Wednesday, October 17, 2018

Welcome

হাবীব আল হাসীব

ভাল আছি

জানি ভাল আছি বললে বিশ্বাস করবে না
সত্যি ভাল আছি আজকাল ভাল থাকতে হয়
সুখেরা পাহারা দেয় দরজার চৌকাঠ
ভালবাসা লুকায় নতুন বউয়ের মতো পর্দায়।

রাস্তার সোডিয়াম আলোর মতো ভাল আছি
এই কুয়াশা ভেজা শীতের রাতে
নিঃসঙ্গ জীবনের সাথী একরাশ উষ্ণ ভাবনায়
জানি ভাল আছি বললে বিশ্বাস করবে না।
টিএসসির সান্ধ্য বৈঠকের উষ্ণতায়
পার্কের সবুজ ঘাস যেন আরো সবুজ হয়
সতেজ নিঃশ্বাসে।

সবই তেমনি আছে, তবু কারো জন্য থমকে দাঁড়াই
চেনা পথে পা মিলিয়েছিল যারা একদিন
তাদের মুখ ভেসে ওঠে মনের ক্যানভাসে
বেড়েছে বয়স চশমার লেন্সে
বুকের উইপোকারা নিশ্চিন্তে খাচ্ছে অতীত
আমিও গেড়েছি শিকড় এই মাটিতে তোমাকে ভালবেসে
আমি ভাল আছি, বেশ ভাল আছি।

রীনা তালুকদার

ভাঙতে নেই

রিটোন শুনতে কান রাখি সচেতন
যার কণ্ঠস্বর আকাংখিত
সেই শরৎ বিকালের চেহারায়
খবর নেই ভুলোমন উদাসীন
এই ফাঁকে স্মৃতির আগর জ্বলতে থাকে
মস্তিস্কের মনিটরে কখনো দ্রুত কখনো ধীরলয়
উল্টাতে থাকে পুরনো কার্বণ পড়া ছবির পাতা
রাগে ক্ষোভে হাঙর নখরে চালাতে থাকি আঙুল
শতমূলী বটের জটাধারী মাস্তুল মাথায়
আয়নায় দাঁড়ালেই চিন্তিত হই
কয়লাখনি চুলে শরৎকালের কাঁশফুল হাসছে
দমিত হই এই ভেবে- বিবর্তনবাদী ধারায়
স্নেহ, প্রেম, ভালোবাসা রূপ বদলায়
বার বার আইষ্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্ব আর
ডারউইনের বিবর্তনবাদ নতুন জন্ম দেয় আমাকে
মঙ্গলময় পৃথিবীর পথে নতুন সূর্যোদয়
জন্ম-চাষবাস-মনোপলি; ভাঙলেই ধ্বংস অনিবার্য
আমার ভাঙতে নেই কোনদিন . . .।


সামসুন্নাহার ফারুক

শারদীয় ঘোর

শরতের উড়ো মেঘ টেরাকোটা সাজে
প্রশান্তির ক্যানভাসে লালিম আদরে
অভিসারে যেতে যেতে ভরন্ত ভাদরে
আবীর বিভায় বাজে মোহময় লাজে

নিপুণ তুলিতে আঁকা নক্ষত্রের নীলে
রূপালী জোছনা মেখে আকাশের গায়
মেঘের মেয়েরা ছোটে মাতাল নেশায়
গোপন প্রেমিক খোঁজে নিসর্গ মিছিলে

কাংখিত রিংটোনে বাতাসের শিষে
ঝলমল জ্বলে ওঠে মাধূরীর বন
হৃদয়ের পেরিস্কোপে রাতের কার্নিশে
ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠে জোয়ারিত ক্ষণ

