Wednesday, November 30, 2022

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম।

সম্পাদকীয়

সংসার বড় নাকি সন্যাস বড়, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সংসারকে যারা বড় দেখায় তাঁদের পক্ষেই যুক্তিরা পক্ষপাতিত্ব করে। অথচ, জীবনের কত দুপুর কাটায় বাই সাইকেলে পুকুর পাড়ের রাস্তায়। কত রাত জেগে থাকে আমৃত্যু সে হিসাব কেউ রাখে? হয়তো কবিতা রাখে। এই ক্ষুদ্র সংখ্যাটি পাঠের আমন্ত্রণ। 

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
জয় দেবনাথ
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

মনন স্রোত

তারানা নাজনীন

সবুজ ঘাসে বিছানো রক্ত


রক্তে ভিজে বাংলার বুকে
ঘুমিয়েছো সুখে,
পরাধীনতা ভেঙ্গে দিয়ে
স্বাধীনতা মুখে।

সবুজ শ্যামল বাংলার মানুষ
সবাই যেনো হাসে
পতাকা মোর সবুজ ঘাসের_
রক্তে কেনো ভাসে?

নিরীহ নিরপরাধ সব
হয় যে পথের শিকার,
উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও আজ 
হয়ে আছে বেকার।

চুরি ডাকাতি ছিনতাইকে
পেশা তারা বানায়
নেশার রাজ্যে ডুবে গিয়ে
মনটাকে যে রাঙায়।

কোথায় মোদের অহংকারে
দেশের সুনাম গাইবো
সভ্য শান্ত সমাজটাকে 
খুঁজে কোথায় পাবো।

স্বার্থ ছাড়া ঘুরে না কেউ
রূদ্ধ শ্বাসে বিবেক
পথে পথে চাটুকারদের
প্রশ্ন করলেই সাবেক!

বিবেক মোদের কেঁদে মরে
দেখে হই যে অবাক,
ভুলে কী করে এই জাতি
শহীদের রক্তের ডাক।

নুরূল শিপার খান

সুজন মাঝি

কেমন আছো মাঝি!
কতদিন দেহিনা তোমারে
মনটা বড়ই উচাটন তোমা বিহনে!
গত বছর বাইনের সময় মাuছ ধরবা কইয়া
সেই যে গেলা আর ফিরা আইলা না!
উদাসি মন শুধু আনচান করে ,তোমার লাগি তুমি কবে আইবা মাঝি!

আমি পুইঁশাকের ডাটা
শুকাইয়া রাখিছি,
তুমি সাগর থেকে আইলে চিংড়ি দিয়া ঝোল কইরা দিবো বইলা!
আহারে ,কতইনা পছন্দের তোমার পুই চিংড়ি!

সেবার গন্জে থেইকা আইসা বলিছিলে
তোরে ছাড়া একলা ক্যামন ডর করে,
হৃদয়ের মধ্যিখানে ক্যামন খাঁ খাঁ করে!
ক্যামন কইরা বিরহের ঘন্টা বাইঁজা উঠে হৃদপিন্ডের  মধ্যিখানে, তা তরে বোঝাইবো ক্যামন করে-রে নোলক!

নোলক বালা আমার নাম!
গ্যারামের কুদ্দুস বাউলের মাইয়্যা আমি,
নদীর ঘাটে প্রথম দ্যাখা হয়েছিলো সুজ্নের সাথে!
সেই থেইকা......
মনটা বড়ই আঁনচান করতেছে রে মাঝি
সত্যি কইরা কও তুমি কবে আইবা!

আমি নদীর ঘাটে যাইয়া অদূঁরে তাকাইয়া থাহি,এই বুঝি আমার মাঝি আইলো!
কত নৌকা পাল তুইলা আইসা ঘাটে নোঙর ফালাই কিন্তু আমার চেনা মাঝির দেহা না পায়!
ঠিক কইরা কও মাঝি কবে আইবা!
হেমন্তের কাশঁফুল ঝইরা পাইড়া যায় অভিমানে!
শীতের আগমনের রিতিমত পায়তারা চলিতেছে!

