Thursday, July 28, 2022

শ্রদ্ধাঞ্জলি

স্বাগতম

সম্পাদকীয় পাতা

মনন স্রোত দীর্ঘসময় ধরে রাজ্যের সাহিত্য ও শিল্পাঙ্গনে আপনাদের নিয়ে চলছে, কখনও কোথাও পথভ্রষ্ট হয়নি বা আটকে যায়নি। মনন স্রোত নিজেকে স্বতন্ত্র দাবি করে, এ দাবি মুখের দাবি নয়, চ্যালেঞ্জের দাবি। রাজ্য ও বহিঃরাজ্যের অসংখ্য তরুণ মেধার প্রথম সংস্থা ছিলো মনন স্রোত। এই ঐতিহাসিক কর্তৃত্ব আমাদের অলঙ্কার। কথাগুলো বলার জন্য বলা নয়। মাঝেমধ্যে স্মৃতিচারণ করতে হয় শেকড়ের জন্য। তেমনি শেকড়ের টান প্রস্ফুটিত হয়েছে এই সংখ্যাটিতে। এই মাসের সংখ্যায় একটি নতুন মুখ। বাকী লেখকরা  প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত। পরের মাসে নির্বাচিত কবিদের কবিতা প্রকাশিত হবে। আমাদের এই সংখ্যার উদ্দেশ্য হচ্ছে, নৈতিক প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে সামাজিক কল্যাণ। মনন স্রোতকে সামাজিক দায়িত্ব পালনে এভাবেই সহযোগিতা করবেন, এই আশা রাখছি। ধন্যবাদ। নমস্কার।


শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক, মনন স্রোত 

শৌভিক বাগচী

ফিটাস

আজকাল ল্যাব এর কোণের দিকে গেলেই একটা ডাক শুনতে পান ডাক্তার অরিন্দম। 

বউ এর সঙ্গে অরিন্দমের সম্পর্ক টা নেহাৎই পৃথিবীর আহ্নিক গতির মতো। আবর্তিত হয়ে চলেছে শুধু অভ্যাস কে কেন্দ্র করে। নিজে ডাক্তার হওয়াতে অরিন্দম দেহ বলতে নিছক অ্যানাটমি বোঝে।  আর তার বৌ আরাত্রিকার কাছে  দেহ   অজন্তার গুহাচিত্র কিংবা কোনার্ক এর বাৎস্যায়ন কিংবা ,খাজুরাহের  মন্দির । যেখানে দেবতার অর্ঘ্য সাজানো হয়।  দৈহিক মিলন তার কাছে পুজোর অর্ঘ্য ।  আর অরিন্দমের কাছে শুধু অ্যানাটমির প্র্যাক্টিকাল ক্লাস।  কিন্তু এর মাঝেই কেমনকরে সব হয়ে গেলো , টের পেলো না অরিন্দম।  সব প্রজাপিতার ইচ্ছা। 

মা হতে চললো আরাত্রিকা।  অরিন্দমের ডাক্তারি চোখ এড়ালো না।  বুঝলো সবই ।  বোঝালো আর ও বিস্তর।   বাচ্চা মানেই এক্সট্রা দায়িত্ব। কিন্তু নারাজ আরাত্রিকা । সে মা হবেই।   মাস কয়েক গেলো ।  তারপর একদিন আশ্বাসের মিথ্যে আশ্রয়ে সে আরাত্রিকা কে নিয়ে এলো নিজের নার্সিং হোম এ।  আরাত্রিকা জানলো না তার গর্ভপাত হলো।  ভ্রুণ তখন ফিটাস হয়ে গেছে | কেটে বার করতে হলো। ডাক্তার অরিন্দম সেটা ফরমালিনে চুবিয়ে রাখলেন ল্যাবে।  ছাত্র ছাত্রীদের জন্য। 
তিনি যে ডাক্তার আর বৌ যে  সত্যি দখিনা বাতাস , ভুলে গেলেন।

আজকাল কাজে মন দিতে পারেন না অরিন্দম। ল্যাবের কোনের দিকে গেলেই ডাক শুনতে পান , বাবা এস , বাবা এস। 

