Wednesday, July 25, 2018

মুকিম মাহমুদ মুকিত

ক্ষণিকের অতিথি

কলমি লতার শীর্ণকায় ডগার শীর্ষে
উড়ে এসে বসে এক খয়েরি ফড়িং।
নিরবে নিরিবিলিতে বসে,
বসে কলমি লতার চোখাচোখি।
কলমি লতার সাথে আজন্ম ভাব তার,
বিস্তৃত জলরাশিতে ভেসে ওঠে তার অবয়ব।
জলের ঢেউ দুলে ওঠে,
কম্পিত হয় ফড়িং এর প্রতিচ্ছবি।
কম্পিত জলে চেয়ে
স্থির ফড়িং খুঁজে পায় চঞ্চলতা।
মুহূর্তে খয়েরি ফড়িং এর বিস্তৃত ডানা কেঁপে ওঠে
দ্রুততর সঞ্চালিত হয় নিঃশব্দে।
চোখের পলকে অদৃশ্য হয়ে যায়,
ফড়িং উড়ে যায় বহুদূরে।
কলমি লতাটা একা ভেসে থাকে 
জলের ওপরে মাথা তুলে চুপচাপ।
সে জানে আবার আসবে কোন ফড়িং
হয়তো খয়েরি নয়, অন্য রঙের ফড়িং।
আসবে ক্ষণিকের অবকাশে,
কিন্তু কবে আসবে তা জানে না ! 
এরা মানে না কোন তিথি,
কলমি লতার কাছে এরা ক্ষণিকের অতিথি।

মিঠুন দেবনাথ

অণুরাধা 


যাইতে যাইতে নবীনদের কলাবাগান পার হইয়া মন্ডল বাড়ির গৃহ দ্বারে পৌঁছিতে রাতের অমাবস্যা বেশ জটিল হইয়া উঠিল | 


   সেদিন বিদ্যুৎ ছিল না | বরেনের হাঁক শুনিবা মাত্রই একখানা মাটির কুপি হাতে লইয়া মন্ডল গিন্নি দাওয়ায় বাহির হইল | মন্ডল বাড়ির দাওয়ায় পৌঁছিতেই মন্ডল গিন্নি বরেনের মুখ দেখিয়া প্রবহমান চিন্তার উৎপত্তিস্থল বুঝিবার অবকাশ রহিল না | 


    মন্ডল গিন্নি গৌরবে বলিয়া উঠিল , সে তো সন্ধ্যার প্রাক্ মুহূর্তেই বাহির হইয়া গিয়াছে ; এখনও গৃহে ফিরে নাই বুঝি ? 


    মন্ডল গিন্নির মুখের কথা পড়িতে না পড়িতেই বরেনের প্রশ্ন , "সঞ্জয় কই ?"


     সঞ্জয় তো গায়েত্রীকে গৃহে পৌঁছাইয়া দিয়া বাজার লইয়া ফিরিবে বলিয়াই একসঙ্গে বাহির হইয়াছিল | 


      মন্ডল গিন্নির মুখ হইতে সঞ্জয়ের কথাটা শুনিবামাত্রই বরেনের মনে ছোট্ট সন্দেহের দানা বাঁধিল | কেন না বিগত মাস দুয়েক ধরিয়া গায়েত্রী-সঞ্জয়কে লইয়া পাড়ার চায়ের দোকান হইতে আরম্ভ করিয়া প্রায় সমস্ত আবালের মধ্যেই এক প্রকার কানাঘুষি চলিতেছিল | কহিতে কহিতেই কথাটা যেন বারুদ স্ফুলিঙ্গের ন্যায় প্রস্ফুটিত হইয়া ফাটিল | ততদিন কথাটার প্রতি বরেন কিংবা তাহার ধর্মপত্নী কেহই কর্ণপাত করে নাই | তাহাদের বিন্দুমাত্র বিশ্বাসও জন্মাইলো না যে সঞ্জয়-গায়েত্রীর মধ্যে কোনো প্রকারের প্রেম সম্পর্ক থাকিতে পারে , কেন না উভয়েই নাবালক| 


