Wednesday, May 13, 2020

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

তারুণ্যের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য্যের প্রয়াণ দিবসে শ্রদ্ধা।

চিত্রাঞ্জলী : অমিত রুদ্র পাল

সম্পাদকীয়

মুশকিলটা হচ্ছে এই দুঃসময়ে দাঁড়িয়ে লেখা নির্বাচন নিয়ে। রবিঠাকুরের জন্মদিন, মনন স্রোতের তৃতীয় বর্ষপূর্তি, এই করোনা কাল মিলেমিশে এক অদ্ভুত পরিসরে অসংখ্য লেখা থেকে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়বস্তু ধরে এই সংখ্যাটাকে সীমাবদ্ধ করা গেলো না। আমরা এই সংখ্যাকে কবিগুরুরকে উৎসর্গ করলাম।

লেখকের পুরো নাম না থাকা, মেইল করার ভ্রান্তি এবং বানানের জন্য যে সকল লেখাগুলো আমারা প্রকাশ করতে পারি না, সে লেখাগুলো আমাদের মর্মাহত করে। নির্বাচিত সৃষ্ট তুচ্ছ কারণে প্রকাশ করতে না পারার কষ্ট মনন স্রোতের কাছে অনেক বড়। আমরা প্রত্যাশা করবো আগামী সংখ্যা থেকে এই ধরণের সমস্যা আর হবে না।

কিশোর কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের প্রয়াণ দিবসে মনন স্রোতের এই সংখ্যা প্রকাশ করতে পেরে আমরা তৃপ্ত। মনন স্রোতকে এভাবেই সৃষ্টিশীল কাজের পাশাপাশি সামাজিক দায়িত্ব পালনেও সহযোগীতা করবেন মনন স্রোতের তৃতীয় বর্ষের শুরুতে এটাই প্রত্যাশা রাখছি।

এই দুঃসময় মূলত একে অপরের পাশে দাঁড়িয়ে টিকে থাকার অঙ্গীকার করার সময়। সবাই ভালো থাকুন। সুরক্ষিত থাকুন।


শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত   

শুভেচ্ছা || মডেল শিল্পী সুমন || মনন স্রোত

শাশ্বত চক্রবর্তী

বৃদ্ধাশ্রম

ছেলে আজ বড়ো চাকরি করে 
বৌমার আবার পার্লার
দিদিভাই আজ কলেজে পড়ে
নাতি আজ রকস্টার
ওদের বিয়ের পরে কত আনন্দ করেছিলাম
পাড়ায় পাড়ায় সবার কাছে
গল্প বলে বেড়িয়েছিলাম
ছেলে আমার সোনার টুকরো
বৌমা যেন লক্ষী স্বয়ং
বছর ঘুরতে বলে উঠলো
তোমার মায়ের কত ঢং
ছেলে আমার রেগে গিয়ে
মারলো আমায় এমন চড়
অনেক বড়ো অন্যায় করেছি
বুঝতে পারলাম অনেক পর
শুধু বলেছিলাম বৌমা এই সহ্য হয়না 
এত খাটনি পরিশ্রম
তার শাস্তি পেয়েছি আমি
ঠিকানা হয়েছে বৃদ্ধাশ্রম
ভালো থাকিস তবু তোরা
ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা
তোদের ছেলেও বিয়ে করবে
করবে তোদের ভর্ৎসনা
আমার জায়গায় তোরাও
আসবি
পারবি না করতে পরিশ্রম
ঘুরে ফিরে না হয় যেন
তোদের ঠিকানা এই বৃদ্ধাশ্রম
        


পলান সাহা

রবির আলো

তুমি নওতো বন্ধের কবি 
আজন্ম-জন্মের রবি।
জন্ম তোমার এই দেশেতে,
আমরা সবাই গর্বিত শ্রবণে।


তুমি নওতো নম্র কারো তটে
আজন্ম বিস্ময়! রটে।
তোমার সৃষ্টি রবে সাহিত্যের পাতায়।
আমরা সবাই শোকাহত কন্ঠে।
গাহিব গীতিবিতান।


মঞ্চস্থ করব আরো কত গীতিনাট্য,
প্রবন্ধ-নিবন্ধনে বিশ্বায়নে উত্তরত ভাবনায়।
আমরা সবাই সচেতন
আমরা সবাই গর্বিত শ্রবণে 
আমরা সবাই গাইব গীতিবিতান।
রবির রাগ মঞ্জুরী তাল -লয়ে।
আজন্ম-জন্মের রবি 
তোমার আলোতে 
আলোকিত মোরা
সকলে...
   

বিপ্লব পাল

চিরদিবসের রবি

স্ত্রীর সাথে ঝগড়া হলে ভাবি 
তোমায় ভাববো না কবি, 
কিন্তু চোখে ভেসে ওঠে তোমার প্রতিচ্ছবি ।
তুমি এসে বলো আমায় চুপটি করে,
"পতির পূণ্যে সতীর পূণ্য, নহিলে খরচ বাড়ে ।"

দিনের শেষে ক্লান্ত দেহে ক্লান্ত মনে ভাবি
তোমায় ভাববো না কভু ,
তুমি হাওয়ার তালে গান ধরো, 
"ক্লান্তি আমার ক্ষমা করো প্রভু ।" 

মতাদর্শের দ্বন্দ্ব হলে ভাবি
তুমি এ ব্যাপারে একদমই কাঁচা,
কিন্তু তোমার স্পষ্ট হুকুম আসে,
"আধ মরাদের ঘা মেরে তুই বাঁচা ।"

ভালোবাসায় আঘাত পেলে ভাবি
তুমি ভালোবাসার কী জানো, কবি ?
সহসা চোখে ভেসে ওঠে তোমার প্রতিচ্ছবি ।
কে জানি এসে গুনগুনিয়ে গান শুনিয়ে যায় —
"আমার পরাণ যাহা চায় ।"

ঝড়ের অশনি উদ্যত হলে ভাবি
তুমি আর কী বা করতে পারো
তুমি তখন চিৎকার করে বলো, 
"আমি মৃত্যুর চেয়ে বড়ো।"

তুমি জীবনের পরতে পরতে 
মৃত্যুর ওপারেও আছো কবি,
তুমি অস্তহীন সূর্য আমার
চিরদিবসের রবি । 

দীপিকা রায়

২৫ শে বৈশাখ
     
বিশ্ব কবি তুমি
তুমিই আলোর ভুবন
কালবৈশাখীর ঝড় তুমি
তুমিই অগ্নিশিখার অতৃপ্ত প্রতিভা। 
হাজারও মঞ্চে তুমি থাকো দাঁড়িয়ে, 
হাজারও চিত্রকল্পে নানা রঙে থাকো রাঙিয়ে। 
শত শত মানুষের কন্ঠে আজ তুমি, 
তুমিই আজ শত শত মানুষের নৃত্যে। 


তুমি আজ শুধু এক ছবি নয়
না তুমি আজ কন্ঠেভরা শুধু গান, 
 তুমি রামধনুর ওই সাত রং
যেই রঙে তুমি রাঙিয়েছো বিশ্ববাসীকে, 
 কবি গুরু তুমি, বিশ্বকবি তুমি
 তুমিই সেই নিশিথের আলো
জীবন্ত তুমি আজও প্রতিটি মানুষের কবিতায়, 
জীবন্ত তুমি আজও প্রতিটি মানুষের ভিড়ে। 
প্রতিটি মানুষের প্রেরণা আজ তুমি
তুমি নয় শুধু আজ ২৫ শে বৈশাখ, 
 বিশ্ব কবি তুমি
 তুমিই জগতের আলো।

মোঃ রুবেল

রবি প্রণাম
            
সেদিন বৈশাখ ছিলো পঁচিশে।
একটা রবি উদয় হলো বাংলার আকাশে।
বাংলা থেকে বিশ্বজয়ী,
সাহিত্য কর্মে হলেন তিনি।
গীতাঞ্জলির অনুবাদে,
নোবেল উনার হাতের মুঠে।
লেখনী উনার ক্ষুরধার।
সুধাসম লেখা তাঁর।
জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে,
মানুষ যখন বাঁচার রসদ খোঁজে।
ওমনিতে তাঁর গীতবিতানে বুকে সাথে আগলে ধরে।
নিভিয়ে সব ঘোর আঁধার,
জ্বলে আলো তাঁর আভায়।
গভীর সুখে ক্ষুব্ধ পৃথিবী শান্ত হোক।
রবির আবার উদয় হোক।

