Tuesday, January 31, 2023

মনন স্রোত

সম্পাদকীয়

ধারাবাহিকতার বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা মনন স্রোতের সবসময় থাকে। এ সংখ্যাটি একটি একাডেমীক জার্নাল। প্রাথমিক পর্যায়ের বস্তুনিষ্ঠ জার্নাল। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক জার্নালটির পর একটি সম্পূর্ণ সংখ্যা আসবে। আশা করবো পাশে থাকবেন। ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস হলেও, আমরা শেকড়কে ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করার প্রত্যাশি।  ভালো থাকবেন সকলে। নমস্কার।

বিনীত
সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

সম্পাদকীয়

ধারাবাহিকতার বাইরে গিয়ে কিছু করার চেষ্টা মনন স্রোতের সবসময় থাকে। এ সংখ্যাটি একটি একাডেমীক জার্নাল। প্রাথমিক পর্যায়ের বস্তুনিষ্ঠ জার্নাল। লোকসংস্কৃতি বিষয়ক জার্নালটির পর একটি সম্পূর্ণ সংখ্যা আসবে। আশা করবো পাশে থাকবেন। ফেব্রুয়ারী ভাষার মাস হলেও, আমরা শেকড়কে ভাষার মাধ্যমেই প্রকাশ করার প্রত্যাশি।  ভালো থাকবেন সকলে। নমস্কার।

বিনীত
সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

Sunday, January 29, 2023

কবি ভবানী বিশ্বাসের লোকজগদ্য

চৈত্র সংক্রান্তি

চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাৎ পরব। এই দিনটার জন্য আমরা একটা বছর অপেক্ষায় থাকি। পরবের আগের দিনটাকে বলা হারুবিষু বা ফুলবিষু। এই দিন ফুল তোলা হয় বলেই দিনটা ফুলবিষু নামে পরিচিত বলে শোনা যায়। 

বাঙালিদের সাধারণত বছরে কমপক্ষে দুবার
বাড়িঘরের যাবতীয় জিনিসপত্র ধুয়ে মুছে পরিস্কার করতে হয়। সেটা হচ্ছে দুর্গাপূজা আর পরবের সময়। সুতরাং চৈত্র মাসে আমাদের কাজের শেষ নেই। ফুলবিষুর দিন পর্যন্ত আমাদের যাবতীয় টুকটাক কাজ চলতেই থাকে। 

ওইদিন বিকালে জাঁক কাটা হয়। প্রায় সব গাছের শাখা/পাতা সংগ্রহ করতে হয়। তাছাড়া বিভিন্ন ঔষধি গাছ যেমন বিষকাডালি, বাসক, নিম পাতা ইত্যাদি অবশ্যই থাকবে। পাঁচ বা সাতরকমের কাঁটা গাছ যেমন আনারস, মন কাটা, ভেদ গাছ.. ইত্যাদি। 


ওইদিন রাত জেগে সাধারণত বাড়ির ছোটরা মা বোনেরা মালা গাঁথার কাজ করে।এই মালার জন্য আকন্দ, হাঁড়িয়া, কাঠগোলাপ নানারকম ফুল ব্যবহার করা হয়। যেগুলো কিনা নিতান্তই অবহেলায় রাস্তার ধারে, টিলার পাশে, পুকুরের পারে বেড়ে ওঠে,আমার মনে হয় ওই ফুলগুলো এই মালা গাঁথার জন্যই অপেক্ষা করে। 

ওইদিন বিকালে বা সন্ধ্যায় বাড়ির মহিলারা সবাই খইয়ের নাড়ু বানায়। সবাই মিলে মন্ত্রের মতো বলে-
"মহাদেবের বাণ বান্ধিয়ের,বছরের বাণ বান্ধিয়ের, টেয়া বান্ধিয়ের, হইসা বান্ধিয়ের, ঘর বান্ধিয়ের, দুয়ার বান্ধিয়ের, সুখ বান্ধিয়ের, আনন্দ বান্ধিয়ের,হোলা বান্ধিয়ের,বউ বান্ধিয়ের,ঝি বান্ধিয়ের, জামাই বান্ধিয়ের.... বছরের বাণ বান্ধিয়ের"। খইয়ের ছাতুর নাড়ু বানানোর সময় এই কথাগুলো বলেন। 