       রাত্রি নয়টা পার হইল , উভয় পরিবারের মধ্যেই চিন্তার দানা সূত্র প্রায় চক্রবূহ্যে পড়িয়া শুধু আবর্তিত হইতেছিল | কেহই কোনো সমাধান সূত্র খুঁজিতে পাইলো না , না সঞ্জয় না গায়েত্রী কেহই গৃহে ফিরিল না | নানান প্রাসঙ্গিক অপ্রসাঙ্গিক চিন্তা দুশ্চিন্তায় বরেনের মাথা ফাটিবার উপক্রম ; মোটের উপর একমাত্র কন্যা ! বড়ই আদুরে | ততক্ষণে কথাটা গ্রাম ছড়াইয়া পড়িল | বরেন কিংবা মন্ডল বাড়ির শুভাকাঙ্খীর দল , অষ্টদিক খুঁজিতে লাগিল , যে যাহার যত চেনা আত্মীয় সমস্ত দিকেই জাল বিস্তারিল | মন্ডল পুলিশ ডাকিল |


     মধ্য রাত্রি , রাত বারোটা , খবর নিশ্চিহ্ন | বিপুল খবর দিল ,  কন্যার চিন্তায় বরেনের ধর্মপত্নী বার বার মূর্ছা যাইতে ছিল | এমতাবস্থায় কোনো উপায় না করিতে পাইয়া বরেন টিমটিমে টর্চ লাইট খানি লইয়া ধীরে পদব্রজে একাকী গৃহাভিমুখে রওনা হইল | 


     টলিতে টলিতে বরেন চলিতেছিল | নানান চিন্তায় মস্তিষ্ক অদ্ভুদ আচরণ করিতে ছিল — "সঞ্জয় কী গায়েত্রীকে নিয়ে পলাইল ? না না , সে অসম্ভব , এমন চিন্তা করাও পাপ হইবে , ওরা ছোট ! নাকি রাস্তায় তাহাদের কোনো হিংস্র কুকুরে ধরিয়াছিল ? নাকি পথ ভুল করিয়া অন্য পথে চলিয়া গিয়াছে ? না না সে কি করিয়া সম্ভব হইবে , মেয়েটা এতবছর যাইতেছে , পথ ভুল করিতেই পারে না , সে অসম্ভব |" এইরূপে  নানান চিন্তায় উত্তর প্রত্যু্ত্তরে মস্তিষ্ক অস্থির হইয়া উঠিল| 


        হাটিতে হাটিতে মন্ডল বাড়ি হইতে অনেকদূর আসিবার পর দেহ আর চলিতে ছিল না | পথ পাশে এক বিরাট বৃক্ষ তলে ধপাস করিয়া বসিয়া পিঠ খানা বৃক্ষে ঠেকাইলো | পিঠ খানা বৃক্ষে ঠেকাইয়া বসিতেই হটাৎ দুই ফোঁটা তাজা রক্ত  বরেনের হৃদযন্ত্রের উপর আসিয়া আছাড় খাইল | বরেনের শরীর নিস্তেজ ! খানিক বাদে রক্তবিন্দুটি ডান হস্তের তর্জনি দিয়া অনুভব করিতেই বরেনের শরীর দিয়া যেন হাজার হাজার ভোল্টের বিদ্যুত প্রবাহিত হইয়া গেল ! উপরের দিকে মাথা তুলিবার অনুমতি টুকু পর্যন্ত শিঁড়দাড়া অনুমোদন দিতে পারিল না !

ড. উমাশঙ্কর রায়

জীবন থেকে ধার নেওয়া

ইস্ - স্বপ্নগুলোর কোনো জাত নেই ! কিন্তু বে-জাত বলি কী করে ! কেননা জাতের দেশে, জাতের ব্যবসায়, তাদের যে রমরমা ! দারুণ চাহিদা !

তাছাড়া ইদানীং হাইব্রিড স্বপ্নগুলো ফলছেও ভালো। তাতে ইচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক, স্বপ্নগুলো নানাবিধ ঝোলায় ঢুকে পড়ছে টপাটপ। ওরাই এখন সামগ্রী। বিকোতে হবে তাই।লেনদেন হলে পরে- ওরা চোখে বাসা বাঁধবে।তারপর চোখ যখন ঢলে পড়বে নিদ্রায় - তখন ওরা স্বাধীন হবে ! আহা! স্বপ্ন স্বাধীন হবে তখন !

কিন্তু সমস্যা যে অন্য জায়গায়।স্বপ্নগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রপ্তানী হয় ঐ নেইয়ের দেশে ! নেই বাজারে ! তাই কাড়াকাড়ি। ঠেলাঠেলি।মারামারি।সেই সুযোগে ঢুকে পড়ে ওরা আমজনতার চোখে।যাদের নেই- তাদের মনে। তাদের চোখেই ওদের ঠাঁই হয়ে যায় পাকাপাকি !

