Wednesday, February 27, 2019

শ্রদ্ধঞ্জলি

ছবিতে সুমন (মডেল শিল্পী, মনন স্রোত)

অমর একুশে

সম্পাদকীয়

লেখালেখির জীবনটা আসলে বাস্তব জীবনের মতো। যতটুকু উপলব্দী হয় ততটুকুই প্রকাশিত হয়। সেই অর্থে খুব ভালো লেখা যে আমরা প্রকাশ করছিনা, কিংবা করতে পারছিনা ব্যাপারটা এমন নয়। ত্রিপুরার মতো সাহিত্য সচেতন রাজ্যে প্রতিমাসে ই-ম্যাগাজিন প্রকাশ করা বাস্তবে কঠিন। সেই কঠিন কাজটাই করে যাচ্ছে মনন স্রোত পরিবার। সেই কাজ করার অনুপ্রেরণা মাসের পর মাস ধরে বাড়িয়ে যাচ্ছেন মননস্রোতের পাঠক পাঠিকারা। এই মুহুর্তে আমরা সব রকমের সহযোগিতার মধ্যেই এগিয়ে যাচ্ছি। অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এই মাসে খুব কম সময়ে অনেক লেখকের লেখা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি। আগামীতে এই বিষয়ে লেখকরা সহযোগিতা করবেন আশা রাখছি। আমরা চেষ্টা করছি আগামী মাসে ত্রিপুরা রাজ্যের কবি,লেখক এবং লোকসাহিত্য গবেষকদের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করবো, সেই বিষয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জানিয়ে দেবো। এই সংখ্যা প্রকাশে যারা সহযোগিতা করেছেন সকলকে মননস্রোতের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সকলে ভালো থাকবেন।

                           জয় হিন্দ

                                      শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                                            জয় দেবনাথ
                                               সম্পাদক
                                         মনন স্রোত, ত্রিপুরা

অনুপম দেব

একুশ তুমি 

একুশ তুমি বজ্র কঠিন
মুষ্টিবদ্ধ হাত
একুশ তুমি বাংলা মায়ের দামাল ছেলের
হাজার প্রতিবাদ।

একুশ তুমি আমার আশা,আমার ভাষা
একুশ তুমি প্রাণ
একুশ তুমি স্বাধীনতা
বর্নমালার গান।

একুশ তুমি উদার আকাশ
মুক্ত বাতায়ন
একুশ তুমি হারিয়ে যাওয়া
মোদের অমূল্য রতন।

একুশ তুমি শিমুল পলাশ
দোয়েল পাখির গানে
একুশ তুমি পুত্রহারা মায়ের মুখে
বেদনা অম্লানে।

একুশ তুমি রফিক সালাম
জব্বারদের কথা
তোমার মাঝে লুকিয়ে আছে
কত মায়ের ব্যথা।

পরিচিতিঃ-
-------------------
অনুপম দেবের জন্ম ত্রিপুরার খোয়াই জেলার তেলিয়ামুড়ায়। মননস্রোতে মূল্যত এটাই তার প্রথম প্রকাশিত কবিতা। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে গীতাঞ্জলি B.Ed কলেজে শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সে পাঠরত।

কল্যাণব্রত বসাক

দ্বান্দ্রিক সতী (১ম পর্ব)
       

তুমিও ভাই বেশি বুঝ!
হ্যাঁ বেশি বুঝি । তোরে কইছে ।
বেশি বুঝ না তো কি? ভদ্রমহিলা কি রকম শিক্ষিতা রুচিশীল সেটা এটা তো ওনার চলন বলনেই বোঝা যায়। আমার যতটুকু মনে পড়ছে কোনো দিন উগ্রমান পোষাকেও দেখিনি ওনাকে বললো অভিক স্বপনকে ।

আড্ডা আজ বেশ জমেছে, ঘন বসন্তে চাপা মনে, দক্ষিণা হাওয়ায় বসে পরের নিন্দা অভবনীয় আনন্দ দিচ্ছে। মশগুল সবাই । আজ  প্রায় দুইদিন ঐ একই কথা নিয়ে কথা কাটাকাটি ।

