Saturday, April 29, 2023

মনন স্রোত

সম্পাদকীয়

জগতে মানুষ কেন অমর হতে চাইবে! জীবন নাকি যন্ত্রণাময়, অতিষ্ঠ। জ্বালাপোঁড়ায় ছটফট করতে করতে যাপন, জীবনের। এ পথচলা শেষে দীর্ঘ প্রতিক্ষার মৃত্যু। জীবনের ক্ষেত্রে মৃত্যু বড় গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যু ভিন্ন এত নির্ভুল, স্বচ্ছ বিষয় জগতে আর নেই। এটিকে উপেক্ষা করার সাধ্য নাই। অমরত্বের কোনো বাস্তবতা নেই। এরপরও অমরত্বের কথা আসে। কেন আসে, কিভাবে আসে, এ জিজ্ঞাসা সকলের প্রায়।
.
প্রতিটি দর্শন মৃত্যুকে সম্মান দিয়েছে। প্রাণী মাত্রই তাঁকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এটি বাধ্যতামূলক। এ সংখ্যাটি প্রকাশ করার সময় মনে মনে মন্ত্রের মতো জপ হয়েছে এটি। মন্ত্র মানে মননাৎ ত্রায়তে। মৃত্যুকেই মনে করা। ধন্যবাদ যারা লিখেছেন। কৃতজ্ঞ সকলের কাছে।

বিনম্র
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

মনন স্রোত - এপ্রিল

সান্তা দেবনাথ

লাল বেনারসি

উঠানে তখন ভাদ্র মাসের প্রখর রোদ। ফকফকা সোনালী আলো। কাঁঠাল গাছের পাতার সুন্দর নকশা করে পড়ছে রোদ। তখনো দু তিনটে কাক ডেকে যাচ্ছে। অথচ সুমতি কিছুই শুনতে পাচ্ছে না। চারদিকে এত আলো কিন্তু সুমতির দুচোখে শুধুই অন্ধকার। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হতে চলল সুভাষ বাড়ি এসে  'সুমতি সুৃমতি...' বলে ডাকছে কারোর কোনো সাড়া নেই। ঘরে ডুকতেই দেখল মেঝেতে সুমতি শুয়ে আছে। সুভাষ একটু হেসে বলল' কি সুমতি এতো ডাকলাম শুনতেই পেলে না। এই বলে সে সুমতিকে ছুয়ে অবাক হয়ে গেল,শরীর সাপের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। মুখটা ঘোরালে দেখতে  পেল ঠোঁটের কোণে লালারস ঝরে পরে শুকিয়ে আছে। আর বুঝতে বাকি রইল না।

   সুভাষের চোখের সামনে ভাসতে লাগল বারো বছর আগের অগ্রহায়ণ মাসে সে একটি সুন্দরী কন্যাকে দেখতে যায়। লাল টকটকে শাড়ি পড়ে কন্যাটি পানের বাটা হাতে সামনে এসে দাঁড়াল। প্রথম দেখাতেই সুভাষ ও তার মায়ের সুমতিকে বেশ ভালো লেগে যায়। সুমতি বউ হয়ে যখন প্রথম শ্বশুর বাড়ি আসে তখন পাড়া পরসি সবাই সুভাসের মায়ের পছন্দের বেশ প্রশংসা করে। একজন প্রতিবেশী বলেন' সুভাষের বউ যেন সাক্ষাৎ লক্ষ্মী প্রতিমা।' আর একজন বলেন ' এ পাড়াতে এ বউকে টেক্কা দেবে এমন বউ আর একটা আছে?'তা শুনে সুভাষের মায়ের গর্বে বুক ভরে যায়।তিনি বউমার খুব খাতির যত্ন করেন।কিন্তু এত সুখ সুমতির কপালে সয় নি।সুমতির জরায়ুতে টিউমার অপারেশন হওয়ার ফলে সে বাচ্চা হওয়ার ক্ষমতা হারায়। তারপর থেকে সুভাষের মা তার দ্বিতীয় বিয়ের কথা বলেন।সুমতি ও বলেছিল।কিন্তু সুভাষ বিয়ে করতে রাজি হয়নি।সুভাষ সুমতিকে বলে ' দেখো সুমতি কত বাচ্চা মাতৃহীন পিতৃহীন রাস্তায় অনাথ আশ্রমে বড় হয়ে উঠছে। তাদের থেকে তো আমরা একটা বাচ্চা নিয়ে আসতে পারি।সুমতি এ প্রস্তাবে রাজি হয়েছিল। কিন্তু সুভাষের মা রাজি হননি।তিনি বলেন 'আমি আমার নিজের নাতি নাতনি চাই, আমার বংশধর চাই। ওসব চালচুলোহীন রাস্তার ছেলে মেয়ে এনে আমার বাড়িতে ফেলবে। আমি বেঁচে থাকতে তা হচ্ছে না বাপু।' সুতরাং এ প্রস্তাব এখানেই চাপা পরে যায়।
 
