Tuesday, April 28, 2020

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম || ঘরে থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন || পৃথিবীটা আবার স্বপ্নের দেশ হোক ||

ছবিতে মনন স্রোত মডেল শিল্পী সমুন || ক্যামেরায় দ্বীপজ্যোতি চক্রবর্তী|| হেরিটেজ পার্ক, আগরতলা ||

সম্পাদকীয়

এই মুহুর্তে জীবনের লক্ষ্য বেঁচে থাকা।

আপদকালীন পরিস্থিতির কারণে যথাসময়ে সংখ্যাটি প্রকাশ করা যায়নি বলে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। এখন যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক সেটাও বলছি না। কথা দিয়েছিলাম উদ্যমের কথা দিয়ে এই সংখ্যা সাজাবো, যাতে করে কিছুটা হলেও মানসিকভাবে স্বস্তি পাই। তবুও সব লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি! 

নবীন প্রবীন কবি সাহিত্যিকের কলমে সমৃদ্ধ এই মাসের সংখ্যা। কিছু কিছু সংখ্যা এমন হওয়া উচিত কিনা ফিডব্যাক দেবেন অফিসিয়াল ইমেইলে। এই অসময়ের সংখ্যায় যাঁরা লিখলেন সকলকে আমরা কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবশেষে এই কথা বলে ইতি টানবো - মনখারাপি নয়, আমাদেরই জয়।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মননস্রোত

ছবিতে মনন স্রোত মডেল শিল্পী সুমন || ক্যামেরায় রনি দ্বীপজ্যোতি চক্রবর্তী || আগরতলা লক্ষী নারায়ন বাড়ি ||

নিপু দাস

মন খারাপি নয়,আমাদেরই জয়


দেশ জুড়ে আজ স্তব্ধতা
ছড়িয়ে-ছিটিঁয়ে আছে
বন্ধ ঘরে মানবেরাও আজ
মনখারাপী নিয়ে বেঁচে আছে।

যুদ্ধ নয়,হিংসা নয়
নেই কোনোও দাম্ভিকতা,
ধুঁকছে শহর,ধুকঁছে রাজপথ
ধুকঁছে বিশ্ব জনতা।

ধরিত্রী আজ মরন ভাইরাসে
বিশ্ব স্বাস্থ‍্য সংস্থাকেও দিতেছে টেক‍্যা
রাজনীতির মন্চেও আজ
টিকে থাকার লড়াইয়ে নেতাদের
হয়ে যাচ্ছে মুখ বেক‍্যা।

সহজ সরল মানব জীবন
হয়ে গেছে আজ দূর্বিষয়
বন্ধ ঘরে আর বসছে না মন
দেখছে নতুন সূর্যের আগমন।

এর মাঝেও আশার আলো
দেখছে বিশ্ব জনতা,
মন খারাপি থেকে বদলে যাবে 
আমাদের জয়ের পূর্ণতা।

মোঃ রুবেল

আগামীর প্রত্যাশা
              
বিশ্ব কাঁপছে -
মরণ ত্রাসে।
 মারণব্যাধি করোনার প্রাদুর্ভাবে।
মানুষে- মানুষে এখন ব্যাপক দূরত্ব।
এইতো করোনা রুখার প্রধান শর্ত।
স্বাস্থ্যবিধি চলো মেনে,
সুন্দর আগামীর আয়োজনে।
বাঁচার রসদ খুঁজি মোরা,
দিন-রাত প্রহর গুণা।
একটি নতুন ভোরের আশায়,
সঙ্গোপনে স্বপ্ন সাজায়।

সিদ্ধার্থ সাহা

লকডাউন

বিছানায় শুয়ে শুয়ে সাদা কাগজে কলমের আঁকিবুঁকি কাটছিল বিহান। মনটা একদম যে শান্ত তা নয়, বরং উদ্বেগের বলি রেখা কপালে দাগ কেটে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছিল তাতে। কালো স্যান্ডো আর নীল সাদা ছোপ ছোপ এর বাড়মুডা পরে আপাতত বিছানায় শুয়ে কলম চালাচ্ছে বছর ত্রিশের এই যুবক। পেশায় ইঞ্জিনিয়ার, কিন্তু ভালবাসে ছবি আঁকতে। তার ছবি নাকি কথা বলে, এই কথাটা বহুবার শুনেছে অনেকের মুখে। সাদা কাগজে একবার কালির দাগ পরে গেলে, তা আর সাদা থাকে নাকি? বিহানের কাগজে আজকে উঠে এসেছে “করোনা ভাইরাস”......। একটা দুটো নয়, অনেক গুলি করোনা ভাইরাস। শয়ে শয়ে লাখে লাখে তারা দল বেধে ঝাঁপিয়ে পরছে ডানদিকের পৃথিবীতে। বিহান দেখল, পৃথিবীর মানচিত্রটা ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে। একের পর এক শহর গুলি লাল হয়ে যাচ্ছে। অথচ আজ থেকে দিন কতক আগেও পৃথিবী এতটা ভয়ঙ্কর ছিল না। ছবি আঁকতে আঁকতে বিহান অন্যমনস্ক হয়ে পরে। এই লকডাউনের দিনগুলি এইভাবে কাটানো বড্ড যন্ত্রণার।

বিহানের পাশের ফ্ল্যাটে একজন মধ্যবয়স্ক দাদা থাকেন। খুব দারুন কথা বলেন তিনি। সেই কখন থেকে জানালার সামনে বসে কথা বলে চলেছেন ফোনে। হয়ত প্রেমিকার সাথে! নাহ, প্রেমিকা হবে না। নয়ত এত জোরে জোরে কেউ কথা বলে না। ফোনের অন্য প্রান্তে নিশ্চয়ই কোন বন্ধু বা আত্মীয় গোছের কেউ হবে। যেন কিছু বোঝাচ্ছে ওই মানুষটিকে। বিহান কান পাতে, সতর্ক হয়, যদি কোন নতুন খবর পাওয়া যায়। এভাবে অন্যের ব্যাক্তিগত কথা শোনা ঠিক নয়, কিন্তু উনি তো আড়ালে করছেন না, উনি এমন ভাবে বলছেন যে জানালা ভেদ করে শব্দতরঙ্গরা এদিক ওদিক ভেসে পরছে। সেখান থেকে বিহান যদি একটা দুটো শব্দ কুড়িয়ে নেয় তাতে দোষের কি? 

মধ্যবয়স্ক লোকটি বলছেন, জানো তো এই সময় অনেক রকমের মানুষ দেখতে পাবে, একদল এখন রাজনীতি করবে, বলবে এইটা করা দরকার ছিলো, সেইটা করা দরকার ছিল, অন্যদল ধর্ম ধর্ম করে মাথায় তুলবে। কেউ খুব ভয় পেয়ে ঘরে বসে থাকবে, আবার কেউ, “আমার কিছু হবে না” গোছের ভাবধারা নিয়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াবে। কেউ পরিবার প্রিয়জন থেকে অনেক দূরে, ভাবছে কবে আবার তাদের সাথে দেখা হবে। কেউ মন মরা হয়ে মৃত্যর দিন গুনছে, আবার কেউ বা খোশ মেজাজে গল্প করছে, কেউ ছবি আঁকছে, গান করছে, কেউ মৃত্যু ভয়কে তুচ্ছ করে চিকিৎসা পরিসেবা দিয়ে চলছে। কিন্তু সামাজিক দূরত্ব নয়, শারীরিক দূরত্ব বলাটাই বোধ হয় এই সময় যথোপযুক্ত......  

এইটুকু বলে থামলেন, সেই মধ্যবয়স্ক লোকটি। হয়ত অন্যপ্রান্তের মানুষটি কিছু বলছেন, তা শুনছেন মন দিয়ে। বিহান ভাবছে, সে ঠিক কোন দলে পরে? ভয় পাচ্ছে? কান্না পাচ্ছে? নাকি কোথাও না কোথাও মৃত্যুর প্রহর গুনছে? খবরে আক্রান্তের চিত্রলেখাটা ক্রমশ উপরের দিকেই উঠে চলেছে। কিছু অসতর্ক মানুষ ক্রমাগত ছড়িয়ে দিচ্ছে আসে পাশে। সন্দেহ দানা বাধে মনে, এইটা কারোর ষড়যন্ত্র নয়তো? কি জানি ইচ্ছে করেই হয়ত এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিচ্ছে, মানব সভ্যতা ধ্বংসের জন্যে!! ভীষণ গোলমেলে। কি জানি আর মাথা কাজ করছে না বিহানের। সামাজিক মাধ্যমের অ্যাপগুলিতে এত্ত আলোচনা বিহানকে আরও দুর্বল করে দিচ্ছে। সে নিজেকে যতটা পারে সবকিছুর থেকে দূরে সরিয়ে রাখছে, আজ আর এসব নিয়ে আলোচনা ভাল লাগছে না। 
“দেখো পৃথিবী আর কোনদিন করোনা মুক্ত হবে না”, মধ্যবয়স্ক লোকটির কথায় আবার সতর্ক হয় বিহান। “এই সব ভাইরাস যুগ যুগ ধরেই তো ছিল। কলেরা প্লেগের মত। সেইগুলি যখন এসেছে সমাজের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক। অনেক বছরের গবেষণায় টীকা বেড়িয়েছে। মানুষ এখন সেসব রোগে আর মরে না। এইটিও কোন নতুন ভাইরাস নয়, কিন্তু এর মধ্যে জীনগত কিছু চারিত্রিক বৈশিষ্ট যুক্ত হয়ে তা এতটা ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর সাথে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে।নিজের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হবে যতদিন না অব্দি এর টীকা আবিষ্কার হয়। এইসময় হা হুতাশ করলে আদতে এর থেকে কোন মুক্তি মিলবে না। দেখো ঔষধ যখন তৈরি হয় তখন তাতেও একটা সমাপ্তির দিন দেওয়া থাকে। আবার নতুন ঔষধও তৈরি হয়। এটি তো একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া চলতেই থাকবে। যতদিন পৃথিবীর প্রয়োজন হবে এর উৎপাদন হবে। যখন হবে না, বন্ধ হয়ে যাবে। প্রতিটি মানুষও একটি সমাপ্তি দিন নিয়েই আসে পৃথিবীতে। যেতে তো সবাইকেই হবে। অমর কে বলো? তাই মৃত্যু ভয় রেখো না, কিন্তু সতর্ক থাকো, নির্দেশাবলী সব মেনে চলো। পৃথিবীকে এইবার তার হিসেব টা বুঝে নিতে দাও। এখন মার্চ মাস শেষ তার ক্লোজিংএর কাজ চলছে” এই টুকু বলে উনি হা হা হা করে হেসে উঠেন। বিহানও মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। বিহান ভাবে, পাড়ার চায়ের দোকানগুলি কবে থেকে বন্ধ। সেইগুলি খোলা থাকলে এতদিনে করোনা ভাইরাসের টীকা আবিষ্কার হয়ে যেত!! পাশের ফ্ল্যাটের লোকটি আবার বলতে থাকে, “এই কটা দিন আমি কি করছি জানো? সকালে ঘুম থেকে উঠে আমার যা রোজকার নামচা থাকে, প্রাণায়াম, যোগব্যায়াম ইত্যাদি করে, ঘরের কাজে লেগে পরছি। কাজের মাসিকে ছুটি দিয়ে দিয়েছি অনেকদিন হল। সপ্তাহে একদিন বাজার করছি, ভিড়ের জায়গা এড়িয়ে চলছি। দুপুরের দিকে একটু খবর টা দেখছি, আর সন্ধ্যের দিকেও। একটু খবরটা রাখতে নয়। নয়ত আবার বেপরোয়া হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠেই খবর দেখে মনটা বিচলিত করা কিংবা রাতে শুতে যাবার আগে এইসব খবর দেখা মনকে অশান্ত করে দেবে। এখন মনকে শান্ত রাখা, খুশি রাখা একান্ত জরুরি। বাগানের গাছগুলির সাথে সময় কাটাচ্ছি। মাঝে মাঝে তাদের সাথে কথা বলি। আর পুরোনো বন্ধু যারা আছে, প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন যাদের সাথে অনেকদিন কথা হয়না, একটু কথা বলে নিচ্ছি সময় করে। এই যে দীর্ঘ এতটা সময়, নিজেকে একটু ডুব মেরে দেখছি, এতটা বছর কি ভাল করলাম, কি খারাপ করলাম। মাঝে কোনদিন অফিসের কাজ থাকলে অবশ্য বেড়ুতে হচ্ছে, আমাদের তো এখন রোস্টার ডিউটি চলছে। এছাড়া যতটা সম্ভব ঘরেই থাকা”। 

বিহান ছবি আঁকা শেষ করে চমকে উঠে, একি তার খাতার করোনা ভাইরাস গুলি কোথায় গেল? এইখানে তো একটি সুন্দর সকালের ছবি, কত্ত গাছ, নদীর জল আর পাখী। হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে একজোড়া কপোতকপোতী। বসন্তের লালচে হলুদ পাতাগুলি ঝড়ে নতুন কচি সবুজ পাতা গজিয়েছে। তারা কথা বলে চলেছে, এক অন্য বসন্তের না বলা অনেক কথা। বিহান আর বিরক্ত করতে চায় না তাদের। তোরা খানিকটা কথা বল, সবুজের নিঃশ্বাসে ফুসফুসে ভরে উঠুক নতুন অক্সিজেন। 

বিহান মুঠোফোন তুলে ভিডিও কল করে মুনকে। জানিস মুন, আমাদের আবার দেখা হবে। আমি দেখলাম করোনা ভাইরাস গুলি সব মরে গেছে। তুই আর আমি হাটছি ওই সবুজ বাগানটায়। মুন, একটা কথা রাখবি আজ? অনেকদিন ভায়োলিন টা হাতে নিসনি। তুই একটু বাজা না, বড্ড শুনতে ইচ্ছে করছে। আমি ডায়েরীর পাতা থেকে ওই কবিটা আজ আবার পড়ব- 

“..... কেন ভালবাস আমায়? 
ভালবাসি, ভালবাসি, তাহার আবার কারণ হয় নাকি?"

