ্বজা ভঙ্গ করতে।
একটা রাখি বন্ধন হোক স্বদেশের হিতে।
একটা রাখি বন্ধন হোক অঢেল ভালোবাসার জিতে।

সুচিত্রা দেবনাথ

বিপ্লবী

পঁচাত্তর এর সেই শ্রাবণ এর দিন
ইংরেজি ক্যালেন্ডার এ
১৫ ই আগস্ট,
ইতিহাস সাক্ষী
একটি দিন।
দিনটি কালো দিন
আবার,নতুন ভোরের আগমন।
ভারতমাকে স্বাধীন করতে
বিপ্লবীরা,
বুক ফুলিয়ে বুকে নিয়েছেন
বুলেটের ঘাত।
এক নিমেষে যেনো সব থেমে গেলো
সমগ্র বাংলা প্রকৃতির অশ্রু,যেনো
সেই দিন বৃষ্টি হয়ে ঝরছিল।
কোথাও থেকে শব্দ এলো
"বন্দে মাতরম,বন্দে মাতরম,বন্দে মাতরম"
নতুন ভোর,নতুন সূর্য,
স্বাধীন পাখি
আপন ভোলা মনে আকাশে উড়ছে,।
রক্ত দিয়ে মাকে স্বাধীন করা বিপ্লবীরা
আজও,ইতিহাস এর পাতায় স্বর্ণাক্ষরে বাঁধা,
আজও,আমাদের গর্ব,গৌরব
তুমাদের জন্য আজ খুঁজে পাওয়া হল,
"আমাদের ভারত"
আমাদের "বাংলা নামক স্বর্গ"
বিপ্লবী,তুমাদের জানাই কোটি কোটি প্রণাম।

সুনন্দা দাস

অবশেষে

আমরা সবাই ছন্নছাড়া,
ছন্দহীন দিশেহারা।
মায়াবী এক মায়ার ঘোরে
ভাসছি শুধুই মায়ার ছলে।

জানলার কাঁচে পর্দার ভাঁজে,
স্বপ্ন চোখে আগলে রাখে।
পলক পরা মরীচিকায়,
কৃষ্ণকলি বেঁচে থাকে।

আকাশ জোড়া চাওনি তোমার,
মিলায়ে যাবে নিঃশব্দে।
ঝড়ের মতোই ঝরে যাবে,
আমার তৈরী অভ্যাসে।

শীতের বেলা ঝরায় পাতা,
একলা করে কৃষ্ণকে।
মৃতের শয্যায় দাঁড়িয়ে থাকে,
আশায় ...
তুমি ফিরবে যে।

রাসের ঘোরে দোলবো আবার,
ঝড়ের তালে নেচে।
ভিজবো আবার বৃষ্টি তলে,
পুষ্পবনে হেসে।
 
দেখবো আবার বুনবো স্বপন,
ভবতটে বসে।
স্বপ্নের তৈরী মায়াছবি,
একলা অবশেষে।

কুমার নচিকেতা শীল

খুশির দিন

এখানে ভাই বোন, খেলছে বাড়িতে ।
পরশুদিন সকালে, মামা যায় গাড়িতে ।।
দূরের বনের ধারে, একজন নারী ।
যাচ্ছে কাছাকাছি, তার ভাইয়ের বাড়ি ।। 
গাছের ডালায় মেয়ে, দোলনা চড়ে ।
দোলনার ভারে ওই, গাছটি নড়ে ।
আকাশেতে উঁকি দেয, চাঁদ একফালি ।
তাহা দেখে ভাইবোন, দেয় হাততালি ।

দুলাল চক্রবর্তী

কিছু না বলা কথা

তোমার এ বিশাল পৃথিবীটা
আমার জন্য নয়।
এ এক মায়াবী জগৎ 
আলোর রোশনাই ভরা।
মোহময়ী রূপ।
শুধু মায়া মরিচীকা
প্রাণহীন ধূ ধূ বালুকা রাশি।
এ আমার কাছে অনাদরেরখেলনা:
প্রাণহীন এক পাথর খন্ড।
দূর থেকে দেখা ভালো:
এর মাঝে ছন্দ নেই।
আছে শুধু একরাশ গাঢ় অন্ধকার।
এ ক্লেদাক্ত জগৎ চাইনা--
চাই শুধু বর্ণ গন্ধ
আর ভালোবাসা
যা নিতান্তই সাধারণ।

