Monday, June 28, 2021

শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্বাগতম

সম্পাদকীয়

রাজ্যের গর্ব শিল্পী চিন্ময় রায়ের চলে যাওয়া সৃষ্টিশীল জগতে এক চিরস্থায়ী ক্ষত। মনন স্রোত গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছে শিল্পীর  অবদান।

এ দুর্যোগের অন্ধকারে ধারাবাহিকতার ধারা বজায় রাখতে যারা সহযোগিতা করছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমরা বিশ্বাস করি কাব্যের ছায়াপথে আমরা জীবন নিয়ে হেঁটে গিয়ে শান্তি ছিটিয়ে দেব জলের মতো জীবনে জীবনে।

নির্মম বাস্তবতার পরেও শান্তি ও সুখ বর্ষিত হোক সকলের জীবনে, এ আমাদের বড় প্রত্যাশা।


শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

সংখ্যা : জুন, ২০২১ইং

দেবব্রত চক্রবর্তী

স্পর্শহীন

একদিন ঠিকিই হারিয়ে যাবো
তোমার আমার সম্পর্ক থেকে অনেক দূরে,
একদিন ঠিকই হারিয়ে যাবো 
এই অচেনা সমুদ্দুরে।
ভোরের পাখির ডাক শোনার আগেই 
আমার নিশ্বাস থেমে যাবে 
আমিও হাজির হব, মৃত্যুর ওপারে ।
রাতের আকাশের তারা হব না আমি 
পাবে না চাঁদের গায়েও,;
তুমি যেন না পাও খুঁজে আমায়
নীল আকাশের বুকেও।

তোমার কোন স্মৃতিতেই থাকবো না আমি 
ভালোবাসা কিংবা বিরহে ;
কিছু দাগ রেখে যাবো 
খুঁজে নিও অনুভবে।

উর্মি সাহা

পারদের ব্যালেন্স
 
জীবনের সুত্রে (a+b)² বলে কিছু নেই।
আবার H2SO4 বা CFC এরও কোনো প্রভাব নেই।
জীবনের সূত্র সৎ নীতি,মানবিকতা।
মানুষকে ভাঙ্গলে মান আর হুশ।
যারা মানব প্রাণের কোড বদলে-
নতুনত্বের শাসনে অনুপ্রাণিত।
তারা ব্যস্ত সুখ-দুঃখের মাত্রার ক্যালকুলেশনে,
আনন্দ-বেদনা,প্রেম-বিরহে ও 
জীবনের নেগেটিভ অংশ মুছতে-
অগ্রগামী অগ্রগতিময় বৈজ্ঞানিক হোমোস্যাপিয়ান্স।
কিন্তু,,,,;
কিন্তু সময়কে যেমন মুঠোয় বাঁধা সম্ভব নয়।
সম্ভব নয়, পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ করা।
অসম্ভব; নদীকে স্থির করা,
অসম্ভব; প্রেমিকের প্রেম আবেদনে হস্তক্ষেপ,
অসাধ্য, জীবনের জোয়ার-ভাঁটায় চাবি ঘোরানো।
তেমনই;
মানবের বাহ্যিক সত্ত্বার ব্যালেন্স, জীবনের স্রোতেই বইবে।
স্রোতের বিপরীতে তো ক্যামিষ্ট্রির পারদের উত্থান পতনও হয় না।
জীবনের প্রতিটি মুহুর্ত বালুকণার মত, ডিসব্যালেন্স।
কেননা, জীবনের চালিকা শক্তি নিখুঁত জীবন-ই।

রাহুল সাহা

বাস্তবতা

ভগবান তুমি পবিত্রতা খুঁজছো 
মানুষের মাঝে ছদ্মবেশে । 
কিন্তু তুমি যে পাবে না কিছুই
ভন্ড অহংকারী মানুষের দেশে ।

পবিত্রতা খোঁজার জন্য তুমি
মানুষ রূপ নিয়ে করছো ভিক্ষা । 
যে দেশে সীতার পবিত্রতার জন্য 
দিতে হয়েছিল অগ্নিপরীক্ষা ।।

কি লাভ মাথায় বড়ো মূকুট লাগিয়ে 
পরিধান করে শত শত রত্ন । 
পবিত্রতা তো রাবনই জানে মনে হয় 
না ছুয়ে তাকে করেছে সে যত্ন  ।
 
শুধুমাত্র অসুর বংশের ছিল বলে
রাবন ছিল একটা খারাপ নাম । 
নিজের স্ত্রীকে অগ্নিতে পাঠিয়েছে
তাকে বলি আবার ভগবান শ্রী রাম ।
 
চৌদ্দ বছর বনবাস করে আসার পর 
পাঠিয়ে দিলেন আবার বনে । 
ঈশ্বর, তুমি কিছুই পাবে এখানে
মৌলিনতা আর সন্দেহ তো
ছিল রামের মনে  ।

বর্ষা দে

কৃষক বন্ধু

শ্রাবণে ঝড় ঝড় বৃষ্টি নামে,
বর্ষার আগমনে।
কৃষক বন্ধু মাঠে যায়,
মুখে হাসি,বুক ভরা আশ্বাসে।
ফসল হবে,এবার ভেবে
লাঙল টানে ঘাম ঝরিয়ে আপ্রাণে।
সবাই যখন ঘুমন্ত চোখে
কৃষক তখন ক্ষেতের বুকে ঘাম ঝরিয়ে ফসল কাটে।


