Friday, April 16, 2021

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

তুমুল অনটনের দিনে পেটভরা ভাতের স্বপ্নে রাস্তায় মরে যাওয়া অনাহারীর রক্তের হিমোগ্লোবিন মাপার যন্ত্রটির লজ্জা নেই। কান্ডজ্ঞানহীন যন্ত্রাংশের উপর ভিত্তি করে বিজ্ঞানের যে কলঙ্ক আমরা তৈরি করছি এটাই আমাদের জন্য এক অভিশাপ।

কবিতা কবিতায় প্রেম বিচ্ছেদের কথা বলতে বলতে উঠে এসেছে এসবও। কুর্ণিশ তাঁদের কলমকে। যা চৈতন্য হয়েছে, তা এ কারণেই হয়েছে। নববর্ষটির বাঙালিয়ানাও বিপদের। পরিস্থিতিও আতঙ্কের। এ কঠিন দিনে টিকে থাকা ও টিকিয়ে রাখার আহবান করি।


                                 শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                                      জয় দেবনাথ
                                         সম্পাদক
                                   মনন স্রোত, ত্রিপুরা

আসছে...

গোপাল দে

না বলা কিছু কথা
                  
কিছু কথা না বলাই থাক,
সময়ের স্রোতে হয়তো কারো
মুখের পেছনের মুখোশটা বেরিয়ে আসবে,
তবু সব কথা বলতে নেই।
মনে অনেক দ্বিধা, দ্বন্দ্ব, রাগ,
অভিমান আর হতাশা।
নীরবে সয়ে যেতে হবে
কারণ সব কথা বলতে নেই,
বলা যাবে না।
তুমি পুরুষ,তাই হাউ মাউ করে কাঁদতে নেই,
অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করতে নেই
আর সব কথা বলতে নেই।
পুঞ্জীভূত ক্ষোভগুলো জমিয়ে রাখো নিজের ভেতর।
ওদের সব কথা নীরবে সয়ে যাও,
বিরোধীতা করতে নেই।
ওরা প্রচারে ব‍্যস্ত তোমাকে নিয়ে
আর তুমি সয়ে যাও নীরব জ্বালাতন।
তবু....
সব কথা বলতে নেই।
বলবে না,চেষ্টাও করবে না।
বললে যে ওরা প্রচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে।
সয়ে যাও,চেপে যাক যত অব‍্যক্ত অভিমান।
ওষ্ঠাগ্রে এসে পড়বে তোমার সঙ্গে ঘটা
যত বুকফাটা আর্তনাদ,
তবু গলাধঃকরণ করতে হবে।
কারণ সব কথা বলতে নেই।
সাময়িক পরিস্থিতি নিয়ে
হয়তো অনেকে উপহাস করবে,
বিপদে তোমার হাত ছেড়ে দেবে
পাশে থাকা আপন মানুষটিও।
নদীর ওপারে থেকে হয়তো
এপারের যত ঝর ঝঞ্ঝা 
ওরা বুঝবে না।
উল্টো চলবে তোমার উপর
অনাকাঙ্খিত বাক‍্যবাণ।
সয়ে যাও,বলতে নেই।

প্রীতম শীল

নতুন ভোরের অপেক্ষায়
            
সারা রাত ক্ষত শরীরের আঘাতটা,
আমাকে দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে।
জ্ঞান হীন শরীরে আমার রক্ত স্রোত,
যারা আমার সতীত্ব কেড়ে নিয়েছে।
অগত্যা তাদের শিয়াল কুকুরে দাঁত,
কামড়েছে বুক থেকে সারা শরীর।
তারা জানেনাকো শক্ত পুরুষাঙ্গে,
কখনো পুরুষ হয়না,হয়না বল বীর।
আজ মাতৃত্ব তাদের মনে দাগ কাটেনা,
এই ঘন জঙ্গলের মহা দানবীয় রাতে।
তাইতো এই শরীর লালসা কামনায়,
বাসনা চরিতার্থ করেছে আমার সাথে।
পড়ে ছিলাম একা রাতে এক বুক কষ্ট চেপে,
যদি একটা নতূন ভোর ফিরে পাই।
সূর্য্যের কিরণ যেমন দাবদাহনে জ্বালিয়ে দেয়,
আমিও উঠবো দেবীচন্ডির রুপে।
ধ্বংস করবো পাপিষ্ঠ দের কালো অধ্যায়,
মুন্ড দেবো মায়ের চরণতলে সপে।
অপেক্ষায় আছি সেই নতুন ভোরের জন্য,
যাতে থাকবেনা ওদের মতো কলঙ্ক।
যারা কাড়ে দিনরাত বেঁচে থাকার রসদ,
যারা বেহিসাবি করে দেয় জীবনের অঙ্ক। 

প্রসেনজিৎ দে

চিঠি

ওর চিঠি আর আসে না এখন,
কিছু আদভাঙ্গা শব্দ ভেসে আসে কানের পর্দায়।
ডাক পিওনের বেলের শব্দ শোনা যায়, 
আজও কোনো চিঠি আসেনি। 

প্রতীক্ষারা দিন গোনে যায় একান্তে,
মাসের পর মাস পাড়ি দেয় বছরে,
পোশাক বদলের মতো গাছেদের পাতা বদলায়, 
এখনো চিঠি আসেনি। 

