Saturday, April 29, 2023

তাপস শীল

একটি ফোনের প্রত্যাশা
.
সদ্য মহাবিদ্যালয় শেষ করে এসেছে অপরূপ। কিছু দিন বাড়িতে থাকার পর নতুন ডিগ্রি নেওয়ার জন্য শহর কোলকাতায় গিয়ে হোস্টেলে থেকে পড়া শুরু করে। নতুন শহর, নতুন আবহাওয়া, কলেজ, শিক্ষক সব কিছু মিলে অপরূপ কেমন জানি হিম সিম খাচ্ছিলো। হোস্টেলে অপ্ররূপ সঙ্গীহীন  সারাদিন বসে থাকতো এবং নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতো। 
একদিন  বিকালে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে তার ফোন দেখছিলো হঠাৎ তার বান্ধবীর নাম্বারটা পেয়ে ফোন করে। বান্ধবী নাম সুরিয়া, অপরূপের পুরাতন কলেজে একসাথে পড়তো। ফোনের ওপাশ থেকে সুরিয়া ফোন তুলে কথোপকথন হচ্ছে দু'জনের মধ্যেই। অপরূপ তার হোস্টেল, কলেজ, নতুন পরিবেশ সম্পর্কে বলছে। সুরিয়া ও জানায় সে ও নাকি কোলকাতার দক্ষিণ চব্বিশ পরগনায় ডিগ্রি নেওয়ার জন্য হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করছে। অপরূপ শুনে খুশিতে আত্মহারা দু'জনে একই 'বিষয়' নিয়ে পড়াশোনা করছে ভিন্ন জায়গায় । এই ভাবে তাদের কথোপকথন দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে ত্রিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টায় এগোচ্ছে। 

পরিক্ষা দিনক্ষন যত এগোচ্ছে তত তাদের কথোপকথন আরো বেড়ে চলেছে কারন সেই সময় অনলাইনে নোটের আদান প্রদান হচ্ছে । সুরিয়ার কলেজের বন্ধুরা তার এমন হাব ভাব দেখে তাকে ঠাট্টা করা শুরু করেছে। ওরা সুরিয়ার কাছে জানতে চেয়েছে ফোনে কথা বলা ছেলেটির সম্পর্কে। সুরিয়াও কোন কিছু গোপন না করে অপরুপ সম্পর্কে বন্ধুদেরকে জানালো, অপরুপ তোদেরই মত বন্ধু কিন্তু সে অন্য আরেকটি  কলেজে পড়েছে। পড়াশোনার ব্যাপার নিয়ে বেশি কথা হয় ওর সাথে, অন্য একদিন তোদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো।রাতে ফোনে সুরিয়া অপরূপকে কথা গুলি জানায় ও অপরুপকে তার বন্ধুদের সাথে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। অপরুপ ও কথা বলার জন্য রাজি হয় এবং  সুরিয়া বন্ধু অম্পি, গীতার সাথে একে অপরের পরিচয় করিয়ে নেয় ও নাম্বার আদান প্রদান করেন। 
অপরূপ সুরিয়াকে কখন যে মনের অজান্তেই ভালোবেসে ফেলেছে সেই নিজেও বুঝতে পারেনি।নিশাচরের মত রাতজেগে কতনা ভাব বিনিময় করত দু'জনেই । সুরিয়াকে অপরূপ তার মনের কথা বলার সাহস পাচ্ছে না ভয়ে যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়। একদিকে পরিক্ষা শুরু হয়ে  যাচ্ছে দু'জনে ভেবে চিন্তে ঠিক করেছে পরিক্ষার শেষ অবধি কথা কম বলবে।
পরিক্ষা শেষেপ্রান্তে  অপরুপ সুরিয়ার বন্ধুদের কাছ থেকে সুরিয়া মনের কথা জানতে চাইলে ওরা জানায় সুরিয়া আজকাল অন্যমনস্ক থাকে, খাওয়ার সময় মত খাচ্ছে না সবার সাথে মিশে না একা একা থাকে। ব্যাস্ অপরুপ ধারণা করে নিলো যে সুরিয়া তাকে ভালোবাসতে শুরু করলো। 
কিছু দিন পর  তাদের পরিক্ষা শেষ হল। সুরিয়া ও তার বন্ধুরা ছুটিতে  দু'দিন বাদে বাড়ি চলে যাবে অপরুপকে ফোন করে জানায় ।  সুরিয়া বলে বাড়িতে আসলে ফোনে ঠিক করে কথা বলতে পারবেনা। একথা শুনে অপরুপ মনে মনে অনেক কষ্ট পায়। অপরুপ বললো ঠিক আছে যাও, হ্যাঁ রাতে একটা ফোন করবে তোমাকে কিছু কথা বলার আছে বলে অপরুপ লাইনটা কেটে দিলো।
সুরিয়া অপরূপ কি যে বলবে বললো তা নিয়ে ভাবনায় হতবাক হয়ে আছে।  সন্ধ্যায় নেমে এলো সুরিয়া অপরূপকে তার অসমাপ্ত কথা গুলো ফোনে জিগ্যেস করে। অপরূপ কিছুক্ষন স্তব্ধ হয়ে ব্যাকুল কন্ঠে বলে আমি তোমাকে ভালোবাসি সুরিয়া। সুরিয়া কথাটা শুনে অশ্রুসজল হয়ে বলে এই আমাদের বন্ধুত্বের পরিচয় অপরুপ? তখন অপরুপের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরেছে। অপরুপ অনেকক্ষ ধরে বুঝানোর পরও সুরিয়া কিছু না বলে অশ্রুসিক্ত হয়ে লাইনটা কেটে দিল।কারন সুরিয়াও মনে মনে তাকে খুব ভালোবাসতো।
 সারারাত অপরুপ সুরিয়ার কথা গুলি ফ্ল্যাশব্যাক হয়ে মন খারাপ করে কান্নাকাটি করছে।