Monday, April 27, 2020

পিনাকী ভৌমিক

পরিচিতি

চেনা মুখখানা আজ অনেক অচেনা 
ভাবি  সত্যি ই কি সে চেনা মুখ ছিলো 
না কি আমার কোন ভুল 
সত্যিই কি তুমি আছো পাশে না কি 
শুধুই আমার কল্পনাতে আছো
জীবন্ত হয়ে পাশে না থাকলে ও
কল্পনায় বিরাজ করো।
যদি ডাকি সাড়া দিও
তখন মুখ ফিরিয়ে দূরে থেকো না 
হৃদয়ের দেওয়া সে ডাক 
কি তুমি শুনতে পাও ?

সে এক করুন  নিশ্চুপকান্না
দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে ভিতরখানি 
হৃদয়ের সব ব্যথা আজ 
ঝেড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে 
কিন্তু সময় তা হতে দিচ্ছে না 
ভালোবাসা আজ ভয়াবহ আগুনে 
পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে।

স্নেহাশীষ রায়

ধর্ষিতা


 

চারিপাশের প্রভাতটা দেখে কেমন লাগছে,

কই! কেউ তো আমায় টানছেনা চারপাশে।

সেই শেষরাতেই চুলের মুঠিতে ঘাত,

আজ মুঠি তো দূর! শুনছি না কারও মাত।

সেই অত্যাচারিত শেয়ালগুলো আজ কই?

যারা ছিঁড়ে চুল, ধরতে স্বর্গের মই।

আজ আমার চুলের ডগাটি হেমন্তের সৌরভে,

স্বস্তির নিশ্বাসে দোল খায় সে ডুবে ডুবে।

জন্মানোর পর থেকেই লাঠিঘাতে জর্জরিত আমি,

ওরা চতুর ধর্ষক, সেটাও সকলেই জানি।

তবুও প্রতি প্রভাতে নিজে নিজে,

তপনের ছোঁয়ায় উঠি সেজেগুজে। 

একটুখানিক আবছা আলোয় টের পাই,

মুঠি ধরে টানছে যেন কিছু নোংরা ছাই। 

কেঁদে উঠে আমি নড়তে থাকি চারিপাশে,

আসে প্রতিদিনই ভিন্ন রকমের বেশে।

তবে গত দু'দিন ধরে দেখছিনা আর তাকে,

সুখনিশ্বাস ফেলছি স্বস্তির একটু ফাঁকে। 

শুনলাম এই প্রজাতিটাই নাকি আজ ধর্ষিত?

পৃথিবীই তাদের করেছে বহু বঞ্চিত।

আজ আমার সৌরভে নেচে নেচে উঠি,

হলুদের ছোঁয়ায় রাঙা হয় আমার চুলের মুঠি।


কাউচার খান

মহামারী

বিশ্বজুড়ে চলছে এখন করোনা নামক এক প্রাণহানী মহানারীর সমাগম. 
যা বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রকে ক্রমাগত করে চলেছে আক্রমণ.

রোগটা নাকি বড্ড ভারী, 
দেশ-বিদেশে চলছে তার আমদানী. 

এই মহামারীর হাত থেকে মানবজাতির রক্ষায় দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন, 
চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ করছে বিভিন্ন ভাবে সচেতন.

কিন্তু আমরা কি আধেও সচেতন? 
আমরা কি মানছি লকডাউন, থাকছি কি নিজ নিজ ঘরে বন্দি ? 
কই নাতো আমরা তো দিব্যি চলাফেরা করছি বাজার হাটে, কলোনিতে. 
তাও আবার মুখ, হাত খোলা রেখে.

তবে, আমরা কি করবোনা করোনা মুক্ত দেশ !
এইভাবে কি শেষ হবে মানবজাতি?

যদি করতে চাও করোনা মুক্ত দেশ !
তাহলে চলো সবাই একই সূত্রে আবদ্ধ হই--

"আমরা সবাই থাকব নিজ নিজ গৃহ বন্দি, 
মেনে চলবো বিভিন্ন সচেতন মূলক পদ্ধতি.
সব শেষে আমরা করোনা নামক মহামারীকে হারিয়ে, 
গড়ে তুলব এক নতুন মুক্ত পৃথিবী".

যমুনা মজুমদার

অপেক্ষা 

অপেক্ষা আজও করছি শুধু 
তোমার ফিরে আসার জন্য 
অপেক্ষা কি করেই যাবো –
সারাজীবনের জন্য। 

অপেক্ষা যে করে শুধু, 
বুঝে সে তার কষ্ট। 
চাইছি সবকিছু ভুলে যেতে, 
পারছিনা কেন দূরে যেতে। 
কাটাতে পারছিনা কেন তোমার মায়া, 
ভূলতে পারছিনা কেন তোমার কথা। 

আসবে কি ফিরে কোনোদিন 
বাসবে কি আমায় ভালো? 
বুঝবে কি আমার চোখের ভাষা 
শুনবে কি আমার কথা? 

দুচোখ শুধু খুঁজে তোমায় 
খুঁজে তোমার স্মৃতি। 
যাকে আমি মনে করি এতো 
যার জন্য কাদেঁ আমার মন এতো, 
সে কি আমায় ভুলে গেলো 
সারাজীবনের জন্য। 

পূর্বালী সাহা

অসুস্থ আজ বিশ্ব 

করোনা,হ্যাঁ করোনা কিছুদিন আগেও এই শব্দটা আমার কাছে ছিল অজানা। 

বিশ্বজুড়ে দিকে দিকে চলছে লক ডাউন আর কার্ফু জারি, 
সবার একটাই প্রশ্ন,
কি করে যে ঘুচাবে মহামারী। 

লড়াইটা আমাদের ছোট্ট একটা ভাইরাস নিয়ে যা খুঁড়ে খুঁড়ে খাচ্ছে নিষ্পাপ প্রাণের ভীড়। 
যার বিদায়সূত্র বৈজ্ঞানিকরা আজ অব্দি মিলাতে পারে নি। 
দিকে দিকে শুনা যাচ্ছে হাহাকার,আর মৃত্যু মিছিল। 

সঞ্চয় দত্ত

মৃত্যু 


মৃত্যু নহে সাধারণ
নিয়ে আসে কত কারণ,
বিশ্বব্যাপী চলে কোরোনা 
আর মৃত্যুর উন্মাদনা।
       ওহে মৃত্যু, 
কেন তুমি জীবের শত্রু?
মানুষকে করিলে কবল
দেশ হয়ে পড়ে দুর্বল।
       ওহে মৃত্যু,
কেন তুমি জীবের শত্রু? 
চিন,আমেরিকা,ইতালি
করিয়াছে কোরোনায় মৃত্যুর বলি।
         ওহে মৃত্যু, 
কেন তুমি জীবের শত্রু?
কত দুঃখ কষ্ট দিয়ে 
নিয়ে যাও তোমার করে।
        ওহে মৃত্যু, 
কেন তুমি জীবের শত্রু?
এক একটি দেশ ধরে 
নিয়েছ তোমার করে।
       ওহে মৃত্যু, 
কেন তুমি জীবের শত্রু?
চলে যাও অনেক দুরে 
দেখিতে চাই না সকলের তরে।


বিজন বোস

অবিশ্বাস 


সমস্ত বিশ্বাস চুরমার হয়ে গেছে 
বিশ্বজনীন অবিশ্বাস ।
একদিন দাবি ছিল কাঁটাতার ভেঙে দেওয়ার 
বিচ্ছন্নতার প্রতীক বার্লিন প্রাচীরও ভেঙে দিতে হয়েছিল হৃদ্যতার প্রচারে 
এমনকি চীনের প্রাচীর ও ভাঙার উঠেছিল জোর দাবি ।
আর আজ উল্টো বিচ্ছিন্নতারই আবাহন ।
অবিশ্বাস শুধু শত্রুকে নয়
বন্ধু স্বজন পরিবার পরিজন, 
যে দুই হস্ত প্রতিনিয়ত পরিচর্যা করে চলেছে 
পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে
তার প্রতিও চূড়ান্ত অবিশ্বাস ?
প্রকৃতি যেন বিদ্রুপ করে বলছে--
তোমরা মানুষ আমার উপর ফলাও পৌরষত্ব
'খোদার উপর খোদগারি'
এখন করো একতার নয় 
বরং বিচ্ছিন্নতার বাহাদুরি  ।

সুব্রত দেববর্মা

পৃথিবীর ভীষণ জ্বর


এই পৃথিবীর জ্বর সারলে
আমায় দেখতে আসবি তো রিমন ?
জ্বরে কাঁথা বালিশ সব পুড়ে যাচ্ছে ক্যামন।

দিনে এক থালা ভাত আর
রাতে নিয়ম করে রুটি দিয়ে যান মা।
সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে পুরনো ব্যথা
জানান দিয়ে যায় আগাম সতর্কতা।

আমার তাতে কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।
তুই তো জানিস আমি পাখি ভালোবাসি
কাচের জানলায় পাখি আসে যেই,
অমনি টুক করে সামনে এগিয়ে যাই।
কাছের ভেতর ওরা দেখতে পারেনাতো তাই।

আমাদের নুতন দোতালার ঘরের 
তিনপালি জানলা দিয়ে এখন মস্ত নীলাকাশ,
একদিন তুই আসবি বলে সেই ধবধবে 
সাদা টাইলসে আমার সকল অবকাশ।

এখন দুপুরে ঘুম আসেনা জানিস
শিমুল গাছটা শুকনো মাথা ঝাঁকায়,
আর তুই তো জানিস বাড়ির বা-দিকে 
মস্ত বড়ো এক কাঁঠাল গাছ আঁকা।

জ্বরের ঘোরে এখন এসবকিছু ঝাপসা দেখি 
আর পোহাতে থাকি জলপট্টির অন্তিম সাধ।
শুধু বাকি থাকে আমার কপালে
তোর সঞ্জীবনী দুখানি হাত...

তুই ছুঁয়ে দিলেই জীবনকাঠিতে
ঘুম ভাঙবে রাজপুত্তের,
আর সেরে উঠবে এই সবুজ পৃথিবী।

উর্মি সাহা

ভিন্ন মানব


হ্যান্ডশেক ভুলে নমস্কার--
ভেস্তে গেছে পাশ্চাত্যের আকাঙ্ক্ষা,
ক্যালেন্ডার গুনে দিনের পর দিন!
বাঁচবে ক'দিন এই আশঙ্কা।
জয়ধ্বনি কেবল ধ্বংসের-ই-,,
রাস্তার মোরে,চায়ের দোকানে
রেডিও,টিভি,মোবাইল
এমনকি বিজ্ঞান মস্তিষ্ক---
সবই,আবদ্ধ এক-এককোষী জীবে।
যার নেই জাত,নেই ধর্ম,
নেই নিজস্ব রাষ্ট্র,নাই অর্থের অহংকার;
নাই দৈহিক সৌন্দর্য।
তবুও পৃথিবী আজ এতেই প্রভাবিত;
গোটাবিশ্ব আজ এইখানেই নত।
বিভেদ ভুলে পৃথিবী এক।
হেরে গেছে প্রত্ন ভিন্ন ধর্ম-,,
পৃথিবী লড়ছে একসাথে,
আর করছে কর্ম।
ভয় নেই!মৃত্যু হবেই ভয়ের,
অবধি ঘটবেই এই জড়ত্বের;;;
পথ শুরু হবে নতুন অধ্যায়ের।
তারপরও প্রশ্ন থাকে-----!!
সবশেষে কি!বেঁচে থাকবে বৈষম্য??
থাকবে কি,ধর্ম আর বর্ণেরই অধিপত্য??

সত্য রঞ্জন দাস

এখনই সময় 

চারিদিকে মৃতের স্তুপ , কবরের অপেক্ষায় প্রহর গুনে 
থেকেও যেন কেউ নেই তাদের ,শেষ বিদায়ের কালে !
পৃথিবী আজ নিস্তব্ধ,অচল ,চারিদিকে ত্রাহি -ত্রাহি রব ,
এ কোনো ধর্মযুদ্ধ নয়,মানবজাতি আর করুনার মহাযুদ্ধ 
আজ,জয়-পরাজয়ের কাঠগড়ায় ,মানবজাতি ,
তিলে-তিলে গড়া সভ্যতার সুদীর্ঘ কালের ইমারত !

ডাক্তার,বিজ্ঞানী গবেষণায় ব্যর্থ ,
আল্লা -হরি -যীশুও যেন উদ্বিগ্ন !
ঘাতক করুনার নীরব আক্রমনে,
সমগ্র পৃথিবী অস্র হাতে এক শিবিরে !
কোনো ভেদাভেদ নেই ,হিংসা নেই,
যেন সাতশ পঞ্চাশ কোটির একই ধর্ম !

আজ এ মহা দুর্দিনে , আতঙ্কিত হলে চলবে না 
ভুলিলে হবে না ,স্পেনিশ ফ্লো,কলেরার তান্ডব !
বিজ্ঞানের পরিসরে  আজ সবই  তুচ্ছ ,
বেদনা-দায়ক এক নির্মম  ইতিহাস !