মুগ্ধতার আয়োজনে আবেগ বিভোর
ব্যন্জিত মূর্চ্ছনা তোলে শারদীয় ঘোর।

খোশনূর

নদী-পাহাড়-আমি

এদিকে নদী ওদিকে পাহাড়
বসলাম নদীর তীরে গাছের ছায়ায়
পাখির কলরবে বিকাশ আনন্দের
ছায়াচ্ছন্ন আমার স্তব্ধতা এখানে
পরিণত কাব্য ; বিচিত্র ভঙ্গিতে এক ঢেউ
অন্য ঢেউকে ছুঁয়ে যায় চলার রূপরেখায়
কালের জলছবি স্তরে স্তরে যেনো
আদি অন্তের ইতিবৃত্ত খুঁজতে ছেয়েছি
নদী গল্প করবে মনে হলো
নদীর গান শোনা হবে
জানি না কখন কবে নদীর সময় হবে
পাহাড় সবুজ অরণ্য বুকে ডাকলো মনে হলো
কাছে যেতেই রুমঝুম ঝংকার শুনলাম
দেখি ঝকমকে ঝর্ণা চঞ্চল
বালিকা হয়ে নেচে নেচে ছুটছে
পিছু না দেখেই;
মধুর যৌবনে মোহিনী
ঊষসী অতন্দ্র প্রজ্ঞাদীপ্ত ঝংকৃত লয়ে
স্তব্ধ পাহাড়, গেরুয়া পথ জানা-অজানা
বৃক্ষলতা রকমারী ফুল হাওয়ার দোলা
ভাবনার সাঁকোতে আলোর আখর
ঘনশিখরে নিঃসঙ্গের প্রহরী অনন্ত
প্রপাত দেখে শৌখিন অমনোযোগে
শিল্পের বিলাসী উপকরণ কুড়িয়ে নিলাম
এখন নদী, পাহাড় আর আমি
ক্রমাগত একাকার হবো।

শেখ সামসুল হক

শরৎ সন্ধ্যায়

বৃষ্টি ভেজা শরৎ সন্ধ্যায় চন্দ্রমুখী
তারকাটা কার্ণিশে উধাও দৃষ্টিপাত
স্মৃতি ঘরে জেগে থাকে অলস প্রহর
কিছুই বুঝেনা বেমানান ঝুল বারান্দায়
চোখের তারায় কানামাছি খুঁজে ফিরে রাত
দিনের সকল আয়োজন যায় মাঠে মারা
কোনো দিকে যাবার ভাবনা পলাতক
আসামীর মুখোশ পরতে ভালোবাসে
চেনাপথ অচেনার কাছে করজোরে
সাদা কাশবন ছুঁয়ে চলে দুর্দান্ত প্রতাপে
ঝিলমিল গাংচিল নদী তীরে চেলা পুটি
ধরফর প্রাণে প্রকৃতির অপরূপ রূপে
ভরদুপুরে ফাগুন ঝরে শ্বেতপদ্ম
দৃষ্টি কাড়ে যখন তখন স্বপ্নঘোরে
হয় না বিদায় শরৎ শোভিত জলে
নিকেল বিকেল ঠোঁটে রেখে আদর চাদরে
ঘুমায় নগর বনমালী অশান্ত নিঃশ্বাসে
যাবার বেলায় জেগে ওঠে সূর্যের সকাল।

Tuesday, October 16, 2018

ড. উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

আরে আরে হচ্ছেটা কী ?! তোমাকে নিয়ে আর পারি না।পাগল হলে তুমি ?! যাচ্ছ তুমি বাঘকে প্রশ্ন করতে -বিপদের কয় থাবা ? বাহ্ বাহ্ ! বেশ হয়েছ !!

ভুলে গেলে তুমি - এ যে চিড়িয়াখানা নয়।তুমি এখনো ঘুরছো জঙ্গলে ! এখানে মানুষ বাঘ হতে পারে। কিন্তু বাঘ, মানুষ নয়।

সভ্যতা, তোমার স্বপ্ন হতেই পারে।কিন্তু গিরগিটির মত অসভ্যতা গাছে গাছে ডালে ডালে ...... থাক্ সে কথা।

বলছি - স্বপ্ন দেখো, ভালকথা।কিন্তু ভুলে যেয়ো না- সত্যকথা।তুমি জানো না বিপদের কত চোখ, কত মাথা।কত ছদ্মবেশ!

ঐ যে রাবণ - সে তো নস্যি। তাঁর তো ছিল মাত্র দশটি মাথা !

আমি তোমায় নিরস্ত করছি না।জঙ্গলে পথ নেই।তাই খুঁজে নিতে হবে।শুধু বলছি - বিপদ যে ছদ্মবেশী ! জাঁদরেল পলাতকও সে। কিছু ঘটিয়ে পালায় অনায়াসে।পুলিশ তো দূরে, যমেও পায় না নাগাল তার। অনেক ঠিকানা তার। অনেক ঘরবাড়ি !

