Monday, May 30, 2022

স্বাগতম!

সম্পাদকীয়

সিদ্ধান্ত ও সংস্কারের মধ্যে বিশাল পার্থক্য থাকে, থাকে বিশাল সম্পর্কও। দুটোই বিশাল। দুটোই গুরুত্বপূর্ণ। এ সমাজ সংস্কার ও আমাদের সিদ্ধান্তের গুরুত্ব কোনোটাই কম নয়। এর মাঝেই আমাদের বেড়ে উঠা, সামনে চলা। এ যাবৎ যে কোনো প্রজন্মের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহনের নিপুণতা যাদের বেশি, তারাই রেখে গেছে ভালো অংশ আমাদের জন্য। আমরা তবুও চেষ্টা করি, কিছু ভালো করার। এর মাঝেই ভুলত্রুটি, প্রাপ্তি, অতৃপ্তি ও অনুযোগ। তবুও কিছু ভালো হোক, মঙ্গল হোক কিছু। সংখ্যাটিতে যারা লিখেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। আনন্দ ভাগাভাগি করছি। নমস্কার।

জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত


মনন স্রোত | মে | ২০২২

Sunday, May 29, 2022

বিধর্ণা মজুমদার

চিরকুটের আঁইশ

বেদনাগুলি কেমন যেন চিরকুটের মতো
খুললে তা সম্পর্কে জানা যায়, 
না হলে অজানা তথ্য হয়ে থাকে । 
কতো দেখলাম নাট্যমঞ্চ;
কাউর না পাওয়ার বেদনা
কাউর পেয়ে হারানোর বেদনা
কাউর অনেক আছে
কিন্তু ধরে রাখতে পারে না, 
কেউ আবার অল্পকেই আকড়ে ধরে আছে 
অল্পের চেয়ে সমান্যটুকু বাড়তির প্রয়োজন, 
এই রঙ্গশালায় বিশ্বাসের খেলা হয়। 
এদিকে সত্য হাড়ে 
মিথ্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, 
সবই ভাগ্যে লেখা আছে 
দাবি করেন মুনিঋষিরা। 
চিরকুট খুললেই জীবন, 
না খুললে সব ধূসর বর্ণের আভা ।

পায়েল সাহা

লহ প্রণাম

হে বীর, হে মহাপুরুষ
তুমি লহ মোর প্রণাম।
পদার্পণ করিয়াছিলে তুমি ২৫বৈশাখ।  
দিয়াছিল তোমাকে রবীন্দ্রনাথ নাম ।
তুমিও রবির ন্যায়
কিরণ ছড়িয়াছ বারবার
তোমার আলোয়
আলোকিত করিয়াছ এই জগৎ সংসার
কতনা মহিমা 
দেখাইয়াছ চমৎকার।
কখনো কবি, কখনো লেখক, কখনো বা চিত্রকার।
কতনা লিখিয়াছ গল্প উপন্যাস
পাঠকদের মনে জাগাইয়াছ আত্মবিশ্বাস
নিজ হস্তে সৃষ্টি করিয়াছ হাজার কবিতা।
উৎসাহিত হইয়া আজ আমারাও লিখি কবিতা।
সোন্দয সম্ভারে ভরপুর তোমার প্রতিভা
বিশ্বে করিয়াছে নাম।
হে বিশ্বকবি
তুমি লহ মোর শতকোটি প্রণাম।

কৃষ্ণ ধন শীল

রবি

গগন রবি ভাসে নভে পরম পিতা সে, 
চলে গেলে ভাবি আমি আলো দেবে কে!
আরেক রবি আছে প্রাণে সুখে সদা হাসি, 
বাংলা গুরু সে যে মণি তাকে ভালো বাসি। 
রবি বিনা আঁধার বাংলা সে বাঙালির প্রাণে,
আপ্লুত হই তাঁর ছড়াতে মন নাচে তার গানে। 

গীতাঞ্জলির কবি সে যে বিশ্বকবি নাম,
কবি গুরু বলে তাকে চিনে জগৎ ধাম।
লেখনী তাঁর সর্ব পথে যত অলি গলি, 
শুরুর কথায় তাঁর ছড়াতেই আদো কথা বলি। 
রবির কথায় ভানু বিনে রবি আসে মনে, 
আশা কেবল কাটাই জীবন ঘুরে রবির বনে!

