Thursday, April 18, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

ছবিতে মনন স্রোতের মডেল শিল্পী সুমন

সম্পাদক প্যানেল

আমাদের জানামতে, ত্রিপুরার বাংলা অনলাইন জগতে আমাদের মতো অনেকেই পোর্টালের প্রথম পৃষ্ঠার প্রথম দিকেই কলাম তৈরী করার প্রয়াস নিচ্ছেন। তাই ত্রিপুরার অনলাইন সাহিত্যের খুব দ্রুত অগ্রগতি আমরা স্বাভাবিকভাবেই কামনা করতে পারি। ত্রিপুরা সরকারের তথ্য সংস্কৃতি ও পর্যটন দপ্তরের সহযোগীতায় আমরা এক বছর আগেই পথচলা শুরু করেছিলো মননস্রোত। মে মাসেই মননস্রোতের প্রথম জন্মদিন। এবার মিনি কলাম, ব্লগ, নাগরিক সাংবাদিকতা প্রভৃতি মূল বিষয়গুলোকে নিয়ে আনার এক কঠিন প্রয়াস নিয়েছে মননস্রোত।

নবীন-প্রবীণ একসঙ্গে করা অন্যদিকে নিউজ, ভিউজ, সাক্ষাৎকার ও প্রতিবেদনেও পিছিয়ে থাকার ইচ্ছে আমাদের নেই। বাকি কথা আরেকদিন। আপাতত সাইটটা ভিজিট করে আপনারাই মূল্যায়ন ও বিচার করুন।

                            জয় হিন্দ

                     শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                           জয় দেবনাথ
                               সম্পাদক
                               মনন স্রোত

ছবিতে মননস্রোতের মডেল শিল্পী সুমন। ক্যামেরায় দ্বীপজ্যোতী চক্রবর্তী

অপাংশু দেবনাথ

জাহাজ

জল থেকে উঠে আসে সরল জাহাজ
গায়ে তার লেগে আছে লবণ ভ্রমণ
জল ও লবণ দুইই তরল বলেই
তীরে এসে দিব্যি হাঁটে বালির উপর

আমাকে মাড়িয়ে যায় সোনালি অসুখ
জাহাজ হাঁটে প্রভু এই মনোভিড়ে
কুশ ভরে জল তুলি সবই লবণ
নুনময় এই সময় বালির জীবন
রোদে পোড়ে শীতে কাঁপে সকাল বিকেল
ঢেউ ভেঙে উঠে আসে জটিল প্রলয়।

মিঠুন দেবনাথ

ছায়ার খোঁজে

বৈশাখের তপ্ত দুপুরে চলছি হয়ে ভবঘুরে
আমি পথ হারা এক ক্লান্ত পথিক ,
ওদের ছিল খুব তাড়া , সাথী ছিল যারা
বলে গেছে ধিক্ তোকে ধিক্ !
সরে গেছে রস , হৃদ পুরে ধ্বস
তবুও মেটায়নি নদী সাগরের ধার
বার বার মাথা নত সূর্যটা অবনত
তবুও দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চন পাহাড় !
প্রতিবার ভাবি এই তো পেয়ে গেছি চাবি ,
ক্লান্তিরা সব এবার পেয়ে যাবে ছুটি !
ঠিকঠাক রাতে টেরাকাটা হাতে
চেপে ধরে মোর শ্বাসনালী টুটি !
তাই দুপুরের তেজে চামড়াটা ভেজে ,
হাঁটা-হাঁটি ড্রিমলাইট খোঁজ ,
কাহিনির জোরে গল্পের মোড়ে
একই ছবি আঁকি রোজ রোজ !
       

কল্যাণব্রত বসাক

দ্বান্দ্রিক সতী (৩য় পর্ব)

সেই  হার্ডসেন্টারে হৃদয়ের শুষ্কতা জনিত কঠিন রোগের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে আরোগ্য জাতের আশায় মনোরাজ্যের সম্রাজ্ঞীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সমীরণ সরকার রুমিকে ।
 
সমীরণ সাব্রুম সরকারী মহাবিদ্যালয়ের দর্শন শাস্ত্রে অনার্স নিয়ে পড়ছে থার্ড ইয়ারে ।  তার অসাধারণ বুদ্ধি দীপ্ত চেহারা । প্রায় ছয় ফিট লম্বা, চওড়া বুক , মেজহীন অপূর্ব দেহ ।  ব্যাডমিন্টন , ভলিবল, টেবিল টেনিস, ক্রিকেট সব খেলাতেই দারুণ দক্ষ। চলনে বলনে, আচার ব্যবহারে এই মনোহর  কত ঘুম তাড়িয়েছে।

ক্রীড়াবিদরা প্রেমকে খেলা হিসেবে যদি গদ্য করেন , তবে সমীরণ সেই খেলাতেও ওস্তাদ । না হলে কেন্দ্রীয় সরকারে এক ঝানু অফিসারের অহংকারী ধাচের মেয়ে নিয়ন্ত্রণের বেড়াজাল   ছিন্ন করে  সমুর ডে বাইট ভলিবল খেলা দেখাতে রাত এগারোটা পর্যন্ত মাঠে থাকলেও কোন যুক্তিতে,আর আগরতলা রাজ্য ভিত্তিক টেবিল টেনিস প্রতিযোগিতায় সমু অংশগ্রহন করছে শুনে মাসীর বাড়ি বেড়াতে যাওয়ার নাম দিয়ে রুমি বান্ধবীর বাড়িতে উঠল কেন ?