যদি বুঝতে পারতাম - তার চালচলন, অথবা তার মতিগতি ! কারা তার মামা মাসি, চাচা পিসী - হয়তো বা হতো উপায় কিছু একটা ! গোষ্ঠী সুদ্ধু রাখতাম বেঁধে এক অসভ্য দুনিয়ায় তাকে।

কী বললে ? বেফাঁস হল যে - আসল কথা ! হতেও পারে।পিছলে পড়ে, থামলাম যে এসে - এ সভ্য দুনিয়ায় ! ঠিক বলেছো - সভ্য দুনিয়া যে এত পিচ্ছিল - সে তো বুঝতে পারিনি আগে ! ঘাট হয়েছে ।

Monday, October 15, 2018

কল্যাণব্রত বসাক

ফেনী ব্রিজ (৬)

নদীতে স্নানে গেলেও আগের মতো রামগড়ের জন্য সে টান অনুভব করতাম না । রাগ নয়,অভিমান।
ঠান্ডার সে রাতের কথাগুলো ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছে । হয়তো কিছু দিনের মধ্যে সব ঠিক হয়ে যেত,কিন্তু সামনেই আমার 'বোর্ড পরীক্ষা'। আর এ নিয়ে বাড়ির গার্জেন আমার থেকেও বেশি উদ্বিগ্ন । অতএব নো অংকি পংকি।শুধু কেবল পড়া । ফল মিলানো হাতে নাতে ।আগে শ'তে 30 /35 জুটত।'বোর্ডের পরীক্ষায় ' অর্জন করেছি(ভয়ঙ্কর কিছুর জন্য প্রস্তুত হোন ) শ'তে 40/42।

গন্ডলিকা প্রবাহে আমিও। উচ্চ মাধ্যমিক ।কলেজ।প্রেমের ইন্টু মিন্টু ।ভেঙে গেল প্রেম। ফের ট্রাই । এবার গেঁথে গেলাম ।

জীবিকার জন্য 'চুরি' বাদে সব করেছি।একদিন এক ঘেয়ে জীবন থেকে মুক্তি পেতে বেড়াতে গেলাম গেলাম পড়শি দেশ ।বাংলাদেশ । সরকারি নিয়ম কানুন মেনে।দেখে এলাম ঢাকা ,কুমিল্লা, চট্রগ্রাম, নোয়াখালী, ফেনী । ফেনীর দক্ষিণে দৌলতপুরে আমাদের 'দেশ বাড়ি' । আ...। (সে অন্য কাহিনী অন্য সময় হবে ) কিন্তু  রামগড় আমার প্রথম প্রেম--আমার বাল্য --আমার কৈশোর --আমার দস্যিপনার লীলাভূমি  আমার--ব'থে  যাওয়ার বৃন্দাবন কি করে  ভুলি ।.. তবু ভুলে গেছি । যাওয়া  হয় নি রামগড় ।

অথচ এ দু দেশের প্রধানমন্ত্রীদ্বয় ফেনী নদীর উপর পাকা সেতুর ভিত্তিস্থাপন করেছেন ঢাকায় ।
সাব্রুম সীমান্তে বহমান ফেনী নদীর উপর পাকা সেতু তৈরি হবে। জুড়ে যাবে সাব্রুম রামগড়।

চলবে..(ধারাবাহিকের পাতায়)

Sunday, October 14, 2018

কামরুজ্জামান রাব্বি

মশা
  

আমরা মশা থাকি সেখানে
পচা,নোংরা আছে যেখানে
এই কষ্টে ভালো সব খানে
বন্ধু খুঁজি মনে মনে ,,

নেয়নি তো কেউ  কভু মেনে
জন্ম ভেবে নোংরা ড্রেনে
ছুটে বেড়াই সব খানে
মাতাই মন গল্প গানে ,,

গানটা সবাই ভাবে যেন বিষ
সাপের মতন করে উঠে হিস্
দেখলে মোদের কানে ফিস ফিস
আচ্ছা করে ডোলে দিস্ ,,

ঘুম নেই যখন কষ্টে সবাই
কাজে তখন নামি সদাই
কষ্ট কমবে এই ভেবে ভাই
বন্ধু হয়ে কাছে যেতে চাই, ,

করে কি যে সব আমায় পেয়ে
মারতে চায় ধোঁয়া দিয়ে
উড়ে পালাই পর জাগিয়ে
ভয়ের কাঁপন গায়ে লাগিয়ে, ,

এভাবে যদি তাড়া খেয়ে যাই
বলুন তো একবার ভেবে সবাই
মশা বলে কি কোনই রাগ নাই..?
আমি তো সবার ভালো টাই চাই,,

মানুষ বলে দোষ নেই তার
মারতে তারা আসুক যতবার
শুধু কষ্ট,রাগের কামড়ে আমার
পৃথিবী কাঁপানো দেয় হুংকার..