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

প্রাণের ঠাকুর

কেমন আছো ঠাকুর?
তোমার নোবেল পাওয়া যায় নি।
পেয়ে ফেলার চেষ্টাও নেই
ক্ষমা করে দিও।
তোমাকে নিয়ে কত কীটপতঙ্গ
যা মনে আসে রটায়
তুমি কি শোনো না?
দেখোনা তাদের নির্লজ্জতা?
কিছু একটা তো বলো,
আমরা যারা তোমাকে
ঘুমের মধ্যে জপ করি,
চোখ খুলে 
গৃহদেবতার সাথে ভক্তি করি
তাদের জন্য একটি হলেও
উত্তর লিখে দাও...

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

প্রাণের ঠাকুর

বৈশাখের সোনালী প্রাতে
নব দিগন্তে দিবাকর উঠেছিল হেসে।
নব আশার ঝলমলে আলোয়
পৃথিবীর বুকে নূতন এসেছিল নেমে।

নূতনের কালে কানে বজে "এসো হে বৈশাখ,,,,,"
মনে ভাবি, বাংলার বুকে আজও সজীব  তিনি।
কত গান, কত ছন্দ,কত গল্প,কত প্রবন্ধ,
বাংলারে করেছেন মহীয়ান।

অন্তরে অন্তরে লুকায়িত যনি
হৃদয়ের আকুল আবেগে যাঁরে 
বিশ্বজগত আঁকড়ে বাঁচে, 
আমি তাঁরেই বিশ্বকবি জানি।

প্রেম,বিরহ,প্রকৃতি,সমাজ কিংবা দ্রোহ
সকল বপ্রে যাঁর অবাধ বিচরণ,
কলমের গোছানো শব্দমালায় যাঁর কুহক
তিনিই প্রাণের মানুষ, বিশ্বকবি রবীঠাকুর।

বছর আসে ঘুরে,আসে বৈশাখ
পঁচিশের সমাগমে বাংলায় জয়ের উল্লাস।
আবাল বৃদ্ধ বনিতা নতজানু যাঁর চরণতলে
বাংলা দীপ্ত সে-ই তোমারই ঔজস্বলে।

গৌরব নাথ

রবিঠাকুরের প্রতি

রেখেছি তোমারে মনে,
দিন-রাত প্রতিটি ক্ষণে;
ব্যাকুল পুলকে দাড়িয়ে আছি দোয়ারে,
দিনমণি উদিলে দেখবো তোমার কবিতারে।

খুলবো 'চিত্রা'...
অনুভূতির পরশে দেখবো কবিতা,
ভালোবাসার স্ফুলিঙ্গের মনোসমাহারে,
পাতার পর্দা মুদলে ভরে মোর চিত্ত নিশীথ কাতরে।

বাক হয় বদ্ধ তোমার শূণ্যস্থানে,
আমার‌ও হাঁটে না লেখনী তোমার গোপনে।
অরুণোদয়ে দেখি তোমার প্রশমের উপস্থিতি,
আজি কোন পানে লুকিয়ে, তোমার কলমের মতি।

বলো তুমি বলো! একবার তুমি বলো অহে রবিঠাকুর,
পারো না'কি বদলাতে আজকের এ দানবী লহর?
তোমার সৃষ্টিতে সজ্জনের মানসখানা হয় তিস্মিত;
অসৎ এর তবু একটু হলেও হয় ব্যাকুল চিত্ত।

অষ্টপ্রহরের অন্তে রজনীর সম্ভার,
শিকার হয় মানুষ স্বেচ্ছায় মাদকতার;
হে রবিঠাকুর! এ'কি তোমার দেওয়ার দৈব পথ?
এ'কি তোমার দেওয়া একান্ত মত?