ভবানী বিশ্বাস

তৃপ্তি

সবার সখ ইচ্ছে থাকে, 
আমারও আছে। 
একটা নিজস্ব জমি হবে
জমিনে খাডি বানাব
বাবার সাথে চাষ করব
একটা পুকুর হবে। 

বিকাল হলে বাবা একটা জমিনের আলে বসে থাকে। 
কিছু ভাবে? জানি না। 
হয়তো সেই সখের কথাই ভাবে। 

ঈশ্বর সব দেখেন। 
আজ এই খাডি আমার বাবার, 
এ জমির মালিক বাবা নিজে। 
আমি মা বাবা 
আমাদের নিজস্ব জমিতে
রোয়া লাগাচ্ছি।

সংগীত শীল

হৃদয় ফসিল  
 
কোনো এক বর্ষারাতে,
হৃদয়পুরে শ্রাবণ নেমেছিল অঝোর ধারে।
তার উষ্ণ ছোঁয়ায় 
ছিটেফোঁটা স্বপ্নরাও নিবিঘ্নে খেলা করছিল।
সমস্ত অরাজকতা ভেঙে দিয়ে,
ভালবাসার গন্ডি অতিক্রম করেছি দুজনে
দৌড় ঝাপে কেঁপে উঠছিল সেইদিন সমস্ত আকাশ।
.
আত্মো উৎসর্গিত করে দিল আমার কাছে,
নির্ভেজাল অভিমুখির তকমা ভেঙে মুহূর্তেরা অসহায়!
সভ্যতার সঙ্কট উপেক্ষা করে 
নিঃস্বার্থ ভালবাসার আলিঙ্গনে ডুবে ছিলাম।
দুস্তর মরুভূমি পেরিয়ে,
অনুভূতির অঙ্গনে ছায়াতরুর সৌরভ ছড়িয়ে গেছে;
আজও সে হৃদয়স্পর্শকাতর রাতের প্রতিচ্ছবি ভেসে ওঠে চোখে।
.
জলন্ত ছাইয়ে শুধু বয়ে যায় 
পটেলেখা জীবনের লাশ।
সাক্ষ‍্য দিয়ে যায় ভালবাসা;
তার ও আমার
আমার ও তার,
ভালবাসা ও অভিমান
অভিযোগ ও দ্বন্দ্ব।

আমরা মুখোমুখি ক্লান্ত 
এখন আমরা আস্ত কবিতা,
আর্তনাদ শুধু দুটি হৃদয়ের।

সজীব কুমার পাল

নিঃসঙ্গ ভ্রমণ



তাকে জানতে এসো না পাখি, নদী ও আকাশ, 
সে হাসিতেই লুকাতে জানে গোপন ব্যথা। 
তাকে শুনাতে এসো না হারানোর শোক
হারিয়েছে সে প্রিয়সব বুকলের মুখ। 

কি নামে ডাকবে তাকে,চোরাবালি? 
সে বহুকাল বয়ে যাওয়া স্রোত! 
তাকে তোমরা দেখে যেয়েও;সৈকত ,
আগুনের পরশমণি সুখ। 

পৃথিবী জেনে যাক আজ
কোথায় হারালে মানুষ পায় জীবনের নির্যাস, 
কোথায় লুকালে মুখ, জানবে না কেউ-
শুনবে না জনমের দীর্ঘশ্বাস। 

সামিন শুভ

নষ্টনীড় 

আমার আশপাশটা ভীষণ খালি
দুর্বিষহ , বিষ্ময়ে তাকিয়ে থাকে চোঁখ
অন্ধকার আকাশে, দূরে ।

আমার আশপাশটা ভীষণ খালি
রাত কাটেনা, অচেতন আনচান মন,
ভীষণ মাথা ঘুরে।

আমি খালি ভীষণ একা, ভাঙ্গা কাঁচ
ভুল করে ভীড়ে আসা বাংলার পাঁচ
আমার চারপাশে শুধু ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক
পাঁজরের ইঞ্চিতে ইঞ্চিতে লাঞ্চনা, অপবাদ।

আমার বুকটা দীর্ঘশ্বাসে ভরে ফুলে আছে
নিশ্বাস ফেলতে পারছিনা,প্রচন্ড রকমের
অদ্ভুত যন্ত্রনা, ধোঁয়াছে।