 পরবদিন ঘুম থেকে উঠেই প্রথম জাঁকে আগুন দেওয়া হয়। জাঁকের আগুনের ধোঁয়া সবাই গায়ে লাগাতো। আর সবাই বলতাম- " যাক যাক যাক, আমার বাড়ির রোগশোক, দুঃখ দুর্দশা, মশামাছি খারাপ যতসব বাইরই যাক। আইয়োক আইয়োক আইয়োক বিদ্যাবুদ্ধি, ধনদৌলত, সুখশান্তি, সব আমার বাড়িত আইয়োক"। শুনেছি এই ধোঁয়া গায়ে লাগালে রোগশোক কম হয়। জানি না এর ফল আদৌ কিছু হয় কিনা! পূর্বপুরুষরা বলে এসেছে, আমরাও তা পালন করছি। অনেকটা পরম্পরার মত। 

এরপর সকালবেলা নদী থেকে জল আনতে হয়। আমরা নদীকে বলি গঙ্গা। সকালবেলা বাড়ির বড়রা বলে গঙ্গার জল আনতে অর্থাৎ নদীর জল। সঙ্গে লাগে আমের পল্লব। 

উঠোনের মধ্যে অল্প একটু জায়গা গোবর দিয়ে লেপা হয়। সেখানে ধুপকাঠি মোমবাতি জ্বালানো হয়। ( যাদের গরু আছে তারা ঘুম থেকে উঠে গরু ঘরের দরজায় ধুপকাঠি মোমবাতি জ্বালিয়ে দেয়)। 

এবার গাটগিলা প্রস্তুত পর্ব শুরু হয়। ( গাটগিলা এক ধরনের লতানো গাছের বীজ। দেখতে অনেকটা সিমের বীজের মতো। এর ভিতরে অনেকগুলো বীজ থাকে)। এই বীজের ভিতরের অংশ নিয়ে সঙ্গে নিমপাতা, কাচা হলুদ, শষ্য, শষ্যের তেল সব দিয়ে পিড়ির( বিয়ের সময় বর কনে বসার জন্য ব্যবহৃত)মধ্যে বাটা হয়। 

এই ফাঁকে রাস্তায়(বাড়িতে প্রবেশের মুখে)গোবর ও ফুল(সাধারণত হলকা ফুল) দিয়ে বাঁধ দেওয়া হয়। কেউ কেউ ফুলবিষুর দিন দেয় আবার কেউ পরব দিন দেয়। 
এটা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন মত প্রচলিত রয়েছে। বাড়ির সকলের মঙ্গলের জন্য দেওয়া হয়। নতুন বছর যাতে পুরোনো শুভ সম্পদগুলিকে নিয়ে না যায় এবং বাড়িতে যাতে কোনো খারাপ প্রভাব ঢুকতে না পারে। এই বাঁধটি শুধুমাত্র গোবর দিয়েই দেওয়া হয়। গোবরকে বিষ্ণুর অংশ ভাবা হয় আর বিষ্ণু হচ্ছেন আমাদের শুদ্ধতার দেবতা। 

এবার গাটগিলা মাখানো হয় গরুর গায়ে। সঙ্গে গরুকে মালা পড়ানো হয়। স্নান করাতে নিয়ে যাওয়ার জন্য ছিবা(বেত) বানাতে হয়। এই বেত শুধুমাত্র ভাটফুলগাছ আর পিছলা গাছ দিয়ে তৈরি করা হয়। 

সাধারণত বাড়ির পুরুষরা গরুকে স্নান করাতে নিয়ে যায়। গাটগিলা দিয়ে গরুকে স্নান করানো হয়।

এই গাটগিলা দিয়ে সবাই ওইদিন স্নান করে।  পরবে সুগন্ধযুক্ত গাটগিলা দিয়ে স্নান করা যেন গঙ্গায় স্নানের মতোই পবিত্র। 


স্নান সেরে বাড়ি এসে তিতা পাতা অর্থাৎ থানকুনি পাতা বা নিমপাতা খাওয়া হয়। তারপর যে যার সামর্থ অনুযায়ী নতুন জামা কাপড় পরে ঘরের দরজায়, ঠাকুর ঘরে, বান্ধের ঘটে, পূর্বপুরুষদের মন্ডপে এবং যাবতীয় কৃষি সামগ্রী যেমন- কোদাল,লাঙল,দা ইত্যাদিতে গত দিনের তৈরি করা মালা দেয়। 

এবার শত্রু নিধনের পালা ( হত্তর উড়ানি)। বাড়ির রাস্তার মাথায় কাঁচি দিয়ে মাটিতে একটা ঘর এঁকে মাঝখানে আম রেখে উবু হয়ে দু-পায়ের নিচ দিয়ে এক কোপদিয়ে আমটাকে দু-টুকরো করার চেষ্টা করা হয়। 


