Saturday, October 13, 2018

দীপক দাস

বই এবং বইমেলা  ( ধারাবাহিক)
                   

বই আমরা কেন পড়ব,এ ব্যপারে পৃথিবীর নানা বিখ্যাত লোক নানা অভিমত ব্যক্ত করেছেন ,-যেমন আনাতোল ফ্রাঁস বলেছেন- হায় আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো ,তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী সম্পূর্ণ সৌন্দর্য এক সঙ্গেই  দেখতে পেতুম;তা তো নয়।তাই ফ্রাঁস নিজেকে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছেন ,কিন্তু আমার মনের চোখ একটি কিংবা দুটি নয়, 'বই,পড়ে নানা জ্ঞান বিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি ততই ,এক একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে;
বারট্রান্ড  রাসেল বলেছেন "সংসারে জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার ভিতর ডুব দেওয়া ;বই পড়ে সেই আপন ভুবন সৃষ্টি করতে ।
ওমর খৈয়াম বলেছিলেন-"রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে,তবে বই খানা অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়,
কোরান এর সর্বপ্রথম যে বাণী মহম্মদ শুনতে পেয়েছিলেন তাতে আছে। 'অল্লাম বিল কলমি' আল্লা মানুষকে জ্ঞান দান করেছেন 'কলমের মাধ্যমে ' আর কলমের আশ্রয় তো পুস্তক ।
     বাইবেল শব্দের অর্থ বই ।
রবীন্দ্রনাথ বলেছেন "বিদুৎ কে মানুষ লোহার তারে বাঁধিয়েছে কিন্তু জানিত মানুষ শব্দকে নিঃশব্দে মধ্যে বাঁধিতে পারিবে । কে জানিত সংগীতকে,হৃদয়ের আশাতে জাগ্রত আত্মার আনন্দ ধ্বনি কে আকাশে দৈববাণীকে যে কাগজে মুড়িয়া রাখিবে।কে জানত মানুষ অতীত কে বর্তমানে বন্দী করিবে, অতল স্পর্শ কাল সমুদ্রের উপর একখানি 'বই' দিয়া যাঁকে বাঁধিবে।"
টলস্টয় বলেছেন "জীবনে মাত্র তিনটি জিনিসের প্রয়োজন বই ,বই এবং বই,
দুই আধুনিক কবি গোস্বামী ও সুবোধ সরকার -এক প্রশ্নোত্তর পূর্বে তাঁদের জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল ;বই যদি তাদের কোনো একটি নির্জন দ্বীপে নির্বাসন করা হয় ,তারা সঙ্গে নিয়ে যাবেন ,
জয় গোস্বামী বলেছেন -বুদুদেব বসুর প্রবন্ধ সমগ্র ,শঙ্খ ঘোষের প্রবন্ধ সমগ্র, গীতবিতান আর অতুলপ্রসাদের গীতিগুচ্ছ।
সুবোধ সরকার বলেছেন - 'আমি একটি এই বই নিয়ে যাব,গীতবিতান ।
      এই যে এতগুলো উদাহরণ ব্যবহার করলাম, কেউ কি এইসব উদাহরণ পড়ে বই পড়েন। তা তো নয়।তাহলে বই পড়া শুরু হয় কীভাবে ! কোন বয়সে কি রকম বই পড়ব বা পড়া উচিত তা কে ঠিক করে দেবে এতে বইমেলার ভূমিকা কী?  এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজা যাক।
আমরা ছোট বয়সে বই পড়া শুরু করি বাবা মায়ের অনুপ্রেরণায় বইমেলা।সে সব বই যোগানে সহায়তা করে।শৈশবে শিশুর মনের রূপকথা ,গল্প শুনতে চাই ,তাদের মন জগৎ রূপকথা তাই সেই সময় গল্প বলার পাশাপাশি তাদের হাতে তুলে দিতে হয় রূপকথার জগৎ। সে জগতে হদিশ দিতে পারে উপেন্দ্রকিশোর প্রমুখ লেখকরা।
      শিশুটি বড়ো হতে থাকে -বাবা তার হাতে তুলে দিলেন 'রামের সুমতি'।সে বড় হচ্ছে -তার হাতে এল বিভূতিভূষণের 'পথের পাঁচালি 'অপুর সংসার ' সে পড়বে আর ডাকবে আমি এই তো 'অপু'। দুর্গার জন্য তার চোখ থেকে দু-ফোঁটা জল অজান্তে  বেরিয়ে আসবে । অপরের জন্য কান্না, আনন্দের অভিজ্ঞতা তার জীবনে প্রথম ।তার হাতে আসবে ছোটদের রামায়ণ, মহাভারত । মহাভারতে 'কর্ণ' চরিত্রের জন্য তার বুক বেদনায় ভরে উঠবে। ভীমকে সে ভালবাসবে । অথচ সে কাউকে দেখো কাউকে  চেনে না । সাহিত্য পাঠে সম্ভব  অজানা অচেনা চরিত্রের জন্য -দুঃখ ,কষ্ট ও ভালোবাসার অনুভূতির সঞ্চার ।
ঝমঝম করে জীবনের ট্রেন এসে দাঁড়ায় যৌবনের প্ল্যাটফরমে। আকাশ বাতাস ফুল পাখি চারপাশে মানুষ সব অপরূপ মনে হয়, এর এই মতে তার হাতে এল 'আনন্দমঠ' সে এই বই পড়বে, সে বুঝবে দেশ কি ?কেন দেশকে ভালবাসতে হয়?জীবনের উদ্দেশ্যই যে ভালবাসা আনন্দমঠ পাঠ না করলে তা সম্পূর্ণ জানা সম্ভব নয়। এই বই পড়তে পড়তে সে ও সে ও মনে মনে বলবে -"আমার মা নাই ,বাপ নাই, ভাই নাই -আছে শুধু সুজলা সুফলা এই জন্মভূমি ।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...