আমার নষ্টনীড়ে প্রেম নেই ভালোবাসা নেই
কিচ্ছু নেই, আছে শুধু ছাই ছাই আর ছাই,
পিছুটান আর নেই, এগিয়ে যাওয়ার পথ নেই,

স্বপ্নের কঙ্কালগুলো পিছু ধাওয়া করে রোজ
ভয় দেখায়।বেঁচে থাকার ভয়।

এতো এতো যন্ত্রণা তবু চোখে অশ্রু আসেনা। 
চোখে আর জল নেই। 
ইচ্ছে করে বুক চাপড়িয়ে চিৎকার করে কাঁদি,
কই আসেনা কান্না,  আসেনা।

ঘুম আসেনা। প্রেম আসেনা।
 কিচ্ছু আসেনা।
দীর্ঘশ্বাসটা বেরিয়ে আসেনা।
আসলেই হয়তো ! 

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

তোর দুঃখ কি মাইয়া!

শুনছো?
আজ্ঞে হ্যাঁ তোমারেই কৈতাছি।
তুমি এমন ফ্যাল ফ্যাল কৈরা
কোনদিকে চাইয়া থাকো ?
তোমার চোখে দেখি কেমন একটা
আপসোস জইমা রইছে,
চোখের কাজলেও তেমন একটা
সন্তুষ্টি নাই।
কাঁচের চুড়ি ভাইঙ্গা হাত কাইটা
লাল লাল হৈয়া গেছে,
পায়ের নূপুরও দেখি 
ঝুনুর ঝুনুর কৈরা বাজেনা।
চুল উড়াইয়া নিতাছেগা
কলাপাতার হালকা বাতাস,
হাটতাছো যেন এই পইড়া যাইবা
বহুদিন টাইম-টেবিলে খাও নাই না?
চেহারাডা কি বানাইছো!
নিজের দিকে চাও,
তোমার ভিতরে তুমি নাই
কি যে হৈছে হায় আল্লাহ...

উর্মি সাহা

আমি

আমি হেঁটে এসেছি হাজার খানেক পথ
আমি দেখেছি, ওভার ব্রিজের তলায় সুখের সংসার;
হাত পাতে-হাত জোড়ে অবিরাম।

আমি হেঁটে এসেছি হাজার খানের পথ
আমি দেখেছি, লাইট পোস্টের নিচে হামাগুড়ি দিচ্ছে অভাব।
আবার সোনালী রঙের মত উঁকি দিচ্ছে শৈশব স্বভাব।

আমি হেঁটে এসেছি হাজার খানেক পথ
দেখেছি; পচা সব্জি আর ফুলের মত যৌবন!
লোকমহলে দেখাদেখি সব জেরক্স করছে মন।

আমি হেঁটে এসেছি হাজার খানেক পথ
হাতছানি দেয় পাষা খেলার মত জীবন মরণ।
প্রেম-বিলাস-বাহানায় উঠে গড়ে যৌবন ব্যাকরণ।

আমি হেঁটেছি হাজার খানেক পথ
মাইলের পর মাইল গড়ায়, মাথার চুলের মত-
ঝরে পড়ে মানুষ, পচে-গলে নিঃস্ব হয়!
তবুও আমি হাঁটি হাজার খানেক পথ।

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

আগুন পলাশ

রাস্তার মোড়ের পলাশ গাছটা এবারেও  ফুলে ফুলে লালে লাল।যেন আস্ত এক আগুন।গাছটা আমার কাছে অসহনীয় এখন। বুকের ভেতর ওর জন্য আমার ঘৃণার আগুন জ্বলে।গতবছর  ভালোবাসার পাত্রকে বিয়ের অনুমতি না দিয়ে বাবা জোর করে অন্য ছেলের সাথে বিয়ে দিতে গেলে পটলচেরা চোখ,গালে টোল হাসি মিষ্টি  রাধা এই পলাশ গাছটা থেকে লতা হয়ে ঝুলে পড়েছিল শেষ নিঃশ্বাসে। পলাশের লাল তাই রাধার চিতার আগুন মনে করিয়ে দেয় আমায়। চোখের সামনে জ্বলতে থাকে রাধা যেন ঐ পলাশের আগুনে।