বুজরুকি আর গুজবে গা ভাসলে হবে না 
বিজ্ঞান মন্ত্রে দীক্ষা নিয়ে সংযত আচার রক্ষায়
এগিয়ে যেতে হবে ,ভেঙে দিতে করুনার বিষাক্ত দাঁত 
 জ্ঞানের আলোয় জাগতে হবে,  জাগাতে হবে !

যদি ঘরে বসেই  হয়  করুনা নিধন 
তবে কি প্রয়োজন ,বাহিরে  বেরুবার ?
সাত নয় ,একুশ নয় চলুক না আরও 
শুধু  হতদরিদ্র-অসহায়ের প্রতি একটু দয়া !

এখনই সময় কারফিউর , নিজেকে বন্দি করার 
 জগৎ- জীবন-সংসার , --- ভাবার 
এখনই সময় মনুষ্যত্বের , নিজেকে জানার 
হয়তো , একদিন কেটে যাবে দুঃখের দিন 
সুদিন আসবে,পৃথিবী আবার  আপন ছন্দে চলবে , 
হয়তো ,দানব করুনার হিংস্র কাহিনী , শুধুই ইতিহাস 
                                                         হয়ে রয়ে যাবে !

                                                            




মুকিম মাহমুদ

বন্ধুর ধরণী  


 সবেমাত্র ভোর হয়েছে,
সূর্যটা ক্রমশ গাঢ় থেকে গাঢ়তর হতে শুরু করেছে। 
ইতোমধ্যে পায়রা জোড়ার ঘুম ভেঙ্গে গেছে 
ওরা আনন্দে একে অপরকে আলিঙ্গনরত। 
সদ্যজাত ছানাগুলো উষ্ণতার পরশে ঘুমায়,
ভোরের কুয়াশা সে পরশে কিছুটা বাঁধা হতে চায়
যেখানে মাতৃস্নেহ, সেখনে পরাজিত সকল অশুভ। 
মায়ের কোলের বাইরে বেরুলেই
এ পথ হয়ে যায় বন্ধুর, 
যার বাঁকে বাঁকে ফাঁদ পেতে রয়েছে মৃত্যু । 
অনভিজ্ঞদের সে এক মহা পরীক্ষা। 
কেউ পূর্বাভাস বুঝে নিজেকে বাঁচিয়ে নেয়
কেউবা বুঝে ওঠার আগেই পরাজিত হয়ে যায়।  
ঊষা লগ্নে সূর্যের রূপান্তর আর
অনিন্দ্য সুন্দর এ ভূলোকের সৌন্দর্য, 
কেবল জয়ীরাই উপভোগ করতে পারে। 
গাঢ়তর রঙের পরিবর্তন
কেবল তারাই অনুধাবন করতে পারে। 
এ তাদের যুদ্ধ জয়ের পুরস্কার 
তবে এ যুদ্ধ শেষ হবার নয়,
অনন্ত কালের। 

অনুপম রায়

আহ্বান

রোদ চাই 
আরো আরো রোদ চাই
পবিত্রতার আবরণে 
তোমায় মুড়ে দিতে চাই।

তুমি শঙ্কনীলও নও, শালিকও নও
তুমি এসো তোমার মত করে।

আমি তোমায় সবেতেই দেখি
তুমি পৃথিবী;
তুমিই মহাপৃথিবী।

এই সঙ্কটে, এই মহাসঙ্কটে 
এই যুগসন্ধিক্ষণে
তুমি এসো।

নিষ্প্রাণ হয়ে, 
নিঃশেষিত হয়েও,
করছি তোমারই আহ্বান।

সমীরণ বিশ্বাস

  স্বাধীন 
                                        
               পৃথিবীর আজ গভীর অসুখ,
                মানবেরই মহামারীর দুঃখ।
                আকাশেতে বাজে মুক্তির গান,
                মর্ত্যে চলছে মৃত্যুর বাণ।

                তাদের সুখ, যারা ছিল বন্দি,
                যাদের উপর চাপা ছিল নির্যাতনের দন্ডি,
                ধরণীর আজ নিগূঢ় দুঃখের দিনে-
                মানব সমাজ তাই গৃহবন্দি।

                ধর্ম-জাতির নেই আজ ভেদাভেদ,
                সবার মাঝে বাঁচার খ্যাদ।
                মানুষের আজ একটাই ভয়,
                ঘর থেকে বাহির না হয়।
                
                আকাশে, বাতাসে পাখিরা উড়ে চলে,
                মুক্তির জোয়ার বয়ে দলে দলে।
               আজ তারা স্বধীন, মানবকে করে পরাধীন।
                তারা মুক্ত, বন্দি ঘর করে চ্যুত।
 
                আজ কোথায় সমাজের বন্ধন,
                কি হবে অপূর্ব ভান্ডারের ধন।
                হচ্ছেনা আজ রেস্তোরাঁয় খাওয়া,
                বাঁচতে চাই সবার একটাই চাওয়া।
           

সংগীতা শীল

ফিরিয়ে দাও অধিকার

জীবন যুদ্ধে কঠিন সংগ্রামে পথে পথে ঘুরে বেড়ায় বিবস্র গায়ে রাজপথে কখনো রেললাইনের ধারে।

ছোট্ট ছেলেটি যার এখনো খেলায় বয়স মুক্ত আকাশে উড়বে সে কিনা হোটেলে, 
গ্যারেজে রিকশা চালায় দিন মজুরী দেয় দোকান পাটে।
হাতে বই নেই কাঁধে নেই ব্যাগ ইট ভাটায় লোহা পিটায় অর্থ লালসার নিদারুণ অভিলাশে।
অক্ষর জ্ঞানহীন, পুষ্টিহীনতায় ভোগে সুচিকিৎসা তো দূর অযন্তে....

উজ্বল ভট্টাচার্য্য

অভিশপ্ত ক্ষণ

সবুজের ঘেরাটোপে পৃথিবীতে বুকে সভ্যতার গল্প ছিল দিব্যি শান্ত; 
হঠাৎই অভিশপ্ত ক্ষণের সূচনা হাহাকারে চারিদিক বিভ্রান্ত।
 উল্টো ব্রেইনী চিনি উন্মাদদের ইয়ার্কির পুতুল খেলায়,
বিশ্ব আঙ্গিনা মেতে উঠেছে মৃত্যু মিছিলের করুন মেলায়। 
পরিস্থিতির ঘোর এতটা বিষোবে কেউ কখনো ভাবলো না, বিনাশের ঠেকা নিয়ে কেরামতি দেখাচ্ছে।

দিপ্সী দে

প্রশ্ন

ও মা! মাগো, 
বলো না গো সবাই বলছে আমরা নাকি মরে যাবো? 
মাগো বাঁচবো তো? 
ও মা আমি আবার কবে স্কুলে যাবো? 
মা, বাবা আবার কবে ঘুরতে নিয়ে যাবে?
 মা তোতাই মিঠাই আবার কবে খেলতে আসবে? আমার জন্মদিন হবে তো? 
মার চোখে শুধুই জল, 
টিভিতে শুধু বিজ্ঞাপন দেখায়, মোবাইলে শুধু করোনার কথা বলে। 
মাগো করোনা কে? কেন এসেছে?
মা ও খুব পচা, আমাদের নিয়ে যাবে, আমি তুমি মরে যাব? ইতালিতে কী কেউ নেই? 

রিঙ্কু কর

সাধ সাধ্য সাধনা
                  

ব্যস্ততম শহর, ব্যস্ত আমরা সবাই
এতটুকুও শ্বাস ফেলার ফুরসত নেই।
নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার মেকি ভাবনায়
বুঁদ হয়ে আছি সকলে-
কেউ কাউকে এতটুকু জায়গা ছেড়ে দিতে 
রাজি নই আমরা।
আর, তুমি বলছ মানবিকতা?
মানবিকতা আজ অবলুপ্তির পথে।      
আজ ঠিক সেই মুহুর্তে--
কে যেন ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়ে গেল 
গোটা পৃথিবীটাকে।
হঠাৎ দমকা হাওয়া এসে 
সবকিছু উলট পালট করে দিয়ে গেল,
গভীর অসুখ দেখা দিল পৃথিবীর। 
আচ্ছা, সত্যিই  কি উল্টে গেল পৃথিবী? 
নাকি সবাই জাতপাত ধর্ম বর্ণ ভুলে
একজোট হতে থাকল 
এই গভীর অসুখ থেকে পৃথিবীকে বাঁচাতে।
হয়তো এভাবে একাত্ম হয়েই আমরা 
সারিয়ে তুলতে পারব তাকে, 
এই করোনা নামক মহামারী থেকে।
  বাঁচাতে তাকে হবেই, 
তাকে সুস্থ করে তোলাই  হয়ে উঠুক
আমাদের জীবনের মূল মহামন্ত্র।    

উৎপল দেবনাথ

নেই নেই কেউ নেই ফাঁকা 

বিশ্ব দেখছে মহামারী 
আর তাতে মৃত্যুর মিছিলের সুনামি।
বাতাসে ভাইরাসের ছুঁয়া,
হয় না আমাদের বাইরে যাওয়া।
এখন শহর জুড়ে লকডাউন জারি 
রাস্তা -ঘাটে শক্ত প্রশাসনের বাড়ি
অফিস -কাচারী,হাজিরা -কামাই নেই নেই কিছুই নেই কেউই নেই।
ফুটপাতে থাকতো যারা হচ্ছে কি তাদের সুস্থ ভাবে রাখা?
হয়তো চেয়ে আছে বোকার মতো তারা।
অবলার মতো শুধু চেয়ে আছি ফাঁকা 
বিজ্ঞানের দিকে তাকা।
সবাই আছে ভয়ে 
ভাবার সময় আছে তবুও ভাবনা নেই।
নেই নেই টাকা নেই পয়সা নেই, বাতাসে প্রেম নেই 
আছে শুধু বাঁচা আর ক্ষিদের জ্বালা 
শুনেছি সরকার বলেছে রেশনের দিকে পালা।
ভীষণ রকম বিস্মিত হয়ে আছে তারা 
অবসান কি হয়ে দাঁড়া।

অনুপম দেব

বাঁচতে নেই মানা
      

  সময়টা হয়তো হঠাৎ এখন 
      ঘূর্ণিপাকে বিপরীত মোড় নিল,
রক্তক্ষয়ী আঁধার সুযোগ বুঝে
     ঐ শূন্য পথে উঠে এল।

স্বপ্নে সবার আজ শুধু
     রক্ত রঙের আলপনা,  
সুখ প্রদীপ বুজে প্রায়
     আজ মৃত্যু শোকের কল্পনা। 
আসছে প্রহর কেমন হবে 
     এটাই এখন শুধু জল্পনা।

চোখ বুজে ঘুমাই যখন
     খুলবে কিনা জানিনা,
তা জেনেও ঘুমিয়ে পড়ি 
     নিদ্রা হীন তো‌ থাকিনা।
রক্তক্ষয়ী আঁধারো পাকে পড়বে
      এ আশা কেন করবো না?

কাল বাঁচবো কিনা কে জানে/আজতো প্রাণ খুলে বাঁচতে নেই মানা।

গৌতম দাস

বীর সৈন্যদল
                                          
করোনার ভয়াবহ রূপে মায়াময় ভুবন আজ স্তব্ধ।
প্রাণময় মুখগুলো হচ্ছে মাটি চাপায় আবদ্ধ।
যখন দেশ সেবার ব্রত পালনে ব্যস্ত সভ্য মানুষ সকল।
                 সেই ক্ষণেই প্রস্তুত হল-
রক্তপিপাসু করোনাকে হাতকড়া পরাতে বীর সৈন্যদল।
ওরা সূর্যসম উজ্জ্বল  নেইকো কোনো অশ্রুজল।
কখনো বজ্রসম কঠিন আবার স্রোতের মতো বিরামহীন।
মুক্ত চিত্তে দিয়ে থাকে রক্ত অন্যদিকে জনসেবার ভক্ত।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অন্ধকার ভয়ে পালায় ওদের দেখে।
সহস্র সমরে যায় মাতৃভূমিকে আগলে রেখে।
থাকেনা কোনো সংশয়,শতকষ্ট প্রাণেশয়।
মারণব্যাধি করোনা নামক জল্লাদকে পায় না ভয়।
তারা শত্রু বিনাশক জুয়ালামুখী,পছন্দ করে প্রাণহারা ঝুঁকি।
নিজ তন্দ্রা, সুখ ছেড়ে সবাইকে করতে চায় সুখী।
তারারই বলিদানে টিকে থাকে সুধাময় জন্মভূমি।
এই সেবাতে মাথা নত করি তাদের কোমল পদতল।
সর্বকালের দেশ সেবক,চিরঅমর,এই বীরসৈন্য দল।
                

               

নিকিতা দত্ত

কোয়ারেন্টাইন

আজ প্রায় এক সপ্তাহ হল বাড়ি থেকে বের হওয়া পুরোপুরি বন্ধ। অনেক প্ল্যান ছিল, পরীক্ষা শেষে এটা করবো,ওটা করবো। সব বন্ধুরা মিলে একসাথে ঘুরতে যাবো।
কিন্তু এরই মাঝে, গোটা বিশ্বজুড়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে,তার কারনে সব কেমন যেন ভেস্তে গেল।।
নোভেল করোনা ভাইরাস (COVID-19) এর সংক্রমনে গোটা মানবসভ্যতা আজ ধ্বংসের মুখে।।
আজ এই অসময়ের পরিস্থিতি সম্পর্কে লেখার সুযোগ পেয়ে দেশের করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কিংবা মৃত্যুর সংখ্যা জানিয়ে মনোবল দুর্বল করার পক্ষে আমি নেই।

এখন আমি বাড়িঘরেই আছি।
১৪ই এপ্রিল পর্যন্ত বাড়িতেই থাকবো।এর পরেও বাড়ি থেকে বের হতে পারবো কিনা তার নিয়েও অনিশ্চিত।

এই নিয়ে আমার তেমন আফশোস নেই যদিও।কারন, আগে তো বাঁচতে হবে,তারপর বাকি সব।
শুধু দুঃখ একটাই, প্রানপ্রিয় বন্ধুদের সাথে অনেকদিন হলো দেখা হচ্ছে না।
হ্যাঁ, যোগাযোগ ঠিকই হচ্ছে প্রতিদিন; কিন্তু আমাদের যে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কথা বলার অভ্যেস।

সে যাই হোক,ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে কোয়ারেন্টাইন জিনিসটা আমার এতটাও খারাপ মনে হয় না।
কর্মব্যস্ততার যান্ত্রিক জীবনের মাঝে যে পছন্দের কাজগুলো থেকে আমরা দূরে সরে গিয়েছিলাম, সেগুলো আবার করার সুযোগ পেয়েছি।

সোস্যাল মিডিয়া ওপেন করলেই দেখতে পাচ্ছি, কেউ খুব ভালো গান করে, কেউ খুব সুন্দর ছবি আঁকতে পারে, কেউ লিখতে ভালবাসে, তো কেউ ভালো আবৃত্তি করতে পারে। এইসকল সৃজনশীল কাজগুলো থেকে আমরা একটা সময় কোথায় যেন দূরে সরে গিয়েছিলাম।
বহুদিন পর আবার আলমারিতে ধূলো খাওয়া ভালোলাগার গল্পের বইগুলো পড়তে পারছি।
পরিবারের সদস্যরা আবার সবাই মিলে একসাথে সময় কাটাতে পারছি।

সবশেষে এই কথাই বলবো,
গোটা বিশ্ব যেখানে করোনা আতঙ্কে জর্জরিত, সেই জায়গায় বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া সাইটগুলোতে অযথা কিছু গুজব ছড়ানো হচ্ছে।
কখনো পাগলী মাসির গুজব,করোনার ওষুধ আবিষ্কার আরো কত কী!!

