Saturday, December 31, 2022

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

আমাদের কথা

মৃত্যুকে ভালোবাসা ছাড়া মানুষের কোনো উপায় নেই। এটি অনিবার্য। জগতের কোনো প্রাণী মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারবে না। মৃত্যুর মতো স্বাভাবিক বিষয় নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। মৃত্যু বিষয়ক একটি জার্নালই আমাদের এ মাসের সংখ্যা। এটি একটি অমীমাংসিত জার্নাল। বিভিন্ন তথ্য ইন্টারনেট ও পুস্তক নির্ভর। বিন্দুমাত্র তথ্যও আমরা নিজেদের নয়। আপনারা পড়ুন। ভাবিদিনে এমন বিষয় ভিত্তিক জার্নাল প্রকাশ করা হবে কিনা তা আপনাদের মতামতের উপর নির্ভরশীল। সবাইকে ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা। 

মনন স্রোত জার্নাল : মৃত্যু

যাবতীয় তথ্যঋণ ও বিশদ বিবরণ

  1.  "Definition of death | Dictionary.com"। www.dictionary.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৬
  2.  http://www.dictionary.com/browse/death?s=t
  3.  Samir Hossain Mohammad; Gilbert Peter (২০১০)। "Concepts of Death: A key to our adjustment"।
  4.  "Crossing Over: How Science Is Redefining Life and Death"। Magazine (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৬-০৪-০১। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-১৬
  5.  মেটকালফ, পিটার; হান্টিংটন, রিচার্ড (১৯৯১)। Celebrations of Death: The Anthropology of Mortuary Ritual। ক্যামব্রিজ প্রেস।
  6. ↑    Bondeson 2001
  7.  Aubrey D.N.J, de Grey (২০০৭)। "Life Span Extension Research and Public Debate: Societal Considerations" (PDF)। ডিওআই:10.2202/1941-6008.1011। সাইট সিয়ারX 10.1.1.395.745অবাধে প্রবেশযোগ্য। ১৩ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০০৯
  8. ↑   "WHO Report on the Global Tobacco Epidemic, 2008" (PDF)। WHO। ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩। lay summary (৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)।

ভুল মৃত্যু সনাক্তকরণ ও একটি তথ্য

বিশ্বে মৃত বলে ঘোষণা করার পরে মৃত ব্যক্তি জীবিত হওয়ার ঘটনা রয়েছে। অনেক সময় কয়েকদিন পরে তাদের কফিনে, বা যখন শ্বসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে তার আগে তারা জীবিত হয়ে উঠে। আঠারো শতকের মাঝামাঝি থেকে জনসাধারণের মাঝে ভুল করে জীবিত সমাধিস্থ করার ভয় কাজ করে এবং মৃত্যুর লক্ষণগুলির অনিশ্চয়তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হয়েছিল। কবর দেওয়ার আগে জীবনের লক্ষণগুলির পরীক্ষা করার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল যার মধ্যে ছিল মৃতদেহের মুখে ভিনেগার এবং মরিচ ঢেলে দেয়া থেকে শুরু করে পায়ে বা মলদ্বারে লাল গরম পোকার প্রয়োগ করার মত পরীক্ষা। ১৮৯৫ সালে লেখক চিকিত্সক জে সি ওসলে দাবি করেছিলেন যে প্রতি বছর ইংল্যান্ডে এবং ওয়েলেসে প্রায় ২,৭০০ জন ব্যক্তিকে অকালে কবর দেওয়া হয়েছিল, যদিও অন্যরা এই অনুমানটি ৮০০ এর কাছাকাছি বলে জানিয়েছেন। তথ্যটি উইকিপিডিয়া থেকে নেওয়া। 

আইন ও মৃত্যু

যে কোনো দেশে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পর আইনী কার্যক্রম থাকতে পারে যা বিভিন্ন বিচার বিভাগের মধ্যে পৃথক পৃথক হতেও পারে। একটি মৃত্যুর সনদপত্র বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রদান করা হয়, সেট কোনও ডাক্তার দ্বারা, বা কোনও প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বারাও হতে পারে তবে সেক্ষেত্রে কোনও ডাক্তার মৃত্যুর ঘোষণার দেবার পরে তার জারি করা যেতে পারে।

ঋণ : উইকিপিডিয়া

মৃত্যু : বৌদ্ধ ধর্মমত

বৌদ্ধ মতবাদ ও অনুশীলনে মৃত্যু একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মৃত্যুর চিন্তাই সিদ্ধার্থ বুদ্ধকে অমৃত সন্ধানের পথে নামিয়েছিল এবং অবশেষে জ্ঞান অর্জনের জন্য প্ররোচিত করেছিল। বৌদ্ধ মতবাদে, মৃত্যু মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণের মূল্যের স্মারক হিসাবে কাজ করে। মানুষ হিসাবে পুনর্জন্ম হওয়া একমাত্র অবস্থা হিসাবে বিবেচিত হয় যেখানে কোনও ব্যক্তি জ্ঞান অর্জন করতে পারে। অতএব, মৃত্যুর মাধ্যমে নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিতে সহায়তা করে যে কারও জীবনকে অবহেলা করা উচিত নয়।

মৃত্যু : খ্রীস্ট ধর্মমত

 খ্রিস্টধর্মের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের বিভিন্ন শাখা রয়েছে; মৃত্যুর উপর আধিক্যপূর্ণ মতাদর্শ পরবর্তী জীবনের জ্ঞান থেকে বৃদ্ধি পায়। অর্থ মৃত্যুর পর ব্যক্তি মরণশীলতা থেকে অমরত্বে বিচ্ছেদ ঘটাবে; তাদের আত্মা শরীর ছেড়ে আত্মার রাজ্যে প্রবেশ করে। দেহ ও আত্মার এই পৃথকীকরণের (অর্থাৎ মৃত্যু) পর পুনরুত্থান ঘটবে। যীশু খ্রিস্ট একই রূপান্তরের প্রতিনিধিত্ব করেন যা তাঁর দেহকে তিন দিনের জন্য সমাধিতে রাখার পরে মূর্ত হয়েছিল। তাঁর মতো, প্রতিটি ব্যক্তির দেহ পুনরুত্থিত হবে এবং আত্মা এবং দেহকে একটি নিখুঁত আকারে পুনরুত্থিত করবে। এই প্রক্রিয়াটি ব্যক্তির আত্মাকে মৃত্যু সহ্য করতে এবং মৃত্যুর পরে জীবনে রূপান্তরিত করতে দেয়।

মৃত্যু : সনাতন ধর্মমত

সনাতন ধর্মানুসারে, মৃত্যুকে অস্থায়ী জড় দেহ থেকে অমৃত জীব আত্মার পৃথক হয়ে থাকা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। আত্মাই জড়দেহের চেতনার কারণ বলে মনে করা হয়। আত্মা যখন এই শরীর থেকে বেরিয়ে আসে, তখন দেহ আর চৈতন্য (জীবন) ধরে রাখতে পারে না। তখন ব্যাক্তি বৈষয়িক বাসনার অনুযায়ী কাজ করতে পারে না। মৃত্যুর পর আত্মা কৃতকর্মের ফলের উপর ভিত্তি করে একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ নতুন শরীরে প্রাপ্ত হয়। একে পুর্নজন্ম বলা হয়। মৃত্যুর সময় মনের বাসনা(শেষ চিন্তা) অনুযায়ী পুনর্জন্মে শরীর প্রাপ্ত হয়।

সাধারণত পুনজন্ম প্রক্রিয়ার ফলে (আত্মার স্থানান্তর) একজন তার আগের জীবনের সমস্ত স্মৃতি ভুলে যায়। কারণ প্রকৃতপক্ষে কোনো কিছুই মারা যায় না, অস্থায়ী জড় দেহ সর্বদা পরিবর্তিত হয়। এই জীবন এবং পরবর্তী উভয় ক্ষেত্রেই মৃত্যুর অর্থ কেবল পূর্বের অভিজ্ঞতা (বিগত পরিচয়) ভুলে যাওয়া। শুন্য থেকে শুরু।

মৃত্যু : ইসলাম ধর্মমত

ইসলামে বলা আছে ইসলামী রীতি অনুযায়ী, মৃত্যুর পরেও জীবন আছে এবং এটি আখেরাত নামে পরিচিত। ইসলামে, একজন ব্যক্তি কখন মারা যায় তা আল্লাহই সিদ্ধান্ত নেন এবং বেশিরভাগ মুসলমান বিশ্বাস করেন যে যখন তারা মারা যায়, ইয়াওম আল-দিন, থেকে বিচারের দিন পর্যন্ত তারা কবরে থাকবে। বিচার সেখারে প্রধান।

মৃত্যু : ইহুী ধর্মমত

ইহুদী ধর্মের মতে পরকালীন জীবন নিয়ে বিভিন্ন ধরণের বিশ্বাস রয়েছে, তবে তাদের কেউই মৃত্যুর চেয়ে জীবনের পছন্দকে বিরোধিতা করে না। এটি আংশিক কারণ মৃত্যুর ফলে কোনও আদেশ পালন করার সম্ভাবনা বন্ধ হয়ে যায়। চিরতরে বন্ধ বুঝানো হয়েছে।

মৃত্যু : লন্ডনের একটি গুরুত্বপূর্ণ জার্নাল

লন্ডন থেকে প্রকাশিত একটি জার্নাল থেকে কিছু অংশ ;
 ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?’ এই শ্বাশ্বত সত্য সকলেই জানেন। মৃত্যুকে এড়ানো সম্ভব নয়। কিন্তু যদি আগে থেকে মৃত্যুর আগমন ধ্বনি টের পাওয়া যায়? অন্তত, প্রিয়জনদের থেকে ভালভাবে বিদায় নিয়ে নেওয়া যায়। বাকি থাকা কাজ, সেরে ফেলা যায়। তবে, সত্যিই কি কেউ মৃত্যুর বিষয়ে আগে থেকে উপলব্ধি করতে পারে? কেউ যখন মারা যায়, তখন ঠিক কী ঘটে? এই সকল প্রশ্ন প্রায় সৃষ্টির শুরু থেকে মানুষকে বিচলিত করেছে। তবে, এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান এই বিষয়ে খুবই কম জানতে পেরেছে। তবে, সম্প্রতি ইংল্যান্ডের এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দাবি করেছেন, কোনও মানুষকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার আগে মৃত্যু কিছু সঙ্কেত দেয়। যা থেকে বোঝা যায়, ওই ব্যক্তির মৃত্যু আসন্ন।

দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুর ক্ষেত্রে আগে থেকে কিছু বলা কঠিন। মৃত্যুর সঙ্কেত নাও মিলতে পারে। তবে, স্বাভাবিক মত্যু বা রোগভোগে মৃত্যুর ক্ষেত্রে, সাধারণত ওই ব্যক্তির মৃত্যুর প্রস্তুতি তাঁর মৃত্যুর প্রকৃত সময়ের দুই সপ্তাহ আগে থেকেই শুরু হয়ে যায়। এমনটাই দাবি করেছেন এক ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট’এর চিকিৎসক। ডাক্তারি জীবনে অন্তত কয়েকশো মানুষেকে অত্যন্ত কাছ থেকে মরতে দেখেছেন লিভারপুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অনারারি রিসার্চ ফেলো সিমাস কোয়েল। এই বিষয় গবেষণা করেননি তিনি। তবে,ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকেই মৃত্যুকে পড়ে নিতে শিখেছেন তিনি। ‘দ্য কনভারসেশন’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে তিনি মৃত্যু প্রক্রিয়া নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন।

এই চিকিত্সকেরমতে, হৃৎপিণ্ডের স্পন্দন বন্ধ হওয়ার প্রায় দুই সপ্তাহ আগেই মৃত্যুর প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। তারপর আসে সেই দিনটি, যখন সেই ব্যক্তি পৃথিবীকে বিদায় জানান। সিমাস বলেছেন, মৃত্যুর আগে বিভিন্ন মানুষের শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে একেবারে সঠিকভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করা খুবই কঠিন। তবে, কারা চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তা তাঁরা অভিজ্ঞতা থেকে বুঝতে পারেন। তবে, সব সময় একেবারে নিখুঁতভাবে তাদের ভবিষ্যদ্বাণী মেলে না। কারোর ক্ষেত্রে হয়তো মনে হল, তাঁর আয়ু আর মাত্র দুই থেকে তিন দিন। তাঁর ক্ষেত্রে বাকি প্রক্রিয়াটি একদিনের মধ্যেও ঘটে যেতে পারে।

সিমাস কোয়েল বলেছেন, ‘প্যালিয়েটিভ কেয়ারের একজন বিশেষজ্ঞ হিসাবে, আমি মনে করি মৃত্যুর একটি প্রক্রিয়া আছে। আমাদের মৃত্যু ঘটার দুই সপ্তাহ আগে থেকে এটা শুরু হয়। এই সময় থেকে, মানুষের স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকে। এই সময় সাধারণত মৃত্যু পথযাত্রী মানুষের হাঁটতে কষ্ট হয়। সারাক্ষণ ঝিমিয়ে থাকে। অল্প অল্প করে তাদের ঘুমের সময় বাড়তে থাকে। ঘুমের মধ্যে আবার বারবার চমকে জেগে ওঠে। জীবনের শেষ দিনে, কোনো ট্যাবলেট গিলে নেওয়া বা খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলেন ওই ব্যক্তি। আর তারপরই আসে চিরঘুম।’

মৃত্যুর সময় শরীরে ঠিক কী ঘটে, এই রহস্য এখনও অমীমাংসিত। তবে কিছু কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর আগে মস্তিষ্ক থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হতে শুরু করে। এর মধ্যে রয়েছে এন্ডোরফিনও। এই রাসায়নিকটি সাধারণত কোনও ব্যক্তির মধ্যে উচ্ছ্বাসের অনুভূতি বাড়িয়ে দেয়। অনেকে মনে করেন, এই রাসায়নিকটি নিঃসরণের কারণেই মৃত্যু প্রক্রিয়া চলাকালীন মানুষের ব্যথা-যন্ত্রনা কমে যায়। তবে, এই বিষয়টি নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সিমাস বলেছেন, ‘মৃত্যুর আসল মুহূর্তটিকে বোঝা কঠিন। কিন্তু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, মৃত্যুর কাছাকাছি আসার সঙ্গে সঙ্গে কোনও মানুষের মানসিক চাপ, তাঁর শরীরের মধ্যে রাসায়নিক ক্রিয়াকলাপ বাড়িয়ে দেয়। ক্যান্সার বা অন্য গুরুতর রোগে অসুস্থদের শরীরে প্রদাহ দেখা যায়।’