Tuesday, July 26, 2022

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

আরো একবার

আমাদের সর্বনাশে ওরা হাত বাড়িয়েছে
২১ কিংবা ১৯,বাংলা কিংবা আসাম
রক্তাক্ত ইতিহাস ভুলে, কেড়ে নিতে চাইছে
বর্ণমালা অ- আ- ক -খ,প্রাণের আবেগ।

ইংরেজি হিন্দির অদ্ভূত যুগলবন্দী; 
ছুটি বাংলার,অথচ কি রহস‍্যময় ভঙ্গি!
পড়নে ধূতি ;গায়ে পাঞ্জাবী ,গলে উত্তরীয়
সহধর্মীনিকে দিলেন লাল পাড়ের সাদা শাড়িটি,
কলাপে বড় লাল টিপ,সীমান্ত রঞ্জিত ।

মঞ্চ জুড়ে হই হল্লোর, খাঁটি বাঙ্গালীর তকমা
হাতে মাইক্রোফোন, গুরু গম্ভীর স্বর
"নমস্কার-ভাই -বন্ধু -প্রিয় -সাথী জন"
মুখে মুখে সাধুবাদ,জননেতার জয়গান।

অথচ শিক্ষাঙ্গনে বাংলা রাখাটা আপত্তিকর
বর্ণমালা,ধারাপাত নব প্রজন্মের কাছে ইতিহাস,
রবীন্দ্র,বঙ্কিম,নজরুল শরৎ,জীবনানন্দ
বাংলার প্রতি হৃদে যাঁদের বসত
তাঁদের উপচে ফেলতে উদ‍্যত ওরা।

বরকত,সেলিম,কানাই,হিতেশ,কমলা
শহীদ মিনারে জ্বালাচ্ছে মশাল,রক্তে রক্তে
লিখছে গান," বাংলারে যারা করছে গৌণ
তাদের দিতে হবে রক্তের দাম।"

চল তবে মশাল হাতে হউক প্রতিবাদ
প্রজন্মের কাছে বাংলারে করি মহীয়ান
আরো একবার লিখিত হউক ভাষার ইতিহাস।

পায়েল সাহা

মা

মা মানে চোখের আলো,
শিখায় যে বাসতে ভালো।
মায়ের হাত ধরেই চলতে শিখি।
স্নেহমমতা ভরা ভালবাসা গায়ে মাখি।
  তুমিই যে শিখিয়েছ হাসতে, 
কী করে ভুলি তোমাকে ভালোবাসতে।
তুমিই যে স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছ,
সামনে এগোনোর মনে শক্তি জাগিয়েছ।
কখনোই দাও না আমাকে দুর্বল হতে,
মনে উৎসাহ জাগাও সর্বদা পাশে থেকে।
মা আমার চাঁদের আলো।
চায় না কখনো নিজের ভালো।
মা আমার স্বচ্ছ আয়না।
মায়ের কাছে করি যে বায়না।
নিজের কষ্ট ভুলে গিয়ে মা
দূর করে যে‌ আমার কষ্ট।
শত কাজ করে তুমি ক্লান্ত হয়েও হওনা ক্লান্ত।
হাজার ঝামেলার মাঝেও তুমি ভুলনা নিতে আমার যত্ন।
একা হাতে সামলায় মা, কাজ একশো।
মা আমার একাই একশো।
                         

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

ভোরাই

"ভোর" নামের কোনো শব্দ জানি না আজও। প্রতি সন্ধ্যাশেষের গাঢ় হতে গাঢ়তর অন্ধকারে প্রসববেদনা ওঠে রাতের। নেমে আসে মহাকাব্যের রথী মহারথীরা। স্নানসারা ভেজা শরীরে নত হয় আমার মায়ের কপালের লালটিপের সামনে। গোয়ালের গাইয়ের ওলান হতে গড়িয়ে পড়ে তরল আলো। নেচে ওঠে কলমী, নটে, কুমড়োলতা। বাতাসে গন্ধরাজের ভ্রমণবিলাস। ছোঁয়া রাখে কমলের দলে।
আর মাছরাঙাটি শিকার ভুলে গল্প জুড়ে দেয় মাছেদের সাথে।

রাতের শেষে মায়ের রক্তিম কপালের নামই কি "ভোর"?!