গৌতম দাস

মিলন সেতু
                          

প্রাণভরা ভালোবাসা,শ্রদ্ধাও স্নেহ মিশে হল এই সেতু।
সাক্ষী ছিল সমুজ্জ্বল তারারা আর সহস্র ঐক্যের কেতু।
সত্যের পূজারী সেতুর নাম রাখল মানবতার 'মননস্রোত'।

সেতুতে বিন্দুমাত্র ভেদ নেই জাতি,ধর্ম,বর্ণের।
আমন্ত্রণ দেয় পরোপকারী,সৃষ্টিশীল ভাবনা যাদের।
প্রাণময় আড্ডা হয় কবিতা ও সুধাময় গানের।
দ্বিধা ,হিংসা ভুলে ,সবাই যেন এক জাতি এক প্রাণের।
দেশ বিদেশের বন্ধুরাও মিলন সেতুতে আসে।
কখনও ত্রাণ হয়ে দাঁড়ায় দীন, দুখীদের পাশে।

আগলে আছে এই সেতু পাহাড়ি কন্যা ত্রিপুরার কোলে।
তৃতীয়বর্ষ পূর্তিতে বিশ্বজয়ের শুভকামনা জানাই প্রাণ খুলে।
দুর্দিনে সেতুতে ঝাপিয়ে পড়ে ছোট বড় সবাই।
নানা সমস্যার সমাধান এক ঝলকে পাই।
অন্ধকার আলোকিত হয় তোমারই ছত্রছায়ায়।
শান্তির বার্তা বাহক তুমি এই নির্মল বসুন্ধরায়।
দেশ দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ুক তব এই সুনাম।
মিলন সেতুর দীর্ঘায়ুর তরে-
এই অধমের,ঈশ্বরের নিকট দন্ডবৎ প্রণাম।

অনুপম দেব

আমাদের সাহিত্য পরিবার

কাঁচা হাতের শব্দের চাষীদের
পরিচর্যা করার স্থান,
নবসৃষ্টির উন্মাদনারা এগিয়ে যাওয়ার
উৎসাহ এখানেই পান।
যানে সবাই ভুল করলে
এখানেই সবাই ধরিয়ে দেবে,
বিশ্বাস আছে আজকের আজকের অচেনারা
কাল ঠিক আপন করে নেবে।
এই পরিবারের নাম ছড়িয়ে পরছে
আকাশে বাতাসে অনবরত,
কারোর নজর না লাগলে

মননস্রোত ত্রিপুরার সাহিত্যে হবে সমাদৃত
এই পরিবারের ছত্রছায়ায় বৃদ্ধি পাবে
সকলের নবসৃষ্টির চেষ্টা,
মননস্রোতকে তৃতীয় বর্ষপুর্তির 
অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

পূজা মজুমদার

মানুষ অন্য রকম


নভেল করোনা ভাইরাস; 
নিঃশ্বাস হতে পারে নিঃশেষ।

বড় বড় রাষ্ট্র আছে মজুত ভারি ভারি অস্ত্র
নিমিষেই হতে পারে কোন দেশ ধ্বংস,
অদেখা ভাইরাসে সবকিছুই যেন তুচ্ছ।

মৃত্যুর মিছিলে কত  প্রান গেল
সৎকার হবে না কে ভেবেছিল,
অর্থ, বিত্ত,গর্ব, অহংকার সব ফুরিল।
উহানে উৎপত্তি, দোষী চিন না অন্য রাষ্ট্র, বলো?

প্রকৃতির লীলা ক্ষতি সাধন হয়েছে বহু
গাছপালা, তরুলতা, জীবজন্তুর আরো কত সম্পদ
দূষণে দূষণে জর্জরিত, পৃথিবী কলুষিত, পদে পদে আপদ।
মানুষ আজ মানুষ নয়, মানুষ অন্য রকম,
নরপিচাশ, নরখাদক মারছে মানুষ পাখির মতন।

সুনামীতে কেপেঁছিল বিশ্ব ব্রহ্মান্ড
করোনাতে থমকে গেল সব কর্মকান্ড,

অন্যায়, অসত্য, দেশে দেশে করলে বিরাজ
সবার প্রতি নারাজ অদৃশ্য শক্তি রাজাধিরাজ
জানান আপন শক্তি, দেখান রাগবিরাগ ও কাজ।

মন্দিরা শর্মা

আমার প্রানের কবি

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ,,
আধুনিক যুগের শ্রেষ্ঠ বাঙালি সাহিত্যিক।
পাঠক সমাজের মনোরঞ্জনের পথিক।।
তুমার সৃষ্টিতে যে প্রাণের সঞ্চার ঘটে।
তুমি তোমাতে উজ্জীবিত থেকেও, আমাদের প্রেমিক করে তুলেছ বটে।
তোমার  সৃষ্টির তরিখানায় নতুনের ভিড় জমাট বেঁধে চলছে আপন মনে।
হে মহান,,,
দিবসেতে যেমন করে সূর্য হতে আসে কিরণ।
তোমার সৃষ্টির উল্লাসে মেতে ওঠে, পাঠক সমাজ তোমায় করেছে বরন।
হে সজীব,,,,
তোমার পরিবেশের সেই দিগন্তহীন গভীরতার সুর।
নব যাত্রীদের অন্তরে এনেছ এক নতুন ভোর।।
তোমার সেই মাধুর্যময় কবিত্ব রস ।
বিশ্ব মানবের  হৃদয়কে করেছে বশ।
লেখার ছলে, লেখার বলে,তুমিই মহান।
নব প্রজাতির ডানা তুমি , সবাতে বিদ্যমান।
বিসর্জনের মতো কত নাটক করেছ আমাদের দান।
কবিগুরু রবী তুমি , বাংলা সাহিত্যের প্রাণ।
নয়ন সম্মুখে তুমি নাই নয়ন মাঝখানে নিয়েছ যে ঠাঁই । 
তোমার এই উক্তিতে আমি অনুভবে ডুবে যাই।
হৃদয় মন্দিরে তুমি আছ এভাবে ।
প্রজ্জ্বলিত  হ ই  আমরা তুমার স্বভাবে।
মহা বলে বলীয়ান ।
তুমি বঙ্গের জয়বাণ ।

শিপ্রা দেবনাথ

প্রানের কবি রবীন্দ্রনাথ 
 

হে রবি বিশ্বকবি, লহি তোমার নাম     
দু'একটা লাইন লিখি তোমায় জানিয়ে প্রণাম ।
বাংলার কবি, বিশ্বের কবি জগৎ জোড়া ঠাঁই 
তোমার কীর্তি চির ভাস্বর, তুলনা তার নাই। 
তোমার কবিতা আর গান, জুড়ায় আমাদের প্রাণ, 
 আমাদের চিন্তা আর চেতনা, সব তোমারই দান। বাঙালির ধ্যান তুমি, বাঙালির  প্রাণ  তুমি, 
তুমি যে মোদের রবি।
তোমার জ্ঞানের প্রদীপ আলোকে আলোকিত মোরা কবি
জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছ ধরণীর কোনে কোনে, 
জন্মদিনের শুভ লগ্নে স্মরি তোমায় মনে প্রাণে। 
বিশ্বভুবনে তোমারই নামে পড়েছে ফুল চন্দন, 
প্রাণ খুলে সবাই জানাই তোমায় সাদর অভিনন্দন।          

সঞ্জয় দত্ত

চিন্তাভাবনা

কি করে মনে 
অনেক রকম চিন্তা আসে?
ভাবের মধ্যে লুকিয়ে থাকে
কষ্টে আবার বক্ষ নাচে।

দূর-অনাদূর
চিত্তে চিন্তার সুর,
আবেগ করলে অর্পণ 
হবে চিন্তার সূচনা। 

ছোটো ভাবনা হয়ে উঠে 
বড়ো ভাবনা রূপে, 
বেকারত্বের উন্মাদনা 
পড়ে চিন্তার কোপে।

উফ্ আর ভাবতে চাই না
এমন দৃঢ় বস্তু,
কর নাশ আজব ভাবনা
তার হবে বিচার বিবেচনা।

মাথায় শান্তির চেতনা 
সুখ ও প্রাপ্তির নমুনা, 
শ্রেষ্ঠ সুন্দর মানবজাতি 
মোচন করো চিন্তার অবনতি।

জয়ন্ত শীল

বৈশাখ এসেছে

ঠান্ডা নরম হাওয়ায় একটি শব্দ, 
একটি নামের বুক চিরে 
গোটা একটা বছর, শৃঙ্খলহীন স্মৃতি 
প্রবেশের মাদকতা আমাকে নিয়ে খেলা করে। 

ছদ্মবেশী বাবলা গাছ  
' জল, উদ্ভিদ জীবনী ' খেলায় মেতে উঠলে 
মেঘলা ভোরের ফ্যাকাসে আলো বলে ওঠে - 
বৈশাখ এসেছে! 

