Wednesday, February 20, 2019

দুলাল চক্রবর্তী

আমার মায়ের ভাষা

পরাধীন ভারতবর্ষকে শাসন করার জন্য ইংরেজ প্রতিনিধিহিসাবে ভারতে এসেছিলেন বড়লাট লর্ড কার্জন। তখনকার বাংলাদেশ ছিলোবিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচীর পীঠস্থান। তাই কূটচক্রী কার্জন সাহেব উদ্যোগ নিতে শুরু করলেন কিভাবে বাংলাদেশকে ভাগ করে দিয়ে বাংলাদেশের সমস্ত আন্দোলন কর্মসূচীকে দুর্বল করে দেওয়া যায়।তাই অতি সত্বর বাংলাদেশকে
ভাগ করে দিতে হবে। যেই কথা সেই কাজ।১৯০৫
সালের ১৬ই অক্টোবর বাংলাদেশকে ২ ভাগে ভাগ করে দেওয়া হলো পূর্ববঙ্গ আর পশ্চিমবঙ্গ নামে
সারা বাংলাদেশ জুড়ে আরম্ভ হলো আন্দোলন। কিন্তু কোন লাভ হয়নি। ১৯৪৭ সালে পূর্ববঙ্গ যুক্ত হলো পাকিস্তানের সঙ্গে পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে,আর পশ্চিমবঙ্গ যুক্ত হলো ভারতের সাথে।
১৯৪৭ সালে দেশ স্বাধীনহওয়ার সময় ভারত আর পাকিস্তান নামে দুটি দেশ ভাগ করে ভারতবর্ষকে দুর্বল করে দেয় ইংরেজ শাসকরা।
পূর্ব পাকিস্তান নাম নিয়ে আজকের বাংলাদেশ যুক্ত হলো পাকিস্তানের সাথে। পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা হলো উর্দু।সেই অনুযায়ী পূর্ব পাকিস্তানেও চাপিয়ে দেওয়া হলো উর্দুভাষা। এখানকার অধিকাংশ লোকই হলো বাঙালী। তারা রাষ্ট্রভাষা হিসাবে উর্দুকে সহজভাবে মেনে নিতে পারেনি।
তারা চাইলো রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলাভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা করা হোক। ধীরে ধীরে
ছোটখাট আন্দোলন শুরু করতে লাগলো বাঙালীরা। ১৯৫২ সাল।ছোট ছোট আন্দোলন বৃহৎ আকার ধারন করতে লাগলো।আওয়াজ
উঠলো পূর্ব পাকিস্তানে  বাংলা ভাষাকে সরকারী ভাষা হিসাবে মেনে নিয়ে রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সম্মিলিত আন্দোলন
শুরু হলো। তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানে
সামরিক শাসন চলছিলো। প্রেসিডেন্ট ছিলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আয়ুব খান যিনি অত্যাচারী শাসক হিসাবে পরিচিত ছিলেন।
১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী। ঢাকার রাজপথে নামলো ভাষা আন্দোলনকারীদের ঢল। যার
পুরোভাগে ছিলো ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের ছাত্ররা।তাদের দাবি ছিলো একটাই বাংলা ভাষাকে
রাষ্ট্রভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দিতে হবে। সরকারী কাজে বাংলা ভাষাকে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে হবে। ঢাকা মহানগরী সেদিন উত্তাল হয়ে উঠলো। আন্দোলনকারীদের আন্দোলন স্তব্ধ করে দেবার জন্য নামানো হলো মিলিটারী। তারা আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রনে আনতে না পারায় তাদের উপর চললো গুলি। তাতে লুটিয়ে পড়লো
তাজা কটা প্রাণ। শহীদ হলো বরকত,রফিক,সালাম, জব্বার
এরা।ঢাকার রাজপথ রক্তে রাঙা হলো। সেদিনের আন্দোলন জন্ম দিয়েছিলো বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বপ্ন। ১৯৭১সালে এক রক্তক্ষয়ী
সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম নিলো আজকের বাংলাদেশ। এরপর থেকে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিতে ঢাকার শহীদ মিনারের পাদদেশে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে
বীর ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
ক্রমশ বাংলা ভাষাকে আন্ত্জাতিক ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি দেবার দাবী উঠলো। শেষ পর্যন্ত
UNESCO  ১৯৯৯সালের ১৭ই নভেম্বর বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাত্ভাষা হিসাবে
ঘোষণা দিলো। সেই অনুযায়ী ২০০০সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে উদযাপন করা শুরু হলো। বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে পেল স্বীকৃতি। শত শহীদের রক্ত হয়নিকো
ব্যর্থ। হে শহীদগণ, তোমাদের রক্তঝরা সংগ্রাম আজ হয়ে রইলো অমর ইতিহাস।

পরিচিতিঃ-
------------------
কবি দুলাল চক্রবর্তী  প্রাবন্ধিকও। তিনি মূল্যত গবেষণামূলক প্রবন্ধ রচনা করেন। তিনি অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কর্মজীবনে অনেক সুনাম অর্জন করেছেন। মনন স্রোতে কবির নিয়মিত লেখা প্রকাশিত হয়।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...