    তারপর কয়েক বছর পর হঠাৎ সুভাষের বদলির অর্ডার আসে। আগরতলা থেকে বদলি হয়ে যায় মনুতে।সুভাষ তার সাথে সুমতিকেও নিয়ে যেতে চায়,সুমতি যেতে রাজি হয়নি।সুভাষ চলে যায় সুমতি সদর দরজা পর্যন্ত স্বামীকে এগিয়ে দেয়। যতটুক পর্যন্ত গাড়ি দেখা যায় সুমতি তাকিয়ে থাকে। গাড়ি চলে গেলে সুমতি নীরবে চোখের জল মুছে। তার স্বামীর সাথে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। যেদিন সুভাষ খেতে বসে মাকে বলছিল ' মা আমার তো মনুতে বদলি হয়ে গিয়েছে, ভাবছি তোমাকে আর সুমতিকে নিয়ে যাব।আর আমি সেখানে ঘর ভাড়া ও নিয়েছি। তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।' তখন সুভাষের মা বলেন ' না বাবু আমি তোমাদের সাথে যাচ্ছি না।এখানে ঘর বাড়ি ফেলে ওখানে গিয়ে আমি থাকতে পারব না।তোমরাই বরং যাও।' সুভাষ বলে ' আমরা ওখানে থাকব আর তুমি এখানে একা থাকবে। যদি তোমার অসুখ বিসুখ হয় কে দেখবে।' মা বলল ' আমাকে নিয়ে তোমাদের ভাবতে হবে না। আমি থাকতে পারব।' এত বলার পরও তিনি রাজি হননি। সুভাষ উঠে চলে যায়। সুমতি এটো থালা বাটি নিয়ে যায়। শাশুড়ি সুমতিকে ডেকে বলে ' দেখো বউমা, বাবু তোমাকে নিয়ে যাবে বলছে তুমি কিন্তু আবার চলে যেও না।তুমি তো আর আমাদের বংশধর দিতে পারবে না।আজ এতবছর ধরে বলছি বিয়ে কর করলো না। তোমার কাছে থাকলে তোমার মায়া কাটাতে পারবে না। এখন কিছু দিন তোমার থেকে দূরে থাকলে তোমার মায়া কাটাতে পারবে। পুরুষ মানুষ তো একা থাকলে মন পরিবর্তন হবে।' সুমতি মৃদুস্বরে বলে ' ঠিক আছে।' তারপর সে সুভাষকে বলেছে ' মা বয়স্ক মানুষ ওনাকে ছেড়ে যেতে আমার মন মানছে না। তাছাড়া তুমি তো প্রতি শনি রবিবারে আসবেই। এখন তুমি একাই যাও।

   শনিবার দিন সুভাষের আসার কথা। সুমতি সকাল থেকে সুভাষ যা যা খেতে ভালোবাসে সব কিছুই রান্না করেছে। কিন্তু সেদিন সুভাষ আসে নি। সন্ধ্যা সময় সুমতিকে ফোন করে বলে ' সরি, আজ আসতে পারছি না  জরুরি কাজে আটকে গেছি কাল আসবো।' এই বলে সুভাষ ফোন রেখে দিল। সুমতির চোখ দিয়ে দু ফোঁটা জল গাল বেয়ে পরে। তা দেখে শাশুড়ি মনে মনে খুশি হয় ভাবে ' ছেলের মন ফিরেছে।' সুমতিও যেন সুভাষের মধ্যে কিছু একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করে। সে ভাবে হয়তো তার খারাপ লাগবে ভেবে সুভাষ আর দ্বিতীয় বিয়ে করে নি। সেদিন রাতে আর সুমতির ঘুম আসে নি। পরের দিন সকালে সুমতি ঘরে থাকা ইঁদুর মারার ঔষধ খেয়ে সুভাষের জীবন থেকে চিরতরে সরে যায়।
   
   সুমতিকে লাল বেনারসি পড়িয়ে, পায়ে আলতা,  সিঁথিতে লাল সিঁদুর পড়িয়ে দেয় সুভাষ। সে সুমতির দিকে তাকিয়ে থাকে ভাবে ' এ যেন সেই ১৫ বছরের বালিকা সুমতি আজ আবার শ্বশুর বাড়ি যাচ্ছে। তার সত্যি কারের শ্বশুর বাড়ি। যেখান থেকে সে আর কখনো ফিরে আসবে না, কেউ ফিরে না সে ও ফিরবে না। যেমন ভাবে সুমতি এবাড়িতে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে যাচ্ছে। কোথাও কোনো পিছুটান নেই। সব বন্ধন ছিন্ন করে চলে যাচ্ছে।

পূজা মজুমদার

প্রথম দেখা

তোমাকে প্রথম দেখার আজ এই দিনে ধরণীর বুকে জন্মেছে এক নতুন ইতিহাস,
থেমে গিয়েিছলো সময়ের চাকা, থেমে গিয়েছিলো নদীর স্রোত।
থমকে গিয়েছে মহাকাল, স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে  বিরহে
গাঁথা সব কবিতার পঙক্তিমালা।
পাশাপাশি থাকার  নিঃশ্বাস ছড়িয়েছিলো কিছুটা বেশি উত্তাপ!

ঙচুপ করে ছিলাম । দুজনে দুজনকে জাপটে রেখেছিলাম কিছুসময়।  ভালো লাগা আর ভালোবাসার চাওনিতে আচ্ছন্ন ছিলাম। সে আমার দিকে তাকিয়ে । সে এক অন্য রকম চাহনি।  যে চাহনিতে অনেক কিছুই বদলে যায় আমাদের।

গৌতম মজুমদার

আমার মা
.
মাগো,তুমি কোন জাতেরি মা?
নিজ সন্তানকে করছো ক্ষত বিক্ষত।
হিংসা ক্ষোভে কেউকি বাঁচে মা?
সব মায়েরা নয়কো তোমার মতো।
    
আমার মা তো হাসি মুখে সুধায়
"খোকা তুই করিসনা কো ভয়,
আশীষ আমার সঙ্গে যে তোর আছে
এ বিশ্বটা করবি যে তুই জয় ।"

রাগ করে মা বকুনি দিত যখন
অভিমানে চাইনি খেতে ভাত,
খাবার নিয়ে মুখের সামনে ধরে
বাড়িয়ে দিত সোহাগ মাখা হাত।

জ্বরের ঘোরে প্রলাপ বক তাম যখন
মাথার কাছে জাগতো সারা রাত,
উপোস করে ঠাকুর ঘরে গিয়ে
রোগ সারিয়ে করতো বাজিমাত।

যেদিন মাকে রাখি বৃদ্ধাশ্রমে --
জড়িয়ে মোর গালে চুমু খেয়ে
হেসে বলে -- "সাবধানে যাস খোকা",
মুখপানে মোর রইলো শুধু চেয়ে।

সব চাহিদা পূরণ করতো মা --
হৃদপিন্ডটা চাইতেই হেসে বলে --
"এ আর এমন কি চেয়েছিস খোকা,
নিয়ে নে না বুক থেকে মোর খুলে।"

হৃদপিন্ডটা তুলে নিলাম হাতে
মা যে আমার বড্ড ভীষণ বোকা,
দৌড়তে গিয়ে রাস্তায় গেলাম পড়ে
হৃদপিন্ডটা হঠাৎ উঠলো বলে --
"তোর কোথাও লাগেনি তো খোকা ?"

