Wednesday, May 19, 2021

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

দেশ এবং পরিস্থিতি আমাদের যা দেয়, তাকে প্রসাদ ভেবে চলে যাওয়া পথে জীবন থাকে হয়তো, বেঁচে থাকা ভিন্ন জিনিস। কবি রাহুল শীলেরা মাঝে মাঝে বেঁচে থাকার কবিতা লিখেন যৌবনীয় অনুভূতিকে। মাঝে মাঝে আমাদের পুরাতন বসতভিটের কথা মনে পড়ে। যার ফিরে আসার কথা সন্ধ্যায়, সে চলে যায় দুপুরে। এ বড় দুঃসময়ের কার্যপ্রচেষ্টা। 

মনন স্রোতের আত্মপ্রকাশের মাস মে মাস। এ মাস শ্রমিকেরও। ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও বাংলাদেশ থেকে আমাদের শব্দবন্ধুরা শ্রম দিয়ে মনন স্রোতকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, আমরা তাঁদের অভিনন্দিত করি।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাসহ
 জয় দেবনাথ
    সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

পড়ুন

অতনু রায় চৌধুরী

প্রার্থণা

তোমার মত গুছিয়ে যে বলতে পারে না কথা
দেখো গিয়ে হয়তো সে নীরবে ভীষণ ভালো আঁকে ছবিটা।
তুমি যার পোশাক দেখে করছো সমালোচনা
বিপদে সেই পাশে দাঁড়ায়, তোমার আমার থেকে ভীষণ আলাদা।
তুমি যাকে তুচ্ছ ভেবে করেছো অবহেলা
সেই একদিন মাথা তুলে দাঁড়াবে, দেখবে দুনিয়া।
যাদের দেখে তুমি বলো মানায় নি ঠিক, 
তারাই কিন্তু সম্পর্কটা টিকিয়ে রাখছে সঠিক।
সাহায্য করছে এমন ছবি দেখে যখন তুমি বলো সবকিছু লোক দেখানো নাটক, 
ওইদিকে ফুটপাতে অবহেলিত মানুষগুলো পার্থনা করে এইরকম দিন ফিরে ফিরে আসুক।

টিটু বনিক

অসীম বেদনা 

সবাই হইতো জ্বলতে পারে না 
আগুনের মতন সূর্যের মত 
হইতো কেউ একটু পুড়ে 
হইতো কেউ অনেক পুড়ে।
কেউ হইতো অন্যের জন্য দহে 
আবার অনেকে অনেক না পাওয়ায় পুড়ে
এখন মানুষ সব পাওয়ার আসক্তে দহে 
কিছুটা ঈর্ষা কিছু ব‍্যথায় আর প্রেমে পুড়ে।
কেউ হইতো জ্বলতে জানে না 
আবার হইতো জ্বলাতে ও পারে না 
তাদের সুখ অন্যের সূখে 
তারা মানুষ হয়ে মানুষের ভাবে।
তারা হইতো কাঁদতে জানে না
তারা কিছুটা জলের মত 
তাদের বেদনা বাস্পের মত
তার মেঘের মত গ্রীস্মকালে বর্ষার মত।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

বড্ড ভালোবাসি


শ্রমিক আমি,বড্ড ভালোবাসি শ্রমকে
ক্লান্তিমাখা ঘামের গন্ধে ব‍্যাকুল।
উড়ন্ত স্বপ্নের গালিচায় ঘুরছি 
সভ‍্যতার অক্ষে,আমাদের খাটুনি কেবলই
অপরের কল্পে,নিজের ঘরে শূন‍্যতা,
উনুনের হাঁড়িতে ফুটন্ত জল,জ্বলছে অনল।

অথচ, বিনিময়ে কাঁটা বিছানো পথ,
প্রতি মুহূর্তে রক্তাক্ত হৃদয়,কেড়ে নেয়
বেঁচে থাকার রসদ,সুখানুভব
অধিকারের দাবীতে পথে নামা,নিয়তি।
তবুও গর্ব আমার, শ্রমিক বটে আমি।

যে ইমারতে বসে করছো পদপৃষ্ট
তার প্রতি ইটে আছে শ্রমিকের ক্লান্তি,
যে রাজপথে পাতানো কার্পেটে হাঁটছো
ঐ পথ ভিজেছিল  নোনতা ঘামে,
অথচ শ্রমের মূল‍্যে-আত্মপরতা।