তবু .....
আমি পন্থের দিকে চাইয়া থাহি,এই বুঝি তুমি আইলা আমার মনের মধ্যিখানে শীতের নিঃস-প্রভ মলিন চাঁদ হইয়া।

দেবাশিস চৌধুরী

জননী

আমাদের পরিবার নেই
একটি ঘর আছে শুধু
ঈশান কোণে বাবা সমাধিস্থ
মা সদর দরজা, 
ন্যায় অন্যায় সব দেখেন 
সব পাপ নিজের গায়ে মেখে 
আমাদের শুদ্ধ করে তুলেন ক্রমাগত।

আমাদের রান্না ঘর সিন্ধু সভ্যতার 
নিদর্শন স্বরূপ দাড়িয়ে আছে, 
মাটির কলস, পাথরের থাল
মায়ের কোমল হৃদয় 
এগুলো খেয়েই আমরা বেচেঁ আছি।

জয় দেবনাথ

জলবেদনা

সাগরের কাছে গেলে নদীর জন্য মন খারাপ হয়। কতদূর চলে গেছি সমুদ্রবিলাসে, বাতাস শুধু। একটু বাদেই এই বাতাস দুঃশ্চিন্তা বয়ে নিয়ে এলো। মনে পড়ে বাড়ি ফেলে রেখে চলে এসেছি। বাড়িতে রয়ে গেছে স্বপ্ন। পরিচিত কণ্ঠস্বর। পাখিদের কলরব। আমাদের নদীটির কথা বড় বেশি মনে পড়ে। আজ কেমন কলকলিয়ে বয়ে যাচ্ছে কে জানে! অথচ, সমুদ্র দেখতে এসেছি বিলাসিতায়। সমুদ্রবিলাস। এ বিশাল সমুদ্র আমার না। অন্য কেউও এর মালিক নয়। আমাদের নদীটিরও মালিকানা নেই, তবুও এ নদীর আমাদের।নদীর জন্য বুকের ভেতর পোঁড়ে। সমুদ্রের জন্য তেমনটা হচ্ছে না।

জীবনের এই রহস্য নিকেতনের ঢেউ সমুদ্রের মতোই। সমুদ্রের সব ঢেউ তীরে ফিরে এসে লাগছে। যত বড় উত্তাল ঢেউ হোক, তার গন্তব্য তীরে। জীবনের গন্তব্য কোনদিকে? মৃত্যুর দিকে? শিল্পপতি জীবন, মেহনতি জীবন সব কী একদিকেই? প্রাপ্তির জীবন, অপ্রাপ্তির জীবন? আমার ধারণা জগতের এই রহস্যের ভেতর এক অঙ্ক আছে। ঐকিক নিয়মের। প্রকৃতিরও অসীম শক্তির ভান্ডারেও এক গোপন সীমাবদ্ধতা আছে। প্রকৃতি সবকিছুই ব্যালেন্স করে রাখে। অপার বিশালতা নিয়েও প্রকৃতির   দরকার হয়। 

মানুষ নিজের জীবনে যা পায়, তার জন্য তাঁকে কিছু হারাতে হয়। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভেতর এক ভারসাম্য থাকে। বিনিময় ছাড়া কিছুই জীবনে আসে না। প্রকৃতি যেন শেখাতে চায় অপ্রাপ্তিতে ব্যথার কিছু নেই। আমি না পেলে তা অন্য কেউ পাবে। যা অন্য কেউ পাবে, সেটা আমার না। আমি যা পাচ্ছি, তা'ও খুব সম্ভবত অন্য কেউ হারাচ্ছে। প্রকৃতি যা করে, ভারসাম্য রেখেই করে।

চন্দন পাল

হোঁচট 

রাস্তায় এক চতুর্দশীকে বললাম,,,
এই খুকি কাজ ফেল্, স্কুলে যা। পড়।
লেখা পড়া ছাড়া জীবনটা কি এমনিই যাবে!!

বললো, সবার জন্য খাবার নিশ্চিত করতে পারবে !
স্কুলে গেলে, আমি না হয় 'মিড ডে মিল'টা পাবো--
কিন্তু বাড়িতে আমার কুট্টুটা, সয্যাশায়ী মা' টা--  কী খাবে ? 
আর ওষুধ---!
বাপ তো সেই কবেই পালিয়েছে। কারওবা মরেছে।
আর থাকলেও বা সবার জন্য যোগাড় করতে পারে কই !
দুর্বল, অদক্ষ বলে, অর্ধেক দিয়ে তাড়িয়ে দাও।
দাও না !!