ভারতীয় অতেন্দ্রীয়বাদ


ভারতের জাগ্গী বাসুদেব তথা সদগুরুর আলোচনা দেখতে পারি। তিনি বলেছেন;
মৃত্যুকে একটা গুরুতর রহস্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বুজরুক, দার্শনিক, ডাক্তার এবং কবিরা এর ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু মৃত্যু অজানা এবং অজ্ঞেয় রয়ে গেছে - আপাতদৃষ্টিতে সকলের জন্য একটা বাধ্যতামূলক গন্তব্য। একমাত্র একজন অতীন্দ্রি়বাদী, যিনি জীবন এবং মৃত্যুর রেখার মধ্যে সচেতনভাবে পা রেখেছেন, তিনিই বলতে পারেন এই দুটো অতিক্রম করার জন্য কি করতে হয়, ও সেইদিকে প্রথম পদক্ষেপ রাখার প্রক্রিয়াটা আমাদের দিতে পারেন।
সদগুরু: আপনাকে এটা বুঝতে হবে: আপনি যা কিছুর অভিজ্ঞতা করতে পারেন, সেটাই জীবন। যাকে আপনি মৃত্যু বলেন তাও হ'ল জীবন। তাই, মৃত্যুর কি কোনো বিকল্প আছে? অবশ্যই আছে। আপনি মৃত্যু হিসেবে যেটা উল্লেখ করছেন তা হল জীবনের শেষ মুহূর্ত। সেই চূড়ান্ত মুহূর্ত যখন আপনি ভৌতিক দেহের সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করেন, আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে। আপনার জীবনের বাকি প্রায় সবকিছুই বহুবার ঘটতে পারে। কিন্তু এই একটা মাত্র জিনিস আপনার জীবদ্দশায় মাত্র একবারই ঘটে এবং এটাই আপনার শেষ কাজ। আমি চাই আপনি মৃত্যুকে জীবন হিসাবে উপলব্ধি করুন, অন্য কিছু হিসাবে নয়। এটা আপনার জীবনের শেষ কাজ। এটা কি জরুরি নয় যে আপনি একে মধুর এবং চমৎকার ভাবে ঘটানোর চেষ্টা করবেন? আপনি যদি এর থেকে ভয় পান, আপনি যদি জীবনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে অনভিজ্ঞ হন এবং আপনি যদি এর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তবে স্বাভাবিকভাবে আপনি সেই সম্ভাবনাকে হারিয়ে ফেলবেন।

আধ্যাত্মিক পথের লোকেরা তাদের মৃত্যুর সময়, তারিখ এবং স্থান নির্বাচন করেন। যোগী সর্বদা সময়ের আগে মৃত্যুর সময় এবং তারিখ জানতে চান। তিনি সেটা স্থির করেন। অনেক বছর আগে থেকেই তিনি বলে দেন, “এই তারিখে, এই সময় আমি চলে যাব,” এবং তিনি চলে যান, কারণ তিনি সচেতনভাবে চলে যাওয়ার জন্য নিজের মধ্যে প্রয়োজনীয় সচেতনতা তৈরি করেন। শরীরের কোনও ক্ষতি না করে এই দেহটাকে সচেতনভাবে ত্যাগ করা, যেভাবে আপনি কাপড় ছাড়েন এবং চলে যান, আপনি আপনার শরীরটাকে সেইভাবে ত্যাগ করবেন এবং চলে যাবেন, আপনি যদি তা করতে পারেন, তবে সেটা হবে আপনার জীবনের চূড়ান্ত সম্ভাবনা। যদি আপনার সচেতনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে আপনি জানেন অস্তিত্ব হিসেবে আপনি এবং এই ভৌতিক শরীর হিসেবে আপনি যা সংগ্রহ করেছেন সেটা কোথায় সংযুক্ত, তখন আপনার সঠিক মুহূর্তে আপনি নিজেকে আলগা করতে পারবেন।

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না।
এটা কি আত্মহত্যা? নিশ্চিত ভাবে না। আত্মহত্যা হতাশা, ক্রোধ, ভয়, দুঃখ সহ্য করার ব্যর্থতা থেকে হয়। এটা না আত্মহত্যা আর না ইচ্ছামৃত্যু। এটা নিজের সমন্ধে এতটাই সচেতন হওয়া যে আপনি জানবেন কখন আপনি জীবনের চক্রটা সম্পূর্ণ করে ফেলেছেন, এবং আপনাকে এর বাইরে বেরোতে হবে। এবং এটা মৃত্যুও নয়। এটা সমাধি নামে পরিচিত, যেখানে একজন মানুষ নিজের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমানে সচেতনতা তৈরি করেছে নিজের জমানো শারীরিকতা থেকে নিজেকে আলাদা করতে। সচেতনতার সেই স্তরে, কারোর পক্ষে ছেড়ে চলে যাওয়া সম্ভব। আপনি যদি সচেতনতার সেই স্তর অর্জন নাও করতে পারেন, আপনি যদি কিছু নির্দিষ্ট জিনিস পরিচালনা করতে পারেন তবে আপনি অন্তত নিজের সেই শেষ মুহূর্তটাকে অত্যন্ত মধুর, আনন্দদায়ক, সুখকর এবং আনন্দপূর্ণ করে তুলতে পারেন। .

আপনি যদি এই বিকল্পটা অবলম্বন করতে চান তবে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রস্তুতির প্রয়োজন। আপনি জীবনকে অপচয় করে মৃত্যুকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করতে পারবেন না। আপনি যদি আপনার পুরো জীবনটায় একটা নির্দিষ্ট স্তরের সচেতনতা বজায় রাখেন,তবে চলে যাওয়ার মুহুর্তটাও সচেতনতার মধ্যে ঘটতে পারে। আপনি যদি অসচেতন ভাবে জীবনযাপন করেন এবং আপনি সেই মুহূর্তটায় সচেতন হওয়ার প্রত্যাশা করেন, এই ধরণের জিনিস মানুষের ক্ষেত্রে ঘটে না।

আজকের রাতে এইটা অনুশীলন করুন, যাওয়ার শেষ মুহূর্তটা - আমি এটাকে যাওয়ার সময় বলি কারণ সেই শেষ মুহূর্তে আপনি জাগ্রত অবস্থা থেকে ঘুমোতে চলেছেন - আপনার সচেতনতা বজায় রাখুন এবং দেখুন। এটা আপনার জীবন অভূতপূর্বভাবে বদলে দেবে। প্রতিদিন এটা একটা পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার করুন। সম্পূর্ণ অধ্যবসায়ের সাথে এটা করুন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আপনি দেখবেন, আপনি এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছেন, যেখানে শেষ মুহূর্ত অবধি আপনি সচেতন থাকছেন। আচমকাই, আপনার জীবন-সম্পর্কীয় সমস্ত কিছু, আপনার জীবনের মৌলিক গুণগুলো, কেবলমাত্র এই একটা সাধারণ কাজ করেই বদলে যাবে। আপনি যদি সচেতনতার সঙ্গে জেগে থাকা থেকে ঘুমের মধ্যে যেতে পারেন, তবে জীবন থেকে মৃত্যুর দিকে যাওয়ার সেই শেষ মুহূর্তটাও আপনার জন্য ভীষণ মধুরভাবে ঘটবে। আরও অন্যান্য পদ্ধতিও রয়েছে।

ভারতে ঐতিহ্যগতভাবে মানুষ তাদের প্রিয়জনের মধ্যে মারা যাওয়া পছন্দ করতেন না, কারণ আপনি যদি নিজের পরিবারের মধ্যে মারা যান, তবে অনেক আবেগ এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই আপনি জীবনকে আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। আপনি এটাকে সুন্দরভাবে হতে দেবেন না। তাই লোকেরা দূর দূর স্থানে ভ্রমণ করতেন যা আধ্যাত্মিকভাবে প্রাণবন্ত বলে মনে করা হত এবং তারা নিজেদের দেহ সেই জায়গায় ত্যাগ করতে চাইতেন। এমনকি আজও, মানুষ এটা করে। পশ্চিমী দেশে এটা পুরোপুরি চিন্তার বাইরে হতে পারে কারণ সেখানকার মানুষ তাদের পারিবারিক স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে মারা যেতে চান। এটা বুদ্ধিমানের কাজ নয়। একজন ব্যক্তির পক্ষে এমন একটা স্থান নির্বাচন করা সত্যিই বুদ্ধিমানের কাজ, যা আধ্যাত্মিকভাবে অনুকুল, যা নির্দিষ্ট উপায় প্রাণবন্ত এবং যথাসম্ভব কৃপার সঙ্গে দেহ ত্যাগ করার জন্য আদর্শ। আপনি যদি কৃপার সঙ্গে জীবনযাপন করেন তবে মাধুর্য্যের সঙ্গে আপনার মারা যাওয়াটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

Friday, December 30, 2022

মৃত্যুর সজ্ঞা বিষয়ক প্রাথমিক কথা

বিজ্ঞানসম্মতভাবে মৃত্যুর সজ্ঞা দেওয়ার একটি বড় সমস্যা হলো, একে জীবন্ত অবস্থা হতে পৃথক করা। সময়ের যেকোনো মুহূর্তে, মৃত্যুকে এমন মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত করা যায় যখন জীবন শেষ হয়ে আসে। কিন্তু কখন মৃত্যু হয়েছে সেটি বের করা কঠিন কারণ জীবনের সমাপ্তি সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মধ্যে একই সময়ে ঘটে না। তাই মৃত্যুর সংজ্ঞায়নের ক্ষেত্রে প্রয়োজন জীবন ও মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট তাত্ত্বিক সীমানা। এই কাজটি কঠিন, কারণ জীবন কাকে বলে সে সম্পর্কে অনেক মতভেদ আছে। আমরা নিচের শিরোনামগুলোতে ক্লিক করে যার যা প্রয়োজন, তা পড়তে পারি। আসুন। 

Wednesday, November 30, 2022

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম।

সম্পাদকীয়

সংসার বড় নাকি সন্যাস বড়, এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গেলে সংসারকে যারা বড় দেখায় তাঁদের পক্ষেই যুক্তিরা পক্ষপাতিত্ব করে। অথচ, জীবনের কত দুপুর কাটায় বাই সাইকেলে পুকুর পাড়ের রাস্তায়। কত রাত জেগে থাকে আমৃত্যু সে হিসাব কেউ রাখে? হয়তো কবিতা রাখে। এই ক্ষুদ্র সংখ্যাটি পাঠের আমন্ত্রণ। 

ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
জয় দেবনাথ
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

মনন স্রোত

তারানা নাজনীন

সবুজ ঘাসে বিছানো রক্ত


রক্তে ভিজে বাংলার বুকে
ঘুমিয়েছো সুখে,
পরাধীনতা ভেঙ্গে দিয়ে
স্বাধীনতা মুখে।

সবুজ শ্যামল বাংলার মানুষ
সবাই যেনো হাসে
পতাকা মোর সবুজ ঘাসের_
রক্তে কেনো ভাসে?

নিরীহ নিরপরাধ সব
হয় যে পথের শিকার,
উচ্চ ডিগ্রী নিয়েও আজ 
হয়ে আছে বেকার।

চুরি ডাকাতি ছিনতাইকে
পেশা তারা বানায়
নেশার রাজ্যে ডুবে গিয়ে
মনটাকে যে রাঙায়।

কোথায় মোদের অহংকারে
দেশের সুনাম গাইবো
সভ্য শান্ত সমাজটাকে 
খুঁজে কোথায় পাবো।

স্বার্থ ছাড়া ঘুরে না কেউ
রূদ্ধ শ্বাসে বিবেক
পথে পথে চাটুকারদের
প্রশ্ন করলেই সাবেক!

বিবেক মোদের কেঁদে মরে
দেখে হই যে অবাক,
ভুলে কী করে এই জাতি
শহীদের রক্তের ডাক।

নুরূল শিপার খান

সুজন মাঝি

কেমন আছো মাঝি!
কতদিন দেহিনা তোমারে
মনটা বড়ই উচাটন তোমা বিহনে!
গত বছর বাইনের সময় মাuছ ধরবা কইয়া
সেই যে গেলা আর ফিরা আইলা না!
উদাসি মন শুধু আনচান করে ,তোমার লাগি তুমি কবে আইবা মাঝি!

আমি পুইঁশাকের ডাটা
শুকাইয়া রাখিছি,
তুমি সাগর থেকে আইলে চিংড়ি দিয়া ঝোল কইরা দিবো বইলা!
আহারে ,কতইনা পছন্দের তোমার পুই চিংড়ি!

সেবার গন্জে থেইকা আইসা বলিছিলে
তোরে ছাড়া একলা ক্যামন ডর করে,
হৃদয়ের মধ্যিখানে ক্যামন খাঁ খাঁ করে!
ক্যামন কইরা বিরহের ঘন্টা বাইঁজা উঠে হৃদপিন্ডের  মধ্যিখানে, তা তরে বোঝাইবো ক্যামন করে-রে নোলক!

নোলক বালা আমার নাম!
গ্যারামের কুদ্দুস বাউলের মাইয়্যা আমি,
নদীর ঘাটে প্রথম দ্যাখা হয়েছিলো সুজ্নের সাথে!
সেই থেইকা......
মনটা বড়ই আঁনচান করতেছে রে মাঝি
সত্যি কইরা কও তুমি কবে আইবা!

আমি নদীর ঘাটে যাইয়া অদূঁরে তাকাইয়া থাহি,এই বুঝি আমার মাঝি আইলো!
কত নৌকা পাল তুইলা আইসা ঘাটে নোঙর ফালাই কিন্তু আমার চেনা মাঝির দেহা না পায়!
ঠিক কইরা কও মাঝি কবে আইবা!
হেমন্তের কাশঁফুল ঝইরা পাইড়া যায় অভিমানে!
শীতের আগমনের রিতিমত পায়তারা চলিতেছে!

