Saturday, September 12, 2020

মনন স্রোতের বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি

সম্পাদকীয়

কঠিন সময়ের উপর কঠিনতর আঘাত এসে আমাদের অভিভাবক হারা করে দিয়েছে। চলে গেলেন রাজ্যের বিখ্যাত সাহিত্যিক ও আমাদের অভিভাবক শ্রদ্ধেয়া অপরাজিতা রায়। আমরা নিদারুণভাবে ক্ষতির সম্মুখীন। এই অপূরণীয় ক্ষতি আমাদের সর্বাবস্থায় কাতর করে তোলে।

এই কঠিন সময়ে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যা প্রকাশ করা আমাদের জন্য কঠিন। ভুলত্রুটির সকল দায়ভার আমার। সবশেষে যারা মনন স্রোতের এই সংখ্যাকে সমৃদ্ধ করেছেন, সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আগমনী বয়ে আনুক শীতলতম কল্যাণ। সুখ এবং মানসিক সমৃদ্ধি।

চরৈবেতি চরৈবেতি।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

আগমনী বয়ে আনুক সুখ শান্তি এবং সমৃদ্ধি || মনন স্রোত || ত্রিপুরা

ছবিতে মনন স্রোত মডেল শিল্পী সুমন || ক্যামেরায় ত্রিপুরার চিত্রগ্রাহক পুষ্পেন্দু ঘোষ || The Divine Capture || Fb Link https://www.facebook.com/tinas.hearth

সজীব পাল (ধারাবাহিক)

সেদিন সে এসেছিল  
পর্ব ৩

চারিদিক নিস্তব্ধ ।কেউ কোনো কথা বলছে না।সবিতার মুখোমুখি বসে আছে নীপা ।পাংশু ও শুষ্ক মুখ দুজনের।এক ঘন্টা হবে সৌরাংশ বাবুকে বেডে এনেছে ।ডাক্তার বলেছে এক দুই ঘন্টা লাগবে জ্ঞান ফিরতে।নীপা সবিতাকে বলল," বাবার হঠাৎ এমন হলো কি করে ?"

সবিতা শান্ত এবং মৃদু কণ্ঠে বলল " দুপুরে একটা রঙ নাম্বারে কল আসে এবং বলে দুই লাখ টাকা না দিলে চুরির অপবাদের কেসটা হারিয়ে দেবে ।উকিল জর্জ নাকি সব তার হাতে ।"

" কে লোকটা বাবা চিনতে পারেনি?"

" কণ্ঠটা নাকি অফিসের পরিচিত কারোর ।তারপর ঘামতে থাকে ,আমাকে ডাক দিয়ে এইসব বলতে বলতে সোফার মধ্যেই পড়ে যায় ।"

নীপা আর কোনো কথা না বলে বাবার রুমে উঁকি দিলো ।একটা গাঁট্টাগোট্টা লোক সাদা বেডের উপর শুয়ে আছে অনড়।দেখতে অসহায় মানুষের মতো লাগছে।জঙ্গলের বড়ো গাছটা যখন কাঁটা হয় তখন ওই জঙ্গলের শোভা যেমন বিনষ্ট হয় তেমনি এখন সবিতা ও নীপার মানসিক অবস্থা । বাবার পাশে এসে বসল সে ।হাতটা আলতোভাবে ধরল । তার এখন বিকট শব্দে কাঁদতে ইচ্ছে করছে ।কিন্তু পাশে একজন নার্স দাঁড়িয়ে,চিৎকার করলেই কথা শুনিয়ে বের করে দেবে।শব্দকে আটকানো যায় জলকে না ।তার চোখ ভিজে গেছে ।বাবাকে সে খুব ভালোবাসে।পেছন পেছন সবিতাও এসেছে ।মেয়ের চোখের জল সবিতা দেখে কাঁধে হাত দিয়ে শক্ত হতে বলে।অথচ সে নিজেই অনেক ভেঙে পড়েছে ।

সৌরাংশ বাবুর জ্ঞান ফিরে সকাল নয়টায়।ঘুম ভাঙার পর থেকেই প্রচন্ড বুক ব্যথা ।ডাক্তার ইনজেকশন দিয়ে গেছে কিন্তু ব্যথার কোনো পরিবর্তন নেই ।সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।সে কখন থেকে ছটফট করছে ।নীপা সারারাত কিছুই খায়নি ।কেবল সবিতা আর সে দুইকাপ চা খেয়েছিল বিস্কুট দিয়ে।সে এখন বাইরে দোকানে টিফিন করতে গেছে।এবং সে আসলে সবিতা যাবে।
সবিতা একা বসে আছে সৌরাংশ বাবুর সামনে ।
সবিতা মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে জিজ্ঞেস করল ," খুব কষ্ট হচ্ছে তোমার ?"

" আহা! ডাক্তারকে একটু আসতে বলো না ।আর সহ্য করতে পারছি না ।"

" একটু ধৈর্য্য ধরো ইনজেকশন দিলো ত।ঠিক হবে আস্তে ।"

" কখন ঠিক হবে সবিতা ? সমস্ত শরীর জ্বলে যাচ্ছে ।ঈশ্বর এ কেমন পরীক্ষা তোমার?"


নীপার চোখ উত্তেজিত ।এইটা ভ্রম নাকি সত্যি,কে বোঝাবে তাকে এখন? চোখকে কেন তার এমন অবিশ্বাস হচ্ছে!কেন তার মনে হয় সে এখন ঘোর স্বপ্নে আছে ! সে অনেকক্ষণ চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে ।
সে দোকান থেকে বেরিয়ে দেখলো মনীষ তার সম্মুখ দিয়ে উপেক্ষা করে চলে গেল অপরিচিত লোকের মতো ।তিন চার মাস চুল দাঁড়ি কাটা হয়নি ।তবুও মনীষকে চিনতে তার এতটুকু অসুবিধা হয়নি ।কিন্তু সে তাকে চিনলো না কেন ? সে মনীষের পেছন পেছন হাঁটা শুরু করলো।মনীষ মন্থর গতিতে রোবটের মতো ডাক রোডের উত্তর গলিতে ঢুকলো ।নীপাও তাকে লক্ষ্য করে এগোচ্ছে।এইদিকটায় লোকের তেমন যাতায়াত না থাকলেও মালবাহী কিছু টমটম এবং রিক্সা চলাচল করে।নীপা এই রাস্তায় একেবারে নতুন বলে সামনে কি আছে সে জানে না।মনীষ সামনে একটা ফলের দোকানের সামনে দাঁড়ালো ।নীপাও তার থেকে দশ পনেরো হাত পিছে দাঁড়িয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পাশের বড়ো বড়ো বিল্ডিং এর দিকে তাকাচ্ছে,মনীষের চোখকে এড়াবার জন্য।অবশ্য মনীষ কিন্তু একবারের জন্যও পিছনে চোখ বুলায়নি ।মনীষ কিছু ফল কিনে ডান দিকের মেইন রোডের দিকে হাঁটা শুরু করলো।
নীপার কি এখন মনীষকে ডাক দেওয়া উচিত ? হয়তো সে তাকে তখন সত্যি সত্যি দেখতে পায়নি ।সে একটা দ্রুত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে ।একবার ডাক দিতে গিয়ে আবার চিন্তা করল দেখা যাক না কোথায় যায় !
মনীষ অটোতে ওঠে গেল ।ড্রাইভারকে কোথায় যেতে নির্দেশ করেছে সে শুনতে পায়নি ।এতটা দূর থেকে শোনার কথাও না ।কাজেই তাকে এখন ফলো করা ছাড়া দ্বিতীয় পন্থা নেই।কিন্তু ওই দিকে বাবার অবস্থা কেমন তা তো জানা দরকার!মা একা একা সামলাতে পারবে না।শুধু শুধু একটা মানুষের জন্য কেন সে সারা শহর ঘুরবে ! একটা পরপুরুষের জন্য সে এমন উতলা হচ্ছে কেন ?তার সাথে তো কয়েক মাসের পরিচয় মাত্র! এমন দুর্বার আকর্ষণ কেন তার প্রতি ! সে তো এই জীবনের কেউ নয় ! 
নীপাও অন্য একটা অটোতে ওঠে গেল ।এবং মনীষের অটোটাকে ফলো করতে বলল।
অটো থামলো একটা বিরাট জলে ভরাট পুকুরের পাশে ।পুকুরে অনেকগুলো হাঁস সারিবদ্ধভাবে এইপাড় থেকে ওপাড়ে যাচ্ছে।নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের মধ্যে শৃঙ্খলা খুব সুন্দর ।এরা উচ্চশ্রেণী কোনো জীব দ্বারা বাঁধা না পেলে নিজেদের আইনশৃঙ্খলা কখনো লঙ্ঘন করে না।পুকুরের ঘাট অদ্ভুতভাবে বাঁধানো ।প্রথমে কয়েকটা সিঁড়ি,তারপর জল ডুবা সিঁড়ি ।এর পরে আবার ভাসা সিঁড়ি ।বেশ চমত্কার লাগছে দেখতে ।বোঝাই যাচ্ছে শৌখিন ব্যক্তিদের কাজ । বারো চৌদ্দ বছরের দুইটা ছেলে জলে সাঁতার কাটছে বেশ আমোদ করেই।যেন এইটাই এদের চরম সুখ।নীপা কি গভীর উৎসুক নিয়ে দেখছিল এই মনোজ্ঞ দৃশ্য ।তার মনোসংযোগ ভাঙলো ড্রাইভারের প্রশ্নে।ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো, ম্যাডাম এখন কি করব?
নীপা ড্রাইভারের প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মনীষের অটোটাকে খুঁজতে লাগলো চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ।ড্রাইভার আবার বলল,ম্যাডাম কি খুঁজছেন?

