Friday, March 29, 2019

মুখোমুখি : চৈতন্য ফকির

"প্রত্যেক কবিই তো একা।একাকিত্ব এক ভীষন রকম অসুখ।অসুস্থ আমরা কবিতায় লিখি পরিবর্তনের মন্ত্র।"
~ চৈতন্য ফকির

ত্রিপুরা রাজ্যের প্রকাশনা জগতের এক সুপরিচিত নাম গোবিন্দ ধর। স্রোত প্রকাশনার প্রকাশক। একটি লিটল ম্যাগাজিন থেকে গড়ে তুলেছেন একটি জনপ্রিয় প্রকাশনা।  তিনি নিজেকে নির্মান শ্রমিক বলতে বেশী সাবলীল। মনন স্রোতের সাক্ষাৎকার বিভাগে মিলিত হয়েছেন স্রোত প্রকাশনার কর্ণধার তথা ত্রিপুরার সাহিত্য জগতের এক সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব চৈতন্য ফকির।

|| মনন স্রোতের মুখোমুখি চৈতন্য ফকির || 

♦ মনন স্রোত => আপনি বাংলা সাহিত্যের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আপনার সংক্ষেপে বেড়ে উঠার গল্পটা যদি বলতেন!

চৈতন্য ফকির =>ছোটবেলা থেকেই মনে হতো লেখতে পারবো।হতো না।তাও লেখতাম।যা পড়তাম মনে হতো আমিও পারবো।তারপর কত আঁকিবুঁকি। কত পাতায় লেখতে লেখতে একদিন দৈনিক সংবাদের ছোটদের পাতায় পাঠিয়ে দিলাম আমার প্রথম লেখাটি।তাও ১৯৯১ সাল।ছাপা হলো।প্রকাশিত লেখা দেখে আরো আরো উন্মাদনা।তারপর থেকেই পুরোদমে লেখালেখিতে প্রবেশ।এখনো প্রতিদিনই একটু আধটু চেষ্টা করি।হয়তো লেখা হয়।হয়তো নয়।তবুও লেখা আমাকে ছাড়েনি।এ এক অসুখ। সাধনা।সিদ্ধলাভ কঠিন।তৈরী করতে প্রচুর শ্রম, অধ্যয়ন আর একাগ্রতা প্রয়োজন।লেগে থাকা জরুরী।যাপনের মাঝে থাকতে পারলেই একদিন হয়।হবেই। আমার বিশ্বাস জন্মগত প্রতিভার পাশাপাশি একজন লেখকের সাধনাই আসল।যাপনই আসল।যে যত যাপন প্রক্রিয়ায় থাকবে সে তত শক্তিশালী লেখক  হতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।আমি তত গুরুত্বপূর্ণ কেউ নয়।চেষ্টা করি মাত্র। রাতাছড়া থেকে তখন ১৯৯৫ সালে লিটল ম্যাগাজিন স্রোত প্রকাশ করতেও শুরু করি।

♦ মনন স্রোত => আপনার সাহিত্যচর্চায় আগ্রহ ও প্রবেশ কালটা কবে?

চৈতন্য ফকির =>১৯৯১।মূলত লেখালেখি চর্চা চলছিলো ছোটকাল থেকেই।সাহিত্যের পাতায় ১৯৯১ সালে প্রথম প্রকাশিত হয় কবিতা।

♦মনন স্রোত => আপনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা কোথায় গ্রহন করেছেন?

চৈতন্য ফকির =>রাতাছড়ায়।আমার বেড়ে উঠা গ্রাম।এখানেই স্কুল।এখানেই স্কুলবেলা।প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বলতে এখান থেকেই শুরু।তারপর কাঞ্চনবাড়ি-১৯৯০-৯২।ফটিকরায় ১৯৯৩ সালে।এটুকুই।

♦মনন স্রোত => বর্তমান সময়ে বাংলা সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে যদি কিছু বলতেন।

চৈতন্য ফকির => কঠিন প্রশ্ন।এই স্বল্প পরিসরে কতটুকু বলা যায়?তাও বলি ত্রিপুরার বাংলাসাহিত্য এক উল্লেখযোগ্য অবস্থানে আশিন।আমাদের চর্চা নিয়ত ভিন্নমাত্রার সংযোজন করে যাচ্ছে। উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, কবিতা,নাটক সবই আমাদের সমৃদ্ধ। আমাদের আছে ভিন্ন এক স্বর। যা উত্তর পূর্বাঞ্চলেরই মাটির ভাষায় লেখা হয়।এই জল হাওয়ায় আমাদের সাহিত্য রচনায় লেখক কবিরা নিয়ত তাদের সেরাটা তুলে দিচ্ছেন। প্রতিবছর আমাদের ত্রিপুরা থেকে ৪০০-৫০০বই প্রকাশ হয়।ত্রিপুরার বাইরের বইও ত্রিপুরা থেকে প্রকাশিত হয়।বাংলাদেশ কলকাতাসহ গোটা বাংলা ভাষাভাষীদের সাহিত্যের প্রকাশ ত্রিপুরা থেকে হয়।আশার কথা হলো আমরা বাংলাসাহিত্যকে নতুন এক ভাষায় উপহার দিচ্ছি এই অঞ্চলের বই প্রকাশ লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের মাধ্যমে।আমাদের নিয়ন্তর এই চর্চা ঋদ্ধ করছে বাংলা সাহিত্যকে।মনে হয় বাংলাসাহিত্য বাঁক নিচ্ছে। আর এই বাঁকের সফল নির্মান শ্রমিকরা আমাদের ত্রিপুরায়।ত্রিপুরাই পথ দেখাবে বাংলা সাহিত্যকে।

