Friday, March 31, 2023

মনন স্রোত, ত্রিপুরা

শ্রদ্ধাঞ্জলি | লিটল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ সন্দীপ দত্ত

শ্রদ্ধাঞ্জলি | কবি চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং

সম্পাদকীয়

চলে গেছেন লিটল ম্যাগাজিনের প্রাণপুরুষ, কঠিন জীবনের প্রহরী সন্দীপ দত্ত। তাঁর স্মৃতির প্রতি শুধুই শ্রদ্ধা। দেখানো পথেই আমাদের সম্পাদকীয় যাত্রা। এ ক্ষতি বড় ক্ষতি। রাজ্যের কবি চন্দ্রকান্ত মুড়াসিং চলে গেলেন অকস্মাৎ। দুদিক সামলে উঠা বড়ই কঠিন। এ মতাবস্থায় আগরতলা বইমেলা। স্মরণের মঞ্চ মূলত। স্মরণ করি। বিনম্র শ্রদ্ধা।


জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

Wednesday, March 29, 2023

জবা চৌধুরী

স্বপ্ন-সেতু

কবিতা লিখতে বসলেই একটা স্বপ্নের সেতু দেখি ।
বর্ণমালাদের দৌড়-ঝাঁপ অবিচ্ছিন্ন মমতার হাত ধরে 
দিন-রাত মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় সেখানে,  
পাকা ধানের শব্দ আর সন্ধ্যাপ্রদীপ একসাথে গান গায় 
চোখের জলের নীরবতা ভাঙতে 
ডুবপুকুরে টুপ্ করে লাফিয়ে ওঠে অচেনা এক মাছরাঙা  
মন কেমনের গায়ে লাগে প্রাণের ঢেউ। লেখনী এগোয়। 

পাশ দিয়ে নূপুরে রুমঝুম তুলে কে যেন চলে যায় 
সে মুখ দেখা হয়না, তাকে শুধু কল্পনায় আঁকি। 
নিষিদ্ধপ্রেম জেনেও তার গায়ে মেখে দিই একমুঠো জোছনা
মেঠো দীর্ঘপথ পেরোনো সে এক অচেনা কৃষ্ণকলি 
ভাটিয়ালি গানের সুরে-তালে বেঁচে থাক তার চলা।
অক্ষর জুড়ে চলে আমার অনন্ত মালাগাঁথা 
দুঃখ ভুলে মন স্বপ্ন কুড়োনোর খেলায় মাতে। লেখনী এগোয়। 

সেতু বানানোর শেষে বুক জুড়ে বয় মমতার স্নিগ্ধ ধারা    
মায়ের ভাষা শীতের চাদরের মতো জড়িয়ে ধরে আমায় 
মুগ্ধতার আবেশ আলো ঢেলে দেয় স্বপ্নের পথে  
আমি কল্কেপেড়ে শাড়িতে নিজেকে সাজাই 
বিভোর আমি পথ পেরোই --রোদ, বৃষ্টি, ঝড় 
নীল আকাশ মিশে যায় আমার সেতুপথে 
বসন্তশেষে আবার দাবদাহ আসবে জেনেও।

লেখনী শব্দ ছুঁয়ে থাকে --- সংগোপনে, স্বপ্ন দেখার ছলে।

পূজা মজুমদার

মেঘ বার্তা

এক একটি সময় পার হওয়া,
কিছু স্রোত ধরে রাখা
পাথর দিয়ে থেতো করা হলো
কয়েকটি কথা! 
পাতায় রাখা একফোঁটা বৃষ্টির জল ,
উপমা হয়ে হাঁটছে...
বিশ্বাসের মধ্যে লুকিয়া থাকা ঘাম ,
যার ওজন জানা নেই।
মুখের এঁটো কথা
হিংসার আলনাতে
ঝোলানো 
তৃষ্ণা মেটানো হলো সকালের 
আত্মভোলা মেঘ বার্তা নিয়ে এলো
সর্বহারা সংশয় 
মাটিতে কুড়িয়ে পেলাম
ভালোবাসার দানা ..
পৃথিবীর বাতাসে মিশে আছে শত-সহস্র বুকের দীর্ঘশ্বাস।