ওতে ডুবে যেতে চাই
ওতে হারিয়ে যাওয়ার স্বাদ।

প্রত্যাশা নেই, নেই বাক্যের
ফুলঝুরি।
অব্যক্ত কোন বাসনাও জ্বালাবেনা।
চাই শুদু একটা জ্বলন্ত প্রকাশ।
যার আলোয় দুচোখ দেখবে পথ
নতুন দিনের অপেক্ষায়!

তনুশ্রী দাস

করোনাময় পৃথিবী 

হে পৃথিবী, 
কোথায় তুমি? 
কোথায় তোমার সুন্দর পরিবেশ? 
এখন শুধু মানুষ 
বেঁচে আছে, মরা-বাঁচার লড়াইয়ে। 

হে পৃথিবী, 
সুস্থ হয়ে উঠ তুমি, 
আর, কত অসুস্থ থাকবে 
তোমার অসুস্থতার খবরে
ভেঙে পড়েছে সারা দেশ। 

হে পৃথিবী, 
তোমার শত শত মানুষ 
তোমার প্রতীক্ষায় 
তুমি কি এতই দুর্বল?
নিজেকে সুস্থ হওয়ার থেকে হারিয়ে ফেলেছ? 

হে পৃথিবী, 
করোনার মত এই ছোট্ট রোগ 
কেড়ে নিচ্ছে শত শত মায়ের সন্তান, 
তুমি কি দেখতে পারছো না
কেন? অন্ধকারের সৃষ্টি করছো 
আলো ফিরিয়ে দাও। 

হে পৃথিবী, 
মহামারী কি এতই শক্তিশালী?
তোমাকে হারায় 
দেখাও তোমার ক্ষমতা,
হাসি ফুটাও সকলের মুখে। 

হে পৃথিবী, 
সমাজের মানুষ এখন বড়ই হিংস্র, 
সুন্দর পৃথিবীতে করোনার কারণে, 
নিজেদের মধ্যে নিজেরাই তৈরী করছে, 
আগ্নেয়গিরির মত ফাটল। 

হে পৃথিবী, 
শক্তি ফিরিয়ে আনো তোমার, 
আলোকিত কর সারা বিশ্ব, 
সুস্থ করে তোল নিজেকে অার, দাম দাও প্রতিটি লোকের চোখের জলের, 
হে পৃথিবী!
 
                     

সংগীতা শীল

রক্ষাকবচ

কথিত আছে একদিন 
কৃষ্ণ ঠাকুরের হাত কেটে রক্ত ঝরছিলো
রক্ত কি করে বন্ধ হবে 
শুভদ্রা মনে মনে ভাবছিলো।
সেই স্থানে হঠাৎ দ্রোপদীর আগমন
বিন্দু মাত্র চিন্তা না করে
নিজের রেশম শাড়ি ছিঁড়ে
কৃষ্ণের হাতে বেধে দিলো তখন।
সাত রঙের সুতার সমাহার 
ভাইবোনের রক্ষাতে অটুট বন্ধনের দৃঢ় অঙ্গীকার।

এই ঘোর কলিযুগে কিসব অনাসৃষ্টি
এত কলুষিত এত নোংরামী! 
যেই হাতে প্রতিবছর রাখি পড়িস
সেই হাত দিয়ে অন্যের বোনের ইজ্জত লুন্ঠন করিস?
নিজের বোনের আবদার পূরণ করিস ভদ্র হয়ে
রাস্তায় মেয়ে বৌ'দের প্রতি কু-দৃষ্টিতে দেখিস!
যে শিশুটি সবে মাত্র ভূমিষ্ঠে এলো
এখনো ঠিকভাবে দেখেনি জগতের আলো
যে বৃদ্ধার সময় প্রায় ফুরিয়ে এসেছে
তাদেরকেও ছাড়লি না এত কাপুরুষ তোরা!
ছিঃ ধিক্কার জানাই তোদের মতো পাষণ্ডদের 
যেই পবিত্র হাতে বোনের রক্ষাকবচ পড়িস
একবারও হৃদয় কাঁপে না ধর্ষণ করতে!
কোনো অধিকারে রাখি'র দাবী করিস?