এমনটা হলেও খারাপ ছিল না।স্বপ্নে স্বপ্নেই ভরে যেত দেশটা।ভেসে যেত ওরা।নৌকো বিহার হতো দিব্যি ! তা-ও যে হচ্ছে না।শুধু একটি মিথ্যে কথা। মানে, যাদের কিছু নেই - তাদের দিকে কেউ তাকায় না।একেবারেই ভুল।বরং যাদের আছে - তারা সবসময়ই তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে - যাদের নেই। সেই তাকানো সোজাসুজি নয় অবশ্যই। তারা সবসময়ই তাকায় নীচের দিকে। ঈগলের মতো।তাতে ঐ সাম্রাজ্যের স্বপ্ন পাখীরা উড়তে গিয়ে ভয়ে মরে।ডানা মেলতে পারে না যথেচ্ছ।গাইতে পারে না আনন্দে।

আসলে নেই সাম্রাজ্যের স্বপ্নেরা ডানা মেললেই ঘটে - বিপত্তি। ওদের যে আছে এক নিয়তি ! ওরা যে শুধু থাকবে সযত্নে খাঁচায় বন্দী ! নানা রঙের - নানা মাপের খাঁচায় !

এই সভ্যতায় স্বপ্নগুলো যে আর লালিত হয় না ।পালিত হয় বটে ! বিভিন্ন কায়দায়। বিভিন্ন ভাষায়।দেখার বিষয় এই - সেই কায়দাটা কার ।

প্রসেনজিৎ দে

ফেরারি পথ

                     

বিচ্ছেদ যদি হওয়ার ছিল -
তাহলে কেন নিজেকে এক-সুতোয়
বাঁধতে গেলে ? আমিতো সুখ চাইনি ।
না চাওয়া দুঃখটায় যে আজ পড়ে রইল ! 

সময়ের সংলাপে রোজ এক-ঘা মেরে 
নিশ্চুপে রাত কাটানো কঠিন হলেও 
আজ সহজ বলতে সেটাই মনে হয় , 
ভিজে যাওয়া বালিশে মাথা রেখে ।

জানতো এখন আর হঠাৎ করে 
ঘুম ভাঙে না , রাতজাগা জোনাকী
আর রাতজাগা প্রহরীর মতো 
রাতের ঘুম কোথায় যেন আড়াল হয়েগেছে ! 

ভোরের দেখা স্বপ্নগুলো এখন -
কল্পনায় দেখতে শিখে গেছি 
জানি এ সবই মিথ্যে , তবুও 
সত্যটাকে চেপে রাখা যায় না ।

জানা অজানার সীমারেখা পেরিয়ে , 
আজও যে তোমায় ফিরে ফিরে চাই ।

সম্রাট পাল

মৃত্যু 

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে নামতে চাইলে


কিছু আবছা লাল রঙ ঘিরে ধরে আকাশের বুক


রক্ত ধোয়া জল নীলিমায় ছড়িয়ে দিয়েছে ভয়াল শকুনের পাখা

তারপর ক্রমশ রাত নামে


ঘনীভূত হয় অন্ধকার

মানুষ এভাবেই শুয়ে পড়ে মৃত্যুর কাছে

আবার ভোর হয়!

অন্তিমা বৈদ্য

ঋতুস্রাব

গ্রীষ্মকালের উত্তাপে যা ঊষ্ন প্রশ্রবন;


ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে পৌঁছতেই তা দেবীর ঋতুস্রাব।


আমার যোনি নির্গত সেই একই রক্তপ্লাবন;


আমার জন্য শুদ্ধতার অভাব।

বিজ্ঞানের কথায় আয়রন অক্সাইড,


বিশ্বাসে তা দৈবিক আর পাক।


জাগ্রত যে দেবী সবার,


জীবন্ত আমি, দূরে থাক‌‌‌!

দেবীর মন্দির ঘিরে রক্তজলের প্রবাহ,


ভিড় জাকিয়ে নারী-পুরুষ,


দেখলে পূণ্যলাভ।

হঠাৎ ভিড় বাসে জামায় লাল দাগ,


অমনি এসব দিনে ঘর থেকে বেরোনো,


কিছুই না বেহায়াপনার স্বভাব।

বলি যে কারণে দেবীর পূজো,


এক‌ই কারণে মন্দিরে প্রবেশ পাপ।


হাজার পাপে পাপী আমি,


জুড়ে দিলাম ঋতুস্রাব।


আম্রপালী দে

সন্ত্রাসী প্রেম



ভীষণরকমের দোটানায় পড়েছি আমি....