হয়তো ওর কথারাও চাপা পড়ে আছে।
ডাকে পড়ে থাকা কিছু চিঠির মতো।।

বিন্দিয়া বর্মন

বৈশাখী হাওয়া

আজিকে ধরা নব তুলিতে আঁকা ,

কালবৈশাখী ঝড় মেঘেতে ঢাকা ।

চৈত্র শেষে তীব্র ক্ষরা ,

বৈশাখে আসে বাদল ধারা ।

তপ্ত ভূতলে বৃষ্টির ছোঁয়া ,

সুগন্ধিত আজ মৃত্তিকা হাওয়া ।

প্রভাতে সকলে স্নান সারিল ,

গৃহে গৃহে শাঁখ বাজিয়া উঠিল ;

নতুন বর্ষ , নতুন স্বপ্ন ,

নব পরিধান নতুন বর্ণ ।

হরিদ্বর্ণ তৃণ , গিরি শ্যামলা ,

জমজমাটে আজ বৈশাখী মেলা ।

নব দিগন্ত নতুন সূচনা ,

সৃষ্টি কর্তার মায়ার রচনা ।

অভূতপূর্ব এক আভাস এলো ,

নব বর্ষ সবার কাটুক ভালো ।।


সঞ্জয় দত্ত

ভয়ংকর

আমি বুঝতে চাইনি তখন!
ভেবেছিলাম শেষ হয়েও ফিরে আসা হবে।
নশ্বরতা আমার কিছুই করার যোগ্য নয়,
যেখানে স্রষ্টা আমাকে নতুন রুপে প্রেরণ করেছেন।
অধিনস্ত বিশ্ব আমার,
আমি ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী হতে লাগলাম।
সংশোধিত হতে লাগলো অজ্ঞাত ভাবনারা।
কিন্তু ভাবনারাও একদিন মুছে যাবে,
যখন অন্ধকার হবে আমার দৃষ্টি!

কাজী নিনারা বেগম

সেই তুমি

সবুজ শ্যামল জোয়ার ভাটায়,
মৃদু হাসি তোমার পানের বাটায়।
সাগর সঙ্গমে তুমি ,
ঢেউয়ে তুমি সমুদ্রস্নানে তুমি,
কৃষ্ণ চূড়ায় সংলাপে তুমি ,
শিউলি ফুলের পাপড়ির আবডালে লুকিয়ে আছ তুমি,
শরতের আকাশে বাতাসে ভেসে আছো সেই তুমি
কৃষানীর স্বস্থিসুখে, ধানের গোলায় তুমি,
রোদের সোনালী আলোর ঝিলিক তুমি,
গায়ের নিঝুম মাঠে গোধূলি প্রভা তুমি,
বক পাখি উড়ানি ভাদ্রে তুমি,
উদাসী মেঘের ভেলায় ভেসে নীল দিগন্তে তুমি,
তুমি আমার তুমি আমার,
হৃদয়ে বেঁধে ছিলে নীড় হারা পাখি তুমি
সুবর্না তুমি বেঁধে ছিলে কল্পনার সেতু বন্ধন
তোমার রুপের মহিমা তুমি 
তোমার রুপের নাই গো শেষ।

জয়দেব দেব

আবার আসবে

যদি সন্ধ্যা হয় ভোরের পানে, 
একটু চোখ রেখো,
যদি দুঃখ হয় আজকের কালে,
সুখের আশায় থেকো

যেমন কালো আকাশ নয়তো মানে
সূর্য গেল চলে,
তেমনি আজকের দিন আবছা শুধু
ধূয়ে যাবে কালে।

যেমন আঁধার ছাড়া আলোর
নেইকো কোন দাম,
তেমনি সুখ-দুঃখ দুটুই মোদের
ঈশ্বরের-ই-দান।

সুপর্না কর

বিদায়

বেলাশেষে সকলকেই যেতে হবে
এই বিশ্বসংসার ছেড়ে।
তাদেরও যে যেতে হবে,
যারা আজ‌ও সম্পত্তি নিয়ে লড়ে।

চারিদিকে শুধুই ঝগড়াঝাঁটি   
আর হচ্ছে কত অন্যায়!
বৃথাই এই হানাহানি
বেলাশেষে সবাইকেই নিতে হবে বিদায়।

মানবজীবনের কখন কি হবে
নেই যে কোনো বিশ্বাস?
ধনদৌলত‌ই‌ থাকবে পড়ে
শুধু থাকবেনা তার নিঃশ্বাস।

জাতপাত আর ধর্ম নিয়ে
করছে যারা লড়াই।
মহাবিশ্বের এই মায়াজাল থেকে
তাদেরও নিতে হবে চিরবিদায়।

পূজা মজুমদার

অর্ধনগ্ন

নারী কিসে ধর্ষণ হয়
হে বঙ্গবাসী,
পশ্চিমা নারী তো ধর্ষণ হয় না
নগ্নতা যে তাদের শশী।

ওগো 
বঙ্গনারী!
তা বলে কি তুমি 
অর্ধ নগ্নতার নারী?

যা দেখে হচ্ছে মোর 

রাগের হাসি!

হে বঙ্গ নারী,

নগ্ন হলে সতীত্ব পাবে!
তা বলে আজ দেখাও
তুমি স্তন
অর্ধ খয়েরী?

সাথে খোলা কেশ
ভাবছো    লাগছে
তোমায় বেশ!

হে বঙ্গনারী!

অর্ধ নগ্নতার স্ফুলিঙ্গে
জ্বালিয়ে দাও পুরুষের নেত্র!
নগ্ন হয়ে চললেও পুরুষ
যেন পায় না ছুঁইবার ক্ষেত্র।

নগ্ন! নগ্ন! নগ্ন!
হে নারী প্রত্যেক পুরুষের
রন্ধে রন্ধে পৌঁছে দিলে 
নগ্নতার ঘ্রাণ!
পুরুষ পুরুষে থাকবে না যে আর
থাকবে  এবার
হিংস্র যৌনতার শান!