আমি বলি কি, এইসব গুজবে কান না দিয়ে আগে নিজেরা সচেতন হোন।।
নিজেরা সুস্থ থাকুন, অপরকে সুস্থ রাখুন।
আজ দেশে যে লকডাউন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, করোনা সংক্রমন প্রতিরোধ করার জন্য এর চেয়ে ভালো প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে আর হতে পারে না। কারন, একমাত্র সামাজিক দূরত্বই পারে এই ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে।।

তাই সবার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, যথাসম্ভব ঘরে থাকুন।
বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া, বাড়ির বাইরে একদম বের হবেন না।

যথাসম্ভব প্রশাসন কে সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন এবং দেশের প্রকৃত নাগরিক হওয়ার দায়িত্ব পালন করুন।।

তবেই আমরা আবার সেই করোনা মুক্ত ভোরের আলো দেখতে পাবো।

                জয় হিন্দ।।

                        

সুধীর দাস

অন্ধকার রাত্রি


রাত্রি অনেক হল । প্রায় দশটা। সময় বয়ে যায় । ঘড়ির কাঁটা টিকটিক শব্দে এগিয়ে চলল কিন্তু রহিম এখনো আসছে না এতে করে যেন রিনার বুকটা ভয়ে ধড়ফড় করছে । বাইরে রাস্তাঘাট , দোকানপাট সবকিছুই বন্ধ । কি যেন একটা মারনব্যাধী কোরোনা ভাইরাসের আবির্ভাব হল হাজার হাজার মানুষ ভয়ে ভয়ে জীবন কাটাচ্ছে, সরকার এই নিয়ে কারফিউ জারি করেছে 21 দিনের জন্য। 

রিনা সোফায় বসে রহিমের কথা ভাবছে আর অনুপের মাথায় হাত বুলাচ্ছে । অনুপের বয়স ৭ বছর । অনুপও তার বাবার অপেক্ষায় ভাত না খেয়ে বসে আছে ।  রহিম একজন সাধারন রিক্সাচালক । ঘরের অন্ন শেষ হয়ে যাওয়ায় সে কিছু অর্থ উপার্জনের আশায় বেড়িয়েছে । কিন্তু আসতে দেরী হচ্ছে দেখে মা ও ছেলে দুজনেই খুব চিন্তিত। রাত যেন শেষ হয় না । মা ছেলের চিন্তার ও শেষ নেই।

রাস্তামুখো বাড়ি ।রাস্তা দিয়ে যখনই কেউ সাইকেল দিয়ে বেল বাজিয়ে যায় তখনি অনুপের দরজা খুলে দেখে তার বাবা এসেছে কিনা। ঘড়ির কাটা এগিয়ে চলছে রাত্রিও গভীর হতে লাগল । ঘড়িতে তখন এগারটা । রহিমকে আসতে না দেখে অচেনা গভীর রাতে রিনা অনুপকে ঘরে রেখে বেড়িয়ে পড়ল রহিমের খুজে।

রিনা যতই এগিয়ে যাচ্ছে ততই তার  টেনশনে মুখ ভার হয়ে যাচ্ছে । কিছু দূরে যেতেই তার নজরে পড়ল রাস্তার পাশে যেন কি একটা পড়ে আছে কর্দমাক্ত রক্তাক্ত অবস্থায় । দূর থেকে দেখে রিনা ভয়ে ভয়ে এগোতে থাকে  ।কর্দমাক্ত ব্যক্তিটির কাছে গিয়ে ব্যক্তিটির মুখ দেখে যেন রিনা হতবিম্বিত হয়ে রইল । এ যে আর কেউ নয় তার স্বামী রহিম । সে রক্তাক্ত কর্দমাক্ত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাতে থাকে সাহায্যের জন্য । কিন্তু কারফিউ এর সময় গভীর রাতে শূন্য জনবিহীন রাস্তা তার উপর ঘন অন্ধকার যেন অমাবস্যার রাত তার ও তার পরিবারের জীবনকে ধ্বংস করতে নেমেছে এই ধরনীতে। রিনা কিছুই ভাবতে পারছে না যে সে কি করবে। সে রাস্তার এদিক ওদিক তাকাতে লাগল  আর অশ্রুসজল চোখে রহিমের দেহটাকে  কোলে নিয়ে আর্তনাদ করে চিৎকার করতে শুরু করল । তার এই আর্তনাদে আমাবস্যার অন্ধকারও তার সঙ্গে একাকার হয়ে রইল। সে চোখে জল বুক ফাটা কান্না নিয়ে আর্তনাদে চিৎকার বলতে লাগল তার "তুমি যে বলেছিলে রহিম আমাকে ছেড়ে যাবেনা কোনোদিন । যতই ঝড় আসুক তুফান আসুক থাকবে পাশে চিরটাকাল । " আজ তার কি হল? সব কি তাহলে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি ছিল ?

সে তবুও বুকে বল নিয়ে রহিমকে রিক্সায় ঝাপটে ধরে তুলে হসপিটালে নিয়ে যায় । হাসপাতালে ডাক্তার রহিমকে মৃত বলে ঘোষনা করে এতে যেন রিনা মানসিক আঘাত পেয়ে ধীরে ধীরে তার স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে পেতে সে পাগল হয়ে যায় । এই ছিল মনে হয় তার পরিবারের ভবিতব্য।
                         

সুস্মিতা নুনিয়া

করোনার  থাবা                               সূক্ষ্ম থেকে সূক্ষ্মতর |                                              মানুষ থেকে মানুষে  ||                                             চীন থেকে তার উৎপত্তি |                                      ভয়ানক এক বিপত্তি||                                              ইতালি, ফ্রান্স, জার্মান |                                        বাদ পরে নি তো কেও ||                                           ভারতে ও তার থাবা |                                               নিত্য মৃত্যু  মিছিল কে রোজ দেখা |                         চিকিৎসায় দ্বিতীয় স্তরে থেকেও||                            ইতালী যে তুলল ওপর হাত|                              তবে কি নেই  বাঁচার উপায়|                                  নেই রক্ষা পাবার পথ ||                                         "মোদী'জির "আদেশে |                                          এখন থেকেই লকডাউন- এ ভারত||                      সচেতনতাই একমাত্র|                                            প্রাণ বাঁচানোর চাবিকাঠি||                                     হাজার হাজার চিকিৎসা সেবক|                              কর্তব্য পালনে দিতেছে যে প্রাণ||                            আছে যে ওদের ও পরিবার|                                    আছে যে ভালোবাসার মানুষ ||                              তবে কি এটুকু সচেতন হওয়া যায় না |                    করা যায় না একটু সাহায্য||                                      প্রতি 20 মিনিট  অন্তর হাত ধোয়া|                            বাইরেতে মাক্স পরে বের হওয়া||                              সর্দি, কাশি, জ্বর হলে|                                             দূরত্ব বজায় রাখা||                                                  ঘরে থাকুন সুস্থ থাকুন|                                           এটুকুই তো করা|  

শান্তনু মজুমদার

করোনা মহামারি 

মানবজাতি আজ বিপন্ন, বিধ্বস্ত মহামারীর ভয়ে।
কাঁপছে রাজ্য, কাঁপছে দেশ, কাঁপছে গোটা বিশ্ব আজ মহামারীর তান্ডবে। মহামারি রুখতে হয়েছে লকডাউন, কার্পূজারি হয়েছে সারা ভারতবর্ষ 
লকডাউন শেষে জাতি জানবে করোনার আসল রহস্য।
ইতালি, ফ্রান্স, চিন, আমেরিকা হয়েছে আজ মৃত্যুপুরী। 
ধনী, দরিদ্র, টাকপয়সা, বিষয়সম্পত্তি সব ই আজ তুচ্ছ, লাশ পড়ছে ভুরি ভুরি।
বন্ধ দোকানপাঠ, রাস্তাঘাট, সকলেই আজ ঘরবন্ধী 
একটি করোনামুক্ত ভোরের অপেক্ষায় আজ  আমরা সকলেই আশাবাদী।

সংগীতা দেব

আঁধারে আলো

মৃত্যু মিছিল বিশ্ব জুড়ে
বেড়ে চলছে মিছিলের লাইন!
অসুখের ছায়া কেবল গ্রাস করছে প্রাণ।
চোখের সামনে,এই মরণ ফাঁদে
 কত বন্ধু, কত প্রিয়জন।
প্রতি মুহূর্তে মানুষ,
আঁকছে মৃত্যুর ছবি!
হয়তো নিজের! হয়তো খুব কাছের মানুষের।
তবে,এই মৃত্যু মিছিল রুখতে হবে।
প্রাণে ভরসা জাগাতে হবে,
আপন মানুষ গুলোর জন্য।
কিছু স্বাস্থ্য নিয়ম মানবো,
সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবো।
অযথা, যাবোনা ঘরের বাইরে।
থাকবো নিজেও সতর্ক
এতে অপরকে করবো উৎসাহিত।
সবাই এই কঠিন প্রতিজ্ঞা করে
পৃথিবীকে করবো করোনা মুক্ত।
বিত্তশালীই শুধু যেন না পায়, 
অনাহারীও যেন,মুঠো খাবার পায়,
ধনী-গরীব,দেশী-বিদেশী
মৃত্যু কারো বন্ধু নয়।
রোজ রোজ,আর মৃত্যু না!
মৃত্যু ভয় না।
ভবিষ্যতের সোনালী স্বপ্ন দেখে,
সুস্থ্য পৃথিবী সাজাবো।

সোমা মজুমদার

চাঁদের আলো 

চাঁদ তুমি হলে সবার প্রিয়! 
তোমার যে কত আলো,
থাকো তুমি অনেক দূরে –
তবুও তোমায় লাগে ভালো।

সূর্য্যিমামা ডুবে গেলে 
তোমার হয় যাত্রা শুরু,
চাঁদ তুমি হলে সবার প্রিয় 
তুমিই সবার বেশ।

স্নিগ্ধ তোমার কোমল হাসি 
ছড়ায় ঝলক রাশি রাশি,
তোমার আলোয় মিষ্টি তারা 
ও জোনাকি তোমার মুচকি হাসি।

অমাবস্যার রাতে 
কোথায় তুমি থাকো লুকিয়ে,
পূর্ণিমার রাতে তুমি মিষ্টি হাসি হাসো।
তুমিই হলে সবার সুন্দর তুমি হলে অপরূপ,
তোমার মধ্যে লুকিয়ে থাকে 
অনেক মিষ্টি আলোর সুখ। 

সুজন দেবনাথ

মহামারীর লড়াই


পৃথিবীর আজ বড় অসুখ
ভুগছে সকল মানুষ
এখন হিংসা বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে
জাগাও 'মান' আর  হুশ।

এই অসুখ তোমার আমার
নয়তো ব্যক্তিগত
পৃথিবীর হয়ে লড়তে হবে
মানুষ মানুষের জন্য।

এই বিশ্ব তোমার আমার
আমরা সবাই বিশ্ববাসী
যতই আসুক ঝড় তুফান
আমরা বিশ্ব ভালোবাসি।

আসুক যতই মহামারী
করবো না আজ ভয়
সঠিক পথে চলবো মোরা
আজ করবো বিশ্বজয়।

পুলিশ ডক্টর নার্সের কথা
আজ মানব নিষ্ঠা ভরে
দেশ বাঁচাতে থাকতে হবে
আজ নিজ নিজ ঘরে।

রাতের ঘুম এক করে আজ
লড়ছে দেখো যাঁরা
দোয়া করব আজ সবাই মিলে
সুস্থ থাকুক তাঁরা।

যে শিক্ষা দিয়ে গেছে আজ
এই করোনা মহামারী
নিয়ম মতো না চললে দেখো
যেতে হবে যমের বাড়ী।