নিকোটিনের কড়া ধোঁয়ার মতো এক নক্সালের প্রেমে পড়েছি !


গভীর স্নিগ্ধ অন্ধকার তার চোখে , আলোরা ভীষণভাবে অবাঞ্ছিত ওখানে ;


বারুদের জ্বালা সে বুকে , সোনার হরিণ ছাই হয় মাথা কুটে !


প্রজাপতি নাচে সবুজে । সে বলে , "যুদ্ধ দ্যাখো..


কেমন ভ্রমর হয়ে জোনাকির অভাব পূরণ করে ; বিমানগুলো গুলির ধোঁয়াটে ধোঁয়াতে !"


যুদ্ধ...যুদ্ধ...যুদ্ধ.....!


আমি কেঁপে উঠে হাত ধরতে চাই....


সে আমার হাতটা প্রতিস্থাপিত করে আমার যুবতী বুকেই !


কানে কানে বলে..."নিরন্তর যুদ্ধ করে হৃদয়টুকুও !


আর সেও কিন্তু ভীষণ লাল...গাঢ় লাল ;


ঠিক ভালোবাসার মতো , কিন্তু ভালবাসা নয় !"


মাথায় বন্দুক রেখে বুঝিয়ে দেয় আমায় ,


প্রাণের বিশ্বাসঘাতকতার স্তব্ধ সংবাদ ।


আবার কখনও জড়িয়ে ঠোঁটে চুমু খায় ,


এবং বলে , " গভীর জিভের শব্দগুলো এবং মনটা একান্ত প্রিয় ।


কিন্তু তুই নোস !"


"তোর কবিতারা আমার প্রাণ , কিন্তু তোর স্বকীয়তা আমার মরণকাঠি !


তুই ধ্বংসিত , আবারও ভেঙে চূর্ণ করবো ,


তোর স্বত্বা , তোর সত্য , তোর বাস্তব , তোর সবকিছুকে ।


রোজ যেমনটা মিথ্যে দেখিয়ে জাগাই....


অমীমাংসিত কল্পনার স্বপ্নে ঘর বাঁধাই !


প্রাক্তনের সংখ্যায় ছাঁটকাট করি ,


অপমানিত করি তোকে আদর করে রোজ...


আমার অনুশোচনার কালি মুছতে গিয়ে সাদা করি...


তিক্ত স্মৃতিগুলোকে !


ভালোবাসিনা , মোহগ্রস্ত আমি লিপ্ত....


অপমানে , অস্বস্তিতে খুন করতে...


তোর চোখের হাসি , মুখের ধারালো বজ্রপাত...


আর রাত্তিরের গভীরের সেই দুঃসহ গোঙানিটা !


হঠাৎ....ধড়মড় করে জেগে উঠলাম রোদ্দুরের কড়াকড়িতে ;


বেঘুমের চোখদুটোয় জ্বলন্ত শব্দের প্রক্ষেপ হল এবার !


"প্রেমবধের প্রতিজ্ঞাটা দ্যাখলে না কেন" ? 


জীবন হাসলো মিষ্টি করে , মনকে কাঁদতে দেখে ;


তাইতো , সে বোধের বাগানে কষ্ট ফলায় !!


কারণ , জানে সে.....


প্রেম আসবে আবারও । না বলে কয়ে , তুহিন যুদ্ধে ।


.....আবার আসবে...!

অনুপম রায়

সুন্দর স্বপ্ন

দেশের স্বপ্ন সাদা সাদা
স্বপ্নই যেন গোলকধাঁধা;
বিশ্বাসটুকুনির হাতেখড়ি
জীবনেতে মহামারী ।।
আকাশ বাতাস নিস্তব্ধ,
কয়লা কালো শিক্ষিত;
মহার্ঘবস্তু সত্যতা
ভুগছে নিঃসঙ্গতা।।

তবুও,আশায় বেঁধেছি বুক
নেবো,ভালোবাসার সুখ;
ঝড়ে পড়বে জীর্ণতা,
আদিমতা হবে অবিদ্যমানতা;
সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন
সুন্দরতায় কাম্য ।।
         
            

সামিন শুভ

পাশাপাশি তোর


আমাতে আমি আজ আর খুঁজে পাইনা
নিজেকে হারিয়ে দিয়েছি বহুদূর,
তোর রাঙা ঠোটে ডুবিয়েছি অন্তর-আত্মা
তোর তুলো পায়ের সেই সোনালি নূপুর।