" যাকে ফলো করছিলে সে অটোটা কোথায় ?"

" সেটা তো অনেকক্ষণ আগেই চলে গেছে !"

"চলে গেছে মানে কি !তোমাকে না বললাম ওই অটোটাকে ফলো করতে ?"

"ম্যাডাম ওই অটো থেকে একজন লোক নামার পর খালি অটো ফিরে গেছে ।আপনে নিশ্চয়ই লোকটাকে ফলো করতে বলেছেন ।ওই লোকটা তো নেমে ওই সামনের কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাঁটা শুরু করলো ।ওই রাস্তায় গাড়ি চালানো সম্ভব নয়।সকালে বোধ হয় প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়েছে ।এইবছর যা বৃষ্টি হচ্ছে ।তাই এখানে দাঁড়িয়ে আছি ।ভাবলাম আপনে বুঝি নজর রাখছেন ।"

নীপা লোকটার বুদ্ধি দেখে বিস্মিত ।কেমন দক্ষ স্পাই এর মতো গড় গড় কথা বলতে লাগলো ।কিন্তু এইসব লোকদের প্রশ্রয় দেয়া ঠিক না ।প্রসঙ্গ পাল্টে নীপা বলল," বৃষ্টি হয়েচে মানে কি !সকালে তো বেশ রোদই ছিল ।"

" ম্যাডাম আমরা শহর ছেড়ে অনেকটা দূরে একটা গ্রামে এসে পড়েছি।দেখেন না ছেলেরা কেমনে জলে ডুবাডুবি করছে! শহরের ছেলেরা তো সাঁতার জানে না ।"

পুকুর হাঁস দেখে নীপার বোঝা উচিত ছিল।সে একটু লজ্জা পেলো।তার বুদ্ধি তার সঙ্গ দিচ্ছে না সে টের পাচ্ছে।মোবাইলে সময় দেখলো,প্রায় পনে এগারোটা ।," আচ্ছা আমরা এখন কোথায় আছি ?"

ড্রাইভার ঠোঁটচেপে বিজ্ঞের হাসি হাসলো।,"আমরা হাঁপানিয়ার কাছে একটা গ্রামের ভেতর ।"

" আচ্ছা ঠিক আছে তুমি এখন যাও।"

নীপা ড্রাইভারের ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে ওই পথ ধরে হাঁটছে।ড্রাইভারটি এখনো কৌতূহলী বড়ো বড়ো চোখ নিয়ে ভ্যাবাচ্যাকার মতো চেয়ে আছে।তার সঃন্দেহ নীপা কোনো আইনের লোক।তা না হলে একটা মেয়ে মানুষ শুধু শুধু পুরুষ মানুষকে কেন ফলো করবে !সে অটো থেকে নেমে অনেকক্ষণ সময় নিয়ে সিগারেট টানলো।

নীপা অনেকক্ষণ হাঁটার পর ছোট একটা শিবমন্দিরের পাশে মনীষকে দেখতে পেলো ।অদ্ভুত ভঙ্গিতে সুখদুঃখবোধ এবং চেতনাহীন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।নীপা ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে তার দিকে। আর ভেতরে ভেতরে কাজ করছে এক আশ্চর্য ভয়।হারানোর ভয়!কি হারাতে পারে তার ! কিন্তু তার সমস্ত সংশয় দ্বিধাকে দূরীভূত করে দিলো মনীষ।যদিও সেটা মূহুর্তের জন্য।আর মূহুর্তের সুখটাই মানুষের জীবনে বিরাট রেখাপাত সৃষ্টি করে।
মনীষ স্বাভাবিক ভাবে নীপাকে বলল," আসুন,কেমন আছেন আপনে?"

নীপা একটু অবাক বটে তবে সে ভেবেছে দীর্ঘদিন দেখা সাক্ষ্যাত না থাকার কারণে তুমি থেকে আবার আপনেতে উঠেছে ।
" ভালো,তুমি কেমন আছো মনীষ ?

" ভালো।"

" তুমি এখানে কেন ?"
মনীষ কথার জবাব দিলো না ।চোখমুখ স্থির করে আগের মতো দাঁড়িয়ে আছে ।নীপা আবার বলল," তোমার সাথে বলতে চাই ।"
স্বাভাবিকভাবেই বলল,"আসুন ভেতরে আসুন ।"

একটা বাসের তরজার বেড়া এবং টিনের ছাউনি দেওয়া একটা ঘরে গেল মনীষের পেছন পেছন।সারাঘর অগোছালো।যেখানে কাপড় থাকার কথা সেখানে কাপড় নেই ।তা দলামুছা করে চৌকিতে রাখা।জলের কলসির পাশে রাখা বৈদ্যুতিক চুলা ।এবং তার উপর ছোট একটা ডেকচি।
নীপা বসেছে চৌকির একটা কোণে।তার সামনেই একটা ভাঙা চেয়ারে বসেছে মনীষ।"এতদিন ধরে এখানে পরে আছো কেন ?"নীপাই আগে বলল।
মনীষ না বোঝার মতো ভ্রু কুঁচকে বিস্ময় প্রকাশ করে বলল," কি বলছেন আপনে!"
" তুমি অফিস ছেড়ে ভাড়া বাড়ি ছেড়ে এমন একটা নির্জন কুৎসিত গ্রামে কেন পড়ে আছো?আর এমন এক্সপ্রেসশেন করছ যেন তুমি আমাকে চেনো না! অনন্তকাল ধরে এই জায়গায় বাস করছ ?"
নীপাকে অবাক করে মনীষ বলল ," কিছু মনে করবেন না আমি আপনাকে সত্যি চিনতে পারছি না।সেই কখন ডাক রোড থেকে দেখছি আপনে আমার পিছু নিচ্ছেন।তাই ভাবলাম আপনার বোধহয় আমাকে প্রয়োজন।"
কথা শুনে নীপার হাত পা কঠিন হয়ে আসছে ।এই কি বলছে পাগলের মতো ।কেউ কাউকে প্রয়োজনে চোখের সামনে রেখে ফলো করে আবার ! সে কি সত্যি তাকে চিনতে পারছে না নাকি ! " আমি নীপা মনীষ ।আমরা একসাথে অফিসে কাজ করতাম ।কিন্তু তুমি হঠাৎ করে পাক্কা তিন মাস বিনা নোটিসে লাপাত্তা হয়ে গেলে।আমরা ভেবেছি তুমি বুঝি বাড়ি গিয়েছ ।কিন্তু খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেল সেখানেও নেই।দারুণ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লাম সবাই।এখন তোমার নাটকীয়তা থামিয়ে একটু স্বাভাবিক হও ।"
মনীষের কপালে ভাঁজ পড়ল ভ্রু কুঁচকাতে গিয়ে ।চেহারায় কেমন যেন একটা কাঠিন্য ভাব চলে এসেছে।কালো কালো দাঁড়ি গোঁফের মাঝেও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে মেয়েদের মতো তার অধর কাঁপছে ।কি রকম একটা অস্বস্তি বোধ করছে।নীপা লক্ষ্য করল এই তার স্বভাবে নতুন যুক্ত হয়েছে ।কাঠিন্যতার মধ্যেও কিরকম শিশু শিশু ভাব আছে ।কিন্তু এইটা স্পষ্ট নয়।দেখতে মায়া মায়া লাগছে।
মনীষ অপরাধীর মতো বলল," আমি সত্যি বলছি, আপনাকে চিনতে পারছি না!বিশ্বাস করুণ আমাকে !"
" তুমি এইভাবে কথা বলছ কেন?"
" আপনে তো আমার কথা বিশ্বাসই করছেন না ।আর পৃথিবীতে মিথ্যে অবিশ্বাসের আগুনের মতো উত্তপ্ত এবং পীড়াদায়ক আর কিছু নেই ।জানেন এইখানে কেউ আমাকে বিশ্বাস করতে চায় না ।সবাই বলে আমি নাকি কি একটা ফন্দি ফিকির করতে এসেছি ।"
" সত্যি তোমার পূর্বের কোনো স্মৃতি মনে নেই ?"

" এখানে সত্যি মিথ্যে আসছে কোত্থেকে!"