ওরাই বা করবে কি! শিক্ষিত বেকার, হাতে প্রচুর সময় বাজে কাজ বার করার মতো। তাই সকলে স্থানীয় কালীবাড়ির পুকুরপারে বসে আড্ডা মারে। কথায় আছে দুজন ইংরেজ একত্র হলে গড়ে ক্লাব, দুজন স্কচ একত্র হলে গড়ে ব্যাংক, দুজন জাপানি একত্র হলে গড়ে সিক্রেট সোসাইটি আর দুজন বাঙালি একত্র হলে করে দলাদলি  এবং একটা কালীবাড়ি। এটা অনেক আগেকার কথা বর্তমানে বিবর্তিত বাঙালির সাধারণ নূন্যতম কর্মসূচীর মধ্যে আরো একটা বিষয় এসেছে, তা হলো 'পর নিন্দা ' ' পরাচর্চা '। অনুপস্থিত ব্যাক্তির কেচ্ছা কেলাঙ্কারী ঘাটাঘাটি বেশ মুন্সিয়ানার সঙ্গেই বাঙালি করতে পারে এবং করে।
   
আড্ডাবাজ ছেলেগুলোর পরনিন্দা পরচর্চার কথা আসরে হচ্ছিলো পাড়ার মেয়ে রুমিকে নিয়ে। অবশ্য রুমি এখন আর মেয়ের পর্যায়ে নেই। একের বিবাহিত স্ত্রী, দুইয়ের জননী, একাধিকের প্রণয়িণী প্রেয়সী ছিলো বটে রুমি মেয়ে একদিন । চঞ্চলা, চপলা, সূনয়না-সূবসনা প্রেমময়ী রূপবতী। আনন্দিত গৌর কান্তি,  স্নিগ্ধ  স্বরূপিনী সুন্দরী বালিকা কুন্দনন্দিনী । ঈশ্বর তার সৃষ্টিতে উপকরণ উপাদান দান করতে কার্পণ্য করেন নি ।
সম্ভবতঃ স্রষ্টা তার বিভিন্ন কলা কৌশুলীদের নিয়ে বেশ আড়ম্বরপূর্ণ কেবিনেট মিটিং করে এক অনবদ্য রমণী তৈরীর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত করছেন।

অত্যাধুনিক উন্নতমানের আকর্ষণীয় বডি স্ট্রাকচার করার জন্য দেব আকিটেক চীফ এক জিকিউটিব ইঞ্জিনিয়ার বিশ্বকর্মার হাতে দায়িত্ব দিয়েছেন।দেব রাজ সভার চীফ সেক্রেটারি স্বয়ং ব্রক্ষ্মা। শোনা যায় সেই নিখুঁত কাঠামোর উপর মাংশল আবরণ গড়তে বিষ্ণুর হাত লাগিয়েছেন । বয়ঃসন্ধিতে যৌবনাগমন ঘটানোর জন্য প্রাণী সম্পদ বিকাশ দপ্তরের শ্রীমতি রতি দেবী দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। জন্মলগ্ন থেকে মৃত্যু লগ্ন পর্যন্ত টিকসই রং ধরে রাখার জন্য স্রষ্টা কোন ডিসটেম্পার ব্যবহার করেছিলেন, জানা যায় নি, তবে কালার করেছেন অর্থ সচিব শ্রীমতি সরস্বতী  দেবী।এশিয়ান পেইন্টের সিলক কালার । প্রোমোটার ছিলেন মুরলি মোহন সেন এবং ওর স্ত্রী অনুরাধা সেন।

আসল কথা এই মহিলা যাচ্ছে তাই ,কোয়ালিটি বলতে ওনার কিছু নেই বললো শ্যামল । বক্তব্যের উপর শ্যামলের কত গভীর বিশ্বাস তা বোঝা গেল আচমকা দাঁড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে ।
    
জবাবে মলয় বললো ব্যাপার কি ? তোর কাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আমরা  ঝগড়া করছি। সাধারণত কথা নিয়ে এতো ক্ষিপ্ত হওয়ার কারণ তো দেখছি না ।

আজ ব্যাপারটা নিয়ে বেশ একটু হৈ চৈ হচ্ছে। জল ঘোলানো হচ্ছে অনেক। সেন্ট আজ আসেনি। থাকলে আরো জমতো। ওইতো কাল কি সব ঘটনার জট আরো জড়িয়ে দিয়ে গেল। উপস্থিত পাঁচ বন্ধুর মধ্যে তিনজনই এক পক্ষ নেওয়াতে অন্য দুজনের কথা বললে সুবিধা করতে পারছেনা। তাও আবার দুজনের একজন নিরপেক্ষ। সে মলয়। স্বপন,শ্যামল  রকির এক কথা। রুমি রায়  চৌধুরী এককথায় বাজে,অসতি নষ্টা মহিলা। এদের সম্মিলিত প্রেসার ,মিডিয়াম  প্রেসার ,স্পিন আক্রমণের সামনে যুক্তি আধুনিক দৃষ্টি ভঙ্গির ব্যাট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অভিক রুমি রায় চৌধুরী সতিত্বের উইকেট রক্ষায়।
    