সুধীর দাস

সাহিত্যে আগমন
                                
আমরা কাঁচা,
হয়নি এখনও পরিপক্ক,
সবেমাত্র হাতে কড়ি।

ভুল হলে মাফ করো,
ভালোবেসে শুধরে দাও।

আমরা সাহিত্য বিষয়ে অজ্ঞ,
সাহিত্যে বিষারদ নই,
তবুও সাহিত্যই আমাদের অহংকার।
আমরা নতুন, আমরা নবীন,
আমরাও স্বাধীন।
সাহিত্যের দ্বারে রেখেছি পা 
হবো ইচ্ছে একদিন সাহিত্যের সেনা।

চাই সান্নিধ্য গুরজনের, চাই সান্নিন্য বিজ্ঞের,
চাই সান্নিধ্য সাহিত্য সম্রাটের।

পান্থ দাস

মনের এক কোনে

কতো কথা আছে জমানো
মনের এক কোনে,
বলবো বলে রয়ে যায়
সব গোপনে ৷

হ্যাঁ, বলার জন্য 
মন হয় ব্যাকুল
কারণ, সব কথা বলা যায় না
একা সনে ৷

শোনা কথায় হাঁসি
বাস্তবে থাকি চুপ,
নিস্তেজ রয়ে যাই
যখন দেখি দুই চোখ ৷

বাধা যদি না আসে
বাঁচার সুখ কিসে ?
সংকীর্ণ পথে হেঁটে
প্রতিষ্ঠিত হবে বিশে ৷

অতনু রায় চৌধুুরী

বিশ্বাসের মর্যাদা

যে শহরে অনুভূতির চেয়ে মুখোশের দাম বেশি সেই শহরে বহু মানুষ নিজের মত করে নিজেকে গুছিয়ে রেখে একলা থাকতে চেষ্টা করে বারবার। নিজের মনের ভেতরে হাজারো যন্ত্রণা বেঁধে মুখে হাসির প্রলেপ  রেখে চলতে থাকে নিত্য জীবনের পথে। এরা একটা বন্ধু খুঁজে দিনের শেষে যার সাথে নিজের অনুভূতির কথা সহজ ভাবে প্রকাশ করবে। কিন্তু যখন বন্ধু খোঁজার সন্ধানে এরা বারবার ঠকে যায়। তখন এরা ভেতর থেকে আর ও ভেঙ্গে পরে ইকটু ইকটু করে। 

আসলে এই শহরে সবাই বিশ্বাসের মর্যাদা দিতে পারে না। সুযোগ বুঝে বিশ্বাসঘাতকের রুপ নেয়  বহুজন বহু রকম ভাবে। তবে এটাও ঠিক যে হাতের পাঁচটি আঙ্গুল যেমন সমান হয় না তেমন  সবার মানসিকতা এক হয় না। খারাপ বিশ্বাসঘাতকের পাশাপাশি ভালো মনের বিশ্বাসীও বহুজন রয়েছে। শুধু প্রতিটি মানুষকে সঠিক ভাবে চিনতে পারাটায় একটা কঠিন কাজ। কারন আমরা কেউ ই মানুষের মনের ভেতরের ভাবনা চিন্তাগুলো এত সহজে বুঝতে পারি না। 

তবে তাই বলে আমরা কারোর সাথে মেলামেশা করব না কারোর সাথে কথা বলব না এটা ভাবাও একরকম বোকামী কিংবা ভুল ধারনা । কেন না আমরা সকলেই সমাজবদ্ধ জীব প্রতিমুহূর্তে বিভিন্ন কারনে কখনো না কখনো আমরা একে অপরের উপর নির্ভরশীল হতে হয়। 

বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে মনের আঘাত আসবেই সেই মানসিকতা নিয়ে যে বা যারা জীবন পথে চলে তারাই হয়তো জীবনের কঠিন সময়গুলোতে ভেঙ্গে পরে না সহজে ।

তনুশ্রী দাস

অভিশপ্ত পৃথিবী

বন্ধু যখন আমায় ডেকে,
দুঃখ করে বলে, 
একটি গাছ লাগাও না, 
আমায় ভালোবেসে, 

তখন আমি বড্ড রেগে, 
বলি বন্ধুকে, 
কাজ নাই আর 
মরতে যাবো তোমায় ভালোবেসে,

বন্ধু আমার নরপিশাচ 
জানতাম   না   আগে । 
বিপদে বন্ধুর পরিচয় পেয়ে , 
বড্ড   মর্মে   লাগে, 

এখন যখন মহামারী 
বন্ধুর প্রতি খেয়াল ভারি , 
গাছ লাগাচ্ছো জল দিচ্ছো, 
নিজের প্রান ভিক্ষা চাইছো।

এতই যদি প্রানের ভয়, 
গাছ লাগালে কি ক্ষতি হয়, 
 হাহাকারের দুনিয়ায়, 
অক্সিজেন এর অভাব প্রায়। 

অক্সিজেনপ্লান্ট বসিয়ে কিহবে
গাছ ছাড়া কি পৃথিবী বাঁচবে? 
তোমাদের দিলাম  প্রান  ভিক্ষা
 তোমরা আমার করো রক্ষা। 

সংগ্রামের এই দুনিয়ায়,
মৃত্যুমিছিলের অভাব নাই
মহামারীতে ঔষুধ অল্প 
পৃথিবী সুস্থে গাছ স্বল্প, 