তবু .....
আমি পন্থের দিকে চাইয়া থাহি,এই বুঝি তুমি আইলা আমার মনের মধ্যিখানে শীতের নিঃস-প্রভ মলিন চাঁদ হইয়া।

দেবাশিস চৌধুরী

জননী

আমাদের পরিবার নেই
একটি ঘর আছে শুধু
ঈশান কোণে বাবা সমাধিস্থ
মা সদর দরজা, 
ন্যায় অন্যায় সব দেখেন 
সব পাপ নিজের গায়ে মেখে 
আমাদের শুদ্ধ করে তুলেন ক্রমাগত।

আমাদের রান্না ঘর সিন্ধু সভ্যতার 
নিদর্শন স্বরূপ দাড়িয়ে আছে, 
মাটির কলস, পাথরের থাল
মায়ের কোমল হৃদয় 
এগুলো খেয়েই আমরা বেচেঁ আছি।

জয় দেবনাথ

জলবেদনা

সাগরের কাছে গেলে নদীর জন্য মন খারাপ হয়। কতদূর চলে গেছি সমুদ্রবিলাসে, বাতাস শুধু। একটু বাদেই এই বাতাস দুঃশ্চিন্তা বয়ে নিয়ে এলো। মনে পড়ে বাড়ি ফেলে রেখে চলে এসেছি। বাড়িতে রয়ে গেছে স্বপ্ন। পরিচিত কণ্ঠস্বর। পাখিদের কলরব। আমাদের নদীটির কথা বড় বেশি মনে পড়ে। আজ কেমন কলকলিয়ে বয়ে যাচ্ছে কে জানে! অথচ, সমুদ্র দেখতে এসেছি বিলাসিতায়। সমুদ্রবিলাস। এ বিশাল সমুদ্র আমার না। অন্য কেউও এর মালিক নয়। আমাদের নদীটিরও মালিকানা নেই, তবুও এ নদীর আমাদের।নদীর জন্য বুকের ভেতর পোঁড়ে। সমুদ্রের জন্য তেমনটা হচ্ছে না।

জীবনের এই রহস্য নিকেতনের ঢেউ সমুদ্রের মতোই। সমুদ্রের সব ঢেউ তীরে ফিরে এসে লাগছে। যত বড় উত্তাল ঢেউ হোক, তার গন্তব্য তীরে। জীবনের গন্তব্য কোনদিকে? মৃত্যুর দিকে? শিল্পপতি জীবন, মেহনতি জীবন সব কী একদিকেই? প্রাপ্তির জীবন, অপ্রাপ্তির জীবন? আমার ধারণা জগতের এই রহস্যের ভেতর এক অঙ্ক আছে। ঐকিক নিয়মের। প্রকৃতিরও অসীম শক্তির ভান্ডারেও এক গোপন সীমাবদ্ধতা আছে। প্রকৃতি সবকিছুই ব্যালেন্স করে রাখে। অপার বিশালতা নিয়েও প্রকৃতির   দরকার হয়। 

মানুষ নিজের জীবনে যা পায়, তার জন্য তাঁকে কিছু হারাতে হয়। প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির ভেতর এক ভারসাম্য থাকে। বিনিময় ছাড়া কিছুই জীবনে আসে না। প্রকৃতি যেন শেখাতে চায় অপ্রাপ্তিতে ব্যথার কিছু নেই। আমি না পেলে তা অন্য কেউ পাবে। যা অন্য কেউ পাবে, সেটা আমার না। আমি যা পাচ্ছি, তা'ও খুব সম্ভবত অন্য কেউ হারাচ্ছে। প্রকৃতি যা করে, ভারসাম্য রেখেই করে।

চন্দন পাল

হোঁচট 

রাস্তায় এক চতুর্দশীকে বললাম,,,
এই খুকি কাজ ফেল্, স্কুলে যা। পড়।
লেখা পড়া ছাড়া জীবনটা কি এমনিই যাবে!!

বললো, সবার জন্য খাবার নিশ্চিত করতে পারবে !
স্কুলে গেলে, আমি না হয় 'মিড ডে মিল'টা পাবো--
কিন্তু বাড়িতে আমার কুট্টুটা, সয্যাশায়ী মা' টা--  কী খাবে ? 
আর ওষুধ---!
বাপ তো সেই কবেই পালিয়েছে। কারওবা মরেছে।
আর থাকলেও বা সবার জন্য যোগাড় করতে পারে কই !
দুর্বল, অদক্ষ বলে, অর্ধেক দিয়ে তাড়িয়ে দাও।
দাও না !!

 ওফ্! যেন চাবুক!  ত্বরায় পালানোর পথ খুঁজি, 
চলতে চলতে হোঁচট খাই---
দেখি, তাঁরাতো নির্বল, অসহায় ছিল না কেহই!!
একবার দেশভাগ, একবার ভাষাভাগ, একবার দলভাগ করে করে গ্রামছাড়া করলে হাতে আর কত থাকে !?
ঝড় জল দাঙা ভূ-কম্পের মার তো আছেই।
দুচারজন না-হয়  বাঁছাইকর্তার পকেটে গুঁজে দিয়ে রেশনটা, চাকরীটা বাগিয়ে নিলো! বাকিরা ---
বাকি আরও সোয়াকোটি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানহীন ।
সংস্কারহীন, শপথহীন, ঘরছাড়ারা ঘুরে ঘুরে বড় হয় শহরে বন্দরে, নৈশালয়ে।
তারপর বছরের পর বছর জন্ম দেয় আরও আরও ঝুপড়ি শিশু।
তারাও বড় হয়, আবার খাবার খোঁজে, কাজ খোঁজে।
কেউবা তাদের নিয়ে ব্যবসা ফাঁদে! 

ওফ্! আমার হোঁচট আর শেষ হয় না। 
বড় একা লাগে! 
বড় একা লাগে কর্মে ধর্মে  প্রতিনিধিত্বে।

যদি, একযোগে সবাই পূষন হতে পারতাম!!
তাহলে বলতে পারতাম--
শিশুশ্রম নিষিদ্ধ! 

গৌতম মজুমদার

ভিজে বিড়াল

ছোট্ট বিড়াল করুন সুরে
করছে চিৎকার বাইরে,
প্রাণটা বুঝি বেরিয়ে যাবে
কি করে তা চাই রে ।

আদর দিয়ে ভালো বাসায়
ঢুকিয়ে নিলাম ঘরে,
খাবার দিলাম ভালো ভালো
যত্ন আত্তির করে।

ভিজে বিড়াল মনে হয় সে
কিছুই জানে নাকো,
মাছটা দিলে পারেনা খেতে
যেমন ভাবেই রাখো ।

সব খাবার ই থাকতো খোলা
সে দিন কি আর বাকি ?
ঘরের খাবার কোন দিনই
রাখতাম না আর ঢাকি।

হঠাৎ একদিন রান্না ঘরের
সব খাবার ঐ সাবাড়,
ঝোলা থেকে বেরিয়ে বিড়াল
হচ্ছে পগার পাড় ।

চিনতে আমার হয়নিকো ভুল
এই সেই ভিজে বিড়াল,
যাকে আমি আনলাম ঘরে
করছে কি আজ হাল।

মনের ব্যথা লুকিয়ে রাখি
বুকটা চাপা রেখে,
চোখ কান সবাই খোলা রেখো
এসব বিড়াল থেকে।

নন্দিতা দাস চৌধুরী

তারা

কত আর দেখা যায় পৃথিবীর নিষ্ঠুর সাক্ষী হয়ে, প্রতিনিয়ত চোখের সামনে অসহায় জীবনের  নিঃশ্বেষ হয়ে যাওয়া, যে ফুলটা সাজিতে তুলে আনলেনা রয়ে গেলো গাছে দিনের শেষে ঝরে পড়ে অবহেলায়, সেও ফুটেছিলো সাজবে কোন আবেগী ফুলদানীতে অথবা কারো সোহাগী খোঁপার মালায়, তার গোপন কান্না আর কেউ না শুনলেও প্রেমিকের হৃদয়কে সজোরে আঘাত করে যায়, যে শিশুর শৈশব খেয়েছে দারিদ্রতায় আর ঘাম ঝরিয়ে অনাদরের গাছের মতো বেড়ে উঠেছে বনানীর  কোলে, সেও প্রস্ফুটিত হতে পারতো মহাসাগরের সভ্যতার নাবিক হয়ে, দরদী চোখে জ্বলজ্বল হয়ে জ্বলছে আকাশের গায়ে মেঘে ঢাকা তারা।

রূপালী রায়

নিহত

শেষ পাতা উল্টে নিতে গিয়ে 
দেখি সহস্র ভুল 
এক হয়ে আছে ।
ভেবেছিলাম হয়তো আবার 
রাত ভিড়ে  তুমি আমি আর চন্দ্রীমার 
মাধুরী ছড়াতে ছড়াতে 
দুই একটা কলিতে 
ধরবো গলা ।
উড়ন্ত রঙ এসে পড়ল গায়ে 
হলুদ বর্ণের একটি পাখির মতো 
স্বপ্ন বুনতে 
তুলো রঙের বরফ মেখেছি গায়ে ।
চাদর খানা সরিয়ে নিতেই দেখি 
উড়ল পাখি 
ছুটলো বনে 
হয়নি দেখা আমার সনে 
তবু স্বপ্নগুলো তেমনি আছে 
যেমনি ছিল আগে ।
ভাবতে গেলেই অবাক লাগে
স্বপ্ন গুলো মরছে একে একে, 
বেকার ছেলে গুলি খেয়ে 
নিহত হলো রণাঙ্গনে
 তবুও যেন  হাঁসতে হাঁসতে
আকাশ ছোঁয়ার গল্প মনে ।

সঞ্জীব দে

আত্মক্ষরণের পঙ্ ক্তিমালা

সমস্ত ব্যথা হাঁটুতে নেমে গেলেও 
মাথায় দুশ্চিন্তার ভিড়ে বুক ভাড়ি হয়ে ওঠে! 
আঠারোমুড়ার উত্তরে শেষ প্রান্তে ---
শ্রেণি কক্ষে থাকা আমি তখন শিক্ষক নই! 
আসলে একটা দক্ষিণমুখী কচ্ছপ! 
তোমার সব ব্যথা হাঁটুতে জমে যত  ফুলে ওঠে! 
আমি ততই কচ্ছপ হয়ে উঠি। 
এইভাবে শ্রেণিকক্ষে আমি আর আমার  দূরত্ব 
ক্রমাগত প্রসারিত হতে থাকে। 
বিচ্ছিন্ন হতে থাকে আমি, আমার থেকে 
যাবতীয় সংযোগ। 
অহেতুক নির্বাসনে যোগাযোগ ঘটলেও 
কর্কটক্রান্তীয়  সংযোগ ভীষণ কঠোর!

মাধুরী সরকার

লাশের আদলে

যখন মৃত্যু এসে কড়া নাড়ে রোজ
তাসের ঘরের মতো ভেঙে যায় 
আমার সাজানো মনের ঘর,
আমি জীবনের কাছে করি না অভিযোগ।

আলেয়াকেই তো আলো ভেবেছি কত !

মৃত্যু যে প্রতিরাতে আমার সাথে ঘুমোয়
অথচ কখনোই 
পরখ করে দেখি না তাকে।

ক্ষণিকের জলসাঘরে প্রসাধনী মুখোশ 
শুধু সেজে থাকি লাশের আদলে।

পীযূষ রাউত

দোষ দেবো কাকে

তিল তিল করে গড়ে তোলা,তিলোত্তমা না হয় না-ই বা হলো,আমার স্বপ্নের নির্মাণ
এই পর্ণকুটির, পরম শান্তির,সেই কবে থেকে দাউ
দাউ করে জ্বলছে, তখন বুঝিনি,এখন মর্মে মর্মে অনুভূত হচ্ছে ক্রোধ ও বিষাদ। কেননা তিনতলা 
দালানবাড়ির অনাবশ্যক লোভে আমিই স্বহস্তে সেদিন পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়েছি।সেই সে
আগুন রাবণের চিতার মতো আজো নিরবধি দাউ
দাউ করে জ্বলছে। এই সর্বনাশা লেলিহান আগুনকে একমাত্র আমিই বশে আনতে পারি 
আমার শত্রুকে আমিই বধ করতে পারি।কিন্তু পারছি কই? আর দোষের কথা যদি বলো,ভাবনাও
মননে দোষ দেবো কাকে?  দোষ দেবো  কাকে? 
দোষ, সেতো আমারই। দোষ সে তো আমারই
মহামূর্খ লোভের।

Sunday, October 30, 2022

স্বাগতম

সম্পাদকীয় পাতা


দক্ষিণের লোকসংস্কৃতির প্রাণপুরুষ ড. রঞ্জিত দে। দক্ষিণ ত্রিপুরার সাব্রুমের সম্পদ। রাজ্যের পরিচিত মুখ। অথচ, কি এক রহস্যের কারণে নিজেকে প্রচারের আলোতে আনতে চান না তিনি। দীর্ঘসময় ধরে নিরিবিলি কাজ করে ত্রিপুরা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। সমৃদ্ধ করেছেন রাজ্যের লোকজ সংস্কৃতির ধারাকে। নতুন প্রজন্ম আজ শেকড়ের টানে নতুন নতুন সৃষ্টি কর্মপন্থা তৈরি করেছে, যেটি আমাদের ভালো লাগার কথা। অথচ, এর নেপথ্যে তিনি উপাদান যুগিয়েছেন, গুরুত্ব বুঝিয়েছেন তিনি রয়েছেন অগোচরে। 

এক শেকড়প্রিয় গুপ্ত মানুষের কথা বর্তমানেরা জানুক। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রী নিয়েও কোনোদিন অহঙ্কার করে বলেননি আমি গবেষক। বড় পুরানো কথা এটি। সে সময় পিএইচডি মানে ইয়া বড় বিষয়। মনন স্রোত সাক্ষাৎকার নিয়েছিলো তাঁর।  সাক্ষাৎকারে তিনি নিজেকে তুচ্ছতার সাথে প্রকাশ করেন। এত বিনম্রতা ও ভাবুক কথাবার্তা প্রকৃত জ্ঞানীজনের কাছেই শুধু পাওয়া যায়। রাজ্যের প্রান্তিক শহর সাব্রুমে দীর্ঘকাল তাঁর যাপন। এখান থেকেই রাজ্যের লোকজ সংস্কৃতির গুপ্তকথা, ইতিকথা পায়ে হেঁটে তুলে এনে আমাদের পথচলা মসৃণ করেছেন তিনি। কারো সাথে তুলনা না করলেও বলা যায়, তিনি অনবদ্য। আপাদমস্তক এমন মিষ্টি ব্যক্তিত্ব যে একজন মানুষের হতে পারে, তা ড. রঞ্জিত দে কে না দেখলে বুঝা মুসকিল। তিনি সম্পাদনা করেছেন লোকসংস্কৃতি নামক একটি সাহিত্যপত্র। কঠিন থেকে কঠিনতম যুগে এটি সম্পাদনা করে প্রচার করেছেন রাজ্যের বহু সাহিত্যিকের সৃষ্টি। রাজ্যের প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনাগুলোতে ওনার প্রকাশিত বইগুলো পাওয়া যায়। ত্রিপুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা যার বই সংগ্রহ করে প্রকল্পের কাজ করে, সে মানুষটা এত'টা সাদামাটা সেটা তারা দেখলেই বিশ্বাস করবে। মনন স্রোতের এই সংখ্যাটি একটি প্রতীক্ষিত সংখ্যা। এটি তাঁকে উৎসর্গ করা হলো। সংখ্যাটিতে যারা লিখেছেন তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা। নমস্কার। 

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা 

মনন স্রোত

সুস্মিতা দেবনাথ

শবের শহর

নক্ষত্রের আগুন ঝরা রাতে
আমার বোধগুলোকে খন্ড খন্ড করে 
ছড়িয়ে দিলে কোনো শবের শহরে।

সূর্যটাকে ঢেকে দিতে চেয়ে
ছড়িয়ে দিলে আঁধারের মেঘ,
নিস্তব্ধতায় গুমড়ে কাঁদে আমার অহমিকা
রাত জাগা নীরব শহরে।

একদিন এই শহরের ক্ষুধার্ত মিছিল
রোষানলে গর্জে উঠবে,
সেদিন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে
অসভ্যতার এ নগ্ন প্রাচীর,
সেই গর্জমান মিছিলের সামনে
ধুলিসাৎ হয়ে যাবে তোমার বিবর্তন।

এখনও সময় আছে, ভাবো
নইলে ইতিহাস হয়ে যাবে ।

মাধুরী সরকার

দিন বদলের স্বপ্ন
          

কতো কাঠফাটা রোদ,
বিপদসংকুল বজ্রবিদ্যুৎ মাড়িয়ে
ওদের বেরিয়ে পড়ে কর্মমুখী হয়ে।
দু'দন্ড আয়েশের সুযোগ বঞ্চিত ওরা,
ক্ষুধার আগুন ওদের বড্ডো তাড়া করে 
শূণ্য থালায় দুমুঠো ভাতের সন্ধানে।

ওরা শোসিত বঞ্চিত সর্বহারার দল
যাঁদের আর্তনাদ পৌঁছায় না রাষ্ট্রের কানে
অথচ ওরাই খাবার জোগায় রাষ্ট্রের মুখে ।

রাতের জোৎস্না মেখে ওদের চোখেও 
স্বপ্ন নামে চালের ফুটো বেয়ে,
তন্দ্রাভাবে খেয়ে ওঠে দিন বদলের গান।
রাত পোহালেই ভাঙা বেড়ায় পথ করে 
স্বপ্নগুলো উড়ে যায় অদৃশ্য পথ বেয়ে !