অবহেলার বসে  আজ
মৃত্যুর মিছিল কত। 
চিন ইতালি যুক্তরাষ্ট্রে
মৃত্যু সহস্র শত শত।

আক্রান্ত আজ বিশ্বজুড়ে
বাতাস হয়েছে ভারি
ঘরে বসেই আজ রুখতে হবে
এই করোনা মহামারী

তাই চলো এখন শপথ করি
মানুষ হব সবার আগে
পৃথিবীর মানুষ স্বজন আমার
সকল রাগে অনুরাগে।

যুদ্ধও নয় আজ অস্ত্রও নয়
কেবল ঘরে বসে লড়বো
"করোনা" মহামারী দূর করে
এক নতুন বিশ্ব গড়বো। 

প্রীতম শীল

বন্ধুত্বে করোনা ভাইরাস


 যে বন্ধুটার সাথে আজ চার বছর কথা বলিনা, সকাল সকাল তার ফোন। নাম্বার টা সেভ করা ছিল, সে আমার প্রিয় বন্ধু  স্কুল লাইফের। তবে দ্বাদশ  শ্রেনিতে চরম ঝগড়া,তার পর আমি কলেজে আর ও ফেল করে চেন্নাই। ফোনটা রিসিভ করবো ভেবে ধরতে যাবো কেটে দিলো। খানিক বাদে আবার রিং বাজলো।
হ্যালো--- কে বলছেন?
হ্যালো কথা বলছেন না কেন? হ্যালো হ্যালো
--আমি বলছি?
-- আমি কে?
-- আমি বাসুদেব।
-- কোন বাসুদেব?
-- যার সাথে তোর ঝগড়া, বছর চারেক আগে।
-- হুম বল,চিনতে পেরেছি।কেন ফোন দিলি?
-- কেমন আছিস?
-- হুম ভালো। তা বল কেন ফোন দিলি?
-- এমনি কেনো ফোন দিতে পারিনা?
-- না পারিসনা। তোর সাথে কোনো কথা নেই।
ও এবার কাঁদতে লালগো। আমি প্রথমে তেমন মর্মাহত হইনি কারন দুনিয়াতে শত্রুর কান্না সবার ভালো লাগে। 
-- এতো ভনিতা করিসনাতো,  আর মেয়েদের মতো এতো কাঁদছিস কেন?
-- জানিস কাল রাত থেকে আমার কিছুই ভালো লাগছেনা। আমার জ্বর সর্দি কাশি এই সব উপসর্গ গুলো দেখা দিয়েছে। আমার রুমের সবাই আমাকে আলাদা করে দিয়েছে। আমি বন্ধ একটা রুমে একাই বসে আসি,  আমার কাছে কেউ আসছেনা। রুমা কে ফোন করে বললাম ও শোনার পর বললো আমি কি করবো ডাক্তার দেখাও। আমি তো আর ডাক্তার নই, যে উপদেশ বা ঔষদ দেবো। এই সব বলে ফোনটা রেখে দিলো।
আমি এবার উঠে বসলাম,শুয়ে শুয়ে কথা বলছিলাম বাসুদেবের সাথে।
-- তো খাওয়া দাওয়া করলি কিছু?
-- নারে, এখানে দোকান ঘাট সব বন্ধ।
-- তো কাউকে বল এনে দিতে। 
-- ওরা সবাই আমার থেকে দুরে।  কয়েকটাকে ফোন করেছি বলছে একটু দেরি হবে।
-- ও, টাকা আছে তোর কাছে?
-- অল্প কিছু আছে।
-- তোর পে.টি.এম নাম্বার দে, দিচ্ছি।
--বাসু চিৎকার করে কেঁদে বললো, বন্ধু সরিরে সরি। আমি তোকে ভুল বুঝেছিলাম, তুই ঠিক বলেছিস বিপদে বোঝা যায় কে আপন কে পর।
কি না করেছি রুমার জন্য, তোর মতো বন্ধুর মনে কষ্ট দিয়েছি। চেন্নাই থেকে এতো টাকা পাঠালাম। আর আজ----
-- বাদ দে,, এখন নাম্বার টা দে?
-- হুম দিচ্ছি।
পৃথিবী আজ এতো নিষ্টুর হয়ে গেছে,  একটা ভাইরাস চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে সব।সত্যি পৃথিবীতে সম্পর্ক গুলি যেন আজ কাঁচের ঘরে বাঁধা পড়ে যাচ্ছে। আর মানব দুর থেকে হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে হাজারো সম্পর্ক।
কথা গুলো ভাবতেই,  চোখের কোন থেকে গড়িয়ে পড়ছে টপটপ জল।
-- হ্যালো বল,
-- নাম্বার টা পেলি?
-- হুম, কিছুসময়ের মধ্যে টাকা দিচ্ছি।
তুই চিন্তা করিসনা। তোর কিচ্ছু হয়নি, আরে এইগুলো সিজনাল উপসর্গ। আর দেখ একটা ভাইরাস কখোনো বন্ধুত্বের মাঝে আসতে পারেইনা। 
-- বন্ধুরে,,,,,,,,,,
-- আরে আরে আর কাঁদিসনা পাগলা। তুই ভালো হয়ে তাড়াতাড়ি ফিরে আয়।
-- হুম এসেই তোর সাথে পাড়াগাঁয়ের লেইকে মাছ ধরবো। বর্ষার জলে ফুটবল খেলবো। কালো গরুটা নিয়ে আবার মাঠে যাবো। ছুঁড়ি দিয়ে আম কেঁটে খাবো।
-- আমি তোকে কাঁদা মাখিয়ে দৌড় দেবো। তুই আমার পিছে পিছে ছুঁটবি। না ধরতে পেড়ে গালি দিবি। 
-- সোমা আর ঝুমা কে নিয়ে কতো কথা বলবো। না থাক আমাদের মাঝে আর কোনো মেয়েকে আসতে দেবোনা।
-- হা হা হা।
টাকা পাঠালাম পাঁচ হাজার। কিন্তু কোনো রিপ্লাই পেলাম না।  বাসুদেবের মোবাইল টাও বন্ধ দুদিন হয়ে গেলো। সাত দিন পর বিকেলে একটা ফোন এল।
-- হ্যালো কিরে, তোকেতো টাকা পাঠালাম। পরে আর কোনো খবর পেলাম না যে
-- তোর সাথে আর বোধ হয় দেখা হবেনারে।
-- এই কি বলছিস এই সব?
-- আমার করোনা পজেটিভ এসেছে।ডাক্তার আমাকে আশঙ্কা যুক্ত ভেন্টিলেশানে রেখেছে
আমার শ্বাস ভারী হয়ে আসছে,  কথা বলতে পারছিনা। ডাক্তার কে লুকিয়ে তোকে ফোন দিলাম। ভালো থাকিস,  আর আমায় ক্ষমা করিস।
-- এই বন্ধু তোর উপর আমার কোনো অভিমান নেই। কথা বল,,, হ্যালো হ্যালো হ্যালো।
ফোন টা কেটে গেলো আমি আবার ফোন দিলাম।  রিং হচ্ছে কিন্তু কেউ ফোন তুলছে না।

BRAKING NEWS:- এই মাত্র খবর পাওয়া গেলো, করোনা তৃতীয় মৃত বহি:রাজ্যের এক বাসিন্দার। বিশেষ খবর সুত্রে জানা গেছে। এই রাজ্যে বছর চারেক আগে ত্রিপুরা থেকে কাজের খোঁজে এসেছিলেন। করোনায় আক্রান্ত হওয়াতে ওর মৃত লাশটিও যাচ্ছেনা পরিবারের হাতে।

সজীব পাল

সুন্দর ভয় 

দুইজন যুবক একদিন বিকেলে গভীর নির্জন বনে যায়;অদ্ভুত অ্যাডভ্যঞ্চারের জন্য ।অনেকটা সখের অথবা নেশার ।সাথে জলের বোতল,টিফিন বক্সে কয়টা রুটি ও আলু সিদ্ধ এবং নিরাপত্তার জন্য লাইসেন্স করা রিভলভার ।
তারা চণ্ডীরবান জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করতে থাকল ।এইদিকে সূর্য ক্রমশ নিস্তেজ আলো বিচ্ছুরিত করছে ।দুইজন যুবক গভীরে প্রবেশ করে প্রথমেই শিয়ালের হাঁক শুনে কিছুটা বিচলিত হলেও ক্রমেই নিজেদের ভেতর উদ্দাম ও বিশ্বাসে শক্তির জোগান দিতে শুরু করে ।

" অলক তুই কি ভয় পাচ্ছিস?"
" ধুর এই কিরকম কথা ! আমরা ত ইচ্ছে করেই এসেছি ভয়ের ভেতর ।একটা কথা কি জানিস পিন্টু,জীবনের প্রকৃত সত্তাকে উপলব্ধি করার জন্য প্রত্যেকটা মানুষকে মৃত্যুর সঙ্গে ঘেঁষে যাওয়া উচিত জীবনে একবার হলেও ।"

" যা বলেছিস।মনে হচ্ছে "full moon " চারিদিক কেমন স্পষ্ট ।"

" সামনের দিকে চল ।ওই ঝোপটার কাছে বসি ।"
পাশেই বিরাট এক জলের লেক।অনেকে বলে এই জলের মাছ নাকি অসম্ভব বড় ।এই জঙ্গলের রহস্য হল ,গভীর রাতে নাকি ওই লেকটার মধ্যে নৌকা ভাসে এবং অদ্ভুত অলৌকিক সুরে গান শোনা যায় ।এবং জঙ্গলে তীব্র বাতাস বয়। আজ থেকে প্রায় এক দেড়শো বছর আগে নাকি এক দুঃসাহসী বৃদ্ধ একা একা এই জঙ্গলে আসে রাতে মাছ ধরার জন্য,তারপর বৃদ্ধই নাকি প্রথম এই নৌকা দেখে ।এবং একটা বইও লেখে "The mystery of the jungle waters"।গতবছর একটা মেলাতে পিন্টু এই বইটি দেখে ঠিক করে ওরাও এই রহস্য ভেদ করবেই ।তাই এখানে আসা ।

ওরা ঝোপের পাশে ক্ষানিক বিশ্রাম করে আবার এগোতে লাগলো ।অসংখ্য কাঁটাঝোপ ।বিরাট বিরাট শাল গাছ ।অলক চারিদিকে টর্চ জ্বেলে এগোচ্ছে ।হঠাৎ অলক পিন্টুকে বলল," ওই দেখ কি গাছ !"

" ছাতিম গাছ "

"হুম,বলত এর বৈজ্ঞানিক নাম কি ?"

"Gelidium amansii, এর ফুলগুলি আমার কাছে অসম্ভব ভালো লাগে ।"

পকেট থেকে মোবাইল বের দেখল অলক ,রাত বেশি হয়নি ,সবে নয়টা দশ ।ওরা লেকটা দেখতে পেলে ।অনেক নিচে। ওরা আছে একটা পাহাড়ে ।চাঁদের আলোয় লেকের জল কেমন চকচক করছে ।তাদের হঠাৎ মনে হল এইরকম একটা স্বচ্ছ জলের এত রহস্য! সুন্দরের যে কলঙ্ক থাকে তা আজ বুঝতে পারছি ।
পিন্টু বলল ," দেখ মনে হয় ওই লেকটা চাঁদকে গিলে ফেলছে ।"
" ভাই তুই যে কবি তা জানি ।এখানে অত্যন্ত বন্ধ রাখ তোর কল্পনা ।"

"আচ্ছা আমি না হয় বন্ধ রাখলাম ,একটা বাজতে এখনো ঢের বাকি ,কি করবি এতক্ষণ?"

"চল খাওয়া দাওয়া সেরে নিই।"

ওরা খাওয়া-দাওয়া সেরে আবার বিশ্রাম করতে একটা পরিস্কার জায়গা দেখে বসল।জ্যোস্নাভরা রাত ! এই রাতে কেউ ঘুমানো যায় না ।শুধু জেগে থেকে উপভোগ করা যায় ।ঘন বসতি বা শহরের রাত আর গভীর নিস্তব্ধ জঙ্গলের মধ্যে কত ফারাক ।যে মানুষ এইরকম রাত না দেখে মরে যায় সে প্রকৃতির সৌন্দর্য কিছুই দেখেনি ।প্রতিটা ভয়ের মাঝে একটা করে সুন্দর ও শিক্ষা লুকিয়ে থাকে ।ভয় ভয় শরীরে যখন পরম সুন্দরকে উপলব্ধি করে তখন যে অনুভূতি তা ভাষায় ব্যক্ত করা যায় না ।

" অলক ঘুমিয়ে গেলি ?"
কোনো সারা শব্দ না পেয়ে পিন্টু তাকে ধাক্কা দিলো ।সে কটমট করে চোখ মেলে বলল," কি হয়েছে ? চোখ লেগে গেছে একটু ।"

" কয়টা বাজে ?"