ভাবছো ......
তুমি অনন্যা!  তুমি শ্রেষ্ঠ!

তবে......
বলে রাখি আজ তুমি হারিয়েছো তোমার নারীত্ব।
তোমার আসল অস্তিত্ব।

দিপিকা রায়

চেনা অচেনা

সময় সকাল ৭ টা টিউশনে যাবো বলে বেড়িয়েছি। জিরানিয়া থেকে গাড়ি ধরে যেতে হয়। দাঁড়িয়েছি গাড়ির অপেক্ষায়। পাশে দাঁড়িয়ে একটি ছেলে। ভদ্রই মনে হল। দেখতেও ভারি মিষ্টি। না জানি সে কোথায় যাবে। মনে হয় গাড়ির অপেক্ষায় সময় গুনছে। কারোর দিকে তার দৃষ্টি নেই, শুধু ঘড়ি দেখেই চলছে। 
অবশেষে একটা গাড়ি এল, উঠে পড়লাম। পাশের ছেলেটাও উঠলো । আমরা কিন্তু একসাথে বসিনি, আলাদাই বসেছিলাম। তারপর পৌঁছলাম আমার গন্তব্য স্থলে (টিউশনে)। ছেলেটা জানি কোথায় যাবে?  কে জানে। 
    রাত ১১ টা ,ফেসবুক টা একটু ঘাটাঘাটি করছিলাম। তখনই ওই ছেলেটার দেখা। আজ যাকে বাজারে দেখেছি।
প্রোফাইলের সব ফোটোগুলো দেখলাম। দেখতে তো ভালোই, আবার ডিটেইলস এ গিয়ে দেখলাম তার বাড়ি জিরানিয়া। তখন একটু অবাক হয়েছিলাম। এরপর রিকুয়েস্ট পাঠালাম, সাথে সাথে এক্সসেপ্ট ও করে নিল। মনে হয়েছিল, ওনি যেন আমারই রিকুয়েস্টের অপেক্ষায় ছিল। 
 এরপর Hi, Hello  দিয়ে কথাবার্তা শুরু। কিছুদিন পর আমার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর টা চাইলো, প্রথম আমি নম্বর টা দিলাম না। 
এরপর কথা বলতে বলতে দেখি, না ছেলেটা বেশ ভালোই, নম্বর টা দেওয়া যায়। আরেকদিন হঠাৎ আবার আমার নম্বর টা চাইলো, তখন আর না বলতে পারিনি। নম্বর টা দিয়েই দিলাম। 
    কথা বলতে বলতে একদিন ওনি আমায় প্রপোজ করে দিলেন। অবশ্য আমি কিন্তু প্রথমে রাজি হয়নি। আস্তে আস্তে আমার প্রতি তার যত্ন নেওয়া, তার ভালোবাসা, অজান্তেই যেন মনে একটা জায়গা করে নিল। তখন আর কোনো বাঁধন বেঁধে রাখতে পারেনি আমায়। শুধু এই প্রিয় মানুষটির ভালোবাসাই বেঁধে নিলাম নিজেকে। 
     আজ এই বাঁধন টা তিন বছরের পূর্ণতা পেল। শুধু তিনটা বছর না এই বন্ধনটা যেন জন্ম জন্মান্তর ধরে থেকে যায়। ভগবানের কাছে এই প্রার্থনাই করি।

সাধন নমঃ

বসন্ত কথা রাখে নি
          

কথা ছিল,
কথা ছিল যখন রাঙা পলাশে আগুন লাগবে
তখন আমার জীবনেও বসন্ত আসবে।
আজ আকাশে বাতাসে মাতাল বসন্ত
পাথরেও নাকি প্রেম সঞ্চার করে।
আমার হাতে একটিও গোলাপ  নেই,ক্ষত বিক্ষত হাত,
তাই গোলাপ ছুঁইতে পারি নি।
চারিদিকে আজিকে দুয়ার দিয়েছে খোলে
তরুণ তরুণী মেতেছে প্রনয়ের বহ্নিজালে।
তারা চির চঞ্চল চির যৌবন,
নির্মমতার শিকল ভেঙ্গে করেছে ভালোবাসার জয়।
আর আমি!
রঙের বসন্ত দেখিনি, চোখ দুটো অসহায়
বসন্তের পথ চেয়ে চেয়ে, শুষ্কতাই আজ সহায়।
চাতক পাখির মত জল চেয়ে বেড়াই
ভরা মেঘের আড়ালে কখনো কখনো হারিয়ে যাই।
কত শরৎ হেমন্ত এলো,এলো দিবস-রজনী
সে আসবে বলেও আসেনি,
বসন্ত কথা রাখেনি।

গৌরাঙ্গ রক্ষিত

মনে পড়ে যায় 

মনে পড়ে যায় , 
সেই সব স্মৃতি।
মনে পড়ে যায় ,
সেই হৃদয় ভাঙার গল্প।

মনে পড়ে যায়, 
ফেলে আসা দিনগুলো । 
মনে পড়ে যায় , 
সেই সব কথাগুলো ।

মনে পড়ে যায়, 
আগলে রাখার গল্পগুলো ।
মনে পড়ে যায়, 
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্নগুলো ।

বিনয় শীল (ধারাবাহিক)

জয় মহারাজের সাথে (পর্ব ১)
                     
