Friday, March 29, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

এটা পরিস্কার ভাবে জানি যে, সাক্ষাৎকার এভাবে নেওয়া হয়না। আবার বলতে হয় সাক্ষাৎকারের সর্বজনগ্রাহ্য কোনো সজ্ঞাও হয়না! আমাদের ধারণা থেকে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি অভিনব কিছু করার। এই সংখ্যায় আমরা চারটি বিভাগের বিশিষ্ট চারজনকে বাছাই করে সাক্ষাৎকার গ্রহন করেছি, সেগুলিকেই আজ প্রকাশ করা হলো। আমরা একই ফুলের চারটি পাপড়ির চার জন গুণীজনকে প্রায় একই ধাচের প্রশ্নের মুখোমুখি করেছি, যাতে করে লোকসংস্কৃতি এবং সাহিত্য সম্পর্কে পাঠকরা একটা গবেষণামূলক স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারেন। যাঁরা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। প্রতি সংখ্যায় নতুন কিছু করার প্রেরণা যাঁরা যুগিয়েছেন তাদের কাছেও কৃতজ্ঞ।

সবসময় সব অবস্থানে একই রকম জিনিস ঘটবে সেটা সংস্কৃতি নয়। সংস্কৃতিতে 'সংস্কার' শব্দটা নিহিত আছে। একটা ফ্ল্যাটফর্মে অগ্রগতি আনতে আধুনিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ঐতিহ্য ও আধুনিকতার সংমিশ্রণেই ঘটে অগ্রগতি। সবাই ভালো থাকুন।

                                     শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                                         জয় দেবনাথ
                                            সম্পাদক
                                     মনন স্রোত, ত্রিপুরা

এই মাসের সংখ্যা সাক্ষাৎকারের সংখ্যা ||| ছবিতে মনন স্রোতের মডেল শিল্পী সুমন।

সূচীপত্র :

১. সাক্ষাৎকার কামরুজ্জামান রাব্বি ( বিশিষ্ট লোকসংগীত শিল্পী, বাংলাদেশ)

২. সাক্ষাৎকার দীপক দাস ( প্রাবন্ধিক ও বাচিক শিল্পী, ত্রিপুরা)

৩. সাক্ষাৎকার ড. রঞ্জিত দে ( লোকসংস্কৃতি গবেষক, ত্রিপুরা)

৪. চৈতন্য ফকির ( প্রকাশক, ত্রিপুরা)

মুখোমুখি : কামরুজ্জামান রাব্বি

"লোকসংগীত মায়ের মতো। মাকে কখনো আধুনিকরণের নামে পাল্টে দেওয়া যায়না!"
~ কামরুজ্জামান রাব্বি।

কামরুজ্জামান রাব্বি বাংলা লোকসংগীতের তরুণ প্রজন্মের শিল্পীদের মধ্যে এক উল্লেখযোগ্য নাম। অতিসম্প্রতি তিনি "আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইক্যো" গানের মধ্য দিয়ে দেশে বিদেশের ভক্তদের ভালোবাসা পেয়েছেন। মননস্রোতের সাক্ষাৎকার বিভাগে উপস্থিত হয়েছেন তিনিও।

শিল্পীর সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মনন স্রোত। 

♦মননস্রোত => আপনি এই মুহুর্তে বাংলা লোকসংগীতের এক উজ্বল নক্ষত্র। বাংলার সবচাইতে বড় রিয়ালিটি শো ম্যাজিক বাউলিয়ানায় আপনাকে প্রথম দেখা। এই লোকগানের প্রতি আপনার আগ্রহের কারণ জানতে চাই।

কামরুজ্জামান রাব্বি => দেখুন,  লোকগানের প্রতি আগ্রহটা আসলে মনের ব্যপার। লোকগান আমাকে খুব টানে। আপনি লক্ষ্য করলে দেখবেন লোকগানের মাধ্যমে খুব সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়। লোকগানে একটা শেকড়ের টান থাকে। আমি ভীষণ তৃপ্তি পাই।

♦মনন স্রোত => আপনার বেড়ে উঠার গল্পটা?

কামরুজ্জামান রাব্বি =>  বাংলাদেশের রাজশাহী তে ৭ জুলাই ১৯৯৫ সালে আমার জন্ম। রাজশাহীতেই আমার সকল পড়াশুনা। আরোইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখান থেকেই পিএসসি, এখানেই এসএসসি। বর্তমানে আমি লোকসঙ্গীত নিয়েই পড়াশুনা  করছি।

♦মনন স্রোত => সম্প্রতি লোকগানকে আধুনিকরণের একটা প্রচেষ্টা চলছে এবং হচ্ছেও, এতে আপনার মতামত কি?