চমকে উঠি মায়ের কষ্ট শুনে --
বললাম, আমায় --"ক্ষমা করো মা --
এ ভুবনে তোমার অধম খোকা
আজও তোমায় চিনতে পারলো না।"

পায়েল সাহা

ইন্টারনেট 

ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
হোয়াট ইজ ইন্টারনেট? 
সারা বিশ্বকে করে কানেক্ট,
ইট ইজ ইন্টারনেট।

হোয়াটসঅ্যাপ, ফেইসবুকে তোমার মাধ্যমে করে কানেক্ট,
শুরু হলো হাজারো মানুষের মধ্যে যোগাযোগ আর ইনবক্সে কমেন্ট।
      ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
ইউটিউব, ইনস্টাগ্ৰাম চলে না তো তোমায় ছাড়া।
নেট প্যাক শেষ হলে মানুষ হয়ে যায় দিশেহারা।।
মনের কথা হোক বা দুঃখের কথা,
সামনাসামনি কাউকে বলতে পারি না যেটা।
মোবাইল ফোন এ দেখে হোয়াটসঅ্যাপ আর মেসেজ বক্সটা,
 নিঃদ্বিধায় মন খুলে বলতে পারি সেটা।।
ইন্টারনেট, ইন্টারনেট।
হয়তো তোমার মাধ্যমে উপলব্ধি করি ক্ষনিকের আনন্দটা।
এইভাবেই সারা জীবন টিকিয়ে রেখো হাজারো মানুষের বন্ধুত্বটা।

বিশ্বজিৎ মানিক

মুক্ত আলোর পথে
.
আর কতকাল আবেগ হত্যা করে
অজ্ঞতার অন্ধ পথে
হেঁটে বেড়াবে উদ্ভ্রান্তের মতো?
আর কতকাল?
বরং,তার চেয়ে এসো খোলা ছাদে ৷
স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেবে
এক ঝলক শীতল বাতাস
তোমার স্নিগ্ধ মায়াবী চোখে৷
আকাশ পাড়ে চেয়ে দেখো
জ্যোৎস্নার আলো ভেসে যাচ্ছে চারিদিক ৷
ছাদের কোণে শিউলি গাছটার
পাতার আড়ালে।
মধুর সুরে গান গেয়ে যাচ্ছে
নাইটেঙ্গেল৷
দূরের ওই আকাশ ডানা মেলেছে
পূর্ণ চাঁদের রূপালি আলোয় ৷
হাতছানি দিয়ে বারবার ডাকছে তোমায় ,
যেন তুমি বেরিয়ে পড়ো 
মুক্ত আলোর পথে ৷

দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়

বৃষ্টি চেনে ভালোবাসার শরীর
.
ঝলসে দেওয়া দাবদাহের গদ্যে
বৃষ্টির ফোঁটা টুপটাপ কবিতা হয়ে ঝরে পড়ে 
বৃষ্টির দামালপনায় সাদা আবীর ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে
এক অচেনা আনন্দ বিস্ময়ভরা চোখে দেখতে থাকে সেসব

পথের কোণের বটগাছটার গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকে ভালোবাসা
ভেজা যৌনতার বিন্দু বিন্দু আদরে ভালোবাসার রঙ লাল
কাঁপা আবেগ বৃষ্টির মতোই শরীর মাতায়
একটা খোলা পৃথিবী দুহাত বাড়িয়ে আলিঙ্গনে থাকে ওদের 

কপাল থেকে গড়িয়ে পড়া ফোঁটায় যেন আসমানী রঙ
ডানা মেলে উড়ে যাওয়া মেঘ দেখতে থাকে দুষ্টু চোখে
প্রাণের ক্লোরোফিল জমতে থাকে কোষে কোষে
একটা আদিম পৃথিবী সামনে এসে দাঁড়ায়
বটগাছটা ডালপালা মেলে ওদের লজ্জা ঢাকতে থাকলে 
বৃষ্টির আলপনায় ভালোবাসা সব পেয়েছির গল্প বলে দুদন্ড। 

জয়িতা দে

সর্বংসহা
.          
আমি নারী,তাই-
আমি নির্যাতিত নিপীড়িত,
অবলুন্ঠিত অবহেলিত।
আমি নারী তাই-
আমাকে দেওয়া হয় অপবাদ।
যদি করি অন্যায়ের প্রতিবাদ
তবে সমাজ আমায় দেয় অসভ্য মেয়ের তকমা।
আমি নারী তাই-
আমাকে নিয়ে হয় নানান রঙ্গ তামাশা।
মাতৃগর্ভে ভ্রূণ অবস্থায় হয় আমার নিধন।
ছুঁড়ে ফেলে দেয় আবর্জনার স্তূপে
ছিঁড়ে খায় শেয়াল কুকুরের দল।
আমি নারী তাই-
রাত বেরাতে একা চলতে গিয়ে ভয়ে থাকি।
কারণ সমাজের লোলুপ কামনার দৃষ্টিতে দগ্ধ হতে হ‌য়
হিংস্র হায়েনার দল নারীমাংসলোভে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
আমি রিক্ত, আমি শূন্য তাই-
এ জীবন হবে না কখনো পূর্ন।
আমি নারী ,আমি সর্বংসহা।
বুকের মধ্যে আগুন জ্বেলে সেই আগুনে
যেমন পুড়িয়ে দিতে পারি, তেমনি রণরঙ্গিনী রূপে শুধরে দিতে পারি সমাজের বিকৃত মানসিকতাকে।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

এলোমেলো পৃথিবী
.
আমার সাজানো পৃথিবীটা আজ
কেমন যেন এলোমেলো,
সাদা কালো জীবনে স-বটুকু বিবর্ণ 
পাতা ঝরা গাছের মতো ;অস্তিত্বের সংকটে।

হাসিতে সজীবতা! যথেষ্ট প্রশ্নচিহ্ন,
মনের আড়ালে লুকিয়ে কান্না
ভালোলাগার পৃথিবীতে  একঘেয়েমি,
মনখারাপের দলেদের নির্লজ্জ লাফালাফি।