অক্সিজেন অার অক্সিজেন করছো, 
গাছের কি হাল দেখছো, 
এই দুর্দিন থেকে রক্ষা পেতে,
গাছ লাগাও দুই  হাতে। 

মনচলি চক্রবর্তী

অট্টালিকায় নেই প্রাণ 

অট্টালিকার সৌন্দর্যের মাঝে 
ছোট্ট  নদী
নদীতে শুধুই পাথর আর
নুড়ি
রয়েছে সেজেগুজে 
ছোট্ট ছোট্ট ঘর 
আছে ঘরে কৃত্রিম 
জলসাগর
কোন ঘরে সবুজ পাহাড়,গাছ,
আর  মনুষ্য সৃষ্ট  ঘাস
ঘরের মাঝের  ছোট্ট কাচের  পুকুরে
 লাল নীল হলুদ মাছেরা খেলা করে
কৃত্রিম আলোকে  জ্বলে উঠে 
বাতি রাশি রাশি 
নেই  ঘরে চাঁদের 
 উজ্জ্বল হাসি
রাতে ঘরে নেমে আসে
গভীর আঁধার 
অট্টালিকার সুসজ্জিত ঘরে
থেকেও নেই প্রকৃত আলোর ঝার
মনুষ্য জীবন  অট্টালিকায়
হাঁপিয়ে উঠে, চায়  ত্রাণ
পায়না  সাজানো জীবনের মাঝে  ওরা
সবুজ প্রকৃতি আর  প্রাণ।

দিপিকা রায়

প্রত্যাশাকাব্য

বড্ড ইচ্ছে করে
তোমার সাথে হাঁটতে। 
ভেজা ঘাসগুলোয় দিশেহারা পথে, 
তোমার হাতটি ধরে হাঁটতে। 
চলন্ত পথে ছিড়ে যাওয়া আমার নপূর, 
তুমি আবার পড়িয়ে দিতে! 

বড্ড ইচ্ছে করে
তোমার পাশে বসে, কথা বলতে
মনের গহীনে অগোছালো কথাগুলো
তোমার কন্ঠে গুছিয়ে দিতে। 
সারাদিন ব্যাস্ততার ক্লান্তি
মুছিয়ে  দিতে, তোমার কোলে মাথা রাখতে। 

বড্ড ইচ্ছে করে
তোমার সাথে হাসতে। 
চুমুক দেওয়া সন্ধ্যার চায়ের কাপটি, 
তুমি বদলে দিতে। 
সিরিয়াল আর খেলার মাঝে, 
রিমোট নিয়ে মিষ্টি ঝগড়া করতে। 

বড্ড ইচ্ছে করে
তোমায় ভালোবাসতে। 
নিশিতের  অন্ধকারে চন্দ্রিমার আলোয় 
বাঁধা আমার চুল গুলো, 
যদি তুমি খুলে দিতে। 
খোলা আকাশের নিচে
আমার হাত ধরে, 
তোমার ঠোঁটের স্পর্শ
রোমান্টিকতার গভীর সাগরে, 
ভাসিয়ে নিয়ে যেতে। 

সুস্মিতা মহাজন

লড়াই 

একটা সময় পর ভালোবাসা
আর ব্যস্ততার লড়াই চলে, 
ভালোবাসা বারবার হেরে যায়
ব্যস্ততার সূক্ষ্ম অভিনয়ের কাছে।
তৈরি হয় এক অদেখা সুতোর
মায়ায় ঘেরা বিচ্ছেদ, 
ভালোবাসা তবু লড়াই করে 
যদি ব্যস্ততাকে হারাতে পারে!
কখনো কখনো ফিরতি পথে ব্যস্ততার অভিনয় বেমানান হয় বাস্তবতায়,
আবার কখনো কখনো চলে সেই একি  বিমুখতা। 
তবু আপ্রাণ চেষ্টা করে চলে ভালোবাসা, 
যদি কখনো তার অদেখা রং বদলে!

সংগীত শীল

মুক্ত পশু বন্দি মানুষ


সুজলা সুফলা শস্য শ্যামল 
নেই সবুজের শান্তি,
দূষণে নিমজ্জিত শহর
কোথায় পাবো কোমল স্নিগ্ধ প্রকৃতি? 

যেই গাছ প্রাণের স্পন্দন 
বাঁচার অক্সিজেন
ধ্বংসের প্রতিযোগিতায় নেমে;
হাহাকার অসহায় জীবন।

কিনতে হচ্ছে লাখ টাকায়
ব্যবসা হচ্ছে খুব,
অবাদযোগ্য জমি কমিয়ে
পেতে চাইছিলো সুখ।

বন কেটে গড়ছে কারখানা
কমেছে পশুপাখি,
দূর্যোগে আজ স্বীকার আমরা
বিবেকহীন অবোধ মনুষ্য জাতি!