দাও মতি শীঘ্রই - পরিবর্তনে এ পরিস্থিতি,
জ্বালাও পুনরায় পুরাতন প্রমা-বাতি,
বাড়িয়ে দাও নবযৌবনের গতি,
এই হৃদয় কামনা আজি তোমার প্রতি।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ঝড়ের পরে 


যেন সত্যযুগের কোনো দেবতার এ'যুগে  মর্ত্যে অবতরণ। প্রশস্ত কপাল ঘিরে কেশবহুল বৃদ্ধ রংভার, টিকালো নাক, গভীর বুদ্ধিদীপ্ত   চোখ, ফর্সা,  দীর্ঘদেহী, এমনকি হাত-পায়ের আঙুলগুলিও যেন ঈশ্বর অতিযত্নে তৈরি করেছেন। সত্তরের অধিক বয়সের এক উজ্জ্বল, টানটান ব্যক্তিত্ব। গুরুকুলের প্রধান আচার্য। পরণে সাদা ধুতি, সাদা উত্তরীয়। প্রকৃত অর্থে জ্ঞানী, মিতবাক্ এবং স্পষ্টভাষী। অথচ আশ্রমের এমনকি স্থানীয় মানুষের সমস্যায়ও তিনি সবার পাশে থাকেন। তাই ভয়ে নয়, সবাই ভালোবেসে শ্রদ্ধা করেন মানুষটাকে।

ভোর সাড়ে পাঁচটা।  শয়নকক্ষের জানলার সামনে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে অপলক দৃষ্টি। 

গতকাল প্রায় মধ্যরাতে প্রকৃতি শালীনতাবোধ হারিয়েছিল। ঝোড়ো বাতাস চিরে মুষলধারে বৃষ্টি নাকি মুষলধার বৃষ্টি চিরে মনের গতিতে ঝড়...কী ঘটেছিল তা নিয়ে যেন দ্বন্দ্ব লাগে মনে মনে। সাজানো বাগান,  সুরেলা পথ, জলতরঙ্গের জলাধার, প্রবল তান্ডবের আঘাতে এফোঁড়ওফোঁড়, তছনছ। কোনো গানের সুর, তাল বা কথার কোনো একটি এলোমেলো হলে যেমনটি হয়! প্রধানাচার্য চিন্তামগ্ন। প্রকৃতি আর নারীমনের বিস্তর সাদৃশ্য আছে বৈকি।

তেইশ বছর আগে যে এসে আমন্ত্রণ জানিয়ে গেয়েছিল, "আমার সকল নিয়ে বসে আছি সর্বনাশের আশায়..." ফিরে গিয়েছিল কিছু দিন পর এমনই কোনো ঝড়বাদল মাথায় করে। রেখে গেল এক অমলিন ও সুমধুর ঋতুরঙ্গের গীতিআলেখ্য। সেই থেকে কেবল প্রতীক্ষা আর প্রতীক্ষা। 

গতরাতের প্রকৃতির নাছোড় খামখেয়ালির ছাপ এখনও সর্বত্র সুস্পষ্ট। আকাশ বাতাস এখনও থমথমে। নাহহহ্...আর আসবে না। 'ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়' এ প্রবাদ মাঝে মধ্যে মিথ্যে হলে নিরুপায় হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। ভাবতে ভাবতে নিজের অজান্তেই মাথা নেড়ে  প্রশ্ন করেন, 'ভিন্ন কেউ নাই?'

"কই গো...দোর খোলো!"

মুহূর্ত আগের গুরুগম্ভীর মানুষটির মুখে চকিতে সরল শিশুর মতো বাৎসল্য ফুটে ওঠে। যেন অজান্তে অচেতনে তার মনের মেঘলা আকাশে ফাটল ধরে। আলোকবর্ষ দূরের আলোর তরঙ্গ খেলে সারা অঙ্গে। ছুট্টে গিয়ে নিজেই আশ্রমের দরজা খোলে। দৌড়ে আসে বছর চারেকের ফুটন্ত সূর্যমুখীর কুঁড়ি। ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রিয়তমর কোলে। আবেগে বিহ্বল, আত্মহারা আর্য কণ্ঠে তখন শব্দের মূর্ছনা... 
"আজি এ প্রভাতে রবির কর
কেমনে পশিল প্রাণের 'পর
কেমনে পশিল গুহার আঁধারে 
প্রভাত পাখির গান 
না জানি কেন রে এতদিন পরে 
জাগিয়া উঠিল প্রাণ..."

অনুপম রায়

একটি শ্মশান বিক্রির গল্প

'দুই নাম্বারি কথাডি না কইলে কিতা সমস্যা হইতো কাকা? টাকাডা তো ফিরত দিবার কথা। না দিয়া উড়াল মারলেন কেরে কাকা? মাইয়াডার বিয়ার লাগি টাকাডা জমাইছিলাম আমরা বৌ -জামাই মিল্লা। আম্নেরে দিলাম ভরসা কইরা। হেই ভরসারে বাঁশ বানাইয়া আমার মাথায় মারলেন ক্যান, পরেশ কাকা?'

