Monday, April 27, 2020

শুভ্রশংকর দাশ

মনখারাপের  দোকান-ঘর

মনখারাপ নিয়ে লিখতে বসে কবি শ্রীজাতের কথা মনে পড়ল। ডিপ্রেশন মানে নিম্নচাপ ! ডিপ্রেশন মানে মন খারাপ ..সো ফানি !

মনখারাপ, পোষাক পাল্টে রাগ হিসেবে ও প্রকট হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যার যত বেশী রাগ তার ততবেশি ভালোবাসা দরকার । এই কথা শুনে আপনারা আবার আপনাদের প্রেমিকা বা স্ত্রীর সামনে বেশী রাগ দেখিয়ে ড্রামা করতে যাবেন না যেন ! হিতে বিপরীত হতে পারে ।

যাইহোক, সব মন খারাপ , ডিপ্রেশনের অন্ধকার ঘরে আমাদের নিয়ে যায় না। আর নিয়ে গেলেও আমাদের বুঝতে দেরী হয় । 

এই ভব সংসারে কারণ ছাড়া নাকি একটা পাতাও নড়েনা। এই সুত্র মেনে নিলে , বলতেই হয়, রাগ ,দুঃখ ,ভয় সবরকম অনুভূতির সৃষ্টির পেছনে কিছু কারণ অবশ্যই থাকে। এবং এই অনুভূতিগুলোর আগমনের কিছু উদ্দেশ্য ও থাকে। তাই ,এই কারণ এবং উদ্দেশ্য আবিষ্কার করতে না পারলেই যত সমস্যা। 

পাগলকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া কঠিন  কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সে মানতেই চায় না যে তার মস্তিষ্কে কোনো সমস্যা আছে। যেকোনো সমস্যা সমাধানের প্রথম পদক্ষেপ হল সমস্যার উপস্থিতিটা মেনে নেওয়া ।

আমাদের জীবনের বেশিরভাগ দুঃখ বা মনখারাপের সৃষ্টিকর্তা আমরা নিজেরাই। জীবনের বেশিরভাগ দুঃখই মস্তিষ্কপ্রসূত। অর্থাৎ কাল্পনিক। মানে এই সব দুঃখের কিছু বাস্তবিক কারণ থাকলেও থাকতে পারে কিন্তু আসলে এই কারনগুলো এতটাই তুচ্ছ যে , সুস্থির অবস্থায় চিন্তা করলে হয়তো হাসিও উঠতে পারে। 
 বেশীর ভাগ দুঃখই শৌখিন দুঃখ। খাদ্যহীন , গৃহহীন মানুষের দুঃখ বা অসম্ভব শারীরিক বা মানসিক অত‍্যাচার বা কষ্ট সহ্য করেও যারা হাসি মুখে বাঁচার চেষ্টা করছে, তাদের দুঃখের সামনে আমাদের মন খারাপকে পিঁপড়ের থেকেও ছোট বলে মনে হবে।

এই যে 
অনর্গল টিকে থাকা
ঘুম নামক সাময়িক আত্মহনন
এই যে
চেপে রাখার অভ‍্যেস
বুঝেও নাবোঝার ভান
এই যে 
তেতো মুখে সুখটান 
মিষ্টি দুঃখ গিলে মধুমেহতায় ভোগা
এই যে 
বিছানামুখী ইন্দ্রীয় 
অনাবৃত ইথারীয় বিকার
          ঝাপসা কবিতা লিখে
          জীবনের মানে খোঁজা..

অনেক সময় মনখারাপের প্রকৃত কারন জানলেও মানুষ তার থেকে নিষ্কৃতি পেতে ভয় পায়। কিছু মনখারাপ মনের ভেতর পুষে রাখার মধ্যেও একটা অলীক তৃপ্তি থাকে। এই তৃপ্তিটাই অবসেশন হয়ে যায়। সারাক্ষণ এই মনখারাপের মলম বুকে , পীঠে, হৃদপিন্ডের স্পর্শকাতর অংশটাতে মালিশ করতে এতটাই ভালো লাগে যে, শুশ্রূষাকে শত্রু বলে মনে হয়।

বাকী মানুষের দুঃখ আছে , আমার নেই..এই ব‍্যপারটাও অনেকের হজম হয় না। দুখু দুখু ভাব রেখে ঢেকে দেখানো টা একটা ট্রেন্ড ও বটে। 

দুঃখ , প্রতিবন্ধকতা, মনখারাপ.. এসব যদি সুখের ঘাড়ে নিঃশ্বাস না ফেলে , তাহলে মানুষ বাঁচবে কি নিয়ে?

এই ত জীবন..
ভীড়ে উষ্ঞায়ন
রাতে বাৎসায়ন 
ভোরে রামদেব
বছর শেষে গঙ্গাজলে ডুব..

কারো কারো মনের ভেতর, মনখারাপের ইঁট দিয়ে বানানো একটি বিশাল অথচ ভগ্নপ্রায় দুঃখের প্রাসাদ থাকে...পেলেস অফ ট্র্যাজেডি আরকী ।  মনখারাপ নিয়ে বেশী টানাটানি করা তাদের পক্ষে মারাত্মক হতে পারে !

..স্মৃতিটা 
ভুতুড়ে বাড়ির 
ইঁটের মত বেড়িয়ে আছে

টান দিলেই 
দেয়ালটা খসে পড়বে !

দীর্ঘদিন দুঃখের অনুপস্থিতিও মনখারাপের কারণ হয়ে উঠতে পারে।
 ছোট ছোট মনখারাপগুলো, অনেকসময় , আমাদের বড়  দুঃখের হাত থেকে বাঁচায় এবং সুখপাখির অনুপস্থিতিতে শূণ্যস্থানগুলো পূরণ করতে সাহায্য করে। জীবনের সাথে কলম আর ঘড়ির চরিত্র মিলে যায় কখনো কখনো..

কলম পুরোপুরি অস্বচ্ছ হলে মুশকিল।
বার বার খুলে দেখতে হয়
 কতটুকু কালি আছে !

কলম আর ঘড়িগুলো বড্ড দৃষ্টিকাতর,
তাকিয়ে থাকলে শ্লথ; আনমনা হলে পিছলে যায়;

রিফিল শব্দের বিরুদ্ধে গিয়ে
শূন‍্যস্থানগুলো খালি রাখলেই মঙ্গল।
নড়াচড়া করতে সুবিধে হয়;

এই সুযোগে
আরেকটা ডটপেন দিয়ে
তার ক্ষেত্রফল টুকে রাখা যায়..

প্রতিটি মনখারাপ আসলে আমাদের আরো বেশী শক্তিশালী, ধৈর্যশীল, বাস্তবমুখি হয়ে উঠার জন‍্য ধাক্কা দেয়। এই ধাক্কা, পড়ে যাওয়ার জন্য নয়, আরো দৃঢ় ভাবে উঠে দাঁড়ানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে সাহায্য করে।

আর কোনোকিছুর নিশ্চয়তা না থাকলেও, ছোট বড় মনখারাপ হয়ে, দুঃখ মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সঙ্গ দেবে এই গ‍্যারেন্টি দেয়াই যায়। যার যতটুকু সামর্থ্য সে ততটুকু মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতে পারে মাত্র..

বুঝে ওঠার আগেই
দুঃখ
সবার দোকান গুছিয়ে রাখে।

কেউ খোলা রাখে।
কেউ, গুটিয়ে নেয়ার আগে
পোড়া বেলার  বাতাবি কোণ ভেঙে খায়।
বাকীরা, বিক্রি করার আগেই , বিক্রি হয়ে যায়..

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...