কাজী নিনারা বেগম

কিতা ব্যেমার

কিতা ব্যেমার আইলা রেব দুনিয়ার মাটি! 
হকল মরিয়া ছাপ।। 
মায়ে ছৈরানা পূয়ারে,,
বাপে ছৈরানা মাইরে,,
বৈনে ছৈরানা ভাইরে,,
খালিকৈন রেব খালি দূরই থাকতা।।
মর মাথা বায় কোনতা হামার না ? 
খালি কৈন হাত দৈতাম সাদা টে্ল্কা পানি দি! 
আর গরুর খোপা লাখান, থুতাত লাগাইতাম,,
অতা কিতা বেমার? 
মানুষ ঘর থাকতা,,
আর হায়মান জীব হকলে ঘরবার থাকতা।।
কোনতা অইতনা মর উপরেদি মৈ জারা মূই কিতা কৈতাম! 
হকলে খালি ঠে্ঙগে উপরে ঠেঙগ তূলি কারফিউ বাড়ারা।।
অটা কেনে মাতৈননা গাছ কাটতানা, পুরকি মাটি দি বন করতনা ,গাছ লাগাইতা।।
গাছ লাগাইলে গাছ তনে একতা পাইন , মনত অয় অক্সিজেন,,
আর অতাদি দুনিয়ার মাইনসে বাছিবায়।। 
আপনাইনতে তেরে কৈয়ার মিনতাইয়া গাছ লাগাইন,,
আর হকলের জান বাচাইন।।

কৃষাণ নমঃ

প্রার্থনা
        
নতুন বছরের নতুন আশা
ভুলতে কী পারি সে কথা।
এ শোনা দেখি সুখের দিন
রেখোনা মনে কোন ব্যাথা। 
নতুন বছর নতুন স্বপ্ন দেখি
এইতো আমার একটু আশা।
আছি থাকবো তোমার পাশে
রইলো আমার ভালোবাসা।
নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানাই
ভালো হোক মনোকামনা। 
তোমার সব আশা পূরণ হোক
এইতো আমার মনের প্রার্থনা ।

সায়ন পাল

সম্পর্ক বিচিত্রময়

বিচিত্রময় বিচিত্রময়
সম্পর্ক প্রচন্ড বিচিত্রময়,
দুনিয়াতে কত সম্পর্ক ক্ষনেকেই জোড়া লাগে
ক্ষনিকেই আবার তা ভেঙে যায়!
কেবা জানে কার মনের কথা
যখন দুজন একই সম্পর্কের গীত গায়!!

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে
বয়স প্রদীপ জ্বলতে থাকে,
পরিচয় হয়ে যায় উভয়ে উভয়ে
ছেড়ে থাকে না কেহ কাহাকে।

উৎসব প্রিয় দুনিয়ায়
যখনই কোনো কোকিল ময়না ডেকে উঠে,
আশ্বিনে শিউলি গাছ সেজে ওঠে
আনন্দ পড়ে যায় মাঠে ঘাট গোঠে।

তখনই সম্পর্ক দৃঢ় হয়
প্রেমপ্রীতি বেড়ে যায়,
আনন্দের দোলায় দুলে
উৎসবে বিভোর হয়ে যায়।

চির অস্থির পৃথিবী শান্ত বিষয়ে বিমুখ
দেখে বিরক্তি ময় চোখে ,
সম্পর্কের বাঁধন ছিন্ন করে
বিচ্ছেদ করিয়ে দেয় উভয়কে।

সম্পর্ক স্থির নয়
ইহা প্রচন্ড গতিময়,
অট্টহাসিতে আকাশ ভেঙে পড়ে
হ্যা  সম্পর্ক প্রচন্ড বিচিত্রময়।।

সুপর্না কর

বৃক্ষ

বৃক্ষ তোমার এই কি মায়া?
সবাইকে দাও শান্ত ছায়া।

বৃক্ষ তুমি না থাকলে থাকবেনা
যে জীবন।
ধ্বংস করে তোমায় মানব ডাকছে নিজের মরণ।।

তোমার ছায়ায় ক্লান্তি মেটে,
তবু মানুষ তোমায় কাটে।

হে বৃক্ষ তোমার জন্য‌ই ফেলছে সবাই নিঃশ্বাস।
তুমি আছো বলেই আছি, এটাই মোদের বিশ্বাস।।

বৃক্ষ তুমি ফুলের শোভায় প্রস্ফুটিত হলে,
ভ্রমর তখন মধু খেতে আসবে দলে দলে।

তোমার ফলের মিষ্টতা যে মেটায় সবার ক্ষুধা।
বৃক্ষ তোমার সবুজ রূপে আছে অমৃত সুধা।।

বৃক্ষ তোমার সবুজ ডালে বাঁধলো পাখি বাসা।
ঐ পাখিরাই বুঝে শুধু প্রকৃতির এই ভাষা।।

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী

শিকড়

সবুজ কচি ঘাস উগড়ে দিয়েছে শুকনো পাতার স্তুপ।
খোলা মাঠ, খড়কুটো ঘর,
চারপাশে কেবলই নিঃসঙ্গতার চাষ।
সন্ধানী হিংস্র উইগুলো চাইছে দেহের শেষটাকেও!
 পরিযায়ীদের ভাঙছে ঘর,
ভাঙছে মান,
রাজপাট ডুবেছে আদ্যপ্রান্ত।
তবু কি বোঝে, পরিণতি?
আজকাল কখনো-সখনো আসি
বাঁধন কিংবা শিকড়ের ভালোবাসায়।
খুঁজি নবান্নের ওই সুর, ঘরের মেঝে
উঠোন জুড়ে সারাদিন হত প্রজাপতি আলপনা।
মা,কাকিমা, সবাই 
সঙ্গে আমিও।
হঠাৎই কেমন ঝাপসা হয়েছে সব-
ঝাপসা হয়েছে প্রলেপ,
আমড়া কিংবা রঙ্গন টাও ভুলে গেছে তার জন্ম।
 স্নানের ঘর,বাগান জুড়ে একরাশ  অবাধ্যতা,
তবু যে মাটির গন্ধ ভালোবাসি।
হয়তো তাই কখনো-সখনো আসি,
বাঁধন কিংবা শিকড়ের ভালোবাসায়।।