কৃষক চাষীর করুণ আর্তি দিল্লীর রাজপথে;
অথচ সুবিশাল সভ‍্যতার অগ্রনায়ক ওরাই।
অনাদর অবহেলা  নিত‍্য  সাথী।
‍গর্বে প্রফুল্লিত হৃদয়,যার ভুজে অর্পিত
সভ‍্যতার ভবিষ‍্যৎ,আমিই সেই কৃষক।
তাই ভালোবাসি ক্লান্তি মিশ্রিত ঘামের গন্ধ।

আমি মজদুর,হলধর,চামড়া পোড়া শ্রমিক,
যতই শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা পড়ুক শিরে
আমরাই গড়ি শ্রেষ্ঠত্বের ভীত,
দৃঢ় চিত্তে সভ‍্যতার রথ যুগ যুগান্তে আমরাই চলি বয়ে।

দিপিকা রায়

বন্ধু হতে চাই না 

চাই না এমন বন্ধু হতে, 
সুখের দুঃখের যমের কাঁটা
বিঁধে যাওয়া পায়ের পাতায়, 
একবিন্দু রক্তমাখা বিশ্বাসঘাতক
বন্ধু হতে চাই না আমি! 

ডানাহীন পাখি উড়েছিল
বন্ধু হতে, 
আজ বন্ধুর জগতে পরাধীন আমি। 
হেরে যাওয়া বাঁধন এক; 
জড়িত নব সম্পর্কে
বিচ্ছিন্ন পুরাতন যত, 
সজ্জ্বিত রঙিন স্বপ্নে
হৈচৈ হাজারো অলংকার। 
প্রয়োজনের সঙ্গী সাথি আমি, 
আর অপ্রয়োজনে আমি ছাড়া
জগৎ সাড়ি সাড়ি। 
স্বার্থপরতার এই নিঠুর বন্ধু
চাই না হতে আর । 

অমাবস্যার চাঁদ বন্ধু ভুবন
নিবিড় অরণ্যে কাঁকড় পথে
বন্ধু নাম। 
তিক্ত অমৃত বাঁধনহারা বন্ধু, 
বিপদে পিছপা ছিল মেরুদণ্ড। 
শুধু একাকীত্বের জগৎ সংসার, 
শরীর ছাড়া শেষ যাত্রায়
সঙ্গী হবে কে আর। 
বিশ্বাসের ভগ্ন পাঁজর বন্ধু, 
আম্লিক প্রেম ঝাঁঝালো সম্পর্কে
বন্ধু হতে চাই না!

অচেনার মুখোশ পরি, 
বিরক্তিকর ছায়া আমি। 
অযোগ্য বন্ধুত্ব আমার, 
তাইতো এমন বন্ধু হতে
 চাই না আমি।

পান্থ দাস

নব পুষ্প

নতুন দিনের নতুন অভয়
যাচ্ছে রাত কাটছে সময়,
নতুন মেঘের সোনালি আভায়
এসেছি আবার নব বৈশাখী মেলায় ৷

আম পাকে, জাম পাকে
পাকে আরো কতো রসালো ফল,
গাছে গাছে নব ডালে
ফোটে আবার নব পুষ্প দল ৷

দিনেকের সাথে
খুঁজি নতুন আশা,
চৈত্রের শেষে বছরের শুরুতে
হই সামিল উৎসবে আবার,
কবি গুরুর ভাষায় ৷

হাসান চৌধুরী

চূর্ণ কথা

১) গতায়ু 
শঙখ বাজেনি--- আজানের ধ্বনি
স্তব্ধ কবর - শ্মশান
কে যায় ওখানে নির্মোহ জ্ঞানে? 
হিন্দু না মুসলমান? 

২) অতলস্পর্শ 
চলন্ত হাওয়ায় তা দিতে দিতে 
চলমান মেয়েটি
নদীর পাড়  ভাঙা সবুজ গালিচা খসে
নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল বহমান স্রোতে 

৩) পোড়াগন্ধে ভালবাসা 
ভালবাসা পুড়িয়ে দিলে যে গন্ধ 
তাতেই অনেকের ঈপ্সিত আনন্দ 
তীর নেই যাযাবর ভেসে যায়
কখনও জিজ্ঞাসা করিনা
   ---" তোর বাড়ি কোথায়? " 

৪) মৃতবৎসা স্বপ্ন
মৃতবৎসা স্বপ্ন নিয়ে পথ হাটি 
জ্বলন্ত অঙ্গার জ্বলে
      বুকের বাঁ পাশে.... 