সমু রুমির প্রেম কাহিনী বন্ধুমহল এবং অভিভাবক মহল পর্যন্ত জেনেছেন । টাউন হলে পাশাপাশি বসে মঞ্চাভিনয় দেখা , ভোরে রাস্তায় হাঁটা,বিকেলে নদীর ধারে বসে গল্প করা অনেকেরই চোখে পড়েছে । মাঝে মাঝে ঘনিষ্ঠতা বাড়াবাড়ির পর্যায়ে গিয়েগিয়েও দাঁড়াতো। এইসব দৃশ্য দেখে শুনে কোন কোন বয়স্ক লোক ঈর্ষার চোখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। বাড়ি গিয়ে বিগত যৌবনা স্ত্রীর মুখের দিকে চেয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন এই ভেবে যে " আমাদের সময় কি আর এইভাবে চলতে পারতাম।"

রুমির বাবাও কথাটা শুনেছেন। অবাক হয়েছেন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে ।  রুমি যে এমন টা করতে পারেন , তিনি কখনো ভাবেন নি। বুদ্ধিমতি রুমি সাত- পাঁচ করে ওর পছন্দ মতো বুঝিয়ে ফেলেছে। অনেক ফাঁকি দিয়েছে রুমি , ধুলো দিয়েছে অনেক বান্ধবীদের চোখে । কেবল ঠকাতে পারেনি নিন্দুকদের । ওরা সমু-রুমির প্রেম ঘটিত নিন্দা জল রুমির গর্ভপাত পর্যন্ত গড়িয়ে নিয়েছে।

ওরা বিশ্ব নিন্দুক, ওরা তিলকে তাল করতে পারে ।আমরা অতি সাধারণ । আমাদের চোখ আছে দেখবো। কান আছে শুনবো।  আধ বাড়ি কথা বলার দরকারটাই বা কি ?

মুরলি মোহন সেন । ভদ্রলোকের দারুণ চৌকস্ বুদ্ধি । নিরালে নিঃশব্দে ছুটি কাটাতে বাড়ি যাওয়ার  অছিলায় বদলির কাগজ নিয়ে নেয় । ছুটির পর জয়েন করে একেবারে ত্রিপুরার বাইরে। স্বাভাবিক ভাবেও রুমিকে যেতে হয় , তার পরিবারের সঙ্গে । নতুন জায়গায় খাপ খাওয়াতে , পরিবেশ স্টাডি করতে , পড়াশুনায় মন বসাতে ।

Wednesday, April 17, 2019

সোমেন চক্রবর্তী

ইতি গজ
         

জানি দিন বদলেছে,

বাটখারা ঝুঁকে থাকবে না পক্ষপাতিত্বের চাপে
এতটা ধর্মাবতারও নই

আমারও একান্ত আপন আছে
চক্রব্যূহে যারা রক্তাক্ত আজ,
তাদের আগলে ধরি বুকে

অনাত্মীয় নয় যারা
তারাই আজ শক্তিশালী প্রতিপক্ষ
একগাল উষ্ণ হাসি হেসে ছুঁড়ে দিতে পারে ব্রহ্মাস্ত্র

আমি চাপড়ের বদলে চাপড় দিতে পারি না, তাই
ফেরি করি অশ্বত্থামার মৃত্যুর খবর

রাজীব মজুমদার

সুবোধ, আর পালাস'নে

আর কতো পালাবি সুবোধ,
অবুঝের মতো পালাচ্ছিস শুধু,
লোকের কথায় !
তুই জানিস না, একশ এক'টা স্টেশন অতিক্রমের
পর বিশ্রামের ভানে পরিত্যক্ত ভাগাড়ে
যখন তুই রাজকীয় পাঠে ডুবে থাকিস,
ঘুমের ঘোরে তোর বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুল
অবিরাম ইশারা দিয়ে যায়।
এ সত্যি সত্যি - শূন্যের উপর দুনিয়াদারি,
শূন্য।
ঠিক। তুই ভাবছিস, আসলেই সে শূন্য।
তুই দিনকে রাত, রাতকে দিন করতে যাওয়ার
আগে বুঝে নে - এ আসলে মৃতদের তদারকি।
ওরা কি করছে! কেন হাসছে! বেঁচে আছে, তবুও মারছে!
শুধু ভাব্, কেন তোকে বাঁচতে দেবে না।
ওরা বাঁচতে জানে না, বাঁচাতে জানে না।
তুই পালিয়ে যাস'নে সুবোধ।
বুড়ো আঙুল আজ দ্বিমূল হয়ে ছাচে বসবে, 
তার ইশারা আজ বড় প্রয়োজন -
প্রতিটি গ্রাম, প্রতিটি শহর, প্রতিটি ভোটবাক্সে।