আনন্দ উৎসরা দূর-বহুদূর ;
নিঃসঙ্গতার ভয়ানক ঔদ্ধত‍্যতায় 
আবেগী বাঁশীটা বেজে উঠে বার বার ;
উদাসী চোখে ভেসে বেড়ায় ক্লান্ত স্বপ্নরা।

আমার সাজানো পৃথিবীটা আজ বড্ড এলোমেলো 
পাথরচাপা মনটা চঞ্চল হয়ে উঠে হঠাৎ  হঠাৎ,
রাতের ঘুমগুলি চুরি যায় বিবশতার হাতে ;
মুক্ত হাসিরা? হেরে গেছে সমর্পণের কাছে।

অভিজিৎ রায়

ঠাকুর তুমি কেমন জানি
.
ঠাকুর তুমি করছ কেন এত পরিহাস
চারিদিকের হিংসা নিন্দায় জীবন রুদ্ধশ্বাস

কেউ করছে ক্ষমতা বলে
তুমি করছ নানা ছলে

তবুও এত কঠোরতায় কাটিয়ে যাচ্ছি মোরা
সুন্দর পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষায় আমরা দিশেহারা

জানি না কেন মানুষ শুধু নিজের কথায় ভাবে
ঠাকুরকে না ডাকলে যে দুঃখ রয়ে যাবে।

বিপদে পড়লে ডাকবে শুধু সেটা কি কখনো হয়
তাই তো মানব জীবনে এত দুঃখ পেতে হয়

সুশান্ত সেন

কবিতা

কবিতা আমার পাগল করেছে দেখি
কবিতা আমায় আঁচড়ে কামড়ে খায়
কবিতা আমায় জ্বালায়, নিজেও জ্বলে
কবিতা আমার সঙ্গে সঙ্গে যায়।

মনকে বলেছি চুপ করে দেখ চেয়ে
জানান না দিয়ে সটকে পড়ব আমি
ঝাউবনে তাই চুপটি লুকিয়ে পড়ি
স্বাধীনতা পেয়ে সমুদ্র জলে নামি।

বিস্ময়ে দেখি ঢেউ এর মাথা জুড়ে
কবিতা আমার ধরে নিলো দুটি হাত
বুকের ভেতর জাপটিয়ে ধরে রেখে
বললো - তোমার কাছেই কাটাব রাত।

সঞ্জয় দত্ত

ঘড়ি
.
এখন বৃষ্টি হচ্ছে,
আরও কতদিন হবে?
আমার মতো এমন প্রশ্ন নিয়ে বসে আছে অনেকে!
যাদের সংসার নামক পৃথিবী ধরার সময় হচ্ছে এবং
হবে যাদের!
বৃষ্টি হয়ে গেলে শীতল হয় পৃথিবী।
সমভাবে শীতল হই আমিও,
ক্লান্ত হয়ে শুয়ে যাই।
সকাল হতে হতেই ভুলে যাই 
দাগ কাটা গল্পের কথা,বৃষ্টি ঝড়া রাতের কথা,ক্লান্ত সন্ধির কথা।
এক বুক সান্ত্বনা নিয়ে পথ হাঁটি পৃথিবীর পথে।

এখনো হাঁটতে গিয়ে পিছলে পড়ে যাই,
কেউ একটু টেনে তুলেও দেয় না,
ব্যঙ্গ করে হাসে।
আমিও হেসে মুখ মিলিয়ে-নি, ঠিক স্লোগানের মতো।


   

বিপ্লব উরাং

কাঁহা বিপ্লব? 

দিন দিন সব কিছু
কেমন জানি হয়ে যাছে।
জোয়ানীর সেই  বিপ্লবের কথা,
বিপ্লবের সপন তেমন করে
আর মনে নাই পড়ে।

আওয়াজ গিলান দিনকে দিন
হাটে যায়েছে, হাটে যাছে।
যারা এতদিন বিপ্লবের কথা বলত
আইজ অরা বিপ্লবলে বেশি
মসনদ দখলের কথা ভাবছে।

অথচ অরাই বলত,এই মসনদ
হামদের নাই।
লড়হাই করে, বিপ্লব করে 
এই মসনদ দখলদারি দের হটাতে হবেক।
এদেরকে হটাতে নাই  পারলে
হামদের মত মানুষের অধিকার নাই মিলবেক।
হটাতে হবেক বিপ্লব করেই। 

মিন্তুক কা্ঁহা সেই  বিপ্লব? 
ভাবি ভাবতে থাকি।

উর্মি সাহা

মায়ের সিঁদুর 
.
বাবাকে দেখেছি, 
হাল খাতার হিসেবে গোটা সংসারটা মিলিয়ে নিয়েছে।
মাতৃভাষার মত হেডলাইন হয়েছে আমার,
মায়ের বাঁধানো শাখায় দীর্ঘায়ু হয়েছে।
আবার কখনো দেখেছি নারী সম্মানে পা দিয়েছে বাবা,
বাবা আমার প্রধানমন্ত্রী।
আবার সারথী আমার কৈশোরে
বাবা জৈষ্ঠ্যের কৃষ্ণচূড়া,
কখনো প্রখর অগ্নিমূর্তি।
বাবা হয়তো আমার মত ফাঁকি দিতে শিখেনি
নাকি শিখেছে!
হ্যাঁ! বাবা ফাঁকি দিতে জানে;
বাবাকে দেখি
শার্টের কলারটা খসে গেছে, তাও
ভোর রাতে অতি আদরে বুকে জড়ায় সেটা।
আর তা দেখে আমার চোখ জুড়ায়।
মাঝে মাঝে বলি 
বাবা আমার আলোকরশ্মি
মেঘ বিছানো আকাশ,
বাবা আমার হৃদয়পুরের
চিরহরিতের সোহাগ।
বাবা আমার মায়ের সিঁদুর
সংসার টানা শ্রমিক,
বাবা ঘরের শেষের আলো
বাবা ঘরের সুখ।

স্নেহাশীষ রায়

দিন সবারই ফেরে
.
দিন সবারই ফেরে,
দুঃখ সবারই কাটে
সুখ পাখিও আসে
পর্বতও যায় ভেসে
যৌবন যায় থেমে
চূড়ার পাথরও নামে
বৃক্ষও ছাই হয়
আলোয় কাটে ভয়
মিথ্যাও রয় না চাপা
অনন্তকে যায় মাপা
সাগরও বালিতে মিশে
পথিকও হারায় দিশে
সময় থাকেনা থেমে
তা তো সকলে জানে
তবু কেন বাহুবলে
শাসনের দিন গুনে?