৫) আভাস 
কেউ না বললেও ভোরের বাতাস 
সূর্যের প্রথম কিরণ জানিয়ে দেয় 
রাত পোহানোর প্রান্তিক আভাস।     

সঞ্জয় দত্ত

আমার ছোট্টবেলা
          
আমি খুব ছোট ছিলাম,
তখন আমাকে কেউ চিনতো না!

কিছু সময়ের জন্য আমি নিঃস্ব,
এই নিঃসঙ্গতা আমায় ভাবায়!

আমার চোখের ঘুম নেই!
আমি চিন্তিত ছিলাম খুব।

এই চিন্তা ভাবনার মধ্যে
ধীরে ধীরে বড়ো হতে লাগলাম।

আমাকে চিনতে পারছে অনেকেই,
সাথে আমিও।

সেই ছোট পরিবারটা আর নেই,
অনেক বড়ো হয়েছে এখন।

দেশ বিদেশে এখন আমার অনেক বন্ধু,
ভালোবাসায় যেন বুক ভরে গেছে।

আমাকে নিয়ে কতো স্বপ্ন দেখছে!
সেই স্বপ্নের পূর্ণতা দিতে ব্যস্ত আমি।

মিঠুন দেবনাথ

অসহায়ত্ত্বের  বোঝা 

সারা পৃথিবী জুড়ে আজ মৃত্যুর হাতছানি ।
এদিন ওদিক ঘুরে  বেড়ায় ,
যদি মিলে দু দানা ক্ষুধার অন্ন পানি ।
মানবজাতি আজ কত নিঃস্ব কত অসহায় ।
নিজেকে করেছে গৃহ বন্দি ,
একটু বাঁচিবার প্রত‍্যাশায় ।
আজ সৃষ্টি কর্তা ও যেন গোটিয়ে রেখেছে নিজের হাত ।
কত ভাবনা চিন্তা আলোচনা চলছে বিশ্ব জুড়ে  ,
ভাগ্য দেবী যেন চলে গেছে বহু দূরে ,
মানবজাতিকে দেয়না সাথ ।
প্রকৃতি আজ হাসছে মন খুলে ,
মুখে তাঁর মুছকী হাসি ।
আজ মানবজাতি সর্বত্র খাছায় বন্দি ,
যা কখনো ছিল পশু পাখি ।
মানুষ কখনো নিজেকে ভেবেছে বিশাল শক্তিশালী ,
কখনো বা প্রভূত ধনবান ।
প্রকৃতির সৃষ্টি ও স্রষ্টা কে করেছে অবজ্ঞা ,
কখনো করেনি সন্মান ।
নিরীহ জীবকূলের উপর চালিয়েছে শাসন আর শোষণ ।
নিঃস্ব অসহায়ের উপর করেছে কত অত‍্যাচার অবিচার ।
প্রকৃতি কখনো করবে না ক্ষমা ,
তাদের এই দূরব‍্যাবহার ।
সকল মানবজাতিকে দিতে হচ্ছে আজ ,
তাদের কৃত কর্মের দাম ।
জানিনা কত দিন চলবে এই ,
নিঃস্বতা আর অসহায়ত্বের বোঝা ।
কখনো কি হবে না পরিত্রান ।

স্নেহাশীষ রায়

অপেক্ষা করো 

ধৈর্য্যহারা হয়োনা তুমি,
তুমি অপেক্ষা করো।
তুমি যে সত্য তা মুখ ফুটে বলার 
কোনো প্রয়োজন নেই।
ভাবছো হয়তো আমার মুখখানি
নিলামে স্বল্প দরে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে
তাদের মতন;
ভাবছো হয়তো আমার সত্যটা যদি
অমাবস্যার অন্ধকারে কোথাও 
হারিয়ে যায়;
ভাবছো হয়তো এখনই সত্যের 
জাগরণের সময়।
এখনই মিথ্যার চাদরকে দুমড়ে মুচড়ে 
পাশের জঙ্গলের গভীর গর্ত খননে
মাটিচাপা দিয়ে রাখবে।
এতটা আকুল হইয়ো না,
ধৈর্যের বাঁধটা সহজেই ভেঙে দিও না।
বর্ষার অবিরাম বজ্রধ্বনির শেষে
স্নিগ্ধ শ্যামল শরতের অপেক্ষা করো।