" ঠিক আছে তোমার কিছু মনে করতে হবে না ,চলো আমার সাথে আমাদের বাসায়।"

মনীষ বিরক্তি সুরে বলল," আচ্ছা মানুষ তো আপনে ! জান তো আপনে এখান থেকে আমার কাজ আছে ।"
নীপা ভীষন আহত হলো।মনীষ কখনো এইরকম ছিল না ।তবে কি সে মানসিকভাবে অসুস্থ! যদি তা হয় তাহলে তো তাকে এখানে ফেলে রাখা কোনো মানে হয় না।কি করবে সে বুঝতে না পেরে আর কোনো কথা না বলে বেড়িয়ে পড়ল।এই বিষন্ন হৃদয় নিয়ে তার আর কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই।রাস্তায় নেমে সে কোনো গাড়ি না থামিয়ে নিঃসঙ্গ পাখির মতো হাঁটছে।
হাঁটতে হাঁটতে সে আকাশ পাতাল চিন্তা করেও খোঁজে পারছে না মনীষের প্রতি এত আবেগের কারণ।পাশ দিয়ে একটা বড়ো ট্রাক চলে গেছে ।আর একটু হলে ছিটকে পড়ত ।কিন্তু সেদিকে তার ভাবান্তর নেই।সে অন্যমনস্ক হয়ে হেঁটেই যাচ্ছে।কে জানে হয়তো পরের আরেকটা গাড়ি এসে তাকে রক্তাক্ত না করে দেয় ।

রূপালী মান্না

টিনিয়া

টিনিয়া সমানে বায়না করে চলল এখান থেকে সে জামা নেবে না । ওপারের শপিং মল থেকে লাল পরী নীল পরী জামা চাই ।   বান্ধবী অদ্রিজা ওই শপিং মল থেকে পরী জামা কিনেছে । ওরকমই চাই !
বিমল হাসপাতালের সাফাই কর্মী । শপিং মলে নিয়ে গিয়ে ওরকম দামী জামা কিনে দেওয়ার সামর্থ্য কোথায় ? অথচ মেয়ের সেই এক বায়না , রীতিমতো
 ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে শুরু করেছে ।

একটা ন্যানো হঠাত্‍ ফুটপাতের গা বেয়ে যেতেই জল ছিটকে জামা কাপড়ে লাগে । জামাওয়ালী তো 
চেঁঁচিয়ে ওঠে । গাড়ির ভদ্রলোক বলে 'স্টপ দ্য কার'
গাড়িটা থামাও , একটু দেখে চালাবে তো !
না জানি বেচারার কত ক্ষতি হয়ে গেল !

গাড়ি থেকে ভদ্রলোক নামতেই ' ডাক্তার বাবু যে '
ব'লে সেলাম ঠুকলো বিমল । ডাক্তারবাবু বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের  নামকরা সাইকিআর্টিস্ট ।
মানবিক বোধে সমৃদ্ধ ডাক্তারবাবু জামাওয়ালী কে  ক্ষমা চেয়ে  বললেন আমার ড্রাইভার এরকম গাড়ি চালায় না কখনো ,আসলে ওর মা অসুস্থ তাই একটু টেনশনে আছে ।  যাইহোক ,তোমাকে ক্ষতিপূরণ দিতে চাই , কত দেবো বলো ? জামাওয়ালী বলল কয়েক টা জামা সামান্য একটু ভিজেচে , তেমন ক্ষতি হয়নি , যা দেবেন দ্যান ।

মানি ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে বিমলের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে বললেন এটা বিমলের মেয়ে নাকি? বিমল হাসিমুখে নতস্বরে বলল হ্যাঁ ডাক্তারবাবু,
ওই পুজোর জামা কিনতে এসেছি আরকি । 
ডাক্তারবাবু বললেন তা জামা পছন্দ হলো মহারানীর ?
জামাওয়ালী কে বললেন বিমলের মেয়ের জামার 
দামটাও নিয়ে নাও ।
বিমল বলে থাক না ডাক্তারবাবু ! 
টিনিয়ার কান্না ততক্ষনে থেমে গেছে । 

জামাওয়ালী বলে উঠলো ওর কথা বাদ দিন সার , সেই থেকে পাগল করে মারচে , বাপরে বাপ ! কি একগুঁয়ে মেয়ে , উনি এসব জামা নেবেন না পরী জামা নেবেন ছপিং মল থেকে । বাপের ক্ষেমতা  নেই সেটা বোঝে না মেয়ে ! 
বিমল মাথা নত করে মৃদু হাসলো । ডাক্তারবাবু বললেন এই কথা ? পরী জামা নেবে ? আচ্ছা চলো আমি কিনে দিচ্ছি , চলো  বিমল ।
ডাক্তারবাবু টিনিয়া কে বললেন  তবে জানো কি মা ?এমন বায়না করতে নেই যাতে মা বাবা কষ্ট পায় ,
পুজোর দিনে খুশি টাই আসল । 
এসো বিমল এসো , দেরী করো না ।

টিনিয়া হঠাত্‍ বাবার জামা টা টেনে ধরে বললো বাবা আমি যাবো না । ডাক্তারবাবু পিছন ঘুরে বললেন কেন? আমার দেওয়া জামা তুমি নেবে না ? 
  বছর দশেকের  টিনিয়া হাসিমুখে বললো , রাগ করবেন না ডাক্তারবাবু আমি আপনার দেওয়া জামা নিতে পারব না তবে আপনার দেওয়া শিক্ষাটা নিলাম ।  'এমন বায়না করতে নেই যাতে মা বাবার কষ্ট হয় , পুজোর দিনে খুশিটাই আসল । '


দূর হতে আগমনীর গান ভেসে আসছে "বাজলো তোমার আলোর বেণু ".............
বাবার দিকে চেয়ে টিনিয়া বলে,বাবা আমায় এখান থেকেই জামা কিনে দাও তোমার পয়সা দিয়ে  । ডাক্তারবাবু হাসতে হাসতে গাড়ি তে উঠে গেলেন ।
হাসিমুখে জামাওয়ালী জিজ্ঞাসা করলো লালটা না হলুদটা ? 

পিয়াল দেবনাথ

প্রত্যাগমন

আজ স্বচক্ষে অসুর দেখেছি,
বিনাশের দুন্দুভি শুনেছি।
অস্ত্রধারী নয়,দীর্ঘকায় নয়,
সে আজ এক মানুষ খেকো মহামারী।
রক্তবীজের উপদ্রবে
দেবীর আগমন নিশ্চিত - ইতিহাস সাক্ষী।
লক্ষাধিক নিরিহের রক্তে রঙিন দস্যুর
অন্ত নিশ্চিত - ইতিহাস সাক্ষী।

মুখোশের তলে জর্জরিত নিশ্বাস
আজ শিউলীর ঘ্রাণ চায়।
দেওয়াল বন্দি স্থবির সংসার
আজ দৌড়ে গিয়ে আকাশ ছুঁতে চায়।

ঢাকের আওয়াজ কি ইতি টানবে
অভিশপ্ত বায়বীয় আতঙ্কের ?
ব্যার্থ আশাহীন দিগন্তে কি
আগমন হবে প্রত্যাশার নতুন কিরণ ?
এই শারদীয়ায় কাশফুলের তরঙ্গে
উৎসাহের আগমনী হোক।
স্মৃতির বহমান নদে
রক্তবীজের বিসর্জন হোক।

অদিতি সাহা

আসছে ভবানী

স্নিগ্ধ শীতল শরৎ পবন,
মাতালো যখন এই ভুবন,
শিশিরে শিশিরে সিক্ত ঘাসে,
রাঙা পায়ে পদ্ম-পলাশে:
ধবল মেঘে নীল গগনে
মাঠে ঘাটে ছুটে কাশবনে,
আঙিনা ভরা পুষ্প কাননে
ভরিয়ে দিয়ে ভ্রমর গুঞ্জনে,
প্রজাপতির রঙিন পাখায়,
ডালে ডালে পাতায় পাতায়,
কুয়াশা ভরা ভোরের বেলায়,
সুভাষ ছড়িয়ে শিউলি তলায়,
তালপাতার ছোট্ট কুটিরে,
আধার সরিয়ে আলো করে,
আম্রপল্লব,দূর্বাধানে 
নানা পাখির মিষ্টি গানে,
ঢাকুরীয়ার ঢাকের আওয়াজে,
অসুর নাশে দূর্গা সাজে,
শুনিয়ে দিয়ে চিরন্তন বানী,
সিংহবাহনে আসছে ভবানী।

ঝুমা সরকার

মা

মা নামটি ভারী মিষ্টি 
মধুমাখা মহাসৃষ্টি।

মায়ের মাঝে ভালোবাসা 
সাগর প্রমাণ অতলতা।

তুমি যে মোর সর্বসুখ
মা নামতে জুড়ায় বুক।

তোমায় ডেকে জুড়ায় অন্তর 
সকল দুঃখ হয় যে দূর।

সুস্মিতা মহাজন

ভয় করে মা

নদীর পাড়ের কাশবনেতে দুলছে কাশফুলেরা,
আকাশেতে পেঁজা তুলোর চলছে যেন খেলা।
শিশির ভেজা ঘাসেতে ঝরছে শিউলিরা,
ভুবনভোলানো গন্ধেতে মোহিত সকল পাড়া।
তোমার আগমনের বার্তা যে মা দিয়ে চলেছো,
তা নিয়ে খুশির চেয়ে মা ভয় জাগছে বেশি। 

এসো না গো মা এই ধরিত্রীতলে,
এসো না এই নরকে!
তুমিও যে নারী মাগো-
তোমায়ও ছিঁড়ে খাবে। 
নর পিশাচের দলেরা যে নারী খুঁজে চলে,
নারীর গন্ধ পেলেই মা মাগো কামড়ে মুচড়ে ধরে। 

সেইদিন একাকিনী আপন মনে ফিরছিলাম বাড়িতে , 
হঠাৎ কেমন আমায় নিয়ে টানাটানি হেঁচড়াহেঁচড়ি শুরু। 
অনেক লড়াই করে মাগো পালালাম নিজেকে বাঁচাতে,
এমনি করে আর কত প্রাণ যাবে মাগো?