কামরুজ্জামান রাব্বি => মতামত বলতে লোকগানকে আধুনিকরণের মাধ্যমে সময়োপযোগী করে গ্রহনযোগ্য করার উদ্যোগ নিসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে আধুনিকরণ মানে এই না যে লোকগানকে নিজের ফ্ল্যাটফর্ম থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে!
আমি সবসময় একটা কথা বলি যে আমার মা গ্রামে থাকেন,  আমি যদি আধুনিকরণের নাম করে আমার মা'কে জিন্স পড়ে শহরের রাস্তায় হাঁটতে বলি, নিশ্চয় সেটা আমার কাছে ভালো লাগবেনা! লোকগানও ঠিক মায়ের মতো। লোকগান লোকগানের মতোই ভালো লাগে। সেখানেই মানায় যেখানে তার উৎপত্তি। আধুনিকরণের নামে সুর তাল পরিবর্তন করাটা আসলে ঠিক নয়। এতে লোকগানের নিজস্বতা থাকেনা! 

♦মনন স্রোত => ম্যাজিক বাউলিয়ানায় আপনার সাফল্যের গল্পটা কেমন?

কামরুজ্জামান রাব্বি => আসলে ম্যাজিক বাউলিয়ানার অডিশানের সময়  আমি অসুস্থ ছিলাম। আমার এক বন্ধু আমাকে রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে দেয়। তারপর গেলাম অডিশান দিলাম। ইয়েস কার্ড পেলাম। তারপর থেকেই মনোনিবেশ করি প্রতিযোগিতায়।যারাই আমরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছি তার মধ্যে সেরা পাঁচের মধ্যে রয়েছে পাপিয়া জাহান, শফিকুল ইসলাম, শিবলী সাদিক,লাল্টু হোসেন ও আমি। এরা প্রত্যেকেই ভালো মানুষ। কোনোদিন মনে হয়নি আমরা প্রতিযোগিতা করতে এসেছি। একটা বন্ধুত্বপূর্ণ পারিবারিক সম্পর্কের মতো চলতাম আমরা।

♦মনন স্রোত => আপনার পরবর্তীতে কি পরিকল্পনা আছে?

কামরুজ্জামান রাব্বি => আমার যাবতীয় পরিকল্পনা লোকগান নিয়েই। বাংলাদেশ থেকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ করে, ভারতের রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লোকগান নিয়ে গবেষণা করার একটা পরিকল্পনা আছে।

♦মনন স্রোত => নতুন প্রজন্মের লোকসংগীত শিল্পীদের আপনি কি বার্তা দেবেন?

কামরুজ্জামান রাব্বি => দেখুন, মনন স্রোত যে উদ্দেশ্যে কাজ করে চলেছে সেটা নিসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। এর মাধ্যমে খুব সহজে বার্তা পৌঁছে যাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে। নতুন প্রজন্মের যারা লোকসংগীত নিয়ে কাজ করছেন, সকলের কাছে অনুরোধ থাকবে লোকগানকে লোকগানের মতোই উপস্থাপন করতে। লোকগান মানুষকে শান্তি দেয়, তৃপ্তি দেয়।

♦মনন স্রোত => আপনাকে অনেক ধন্যবাদ মনন স্রোতকে সময় দেওয়ার জন্য। ভালো থাকবেন।

মুখোমুখি : দীপক দাস

"পৃথিবীর কোনো মানুষ নির্ভুল নয়। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় মহান ব্যক্তিরা তুচ্ছ কাজেও মাঝে মাঝে নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিতে সক্ষম নন"
~ দীপক দাস

দীপক দাস ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন জনপ্রিয় ব্যাক্তিত্ব। শিক্ষা এবং সংস্কৃতি জগতের সাথে তাঁর গভীর সম্পর্ক বহুকাল। বর্তমানে অবসরে। তিনি তাঁর প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে মনন স্রোতের পাঠকদের কাছে ভীষণ জনপ্রিয়।  মনন স্রোতের সাক্ষাৎকার বিভাগে উপস্থিত হয়েছেন তিনিও। প্রাবন্ধিক ও বাচিক শিল্পী দীপক দাসের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মনন স্রোত।

♦মনন স্রোত => আপনি বাংলা সাহিত্যের এবং ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সংক্ষেপে আপনার বেড়ে উঠার গল্পটা যদি বলতেন!