ওরা চির বঞ্চনা নিয়ে বাঁচে 
স্রোতে ভাসা কচুরিপানার মতো।
বুকের তীব্র দহন নিয়েও বেঁচে থাকে
দিন বদলের স্বপ্নালু চোখে।

অনামিকা লস্কর

শুধু তুমি 

এইতো সেদিন 
ক্যালেন্ডারে গোল্লা কেটে রেখেছি
পরদিন থেকেই হিসেব গোনা শুরু 
তুমি আসবে ...

পঞ্চাশ পয়সার ঠান্ডা লাল জল 
কাঠি গোঁজা আইসক্রিম 
তোমার পাশে দাঁড়িয়ে খেতে ইচ্ছে করে 
আজ পঞ্চাশ বছর পরেও ...

সঞ্জীব দে

মশাল

দেওয়ালে শিরদাঁড়া ঠেকিয়ে 
আকাশের  তারাগুণার সময় নয় এখন! 
কোল বালিশে মাথাগুজে হতাশা লুকাবার 
সময়ও নয়! 
অথবা টিভিতে করোনা করোনা খবর শুনে শুনে 
আতঙ্কিত হওয়ার সময়ও নয় এখন! বরং 

তীর্যক দৃষ্টিতে মাঝির অভিসন্ধি খোঁজো ---
বেনিয়ার অশ্রুতে আতস কাঁচ রেখে দেখো 
কতটুকু বিষের মিশ্রণে নীল করেছে নোনাজল! 

এতদূর হেঁটে এসে 
যে সাম্রাজ্যে এখনও মিট মিট কূপি জ্বলে 
যার নিচে নিশ্চিত অন্ধকার! 
প্রতিমুহূর্তে জীবন ক্রয় করতে করতে এগুতে হয় 
আত্মকেন্দ্রিক পথ ধরে ---

মেঘমালা ঢেকেছে দৃষ্টি , মায়াজাল ঢেকেছে মন 
যাঁরা বুঝে গেছে মায়া ও ছায়ার নিগূঢ়  রসায়ন,

 সময় উচ্ছিষ্ট করেনি কেউ, একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে,
 অন্ধকার তাড়াতে মশাল ধরেছে হাতে।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

প্রত্যর্পণ

আজ কোনো শুদ্ধস্বরে নয়
আরশিতে থিরথির গরল
ধূমোজলে অমিয় বিষাদ
রেখেছে দুঃসংবাদ 
অংস হতে অংশচ্যূত       
জবানবন্দী 
কে কবে এঁকেছে বলো
রেখার আড়ালে ঝাঁপ দেয় 
প্রশ্নরা, মুহূর্তের
অনন্ত ডোবায়
তুমি নির্দোষ 
কেউ স্বেচ্ছায় ভিখারি বন্দী 
সমুদ্র তার শঙ্খনাভিতে তরঙ্গে  বেজে ওঠে 

যদি কোনো রং থাকে 
পুড়িয়ে দাও
ফিরিয়ে দাও
যা কিছু অনুচ্চারিত ইশারার জব্দ 
আজ অরণ্য রক্তিম
জলৌকা বর্ণে...

মিঠুন দেবনাথ

মা

তুমি আছো বলেই
আজ বেঁচে আছি,
তুমি আছো বলেই 
  আনন্দেতে নাচি।
তুমি আছো বলেই
আমার এতো গর্ব,
তুমি আছো বলেই
পৃথিবীটা যেন স্বর্গ।
তুমি আছো বলেই
নই আমি ভীতু,
তুমি আছো বলেই
পেরোচ্ছি জীবন সেতু ।
তুমি আছো বলেই
 নই আমি ক্ষতবিক্ষত,
তুমি আছো বলেই
রাস্তাযে আছে শতশত।
তুমি আছো বলেই
ভেঙে গড়ছি নিজেকে,
তুমি আছো বলেই
খুঁজে পাচ্ছি স্নেহকে ।
তুমি আছো বলেই
অন্ধকার যেন আলো
তুমি আছো বলেই
স্বার্থান্বেষীরা ছুটি পেলো।
তুমি আছো বলেই
দুঃখরা যে লুকালো ,
তুমি আছো বলেই
সুখে রাত্রিরা পোহালো।                                                                          

অতনু রায় চৌধুরী


জীবন দেখি

দাঁড়িয়ে থেকে জীবন দেখি,
দেখি মানুষের চলে যাওয়া।
শহর জুড়ে এত হৈচৈ,
যেন পুরনো কিছু আবার ফিরে পাওয়া।
মানুষ হাঁটে মানুষের সাথে
হাতে হাত রেখে।
জীবন সুন্দর হয়তো এখানেই
মনের মানুষ যখন পাশে থাকে।
সুখের মুহূর্ত মুখে হাসি
দেখতেও ভালো লাগে।
এই শহরে একাই দাঁড়িয়ে থাকি আমি
এসব কিছুর ভিড়ে।

লিটন শব্দকর

রোদরহস্য

পাখিঘরে জ্যোৎস্নামাখা কাকের ঠোঁটে
কথোপকথন ও ভাবের সূক্ষ্ম অন্তর্বয়ন
যে তটকথা যেমন উষ্ণতার লহরী চায়।

রাত খুবলে খেয়েই এক তপস্বীনি ভোর 
শরৎ কখনো এমনই নির্জন রোদরহস্য
উঠোনে বহেরার ছায়ায় প্রশ্নের ফরাস।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

আবেগী মন

মনে পরে!অবজ্ঞা ভরে সেদিন যাকে 
ছুঁড়ে ফেলে দিতে বলেছিলে 
নিতান্তই অবহেলায় , অন্ধকারের অতল গভীরে
তলিয়ে যেতে দিতে চেয়েছিলে ওর সকল সত্ত্বা ,
হতাশার চাদরে মুড়িয়ে দিতে চেয়েছিলে
প্রত‍্যাশার সকল দুয়ার ,
আজ সে দাঁড়িয়ে সমুখে ; বাড়িয়ে হাত
তোমার সকল উৎকন্ঠা উপচে ফেলে
নুতন দুয়ার উন্মোচনে।

ছলনা, অমর্যাদার পরিহারে নিতান্তই ভালোবেসে , 
আত্মপরতার কপাট খুলে সে দেখিয়েছে আবারও
মানবিক সত্ত্বা, হিংসার আগুনে পুড়ে পুড়ে
আজ সে খাঁটি সোনা। তাই ভালোবাসার আগুনে
জ্বালিয়ে দিতে চায়  বিদ্বেষের ঝুপড়ি ।
আর পুড়ে যাওয়া বিদ্বেষের ছাই লেপটে গড়তে চায়
এক নতুন প্রজন্ম, যে প্রজন্মের মাথায় ছাতা 
হয়ে থাকবে রবীন্দ্র,বঙ্কিম, নজরুল জীবনানন্দ
আরও আরও দীপ্ত নক্ষত্র আর একটা আবেগী মন।

আলমগীর কবীর

স্বপ্ন 

স্বপ্ন সবাই দেখে 
কেউ আকাশের দিকে তাকিয়ে স্বপ্ন দেখে
আবার কেউ ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখে।
সবার সব স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয়না! 
তবে যার স্বপ্নটটা সফল হয় সে জানে,
তার জীবনে কত প্রতিকূলতা অতিক্রম করতে হয়েছে!

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

জেগে থাকি অপেক্ষায়

বিকেলটা কেমন বদলে যাচ্ছে।              
পাহাড়ের গা বেয়ে অন্ধকার নেমে আসছে।  
ধীর পদক্ষেপে।
এখন তোর্সাকে ফেলে রেখে উঠে পড়া।
সবুজ ঘরে ফেরার পালা এবার।
সত্যিই কি ফিরতে পারে মন ?
নদীর কুলুকুলু বয়ে চলা বুকে নিয়ে
আলোর প্রতীক্ষা।
আবার এক সকাল।
আবার এক দিন।
প্রতীক্ষার শেষ কবে কে জানে !
মন জানে শেষের বাস্তব।
তবু অপেক্ষা,
যদি আর একবার
শুধু একবার ফিরে আসে সে.....
গাঙচিলের মতো নদীর জলে পা ডুবিয়ে।

নন্দিতা দাস চৌধুরী


ক্রমান্বয়ে রাত ফুরিয়ে যায়

চৈত্রের শেষ বেলায় গঙ্গার ঘাটে একটু সোরগোল হয়েই থাকে, 
পথ চলতে চলতে অজস্র পায়ের ছাপ , 
তার মধ্যে কিছু আঘাতের চিহ্নও লেগে থাকে,
মুমূর্ষু জোছনায় কতো ভালোবাসা রাত হারায়,
হেলে পড়া রাতের বুকে ঢেউয়ের  বিরহেরা একাকীত্ব খোঁজে,
জীবন তো প্রতিনিয়ত দেনা পাওনা খতিয়ে দেখে,
খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আদ্যন্ত তল্লাশি করে দিনের শেষে সিন্দুকটা শূন্যই পড়ে থাকে,
একটা সম্পর্ক ভেঙে গেলে মাধুকরী  অন্তরঙ্গতা  সব খুইয়ে হয়ে যায় সচ্চিদানন্দ ,
বাইরে থেকে যে ভাঙনটুকু দেখা যায় আসলে ভিতরে ভিতরে সেই তো রয়ে যাওয়া,
মেঘে ঢাকা আকাশের অঙ্গীকার  ছুঁয়ে স্খলনের গভীর  তত্ত্বের ইঙ্গিতকেই  বেঁধে রাখি,
ক্রমান্বয়ে রাত ফুরিয়ে যায়।

অনুপম রায়

পরিকল্পনা

আমার ঘরে কোনো ধান নেই
তবুও ইঁদুর দৌড়ে ছাদে ছাদে।
যদি ঘরে ধান থাকত,তবে একটি বিড়াল পালতাম।
সে সামনে থেকে ধান পাহারা না দিলেও
ইঁদুর খেয়ে আমার ধান বাঁচাত।
নিজের পেটের খোরাকও হত।

মূলত এটি একটি অনুপমীয় পরিকল্পনা।
এই পরিকল্পনায় একটি রাষ্ট্রের সরকার চলতে পারে।
রাজনৈতিক দলগুলো মানুষের নজরে আসতে পারে;
নির্বাচন হতে পারে গরমাগরম। 
তাতে অবশ্য আমার কিছুই না।
আমি কমদামী কিছু চাল পেলেই হয়। 
পরিবার নিয়ে খেয়ে বেঁচে থাকলেই হয়।

Saturday, October 29, 2022

শ্রীমান দাস

জলতান্ডব

গভীরতা মাপবো বলে
জলের যতটা কাছে যাই
সে তার চেয়ে বেশী আগ্রাসী হয়ে ওঠে।

উত্তাল জোয়ারে সে যখন চঞ্চল
আমি তার বাঁধনহারা উচ্ছ্বাস দেখি,
দেখি তার পার ভাসানো গতিময়তা।

এ পারেই কতো দো-ফসলী বুনন
কত সুদূরপ্রসারী স্বপ্ন
তবু জলতান্ডব বারে বারে।

সে গভীর হলে নৌ ভাসাতাম
বোঝাই করে দিতাম যত চাওয়া পাওয়া,
অবগাহনে কুড়িয়ে নিতাম তৃপ্তির স্বাদ

কিন্তু গভীরতায় নয়,
স্বেচ্ছাচারী জল আগ্রাসী হতেই ভালোবাসে।

সৈকত মজুমদার

পরজীবী

হুইল চেয়ার,  
এমন জীবন আমি ছাড়াও পৃথিবীতে
অগণিত মানুষের! তবে কী তাদের
সবার জীবন আমার মতন বিষাদময়!

রোজ ভাবায়, যখনই 
কারো কোনো সাহায্যের প্রয়োজন হয় আমার। 
একান্ত কাছের মানুষও তখন কত কথা শোনায়। 
রাত নিশুতি হলে একলা বিছানায় ছটফটে মরি
আর ইচ্ছামৃত্যুর বৃথা চেষ্টার পরিকল্পনা করি!