Tuesday, March 28, 2023

রাজীব চন্দ্র পাল

ইচ্ছে ডানা

ইচ্ছে করে
আমার যা কিছু নিজের সব বিলিয়ে দিই অকাতরে,
ইচ্ছে করে 
আমার যা কিছু ভালো সব ছড়িয়ে দিই অঙ্কুর করে,
ইচ্ছে করে
আমার সব হাসি দিয়ে হাসি ফোটাই নীড়ে নীড়ে,
ইচ্ছে করে
সকলের যত মন্দ আছে উড়িয়ে দিই ফুৎকারে,
ইচ্ছে করে
যার যত দহন আছে কুড়িয়ে আনি নিজের তরে,  
ইচ্ছে করে
যে আগন্তুক পথ হারায় পাথেয় হই তার তরে,
ইচ্ছে করে
সব মানুষকে আপন করি নিজের করে,
ইচ্ছে করে
আমার এই আমিটাকে উজাড় করি সকলের তরে।

দেবাশিস দাস

বিরুদ্ধতা
.
একটা ইমেজ থেকে জন্ম নেয় অনেকগুলো স্বেচ্ছামৃত্যু।

যেমন, ধানের খলা থেকে পিঁপড়ের পালানোর শব্দ
অথবা, ঝাড়াই এর পর ফেলে দেওয়া
অবাঞ্ছিত শস্য দানা বা মানুষ।

এভাবে একটা শীত চলে যায়।

মৃত্যু বা বিচ্ছেদের মতো স্বাভাবিক ঘটনা 
মানুষ আর শস্য দানার মতো গুরুত্ব হারিয়ে পড়ে থাকে শহরের ফুটপাতে  …

নন্দিতা দাস চৌধুরী

প্রতীক্ষার চিহ্ন 
.

খসে পড়া সম্পর্ক নদী হতে শিখিয়েছে,
অপেক্ষার প্রহরগুলো একাই গুমরে কাঁদে,

আজীবন শূন্যতা নিয়ে সন্ন্যাসী বিকেলকে বুকে আগলে রেখেই 
কন্টক পথ হাঁটা,

কত বসন্ত বর্ষা চলে যায় পাশ কেটে,
নক্ষত্র মাখা রাতের গন্ধ মেখে যায় কত কাল,
কখনো পেঁচার ডাকে ঘুম ভাঙে, 
একফালি চাঁদ বসে থাকে বারান্দায়, 

এ যেন দেবত্বের প্রতিভূ স্থাপন, 
নিয়মের স্রোত তো গড়ায় প্রতিক্ষণ,

শর্তহীন জড়িয়ে থাকা সে তো আদ্যোপান্ত ভগ্নাংশের সাথে,
স্মৃতির দাওয়ায় পড়ে থাকে এক প্রতীক্ষার চিহ্ন।

মিঠুন দেবনাথ

বিশ্বরূপের হাট
.
বিশ্বকোষে হাট বসেছে বাজার জুড়ে ঝড় ,
কেউ নিচ্ছে মুন্ডু গোটা কেউ নিচ্ছে ধর ।
কেউবা আবার দালাল সেজে ডলার দিনার ধরে ,
কেউবা আবার খুচরো নিয়ে চালা বস্তা ভরে ।
ঘুষ হয়েছে শ্বেত শব্দ সেলামী তাহার নাম ,
সুযোগ বুঝে পিঁপড়ে সেথায় নিচ্ছে চরম দাম ।
শেষের রাতে মোরগ ডাকে মাঝের রাতে পেঁচা ,
আড়াল থেকে তাকিয়ে দেখ চলছে কেনা বেচা ।
মাঝের পাতা যেমন তেমন সূচীপত্রে ধাঁধা ,
বস্তা পিঠে দৌঁড়ছে সেথায় দ্বিপদ যুক্ত গাধা ।
হাঁপিয়ে ঝাঁপিয়ে মরছে গাধা পায় না মরুর কুল ,
হাঁড়ে মাংসে একাকার বিকেল বেলায় ফুল !
মাঝের পাতা নাই বা হলো শেষেরপাতায় শোক , 
বিশ্বকোষের হৃদয় জুড়ে যাবর কাটার লোক ।
এমনি ওদের যায় না ধরা হরেক রকম সাজ ,
আলো আঁধার দুই বেলাতেই যাবর কাটার কাজ ।
কালো বেড়াল পথ কেটেছে দুই পা পিছে নাও ,
গন্ধ বুঝে সঙ্গ ছাড়ো বাঁচতে যদি চাও ।

সুস্মিতা মহাজন

কলঙ্ক 
.