লিটন শব্দকর

অরণ্যসেতু

পায়ের আওয়াজে রুয়েলিয়ার পরাগধানী আনন্দ এঁকে রাখে
অথচ একটি আপ্যায়িত ছন্দ অন্য একটি ওঠাপড়া গিলে খায়
ত্রি-খিলা স্থল কাছিম পেটের নীচে এনে রাখে পায়ে দলা ঘাস।

বনের চাঁদোয়ায় চাঁদ তারা নক্ষত্রের স্পর্শে সারারাত স্নানগান,
বনঢেঁড়শ ফুলের হলুদ পাপড়ির কালো দাগ শুষে নিতে চাইছে
কিছু কলঙ্ক আর দূঃখকে আলো স্নান করিয়ে দেবার আশ্বাসে।

করমর্দনরত হাতকে হারিয়ে দেবার কূটকৌশল জিহবায় টানে
সাদা চিতি সরীসৃপ; নির্দোষ মেলার ভীড় জিলিপির গন্ধে চেনে,
জানালার আবলুস কাঠে ঠেকে আছে দুর্দিন তবু নৈরাশ্য নেই।

বনের গহীনে নদী সাঁকোটির উপর উড়ছে অনেক জল কুক্কুট।
পরাগধানীতে জয়ের রেণু রেখে সহস্র পায়ের সাহসী অভিযান
দুটো সোনালী পাহাড়ি ব্যাঙ খুঁজে নেয় আশ্রয় ধূপের ঠেসমূলে।

মিঠুন দেবনাথ রাজ

অদৃশ্য ভালোবাসা 

এই কেমন ভালোবাসায় 
তুমি আমায় জড়ালে

এই কোন মায়ার সাগরে 
 তুমি আমায় ভাসালে

হাবুডুবু খেয়ে চলছি  প্রতিনিয়ত 
কোথাও কূল কিনারা নাই

অদৃশ্য এই ভালোবাসার অস্তিত্ব 
 বলনা কোথাই গেলে পাই

এটা কি ছিল সত্যিই ভালোবাসা 
 না কি শুধুই আমার কল্পনা 

তবুও পরম আদরে রাখতে চাই
 মনের সব প্রিয় ভাবনা  

তোমার ভালোবাসার পাখি হয়ে 
 ডানা মেলে উড়তে চাই আকাশে 

অদৃশ্য এই ভালোবাসার স্মৃতি গুলি 
ছড়িয়ে দিতে চাই মুক্ত বাতাসে 

এই কেমন ভালোবাসায় 
তুমি জড়ালে আমায়

প‍্রতিনিয়ত মনে পরে  স্মিতিগুলি
মূহুর্তের জন্য ভূলতে পারিনা তোমায়

তুমি ছিলে তুমি  আছ
তুমি থাকবে চিরকাল 

মনের ভালোবাসা যে 
রক্তিম সূর্যোদয় সম
যার কখনো হয় না বিকেল
 
অদৃশ্য ভালোবাসার খুজেঁ 
 হয়েছি আমি ছন্নছাড়া 

অন্তরেতে ভালোবাসার ক্ষুধা 
প্রতিনিয়ত করে আমায় তাড়া। 

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

হাওয়ার রূপ রঙ
      
হাওয়ার কী বয়স আছে? 
যৌবন বার্ধক্য বা মৃত্যু!  
হাওয়া কী কঠিন রোগে ভুগে? 
যক্ষা এইডস এনিমিয়া ক্যান্সার! 
তাহলে আমরা কেন কথায় কথায় বলি
'আজকাল হাওয়াটা বদলে গেছে? 

আসলে আমাদের বয়েস আছে
রোগ শোক জরা মৃত্যু আর
বদলে যাওয়ার দুর্ধর্ষ স্পৃহা
আমরা আমাদের মতো করে হাওয়াকে 
ধরতে গিয়ে বদলে দেই
তার রূপ রঙ সুন্দর চেহারাটা। 

এই হাত কলুষিত হয়ে গেছে
এই চোখ বিভ্রাটে ভরে গেছে
করোটিতে বিষাক্ত কীটের বাসা
দিনদিন বংশ বৃদ্ধি চর্চার বিষয়
বেড়েছে দারুণভাবে আত্মপূজার প্রচলন
আমরা হাওয়ার উপর দোষটা চাপিয়ে
বেকসুর বেঁচে থাকায় আত্মমগ্ন 
তাই নদীর সৈকতে বালু নিয়ে 
উটপাখির মাথাগোঁজা খেলা
হাওয়া চোখ খুলে দেখে সব
নির্লজ্জতা নৃশংসতা
প্রতিবাদহীন বেপরোয়া চলা।      