সুপর্না কর

আমার রবিঠাকুর

যাঁর সাহিত্যের আলোয়‌ আলোকিত আজ গোটা বিশ্ব।
তুমিই সেই রবি।

যাঁর কবিতা পাঠ করে আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই মন্ত্রমুগ্ধ।
তুমিই সেই বিশ্বকবি।

তুমিই সেই রবিঠাকুর,
যাঁর হাতের ছোঁয়ায় হয়েছিল জাতীয় সঙ্গীতের শুরু।

যাঁর রচিত "গীতাঞ্জলি" এবং "জীবন স্মৃতি" আজ‌ও চিরস্মরণীয়;
তুমিই সেই কবিগুরু।

তুমিই সেই কিংবদন্তি লেখক
যাঁর লেখা "ছুটি" গল্পের মতো কতিপয় গল্প সকলের চোখে জল এনে দিত‌।

তুমিই সেই ভারতভাস্কর, নোবেল বিজয়ী
যাঁর লেখা সঙ্গীত আজ‌ও শুনে গোটা জগৎ।

শৈশব থেকেই কত কত গল্প, কবিতা, উপন্যাস; 
লিখেছো তুমি হে কবিগুরু।

তোমাকে অনুসরণ করেই আজ
আমার‌ও লেখার জগতে পথচলা শুরু।

তুমিই আমার সেই রবিঠাকুর,
২৫ শে বৈশাখ সমস্ত বাঙালি মিলিত হবে যাঁর স্মরণে।

হে কিংবদন্তি বিশ্বকবি
জন্মদিনে আমিও শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাই তোমার ঐ চরণে।

গৌতম দাস

বিষাক্ত আবর্জনা

শুনো!শুনো! প্রিয়জনেরা
বিষাক্ত আবর্জনা!
চোখ লাল করে কথা বলে গো!
অলি-গলিতে আছে শত শত
বাচ্চাদের স্বাধীনতাকে পিষে মারছে প্রতিনিয়ত।
ওদের হাতে আছে শক্ত বল।
নম্বরের নামে চালাচ্ছে নানা চক্রব্যূহ আর ছল।
এই আবর্জনা মিষ্টি কথাও বলে-
আমার কাছে আসলেই হবে
নম্বর কতো চাই বল্।
পাল্টি দিলেই পরিশ্রম হবে জল।
লোভ,লালসার ব্যবসা চলছে ফাটাফাটি।
বিদ্যার নামে চলছে শুধু টাকা টানাটানি।
এই আবর্জনা-
ভবিষ্যতের মেধা, সৃজনাত্মক ভাবনা পুড়িয়ে দিচ্ছে।
টাকা পকেটে ঢুকানোই ওদের একান্ত ইচ্ছে।
সততা,মানবিকতা,নৈতিকতা নীরবে কাঁদে।
কিছু করার নেই।
অভিজ্ঞরা জেনে শুনেই পড়ে এই আবর্জনার ফাঁদে।
আবর্জনার গন্ধে বিজ্ঞ অভিভাবকরা নাচে মনের আনন্দে।
গুণীজনরা বলে আমার নম্বর চাই ভাই।
টাকা দেবো যা বলবে তাই।
এই ধ্বংস লীলার দিনে একটাই প্রার্থনা 
বিষাক্ত আবর্জনা চেনার স্বাধীন মানুষ চাই।

জয়িতা দে

কবিপ্রণাম
                 
তোমার নামের খ্যাতি, ছড়িয়ে আছে বিশ্বজুড়ে।
চিরদিন থাকবে তুমি অমর হয়ে মোদের হৃদয়জুড়ে।।
তুমি মোদের আদর্শ, তুমি মোদের গুরু।
তাই তো মোরা সবাই জানি তুমি কবিগুরু।।
তোমার লেখা মোদের জোগায় সাহস আর বল।
তাই তো মোরা কোনো কাজে আর পাই না ভয়।।
তোমার গান মোদের প্রাণ করে উজ্জীবিত।
তাই মোরা গেয়ে যাই জীবনের জয়গান হয়ে পুলকিত।।
পঁচিশে বৈশাখের পুণ্যদিনে,তোমায় করি স্মরণ।
তুমি মোদের বরণীয়, পূজনীয় সবার আপনজন।।