একসাথে অনেকগুলো মনকে পুড়তে দিলাম,
শেষে বললাম ভালো থেকো!
জানি এগুলো ছাঁই হবে,
একটা সময় দমকা হাওয়ায় সবটা উড়ে যাবে।
কিছুটা আগুনের তাপের দাগ হবে শরীরে, 
জমাট বাঁধা কালো ছাঁইপোড়া দাগ।

পীযুষ রাউত

দোষ দেবো কাকে 

তিল তিল করে গড়ে তোলা,তিলোত্তমা না হয় না-ই বা হলো,আমার স্বপ্নের নির্মাণ
এই পর্ণকুটির, পরম শান্তির,সেই কবে থেকে দাউ
দাউ করে জ্বলছে, তখন বুঝিনি,এখন মর্মে মর্মে অনুভূত হচ্ছে ক্রোধ ও বিষাদ। কেননা তিনতলা 
দালানবাড়ির অনাবশ্যক লোভে আমিই স্বহস্তে সেদিন পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়েছি।সেই সে
আগুন রাবণের চিতার মতো আজো নিরবধি দাউ
দাউ করে জ্বলছে। এই সর্বনাশা লেলিহান আগুনকে একমাত্র আমিই বশে আনতে পারি 
আমার শত্রুকে আমিই বধ করতে পারি।কিন্তু পারছি কই? আর দোষের কথা যদি বলো,ভাবনাও
মননে দোষ দেবো কাকে?  দোষ দেবো  কাকে? 
দোষ, সেতো আমারই। দোষ সে তো আমারই
মহামূর্খ লোভের।

সুস্মিতা দেবনাথ

নারী ও নদী
.

রোজ রাতে মেয়েটির ঘুম ভেঙে যায়
কান পেতে কারো কান্নার শব্দ শুনে 
উঠে দাঁড়ায় অলিন্দে ,
না কাউকেই দেখতে পায় না...

ফিরে আসে ,
দেখে বিছানার পাশ দিয়ে 
কল কল শব্দে বয়ে যাচ্ছে নদী।

তাতে ডুব সাঁতার কাটছে 
হৃদয়ের জমাট কোলাহল
এক অদ্ভুত শূন্যতায়।

শুভ্রা দেব

বসন্ত বিলাস 
.
কুয়াশার চাদর গুটিয়ে 
প্রকৃতি পড়েছে সবুজ শাড়ী,
ঝড়াপাতার মর্মর শব্দে
কচিপাতার ঠোঁটে হাসির ঝিলিক।

রাঙা পলাশ ঘিরে 
বইছে প্রেমের জোয়ার, 
আবির মাখানো হাতে আঁকা
বুকভরা ভালোবাসার রেখা।

বসন্ত রাজের বিনিদ্র রাত কাটে
শীতের বিদায়ী সংবর্ধনায়,
কোকিলের কুহু রবে
অপ্রেমিকের গান বাজে।

তপ্ত উদাস নির্জন দুপুর 
স্বপ্ন বুনে রাশি রাশি ,
কখন মনে জাগবে ফাগুন 
প্রিয় মানুষের হাতের ছোঁয়ায়।

হলদে শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে 
লুকানো মনের অভিলাষ,
খোঁপায় দুলানো কৃষ্ণচূড়া 
নীরব প্রেমের গল্প শোনায়।

আলমগীর কবীর

মৃত্যু 
.

আমরা প্রতিদিন, প্রতি মুহুর্ত, প্রতি ঘন্টা,  প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড মৃত্যুবরন করি।

শুধু আমরা নয় আমাদের আশে পাশে অগণিত প্রিয়জন মৃত্যুর দিকে চলে যায় আমাদের চোখের সামনেই।

 আমরা একটুও ভাবিনা।  গভীর ভাবেতো একদমই নয়! আমাদের দিকে চেয়ে থাকে আমাদের পিতা মাতা....