বিজলী সাহা

বরষার ভরসায়
.
এখনো খুব মনে পড়ে তোকে, তোকে আর ভুলতে পারছি কই। পড়ন্ত বিকেলের আলো মাখা গায় আমার  আঁধার আসে নেমে। বিদঘুটে জমকালো আবছায়ায়ও আমি তোর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই মায়ার আবেশে। 
এই শোন কোথায়  আছিস এখন? 
ভালো আছিসতো? 
সংসার করেছিস? 
জানি কোনো প্রশ্নের উত্তর হবে না এখন তবুও নিজের মনের সাথে কিছু কথা বলে যাই একান্তে। ভাবি আর পাতায় খেলি, হিসেব মেলাবার বেলা এখন কড়ি দিয়ে নয় মনের দাগ কাটা হিসেব। একের পর এক স্মৃতি গুলো ভাবনার আকাশে তারা হয়ে জ্বলজ্বলে হয়ে কেমন যেন তাকিয়ে আছে আমার দিকে। চোখ বন্ধ করা ভালোবাসায় বুঝি কোন খাদ ছিলো। ঝিরঝির বাতাসেও বইছে আগুন হাওয়া। পাগল করা ভাটিয়ালি গানের সুর ভেসে আসে নিঃশব্দে। এখনো ভালোবাসি তোকে খুব তাই বলে মরণ আসে বারবার ডাক দিয়ে যায় সবার অলক্ষে। আষাঢ়ের  বরষা ভরসা হয়ে কাধে রাখে হাত ।আজও আছি পথের বাঁকে একটি পদ চিহ্নে।

সুজন দেবনাথ

তুমি আবার এসো বসন্ত
.
সব পাতা ঝরে পড়ে
রুক্ষ জীর্ণ অসহায় হয়ে,
হৈমন্তীর নির্মমতায়-- 
একাকি দাঁড়িয়ে যে বটবৃক্ষ টি,
তারে সবুজে সবুজে সাজাতে 
ফুলে-ফলে ভরাতে 
তুমি আবার এসো বসন্ত।

নব পল্লবে যে কুঁড়ি
আশায় গুণে চলেছিলো প্রহর,
আসবে সময় সে পাপড়ি ছড়াবে
কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি! 
তারে খানিকটা সুযোগ দিও 
যেন সে অকালে ঝরে না যায়,
তাই, তাই তুমি আবার এসো বসন্ত।

যে কোকিল টা ভুলে গেছে সুর, 
আর গাইছেনা গান,
তারে আরও এক যুগ বাঁচতে দিও।
যেন সে আবার ধরতে পারে সুর
নতুন গানে বাঁধুক দুটি প্রাণ
নিখাদ প্রেমে হোক আরেকটি তাজমহল,
তাই তুমি আবার এসো বসন্ত।

যে প্রমিক নাওয়া খাওয়া ভুলে
পাগলের বেসে দেশান্তরী,
তাকেও দিও সেই সঙ্গীনির খোঁজ।
প্রেয়সীর কন্ঠে সে যেন পায়
তার ঘরে ফেরার ঠিকানা।
পুনঃ মিলনের নতুন মালা সাজাতে 
তুমি আবার এসো বসন্ত।

সুস্মিতা দেবনাথ

চন্দ্রাহত

এমনই বাসন্তী সন্ধ্যায় 
তোমার হাতখানি রেখেছিলে 
আমার বাঁ হাত
বলেছিলে ভালোবাসবে ?

আধো আলো ছায়ায় 
সমুদ্রের উন্মত্ত ঢেউগুলোর আস্ফালনে 
আমার কন্ঠ ছিল নিশ্চুপ,

অজানা এক আর্কষণ 
পূর্ণিমার চাঁদকে সাথে নিয়ে 
নীরবে তোমার হাতটি ধরে 
বিভোর হয়ে হেঁটেছিলাম।

আজও হেঁটে চলেছি, বৃথা
বিরাম হীন মোহমুগ্ধ...

রুপন সূত্রধর

রুপকথা প্রেম
.
কারো জীবনে তুমি রুপকথার নায়িকা 
তোমাকে নিয়ে শত শত কবিতা।
দিবারাত্রি প্রেমিকের ভাবনায় বিচরণ 
তোমার চলার প্রতিক্ষণ কল্পনায়।

কখনো হাসাও,কখনও কাঁদাও
ভালোবাসার এক অপরুপ মহিমা।
আত্মাবিশ্বাস, ধ্যান, জ্ঞান চারিদিকে 
 তোমার ভালোবাসার মহিমা।


ছেলেটি ভাবনা বুকে, এবার পুজোয়
ভালোবাসি বলবে মুখে তোমায়।
সূর্যদয়ে জাগা প্রেম,রাএির স্বপ্ন জুড়ে 
  স্মৃতি বহন করে জীবন। 

রোজ দাড়িয়েছে সে মন্ডপে,হয়নি সাহস          
 তার দেবীময়ী রুপটি দেখে।
প্রেমের আগুনে, বিসর্জনে নেচেছে
 মা   হেসেছেন চুপটি করে।

খোলা মাঠে ঘাটে নীরবতায় পথ চলা
 অবুঝ প্রেমকাহিনী অসময়ে ফোনালাপ। 
সাহসী বালক, প্রেমের কথা বলে,
পরীপ্রেম বিচরণ জগৎ জুড়ে। 