কৃষান নমঃ

মায়ের স্মৃতি
                    
একদিন হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় আমার, মা তুমি সেই দিন নেই
সত্যি তুমি সেই দিন ছিলে না কোথাও।
বিশৃঙ্খল হয়ে গেল সেই দিনের ভোরের আলো, 
সকালের ঘাস হারালো শিশিরগুলো।
আমার অশ্রু ভেজা বালিশ নিয়ে ঘুমিয়ে ছিলাম তোমার সাথে শেষ সেই রাতে, 
বালিশটা আজও হইতো শুকিয়ে পরেছে
পরের সকালের সেই ভোরের আলোয়।
আমার সেই বুকের ক্ষতটা এখন শুকায়নি
থাক আমার মনে তোমার স্মৃতির সেই ক্ষত, 
ক্ষত - বিক্ষত নিয়ে থাক আমার মনের এই পরিবারটা।
মনকে একা করে এই ভূপিষ্ঠে, 
তোমার না থাকার মাঝে। 
তোমার আদর, যত্ন, সেহাগ, ভালোবাসা গুলো
থাকনা আজ আমার মনের স্মৃতিতে আবদ্ধ হয়ে।  

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী

রবি ঠাকুরের প্রতি 

আমি প্রেমে পড়েছি বারবার, 
সেই শৈশব থেকে --
যখন কোনো এক অপরাহ্নে বই এর পাতায় তোমার সাথে প্রথম আলাপ , তখনো প্রেম শব্দের অর্থ ছিল অস্পষ্ট । 
অনেকটা ঐ সংস্কার এর  মতো । 
উচ্চারণ রীতির ধার ই বা কতখানি ছিল সেও এখন অজানা । 
তবু বারবার ই মনের আঙিনায় বসে তোমরই জন্য গেঁথেছি সরল প্রেমের মালা । 
মনের প্রতিটি তাকে , তোমায় সজত্নে দিয়েছি ঠাই ।
তাইতো প্রেমে পড়েছি  বারবার , আমি 
প্রেমে পড়েযাই তোমার।
সৃষ্টির প্রেমে , প্রকৃতির প্রেমে 
তোমার দুর্দম লেখনীর , আমি 
প্রেমে পড়েছি বারবার।
যেমনটা ঐ মিনির সাথে কাবুলির, 
জলের সাথে পাতার, 
মেঘেদের ভীড়ে হওয়ার প্রেম, 
ঠিক তেমনই,  আমি প্রেমে পড়েছি বারবার।

 বাড়ির একচালা ঘরের পাশে ঐ বকুলতলায় বসে তোমার চোখেই প্রথম দেখেছি আফ্রিকা । 
তোমার চোখেই প্রথম দেখেছি বসন্তের সেই  দিন , দেখেছি পাহাড়,  নদী , উত্তাল সমুদ্রের ঢেউ ।দেখেছি তোমার আকাশ , তোমার উজাড় করা প্রেম ।
দিকভ্রান্ত পথিকের মতো তোমারই প্রেমের টানে আমি এখনও হাঁটি গাঁ এর মেঠো পথ।
যখন প্রভাতের গানে ভুলেযাই সুর , 
কেটেযায় করতাল । 
যখন রতনের মতো অভিমান জাগে বুকে , 
তখনও আধারের মাঝে আলো দাও তুমি , 
প্রাণে ঢেলে দাও সুধা ।
তুমি অনন্য ,  বরেণ্য বীর , তুমি নতুনের স্রষ্টা 
তুমি দুর্বার , 
তুমি বৈশাখী ঝড়ো হাওয়া হয়ে আস প্রকৃতির মাঝে বারবার। 
তাইতো তোমারই প্রেমে পড়েযাই আজও , আমি প্রেমে পড়েযাই বারবার ॥ 

রাম প্রসাদ কুন্ডু


হে বিশ্ববকবি তুঁমি আজ কোথায়

হে বিশ্বকবি, তুঁমি আজ কোথায়? 
তোঁমার প্রতি যে ভালবাসাটুকু ছিল তা তো ফুরাবার নয়, 
তাই তো সেই ভালবাসাকে আজও খুঁজি 
কোথায় হারিয়েছি তা জানি না
হাজার মানুষের মাঝে আছে না কি
তাদের কবিতার মাঝে আছে? 

কোথায় পাব বলো তোঁমাকে.... 