ভয়ে যে মা এই দেহমন চায় না এগোতে,
কেমন করে ভুলে যায় মা-
 নারীর গর্ভের নাড়ি ছেঁড়া ধন?
কেমন করে ভুলে যায় মা -
নিজের মায়ের মুখ অমন?
ভয় করে মা ভীষণরকম তোমায় হারিয়ে ফেলার , 
এসো না মা গো তুমি-
এখানে থাকে নর পিশাচের দল!

অনুপম রায়

দাড়ি

গলাকাটা দিন নামে,রূপালি রোদের অপবাদ
নিলামে বিক্রেতা রাত।

'পরিচিত গন্ধ,পরিচিত সুর, 
আগুন জ্বালানো শ্বাস,বুকের বাঁ পাশ।'
সব ছেড়ে শবগুলো জেগে উঠে নিলামে,
চড়া দামে।

এতদিনের গল্প,
এতদিনের জীবন্ত উপন্যাস,
রোজকার অভিনয়ে ডুবে থাকা অভিনেতা
এতদিনের বেঁচে থাকা শ্বাস। আহারে!

আলোকিত কামরায় নীরবতা ডাক দিলে ঘড়ি
ইতি টেনে একবার জীবনেতে পড়ে যায় দাড়ি(।)

রাহুল শীল

নুনজল
          
পুরোনো চাহিদার কাছে মাথানত করে একঝাঁক পাখি,
রাতের আকাশ রাজনৈতিক সমাবেশে রোজ নামে
তারপর তুমিও একগ্লাস জলে নুন মিশিয়ে আনো।

কিন্তু তোমার হাতের এক গ্লাস নুন মিশ্রিত জলে
কবিতার লাইনগুলো ভেসে বেড়ায় মধ্যরাতে।
অভিভাবক কেন সাজো কবিতার কাছে,
ভালোবাসার মত সংস্থা গড়ে উঠেনি তোমার সঙ্গে
তাই আমিও কবিতার কাছে কেঁদে ওঠি।

এভাবেই প্রতিরাতে কবিতার কাছে তুমি প্রিয় হয়ে ওঠো,
দেওয়ালে হেলান দিয়ে শুয়ে শেষ লাইনে গাঢ় নিঃশ্বাস ফেলি রোজ।

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

ঊমা তুই আসিস না


মা ঊমা, আমার লক্ষ্মীটি
কথা শোন মা;
এবার তুই ভুল করেও
এ মুখো হোসনা!
এখানে তোর ভীষণ বিপদরে মা
ভীষণ বিপদ!!
মানুষের সং সাজা এদিকের অশুর
তোর পায়ে চাপা পড়া 
অশুরের চেয়েও নৃশংস!!
এরা তিন মাসের ঊমা থেকে শুরু করে
নব্বইয়ের ঊমাকেও 
লালসার শিকার বানায়!
পরিস্থিতি এতটা দুর্বিষহ
বাপ নিজের ছোট্ট ফুটফুটে
মেয়েটাকেও!
সত্যি কি আজব ব্যাপার,
ভাবা দুঃসাধ্য তাই না?
এরাই কোটি টাকার থিম বানিয়ে
লোক দেখিয়ে তোর পায়ে মাথা ঠেকাবে,
এরপর দশমীর ঘাটে মদ-মাংস গিলে
দুষ্কর্মে ফেরত!
মুখ গোমরা করে থাকিস না মা রে
এদিকের মাটিতে তুইও নিরাপদ নোস!
মা আমার লক্ষ্মীটি এবার তুই আসিস না।

চয়ন ধর

টাকা 

এক টুকরো কাগজের মূল্য তুমি কী বুঝবে ভাই!
যে কাগজে আছে গান্ধীর ছবি ।
সে কাগজ হচ্ছে লক্ষ গুণের চেয়ে দামী!
.
পৃথিবীর বাজারে নাম হচ্ছে টাকা ।
টাকা আছে তাই হবে তুমি রাজা ।
টাকা নেই তাই হবে তুমি প্রজা 
কিংবা সেবক কোনো!
.
আপনজন চিনবে তোমায় টাকার ঘ্রাণে ।
টাকা আছে তুমি ঘুমাবে অট্টালিকায় ।
টাকা নেই তুমি ঘুমবে ফুটপাতে।
টাকা থাকলেই তোমার ঘরে যাবে সুগন্ধী বাসমতি চাল।
টাকা নেই, ঘরে যাবে না রেশনের চালও!
.
টাকা আছে হতে পার তুমি মন্ত্রী ।
টাকা আছে হতে পার তুমি ক্ষমতাবান ।
টাকা নেই ক্ষমতাবানরাও করবে শোষণ মাথায় বসে।
.
এই পৃথিবীটা হচ্ছে টাকার বাজার ।
টাকা দিলে সব পাওয়া যাবে ।
পৃথিবীর সব সম্পর্ক গুলো এখন টাকার গোলাম।
যেন টাকাই কথা বলে । মানুষ না!
.
টাকা থাকলে ভালোবাসবে হাজার জন ।
সম্পর্ক গুলো টিকে থাকার জন্য অর্থ থাকা চাই ।
আমার কথা বিশ্বাস না হলে ,
ট্রাই করে দেখতে পার ভাই।
জীবন বিছিয়ে দিয়ে দেখো, আমার মতো।

সৌরভ শীল

আমিও দূর্গা                    
                             
আগমনীর ডাক  পড়েছে
ভুল বললাম না তো?
আকাশ আজ সাজবে মেঘে
তুলো মেঘের অরূপ সাজে
ঢাকে কাঠি ,নদীর ধারে কাশ ফুটেছে।
সুগন্ধি ফুলটা আজ
ঝরে গেছে।
ঠিক বলছি তো?
শিউলি আজ পচা গন্ধ ছড়ায়
যেন কোন খুবলে খাওয়া পচা দেহ...
মৃণ্ময়ী ঘরের মেয়ে;
রক্ত মাংস দেহ তবু কি থাকবে ভয়ে?
মৃন্ময়ীকে পুজো করো মাতৃ জ্ঞানে
মুখোশধারী ভদ্র তুমি।
কারা বা তোমায় চেনে?
দুর্গা আমি কালি আমি
আমি কিন্তু তোমায় চিনি।


পরিতোষ সরকার

আজ আর মনে পড়ে না

আজ আর মনে পড়ে না তোমার কথা,
অনেকগুলি দায়িত্ব আজ তোমার
ভালোবাসার জায়গাটা আকড়ে ধরেছে।
কেঁড়ে নিয়েছে সব প্রেম আর মোহ!
সমগ্র দিবস কেটে যায় কিছু
বিশৃঙ্খল কাজের নদীতে তলিয়ে।
রাত কাঁটে অগণিত নেশার দ্রবাদি,
আর অগুছালো শয্যার সাথে।
আজ আর তোমার হাত ছোঁয়া হয় না।
তোমার রূপ দেখা হয় না।
আজকাল দিনের শেষে কোনো অঙ্কের
হিসেব তোমার কাছে এসে শেষ হয় না।
জীবনের হিসেবের খাতা ভরে যায় কালো কালিতে,
কিন্তু তোমার রূপের বর্ণনা কোথাও হয় না।
জীবন আজ তোমার কোনো শাসন মানে না,
শাসন চলে আচমকা ধেয়ে আসা কিছু বজ্রাঘাতের।

দিপিকা রায়

মায়ের বরণ

কাশফুলের হওয়ায় ধ্বনিত
নারীর নামেই শুনি মা ডাক;
বছর ঘুরে আবার সাজলো বরণ থালা, 
ঢাকে কাঠি আর কাশর ঘন্টার আগমনী শব্দ; মা আসছেন সেজে। 

নত শিরে দশভূজার চরণ স্পর্শ করেই;
গর্ভের ভ্রুন হত্যা করে কেউ আবার! 
তারাই আবার সাজায় পাঁচথালা, 
মৃত্তিকায় আবরিত মাকে দিতে, 
হায় দশভূজা!