দীপক দাস => আমি নিজেকে বাংলা সাহিত্যের এবং ত্রিপুরার শিক্ষাজগতের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ মনে করি না। তবে আমি বাংলা সাহিত্যের একজন রসপিপাসু মানুষ।বাংলা সাহিত্যের অনুবাদ সাহিত্যের ধারা ধরে বিশ্বসাহিত্যের রস আম্বাদনে সদা উৎসুক ব্যক্তি। আমি ১৯৬৩ সালে বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সাবরুম আমার জেঠামশাই হরিভূষণ দাসের বাড়ীতে আমার বড় বোন একক দাদা যিনি মেডিকেলের ছাত্র এবং জেঠামশাই সহ ছিলেন অসাধারণ পড়ুয়া। তখনকার  সাবরুমে পাবলিক লাইব্রেরি ছিল অত্যন্ত সমৃদ্ধ । করবী দেববর্মণ ছিলেন লাইব্রেরিয়ান। অসাধারণ মহিলা পরবর্তী জীবনে তিনি প্রিন্সিপাল হন।  প্রোগ্রামে শিখতাম সব ধরনের বই । "রামের সুমতি", "বড়দিদি", "মেঝদিদি" পড়তে পড়তে চোখের ফুটেছিল কুয়াশা।  এক অনাবিস্তৃত জগতে আমি ডুবে যেতে থাকি। "পথের পাঁচালি " পড়ে দুর্গার জন্য মন দুঃখে ভরে উঠেছিল । একদিন হাতে এল আনন্দমঠ তখন আমি কৈশোর অতিক্রম করছি যৌবনরাজে প্রবেশপথ আমার কাছে ধরা দিল তার দাবী নিয়ে । আমি বুঝলাম যৌবন দেশকে ভালবাসার শিক্ষায় দীক্ষিত হতে হয়।দেশের প্রতি ভালবাসার টান আজও সমানভাবে প্রবাহিত ।

আমার বাবাও ছিলেন অসাধারণ পড়ুয়া ।একসময় বি কম করার জন্য কলকাতায় যাই। সেখানে রবীন্দ্রসংগীতের  প্রতি আকর্ষণ তৈরী হয়,সেই আকর্ষণের তীব্রতা আজও বহমান। মনে হয় শেষবারের মতো ঘুমিয়ে পড়ার মুহূর্তে যেন আমার শ্রবণ  রবীন্দ্র সংগীত শুনতে পায়। যৌবনের বেকারত্বের দিনগুলোতে এখন কিছু মানুষের সংস্পর্শে আমি যাদের কাছে মূল্যবান করার জন্যও  নিজেকে তৈরি করতে হয় বই ছিলো সেইসময় প্রিয়তম সাথী। গোপীবসাক, নেপাল সেন, মানিক চক্রবর্তী, হরিনারায়ণ চক্রবর্তী, সুতপা দে,অর্জুন শর্মা , প্রদীপ চৌধুরী কত বন্ধু যারা পড়ুয়া এবং যাদের যুক্তি বুদ্ধি চিন্তা আমাকে প্রভাবিত করেছিল। আমার আমি  হওয়ার পেছনে বই এবং এদের অবদান অনেকখানি আর ছিল ৭০  দশকের উত্থাল সময়। সময়ই একটি মানুষকে তৈরী করে দেয়।

♦মনন স্রোত => আপনার সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ ও প্রবেশ কাল কবে?

দীপক দাস => সাবরুমে 'ভারত সংঘ' ক্লাব পূজা উপলক্ষে স্মরনিকা  প্রকাশ করবে লেখা চাইছে, আমি লেখা দিলাম । সব মনে নেই ২০ বছর আগের হবে । ছাপার অক্ষরে আমার আত্মজনকে দেখে খুব ভালো লাগলো। সাবরুম থেকে যেসব স্মরনিকা বের  হয় তাতে লেখা দিতে থাকলাম । ছাপাও হত, বেশ ভালো লাগতো। একদিন ভাবলাম পত্রিকায় দিয়ে দেখি কি হয় । পাঠালাম  ত্রিপুরা দর্পনে ও স্যন্দনে। ওরাও ছাপাল।
মনে দুটি প্রশ্ন উঁকি দিত। মনে হত এসব পত্রিকায় জায়গা ভরাট করার জন্যই আমার লেখা ছাপা হয়েছে । আবার ভাবতাম লেখার মধ্যে সাধারণ কিছু গুন হয়তো আছে। তবে পড়ুয়া এবং সাহিত্য রসপিপাসু  হতে বলতে পারি  শুধু শুধুই কিছু যাদের কাগজে কালি ছিটাচ্ছি।

♦মনন স্রোত => আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় গ্রহন করেছেন?

দীপক দাস=> আধারমানিক গ্রাম বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থিত এক প্রাথমিক স্কুলে আমার শৈশব। পঞ্চম শ্রেণী রামগড় হাইস্কুল। 6-11 সাবরুমে  এইচ এস। বিকম Part-1 city college কলকাতা  Part 2. Mbb college আহরতলা।B. Ed   Tripura University তে আমার প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা।

♦মনন স্রোত => আমরা জানি আপনি যখন সমাজ গঠনের কাজ করতেন, তখন থেকেই আপনার খুব জনপ্রিয়তা। এখনও আপনার সহকর্মী এবং শিক্ষার্থীদের কাছে আপনার জনপ্রিয়তা সেই রকমই আছে। এর মূল কারণ কি? একজন শিক্ষকের সত্যিকারের পেশাগত দায়িত্বশীলতা আসলে কখন শুরু হয়?