 রুমি রায় চৌধুরী রং, রূপরস ,গন্ধ স্পর্শ যেমন চিরকাঙ্কিত,  সুকোমল, অনাস্বাদিত, অবিস্মনীয়,বিস্ময়কর, তেমনি তার জীবনের  যৌবনাগমনের  অভিষেক লগ্ন থেকে শুরু করে মনোরাজ্য বিস্তার এবং রাজ্যত্ব কালের এক ঘটনা বহুল ইতিহাস আছে। লিখিত নয় লিখিত হলে কয় খন্ডে প্রকাশক প্রকাশ করতেন বলা যায় না । তবে কথায় বললে খুব বেশী সময় যে নষ্ট হবে না সেটা নিশ্চিত ।

রুমি তখন ক্লাস 12 এ পড়ে । সাবালিকার চলমান অধিকার মনের দরজায় এসে টোকা দিচ্ছে । পড়াশুনায় খুব ভালো ! বিয়ে হয়নি। রুমির বাবা মুরলি মোহন সেন এখানকার এম.এস .বি অফিসার । বাবার সাথেই রুমি থাকতো। মেয়েদের স্কুলে পড়াতো রুমি । স্কুলের পোষাকেও একটা নাম আছে বটে ,তবে পোড় খাওয়া প্রেমিকরা নাম দিয়েছে 'হাউসসেন্টার ' নাম টি একদিকে যথার্থ। পুরুষ হৃদয়ে শূন্যতার ক্ষত সপ্টি হলে এই বালিকা বিদ্যালয়ে কোন না কোন বালিকার সহচর্যে  পূর্ণতা লাভ করে । আবার কত শত সংগঠিত  হৃদয়ে সাজানো স্বাদ স্বপ্ন ভেঙে থান থান হয়ে যায় ।


পরিচিতিঃ-
--------------------
কল্যাণব্রত বসাক মূল্যত ছোটগল্পকার। প্রাবন্ধিক,  তিনি কবিও। লেখকের জন্ম ৪টা অক্টোবর ১৯৭৫ইং দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমে। ১৯৯৩ সাল থেকেই লেখালেখির জগতে প্রবেশ। তারপর থেকেই বিভিন্ন ম্যাগাজিনের সাথে যুক্ত হন। শিক্ষাবিজ্ঞানে অনার্স নিয়ে গ্রেজুয়েশন শেষ করে কখনো কোনো চাকুরীর সাক্ষাৎকারমুখী হননি। নিজে কিছু করার প্রচেষ্টা লেখকের স্বভাবজাত বৈশিষ্ট। ছোটগল্প ও প্রবন্ধে লেখকের চিত্রকল্পের জন্য লেখক এক স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছেন। মনন স্রোতে লেখকের 'ফেনী ব্রিজ' ধারাবাহিক গল্পটি পাঠক মহলে দারুণ সমাদৃত হয়েছে। নতুন পাঠক যারা পাননি,  ওয়েবসাইটের পূর্ববতী মাসের সংখ্যাগুলো পড়তে পারেন

Friday, February 22, 2019

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

ক্ষ্যাপা নিবারণ আবার পাকালো জট ! কী যে হবে তাকে নিয়ে !
"ক্ষ্যাপা তো ক্ষ্যাপা-ই। তাকে নিয়ে এত মাথা ঘামাস না তোরা।" সূর্যের এমন কথায়- সবাই একটু স্বস্তি পেলেও -নিশ্চিন্ত হতে পারে না কেউ।

সেদিন- নাটক নিয়ে এক জমাটি আড্ডার মাঝে নিবারণ হঠাৎ বলে উঠলো, তোরা ভুল করছিস।অভিনেতা আর শিল্পী কিন্তু এক নয়। তোরা জানিস না- আসল অভিনেতারা মঞ্চে ওঠেন না। যারা মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়ান তারা শুধু - নানা ক্ষেত্রে নানা মাপের শিল্পী।
"এ কী রে ?! বলছিস কী ?!" - সূর্যের চোখ একেবারে কপালে।
নিবারণ - আলবৎ তাই। প্রকৃত অভিনেতা তো তারা, যারা আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে - অথচ তুই কিংবা আমি- কেউই তাদের আসল রূপটা বুঝতে পারছি না। তারাই আসল অভিনেতা - অভিনেত্রী।

- তবে মঞ্চে যাঁরা দাপিয়ে বেড়ান, তাঁরা ?
- ওঁরা শিল্পী।
- এর মানে তো এই যে -  ঐ অভিনেতা- অভিনেত্রীরাই শিল্পী, তাই না ?