এবার সবাই মিলে বাড়িতে খই, মুড়ি, নাড়ু, নারিকেল, দুধ, দই, কলা, চিনি, গুড় ইত্যাদি মেখে খাওয়া হয়।এই খাবারটাই মূলত পরবের বিশেষত্ব।এটা খাবার নয় যেন  অমৃত। 

খাবার পর আর যেন বিশ্রাম নেই। পাচন রান্নার জন্য যাবতীয় সব্জি তৈরি করতে হবে। এর জন্য স্পেশাল হচ্ছে কাঁচা কাঁঠাল।সঙ্গে 'তারাকাট্টুস' অবশ্যই থাকবে হবে।আমাদের গ্রামের অনেকেই কৃষিজীবী। যার ফলে খেতের ফসল এক পরিবার অপর পরিবারকে ভাগ করে দেয়। সবাই মিলে আনন্দ করে কাটাকুটি করে। এটা হচ্ছে একতা, সৌভাতৃত্ব বা পরস্পরের সাথে পরস্পরের মিল। এই বোধটা সকলের থাকা আবশ্যক। সংকীর্নতায় প্রকৃত আনন্দ নেই। 
যাইহোক, যাবতীয় সব্জি দিয়ে পাচন রান্না করা হয়। তারপর ডেকে ডেকে সবাইকে খাওয়ানো হয়। এটা আমাদের আনন্দ। সবাইকে দিয়ে খাওয়ার আনন্দই যেন পরম সুখ। যা আমাদের পূর্বপুরুষরা শিখিয়েছেন। 

সন্ধ্যায় চড়কগাছ ঘোরানো হয়। পাড়ার প্রত্যেক মহিলা বা মায়েরা চড়কগাছে ধানদূর্বা, তেল সিঁদুর, কলা, ডিম, ধুপকাঠি মোমবাতি ইত্যাদি দেওয়া হয়। ডিম দিয়ে ঠাকুর মানানো হয়। মানানো মানে হচ্ছে ঠাকুরকে ডাকা।এই ডিম আবার চড়কের মধ্যে এবং চড়কগাছের গোড়ায় দেওয়া হয়। ডিমের পিচ্ছিলতার কারণে যাতে চড়কটা গাছের ভিতরে ঢুকতে সুবিধা হয়।গাছ লাগানো হলে মহাদেবের মুর্তি মাথায় নিয়ে সাতবার প্রদক্ষিণ করা হয়।

উলুধ্বনিতে ঢাকের আওয়াজে চারিদিক যেন আনন্দে মাতাল হয়ে যায়। চৈত্রের হালকা দাবদাহ সঙ্গে দক্ষিনের হাওয়ায় পরিবেশটা মাতোয়ারা করে তোলে। 
এইভাবেই প্রতিবছর পালিত হয়ে আসছে আমাদের চৈত্র সংক্রান্তি অর্থাৎ পরব।

গবেষক নির্মল দাসের বই

বইটি ডাউনলোড করতে পারেন -
https://granthagara.com/boi/301336-tripura-loksonskriti-o-annayanana-prasonga/

ড. তুষার বন্দোপাধ্যায়ের আলোচনা

অধ্যাপক ড. তুষার চট্টোপাধ্যায় তাঁর “লোক সংস্কৃতির তত্ত্বরূপ ও স্বরূপ সন্ধান" গ্রন্থে লোকসংস্কৃতি কি? তা বলতে গিয়ে বলেছে

“লোকসংস্কৃতি লোকায়ত সংহত সমাজের সমষ্টিগত প্রয়াসের জীবনচর্যাঁ ও মানসচর্চার সামগ্রিক কৃতি; যা মূলত তথাকথিত আদিম সমাজে অমার্জিত সাংস্কৃতিক প্রয়াস ও অগ্রগতি সমাজের সুমার্জিত বিদগ্ধ সংস্কৃতি অপেক্ষা কমবেশী স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র শিক্ষাগত অতিপ্রযত্ন নিরপেক্ষ প্রধানত: ঐতিহ্যাশ্রয়ী বাকভাষা অঙ্গভাষা, কারুভাষা চারুকলা, পোষাক পরিচ্ছেদ, রান্নাবান্না, সুচ্ছন্দ, ক্রীড়া অভিনয়, ঔষধ, তুকতাক, প্রথা উৎসব, বিশ্বাস-সংক্রান্ত, ধর্ম-অনুষ্ঠান, মেলাপার্বন ইত্যাদিতে অভিব্যক্ত এবং ক্ষেত্রানুসারে সৃষ্টিশীল সক্রিয়তার মূর্ত বা বিস্মৃতিতে অবলুপ্ত হলেও; সামগ্রিকভাবে সামাজিক দ্বন্দ্বপাতের সচলতায় আদিম সমাজের হারানো অতীতে মূল প্রোথিত করে বিবর্তনের ধারায় চলমান কালের সত্যে উদ্ভাসিত হয়ে আগামী দিনের বাতাবরনে সম্প্রসারিত।

