মিথ্যার অপরিহার্যতা
সদা সত্য কথাবলিবে,এ আপ্ত বাক্যটিআমাদের সবার শোনা।এই বাক্যটির পরিপ্রেক্ষিতে মিথ্যার অপরিহার্যতা বিচার্য।তবে সত্য কী?যা ঘটে চলছে আমাদের গোচরে বা অগোচরে। কিছু আমাদের জানার মধ্যে অধিকাংশ জানা বা বোঝার বাইরে।দ্বিতীয় প্রশ্ন কথা কী?আমরা যা মনের ভাব প্রকাশের জন্যঅপরের কাছে ব্যক্ত করি।তাহলে স্বভাবতই বলতে হয় বলার পূর্বে আমার মনের কথাগুলি মনের মধ্যে রূপ পরিগ্রহ করে,তারপর বাক্যের আকারে বেরিয়ে আসে। সত্যকথা তবে কী?যা আমাদের মনের মধ্যে আলোড়িত হয় তাই।এখন প্রশ্ন সত্যকথা বলা উচিত কী উচিত না।তার উপর আবার সদা সত্য কথা বলা।
আমার মনে হয় আমাদের জীবনের সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ অবস্থায় সত্যের চেয়ে মিথ্যাই জরুরি এবং মিথ্যাই অপরিহার্য।
পিতা মাতার অনাকাঙ্ক্ষিত কন্যা সন্তানটিকে পিতা মাতা কখনো বলে না তুমি আমাদের কাঙ্ক্ষিত নও।শিশু অসংখ্য বায়না ধরে, প্রায় সমস্ত বায়না মেটানো হয় মিথ্যার সাহায্যে, এমনকি চঁাদ সূর্যকে ও শিশুটির হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই।শিশুটিও ছোট বড় নানা মিথ্যা বাক্যবলে আদর আদায় করে নেয়। কখনো মাকে কখনো বাবাকে আলাদা আলাদাভাবে বলে তাকেই সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কোনটি সত্যি সেও জানেনা। সত্য মিথ্যা একাকার এখানে।শিশুটি বড় হতে থাকে মা বাবার সাথে চলে অপূর্ব সব মিথ্যার খেলা।
যৌবনে সে ভালোবাসে কোনো নারীকে এবং বিশ্বাস করে কোনো দর্শনে।
দিন গড়িয়ে যায়।প্রিয়ার কলো চোখে সে আর খঁজে পায়না আগের আবেগ,অবশ্য দুদিক থেকেই এটি সত্যি।তবু চলতে থাকে মিথ্যার খেলা।
ভালোলাগা দর্শনের মোড়ক খুলেযখন সে সত্যের সন্ধান করে তখন দেখে দুধের অধিকাংশই জল।অথচ সে আটকে আছে সেই দর্শনের পেছনে।উপায় কী চাকুরী বদলী, ঠিকাদারি কিছুনা কিছু দরকার বেঁচে থাকার জন্য এবং এগুলো মিথ্যাই একমাত্র এনে দিতে পারে।
বিভিন্ন পেশার ক্ষেত্রে মিথ্যারই জয়জয়কার। ডাক্তার তার মরণাপন্ন রোগীকে বলে চিন্তা নেই, আপনি ভালো হয়ে উঠবেন। উকিল মক্কেলকে তার পরাজয় জেনেওবলে একেসে আপনার জয় অনিবার্য। জ্যোতিষি হাত দেখে বলে পুত্র সন্তান ঘরবাড়ি ও বিরাট সাফল্যের স্বর্নদ্বার আপনার জন্য অপেক্ষা করছে। রাজনীতি ব্যবসায়ীদেরঅধিকাংশের মিথ্যাই সম্বল।নিজের দোষকে অপরের কাঁধে চাপানো,মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রাজনীতির স্বাভাবিক আয়ুধ।কোনযুবককে কী বলা যাবে, তোমার চাকরি হবেনা,না, বলা উচিত? বলে দেখছি হয়ে যাবে।ইন্টারভিউ দাও। আমাদের হাত নেই। বলতে হয় বলা দরকার।এবারপাঁচশালা পরিকল্পনায় মোট একশ কিলোমিটার রেলপথ হবে।সমস্ত রাজ্যের যোগফল হয়ত পাঁচ হাজার কিলোমিটার। অসম্ভব জেনেও মিথ্যা দাবী।
মিথ্যা ও সত্যের ফারাক কতটুকু। মিথ্যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্যের কাজ করছে।আনন্দিত করছে। উত্সাহিত করছে জীবনকে।
প্রাণ এবং অপ্রানের মধ্যে সত্যিকারের কী কোন ফারাক আছে?আলো মাটি,বাতাস,জল প্রাণহীন।আবার এদের মধ্যেই প্রাণের জন্ম।
তাই বলাযায় মিথ্যাই সত্য।আসুন আমরা মিথ্যার জয়গান গাই।পৃথিবীর মধুরতম মিথ্যা,সব মানুষ একদিন সমান হবে,মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মুছে যাবে।সেই মিথ্যার স্বপ্নদেখতে সত্যি অভ্যস্ত হই।
No comments:
Post a Comment