কি করে যে তাদের বুঝাই
আমরা তোমাদের শত্রু না ভাই
যেন একটু ভালো থাকো তাই
মিষ্টি গানের শব্দ ছড়াই ,,

হোকনা মোদের বেসুরে গলা
তাই বলে কি করবে হেলা..?ছড়িয়ে পড়ুক সুখের দোলা
এই তো ভাবি সারা বেলা ,,

অন্য শব্দ বাজে যখন
রাগ করো কি এটার মতন ..?
জানি,এ এক দুর্বলের কথন !!
সুখে থেকো,আমাদেরই হোক পতন

অপাংশু দেবনাথ

নির্ধারিত চেয়ার
       

ভেতরে এটেন্ডার বললেন,
রোগী ছাড়া বাকিরা চেয়ার ছেড়ে উঠুন।
দ্বিতীয় তৃতীয়বার একই আবেদন তার।

সিট ছাড়েনি কেউ
দৃশ্যত অসুস্থ সকলেই ।

অগত্যা বাইরে আমাকেই যেতে হলো ।

ডাক্তারবাবু  তুমি কি জানো,
আমিও পাখির মতো সুস্থ নই।

প্রতিবার আমাকেই ছাড়তে হয় নির্ধারিত চেয়ার ।

Saturday, October 13, 2018

রণজিৎ রায়

কবিতা

ক্ষুধা নিজের তাগিদেই ঘুম ভাঙ্গে
জোর করে জাগাতে গেলে
কুম্ভকর্ণের মতো অকালে ঝরে ।

কবিতা ক্ষুধার মতো নিজ থেকেই
ঘুম ভেঙ্গে জাগে
জাগাতেই পারে কেউ, তবে
পথটা নিজেই হেঁটে যেতে হবে ।

সুন্দরী বিদুষী নারীকে মনপ্রাণ সঁপে
ভেতরে সন্দেহের বাতাবরণ
ফিরিয়ে দিলেও
পর্যাপ্ত সাঁতার কেটে
গভীরতার অজ্ঞতায় অতৃপ্ত মন ।

কবিতা সুন্দরী নারী থেকেও অভিমানিনী
অবজ্ঞা উপেক্ষায় ভারাক্রান্ত মন
কেবল অবসর সময়ে মোটেই তৃপ্ত নয়
পূর্ণ সময়ের দাবিদার
সতিনের অস্তিত্বে মুখ ফেরায় চিরতরে ।

সব ছেড়ে পূর্ণ সময় নিজেকে সমর্পণ
অনুরাগের গভীরতা অজ্ঞাত
জীবনভর একতরফা আত্মনিবেদন
অতৃপ্তিতে অনেকের চিরবিদায়
কবিতা এতটাই নির্মম রহস্যময়ী !!

দীপক দাস

বই এবং বইমেলা  ( ধারাবাহিক)
                   