কত স্বপ্ন দেখে, কত কি কল্পনা করে সাজিয়ে রাখে আমাদের জীবন, শুধু অপেক্ষা করে কোনো এক মুহুর্তের! 

ভরসাবিহীন অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, আমাদের জীবন বেড়ে উঠার দিকে, 
আর আমরা ফুর্তির ঘোড়ার পিঠে চড়ে ঘুরে বেড়াই। 

কোথায় যাই, কেনো যাই কিছুই জানিনা
এদিকে শত ইচ্ছে, ভরসা, স্বপ্নের মৃত্যুর জন্য দায়ী আমরা!

এমন অসংখ্য মৃত্যু হয় আমাদের জন্য আমরা বুঝিনা,
আমরা বুঝতে চাইনা,! 
ভুলে গেছি আমরা লাশের স্তুপের উপর বাস করি!

দিন দিন এতো মৃত্যু হয় যে বাতাসে শুধু দুর্গন্ধ
কিন্তুু আমরা এমনভাবে হারিয়ে গেছি আমরা কোনো গন্ধ পাইনা...!

রাজদ্বীপ সাহা

দহনে
.
জানি এবার যেতেই হবে,
ক্লান্ত সবাই। ঘুমালে সবে।
শেষ বিপ্লবে
ভেসে আসে বেদনার ডাক।

হঠাৎই জীবন তছনছ ঝড়ে,
জমি দিও তোমার কবরে —
আফিমের ঘোরে
ধীরে ধীরে বাড়ে সন্তাপ...

সাজিয়ে দিয়েছি তোমায় বর্ণে,
চোখ মেললেই, জ্বর নেই —
একদিন থামবেই
তুমিও সেদিন রাখবে হাত হাতে।

সন্তাপে পুড়ছে তাই প্রণয় —
রোজ চলে ভালো থাকার অভিনয়
শখ নয়
বালিশ ভেজানো, প্রতি রাতে...

লোকে ভাবে পলাতক ক্ষত,
সবই যাচ্ছে দূরে ক্রমাগত। 
হৃদয়ে ক্ষত
পোড়ার খবর কেউ রাখেনা মনে।

অবয়বের সংখ্যা বাড়ে ভোরে
তাই গান গাই বিষাদী সুরে —
যাচ্ছো দূরে
পুড়ছি তাই। তোমার দহনে...

মিঠুন রায়

কল্পদ্রুম
.
তোমার সচেতন চোখে পড়ে আছে নগ্নতার ছায়া।
ছায়া মাড়িয়েই সুবিধাবাদীরা স্বপ্ন দেখে মায়াবী সিংহাসনের।
দিন বদলের অভিনয় অবশেষে থমকে দাঁড়ায়।      কথা ও কবিতার  গ্লানি
আগামীর রাত নিশ্চিহ্ন করে দেয়  দুঃস্বপ্নের কল্পদ্রুমকে।
সুযোগ বুঝে সুবিধাবাদীরা  লুট করে আমার সর্বস্ব...

সঙ্ঘমিত্রা নিয়োগী

শীর্ণকায় সংসার
.
অনাহারের দিন ঘামের দরে বিক্রি হচ্ছে। 
রাত্রির গমগম বিলাস ছেড়ে সকাল 
  কারোর ঠোঁটে বাঁচবার দীর্ঘ আবদার, 
অবশ টেবিলে যন্ত্রণা বসে আছে চুপচাপ , 
 পরিচারিকা ধার নিয়েছিল
ঘুম ফুটো হয়ে যাওয়া সংসার জোড়া দিতে;
দেখতে পেলাম শিখাদির চোখে
   সংসার সুখ খেলছে
 উপন্যাস প্রকাশিত হবে
যে বেলায় শিশুরা পড়ছে রোদ, 
তুমুল প্রেক্ষাপট টেনে
ধার নেওয়া টাকা  ফেরত চেয়েছি, 
প্রকাশিতব্য উপন্যাসের কল্পনা ছিঁড়ে আমি অপলক তাকিয়ে
 শিখাদির চোখ থেকে 
ফাগুনের পাতার মতো 
 সংসার ঝুরঝুরে পড়ছে।।

নীলমণি দাস

শিশু
.
একটা শিশুর মুখ 
শান্ত ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ,

একটা শিশুর কান্না 
সূর্য্যের শক্তিতে ভরপুর,

একটা শিশুর পেলব স্পর্শ
শিরায় শিরায় অনাবিল অনুভূতির স্রোত,

একটা শিশুর মিটিমিটি দৃষ্টি
হাজারো প্রশ্নের ছড়াছড়ি,

একটা শিশুর হাসি ভালোবাসার অমোঘ ব্যাপ্তি,

একটা শিশু আগামীর পথিক।

শ্রীমান দাস

ঘর   
.