আমি ভালোবাসিরে বড্ড ভালোবাসি
তোকে ছাড়া মন পিঞ্জর উদাসীন,
তুই পাশে নাই কেমন খালি খালি আমি
তোকে ছাড়া যেন জীবন মলিন।


আমি যাব সাথে তোর প্রেমে বিভূর
তোর হাতের আঙ্গুল করে আলিঙ্গন,
তোর পাশাপাশি থেকে পায়ে পা রেখে
 যন্ত্রণার চিঠিগুলি রাঙা জ্বালিয়ে দহণ।

সুব্রত দেববর্মা

পরিণত নায়িকা


একটু একটু করে যত্নে গড়া কোনো অমৃত মুরতি 


দৈবাৎ কোনো মন্ত্রবলে 


গিয়ে পড়বে বেনিয়ার হাতে।


আর তার শরীর খাবলে নেবে


শুনসান কোনো গভীর রাতে।


ছোঁয়ায় যাকে অল্প অল্প করে করেছি পূর্ণ


সে ই আজ অচ্ছুৎ বলবে।


নরম বাহানায় কেও 


ফোনের ওপার থেকে এসিড ছুড়বে।


পরিপক্ক ভাবে শোধ করবে 


পরিণত নায়িকার মতো।


তারপর নিজেই আফসোস করবে 


"ইসস জিনিস গুলো যদি আগে হতো"।

জয়ন্ত শীল

এক নতুন পৃথিবীর খোঁজে 


               


বুকে এক তুঁত পোকা বাসা বেঁধেছে 


নতুন পৃথিবীর খোঁজে। 

সুড়ঙ্গের মতো গলি, ছাগলছানার ডাক, 


রাবার গাছের ল্যাটেক্সে মাছির আত্মহত্যায় - 


এ পৃথিবী বহুদিন ঋণী। 

তাই চোখে এক কাপ মনুষ্যত্ব ঢেলে 


নতুন পৃথিবী খুঁজে। 

হৃদয় আমার উন্মুক্ত, 


তুঁত পোকা সুতো দিয়ে ব্রিজ তৈরী করছে 


ফুসফুস থেকে হৃৎপিণ্ডে - 


পৃথিবী খুঁজতে যাবে বলে। 

আমি অজ্ঞান হবার আগে 


দুই বক্ষদেশ ছিঁড়ে দেখি 


পৃথিবী খোঁজার কাজ ঠিকঠাক মতো চলছে কি না।


Tuesday, July 24, 2018

বিনয় শীল

মর্মবাণী

না না না, ছিঁড়োনা ছিঁড়োনা,
ওহে মানব কুল।
তৃণ-লতায় শাখায় শাখায়-
আমরা ফোটা ফুল।

ইস্ ! দাঁড়াও না !
শুনো মোদের কথা,
বহু সাধনে পেয়েছি এ তনু
মোরা এখনো সধনে রতা।

যখন অব্যক্ত থেকে
এসেছি মাত্র-
ভাঙ্গেনি ধ্যান,
খুলেনি অবগুন্ঠন। 
তখনো তোমরা মানুষ যত-
নির্লজ্জের মতো
আমাদের স্বপ্ন জগৎ
করেছো লুন্ঠন।

ছিঁড়তেই যখন এলি
তবে শুনো বলি-
"তোমরা বলো- আমরা নাকি
কতো কোমল
কতো সুবাসিত,
আরও কতো কী !
আমরা বলি-
যাহারে পবিত্র জানি,
মোদের এ অঙ্গখানি
তাঁর চরণেতে দিই"।

পরিতোষ সরকার

যাত্রা

চিৎকার চেঁচামেচির মাঝে...
সকালের দ্বিতীয় ট্রেনটির হুইসেল
কানে আসে, ঐ অপরূপ প্রকৃতির
হৃদয় মন্দির চিরে।

প্ল্যাটফর্ম জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা
অগুনতি মানুষের ভীড়ে, সেই
নিদারুণ মানুষটির আচমকা
চুলের ঝাঁপটা আমার জর্জরিত
অঙ্গকে নাড়া দিয়ে গেল।

রেলের দ্বার মহলে দাঁড়িয়ে
এক পলক ঐ শালিক দুটির
চোখ বিদ্ধ হয়, সেখানে কোনো
ভয় নয়, যেন মধুময় প্রেমের ছাপ
দেখা দিল।