- নাহ্

- ধুর ছাই ! কী যে আবোল তাবোল ঝাড়িস শুধু ?!

- বোল ঠিক না হলেই তো আ -বোল হয় ।  সেই অর্থে, বলতেই পারিস 'আবোল তাবোল'। ক্ষতি নেই। কিন্তু জেনে রাখ, ঐ সব অচেনা - মানে, অদৃশ্য অভিনেতারা কাঁচামাল নিয়েই কাজ করে। আর শিল্পীরা সেই কাঁচামাল ঝাড়াই বাছাই করে - নির্যাসটা মঞ্চে তুলে ধরে।

- কাঁচামাল ?! কাঁচামাল আবার পেলি কোত্থেকে ?!
বাজার পেয়েছিস নাকি ?

- বিপদ তো এখানেই। দ্যাখ্ , বাজারটা না বুঝলে - মঞ্চটাও কিন্তু ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বুঝতে পারবিও না কোনোদিন।

- মানে ?!

- থাক্ সে কথা। ..... আচ্ছা, মঞ্চ সবসময় একটু উঁচুতে হয় কেন বলতে পারিস ?

- না। কেন হয় ? শুনি ...

- আই-লেভেল চাই।

- আই-লেভেল ?!

- হ্যাঁ, মানে- চোখ বরাবর। আদর্শ মঞ্চ সবসময় মানুষের আই-লেভেলেই হয়।

- কেন ?
- এই যুক্তিটা অবশ্য আমার। কারণ, আই লেভেলের নীচে মানুষ অনেক কিছুই দেখতে পায় না। কিংবা দেখলেও ঠিক বুঝতে পারে না। অথবা ওভারলুক করে।

- কী যে বলিস ?!

- আসলে আমাদের সমাজের যত্ত সব কান্ড, তার বেশির ভাগ-ই বলতে গেলে ঐ আই-লেভেলের নীচেই ঘটে যাচ্ছে। আর যা কিছু সুস্থ - বা মননের তার প্রায় সবই আই-লেভেলে বা তার উপরে। প্রেমের ক্ষেত্রেও যেমন, তেমনি মঞ্চের ক্ষেত্রেও খাটে ঐ একই কথা।

- আঃ থামতো নিবারণ ! মাথামুন্ডু কী যে বলছিস ? কিছুই বুঝতে পারছি না।

- কী করে বুঝবি বল ? মাথা আর মুন্ডু এক জায়গায় লাগিয়ে দিলে ঠোকাঠুকি তো হবারই কথা। তার'চে যেকোনো একটা ধর, মাথা অথবা মুন্ডু । তবুও একটা মানে খুঁজে পাবি।

- আহ্ ! এতই যখন তোর বোঝ - তবে একটু সরল করে বললেই তো পারিস। এত ঘুরিয়ে বলার কী আছে ?!

- তবে শোন। বিড়ালকে কখনও আদর দিয়েছিস ?

- বিড়াল ?!

- হ্যাঁ,  বিড়াল।

- তা তো দিয়েছি। কিন্তু তাতে কী হলো ?!

- তা ভালো করেছিস। কিন্তু বিড়ালকে কখনও দাবড়ানি দিয়েছিস কি ?

- বিড়ালকে দাবড়ানি ?! মানে ?!

- আরে ধ্যুর, বিড়ালকে তাড়া করেছিস কখনও ?

- হ্যাঁ, করেছি।

- তা'লে অবশ্যই দেখেছিস - তাড়া খেয়ে বিড়াল প্রথমে ছোটে। কিন্তু, তারপর- তুই যদি ধাওয়া না করিস - তবে সে একটু গিয়েই - পিছন ফিরে তাকায় ।... দেখেছিস এমনটা ?!

- দেখেছি।
- তারপর সেই বিড়ালটি কী করে বলতো ?

- কী করে ?
- দিব্যি বাংলার চার সংখ্যার মতো একটা পোজ দিয়ে নিজের হাত কিংবা পা চাটতে শুরু করে।.... দেখেছিস এমন ?