তোমার চৌহদ্দি জুড়ে অবিশ্বাসের দমকা হাওয়া,
এ প্রান্তে আমার আদর্শের জীর্ণ কুঁড়েঘর।

উন্মাদিনী ঝঞ্ঝা এসে নাড়া দেয় বারংবার,
আমি বুক পেতে আগলে রাখি ঘর।

হোক না এ ঘর জীর্ণ,থাক না দুঃসময়ের গ্লানি
তবু এ মায়ার আচ্ছাদন আপন বলেই জানি।

যে ঘর তুমি ভাঙতে চেয়ছো অবিশ্বাসী প্রলয়ে 
সে ঘর আমায় আশ্বস্ত করে প্রতিটি ভোরে।

তুমি যতই ছিঁটাও কালিমা - মিথ্যা অভিযোগ
তবু এ ঘর আমার কাছে প্রেরণাদায়ী মন্দির।

মুকুল রায়

গত্যন্তর নাই
.
এত গ্রামার মেনে হবেটা কী?
এই যে কোকিল গাইছে
ও কী গ্রামার বুঝে...
ও কী শুদ্ধ স্বর কোমল স্বর বোঝে?
অথচ ওর কুহুতানে কত তপ্ত হৃদয়ের জ্বালা সরে যায় কবির কবিতা সৃষ্টির প্রেরণা 
ওই যে কাল চুল মুন্ডুতে
আাড়ালে সাদাকে অস্বীকার করতে পারবে? 
কোনও দুরভিসন্ধি নেই, অকপটে বলতে পারবে?
গলা সপ্তমে চড়িয়ে লতা মুঙেশকর, কিশোর কুমার হতে চেয়েছ, অস্বীকার করতে পারবে?
মানুষ ভাবে এক, ভগবান করেন আরেক
সরল সাদাটে থাকতে চেয়েছ
তবু্ও আদালতের দ্বারস্থ হয়েছ
সত্যি জেনেও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছ
ভগবানের আরাধনায় মগ্ন হতে চেয়েছ হয়ত
শতাধিক কারণে শতবার তা ভন্ডুল হয়েছে
শতাধিক কারনে স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয়েছে
জীবন-মৃত্যুর দোটানায় সদিচ্ছার অকাল মৃত্যু হয়েছে 
জীবনের চৌমুহনীতে এসে সিদ্ধান্তে দিশেহারা 
গত্যন্তর নাই সব মেনে নেওয়া ছাড়া।।

পঞ্চু পোড়েল

বসন্তের দ্বিপ্রহর
.
দূরে দেখি চেয়ে গ্রামের ছেলে মেয়ে
ব্যস্ত আবির খেলায়
একাকী নির্জনে গৃহের এক কোণে
শান্ত দুপুর বেলায়।
মনে ওঠে ঢেউ বুঝলো না কেউ
ভগ্ন হৃদয়ের ব্যথা
বোঝে শেষমেষ সুজলা পরিবেশ
আমার মনের কথা।
ওই দেখা যায় অরণ্যের গায়
আগুনের বহ্নিশিখা
ফাগুনের মাস শিমুল পলাশ
অরণ্যের সীমারেখা।
ফুলের সুবাস বয়ে আনে বাতাস
মৌমাছির ঘ্রাণ ভরে
গুনগুন গানে কত কথা প্রানে
চলে দীর্ঘ সময় ধরে।
করে ডাকাডাকি কত রকম পাখি
ক্লান্তি ভাঙা স্বরে
কপোত কপোতী প্রেমেতে আহুতি
নিজের বানানো ঘরে।