রীণা তালুকদার

আবার যদি মিছিল আসে

আবার যদি বর্ণমালার মিছিল আসে
ভাগীরথীর বুকের পাড়ে
প্রীতিলতাকে পাঠাবো কম্পিত মিছিলে
তার পকেটে গোপনে দিয়ে দিবো সায়ানাইড
খুব করে উপদেশ দিবো
মাথা নত না করতে একদম
বলে দিবো মনে রাখবে বাংলা মায়ের গর্ভে
সবি বিপ্লবী যোদ্ধা জন্মে
মায়ের সম্ভ্রম রক্ষা করে এগিয়ে যাবে
ছিনিয়ে আনবে অস্তরাগের আগুন থেকে
টকটকে লাল সূর্যটাকে বুক পকেটে
আসাদের ছেঁড়া শার্ট সেলাই করেছি
বর্ণমালা দিয়ে
বসন্তের কৃষ্ণচুড়ার কাছ থেকে
সার্দা শার্টের রক্ত এনেছি সাক্ষ্য দিতে
শুনেছি সেদিনও নাকি গর্জে ওঠেছে উর্দুর ধ্বনি
রফিক, শফিক, সালাম, বরকতকে পাঠিয়েছি
মিছিলে মিছিলে অগ্নিকণা ছড়িয়ে দিতে
কম্পিত শহরের ব্যস্ত পথে
রাজপথে ছুটলাম সেদিন আমিও
নিতে সন্তানের জীবনের দায়
আমার সন্তান শহীদ নূর মোহাম্মদ শেখ
সিপাহী মোহাম্মদ হামিদুর
মোহাম্মদ রুহুল আমিন সন্তান আমার
ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর
আমিইতো জননী সন্তান আমার
সিপাহী মোস্তফা কামাল
আর মোহাম্মদ হামিদুর
শ্রেষ্ঠ সন্তানের গর্বিত মা আমি
আমি কী নত হই কারফিউর গুলিতে
আমার সন্তান মুন্সি আব্দুর রউফ
মতিউর, সাত বীরশ্রেষ্ঠ
আমিইতো জন্মভূমি
আমিইতো বাংলাদেশ
তবু আমার জন্মলগ্নে উচ্চারিত বর্ণের
বিন্দুমাত্র চাই না ক্ষতি হোক
সে যেই হোক কোনো বিশ্বজয়ী বীর
নস্যি আমার কাছে
আমার আছে বুকে আঁকা
লাল সবুজের উড্ডীন পতাকা
বিশ্ব ঐতিহ্যের ইতিহাসে সাতই মার্চ
আমার আছে একাত্তর
আছে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ
আমার সন্তানইতো শেখ মুজিবুর।

বিনয় শীল

অসহনীয়
                     
                               

ফুল ভালোবাসি গভীর ভাবে।
কিন্তু কে জানতো ,
ধর্ম দস্যুরা সেই প্রসূন অঙ্গে-
ধর্মের স্টিকার লাগিয়ে যাবে !!
এখন ফুলের মুখে
চোখ রাখতে ভয় হয়,
না জানি কোন্ ধর্মদস্যু
আড়ালে-আবডালে থেকে
আমাকে তর্জনী তীরে চিহ্নিত করে !!

রঙ্ ভালোবাসি নির্বিচারে ।
একাধিক রঙের প্রতি-
দুর্বলতা ভীষণ ভাবে-
অনুভব করি।
কোনো একটি বিশেষ রঙ্
আমার সমগ্র সত্ত্বাকে রঙীন করে তোলে।
কিন্তু , এখন অনুভব আলোড়িত-
প্রিয় রঙকে মননে আনতেও
শরীর শিউরে উঠে।
রঙেরা এখন বিশ্বের সমস্ত
রাজনৈতিক দৈত্য-দাণবদের দখলে।
আমার প্রিয় রঙ্ ?
চুপ্ করো, কে কোথায় শ্যানদৃষ্টিতে-
আমার নাম শত্রু তালিকায়
তুলে নিচ্ছে।
আমার জীবন দীপে 'ফু' দিবে বলে।

রাজীব দত্ত

প্রিয়তমার পাশে রেখে.
    

সেদিন ঘুম ঝড়া রাত দুপুরে,
কেন হৃদয়ে আবার আঘাত এনেছিস,
পুরানো যন্ত্রনার আঁচরে?
আমিতো তখন ভীষণই ব্যস্ত,
একান্তেই আবদ্ধ ছিলাম-
প্রিয়তমার শীতল-স্নিগ্ধ বক্ষে।

জানিস তো,আর হবে না,
তোর সাথে দেখা-
কোনো স্কুল-কলেজের মোরে,
কিংবা বাংলার টিউশনে?

সহসা আজ পড়ে না মনে,
মৃত পাথরের আড্ডায় হারিয়েছি তোকে,
যন্ত্রনায় ভেজা মলিন স্মৃতিগুলি পেড়িয়ে,
তোর নষ্ট প্রেমের সাঁকো বেয়ে-
কবে যে এসেছি ফিরে,
তা আজ আর মনেও পড়ে না।

জীবন সায়হ্নে যদি ভীড়ে তরী,
তোর ঘাটে।
করবো দেখা,একা নয়-
তুই-আমি-প্রিয়তমা মুখোমুখি।

উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

জীবনের পথ চলায় আছে কি কিছু অদৃশ্য সংকেত ? অথবা ঘটনার আনাচে-কানাচে তেমন কিছু ? হয়তো বা আছে ।

সেই সংকেতগুলো যেন ছোঁয়া যায় না কিছুতেই।কিন্তু জলকেলি করে ওরা ! আবার ছুঁতে গেলে ডুব দেয় ! মিলিয়ে যায় গভীরে !

মাছরাঙাটি তবুও গাছের ডালে বসে চোখ রাখে। ফের যদি মিলে সংকেত !