 ওফ্! যেন চাবুক!  ত্বরায় পালানোর পথ খুঁজি, 
চলতে চলতে হোঁচট খাই---
দেখি, তাঁরাতো নির্বল, অসহায় ছিল না কেহই!!
একবার দেশভাগ, একবার ভাষাভাগ, একবার দলভাগ করে করে গ্রামছাড়া করলে হাতে আর কত থাকে !?
ঝড় জল দাঙা ভূ-কম্পের মার তো আছেই।
দুচারজন না-হয়  বাঁছাইকর্তার পকেটে গুঁজে দিয়ে রেশনটা, চাকরীটা বাগিয়ে নিলো! বাকিরা ---
বাকি আরও সোয়াকোটি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন ।
সংস্কারহীন, শপথহীন, ঘরছাড়ারা ঘুরে ঘুরে বড় হয় শহরে বন্দরে, নৈশালয়ে।
তারপর বছরের পর বছর জন্ম দেয় আরও আরও ঝুপড়ি শিশু।
তারাও বড় হয়, আবার খাবার খোঁজে, কাজ খোঁজে।
কেউবা তাদের নিয়ে ব্যবসা ফাঁদে! 

ওফ্! আমার হোঁচট আর শেষ হয় না। 
বড় একা লাগে! 
বড় একা লাগে কর্মে ধর্মে  প্রতিনিধিত্বে।

যদি, একযোগে সবাই পূষন হতে পারতাম!!
তাহলে বলতে পারতাম--
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ! 

গৌতম মজুমদার

ভিজে বিড়াল

ছোট্ট বিড়াল করুন সুরে
করছে চিৎকার বাইরে,
প্রাণটা বুঝি বেরিয়ে যাবে
কি করে তা চাই রে ।

আদর দিয়ে ভালো বাসায়
ঢুকিয়ে নিলাম ঘরে,
খাবার দিলাম ভালো ভালো
যত্ন আত্তির করে।

ভিজে বিড়াল মনে হয় সে
কিছুই জানে নাকো,
মাছটা দিলে পারেনা খেতে
যেমন ভাবেই রাখো ।

সব খাবার ই থাকতো খোলা
সে দিন কি আর বাকি ?
ঘরের খাবার কোন দিনই
রাখতাম না আর ঢাকি।

হঠাৎ একদিন রান্না ঘরের
সব খাবার ঐ সাবাড়,
ঝোলা থেকে বেরিয়ে বিড়াল
হচ্ছে পগার পাড় ।

চিনতে আমার হয়নিকো ভুল
এই সেই ভিজে বিড়াল,
যাকে আমি আনলাম ঘরে
করছে কি আজ হাল।

মনের ব্যথা লুকিয়ে রাখি
বুকটা চাপা রেখে,
চোখ কান সবাই খোলা রেখো
এসব বিড়াল থেকে।

নন্দিতা দাস চৌধুরী

তারা

কত আর দেখা যায় পৃথিবীর নিষ্ঠুর সাক্ষী হয়ে, প্রতিনিয়ত চোখের সামনে অসহায় জীবনের  নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া, যে ফুলটা সাজিতে তুলে আনলেনা রয়ে গেলো গাছে দিনের শেষে ঝরে পড়ে অবহেলায়, সেও ফুটেছিলো সাজবে কোন আবেগী ফুলদানীতে অথবা কারো সোহাগী খোঁপার মালায়, তার গোপন কান্না আর কেউ না শুনলেও প্রেমিকের হৃদয়কে সজোরে আঘাত করে যায়, যে শিশুর শৈশব খেয়েছে দারিদ্রতায় আর ঘাম ঝরিয়ে অনাদরের গাছের মতো বেড়ে উঠেছে বনানীর  কোলে, সেও প্রস্ফুটিত হতে পারতো মহাসাগরের সভ্যতার নাবিক হয়ে, দরদী চোখে জ্বলজ্বল হয়ে জ্বলছে আকাশের গায়ে মেঘে ঢাকা তারা।