বই আমরা কেন পড়ব,এ ব্যপারে পৃথিবীর নানা বিখ্যাত লোক নানা অভিমত ব্যক্ত করেছেন ,-যেমন আনাতোল ফ্রাঁস বলেছেন- হায় আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো ,তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী সম্পূর্ণ সৌন্দর্য এক সঙ্গেই  দেখতে পেতুম;তা তো নয়।তাই ফ্রাঁস নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন ,কিন্তু আমার মনের চোখ একটি কিংবা দুটি নয়, 'বই,পড়ে নানা জ্ঞান বিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি ততই ,এক একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে;
বারট্রান্ড  রাসেল বলেছেন "সংসারে জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া ;বই পড়ে সেই আপন ভুবন সৃষ্টি করতে ।
ওমর খৈয়াম বলেছিলেন-"রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে,তবে বই খানা অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়,
কোরান এর সর্বপ্রথম যে বাণী মহম্মদ শুনতে পেয়েছিলেন তাতে আছে। 'অল্লাম বিল কলমি' আল্লা মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন 'কলমের মাধ্যমে ' আর কলমের আশ্রয় তো পুস্তক ।
     বাইবেল শব্দের অর্থ বই ।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন "বিদুৎ কে মানুষ লোহার তারে বাঁধিয়েছে কিন্তু জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দে মধ্যে বাঁধিতে পারিবে । কে জানিত সংগীতকে,হৃদয়ের আশাতে জাগ্রত আত্মার আনন্দ ধ্বনি কে আকাশে দৈববাণীকে যে কাগজে মুড়িয়া রাখিবে।কে জানত মানুষ অতীত কে বর্তমানে বন্দী করিবে, অতল স্পর্শ কাল সমুদ্রের উপর একখানি 'বই' দিয়া যাঁকে বাঁধিবে।"
টলস্টয় বলেছেন "জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই ,বই এবং বই,
দুই আধুনিক কবি গোস্বামী ও সুবোধ সরকার -এক প্রশ্নোত্তর পূর্বে তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ;বই যদি তাদের কোনো একটি নির্জন দ্বীপে নির্বাসন করা হয় ,তারা সঙ্গে নিয়ে যাবেন ,
জয় গোস্বামী বলেছেন -বুদুদেব বসুর প্রবন্ধ সমগ্র ,শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধ সমগ্র, গীতবিতান আর অতুলপ্রসাদের গীতিগুচ্ছ।
সুবোধ সরকার বলেছেন - 'আমি একটি এই বই নিয়ে যাব,গীতবিতান ।
      এই যে এতগুলো উদাহরণ ব্যবহার করলাম, কেউ কি এইসব উদাহরণ পড়ে বই পড়েন। তা তো নয়।তাহলে বই পড়া শুরু হয় কীভাবে ! কোন বয়সে কি রকম বই পড়ব বা পড়া উচিত তা কে ঠিক করে দেবে এতে বইমেলার ভূমিকা কী?  এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা যাক।
আমরা ছোট বয়সে বই পড়া শুরু করি বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় বইমেলা।সে সব বই যোগানে সহায়তা করে।শৈশবে শিশুর মনের রূপকথা ,গল্প শুনতে চাই ,তাদের মন জগৎ রূপকথা তাই সেই সময় গল্প বলার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিতে হয় রূপকথার জগৎ। সে জগতে হদিশ দিতে পারে উপেন্দ্রকিশোর প্রমুখ লেখকরা।
      শিশুটি বড়ো হতে থাকে -বাবা তার হাতে তুলে দিলেন 'রামের সুমতি'।সে বড় হচ্ছে -তার হাতে এল বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালি 'অপুর সংসার ' সে পড়বে আর ডাকবে আমি এই তো 'অপু'। দুর্গার জন্য তার চোখ থেকে দু-ফোঁটা জল অজান্তে  বেরিয়ে আসবে । অপরের জন্য কান্না, আনন্দের অভিজ্ঞতা তার জীবনে প্রথম ।তার হাতে আসবে ছোটদের রামায়ণ, মহাভারত । মহাভারতে 'কর্ণ' চরিত্রের জন্য তার বুক বেদনায় ভরে উঠবে। ভীমকে সে ভালবাসবে । অথচ সে কাউকে দেখো কাউকে  চেনে না । সাহিত্য পাঠে সম্ভব  অজানা অচেনা চরিত্রের জন্য -দুঃখ ,কষ্ট ও ভালোবাসার অনুভূতির সঞ্চার ।
ঝমঝম করে জীবনের ট্রেন এসে দাঁড়ায় যৌবনের প্ল্যাটফরমে। আকাশ বাতাস ফুল পাখি চারপাশে মানুষ সব অপরূপ মনে হয়, এর এই মতে তার হাতে এল 'আনন্দমঠ' সে এই বই পড়বে, সে বুঝবে দেশ কি ?কেন দেশকে ভালবাসতে হয়?জীবনের উদ্দেশ্যই যে ভালবাসা আনন্দমঠ পাঠ না করলে তা সম্পূর্ণ জানা সম্ভব নয়। এই বই পড়তে পড়তে সে ও সে ও মনে মনে বলবে -"আমার মা নাই ,বাপ নাই, ভাই নাই -আছে শুধু সুজলা সুফলা এই জন্মভূমি ।

Friday, October 12, 2018

পার্থ ঘোষ

বিশ্বাস

মনখারাপের মতো ধূসর জ্যোৎস্নায়
একদিন বেদমন্ত্র পাঠ করছিল যারা
সিন্ধুর প্রান্তরে,
তারা সব ভূত, ভ্রান্ত আর ভুলের হাজার
তর্জমা করে গেলেও -

একটা সর্বহারার দেশ, আজও বিশ্বাস করে
ভূ-ভারতে যদিও না হয়, উপরে কোথাও
সাম্যবাদ থাকবে নিশ্চিত।