দিপিকা রায়

প্রেম দিবস

প্রেমের রংমশালে সেজেছিল এইদিন
ভালোবাসার আঙিনায় পড়েছিল বাঁধা
কত নতুন বাঁধন, 
সুরে সুরে বাজলো কন্ঠধ্বনি 
আলোর ঝলকানিতে। 

হঠাৎ এই আলোয় যেন অন্ধকারের বৃষ্টি। 
তীব্র বোমার বিস্ফোরণে, 
রামধনুর রং ও ফ্যাঁকাসে পড়ে গেল। 

একদিকে ছিল সম্পর্কের নতুন বাঁধন
আরেকদিকে বিচ্ছেদের আর্তনাদ। 
হাজারো গোলাপের আড়ালে যখন, 
প্রেম নিবেদন চলছিল, 
তখন বীর মায়ের সন্তানেরা কাফন বন্দি হয়ে, 
এই গোলাপের নিচেই শয্যা নিল। 
রাজ পথে বিছিয়ে ছিল, 
শত শত সৈনিকগণের ক্ষুদ্র দেহগুলো। 

শুনেছিলাম বিশ্বাসের মাঝে নাকি, 
সৃষ্টি ভালোবাসার ঘর, 
আর এইদিকে... 
বিশ্বাসহীনতায় কেড়ে নিল ওনাদের জীবন। 

কত মা, কত ভাই, কত বোন, কত স্ত্রী... 
তাঁদের চোখের জলে ভাসিয়ে দিল
ভারত মায়ের কোল। 
জানিয়ে দিল বীর পুরুষদের চিরবিদায়। 

আজ আর এই দিনে
রোমান্টিকতার উদ্বেগ জাগে না, 
বীর শহিদদের যন্ত্রনা গুলি
ভালোবাসায় আগলে রাখতে ইচ্ছে করে। 

আজ পুরো বিশ্ব যখন রাখী উৎসবে মাতোয়ারা, 
মনে পরে তখন... 
ওই ছোট্ট বোনটির কথা, 
সে ও হাতে রাখী নিয়ে তাঁর ভাইয়ের হাতটি খোঁজে।
ভাই ফোটার থালা সাজায়, 
কিন্তু ভাইয়ের ললাটের চিহ্ন যে
মিশে গেছে রণভূমির মৃত্তিকায়। 
জানে কখনো ফিরবে না, 
তবুও দিন কাটায় কত মা আজও, 
প্রহর গুণে গুণে। 
ভালোবাসার দিনে কত স্ত্রী
অশ্রুরঞ্জিত পুষ্প দিয়ে, 
স্যালুট জানায় ওনাদের চরণস্পর্শে। 

শত শত মানুষের অশ্রুজলে
আজ না হয় পালন হোক
ওনাদের নামেই এই ভ্যালেন্টাইন, 
ওনাদের নামেই হোক না পুষ্প বর্ষণ, 
ওনাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়ে
উদযাপিত হোক এই প্রেম দিবস।

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

রঙিন সুতো

'রাখী বন্ধন' মানে,
একটা ডিজাইন করা রঙিন সুতো
দশ-কুড়ি টাকা দিয়ে কিনলাম,
হাতে পড়ালাম আর সেলফি পোজে
কয়েকটা ছবি স্ট্যাটাসে ঢেলে দিলাম,
এটাই কি???
যদি হ্যাঁ হয়,
জেনে রাখো তুমি ভীষণ অসুস্থ!