সৈকত মজুমদার

মেকি ভালোবাসা

আর এসো না
আর কখনো এসো না,
আমার সুখে অসুখে কিম্বা
আমার আনন্দে বিষাদে
বিরহ বিচ্ছেদে আর শশ্মানে
তোমাকে দেখতে চাই না;

তুমি আর কোনদিন এসো না,
তোমার মেকি ভালোবাসা চাই না
আমার এই অচল জীবনে। 

রূপঙ্কর পাল

একটি অন্ধকার রাত 
.
চারদিকটা আলোর বৃত্ত, মাঝে ছোট্ট অন্ধকার 
আলোকে যেনো জাপটে ধরে তা–
বহু কাহিনি রহস্যে ঘেরা, তবুও
সমাধানের সূত্রে রাত কেটে সূর্যোদয়,
কিন্তু, না মেলানো অংকের মত সবটা...
নিস্তব্ধ-নিরালা যাপন, গল্পের ভীড় চোখে
ঘুমহীন, আয়নায় অন্য চেহেরা – অদ্ভুত!
নিজেকে না চেনা, প্রশ্ন করা, উত্তর হাতড়ানো;
কোনো এক বোধ ঠিক মাথার উপর
খেলায় মেতে উঠে, একটা সময় মিলে যায়
তখন সূর্যটা ঠিক বুকের উপর, সম্পূর্ণ দিন।

আশিষ ভট্টাচার্য

বলো কী লাভ
.
এই দগ্ধ বসন্তে সংগীত! শিশু!
কোন কিছুই যে লাগে না ভালো,
ভোরের কাগজ খুললেই 
চারদিকে শুধু অগ্নিসংবাদ।

আমরা অর্জন করি প্রতারণা,
বর্জন করি না কিছুই ;
আজকাল ক্যাডার নার্সিং নেই বলেই
শিখতে পারি না ফুল ফোটানোর কলা,
মরার আগেই মরে যাই কতোবার।

বৈমানিক হয়ে কী লাভ 
না যদি হতে পারি সেই 
"মানুষের মত মানুষ" ?

চন্দন পাল

চৈত্র 
.
কাঠ ফাটা রোদের শ্বাসে মাঠঘাট যেন পিপাসায় মরে।  
বছর দেনায় শূণ্য গোলা, ঘর নিল কালবৈশাখী ঝরে।

ঢাকী ফিরা গাঁজন, হালখাতা, সন্ধিতে নববর্ষ বর্ষ অন্ত।
বাসন্তী পূজা সুদিন বোধন, অভাবেও যেন টুকরো বসন্ত।

পাড়ায় পাড়ায় চড়ক মেলা  কসরতে গাঁথে বড়শি পিঠে 
রিডেকশান আর চৈত্র সেল  উপচে পড়ে গড়ের মাঠে।

আলু তরমুজ মটর চরে, আমকুশি সাজনা ডালে ডালে, 
ঘরদোর মুছে ক্রান্তিকালে লাড়ু চিড়া দই সাজায় থালে।

প্রণব দাস

সার্পোউইস

মূর্খামির ইতিহাস বানায় হোলিজেন আর সেক্টারিয়ান,
ঢেউ যেদিন ব্রিজ বেয়ে যায়,সভ্যতা চায় মিউটেশান।
শীতের দরজায় ঠোক বসায়,আসে বসন্তের সমাগম-
যদি কেউ চিৎকার করে,শেষ বলে সাধারণ।

কোথাও যেন শূন্যতায় ঘিরে আছে চারপাশ,
কোথাও হৃদদরজায় শুধু ছাইয়ের বাস!
কোথাও ঘামে ব্যথা কষ্টরা পুড়ে যায় লেলিহান শিখায়
আর কোথাও নীরবতা চোখ মেলে যায় নীরবতার ঠিকানায়-
 
তবে বাস্তব যখন কঠোরতা হানে-
বাতাসের ডাক আসে এক উষ্ণ হাওয়ার,
এখনো ক্লান্ত হৃদয়ে সুবিশাল দীর্ঘশ্বাস
যখন বিষন্নতায় ছারখার আশপাশ!