গতকালই জয় মহারাজ আমাকে বললো যে-
"কাকু, আগামীকাল অর্থাৎ ১৬ই মার্চ (২০২১) মঙ্গলবার অফিস থেকে ছুটি নিন। সরোবরা নগরী উদয়পুরে যাবো।" 
       অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সম্মত হলাম। না করতে পারিনি। কারণ জয়ের আহ্বানে জাদু আছে। পরদিন সকাল দশটায় আমাদের বের হবার কথা। কিন্তু বাড়ি থেকে বের হতে হতে এগারোটা। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ আমার দেরিতে। এখানেও তার বাত্যায় ঘটেনি। কিন্তু হঠাৎ করে জয় উদয়পুরে যাওয়ার জন্য ব্যাস্ত হয়ে উঠলো কেন? ভাবলাম, হয়তো তার হিয়ার মাঝে যে লুকিয়েছিল, যা এতো দিন সে বুঝতে পায়নি, সে হয়তো আজ উঁকি দিয়েছে। প্রকৃতির উঁকি বড় মোহময়। তাতে দূর্ভেদ্য মায়াজাল পাতা থাকে। সেই মায়ামোহে অনন্তকাল ধরে পুরুষেরা সংসারের অচ্ছেদ্য জঞ্জালে আবদ্ধ হয়। এই ভাবে জীবনের পরম্পরা স্রোত আবহমানকাল ধরে আজও প্রবহমান। জয় মহারাজও  বোধ হয় এবার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, বিষাদ- উল্লাস, আনন্দ-বেদনা ও কূটকচালিতে পূর্ণ সংসার স্রোতে নিজের ময়ূর পঙ্খী জীবন তরী ভাসাতে চলেছে। সে সফল হোক।
       ওহ্ ! যে কথা বলছিলাম, জয়ের মোটরসাইকেলে চেপে রওয়ানা হলাম। ওর মোটরসাইকেলটির হেডলাইটের উপরিভাগে ইংরেজি হরফে দারুন মুসাবিদা করে 'Joy' লেখা আছে। চিনতে অসুবিধা হয় না। বাইক তো নয় যেন একটা বিশ্বস্ত তেজী ঘোড়া। লাল ঘোড়ার মতো দেখতে 'Joy' নামক বাইকটির পিঠে চড়ে নিত্যদিন চলছে জয় মহারাজের জয়যাত্রা। মূলতঃ সে প্রাণপণে সেবা দেয় জয়কে। কতো যে বিপদ আপদ থেকে সে জয়কে এবং সহসঙ্গীকে রক্ষা করেছে তার হিসাব নেই। জয় মহারাজও তার প্রিয় বাইকটিকে বড় আদর করে থাকে। কোনো স্থানের অভিযান শেষে বাড়িতে ফিরলে মহারাজ বড় স্নেহভরে মটরসাইকেলটির সারা গায়ে হাত বুলিয়ে দেয়। সে ওর মনের কথা বুঝতে পারে। পরিস্থিতির  মোকাবিলা করতে গিয়ে বাইকটি বরং নিজের ক্ষতি মেনে নেবে, তবুও সওয়ারী জয় মহারাজের কোনো ক্ষতি হতে দেবে না। ঠিক সেই রকমই একটা ঘটনা ঘটে গেল আজকের যাত্রাপথে। যথা সময়ে আসবো সে কথায়।
        ফেনীর উপনদী মনু। নিজ স্বভাব ছন্দে হরিণা বাজারের পশ্চিম পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে। এমনিতেই মনু শান্ত। শুধুমাত্র বর্ষার লাগামহীন চঞ্চলতায় মনু কখনো কখনো উদ্বেলিত হয়ে উঠে। কিন্তু তাই বলে কাউকে গৃহহীন করেছে বলে জানা নেই। বরঞ্চ বর্ষায় তার স্বল্পকালীন জলোচ্ছ্বাস তুলে দু-কূলের চাষের জমিকে উর্বর করেছে। তারি-ই সৌন্দর্যের উপর চোখের দৃষ্টিচারণা ফুরোতে না ফুরোতেই জয় মহারাজের যন্ত্রযানে আমারা দুজন ছুটে চলেছি। হরিণা বাজার পার হলাম। তারপর একে একে মনু বাজার, সাতচাঁন্দ, কলাছড়া(এই স্থানটির ককবরক নাম 'থাইলিক তৈসা'। থাইলিক মানে কলা। আর তৈসা মানে ছড়া অর্থাৎ ছোট নদী। এই হিসাবে কলাছড়ার ককবরক তর্জমা থাইলিক তৈসা। এপ্রসঙ্গে বললে অন্যায় হবে না যে, বড় নদীকে ককবরক ভাষায় বলে তৈমা), শাকবাড়ী, সাঁচীরামবাড়ী, ঠাকুরছড়া ইত্যাদি ছোট বড় বাজারগুলোকে পেছনে ফেলে আমাদের দুই চাকার যন্ত্রযানটি জোলাইবাড়ীর বাইপাস ধরে এগিয়ে চললো। মাথার উপর সূর্যের মিঠে-কড়া রৌদ্র বিকীরণ। ঘড়ি জানান দিল দিনের অর্ধাংশ চুকিয়ে গেছে। কিন্তু বাইপাসের দু ধারের জীবন কলরব দেখে  মনে হলো কবি অক্ষয় কুমার বড়ালের সেই ভরা গ্রীষ্মের নিঝুম মধ্যাহ্ন কাল এখনও দূরে আছে। আর যদি এসেও পড়ে, তথাপি বর্তমানের জীবন ব্যাস্ততার তাড়না এতো তীব্র যে, নিঝুম মধ্যাহ্নে অলস স্বপ্নজাল রচনার সুযোগ কোথায়।