গৌতম মজুমদার

বাঘের জয়     

বাঘেরা সব গর্তে ছিল
বের করতো না দাঁত,
ধূর্ত বানর মারতো খোঁচা
ঢুকিয়ে দিয়ে হাত।

দু একটা বাঘ বের হলেও
ভেচকি দিতো বানর ,
সাথে তাঁদের বাচ্ছা কাচ্ছারা
বসিয়ে দিতো কামড়।

বানরের ভয়ে গর্তে ঢুকে
সব বনেরই বাঘ,
এভাবে যে যায়না চলা
সবাইর হলো রাগ।

বাঘেরা সব একজোট হয়ে
করলো সেদিন মিটিং,
ধরবে তারা এক এক করে
বানর গুলোর চিটিং ।

এবার তারা বেরিয়ে পড়ে
যার যার এলাকাতে,
বানরদের এই ভেলকি দেখে
ভয় পায়না তাতে।

পাল্টা ধরে বাঘেরা এখন
বানর পালায় ভয়ে,
শান্তি এলো বনে আবার
বীর বাঘেদের জয়ে ।

পূজা মজুমদার

প্রতিঘাতে জীবন 

কষ্টের নোনাজল চোখ বেয়ে পড়ে,
স্মৃতিরা সব আবছা হয়ে।

এক পরিচিত ডাক আর পরেনা।
সময় বয়ে যায়।

তবুও যে সে ফিরে আসে না।
দূরে তাকিয়ে আছি

একটু দেখা বা স্পর্শ পাবো বলে। 
সেতো ফিরে আসে না।


পিয়াল দেবনাথ

অক্ষয় সৌন্দর্য

আমরা যাকে সৌন্দর্য বলি তা একমাত্র দূর থেকেই শ্রেষ্ঠ ভাবে উপভোগ করা যায়। সেই সৌন্দর্যের প্রতিমূর্তির দিকে দৃষ্টিপাত করা কালীন এক মুহূর্তও তাকে প্রাপ্ত করার কথা ভেবে অপব্যয় করতে চাইনা। শুধু তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে চাই আর বার বার অভিভূত হতে চাই। এই সৌন্দর্য কখনো ক্ষয় হয়না। প্রাপ্ত করার ইচ্ছার সাথে মনে আবির্ভাব হয় কৃত্রিমতা ও ভন্ড ভাবের। 
গোধূলি বেলায় যখন লাল টক টকে সূর্য গাছের ফাঁক দিয়ে দেখা যায়,তার এক অপরূপ সৌন্দর্য। ঐ সূর্যকে কখনো পাওয়ার ইচ্ছা ও করিনি, ছুঁয়ে দেখতে ও চাইনি। দূর থেকে ঐ সৌন্দর্য উপভোগ করার মধ্যে এক অদ্ভুত তৃপ্তি আছে বটে। সূর্যের যত নিকট যাওয়ার চেষ্টা করবো ততই সেই সৌন্দর্য হয়ে উঠবে তিক্ত, ত্বকে শুরু হবে জ্বালা। সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা ও তখন কিছুটা পাল্টে যাবে হয়ত। নিকটতার থেকেই তৈরি হয় অপূর্ণতার। সৌন্দর্য অনুভব করা একটি সাধনা, আর তাতে অপূর্ণতার কোনো স্থান নেই।

মোঃ রুবেল

সুরা
           
প্রেমিক হতে গেলে...
একটা সুরা পান করতে হয়।
যার তীব্র নেশার ঘোর কাটেনা আমৃত্যু।
সব গন্ডী ছাড়িয়ে মগজ থেকে মনে ছুঁইছুঁই।
এই নেশা মানুষকে বাঁচায়,মারে না।
এই নেশা ভালোবাসা।
ডুবে থাকলে জীবন রঙিন,
আর ফুরিয়ে গেলেই ফেকাসে।

পঙ্কজ কান্তি মালাকার

মাভৈঃ স্বদেশ,মাভৈঃ

মোহাচ্ছন্ন দিন গিয়ে
মরণাচ্ছন্ন দিন যাপনা,
আত্মরক্ষার হাতিয়ার যোগাড়ে
মনোযোগ ছিল না।

হঠাৎ মরণের সাথে যুদ্ধে
নাস্তানাবুদ আস্তানা,
প্রিয়হারানো ব্যথা তবু
মানবতা বাঁচানোর উদ্দীপনা।

অভিনব যুদ্ধে সম্ভাব্য কৌশলে
উৎসাহে করবো সমাধান,
মৃত্যুভয়ে জীবনের জয় -নিশ্চয়
করতে ঐক্য মূর্তিমান।

মাভৈঃ স্বদেশ, মাভৈঃ!
সোৎসাহে সমাধানে ঐক্য মূর্তিমান।

প্রণব দাস

আনসার্টেন ফিউচার
              

 প্রতিটি রাতজাগা মধ্যরাতে আমি নিজেকে সন্দেহ করি,
প্রতিটি অদ্ভুত প্রাতে আমি নিজেকে দেখে অবাক হই;
নিঃশব্দে আরশির দেয়াল ভাঙ্গা বুক চেয়ে ভাবি
আমি কি আমাকে হারিয়েছি কোন এক বিষাক্ত ইদারায়? 
নাকি বন্দি হয়ে চোয়াল ফাটার ফন্দি খুঁজি কারো ইশারায়?