আশা-নিরাশার মাঝে সংকেতগুলোর ছোটাছুটি। ওরা বাসা বাধেঁ না। কারো পক্ষ নেয় না।অথচ আপামর সমস্যা নিয়েই ওদের সব ইঙ্গিত।তবুও কোনো সমস্যায় ওরা জড়িয়ে থাকে না।
আবার সমস্যার স্রোতে ওরা নৌকো ভাসায়।পাল তোলে।কিন্তু পথ চলে হাওয়ায় ভেসে নয়।পালে হাওয়া লাগিয়ে, তাকে বাগে এনে।

সেই পথে দৃশ্যমান - এ নদী, এ আকাশ, এ স্রোত, এ পাল তোলা স্বপ্নের ডিঙি - সবেতেই যেন সংকেত অধীশ্বর ! এ যেন স্বপ্ন আর সংকেতের হাতে হাত ধরে পথ চলা ! ঋতুরঙে ওদের এই মিতালীর যেন নানা রঙ, নানা রূপ ! কথা বলে ওরা !

আকাশে মেঘ জমে।সেই আকাশে কৃষকের চোখ।কী সংকেত মেঘের ? কোন মেঘ ? সে কি শ্রাবণের দড়ি ছিঁড়ে এলো ? না কি ভাদ্রের উষ্ণতায় ভেসে আসা ? কোন ঋতুরঙে ঝরবে ওরা বৃষ্টি হয়ে ? কৃষকের চোখ-মন আকাশে বাতাসে তখন স্বপ্ন হয়ে ভাসে।

স্বপ্ন আছে। সংকেতও আছে। স্বপ্ন আর সংকেতের সুতোয় বাধাঁ এ জীবন।ওরা কখনো ঝরে পড়ে। কখনো ছুঁয়ে যায়।তবুও স্বপ্নটাই যেন কাছে ঘেঁষে বেশি।হোক সে জটিল। অথবা অধরা।জীবন থেকে তো হারিয়ে যায় না।জীবনের ডালপালায় স্বপ্নগুলোই বারবার সবুজ হয়ে ফোটে। ডালপালা শুকিয়ে গেলে পাতা ঝরে। কিন্তু সেই ঝরা পাতায় জীবনের কথা লেখা হয়ে যায়।জীবন, ইতিহাস হয়ে গেলেও বেঁচে থাকে।জীবন তার জীবনের মানে খুঁজে পায় তখন ! কী লাভ ? - এ প্রশ্ন না করে, জীবন বলে - কী ক্ষতি ? তাইতো।

জীবনটা যে শুধুই-  ঘটমান নয়। অঘটিত আরো কিছু। এ জীবন - নয় শুধু 'এ সময়'। নয় শুধুই আজিকার।

আম্রপালী দে

প্রিয় জৈথাং ,

তোমাকে ভালোবেসেই তো হলুদ গোলাপের স্বপ্ন কিনি , ঘুমের দেশ ফেরি করে পাহাড়ি কমলালেবুর গন্ধ ।
রক্তপাত ভুলে মৃত্যুর হাসি আমার সর্বাঙ্গে । জুম ক্ষেতে ঝর্নার মতো গড়ানো জীবনে শুধুই ছায়া । আহা ! কি সুন্দর বাস্তব , জলীয় জীবনধারা ।
ব্লু বাটারফ্লাই কাঁধে নিয়ে আসবো তোমার জন্য , বিপ্লব শুরু হবে , কতো রঙ , কতো আগুন । তারপর একদিন সবকিছু কয়লা হয়ে যাবে ।
আজ ঝড়ে যে ঘর ভাঙবে তাকে আদর করার দায় নেবে ? ভাঙাটিন আর রাঘব দেওয়ালের ধাক্কা খেয়ে থেঁতলে পরা মানুষগুলোকে পোষ মানাবে ?

জৈথাং , তুমি শুধু একটি বারের জন্য মৈনাক হবে ?

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

অনির্বাণ

আমি একলা পথটির নাম
রেখেছি কমলিনী
যদিও এপথে কোন পদ্মপুকুর নেই
পথটি অহরহ ইশারায় ডাকে
তার অযুত ঐশ্বর্য বুকে,
কোন বিরহীনির নাম লেখা নেই
তবু এক চোখের জলের গাথা
কেমন করে যেন আবছা আলোয় স্নান করে ডাকে ডাকে..

এখানে ভ্রমরেরা ফুলে ফুলে
বিষ ঢেলে যায়
ওপথে যেওনা কমলিনী
ওখানে লেখা আছে বিরহের গান
বিরহ মধুর নয়।
বিরহ একটি পাখির নাম
নীড়ের খোঁজে যে চোখ গেল
চোখ গেল বলে কাঁদে
বিরহ সেই পাখিটার নাম
যশোদা গো কৃষ্ণ কইগো
বিরহ সেই চাতক পাখির আকুল কান্নার নাম।
এপথে শুধু বিরহের আবছায়া
কুয়াশা
ওপথে যেওনা কমলিনী।