          এদিকে দেখতে না দেখতেই আমরা জোলাইবাড়ি বাজারের উত্তর প্রান্তে অর্ধবৃত্তাকারে বয়ে চলা মুহুরী নদীর কাকলিয়া সেতু (এর সঠিক নাম আমার জানা নেই। তবে এলাকার নামানুসারে সেতুর নাম বেশ প্রচলিত। স্থানীয়রা এ সেতুটিকে কাঁক্কুইল্যা ব্রীজ নামে জানে। বর্তমান সেতুটির পশ্চিম পার্শ্বে দীর্ঘাকৃতির আরেকটি নতুন সেতু নির্মাণের কাজ চলছে। পুরাতন সেতুটির বয়স হয়েছে তো, তাই। নতুন সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হলে অত্র এলাকায় জাতীয় সড়কটির বক্রতা অনেকাংশেই কমে যাবে।) পার হয়ে আসলাম। শালবনির মধ্য দিয়ে ৮নং জাতীয় সড়ক চলে গেছে। পুরো বনাঞ্চলটিতে যেন ঋতুরাজ বসন্ত বাঁধা পড়ল। আহা, কি বলবো! প্রতিটি শাল, চামল, জারুল, জাম আরও কতো কতো তরুবরেরা বসন্তরাগে উল্লসিত। প্রায় সকলেরই অঙ্গে নতুন পাতা শোভা পাচ্ছে। প্রতিটি তরুর নবপল্লবিত শাখা প্রশাখা আলো ও বসন্ত হাওয়ায় দোল খাচ্ছে।  নীলগগনের নিচে সড়কের দুধারে নতুন সাজে সজ্জিত গাছেরা সারি সারি করে দাঁড়ানো।তাদের আবার কারো কারো গায়ে জড়িয়ে আছে একধরনের বনোলতা। ঠিক যেন নাটোরের বনলতা সেন। জীবনানন্দ যদি এখানে আসতেন হয়তোবা নাটোরের না লিখে, কাকলিয়ার বনলতা সেন লিখতেন। সেই লতায় লতায় এখানে সেখানে ফুটে আছে সাদা রঙের বনফুল। নতুন মঞ্জুরির ভারে কতগুলো শ্যামল লতা গাছের শাখা বেয়ে নিচের দিকে ঝুলন্ত। গুচ্ছ গুচ্ছ বসন্ত পুষ্পের সমারোহ, তাতে রং বে-রঙের প্রজাপতির আনাগোনা এবং নিরন্তর মধুপ গুঞ্জনে শালবনির শোভাকে দিয়েছে অন্যমাত্রা।
         মনে হলো, বিশ্বনাথের প্রকৃতি মঞ্চে তরুবরেরাও অংশগ্রহণ করছে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায়। সমস্ত বনভূমে নানান জাতের পাখিদের বসন্ত সঙ্গীতের মনোহরা সুর লহরী। এ স্থানের রাস্তাটিকে প্রকৃতি নিত্যই রাতের বেলায় যেন ঝাড়ু দিয়ে রাখে। পুরো বনাঞ্চলের বুকের উপর পরিচ্ছন্ন সড়কটিতে আলো ছায়ার মেলবন্ধনে আঁকা হয়েছে অপূর্ব দৃষ্টি নন্দন আলপনা। আহা কি প্রশান্তি! অজান্তেই মন প্রকৃতির অপরূপ রূপ মাধুরীতে হারিয়ে যায়।
         হঠাৎ করে জয় মহারাজ গতি কমিয়ে তার বাইকটিকে সড়কের কিনারায় থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। বাইক থেকে নেমে রাস্তা ও বনোভূমের পানে তাকিয়ে আমাকে বলল-
"কাকু, কি সুন্দর না! দাঁড়ান। একটা ছবি তুলব।"
বুঝলাম, জয় বাবাও আমার মতো প্রকৃতির বসন্ত তরঙ্গায়িত রূপসায়রে ডুব দিয়েছে। মহারাজ বলে কথা। যথারিতি দাঁড়িয়ে পড়লাম। তারপর মোবাইল ক্যামেরায় ছবি বন্দী করলো। ছবি তুলেই বললো- 
"সেরা ছবি। দুর্দান্ত।"  অবশেষে আমিও প্রকৃতির এমন রূপালয়ে জয় মহারাজের মতো অনিন্দ্য সুন্দর যুবকের ছবি তুলি। 
         এদিকে প্রতিনিয়তই দ্রুত গতিতে ছোটাছুটি করছে নানা ধরনের যানবাহন। সকলেই ছুটে চলেছে জীবনের প্রয়োজনে। দুরন্ত গতিতে ছুটন্ত লোকেরা এখানকার মনোরম শোভা অনুভব করে কিনা জানিনা। আমি গভীরভাবে অনুভব করি, যেমনটা করে আমার জয় বাবা। তাই জীবনের চলার পথে প্রায়শই হা করে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির রূপের দিকে তাকিয়ে থাকি। জীবন তাগিদে হঠাৎ দুজনারই সম্বিৎ ফিরল। এখানে প্রকৃতির মোহে বুঁদ হয়ে বসে থাকলে চলবে কেন। আমাদেরও তো ছুটতে হবে। গন্তব্যের হাতছানিতে আবার শুরু হলো আমাদের পথ চলা।
                      
