Saturday, November 23, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

শ্রদ্ধাঞ্জলি || নবনীতা দেবসেন (১৩ জানুয়ারী ১৯৩৮ - ৭ নভেম্বর ২০১৯) || সাহিত্যের নক্ষত্রনারী

সম্পাদকীয় প্যানেল

এক ঘেয়ামী জীবনের বাইরের জীবনের নাম কবিতা। এখানে নীরবতার শব্দ হয়। শান্তভাবে বয়ে চলা নদী দেখলে বুঝা যায় গন্তব্য কোনো চুড়ান্ত বিষয় নয়। 

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা- সহ
 জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত

ছবিতে মননস্রোত শিল্পী সুমন : ক্যামেরায় রনি সরকার।

দীপক দাস

মিথ্যার অপরিহার্যতা

সদা সত্য কথাবলিবে,এ আপ্ত বাক্যটিআমাদের সবার শোনা।এই বাক্যটির পরিপ্রেক্ষিতে  মিথ্যার অপরিহার্যতা বিচার্য।তবে সত্য কী?যা ঘটে চলছে আমাদের  গোচরে  বা অগোচরে। কিছু আমাদের  জানার মধ্যে অধিকাংশ  জানা বা বোঝার বাইরে।দ্বিতীয়  প্রশ্ন  কথা কী?আমরা যা মনের ভাব প্রকাশের  জন্যঅপরের কাছে ব্যক্ত করি।তাহলে স্বভাবতই  বলতে হয় বলার পূর্বে আমার মনের  কথাগুলি মনের মধ্যে  রূপ  পরিগ্রহ  করে,তারপর বাক্যের আকারে বেরিয়ে  আসে। সত্যকথা তবে কী?যা আমাদের  মনের মধ্যে  আলোড়িত  হয় তাই।এখন প্রশ্ন সত্যকথা বলা উচিত  কী উচিত না।তার উপর আবার সদা সত্য কথা বলা।
আমার মনে হয় আমাদের  জীবনের  সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ  অবস্থায়  সত্যের চেয়ে মিথ্যাই জরুরি এবং  মিথ্যাই অপরিহার্য। 
পিতা মাতার অনাকাঙ্ক্ষিত  কন্যা সন্তানটিকে পিতা মাতা কখনো বলে না তুমি আমাদের  কাঙ্ক্ষিত  নও।শিশু অসংখ্য  বায়না ধরে, প্রায়  সমস্ত বায়না মেটানো হয় মিথ্যার সাহায্যে, এমনকি চঁাদ সূর্যকে ও শিশুটির  হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি  দিই।শিশুটিও ছোট বড় নানা মিথ্যা বাক্যবলে আদর আদায় করে নেয়। কখনো মাকে কখনো বাবাকে আলাদা আলাদাভাবে বলে তাকেই  সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কোনটি সত্যি সেও জানেনা। সত্য মিথ্যা  একাকার এখানে।শিশুটি বড় হতে থাকে মা বাবার সাথে চলে অপূর্ব  সব মিথ্যার খেলা।
যৌবনে সে ভালোবাসে কোনো  নারীকে এবং বিশ্বাস  করে কোনো দর্শনে। 
দিন গড়িয়ে যায়।প্রিয়ার কলো চোখে সে আর খঁজে পায়না আগের আবেগ,অবশ্য  দুদিক থেকেই এটি সত্যি।তবু চলতে থাকে মিথ্যার খেলা।
ভালোলাগা দর্শনের  মোড়ক খুলেযখন সে সত্যের সন্ধান  করে তখন দেখে দুধের অধিকাংশই জল।অথচ সে আটকে আছে সেই  দর্শনের  পেছনে।উপায় কী চাকুরী  বদলী, ঠিকাদারি কিছুনা কিছু দরকার বেঁচে থাকার জন্য এবং এগুলো  মিথ্যাই একমাত্র  এনে দিতে পারে। 
বিভিন্ন  পেশার ক্ষেত্রে  মিথ্যারই জয়জয়কার। ডাক্তার  তার মরণাপন্ন  রোগীকে বলে চিন্তা নেই, আপনি  ভালো হয়ে উঠবেন। উকিল মক্কেলকে তার  পরাজয় জেনেওবলে একেসে আপনার জয় অনিবার্য। জ্যোতিষি হাত দেখে বলে পুত্র  সন্তান ঘরবাড়ি ও বিরাট  সাফল্যের  স্বর্নদ্বার আপনার জন্য  অপেক্ষা  করছে। রাজনীতি ব্যবসায়ীদেরঅধিকাংশের মিথ্যাই সম্বল।নিজের দোষকে অপরের  কাঁধে চাপানো,মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রাজনীতির  স্বাভাবিক  আয়ুধ।কোনযুবককে কী বলা যাবে, তোমার চাকরি  হবেনা,না, বলা উচিত? বলে দেখছি  হয়ে যাবে।ইন্টারভিউ  দাও। আমাদের  হাত নেই।  বলতে হয় বলা দরকার।এবারপাঁচশালা পরিকল্পনায় মোট একশ কিলোমিটার  রেলপথ  হবে।সমস্ত রাজ্যের যোগফল হয়ত পাঁচ হাজার কিলোমিটার। অসম্ভব  জেনেও মিথ্যা দাবী।
মিথ্যা ও সত্যের ফারাক কতটুকু। মিথ্যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্যের কাজ করছে।আনন্দিত করছে। উত্সাহিত  করছে জীবনকে।
প্রাণ এবং অপ্রানের মধ্যে  সত্যিকারের কী কোন ফারাক আছে?আলো মাটি,বাতাস,জল প্রাণহীন।আবার এদের মধ্যেই প্রাণের জন্ম।
তাই বলাযায় মিথ্যাই সত্য।আসুন আমরা মিথ্যার জয়গান গাই।পৃথিবীর  মধুরতম মিথ্যা,সব মানুষ  একদিন  সমান হবে,মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মুছে যাবে।সেই  মিথ্যার স্বপ্নদেখতে সত্যি  অভ্যস্ত হই।