দীপক দাস = > আমি  যাদের সাথে মিশি তাদের আমি  ভালবাসি। আমি দায়িত্ব গ্রহণ করি , পালন করি,পালিয়ে যাই না, ছাত্র ছাত্রীদের আমি ভীষণভাবে ভালবাসি। আমার নিয়মানুবর্তিতা ঈর্ষনীয়। আমি  কোন কিছু পাওয়ার জন্য ব্যাকুল নই । হয়ত এইসব বৈশিষ্ট্য গুলি আমার সহকর্মী  বন্ধু ও সহকর্মীদের ভালো লেগে থাকবে ।

♦মনন স্রোত => আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে, কবি সম্মেলন হয় কিন্তু লেখক সম্মেলন সেভাবে হয়না কেন?

দীপক দাস => আমারও প্রশ্ন কবি সম্মেলন হয়  লেখক সম্মেলন হয় না কেন? উত্তর যদি আমাকে দিতে হয় তবে আমাকে বলতে হয় লেখকদের মধ্যে "কবিতাই কুলীন " ওরা ব্রাহ্মণ অন্যরা সব ক্ষত্রিয়,বৈশ্য,  শুদ্র। তবে আয়োজকদের কাছে আমি লেখক সম্মেলনের দাবী রাখছি।

♦মনন স্রোত => আপনার পরবর্তীতে কি কি পরিকল্পনা আছে সাহিত্যচর্চায়?

দীপক দাস => যার সাহিত্য সৃষ্টি শুধু বৃথা কালির আঁছড় কাটা তার আবার পরবর্তী পরিকল্পনা কি থাকতে পারে? তবে জয় দেবনাথ, বিজন বসু সাহিত্য রচনায় শ্রবণ মন দিয়ে নিয়োজিত তাদের চাহিদা পূরণ আমার পরবর্তী পরিকল্পনা। তবে এ পর্যন্ত যা ছাপা হয়েছে তা নিজের খরচে  একটি বইয়ে এনে অনেক কাল উপহার দেওয়ার ইচ্ছে আছে। যাদের আমার বইয়ের শরীর ভাগ্যক্রমে রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিমচন্দ্রের বইয়ের সাথে লেগে যায় বা স্পর্শ করে ।

♦ মনন স্রোত => আমরা লক্ষ্য করেছি মননস্রোতে আপনার পাঠক সংখ্যা অনেক। আপনার প্রবন্ধের জন্য পাঠকেরা মুখিয়ে থাকে। প্রবন্ধে আপনি যে তথ্য দেন, সেগুলি খুঁজতে একজন লেখককে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। আপনি কিভাবে সেটাকে নিয়মিত করেন যদি বলতেন? 

দীপক দাস => আমি যা লিখি চিন্তা আমার থাকে তবে অনেক বিখ্যাত লেখকের বানান থেকে নানা ধরনের ফুল তুলে আমি মালা গাঁথি। মালা গাঁথার দক্ষতা আমার প্রাপ্য কিন্তু ফুলগুলো বেশির ভাগ অন্যের বাগানের। আমি অনেক বই পড়ি বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।

♦মনন স্রোত => সাব্রুমের সাহিত্যচর্চার সংক্ষিপ্ত একটা রূপরেখা জানতে চাই আপনার কাছে।

দীপক দাস => ত্রিপুরার মায়ের উপেক্ষিত সন্তান সাবরুম সাহিত্য চর্চারস্রোত অতন্ত ক্ষীণ। আগে স্কুল ম্যাগাজিন হতো তাতে কেউ কেউ লিখতো। পরবর্তী সময়ে লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন  ড. ননীগোপাল চক্রবর্তী,  ড. রণজিত দে, কৃষ্ণধন দেবনাথ, অশোকানন্দ রায়বর্ধন,  তিমিরবরণ চাকমা, রতন চক্রবর্তী যুবকদের মধ্যে বিজন বোস , কল্যাণব্রত বসাক, সঞ্জীব মালাকার , সঞ্জীব দে , জয় দেবনাথ, সোমেন চক্রবর্তী, শান্তনু চক্রবর্তী আরো কিছু নাম উঠে আসছে । সাহিত্যের নানা শাখায় এদের বিচরণ । তবে নাট্যকারের বড় সেভাব খুব ভাল গল্পকার মাত্র দু একজন কবিতা অনেকেই ভাল লেখেন।

♦মনন স্রোত =>  মনন স্রোতের মাধ্যমে আপনি নতুন প্রজন্মের প্রাবন্ধিকদের কি পরার্মশ দেবেন?