তোঁমাকে কি ফেলে এসেছি নদীর ওপারে
না কি পিচঢালা রাজপথের সীমানায়
কোথায় হারিয়েছি তোঁমাকে বলো তো 
ধানের ছড়ার মাঠে,মাছেদের ঝাকে 
না কি ঘেরের ঐ বাধালের মাঠে? 

হে বিশ্বকবি 
তোঁমার কথা ভাবতেই ভালবাসার রোদ্দুরে বাতাসে শিহরিত হয় মায়াবী দুটি চোখ
ভালবেসে গান গেয়ে যায় মৃদুস্বরে, 
তোঁমাকে কি রেখে এসেছি সরষে বনের মাঠে? 

তোঁমার কথা ভাবতেই এখনো দখিনা বাতাসে উড়ে যায় কপালের এলো চুলগুলো, 
বিকালে শাড়ির আঁচল ধরে এখনো মেঘেরা হৈচৈ করে 
সকালের শিশির এখনো রাঙা চরণে রঙিন হয় 
তুঁমি আছো স্মরণে জীবন্ত স্মৃতিময় হয়ে ভালবাসার পান্ডুলিপিতে, 
মায়ের ঐ মেঠো পথের আঁচলে
তবুও খুজে পাইনা কেন? 

বড্ড জানতে ইচ্ছা করে 
হে বিশ্বকবি, তুঁমি কোথায়? 

মোঃরাসেল বিন আবু তালেব

জেগে উঠে

সাগরের অতল গহিনে জলের ধারা গহিনে।
ফাগুনের ধারা মনে
কোকিল ডাকে বসন্তের গগনে।

সাগরের বুকে জলের পরশে উত্তাল ঢেউয়ের খেলা।
ফাগুনের গানে মুখরিত ভূমি
বসন্তের কোকিল বসন্ত বাতাসে করে খেলা।

প্রানের মায়ায় জল ছুয়ে ভূবন রূপের ঝলকে জেগে ওঠে। 
ফাগুনের হাওয়ায় কষ্ট ঝরে
চঞ্চলতায় বসন্তের কোকিল সুখের ডাকে জেগে ওঠে।

সাগরের বুকে জলে জলের ধারায় শান্তির রোল ওঠে।
ফাগুনে ফাগুনের বিলিন ঘটে
বসন্তের গতরে কোকিলের কুহু ডাকে কল্লোলের মায়ায়
 বসন্ত আবার জেগে ওঠে।

হতাশের কান্নায় সাগরের বুকে কষ্টের হাসি হেসে যায় অট্টহাসি। 
ফাগুন জ্বলে ফাগুনের অঙ্গে 
বসন্তের মায়ায় পরে কোকিল ডাকে সুখে গান 
গেয়ে গান আনন্দের গতর করে চূর্ণবিচূর্ণ হেসে অট্টহাসি।

পূজা মজুমদার

চারুলতা

না আমি চারুলতা নই
যে তোমার প্রেমে সাড়া দেবো,,,
আমি লতার মতো তোমায় জড়াবো না।

বৈশাখের খা খা রোদে মাঠ থেকে গোবর কুড়িয়ে এনে বাড়িতে রাখছি।

গোলাপ গাছে দেবো বলে।

চিলের দল এখনও মাথার উপর দিয়ে উড়ছে।শকুনেরা শুকনো গাছে বসে আছে শিকার করবে বলে।চিত্ত দাদুর গরুরা হাই তুলছে এক পশলা বৃষ্টির জন্য।

বাড়ির হাসগুলি পুকুরে জল না পেয়ে কান্না করছে।শুনেছি বর্ষা আসতে দেরি। বৈশাখের রোদে বটগাছে ফাটল ধরেছে প্রিয়।।

নীলদ্বীপ কুমার

সময় এখন তোমাদের জেগে ওঠার
                      
            

           তোদের দেবো কিছু আঙুলের অধিকার
             সমস্ত যা কিছু হবে আমার, 
             তোমাদের দেবো কিছু স্বপ্নের স্বাধীনতা
             যা আমার মধ্যে তার শাবাড়্। 
             আপনারা আমাকে দুঃখ দিন নিরন্তর
             আমি দুঃখের রাজত্ব গড়ব।
             শরীরের অকেজো মাংসগুলো প্লিজ
             কোনো কুকুর ডেকে দিয়ে দিন,
             যে রাষ্ট্র শিশুর রক্ত-
              শিবিরের নামে শোষণ করে
              সেখানে সুখ নিউক্লিয়াস বোমার চেয়েও
              নিকৃষ্ট জঘন্য বলে মনে করি! 
               তাই দয়া করে আপনারা 
               কিছু অপ্রত্যাশিত আঘাত দিন আমাকে। 
                আর আমি আপনাকে 
                তোমাদের এবং তোকে 
                জেগে ওঠার মন্ত্র দিয়ে গেলাম। 