কথাগুলো বলতে বলতে রঞ্জিতের চোখ ভিজে গেছে। কোনো এক শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের আইনের বশে চিৎকার করে কাঁদতে পারেনি সেদিন। পথেঘাটে চলার সময় হাসপাতাল কিংবা স্কুলের সামনে লেখা থাকে ১০০ মিটারের মধ্যে উচ্চমাত্রায় শব্দ সৃষ্টি  করবেন না। অথচ রঞ্জিত খোলা আকাশের নীচে বটগাছের ছায়ায় দাঁড়িয়েও কাঁদতে পারেনি। কাঁদতে না পারাটা রঞ্জিতের মত ছেলেদের একটা ট্রেডমার্ক যা সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে।

পরেশ কাকা রঞ্জিতের একই গ্রামের লোক। শীর্ণ দেহ,শুকনো চেহারা সমেত বড় বড় চোখ নিয়ে কাকা একটা সাম্রাজ্য পেতেছেন সততার। কেউ পরেশ কাকার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেনি কোনোদিন। মানুষটাকে দেখলেই শ্রদ্ধা হয় সকলের। গ্রামের যত ঝামেলা তা মীমাংসা করেন পরেশ কাকা। অথচ পরেশ কাকার অর্থনৈতিক অবস্থা অনেকটা মরা মাছ ভাঙা নৌকার মত। চলে যাচ্ছে। চলে গেলেই হয়। সেই আশায় রেখেছে জীবনের কাছে। বাড়তি কোনো কিচ্ছু চায়নি কিংবা আবেদন করেনি। ঘরে উনার স্ত্রী আছেন। সন্তান বলতে উনার চাষাবাদের ফসল যা কেটে কেটে বিক্রি করে তারপর পেট চালান। আগেকার সময় অভাবের তাড়নায় সন্তান বিক্রি করে দিত পিতামাতা। সেই ঐতিহ্য বহন করে চলেছেন এখনকার কৃষকরা। তবে উনার স্ত্রী পতিব্রতা। কোনোদিন পরেশ কাকাকে ফেলে জল ছাড়া কিছুই খেতেন না। সংসারের যত সুখ-দুঃখ প্রোডাক্ট হিসেবে আসত সেগুলো ভাগ করে নিতেন দুজন মিলে।

তবে বিগত ছয়মাস ধরে শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে টানাটানি চলছে কাকিমার। কি হয়েছে বুঝতে পারছেন না। দিনে অনেকবার প্রসাব হয়। সবজি কাটার সময় সামান্য কেটে গেলেও সহজে সুস্থ হন না। আমরা সহজেই ভেবে বলে দিতে পারি এসব ডায়াবেটিস রোগীর লক্ষণ। কিন্তু সেসব কাকিমা বোঝেন না। কাকাকেও কিছু বলেন না কখনো। শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে কাকা কিছু বললেই চুপ করিয়ে দেন। কাজের ঘোরে থাকেন। তার মাঝখানে। জপ করেন সংসার নামের বীজমন্ত্র। সংসার ঘোরে কোনো এক বাউল কবি যদি গান গাইতেন তবে এভাবেই গাইতেন

'সংসারেতে যত জ্বালা,বাকি সবই ফুলের মালা
তবুও সেই মায়া আমায় ছাড়েনা।
হাজার মানুষ এক ঘরেতে,ঘর বাঁধিলাম সংসারেতে
সংসার ভোলা মানুষ সংসার চায়না। 

কতখানে মন চলেছে,কত নদী বাঁধ ভেঙেছে
দেশের জল দেশ ছেড়েছে ভাসানে;
সাজে নবীন সাজে বুড়া,কত কালের কত মরা
সবাই মিলে সংসার ছাড়ি শ্মশানে। 
 
সংসারেতে যত জ্বালা,বাকি সব ফুলের মালা
তবুও সেই মায়া আমার ছাড়েনা।
হাজার মানুষ এক ঘরেতে,ঘর বাঁধিলাম সংসারেতে
সংসার ভোলা মানুষ সংসার চায়না। 

আজও ভুলি কাঁদাকাঁদি,মনজমিতে ঘরটা বাঁধি
সেই ঘরেতে সংসার ডাকি আনমনে;
আন্ধারে ডুবে যাবো,প্রভু তোমায় কবে পাবো?
তুমি দিলে সংসার আমায় কোন মনে?