ঘরির দিকে চেয়ে দেখল বারোটা কুড়ি । হঠাৎ কেমন চাঁদের আলো ক্ষীণ হয়ে গেছে ।চারিদিকে গভীর নিস্তব্ধতা ।নিচে জলের উপর যেন একটা মাছের লাফ দেওআর শব্দ শুনল ।অলকের একটু ভয় লাগতে শুরু করল।এখন আর সে নিজেকে সাহস দিতে পারছে না ।তাদের মনে হল কেউ একজন পেছন থেকে ওদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে ।উত্তর আকাশের ধ্রুব তারা স্পষ্ট ।ওই তাঁরাটাও যেন কিছু বলতে চাইছে ।কিন্তু নিজের আইন ভেঙে বলতে পারছে না ।মোবাইলের ঘড়িতে একটা বেজেছে ।ওরা নিজেদের চেষ্টা করছে শক্ত রাখার ।লেকের ঠিক শেষ প্রান্ত থেকে উজ্জ্বল একটা নৌকা আসছে ।কোনো মানুষ নেই ।অথচ ওই নৌকার উপর শূন্যে ঝুলছে লন্ঠন ।বইয়ের বর্ণনা মতো সমস্ত জঙ্গলে শিহরিত সেই গান ।সত্যি এই গান এই পৃথিবীর না ।এই জগতের হতে পারে না ।অদ্ভুত সুর ! মেয়েলি কণ্ঠ ।হালকা বাতাস বইছে ।অল্প সময়ের মধ্যে যেন সব তালগোল পাকিয়ে গেল । 
অলক ও পিন্টুর চোখ জুড়িয়ে আসছে ।আহা কি মধুর ভয়ংকর সুর ।ওরা এতক্ষণ বিপদের আশঙ্কায় ভীত ছিল ,কিন্তু এখন কোনো ভয় নেই ।এখন বেঁচে থাকার লড়াই ।ভীষন লড়াই ।আসছে নৌকা খুব নিকটে আসছে ।সুর আরো তীক্ষ্ণ ও গভীর ।কোথা হতে মিষ্টি গন্ধ আসছে ।কেন এই জীবন ! ওরা কতকাল এই হয়েছে পৃথিবীতে এসেছে ।কোনোদিন এমন ক্লান্ত অথচ সুখের ঘুম আসেনি ।
ওদের কোনো কথা নেই ।শুধু ভাবছে : কোথায় থেকে এলো এমন মাঝিহীন নৌকা ।কে গাইছে এমন গান ।আচমকা পিন্টু চিৎকার করে বলছে," বন্ধু করো এই গান !"
গান আরো বাড়ছে ।নৌকা এখন ওদের স্থির ! অদ্ভুত এই রাত ।গভীর ঘুমে ওরা ডুবে যাচ্ছে ।ওদের দেহ ক্রমশ বিবশ হয়ে আসছে ।ওদের এখন কোনো চৈতন্য নেই আর ।

ওই দুই যুবকও বৃদ্ধের মতো এক পৃথিবী রহস্য নিয়ে চলে গেল ।প্রকৃতির এমন অনেক রহস্য যা মৃত্যুর চেয়ে ভয়ঙ্কর সুন্দর ।ওরা ভয়ে অনড় থেকে প্রত্যক্ষ করেছে এই ভয়ভীতি রাত।না পৃথিবীতে ভয় বলে কিছু নেই যা আছে তা হল শিক্ষা ।ওরা শিখে গেছে ।

সৌম্যদ্বীপ দেব

মুক্তি

সবাই যেন বর্ণ অন্ধ 
ঘুরছে দীর্ঘশ্বাসে,
রঙ গুলো আজ কালো হয়েছে-
তোমার আবোল ত্রাসে। 

পশু গুলো বাইরে ঘুরছে
মানুষ গুলো বন্দী , 
পৃথিবীকে শ্বাস নিতে দাও-
আর করোনা ফন্দি।

সোনার হাতে সোনার কাঁকন
ধরনীতে লুটায়, 
স্বপ্ন দেখা বিভোর বালক-
দুয়ার খুলে যায়।

মুক্তির স্বাদ বহু দূরে নয় 
আসছে সফল দিন হাকি,
সবুরে মেওয়া ফলে 
আমি তোমায় ডাকি।         

জয়ন্ত শীল

বেহায়া পৃথিবী

বেহায়া পৃথিবী – 
গোমতীর চোখের জল দেখেছিস? 

গোমতী নদী সারারাত কাঁদে, 
রাতের সমস্ত চোখের জল 
মিশিয়ে দেয় মাঝির ভাটিয়ালি সুরে। 

ভোরে কাশফুলের শিশিরে 
জন্ম হয় সূর্যের। 
চলতে থাকে আমাদের মতো 
গোমতী সূর্যের লুকোচুরি খেলা। 

এরা একে অপরকে খুঁজে পায়, 
আমরা পাই না!

প্রণব দাস

রাস্তার কথা
         

এই শহরের রাস্তা গুলি আজ ফাঁকা,
কাছে ধারে কেউ নেই
এ শহরের রাস্তায় গুলি আজ মুক্ত
পেয়েছে একটু শান্তি।

এই শহরের রাস্তা গুলি আজ স্বাধীন
পেয়েছে স্বাধীনতা!
অবশ্য এর আগে জানতো না স্বাধীনতা কি?কেমন স্বাধীনতার স্বাদ?

তবে আজ পেয়েছে মুক্তির স্বাদ
স্বাধীনতার স্বাদ।

আমি এক বুক ভাঙ্গা দীর্ঘ রাস্তা বলছি-
আজ তোমরা ঘরে বসেই আমার আওয়াজ শুনো
হে শিক্ষিত মূর্খ জনগণ! তোমরা নাকি সচেতন?
তবে কোথায় ছিল এতদিন তোমাদের  মানবতা?
আজ করোনা নামক বিষাক্ত মহামারির জন্য আমায় একা ছেড়ে দিয়েছো!
কোথায় ছিল এতদিন তোমাদের সচেতনতা?তবে আজ কেন?

কি দিন, কি রাত, আজ আমি নেব স্বাধীনতার স্বাদ।
কেন? মনে ছিল না এই আধুনিকতা আমাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছে!
তবুও নীরবে সহ্য করেছি।
তখন কোথায় ছিলে?
আজ মহামারীর জন্য আমাকে একা ছেড়ে দিলে-
আমি এক বুক ভাঙ্গা রাস্তা বলছি-
আমরা দীর্ঘ
আমরা একে একে অনেক।

মনে ছিল না তখন,
যখন আমার সুন্দর সুশ্রী চেহারার মধ্যে
পানের পিক ফেলে দিতে!
একটু শান্তিতে ঘুমোতে পারতাম না।
আজ আমি স্বাধীনতা পেয়েছি
হ্যাঁ হ্যাঁ স্বাধীনতা!

আমি বলতে না পারা এক রাস্তা বলছি,
একটু সচেতন হও।
একটু সচেতন হও।।

তুমি কি জানো আমাদের শেষ কোথায়?
আজও মুক্তির জন্য আমায় খুঁজছো!
শুধু আমায়।
আমি এক বুকভাঙা দীর্ঘ রাস্তা বলছি।

অভ্রজিৎ দেবনাথ

পৃথিবী

এত নীরব কেন?
ঘুমন্ত নাকি শক্তিধর?
কোথায় লুকানো পারমাণবিক বোমা?
অবতীর্ণ বিপদের প্রতিষেধক?

এখন অনেক রাত
সদর দরজায় কড়া নাড়ছে
ভাইরাসধারী বিষধর।
অসুখ চায় না গোপাল তাই,
ঠিকানা কোয়ারেন্টাইন।
বন্ধ দোকান, জনমানবহীন রাস্তায়
মিলে না কার্বনের কালো ধোঁয়া;
শুধু,
"খবর আসে!
দিগ্‌দিগন্ত থেকে বিদ্যুদ্‌বাহিনী খবর;"
মৃত্যুর মিছিলে হাহাকার চারিদিক
কারাগারে বন্দি শতদল।

এখন সময় কয়েকটাদিন
ঘরে বসে থাকার;
আমি আশাবাদী,
একদিন টিভির পর্দায়
ডাক পড়বে বাইরে বেরিয়ে আসার,
মহামারী হারিয়ে যাবে,
জয় হবে জনতার।

পার্থ ঘোষ

তিনফুট দূরত্বের 

ইঙ্গিত বুঝেই ঢুকে যাচ্ছি অনন্ত বিবরে 
ক্রমশ হতাশ হই 
বাম-বুকে বাজে আলৌকিক ডুগডুগি ।

অভ্যাসে বিবশ হাত পিছনে লুকাই 
করতলে মেখে নিচ্ছি মন্ত্রপূত জল ।
গোল-গোল দূরত্বের ম্যাজিক, মগজে গেঁথে যায়।

দুয়েকটা ছেঁড়া কথা -বিগত আলাপ 
কোন এক মহার্ঘ্য বসন্ত গলে যদি 
অতর্কিতে আমাদের কথোপকথনে 
হানা দেয়।

তখনও কি গোল গোল আত্মদাগ কেটে 
মুখোশের আড়ালে অক্ষুণ্ণ রেখে 
বাঁচতে হবে এ জীবন, অনতিক্রম্য 
তিনফুট দূরত্বের?

ড. শৌভিক বাগচী

আর্তি

বিপন্ন আর্তির মাঝে 
শুয়ে আছি একা 
চোখে ভাসে প্রারব্ধ ঋণ 
শীতার্ত অনুভূতি গড়িয়ে যায় ,ভিজিয়ে দেয় 
শরীরের যাবতীয় ক্লেদ 
জমিন সরস হয় ,
উষ্ণতা খোঁজে , নতুন বীজ 
বপন করবে বলে 
তারপর বেরোবে অঙ্কুর 
যাবতীয় ঋণ শোধ হবে 
নিক্তি মেপে ,
তারপর --

মিঠুন দেবনাথ

অবভাস

যতবারই ভাবি প্রতিভাস অথবা স্বয়ং সৎ বস্তু  নিয়ে কিছু লিখব সেটা অবভাসেই রূপ পায় | তাই দ্বন্দ্বের দর্শন বোধ হয় ততটা মন্দ নয় , মন্দ হচ্ছে এর উপর আমাদের অপব্যখ্যা | কারণ আমরা যতই স্বপ্নের বাগানে বিচরণ করি না কেন বাঁচতে গেলে আমাদের কাছে বাস্তব জগৎটাই প্রয়োজন ; কাল্পনিক চিন্তাধারা কেবল ক্ষণিকের মানসিক অবসাদ ও প্রশান্তি ব্যতীত কিছুই দেয় না | কল্পনায় মানুষ বার বার জিতলেও মানুষ তার বাস্তবের কাছে প্রত্যহ হেরে যায় ! বিখ্যাত জীবতত্ত্ববিদ ডারউইনের বিবর্তন বাদানুসারে এই বাস্তব জগতে কেবল মাত্র যোগ্যতমেরই বাঁচার অধিকার আছে | বিবর্তন বাদের এই বক্তব্যটি কেবল শারীরিক ক্ষমতার উপর ভিত্তি করেই বলা হয়েছিল | তবে বর্তমানে এই সংজ্ঞাটির রূপ পাল্টে গেছে ; সেটি হতে পারে বৌদ্ধিক শক্তি , শারীরিক ক্ষমতা কিংবা অর্থ-সম্পদের বল | বর্তমানে বেঁচে থাকার জন্য যোগ্যতা অর্জনে এই তিনটি বিষয় লাভের জন্যই সমগ্র মানব সমাজ জ্ঞান-বিজ্ঞানের উপর ভর করে এক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে প্রকৃতির উপর ভয়ানক তান্ডব চালিয়ে যাচ্ছে | যার ফল স্বরূপ ক্লান্ত প্রকৃতি রুষ্ট হয়ে বার বার আমাদের সামনে অগ্নিশর্মা রূপে ধরা দিচ্ছে | কোথাও সুনামী , কোথাও ভূমিকম্প কোথাও সাইক্লোন-টর্নেডো কোথাও আবার ভয়ঙ্কর বন্যা-মহামারী | বার বার এমন বাস্তব সত্য মানুষের সামনে প্রতিভাত হওয়ার পরও মানুষ একে অপরকে দোষ দিয়ে যাচ্ছে | কেউ রাজনীতিক ভাবে , কেউ অরাজনীতিক ভাবে - যে যেভাবে পারছে দোষ দিয়ে যাচ্ছে | কেউই নিজ কাঁধে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত নয় , কেউ হৃদয় থেকে এটা বিশ্বাস করতে পারছে না যে প্রকৃতি ধ্বংসে আমি নিজেই দায়ী | সুতরাং দ্বন্দ্বটা প্রবহমান... 
       এটা আমরা একবারও বুঝতে চাইছি না যে , খারাপ লোক আছে বলেই সমাজে ভালো মানুষের এত দাম | সেই হিসেবে প্রকৃতির উপর ভয়ঙ্কর তান্ডব চালিয়ে কোটি কোটি অসহায় মানুষকে পদতলে দাবিয়ে সম্পদ অর্জন করে কার প্রতি রাজত্ব দেখানোর জন্য প্রস্তুত হচ্ছি আমরা ? যদি প্রজা ঠকানো কিংবা প্রজা হত্যাই আমাদের মূলমন্ত্র হয় তবে রাজত্ব কার উপর করব ? মানুষ তার নিজের কাছে ঠিক কতটা অসহায় সেটা প্রকৃতি আজ মানুষকে বার বার বুঝিয়ে দিচ্ছে ... তারপরও আমরা থামছি না | যেখানে একটা ভাইরাসকে মোকাবেলায় সারা বিশ্বের ধর্ম-দর্শন , জ্ঞান-বিজ্ঞান সব কোনঠাসা হয়ে গেছে সেখানে মজুত দারের আনন্দ ঠিক কোথায় ? কার জন্য মজুত করছি আমরা ! যদি বিশ্বটাই পাল্টে যায় , যদি নীল-সবুজে ভরা গোলকটি  চিরদিনের জন্য মুছে যায় , যদি দি লস্ট জুরাসিক ওয়ার্ল্ডে পরিণত হয় , তবে কাকে ঠকিয়ে কার কাছে ডাবল দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করব ? কেন করব ? ভেবেছিলাম পৃথিবীটা একটা উন্মুক্ত ভাসমান গোলক , এর আকাশ বাতাস সব কিছুই উদার ... কিন্তু না সেই ভাবনাতেও আজ দ্বন্দ্ব লেগে গেল...! তবে কি পৃথিবী আমার ড্রয়িং রুমের লকারটির মতোই ! যদি লকারটির মতো না হত তবে তার সর্ব রাস্তায় আজ তালা পড়ল কেন ? ভাবায় না বুঝি ? দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয় না বুঝি ? তারপরও মজুতের চিন্তাধারা ? আজ একসাথে বাঁচার লড়াইয়ে যদি একসাথে মরতেও হয় তবে এখনও প্রস্তুত নন বুঝি ?
     বিশ্ব আজ বাক্সবন্দী , কীট-পতঙ্গের মতো মানুষ রাস্তায় ঘুরছে , মাইলের পর মাইল চলতে চলতে অনাহারে জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটছে... তারপরও মজুতদারি ? তারপরও কৃপনতা ? খুলে দিন হৃদয়ের দ্বার , খুলে দিন বস্তার মুখ...সবাই খেয়ে বাঁচুক...বাঁচবো তো একসাথে বাঁচবো , মরবো তো একসাথে মরবো...কারণ বিবেকের আদালতে যদি এই বিপর্যয়ের বিচার হয় তাহলে প্রথমেই অপরাধী হিসাবে আমি-আপনি উভয়কেই পাশাপাশি দেখবো...কেউ আগেও নয় , পিছেও নয়।