অথচ বাইরে সবাই দেখে-
আমি ভাল আছি, কিন্তু কেউই জানে না
নিজের ভিতর কতটা কষ্ট চেপে বেঁচে আছি। 

সংগীতা দাস

আগমনী

শরতের আকাশ, ভোরের শিউলি
কাশবনে কাশ।
তোমার অপেক্ষায় বসে থাকি
বারো মাস।

সময়টা এখন যাচ্ছে কঠিন,
তাও করছেন আশীর্বাদ মা;
শিউলি ফুলেরা গাছে গাছে ফুটে
জানাচ্ছে এসো এসো উমা
গগনে গগনে বাজিল শঙ্খ ধ্বনি,
মা আসছেন শুরু হল মায়ের আগমনী
নীল আকাশ,কাশের রঙে মাতল উঠে মন
ঢাকের কাঠি বলছে ডেকে মায়ের আগমন
ঢাকের আওয়াজ ঢ্যাংকু-রাকুর
শোনা যাচ্ছে মায়ের আগমনীর সুর।

শান্তনু ভট্রাচার্য

ট‍্যাটু

তোমার ছেড়ে যাওয়া দুঃখ গুলো
আমাকে অক্ষে রেখে চক্রাকারে ঘোরে।

বাতাসের জন্য জানলার ছবি এঁকেছি কতবার
লাল লাল গোলাপে ভরে গেছে ইজেল
সেতো এক খাদহীন ভালোবাসার‌ই জন্য।

তবুও কেন শীতের মিঠেরোদ
একবারও দাঁড়ায়নি জীর্ণ এ চৌকাঠে,
মাখোমাখো জোছনায় দুচোখে রুমাল বেঁধে
কেউতো নিয়ে যায়নি দুর বসন্ত অরণ্যে।

এখন অক্ষরেখায় সূর্যাস্তের রঙ
পাখিরা ফিরে যায় ক্লান্ত পাখসাটে
রঙহীন তুলি হাতে আজও অপেক্ষা করি-

তাঁর গায়ে প্রেমের ট‍্যাটু এঁকে দেবো বলে।

রুপন সুত্রধর

প্রেমের অবেলা       

তোমার এখন খেলার বয়স 
মন গুলো বুঝে না, এ খেলা
নয়ন হরিণী ডাঙর চাওনি
হারিয়ে যায় এ হৃদয় অবেলা।

লম্বা কালো কেশ,উড়ে সারাবেলা
এলোমেলো রুপকথার গল্পের
পরী বুঝি  উঁকি দিয়ে যায়, 
জীবন প্রেম খুঁজে, তোমাতে  এবেলা।

 আমার গল্প শুরু, হাসিতে হাসিতে
মাঠের সিঁড়িতে, বলা অন্তরের সুপ্ত প্রেম
নিবেদন খোলা আকাশের নীচে,
প্রকৃতি সেজেছে বসন্ত বাতাসে। 

হঠাৎ করে বয়স যেন বয়স সন্ধির আঠারো 
যৌবনের রঙ লেগেছে মনে
আমি কর্মী আজীবন ভালো বেসে যাওয়ার,
তোমার অন্তরে রঙিন ভালোবাসার উদ্যানে।

গভীর এই নিবিড় রাতে মনেতে বাসা
দিনেকের দেখা, সময়ে অসময়ে অল্প কথা
শাহজাহান মমতাজ প্রেম গাঁথা 
তাজমহল সমাধি, আমাদের হবে।

তোমার হাসির সব রং গুলো 
 আছে আমার হৃদয় জুড়ে, সারাবেলা
সুখের বসত,দুঃখ গুলো কথা বলে,
শুধু তোমাতে হারিয়ে যায়, উদাস দুপুরে। 

প্রেম বুঝে না বয়স আট থেকে আশি
দাদু স্বপ্ন দেখে, রাজকুমারীর প্রেমে পড়ার,
আমিও চিরনতুন তোমার প্রেমে
হৃদয়ের খিদে মিঠে না, সারাবেলার ভাবনাতে।

অভীককুমার দে

পুনরুত্থান 


পরাজিত মানুষ দেখেছ কখনো ? 

যারা হেঁটে যায় অকারণ!

শুধু ক্লান্তি জড়িয়ে ঝিমিয়ে পড়ে সব,
ছত্রভঙ্গ মানুষ বলেই হয়তো
মাথা তুলতে পারে না।

পুনরুত্থান শিখে যায় যদি
পায়ের শব্দে জোয়ার উঠতে পারে নিশ্চিত। 

দীপ্তনু চৌধুরী

প্রহসন 

নিঙড়ে নাও , তবুও পাবে না যাচিত তুষ্টি ...
ভরে উঠবে সে আবার , ছোবল দেবে বাহুল্যের বিষদাঁতে ,
যে কামশোষণে আহরণ করে চলেছো কলি - অমৃত , সে তোমায় একদিন মারবেই ...
লাশঘরের জীবাশ্ম থেকে আবার জন্ম নেবে তুমি ,
শতাব্দী পেরিয়ে যেতে যেতে ভক্ষণলোভের গতিপথ পাল্টায় মানবসমাজ , কচিমস্তিষ্ক যুবসমাজকে হাতিয়ার করে ।

Friday, September 30, 2022

নমস্কার

শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা

সম্পাদকীয়

এভাবে চলে গেলে দিন, ঘোরে ঘোরে ফুরিয়ে যাবে কাল। জীবনের প্রকৃত স্বাদ কী তা বুঝার আখাঙ্খা নিয়ে মৃত্যুর কাছে যেতে হবে। মৃত্যু এক গোপন গুরুদেব। যে গুরুগৃহের পাঠ্যক্রম কেউ জানে না। শেষের আগে শুরুর উদযাপনটি শরীরে শিহরণ জাগায় না। এভাবে আসে শারদ। শারদ শুধু আসে। যায় না। আমরা বিসর্জনের ব্যথা কমাই, আগমনীর খুশিতে। শান্ত হোক সকলে। সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। নমস্কার।

জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

ভবানী বিশ্বাস

তৃপ্তি
.........

সবার সখ ইচ্ছে থাকে, 
আমারও আছে। 
একটা নিজস্ব জমি হবে
জমিনে খাডি বানাব
বাবার সাথে চাষ করব
একটা পুকুর হবে। 

বিকাল হলে বাবা একটা জমিনের আলে বসে থাকে। 
কিছু ভাবে? জানি না। 
হয়তো সেই সখের কথাই ভাবে। 

ঈশ্বর সব দেখেন। 
আজ এই খাডি আমার বাবার, 
এ জমির মালিক বাবা নিজে। 
আমি মা বাবা 
আমাদের নিজস্ব জমিতে
রোয়া লাগাচ্ছি।

নীলাঞ্জনা দেবনাথ

গতি
.........

একবার পিঁছু ফিরে দেখো;
কত'টা পথ হেঁটে চলে গেছো একা!

হাঁটতে হাঁটতে বহুদূর কোনো বাঁকে দেখা হয়ে যাবে পুরোনো বন্ধুর।
যার গায়ে আজও আমার গ্রামমাটির পরিচিত গন্ধ। 

দূর থেকে দেখে যাও শৈশবের অবয়ব।

জাম্বুরতলায় ফেলে গেছো জুতা; 
কঠিন বর্ষায় ছাতা রেখে ভিজে গেছো ঘরে।

ঘরে তুমি কালে ডেকে এনেছো সায়হ্ন।

তবুও;
ফিরে এসো যদি পারো
এখনও রয়ে গেছে পরম যত্নে,
তোমার স্থাবরিত সব গন্ধ।
সব কোলাহল।

জয় দেবনাথ

অঞ্জলী
....................

ধরো, এখন সন্ধ্যা হলো 
চাঁদ উঠবে ভেবে, মনে পড়লো অমাবস্যার কথা।

তোমার মাটিঘরে অল্প আলো। 
আবছা আলোয় শুনতে পেলে;
তোমার অসুস্থ পিতার
ব্যাধিকম্পন। পাশে তোমার মাতৃরোদন।
দু'য়ে মিলে তোমার বুকব্যথা। 

অনটনের ঘোরে
তোমার চোখে ভেসে উঠলো
আতপ চালের থালার পাশে একটি তুলসী গাছ।

তোমার হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে।
তুমি ভাবছো শীত। 
তারপরই মনে পড়লো, এখন গ্রীষ্মকাল।
অবশেষে
তুমি ঈশ্বরকে একটি দীর্ঘঃশ্বাস অঞ্জলী দিলে।   


ড. সমীর ভাদুরী

মা আসার আগেই মা চলে গেলেন
................................................
                        
শিউলি বিছানো পথে এসেছে শরৎ। শরৎ মানেই মায়ের আগমনী বার্তা। প্রতি বছর এই কয়েকটা দিনের অপেক্ষায় দিন কাটে। মা আসবে আনন্দের ধারা চারিদিকে। সবাই সবার মতো করে এই কয়েকটা দিন আনন্দ উৎসবে মেতে থাকেন। আমারো প্রতিটি বছর আনন্দেই কাটতো। তবে এই প্রথম পুজো যেখানে আমার আনন্দের ছন্দপতন। আজ বিরাট শূন্যতা এক মা হারা গৃহে। গত পাঁচ মার্চ আমার অরুণাচল প্রদেশের কর্মক্ষেত্রে আমার বাবা মায়ের প্রথম পদার্পণ। আনন্দে গল্পে হাসি খুশিতে প্রমোদ ভ্রমনে সময়  কি করে কেটে গেলো বুঝতেই পারলাম না!! পহেলা বৈশাখ,তারপর মায়ের জন্মদিন সব আনন্দ সময় কেটেছে আমাদের সুন্দরভাবে।শ্রী শ্রী দাদামণি ত্রিপুরা ভ্রমনে আসবেন তাই বাড়িতে আসতেই হবে। তবে মা কথা দিয়েছিলো আমরা যখন গ্রীষ্মের ছুটিতে বাড়ি আসবো আমাদের সঙ্গে আবার আসবে। এতোটা ঠিক ছিল,বাড়িতে আসার কয়েকদিন পর এক ভয়ঙ্কর দুর্যোগ নেমে আসে আমাদের পরিবারের উপর । গত ২৯ এপ্রিল রাত্রি বেলা মায়ের ব্রেন স্ট্রোক হয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে উদয়পুর হসপিটালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসক, নার্স এবং পরিবারের সবার অনেক চেষ্টার পর ও অবস্থার কোনো পরিবর্তন নেই দেখে জি বি পি হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ও চিকিৎসক, নার্স  বিশেষ করে আমাদের গুরু ভ্রাতা সঞ্জয় দার (নার্স )আপ্রাণ চেষ্টা সহযোগিতা সব ব্যর্থ করে আমার মা গত ১লা মে আমাদের চিরতরে ছেড়ে চলে গেছেন। "মা " এই পবিত্র শব্দের ব্যাখ্যা করার মতো শব্দ আমার কাছে নেই। আমার মা মানেই একটা মিষ্টি মাখা পবিত্র অমলিন প্রাণ খোলা হাসি। যেই হাসি সব ভুলিয়ে দেয়।আমার সেই ছোটবেলা থেকেই সকাল বেলা ঘুম ভাঙতো  গুন গুন রবীন্দ্র গানের সুরে, কখনো বা হে মোর চিত্ত, পুন্য তীর্থে জাগোরে ধীরে আবৃত্তি আবহে, কখনো বা কান্ডারী হুশিয়ার বা কোনো ব্রতচারী গান আরো কতো কী!!গানের জগতে প্রবেশ মায়ের হাত ধরেই। কতো প্রোগ্রামে নিয়ে যেতো ছোটবেলায় গানের পরীক্ষায় নিয়ে যেতো।রান্না ঘরে রান্না করতেন আমি আর দিদি চট বিছিয়ে বসে বসে পড়তাম।ছোটবেলা থেকেই মা যখন ঠাকুর পুজো দেওয়ার সময় গীতা পাঠ করতেন মায়ের কণ্ঠে শুনে শুনে গীতার শ্লোক মুখস্থ হয়ে যেতো মায়ের সঙ্গে বসে বসে শ্লোক বলতে থাকতাম তার বিনিময়ে মায়ের স্নেহের হাত মাথা বুলিয়ে দিতো। আমার মা খুব ভালো খেলতেন চন্দ্রপুর স্কুলে পড়াকালীন অনেক খেলাতে অংশগ্রহণ করতেন একবার ন্যাশনালে খেলার সুযোগ পেয়ে ও পারিবারিক বাঁধার কারণে যেতে পারেন নি। রকমারি হাতের কাজ জানতেন। আমার আর দিদির শীতের পোশাক সব নিজের হাতে বানিয়ে আমাদের উপহার দিতেন। রাখি বন্ধনের সময় আমার রাখি কিনতে হতোনা মা নিজের হাতে উল দিয়ে রাখি বানিয়ে দিতেন।ঘরের সাজ সজ্জা থেকে শুরু করে ডোর ম্যাট টা পর্যন্ত নিজের হাতে বানানো। সব স্মৃতি ঘরজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চারদিকে।সব কিছুতেই মায়ের ছোঁয়া।শুধু মা নেই।আমার মায়ের হাতের লেখা খুব সুন্দর ছিল। আমার সব নোট দিদির সব নোট রাত জেগে বসে বসে লিখতেন। বাংলা রচনা প্রবন্ধ খুব সুন্দর করে লিখে দিতেন।মায়ের কাছে পড়া শিখে বলা বা লেখা আমার এক অভ্যাস ছিল নয়তো মনে হতো পড়াটা ঠিক হয়নি।অনেক ছেলে মেয়েকে মা পড়িয়েছেন কখনো পারিশ্রমিক নেয়নি ।মা বলতেন ভোর বেলা উঠে পড়া খুব ভালো তাই ভোর বেলা জাগিয়ে দিতেন পড়ার জন্য।আমি যখন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তাম আমাদের গ্রামের সব বন্ধুরা একসঙ্গে স্কুলে যেতাম আবার ছুটি হলে একসঙ্গে আসতাম। কখনোই মা বাবারা বিশেষ দরকার বা কারণ ছাড়া যেতেন না। স্কুলের দিদিমনি স্যার রা সবসময় ই বলতেন মা যেনো একদিন স্কুলে আসেন। অনেকের মা স্কুলে যেতো কিন্তু আমার মা কখনোই যেতোনা তাই বলে আমার একটু অভিমান হতো মায়ের উপর। তখন আমি ক্লাস ফোরে পড়ি। বার্ষিক পরীক্ষাতে প্রথম হয়েছিলাম সেদিন আমার মা স্কুলে গিয়েছিলো আমি জানতাম না মা আসবে। হঠাৎ দেখে ভীষণ আনন্দে মা কে জড়িয়ে ধরি। আমার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের গ্রামের অন্যান্য ছেলে মেয়েরা ও জড়িয়ে ধরে মাকে। মা সবার মাথায় সমান ভাবে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিলেন। সবাই এই দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়েছিলেন তারা ও মায়ের কাছে পড়তো। সব দিদিমনি স্যার এই দৃশ্য দেখে মায়ের প্রতি আরো শ্রদ্ধা বেড়ে গেলো।আমার মায়ের একটা প্রতিবাদী কণ্ঠ ছিল কোথাও কখনো বিশেষ করে মেয়েদের উপর কোনো নির্যাতন দেখলে প্রতিবাদ করতেন।বাড়িতে নিজের হাতে লাগানো ফুল গাছ, লাউ গাছ, বেগুন গাছ, আরো কতো গাছ সবাই যেনো কাঁদছে মায়ের জন্য। শ্রী শ্রী বাবামনির লিখিত গ্রন্থ অখণ্ড সংহিতা প্রথম খন্ডের প্রথম পাতা থেকে চতুরবিংশ খন্ডের শেষ পাতা একবার নয় বহুবার পড়া হয়ে গেছে। রামায়ণ অনেকবার পড়া। মহাভারত ছিলোনা ঘরে আমি কলেজে পড়ার সময় ছাত্র পড়িয়ে প্রথম উপার্জনে মহাভারত কিনে দিয়েছিলাম সেই মহাভারত ও কয়েকবার পড়া হয়ে গেছে।সব সময় পুজো দেওয়ার সময় বলতেন যেনো শাঁখা সিঁদুরে মৃত্যু হয়।বাবাকে সবসময় বলতেন আমি তোমার আগেই যাবো!!সেই কথাই সত্যি হলো।খুব ভালো লুডু খেলতেন হারানো খুব কষ্ট ছিল। বাইশ কবির পদ্মপুরাণ মুখস্থ ছিল।প্রতিদিন পত্রিকা পড়তেন আর কখনো আমার আর্টিকেল প্রকাশিত হলে ফোন করে বলতেন বাবু তোমার লেখাটা খুব সুন্দর হইসে। ফেইসবুকে ও কোনো পোস্ট করলেই বলতো আজ আমি দেখেছি তোমার পোস্ট। ইউটিউবে নানা ধরনের ভিডিও দেখে কতো কিছু জিজ্ঞেস করতো!!আমার মা চাহিদা বিলাসিতা চাওয়া পাওয়ার উর্দ্ধে ছিলেন।এক সহজ সরল সুন্দর পবিত্র ঈশ্বরময় জীবন কাটিয়ে গেছেন।সকালে ঘুম থেকে উঠে মা বাবাকে প্রণাম করা মায়ের স্নেহের হাত আশীর্বাদের হাত মাথায় পেলে মনে হতো এ এক রক্ষা কবচ। সেই স্নেহের হাত আর মাথায় উঠবেনা। মা ছাড়া এক মুহূর্ত ভাবা অসম্ভব। মা তোমাকে ছাড়া আমরা কি করে থাকবো!! আমরা কেউ ভালো নেই মা।বিরাট শুন্যতা আজ আমাদের মনে গৃহে সব জায়গায়।আর কখনো মা মাখা গন্ধ পাবোনা,মায়ের আঁচল, মায়ের হাতের কোমল স্পর্শ,মায়ের স্নেহ আদর ভালোবাসা পাবোনা, মায়ের ফোন আসবে না আর কখনো, মায়ের হাতের রান্না, লক্ষী পুজোর স্পেশাল আল্পনা সব স্মৃতি হয়ে গেলো !!এই অভাব কখনো পূরণ হবে না।আমি আর দিদি খুব কষ্টে আছি মা!! বাবা আরো বেশী কষ্টে আছে সুখে দুঃখের জীবন সাথী একজন প্রকৃত বন্ধু হারিয়েছেন ।এইবারের দুর্গা পুজো হবে আমার সেই শৈশব থেকে মায়ের সঙ্গে কাটানো পুজো মুহূর্ত। এইবার না হয় সুন্দর স্মৃতি ভাবনায় পুজো কাটবে আমার। মা তুমি স্বরূপানন্দ ধামে ভালো থেকো। পুনর্জন্ম বলে কিছু যদি থাকে আমার একটাই প্রার্থনা আমি যেনো আবার তোমার সন্তান হিসেবেই আসি তোমাকে আবার মা রূপেই যেনো পাই। পৃথিবীর সব মায়েরা সুস্থ থাকুক ভালো থাকুক এই প্রার্থনা।