সংসারেতে যত জ্বালা,বাকি সব ফুলের মালা
তবুও সেই মায়া আমার ছাড়েনা
হাজার মানুষ এক ঘরেতে,ঘর বাঁধিলাম সংসারেতে
সংসার ভোলা মানুষ সংসার চায়না। '


একদিন হঠাৎ করেই কাকিমা খুব অসুস্থ হয়ে যান। হাঁটতে লাগলেই ভেঙে যায় তার শরীর। অবস্থার অবনতি দেখে কাকা হাসপাতালে নিয়ে গেলেন টাকাকড়ি ছাড়া। কাকা সম্ভবত জানতেন না এসব কাগজ ছাড়া কাগজও পাওয়া যায়না। হাসপাতালে পৌঁছে টাকার জন্য রঞ্জিতকে খবর দিলেন কাকা। রঞ্জিতকে কাকা সন্তান ভাবেন। রঞ্জিতের মা বাবা নেই। মা বাবার চেহারাও মনে নেই। আয়নায় নিজেকে দেখে মনে করে এটাই তার বাবা-মা'র ফেলে যাওয়া একমাত্র স্মৃতি। পরেশ কাকার কথা রঞ্জিত কখনো অমান্য করেনা। রঞ্জিতের ঘরে তখন ষোলটি হাজার টাকা আছে। ঘরের আরেকটি কোণে একটি মেয়ে আছে বিবাহযোগ্যা। বিবাহের কারণে এই টাকা ঘরের ভেতর আজ অনেকবছর ধরে সুরক্ষিত। সেই টাকা এনে কাকাকে দিলেন। চিকিৎসা হল যতটুকু করা গেল। কাকা বললেন টাকাগুলো ফেরত দিয়ে দেবেন তাড়াতাড়ি।একদিন খুব ভোরে কাকা খুব জোরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন। আমাদের মধ্যে সবার জানাজানি হয়ে গেল কাকিমা সেরে গেছেন। কাকিমার শেষ কাজের জন্য সব ব্যবস্থা হল। বন্দোবস্ত হল শ্মশানের স্থান। বটগাছের পাশে। অনেক পুরোনো গাছ। এই বটগাছ আজ কতবছর ধরে মৃত্যু দেখে যাচ্ছে কেউ জানেনা। তার পাতায় পাতায় হিসাব লেখা আছে যা কেউ পড়তে পারেনা। কাকিমা সবসময় কাকাকে বলতেন বিয়ে করে আমি যেমন তোমার ঘাড়ে চড়েছি, ভূত হয়েও আমি তোমার ঘাড়ে চড়বো। সেই ভূত সম্ভবত কাকিমার নিথর দেহ যা চারজনের কাঁধের উপরে; হরিবোল হরিবোল করে নিয়ে যাচ্ছে শ্মশানে। এই দেহের ভেতরে কোনো প্রাণ নাই, স্পর্শকাতর অনুভব নাই,ডাকাডাকি নাই, কাপড় টেনে শরীর ঢাকার কোনো আকাঙ্খা নাই সেই বেঁচে থাকার মত। এসব ভাবলেই ভেতরটা কেমন হু হু করে ওঠে। মনে হয় দুঃখ সমেত ট্রেন চলে যায় এই প্ল্যাটফর্ম থেকে আরেক প্ল্যাটফর্মে। 