জানি সিলিং এর কাঁধে চোখ বেয়ে ওঠে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের,
আজ কবিতারা আড়ি কাটে আর মুখ বেঁকে যায় শব্দের।
হইনি আমি ছন্নছাড়া,হইনি আমি ছন্দহারা 
ভাঙলো তবে শক্ত হাড়,ভাঙলো তবে এই পাহাড়
চাবুকটাও শ্রান্ত আজ,তারও নেই একটু ধার।

এখনো আমার বিষণ্ন বর্ষায়,ক্লান্ত অমাবস্যায় চাঁদ উঠে রোজ,
আজও হন্যে হয়ে তন্নতন্ন করে নেই ভালোবাসার খোঁজ,
আমিতো শুধু নীরব হয়ে চাই একটু মাটির ঘ্রাণ,
সুপ্ত আশায় কপোল ভেজে আর অদৃশ্যে জাগে প্রাণ।

মিঠুন দেবনাথ

মুন্নি আমার নাম 

সেদিন বিকেলে...
অফিস থেকে ফেরার পথে,
দেখলাম অল্প বয়সী একটা মেয়ে।
দাড়িয়ে আছে রাস্তার মোরের দোকান টার সাথে। 

একটা জীর্ন শীর্ন জামা পরনে তার,
মুখখনা খুব শুকনো চোখে যেন হাহাকার ।

ডাকদিয়ে জিজ্ঞাসিলাম কি নাম তোমার,
সে উত্তর দিয়ে বলল মুন্নি নাম আমার।।

জিজ্ঞাসিলাম কেন দাড়িয়ে আছ এখানে,
বলল সারাদিন না খেয়ে আছি একটু খাবারের টানে।

কথা শুনে ধুপ ধুপ করে বুক যে উঠল কেপে।
অনেক কষ্টে চোখের জল ধরে রাখলাম চেপে।।

জিজ্ঞাসিলাম কোথায় বাড়ি 
কোথায় তোমার ঘর,
বলল সে,এক মা বাদে কেহ ছিল না তার।।
দুনিয়ায় এখন সকলেই যে পর।

মুন্নি বলে মা তাকে ডাকত আদর করে।
কখনো লাগতে দেয়নি ব‍্যাথা,
গুছিয়ে রাখত যতন করে।

এই কিছু দিন হল,
আমাকে একাকি করে মা ও চলে গেল।
কোন এক অজানা মরন ব‍্যাধি হয়ে,
দুনিয়ায় একা হয়ে আমি গেলাম রয়ে।

 বলেছিলাম তার সাথে আমাকে ও নিয়ে যেতে,
আমাকে একা রেখে গেলে কেহ দেবেনা খেতে ।

সকলের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি কত।
রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে বাবু কত শত।।
কেহই দেয়নি একটু খাবার,
কারো মনে জাগেনি একটু দয়ার।

শরীরে বেড়েগেল অস্থিরতা শুনে তার কথা।
চোখের জলে ভাঙ্গল যে বাঁধ,
মন ওঠল কেঁদে কোন এক অজানা ব‍্যাথা।

জড়িয়ে ধরে বুকে টেনে নিলাম তাকে।
বললাম তোর মত হাজার হাজার মুন্নি,
এদেশেতে রাতের পর রাত অভূক্ত থাকে।।

সৈকত মজুমদার

অধরা ভালোবাসা 

আমার প্রেমের কবিতার দেহজুড়ে
আজ শুধু তোমারই উপস্থিতি 

তোমার কোমল হৃদয় ছুঁয়ে
আর গায়ের মিষ্টি গন্ধ মেখে
দক্ষিণী চঞ্চল বাতাস যেন-
ফেনী নদীর নীরব স্রোতে ভেসে
আমার ক্লান্তিহীন দুচোখে আসে
এক নতুন ভোরে স্বপ্ন সাজিয়ে 

আলমগীর কবীর

লকডাউন


লকডাউনের নিস্তব্ধতায় শুধু হাহাকার আর আর্তনাদের শব্দ 
একদিকে সাধারণ মানুষ আরেকদিকে অসহায় বেকারত্বের!
কখনো ভাত নেই, কখনোবা কাজ নেই, ভিক্ষে করার মতোও কোনো উপায় নেই!
ভিক্ষে করতে হলেও, পরিস্থিতির মোকাবিলায় ক্ষমতা রাখতে হবে
দেহে থাকতে হবে, লাঠির আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা।
আর ভিক্ষে পাওয়ার জন্য, মানুষের ঘরেও থাকতে হবে উদ্বৃও শস্যদানা
আজ কিছুই আর রইলোনা, যা ছিলো সবই শেষ হয়ে গেলো
এখন পড়ে রইলো শুধু দেহখানা, যার মধ্যে প্রাণটা ছাড়া আর কিছুই নেই!