শ্রীমান দাস

উত্তরায়ণের প্রতীক্ষা
...............................

দক্ষিণী ঝঞ্জা মাতাল হতে হতে
নিজেই জানে না- লাগাম কোথায়?

একের পর এক বিধ্বংসী তান্ডব
টাক্কাতুলসীর বুকে এঁকে দিয়েছে
দুঃসহ যন্ত্রণার মানচিত্র।
যে শরীরে লেপ্টে থাকতো স্নিগ্ধতার পরশ,
সে আজ বগলদাবা বেলাগাম বেলেল্লাপনার।

মহীরুহের পতন আশাতীত !

মাটি ফুঁড়ে জন্ম নেওয়া চারাগুলো
উত্তরায়ণের প্রতীক্ষায়।

সৈকত মজুমদার

অন্ধি-সন্ধি
.................
 
তোমার আঁচলের উগ্র পারফিউমের গন্ধ 
আমায় করে রেখেছিল একদিন অন্ধ ! 
এখন আমার চোখে -
মাইনাস 3.50 চশমা, দূরের সব
স্পষ্ট দেখি; তাই আর
ঠকাতে পারে না কেউ আগের মতন। 

তুমি যে পাতায় চলো, আমি
তার শিরা উপশিরায় বিচরণ করি।
তোমার পারফিউম আমার চেনা তাই
আমি সব জেনেও নীরবে ঠকে যাই। 

সৈকত সরকার

ও আমার মিষ্টি একটি যাতনা
-------------------------------------------

যে আছে মনের গহীন কোনে
একলা আমি লোকের বনে
দগদগে ঘা আজো বেঁচে, অতীতের ঘটনা

ও আমার মিষ্টি একটি যাতনা।

ভোলার ঔষধ ভুলেও পাইনি
হয়তো আমিই ভুলতে চাইনি
এ জীবনে যা আছে সব ভোলার মতোনা

ও আমার মিষ্টি একটি যাতনা।। 

ওর ফেলে যাওয়া যত স্মৃতি
সে স্মৃতিতে শত দিবারাতি
লোনা গঙ্গা বইছে দেখো কতোনা

ও আমার মিষ্টি একটি যাতনা।। 

ও যদি না থাকতো
ও যদি না ছাড়তো
এ কবিতা লেখাও হয় হতোনা 

ও আমার মিষ্টি একটি যাতনা।। 

অভীককুমার দে

কাঁচের ঘর
................

এইভাবে কেনাবেচা হলে 
সব পথেই গজিয়ে উঠবে বাজার,

বাজার মানেই দর কষাকষি 
যে যেমন মূল্য দিতে পারে জীবনের;

ক্রেতা আসে 
ক্রেতা যায়
বিক্রেতার মুখে স্বাধীনতার
হাসি।

সামগ্রীর মতো মানুষগুলো
হাতের পর হাত হলে
মালিক তিনি,

নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়েন 
পরিকল্পিত কাঁচের ঘরে।

আলমগীর কবীর

আকাশ ছোঁয়া স্বপ্ন 
..........................

সেদিনও কেউ পাশে এসে দাড়ায়নি
আজও কেউ পাশে নেই;

ঐ একই ব্যক্তি একটা পুরোনো বট বৃক্ষের ন্যায় নিঃস্বার্থভাবে জীবনের সমস্তটা জুড়ে পাশে দাড়িয়ে রয়েছেন। 

হাতেগোনা দু-একজন ছাড়া জীবনে তেমন কারো কাছ থেকে উৎসাহ বা অনুপ্রেরণা পাইনি।

কখনো নিজে সীদ্ধান্তকে সঠিক বলে আখ্যা পাইনি।
যিনি অন্ধের মত বিশ্বাস করতেন,  
আশা রাখতেন, ভালবাসতেন, 
অন্ধের মত সব সীদ্ধান্তকে সঠিক বলে আখ্যা দিতেন; তিনি আমার জীবনের সমস্তটা জুড়ে পাশে থাকা আমার বাবা।

এই মানুষটার মুখে কখনো হাসি ফোটাতে পারিনি 
কিন্তুু মানুষটা আমার জন্য অনেক চোখের পানি ফেলেছেন! 
জীবনে কখনো দূরে থাকতে দেননি,
সবসময় পাশে পাশে রেখেছেন। 

একা নিজ পায়ে আকাশটা নাগাল পাইনি বলে
তিনি আমায় কাঁধে তুলে মেঘটাকে ছুঁতে সাহায্য করেছেন;
আকাশ ছুঁয়া স্বপ্নটা না হয় আমার পরবর্তী প্রজন্মের হাতে রেখে গেলাম। 

তারফিনা শাহানাজ রজব

শেষ প্রশ্ন!
...................

ভালোবাসা হয় কি দু'বার? 
এইটা না হোক শেষবার।

চপল মেয়েটা একতরফা ভালোবেসে-
সয্য করে এই আমাকে হেসে হেসে।

তারারা আজ করছে দেখো আবদার।
তার তরেতে বৃষ্টি বিলাস হোক না আবার।

শিশিরের গল্প দাও মুছে
যার পড়বে মনে- সে গোপনে 
ভুলে আছে।
এমনি করে ভালোবেসে 
কেউ কি বাচে?

কবির মন খারাপের গল্পগুলির
হোক অবসান।
নিথর দেহে জাগিয়ে তুলুক
আবার প্রান।
ভালোবাসা হবে নাকি দু'বার -
মনকে বুঝাও এইটা না হোক
শেষবার! 

মেঘের ছোয়ায় পড়ে থেকে কি যে পাও!
বৃষ্টি ছুয়ে কাকে আবার ফেরত চাও?
ফিরার জন্য হারায়নি কেউ ধরায়,
খুজছো যাকে দূরের তারায় তারায়।

যে তোমার কষ্টে ভাসবে,
তার তরেতে হাসবে-
আকাশ সমান প্রেম এনে
তাকে ভালোবাসবে।

আজ কবির মনে ভালোবাসা 
আসুক দু'বার। 
কথা দিলাম প্রিয়
এইটাই হবে শেষবার।
হ্যাঁ শেষবার।

অভিজিৎ দাস

বেকার ছেলে
...................

আমরা হলাম বেকার ছেলে
বন্ধুত্ব টিকিয়ে রাখি
হিংসা বিভেদ ভুলে।

সমাজের চুখে আমরা নাকি নিষ্কর্মা
কিন্তু আমরা জানি
আমরা  এক একটা বিশ্বকর্মা।

চাকরি পেলেই নাকি স্ব-রোজগারি
আমরা নাকি বাবা মায়ের 
কোষাগার খালি করি।

আমরা পারি না কোন ভালো কাপড় পড়তে
পড়তে হয় ছিড়া জামা কাপড়  
মানুষের নানাহ অজুহাতে।

ভালো কাজ করলেও 
সবাই বলে এটা আমরাও পারি
খারাপ কাজেও আমাদের নাকি 
অনেক পাল্লা ভারি।

বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ালে 
বলে সবাই এসব নমুনা
দুর্দিনে পাশ কাটিয়ে গেলে 
সবাই বলে ওদের থেকে এটাই পাওনা।

আগে গেলেও সমস্যা মোদের 
পিছনে নেই কোন ঠাই
বেকার বলে নেই কোন দাম 
কপালটা মোদের পুড়ে ছাই।

লিটন শব্দকর

কুয়োতলা
................

তাকে দেখা গেছে শেষবার 
কপিকলের সহজ মরচে থেকে
কাঠগোলাপের ছাপ মুছে দিয়ে
পাতায় নীলরঙা রুল টেনে যেতে

নিজেকে নিজেই 
লক্ষ আলপিন উপহার 
জিজ্ঞেস করি কতবার 
পুড়ে যাওয়া জ্বরে

বোতামগুলো একটি একটি করে 
বুক পালটায় 
কুয়োতলায় 
পাশফেরানো ঘড়ির সকল কাটা 
খুলে পড়ে 
কুয়াশার মায়ায় তাকে 
দেখা যায়নি আর...

সজীব কুমার পাল

সমুদ্র এবং সংসার
............................

বৃষ্টির শেষ বিন্দু পরেছে 
সদ্য প্রেম ভেঙে যাওয়া প্রেমিকার বুকে। 

তাদের দুঃখের সংসার গড়ে ওঠলো 
উপমহাদেশের এক নির্জন বালুচরে,
কিন্তু-
তাদের এমন সংসারের পাশে একটি 
মৃত্যুর ধ্বনি উৎপন্ন হতে লাগলো! 

মহাসাগর ছড়ায় এবং মহানদী , 
'আর্নেস্ট হেমিংওয়ে' এর মতো 
আমিও লিখে ফেলি 'সমুদ্র এবং সংসার'। 

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

বিংশ সংখ্যা 



নায়িকার নৃত্যনাট্য

শর্মিষ্ঠা ঘোষ 
উঃ২৪ পরগণা 
......................

মেঘলা রাতের জলে চাঁদ নেই,  

আঁধারের দহনে জলজ প্রাণায়াম 
ছায়ার দমকে ঘেমে ওঠে পাতারা 

ব্যাঙের ভীত গানে থেমেছে ক্যাওস নায়িকার নৃত্যনাট্য 

ভুলেছ নিজের নাম 
ভুলেছ অস্থির কানা ইঁদুর দৌড়
ভুলেছ নশ্বর চেতনা 

জীবিত বলতে,
বেহুঁশ আর কিছু অশরীরীর শ্বাসকষ্ট ...

সহিদুল ইসলাম

শাসনের মুষ্টি
....................

আজকাল সে খুব খুশি, 
খুব খুশি।
আল্লাকে দেওয়া স্পর্ধা-কথা, 
রাখতে পেরেছে শয়তানটা।
সে খুব খুশি।
ভগবান সম গর্বিত দেশের শিড়ঁদাড়াতে
ঘুনে ধরাতে পেরেছে শত্রুটা।
সে খুব খুশি।

শুনেছি, 
মহামান্য আদালতেও নাকি 
উৎকোচ চলে তাঁর।
এক পেয়ালায় চুমুকে মাতাল হওয়া 
বন্ধুদের মাঝেও, গড়লো সে কঠিন পাহাড়।

দেখেছি,
কবিদের কবিতার মস্তিষ্কেও
সফল তাঁর অভিযান।
মানুষ পোড়ানো আগুন শিখায় বসে
গিলছে সে সংবিধান।

বেনিয়াদের জন্য সে ই ছিল
শোষনের যষ্ঠী।
সাম্প্রদায়িকতা
তুমি আজকেও কি
আছো শাসনের মুষ্টি?

চন্দন পাল

নবোন্মেষ (২)
.....................

পুবে কিসের 'পাখি সব করে রব'! পাখসাট ছুটাছুটি। 
না, ভূকম্প নয় । দৈনালী। 
আলো আসছে আলো। ফুল চোখ খুলবে,
যার লাগি, কারও দশ ঘন্টা আঁধার কাটার অপেক্ষা। 
বিবর্তনে শুরু হবে চষা বা চর্চা বা দূর্গত উদ্ধার ।
কারও দশ মাস, কারওবা আঠারোশটা দিন ।
পথ দেখতে, দেখাতে, ভরসা পেতে 
শত অষ্টচরণে, দেবদীপ হাতে, চলেছে মননস্রোত । 
সত্য সুন্দর আদর্শের প্রতিবিম্ব সৃষ্টিতে
নেতাজি না ক্ষুদি না রাম !।
 সমভূমে বাজে পাঞ্চজন্য,
ত্রিধারায়, প্রবাহ ধায়, মনু থেকে ফেনী। 
নবোন্মেষে বিধান।

রুপন সৃত্রধর

গুজব
.............                   

গুজবে গুজব ছয়লাপ ভাই
চারিদিকে সত্যের যাচাই নাই।
মাঝে মাঝে, মানুষ গুলো সব
কেমন যেন অমানুষ বনে যায়!
 ছেলেধরার নামে অসহায় মানুষ 
 অযথা জনতার মার খায়।
শ্রমিক, গরীব, রাস্তার পাগল যত,
কেউ আজ ছাড় না পায়।
ব্যথায় কাতরায় ভবঘুরে
কে বা তার খবর রাখে!
ভগবান হাসে কলির মান-হুশের
পাগলামির নামান্তর দেখে।
মেয়ে যখন বলে,বাবা আজ
স্কুল যাবনা, সত্যি ভয় জাগে!
ফোন নাম্বার দিয়ে, প্রশ্নোওরে
বাবা সত্যের যাচাই করে।
চলছে মানুষ ভুল ঠিকানায়
প্রশাসন ফেট্টি চোখে গান্ধারী সাজে।
মাঝে মাঝে ভাবি, মানুষের দুখে
আমি লজ্জা কেন এত পাই! 
গুজব শব্দ কত মারাত্মক 
হায়নারা খেলে নিধন যজ্ঞে
সত্যতা ভুলে,মানুষ আজ
 কত অসহায়, বিকার বাতিকে ভোগে। 
গুন্ডার গুন্ডামি গুজব প্রতিরোধে,
জেগে উঠুক শুভচেতনা প্রতিটি ঘরে।
মানুষের তরে আমরা মানুষ,
হইব কখন,বিবেক প্রশ্ন করে।

দুলাল চক্রবর্তী

১. প্রকৃত বন্ধন
..................