রূপালী রায়

নিহত

শেষ পাতা উল্টে নিতে গিয়ে 
দেখি সহস্র ভুল 
এক হয়ে আছে ।
ভেবেছিলাম হয়তো আবার 
রাত ভিড়ে  তুমি আমি আর চন্দ্রীমার 
মাধুরী ছড়াতে ছড়াতে 
দুই একটা কলিতে 
ধরবো গলা ।
উড়ন্ত রঙ এসে পড়ল গায়ে 
হলুদ বর্ণের একটি পাখির মতো 
স্বপ্ন বুনতে 
তুলো রঙের বরফ মেখেছি গায়ে ।
চাদর খানা সরিয়ে নিতেই দেখি 
উড়ল পাখি 
ছুটলো বনে 
হয়নি দেখা আমার সনে 
তবু স্বপ্নগুলো তেমনি আছে 
যেমনি ছিল আগে ।
ভাবতে গেলেই অবাক লাগে
স্বপ্ন গুলো মরছে একে একে, 
বেকার ছেলে গুলি খেয়ে 
নিহত হলো রণাঙ্গনে
 তবুও যেন  হাঁসতে হাঁসতে
আকাশ ছোঁয়ার গল্প মনে ।

সঞ্জীব দে

আত্মক্ষরণের পঙ্ ক্তিমালা

সমস্ত ব্যথা হাঁটুতে নেমে গেলেও 
মাথায় দুশ্চিন্তার ভিড়ে বুক ভাড়ি হয়ে ওঠে! 
আঠারোমুড়ার উত্তরে শেষ প্রান্তে ---
শ্রেণি কক্ষে থাকা আমি তখন শিক্ষক নই! 
আসলে একটা দক্ষিণমুখী কচ্ছপ! 
তোমার সব ব্যথা হাঁটুতে জমে যত  ফুলে ওঠে! 
আমি ততই কচ্ছপ হয়ে উঠি। 
এইভাবে শ্রেণিকক্ষে আমি আর আমার  দূরত্ব 
ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকে। 
বিচ্ছিন্ন হতে থাকে আমি, আমার থেকে 
যাবতীয় সংযোগ। 
অহেতুক নির্বাসনে যোগাযোগ ঘটলেও 
কর্কটক্রান্তীয়  সংযোগ ভীষণ কঠোর!

মাধুরী সরকার

লাশের আদলে

যখন মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে রোজ
তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় 
আমার সাজানো মনের ঘর,
আমি জীবনের কাছে করি না অভিযোগ।

আলেয়াকেই তো আলো ভেবেছি কত !

মৃত্যু যে প্রতিরাতে আমার সাথে ঘুমোয়
অথচ কখনোই 
পরখ করে দেখি না তাকে।

ক্ষণিকের জলসাঘরে প্রসাধনী মুখোশ 
শুধু সেজে থাকি লাশের আদলে।

পীযূষ রাউত

দোষ দেবো কাকে

তিল তিল করে গড়ে তোলা,তিলোত্তমা না হয় না-ই বা হলো,আমার স্বপ্নের নির্মাণ
এই পর্ণকুটির, পরম শান্তির,সেই কবে থেকে দাউ
দাউ করে জ্বলছে, তখন বুঝিনি,এখন মর্মে মর্মে অনুভূত হচ্ছে ক্রোধ ও বিষাদ। কেননা তিনতলা 
দালানবাড়ির অনাবশ্যক লোভে আমিই স্বহস্তে সেদিন পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়েছি।সেই সে
আগুন রাবণের চিতার মতো আজো নিরবধি দাউ
দাউ করে জ্বলছে। এই সর্বনাশা লেলিহান আগুনকে একমাত্র আমিই বশে আনতে পারি 
আমার শত্রুকে আমিই বধ করতে পারি।কিন্তু পারছি কই? আর দোষের কথা যদি বলো,ভাবনাও
মননে দোষ দেবো কাকে?  দোষ দেবো  কাকে? 
দোষ, সেতো আমারই। দোষ সে তো আমারই
মহামূর্খ লোভের।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...