যাত্রীবাহী ট্রেনটি যখন ঐ
অন্ধকার-ময় গুহায় প্রবেশের
সময় গুনছিল, তখন বাদুড়ের
শ্বাসরুদ্ধ পলায়ন শুরু হল।
নির্বোধ সেই শিশু বাদুড়টির চোখে
ভয়ের পরিমাপ করা গেল না।

ঐ বহুদূরে আবার এক
প্ল্যাটফর্ম উত্থিত হইলো, যেখানে
বহু যাত্রী তৈরী, তাদের সেই
শুভ যাত্রার উদ্দেশ্যে।
কারণ যাত্রার শেষ নেই,
অন্তহীন ।

Monday, July 23, 2018

দীপক দাস

মাতৃভাষা বনাম ইংরেজী ভাষা (ধারাবাহিক)

হ্যাঁ যেটা বলছিলাম -

ত্রিপুরার প্রতি মহকুমায় প্রতি ব্লকে একটি করে ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ে উঠেছে। আগামী দিনে ৭০-৮০টি বাংলা মাধ্যম স্কুলকে ইংরেজী মাধ্যম স্কুলে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।  আমার নাতিও আজ ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ছে।  এই অবস্থায় মাতৃভাষা দিবসে মাতৃভাষার প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা কি? এআ বাস্তব সত্যকে স্বীকার করে নিয়ে আমরা কি করতে পারি?  আমাদের মাতৃভাষার জন্য এবং কেন তা করবো তা আলোচনা হওয়া দরকার।

বঙ্কিমচন্দ্র একজন আদর্শ মানুষ হতে গেলে তার চারটি বৃত্তির পূর্ণতা দরকার বলেছেন।  তার মধ্যে একটি চিত্তরঞ্জিনী বৃত্তি।  এর অংশ হলো সাহিত্য,গান,চিত্র,নৃত্য ভাস্কর্য প্রভৃতি। আর সাহিত্যের সত্যিকারের রস পেতে হলে মাতৃভাষায় তা রচিত হওয়া চাই।  রাশিয়ায় এক সময় সাহিত্য রচিত হতো ফরাসী ভাষায়।  সেদিন রুশ ভাষা সাহিত্যের ভাষা হলো সেদিন থেকে রুশ উপন্যাস এবং ছোটগল্প বিশ্ব সাহিত্যের অমূল্য সম্পদ হয়ে উঠল।

বাংলায় এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ হলো মাইকেল,রবীন্দ্রনাথের অমরসৃষ্টি। এটা বাংলায় না হলে তার রস পরিপূর্ণভাবে কিছুতেই গ্রহন করা যেত না।  ঈশ্বরের কাছে তাঁর যে আত্মনিবেদন যা 'গীতাঞ্জলী'র প্রথম কবিতায় - 'আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণ ধূলার তলে' মাতৃভাষা ছাড়া কিছুতেই একে হৃদয়ে পরিপূর্ণভাবে গ্রহন করতে পারতাম না।

পৃথিবীর একদিকে যাবতীয় ঐশ্বর্য,রামায়ন,মহাভারত অন্যদিকে রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টি। আমাকে যদি একটিকে বাছাই করতে বলা হয় তবে আমি মুহুর্তেই বেছে নেব রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকে।  তাঁর সৃষ্টি বাংলায় রচিত, আমি একজন বাঙালি।

তাই আজ একথা বলার সময় এসেছে আমরা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লেও একটি ভাষা হিসেবে যার যার মাতৃভাষা শিখবো ভালো করে যাতে সাহিত্য রচনা করা যায়। সাহিত্যই মানুষকে মানুষে রূপান্তরিত করে - মানব জমিনকে আবাদ করে।

(ধারাবাহিকের পাতায়)

জয় দেবনাথ

নজরুল কথা

কবি নজরুল মানে দুখু মিয়ার -
'সত্যমন্ত্র' কবিতার--
'পুঁথির বিধান যাক পুড়ে তোর
বিধির বিধান সত্য হোক'
এই লাইন দুটি আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে ছোটবেলায়। তখনও বুঝতাম না কবিতার মানে কি! অজানা এক ভালো লাগা কাজ করতো তখনও। 

নজরুল বলতে আমি বুঝি ভালোবাসা - মানবতা এবং বিদ্রোহের এক অভুতপূর্ব মিশ্রন।
কবি কাজী নজরুল ইসলামের 'ঝিঙেফুল' কবিতায় তার কল্পনার গভীরতার প্রতি শ্রদ্ধা এসে যায় সকলের।