দীপক দাস => আমি বলব পাঠক হতে সবাইকে। প্রবন্ধ রচনার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য আমি বঙ্কিমচন্দ্র,রবীন্দ্রনাথ,অম্লান দত্ত, ভবতোষ দত্ত ,অন্নদাশঙ্কর রায়, নীরদ সি চৌধুরীর লেখা  পাঠ করার  অনুরোধ রাখব।

♦মনন স্রোত :=> আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান সময় দেওয়ার জন্য।

মুখোমুখি : ড. রঞ্জিত দে

"কবিতা যেমন পাঠকের মনে খুব চটজলদি ছন্দ জাগাতে পারে, গদ্য সেটা পারেনা! কবিতা এবং গদ্যের মধ্যে প্রধান পার্থক্য বোধহয় এটাই!"
~ ড. রঞ্জিত দে

ড. রঞ্জিত দে ত্রিপুরা রাজ্যের প্রবীণ লোকসংস্কৃতি গবেষকদের মধ্যে অন্যতম। ত্রিপুরা রাজ্যে সম্ভবত প্রথম লোকসংস্কৃতি বিষয়ক মুদ্রিত বইয়ের লেখক তিনি। দীর্ঘ সাহিত্যজীবন অতিক্রান্ত করে তিনি বর্তমানে বার্ধক্যের কবলে। মনন স্রোতের সাক্ষাৎকার বিভাগে উপস্থিত হয়েছেন তিনিও। মনন স্রোতেরর সাথে আন্তরিকভাবে আলাপচারিতায় ড. রঞ্জিত দে।

               || মুখোমুখি : রঞ্জিত দে ||

♦মনন স্রোত =>   আপনি বাংলা সাহিত্যের তদুপরি লোকসংস্কতি চর্চার একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। সংক্ষেপে আপনার লোকসংস্কৃতি গবেষণার জার্নির গল্পটা যদি বলতেন!

রঞ্জিত দে =>  আমার শৈশব কেটেছে সাব্রুমের ফেনী নদীর তীরে রানীবাজারকে বেষ্টন করা গ্রাম ছোটখিলে। বাড়ির পাশেই বিপিন কর্মকারের বাড়িতে বাৎসরিক কাজের কর্মী ছিলেন বলহরি দাস। তিনি ছিলেন লোককথার রীতিমত খনি বিশেষ। ছোটবেলায় মনে হয়েছে তার গল্প বলা যেন ফুরায় না! আমি স্কুল থেকে এসে ভাত খেয়ে সোজা তাঁর কাছে চলে যেতাম। তিনিও আমাকে খুব ভালোবাসতেন। আমাকে দেখলেই যেন তাঁর গল্পের দোয়ারা ছুটত।  গল্প শুনে তাঁর সাথে ঘরে ফিরতাম। অন্যদিকে রানীরবাজারে একটা ঠাকুর বাড়ি ছিলো। নাম দামোদর বাড়ি। প্রয়াত পুরোহিত সতেন্দ্র চক্রবর্তী। তার এবং এলাকার উৎসাহী ব্যক্তিদের উদ্যোগে সারাবছর চলতো ঢকা কীর্তন, কবিগান, ঝুলন, পাঁচালী গান, লাঠিনাচ প্রভৃতি আমাকে খুব অনুপ্রাণিত করতো। শৈশবে যখন বাঘের ভয়ে পাড়ায় পাড়ায় টিন পেটানোর আওয়াজ উঠতো তখন দূর্গাপুজায় বেজে উঠতো দোলের বাজনা!  এই ব্যপক মানুষের সংস্কৃতিই হলো লোকসংস্কৃতি। গ্রামীণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে এগুলোকে লালন করছে। আমার সৌভাগ্য এই রকম সংস্কৃতির পরিমণ্ডলে আমার শৈশব ও কৈশর অতিক্রান্ত হয়েছে। আপনার প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় আমার লোক সংস্কৃতি গবেষণার জার্নি এভাবেই পথ চলতে শুরু করে।

♦ মনন স্রোত => আপনার সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ ও প্রবেশ কালটা কবে?