লিটন শব্দকর

বৈশাখলিপি

বোধ হয় বুকের ভেতরে এই বৈশাখ মাসে
সব ঝোড়ো বাক্যালাপ নির্লিপ্ত হয়ে আসে।
বারান্দায় রাতভর কালবৈশাখীর মজলিশ
জুড়িয়ে ওঠা অনুভব ফুরোতে শেখা পালিশ। এমনি অ্যালজেব্রা উঠোনে আমের সবুজে
ভোরে গ্রীষ্মফোটারা গিয়েছে বৃষ্টির খোঁজে।

বিধর্না মজুমদার

এক নাম ত্রিপুরা

আমি সুন্দর, 
১৯৭১ শালের পূর্ণরাজ্য
ছোট্টো কিন্তু পাহাড়িয়া! 
ঊনত্রিশের ভীড়ে 
আমি এক ও অদ্বিতীয়। 
জাতের বেড়াজাল নেই, 
কিন্তু উপজাতির সাথে
জাতির মেল পরিলক্ষিত, 
আমার নিকট শ্রেষ্ঠ আমি।।

অভিজিৎ রায়

শ্রমিক

আমরা কাজ করি বলে নাম পড়েছে শ্রমিক।
নির্দ্বিধায় বলতে পারি আমরাই প্রকৃত দেশপ্রেমিক।।

মোদের নিরন্তর পরিশ্রম বানিয়ে দেয় মানুষকে কোটিপতি।
আবার আমরাই একজোট হয়ে করতে পারি সবার দুর্গতি।।

আরে আমরা যদি কাজ না করি কে দেবে খাদ্যের যোগান?
শত পরিশ্রমের পরও মোরা পাইনা প্রকৃত সন্মান।

ধনী আরো ধনী হয় গরীবের কাধে চড়ে।
বাবুদের অন্যায়, অবিচার সহ্য করি মোরা নির্বিচারে।।

আমরা ভবি সব মানুষের কথা।
 কিন্তু কেউ বুঝেনা মোদের ব্যাথা।।

পেটের তাগিদে অনেকেই ছেড়েছি বাড়ীঘর।
কাজের খুঁজে ঘুরে বেড়াই মোরা দেশ দেশান্তর।।

অন্যের মুখে হাঁসি ফুটাতে গিয়ে মোরা মাজেমাঝে না খেয়েও থাকি।
দুঃখ মোদের কেউ একবারও জিজ্ঞেস করে না কিভাবে বাঁচি??

তবুও শত পরিশ্রমের পর করি সবাইকে সন্মান।
দেশের সেবায় যেন করতে পারি আত্ম বলিদান।।

মুন্সি দরুদ

নববর্ষ

পরিযায়ীদের পায়ের তলায় রক্ত ঝরে,
ওরা ভারতের বুকে হেঁটেছে ।
বৈশাখের তাপ মাথায়, ঘামের চিটচিটে
ছেঁড়া পোশাকে নববর্ষ আসে গরিবের,
হালখাতায় ফ্রি দুটি মিষ্টি খাওয়ালে
ভুখা বেলিতে জল দেয় বৈশাখী ।

সুব্রত রায়

অনন্য

লেখার জগতে তুমি অনন্যা প্রকাশন
বর্ষপূর্তিতে তোমাকে জানাই অভিন্দন। 
তোমার প্রকাশনায় আমাকে দিয়েছ ঠাঁই
তোমাকে দূরে থেকে উষ্ণ অভিবাদন জানাই। 
তুমি এগিয়ে যাও,রইল আমাদের শুভকামনা
তোমার সাথে প্রতক্ষ্য করার ছিল মনে বাসনা। 
মননস্রোতের লেখার ধারা বইতে থাকুক
নতুন নতুন কবিদের আশ্রয়স্থল হয়ে উঠুক। 