- হ্যাঁ, দেখেছি তো !

- তবে তো ভালোই দেখতে পাস তুই।... এবার তবে বল দেখি, এই বিড়াল পর্বে - কোনটা অভিনয় ? আর কোনটা শিল্প হয়ে রইল ?

পরিচিতিঃ-
----------------
উমাশঙ্কর রায় ত্রিপুরা রাজ্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি কবিও। গভীর উপলব্দী প্রকাশিত হয় তার কবিতায় এবং প্রবন্ধে। মানুষের ভাবনার জগতে নতুন দৃষ্টিকোন আনে। তিনি বর্তমানে মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।

প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ-
১। এক চিলতে সমাজ
২।  প্রশাসনের কানাগলি

আম্রপালী দে

নেলপালিশের খোসা

১.
গাছেদের শহরে এখন মানুষ কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিয়ে যায় ।
অসুস্থ রাত আর অবাস্তব তারাদের ভেতর ভাত রাঁধে পরিবারের মা...

২.
সস্তায় কেনা টেলিস্কোপের আয়নায় জীবনযুদ্ধ পরাজিত হতে হতে একদিন মৃত্যুকে আবিষ্কার করে ফ্যালে ।
এখানে মৃত্যু মানেই পাহাড় , নদী আর কড়িকাঠ । মাকড়সার মতো ঝুলতে ঝুলতে একদিন যা " গন্তব্য " , তা জীবন হতে বাধ্য ।

৩.
হাঁড়িতে ফুটতে থাকে এদিকে একটার পর একটা ভবিষ্যৎ ।
মা বছরের পর বছর চেয়ে দেখে দেখে বোবা হয়ে গেছে...সিঁথিতে রক্ত মেখে জীবন ছিঁড়ে কিছু মোলায়েম স্মৃতি ভরাট করে একদিন উঠে দাঁড়ায়।

৪.
কাঠবেড়ালির গল্প শুনে কেমন মায়া জন্মে গেছে।
সদ্য আঁকা নেলপালিশের মতো লেপ্টে যেতে যেতে সময় কখন কাঠবেড়ালির পেটের ভেতর ঢুকে " মা-মা " বলে চেঁচাতে শুরু করে , বোধ করি এ কথা আজ আমার জানার কথা নয়...

৫.
এই তো পায়ের কাছে পড়ে আছে বেশ কটা আলু ,
আমি খোসা ছাড়াতে শিখিনি!

পরিচিতিঃ-
-----------------
আম্রপালী দে আগরতলা নিবাসী। বর্তমানে কলকাতায় মেডিক্যালের ছাত্রী। কবিতা লেখা শুরু হয়েছে গত দু-বছর ধরে । তবে লেখালেখি শুরু স্কুলে পড়াকালীন । বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছে । তবে উল্লেখযোগ্য , All Tripura Essay Competition for all age groups '2015 এর প্রথম স্থানাধিকারিনী , প্রবন্ধের বিষয় ছিল " সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রবীন্দ্রনাথ "

বিজন বোস

ভালোবাসি

ভালবাসি মাকে মাতৃভাষাকে
আব্দুল বরকত সালামকে ,
যাদের রক্তে রাঙ্গা হয়েছিল ঢাকার রাজপথ
লক্ষ কোটি বাঙালির প্রাণে এসেছিল নতুন স্পন্দন
শিহরিত সারা বিশ্ব--
স্বীকৃত বাংলা ভাষা মাতৃভাষা রূপে
গর্বিত বাঙ্গালী উদ্ধত শির ।

ভালবাসি মাকে মাতৃভূমিকে
বিদেশি হায়েনার বিরুদ্ধে
দুর্বার গণআন্দোলনে
চমকিত  সারা বিশ্ব
চরম উপনিবেশিকতা
গণরোষের দুর্বার ঘৃণায়
জলে পুড়ে খাক্ হয়ে যায় ,
এল স্বাধীনতা
নন্দিত বন্দিত গর্বিত স্বাধীন দেশ।

ভালবাসি মাকে জাতীয় পতাকাকে
যাকে ঊর্ধ্বে তুলে ধরে
প্রেরণা পেয়েছিল অগণিত বিপ্লবী শহীদানের
লক্ষ কোটি সন্তানের হৃদয়ে
জাগরিত জাতীয়তাবোধ,
স্তিমিত প্রতিহত
সাম্রাজ্যবাদীর বিষাক্ত নিঃশ্বাস
উড্ডীন উদ্দাম সুসজ্জিত শহীদ মিনার ।