রঞ্জিত দে  => ছোটবেলা থেকেই অন্তমিলযুক্ত কবিতা আমাকে আকর্ষণ করতো। ছোটবেলা থেকেই পাঠ্যবই অপেক্ষা নানা গল্প উপন্যাস পড়ার নেশা তৈরী হয়। কবিতা পড়ে আমার কবিতা লিখতে ইচ্ছে করতো। সেগুলো অনুকরণ, অনুসরণ করে কিছু কবিতা লিখেও ফেললাম। কিন্তু সেগুলো খুব অল্প সময়ে হারিয়ে যায়। আবার কলেজে গিয়ে অধ্যাপক ড. রঞ্জিত মুখোপাধ্যায়েরর সান্নিধ্যে এসে "সৃজনী' নামক দেওয়াল পত্রিকা বের করতে থাকি অনেকে মিলে। উল্লেখ করা যেতে পারে সাব্রুমের সাতচাঁদের ফনি বিশ্বাস বাবুও অন্যতম প্রধান উদ্যোক্তা ও কর্মপুরুষ ছিলেন। কলেজে যখন কবিতা লিখতে থাকি তখন অধ্যাপক ড. বিজন বিহারী পুরকায়স্থ বলতেন যে "গদ্য চর্চা করো - বইপত্র পড়ো!" গদ্যা চর্চার সুযোগও এসে যায়। তখন মহাপুরুষদের জন্মদিন, বিভিন্ন কোম্পানীর নানা উপলক্ষে প্রবন্ধ রচনার প্রতিযোগিতা প্রায় সারাবছর চোখে পড়তো। ব্যস এগুলোই লুপে নিলাম। এই ভাবে গদ্য চর্চার হাতে খড়ি। তারপর এম এ করি পাশাপাশি লোকসাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রটাও প্রাধান্য পায়।

♦ মনন স্রোত => আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় গ্রহন করেছেন?

রঞ্জিত দে =>  প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রথমে গ্রামের পাঠশালা (লতিফ মুহুরীর স্কুল, যেখানে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ছিলো) তারপর ব্রজেন্দ্রনগর লোয়ার ভার্মাকুলান। তারপর হাইস্কুল এবং কলেজ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইভেটে এম এ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই লোকসাহিত্য বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রী। (১৯৮৪)

♦মনন স্রোত => বর্তমান সময়ে লোকসংস্কৃতি চর্চার গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন

রঞ্জিত দে = > বিদ্যা হিসেবে লোকসাহিত্য চর্চার প্রথম প্রকাশ জার্মানীতে ১৮১২ খ্রীষ্টাব্দের শেষভাগে। আমাদের দেশে ক্যারি সাহেব প্রমুখ এইরূপ উদ্যোগ নিলেও আমাদের দেশে লোকসাহিত্য চর্চার হাতেখড়ি দিয়ে যানন রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর। শুধু হাতেখড়ি নয়, এই বিষয়ে আমাদের গায়ত্রী মন্ত্রও কানে দিয়ে গেছেন। ত্রিপুরা রাজ্যে এই বিষয়ে প্রথম প্রকাশিত মুদ্রিত গন্থ পাই সুপরিচিত সমাজকর্মী ও প্রাক্তন মন্ত্রী বীরেন্দ্র দত্ত মহাশয়ের উদ্যোগে। সেই দিক দিয়ে বাংলার লোকসাহিত্য দেড়শ বছর অতিক্রম করলেও ত্রিপুরা রাজ্যের এই আলোচনা শতবর্ষের সন্নিকটে। লোকসংস্কৃতি চর্চার গতিপ্রকৃতি নিসন্দেহে বলিষ্ঠ ও সাবলীল হচ্ছে। কারণ লোকসংস্কৃতি প্রেমিকদের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। "প্রতিদিন যাহা নিক্ষিপ্ত বিচ্ছিন্ন খণ্ড খণ্ড ভাবে সম্পন্ন হইতেছে, সাহিত্য তাহাকে ঐক্যসূত্রে গাঁথিয়া নিত্যকালের জন্য প্রস্তুত করিতে চেষ্টা করিতেছে।" (গ্রাম্য সাহিত্য রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর)

♦মনন স্রোত => আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে, কবি সম্মেলন হয় কিন্তু লেখক সম্মেলন সেভাবে হয়না কেন?

রঞ্জিত দে => অভিধানগত ভাবে সাহিত্যের ভাব বা মিলন অর্থে সাহিত্য হলো কাব্য,নাটক,গল্প উপন্যাস ইত্যাদি সৃজনশীল শিল্পের মাধ্যমে এক হৃদয়ের সাথে অন্য হৃদয়ের সংযোগ। অর্থাৎ সাহিত্যকারের সাথে পাঠকের এক অনুরাগ বিনিময়। উল্লেখ করা যেতে পারে সকলেই কবি নয়, কেউ কেউ কবি। কারণ তাদের সংবেদনশীল হৃদয় এবং কল্পনা শক্তি।
আদি কবি বাল্মিকীর 'আদি কবিতায়'--
"মা নিস্পদ প্রতিষ্ঠাং ত্বমসমঃ শ্বাশতী সমাঃ!
যৎ ক্রোষ্ণমিথুনাদেবমবধী কামমোহিতম!"
গদ্যে তাৎক্ষনিক শ্রোতাদের হৃদয়ে আবেদন সম্ভবত সহজ নয়। ছন্দমিল হেতু গ্রহনযোগ্য বলে কবিতা সম্ভব।

♦মনন স্রোত => আপনার পরবর্তীতে কি কি পরিকল্পনা আছে?