ড. মানস মজুমদারের আলোচনা

ড. মানস মজুমদার লোকসংস্কৃতির আলোচনায় বলেছে

"লোক সংস্কৃতির আলোচনায় 'লোক' বলতে কোন একজন মানুষকে বোঝায় না। বোঝায় এমন এক দল মানুষকে যারা সংহত একটি সমাজের বাসিন্দা। অর্থাৎ নির্দিষ্ট একটি একটি ভু-খন্ডে তারা বসবাস করে, তাদের আর্থিক কাঠামো একই রকম, জন্ম থেকে মৃত্যু এবং বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সকলে একই ধরনের বিশ্বাস-সংস্কার, আচার-আচরণ, প্রথা-পদ্ধতি, উৎসব অনুষ্ঠান পালন করে থাকে।"

লোক সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য :-

  • লোক সংস্কৃতির বিকাশের ক্ষেত্রে পল্লীজীবন বা গ্রামীন জীবন কথার চিত্রে ধরা পড়ে। কৃষিসমাজই এর প্রকৃষ্ট ক্ষেত্র।
  • সংহত বা গোষ্ঠীবদ্ধ সমাজ এর অবলম্বন।
  • লোকসংস্কৃতির স্রষ্টা সাধারণ সমষ্টি বা গোষ্ঠী বন্ধ মানুষ।
  • লোকসংস্কৃতির সৃষ্টি সাহিত্য মূলত নিরক্ষর মানুষের সৃষ্টি। এই সাহিত্য অলিখিত।
  • লোক সংস্কৃতির ক্ষেত্রে কোনো রচয়িতার বা স্রষ্ট নাম পাওয়া যায় না।
  • লোকসংস্কৃতি মাধ্যম মৌখিক।
  • লোকসংস্কৃতি মূলত স্মৃতি ও প্রতি নির্ভর।
  • লোকসংস্কৃতি প্রাণের তাগিদে স্বতস্ফূর্ত রচনা।
  • সরল, অকৃত্রিম ও আটপৌরে সৃষ্টি এটি।
  • লোক সংস্কৃত মূলত ঐতিহ্য নির্ভর।
  • লোক সংস্কৃতি বিবর্তনধর্মী এবং নমনীয়।

শিষ্ট সংস্কৃতির বৈশিষ্ট্য :-

  • শিষ্ট সংস্কৃতি শিক্ষিত, শিষ্ট সমাজের ক্ষেত্র।
  • শ্লথ সংহত সমাজে এর বিকাশ লক্ষনীয়।
  • একক বা ব্যাক্তিপ্রতিভা উচ্চ সংস্কৃতির স্রষ্টা।
  • এই সংস্কৃতির রূপটি হয় লিখি।
  • শিষ্ট সংস্কৃতির রচয়িতা ও শ্রষ্ঠার নাম পাওয়া যায়।
  • কোনো নির্দিষ্ট রচনা, পুঁথি, পুস্তক এর মধ্য দিয়ে এই সংস্কৃতির প্রকাশ পরিলক্ষিত হয়‌।
  • ‌‌উচ্চ সংস্কৃতির প্রকাশ লিপি বা মুদ্রন নির্ভর।
  • শিষ্ট সংস্কৃতি প্রযত্ন নির্ভর সৃষ্টি।
  • শিষ্ট সংস্কৃতি মূলত বৈদগ্ধময় রচনা।
  • উচ্চ সংস্কৃতি চলমান সমাজ ও জীবন নির্ভর বলেই এই সংস্কৃতির সর্বদা পরিবর্তনশীল।

লোকসংস্কৃতির শ্রেনীবিভাগ বা উপাদান :-

যে কোন সমাজ সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান পরিচয় হল- শিল্প-ভাস্কর্য সাহিত্য। একথা বললে অত্যুক্তি হয় না যে সাহিত্যের মাধ্যমেই সংস্কৃতির স্বরূপ উদ্ঘাটিত হয়ে থাকে। সেখানে উচ্চ সংস্কৃতির সঙ্গে নিন্ম সংস্কৃতির এক সুস্পষ্ট পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তাই অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে, একটা অন্ত্যজ মানুষের জীবন যাত্রার সাথে লোকসংস্কৃতির উপাদান গুলি ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। সেই লোক সংস্কৃতির উপাদান গুলিকে আমরা মোটামুটি নিম্নে আলোচনা করব-

বাককেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি :-

লোক সংস্কৃতির এই ধারাটি মৌখিক এবং ঐতিহ্য নির্ভর। যা দৈনন্দিন জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে। লোক মানুষেরা গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে তথ্য সমাজবদ্ধ ভাবে বসবাস করে, সমাজে বসবাস করা কালিন তারা দৈনন্দিন জীবনে কাজের মধ্য দিয়ে যে অভিজ্ঞতা লাভ করে সেই অভিজ্ঞতার বাস্তব এবং সর্ব্বৈ সত্য রূপ বাক্‌ময় হয়ে তাদের কর্ম পদ্ধতির মধ্য দিয়ে বাইরে প্রকাশিত হয়।

লোকসংস্কৃতির ঐতিহ্যবাহী মৌখিক সত্তাটি ধরা পড়ে এই বাককেন্দ্রিক বা কথাকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির মধ্যে। সাধারণত, ছড়া, ধাঁধা, প্রবাদ, লোককথা, লোকগীতি, মন্ত্র, গীতিকা, লোকনাট্যের সংলাপ অংশ এই শাখার অন্তর্গত।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায় -
"ছেলে ঘুমালো পাড়া জুড়া
বর্গী এলো দে
বুলবুলিতে ধান খেয়ে
খাজনা দেবো কিসে"

দোলনায় ঘুমপাড়াতে গিয়ে মায়ের মুখের এই যে ছড়া, কিংবা, একটুখানি মামা, গা বোঝাই জামা' (পেঁয়াজ) ধাঁধাটি অথবা 'জন জামাই ভাগ্না, তিন নয় আপনা'– প্রবাদটি এই বাককেন্দ্রিক শ্রেণীর উদাহরণ।

বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতি :-

লোক সমাজের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত উপাদানকেই বস্তুকেন্দ্রিক লোকসংস্কৃতির উপাদানের পর্যায়ভুক্ত করা হয়ে থাকে। সেখানে বাড়ি ঘর, খাদ্য, পানীয়, পোশাক পরিচ্ছদ, কুবিসরঞ্জাম, শিকার দ্রব্য আসবাবপত্র, বাদ্যযন্ত্র, যানবাহন প্রভৃতির পরিচয় উঠে আসে।

একটি বিশেষ অঞ্চলের মানুষেরা একবিশেষ ধরনের উপাদানের মাধ্যমে তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় চাহিদা মিটিয়ে থাকে। পাহাড়ি অঞ্চল আর সমতল ভূমির পার্থক্য ও ব্যবহৃত দ্রব্যাদির দ্বারা সম্পৃষ্ট হয়ে ওঠে বাংলার লোক সমাজে খাদ্য পানীয়ের মধ্যে রয়েছে ভাত, ডাল, রুটি, চিড়ে, মুড়ি, মই, নাড়, পিঠে, দুধ, ঘোল, খেজুর, তালের রস, খেজুরের গুড় ইত্যাদি। অঞ্চল ভেদে এই লোক মানুষের খাদ্যেরও পরিবর্তন ঘটে।

লোকসংস্কৃতি

লোক যে সংস্কৃতি দীর্ঘ যুগ ধরে লালন করছে তা লোকসংস্কৃতি। এ নিয়ে ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বতন্ত্র বিভাগ রয়েছে। গবেষণার কাজ এটি। লোকসংস্কৃতির বিশেষত্ব নিহিত আছে 'লোক' কথাটির মধ্যে। লোক সংস্কৃতির জন্ম সাধারণ মানুষের মুখে মুখে , তাদের চিন্তায় ও কর্মে। ঐতিহ্যনুসারে বৃহত্তর গ্রামীণ জনগোষ্টীর ধর্মীয় ও সামাজিক বিশ্বাস, আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠান, জীবন-যাপন প্রণালী, শিল্প ও বিনোদন ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সংস্কৃতিকে লোকজ সংস্কৃতি বলে।

.

আদিকাল থেকেই বাঙালীরা লোক সংস্কৃতি লালন করে আসছে। বাংলাদেশের লোক সংস্কৃতি এদেশের কৃষিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এটি বিরাজমান রয়েছে, তবে কালের পরিক্রমায় অনেক কিছুতেই পরিবর্তন এসেছে। এটি পরিবর্তন বলা যায় না, বিবর্তন যদিও।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...