ভালবাসি মাকে মাতৃভাষা দিবসকে
সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের
নিজের ভাষায় কথা বলার অধিকার ,
মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ--
নিজেকে চেনার জানার অনুধাবন করার
সত্তা ঐতিহ্য কৃষ্টি চেতনায় শান্
ইউনেস্কোর নিরানব্বইয়ের ঘোষণায় সম্মান।

ভালবাসি মাকে একুশে ফেব্রুয়ারিকে
প্রেরণা উদ্দীপনার মাস
সারা বিশ্ব ভাবুক জানুক
কণ্ঠে কণ্ঠে বেজে উঠুক
ভাটিয়ালি জারি সারি--
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি ?"

পরিচিতিঃ-
-----------------
বিজন বোসের জন্ম দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার সাব্রুম হরিণার চালিতাছড়ি গ্রামে। দীর্ঘদিন সাহিত্য চর্চা এবং সমাজসেবা মূলক প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত ছিলেন। ত্রিপুরা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ। কবির লেখা রাজ্যের বিভিন্ন ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয় মূল্যত তিনি মনন স্রোতের একজন নিয়মিত লেখক।

প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ -

1.প্রতিবাদী তীর (স্রোত প্রকাশনা)

বর্তমানে তিনি 'মনু থেকে ফেনী' নামে একটি লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদনা করছেন।

অভীককুমার দে

বুকের জমি

জীবন, বাঁচতে বাঁচাতেই কখনও ফেঁসে যায়,
মরণের কাছে।

মরণ, সেও দূরের কেউ নয়,
খুব কাছ থেকে দেখেছি, জানি,
বেশ জানা আছে, 
তবে কখনও ভালোবাসিনি ওকে।
মরণও জানে--
এমন ফাঁসে অভীকের মৃত্যু নেই,
বরং বলা যেতে পারে--
দূরের কোনও শকুন
মাঝেমাঝে এই আকাশ ছোঁয়
নিয়ে যেতে চায় নরকের দিকে, তখন
এক টুকরো ছায়া
নেমে আসে
জড়িয়ে থাকে বুক, যদিও
ভেদ করতে পারে না ছাদ;
কেননা--
এ বুক কংক্রিটের নয়।
দিনের রৌদ্রতাপ খানিক কমে এলে
খারাপ সময়
সামান্য শরীর, খারাপ,
এতে মরণ আসে না।

এ জীবন জানে--
মাটি, জীবনের মাটি
এই বুক ফসলের মাঠ
চেতনার নদী বড় হয়
পথ চেনে জল,
নদীসুখ
বাউলের গান
মেঘের ঘুড়ি
বৃষ্টি সুর
আলোর দৃষ্টি
বাতাসের চলাচল।
মাটির ঘর
মাটির খাবার
ভালো ঘুমে মাটির বিছানা।
এই ফসলের জমি উর্বর সমভূমি,
জেগে থাকে ধ্যান,
স্থির লক্ষ্য- বিন্দু।

পরিচিতিঃ-
-------------------
তরুণ কবি অভীক কুমার দে দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার শান্তিবাজার মহকুমায় জন্ম। কবি শিক্ষা বিজ্ঞানে স্নাতক। পেশাগত দিক দিয়ে স্থায়ী বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত। তাছাড়া লেখালেখির পাশাপাশি কয়েকটি সেবামূলক সংস্থার সাথে কবি স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কর্মরত। সাহিত্য জীবনে তিনি 'সমভূমি' নামক লিটল ম্যাগাজিনটি সম্পাদনা করেন।

কবির প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থের নাম - 'আমি হবো নতুন পৃথিবী।