সুজন দেবনাথ

অনাথ
-------------

মাগো আমি যে অনাথ,আমার বেদনা বুঝে কজন?মলিন বেশের অন্তরালে,আমায় খোঁজে কজন ?ছোট বেলায় পাষাণ মাগো,গেছো আমায় ফেলে

খাবারের জ্বালায় মরি তখন,কোথাও না মেলে।আমি যখন ছোট ছিলাম,পাইনি তোমার দুধ

ভিখারীর হাতে বড় হলাম,খেয়ে চালের খুদ

মাগো আমারও যে ইচ্ছে করে, স্বপ্ন দেখতে রোজ

তবে কেন ভিক্ষে করি,আর করি তোমার খোঁজ

ওই দেখো মেয়ে ছেলেরা ,ইস্কুলে যায় হেঁটে

আমায় দেখে  হাসে ওরা, দাঁড়িয়ে স্কুলের গেটে

জানো আমারও যে ইচ্ছে করে, বড় স্কুলে যেতে

লোকে বলে শখ কত দেখো,পায়না মুটেই খেতে।

তখন আমার খুব কষ্ট হয়  এই পোঁড়া বুকে

জন্মের পরই সর্বহারা আমি, পারিনি থাকতে সুখে

ভালো একটা পোশাক নেই ,ছেঁড়া কাপর পড়ি

ইচ্ছে করে দামি কাপর  আর পড়তে হাত ঘড়ি

দামি দামি খাবার দেখে ,আমার মুখে আসে জল

কোন পাপের সাজা মাগো ,আমায় দিলে বল

আমার যখন খুব অসুখ করে ,বড্ড ইচ্ছে করে

তোমার

কোলে মাথা রেখে, ঘুমাবো কুঁড়ে ঘরে

অথচ তুমিও নাই বাবাও নাই ,ঔষধ ছাড়াই থাকি

বুকের ভেতর গভীর অসুখ ,গামছা বেঁধে রাখি

আমায় পথের কাঙাল করে ,তুমি কি আছো সুখে?

নাকি আমার মতোই আছো, তুমিও ভীষণ দুখে?

লোকে যখন বলে আমায় ,তোর বাপের নাম কী

দুচোখে জলের ধারা নিয়ে ,অবাক বনে থাকি

বলতে পারো এই জগতে ,আমার কী আছে সম্বল

গরমে নেই সুতির পোশাক ,শীতে নেই কম্বল

ভালো  কিনা মন্দ আছি, নেয় না কেউ খোঁজ

অনাথ বলে বড়ই একা, একাই কাটে রোজ

হিন্দু কিনা মুসলিম আমি ,কিবা আমার জাত

লোকে বলে জাতহীন আমি, সর্বহারা- অনাথ

মাগো বড্ড জানতে ইচ্ছে ,করে আমার পরিচয়

কেন আমায় ত্যাগ করলে, কিসের এত ভয়?

মাগো পেটে জ্বালা পিঠে জ্বালা, কেমনে ধরে রাখি

ভিক্ষে করি বলে মাগো, দোকান দেয়না বাকী।

মাগো অনাথ হয়ে যে বেঁচে থাকা, বড়ই যন্ত্রণা

সামনে পেছনে কেউ থাকে না ,দেয়না সান্ত্বনা

মাগো তুমি হয়ত আছো সুখে, আমি হতাশায়

জীবন আমার চলছে দেখো ,বাঁকা নিরাশায়

তোমার ঘরে জ্বলছে আলো ,মাথার উপর ছাদ

আমার উপর মুক্ত আকাশ , কোলে আছে চাঁদ

জন্মের পরই মাগো তুমি, দিলে আমায় ফাঁকি

তাই কষ্টগুলো বুকে চেপে, রাস্তায় শুয়ে থাকি। 


সমীরণ বিশ্বাস

বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ 

                                           
তুমি বিশ্ব কবি, বিশ্বে একেঁছো নিজের মনের ছবি,
তোমার ছোঁয়ায় বিশ্ব হয়েছে মহানতার কবি।
সাগর সমান পারি তোমার, তুমি জল-স্থল,
তুমি বর্তমান,ভবিষৎ,তুমি মোদের বল।

আকাশে-বাতাশে তুমি,আছো মোদের হৃদয় জুড়ে,
পৃথিবী ভরে গেছে কবিত্বে তোমার সুরে।
আমাদের ভাষা,আশা,তুমি মোদের গর্ব,
তোমার চরণে মোদের মাথা থাকবে সর্ব-সর্ব।

সহস্র কবিতা,নাটক,গল্প,উপন্যাস তোমার,
এর'ই মনমুগ্ধতায় আমাদের হৃদয় উজাড়।
পৃথিবী পেয়েছে নতুন দিশা,বুনতে নতুন স্বপ্নের জাল,
রাঙিয়েছো এক তালে,নতুন ছন্দের তাল।

পৃথিবীর কত কবি,কত উপন্যাসিক,কত নাট্যকার,
তোমাতে হয়েছে মগ্ন,তোমাতে দিশেহারা কতবার,
তার সংখ্যা অগনিক,তোমার মহিমা অপার,
নতুন ঢঙে,নতুন রুপে,নতুন ছন্দে আগমন করেছো-
বিশ্বকে চলার।

যুগে যুগে তোমার আশ্বাস,তোমার ছায়া,
নতুনে নতুনে চলা হলেও কাটিয়ে উঠেনা তোমার-
মায়া।
তোমার হাতে তাজমহল পেল নতুন ভাষা,
প্রেমিকের হৃদয়ে জাগালো নতুন প্রেমের আশা।

তোমার কথায় অরণ্য-ভূমি হয়েছে গল্পভূমি,
তোমাতেই পৃথিবী হয়েছে সাহিত্যের তিমি।
জগতে তোমার হাতের ধারা যেন অসংখ্য তারা,
পৃথিবীর বুকে হাটতে হাটতে তাতে হয়ছো মগ্নমরা।

বিশ্বকে দিয়েছো নতুন গতি,নতুন কৌমুদী'র হার,
তোমার মহানতায় মহান সে, সেথায় তোমার কীর্তির- বাহার।
কঠিন চক্ষুতে তোমার বিশ্বকে করেছো যত্ন,তবে- তোমার শাসনে মগ্ন,
তুমি অমর,তুমি অমর,তুমি অমর রত্ন।