অমিত রুদ্র পাল

দিশা

বাড়ি থাকো ঘরে খাও
অযথা,
দূর বিপাকে না যাও
ইচ্ছে হলে নাচো গাও
তবু নিজেকে বাঁচাও ।
খোল নাও করতাল নাও
কীর্তন করে সৈন্য সাজাও
তবু ভাইরাস না ছড়াও ।

ইচ্ছে যদি হয় অবাধ মনে 
কারফিউর লাঠি ডাক শুনে।
জিজ্ঞেস করো রাস্তায় যারে 
কারফিউর প্রেমে মরিচা ধরে,
হবে যখন সোহাগ আদর
ফুলবে লাল পিছে সাদর। 

বাড়ি থাকো ঘরে খাও  
অযথা, 
দূর বিপাকে না যাও ।
ইচ্ছে হলে তুলি ধরো
মনের মাঝে সৈন্য করো ।

সুস্মিতা রায়

আতঙ্ক

ইদানিং কোনো চাপ চাইছি না আর
থেকে থেকে তাও হাল্কা উসখুশ ---
এসব তো চলতেই থাকে আজকাল,
তবে প্রেসারটা না বড্ড জ্বালাচ্ছে 
হ্যাঁ রে,খেয়াল রাখছি তো নিজের !

এই জানিস,দাদুর সেদিন ভীষণ জ্বর
তুই তো ছিলিস মামাবাড়ি,পাপা অফিস,
কি করি,কি করি ... 
লক্ ডাউনেই ছুটে গেলাম
এপার-ওপার খুব খুঁজেছি,
শেষে কি না ঐ ট্রাফিককাকু ?
আরে ঐ পাড়ার মোড়ের কাকুটারে ...
উনিই তো ছুটোছুটি করে ঔষুধ পৌঁছে দিলেন,
আর একটু হলেই ব্যস্ ...
মাগ্গো মা, সে কি বিপদ!
হ্যাঁ হ্যাঁ চিন্তা করিস না,দাদু এখন একদম ফিট।

আচ্ছা শোন্ - দিদনের খেয়াল রাখিস কিন্তু
চারিদিকে কত কি শুনছি !
ঘর থেকে বেরোবি না একদম,
সময় পেলে বোনুকে নিয়ে পড়াতে বসিস
মামার তো ফিরতে সেই রাত,
আর শোন্,মোবাইলে বেশি রাত জাগিস না বাবা
খাবার কিন্তু ভালো করে হাত ধুয়েই খাস!

শুনছিস?হ্যালো ... হ্যালো ... হ্যালো বাবান 
যাহ্ রেখেই দিল !!
কি আজব রে আজকালকার ছেলেমেয়েগুলো
হে ঈশ্বর - বোধবুদ্ধি দাও,ক্ষমা করো
সবাইকে ভালো রেখো ঠাকুর,রক্ষা করো।

সুশান্ত নন্দী

আলোর পথ দেখাও 

 
 সমগ্র পৃথিবী ঘুমিয়ে পড়লে সকালটা কার জন্য 

স্তব্ধতার ভিতর বিষাদ এলে তা হেঁটে যায় গুনিতকে

 এই আমি মৃত্যুর কথা ভাবতে ভাবতে 
বেঁচে আছি 
মহামারী এলে সবাই ভাবে এমন 

মহামারী শেষ হলে দুর্ভিক্ষ এসে যাবে অন্ধকার পেরবো ঈশ্বর
 তুমি আলোর পথ দেখাও...

চন্দন পাল

কবিতার কথা


বড় হয়ে বুঝতে পারি, মা'রকোলে আমরা ছন্দছড়ায় ঘুমুতাম, হাসতাম, কান্নাও মুছতাম। আজও অনেক  মা-বাবার মুখে সেই হৃদম শোনা যায়  (ঘুমপাড়ানি মাসী পিসি,,,)।  সেই সব ছড়ার শব্দার্থ, মুলভাব আমরা তখন জানতাম না অথচ কিছু একটা সক্রিয়তা ছিল। অর্থাৎ তাল ছন্দ আমরা প্রত্যেকেই ভালবাসি।

  কৈশোরে পাঠ্য কবিতার অভেদ্য শব্দার্থগুলি বুঝে নেওয়ার পর, কবিদের  ছন্দ কবিতা পড়ে মোহিত হতাম আর তাল দিয়ে দিয়ে পড়তাম, সেই থেকে কবিতার প্রতি দূর্বলতা।
  একদিন বাবা মারা যাবার পর বয়স বার/তেরো হবে, পাড়ার রাস্তায়  "মরণ আর স্মরণ"  শব্দ দুটি শুনে এর মধ্যে ছন্দ ও বিষয়বস্তুর মিল পাই। ভাবতে ভাবতে আটদশ লাইনের অসফল ছন্দও তৈরী করি।
   আরেকটু বড় ক্লাশে গেলেপরে কঠিন কবিতা গুলি বুঝিয়ে দেওয়ার পর, কবিতার রসাস্বাদন করে বুঝতে পারি ভাষার উপমা আর প্রয়োগশৈলী। দেশাত্মবোধ কবিতাগুলি প্রভাবিত করতো। পরবর্তী কালে নৈসর্গিক ও পূর্বরাগের কবিতাগুলিও আপ্লুত করে তুলে। দেখলাম রচনাকার দের মধ্যে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে । কোন সামাজিক দৃশ্য বা বিষয়ের মধ্যে  তাঁরা যা দেখতে পান,  আমি তা  পাই না। পরে কবিতার মুলভাব পড়ে আমি  দেখি। এরই মাঝে যখন কোন স্থানীকের কবিতা/ গল্প চোখে পড়ে তখন সৃজন গুণান্বিত  বিস্ময় বোধ করি।  কিন্তু সব্বার কবিতার মুলভাব  সবসময় আমাকে আপ্লুত করতে পারেনা। তাল লয় ছন্দ উপমা ও সামঞ্জস্যের মধ্যে কোথাও যেন একটা অসম্পূর্ণতা আমায় তৃষিত করে তুলে। আমি আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সন্ধান শুরু করি। প্রাচীন ও আধূনিক লেখা পড়তে থাকি । আমি আজও খুঁজি ফিরি, যশস্বীরা কিভাবে পূর্ণিমার চাঁদে রুটি পেলেন, প্রজাপতিতে রামধনু পেলেন, কান্ডারী হুশিয়ার হলে যাত্রী নিরাপদ হয়, বনলতাসেনের চোখ পাখীর নীর হয়, "তেলের শিশি ভাঙ্গলে পরে"দেশ জোরা লাগে। আমার সেই চোখ আর দৃষ্টি পাওয়ার চেষ্টা আজও চলছে, তাই কবিতা লিখি।
    
  যখন দ্বন্ধে থাকি, মতের মানুষকেও আমার অব্যক্ত যন্ত্রণা বুঝাতে পারিনা তখন, কবিতার কাছে যাই, তার সাথে কথা বলি, মনে হয় সে আমার অনুভব বুঝতে পারে,  মন হাল্কা হয়।
আমার গোপন কথা তাকে বলি। সে ভুলেও আমারই দূর্বল অস্ত্রে আমাকে পরাস্ত করে না।
সেই জীবনানন্দ পেতেই কবিতা লিখি।

শুভ্রশংকর দাশ

মনখারাপের  দোকান-ঘর

মনখারাপ নিয়ে লিখতে বসে কবি শ্রীজাতের কথা মনে পড়ল। ডিপ্রেশন মানে নিম্নচাপ ! ডিপ্রেশন মানে মন খারাপ ..সো ফানি !

মনখারাপ, পোষাক পাল্টে রাগ হিসেবে ও প্রকট হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যার যত বেশী রাগ তার ততবেশি ভালোবাসা দরকার । এই কথা শুনে আপনারা আবার আপনাদের প্রেমিকা বা স্ত্রীর সামনে বেশী রাগ দেখিয়ে ড্রামা করতে যাবেন না যেন ! হিতে বিপরীত হতে পারে ।

যাইহোক, সব মন খারাপ , ডিপ্রেশনের অন্ধকার ঘরে আমাদের নিয়ে যায় না। আর নিয়ে গেলেও আমাদের বুঝতে দেরী হয় । 

এই ভব সংসারে কারণ ছাড়া নাকি একটা পাতাও নড়েনা। এই সুত্র মেনে নিলে , বলতেই হয়, রাগ ,দুঃখ ,ভয় সবরকম অনুভূতির সৃষ্টির পেছনে কিছু কারণ অবশ্যই থাকে। এবং এই অনুভূতিগুলোর আগমনের কিছু উদ্দেশ্য ও থাকে। তাই ,এই কারণ এবং উদ্দেশ্য আবিষ্কার করতে না পারলেই যত সমস্যা। 

পাগলকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া কঠিন  কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে মানতেই চায় না যে তার মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা আছে। যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হল সমস্যার উপস্থিতিটা মেনে নেওয়া ।

আমাদের জীবনের বেশিরভাগ দুঃখ বা মনখারাপের সৃষ্টিকর্তা আমরা নিজেরাই। জীবনের বেশিরভাগ দুঃখই মস্তিষ্কপ্রসূত। অর্থাৎ কাল্পনিক। মানে এই সব দুঃখের কিছু বাস্তবিক কারণ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু আসলে এই কারনগুলো এতটাই তুচ্ছ যে , সুস্থির অবস্থায় চিন্তা করলে হয়তো হাসিও উঠতে পারে। 
 বেশীর ভাগ দুঃখই শৌখিন দুঃখ। খাদ্যহীন , গৃহহীন মানুষের দুঃখ বা অসম্ভব শারীরিক বা মানসিক অত‍্যাচার বা কষ্ট সহ্য করেও যারা হাসি মুখে বাঁচার চেষ্টা করছে, তাদের দুঃখের সামনে আমাদের মন খারাপকে পিঁপড়ের থেকেও ছোট বলে মনে হবে।

এই যে 
অনর্গল টিকে থাকা
ঘুম নামক সাময়িক আত্মহনন
এই যে
চেপে রাখার অভ‍্যেস
বুঝেও নাবোঝার ভান
এই যে 
তেতো মুখে সুখটান 
মিষ্টি দুঃখ গিলে মধুমেহতায় ভোগা
এই যে 
বিছানামুখী ইন্দ্রীয় 
অনাবৃত ইথারীয় বিকার
          ঝাপসা কবিতা লিখে
          জীবনের মানে খোঁজা..

অনেক সময় মনখারাপের প্রকৃত কারন জানলেও মানুষ তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে ভয় পায়। কিছু মনখারাপ মনের ভেতর পুষে রাখার মধ্যেও একটা অলীক তৃপ্তি থাকে। এই তৃপ্তিটাই অবসেশন হয়ে যায়। সারাক্ষণ এই মনখারাপের মলম বুকে , পীঠে, হৃদপিন্ডের স্পর্শকাতর অংশটাতে মালিশ করতে এতটাই ভালো লাগে যে, শুশ্রূষাকে শত্রু বলে মনে হয়।

বাকী মানুষের দুঃখ আছে , আমার নেই..এই ব‍্যপারটাও অনেকের হজম হয় না। দুখু দুখু ভাব রেখে ঢেকে দেখানো টা একটা ট্রেন্ড ও বটে। 

দুঃখ , প্রতিবন্ধকতা, মনখারাপ.. এসব যদি সুখের ঘাড়ে নিঃশ্বাস না ফেলে , তাহলে মানুষ বাঁচবে কি নিয়ে?

এই ত জীবন..
ভীড়ে উষ্ঞায়ন
রাতে বাৎসায়ন 
ভোরে রামদেব
বছর শেষে গঙ্গাজলে ডুব..

কারো কারো মনের ভেতর, মনখারাপের ইঁট দিয়ে বানানো একটি বিশাল অথচ ভগ্নপ্রায় দুঃখের প্রাসাদ থাকে...পেলেস অফ ট্র্যাজেডি আরকী ।  মনখারাপ নিয়ে বেশী টানাটানি করা তাদের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে !

..স্মৃতিটা 
ভুতুড়ে বাড়ির 
ইঁটের মত বেড়িয়ে আছে

টান দিলেই 
দেয়ালটা খসে পড়বে !

দীর্ঘদিন দুঃখের অনুপস্থিতিও মনখারাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
 ছোট ছোট মনখারাপগুলো, অনেকসময় , আমাদের বড়  দুঃখের হাত থেকে বাঁচায় এবং সুখপাখির অনুপস্থিতিতে শূণ্যস্থানগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে। জীবনের সাথে কলম আর ঘড়ির চরিত্র মিলে যায় কখনো কখনো..