আসলে শত প্রতিকুলতা সত্বেও কাজী নজরুল ইসলাম একটি জীবনমুখী সংগ্রামের পথে রেখে গেছেন হাজার অনুপ্রেরণা।

টিভিতে নজরুল সঙ্গীতের বিশিষ্ট শিল্পীদের সাক্ষাতকার দেখেছি অনেক। কেউ কেউ তো বলেছেন -
একপর্যায়ে অবচেতন মনেই কিছু সুর তাকে বেশি টানত। বড় হয়ে জানতে পারলেন, তিনি যে গান গাইতেন, সেগুলো আসলে নজরুলের। এভাবে একটা অমোঘ আকর্ষণ ও অবচেতনভাবে নজরুলের গানের সঙ্গে নিজেকে বেঁধে ফেলেছেন অনেক শিল্পীরা। আর এখনো সেই নজরুলকে নিয়েই কাজ করে চলেছেন।

জীবনের এতটা সময় নজরুলসঙ্গীতের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেয়ার একটা কারণও আছে। তার গানের সুর, লয়, তাল ও ছন্দের যে বৈচিত্র্য, সেটা আসলেই প্রচণ্ড শক্তিশালী। এ বৈচিত্র্যই শিল্পীদের এখন পর্যন্ত ধরে রেখেছে। এর চেয়েও একটি প্রাসঙ্গিক কথা হলো, নজরুলের গান গাইলে একজন সঙ্গীতশিল্পী যে কোনো ধরনের গানই গাইতে পারেন।

গর্ব করি এটা ভেবে যে, ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দের ২৫ মে আমাদের দেশের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার পুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।

নজরুলকে স্মরণীয় করে রাখার অঙ্গ হিসেবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের পুরুলিয়ায় "নজরুল অ্যাকাডেমি" নামে একটি বেসরকারি নজরুল-চর্চা কেন্দ্র আছে। চুরুলিয়ার কাছে আসানসোল মহানগরে ২০১২ সালে কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে। আসানসোলের কাছেই দুর্গাপুর মহানগরের লাগোয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে রাজধানী কলকাতার যোগাযোগ-রক্ষাকারী প্রধান সড়কটির নাম রাখা হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম সরণি। কলকাতা মেট্রোর গড়িয়া বাজার মেট্রো স্টেশনটির নাম রাখা হয় নজরুলের নামে।

আমাদের ত্রিপুরা রাজ্যেও সোনামুড়া মহকুমায় সরকারী মহাবিদ্যালয়ের নামও নজরুলের নামানুসারে।

ছোট বেলায় বইতে পড়েছি নজরুল নাকি বিদ্রোহী কবি! পরীক্ষায় প্রশ্ন আসতো 'বিদ্রোহী কবি কে ছিলেন'? না বুঝেই উত্তর লিখতাম কাজী নজরুল ইসলাম।

পরে জানলাম অসহযোগ মিছিলের সাথে শহর প্রদক্ষিণ করা হতো নজরুল গানে "ভিক্ষা দাও! ভিক্ষা দাও! ফিরে চাও ওগো পূরবাসী"---- নজরুলের এ সময়কার কবিতা, গান ও প্রবন্ধের মধ্যে বিদ্রোহের ভাব প্রকাশিত হয়েছে। এর সর্বোৎকৃষ্ট উদাহরণ হচ্ছে 'বিদ্রোহী' নামক কবিতাটি। বিদ্রোহী কবিতাটি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হয়।
এই কবিতায় নাকি নজরুল নিজেকে বর্ণনা করেছিলেন - তাই সেটা পড়লাম।

আমি বঞ্চিত ব্যথা পথবাসী চির গৃহহারা যত পথিকের,
আমি অবমানিতের মরম বেদনা, বিষ জ্বালা, চির লাঞ্ছিত বুকে গতি ফের
আমি অভিমানী চির ক্ষুব্ধ হিয়ার কাতরতা, ব্যথা সুনিবিড়,
চিত চুম্বন-চোর-কম্পন আমি থর-থর-থর প্রথম প্রকাশ কুমারীর!
আমি গোপন প্রিয়ার চকিত চাহনি, ছল করে দেখা অনুখন,
আমি চপল মেয়ের ভালবাসা তার কাকন চুড়ির কন-কন।
মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন-রোল আকাশে-বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়ুগ কৃপাণ ভীম রণ, ভূমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত।
আমি চির বিদ্রোহী বীর –
বিশ্ব ছাড়ায়ে উঠিয়াছি একা চির উন্নত শির!
তবে নজরুলের বানী সকলের হৃদয়ে বিরাজ করছে আজ।।