সম্রাট পাল

জোনাকিআলো

বহুবছর পর আবার জোনাকি তোমার সাথে দেখা। ঝিঁঝিঁ ডাকা নিঝুম বাঁশবন। অবশ কালো। তুমি একা। একরত্তি আলোর জন্যে যেন কত হাহাকার। যেন এটুকু আলোর খোঁজে কত পুরুষের দীর্ঘ বসন্ত কেটে গেছে। তোমার পিছু পিছু ছুটে যেতেই রূপোলী নদী। আগে থেকেই ভেবে রেখেছিলে বুঝি সাক্ষাত্‌ করাবে বলে। মায়ের আঁচলের মত পাতা আছে নদী। শান্ত। তুমিও বসে গেলে নদীর পাড়ে। রূপোর মত চকচকে বালিতে। আকাশের গায়ে মেদহীন চাঁদ। ছলনাময়ী। নদীর বুকে নিজের ছায়া দিয়ে ছবি এঁকে দেয়। নদী মায়ের মত বুকে টেনে ধরে। কাশফুলের লম্বা গাছগুলো নদীকে পাহাড়া দেয়। মেঘের অংশীদারের মত নদীর পাড়ে ফুটে উঠেছে এরা। নদীর দুঃখে অশ্রু ঝরায়। কুয়াশা এসে জড়ো হয় কাশফুলের নরম পাপড়িতে। লজ্জা পায় তোমার মতো। তুমি আমার পাশেই বসা। জ্যোৎস্না শুকোতে দেওয়া চাঁদ বোঝে না নদীরও তন্দ্রা লাগে। নদীরও অভিমান নেই। চলো   রাতভর নদীর কথাগুলো নীরবে আড়ি পেতে শুনে যাই তুমি আমি। যদি আবার দেখা হয় নাহয় পাহাড়ের কাছে যাবো।

পরিচিতঃ-
---------------
তরুণ কবি সম্রাট পালের জন্ম খোয়াইয়ের চেবরী গ্রামে। পঠন-পাঠন চেবরী সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীকালে টি.আই.টি তে। পছন্দের কাজ সাহিত্যে ডুবে থাকা।বর্তমানে রাজ্য সরকারের পূর্তদপ্তরে প্রকৌশলী পদে কর্মরত।

অমিত রুদ্র পাল

সন্ধান

একটি শ্বাস রয়ে গেলো ঋণী!
মেঘের চাদরে ঢাকা চন্দ্রের  গলানো অষ্টপ্রহরে,
কিংবা,সমুদ্রের বুকে শৈবালের
প্রাণ সবুজ পাথরে,
নয়তো বা, নিকোটিনের ধোঁয়া কুণ্ডলীর  দমচাপা নিঃশ্বাসে,
কোথাও হয়তো!
একটি শ্বাস রয়ে গেলো ঋণী!
সত্যি না হলেও -গল্পে ভেজানো মায়ায়
তরঙ্গে সাঁতরে আসা  অঙ্গবিহীন দেহের ছায়ায় ।
রহস্যময় পুঁথিশালার জীর্ণ প্রকোষ্ঠের ,
ডায়েরির নিবন্ধিত ধাবিত কালিতে ।
প্রিয়ার মরুভূমি ঠোঁটে আঁকা
লিপস্টিকের নিষিক্ত চুম্বনে ।

কোথাও যেন!
একটি শ্বাস রয়ে গেলো ঋণী!

পরিচিতঃ-
---------------
মনন স্রোতকে প্রকাশ করতে যে ক'জন মানুষ দিনরাত শ্রম দান করেন, তার মধ্যে তরুণ কবি অমিত রুদ্র পালের নাম অন্যতম। এমবিবি কলেজ থেকে বিএ পাশ করে এখন এমএ কোর্সে পাঠরত। মনন স্রোতেই তার লেখা প্রকাশিত হয়।

রণজিৎ রায়

রণজিৎ  রায়

সম্মান, সংবর্ধনা কিংবা প্রমোশন
নৈপুণ্যের মান্যতা প্রদান,
দুর্গন্ধের ভাইরাস সংবর্ধনায় গোঙালে
উদ্দেশ্যের নগ্নতা আত্মপ্রকাশ
দক্ষতার হৃদয়ে দাউ দাউ দাবানল
ভাণ্ডারির মুখে নির্লজ্জের হাসি ।

আজকাল সম্মাননার পতাকা উড়লেই
বাতাসে দুর্গন্ধ কিলবিল করে
শ্রদ্ধায় মাথা নত না হয়ে
চায়ের কাপে সুনামি আছড়ে পড়ে,
শ্রাদ্ধের আগুনে অভিশাপের পতপত ধ্বনি
বিবর্ণ প্রজাপতির আগুনে আত্মহুতি
গরিমায় কলঙ্কের পোড়া পোড়া সৌন্দর্য!