অনির্বান রায় গুপ্ত

অসমাপ্ত লেখা 

বারবার ফিরতে পারি, 
অজানা অচেনা নদীর পাড়.. 
ভালোবাসাতেই  রোজ আড়ি, 
কল্পনায় হাজার সমুদ্র পারাপার.. 
তুমি বলেছো, আমি মিথ্যা, সত্যের সংজ্ঞা জানি না, 
তবুও যে আমি নিরুপায়, কোনো বাধা মানি না.. 
হাজার শব্দের অভিধান বেমানান ছন্দের প্রভাব, 
সংলাপে অশ্রুও শুকিয়ে যায়, বেশ তো  অনুভূতির অভাব..
সত্যি মিথ্যার কুরুক্ষেত্রে ফলাফলের দিবাস্বপ্ন, 
কে হাসে আর কেই বা কাঁদে হাহাকার ছড়িয়ে পরে ওই সুদূরপ্রসারী নীল দিগন্ত.. 
যে ঝড় আজ বইছে বেশ স্বর্গ মর্ত পাতাল জুড়ে, 
শোষিত ক্রীতদাসেরও রূপ বদলায়, ভালোবাসে সেও প্রাণ ভরে.. 
নিঃসঙ্গতার প্রতিদান প্রতিবাদের কালপুরুষ, 
দিনের আলোও মিশছে শেষে অন্ধকারের বন্দিরাও যেন বেহুঁশ. 
শুধু প্রতীক্ষার বেলাগাম হাতছানি, নিস্তব্ধতার পরিহাস,, 
অপেক্ষার বুঝি অবসান সৌরভের সুবাস.. 
আমি তবু অপেক্ষায় শুধু তোমারই জন্যে, 
রোজকারের ক্লান্তিহীন প্রেমের অরণ্যে.. 
নিস্পলক শুন্যতা বিরাজমান মোর............ 
কলমের কালি বুঝি শেষ... 
লেখাটা তাই আজ হলো অসমাপ্ত

দেবাশীষ দেবনাথ

কোভিড মৃত্যুর ভয়ে 


কিছুক্ষণের জন্য হলেও আমার কাছে থেকো, 
আমায় ছেড়ে যাবে না কোথাও এটা মনেরেখো ।
দুহাতে তুমি গ্লাভস পড়ে নাও, 
মুখটি তুমি মাস্কে ঢেকে নাও ,
ডাক্তার-নার্স যদি যায় চলে যাক,
তুমি পাশে বসে থেকো ।
আমায় ছেড়ে যাবে না কোথাও এটা মনেরেখো ।
চোখ গুলো যদি আমার আর না নড়ে, 
শ্বাস যদি আমার নাই বা ফিরে, 
ওরা যদি আমাকে পলিথিনে মোড়ে, 
তুমি বুকে হাতটা রেখো ।
আমায় ছেড়ে যাবে না কোথাও এটা মনেরেখো ।
আত্মীয় স্বজন যদি কেউ না আসে, 
শ্মশানে যদি কেউ থাকে না পাশে, 
যতই দেরি হোক্ না সেখানে, 
তুমি পাশে বসে থেকো ।
আমায় ছেড়ে যাবে না কোথাও এটা মনেরেখো ।
ফলে দিয়ো না আমায় গঙ্গা র জলে, 
রেখে দিয়ো না আমায় কোন জঙ্গলে, 
ঢেকে দিয়ো আমায় মাটির তলে, 
তার পর চলে যেয়, তার পর চলে যেও....

অভিজিৎ রায়

সত্যিই পৃথিবী কি ধ্বংসের মুখে
                             
ছোট বেলার বলতো সবাই 
পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।
এখন দেখি করোনা, আম্ফান,
 ইয়াসের তাণ্ডবে গোটা পৃথিবী কাপে।।

কখনো শুনতাম বড় এক গোলাকার পাথর আঁচড়ে পড়বে পৃথিবীতে।
এখন দেখি মানুষের হাজারো লাশ 
ভাসছে গঙ্গা নদীতে।।

ছোট বেলায় দেখতে পেতাম
 গরুর মুখে পাড়াতো কামড়।
এখন দেখছি বাঁচার তাগিদে
 সবাই মুখে পড়ছে নানা কাপড়।।

কখনো বা ভাইরাস হামলায় কাঁপছে গোটা বিশ্ব।
কোথাও অক্সিজেনের অভাবে হচ্ছে সবাই নিঃস্ব।।

সৃষ্টির যেমন ধ্বংস আছে সেটা নিতান্তই জানা সাবার।
কেন জানি মনে হচ্ছে গোটা বিশ্ব থমকে আছে হচ্ছে অন্ধকার।।

 গড, আল্লাহ, ভগবান যারা বিশ্বাস করতো না আজ তাদের দেখছি মন্দির মসজিদে।
প্রকৃতির তাণ্ডবে গোটা বিশ্বের মানুষ
আঁচড়ে পড়ছে নানাহ বড় বিপদে।।

 সত্যিই প্রকৃতির তাণ্ডবে হারিয়ে যাচ্ছি মোরা।
এইভাবে যদি চলতে থাকে দুঃখ মোদের জীবন ভরা।।

দুলাল চক্রবর্ত্তী

স্বীকৃতি

পদ্মের জন্ম পাঁকে।
তার রূপ, তার সৌন্দর্য্য
কেড়ে নেয় আমাদের মন।
ওর মৃণালে কাঁটা থাকে,
তাও সয়ে নিয়ে আমরা ওকে
সযতনে তুলে নিই হাতে
পরম উপলব্ধিতে।