কখনো কখনো জ্বলে অনল
তার ছবিতে যদি কেউ হাসে।
 তুমি যখন বাসা বাঁধো,অন্যমনে
অনন্তপ্রেম নিশিদিন বিরহে, কথা বলে।

তুমি যদি ভালোবেসে থেকে যেতে,
সুখ দুঃখের সাথী, বিশ্বাসী মনে,
ভালোবাসার অসুখ থেকে আগলে
রাখতাম হৃদয় নীড়ে বাসা বেঁধে। 

একটু ভালোবাসার খোঁজে আজীবন, 
ছলে ছলে জীবন চলে, সাথীহারা,
ভালোবাসার কার্বন সংলাপ নীরবে বলে,
 তুমি হবে একদিন, ওপারের জীবনে।

রূপা সাহা

ভালোবাসা আজও আমায় কাঁদায়
.
আমি তোমাকে শুধু ভালবেসে গেছি
তবু পাইনি কখনো তোমার মন,
পাবার জন্য প্রতি মুহূর্তে কেঁদেছি
নিঃশব্দে তোমার অগোচরে।

তুমি কথা দিয়েছিলে আর বলেছিলে
কখনো ছেড়ে যাবেনা আমায়,
তবে কেন এমন ভাবে ধোকা দিলে
  আর দিলে বুক ভরা বেদনা।
 
উজাড় করে দিতে চেয়েছিলাম
 তোমাকে আমার সর্ব সুখের ঠিকানা,
বিনা অপরাধে আজ তবু পাচ্ছি সাজা
  তাই কষ্ট হচ্ছে ভীষণ।

  মনে মনে তোমাকে নিয়ে কত স্বপ্ন গেঁথেছি,
বিনিময়ে লাঞ্ছনা আর তিরস্কার
পুরস্কার হিসেবে তুমি দিয়ে গেলে।

চন্দন পাল

ওফ্ফ 
.
কবিতা তুই কি জানিস ক'জনকে ভাবসাগরে ডুবিয়ে মারছিস্ ! 
কি চাস তুই! প্রেমিকের জান্ না - বদনাম!!

বারবার ভুলে যাচ্ছি ঘুম, সমাজ, শেষমেশ জীবিকা।
অথচ সকাল হলেই ভাবি  সব ঠিক হয়ে যাবে।
নতুন সূর্য উঠেছে। ঝকঝকে আলোয় সব ভুলে শুরু হবে নতুন জীবন। 

কিন্তু কোথায় কি! আলো হেলে পড়তেই ভেসে উঠে তোর ছবি। 
পাগল হয়ে ছুটে যাই তোর কাছে, খুঁজি আশ্রয় ,
তুই কেন এত মায়াবী, চঞ্চলা, সম্মোহনী ?

হ্যঃ তুই হাসছিস্,  হাস্!
আর জনমে আমার শাপে তুই হবি কলম আর আমি কবিতা।

কুমার নচিকেতা শীল

কুমার নচিকেতা শীলের ইংরেজি কাব্য

O GOD
.
O God you are great and strong.
You made many beautiful things.
But there is nothing wrong !

 You can create and destroy.
 And a powerful, supreme lord.
 And made to creatures that is girl and boy.

You made many things on earth.
That's is really we need for life.
 And have two habit of death and birth.

You is great, wonder and powerful,
And gives us power that we really can.
And gives nature of wise and colourful.
              

তাপস শীল

একটি ফোনের প্রত্যাশা
.
সদ্য মহাবিদ্যালয় শেষ করে এসেছে অপরূপ। কিছু দিন বাড়িতে থাকার পর নতুন ডিগ্রি নেওয়ার জন্য শহর কোলকাতায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়া শুরু করে। নতুন শহর, নতুন আবহাওয়া, কলেজ, শিক্ষক সব কিছু মিলে অপরূপ কেমন জানি হিম সিম খাচ্ছিলো। হোস্টেলে অপ্ররূপ সঙ্গীহীন  সারাদিন বসে থাকতো এবং নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। 
একদিন  বিকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তার ফোন দেখছিলো হঠাৎ তার বান্ধবীর নাম্বারটা পেয়ে ফোন করে। বান্ধবী নাম সুরিয়া, অপরূপের পুরাতন কলেজে একসাথে পড়তো। ফোনের ওপাশ থেকে সুরিয়া ফোন তুলে কথোপকথন হচ্ছে দু'জনের মধ্যেই। অপরূপ তার হোস্টেল, কলেজ, নতুন পরিবেশ সম্পর্কে বলছে। সুরিয়া ও জানায় সে ও নাকি কোলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ডিগ্রি নেওয়ার জন্য হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। অপরূপ শুনে খুশিতে আত্মহারা দু'জনে একই 'বিষয়' নিয়ে পড়াশোনা করছে ভিন্ন জায়গায় । এই ভাবে তাদের কথোপকথন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টায় এগোচ্ছে। 