পুষ্প পাপড়ি বিছিয়ে দেয়, 
মা আসবে বলে। 
আর ঘরের মা জঞ্জাল, 
ঠিকানা করে দেয় পথের দ্বারে। 
মায়ের যজ্ঞের তিলক
সজ্জিত হয় ললাট রেখায়।
তারাই দেখ, বধূ নির্যাতনে আহুতি দেয়
ওই যজ্ঞ কুন্ডে। 
সাজলো পাহাড়ে, নদীর ও সাজ ; 
নানা অলঙ্কারে সুরপথ। 
আর এই দিকে, 
বিনা দোষে সেজে উঠে 
কত নারীর কবর। 

তুচ্ছ আর অবহেলায় জ্বলতে থাকে কত নারী,
আবার নারী নামেই, নত চিত্তে সবাই পূজা করি।
হায়!

সঞ্জয় দত্ত

আগমনী শরৎ

আকাশে ছোঁয়া বাতাসে ছোঁয়া,
বার্তা আগমনের।
দুলছে কাশ ফুলের দল,
কত যে আনন্দের।

শরৎ তোমার রুপের ছোঁয়ায়
নির্লজ্জ আমি প্রকৃতির কাছে।
এত রঙ্গ মহিমার মধ্যে যেন
সবকিছু তোমারই আছে।

ভাব লেগেছে দারুন আজ,
পূজার আকিঞ্চনে।
মা আসবে বছর ঘুরে আবার
মন্ডপ প্রাঙ্গণে।

আমি এইভাবে কাটাতে চাই
দেখার মধ্যে দিয়ে তোমায়।
প্রত্যেকটা দিন যেন সবার,‌ 
এমনি করে যায়।

গৌতম মজুমদার

আবার এসো মা

মাগো! তুমি কেমন আছো বলো,
ধরণীতে তোমার সন্তান, নেইতো কেহ ভালো ।
জানোতো মা! আমরা আছি, কিভাবে যে বেচে,
অসুর গুলির তান্ডব দেখে, প্রাণটা বুঝি গেছে ।
তোমার থেকে পালিয়ে এসে, এসব অসুর গুলো,
মহাতবিয়তে কাটায়, গায়ে লাগায় না ধূলো ।
হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাধায়, ধর্মের দোহাই দিয়ে,
দ্বন্দ্ব বাধায় রাজনীতিতে, খুন ভাইয়ে ভাইয়ে ।
গার্হ্যস্থ হিংসার বলি হচ্ছে, আমার মা আর বোন,
অসুর গুলো ধর্ষণ করে, করছে আবার খুন ।
যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতে গিয়ে, যুদ্ধ বাধায় দেশে,
রক্ত বন্যা ভাসিয়ে দিয়ে, রক্ত চুষে শেষে ।
শত কোটির নেইকো খাবার , নেইকো দেশে কাজ,
ক্ষুধার জ্বালায় মরছে মানুষ, মুখ খোলেনা আজ ।
আতঙ্কিত আমরা সবাই, এই পৃথিবীর বুকে,
হাড় মাংস চিবিয়ে মোদের, খাচ্ছে পরম সুখে ।
ঠোট কাঁপলে ও বলছে ওরা, করছি বিরোধিতা,
তা নিয়েও জ্বালায় আগুন, লক্ষ কোটি চিতা ।
এসো মাগো "দশভূজা", রূপটা তোমার ধরো,
অসুর নিধন করেই আবার,মোদের রক্ষা করো ।

সাধন নমঃ

অামার দূর্গা                 

অামার দুর্গা সতী হয়েছে শতাব্দী পূর্বে
অামার দুর্গা অাজও ধর্ষিতা হচ্ছে রাস্তা ঘাটে।
অামার দুর্গা লাঙ্গল হাতে অায়ুস ধানের মাঠে
অামার দুর্গা কাস্তে হাতে সোনালী ধান কাটে।

হার মানে নি সে অাজও,
বিকৃত চেহারায় প্রতিযোগীতায় নামে।
অামার  দুর্গা মা হয়েছিল ছেলেটার সাথে অাবেগের বশে
অামার দুর্গা অাজ অাত্মহত্যায় মেতে উঠেছে।

তবু অাজ হাল ছাড়েনি দুর্গা,হয়েছে কালজয়ী
লালসার পিঞ্জিরায় অাবদ্ধ থেকেও হয়েছে স্নেহময়ী।
অামার দুর্গা অাজ শতাব্দীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে
হাতে নিয়েছে বই খাতা,কাদে নিয়েছে নিশান পতাকা।

অামার দুর্গা অাজ মা হয়েছে, বলিষ্ঠ  ক্ষমতায়ন,
অামার দুর্গা অাজ প্রেয়সী হচ্ছে,বীরত্বের নিদর্শন।
অাজ অামার দুর্গা ভয় পায় না, দেহের গড়িমায়
অামার দুর্গা প্রতিবাদী হচ্ছে পাড়ায় পাড়ায়।
দুর্গা অামার ঘরের দোয়ার দিয়েছে খোলে,ছিন্ন করেছে বাঁধা,
অামার দুর্গা অাজ অাকাশে বাতাসে বিছিয়েছে অসীম ক্ষমতা।

প্রীতম শীল

আমরা তোমাকে_চাই

বাবা মাকে আর মেরোনা। আমার জামা লাগবেনা,  তবুও তুমি মাকে মেরোনা।

সেদিন টুসি খুব কেঁদে কেঁদে এই কথাটাই বলছিলো তার বাবাকে। টুসির সব বান্ধবীদের জামা কেনা শেষ, সামনেই পুজো। মহালয়া শেষ হয়েছে আজ ২৩দিন। এবছর মাও মানুষের মনের অবস্থা বুঝে বাবার বাড়ি আসছেন। না হয় মহালয়ার ৩৪দিন পর পুজো?
সেই যা হোক,,,,  টুসির জামা এখোনো আসেনি। গেল বছর বাবা রিকশা চালিয়ে ভালোই অর্জন করেছে। শহরের বাবুরা ব্যাস্ত রাস্তায় বহু চড়েছেন রিকশা। কিন্তু এখন সবাই সেভ করার উপায় খুঁজছেন! " আসেন বাবু রিকশায় চড়বেন বলে পিছু পিছু গেলেও, ক্ষানিকটা পথ হেঁটেই চলে যান। মহামারী বড়োলোকদের সেভ করার অভ্যাসটা বাড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু ওদের সেভ করা টাকায় যে টুসির জামা কেনার কথা, সেটা কি ওরা জানেন না।

রাতে বিমল বাসায় ফিরেছে।  হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসতেই বিমলের স্ত্রী বললো কিগো আজও আনলেনা টুসির জন্য জামা?

কথায় আছে পুরুষ মানুষের মন ভালো থাকে পকেটে টাকা থাকলে। বিমল ভাতের থালাটা ছুঁড়ে মারলেন বউয়ের মুখে। 
টাকা কামাতে কষ্ট আছে বুঝলি। ভাত জোটাতে পারিনা আবার কাপড়। বলেই মারতে লাগলো।
বিমলের আজ কি হলো কে জানে। হটাৎ রেগে যাওয়া বিমলের অভ্যাস নয়। তবে আজ?

মেয়ের কান্নায় বিমল তার স্ত্রীকে আর মারলোনা। রাতে না খেয়েই শুয়ে পড়লো।
মাঝ রাতে বিমল তার স্ত্রীকে ঘুমন্ত অবস্থায় আদর করে কপালে চুমু খেলো। মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নিলো। বললো মারে কেমন করে বোঝাই তোর বাবা কতো কষ্ট করে তোদের জন্য। প্রতিদিন কতো কেজি ওজন বইতে হয় রিকশায়। কতো বাবুদের গালি খেতে হয়। কতো উঁচু জায়গা পেডেল চেপে না বইতে পারলেও ধাক্কা দিয়ে উঠাতে হয়। কপালের কতোটা ঘাম মাটিতে পড়ে কে জানে?