সুনীতি দেবনাথ

মাটি আর নারী

সেদিন সেই যাযাবরী জীবনে শীতল সাইবেরিয়ায়
পশুপালক তোমাদের সাথে আমিও তো ছিলাম
প্রান্তরের পর প্রান্তরে সবুজের সে কী তরঙ্গ উদ্দাম!
সেদিনও বরফ ঠাণ্ডায় যখন আমি কুঁকড়ে যেতাম,
তোমাদের সন্তানগুলিকে বুকে চেপে শেষ উষ্ণতা
বিন্দু বিন্দু ওদের দেহে সঞ্চালন করে দিতে হবে
সেই সত্য সবার উপরে জেনেছি মেনেছি।
আর ইউরাল পর্বতের অরণ্য থেকে
বুনো ঘোড়াকে বশ মানিয়ে এপার ওপার
পিঙ্গল চুল উড়িয়ে টগবগ টগবগ ছুটতে তোমরা।
এই করে একদিন সব ঘাস শেষ হতো
পরম্পরায় সন্তান সন্ততি বেড়ে পরিণাম খাদ্যাভাব
নতুন এলাকায় দিতে হতো পাড়ি পশুর পাল
যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্র শিশু নারী সহ ,
নিঃসন্দেহে জানি যেসব নারীর দেহে জোয়ারের খেলা নেই
ভাঁটার টানে কুঁজো হয়ে প্রতীক্ষার শেষ দিন গুনে যেতো
বর্জিত হতো তারা খাদ্যহীন তাঁবুহীন সাথীহীন সে প্রান্তরে।
সেই সব নারী পৃথিবীর অনাদৃতা অবাঞ্ছিতা কন্যা মাত্র।
সেই আদিম পৃথিবীর নাবাল মৃত্তিকায় কত বৃদ্ধা জননীর দেহ
ইউরেশীয় চিল শকুন বুনো ধূর্ত শেয়ালেরা ছিঁড়েখুঁড়ে আহ্লাদে খেয়েছে,
হাড়গোড় মিশে গেছে মৃত্তিকার স্তরে, 
এসব করুণ গাথা ভূতাত্ত্বিক নৃতাত্ত্বিকের জ্ঞানের বিষয়।
গোষ্ঠীবদ্ধ জনসংখ্যা যখন লাগামছাড়া
অশ্বপৃষ্ঠে ছোট ছোট দলে পুরুষেরা ছুটলো
ইউরোপ আর মধ্যপ্রাচ্য বিজয়ে, তখন তাদের দলে
পরিত্যক্ত আমি নারী, বিজয় এনে দেবে

নবীনা নারীদের—
যোদ্ধা পুরুষের যুদ্ধক্ষেত্রে নারী বিবর্জিতা।
আর্যদের পূর্বপুরুষ এরা, এদেরই একটি শাখা
কালক্রমে পৌঁছে গিয়েছিল ইরান মরুর বুকে
রুক্ষ কঠোর জীবনে ওরা শক্ত পেশীর শরীরে
যুদ্ধ করে করে অপরিমেয় শক্তির আধার হলো।
ইঙ্গিতে ওদের ডাকছিল সুজলা সুফলা ভারতবর্ষ,
তাই অশ্বশক্তি অস্ত্রশক্তিতে বলীয়ান ওরা পৌঁছালো
গিরিপথ পেরিয়ে এদেশের অমল মধুর মাটিতে।
এবারও তাদের সাথে আমি নারী ঠাঁই পাইনি ইতিহাস বলে।
ভূস্বর্গ কাশ্মীর দখল করে সিন্ধু অববাহিকায়
ইন্দোইরানীয় পুরুষ তোমরা উজ্জ্বল সূর্যালোকের মত
তেজোদীপ্ত আবির্ভাবে ক্ষমতার বলে বলীয়ান
পঞ্চ নদীর দেশ দখল করলে, দখল করলে আমাকে,
আমি অনার্য নারী সেদিন আর্য পুরুষের সম্পদ। 
এভাবে ঠিক এমনি করে পুরুষ তুমি আমার সমগ্র সত্তাকে
একবার নয় বারবার দখল করেছো, সম্পদ বানিয়েছো।
যোদ্ধা পুরুষ অমিত শক্তিশালী মাটির দখল
নেবার সাথে সাথে ভূমিকন্যাদের দখল করেছো।
এ তোমার যুগ যুগের সঞ্চিত অপরাধ আর
ভূমিকন্যাদের অশ্রুসিক্ত জীবনের অপমান।
আমি আর আমার মত নারীরা যেন বোবা পশু,
পশুশিকারী মদমত্ত পুরুষ বন্য পশুর মতই
আমার দখলদারী চালিয়ে গেলে চিরটা কাল।
তোমাদের অশ্বখুরে উত্থিত ধুলোয় ঢেকে গেল
আমার চোখের জলের স্বপ্নমাখা উত্তাল তরঙ্গ।
বিজয়ী আর্য সারাটি উত্তর ভারত দখল নিয়ে
এলো জলজঙ্গলের দেশ রূপবতী বাংলায়।
আবারো ভূমিপুত্র নিহত বিতাড়িত হলো আর
কোমলকান্তা লাবনীমাখা ভূমিকন্যা অপহৃতা লাঞ্ছিতা।
শ্যামলী বঙ্গকন্যার হাতে লোহার শিকল আর
পুরুষ দেহের রক্ত টিকায় ব্যক্তি পুরুষের চিহ্নিত সম্পত্তি হলো নারী।
আজো এতদিনের এপারে এসে আমি
নোয়া সিঁদুরের আনুগত্যের বন্ধন মুক্ত নারী হলাম না।
মাটি আর নারী বুঝি পুরুষের ঐতিহাসিক শাশ্বত সম্পদ!