                     

টিটু বনিক

রূপ

মুখে কেশ লাগে 
ঠোঁটে রক্তবর্ন গোলাপের পাপড়ি 
আক্ষি কাঁচ সদৃশ‍্য 
কি যেন প্রশ্ন চিহ্ন 
চেয়ে থাকে একদৃষ্ট অষ্টপহর অনবরত। 
সরৎ এ রক্তের হালকা ছাপ 
কৃষ্ণবর্ন ক্লেশ মস্তক থেকে অর্ধমঙ্গ
রূপের যে রামধেনু 
মোর মন আবাসে রঙিন করে 
রাতের আকাশে মরুজ‍্যোতি ভেসে উঠে।
রূপে মোমের আবরন 
সূরে মধূর বাাঁশি 
মুখে হালকা স্মিত 
যেন পূর্নিমার রাতে চাঁদ উপস্থিত 
যেন মৃদুমন্দ বাতাসের শীতল স্পর্শ
যেন চারিদিকে আনন্দের অনূভুতি। 

অনামিকা দাস

প্রাণ মাঝি

আমি হব তরি,তুমি হবে আমার মাঝি
তোমায় নিয়ে দূর সাগরে দেবো আমি পাড়ি।
তোমার মৃদু গানের সুরে
ভেসে যাবো অনেক দূরে। 
তোমার গানের ছন্দের খেলা 
গাঁথবো আমি খোঁপায় মালা। 
তুফান যখন আসবে বেয়ে 
সামলে নিও আমায় ভালোবেসে।

বর্ষা দে

অনাথ শিশু

বাবু আমি অনাথ শিশু
পাই যেটা সেটাই খাই
ঢলঢলে ছেড়া জামা তেই 
সারা শহর ঘুরে বেড়ায়
 হাত পাতি, ক্ষুধার যন্ত্রণায়
কারণ নেইকো বাবু আমার 
অট্টালিকা ঘর
এই রং বেরঙের দুনিয়ায়।
দামি সিগারেটের ধোঁয়ায় ,,,
করছো বাবু পয়সার লুটপাট
কিন্ত আমরা বাবু হাত পাতলেই বলছো 'চল হাট'
ভাতের বদলে কাজ
এই যে আজ সমাজের সাজ
তবু ও বাবু করছ প্রতিনিয়ত অবহেলা
টাকা তে যে বানিয়েছ হোলির মেলা
হোলিতে গায়ের রং বদলালেও বাবু
এ রঙিন দুনিয়ায়
আজ আর নেই তাই রঙের মেলা

অণির্বাণ দেবনাথ

কোভিড১৯ 

করোনা ভাইরাস
যাকে নিয়ে মানুষ খুব সিরিয়াস।
মানতে হবে 'লকডাউন'
নাহলে তোমার জীবন হয়ে যাবে দুঃখের গোডাউন।
মুখে দিতে হবে মাস্ক
না হলে পুলিশ দেবে কঠিন টাস্ক।
কোনো জিনিস ধরার আগে ভাবতে হোবে অনেকবার।
না হলে ভাইরাস তোমাকে করে দেবে ছারখার:-
খাবার আগে হাত ধুতে হবে ২০ সেকেন্ড সময় নিয়ে।
নাহলে ভাইরাস শরীরে ঢুকে যাবে নির্ভয়ে।
মানুষের সঙ্গে দুরত্ব বজায় রেখে কথা বলতে হবে.....
নাহলে অমান্য করা হবে প্রানমন্ত্রীর উপদেশ কে ।
ঠাণ্ডা জিনিস খেও না ! খেলে হতে পারে করোনা।
এটাই আমাদের প্রার্থনা।

আলমগীর কবীর

স্বাধীনতা

স্বাধীনতা! শব্দটা শুনতেই যেনো, একটা কাঁপুনি আসে!
স্বাধীনতা স্মরণে আসলে যেনো, অনেকের নাম চোখের পাতায় ভাসে।
মনে পড়ে যায় সেই, "রাঙ্গা কাকার" কথা।
তবুও যেনো বুকে জমে আছে, হাজারো দুঃখ ব্যাথা!
এই স্বাধীনতার জন্যে হাজারও নারী পুরুষ, করেছে আত্মবলিদান।
আজ হৃদয় সভায় গাইতে চাই শুধু, তাঁদের বিজয়ী গান।
সংগ্রামীরা তাজা রক্তের বিনিময়ে, এনেছে স্বাধীন পতাকা!
তবুও যেনো মনে প্রশ্ন জাগে, আমরা কি পেয়েছি প্রকৃত স্বাধীনতা???

রূপালী মান্না

বদ্ধ পরিকর

ধর্ম হোক বা রাজনীতি
হোক রাষ্ট্র কিংবা প্রেম
সত্যেকে তুলে ধরতে কলম
বদ্ধ পরিকর ।

কেন  বাঁধেন  এ কলমকে
নানা অজুহাতে
কেন গ্রহণযোগ্যতা  হারাবে লেখা?
সত্য তুলে ধরতে ।

কলম চলে আপন বেগে
দেশ দেশান্তে কালে
সমাজের অভিমুখ  বদলে দেয়
আপন প্রতিভাবলে ।

তবে কেন এমন শর্তে বাঁধেন
প্রকাশক সম্পাদক
সত্য তুলে ধরতে কলম
বদ্ধ পরিকর ।

সভ্যতার ইতিহাস জানে
সাহিত্য সমাজের দর্পন,
এ দেশে বুঝিয়েছিলেন নজরুল
সে দেশে নাসরিন ।

গৌতম দাস

তোমার কাজল চোখ

বিশুদ্ধ ভালোবাসার তরী ভাসে,
ক্ষুধার্ত মরুভূমি মৃদু হাসে;
তোমার কাজল চোখে।
তুমি আছো সযতনে হৃদয়ের অন্তঃস্থলে।
প্রতিনিয়তই হারিয়ে যাই-
তোমার মায়াবী কাজল চোখে।
তব মেঘ  কালো কুন্তল আর সুশ্রী মুখমণ্ডল,
পূর্ণরূপ পায় যখন চোখে থাকে কাজল।
তোমার এই কাজল চোখের মায়ায়,
রজনী গন্ধা তার নিজস্বতা হারায়।
পূর্ণিমা চাঁদও যেন জ্বলে পুড়ে মরে,
তোমার মায়াবী কাজল চোখের তরে।