তোদের ছেড়ে আজ আমি বিদায় নেবো। পারলে আমাকে ক্ষমা করিস। আমার বীমার টাকায় তোদের পরের জীবন ভালো কাটবে।

হাতে বিষ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ার সময়, বিমলের স্ত্রী হাত চেপে ধরে বললো আমি সব শুনেছি গো। বিশ্বাষ করো তোমার মারে ততটাও আঘাত পায়নি। আমরা শুধুই তোমাকে চাই। আমাদের আর কিচ্ছু চাইনা।

রুবেল হোসেন

মায়ের আগমন

চতুর্দিকে মৃদু বাতাস, 
ঢাকে পড়ল কাঠি ।
ধানের উপর শিশির পরে, 
জমল মায়ের মাটি ।
ভোরের আকাশ,ভোরের আলো ,
ভোরের কাশ ফুল ।
শরৎ যেন জেগে উঠেছে ,
বেজে উঠল ঢোল ।
শিউলির গন্ধে মুক্তো ছড়ায় ,
আকুল হল মন ।
নিশিরাতে জ্যোৎস্না ধারায় ,
কাশের শুভ্র বন। 
মহালয়ের দিনটি ছুঁতে ,
আর যে দু-দিন বাকি ।
আসছে মা , বলছে তারা ,
স্বর্গ সাজিয়ে রাখি ।
হাতের জ্বালা প্রদীপ নিয়ে ,
বলছে কথা মন ।
নূতন নূতন রূপে সেজে ,
মায়ের আগমন ।
                                     

দিপ্সী দে

আগমনী

শিশির ভেজা শিউলির বুকে পটে লেখা আগমনীর উচ্ছাস

কাশের দোলায় রাঙা কিশোরীর মনে
প্রেমের শব্দ ঝিনুক

নিত‍্যনতুন ছাঁচে নতুন করে 
আগমনীর বার্তা

আলোয় ঝলমল অবুজ শিশুর 
অঢেল খুশি 

অষ্টমীর সকাল দশমীর জিলেপি 
শতকের পর শতক ধরে 
বাঙালির জীবনতরে 

আগমনী ও যেন প্রাণচ্ছল।
         

সম্রাট শীল

আগমনী
        
আগমনীর ছোঁয়ায় চারিদিকে,
মাতলো এই ভুবন।
চারিপাশে শিউলির আকুলিত গন্ধে হৃদয় করেছে আনমন।
আকাশে আবছা মেঘের সম্ভারে শোভিত গগন তল।
সোনালী রোদের মিষ্টি স্পর্শে আকাশ করে উঠে ঝলমল।
শিশির ভেজা সকালে মহালয়ার আগমনীর ডাক।
আগমনীর পূর্ন লগ্নে মেতে ওঠে চারিদিকে ঢাকের শব্দ উলুধ্বনি শাখ।
শারদ সন্ধিক্ষণে মায়ের আগমনীর বার্তা বহন করে কাশফুলের দোলা।
আগমনীর সাজে সেজে উঠা এই ধরনীকে দেখে মনটা হয় উতলা।
হৃদয়ে সবার সঞ্চারিত হচ্ছে
শারদ প্রভাতের আনন্দ।
বাতাসে কেমনে বহিতেছে
আগমনীর গন্ধ।
আগমনীর সুর চারিদিকে বহিছে ভুবনে।
চারিদিকের আগমনীর দৃশ্য আমি দেখি আপনমনে।

কবিতা সাহা

মা দুগ্গা আসছেন 
          
মা দুগ্গা আসছেন বাপের বাড়ি 
সঙ্গে নিয়ে সিংহ মামা,
কার্তিক গনেশ বায়না ধরেছে 
দিতে হবে তাদের নতুন জামা।
এদিকে লক্ষ্মীটাও রাগ করেছে,
পেঁচাটারও মুখ ভার;
কিছুতেই সে বুঝতে চাইছে না,
তাকে দিতে হবে সোনার অলংকার।
অভিমানী সরস্বতীও
জুড়ে দিয়েছে কান্না,
নতুন বীণা কিনে না দিলে
মামার বাড়ি সে যাবে না।
ছেলেমেয়ের এই বায়না দেখে,
ভোলা রেগে গিয়েছেন চরম।
লকডাউনে কাজ নেই এখন,
তাই ভোলার মাথা গরম।
ক্রুদ্ধ ভোলা নেশায় মত্ত
সারাদিন খাচ্ছেন আফিম,
এদিকে অসুরেরও কোনো খোঁজ নেই,
সিক্স প্যাক করাতে গিয়েছেন জিম।
ইঁদুরটাও ভারী পেটুক
খালি খাই খাই করে,
ময়ূরটা যদিও যায়নি মাঠে,
আজ হাঁসটাও রয়েছে ঘরে।
নন্দীকে দুগ্গা ডেকে বললেন,
যাব কিছু দিন বেড়াতে;
রান্না বান্না সামলে নিস্!
ঠিক মতো প্রভুকে দিস্ খেতে।
দূর থেকে একথা শুনে ভোলা,
রেগে বললেন না! না!
চারদিকে এখন করোনার ভয়,
বাপের বাড়ি যেতে হবে না।
শিবের কথা কোনো মতেই
মানবেন না দুগ্গা এবার,
প্রয়োজনে সে সঙ্গে আনবে,
মাক্স এবং স্যানিটাইজার।
সোস্যাল ডিসটেন্সও মানবেন দুগ্গা,
তারপরও আসবেন বাপরে বাড়ি।
করবেন না কোনো অনিয়ম
তোমরাও তৈরি হয়ে যাও তাড়াতাড়ি।

পূজা মজুমদার

তোমার দুর্গা আমার দুর্গা

তোমার দুর্গা মহালয়া ভোরে শরৎ মাখছে গায় 
আমার দুর্গা এখনো দেখছি ফুটপাতে জন্মায়।

তোমার দুর্গা অকালবোধন একশো আটটা ফুল
আমার দুর্গা দূর থেকে দ্যাখে খিচুড়ির ইস্কুল।

তোমার দুর্গা আগমনী গান গিরিরাজ কন্যার
আমার দুর্গা ঘর দোর ভাসা বাঁধ ভাঙা বন্যার।

তোমার দুর্গা প্রতিবার আসে বাবা মা'র বাড়িতেই
আমার দুর্গা মা'র কোলে পিঠে, বাবার খবর নেই।

তোমার দুর্গা টেক্কা দিয়েছে এবার থিমের পুজো
আমার দুর্গা ইট বয়ে বয়ে এক্কেবারেই কুঁজো।

তোমার দুর্গা হুল্লোড়ে মাতে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে
আমার দুর্গা বাঁচতে শিখছে অতীতকে ছুঁড়ে ফেলে।

তোমার দুর্গা আলো ঝলমল চেনে না অন্ধকার
আমার দুর্গা রোজ সেজে গুজে খোঁজে তার সংসার।

তোমার দুর্গা শপিং মলের কফির ধোঁয়ায় ওড়ে
আমার দুর্গা চা বানাচ্ছে, তিন রাস্তার মোড়ে।

তোমার দুর্গা বহুজাতিকের বহুজনহিতায়চ
আমার দুর্গা কালকে যেমন, আজো তথৈবচ।

তোমার দুর্গা ছবির ফ্রেমের শিউলি এবং কাশে
আমার দুর্গা এখনো আশায় কেউ যদি ভালোবাসে।

তোমার দুর্গা ধুনুচি নাচের ঢ্যাম্‌ কুড় কুড় ঢাকে
আমার দুর্গা ঘুরেই মরছে দশচক্রের পাকে।

তোমার দুর্গা অঢেল খাবার অঢেল নষ্ট হয়
আমার দুর্গা দিন আনাআনি কিছু নেই সঞ্চয়।

তোমার দুর্গা কুলকুল নদী, স্নেহের প্রথম পাঠ
আমার দুর্গা নখের আঁচড়ে ভয়েই শুকিয়ে কাঠ।

তোমার দুর্গা অস্ত্র শানায় সিংহবাহিনী রূপ
আমার দুর্গা কাঁদতে কাঁদতে নির্বাক, নিশ্চুপ।

তোমার দুর্গা দশভুজা হয়ে অসুরের মাথা কাটে
আমার দুর্গা অপুষ্টি নিয়ে ধুঁকতে ধুঁকতে হাঁটে।

আমার দুর্গা কবে বলো আর তোমার দুর্গা হবে ?
আমার আকাশ ভরবে তোমার উৎসবে উৎসবে !

শিপ্রা দেবনাথ

মা দূর্গার আগমনী 

মুছে যাক জ্বরা- ব্যাধি, মুছে যাক গ্লানি  , 
বছর শেষে আবার এলো, মা দূর্গার আগমনী। 
শিউলি ফুলের সুবাস নিয়ে শরৎ এলো চলে, 
খোলা মাঠে কাশফুল, হাওয়ার তালে দোলে। 
মাগো তোমার মধুর রুপে, মজে যায় এিভূবন, 
তুমি কৃপা করো সবার, এই বলি সারাক্ষণ। জগৎজননী তুমি মাগো তুমি দূর্গতিনাশিনী, 
অসুরবিনাশিনী তুমি মুক্তিদায়িনী । 
এ-ই বিশ্বের মৃত্যুমিছিল থামিয়ে দাও তুমি,
রোগমুক্ত করো মাগো এই ধরণীকে   । 
সবার দুঃখ মুছিয়ে দিয়ে, ঘুছিয়ে দিও ক্লান্তি, 
তোমার আগমনে আসে যেন সবার জীবনে শান্তি। 
প্রকৃতি আজ সাজছে আবার নতুন নতুন সাজে, 
মা আসছেন সারা বৎসরের প্রতিক্ষারই শেষে। 

গৌতম দাস

এই দিন আসছে

অন্ধকার প্রিয় মানুষজন অন্ধকারই ভালোবাসে।
জ্ঞানের আলোতে তারার উল্টি আসে।
নাতির বেলায় বড্ড জল 
নাতনির বেলায় গা মুছে ঘরে চল।

বাবুরার  দাঁত মাজার ফাঁকে
জল চলে নিজ পথ এঁকে।
জলের মৃত্যুতে পাড়া যখন শূণ্য।
ওরা চিৎকার শুনে না হেডফোনের জন্য।