সময় নিয়ে সমস্ত কাজ সম্পূর্ণ হল। কাকা বসে আছেন কাকিমার আগুনের পাশে। সংসারের শেষ উত্তাপটুকু কুড়িয়ে নিচ্ছেন বুকে। দুঃখ কাঁধে করে যে যার যার ঘরে চলে গেলেন।
পরেরদিন সকালে আবার শ্মশানে গেল গ্রামের লোকজন । চারিদিকে কেমন একটা ভারী বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে তখন।সাথে রঞ্জিতও গেল। আজকেও একটি নতুন শরীর পোড়ানো হবে। পোড়ানো হবে তার শরীর নামের চিহ্ন। বটগাছের নীচে রঞ্জিত নীরবতা নিয়ে বসে থাকল। আকাশকে প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পেলনা।পরেশ কাকা নামের মানুষটা চলে গেল সাথে ষোলো হাজার টাকার সাথে আয়োজনমত বিয়ে দেওয়ার স্বপ্নটাও। গ্রামের লোকজন মিলে পরেশ কাকার শেষকৃত্য সম্পূর্ণ করল। দুঃখের মত নিত্য সঙ্গী আর পরেশ কাকার স্মৃতি নিয়ে রঞ্জিত ছাড়া বাকিরা যার যার মত করে রওনা হল। চিতার ধোঁয়া আকাশের বুকে নকশা করে হারিয়ে গেল পরেশ কাকার মত।

'একলা একটি বটগাছ,একটি খোলা আকাশ, দুই দুইটি সদ্যোজাত চিতা, চিতার প্রতি অজস্র অভিযোগ নিয়ে পাশে বসে থাকা রঞ্জিত' দৃশ্যটি স্বয়ং ঈশ্বরের কাছেও বেদনাদায়ক।

Saturday, May 28, 2022

মৌসুমী গোয়ালা

প্রণমি তোমায়

যে সংকীর্ণ পথটা ধরে হাঁটতে শুরু করেছিলাম,
আচমকাই সেটা বাঁক নিল।
অনেকটা পথ অতিক্রমণের পর,
বাঁকের মোড়ে সংকীর্ণতার কোন ছাপ নেই,
হাতছানি শুধু উদারতার এক বিশাল আকাশের।
তার নিচে খানকতক ছোট বড় পাহাড়,
কোনটা ছড়ার, কোনটা ছোটগল্পের,
আবার কোনটা কবিতা, গান, উপন্যাস, নাটকের।
মাঝখানে দেখা যাচ্ছে রবির উজ্জ্বল হাসির স্পট রূপরেখা।

প্রথমে গেলাম ছড়ার পাহাড়ে,
ছোট নদীর হাঁটুজল পেরিয়ে পৌঁছলাম কবিতালোকে।
হঠাৎ গানের সুরে হারিয়ে গেল-
"আমার আপনহারা প্রাণ"।
সোপানের ধাপের শেষোক্তে পেলাম,
উপন্যাসের বৃহৎ গন্ডী।
'চার অধ্যায়' এর শেষে ছন্দপতন,
'রক্তকরবী'র সম্মোহনে বিমোহিত হলাম।
টনক নড়ল অদ্ভুত মায়াবী কন্ঠের জাদুতে
তিনি বললেন আজ তোর 'ছুটি'।

অবাক হলাম! আজানুলম্বিত মহান ব্যক্তিত্বের
সামনে এসে মাথা নুয়ে এলো।
মনে মনে বললাম কবিগুরু তোমায় প্রণাম।

লিটন শব্দকর

দিঘিকথন

এমনিতে আমি সাধারণত কোনও স্বপ্ন দেখিনা,
রোজ রাতে তবু স্বপ্নে একটি দিঘির ছবি আসে
দিঘিতে থৈ থৈ জল, চারধারে উঁচু লোহার গ্রিল
গ্রিলের গা এখন নীল অধিকারবোধের লেপনে
এখানে সহস্র নিজস্বী স্মৃতি গ্যালারি তৈরি করে। 

ঘুমটা গাঢ় হলেই শুনি কারা যেন ঝগড়া করছে
ঝগড়ার কথোপকথন ঠিক এইরকম 
প্রথম ঝগড়ুটে : এই গ্রিল,লোহা,দিঘি আর জল 
                         সব আমার, আমিপক্ষের।

দ্বিতীয় ঝগড়ুটে : এই দিঘির গভীরতা, সৌন্দর্য
                          সব আমার, আমিপক্ষের।

অপরদিকে দিঘি থেকে অনতিদূরে খিদের কুণ্ড
খিদের কুণ্ডগুলি অগণিত, কোনও রেলিং নেই।
জল নেই,বর্ষার জল নিমেষে ফুলকি হয়ে যায়
দলে দলে অনিচ্ছাকৃত ঝাঁপ, অত:পর অমরত্ব, 
এখানের নিজস্বী স্মৃতি গ্যালারি তৈরি করে না।   