তবে শান্তির একটা ঝড়ো বাতাস আসুক,
প্রবলাবেগে ভেসে যাবো অদ্ভুত মনোচ্ছাসে।

অপাংশু দেবনাথ

ধান্দা
.
রূপ বদলাতে বদলাতে চোখে মুখে প্রাজ্ঞতা আসে, 
চামড়ার ভেতর জেগেছে কৃপণ-কামুক মন।
.
ধান্দা বেঁচে বর্তে থাক ছলনার অভিসারে।

অনামিকা লস্কর

ভাঙ্গা স্বপ্নের গৃহিণী
.
ছোটবেলা বর বউ খেলার সময় 
গোপাল আমার বর হয়েছিল--
বড়ো হয়ে কতোবার বলেছি
আমি আর বউ হবো না। 
গোপাল বর হলো না, বরং আমি-! 
 
কথা হয়েছিল ঘরের চব্বিশটা দরজা জানালা দুজনে খুলবো বন্ধ করবো। 
বেসিন বাথরুম পালাক্রমে হবে পরিষ্কার, ঘরের সব কাজ দুজনে মিলে করবো। 
সব কথা ভুল ছিল, আমি গিন্নি হলাম
পাকা ভাবেই পুরো বাড়ির মালিকানা। 
বন্ধুদের সামনে যখন তখন যাবে না, তাইতো পরপুরুষের সামনে গিয়ে কি লাভ?  

বন্ধুর বউদের সঙ্গে আড্ডা গল্প সারেন
খুব মিশুকে আধুনিক মেয়ের সংজ্ঞা পাই। 
আমি আধুনিক মিশুকে হওয়ার স্বপ্ন দেখতেও ক্লান্ত বোধ করি। 

দক্ষিণ দিকের সব জানালা খুলে দেবে,রোজ দিন তাই করি। 
পাশের বাড়ির সুন্দরী বউটা পূজো সেরে ছাদে আসে, পায়চারী করে এদিক ওদিক। 
চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে প্রভাকরের আলোয় লাবণ্য প্রভার দর্শন ভালো লাগে। 
আমার খারাপ লাগে এটা বলিনি কোনোদিন ,বলতে ইচ্ছে করেনি।

কৃষ্ণেন্দু অধিকারী

তখন মাঝ রাত
.
বিছানায় আমি একা নই।
পাশের বালিশে অদৃশ্য এক ঘুম-
ঘুম কথা বলে,
জড়িয়ে ধরে
চুমু খায়-
আর প্রতিটা চুমুর পর
আমি মধ্য রাতের ভূত হয়ে বসে থাকি
কবিতা লিখবো বলে।

উর্মি সাহা

জাদু-বাস্তব

আমার তালিকায় মুখ চেনা মেয়েগুলো অবহেলায় অনাদরে ভুগছে।
বিশেষ বিষের পেয়ালা চাইছে,
অনাহারে অভদ্রতায় জড়িয়ে নিয়েছে নিজের মনকে।
ভালোবাসায় ভালবেসে ছুরাঘাত দিচ্ছে, নয়তো নিচ্ছে।
নেতা মন্ত্রী আমলা দের মত এরা ভবিষ্যত বাণী জানে না,
কিন্তু; এরা ভালো খারাপের পার্থক্য বুঝে গেছে!
এরা বুঝে গেছে-
চারিদিকে শুধু ম্যাজিক রিয়ালিজম।
তাই মেয়ে গুলো জানে, চৌমাথায় তাদের আরশোলার মত থেতলে লাথি মেরে ফেলবে সবাই।
তাই মা'কে বলে এসেছে ফিরতি পথে-
প্রাণ থাকতেও পারে
নাও থাকতে পারে। 
                                                          

সংগীত শীল

রাত্রি শেষে

সমস্ত পথের ধুলো মাড়িয়ে  
নতুন করে জীবন আঁকতে বসলাম,
তুমি ঠিক আগের মতই পাশে আছো মল্লিকা
তোমাকে ভুলে যেতে হয়নি
ভুলা সম্ভব না,
তোমায় নিয়ে আমার হৃদয়মননে 
তারুণ্যের খেলা; তাইতো মল্লিকাকুঞ্জে ভ্রমর উড়ে।

কত নিন্দা উপেক্ষা করেছি,
তবুও তোমার আমার দূরত্বে 
বিষন্নতার ছোঁয়াচ লাগতে দিইনি কখনো,
জাপটে ধরার প্রবল তৃষ্ণা
আজও আমাকে বেঁধে রেখেছে।