বিজ্ঞান কখনও মিথ্যা হতে পারে না যে

Thursday, October 11, 2018

সাচীরাম মানিক

লিখনির ক্ষুর তেজে

মাতঃ রাঙা দুটি পায়ে ঠাঁইয়ের  আষে তব সন্তান আছে ওতপেতে,
মূরমতি মন্দ অতি মম মন প্রাণ না জানে স্ততিজ্ঞান
ক্ষমিও সন্তানেরে,বাগেশ্বরী ।
রাখিও মোরে সদা দৃষ্টি গোচরে যেমতি  মাতৃস্নেহ বিগলিত করুণা ধারায় লালিত করে গর্ভধারিণী  মা কচি খোকাটিরে ।
কী বলিব  মা তব করুণা রসধারা তোমারি স্নেহে হয়েছে  কত গণ্যমান্য পৃথিবী বরেণ্য
সবই তো তোমারি জন্য ।
মাতঃ মম মন প্রাণ সঁপেছি তব রাঙা দুটি পায়'
মোর লিখনী সেন লিখে
বঞ্চিত অসহায় মানুষের তরে আর সব ধূর্ত ঠকবাজেরা
পালায় সেন মোর লিখনীর ক্ষুরতেজে।
          

সামিন শুভ

মান-অভিমান


আমি কি চাই, আজ আমার জানা নাই!
পর্যাপ্ত স্পৃহায় জ্বালা বুকের পাঁজরে, 
কেন এলাম? প্রশ্ন করোনা,তোমার দোহাই!
অসংখ্য অজান্তা আমার বুকের ভীবরে।

আমায় ভালোবাস? উত্তর জানা নেই!
হয়তো জানি! সত্যিই কি জানি!
নাকি এত ভূলের ভেতর ভূল
শুধু তুমি একটু বেশি অভিমানী?!

আমি কি পুতুল? নাকি অন্য কিছু!
যদি কিছু, তবে আমি কি?
অসংখ্য ভূলে ঘেরা লম্পট,
চরিত্রহীন,  আমি মানুষ নাকি?!

সুখ কোথায়?  ভালোবাসার কাছে!
আমি বার বার ছোটে যাই, 
যদি সে আজ বুঝে আমায়
খুঁজে যাই ভালোবাসার আশায়,

জানিনা, আজ প্রশ্ন আমার দুঃখের
সুখের,-তুমিই কিগো ভালোবাসা
নাকি ছায়া বুঝেও ছুটে বেড়াই,
যতো ছোতে চাই, সে আরও সড়ে দাঁড়ায়।।

উৎপল দেবনাথ

দু-বেলা

আজ দিনটাকে অসুস্থ মনে হচ্ছে 


চাই শুধু দু-বেলা দু-মুঠো


আমি নয় গো চিত্রগুপ্ত 


নশ্বর এ মানব দেহ,


তাই গো চাই এ চিওরঞ্জন।


তোমার এই নলিনাক্ষের মতো


চোখে ক্ষুধা মেটায় না


খাই আমি গত রাত্রির বাসি ভাত


চাই শুধু দু-বেলা দু-মুঠো ভাত,


মেলে না, দু-বেলা দু-মুঠো।


হাঁড়ি ভরা জল খেয়ে পেট ভরাই


শেফালি ফুলের গন্ধত্ত যেন আজ আমায় খোঁজে না।


যদি বলো মনে পড়ে না? পড়ে।


আমি চাই হতে তোমার বাহানায়


নরোত্তম নর্তক।


আমি যে হয়ে আছি ক্ষুধার পেটে


নিস্তব্ধ,নিস্তরঙ্গ।


ক্ষুধার পেটে তোমায় দেখে যেন মনে হয় আকাশ ভাঙ্গা রোদ।


এখন দু-বেলা শুধু বাঁচার খোঁজ 


আজ ধরিত্রীকে যেন মনে হয় নিস্তেজ,নীরব,নীরস,নিঃস্পৃহ 


এতে নেই কোনো প্রাণ,নিস্পন্দ।

প্রসেনজিৎ দে।

মনের ক্যানভাসে
                               

তোমার জাল-বোনা স্বপ্নগুলো
আজও গীটারের সুরে ভেসে 
আসে আমার কানের পর্দায় ।
সুখ-দুঃখের, বিষাদ বাণী ।