সংগীতা শীল

নীলাম্বরী 

নীল আকাশের অচিন দূরে
চলছি যখন ধ্রুব হয়ে
বৃষ্টি বিলাসী ঝরণার 
নৃত্যের তালে তালে।

সপ্ত সুখের নিসর্গতায়
নীলাম্বরীর লুকানো কথায়
ঝর তোলা বুকের মাঝে,
আবেগী মনের বাঁশির সুরে
অনুরাগী ভালোবাসার মলিনতায়
বিষন্ন আজ একাকিত্বতায়।

উল্লাসিত হাসির কম্পনে শান্ত স্থির সন্ধায়
ঝরাপাতা মাটিতে কানাকানি পড়ে যায়;
স্বপ্ন নীড় অদূর প্রিয়াসে
বাঁধন হারা হৃদয়ের কোটায়
মরীচিকা ধরে গেছে,
ছাপ নেওয়া কিঞ্চিত অনুভবগুলোতে।

ভালোবাসার বৃত্তটা একরাশ চুপকথায়
তখনও ছিলো এখনো আছে,
দূরত্বের কাছে হার মানিয়ে
মোড়কটাই বদলে গেছে।।

বিনয় শীল

ধনতেরাস


           গ্রাম-বাংলায় একটা শব্দ প্রচলিত আছে। সেই শব্দটি হল "তিরস" । এই তিরস শব্দের অর্থ হল পিপাসা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, কামনা বাসনা ইত্যাদি। ওই "তিরস" শব্দ থেকে তেরস শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। পিপাসা বা তৃষ্ণার ব্যুৎপত্তিগত বিচার যাই হোক না কেন, উক্ত শব্দের অপভ্রংশ সূত্র ধরলে এই দাঁড়ায় যে, পিপাসা বা তৃষ্ণা > তেরস > তিরস।
           তিরসকে অবলম্বন করে একটা উদাহরণ টানলে ব্যাপারটা আরও সহজ হবে। যেমন- ' মাগো, আমার খুব জলের তিরস ধরছে।' মানে জলের পিপাসা বা জলের তৃষ্ণা লাগছে। প্রয়োজনীয়তা যখন আত্যন্তিক মাত্রায় জেগে ওঠে, তখন তা পিপাসা বা তৃষ্ণা শব্দে আত্মপ্রকাশ করে থাকে।
           এবার জলের পানের তৃষ্ণা থেকে জলতিরস বা জলতেরস, ধন লাভের তৃষ্ণা থেকে ধনতিরস বা ধনতেরস অথবা ধনতেরাস।
            হ্যাঁ, প্রশ্ন হতে পারে,  এটা বিশেষ তিথির সাথে যুক্ত কেন ? দেখুন, ভারতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই সকল শুভকর্মাদি কোনো না কোনো তিথিকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্ভবতঃ 'তৃতীয়া' -এর সাথে 'অক্ষয়' এমন একটা শব্দও যুক্ত আছে। যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তথাপি মনে হয় তৃতীয়ায় শুভকামনা যেহেতু অক্ষয় হয়, সুতরাং এই তৃতীয়ায় ধনলাভের শুভ তৃষ্ণাও অক্ষয়তা লাভ করে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। সাধারণ মানুষ অতশত বোঝেনা। ধর্মীয় একটা