দু'দিন পর বাড়ি এসে সুরিয়া নিজেকে কন্ট্রোল করে  অপরূপ কে ফোন করে জানায় ভালো বন্ধু হয়ে পাশে থেকো অপরুপ। আমি তোমাকে ভালোবাসি না।  তোমার প্রতি ভালোবাসার ফিলিংস আসে না আমার। কথা গুলি বলছে আর সুরিয়া চোখের জল ফেলছে তা অপরুপ ফোনের ওপাশে বুঝতে পারছে। অপরুপ বুঝতে পেরে সুরিয়া চ্যালেঞ্জ দিয়ে বললো আমাকে তিনমাস সময় দাও যদি তুমি আমার প্রতি ফিলিংস না আসে আমি আর কোন দিন তোমাকে ফোন করবোনা। সুরিয়া নিজের মনকে শক্ত করে অপরুপের চ্যালেঞ্জ কে সহমত করলো। তিনমাস! ঠিক আছে বলে লাইনটা কেটে দিলো। 
অপরুপ সুরিয়াকে ইমপ্রেস করার জন্য মাঝে মাঝে সুরিয়ার পছন্দের ডেরি মিল্ক নিয়ে  বাড়ি সামনে গিয়ে বাইকের হর্ণ বাজিয়ে তাকে দিয়ে আসতো আরো কতকি! সুরিয়ার বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো, সুরিয়া টিউশানে যাওয়ার পথে একটু কথা বলার জন্য। এভাবে দুমাস যাওয়ার পর সুরিয়া অপরূপকে বলে তোমার সাথে কথা না বললে আমার কিছু ভালো লাগছে না।  অপরুপ খুশিতে সুরিয়ার বন্ধু অম্পিকে ফোন করে কথা গুলি জানায়। অম্পিও বলে সুরিয়া অপরূপ সম্পর্কে অনেক কিছু শেয়ার করে, সে অপরুপ কে ভালো পায়। 

তিন মাস শেষ হওয়ার আর দিনেক পনেরো বাকি অপরুপ সুরিয়া থেকে কি উত্তর পাবে সেই কথা ভাবছে।এমন সময় সুরিয়া ফোন করে বলে অম্পির জন্মদিন আসছে দুদিন পর আমরা দুজন মিলে তার জন্মদিন পালন করে সারপ্রাইজ দেবো অপরূপ তার সাথে সহমত। সুরিয়া বললো দুদিন বাদে দেখা হচ্ছে ওখানে গিয়ে তোমার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে বলতে না বলতেই লাইনটা কাট হয়ে গেল। অপরূপ আর কল ব্যাক করেনি কারন সেই আগে জানতে পারে সুরিয়া তার বন্ধুকে জানিয়ে ছিলো, সে অপরূপকে ছাড়া  একমুহূর্ত ও ভালো লাগছেনা।

দুদিন পর কেক নিয়ে অম্পি বাড়িতে সুরিয়া ও অপরূপ উপস্থিত। অপরুপ মনে মনে ভাবছে আজ হয়তো তার প্রিয় মানুষটা তাকে মনের কথা বলবে। কেক হাতে নিয়ে ঘরে ঢুকে অম্পিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে  একটা সারপ্রাইজ দিয়ে দিলো দু'জনে কারন আগে থেকে কেউ  ফোনে করে জানায় নি। অম্পিও খুব খুশি কেক্ কাটলো সুরিয়ার হাত ধরে। সারাদিন খাওয়া-  দাওয়া নিয়ে ব্যাস্ত দিনে শেষে ফেরার সময় হয়ে এসেছে অপরূপ সুরিয়াকে বললো তুমি না আমাকে কিছু বলবে বলেছিলে? সুরিয়া অপরূপের  দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে চোখের জল টপটপ করে ছেড়ে দিলো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে প্যাকেট থেকে রুমালটা বের করে দিলো। সুরিয়া বললো আজ অনেক দেরি হয়ে গেলো চলো বাড়ি যায়,যে কথা বললো বলেছিলাম তা ফোনে করে বলবো। অপরূপ কিছু বুঝতে না পেরে অম্পিকে বললো আজ ওঠি, আর অম্পি কানে কানে বললো অপরূপ দেখবে সুরিয়া তোমাকে ফোন দিয়ে তার ভালোবাসার কথা জানাবে। এরপর অপরূপ হাসিমুখ হয়ে, দু'জনে দুজনার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিল। বাড়ি গিয়ে ফোন করার জন্য বললো সুরিয়াকে।

সন্ধ্যা যত হচ্ছে অপরূপ সুরিয়াকে নিয়ে কত কি স্বপ্ন দেখছি আর  তার ভালোবাসা আজ স্বার্থক হতে যাচ্ছে কল্পনার জগতে  অনেক খুশি অপরূপ। কিন্তু রাত হয়ে গেলো ফোন আর আসে নি। অপরূপ ফোন করতে করতে শত চেষ্টা করে হতাশ, কেননা ফোন নম্বর ব্লক করে দিয়েছে সুরিয়া । আজও অপরূপ প্রিয় মানুষের ফোনের প্রতিক্ষায় ।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...