জীবন থেকে ধার নেওয়া
ক্ষ্যাপা নিবারণ আবার পাকালো জট ! কী যে হবে তাকে নিয়ে !
"ক্ষ্যাপা তো ক্ষ্যাপা-ই। তাকে নিয়ে এত মাথা ঘামাস না তোরা।" সূর্যের এমন কথায়- সবাই একটু স্বস্তি পেলেও -নিশ্চিন্ত হতে পারে না কেউ।
সেদিন- নাটক নিয়ে এক জমাটি আড্ডার মাঝে নিবারণ হঠাৎ বলে উঠলো, তোরা ভুল করছিস।অভিনেতা আর শিল্পী কিন্তু এক নয়। তোরা জানিস না- আসল অভিনেতারা মঞ্চে ওঠেন না। যারা মঞ্চ কাঁপিয়ে বেড়ান তারা শুধু - নানা ক্ষেত্রে নানা মাপের শিল্পী।
"এ কী রে ?! বলছিস কী ?!" - সূর্যের চোখ একেবারে কপালে।
নিবারণ - আলবৎ তাই। প্রকৃত অভিনেতা তো তারা, যারা আশেপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে - অথচ তুই কিংবা আমি- কেউই তাদের আসল রূপটা বুঝতে পারছি না। তারাই আসল অভিনেতা - অভিনেত্রী।
- তবে মঞ্চে যাঁরা দাপিয়ে বেড়ান, তাঁরা ?
- ওঁরা শিল্পী।
- এর মানে তো এই যে - ঐ অভিনেতা- অভিনেত্রীরাই শিল্পী, তাই না ?
- নাহ্
- ধুর ছাই ! কী যে আবোল তাবোল ঝাড়িস শুধু ?!
- বোল ঠিক না হলেই তো আ -বোল হয় । সেই অর্থে, বলতেই পারিস 'আবোল তাবোল'। ক্ষতি নেই। কিন্তু জেনে রাখ, ঐ সব অচেনা - মানে, অদৃশ্য অভিনেতারা কাঁচামাল নিয়েই কাজ করে। আর শিল্পীরা সেই কাঁচামাল ঝাড়াই বাছাই করে - নির্যাসটা মঞ্চে তুলে ধরে।
- কাঁচামাল ?! কাঁচামাল আবার পেলি কোত্থেকে ?!
বাজার পেয়েছিস নাকি ?
- বিপদ তো এখানেই। দ্যাখ্ , বাজারটা না বুঝলে - মঞ্চটাও কিন্তু ঠিকঠাক বোঝা যায় না। বুঝতে পারবিও না কোনোদিন।
- মানে ?!
- থাক্ সে কথা। ..... আচ্ছা, মঞ্চ সবসময় একটু উঁচুতে হয় কেন বলতে পারিস ?
- না। কেন হয় ? শুনি ...
- আই-লেভেল চাই।
- আই-লেভেল ?!
- হ্যাঁ, মানে- চোখ বরাবর। আদর্শ মঞ্চ সবসময় মানুষের আই-লেভেলেই হয়।
- কেন ?
- এই যুক্তিটা অবশ্য আমার। কারণ, আই লেভেলের নীচে মানুষ অনেক কিছুই দেখতে পায় না। কিংবা দেখলেও ঠিক বুঝতে পারে না। অথবা ওভারলুক করে।
- কী যে বলিস ?!
- আসলে আমাদের সমাজের যত্ত সব কান্ড, তার বেশির ভাগ-ই বলতে গেলে ঐ আই-লেভেলের নীচেই ঘটে যাচ্ছে। আর যা কিছু সুস্থ - বা মননের তার প্রায় সবই আই-লেভেলে বা তার উপরে। প্রেমের ক্ষেত্রেও যেমন, তেমনি মঞ্চের ক্ষেত্রেও খাটে ঐ একই কথা।
- আঃ থামতো নিবারণ ! মাথামুন্ডু কী যে বলছিস ? কিছুই বুঝতে পারছি না।
- কী করে বুঝবি বল ? মাথা আর মুন্ডু এক জায়গায় লাগিয়ে দিলে ঠোকাঠুকি তো হবারই কথা। তার'চে যেকোনো একটা ধর, মাথা অথবা মুন্ডু । তবুও একটা মানে খুঁজে পাবি।
- আহ্ ! এতই যখন তোর বোঝ - তবে একটু সরল করে বললেই তো পারিস। এত ঘুরিয়ে বলার কী আছে ?!
- তবে শোন। বিড়ালকে কখনও আদর দিয়েছিস ?
- বিড়াল ?!
- হ্যাঁ, বিড়াল।
- তা তো দিয়েছি। কিন্তু তাতে কী হলো ?!
- তা ভালো করেছিস। কিন্তু বিড়ালকে কখনও দাবড়ানি দিয়েছিস কি ?
- বিড়ালকে দাবড়ানি ?! মানে ?!
- আরে ধ্যুর, বিড়ালকে তাড়া করেছিস কখনও ?
- হ্যাঁ, করেছি।
- তা'লে অবশ্যই দেখেছিস - তাড়া খেয়ে বিড়াল প্রথমে ছোটে। কিন্তু, তারপর- তুই যদি ধাওয়া না করিস - তবে সে একটু গিয়েই - পিছন ফিরে তাকায় ।... দেখেছিস এমনটা ?!
- দেখেছি।
- তারপর সেই বিড়ালটি কী করে বলতো ?
- কী করে ?
- দিব্যি বাংলার চার সংখ্যার মতো একটা পোজ দিয়ে নিজের হাত কিংবা পা চাটতে শুরু করে।.... দেখেছিস এমন ?
- হ্যাঁ, দেখেছি তো !
- তবে তো ভালোই দেখতে পাস তুই।... এবার তবে বল দেখি, এই বিড়াল পর্বে - কোনটা অভিনয় ? আর কোনটা শিল্প হয়ে রইল ?
পরিচিতিঃ-
----------------
উমাশঙ্কর রায় ত্রিপুরা রাজ্যের একজন বিশিষ্ট লেখক। তিনি কবিও। গভীর উপলব্দী প্রকাশিত হয় তার কবিতায় এবং প্রবন্ধে। মানুষের ভাবনার জগতে নতুন দৃষ্টিকোন আনে। তিনি বর্তমানে মহারাজা বীর বিক্রম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে কর্মরত।
প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ-
১। এক চিলতে সমাজ
২। প্রশাসনের কানাগলি
No comments:
Post a Comment