সুব্রত রায়

কবি প্রণাম

আজ কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম দিন
আনন্দ উল্লাসে মেতে থাকবে বাঙালীরা সারাদিন। 
উনার রচিত গান বাজবে প্রতি ঘরে ঘরে
শ্রদ্ধা নিবেদন করবে প্রানটি ভরে। 
প্রতিটি বাঙালীর গর্ব উনি
লেখার জগতে উনি হলেন সর্বজ্ঞানী। 
উনি আছেন আমাদের হৃদয়ে
উনার লেখা গল্প, কবিতা ছাপানো হয় আমাদের পাঠ্য বইয়ে। 
উনার লেখা নাটক
আমাদের বাস্তব জীবনের ফটক। 
আমরা উনার দেখানো পথে অগ্রসর হতে চাই
উনার জন্ম দিনে উনাকে এই বার্তা দিতে চাই। 

Thursday, May 26, 2022

চন্দন পাল

কান্ডারীর প্রতি

মনে হয়,
সুখে দুখে সহগমনের নাম ভালবাসা। 
আজীবন সঙ্গ দিয়ে নিলয় শোভাবর্ধনে বিরাজে প্রেম।
প্রকৃতি জাত কে যতনে লালনের নাম স্নেহ ।
আর আরাধ্যকে অনুসরণের নাম পূজা।

প্রেম, ভালবাসা কি ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড, সাময়িক!! 
ভাবছো স্বাধীনতায় বাঁধা, জীবনের স্বাদে বাঁধা !!
না! না! না! 
সব স্বাদে শিল্প নেই, সৌন্দর্য নেই, নেই শিশুর বাসযোগ্য ভূমি।
আসন দখল, ক্ষুধা নিবৃত্তি কৌশল, এক গুহাজীবন।

সবঘরে আলো না জাগান অবধি,
বহুভোগের কৃষ্টি সংস্কৃতি আমাদের বেমানান, 
বেমানান পরদেশে স্পর্ধাযোগ্য এ কলা।
নিজ পা য়ে দাঁড়িয়ে, পরদেশ দিয়েছে ভোগ বিতান ছাড়।
সাথে সঙ্গত ভূগোল বিজ্ঞান।

চর্চার সিঁড়ি ফেলে, 
বেঢপ সিঁড়ি বেয়ে ফল লাভ জৌলুশ হীন, কৃতিত্ব গর্বহীন।
সেদিন দূরে নয়, যখন আঙ্গুল তুলবে ভবিষ্যৎ !

ঐ দেখি, ফিরে আসে বুঝি,
প্রতিবেশী অনুশাসন, প্রশাসন, লজ্জা আভূষণ। 
এ ভূমি বুদ্ধ, বিবেকানন্দ, ঈশ্বরের লালিত ।
এ ভূমি সীতা সাবিত্রী দময়ন্তীর ।
কীর্তিমান আর সতীত্ব অহঙ্কারের ভূমিঅনুসারী কান্ডারী তোমাদের প্রণাম।

          

Monday, May 23, 2022

অনুপম রায়

মেটামরফোসিস 


আমাদের বৃত্তের মত জীবনকে
রোজ আমরা আয়তক্ষেত্র, বর্গক্ষেত্র,রম্বস কিংবা যেকোন এক প্রকারের চতুর্ভুজ বানিয়ে ফেলি।
তারপর আর কি করা যাবে ভেবে 
চোখে ফেলি হতাশার ছাওনি। 
আমরা চেয়েছি, 
আমাদের কথাগুলো কেউ বলুক
কেউ কথাগুলো মন দিয়ে শুনুক 
আর জয়গান করুক আমাদের ব্যাথা বেদনার।
আমরা চেয়েছি,
আমাদের দুঃখ ঘোরে গান হোক
বৃষ্টির দিনে ময়ুরের মত নাচ হোক
চোখের জলে আনমনা সব ছবি হোক।

প্রেম হলে বিরহ,
রাজনীতি হলে মঞ্চ,
উপনিবেশবাদ হলে জাতীয়তাবাদকে
মাথা উঁচু করতে দেখেছি।
এসবের
অনেক দেখেছি রবির আলোয় দিনের বেলায়
নতুন আলোয় জীবন ভেলায়।

প্রিয় রবি,আমাদের বিশ্বাস
'তুমি নিয়মিত একটি কোণে বসে থেকে আয়োজন কর দিনের।'