কলম পুরোপুরি অস্বচ্ছ হলে মুশকিল।
বার বার খুলে দেখতে হয়
 কতটুকু কালি আছে !

কলম আর ঘড়িগুলো বড্ড দৃষ্টিকাতর,
তাকিয়ে থাকলে শ্লথ; আনমনা হলে পিছলে যায়;

রিফিল শব্দের বিরুদ্ধে গিয়ে
শূন‍্যস্থানগুলো খালি রাখলেই মঙ্গল।
নড়াচড়া করতে সুবিধে হয়;

এই সুযোগে
আরেকটা ডটপেন দিয়ে
তার ক্ষেত্রফল টুকে রাখা যায়..

প্রতিটি মনখারাপ আসলে আমাদের আরো বেশী শক্তিশালী, ধৈর্যশীল, বাস্তবমুখি হয়ে উঠার জন‍্য ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কা, পড়ে যাওয়ার জন্য নয়, আরো দৃঢ় ভাবে উঠে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে।

আর কোনোকিছুর নিশ্চয়তা না থাকলেও, ছোট বড় মনখারাপ হয়ে, দুঃখ মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সঙ্গ দেবে এই গ‍্যারেন্টি দেয়াই যায়। যার যতটুকু সামর্থ্য সে ততটুকু মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে মাত্র..

বুঝে ওঠার আগেই
দুঃখ
সবার দোকান গুছিয়ে রাখে।

কেউ খোলা রাখে।
কেউ, গুটিয়ে নেয়ার আগে
পোড়া বেলার  বাতাবি কোণ ভেঙে খায়।
বাকীরা, বিক্রি করার আগেই , বিক্রি হয়ে যায়..

সঞ্জীব দে

জীবনের সুর 

প্রতীক্ষার দীর্ঘ লাইন 
ভেদ করে জানিনা কবে শেষে হবে 
পৃথিবীর  অঝোর শ্রাবণ! 
আর কতো লাশ গুণতে থাকবো 
 বন্ধি ঘরে অমাবস্যার দুয়ারে বসে! 
নাকি অদৃশ্য সন্ত্রাসে মুছে যাবে সমস্ত পথ! 
আজ একি হলো 
মন্দির মজ্জিদ  গীর্জার দুয়ারে দুয়ারে তালা 
স্কুল কলেজ খেলার মাঠ সব সব ফাঁকা 
মানুষকে দেখে মানুষ দূরে সরছে 
দূরে বহু দূরে! 
আর কত দূরে গেলে মানুষ মানুষের কাছে আসবে 
মুক্ত আকাশে বিহঙ্গ ডালা মেলে উড়বে! 
মৌনতা আর অসামাজিক নিগূঢ় ভেঙ্গে মানুষ 
নিস্তব্ধতার ঢেউহীন  সমুদ্র পেরিয়ে 
এগিয়ে চলার উৎসবে সামিল হবে! 
গোটা পৃথিবী যখন হসপিটাল মুখী --
অসহায় ধর্মগুরুদের মুখ ঢেকে যায় মাস্কে! 
একটা পৃথিবী যখন অসহায় 
যাদের এক চোখে গঙ্গা আরেক চোখে ভয় 
আরেকটা পৃথিবী জেগে আছে দিনরাত 
ঘোর অন্ধকারে 
জীবন দিশারী হয়ে! 
ধর্ম নয়! বরং বিজ্ঞান জেগে থাকে আজীবন! 
মানুষের ছায়া হয়ে! 

সব পরীক্ষা শেষে 
বিজ্ঞান জয়ী হয়! পৃথিবী সবুজায়নে ভরে ওঠে বার বার। 
সচেতন মানুষের মঙ্গল ডাকে আনন্দবীনায় 
খুব শীঘ্রই বেজে উঠবে  জীবনের  সুর! 

দীপক দাস

প্রথম কদম ফুল

আজ ২৯ মার্চ। সকালে করোনাতঙ্কে WhatsApp খুলে অবাক।নূতন  এক নাম্বার  থেকে একটি  চিঠি।"স্বপন আমি মধুমিতা।এই মুহূর্তে  আমি বেলেঘাটা হাসপাতালে। করোনা আক্রান্ত। গত সপ্তাহে  ইটালিতে মেয়ের বাড়িতে  ছিলাম। ওদের  একটা  ঘরোয়া  অনুষ্ঠানে  সবার পীড়াপীড়িতে একটি  নজরুল  গীতি গাইতে হয়। গানটি তোমার প্রিয় ছিল। এখনো নজরুল গীতি  খারাপ গাইনা।গানটি"আমার যাবার সময় হল দাও বিদায়"।সবার করতালিতে আমি তৃপ্ত। তারপরদিনই কলকাতা আসি।সেখানে  জ্বর,  মাথাব্যাথা।ডাক্তার  দেখানো হয়।আমার ঠাঁই  হয় বেলেঘাটা হাসপাতালে। যেজন্য এ চিঠি  লেখা, বেনীমাধবকে যেমন কিশোরী  মেয়েটি প্রথম দেখেছিল তেমনি তেমনি  মুর্শিদাবাদের এক গ্রামের  এক কিশোরী  মেয়ে কলকাতা থেকে আগত কলেজ  পড়ুয়া যুবককে  দেখে  মুগ্ধ। কিন্তু  সে যে কালো।নজরুল  গীতি আমাকে তোমার কাছে নিয়ে  এসছিল। স্বর্গ  থেকে  বৃহস্পতি  পুত্র কচ মৃত সঞ্জীবনী  বিদ্যা শিখতে এসেযেমন এক মুহূর্তে  শুক্রাচার্যের  মেয়ে  দেবযানীর  হৃদয়  জয় করে নেয়, তেমনি  তুমি আমার হৃদয়  জয় করে নিলে।দেবযানী যেদিন  কচকে প্রথম  দেখে, সেদিন  ছিল  সকাল।পূর্ব  দিগন্তে  সূর্য  উঠেছে। ভোরের  সেই  মায়াবী  আলো কচ ও দেবযানীর  মুখে  এসে পড়েছে। দুজনাই  মুগ্ধ। তবে দেবযানী সেই মুহূর্তে  ভালোবেসে ফেলে কচকে। মনে আছে তোমার১৯৭১ সালের কোন এক সকালে কয়েকটি  ছেলে নিয়ে খুব  ভোরে বাংলাদেশের  স্বাধীনতা  যুদ্ধে সাহায্যের জন্য চাঁদা তুলতে৷ আমাদের  বাড়ি এসে দাঁড়ালে।আমি পড়ার টেবিল  থেকে বাইরে  এসে ভোরের  সেই মায়াবী  আলোয় তোমাকে  দেখি।আমি হারিয়ে  ফেলি নিজেকে।বাবাকে বললাম  আমি দাদাদের  সাথে  চাঁদা তুলব। বেরিয়ে  এলাম।কিশোরী  আমি।ফ্রক পরী তখনো। তুমি একমাস ছিলে আমাদের  গ্রামে।কতবার দেখা।আমাদের  বাড়িতে  তোমার অবারিত  দ্বার।তুমি আসতে, গানশুনতে, চলে যেতে।আমার মন ভারী হয়ে যেত।আমরা  দুবোন  মা  বাবাকে রাজী করিয়ে তোমার সাথে তোমারি বয়সি এক কাকাকে  নিয়ে সিনেমা  দেখতে যাই বহরমপুরে। সিনেমা  শেষে রিক্সায়  ফিরি।অভাবিত  ভাবে  তুমি  আমি  এক রিকশায় বসি দীর্ঘ  পথ। মুর্শিদাবাদের রাস্তা। রাস্তার দু'ধারে  আমগাছ । কত ইতিহাসের  সাক্ষী এই গাছ  গুলি
কত উত্থান  কত পতন,আমদের এই পথ চলার সাক্ষীও এই গাছগুলো। পাশাপাশি  বসেছি তোমার গায়ের  সাথে আমার গা লাগছে।এক অনাস্বাদিত  পুলকে সদ্য তরুণীর দেহ মন ভরে ওঠে। তুমি কত কথা বললে।আমার মুখটি তোমার চুম্বনে পবিত্র  হয়ে ওঠে। তুমি  ধরা দিলে।
স্বপন,এর পর তুমি চলে গেলে।যোগাযোগ  ক্ষীণ  হতে ক্ষীণ তর হতে হতে একসময় থেমে গেল। জীবনের  প্রয়োজনে  দুজনের  জীবন নূতন খাতে প্রবাহিত  হতে থাকল। বিয়ে হল,পুত্র  কন্যা হল,সব হল।তবুকোথায় যেন অপূর্ণতা  রয়ে গেল।মনে পড়ে জীবনানন্দের  কবিতা -"বধূ শুয়েছিল  পাশে /প্রেম ছিল, আশা ছিল /তবু দেখিল সে কোন ভূত/ ঘুম  ভেঙে  গেল তার"।
দীর্ঘ  জীবনে যখনি একা হয়েছি,তখনি কিশোরী  বেলার সেই  সকালের কথা মনে হয়েছে। মনে পড়ত রিক্সায় আসা সেই  সন্ধ্যাটির কথা।তোমার গায়ের  সৌরভ আমি  যেন আজো টের পাই।গ্রামের আলে তোমার হাত ধরে  হাঁটার  ছবিটি  আজও আমার  কাছে পবিত্রতম মনেহয়। সংসার জীবনকে সন্তুষ্ট  রাখতে গিয়ে ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যোগাযোগ  কটা যায়নি  তোমার সাথে।হয়তবা তোমার অবস্থা  ও আমারি মত।আজ এই আসন্ন মৃত্যু  শয্যায় কেবলি তোমাকে  একবার দেখতে ইচ্ছে  করছে।  সম্ভব নয় কী দেখা করা?
৷ ৷৷৷৷৷ মধুমিতা
আমি  অবাক। কত বছর পর কোন এক  অজানা লোক যেন কী এক বার্তা এল।আমি যুগপত্ বিস্মিত  ও শোকস্তব্ধ। স্মৃতির সিঁড়ি  বেয়ে মুহূর্তে সেই  সব নব যৌবনের উন্মোচনের দিনগুলো  এসে ধরা দিল।১৯৭১ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ। আমি City College থেকে বি,কম পার্ট ওয়ান এর  Testপরীক্ষা দিয়ে মুর্শিদাবাদ  আমার এক আত্মীয়  বাড়ি  বেড়াতে  যাই। সেখানে প্রায় একমাস  ছিলাম।সেখানে নজরুল  গীতির সুবাদে মধুমিতার কাছে আসি।কিন্তু  সে ছিল নিতান্ত অপরিনত বয়সের এক ধরনের  অবুঝ  ভালোবাসা। যার পরিনতি কীহবে কেউ জানতামনা।এযেন রবীন্দ্রনাথের পোস্টমাস্টার  গল্পের পোস্টমাস্টারের মত।জীবনের  প্রয়োজনে ছোট্ট  মেয়ে "রতনকে" গ্রামে ফেলে রেখে মাস্টার  মশাইকে  এগিয়ে  যেতে হয়।ভাবে জীবনের  বাঁকে বাঁকে কত রতনের দেখা হবে।
ভাবছি  দেখা করব তার সাথে।তাকে বলব মধুমিতা  তুমি কি রবীন্দ্রনাথের "হঠাৎ  দেখা" পড়নি,যেখানে মেয়েটি  প্রশ্ন করেছিল পূর্বতন প্রেমিককে "আমাদের  গেছে  যেদিন  সবই কী গেছে/কিছুই  কী তার নেই  বাকী "
উত্তর এলো-"রাতের  সব তারই আছে
দিনের  আলোর গভীরে "
মধুমিতা ঝড় থেমে যাবে।তুমি নিরাময় হয়েউঠবে।আমাদের  মধ্যে  নূতন  করে গড়ে উঠবে নূতন এক সম্পর্ক যা জীবনের  আগুনে পুড়ে  শুদ্ধ  ও পবিত্র।

দেবাশিস চৌধুরী

ভালোবাসা

যা হবার হয়ে গেছে
পৃথিবী সৃষ্টির কুষ্টিতে
বর্ণিত আছে এক অমোঘ যাপন।

বিজ্ঞান ধর্ম এবং মানবতা
আগামী বছরের নির্বাচনে
প্রধান ইস্যু হবে।
আমরা জিতবো কিন্তু
নিজেকে বেচবো না!
কারন
কর্মব্যস্ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যাত্রীবাহী জাহাজ যার কাছে ভালোবাসা ছাড়া আর কোনও জিনিস থাকেনা ! 
আমি কখনও এই জিনিস কিনতে চাইনি! 
আত্মস্থ করতে চেয়েছি কেবল।

অভীককুমার দে

সন্ধ্যা নদীর কূল 

তোমাকে নিরবতার অভ্যেস করতে দেখে
টাওয়ারের চুড়ায় জ্বলে ওঠে সিগন্যাল লাইট, 
পেছনে তারারা লুকায়। 

দুরকম কাল বুকে, সময় 
অসময়ের টেরা কোটা,
আমাদের ভেতর সভ্যতার খোঁজে
কখনও মাইকেল কখনও জ্যাকসন, অথচ
বাউল পাখি
ডানা ভাসালেই বুকের মাটি কাঁদে। 

এখন তুমি আর আমি 
মুখোমুখি বিকেলের রঙ মাখি 
দুটি নদী
চার ভাগে বয়ে যায়, 

বুকের ভেতর সন্ধ্যা নদীর কূল 
বেজে উঠছে দিন শেষের ভায়োলিন। 

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...