নন্দিতা চক্রবর্তী

মৃত্যু হীন জন্মদিন 

আবার এলো সেই দিন
দিকে দিকে উদযাপিত 
তোমার জন্মদিন।
ফুলে ফুলে ছেয়ে গেল ছবি
গানও হল, যাকিছু লিখেছেন রবি,
কত বক্তৃতা, গবেষণা এল উঠে ,
কেন কিছুতেই প্রাণের রসদ না জুটে!
শুধু - তুমি যা গেয়েছিলে,
যাকিছু গাইয়েছিলে,
আজও তা  আকুল প্রাণ লুটে।


পথে চলতে হঠাৎ 
তোমার ছবিতে চোখ গেল,
নীচে  লেখা তোমার নাম।
একটু আবাক ই হলাম।
নিজের অজান্তেই হাসি পেল।
এই প্রজন্ম যে তোমায় চেনে,
সে সন্দেহ তো গেল।

কি হাস্যকর!! 
"তুমি কি কেবলই ছবি"
আজ তুমি নিতান্তই ব্যাক্তি নও।
তুমি পুণ্যশ্লোক , 
তুমি প্রতিষ্ঠানও যে হও,
তোমার কাঁধে ভড় করেছে 
বিরাট জাতি, তাদের পরিচয়।
তুমি সেই ভারে আহত নও।
তুমি অক্ষয়--
শতবর্ষ জীবি বটের মতো
অবলীলায় বহন করেছ
সে ভার।
তোমার দেহী রূপ ছাপিয়ে,
ধ্যানমগ্ন ঋষি রূপ ।
সেই রূপে 
মহাকাল লিখেছে 
তোমার অমর নাম 
স্বর্ণ লিখনে।
জয় হোক , তোমার
জয় হোক, জয় হোক।

Thursday, July 21, 2022

সৌরভ দেবনাথ

পিতা মাহাত্ম্য

.
মাথায় হাজার চিন্তা নিয়ে 
হাজার কষ্টের মধ্যে দিয়ে
দিনের শেষে পাখির মতো
ঠোঁটে করে খাবার আনে বাবা! 
.
শিশুকালে যার কাঁধে চড়তাম 
কিছু দেখলেই বায়না ধরতাম
কিনে দেওয়ার।
এখন সামনে যেতে ভয় লাগে। 
বাবার চোখে শুধু রাগ,
কত গম্ভীর!
যেন ভালোবাসা নেই, স্নেহ নেই!
.
মাথার ঘাম পায়ে ফেলে 
সারাদিন রোদে খাটে।  
কখনও দোকানে 
কখনও জমিতে!
.
ছেলেকে উঁচু মানুষ 
বানাবেন বলে শত কষ্ট ভুলে
জীবন উৎসর্গ করেন।
যত বড়োই হোক রোগের অাকার 
তবুও তিনি বসে থাকেন না বেকার।
.
সারাদিন কাজ করে ক্লান্তি নামে শরীর জুড়ে
আমাদের ছায়ায় রেখে বাবা পুড়ছে রোদ্দুরে 
.
বাবার কাছে গিয়ে বসলে
মনে হয় ;
এই যেন আমার 
নিশ্চিন্ত আশ্রয়!
.
বাবার হয় না আলাদা পিতৃদিবস 
বাবাতো কাজে যাবেই।
হোক এবার ঝড় বৃষ্টি 
অথবা ধস 
শত কষ্টের মধ্যেও দেখা যায় না বাবার চোখের জল। 
তিনি এই বাবা।
বাবা এক শাশ্বত বটগাছ
যিনি ছাড়া পুরো অচল।