বিশ্ব কবি,বিশ্ব জয়ের ভাষা তাইতো তুমি।

তনুজা রায়

বিশ্ব কবি  তুমি


বিশ্ব কবি  তুমি,এ বিশ্ব মাঝিরে,
হেসেছো কেদেছো মানবের দুঃখে।
বিশ্ব বিধাতার সৃষ্টি  তুমি -
তোমায় পেয়ে ধন‍্য মানব জাতি।
বিশ্ব কবি  তুমি,এ বিশ্ব মাঝিরে,
মিশে গিয়েছো তুমি প্রাণে নিঃশ্বাসে।
বিশ্ব জেগে উঠে তোমার সাহিত্য কলকাকলিতে।
নবীনের কবি তুমি, প্রবীণের ও কবি,
প্রকৃতির সখা তুমি, বিশ্বজয়ী কবি।
চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, তারা -
তোমার  মধ্যে  মেলে সাড়া।
বিশ্ব কবি  তোমার  হয় না তুলনা।
বিশ্ব কবি  তুমি,এ বিশ্ব মাঝিরে,
বিশ্ব তোমায় গুরু বলে, সাহিত্যের প্রাণ।
হৃদয়ে রাজা তুমি, প্রেমে কাঙাল।
আমার প্রত‍্যয় জানি কোন শতাব্দীতে,
আবার আসবে ফিরে এ বিশ্ব সংসারে।
নব প্রেম পূর্ণ  হবে নব মিলনের ঘট।
সাত সমুদ্র তোরো নদীর পার হতে
উজার করে সাজাবে তোমার স্বাদের নন্দনকানন।
বিশ্ব কবি  তুমি,এ বিশ্ব মাঝিরে,
ছুতে পারে কি কেহ তোমার আকাশ সম
দুভের্দ‍্য পবর্তসম দুলভ কিনারা।
তোমার সৃষ্টিতে হারিয়ে যায়,
কতপ্রাণ উড়ন্ত বিহঙ্গে ডানায় চড়ে।
তাই তোমায়  আমি  ভালোবাসি।
তোমার  অভিলাষী প্রেমময় ছায়াতরে,
সমুদ্র তরঙ্গে মত অভাবনীয় জীবন যন্ত্রণা,
আমার বুক বিদীর্ণ করে তুলে।
একমাএ তোমার সাহিত্য পেরেছে সঙ্গে নিয়ে,
অনন্ত অসীম  সুখময় সরোবরের,
পদ্মজলে সাঁতার কাটাতে।
 তুমি প্রেমের কবি এ প্রেম জগতে।
তোমার কাছে আমি নারী বিচিত্র প্রকাশ।
কল্পনার জালে আমি তোমার স্বপ্নচারনী।
চলতে চলতে করেছো আমায় সাহিত্যসঙ্গীনি।
দমকা হ াওয়া মত পেয়েছি হৃদয়ে  ঠাই।
তাই তো তুমি প্রেমের কবি এ বিশ্বজগতে।
 আমি নিয়তির সাথে করেছো সংগ্রাম,
 প্রতিক্ষণে- প্রতিদিন,
কূলহীন কিনারা টানে দিবানিশি দেখি,
শুধু  তোমার যাতায়াত।
জীবন যখন থমকে দাঁড়ায়,
আশারা সব পালিয়ে বেড়ায়।
বসন্তের রঙ নিয়ে দাঁড়ও মোর হৃদয় প্রাঙ্গণে।
বিশ্ব কবি তুমি,এ বিশ্ব মাঝারে।
তুমি  তো রাত জাগা পাখির  মত,
নিদ্রাহীন রাএি যাপন করেছো শুধুই,
বাংলা প্রাণে সুখ পাখির  সুর ফোটাবে বলে।
তুমি তো বিশ্ব কবি,এ বিশ্ব মাঝারে।
অনাচার,কুসংস্কারের ঝড়ে  ভেঙ্গে পরে,
ভুল খুটিতে গড়া সহস্র জীবন।
সমাজের অন্ধকার  বেড়জাল ভেঙ্গে,
পেরেছো সাজাতে সুখের বাসর। 
তুমি  তো বিশ্ব কবি তোমার  হয়না তোলনা।
তোমার গান নিয়ে যখন আমি ঘরে বসি,
বসন্তের সুর মেলায় সাথে।
আমার  রূপকথার ক‍্যানভ‍্যাসে,
একেছি শুধু  তোমার  ছবি।
রঙ তুলি নিয়ে  যখন রঙের খেলা করি।
বিশ্ব তখন কানে এসে বলে,তোমায় ভালোবাসি।
তুমি তো বিশ্ব কবি নও কারও একার।
তবুও আবেগ গুলি কুড়িয়ে ভীষণ আগলে রাখি।
তুমি বিশ্ব কবি এ,বিশ্ব মাঝারে।

প্রীতম ভৌমিক

স্বত্তা

আমার অস্তিত্ব- সত্তা,
আমার বেঁচে থাকা,
সবই আজ স্মৃতির জগতে ।

কখনো বিমর্ষ- বিষন্নতা,
 কখনো বা ভীষণ একা,
 নতুন করে ফুটবো তোমার হৃদয়েতে ।

বড্ড আবেগে ধরবে জড়িয়ে ।
অশ্রুর মতো ঝরবো তোমার 
ঠোঁট- চাপা কান্নায় ।

হয়তো আবার হাসির ফোয়ারায় 
ভেজাবে সর্বাঙ্গ আমার । 
তখন সুখী, চির সুখী, হোক 
আক্ষেপ- যন্ত্রণায় ।
               

Tuesday, May 12, 2020

বর্ষা দে

আজ বিশ্ব আবার ঐক্যতায়

হে বিশ্ব মানব জাতি
আজ কোথায় 
তোমার জাতপাতের ন্যায়
আজ কোথায়
হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টানদের বাছাই
আজ কোথায়
রাজনৈতিক-বিরোধী ও হিংসা মারপিট দ্বন্ধনীয়তা।

কোন সে ঝড় যে ঝড়ে আজ
মানুষ সবকিছুর কাছে রয়েছে নিশ্চুপ

হে বিশ্ব মানব জাতি
আজ তুমি কোন সে ব্যধিতে আক্রান্ত
কোন সে ব্যধি দিয়েছে আজ 
তোমায় হাতছানি।
জাতপাত নেই আমরা সবাই এক
তর্কে-বিতর্কে তুমি একদিন যেটা মানতে না
সেইটাই আজ ভুলে গিয়ে
বাড়াচ্ছ তোমার দায়িত্বের হাতখানি।
মানব সেবাই পরম ধর্ম
আজ শুনতে পাওয়া যায়
হিন্দু-মুসলিম কে কোন জাতি
তার বাছাই আজ লুপ্তপ্রায়

আজ মানুষ শিক্ষিত এক সে শিক্ষায়
আমরা সবাই হারাবো এই ব্যধি কে
তাতে কোন জাতের নেই বাছাই
আজ মানুষ একই দলে যুক্ত
যার শ্লোগান একটাই
আমরা জিতব ব্যধি কে হারাবো তার জন্য আমাদের আজ ঘরে থাকা চাই
আজ ঘরে থাকা চাই

প্রীতম শীল

তোমার সৃষ্টি পাহাড় সমান
      

হে কবিগুরু--
সৃষ্টির পাহাড় গড়েছ তুমি,
জননী জন্মভূমি।
পাহাড়ের প্রতিটা বালুকণা জানে,
সৃষ্টির মায়া কতো!
তবে আমরা কি তা জানি?
চানাচুর ওয়ালার হাতে পাহাড়,
তুচ্ছ কাগজের মতো।
পদধূলিতে বাবুরা সব পাহাড় ডিঙে,
সুউচ্চ ইমারত বানায়।
তবে ওরা অতি নির্বোধ, জানেনা--
শক্ত হলেই ভিট চিরস্থায়ী নয়।
তোমার সৃষ্টি পাথেয় করে অতি দূর্বল,
নিজের ভিট তৈরি করে।
শক্ত ইমারতের মতো।
যা চিরস্থায়ী, চিরন্তন সত্য।

নিকিতা দত্ত

প্রিয় শৈশব


বর্তমানের ভিড়ে স্মৃতির অতলে কোথায় যেন আজ হারিয়ে গেছো তুমি!

ছোট্ট মনের প্রথম ভাবতে শেখা, কল্পনার সুতাগুলি একটু একটু করে বুনে যাওয়া, একটু বকুনি শুনলে অভিমানী মনে কেঁদে কেটে অস্থির হয়ে ওঠা, পুতুলের সংসার সাজানো, ভাই-বোনরা সবাই মিলে হৈ-হুল্লোর করা, মাঝে মাঝে মায়ের শাড়ি পরে গিন্নী সাজার চেষ্টা করা

আরো কত কী!!

স্মৃতির ভান্ডারের এমন হাজারো স্মৃতি খুঁজে বেড়াতে বেড়াতে প্রায়ই অন্যমনস্ক হয়ে পড়ি।।
সে সময় ছিল না তেমন ধরাবাঁধা নিয়মের বেড়াজাল।
আহ্! আবার যদি ফিরে পেতাম তোমাকে এই যান্ত্রিক জীবনের বিনিময়ে...

প্রিয় শৈশব,
তুমি যেমন একটু একটু করে পিছনে চলে গিয়েছ, তেমনি তোমায় ঘিরে থাকা অনেক মানুষও আজ জীবনের খাতা থেকে হারিয়ে গেছে। 
প্রথম খেলার সাথী গুলো কে কোথায় তাও জানি না!
তাই মাঝে মাঝে ফিরে তাকাই তোমার দিকে.. আসলে ফিরে তাকাতে হয়...আজও যে ভুলতে পারি নি তোমায়।
কখনো ভাবতে ভাবতে চোখে জল চলে আসে, কখনো বা হঠাৎ হাসিতে ফেটে পড়ি।

আজও তোমায় ঘিরে একরাশ হাহাকার আর সুখের স্মৃতি বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে বেশ ভালোই আছি। ভোলা তো কখনোই যাবে না...