বিটু মজুমদার

নারী ক্ষমতায়ন

নারী তবু পায়নি আজও সমানাধিকার ,
নারী কেন পাত্ না আজো মানবাধিকার?
একই সমান শ্রম দিয়ে সে পায় না সমান দাম,
এক সমাজে বসত তবু পাইলো সুনাম।

চলা ফেরায় পোষাক পরায় পায় নি স্বাধীনতা,
সব স্তরে নারীর পরে চলছে অধীনতা।
একই মায়ের গর্ভে থেকেও সর্বথা বঞ্চিত,
স্থাবর ও অস্থাবরে ভাই করে সঞ্চিত।

বিয়ের পরে স্বামীর ঘরে যৌতুকের হয় বলি,
জনম জনম নেই কো শরম আসছে প্রথা চলি।
প্রাণহানী আর মানহানীতে পায় না সে সুবিচার,
পুরুষতান্ত্রিক এই সমাজে এতই অত্যাচার।

ক্ষমতায়ন হচ্ছে নারী কিন্তু অসহায়,
মান সম্মান নিয়ে নারী পাচ্ছে না অসহায়।
ইচ্ছা করে পুরুষ তারে করে নির্যাতন,
তাহলে আজ এই সমাজে কিসের বিবর্তন।

শ্রীমান দাস

জীবযান

স্টিয়ারিং ঘুরিয়ে নিলে
সোজা থাকে না অভিমুখ।

পথ বদলায় সন্মুখভাগ,
ধীরে ধীরে গোটা শরীর....

লাল, সবুজ দাঁড়িয়ে সটান ,
মিছিল অবরোধ আরও কতো কি ....
তবু গন্তব্যে পৌঁছায় যে যার মতো।

এভাবেই পথ বদলায় কতো জীবযান।

অর্ধেন্দু ভৌমিক

বসন্তের ঝরাবয়স

চার পক্ষে ঋতু রাজ বসন্ত
পলাশ, উদাল আর কচিপাতা আঁকা।
শিল্পীর কবিতায় সেজেছিল যৌবনে,
মন আবীরে সাতরঙ মাখা। 
বয়সের ভারে কড়ানাড়া গ্রীষ্ম
 উড়ায় বালি, খেলা করে বাতাসে। 
 নিশ্চুপ কবি দেখে চৈতের চরকে,
শেষ বিদায় বুঝি, তপ্ত আবহে!

চন্দন পাল

ভোর

আজও সূর্য উঠে কালাঝারির কোলে,
ডুব দেয় ঐ হাওড়ায়।
জম্পুই থেকে আসা কালবৈশাখী 
সাব্রুম, ঐ সেতুতে আছড়ায়।

চংপ্রেং সুর আর গড়িয়ার নাচন 
মাতাল করে পাহাড় সমতল। 
দেওয়ালী আর চড়ক মেলায় 
পায়ে পা মিলে কত জনডল।

বাংলা ইংরেজি ককবরকে জাগি,
ডাকে অঙ্গনওয়ারী, মহাবিদ্যালয়। 
জিমনাস্টিক, খুখু, লঙটেনিসে লড়ে 
ত্রিপুরার ঐ তনয়া তনয়। 

অফিসে,বাজারে, ছোটাছুটি সবার 
কেহবা চাষ বাসে  ।
ভাত, গোদক আর গোমতীর জলে
ত্রিপুরাবাসী  হাসে । 

যদিও কখনো কালো মেঘ এসে 
দেখায় ভ্রূকুটি, ভাসান।
একদিন হবে চুরমার  জানি
বিবেক আলো বলবান।  

চিত্তরঞ্জন দেবনাথ

পয়লা বৈশাখ 

ছাপোষা প্রান্তিক কিছু মানুষ হস্তশিল্প জানে, সুখ বানায়
মেলায় বেচে দেয় চোখ, নাক, মুখ আঁকা ছোট ছোট কাগজের সুখ   
ধবধবে সরল মনই ওদের একমাত্র সম্বল 
আমি ওদের কাছে এরকম সরলতা চেয়ে নিই 
সেটা মিশিয়ে চিঠির শেষে তোমাকে ছোট্ট লিখে দিই
ইতি তোমার ভালোবাসা 

ওসব মানুষের নড়বড়ে ঘর, পোষা বেড়াল আর নুন পান্তা নিয়ে ভাস্কর্য গাইছি, ছেনিতে আমার সুখ কাটছি, সে সুখের রুহু থেকে লাফিয়ে উঠেছে জ্যান্ত এক শোলমাছ। মাছটার সুস্বাদু ঝোল দিয়ে প্রান্তিক অভাবী মানুষদের জন্য গড়ব ছোট্টমতো পয়লা বৈশাখ।

তুমি এসো কিন্তু 
ওদের পাড়ায়

বিনয় শীল

বিভেদ রেখা 

মানুষেতে বিভেদ রেখা
কভু কাম্য নয় ।
সমাজ মাঝে দেখি তার
ফল বিষময় ।

সত্যি যদি বিভেদ রেখা
চাই মুছিবারে । 
তবে নিজ নিজ পশুত্বকে
খুঁজি বারে বারে ।

আপাতত ভুলে গিয়ে 
যতো ঠেলাঠেলি।
নিচতা আর পশুত্বকে
আগে মেরে ফেলি ।

মনুষ্যত্বের বিকাশ যখন
চুরি করে নেয়,
অমানবিক ঘটনা সব
হাত বাড়িয়ে দেয় ।

যার যা ধর্ম হোক
তাতে ক্ষতি কি ?
মানব ধর্ম মানছি কি না
সেটা বুঝে নিই ।

যে সমাজে যে অনাচার
যে ভাবেই বা ঘটুক ।
ওই সমাজের গুনীজনরা
আগে গর্জে উঠুক ।

অত্যাচারে শেষ হচ্ছে
একটা শ্রেণী যেন ।
অপর শ্রেণীর প্রাজ্ঞবৃন্দ
নিঝুম নীরব কেন ?