পরিক্ষা দিনক্ষন যত এগোচ্ছে তত তাদের কথোপকথন আরো বেড়ে চলেছে কারন সেই সময় অনলাইনে নোটের আদান প্রদান হচ্ছে । সুরিয়ার কলেজের বন্ধুরা তার এমন হাব ভাব দেখে তাকে ঠাট্টা করা শুরু করেছে। ওরা সুরিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে ফোনে কথা বলা ছেলেটির সম্পর্কে। সুরিয়াও কোন কিছু গোপন না করে অপরুপ সম্পর্কে বন্ধুদেরকে জানালো, অপরুপ তোদেরই মত বন্ধু কিন্তু সে অন্য আরেকটি  কলেজে পড়েছে। পড়াশোনার ব্যাপার নিয়ে বেশি কথা হয় ওর সাথে, অন্য একদিন তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।রাতে ফোনে সুরিয়া অপরূপকে কথা গুলি জানায় ও অপরুপকে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। অপরুপ ও কথা বলার জন্য রাজি হয় এবং  সুরিয়া বন্ধু অম্পি, গীতার সাথে একে অপরের পরিচয় করিয়ে নেয় ও নাম্বার আদান প্রদান করেন। 
অপরূপ সুরিয়াকে কখন যে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সেই নিজেও বুঝতে পারেনি।নিশাচরের মত রাতজেগে কতনা ভাব বিনিময় করত দু'জনেই । সুরিয়াকে অপরূপ তার মনের কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ভয়ে যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে পরিক্ষা শুরু হয়ে  যাচ্ছে দু'জনে ভেবে চিন্তে ঠিক করেছে পরিক্ষার শেষ অবধি কথা কম বলবে।
পরিক্ষা শেষেপ্রান্তে  অপরুপ সুরিয়ার বন্ধুদের কাছ থেকে সুরিয়া মনের কথা জানতে চাইলে ওরা জানায় সুরিয়া আজকাল অন্যমনস্ক থাকে, খাওয়ার সময় মত খাচ্ছে না সবার সাথে মিশে না একা একা থাকে। ব্যাস্ অপরুপ ধারণা করে নিলো যে সুরিয়া তাকে ভালোবাসতে শুরু করলো। 
কিছু দিন পর  তাদের পরিক্ষা শেষ হল। সুরিয়া ও তার বন্ধুরা ছুটিতে  দু'দিন বাদে বাড়ি চলে যাবে অপরুপকে ফোন করে জানায় ।  সুরিয়া বলে বাড়িতে আসলে ফোনে ঠিক করে কথা বলতে পারবেনা। একথা শুনে অপরুপ মনে মনে অনেক কষ্ট পায়। অপরুপ বললো ঠিক আছে যাও, হ্যাঁ রাতে একটা ফোন করবে তোমাকে কিছু কথা বলার আছে বলে অপরুপ লাইনটা কেটে দিলো।
সুরিয়া অপরূপ কি যে বলবে বললো তা নিয়ে ভাবনায় হতবাক হয়ে আছে।  সন্ধ্যায় নেমে এলো সুরিয়া অপরূপকে তার অসমাপ্ত কথা গুলো ফোনে জিগ্যেস করে। অপরূপ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে ব্যাকুল কন্ঠে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি সুরিয়া। সুরিয়া কথাটা শুনে অশ্রুসজল হয়ে বলে এই আমাদের বন্ধুত্বের পরিচয় অপরুপ? তখন অপরুপের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। অপরুপ অনেকক্ষ ধরে বুঝানোর পরও সুরিয়া কিছু না বলে অশ্রুসিক্ত হয়ে লাইনটা কেটে দিল।কারন সুরিয়াও মনে মনে তাকে খুব ভালোবাসতো।
 সারারাত অপরুপ সুরিয়ার কথা গুলি ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে মন খারাপ করে কান্নাকাটি করছে।

দু'দিন পর বাড়ি এসে সুরিয়া নিজেকে কন্ট্রোল করে  অপরূপ কে ফোন করে জানায় ভালো বন্ধু হয়ে পাশে থেকো অপরুপ। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।  তোমার প্রতি ভালোবাসার ফিলিংস আসে না আমার। কথা গুলি বলছে আর সুরিয়া চোখের জল ফেলছে তা অপরুপ ফোনের ওপাশে বুঝতে পারছে। অপরুপ বুঝতে পেরে সুরিয়া চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো আমাকে তিনমাস সময় দাও যদি তুমি আমার প্রতি ফিলিংস না আসে আমি আর কোন দিন তোমাকে ফোন করবোনা। সুরিয়া নিজের মনকে শক্ত করে অপরুপের চ্যালেঞ্জ কে সহমত করলো। তিনমাস! ঠিক আছে বলে লাইনটা কেটে দিলো। 
অপরুপ সুরিয়াকে ইমপ্রেস করার জন্য মাঝে মাঝে সুরিয়ার পছন্দের ডেরি মিল্ক নিয়ে  বাড়ি সামনে গিয়ে বাইকের হর্ণ বাজিয়ে তাকে দিয়ে আসতো আরো কতকি! সুরিয়ার বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো, সুরিয়া টিউশানে যাওয়ার পথে একটু কথা বলার জন্য। এভাবে দুমাস যাওয়ার পর সুরিয়া অপরূপকে বলে তোমার সাথে কথা না বললে আমার কিছু ভালো লাগছে না।  অপরুপ খুশিতে সুরিয়ার বন্ধু অম্পিকে ফোন করে কথা গুলি জানায়। অম্পিও বলে সুরিয়া অপরূপ সম্পর্কে অনেক কিছু শেয়ার করে, সে অপরুপ কে ভালো পায়। 

তিন মাস শেষ হওয়ার আর দিনেক পনেরো বাকি অপরুপ সুরিয়া থেকে কি উত্তর পাবে সেই কথা ভাবছে।এমন সময় সুরিয়া ফোন করে বলে অম্পির জন্মদিন আসছে দুদিন পর আমরা দুজন মিলে তার জন্মদিন পালন করে সারপ্রাইজ দেবো অপরূপ তার সাথে সহমত। সুরিয়া বললো দুদিন বাদে দেখা হচ্ছে ওখানে গিয়ে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে বলতে না বলতেই লাইনটা কাট হয়ে গেল। অপরূপ আর কল ব্যাক করেনি কারন সেই আগে জানতে পারে সুরিয়া তার বন্ধুকে জানিয়ে ছিলো, সে অপরূপকে ছাড়া  একমুহূর্ত ও ভালো লাগছেনা।

দুদিন পর কেক নিয়ে অম্পি বাড়িতে সুরিয়া ও অপরূপ উপস্থিত। অপরুপ মনে মনে ভাবছে আজ হয়তো তার প্রিয় মানুষটা তাকে মনের কথা বলবে। কেক হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে অম্পিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে  একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো দু'জনে কারন আগে থেকে কেউ  ফোনে করে জানায় নি। অম্পিও খুব খুশি কেক্ কাটলো সুরিয়ার হাত ধরে। সারাদিন খাওয়া-  দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত দিনে শেষে ফেরার সময় হয়ে এসেছে অপরূপ সুরিয়াকে বললো তুমি না আমাকে কিছু বলবে বলেছিলে? সুরিয়া অপরূপের  দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখের জল টপটপ করে ছেড়ে দিলো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে প্যাকেট থেকে রুমালটা বের করে দিলো। সুরিয়া বললো আজ অনেক দেরি হয়ে গেলো চলো বাড়ি যায়,যে কথা বললো বলেছিলাম তা ফোনে করে বলবো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে অম্পিকে বললো আজ ওঠি, আর অম্পি কানে কানে বললো অপরূপ দেখবে সুরিয়া তোমাকে ফোন দিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। এরপর অপরূপ হাসিমুখ হয়ে, দু'জনে দুজনার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল। বাড়ি গিয়ে ফোন করার জন্য বললো সুরিয়াকে।