ভদ্র বাড়ির অন্নপ্রাশনটা হল পন্ড
জলের অভাবে ঘটল এই কান্ড।
টাকার কুমীর ও বিছানা আছে যত
পাড়ায় পাড়ায় জল নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে শত শত।

হবু বরের একমাত্র পণ-
একশ লিটার বিশুদ্ধ জল।
শত চেষ্টার পরও কনের বাবা হল বিফল।
সোনা,রূপা চায় না বর
বিয়ে হবে সেখানেই যে দেবে খাবার জল।

আধুনিক যুগের বর্বরতা
ভুলে যাচ্ছে জলের মর্মকথা
অপচয়ের জগতে এতই মশগুল
শুকনো খাবার খেয়ে দিচ্ছে ভুলের মাশুল।
তিন দিনের স্নান চলে এক বালতি জলে
এটাও জোগাড় হল বহু কষ্টের ফলে।

ভবিষ্যত প্রজন্মকে বাঁচাতে চাও যদি ভাই
কাজের ফাঁকেও চলো জলকে বাঁচাই।
জীবন নিয়ে যারা হেলার ভেলায় ভাসছে।
চিন্তার কারণ নেই এই দিন আসছে।

অসীম দেববর্মা

আগমন

শ্রাবণের ধারার শেষে 
ঋতুর দোয়ারে শরত আসে, 
শ্রাবণের কালো মেঘ কেটে গেছে
শরতের আকাশে জুড়ে তুলোভেজা 
মেঘেরা ভিড় জমিয়েছে। 
প্রকৃতি তাঁর রূপের সৌন্দর্য দিয়ে সাজায় বরণ ডালা
আগমনীর আগমনকে স্বাগত জানায় শিউলি ফুলের মালা, 
নদীর তীরে বাতাসে মাথা দোলায়
সাদা কাশফুলেরা কাশের বনে
রূপবতী পদ্মা বিলে যৌবনাবতী শরতের আগমনে। 
পাতায় পাতায় শিশির বিন্দু
যেন গাছেরাই অস্থায়ী সিন্ধু! 
নদীর জলে জলেরাই আঁকে
শান্ত স্রোতে জলছবি নদীর বুকে, 
পবিত্রতা শরতের গায়ের বসন
তাই শরতের শুদ্ধতায় স্বর্গের দেব-দেবীরা ধরণীতে পাতে আসন।
কৈলাশ থেকে মর্ত সর্বত্রই জয়ার জয়ধ্বনিতে মুখরিত 
শরতের এ-ক'দিন বসুধার ঘরে ঘরে ঐশ্বরিক আলোয় আলোকিত! 

সাগর চৌধুরী

অনেক দিন পর

আমরা হাঁটি যে পথে 
হাতে হাত - এলোমেলো পা ফেলে, 
সবুজ ঘাস মুড়িয়ে, গাছের ছায়ার 
শান্ত শীতলতায় আর 
কাঁপানো ঠোঁটের হালকা হাসিতে ।
তবু বিশ্বাস যেন চোখে মাখা ; 
অবচেতনায় বার বার ফিরে আসে 
একা রাতে - আমার 
আধখোলা জানলার পাশে 
কে যেন দাঁড়িয়ে থাকে ,
শুধু ইশারায় ফন্দি আঁকে ; 
সেই চোখ - আলোআঁধারের 
ঘটা নেই , শুধু বাস্তবতার নেশা;
আমি মুখ ফেরাই;
তবু সে আসে -
এলেমেলো শ্বাসে ঘুম ভাঙে;
চেনা ছবি আর স্মৃতি সাথে; 
অযান্ত্রিক কিছু সমাবেশ মন ঘিরে ।
সেই পথ, সেই স্তব্ধতা -
একনিমেষে এলোমেলো; প্রেম তখন 
কোনো নাগরিক বিলাসিতায় মিশে; 
তবু সে আসে ?
হয়তোবা আমি বেঁচে মিথ্যা আশ্বাসে !
তবুও তো ভোর হয়, 
তবুও তো পাখি ডাকে, 
নীরবতার খোঁজে তারা বাসা বাঁধে,
অথবা উড়ে যায় দূর দেশে ।

অতনু রায় চৌধুরী

আবেগে ঘেরা

আবেগে ঘেরা জীবনে বাস্তব বড় কঠিন, 
মুহূর্তে সব বদলে যায় কী রাত কী দিন।
অবাক চোখে নিশ্চুপে কখনো মেনে নিতে হয়,
কখনো আবার আশা জাগে হবেই একদিন জয়।
এইভাবেই কখনো অনিশ্চয়তা কিংবা কখনো আত্মবিশ্বাসে ভরা মন,
এক নতুন কিছু দেখার অপেক্ষায় থাকে সারাক্ষণ।
তবুও হার মানে না হৃদয় কোনো কিছুতেই,
জানি সহ্য করার ক্ষমতা থাকলে জয়ী হওয়া যায় তবেই।
তাই প্রতি মুহূর্তে নিজেকেই নিজের কাছে করতে হয় প্রতিজ্ঞা,
হাজারো অবহেলার ভিড়ে তৈরী করব জীবনে এক নতুন সংজ্ঞা।

নিপু দাস

জাগো হে মহা শক্তি


হে মহামায়া তুমি জাগো
বিশ্বজোড়ে আজ মহামারী,
ধংসের পথে এ-পৃথিবী,
সৃষ্টি আজ বিনাশের পথে
জাগো মা তুমি জাগো।

শক্তি জাতের অপমানে,বজ্রকন্ঠে উঠেছে কলরব..
রূপং দেহি,জয়ং দেহি,যশো দেহি,দ্বিষো জেহি..
হীনমন‍্যতার প্রতিবাদে মহাশক্তি রূপে,
আসুক ফিরে আমার দুর্গা..
জাগো দুর্গা জাগো দশপ্রহরণধারীনি।

বিশ্বজোড়ে আজ রণধ্বনী..
জাক মাগো তবে থেমে,
নিধন করো হিংসাকে মা,
শান্তি আসুক তবে নেমে।
জাগো মা তুমি জাগো..
দশপ্রহরণহাতে সুমূর্তিতে...‌তুমি জাগো।

অভয়া শক্তি বলপ্রদায়িনী তুমি জাগো,
নতুন রূপে ফিরে আসুক উমা..
মাতৃবন্দনা স্নিগ্ধ শিউলি গাইছে-
বাজলো তোমার আলোর বেনু।
কাশের হাওয়ায় ফিরছে
ওগো আমার আগমনী আলো
মাতৃ বন্দনায় স্ব-কন্ঠে বেজে উঠুক 
জয় জয় মা মহিষাসুরমর্দিনী..
জাগো মা তুমি জাগো...

"হোংংকারে তার গর্জে বিশ্ব,
মর্তে তিনিই মৃন্ময়ী,
কালরূপিনী কালী সে শ‍্যামা-
তিনিই আবার চিন্ময়ী"

অন্তরা সাহা

প্রাক্তন
                             
সেদিন ছিল নবমীর রাত,
চারিদিকে বাজছে ঢাক, ঢোল,কাঁসর, ঘণ্টা,
আর উলুধ্বনিতে  মত্ত সবাই,,

মা যেন ক্লান্ত না হয়ে পড়েন,
মাকে জাগিয়ে রাখতে হবে,
সকলে মগ্ন তখন সারা রাত পুজো দেখার তালে,

আমি আর ব্যতিক্রমী কোথায়,
আমিও ছিলাম তাদের মধ্যেই একজন,
সাঁঝের বাতি জ্বলে উঠতেই,
শুরু হলো সাজগোজ,

পরনে নীল রঙের চুড়িদার,
কপালে টিপ আর খোলা চুল,
বেড়িয়ে পরলাম বর্তমানের হাত ধরে,

এক পা দু পা করে পেড়িয়ে গেলাম খানিকটা পথ, 
একগুচ্ছ গল্পরাশি ছিল আমাদের  যাত্রার সঙ্গী,

চলতে চলতে যখন দুজনেই ক্লান্ত,
যখন পা গুলো হলো অসাড়,
তখন হঠাৎ আমার বাঁ পাশটা ঘেঁষে কে যেন গেল,
মনে হলো সে আমার বহুকালের আপন,

ফিরে তাকাতেই দেখলাম সেই ভুলে যাওয়া মুখটা আমার সম্মুখে দাঁড়িয়ে,
হ্যাঁ, চোখে চোখ পড়ল বটে,
জানিস, সেদিন আমার চোখ দুটোতে ছিল বহু জিজ্ঞাস্য চিহ্ন,
কিন্তু তুই তখন আমায় এড়িয়ে যাওয়াতে ব্যাস্ত ছিলি ভীষণ,

বুঝলাম, যুদ্ধে আমাকে পরাজিত করেও তুই খুশি হোস নি,
আর আমি সেই যুদ্ধ সৃষ্টির কারণ খোঁজাতেই ব্যাস্ত ছিলাম,