Tuesday, April 16, 2019

সোনালী রায় বাগচী

হেমন্তের বসন্ত

"এমন দিনে তারে বলা যায়"...
সত্যিই বলা যায় কি !!
বলা যায় , কতটা নীল বুকে ছুঁইয়ে দিয়েছিলে বলে আকাশ হয়েছিলাম আমি ?
বলা যায় , কতটা অভিমান জমলে
বর্ষার বাঁধভাঙা নদীর বুকেও
চর জেগে ওঠে ?
হয়তো বলা যায় , হয়তো বা... না ।
যেদিন অজস্র নুড়ি পাথর সরিয়ে
ফল্গুধারার পাঁজরে হাত রেখেছিলে তুমি,
আচমকা বিস্ফোরণে সেদিন আর একটা নতুন পৃথিবীর জন্ম হয়েছিল ।
সে পৃথিবীর বিধাত্রী ছিলাম আমি ।
অহঙ্কার সাজাতে সাজাতে
বেপরোয়া হাতে হয়তো ছুঁয়ে দিয়েছিলাম
কোনো গোপন মন খারাপের
মলিন অপরাহ্নকে ।
এখন আমার নতুন পৃথিবী জুড়ে
বসন্ত দিনেও কেবলই ধূসর রঙের মাতামাতি ।
অজস্র কথার ভিড়ে বড় বিবর্ণ আজ
না বলা কথারা ।
গীতবিতানের পাতায় মুড়ে রাখা
কিছু রক্ত পলাশ আজও অপেক্ষায়...
যদি ঘোর কাটে এই রাত্রির।

সঞ্জীব দে

অন্ধকার নেমে এলে

অন্ধকার নেমে এলে
আলোক সম্রাটও আড়ালে চলে যায়
পৃথিবী হয়ে যায় মূর্খ জল্লাদের বিচরণ ভূমি।
মেঘ ডাকে, ঝিলিক দেয় , ঝর তুফানে তোলপার
ভিতর বাহির - জীব প্রকৃতি!

কলিঙ্গ যুদ্ধ শেষে অশোক অস্র ছেড়ে
প্রেম ফুল রূপন করেছিলেন ---ঠিকই --
রক্তের দাগ, দীর্ঘশ্বাস যুগের কাধে ঝুলছে আজো !

এখন অশ্রু ঝরেনা ঐ পথে, রক্ত ঝরে !
বুকের গহীনে বৈশাখের তান্ডব নেই --
মৌনতায় ঢেকে আছে সমস্ত পথ!

অভীক কুমার দে

অধিকার

দেশের জন্যে,
মতামত জানাবার দিন এলে
মনের ভেতর এক ভিন্ন অনুভূতি,
বিগত দিনের উপলব্ধি সব জ্যান্ত হলে
একটি নির্ণায়ক পথে পাঁচটি বছর
চেতনায় রেলি শো।

অন্তঃ নিষেকের পর
জেগে ওঠো নাগরিক,
চোখে চোখ রেখে বলো--
অধিকার আছে।

একটি দিন কোনও অন্য কাজ নয়
লালসা নয়
ভয় নয়,
পাঁচের জন্য রাজার বিচার
রাজার জন্য দশের,
কাজে কাজেই লড়াই- জনমত- আদেশ হবে
দেশের জন্য ভোটাদেশ।

মন্দিরা লস্কর

গাইড

জং ধরা ফলক
উদবাস্তু দিক চিহ্ন
একজন পর্যটক কে উদাসীন করতে যথেষ্ট।
সভ‍্যতার প্রাচীর ঘেরা আমি অতি সাধারণ এক ইমারত,
যেখানে ঘরগুলো ঠিক ঘর হয়ে উঠেনি
বহুমাত্রিক অসম্পূর্ণতায়।

গাইড আমাকে প্রতিদিন নতুন নতুন গল্পে সাজায়,
খুলে দেয় উত্তরের, দক্ষিণের জানালা
আকর্ষনের উদ্দেশ‍্যে একটা করিডোর রেখে যায় প্রতি সাক্ষাতে‌,
যেখান থেকে যাপনের দূরত্ব অসুস্হ কর্ণিয়ার মত,
ভরশূন‍্য শহুরে মানদন্ড।

আমি উবে যাই,
অবিরাম ধূমপায়ীর ঠোঁটে
উড়তে থাকি ধোয়ার কুন্ডলীতে।
গাইড জানে
ভ্রমণকারীরা চিরকাল আসক্ত।

দুলাল চক্রবর্তী

অপেক্ষায়

গোধূলী বেলায়
গাঁয়ের মেঠো পথ ধরে
চলিয়াছে পল্লী বধূ
ধবলীরে নিয়ে,
গৃহে ফিরিবার পালা।

দুরন্ত বায়ু যেন বয়ে নিয়ে যায়
পালতোলা নৌকা,
ক্ষুব্ধ তটিনীর বুকে,
তর তর করে ভেসে যায়
বিরাম বিহীন!

অজানা কোন স্থান থেকে
ফিরিতেছে পাখীরা
আপন কুলায়।
কোথাও কী ডাকিতেছে
কাকদল দলবদ্ধভাবে।
ক্রমশ অন্ধকার নামিতেছে
পৃথিবীর বুকে।

চাঁদের ক্ষীণ আলো প্রকাশিছে
আকাশের গায়।
শুধু ফিরে এলোনা একজন
আপন প্রিয়ার কুলায়।
তারি অপেক্ষায় আজো আছি বসে,
আসার আশায়।

সংগীতা শীল

মানবিকতা

পথের পাশে কিছু জীবন্ত লাশ
ছেঁড়া চাঁদর মুড়ে,
যন্ত্রনায় ছটফট করে
গড়াগড়ি খায় মাটিতে পড়ে।

পরনে জোড়া তালির ছেড়া কাপড়
পায়ে নেই জুতো;
দুটো পয়সা দিয়ে জোটে না ভাত দুমুঠো।

চারিদিকে কান্নার একটা খরস্রোতা ঢেউ,
ডানা ঝাপটে ঝাপটে মৃত্যুর কূলে
ঢলতে চলেছে জীবন প্রজাপতি!

