Saturday, November 23, 2019

বিনয় শীল

ধনতেরাস


           গ্রাম-বাংলায় একটা শব্দ প্রচলিত আছে। সেই শব্দটি হল "তিরস" । এই তিরস শব্দের অর্থ হল পিপাসা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, কামনা বাসনা ইত্যাদি। ওই "তিরস" শব্দ থেকে তেরস শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। পিপাসা বা তৃষ্ণার ব্যুৎপত্তিগত বিচার যাই হোক না কেন, উক্ত শব্দের অপভ্রংশ সূত্র ধরলে এই দাঁড়ায় যে, পিপাসা বা তৃষ্ণা > তেরস > তিরস।
           তিরসকে অবলম্বন করে একটা উদাহরণ টানলে ব্যাপারটা আরও সহজ হবে। যেমন- ' মাগো, আমার খুব জলের তিরস ধরছে।' মানে জলের পিপাসা বা জলের তৃষ্ণা লাগছে। প্রয়োজনীয়তা যখন আত্যন্তিক মাত্রায় জেগে ওঠে, তখন তা পিপাসা বা তৃষ্ণা শব্দে আত্মপ্রকাশ করে থাকে।
           এবার জলের পানের তৃষ্ণা থেকে জলতিরস বা জলতেরস, ধন লাভের তৃষ্ণা থেকে ধনতিরস বা ধনতেরস অথবা ধনতেরাস।
            হ্যাঁ, প্রশ্ন হতে পারে,  এটা বিশেষ তিথির সাথে যুক্ত কেন ? দেখুন, ভারতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই সকল শুভকর্মাদি কোনো না কোনো তিথিকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্ভবতঃ 'তৃতীয়া' -এর সাথে 'অক্ষয়' এমন একটা শব্দও যুক্ত আছে। যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তথাপি মনে হয় তৃতীয়ায় শুভকামনা যেহেতু অক্ষয় হয়, সুতরাং এই তৃতীয়ায় ধনলাভের শুভ তৃষ্ণাও অক্ষয়তা লাভ করে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। সাধারণ মানুষ অতশত বোঝেনা। ধর্মীয় একটা বিষয় যুক্ত আছে, -এটাই ব্যাবসার জন্য যথেষ্ট। তদুপরি স্বর্ণ-রৌপ্য সংক্রান্ত বিষয়। এই ধাতুগুলিতে এমনিতেই ভারতীয় হিন্দুদের একটা পবিত্রতার ভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। ধনব্যাবসায়ীরা তৃতীয়া তিথির সাথে ধনতৃষ্ণার একটি ধর্ম ও যুক্তিনির্ভর যোগসূত্র খুঁজে পেলেন। আর তাকেই ব্যবহার করতে থাকলেন অত্যাধুনিক বানিজ্যিক প্রচারে।
                          
                     

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...