তাই তো কবি বলেছেন, "পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কি রে হায়.. ও সেই চোখের দেখা,প্রাণের কথা,সে কি ভোলা যায়..।"

মঞ্জিলা বসু

রবির পূজা


উত্তাল আবেগের ঢেউ 
উপচে পড়েছে  পান্ডুলিপির প্রতিটি কোণায় ,
হে রবি তোমার কিরণে 
দিগ্বিদিক্ আলোকিত ময়।
তুমি মূক্ শুভার ভাষা,গিরিবালার আশা
তারাপদ র ভবঘুরে মন,তোমার ভালোবাসা।
তুমি চন্দরার অভিমান 
বিনোদিনী, বিমলার পরকীয়ার প্রাণ
তুমি মৃণালের বিদ্রোহ 
মৃন্ময়ীর চেতনার নবজাগরণ।
সেই  তুমি উর্মিলা,পত্রলেখার উপেক্ষার অক্ষি
নন্দিনী রঞ্জনের সংগ্রামের সাক্ষী।
সোনার তরী ভাসায়ে তুমি করেছো বিচরণ
জগৎ সংসারে রয়েছে তোমার কর্মের প্রতিফলন।
হে কবি তোমায় সশ্রদ্ধ নমন।

আকাশ দাস

ঝরা পাতা


ঝরে যায় অনেক পাতা ,
সময় - অসময়ের স্রোতে ।
পাল্টে যায় পাতার রঙ
রঙহীন সমাজে।

ঝরে যায় অনেক পাতা,
থেকে যায় শাখা-প্রশাখা।
ঝরে যায় পাতা ,রয়ে যায় গাছ,
একাকিত্বের হাহাকারে।

ঝরে যায় অনেক পাতা ,
মেঘ আসার অপেক্ষায় ।
মেঘ তুমি আসো বৃষ্টি হয়ে ,
নতুন পাতার সবুজ স্বপ্ন নিয়ে ।

ঝরে যায় অনেক পাতা 
স্মৃতি সব ভুলে গিয়ে।
পুরনো পাতা ঝরে পরে ,
নতুন সবুজ পাতার উঁকি মেরে।

সুধীর দাস

মনুষ্য কৃতকর্ম ও মহামারি


বিশ্ব রাজনীতি , কূটনীতি ,অর্থনীতি সবই হল আজ ক্ষুন্ন
ধর্মের ভিত্তিতে ভেঙ্গে যাওয়া রাষ্ট্রও যেন  আজ একসূত্রে আবদ্ধ।
শতকের পর শতক আসে প্রকৃতিও বদলায়,
স্বপ্নভোরে মানবজাতি শূন্য হাতে ভিক্ষা চায়।
কালের পর কাল মানবজাতির কৃতকর্ম,
প্রাচীন থেকে মধ্য , মধ্য থেকে আধুনিক
কুয়ো-পুকুর-খাল-বিল-নদী কিংবা সাগর কিংবা সমুদ্র
জল-বায়ু-অগ্নি কিংবা সূর্যকিরণ
সবিই আজ মনুষ্য কৃতকর্মে হয়েছে দূষণ।
মানুষরূপী শ্রেষ্ঠ জীব স্রষ্টার সৃষ্টিকে করছে কলুষিত,
রবির অতিবেগুনী রশ্মিতে তাদেরি চর্ম ব্যাধিতে সংক্রমিত।
প্রাত্যহিক কার্যকলাপে দূষিত জল আর বায়ু
কখনও কলেরা কখনও প্লেগ কিংবা টাইফয়েড, 
কখনও বা শ্বাসকষ্ঠে জর্জরিত।
কালে কালে দিয়েছে দেখা মারনব্যাধি মহামারি 
ধরনীর কোল হয়েছে শূন্য 
               তাই  ধরনী দিতে চায় আড়ি।
১৭২০, ১৮২০ , ১৯২০ একের পর এক শতক হয়েছে পার
আবার ২০২০ করল এসে কোরোনা প্রহার।
হাজারে হাজারে যাচ্ছে প্রান যেন তুচ্ছ এ জীবন
আধুনিক চিকিৎসা শাস্রকেও করল নিধন।
মন্দির বল কিংবা মসজিদ অথবা গির্জা হয়েছে খালি
ছিল কয়েকদিন আগে ওখানেও মানুষের আড়াআড়ি।
একের পর এক শক্তিশালী রাষ্ট্র আমেরিকা ফ্রান্স ইটালি কিংবি চিন
চতুর্দিকে আজ শুধু মৃত্যুর মিছিল।
শেষে আজ করতে গ্রাস ঢুকল ভারতে ,
হিন্দু, মুসলিম, শিখ, বৌদ্ধ্য, খ্রিস্টান কিংবা জৈন
তাদের আজ কোরোনাকে দূর করাই সারমর্ম।
সবই ধুয়ে মুছে তাদের কাছে তুচ্ছ আজ ধর্ম।

কাউচার খান

রবি ঠাকুর

রবি সবার রবি ঠাকুর আছেন সবার মাঝে, 
রবির কিরণ ছাড়া কি কেউ একটুখানিও বাঁচে?

অজ্ঞনতার বাঁধন ছিঁড়ে আলোর দেশে মর্মবাণী, 
বিশ্বকবি তোমার মাঝেই বিশ্বভুবন থমকে জানি।

জালিয়ানের প্রতিবাদে 'নাইট 'তুমি ফিরিয়ে দিলে, 
ভারত মা'কে করতে স্বাধীন কলম হাতে শপথ নিলে।

সাহিত্যের রবি তুমি বিশ্বকবি শুধু তো নয়, 
তোমার দেখানো পথে তাই শত বাধাতেও আসবে জয়। 

তোমায় দেখেই যুব সমাজ জেগেছে উদ্দীপনে, 
লেখক সমাজ আজও তোমায় কবিগুরু বলে  মানে। 

প্রণজিৎ দত্ত

আর্তনাদ

বে হইবে শান্ত, ওহে প্রভু অনন্ত ?
কত প্রাণ হরিবার পরে ?
কাহার জন্য গড়া, ধন ধান্যে পূর্ণ ধরা,
না রাখিবা যদি মানবেরে ?
এত লোকের কান্না   তুমি কি শুনো না ?
চিৎকার করিছে তব অংশ জাত,
নির্দয় না হইও প্রভু   নাহি হেল কভু,
বাড়াইয়া দাও তব করুণার হাত।
তব রুদ্রানলে             প্রাণ বুঝি যাবে চলে ?
ওহে প্রভু রক্ষা করো মোদের
ওহে মহাকাল   এই রুপ তব করাল
ঘুচাইয়া নিয়া শান্ত রুপে কৃপা করো মোদের।

অসীম দেববর্মা

জিজ্ঞাসা 
             
আমি নারী - আমি রূপদর্শী
বয়স আমার অষ্টাদশী। 
আমি আমার বাপ - মায়ের আদরের মেয়ে
আমি আমার ভাইয়ের ছোট্ট ভগ্নিনী, 
বিবাহের পরে সহধর্মিনী, হবো জননী। 
আপনজনের নিরাপত্তার গন্ডিতে করি বাস
তবু মনে অজানার ত্রাস! 
ভেবে ভেবে মন ব্যাকুল হয় 
কত প্রেমিক বিবাহের পরে ভুলে প্রেমের ফিরিস্তি, 
যৌতুকের জন্য কত সদ্য বিবাহিত বধূর সংসার করার সাধারণ চিতাতে জ্বলে। 
কে করবে রক্ষা, জানতে ইচ্ছা করে, 
স্ত্রী আর পুরুষ ধরনীর সন্তান সবাই, দ্বিচারিতার প্রহার শুধু কেন স্ত্রী উপরে পড়ে? 

সজীব পাল

জীবন 


এক

আমি একবার সেই পথ দেখবো
"বনলতার"চুল হতে প্রেমিকের মন,
কিভাবে কাটলো রবী জীবনানন্দের জীবন !

দুই

উর্ধ্ববত্ম্র মানচিত্রে ধ্রুব তারা
ক্ষুধারো উর্ধ্বে প্রিয়তমার ঠোঁট 
মাংস কামড়ে ধরার নাম প্রেম ।

রাহুল শীল

আত্মিক গবেষণা
               
 গভীর সমুদ্রের স্রোত বইয়ে আছে
 জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে,
 বাগানের ফুল যুগের পর যুগ ফোটে
 রবীন্দ্রনাথকে জানে না কে?
 