নজরুল সম্প্রীতির পুজারী ছিলেন নিসন্দেহে
তিনি তার শেষ ভাষনে উল্লেখ্য করেন -
“কেউ বলেন আমার বানী যবন কেউ বলেন কাফের। আমি বলি ও দুটোর কোনটাই না। আমি শুধু হিন্দু মুসলিমকে এক জায়গায় ধরে নিয়ে হ্যান্ডশেক করানোর চেষ্টা করেছি, গালাগালিকে গলাগলিতে পরিণত করার চেষ্টা করেছি।

সাম্য, দ্রোহ আর প্রেমের কবি কাজী নজরুল ইসলামের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি । কবির অনুপ্রেরণায় সকলের উপর সম্প্রীতির ব্রতী হোক। সকলের উপর শান্তি বর্ষিত হোক।

কল্যাণব্রত বসাক

ফেনী ব্রিজ (তিন)

নদীর ওপারে রামগড় থেকে দেখে এলাম মসজিদ, জেনে এলাম আযান কি? মন্দির কেন নয়! কেন মসজিদ ; পূজার বদলে আযান কেন!  -- এসব প্রশ্নে আর কোনো আলোচনা হলোনা। কেননা বাড়িতে জানলে পিঠের ছাল তুলে নেবে।

কিন্তুু আমাদের বাড়িতে এমন কি পাড়ার সব বাড়িতেই দেখতাম ঐ আযানের সময় মেনেই চলে । ভোরের আযানের সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠে পড়ে। লেগে যায় যে যার কাজে ।  মা কাঠের চুলায় চায়ের জল বসিয়ে দিয়ে এঁটো বাসন মাজত। ঠাকুরমা আর পিসি ধান সিদ্ধের হাঁড়ি বসাত, বাবা কাকারা চলে যেত কেউ মাঠে বা যে যার কাজে।  দুপুরে আযানের টাইমে অবশ্যই দুপুরে খাওয়া হয়ে যেত। বিশ্রামের পর বিকেলের আযান হল বাজার বা হাটে যাবার সময়। সন্ধ্যের আযানে ফের বাড়ি ফেরা।  এর বেশী আর তখন জানতাম না বুঝতামও না।

এদিকে রামগড় যাওয়া আসা গেল বেড়ে। সকালে পেতি পূরোহিতের মতো হেঁয় হেঁয় নমঃ কাইস্যা মন্ত্রের মতো পড়েই দৌড় নদীতে।  স্কুল টাইমে নাকে মুখে ক'টা গুঁজে স্কুল।  ফিরে আবার নদীর চর।  আর সুযোগ পেলেই নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের রামগড়। কিছু একটা যেন পেয়ে বসেছে।  ফারুক,শাহ আলম, রুবেলের ছোট-বড় বোন ছিল বেশ কয়েকজন।  বাড়ির ঘরোয়া পোশাকে ওদের দেখতে খুব ভালো লাগতো। দেখে থাকতে মন চাইতো। কেমন যেন একটা ঘোর।  তখন বুঝিনি -- পরে বুঝেছি শরীরে যৌবন বাসা বাঁধবে বলে বাঁশ,ছন যোগাডের আলামত চলছে। অবশ্য অপুদা ( পাড়ার সিনিয়র,যিনি আমাদের সব বিষয়ে খেয়াল রাখেন) ইতিমধ্যেই নিদার পেয়েছেন প্যান্টের নীচে জাঙ্গিয়া পড়তে হবে।

এত বেশী যেতে থাকলাম যেন রামগড়ই আমার বাড়িঘর। রামগড় বাজার,স্কুল,কলেব,হাসপাতাল, কালীবাড়ি সিনেমা হল,মসজিদ,ঈদ,সেমাই এটা ওটা সব।  প্রচুর খাওয়া দাওয়া। আম্মা'রা ভালোবেসে যা'ই পাতে তুলে দিতেন সব খেতাম।

তখনও ধর্মা-ধর্ম বুঝতাম না।  নিষ্পাপ ছিলাম।  যা পেয়েছি খেয়েছি স বাছাই করিনি।

এখন ধর্মের ষাঁড় হয়েছি খানা-খাদ্যে বাছাই করি।

চলবে -----
(ধারাবাহিকের পাতায়)

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...