আমাদের জন্মের পরিচয়
সেতো একটা বিশেষণ মাত্র।

কাজের মাঝে বেঁচে থাকে
মানুষের নাম।
কাজের মাঝেই আছে
পরম স্বীকৃতি।
কীর্তিটাকে বুকে নিয়ে
স্থান পায় দীর্ঘকাল
মানুষের মনে।

ওঁরা তাই চিরস্মরণীয়,
চির অমর থাকে
দেবতার আসনে।

অভীককুমার দে

চিরকুট 

মহামারী। মানুষ দেখলেই মানুষের ভয়। বহুদিন পথে নামেনি কেউ। ক্যালেন্ডার থেকে অনির্দিষ্ট বছর এবং তারিখ অজান্তেই হারিয়ে গেছে। 

সূর্যের তেজ এখন প্রখর। নদীগুলি শুকিয়ে কঙ্কাল। মাটি শরীরে জীবাশ্মের রাজত্ব। দৃষ্টির সীমানায় যা কিছু চোখে পড়ে সবই খাবার, জীবিত কিংবা মৃত, তাজা হোক বা পচা। প্রথম প্রথম এক বাড়ির চোখ অন্য বাড়ির উপর। কেউ বেরিয়ে এলে মুহূর্তেই হারিয়ে গেছে। কোনো এক বাড়ির সদস্য চুপিসারে মুছে নিয়েছিল ঠোঁট। তারপর, ধীরে ধীরে বাড়ির ভেতর, ঘরের দরজাও বন্ধ হয়ে গেছে। পরিষেবা বলতে, বাতাসে সামান্য অক্সিজেন, তা-ও অস্থায়ী। 

মানুষ বলতে, কারোর ভেতরে কোনও উপাদান আর অবশিষ্ট নেই। আরো একদিন বেঁচে থাকার দুঃসাহস করে ঘর থেকে বেরিয়ে আসতেই ঝাঁপিয়ে পড়ছে শিকারী। এক ঝটকায় কেড়ে নিচ্ছে হৃৎপিণ্ড। টেনে ছিঁড়ে ঢোক গিলছে। কত দিনের ক্ষুধা কে জানে ! চিবোতে চিবোতেই তেষ্টা পেয়ে যাচ্ছে। রক্তই জল। শিরায় ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে দ্বিধা নেই।

শকুনের মতোই ওত পেতে আছে চোখ। খাবার খুঁজতে খুঁজতে শিকারীও খাবার হয়ে যাচ্ছে একসময়। কোথাও কোনও শব্দ নেই। কোনো কোনো ঘরে গুনগুন শোনা গেলেও, কিছুদিন পর সব চুপ। গ্রাম কিংবা শহর, পৃথিবীর ঘরে ঘরে, মানুষ পচা গন্ধে ভারি হয়ে গেছে বাতাস। স্থির চিত্র। 

পায়ের ছাপ কমে এসেছে পথে। শেষদিন, সর্বশেষ উপোসী শকুনটিকে মরে যেতে দেখে প্রাণশূন্য পৃথিবী ভীষণ কেঁপে উঠবে। কাঁদতে কাঁদতে হারিয়ে যাবে মহাশূন্যে। এই পৃথিবী নিঃশব্দ হবার আগে অথবা শিকার হবার আগেই বাসুদেবের এই চিরকুট, রেখে গেলাম। 

মন বলে, এই পৃথিবী প্রাণের নবীকরণ জানে। অন্য কোনো আদলে আবার হয়তো জেগে উঠবে প্রাণী। আবার খোঁজ হবে। খবর হবে। গবেষণা হবে, টিকে থাকার জন্য। না হয়, আরেকটি চিরকুট আবার রেখে যাবে কেউ, পুনরাবৃত্তির আগে।

সাচীরাম মানিক

অসংখ্য লাশের স্বাক্ষী আমি

অসংখ্য লাশের ভেতর দিয়ে
টপকে টপকে হেঁটে যাচ্ছি
এগোবার রাস্তা খুঁজে পাই না,
বিশ্ববাসী আতঙ্কিত মৃত্যু পরোয়ানায়।
যেদিকে তাকাই সেদিকে শুধু লাশ ;
লাশের মিছিল এগোছে মহাশশ্মানের দিকে
কোথাও সমস্বরে হরিধ্বনি নেই
শুনশান কীট পরিহিত লাশের মিছিল।
সারি সারি লাশের মিছিল চলছে কবরস্থানে
জানাযার আর হয় না প্রয়োজন,
লাশের মিছিল এগোয় স্রোতের টানে
বিহারের-- বক্সারের গঙ্গানদীতে,
উত্তর প্রদেশের রাপ্তি নদীর লাশ ও
বয়ে চলে গভীর সমুদ্রের বুকে
টেনে হিঁচড়ে খায় কুমীর হাঙ্গরেরা
কুকুরেরাও লাশের মিছিলে থাবা বসায়।
স্বর্গ প্রাপ্তি দাতা ব্রাক্ষ্মণেরা ও আজ
করোনা ছোঁয়াছুয়ির কবলে
নিজের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া,
মৌল্লা পাদ্রিরা ও আজ তথৈবচ।
২০২০-২১ সালের করোনা মহামারীর
অসংখ্য লাশের--মিছিলের স্বাক্ষী হয়ে
এখন ও মুখ থুবরে বেঁচে আছি আমি।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...