বিষয় যুক্ত আছে, -এটাই ব্যাবসার জন্য যথেষ্ট। তদুপরি স্বর্ণ-রৌপ্য সংক্রান্ত বিষয়। এই ধাতুগুলিতে এমনিতেই ভারতীয় হিন্দুদের একটা পবিত্রতার ভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। ধনব্যাবসায়ীরা তৃতীয়া তিথির সাথে ধনতৃষ্ণার একটি ধর্ম ও যুক্তিনির্ভর যোগসূত্র খুঁজে পেলেন। আর তাকেই ব্যবহার করতে থাকলেন অত্যাধুনিক বানিজ্যিক প্রচারে।
                          
                     

অভীককুমার দে

মায়ের সোনা বাছুর

গরু পালন করছি ঘরে
ঘর নিজের করে নিয়েছে গরু। 

আমার ঘরের গাভী মা হয়েছে, দেখি
দামড়ারাও মায়ের মতই চেয়ে... 
যদিও সব মা গরু নয়। 
সব গরু মা হতে পারে না,
দুধ খাওয়াতে পারে না বলে
কিছু গরু হালের কাছে বন্ধক রাখে ঘাড়।

গাভী দুধ দেয়
সোনা ফলে
সোনা বাছুর মায়ের, অথচ 
দামড়া মনে করে দুধের ভেতর সোনা;
অতঃপর খুঁড়তে থাকে মাটি। 

দুলাল চক্রবর্তী

অমলিন  আশা

তোমার আগুনে জ্বলেছিলো
আমার প্রাণের বীণার তার,
ছিন্ন বীণায় বাজেনাতো সুর
করে শুধু হাহাকার।

গোধূলি বেলায় পাখিরা ফিরে
আপন কুলায়।
আমি পথহারা পথিক একা
পড়ে আছি পথধূলায়।
জীবন আমারে বলে দিয়েছিলো
সব আলেয়ার আলো,
অন্ধ ছিলাম তোমার রূপেতে
তোমায় বেসেছি ভালো।
আজো
খোলা জানালায় কান পেতে রই
যদি ডাকো তুমি ফিরে,
মনের আয়না বার বার বলে
ফিরে চলো নিজ নীড়ে।

অন্ধ তোমার ভালোবাসা টুকু
রইলো গোপনে তোলা,
হারিয়ে যেওনা হাজারো ভীড়ে
হয়ে যাবে পথভোলা।

বিজন বোস

ডিটেনশন ক্যান্প

রাষ্ট্র যখন বর্গী হয়
লুটের উৎসব জমজমাট
মেধা বিক্রির মহামেলা
সমাজব্যাপী মত্সনায়  ।

পূব আকাশে সোনালী সূর্য
থমকে দাঁড়ায়
মাটি ও মানুষের হৃদপিন্ড ছেঁড়া
চিত্কার শুনে ,
গন্ধশুঁকো  শিকারী কুকুর সোল্লাসে
বিজয় পটকার প্রতিযোগিতা বসায়
আর লণ্ডভণ্ড করে মানুষের স্বপ্নের বাগান।

ওদিকে ক্লান্ত প্রত্ননগরীর রক্ত আর ঘামে
স্বপ্নকে বন্ধক রেখেও 
এগিয়ে যেতে চায় যে কিশোর
তাকেও রেহাই দেয়না রাষ্ট্রের লান্পট্য ক্রোধ ।
বুকের রক্তে আর কত গল্প হবে
উন্মত্ত হস্তীর লুণ্ঠন আর কত সইবে দেশ ?
মাটিকে মাতৃজ্ঞানে পূজো করা
বুড়ো দুলাল তাঁতির 
স্বখেদ প্রশ্ন
আমরাতো যুদ্ধপরাধী নই--
তবু কেন পচে মরছি ডিটেনশন ক্যান্পে ?