অস্তিত্বের ক্যাম্পাসজুড়ে,
যুদ্ধ চলে অক্সিজেনের সাথে
সন্ধিক্ষণে প্রত্যাশায় কাতর তাদের জীবন।

মানবিতার অভাবে আজ নিঃস্ব হৃদয়!

সুস্মিতা রায়

শব্দেরা

শব্দদের কোনো শর্ত থাকে না
ওরা নগ্ন নয়,
জং ধরা কিছু এপাশ ওপাশ
শব্দদের শূলি চড়ায় !
দমবন্ধ করা বিভীষিকায় যতবার স্পষ্ট হয়
নূসরতদের রাঙা চরণ,
ততবার অশ্লীলতার নেশায় বুঁদ হয়ে
কখনো সমবেদনার বোঝা নিয়ে 
পঙ্গু হয়ে উঠে শব্দেরা ! 
আসলে শব্দদের কোনো শর্ত নেই
নগ্নতা ওদের স্বভাববিরুদ্ধ,
না ছুঁয়েও আদর করতে পারার অদম্য দক্ষতায়
ওরা স্বাধীন আজও !

সামিন শুভ

ফেরারি মন
                 


ফিরতে আমি চাইরে খুব
ফেরা কি সহজ এত;
যতই ভাবি ফিরবো এবার
যাই হারিয়ে ততো।


তোর চিন্তায় আগুন
বুকে, তীব্র দাবানল,
সুযোগ পেয়েও যায়না ফেরা
আজ বড়ই অচল।


এক মূহুর্ত্বেই কাছে তুই
মূহুর্ত্বেই খুব দূর,
ভালোবাসার হয়না সকালে
আটকে আছে ভোর।


চোখের কোন ক্ষত-বিক্ষত
 হৃদয় রাঙা শ্মশান,
বোক ভেঙে দু'ভাগ
 কি যে নিষ্ঠুরতার বাণ।


কি আছে আর আজ!
যে ফিরবো তোর পাশে,
হয়তো একদিন পাবি ফেরা!
বিভৎস্য আমার লাশে ।

সুব্রত দেববর্মা

সবুজরথ ও বেনিয়া


এই কর্পোরেট শহর,
যেখানে আজ বড়বড় ইট কংক্রিট
আর প্লাস্টিক ফুলের ঘর।


একদা সেইখানে ঘন জঙ্গল ছিল
পালে পালে স্লো লরিস, লিফ মাংকি,
বার্কিং ডিয়ার আরও কতোকি।
নীল দীঘি ছিল নিরাপদ,
সবুজ ঘাসে শুয়ে গপ্পো বাঁধতো
কপোত কপোতি আরো অনেক শ্বাপদ।
সাদা মোজার বাইসন তৃষ্ণা ছাড়িয়ে
পৌঁছেযেত উত্তরের সেই বিশাল খাদটায়,
চিল থেকে শঙ্খচিল সবাই তখন
উঁচু গাছের সেই বিশাল ছাদটায়।


তারপর একদা এলো এক বেনে,
বিধাতার থেকে ছলেবলে
সব নিলো কিনে।
প্রথমে সে পাখিদের উঁচু গাছটা বেচলো,
তারপর বেচলো সবুজ ঘাসের তলার মাটি,
আস্তে আস্তে নীল দীঘি ঘোলাটে হলো।
পাথর গুঁড়ো করে সিমেন্ট
তারপর হলো ইমারত,
মরে গেলো বন্যপ্রাণ
থেমে গেলো সবুজ রথ।


শেষে একদিন চেতনা ফিরলো বিধাতার,
একে একে হিসেব নিকেশ সেরে নিলো তার।
মাটি কেঁপে ইট পাথর হলো ধূলিস্যাত,
বেনেরা সব মাটির তলায় ঢুকলো সপ্তহাত।


আবার সচল সবুজ রথ সবুজ নির্যাস।
সবুজ হবে এই ধরা,বাকিরা ইতিহাস।

প্রীতম শীল

ইচ্ছেরা যখন আকাশ ছোঁয়


ইচ্ছেরা যখন আকাশ ছোঁয়
পা রেখে মাটিতে। 
খাবার তখন সামনে থাকে 
ছোট্ট একটা বাটিতে। 
স্বাদহীন ইচ্ছে তখন নোনতা লাগে, 
চিবিয়ে খেতে ইচ্ছে করে ছেঁড়া কাগজে। 
আবার কল্পনাতে কেউ এসে বলে যায়, 
বালক ভাবিসনা এই সব ছোট্ট মগজে। 
বাটিতে আঙ্গুলের আঁকিবুঁকি, 
দাগ কেটে যাই খাবারে। 
কল্পনার গলিতে বিলাস বহুল বাড়ি, 
এক টুকরো জমি চাঁদের পাড়ে। 
হটাৎ ধমক, থাম কি ভাবছিস? 
ঐ যে কল্পনার কেউ। 
শান্ত সাগর কল্পনার, 
থেমে গেছে কল্পনার বিরামহীন ঢেউ। 


মো: রুবেল

অধুনালুপ্ত বসন্ত


         