নৈপুণ্যের গলিপথে উচুশিরে হা হতাশ
রাজপথে সম্মাননা  মুখ লুকোয়
ভাণ্ডারির চোখেমুখে শঠতার হাসি।

পরিচিতিঃ-
-----------------
কবি রণজিৎ রায়ের জন্ম ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুরে। ১৯৭১ সাল থেকেই লেখালেখি শুরু। কর্মজীবনে শিক্ষকতা, রেঞ্চ অফিসার এবং ত্রিপুরা গ্রামীণ ব্যাঙ্কের অফিসার পদে সুনামের সাথে কর্ম সম্পন্ন করেছেন। লেখালেখিতে অনেক সম্মান এবং পুরস্কার পেয়েছেন।

কবির প্রকাশিত গ্রন্থ:-
১. জাতক
২. শূণ্য বৃক্ষ
৩. নিসঙ্গ জানলায় একা

Wednesday, February 20, 2019

দুলাল চক্রবর্তী

আমার মায়ের ভাষা

পরাধীন ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য ইংরেজ প্রতিনিধিহিসাবে ভারতে এসেছিলেন বড়লাট লর্ড কার্জন। তখনকার বাংলাদেশ ছিলোবিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর পীঠস্থান। তাই কূটচক্রী কার্জন সাহেব উদ্যোগ নিতে শুরু করলেন কিভাবে বাংলাদেশকে ভাগ করে দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলন কর্মসূচীকে দুর্বল করে দেওয়া যায়।তাই অতি সত্বর বাংলাদেশকে
ভাগ করে দিতে হবে। যেই কথা সেই কাজ।১৯০৫
সালের ১৬ই অক্টোবর বাংলাদেশকে ২ ভাগে ভাগ করে দেওয়া হলো পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গ নামে
সারা বাংলাদেশ জুড়ে আরম্ভ হলো আন্দোলন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গ যুক্ত হলো পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে,আর পশ্চিমবঙ্গ যুক্ত হলো ভারতের সাথে।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনহওয়ার সময় ভারত আর পাকিস্তান নামে দুটি দেশ ভাগ করে ভারতবর্ষকে দুর্বল করে দেয় ইংরেজ শাসকরা।
পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশ যুক্ত হলো পাকিস্তানের সাথে। পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হলো উর্দু।সেই অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানেও চাপিয়ে দেওয়া হলো উর্দুভাষা। এখানকার অধিকাংশ লোকই হলো বাঙালী। তারা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি।
তারা চাইলো রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হোক। ধীরে ধীরে
ছোটখাট আন্দোলন শুরু করতে লাগলো বাঙালীরা। ১৯৫২ সাল।ছোট ছোট আন্দোলন বৃহৎ আকার ধারন করতে লাগলো।আওয়াজ
উঠলো পূর্ব পাকিস্তানে  বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসাবে মেনে নিয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্মিলিত আন্দোলন
শুরু হলো। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানে
সামরিক শাসন চলছিলো। প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আয়ুব খান যিনি অত্যাচারী শাসক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী। ঢাকার রাজপথে নামলো ভাষা আন্দোলনকারীদের ঢল। যার
পুরোভাগে ছিলো ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্ররা।তাদের দাবি ছিলো একটাই বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারী কাজে বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা মহানগরী সেদিন উত্তাল হয়ে উঠলো। আন্দোলনকারীদের আন্দোলন স্তব্ধ করে দেবার জন্য নামানো হলো মিলিটারী। তারা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারায় তাদের উপর চললো গুলি। তাতে লুটিয়ে পড়লো
তাজা কটা প্রাণ। শহীদ হলো বরকত,রফিক,সালাম, জব্বার
এরা।ঢাকার রাজপথ রক্তে রাঙা হলো। সেদিনের আন্দোলন জন্ম দিয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ১৯৭১সালে এক রক্তক্ষয়ী
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নিলো আজকের বাংলাদেশ। এরপর থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিতে ঢাকার শহীদ মিনারের পাদদেশে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে
বীর ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ক্রমশ বাংলা ভাষাকে আন্ত্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেবার দাবী উঠলো। শেষ পর্যন্ত
UNESCO  ১৯৯৯সালের ১৭ই নভেম্বর বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাত্ভাষা হিসাবে
ঘোষণা দিলো। সেই অনুযায়ী ২০০০সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে উদযাপন করা শুরু হলো। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে পেল স্বীকৃতি। শত শহীদের রক্ত হয়নিকো
ব্যর্থ। হে শহীদগণ, তোমাদের রক্তঝরা সংগ্রাম আজ হয়ে রইলো অমর ইতিহাস।

পরিচিতিঃ-
------------------
কবি দুলাল চক্রবর্তী  প্রাবন্ধিকও। তিনি মূল্যত গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কর্মজীবনে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। মনন স্রোতে কবির নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...