'রাখী বন্ধন' মানে,
বিশ্বাস-স্নেহ-ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার
সংমিশ্রণের এক মেদুর রীতি,
যা আন্তরিকতা গাঢ় করে।

তুমি তোমার ভাই বা বোনের হাতে
রাখি পড়ালেই কখনো এই রীতি পুঙ্খানুপুঙ্খ পালন হয়না!
তুমি পড়াতে পারো তোমার বাবার হাতে,
যা শ্রদ্ধাশীল হওয়ার তোমার উজ্জ্বল নিদর্শন হবে।
তুমি পড়াতে পারো তোমার শিক্ষককে,
যা বন্ধুত্ব সূত্র হয়ে আজীবন কাজে আসবে।
তুমি পড়াতে পারো ভবঘুরে'কে,
যা তোমায় সমাজসেবকের পরিচিতি দেবে,
তুমি পড়াতে পারো স্কুল পড়ুয়া কে,
যে আগামীর নাবিক।
তুমি পড়াতেই পারো তোমার
প্রেমিক-প্রেমিকাকে,
যা সম্পর্কের গভীরতায় সুনামি রোখার
শুভ চিহ্ন হয়ে জ্বলজ্বল করবে।

হ্যাঁ এটাই প্রকৃতপক্ষে রাখী বন্ধন,
এর সেইরকম বাধা ধরা নেই।
সদ্যোজাত থেকে শয্যাশায়ী অবধি
অক্ষরে অক্ষরে এর গুণমান
প্রাণোজ্জ্বল।

নিকিতা সাহা

শুভ রাখিবন্ধন

আজ সেই শুভ মিলন দিন,
ভাই বোনের বন্ধন অন্তহীন।
বন্ধু বন্ধুত্বের গভীর বন্ধন,
ঘুচে যাক্ দরিদ্রের ‌‌ক্রন্দন।
উঁচ নীচ ভুলে,সকল ভেদাভেদ,
রাখির ছোঁয়ায় রইবে না খেদ।
মজবুত হোক রাখির বাঁধন,
বন্ধু যে সবার একান্ত আপন।
রঙ বেরঙের সুতোর সমাহার,
রাঙিয়ে উঠুক ভাই বোনের অঙ্গীকার।
পবিত্র হোক এ শুভ মিলন,
ভরে যাক্ সবার আনন্দের জীবন।
এসো তবে আজ প্রতিজ্ঞা করি,
হিংসা ভুলে প্রেম বাঁধনে বাঁধি।
একসাথে একপথে লড়ব,চলব,
একসুরে ঐক্যের জয়গান গায়বো।

বিনয় শীল

নেংটা রাজার দেশে


কে যে কখন মহারাজের, কান করেছে ভারি ।এতেই রাজা তেতে আগুন, নাচায় তরবারি ।।

ক্রোধে তাঁর চক্ষু ফাটে,
কড়্ কড়্ করে দাঁত ।
কাছে পেলে বুঝি দোষীর,
করবে মুণ্ডুপাত ।।

রাজা হাঁকে যাকে তাকে, বলে "বদমাশ কই ?
উচিত শিক্ষা দেবো তারে, ছেড়ে দেবার নই"  !!

সারাক্ষণ ঘিরে থাকে,
রাজার পাশে যারা ।
স্বার্থের জন্যে ডাহা মিথ্যার
বেসাত্ করে তারা ।।

স্বার্থ মগ্ন পারিষদগণ, ষড়যন্ত্রে যায় ।
সেই সূত্রে রাজবৈভব চেটে পুটে খায় ।।

খেলো রাজার অর্থ বিত্ত,
নিলো রাজার বসন ।
তলে তলে ভাঙতে থাকে 
সাধের সিংহাসন ।।

কুমন্ত্রকের কর্নমন্ত্রে, রাজা গেলো ক্ষেপে ।
হম্বিতম্বি রাজদম্ভে, মহল উঠলো কেঁপে ।।

ধরে আন্ কাটো কান, 
কোন সে বজ্জাত্ ।
জীবন জীবিকায় তার
আনো প্রত্যাঘাত ।।

রাজ্যপাটকে ছিঁবড়ে করে, ছুড়লো যারা পথে ।
আজও তারা রাজার পাশে বহাল তবিয়তে ।।

অবশেষে ধরা পড়ে,
নগন্য সে জন ।
রাজার ক্ষতি সেই জনা,
না করে কখন ।।

তবু তারা নিরন্তর, আজও ধরা খায় ।
দাগী অপরাধী সব, পার পেয়ে যায় ।।

ধৃত ব্যাক্তি অপরাধ,
কবুল করে শেষে ।
বলেছিলো  "বাস করি -
নেংটা রাজার দেশে" ।।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...