এই যদি চিত্র তবে
অশুভের জয় ।
ঠারেঠোরে আঙ্গুল তোলা
কাজের কথা নয় ।

হেন সূত্রে কবি আমি
কি লাভ আমায় বলো ।
যশোমাঝে ডুবে গেলেও
সমাজের কি হলো ?

এই না ভেবে পরাণ আমার
বিলাপ করে যায় ।
দৈত্য-দানব শূণ্য সমাজ
কবে দেখবো হায় ।

রঞ্জিত দে

পান্ডুলিপি 
               
ছোট্ট একটা ঘর -ছনের ছাউনি 
বাইরে দুরন্ত বাতাস ।
অবিশ্রাম বৃষ্টিপাত 
ডোবাটা উঠেছে ভরে ,
জল উপচিয়ে পড়বে।

কে যেন ভিজে এল ,
শাড়ী তার কবে লাল ছিল
এখন রং পাল্টে গেছে ।
শ্রাবন বেলার জলধারায় 
হাঁসুগুলি খুশী।
ভিজে কাপড়ে যে এলো-  হাঁপাচ্ছে !
আকাশে কালো মেঘের ছটা
ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকায় ;
দূরে তালগাছ কিংবা সুপারী,
বজে মৃত্যুর প্রহর গোনে।

ছোট্ট একটা ঘর 
বাঁশের বেড়া ।
শীতের কনকনে বাতাস ,
রাতের অন্ধকারকে আরো তীব্র করে ।
একটা কাঠের ধুনি ঘরে 
ধোঁয়া ছাড়লেও ,
ঘরটাকে উষ্ণ করে তোলে ।
হাত পা গরম করে শুয়ে পড়ি ,
সকালে সূর্যের তাপে ঘুম ভাঙ্গে ।
হাজার বছরের এই ছবি ,
আমি বহন করে চলেছি ।
পান্ডুলিপি আগুনের তাপে তপ্ত হয় ,
প্রকাশকের বিষন্ন দৃষ্টির আড়ালে ।

রণিতা নাথ

চোখে জলসাগর

নিয়মের বাঁধাছক ভেঙে  
করেছিলে প্রণাম,

সাধারণের ধরা ছোঁয়ার বাইরে
অবাধ বিচরণ 
প্রতিটা মুহূর্ত শিখিয়েছিলো
দৃশ্য জীবন ছন্দের বাইরেও 
কিছু আছে 
চির শান্তির
যা চির স্তব্ধতার 
অনুভূতিতে বিলীন।
 
সেই চোখ দিয়েই
আমি দেখেছি 
পৃথিবীকে,
মানুষের ভেতর কতোটা অমানুষ লুকিয়ে থাকে
আবার পাগলের ভেতরও 
জেগে থাকে মানুষ।

শেষ ঠিকানার আশ্রয়ে চোখ রেখেই
চলছিলো সময়ের চাকা,

অথচ
বেলা শেষের আগেই বাঁধাছকের গেরাকল
দিশেহারা পথ
কোনো দিশা দেখতে না পেয়ে 
আপোষ মেনে নেয় 
ভাঙ্গা গড়ার আমরণ পণ।

দিন ফুরালেও 
চোখে জলসাগর
জেগে থাকে ছোট্ট ভাবনার ঘর।
দুটি প্রাণ
শুনতে পায় হৃদয়ের কথা
আসমুদ্রব্যাপী শান্তির দীর্ঘপথ ছেয়ে থাকে সমুখে... 

সবকিছু মেনে নেওয়া কঠিন হলেও 
সামনের পায়ের সাথে পেছনের পা কেও 
তুলতে হয়
পায়ে পায়ে লেগে থাকে হাজার স্বপ্ন...

সবটাই প্রয়োজন 
উত্তর খোঁজে যখন
তখন, অপেক্ষায় হৃদয়ের কথা
ক্লান্ত হতে হতে হারিয়ে যায় 
মেঘের ঠিকানায়।

অবশেষে
সময়ের কাটা 
কেবল দৌড়তে থাকে 

অভিনয় আর পালা বদলের চেষ্টায়
জীবনের খোঁজ  

স্তবের যাঁতাকলে পিষে যায় সব...

তবুও হৃদয় জুড়ে থাকে 
চেনামুখ,চেনাহাসি
আর
প্রিয়নাম। 

শঙ্খ সেনগুপ্ত

প্রতিশোধ

সময় কেটেছে দাঁত,
ভালোবাসার শরীরে।
বিষ ছিলো কি তাতে?
ছিলো তো।
মানুষের চেয়ে কম।

মানুষ ভায়া আজব প্রাণী।
এতো বিষ জমিয়েছে ভেতরে,
এতো বিষ বহন করে চলেছে,
এতো এতো বিষ

না কেটে থাকবে কি করে?
বিষের ভেতর জ্বালা থাকে।
ছোবলে ছোবলে সময়কে
কতবার,
খুবলে খেয়েছে মানুষ-ই!

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...