♦মনন স্রোত =>  আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই আপনার কাছে, কবি সম্মেলন হয় কিন্তু লেখক সম্মেলন হয়না কেন?

চৈতন্য ফকির =>   কবিদের প্রকাশ কবিতায়।কবি সম্মেলনে তো কবিতাই পাঠ হয়।এতে কম সময়ে বেশ কয়েকজনকে আমরা পাই।লেখক সম্মেলন করতে হলে কয়েকদিন ধরে করতে হবে।হয়তো সেজন্যে লেখক সম্মেলনের ততটা ঝুঁকি নেওয়া হয় কম।যদিও সাহিত্য উৎসব বলে লেখক সম্মেলনই হয়।হয়তো তা আরো ব্যাপক করে করা দরকার।হয় না এই অভিযোগ ততটা সত্য নয়।

♦মনন স্রোত =>  আপনার পরবর্তীতে কি কি পরিকল্পনা আছে?

চৈতন্য ফকির =>অসংখ্য পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খায়।তার অর্ধেক আমি প্রকাশ করি।অর্ধেক আমার মাঝেই মৃত্যু ঘটে।তার অর্ধেক থেকে অধিকাংশ আমার কখনোই করা হয় না।তা থেকে অর্ধেক করার চেষ্টা করি।
স্রোত আমার যা স্বপ্ন।স্রোত সাহিত্য পত্রিকা ও প্রকাশনার পঁচিশ বছর।রজতজয়ন্তী বর্ষ উদযাপন করার পরিকল্পনা। রজতজয়ন্তীতে উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন মহোদয় আসবেন।আমরা এই অনুষ্ঠান করবো ২৫ শে মে ২০১৯।এরই অঙ্গ হিসেবে আমরা বিশ্ব কবিতা দিবস ও বসন্ত উৎসব,শুদ্ধ উচ্চারণ ও আবৃত্তি উৎসব করতে চলেছি।তাছাড়া অনেকগুলো নতুন নতুন বই প্রকাশের ভাবনা তো আছেই।আমাদের পরিকল্পনায় আছে সারা ত্রিপুরাসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের পাঠকের নিকট স্রোতকে নিয়ে যাওয়া।
আমরা বিশ্বাস করি পাঠক প্রকাশনায় বই কিনতে আসবেন এমন নয়।বরং পাঠকের নিকটই বই নিয়ে যাবেন প্রকাশক।এই লক্ষে আমাদের একটি বন্ধু দল ঠিক করতে আমরা বদ্ধ পরিকর।

♦মনন স্রোত =>  নতুন প্রজন্মের কবি,লেখকদের আপনি কি বার্তা দেবেন?

চৈতন্য ফকির =>  প্রত্যেক কবিই তো একা।একাকিত্ব এক ভীষন রকম অসুখ।অসুস্থ আমরা কবিতায় লিখি পরিবর্তনের মন্ত্র। কবি মিলনকান্তি দত্ত ঠিকই বলেন:"সৃষ্টিশীল মানুষের কাছে একাকিত্ব মানে একটা সৌন্দর্য, অবকাশ,নিজের কাছে নিজেকে একান্ত করে পাওয়ার এক আত্মরতি। একাকিত্ব সবসময় অসুস্থতা বোঝায় না। তা পরবর্তী যৌথ খামারের প্রস্তুতিও।"সত্যি কবির একাকিত্ব মানে সাধনাই।কবিরাই কবিতায় লেখেন মন্ত্র। সন্ত কবি মিলনকান্তি বলেছেন,কবিতা তো মন্ত্রই।তিনিও তাঁর কবিতাকে মন্ত্রই বলেন। প্রতিটি কবিতাই তো মন্ত্র।বেদ উপনিষদ চর্যায় লেখা সব আসলে মন্ত্র মানে কবিতা।আসলে সব মন্ত্রই সুস্থতার নিদান দেয়।
সুতরাং লেখক কবিরা সাধনা করে যেতেই হবে।সারাক্ষন যাপন প্রক্রিয়ায় থাকাটা খুবই দরকার।

♦মনন স্রোত => আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। খুব ভালো থাকুন।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...