জন্মের পরই ভবিষ্যত সম্ভাবনার ঘ্রান
হৃদয় মেঘে জন্ম সাহিত্যের শাখারা,
আমাকে আমিই বানাব,এই মনোভাব
প্রতিনিয়ত দিত সজাগ পাহাড়া।

আবেগ মাথা নীচু করে কলমের কাছে
থিতিয়ে জমে গান, গল্প, কবিতা।
রাতের ধ্রুবতারা জন্ম দিয়েছিল
রবির আকাশ আঁকা রংতুলি টা।

বিরহকে শ্রাবণ ভেবেছিল ভীষণ
প্রিয়কে শব্দে প্রতিশব্দে বিশ্লেষণ,
প্রেমকে ময়নাতদন্তের জন্য শুধুই
পৌরুষ বসন্তে কালবৈশাখী অন্বেষণ।

কে পারে একহাতে কলম,আর
একহাতে নিজের উপর চাবুক চালাতে,
বিদ্যুৎবেগী আত্মিক গবেষণায়
একমাত্র রবীন্দ্রনাথই পারে বিশ্বকে হারাতে।

সংগীতা দেব

প্রিয় মননস্রোত

মননস্রোত
শুধু যে সাহিত্য পত্রিকা,
একটি প্লেটফর্ম,
একটি সাহিত্য সংগঠন,
শুধু তাই নয়।
মননস্রোত
মিলিয়েছে মনকে মনের সাথে,
এ শহর থেকে ঐ গ্রামে
রাজ্য রাজ্যান্তরে।
অগনিত মাইল পথকে করেছে অতিক্রান্ত।
মননস্রোত
নতুনে-পুরাতনে, নবীনে-প্রবীনে যেন,
বৃক্ষডালি পুষ্পপল্লবে মুখরিত।
প্রাণে প্রাণে যেন উচ্ছাস নতুন সৃষ্টির।
মননস্রোত
জীবনের কথা বলে,মনের কথা শোনে।
সমাজকে তোলে ধরে,কল্পনাকে জীবন্ত করে।
মননস্রোত
প্রেমের,বিরহের,অভিমানের, অভিযোগের
দুঃখ,সুখের,একালের,সেকালের কথা বলে।
মননস্রোত
কবির ভাবনায়,প্রকাশের,
পাখা লাগিয়ে দেয় উড়িয়ে।
উৎসাহ জাগায় কবির সৃষ্টি উন্মোচনে।
মননস্রোত
গুটি পায়ে এগিয়ে গিয়েছে অনেকটা দূর,
গড়েছে ভালোবাসার এক পরিবার।
বাঁধা পেরিয়ে নব নব সৃষ্টির 
আনন্দে ছড়িয়ে পড়েছে,
তোমার আমার প্রিয়
মননস্রোত।

নিপু দাস

হে রবি ঠাকুর


বৈশাখের আজ পুন‍্য তিথীতে তোমারও চরণ তলে,
আমার মনের ভাবনাগুলো রেখেছি সমর্পনে।
বাল‍্যকালের সেই সহজপাঠেই প্রথম হাতেখড়ি,
যৌবনে মন বিষন্ন হলে,তোমার গল্পগুচ্ছই দিয়েছে হাতছানি।
ঘর থেকে রাজনীতি মঞ্চে তোমার কাব‍্য সম্ভারের আনাগোনা,
কিশোর থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত তোমার গল্পগুচ্ছেই মন হয়ে থাকে আনমনা।
ভ্রাতৃত্বকে পুরস্কৃত করেছো তুমি রাখিবন্ধন উৎসবে,
প্রতিটি ভারতবাসীর মনে-প্রানে তুমি জাতীয় সঙ্গীতের মাধ‍্যমে।
কাব‍্য-গল্প-সাহিত‍্যমালা তাতেই কি শুধু শেষ!
অজস্ত্র গানের সম্ভারে মন বেদনা ভুলাই এবং নানা দ্বেষ।
ভ্রান্ত পথে মন বিহলিত হলে তোমার লেখা দেখায় দিশা,
কোথাও তুমি শ্রেষ্ঠ প্রেমিক,কোথাও তুমি শ্রেষ্ঠ শ্রষ্ঠা।
মনস্তত্বের এক অভিনব প্রতিভা রেখেছো 'চোখের বালিতে'।
অতুলনীয় 'গীতাঞ্জলি' কাব‍্য তোমায় নিয়ে গেছে বিশ্ব কবিতে।
তোমায় নিয়ে লিখতে বসে আমি দেখিয়েছি যে স্পর্ধা,
চরণ কমলে তোমায় বিনম্র প্রাণাম জানিয়ে,মনে রেখেছি অজস্ত্র শ্রদ্ধা।
      "এ রবির উদয় আছে অস্ত নাই,
       এ রবি মানুষ হয়েও ঠাকুর তাই"।

অরিজিৎ মজুমদার

করোনার করুণা

চারিদিকে আজ হাহাকার
সাইরেন দিনে রাতে, 
কিন্তু সে যুদ্ধে আজ
সব দেশ একসাথে। 

যুদ্ধটা নয় মানুষে মানুষে
বিপক্ষ এক ভাইরাস, 
আজ মনে হয় সৃষ্টিকর্তা
নিজের সৃষ্টিতেই নিরাশ। 

দেবদূত আজ সকল ডাক্তার
মন্দির হাসপাতাল,, 
সকলে আজ ভাই ভাই সে 
ভদ্র হোক আর মাতাল। 

তাই আজ বুঝিনা আমি
কি এই করোনা, 
ঈশ্বরের কোনো অভিশাপ
নাকি তার করুণা। 

কিন্তু  এই করুনাতে 
বলি যে শত শত, 
দয়াময় তুমি নাও একে
কষ্ট দেবে আর কত।

সুজাতা ভৌমিক

রবির আদর্শ্য

জানো তো গুরুদেব,
 
বহুদিন ধরে ভাবছি লিখবো বটে, 
তোমায় নিয়ে দুই-এক কথা, বেশ কিছু শব্দ জুড়ে তবে, 
বিশ্বকবি তুমি যে আজ, 
কাব্য, নাট্য, গানে সবএই তো তোমার রাজ, 

জানো তো ভানুসিংহ ,

তোমার লেখনির ছন্দে মুগ্ধ হয়ে 
আমি আজ লেখিকা বটে ।
অনুপ্রেরনা দাতা তুমি,প্রিয় কবি আমার তবে ।

বলছি যে কবিগুরু,

লিখিত তোমার যা যা আছে, 
আজ আমার মন প্রশ্ন জাগে 
'' পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে ''--
মন আর আগের মতো করে কি মেতে উঠে সবার ?

জানো তো ঠাকুর,

'' ডাক শুনে '' -- 
কেউ আসেনি বলে, আজ আমি আমার মতো করে করে একলা চলছি ।
একলা চলার ইচ্ছাটাও তোমার থেকেই ।

জানো তো প্রিয় ,

''ভালোবেসে '- '' নিভৃতে যতনে --
কেউ লিখে না যে নাম 
কলঙ্কের কালিমা শরিরে এঁকে করে যে বদনাম ।
সোহাগের শেষে ক্লান্ত চোখে,আবছা জলের ছাপ ।
প্রেমের মোহে আজ আত্মঘাতী ভালোবাসা দাগ ।

জানো তো রবি ,

'' পুরানো সেই দিনের কথা ''--
মনে পরলে লাগে যে বড়ো ব্যাথা 
নতুন করে ভাবতে গেলে মনে জাগে কত কথা ।

বলছি যে মশাই ,

দেখছি যা, চোখের সামনে তোমার লেখনির সাথে ঠিক মিলছে তো ? 
নাকি, বর্তমানটা তৎকালের সাথে অমিল হয়ে গেলো ?

না মহাশয়,

তোমাকে আমি ভুল প্রমানিত করছি না ।
এই ধরনিতে আমি যে এক তুচ্ছ মনুষ্য বটে ।

তবে,জানো তো ভণিতা ,

বড্ডো জানতে ইচ্ছে হয়,
তোমার আদর্শে কি সবাই চলিবারে চায় ?
নাকি ২৫ শে বৈশাখ তোমায় শুধু স্মরণ করিয়াই যায় ?

দীপেশ নাগ

অনাথ ছেলে


রাস্তার ধারে সারি সারি, 
বাপ-মা হারা পথভিখারি।

কি ছিলো তাদের অপরাধ?, 
পেটের ক্ষুধায় মরছে আজ।

কুকুর-বিড়াল খাচ্চে যাহা,
অনাথ ছেলে খাচ্ছে তাহা।

ক্ষুধার জ্বালায় ছুটে বেড়ায় সকলের তরে,
দুমুঠো ভাত দেয়নি কেউ তারে।

দিনের শেষে নিদ্রা গেছে সবে,
সে যে রইলো সারা রাত্তির অনাহারে।

এ জগতে কি আছে কেউ তাদের আপন?, 
ডাস্টবিন খাবার খেয়ে করছে দিন যাপন।

চলুননা সবে পাশে দাঁড়াই,
অনাথ ছেলের ক্ষুদা মিটাই।

ডাস্টবিন থেকে খাবেনা খাবার যতই সে হোক অনাথ,
দেখবেনা আর অনাথ ছেলে অন্নবিহীন প্রভাত।

দিপ্সী দে

রবির কথা
 

জ্যোতি দাদার কথায় হাত দিয়েছিলে কবিতার পাতায়।

জন্ম হবার পর ছোট্র হরিণ শিশুটি যেইভাবে গুঁতা মারে... সেইরূপ....