Thursday, July 14, 2022

মোঃ রুবেল

কবিতা জ্বলুক

কবিতার বুকে কিছু আজন্ম দুঃখ পুঁতে দিতে চাই।
যেসব দুঃখ নিরন্ন মানুষ বহন করে চলছে অনাদিকাল।
এই দুঃখে--
কবিতা জ্বলুক। জ্বলতে থাকুক।
এই দহনের উদ্ভট গন্ধ মানুষের হৃদয়ে ছড়িয়ে পড়ুক, ছোঁয়াচে রোগের মতো। 
মানুষ বুঝুক কতটা দুঃখ পেলে এভাবে বুকে দহন হয়, উদ্ভট গন্ধ বের হয়।
তারপর......
মানুষ দুঃখ সারানোর ঔষধ খুঁজুক।
মানুষ মানুষকে বুঝুক।
হৃদয় বুঝুক।
অতঃপর কবিতা আতর হোক।

Monday, July 11, 2022

রুপন সূত্রধর

চারাগাছ
         

 বিদ্যালয় শুরুর সকালবেলা 
শিশুটির মিষ্টি মায়াবী হাসি 
 মন ভরে যায় জীবন খুশি। 

স্যার ফুলের চারাগাছ 
এক মুঠো ভর্তি হাত
চোখে হাজার স্বপ্ন মেলা।

জগতের বৃক্ষ রোপন 
মহাযজ্ঞে সামিল হাতেকড়ি
আনন্দে নাচানাচি মাতামাতি।

দুসপ্তাহ ধরে এড়াইনি নজর
হীনমন্যতায় বিদ্যালয় কামাই
আউট ড্রেস,পোশাক অভাব।

আজ কিন্তু বনমহোৎসব
নতুন জামা পড়েছে, 
তৃপ্তি দু-নয়ন ভরে।

সবার সাথে মাতোয়ারা 
দুটি গাছ গুঁজেছে মাটিতে,
আনন্দে আত্মাহারা নাচানাচি।

দারিদ্রতার পিছুটান  ছেলেবেলা
দুচোখ ভরা স্বপ্নরা ঘিরে
জানেনা শিশুটি আমাদের চারাগাছ। 

বেচাল সমাজে স্বপ্নের সিঁড়িতে
একপা দুপা এগিয়ে দিয়ে 
রাখবো ধরে মুঠো ভরে।

Sunday, July 10, 2022

চন্দন পাল

শ্রাবণী

চল,  ঋতু সবে   খেলি।

ত্যুই  ভিজিয়ে  দিয়ে  যা, 
আমি  জীবন  পুঁতে  যাই। 

তারপর  স্বপ্ন  দেখি  ঘরে ঘরে  তপ্ত  উনুন,
আর  বেগবান  কৃষ্টি । 

ধরণীর  ওমে  জীবন  জেগে  উঠে ।
আমরা  লালন  খেলায়  মাতি।

শরৎ এ  শারদীয়ার  পাট খোলা  সাজের
গন্ধে  মাতোয়ারা  ত্যুইও, 
 খেলার  ছলে,  ঝটকা  দিয়ে  যাস, যেন ওড়না  ছুঁয়ে যায়।

হেমন্তের  হিমেল  হাওয়ায়  নবান্নের  ঘ্রাণ,
পাস কি ?  আয়  পাশে  বোস,  স্বাদ  নেবো।

তারপর  শীত  ঘুম।

তোর  দুধ বরণ  সাদাতুষার  পানে, জেগে উঠে  সুপুষ্ট সুঠাম  যৌবন।

বসন্তে গা  ভাসায়, ধরনীর  সবুজ  সবুজ  সব।
রঙ  উড়ায়  প্রজাপতি,  পলাশ,  শিমূল,  কোকিল।

পল্লবিত  কুঞ্জে- নিকুঞ্জে,  ঋতুমতী হয়  গ্রীষ্ম।

কালবোশেখে  উড়ে  অন্তর  বাহিরের  অবাঞ্ছিত  আবর্জনা।
জীবন  সংঘর্ষের  পাঠ  দিয়ে  যাস্ ।

জীর্ণতা  ফেলে  নতুন  ভাবে  গড়ি। 
ক্ষোভ  ছেড়ে  আয় খেলি,  দিগ্বিদিকে  দাবদাহ। 

 খুলে  ফেল   তোর কৃষ্ণ মুখাবরণী,  
ঝরবি আয় বর্ষায়।
আমি  কলার  ভোরাই  বেঁধেছি,  আয়  ভাসবো।

             

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...