রঞ্জিত দে => পরিকল্পনা করে কাজ করা আমার পক্ষে হয়ে উঠে না! সে ধরনের কোন চিন্তা ভাবনা নেই। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমার চলার গতি নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে । উচ্চ শিক্ষার কোন ভাবনা ছিল না। আমাদের গ্রাম সমৃদ্ধ এবং সুসংযত হলে প্রত্যস্ত গ্রাম এবং পরিকল্পনা ভারে খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান । ছোটবেলায় পৃথিবীর বাইরে যার বই পুস্তকে পড়েছি । কিন্তু সেই সব দেশে যার উচ্চশিক্ষা গ্রহন করব- সে চিন্তা হয়নি। কারন আমার বরাবরই মনে হত এসব পড়াশোনা আগরতলা কলকাতা প্রভৃতি  বড় বড় ছেলেমেয়েদের জন্য । কিন্তু কেমন জানি গোলমাল হয়ে গেল বিলোনীয়া কলেজ স্থাপিত হলে কর্মকর্তারা ঘোষণা দিলেন দরিদ্র  ছেলেদের লজির ব্যবস্থা থাকবে । চাকুরীর ব্যবস্থা ছিল কেন জানি না চাকুরী আমাকে আকর্ষণ করল না - আমি ছুটে গেলাম বিলোনীয়া। ইতিপূর্বে নবম দশম শ্রেণী ও লজিং থেকে পড়াশুনা করেছি। সেইজন্য জীবনের শুরু থেকে কোন পরিকল্পনা নেওয়ার শক্তির অভাব ছিল। বিলোনীয়া কলেজ যদি না হতো আমার পড়াশুনা কি হত আমি জানি না। ত্রিপুরার নদী জল মাটি আইনশৃঙ্খলা আমাকে আকর্ষণ করে । নদীটিতে বসত ছিল - নদীকে কেন্দ্র করেই একদা জীবন প্রবাহ এটাই পরবর্তী পরিকল্পনা ।

♦মনন স্রোত =>  নতুন প্রজন্মের কবি,লেখকদের আপনি কি বার্তা দেবেন? 

রঞ্জিত দে => আমাদের জীবনে ভাবনার ভার জানবার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা ছিল। বর্তমানে সেঠা অনেকখানি নেই । তদুপরি আমরা ছিলাম first generation আমাদের মা বাবা জানতেন না সহজ সরল  জীবনবোধ ও ধর্ম । ঈশ্বর ভাবনার জটিলতা ছুড়ে দিল। বর্তমানে নারী সভ্যতা ও সমাজ সভ্যতা আত্মকেন্দ্রিক জীবন ভাবনা অজান্তে মানুষকে গ্রাস করছে। তদুপরি অধিকাংশ হলেন second generation এদের মা বাবা লেখা পড়া জানতেন অনেকের আর্থিক ভাবনা খুবই উচ্চস্তরে। এদের জন্য বার্তা দেওয়া  খুব কঠিন তবু বলব, জীবনে আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব হার। খাতায় যে বলা হয়েছে -'সাতেকং শরণং প্রজ'- অর্থাৎ লোভ মোহ হিংসা চলার পথে বাধা সৃষ্টি করে। শুধু পাঠ্য বই থেকে না থেকে নানা গ্রন্থ পড়া উঠিৎ। অবশ্য বলা ঠিক নয় অনেকে পাঠ্য বইও পরে না । নিদিষ্ট খাতা থেকে প্রয়োজনীয় পাঠ গ্রহনেই উচ্চ শিক্ষা সমাপ্ত করে ।

♦মনন স্রোত => আপনি সাব্রুম মহকুমার প্রবীন লোকসংস্কৃতি গবেষক।  সাব্রুমের সাহিত্যচর্চার সংক্ষিপ্ত একটা রূপরেখা জানতে চাই আপনার কাছে।