রবীন্দ্রনাথ ও কবিতার খাতায় সৃষ্টি করেছিলেন,
ছোট রবির কাঁচা হাতের সব কবিতা,
জীবন স্মৃতির পাতায় পাতায় পূর্ণ রবি বলে গেছেন,ছোট রবির  সেইসব কথা।

কাদ্মবরীর কাছে পাঠ করতো রবি,নিত‍্যনতুন কবিতা।
রবি আরো চেষ্টা করো বিহারীর মতো হয়নি!
এই কথায় মন খারাপ হলেও,নন্দন কাননের প্রতিটি পাতা নিঃশব্দে শুনত রবির কবিতা।
সাংকেতিক নাটক বিরহ রোমান্টিক গান কোথায় নেই তুমি?

উপন‍্যাসের পাতা দর্শনের পাতা রাজনীতির পাতা সবই জানে,
কবি রবির আত্মজীবনের কথা।

অভ্রজিৎ দেবনাথ

একটা অনুভূতি

চেতনাহীন হওয়াটা বড়ো কঠিন
এ যুগে পদে পদে নতুন সূত্র;
মান্ধাতার গণিত অপছন্দ তবু
চোখে পড়তে হয় মোটা চশমা।
সবকিছু আশেপাশে থেকেও মৌনতাকে
সাথী মেনে চলাটা একবিংশ শতাব্দী।

চারিদিকের মিথ্যা আলোকসজ্জায় 
উলঙ্গ কবি নেশা ফুরিয়ে গেলে
একসময়ের প্রেয়সীক মনে করে।
দূরে দেখতে পাওয়া যায় আবছা কারো ছবি,
আর মনে হয় বৃষ্টি আসবে;
নেমে আসবে মেঘকন্যা,
তারই আজ শীতল অনুভূতি।
                  

অভীককুমার দে

আন্তর্শূন্য মিটিং

আমার রুমটা ছোট হওয়ায় লেখাপড়ার জন্য আলাদা টেবিল বসাতে পারি না। বই খাতা বিছানায় রেখেই লেখাপড়া করতে হয়। বসতে হয় কুসুম টেবিলে। একটা কিছু লিখছিলাম তখন। রাত প্রায় দুটো। হঠাৎ দেখি রবিদা এসে হাজির ! আমার কাঁধের উপর ভর দিয়ে বিছানার এক কোণে বসলেন। একগাল দাড়ির ভেতর মুচকি হাসলে বোঝাই যায় না। চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম, মুখ থেকে হাসির ঢেউ চোখ পর্যন্ত গেছে। দুচোখের খাদে আছড়ে পড়ে কুঁচকে আছে চোখ। আমি বোকার মত শুধু দেখছিলাম। সামান্য এগিয়ে চুলে বিলি কেটে দিয়ে বললেন, 'কি-রে, বোকার মত কী দেখছিস ?'
আপনি এত রাতে... 
-- 'কেন, আসতে পারি না ?'
না... মানে... 
-- 'মানে আবার কী ?'
আপনি তো... 
-- 'আমি কী ! মরে গেছি ? আশ্চর্য ! তুই জানিস না, রবি মরে না ? একথা বলতে পারিস যে, সময় বদলে গেছে। সাধু থেকে চলিত হতে পারে, চলিত থেকে সাংকেতিক হতে পারে, কিন্তু বেচাকেনা যা কিছু রবি'র বাজারেই। কিরে, ভুল বললাম কিছু ?'
না... মানে... মানে...
-- 'আচ্ছা, এত কাচুমাচুর দরকার নেই। কিছু বলার থাকলে খুলে বল। এখানে আমার বেশিক্ষণ থাকার সুযোগ নেই। জগদীশ, সুকান্ত, নজরুল, আর নতুন ছেলেটা... ওর নাম যেন কী... কি কালাম যেন... ও... আব্দুল কালাম, ওদের আগে পৌঁছতে হবে। নাহলে, বুড়োটুড়ো মানবে না। বকাবকি করলে সহ্য করতে পারবো না। তাছাড়া, আমরা গেলে বিনয়, ক্ষুদিরাম ওরাও আসবে।'
-- কেন ? 
'এ আবার কেমন প্রশ্ন ! আসবে না ? দেশটা কি তোদের মত গরু ছাগলদের কাছে এভাবে ছেড়ে দেবে ? তোদের তো কাণ্ডজ্ঞানই হয়নি। তোরা সামান্য সুখের জন্য সব ভুলে বসে থাকিস। তোদের মাথায় থাকে না, এই দেশের ইতিহাস। মিথ্যে ঘটনা বানিয়ে রটিয়ে দিতে পারলেই হয়ে গেছে। দুর্যোগ, দুর্দশায়ও নিজেদের স্বার্থ নিয়েই ভাবে। সব ধ্বংস হয়ে গেলেও কারও কিছু যায় আসে না। আর তুই বলছিস, আমরা কেন এলাম বা ওরা কেন আসবে ?'

চোখ থেকে চোখ সরে গেল আমার। তাকাতে পারছি না তাঁর দিকে। কিছু বলার সাহস পাচ্ছিলাম না। আমি চুপ । আমার অবস্থা দেখে বিকট শব্দে হেসে উঠলেন তিনি। সেই শব্দে হারিয়ে যাচ্ছিল পুলিস গাড়ির সাইরেন। হাসি থামিয়ে চিবুক ধরে টেনে তুললেন। চোখের তারায় আলো ফেলেছি চোখের। মাঝে সাঁকোর মতই দৃষ্টিপথ। দৃশ্য কিছু, এলোমেলো হাঁটছে। আমি নির্বাক শ্রোতা, মুখোমুখি। 
-- 'জানিস, দেশে নেমেই কলকাতা গেলাম। সব কেমন থমথমে, অচেনা মনে হলো। আমার পর যারা দায়িত্ব নিয়েছে, ওদের বোঝা কঠিন। শঙ্খটা বুড়ো হয়ে গেছে। সুবোধ তো দেখতেই যা হিরোর মতো। বাকিদের কথা বলে লাভ নেই। মমতা মেয়েটা লিখবে না রাজ্য চালাবে ! এখন কি আর বহিঃশত্রুর ব্যাপার আছে ? নিজেরাই তো নিজেদের শত্রু। কার কথা, কাকে লিখবে, আর কার জন্যই বা লিখবে ? অবস্থা দেখে রাগ উঠছিল খুব। বাকিদের ওখানে রেখে বেরিয়ে পড়লাম। বাংলাদেশ, আসাম হয়ে সোজা চলে এলাম ত্রিপুরায়। জানিস তো, এ রাজ্যে অনেকবার এসেছি। রাজবাড়ির পুরনো দালান বাড়িগুলো দেখে ভেতরটা হুহু করে উঠলো। প্রদ্যোতটা কেমন যেন ! ওদের মত হয়নি। সবকিছু দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। রেজিস্টারে কি লিখবো ভাবছি।'
রেজিস্টারে লিখবেন মানে ? 
-- 'তুই এতো বোকা কেন ? আমি কাজ ছাড়া এসেছি নাকি ? আমরা কেউই কাজ ছাড়া আসিনি। যার যার কাজ করছে। আমিও কাজ সেরেই সোজা তোর কাছে এসেছি। ফিরে গিয়ে লিখবো। এই যে তোকে রেজিস্টারে লিখবো বললাম, তার মানে-- আমি চলে যাবার পর, বাংলা বিভাগের দায়িত্বটা আমাকে দিয়েছে। বিশ্বকবি হবার সুবাদে এই দায়িত্ব পেয়েছি। তাই তো আসতে হয়েছে। এসেও তেমন ভালো লাগছে না। পশ্চিমবঙ্গের কথা তো বললাম, শুনলি। বাংলায় গিয়ে দেখি, সেলিনা মেয়েটারও মন খারাপ। দেশের অবস্থা ভালো নয়। নির্মলেন্দুর কথা কি বলবো, আমার মতো মুখভরা দাড়ি নিয়ে দিন গুনছে। কাগজটা পেলেই আমার অফিসে গিয়ে হানা দেবে। বাকিরা যার যার সাধ্যমত কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সেখান থেকে আসাম এসেও তেমন কিছু ভালো অভিজ্ঞতা হয়নি। তপোধীর নিজে ঝুঁকি নিয়ে যা একটু মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল, অথচ পারলে তাকেই মেরে ফেলার অবস্থা। আর তোদের রাজ্যের কথা বলে তো কোনও লাভ নেই। নকশাল লেখকগুলো কলকাতার বাতাসে নাক ঢুকিয়ে রেখেছিল বহুদিন। শ্বাসপ্রশ্বাসও ভালোই চলছিল। সময় কি আর একরকম থাকে ? কলকাতার বাতাসে যখন অক্সিজেন কমে গেছে, ওদেরও পথ নেই। ফাঁকিবাজেরদল ভোল পাল্টে গর্তে ঢুকে গেছে। এখন সুযোগ পেলে গর্ত থেকে ছোবল মারার চেষ্টা। 
রেজিস্টারে এসব অভিজ্ঞতা লিখে রাখলে আন্তর্শূন্য মিটিং এ আমার নিজের মাথাই কাটা পড়বে। যদিও একটা আশার আলো দেখতে পেলাম। নতুন প্রজন্মের কাছে কিছু সময়ধরা অনুভব আছে ঠিকই, এই বিষয়টা বিশেষ দ্রষ্টব্যে লিখে রাখতে হবে। তারপর, তুই তোর কথা বল। আমি... '