জীবনে পথ চলতে গেলে
সাথী মিলে অনেক, কিন্তু বন্ধু ক'জন?
ছলনার ছয়লাপে আসল -নকল
হয়তো চেনে না স্বজন।
ছলনা আর প্রতারণার আগুনে
জ্বলে পুড়ে নকল বন্ধন,
বন্ধুত্বের অঙ্গীকারে আবদ্ধ যে
পাশে এসে দাঁড়ায় তখন।


২. হৃদয় জুড়ে
...........

তোমার মায়ায় জড়িয়ে আছি আমি,
তোমারা মায়াবী দুটি আঁখির ফাঁদে,
প্রেমের পসরা সাজিয়ে রেখেছে মনে
কোন গোপন বাসনা অনাদরে কাঁদে।
ভোরের আলোর ঝটা জড়িয়ে মনে
ইচ্ছে করে পাখি ,তোমায় বেঁধে রাখি।
হারানোর ভয়ে বুকে বাজে ব্যথা সদা
তৃষিত নয়ন জুড়াতে কাছেই থাকি।

Thursday, August 25, 2022

স্বাগতম

অভিনন্দন হে কবি

সম্পাদকীয়

জগতে দুই ধরনের মানুষ নাকি থাকে। দুঃখী এবং খুব দুঃখী। আমাকেই কেন সুখি হইতে হইবে! আমি জগত কল্যাণে কি করিয়া, কি এমন অধিকার প্রাপ্ত করিয়াছি যাহা হইতে আমি সুখি হইবার দাবি করিতে পারি। আচ্ছা, জগত এমন অসুখের হইতে গেলো কেন? মানুষ এত অসুখবিরুদ্ধ হইলে জগতে নতুন করিয়া মানুষ আনিয়া ভরাইবে কেন? মন যাহা চাইলো, তাহা খুলিয়া বলিতে আর কতকাল সময় লইবে! কত সভ্যতা ডিঙ্গাইয়া গিয়া কোন সভ্যতায় গেলে আমরা জীবন বুঝিবো কবিতার মতো। প্রেম, বিরহ ও সংসার মিলিয়াই যেন জগতের ভিত্তি দাঁড় করাইলো। একুশটি কবিতা যেন ইহাই বলিয়া গেলো। ইহাই বলিলো।

Wednesday, August 24, 2022

রূপালী মান্না

খাদ 

আমিও মৃত্যু যন্ত্রনা ভোগ করি রোজ 
এই যন্ত্রনা আমায় জ্বালায় পোড়ায় কাঁদায় লেখায়।
এক একটা জন্মদিন পেরোলে
ভীষণ ভীষণ খুশি হই আমি , 
জীবন থেকে একটা বছর চলে গেল 
আয়ু ফুরিয়ে মৃত্যুর পথে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ
কী ভীষণ সুখ দেয় বলে বোঝাতে পারবোনা। 

আমি নিন্দুক হতে পারিনা
কারণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে
মানুষের জীবন দেখি আজকাল ,
নিজেকে দাঁড় করিয়ে দিই সেইসব মানুষের    পরিস্থিতির সামনে ,
বিবেক ভাবায় এ ঘটনা আমার হলে কী করতাম ?
ফলতই আর নিন্দুক হয়ে ওঠা হয়না ।

আত্মহত্যার আগেই যারা মরে যায় রোজ
তাদের প্রতি আমার শুভকামনা
জীবনটাকে মৃত্যুর অপেক্ষায় বাঁচিয়ে রাখার জন্য ,
আসলে বেঁচে থাকাটাই সুন্দর
এর থেকে  সুন্দরতম কিছু হয়কি ?

আমিও তো মৃত্যুখাদের সামনে দাঁড়িয়ে
নিজেকে রোজ বলি
জীবন বড়ো সুন্দর ।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

লাশেদের স্বপ্ন

আমার চোখের সামনেই পরে থাকতে 
দেখেছি কয়েকটি নিথর দেহ
সকল স্বপ্ন উড়ে গিয়ে থমকে দাঁড়াতে দেখছি
নির্জীব দেহটির পাশে। 

কিছু ধবল বক উড়ে যায়  মাথার উপর 
আমার বুকে চিন চিন ব‍্যাথা 
এই লাশের শহরে আমিও কি তবে 
পরে রইবো পচনধরা লাশেদের পাশে?

আমার চোখের সামনেই পরে থাকতে দেখেছি
কয়েকটি  লাশ,কোন বড় রাস্তার মোড়ে
দিঘির ঘাটে,অন্ধকার বাগানে কিংবা 
বড় ফ্লেটের কোন এক নির্জন ঘরে।

এই লাশ সভ‍্যতার, সমাজের,
উন্নতির,মনুষ‍্যত্বের,সারি সারি পরে থাকা
লাশেরা স্বপ্ন দেখে একদিন - হয়তো কোনদিন 
জ্বলে উঠবে দাবানলের মতো।

জ্বালিয়ে দিতে দিতে ছুটতে থাকবে
অসীম দিগন্তে,আকাশনন্দিনীর  মতো বিকট শব্দে
উঠবে গর্জে, আতঙ্কে কাঁপতে থাকবে স্রষ্টা
বুক চিড়ে বেরিয়ে আসবে ভয়ংকর তেজোরশ্মি।

দিকে দিকে বেজে উঠবে রণদুন্দবী
ছিনিয়ে নেবে স্ব- অধিকার,
একদিন ওরা বেঁচে উঠবে অদ্ভূত ভাবে
গণতন্ত্রের নামে লিখবে কোন নূতন ইতিহাস।

দেবব্রত চক্রবর্তী

ঋণী

সব কথা বলা যায় না বিদায় বেলায়,
কিছু কথা বাকী রয়ে যায়।
জীবনের যা কিছু সঞ্চয় কুঁড়িয়ে বুকে আগলে রাখবো।
সেই বুকে আমার সন্তান মাথা রেখে ঘুমোবে।
আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দীর্ঘশ্বাস নেব।
রক্তের মতই শ্বাস-প্রশ্বাসে আমি নিজেকে বাঁচিয়ে রাখবো,
আমার সন্তানের হৃদয়।
আমি, জন্মের প্রয়োজনে ঋণী হবো যত
তার সবটুকু হিসাব রাখবো আমার নামের সাথে।
আমি ঋণী হয়ে থাকবো আমার কাছে,
জীবনের কাছে।

প্রীতম শীল

আঘাতের প্রতিঘাত

রাজার রাজপথ শূন্য গুলিতে,
পুলিশের লাঠির ঘায়ে। 
তপ্ত দুপুরে আজও লড়াইটা জাড়ি,
গুলি লেগেছে পায়ে।

টেট বি.এড কত শত বড়ো ডিগ্রী, 
কাগজ খানা ফেলি ছিঁড়ে।
ইচ্ছে করে বিক্রি করি ঝালমুড়ি, 
এই সভ্য সমাজের ভিড়ে।

তাও ভালো শিক্ষিত বেকার, 
নাই বা বলবে লোকে।
নাই বা নেবো লড়াইয়ের গুলি,
ক্ষত বিক্ষত এই বুকে।

তোমার ছেলে মেয়ে বিলেত পড়ুক,
আমাদের রক্ত চুষে।
এই ব্যাথা জমা পড়ে রবে আজন্ম,
রাখবো আমরা পুষে।

সেদিও কাঁদবে তোমরা এই রাজ পথে,
যেদিন আঘাতের প্রতিঘাত হবে।
শূন্য গুলি লাঠির আঘাত হয়তো নয়,
তবুও অভিশপ্ত কঙ্কাল হয়ে রবে।

উর্মি সাহা

অবহেলা

দেওয়ালের বুকে পিঠ ঠেকিয়ে আমি তোমার
শ্বাস প্রশ্বাস শুনেছি
হিমালয়ের ঝর্নার মত তৃষ্ণা মেটায় তোমার চোখ
অরণ্যের মত ঘন কালো চুল, আমার 
দুঃখ মুছে দেয়
তোমার তারুণ্যের মত মাধুর্য আমায় বশ করে দেয়
বাকি ছিল শুধু লাল রং-এর ভালোবাসা!
যা আমি তোমার কপালের রেখায় খুঁজেছি
তোমার উষ্ঠের লালিমায় খুঁজেছি
তোমার নরম কানের দুল, চোখের পাতা সমস্তই।
সমস্তই আমার ভালোবাসার নিদর্শন।
আমি অক্ষর দিয়ে বুনেছি এক সহজসাধ্য চিঠি
যা এক আলোকবর্ষ পথ পেরিয়েও তোমার 
ঠিকানা খুঁজে
খুঁজে যায় তোমার হাত ছুঁয়ে যাবার আনন্দ
তোমার অবহেলায় আমার দুঃখ সুর শিখে যায়
তোমার অবহেলায় আমার শরীরী মাংস
সেজে উঠে
বেজে উঠে পুরোহিতের মন্ত্রের মত শুদ্ধ উচ্চারণ
চারিদিকে যখন আনন্দ-ধ্বনির বিকাশ,
সেবেলায়-
পিঁপড়ের ঝাঁকের মত, আমার-
কঙ্কাল আষ্টেপৃষ্টে রাখে শুধু অবহেলা।

                                  

দেবাশিস চৌধুরী

জননী

আমাদের পরিবার নেই
একটি ঘর আছে শুধু
ঈশান কোণে বাবা সমাধিস্থ
মা সদর দরজা, 
ন্যায় অন্যায় সব দেখেন 
সব পাপ নিজের গায়ে মেখে 
আমাদের শুদ্ধ করে তুলেন ক্রমাগত।

আমাদের রান্না ঘর সিন্ধু সভ্যতার 
নিদর্শন স্বরূপ দাড়িয়ে আছে, 
মাটির কলস, পাথরের থাল
মায়ের কোমল হৃদয় 
এগুলো খেয়েই আমরা বেচেঁ আছি।

অতনু রায় চৌধুরী

ভালো থাকা
 
জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা মুহূর্ত
আগলে রাখে রোজ।
সেই যে প্রিয় স্কুল মাঠ,
আর বন্ধু ছিল খুব।
ছিল অনেক স্বপ্ন চোখে
ছিল প্রেমিক হওয়ার শখ।
বয়স পনেরো ছোট ছেলেটা
আসলে চিনতো না এই বাস্তব।
পড়ার ফাঁকে ফাঁকি দিয়ে
নিজেকে ভীষন চালাক ভাবা।
সময়ের সাথে বয়স বাড়লে
পরিবর্তন হয় ভাবনা চিন্তা।
জীবন অনেক কঠিন তখন,
কঠিন বাবার ঘামে ভেজা শরীরের দৃশ্য দেখা।
মায়ের নীরব সংসার প্রতিপালনের বিনিময়ে‌
ভালো থাকা।

গৌতম মজুমদার

লড়াই

চেয়েছিলাম আমি পড়ে থাকা ঐ
পোড়া রুটি খানির অর্ধেক,
আহার করিয়া ক্ষুধা নিবারণে
করে নিতে পারি ভরপেট ।

কুড়িয়ে নিতে গিয়েছি তখন
দিয়েছি রুটিতে হাত,
অমনি একদল কুকুর আসিয়া 
বসিয়ে দিয়েছে দাঁত।

কুকুর টানছে একদিকে রুটি
আমি ধরেছি মুঠো ভরে,
ক্ষত বিক্ষত করে দেয় কুকুর
আমায় ঝাপটে ধরে।

ব্যথা যন্ত্রণায় চিৎকার করি
দূর থেকে হাসে মালিক,
বুঝতে পেরে চুপ হয়ে যাই
রক্ত বেরোয় খানিক।

ভুখা পেট নিয়ে কুকুরে মানুষে
দ্বন্দ্বটা বাধে যত,
রুটির টুকরো ছুঁড়ে দিয়ে মালিক
আনন্দটা পায় তত।

লড়াইটা মোদের বাচাঁর জন্য
হিংসার জন্য নয়,
কুকুরে মানুষে লড়াই এখন
নিত্য নৈমিত্তিকই হয় ।

মোঃ রুবেল

প্রতিদান         

বাবার বুকে মাথা রাখা হয়না-
দুই যুগ অতিক্রান্ত হলো।

হঠাৎ একদিন,
বাবার বুকে নয়, বালিশে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলাম।
নির্বিঘ্নে ঘুম হয়নি।
চতুর্দিকে শুধু দায়িত্ব ভিড় করে ছিলো।
বোধহয় বাবাকেও দায়িত্ব এমনভাবেই ঘিরে রাখে।
বাবাও ঘুমাতে পারে না নির্বিঘ্নে।
হয়তো এভাবেই,
দায়িত্বকে ঘাড়ে পুষে সব বাবা বটগাছ হয়।
জীবনরস জুগিয়ে যায় প্রতিনিয়ত।
আমরা স্বর্ণলতার মতো জীবনরস শুষে বেড়ে উঠি।
নতুন একটি বৃদ্ধাশ্রম সূচনার জন‍্য।

সংগীত শীল

শিঞ্জিনী

মুগ্ধতার ঝংকারে কলঙ্ক যেন কুসুমিত হয়েছিল নীরা'র পায়ে,
মুক্ত কেশ উড়ছিল তীব্রগতিতে মলময়মারুর মেঘ পালকের বেশে।

আধো আধো হাসিতে শোষণ করছিলাম মধুরস,
অবাঞ্চিত প্রাননাশ করেছিল তার চোখজোড়া।

মুহুর্তেই যেন ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছে মন,
বেজায় চঞ্চলতায় ক্ষয়ে যাচ্ছিলো হৃদয়ের শিরা উপশিরা।

কোনো এক বর্ষারাতে ছুঁয়ে যাক,
ঝরাপাতার অসীম শূন্যতার স্পর্শকাতর দীর্ঘশ্বাস।

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

জবাব দিবা না দিবানা?

বুকে হাত রাইখ্যা কৈতে পারবা
তুমি আমার প্রেমে পরো নাই?
আমার চোখের দিকে অন্যভাবে তাকাও নাই?
আমার নাম মুখে আনলে
তোমার ভিতরে কেমন একটা করে নাই?
অন্য মাইয়াগোরে আমার লগে দেইখ্যা
জ্বরে তোমার গা খান পুড়ে নাই?
আমি যে তোমার লাইগ্যা পাগল
সে কথাডা জাইন্যা রসিকতা করো নাই?
তাইলে কওতো আমারে
ক্যান ভালোবাসলা না?
ক্যান তোমারে আমার নামের পাশে
বসাইতে পারলাম না?
ক্যান তোমারে লোকে
আমার কৈয়া চিনলো না?
ক্যান তুমি আমার হৈলানা?
চুপ থাইক্যোনা। কথা কও
কথা কও কৈতাছি কথা কও

      

তারানা নাজনীন

ছড়ায় মনোবল

হলদে পাখি ডিম পেরেছে
ফুটেছে দুটি ছানা
একটা ছিলো সুস্থ সবল 
আরেকটার চোখ কানা।

দুজন মিলে উড়তে শিখে 
মা যে চিন্তায় মরে
কানা ছানা সাহস দিয়ে
ভাবতে মানা করে।

এক চোখেতে জগৎ ঘুরে 
আনবো খুঁজে সুখ
ভয় করিস না মা জননী
দূর করবো দুখ । 

কতজনের পাখা নেই যে
পা ও নেইতো কারো
আমার তো মা সবই আছে 
কেন বারন করো?

