কবিতার কথা
বড় হয়ে বুঝতে পারি, মা'রকোলে আমরা ছন্দছড়ায় ঘুমুতাম, হাসতাম, কান্নাও মুছতাম। আজও অনেক মা-বাবার মুখে সেই হৃদম শোনা যায় (ঘুমপাড়ানি মাসী পিসি,,,)। সেই সব ছড়ার শব্দার্থ, মুলভাব আমরা তখন জানতাম না অথচ কিছু একটা সক্রিয়তা ছিল। অর্থাৎ তাল ছন্দ আমরা প্রত্যেকেই ভালবাসি।
কৈশোরে পাঠ্য কবিতার অভেদ্য শব্দার্থগুলি বুঝে নেওয়ার পর, কবিদের ছন্দ কবিতা পড়ে মোহিত হতাম আর তাল দিয়ে দিয়ে পড়তাম, সেই থেকে কবিতার প্রতি দূর্বলতা।
একদিন বাবা মারা যাবার পর বয়স বার/তেরো হবে, পাড়ার রাস্তায় "মরণ আর স্মরণ" শব্দ দুটি শুনে এর মধ্যে ছন্দ ও বিষয়বস্তুর মিল পাই। ভাবতে ভাবতে আটদশ লাইনের অসফল ছন্দও তৈরী করি।
আরেকটু বড় ক্লাশে গেলেপরে কঠিন কবিতা গুলি বুঝিয়ে দেওয়ার পর, কবিতার রসাস্বাদন করে বুঝতে পারি ভাষার উপমা আর প্রয়োগশৈলী। দেশাত্মবোধ কবিতাগুলি প্রভাবিত করতো। পরবর্তী কালে নৈসর্গিক ও পূর্বরাগের কবিতাগুলিও আপ্লুত করে তুলে। দেখলাম রচনাকার দের মধ্যে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে । কোন সামাজিক দৃশ্য বা বিষয়ের মধ্যে তাঁরা যা দেখতে পান, আমি তা পাই না। পরে কবিতার মুলভাব পড়ে আমি দেখি। এরই মাঝে যখন কোন স্থানীকের কবিতা/ গল্প চোখে পড়ে তখন সৃজন গুণান্বিত বিস্ময় বোধ করি। কিন্তু সব্বার কবিতার মুলভাব সবসময় আমাকে আপ্লুত করতে পারেনা। তাল লয় ছন্দ উপমা ও সামঞ্জস্যের মধ্যে কোথাও যেন একটা অসম্পূর্ণতা আমায় তৃষিত করে তুলে। আমি আমার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের সন্ধান শুরু করি। প্রাচীন ও আধূনিক লেখা পড়তে থাকি । আমি আজও খুঁজি ফিরি, যশস্বীরা কিভাবে পূর্ণিমার চাঁদে রুটি পেলেন, প্রজাপতিতে রামধনু পেলেন, কান্ডারী হুশিয়ার হলে যাত্রী নিরাপদ হয়, বনলতাসেনের চোখ পাখীর নীর হয়, "তেলের শিশি ভাঙ্গলে পরে"দেশ জোরা লাগে। আমার সেই চোখ আর দৃষ্টি পাওয়ার চেষ্টা আজও চলছে, তাই কবিতা লিখি।
যখন দ্বন্ধে থাকি, মতের মানুষকেও আমার অব্যক্ত যন্ত্রণা বুঝাতে পারিনা তখন, কবিতার কাছে যাই, তার সাথে কথা বলি, মনে হয় সে আমার অনুভব বুঝতে পারে, মন হাল্কা হয়।
আমার গোপন কথা তাকে বলি। সে ভুলেও আমারই দূর্বল অস্ত্রে আমাকে পরাস্ত করে না।
সেই জীবনানন্দ পেতেই কবিতা লিখি।
No comments:
Post a Comment