হঠাৎ ডান হাতে টান পড়ল তখন,
মন বলল, ভুলে যা এবার ওকে, 
ও যে তোর প্রাক্তন ।

তনুজা রায়

শরৎ হাসি

"বাজলো তোমার আলোর বেণু
সাজলো যে ভুবন। "
তারি  মাঝে উঠলো হেসে 
মুক্তি খোঁজা মন।

বাঁধন ছেঁড়া পাগল পারা
উধাও ধাওয়া  মন ,
কাশের ফুলে দোল লাগানো
হাওয়া অনুক্ষণ ।

সেইখানে তে মন ছুটে যায় 
মিষ্টি রোদের হাসি ,
চমক ভেঙ্গে ধামাল ছেলে 
ছুটলো রাশি রাশি  ।

মায়ের  বোঁধন  ছা' য়ের হাতে 
ঢ‍্যাং কুড় কুড় কুড় ,
আগমনীর হাওয়ায় ভাসে 
অমর পালের সুর ।

কোথায় গিরি কোথায় রানী 
কে রাখে তার খোঁজ!
রোদে নাওয়া , ঘামে ধোওয়া 
মূর্তি দেখা রোজ।

এই তো গেল গ্রামের কথন
এবার শহর ঘুরি --
আলোয় আলোকময়  সেখানে 
মন যে গেছে  চুরি।

মা, এসেছেন, ভালো কথা --
প‍্যান্ডেলেতে ঢোকা, 
সাজসজ্জা পরিপাটি ---
ত্রুটি হবে নাকো ।
দশটি হাতে আয়ূধ সাজে 
বাহারি রকমমারী ;
পায়ের ছোঁয়ায় অসুর মরে 
স্তব্ধ জারিজুরি।

কোথাও  মা নটরাজের
নাচটি নাচেন ভাল,
লক্ষী, গণেশ, কার্তিকেয়
সেই তালটি পেল ।

বিরাট দেহে দশভুজা 
দাঁড়ান সমুখেতে,
দশ দশটা অসুর লড়ে 
বামেতে ডান তে।

কার মূর্তি কত সরস 
সবাই দেখে চেখে 
খুশি গেল, মন পালালো 
স্মৃতিটুক রেখে।
মাঁ  ও বলেন, "দে ছেড়ে দে
গ্রামে গিয়েই বাঁচি,
যে দিন তোরা আমায় নিবি 
গ্রামের কাছে যাচি,
আনন্দ কে সঙ্গে নিয়ে 
আসবো  সেদিন  আমি "।
ঢেড় হয়েছে, আর বাকিটা
জানেন অন্তযার্মী!

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

আমি ও আমার ছায়া 
       
নিঃসঙ্গ আমি একা 
তবু সঙ্গ ছাড়ও নাই 
আলোর তরঙ্গে ভেসে 
অঙ্গে অঙ্গে মিলে 
স্থিতি ভেঙে দাঁড়ালে প্রমাণ 
আমি একা নই। 
ঝড়-বাদল- বৃষ্টিতে 
সূর্যের প্রচণ্ড তাপে তিমির রাত্তিরে 
রক্তাপ্লুত রণাঙ্গণে যখন কেউ আর নেই 
খুঁজে দেখি - 
তবু তুমি দাঁড়ায়ে নীরবে 
সাঙ্গ হল বেলা - 
বিস্ময়ে বুকে হাত দেই 
প্রতিটি কম্পনে তোমার বিভঙ্গ রূপ টের পাই 
এতো রঙ্গরসে ভরা আমার এ ছায়া।

বর্ষা দে

অভিমানী আগমনী

বছর ঘুরে মা'গো 
আবার আসছো সেজে আগমনী।
মহামারীর অন্ধকারে,
আসবে মাগো আমার দেশে।
কিন্ত মাগো জানি নাকো
হাসবে কি না এবার আগের মত!
মা'গো তোমার সন্তানেরা যে 
এবার 
না খেয়ে উপোস করে;
মরছে ভয়ে হাহাকারে।

তুমি মাগো এবার অষ্টমীতে
ভোগ বিলাসে মাতবে কি মা?
যখন এই স্মৃতি পড়বে মনে,,,
বছর ঘুরে যখন এলে মাগো বাপের বাড়ি।
তবে এতদিন কোথায় ছিলে?
কত মা যে , কেদে  মরেছে
আবার কখনো সন্তানেরা 
তার পিতা মাতাকে হারিয়ে।
 জানি বহু পাপের এই শাস্তি আমাদের
তুমায় দেখা হবে হয়তো এবার।
তবে অভিমানী মন
মুখ মুখোশে ঢেকে।

অমিত রুদ্র পাল

শরতের ছোঁয়া 

এবারও সহস্র দিনরজনী কেটে 
শরৎ এলো বুকে ।
কুয়াশার পায়ে হেঁটে দেখি 
কেমন জানি একটি লাবণ্য 
রঙ-তুলি মুখে ।
কি অদ্ভুত সুন্দর! 
 
কপালে লাল টিপ 
অলঙ্কারে রবির কিরণ 
বস্ত্রে গোলাপি শাড়ি
চুলগুলি এলোমেলো
শিউলি হয়ে পড়ছে ,

প্রভাতের কচি ঘাসে
শিশিরের ছাপ
আর , সবুজের ফাঁকে ফাঁকে সুগন্ধ 
খোঁপায় কাশ ফুলে
 সজ্জিত হচ্ছে কোমল ।
আমি বলি কে ? বোধ হয় কেউ আসছে ?
এবারও সহস্র দিনরজনী কেটে 
শরৎ এলো বুকে ।

শ্রীমান দাস

জাগো ত্রিনয়নী
                 
প্রতিটি ভোরেই দীর্ঘ হতে দেখি মৃত্যুর মিছিল।
তোমার ভুবন জুড়ে আজ শুধু ত্রাহি ত্রাহি রব
তবে, কোথায় আজ মুখ লুকালে জননী?

সৃষ্টির কুঁড়ি ঝলসায় বিনাশের আস্ফালনে
অন্যায় অত্যাচারে বগলদাবা সত্যের জয়বাণী,
তুমি না সংহারিনী? মুক্তিদায়িনী?
কেন আজ চুপ তবে? হে মাতা

ওগো জগদম্বে , তুমি যদি হও সর্বশক্তির আধার
কেন আজ প্রশ্নবাণে জর্জরিত দেবালয়?
নিশ্চুপ থেকো না মাতা , জবাব দাও।

ঐ দেখো কালো মেঘে ঘিরে গেছে ভক্তের আকাশ
চরম হতাশায় নাস্তানাবুদ গোটা ব্রহ্মান্ড
পরাজিত মিনতি তোমাকে তুলেছে কাঠগড়ায়,
হে শক্তিদায়িনী, দাও তব শক্তির পরীক্ষা।

জাগো ত্রিনয়নী , ওঠো... প্রকট হও সত্বরে
ঘুচাও আঁধার- মুছাও অশ্রু...
নইলে নাস্তিকতাই শ্রেয় - বলে মেনে নেবো।

মাধুরী সরকার

আগমনীর অনুভব

অর্ধচন্দ্র শোভিত ত্রিনয়নীর পদার্পনে 
পৃথিবী সাজছে নববধূর মতো,
চারদিকে ছড়িয়ে আছে আলোর রোশনাই
আগমনীর সুরে সুরঞ্জিত ধরনী।

সুরমা পরা নীল আকাশের বুকে তুলো তুলো মেঘ 
আপনমনে ঢেউ খেলছে  সকাল সাঁঝে।
ধানের শীষে সোনালী রোদ হাসে খিলখিলিয়ে
নদীর তীরে সাদা কাশফুলের দোদুল নাচন ।

শিউলি বেলীর সুবাসে আমোদিত গ্রাম নগর।
শিশিরভেজা ভোরে, হিমছোঁয়া দুর্বাঘাসের গায়,
বিলের জলে লাল সাদা শাপলায় শরতের রূপ।

এ মহালগনে বাজে উমা বরণের আহ্বান
আকাশে বাতাসে ভাসে আগমনীর স্নিগ্ধ অনুভব,
এখন শুধু প্রহর গোনার পালা।

দেবাশ্রিতা চৌধুরী

মা

প্রতিমার চালচিত্রে আমি রঙ ভরি
খড় মাটির প্রলেপে মূর্ত হয়ে ওঠে
একচোখে অগ্নিবর্ষী অসুরদলনী
আরেক চোখে স্নেহক্ষরা মাতৃরূপ
তৃতীয় নয়নে শিবানী প্রেমময়ী।

শরতের পেঁজা তুলার নাওয়ে
যেন ভরসা আনন্দ সুখ ছড়ায়
আউশ ধানের শীষের মূর্ততায়
আইতান কাইতানের বিমূর্ত ঝড়ে
আগমনী সানাইয়ের বিস্তারিত সুরে,

ভাদ্রের উড়ন্ত ঘুড়ির দল ভোকাট্টা..
তাঁর পথে শেফালী পদ্মের গালিচা
অবশেষে কখন প্রতিমায় খুঁজে "মা"
মৃত মায়ের অবিকল মুখ ভেসে ওঠে
গর্জনতেল আর রসুইয়ের ভাপ
অদলেবদলে মায়েদের অভিন্ন রূপ ।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...