সংগীতা দেব

বসন্তের অপেক্ষা

চারদিকে শুধু রঙিন ছবি।
রঙ আর রঙ আকাশে বাতাসে,
বুড়ো, ছোটো, মাঝারি সবার প্রাণে।
এই রঙ যেন আর বাঁধা মানে না
ছড়িয়ে পড়ছে সবার মাঝে।
এতো রঙের ছোঁয়ায়
ঢাকা পড়ে গেল,সবার দুঃখ গুলো।
মেতে উঠল সবাই,নানা রঙে সকলকে রাঙাতে।
আবারো এই বসন্তে
শুধু আমি বাদ পড়ে গেলাম,
রঙের ভাগ পেতে।
এবারো-কি বেরঙিন কেটে যাবে
পঁচিশটা বসন্ত পেড়িয়ে।
আমি উভলিঙ্গের বলে কি
আমায় রঙ মাখতে বারন!
আমরা কি সবার মতো
রঙিন হতে পারিনা,নানা রঙে?
সবাই দেখলে কেবল দূরে সরে যায়,
যা সবার সাথে মিশে যেতে পারেনা।
সবার মতো আমরাও রক্ত, মাংসে, অনুভূতিতে গড়া।
তবুও যেন অমিল আমরা সবার চোখে।
প্রতি বার মনে হয়,কেউ যেন বলবে
তুমিও এসো আমাদের মতো রঙিন হতে।
সেদিন আমার বসন্ত আসবে
ঢাকা পড়ে যাবে সবার মাঝে আমার অমিল।
দূরত্ব ঘুঁচে যাবে রঙের ছোঁয়ায়।
আবারো দীর্ঘ অপেক্ষায়, আমার বসন্তের।

অনুপম দেব

বাবুইর প্রেম 

পক্ষীদেশে আছিলো সুন্দরী একটা ময়না
       ওই দেশেরই এক  বাবুইর মনে ওই ময়নার লাইগ্গা প্রেমের আনাগুনা,
গুন্ডা কাক যে ময়নার দাদা জানতো ইডা বাবুই 
      এখন শুনি কি কয় এই প্রেমপাগলা মশাই,

একদিন ময়নার কাছে বাবুই পাখি কানে কানে কয়
    চল নীল গগনে উইড়া বেড়াই কিয়ের এতো ভয়?
ময়না তখন কয় বাবুইরে জানস না তুই গাঁধা!
       দেখতা পারলে মাইরা লাইবো কাক আমার দাদা,

বাবুল তাতে কি, আমি ইতা ডরাই না

তুমি আমার সঙ্গে থাকলে এইসবে কিছু যায় আয়ে না,
ময়না বলে দাদা আমার বড় গুন্ডা, লম্বা তার ঠোট,
একটা তর ঘাড়ে দিলে হইবি প্রেম ছাইড়া ফুড়ুৎI


সুজন দেবনাথ

যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও


যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও

যদি ব্যথার মতো ব্যথা দিতেই না পারো

তবে ব্যথা দিও না

ছোট খাটো ব্যথা না চাইতেই মেলে

পথে ঘাটে হাটে মাঠে

যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও

যে ব্যথায় আমি অভ্যস্ত নই

আমায় এমন ব্যথা দাও

যে ব্যথায় আমি চূর্ণ বিচূর্ণ হবো

ক্ষত বিক্ষত হবো

হতে হতে একদিন মিশে যাবো 

কৃষ্ণ মেঘে, 
মিশে যাবো কালের অতলে
মিশে যাবো  মহাকালের অসীম শূন্যতায়

আমি হারিয়ে যেতে চাই পৃথিবীর বুক থেকে

ভালোবাসা আর চাইব না

কোনোদিনও না

ভালোবাসায় এখন  বদ  হজম হয়

আসলে ভালবাসার চাইতে এখন

ব্যথায় ভালো লাগে

মৌ মন্ডল (গাঙ্গুলী)