ছন্ন ছাড়া ঘরটিকে তোর 
বাধঁবো মজবুত করে
যতো ই ঝড় আসুক জোরে 
হবে না নড়বড়ে।

দোয়েল,চড়াই,শ্যামা,শালিক
দেখবে মোদের ঘর
কাকের ঘরে কোকিলের ডিম
সারা জীবন ভর।

আলসে ছানা উড়ে এসে 
ফুরুৎ করে বলে
যদি আসে ঝড় বৃষ্টি
যাবো অন্যত্র চলে।

কষ্ট করার দরকার কি
বাবুই ঘর বুনছে
ফাঁকি দিয়ে যাবো ঢুকে
বুদ্ধি খাসা গুনছে।

মা তখন ডাকে দুজনকে
মন দিয়ে শোনো
পরের ধনে লোভ না করে
জয়ের মনোবল আনো।

Tuesday, August 23, 2022

নুরুল শিপার খান

দাবানল 

শুনেছিলাম বাবার মুখে,দেশের স্বাধীনতা 
ফেরানোর গল্প!
গল্প বলছি কেন! ইতিহাস
ইতিহাস রচিত হয়েছিল সেদিন বাংলার মানচিএে
এই বুড়ো বটগাছটা সেই নৃসংস কালের সাক্ষী হয়ে আছে আজও!
আমি আজও আহত বটগাছের মাঝে যুদ্ধাহত মুক্তি
যোদ্ধাদের দেখতে পায়.....
গাছের পাতাগুলোর ফাঁক দিয়ে আকাশের
 নীলগুলো দেখি,এই ৪২ বছর পর হঠাৎ
নীলগুলো লাল আভায় নিমগ্ন
আমার ক্রন্দনের সীমা রইল না
অসীম সরলতায়  নিক্ষিপ্ত বিশ্বাস
আজ বিস্তির্ন কাটার আঘাতে জর্জরিত!

তবুও আশা --------
শিঁরদাড়া উচু করে দাড়াবার,
প্রবল ইচ্ছে খুড়ে খুড়ে খেতে লাগলো আমায়
বললো:হে নবতুর জোয়ান----
সোজা হও!
হাতে তুলে নাও তরবারী!
কেটে টুকরো টুকরো করো ঐ
 অস্থীশীল অপশক্তিকে!

ভাবলাম আর যুদ্ধ করবো না!
স্থফা  দিব এবার সকল আন্দোলনের
ওরা মনের মর্ম বুঝেনা,
ওরা ভালবাসার শত্রু, ওরা বিক্ষুব্দ এক অস্থির
কালো শক্তি......
তরবারি ছেড়ে এবার কলম ধরলাম হাতে
সাথে সাথে হয়ে উঠলাম বিদ্রহি,লিখে ফেললাম
মুক্তির জয়োগান...কবিতার প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে
ঝন ঝনিয়ে বেজে উঠতে থাকলো ঢাল তলোয়ারের ন্যায় যুদ্ধের নাকারা!

পুরোনো শকুনদের নতুন করে অপশক্তির
 রাজত্ব কায়েমের চেষ্টা!

আমার চোখে মুখে তখন বিদ্রহের দাবানল জ্বলছে!

ভবানী বিশ্বাস

আত্মশুদ্ধি

চুপ কর, শান্ত হও, 
যতটুকু পার মৌন থাক। 
গুল্মরুপ ছেড়ে এখন বৃক্ষ রুপ ধারন করছ। 

ডালপালা বাড়ছে, 
মূলের গভীরতা আগের মতো নেই, 
ভাবি বনস্পতি তুমি। 
মনে রেখো, 
পূর্বপুরুষদের প্রতি তোমার ঋণ বেড়েছে। 

আরও বড় হও, 
পাখিদের উপযুক্ত বাসস্থান হয়ে ওঠো। 
জল ধর, ছায়া দাও, 
পথিককে আশ্রয় দাও। 
সবার ঋণ স্বীকার করে মাথা নত রাখ। 
মনে রেখো, মাথা নত করলে কেউ ছোট হয়ে যায় না। 

কর্তব্য পালনের শ্রেষ্ঠ দৃষ্টান্ত হয়ে ওঠো।

Saturday, August 13, 2022

বিনয় শীল

কানমন্ত্র

সুখের হাটে দুখের মেলা
নিত্য নূতন বাঁক।
সুখের নীড়ের স্বপ্ন গুলো
জ্বলে পুড়ে খাক্ ।।১।।

কী হল!
কি যে  হল,
কেন হল এমন?
দিকে দিকে
ভগ্ন দশা 
প্রলয় কাণ্ড যেমন ।।২।।

দেশ ভাঙছে রাজ্য ভাঙছে
ভাঙছে পরিবার,
কোন অশুভ বাঁধা দিচ্ছে
জোড়া লাগিবার ।।৩।।

জন্মদাতা
পিতা-মাতা
যে দিকে যায় যাক্।
তোমার আমার
মধ্যিখানে
সুখের ঢেউটি থাক্ ।।৪।।

ধর্ম ভজা উড়ায় ধ্বজা
পাছে কুমতলব্।
পোড়ায় বাড়ি কাড়াকাড়ি
হায় হায় শুধু রব ।। ৫।।

কানকথা
দেয় ব্যাথা
'সত্য' একা কাঁদে।
নির্দোষ ব্যাক্তি
পা গলে দেয়
পাতা জালের ফাঁদে ।।৬।।

ফিসফিসিয়ে দেয় ফুসলিয়ে
মুখটা কানে গুঁজে।
সর্বনাশা উল্লাসেতে
চোখটা আসে বুঝে ।।৭।।

কানমন্ত্রে 
শান্ দিয়ে
বিবেক কেটে ছুটছে।
তাইতো এখন 
ঘরে ঘরে
বিলাপ্ কান্না উঠছে ।।৮।।

Thursday, August 11, 2022

রুপন সূত্রধর

পতাকা
                
পিঙ্গালি ভেঙ্কইয়া তেরঙ্গা 
পতাকার আজও যুদ্ধ 
তোকে ভাগাভাগির।

ভুলে গেছি পরাধীন
মায়ের অশ্রুজলে,পতাকা
স্বাধীনতার সর্ব সুখ। 

শক্তি সাহস তোর রঙতে
শান্তি ছায়া জগত জুড়ে
ধর্ম চক্র কথা বলে।

ক্ষমলোভী দুষ্ট দালাল 
পতাকা রঙ নিয়ে 
 বাটায়োরা করে।

পতাকা বেঁচে নকল করে 
মুনাফা লোভের খেলায় 
স্বাধীনতার জয়গান করে।

স্বাধীননতার অসুখ 
পরাধীনতার সুখ 
পতাকা মুচকি হাসে।

বীর শহীদের
কার্গিল তেরঙ্গা 
দেশভক্তি জাগে।

তিরাঙ্গা আর ধর্ম চক্র,
জানতে হবে সবার
মাতৃভূমির প্রেমে 
নতুন পাঠে আবার।

বিজন বোস

সত্য ও সুন্দর

এবার বুক জুড়ে গোলাপের চাষ করো ।
সকালবেলা শিশিরের   উপর 
সোনালী সূর্য আর তেরঙ্গা  আভা দেখে
এগিয়ে যাওয়া শিশুটির হাসিতে স্বর্গীয় দ্যুতি ,
 মনুষ্যত্বহীন বর্বরের হাত থেকে 
সমাজকে বাঁচানোর অঙ্গীকার নিয়ে
এগিয়ে চলা যৌবন স্বদেশপ্রেমের মন্ত্রে দিক্ষীত বলেই
লক্ষ্যে অবিচল ... অতন্দ্র প্রহরী ।
সকল গুঞ্জন , ডাক , সুরের মাঝে
সর্বোত্তম " মা " ডাক ।
তুমি বুদ্ধির নখে শান দাও 
স্থিতধী হও ---
ক্ষুদিরাম সুভাষ আদর্শ যে জাতির
শত্রুর তার নাই পরোয়া ।
পরান্নভোজী , কৃপাপ্রার্থী , উমেদার -  প্রবঞ্চকের
কাছ থেকে সতর্ক  থেকে
সৎ ও সুন্দরের পূজায় নিয়োজিত থেকে
তেরঙ্গাকে উর্দ্ধে ধরো---
তেরঙ্গা ভারতের প্রাণ
তেরঙ্গা মানে 
শৌর্যবীর্য ও সত্য- সুন্দরের জয়গান ।

           

সৈকত মজুমদার

চোলাই

পনের বছর আগে চোলাই বেচে 
সংসার চালাত যে উপজাতি রমণী 
সে এখন আশাকর্মী, আর এখনও
হুইল চেয়ার আমার জীবনসঙ্গী!

আজ থেকে বছর পনের আগে
পাশের বাড়িতে রোজ বিকেলে
চোলাই দিয়ে নীচু মাথায় খাড়াং পিঠে 
হেঁটে যেত সংকোচে এক উপজাতি রমণী; 
আর আমি ওর হেঁটে যাওয়া বাতাসে 
একটা মাতাল গন্ধ অনুভব করতাম, তবে
এই গন্ধ মদের নয়, ওর ঘামের! 
ঐ উপজাতি রমণীর দীর্ঘ পথের ক্লান্তি 
ওর ফর্সা গাল বেয়ে ফোঁটা ফোঁটা 
গড়িয়ে পড়ত ঘাম হয়ে ;

উঠোনের এক প্রান্তে বসে আমি
ওর উন্মুক্ত পায়ের গোড়ালি দেখতাম
আর মনে মনে ভাবতাম- 
যদি ওর সাথে চলে যেতে পারতাম! 

অভীককুমার দে

বর্ণমালা

ভাবছি-
তুমিও এই মাটির, আমিও তোমার,  
মাটিতে জীবনের বর্ণ ঢেলে 
বানাতে এসেছি মালা;

বুকের জ্বালা নেভানোর জন্য, না কি-
উল্লাসে ! ঝুঁকে সেই মাটির দিকে,

তবুও কেন জানি আহ্নিক গতির
দোলন বাড়ে বুকের ভেতর 
যতই শব্দ শুনি ঝুলে পড়ছে সময়...

বর্ণ সব আমাদের, এই বিশ্বাসে
আগলে রেখেছি তোমাকেও,

প্রতিদিন জেগে ওঠো, আলো দাও
তবুও ডুবে যাই অন্ধকারে !

শ্রীমান দাস

আগুণ
             
যতটুকু আঁচ পেলে ছাঁই হয়ে যায় হৃদয়
ধীরে ধীরে গোটা শরীর
একটি জীবন ,
তার চেয়েও আগ্রাসী এ আগুন।

কতোবার আধপোড়া হয়েছি 
অন্তরদহনে হয়েছি ছাড়খার
কেউ কখনও পায়নি সে উত্তাপ।

অভিযোগ আছে,
কিন্তু,জানাবার সে দরবার কই?
তবুও আমার কোনো বিদ্রোহ নেই।

জানি,
এক পশলা বিবেকের বৃষ্টি যদি আসে
নিভে যাবে সব অবিবেচনার আগুন।

তিমির বরণ চাকমা

একটি বটবৃক্ষের নাম কাহিনী বৃত্তান্ত

কালের গতি কালের প্রবাহ
কোন সূত্রে বাঁধা
যা আজও হয়নি সমাধা
সে রহস্য জাল।

এ যাবৎ পৃথিবীতে
এল গেল কত প্রাণ
কে রাখে তার পরিসংখ্যান
অথবা কি সম্ভব?
যদি বা র'ল এরই মাঝে
আরও সুকঠিন গনন।

অকাল অসময় বিয়োজন
এই কাল অকালের
আছে কি নির্দিষ্ট তত্ত্ব
কিংবা কোন শর্ত।

প্রায়শঃ শোনা যায়
অকালে অসময়ে বিদায়
এ রহস্য আজও অজানা অচেনায়

বলছিলাম যাওয়া
বৃক্ষ সেএ তেমন
কত এল, কত গেল
জানা নেই কারণ
যতই এগিয়ে নগরায়ন
ততই দেখা মিলে খান্ডব দাহন
বারে বারে।

বলছিলাম আমার প্রিয় সাব্রুম চৌমাথার
বটগাছটির লড়াই কাহিনী।
যখন প্রথম চারা
তখন উলঙ্গ উদ্দাম
বড় হওয়ার সাথে
মাঝে মাঝে ডাল পালা
ছেটিয়ে শুরু শাসন
পরে পাকা সিমেন্ট দিয়ে
হলো বাঁধা কটি বন্ধন
কিছুদির পর গুরুত্ব সহকারে
নেতাজীর আবক্ষ স্থাপন।

সাথে লোহার ঘেরাও
ভাবা গেলো এবার হয়তো রক্ষা পাবে
সেই থেকে চৌমাথা হয়ে গেল
নেতাজি চৌমুহনী।

কিন্তু ভাগ্যমন্দ
দীর্ঘদিন বেঁচে থাকা হল না।
না বৃক্ষের, না নেতাজির
ছেদন সমুৎপাটন হলো আবক্ষমূর্তি
আর সেই বটবৃক্ষের।

আধুনিক মানব শহরোন্নয়নের নামে
বলি দিলো।
২০২২ এর এপ্রিলের মাঝামাঝি
টুকরো টুকরো বটবৃক্ষ পরে আছে পরিত্যাক্ত স্থানে।
আর আবক্ষ নেতাজী হয়তো নিয়েছেন
অন্ধকার কুঠুরের কোন। 
এভাবেই চলছে বারে বারে যুগে যুগে
আগ্রাসন নির্ধন।
বৃক্ষের বয়স সেই অকালে অবেলায়
অনুমান মাত্র সাতদশ
যিনি রোপন করেছিলেন উনি ওপাড়
বাংলায় স্থানান্তরিত
শুনেছি হয়েছেন গত।

ছোটবেলায় উনাকে দেখা যেত
বাজার চত্বরে
সে সময় নাম ছিলো করিম চৌমুহনী
কালপ্রবাহে হয়েছে নেতাজি চৌমুহনী
সেও এবার গত।
কি নামে হবে আখ্যায়িত

এত পরিচিত নাম
পরিবর্তনের ধারা অব্যাহত হতে হতে
হয়তো হবে চৌমুহনী শ্রীরাম
হয়তো বসবে বীর হনুমান।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...