সন্ধ্যা যত হচ্ছে অপরূপ সুরিয়াকে নিয়ে কত কি স্বপ্ন দেখছি আর  তার ভালোবাসা আজ স্বার্থক হতে যাচ্ছে কল্পনার জগতে  অনেক খুশি অপরূপ। কিন্তু রাত হয়ে গেলো ফোন আর আসে নি। অপরূপ ফোন করতে করতে শত চেষ্টা করে হতাশ, কেননা ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছে সুরিয়া । আজও অপরূপ প্রিয় মানুষের ফোনের প্রতিক্ষায় ।

মাধুরী সরকার

মুখোশ

মানুষ সবসময় ইচ্ছে করলেই 
মুখোশ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না,
রাতদিন মুখোশের বেচা-কেনা...

এই যে অগণিত মুখ ,
দূর থেকে দেখে মনে হয়
নির্ভেজাল,দুঃখহীন আর সাদামাটা সব।

অথচ প্রতিটি মুখেই লুকিয়ে আছে মুখোশ
যান্ত্রিক মুখোশের ভীড়েই চলে 
নিদারুণ অসময়ে দিন বদলের সুর।

বাস্তবতার শহরজুড়ে মুখ-মুখোশের গন্ডীবদ্ধ প্রতিদিনকার সমাজ যাপন।
একের মধ্যে দু'য়ের বাস 
মনন চিন্তনে কেবল অভিনয়ের গোলক ধাঁধাঁ!

কত মুখ হাসি রেখে ঢেকে যায় ভগ্ন হৃদয়ের ক্ষত।
আমরা সবাই কেবল মুখোশ ফেরি করি 
সকাল থেকে রাত...

সুস্মিতা মহাজন

খেয়ালিপোলাও 

আলোর কাছাকাছি যেতে অনেকটা পথ বাকি,
কঠিন আঁকাবাঁকা পথ।
হারিয়ে যাওয়া প্রতিনিয়ত,
ভয় পেরিয়ে এককদম এগিয়ে। 
সহজ অধ্যায় ছেড়ে কঠোর পাঠ,
একটা পুরো বই ছাপিয়ে যাবে শেষ।
গল্পটা নিতান্তই অজানা, 
অজস্র নতুনত্বের ছোঁয়া গায়ে।
হাসতে গিয়ে নয়ন ঝরে ঝর্ণার, 
সমুদ্রে ঠিকানাহীন তার উপসংহার। 
চলতি পথে হোঁচট খেয়ে স্বপ্ন ভাঙ্গে, 
বাস্তবতায় অলীক কিছু খেয়ালিপোলাও।

মধুমিতা রায়

জন্মদিন ও একটি মেয়ে

মেয়েটিকে অনেকদিন পর দেখলাম
সামনাসামনি নয়,ছবিতে
রোগা হয়েছে কি! 

জন্মদিনের কেক হাতে
মলিন নিষ্প্রভ বিষন্ন ছবি

কোথাও একটা ধাক্কা লাগলো

দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ভেঙে 
সমস্ত দরজাগুলো বন্ধ করে
সত্যি কি সে ভুলতে পেরেছে ছেলেটিকে!
নাকি!

আমিও ওকে কম গালি দিইনি মনে মনে
যে ছেলেটি টুকরো টুকরো হয়ে ভেঙে পড়েছিল
প্রত্যাখানে
সে আমার বন্ধু ছিল।
গতবছরের জন্মদিনে মেয়েটির ঝলমলে মুখটা
কেন জানি মনে পড়ে গেল হঠাৎ ই।

তপা মজুমদার

প্রেমের জোয়ার

ঝিরিঝিরি বর্ষায় দুজন দুজনায়,
ভিজে যাই নীরবে সুপ্ত মোহনায়।
হাতে হাত রেখে -চোখের ভাষায়,
হারিয়ে যাই সংগোপনে প্রেম যমুনায়।
জোয়ার -ভাঁটার তোড়ে যাই  ভেসে ভেসে
কিনারা খঁুজি শেষে অধিক ভালোবেসে।
 চাঁদ,তারা সাথে তিথির লগন-
পাশে আছে ধ্রুবতারা হৃদ্ - পবন।
গুরুগুরু গর্জন আর বিদ্যুৎ চমক,
আকড়ে বাঁচি দুজন বুকের ফলক,
হাফিয়ে উঠি নকশায় দেখে চিত্রায়ণ, 
ধুলো -মাটি ই গড়া  এ কোন রূপায়ণ? 
ঝর্ণা স্নানে -শীতল দেহ নশ্বর,
তবু্ও হাঁটি সরিসৃপ- মোরা... অবিনশ্বর। 
মুক্ত বাতাসে মুগ্ধ ষড়রিপুর স্খলন-
উদাস -তপ্ততায় মাখা রিক্ত স্পন্দন।

        

আশিষ ভট্টাচার্য

এখানে প্রেম কোথায় বলো

প্রিয়াকে যদি যত্নে ভালোবাসো
তবে ধর্ষিতা ফের ধর্ষিতা কেন? 
তোমার যত্নের সেই প্রেম তবে
নিখুঁত ছিল না মোটেই ; 
কান পেতে শোনো ওই
শুদ্ধ বেহালাও গোঙাচ্ছে 
তোমার ভুল হাতে।
উল্লাসক্লান্ত এক নষ্ট পুরুষ 
ভালোবাসার মানেই বুঝলে না,
পাবে না তাই তুমি কোনদিন 
নীল যমুনার একবিন্দু ভালোবাসা।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...