Saturday, May 14, 2022

অভীককুমার দে

গাছের কাছে


আমরা জল তোলা শিখেছি গাছের কাছে,
অথচ শিকড় ডোবানো শিখতে পারিনি আজীবন।

আমরা ফাঁকিবাজ
মনে করি- 
নিঃশব্দ গাছ কিছুই বোঝে না;

খাবারের জন্য আমরা
বেঁচে থাকি,
মেরে ফেলার জন্য না বোঝার ভান ধরে যে
তাকে লালন করি ঘরের ভেতর।

ঘর, তা-ও নিজের মতোই বাতাসে দোলে
আমরা জীবিত- মৃত শুয়ে থাকি পাশাপাশি।

Thursday, May 12, 2022

চন্দন পাল

জৈষ্ঠ্য

গরমের আঙ্গুল ধরে, ঘেমে ঘেমে, কে এলো গো পিছু,
বোরো আউশ, হিজল চাপা, পিঠে আম কাঁঠাল লিচু। 

ষষ্ঠী পূজা, আদর জামাই, নজরুল জাগে পাড়ায় পাড়ায়।
ঘরদোর সব করো পরিপাটি, মেঘে মেঘে জল ছলকায়।

ভোমামাছি ভনভন, মৌমাছি গুনগুন, বনে বনে জৈষ্ঠ্যমধু
পাট শাকে মাঠ সাজে,  সাজে কুমড়ো, কড়লা কচু।
 
রবি নজরুল দোসর ছবি, বোশেখ জৈষ্ঠ্য  গ্রীষ্ম ছায়।
আষাঢ়ের রথ, চেয়ে আছে পথ, আয় জৈষ্ঠ্য আয়।

কুমার নচিকেতা শীল

The Days

The days comes in a year,
And I got so fear.
Because there is my homework,
And I do not do that work.
I will go in Tokyo, Japan,
And drink the cold can.
My family is so peaceful,
And the days are so beautiful.
In days I can jump, and fight,
And also days have day and night.

বিনয় শীল

সম্বিৎ

বিশ্বজুড়ে ক্ষুধার জ্বালা 
তৃষ্ণার় নাইরে  জল।
তার উপরে ধর্মের নামে 
চলছেরে কি ছল।

পুড়ছি মারছি ভাঙছি যত 
করছি রক্তে স্নান 
ততবেশি শিউরে উঠছেন 
খোদা ভগবান।

উৎকট সব দৃশ্য দেখে 
বিস্ময় চোখে থাকি।
স্নেহ-মায়া-প্রেম-প্রীতি সব 
উবে গেল নাকি?

আজকে শুধু জাগছে প্রাণে 
এই কথাটি যে।
নিজের বিচার নিজে করার 
সময় এসেছে।

শিক্ষক আমি, ধর্ম জ্ঞানী 
কবি হতে পারি।
লেখক কিংবা সমাজসেবক 
শাসন দন্ড ধারি।

ব্যক্তিগত ভাবে আমি 
যা বা যতটুকু।
তার চেয়েও  বড় প্রশ্ন 
মানুষ কতটুকু?

ধর্ম যদি মনুষ্যত্ব 
হরণ করে হায়
সেই ধর্ম দিয়ে আমার 
কিবা আসে যায়।

রুপন সূত্রধর

জন্মদিন

জন্মদিন শুভ জন্মদিন,
পঁচিশে বৈশাখ, রবি কবির,
ঘরে বাইরে পুজে, সাকার ছবি।

জন্মদিন শুভ জন্মদিন
প্রভাতী বন্দনা,তব গানে গানে
বাঁচিয়ে রাখে জীবন মানে।

জন্মদিন শুভ জন্মদিন
বিশ্ববাসীর বিশ্বকবি 
তোমাতে মোরা করি আহরণ।

জন্মদিন শুভ জন্মদিন
আকাশ বাতাস রামধনু মেঘ,
সেজে উঠে, তব সুর মোহনায়।

জন্মদিন শুভ জন্মদিন
তোমা ছোঁয়া, যাদু টানে
নাচ গান ছড়াতে, শিশু মনে।

জন্মদিন শুভ জন্মদিন
ব্রতী মোরা প্রণামী ভাবনায় 
বেঁচে থাকা, গুরু বন্দনায়।
              

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...