এই বেশ ভালো আছি

সংসারের চোরাস্রোতে আমি ঠিক কেমন আছি, 
সে প্রশ্ন কেবল আমার মধ্যেই সীমিত থাক। 
তুমি কেমন আছো? সেটাই বলো, 
তোমার ভালো থাকার প্রতিটা মহুর্ত আমাকে ছুঁয়ে যাক। 


বোকার মতো এমন প্রশ্ন কেনো করো? তুমি জানোনা....
আমাকে ভালো থাকতে নেই ভালো রাখতে হয়। 
একথা শোনা মাত্র যতই তুমি কানে তালা দাওনা কেনো, 
সবাই নয় তবে জেনে রাখা ভালো কেউ কেউ এভাবেও বেঁচে রয়। 

সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়েরা সব, 
ভালো থাকার চেয়ে ভালো রাখার মন্ত্রে সদা দীক্ষিত। 
তবুও অভিনয়ের সেরা শিরোপা পাবার লোভে, 
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এই বেশ ভালো আছি। 

দিপ্সী দে

ভালোবাসি
   
কত সহজে বলে দিয়েছো তুমি সূখী নোও
আমাকে ভালোবেসে তবে আমি  কি সূখী
জানতে চেয়েছো  কি কোনদিন?
কখনো আমার চোখের জল মূছে ছিলে?
তবে জল আনো আজ ও
প্রেমের গন্ধে আজ হৃদয় পোড়া বারুদের গন্ধ।
অনেক তো হল যায় না কি?
আবার কাছে আসা
দিনশেষে ভেজা বালিশ টা জানে
আমি তোমাকে যে ভালোবাসি।
   

অনুপম রায়

চব্বিশ ঘন্টার পাঁচ তারা

যদি আলো ভাঙা ভোরে, কেউ ডাকে বারেবারে
আসবো আমি তারই খোঁজে বিশ্ব হৃদয় জুড়ে;

যদি সূর্য্যিমামা ঠিক দুপুরে চোখ রাঙিয়ে দেখে,
বটের ছায়া নিয়ে যাব পথের আঁকেবাঁকে ;

যদি বিকেলগুলো সময় করে আড্ডা দিতে আসে,
পাখির ঝাঁকে আসবো আমি জমবে অবশেষে;

যদি তুলসীতলে প্রদীপ জ্বলে সন্ধ্যা নামার পরে,
পাখি,পথিক,রাখাল,আমি ফিরব ঘরে ঘরে;

যদি বিভোর নেশার স্বপ্নগুলো রাতের দেশে যায়,
আমি অবুঝ মশাল হাতে আলোর হাত বাড়ায়।

উৎপল দেবনাথ

ভ্রমর কথা 

ভ্রমরের গুনগুন
শুনেছি বললো ---
দিনের শেষে ভালোবাসুক।
পুষ্প রোদে ক্লান্ত 
অঙ্গে অঙ্গে জারিত 
দহনে দাহিত
কিছুটা তাপ আমারও বুকে 
তবুও প্রত্যাশা। 

সজীব পাল

যৌবনের ক্ষুধা

নারীর ভিতর থেকে শকুনের মতো খাদ্য খুঁজেছি,
এই পৃথিবীর একটা সমুদ্র ডিঙাবো বলে।
কেউ শব্দে কেউ নিঃশব্দে
অথবা কেউ আঙুল দেখিয়ে বলেছে,
"একে নির্বাসন দাও এই নারীভোগী।"
জানি কখনো কখনো মহামানব 
নীরবে উচ্ছন্নে যায় ।
এইটা তো তার দোষ নয়!
তার ভীতরে গড়ে ওঠা পাথরের সংঘর্ষ ।
এই যে স্ফীত যৌবনের কঠিন জ্বালা ।
একমাত্র পুরুষের ভিতর সৃষ্টি হওয়া 
কবিই জানে 'নারী পুরুষের 'মধুর সম্পর্ক ।
কত নারী হেঁটে গেছে-
কত যুগ যুগ ধরে পুরুষের হৃদয় ছুঁয়ে,
তবুও একবিন্দু স্পর্শের ক্ষুধা মিটে না।
তাই নারীর ভিতর খুঁজে যাই সুখ, সুখ এবং সুখ।