কথা চলছিল। অনেক কথার পরও কথা শেষ হতে চায় না। রবিদা আর আমি, আমি আর রবিদা, দুজন একটি রাতের শেষ সময়; আমাকে গান গাইতে বললেন। আমিও শুরু করলাম--
"আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে, 
এ জীবন..."
রবিদা হাসতে হাসতে বেড়িয়ে গেলেন। একটু পরে উঠোনে এসে দেখি-- পূর্ব আকাশে তিনি অফিস খুলে বসেছেন। 

চন্দন পাল

চিঠি (৩)


জন্মদিনে শুভেচ্ছা নিও ঠাকুর, 

একশ ষাট বছর আগে তোমার যেমন,
আকাশ বাতাস নদী গাছপাখি হাসতো গাইতো বইতো,
আজ আমার ধরাতেও তাই বয়।

গাড়ি নেই ঘোড়া নেই,  পা'এ হেটে চলে পথ।
হাসপাতালে ভীড়নেই, শাকভাতে চলে রথ।  
আকাশে লোহার পাখি, আনাগোনা নেই তত
পরিযায়ী পাখি ফিরে, আকাশে আগের মত।

জানো ঠাকুর, কিছুদিন আগেও ,,,,,
সৈকতে কাঁকড়া ফ্লেমিঙ্গো ডলফিন ঘেষতো না, আজ অনুভব করি।

আমরা জঙ্গল দেখতে যেতাম,
আজ বুনোহাঁস, নীলগাই, হরিণ, শীল, দুম্বা দালান দেখতে আসে।

নগরী থেকে আকাশ দেখা যেতো না, আজ আকাশ পৃথিবীকে চাখে। 

গঙ্গা যমুনার জল নির্মল ছিল কই! আজ বিনাব্যয়ে আয়নাময় স্বচ্ছ। 

শুধু একটু তফাৎ ,,, 
তোমার আশপাশ  ছিল করুণা ভরা,
আর আমরা ক্ষুদ্র করোনায় ক্লিষ্ট। 

প্রতিযোগিতা আর অহংকারে স্বর্গ মর্ত্য পাতালে যারা বিক্রমে ঘুরতো , 
আজ মুখাবরণী আর পাজামায় ঘরবন্দী। 
ক্ষমা কোরো ঠাকুর।

শঙ্খ সেনগুপ্ত

প্রবাসের চিঠি


পজেটিভ শব্দটি এখন আতঙ্ক।
ভয়ানক অভিশাপ।
অপরাধী ভেবে তাকায় লোকে।
তারপরও জানতে চাও-
আমি কতটা কমিটেড,
কতটা পজেটিভ তোমার বিষয়ে!

তোমার কি অসুখ করেছে?
স্বেচ্ছা-নির্বাসনে আছি তো ভালো।

দূর থেকে দেখি-
এক অপরিচিতা, নাম না জানা
ফুলের গন্ধে, বিদেশ বিভূঁয়ে,
স্বদেশের গন্ধ পেয়ে কাঁদছে।

আমি তার কান্নার সুরে,
আমার আমিকে পেলাম।

তোমাকে নিগেটিভ ঘোষণা করলে,
ইচ্ছে জুগিয়ে খুঁজে পেতে পারো,  
কি করে, নাম না জানা ফুলে,
নিজ মাটির গন্ধ মেলে।

শৌভিক বাগচী

আমার রবি 


আমার রবি নিপুণ হাতে 
আঁকা কোন ছবি নয়। 

আমার রবি প্রতিদিনের লড়াইয়ের এক বিপন্ন সংসারের 
 নেহাৎই কাছের মানুষ ,
না হলে কেনই বা বলবেন তিনি 
এই সব  মূঢ় ম্লান মূকমুখে
 দিতে হবে ভাষা ?
কেনই বা বলবেন , সেই খানে যে 
চরণ তোমার বাজে , সবার পিছে 
সবার নীচে সব হারাদের মাঝে ?

আমার রবি কোন দেবতা নয় 
আমার রবি কোন নেতাও নয় 
দলভুক্ত পিপিলিকার মতো 
তিনি ক্ষুদ্র পাখায় বজ্রের হুঙ্কার 
নিয়ে ঘোরেন না।  

আমার রবি হয়তো নেহাৎই 
ওদের মত   , যারা প্রতি দিন 
মরেও অমর  , ছড়িয়ে থাকা 
পোড়া রুটিতে রক্ত দিয়ে ইতিহাস 
লেখে যারা , আমার রবি তাই। 

আমার রবি কোন ছবি নয় 
মালা তাকে দিও না। 
পারলে একটু নিজেকে দিও তাকে , ঠিক খুঁজে পাবে চারপাশে অজস্রের মাঝে 

প্রতি দিন প্রতি পল 
প্রতিক্ষণ তাই রবি -ক্ষণ। 

আমার রবি ছবি নয়। 

বিনয় শীল

নবীন রবির আলো
 
মানব জমিন ধূসর, সবুজ শূন্য।
মানব জাতির শত্রুরা 
সভ্যতাকে দাহ করেছে।
তার চিতাভস্ম উড়ছে চৌদিকে।
নীল আকাশের দখল নিয়েছে
ধোঁয়ার কুণ্ডলী ও
কর্কশ কাকের দল ।

ঘোর তমীস্রা।
ঘনীভূত হচ্ছে ক্রমশঃ।
সভ্যতার সাথে সমাধীস্থ
ললিতকলা।

হঠাৎ আকাশের এক কোনে-
একটা আলোক বিন্দুর 
আত্মপ্রকাশ।
ক্রমশঃ চুইয়ে পড়ছে তার-
আলোর দ্যুতি।
বিকাশমান সেই অপূর্ব
আলোক বিন্দু।
কিন্তু ব্যাতিক্রমী ধর্মকে
অবলম্বন করে,
চিরাচরিত ধারাকে অস্বীকার করে।

কি আশ্চর্য তাঁর-
রূপ পেলবতা।
তাঁর নূতন আলোক ধারায়
স্নাত হয়ে পৃথিবী আজ
নব রূপবতী ।

মানব জমিন সবুজ,
শ্যামল হলো আবার।
নূতন সুরছন্দে নন্দীত-
পৃথিবীর বনপ্রান্তর । 

খরস্রোতা নদীর বুকেও বাজে
নূতন গানের মূর্ছনা।
কার বাঁশরীতে আজ-
পৃথিবীর আকাশ মুখরিত।
দিকে দিকে আজ শুধু
মিষ্টি মধুর, কোমল মেদুর
নূতন ফুলের মেলা ।

দিক দিগন্তে একটিই শব্দ,
কি সেই আলোক বিন্দু ?
কোন যাদু বলে
শ্মশান ভূমিতে রচিত হলো
নন্দনকানন ?

হঠাৎ জাগ্রত সভ্যতা
উত্তর দিলো-
"নবীন রবির আলো" 

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...