রোজ কত'কি খেলা করতো 
মনের ক্যানভাসে, আবছায়া জানলায় ।
ভেঙ্গে পড়া পাহাড় আজ
মিশে গেছে নদীর মহোনায় ।

এক পশলা বৃষ্টির আসাদনে
উথল মনে বৃষ্টির ছোঁয়ায় 
নিজেকে জড়াতো, পাখিদের কলতানে
সমস্ত হৃদয় বিচলিত হতো ।

আর যখন সন্ধ্যারা আকাশ 
ধেয়ে নামতো, রুপোলি আলো
জ্বেলে উঠতো হাতের ভাঁজে ।
মুখে মৃদু হাসি হাসতো, 
নতুন সুরে গান ধরতো; 
তারার পানে মুখ চেয়ে ।

 মন্দিরা লস্কর

আষাঢ়ের গল্প



"আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে"


বন্ধ ঘর থেকে চাপা বাজছে কানে‌।


প্রমোটাররা বর্ষাকাল চেনেনা,


আষাঢ়ের মেঘ সরিয়ে দেয় চুক্তিপত্রে‌।


বৃষ্টি যাদের জন্মগত অসুখ


তাদের বন‍্যায় ভাসতে হয়, ডুবতে হয় ঘর, উনুন।


অভ‍্যাসে ওরা চিরন্তন সুখী।

ঋতুর যুদ্ধ যেখানে শেষ হয় সেখানে একে একে


ফ্ল‍্যাট বাড়ি দাঁড়ায় প্রছন্ন বিষাদে।


পথ চলতি ভেজা মানুষ গুলো ফিরে ফিরে তাকায়


সাজানো ক‍্যকটাসে।


আরথ্রাইটিসের ব‍্যাথায় কুঁকড়ে উঠে বারান্দা,


সিঁড়িতেই থেমে থাকে জলকাদার ছোপ।


 


রঙীন ছাতায় ঢাকা পড়ে সর্দির ধাত‌।


একটাও অপবাদ কেও তোলেনা আর।


ঘোর বর্ষায় উচ্ছিন্নে যায় বৃষ্টি,


জ্বর গায়ে আমি যে রোজ বৃষ্টি চাই


আমি কী উচ্ছিন্নে যাইনি বলো?



                    


সৌরভ চক্রবর্তী

মায়াবিনী
                            


গগনপাণে  মেলে  আঁখি, 
দেখেছি  গো  সন্ধ্যাতারা ।
দ্বারের  কোনে  বসে  একা,
ইচ্ছেগুলো  দেয়  যে  সাড়া ।।


ক্লান্ত  দেহে  স্বাদের  পরশ 
নিয়ে  যায়  মায়ার  দেশে ।
খুঁজে  পাই  তোমায়  আমি,
নতুন  রূপে  নতুন  সাজে ।।


তোমার  ঐ  স্নেহের  নেশা,
লাগে  যেন  সুধায়  মেশা ।
অদূরে  কোন  বাঁশির  সুর 
শুনি  গো  হৃদয়কোনে ।।


নক্তরানীর   অশ্রুজলে,
সান্ধ্যকালে  আঁধার  নামে ।
জোৎস্নাভরা  দিঘির  জলে  
তোমার  আস্য  খুঁজে  মেলে ।।


কেন  যে  সুর  থেমে  যায়  
আমার  এই  সন্ধ্যাগীতে  !
তুমি  সেই   মায়াবিনী ;
 আছো  তুমি  হিয়ার  পাণে ।।


মুকিম মাহমুদ মুকিত

শরৎকাল

সবুজ মাঝে কাশের বাহার
নাচে মেঘ শুভ্র রঙে,
শরৎকালে প্রকৃতি তাহার
ছড়ায় রং নতুন ঢঙে।

অভ্র মাঝে মেঘের ভেলা
চলে উড়ে আপন মনে,
সাদা কাশের রঙিন মেলা
জাগায় সাড়া প্রকৃতি প্রাণে।

শান্ত নদীর স্থির জলে
নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি,
একটু খানি দাঁড়িয়ে স্থলে
হয় উদাস শত কবি।

হাসে ওই প্রকৃতি রাণী
শরৎ ঋতুর আগমনে,
পাল তুলেছে নৌকা খানি 
যাচ্ছে মাঝি হাওয়ার টানে।

যাব আজ কাশবনে
তুলব কাশ মুঠি ভরে,
সবুজ পাতা শিশির সনে
আনব গন্ধ বোতলে পুরে। 

সোমেন চক্রবর্তী

মিমিক্রি


 