মুকিম মাহমুদ মুকিত

আবার ফেরা হোক

আবার ফেরা হোক 
সেই শিশির ভেজা ঘাসে,
ভিজে যাক পা ;
জমে থাকুক মাথার এলোকেশে
কুয়াশার বিচ্ছিন্ন শুভ্র কণা। 
আবার প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকা হোক পথ
যেমতি থাকে শীতার্ত ভোরে 
শিডিউল হারানো সূর্যের আকাঙ্খা ;
অপূর্ণতায় লেগে যাক পূর্ণতার ঘুম। 
অথবা আকুতি থাকুক নওল ঊষার কাছে 
একটু ধীরে চলবার। 
গোধূলি লগ্নে নীলাম্বুধির পারে
আরও একবার হয়ে যাক,
শীতনিদ্রার অব্যর্থ আয়োজন। 
চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে ভিজুক
ঘন কুয়াশায় মিলিয়ে যাক পথ,
হীম শীতে বাধ্য হয়ে বন্ধ হোক 
প্রকৃতি বিমুখ রথ। 

সৈকত সরকার

স্বাধীনতার সূর্য লাল। 

সময় নেই
এখন চাঁদ দেখার! 
ভাতের বড্ড আকাল!! 
ক্ষুদার্ত শিশু আধমরা হয়ে আছে, 
কিন্তু
ওরা ব্যাস্ত ভন্ডামি তে, 
ওরা ব্যাস্ত গদি দখলে। 
ওদের কান নেই, হৃদয় নেই,ঈমান নেই, 
বিবেক রঙ কাগজে বিকিয়ে গেছে।

ওরা সন্ধ্যায় চাঁদ খুজে
আমি খুঁজি রাস্তার বুকে একটুকরো পাথর,

আকাশের চাঁদ অপেক্ষা 
রাস্তার পাথর আমার অধিক প্রিয়,

কারণ-

শোষণের বিরুদ্ধে শোষিত যখন তা তুলে নেয়, 
বিপ্লবের আগুন অমাবস্যা জ্বালায়,

একরাশ ছাইয়ের পাহাড় ভেদ করে
জন্ম নেয় এক নতুন সকাল,

পুর্ব দিগন্তে সালাম দেয় 
স্বাধীনতার সূর্য লাল।

সুস্মিতা সিংহ

অণুগল্প 

কিছু প্রাণহীন বা কিছু প্রাণ বৃক্ষ মঞ্চে ছোট ছোট ক্রিস্টাল পাথরের মালা দিয়ে বরণ করার সময়টুকু পর্যন্ত আনন্দের  ছিল। হঠাৎ ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের এ ডিবিতে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে বিস্ফোরণ হয় কিছু মানুষ  আহত হয়, কিছু মানুষ ভেঙ্গে পড়ে, কিছু মানুষ সময়ের সুযোগ নিয়ে এই ঘটনার উল্টো দিকে হাঁটে। হঠাৎই সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসি র রায় হয়ে যায় ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ডিবির এর মালিকের। হাসির ঘটনা বলে অনেকের কাছে বেশ আনন্দের ।
দোষ কার ছিল? ক্লোরোফ্লোরোর ডিবি আনা নাকি কাগজ কুড়িয়ে সেই ডিবিতে আগুন লাগানো প্রতিশোধ স্পৃহা মানুষের? কেনই বা তারা বডি স্প্রে সুগন্ধির কাজে লাগাল না এই বলে প্রশ্ন ওঠেনি উঠেছে বিস্ফোরণ নিয়ে!

সুব্রত দেববর্মা

রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম বেশী

রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম 
যেখানে বেশি,সেখানে আমার দেশপ্রেম,
সেইটে আমার স্বভূমি।

রেশনকার্ড বন্ধক দিয়ে
একমুঠো চাল ভিক্ষা চাইছি,
একটা ডিটেনশন কেম্পে 
কিভাবে প্রেম চাইছো তুমি।

কোনো করপোরেশন আমার শহরের
আঁধার ঘোচাতে পারেনি,
আমি শুধু ইলেকট্রিক বিলে দিয়ে গেছি
ফাইভ পার্সেন্ট ইনক্রিজ।

পিএমসি ব্যাংক থেকে শুরু,
এই বিজনেস যে কোথায় থামবে
কোথায় অপমৃত্যুর পরসংখ্যান হবে ফ্রিজ।

জানিনা, আমি তা জানিনা।
শুধু এইটুকু জানি যে 
রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম বেশি।

পূজা মুজমদার

ঋতুর অ'সুখ


আমি যে শয্যাশায়ী ঋতুর ব্যথায়,
চোখের বর্ন হলো ফ্যাকাসে হায়!