রঞ্জিত দে => সাব্রুম রাজধানী শহর থেকে সর্বদক্ষিণের একটি মহকুমা। মহকুমার দক্ষিণে ফেনী নদীর ওপাড়ে উত্তরে পার্বত্য  চট্টগ্রাম। এক সময় সরকারী কর্মচারী এই মহকুমারে আসতে চাইতেন না। পথে মনু নদীকে তখন কালাপাইনা নদী বলা হতো। কালাপানি পার হলে যেমন মধ্যযুগীয় লংঘকারে যেমন  ধর্মীয় বাধা নিষেধ ছিল সেই রূপ ভীতিভাব এখানেও তৈরী হতো । তারপর একদিন ত্রিপুরা সরকার লিখিত লোকের স্বল্পতার জন্য এরাজ্য কলকাতা কেন্দ্রিক কিছু শিক্ষিত লোকের শিক্ষতার চাকুরী দিয়ে এরাজ্য আমার সুযোগ করে দেন । তাঁদের মাধ্যমে রাজ্য সংস্কৃতির যে বিকাশে সাহায্য হয় - তেমনি সাহিত্যচর্চার ক্ষেত্রেও আমরা লাভবান হই।
    
এই মহকুমার সাহিত্যচর্চার অন্যতম দিক ছিল রাজ্যের একমাত্র হাই স্কুল সাবরুম রাজ্য একবার সাহিত্য সাময়িকীর প্রকাশ। নতুন লোকদের আত্ম প্রকাশ  ঘটত । কিছু দিন সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতো তারপর রবীন্দ্র জন্মগত বার্ষিকী ছিল ভালো যোগ্য দিন-  নাট্যচর্চা ও স্বল্প পরিসর হলেও সাহিত্যচর্চা হতো ।

বর্তমানে আগরতলা বইমেলা আয়োজনে  এই ক্ষুদ্র মহকুমার বহু লেখক অশোকানন্দ রায়বর্ধন  , তিমিরবরণ চাকমা, বিজন বোস,  জয় দেবনাথ, বীরেন দাস , সাচীরাম মানিক, ক্রায়রী মগ,ড.রঞ্জিত দে, দুলালাশীল প্রমুখ।
 
সাময়িক পত্র প্রকাশ করেন সঞ্জীব   দে। তাঁর প্রকাশিত পত্রিকা 'বিজয়া' খুব সুনামের সঙ্গে সাবরুমে প্রকাশিত হচ্ছে । এছাড়া ড.রঞ্জিত দে সম্পাদিত অবিরাজীত সাময়িকীর লোকসংস্কৃতি দীর্ঘ সময় ধরে ফলে আসছে। সম্প্রতি হরিনা থেকে কবি বিজন বসুর সম্পাদনায়  " মনু থেকে ফেনী " প্রকাশিত হয়েছে এবং পাঠক মহলে খুব সাড়া ফেলে । বিভিন্ন বিদ্যালয়ে এবং পূজা উপলক্ষে বিভিন্ন সংস্থা এবং ক্লাবের পক্ষে প্রতিবছর সাময়িকী প্রকাশিত হয় । যা বর্তমানে প্রজন্মের বিশাল সাহিত্যে সম্পদ ও তাঁদের সাহিত্য চর্চাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ।

♦মনন স্রোত =>  মনন স্রোতকে আপনি কি পরার্মশ দেবেন?

রঞ্জিত দে => মননস্রোত এর কম সম্ভবত আধুনিক প্রযুক্তির সর্বশেষ ব্যবহার। অন্তত ত্রিপুরা রাজ্যে। পত্রিকাটি শুধু সাবরুম মহকুমার নয় ত্রিপুরাবাসীর গৌরব বহন করে একাদশ সংস্থা প্রকাশ করেছে । গ্রামীণ জনপদকে অতিক্রম করে রাজ্যের বহু এবং দেশ বিদেশের লেখক লেখিকা এই পত্রিকায় তাদের আবির্ভাব বা গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করেছেন । এই ধরনের পত্রিকা নিঃসন্দেহে অভিনব। আমি  অভিনন্দন জানাই মননস্রোত ডট কমের সাম্মানিত এডিটর জয় দেবনাথ যাঁর পরিশ্রম ও মাটি ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রতিনিয়ত লেখি প্রকাশ করে যাচ্ছেন।

আমি মনে করি মানুষের প্রতি ভালবাসা দায়বদ্ধতা সৌন্দর্য সৃষ্টি এবং যেকোনো সৃষ্টির মূলকথা  বা শক্তির উৎস।পত্রিকায় বিভিন্ন বিভাগ ও নতুন দৃষ্টি ভঙ্গি পরিচয় - পত্রিকাতে সকলের প্রতিনিয়ত  গ্রহন যোগ্য করে তুলছে। সহৃদয় ও সম্মানিত পাঠকে অনুরোধ লেখার সম্পর্কে তাদের সুচিন্তিত ও গঠনমূলক আলোচনা  প্রেরণ করতে। পত্রিকার দীর্ঘায়ু কামনা করছি -বিস্তৃতি কামনা করছি ।

♦ মনন স্রোত => আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আমরা আপনার দীর্ঘস্থায়ী সুস্থতা কামনা করছি।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...