আমার ভিতর নকল করার নিপুণতা আছে
স্কুলের হেড স্যারের বলার ধরন আমার করায়ত্ত
শিখেছি শহরের এম.এল.এ.-এর ভাষণ দেওয়ার কৌশলও,
একটু চেষ্টা করেই রপ্ত করেছি রবিঠাকুরের হাসি
এবং নেতাজী যেভাবে আঙুল উঁচিয়ে ধরেন;
গালে হাত দিয়ে ভাবতে বসে অবিকল সুকান্ত হয়ে যাই,

আমি নীলকণ্ঠ হতে পারিনি 
তবে উলঙ্গ শরীরে ছাই মেখে ধোঁয়া ছাড়ার অভ্যেসটা মজ্জাগত 

আপাতত রাষ্ট্রকে দেখাচ্ছি আমিও ঘুমোতে পারি,
জেগে ওঠার পর ঈশ্বরের খোঁজে পথে নামবো 


বিজন বোস

 সত্যিকারের বিসর্জন


এত রক্ত কেন ?


একটি ছোট্ট শিশুর ছোট্ট প্রশ্ন টি


গেথে গেল অন্তরে ;


সেইথেকে যুদ্ধ শুরু


যে যুদ্ধ রক্ত না ঝরিয়ে


রক্ত ঝরা বন্ধ করে;


যেযুদ্ধ অমানবিকতার বিরুদ্ধে


মানবতার জয় আনে ,


যে যুদ্ধ হিংসার বিরুদ্ধে


অহিংসার জয়--


কিন্তু নেই কোন রক্ত ক্ষয় । 


ঘোমটার নীচে


রাজপুরোহিতের ধর্ম আর


রানীর ভালোবাসা ; 


দুই ক্রুঢ়ের সন্মিলিত শক্তির সঙ্গে


ধর্মভীরু আপামর জনতা--


পথ আগলে বাধার প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়েছিল


ধন্য মাণিক্যের সামনে, নীতিহীন একতা।


ঘটনার ঘনঘটা


ধর্ম ভালবাসা বিশ্বাস 


সত্যকে করলো কালিমালিপ্ত


ধর্মের নামে মায়ের নামে রাজ চন্ভতাইয়ের ভন্ডামী


একশত মহিষ বলি ।


এ কোন মা !


যে মা সন্তানের রক্ত চায়


সে মা; নয়; পিশাচী ,


যে মা সন্তানে সন্তানে বিরোধ বাধায়


সে মা দেবী নয় শয়তানী ।


কিন্তু মা যে রক্ত চাননি


এ সত্য রাজা ছাড়া আর তাতাই একমাত্র বুঝল ।


আর যারা ধর্ম ভালবাসা বিশ্বাসের ধারক ও বাহক


তারা লড়াই করল সত্যের বিরুদ্ধে


নিজেদের জয়ী করার জন্য ।


সে সাধ মেটেনি তাদের


অবশেষে সত্যের কাছে হার মানল ক্রুঢ়তা


হল "বিসর্জন"  ।


কিন্তু মায়ের দরবারে আজও সমানে চলছে


রক্তের হোলি খেলা ,


লক্ষ প্রাণ মায়ের কাছে নোয়ায় মাথা


লোভ ক্রোধ হিংসা র বলি নয়


বলি হয় নিরপরাধ প্রাণী পাঠা।


রক্ত ঝরা সমানে চলছে


আইন-আদালত সরকার সবাই জানে


মাথা উচু মানুষ ও জানে ,


যারা একে পূর্ণ্য বলে মানে না


বরং পাপ বলে মনে করে ---


তবু কারো যেন দায়বদ্ধতা নেই ,


আসলে দেবতার মন্দিরে নয়


মানব মন্দিরে চলছে রক্তের হোলি খেলা


অস্ত্রের ঝনঝনানি ,


হিংসা-দ্বেষ বিদ্বেষ


ধর্ম ও রাজনীতির নামে বিভেদ


সাম্প্রদায়িক জিগির


আদিম হীন প্রবৃত্তির অনুশীলন ।


আর কত রক্ত চাই মা তোমার ?


বন্ধ কর রক্তের হোলি খেলা এবার


প্রেম প্রীতি ভালবাসা ভ্রাতৃত্ব ও ভক্তির জয় গান


উচ্চারিত হোক মনেপ্রাণে সবার ।


উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...