আমি চুপ করে সয়ে যাই সব...

সাতটা দিন........
সে কি কম যন্ত্রনার??

আমার মুখ দিয়ে যে আজ আওয়াজ থেমে থেমে 
আসে বারবার...
কারন ঋতু চলছে আমার।

ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছি কয়েরবার।

তবে এসকলের ভিরে না আমায় সুন্দর দেখাচ্ছে...
কচি শিশুর চেহারাটা যেমন
ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে....

ঋতুকালীন সময়ে কাছাকাছি যদি কখনও হও
তবে মন ভরে আমার ওই মুখমন্ডলখানা তোমার চোখের পলকে চুমিও।

প্রীতম শীল

কাঁদো মাগো কাঁদো

বড়ই কৌতূহল জাগে মা,
কোথায় পাও এত সহিষ্ণুতা। 
মৌন ভাবে কিভাবে থাকো মা,
কি শক্তি দিলো তোমায় বিধাতা। 
আমরা যখন জ্বালিয়ে মারি তোমায়,
কেমনে হাসি মুখে থাক তুমি?
কেন তোমার কান্না পায় মাগো,
যখন খাবার খাইনা আমি?
তুমি যখন অনাহারী মাগো,
কান্না আমার কেন পায়না?
আড়ালে যখন কাঁদো মাগো,
কষ্ট কি তোমার হয়না?
যে সন্তান লালন করো তুমি,
আমরা কি যোগ্য তার।
হাসি মুখে সব সয়ে যাও মাগো,
একি তোমার মহান বিচার।
কাঁদো মাগো কাঁদো তুমি,
প্রসব ব্যাথার কালে।
জীবন ভর কাঁদো তুমি মাগো,
লোকের চোখের আড়ালে।


চৈতন্য ফকির

নকুলচন্দ্র মণ্ডল

১:২ এই ফাঁদে যতবার পা পড়ে
ঠিক তখন বাঁদরের মুখ গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে। 
তার পোশাকিভদ্রতার আড়ালে মুখোশ নাম
নকুলচন্দ্র মণ্ডল। 

বাঁদর যেমন অন্যের ডুগডুগি বাজনায়
নোচে চলে সেই নকুলও নেচে-কুঁদে 
উড়ে এসে কুমারঘাটে ১:২ এই ম্যাজিক শেখাতো।

এরকম ১:২ মিলাতে মিলাতে দেখা গেলো 
কারো ১ সাইড নিচে নামতে নামতে ১০০ ক্রস করে আছে
আবার কারো ২ সাইট এক নং জোড়ায় লটকে। 

এরকম পরিস্থিতিতে নকুল মণ্ডল তার প্রভুকে
১:২ খেলায় মালিক শুভঙ্করকে নিয়ে এলো
আর রাতের খাবার মমতাময় তুলতুলে রেডমিট।

মায়াময় হিপনোটিজম আর বিপুলচন্দ্রের অদক্ষতা 
পকেট থেকে ১:২ ম্যাজিক মেলাতে মেলাতে 
হঠাৎ তিনজন শিম্পাঞ্জি ও একজন অবিনাশ
তার চৌবাচ্চার চাবি হারিয়ে জলকাতর বহুদিন।

১:২ ম্যাজিক এখনো বাতাস ভার করে আর
আমাদের গোপাল নেপাল ও অনিমেষদের
নিচে এরকমই নামতে থাকে নতুন গল্প 
তারও একই মুখোশ সেও নকুলচন্দ্র মণ্ডল।

সামিন শুভ

খোলা চিঠি

আমার চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ,
নিস্ক্রিয় যৌবণের সব উত্তাপ, 
তাই নাহি ঠাই, 
এপারে-ওপারে বিছায়েছি পাপ। 
চোখের নিচে জমা হাজার অনুতাপ।
নেই মাপ..... সুদূরে ম্লান আমার পাপেরি ছাপ।
চাই মাফ....
যদি পারো মাফ করো হে মহীয়ান, 
তোমাতেই সর্বস্ব আমার নিজ বলিদান।
হে মহান |

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...