গায়ে তোমার হলদে শাড়ি;

বাহারী ফুলে গুঁজা কবরী।

গালে প্রলুব্ধ রঙের আলতো চুম্বন।

উদার বাতাসে তোমার উড়ন্ত  আঁচল।

অবগত করত আমায় -

আসচ্ছে ঋতুরাজ।

ভর করে ডানাদ্বয় কোকিলের সুর মোহনায়।।

তবে আজ সেই তুমি অধুনার দোষে দুষ্ট।

বসন্তের বাতাসে নেই কোনো স্নিগ্ধ ভালোবাসা;

আছে কেবল রুদ্ধশ্বাস।

বসন্তাবৃত্ত স্বপ্ন আমার ধর্ষণের শিকার;

কালের অশ্লীল প্রেরণার।

ধর্ষিত স্বপ্ন মালাটবন্দী হচ্ছে নীলকাব্যের পাতায়;

ভ্রান্ত বসন্তের আশকারায়।

নীলিমা দাশগুপ্ত

বসন্ত বেলায়

কোনো এক বসন্ত বেলায়
এক পশলা বৃষ্টি ধুয়ে যায়,
অদেখা জলছাপের রং প্রহর
গুনে শীতল প্রহর কেটে যায়।


আঙ্গিনা আলপনা আঁকা
ভোরের ফোটা ফুল ঝরে যায়,
মেঘের উড়োচিঠি  চাঁদের গায়
ভেজা দৃষ্টি ফিরে তাকায়।


চোরা স্রোতের কিনারায় গোলাপ
ফুলের ডানায় ডানায়,
পলাশ রাঙা রং মেঘ হাসে
মন আকাশ অনুরাগে ছুঁয়ে যায়।


ভাষাহীন চোখ স্তব্ধ রাত কেটে যায়
মনের ক্ষরণ দ্বীপের আগুন পূর্ণিমাতে
আকূলতা কেঁদে হারায়,নীশি দিশি
একান্তে আলিঙ্গনে স্বপ্ন ভেসে যায়।


মুকিম মাহমুদ মুকিত

ফাগুনের কাছে  প্রতিজ্ঞা

স্বপ্নময়ী রঙিলা ফাগুন
সজ্জিত করে ফুলে ফুলে চারিদিক, 
ছড়িয়ে বিমোহিত স্নিগ্ধ সৌরভ,
বিদায় নিয়েছে অগোচরে।    
ফাগুন রেখে গেছে অনেক কিছু
ক্ষতবিক্ষত শীতের প্রকৃতি দেহে,
দিয়ে গেছে নতুন প্রাণের ছোঁয়া। 
বিনিময়ে কিছু কি দিয়েছি ? 
অথচ সবুজের প্রাচীর টপকে,
ছিঁড়ে নিয়েছি সদ্য পরিস্ফুটিত বিটপকে। 
শেষ সৌন্দর্য অবধি ছিনিয়ে
রিক্ত করে ফিরিয়ে দিয়েছি। 
একটি গাছও রোপণ করি নি,
ফাগুনের আঙিনা কোণে , 
কত কৃতঘ্ন আমরা ! 
ক্ষমা করে দিও হে ফাগুন
আর হবে না এ কর্ম, 
চৈত্র দুপুরে বুঝেছি তোমার মর্ম। 
করলাম সংকল্প এই আজ,
অক্ষুণ্ন রাখতে তোমার তাজ,
মোর সব খোলা আঙিনার পাছ
লাগাবো হরেক চারা গাছ। 
ফাগুনের কাছে রইল এ আমার প্রতিজ্ঞা।    

পরিতোষ সরকার

খনন

একদিন হবে খনন প্রত্যেকের নামে,
নির্দিষ্ট মাপের খনন।
অজস্র মোহ-মায়া ভেঙে পরবে
ডানা কাঁটা পতঙ্গের ন্যায়।
সোনার তরি হাড়িয়ে যাবে সুষুপ্তি দিঘিতে
থাকবে না কোন কাক-ভোরের শব্দ-
না থাকবে লাল আকাশের গন্ধ।
বুক সাগরে দাঁড়াবে ছাউনি একখানা,
চারদিক রবে ফাঁকা।
হয়তো এসেছিলাম দেহ-মন নিয়ে,
রয়ে যাব শুধু কালো মাটি হয়ে।

অনুপম রায়

বৈশাখ


এসে গেছে!


দিনের পর দিন, মাসের পর মাস;
চারিদিকে দেখছি আবার নতুনের আশ্বাস।
জৈষ্ঠ্য,আষাঢ়, শ্রাবণ,ভাদ্র,আশ্বিন
অর্ধেক হল বিলীন! 
কার্তিক,অগ্রহায়ণ, পৌষ,মাঘ, ফাল্গুন 
শীত পেরিয়ে এল আগুন। 
এইবার সমাপ্তের কথা, 
চৈত্র পেরিয়ে দেবে বৈশাকের বার্তা। 
কোকিলের কুউহু ছেড়ে,
গাছের কচি পাতা বাতাসে নড়ে।
কাঁচা ফল পাকা হবে।
পাকার মিষ্টি গন্ধে গন্ধেশ্বরী আসবে!
গান হবে,নাচ হবে
নিরামিষ-আমিষে বাঙালি জমিয়ে খাবে।
নতুন আমেজ,পুরানো সাজ
আবার নতুন করে এল যে বৈশাখ।


উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...