যেমন করে স্বপ্ন দেখিয়েছো আকাশছোঁয়ার
থেকেছো জীবনযুদ্ধের সাক্ষ্য হয়ে।
হেরে গিয়ে উঠে দাঁড়াতে
তোমার কথা মনে পড়ছে;
এভাবেই উপসংহারে চিহ্নের দাগ রেখে যেও
আমিও এক এক সিঁড়ি বেয়ে যাব।

জিএম কামরুল হাসান


অভিমান!
.
অভিমান....
তুমি বড়ই নস্ট 
তোমার স্বভাবের বড় অভাব
তুমি তিলকে কর তাল, চেতন কে মাতাল
তুমি ঘুন পোকার মতো কুরে কুরে
নিশ্বাস করো বিশ্বাসের বেড়া
সোজা মানুষের অন্তরে ঢুকে কর ত্যাড়া!
অভিমান....
তুমি দাও বড় কস্ট
তোমার কারনে ঘর ভাঙ্গে যার তার
ছেড়ে যায় কার সব সম্পর্ক 
তুমি ঘন ঘন রং বদলাও ইচ্ছে মত
বর্ণচোরা সাপের মত তুমি 
তোমাকে বিশ্বাস করে বহু ঠকেছি!
অভিমান.....
তুমি গড়তে পারনি কোন বিশ্বাস
তুমি দুঃখ দিতে গড়েছো সেই ইতিহাস
আপন করেছি তোমায়, বোঝেনি ওরা
দূরে সরে যায় তাও বোঝেনা
ওরে নিষ্ঠুর ওরে হতভাগা হতচ্ছাড়া
সব কেড়ে নিয়েও কি তোর সাধ মিটেনা!

অভীককুমার দে

নীলপাখি

১)
নদীটি মুহুরীর মতোই
বৃষ্টি শেষের জলে সোনারোদের আলো

হতে পারে শূন্য
তবুও আকাশের জায়গা হয় 
বন্দর ছেড়ে উড়ে আসে মেঘ
এই বুকে-

ছবি-ছবি খেলা শেষে পালিয়ে যায় নীলপাখি।

২)
আমরা তাল খুঁজি পরগাছার কাছে
যত্তসব কোন্দল, এখানেই-
ঝুলন্ত দেহ, আহত নগর, শিকারী তারা 
ভয়াল রাত বিলি করছে নিয়মিত 

শূন্য বলেই, বুক থেকে তুলে রাখি সুখ
অথচ আকাশ ঢুকে পড়ছে, আকাশে-

নীলপাখিটি মাটির খোঁজে শেয়াল হয়ে যায়।

বিনয় শীল

বেয়াদপ
(রাশিয়া-ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে)

সুতা নাতার ধূয়া তুলে
যুদ্ধবাজরা শান্তি ভুলে
ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান দিয়ে
বোমার আঘাত হানছে।
গগনচুম্বী ভবন গুলো
বিকট শব্দে ভাঙছে ।।

যুদ্ধে তো নাই দাড়ি-কমা,
এদিক ওদিক ফেলছে বোমা,
বনভূমের দাবানল, 
শহর বুকে আনছে।
স্ব-জন হারা হয়ে মানুষ, 
অঝোর চোখে কানছে ।।

টেঙ্ক-মিসাইল-ফাইটার-বম্বার,
বিধ্বংসী সব অস্ত্র সম্ভার,
গুলি বৃষ্টি করতে সেনা,
ট্রিগার চেপে টানছে।
যুদ্ধ চাইতে শান্তি দামী,
কে কার কথা মানছে ।।

কামানের কি বিবরণ,
আগুন গোলার উদগীরণ,
জীবন ভূমি ধ্বংস করতে 
উল্কা বেগে ছুটছে।
এতেই কিছু বেয়াদপরা 
বেজায় মজা লুটছে ।।

মানবতার বন্ধু যারা,
সঙ্গোপনে জাগছে তারা,
অমানবিক ধ্বংস কান্ডে
ধৈর্য তাদের টুটছে।
চিতা সাজায় তোদের লাগি
কবর সারি খুঁড়ছে ।।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...