রাহুল শীল

বেঁচে থাকার কবিতা
             
আমার মাঝ‌বরাবর বারান্দায় সটান দাঁড়িয়ে আছে একটা নদী,
বিয়োজন রেখা পাড় করে নাব্যতা অকাল বর্ষা আসে‌ যদি।
 
ধূসর রঙের জীবন যাপনে সকাল ভাঙায় শব্দ ঘড়ির অ্যালার্ম,
বুকভর্তি ঘাম ঝরাচ্ছেন স্বয়ং ঈশ্বর-- তাকে সেলাম।

পর্যাপ্ত আকাশ না পেয়ে প্রেমিকা করে আছে মেঘের মতো অভিমান,
দূর থেকে সাদা পাজামা দেখলেই বলে উঠি, ঐ দেখো কবি যান।

দীর্ঘ বিরতির শেষে সংসদ যেভাবে উত্তেজিত হয়ে উঠে দাউদাউ করে,
বিরোধী দলের হয়ে কাজ‌ করে কিছু প্রতিবেশী আমার ভেতর ঘরে।

ব্যথা হয় বুঝি আঁকা হলে বুকের ভেতর ত্রিভুজের পরিসীমা,
কথা হোক তবে রাজনৈতিক‌ বিকেলের মতো এই শহর তিলোত্তমা।

শতবর্ষ পূর্তি পেরোলেই জীবন পায় বুঝি সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা,
আমাদের ঘর হোক এই পৃথিবী বাঁচিয়ে রাখি ভালোবাসার প্রথা।।

অমিত রুদ্র পাল

নবডঙ্কা 
            
প্রতিটি রাতে শ্রমিক হয়ে বুক ভাঙতে গিয়ে দেখি হাড়ে জড়িয়ে থাকে অগণ্য খোলসা করা ঘুনপোকা, 
আমারও মাথা মোটা আদুরে তাদের বলি খেতে আয় খোকা ।
কি নির্মম! 
সিদ্ধহস্ত হাতে তৃপ্তির হাসিখানাও
আদৌ  দুবেলা ঠোঁটে মেলে উঠতে পারিনি 
কখনও  ভাবি একঝাঁক বিষন্ন ছুড়ে ফেলে 
দূরে চলে যাবো ,
তবে নিংড়ে দেখি পচাগলা লাশের গন্ধ,  
দু-তিন থাকলে হয়তো দমচেপে বন্ধ ।
দুগ্ধপোষ্য আস্বাদন অনুভবে
আহ্লাদ কুড়িয়ে বলি 
আমায় কে নিবি আয় 
আমি যে আজ নবডঙ্কা ।

অর্ধেন্দু ভৌমিক

বৈশাখী রবি

রঙমেলা কৃষ্ণচূড়া জারুল  বয়ঃসন্ধি আম্রপালি হাসে,
বৈশাখ এসে গেছে গ্রীষ্মের  আকাশে বাতাসে। 
শান্ত মুহুরী
উঁকিমারা বালি,  বয়ে চলা  জীবন
বৈশাখীধারা পারে না সাজাতে  বুকভরা যৌবন। 

একশতষাট বর্ষ আগে জননী সারদার কোলে,
আজও বিচরণ রসস্বাদ জুড়ে বাঙালীর মননে। 
জাতি স্মরে সংগীতে বিদ্যার্থীর  বিদ্যাঙ্গনে,  
ধন্য তব শুভজন্ম দিন, প্লাবিত প্রণাম চরণে।

মন্দিরা শর্মা

মননস্রোত

তোমার সাথে পরিচয় মোর সবেমাত্র।
তবু যেন আভাস পেলাম তুমিই আমার সূত্র।।
তুমার সূত্র ধরে আমি লিখিতে বসিলাম।
মননস্রোত পরিবার তোমায় জানাই শত প্রণাম ।।
মননস্রোতের মননে আমি শান্তি খুঁজে পাই।
নির্দ্ধিধায় তোমার সাথে চলতে যে আমি চাই।।
তোমার এই পরিবার কবিত্বরসে ভরা।
কত প্রাণ কতা নাম দিয়েছে তোমায় ধরা।।
কত লেখক,কত উপন্যাসিক,কত কবিবৃন্দ ।
সবাই সবার দক্ষতায় পাচ্ছে মন ভরা আনন্দ।।
মনের কুটিরে তোমায় রাখবো করে আমার।
চারিদিকে যেন ছড়িয়ে পরে তোমার বাহার ।। 

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...