Saturday, November 21, 2020

আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলি

আন্তর্জালিক কর্মকান্ডে রাজ্যের এই প্রথম আয়োজন।

সম্পাদকীয় প্যানেল

মনন স্রোতের সিলেবাসে তথ্যনির্ভর কিরাতভূমির কবিতার কাজ এসেছে। এই বিষয়ে দীর্ঘ চার মাস অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন মনন স্রোতের সদস্যরা, সন্মানিত অভিভাবকরা। সেই মুহূর্তগুলো থেকে যে অভিজ্ঞতা আমরা পেয়েছি সেগুলো এই সংখ্যাটি প্রকাশের সময় কাজে লেগেছে বলে অনুভব করি। বরাবরের মতোই সমৃদ্ধ একটি সংখ্যা প্রকাশ করতে আন্তরিক সহযোগিতা করেছে অনেকগুলো সৃষ্টিশীল হাত।

দীর্ঘদিন ধারাবাহিকভাবে একটি আয়োজন টিকিয়ে রাখা কঠিন হতো যদি সকলের সহযোগিতা না পেতাম। ২০২১ ইং বর্ষ থেকে মনন স্রোত নিজের কর্ম পরিধি, পদ্ধতিতে সংশোধন আনবে। সকলের সহযোগিতাকে পাথেয় করে নতুন উদ্যমে পথচলা শুরু করবে। নতুন রূপ নিয়ে আসছে মনন স্রোত। এই তথ্যটি দেওয়ার ছিলো সকলকে। তাই সম্পাদকীয় কলামের সহযোগিতা নিলাম।

এই সংখ্যাটিতে সময়ের ছাপ রয়েছে। যাঁরা লিখেছেন সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা। ভুল ত্রুটির দায়ভার আমার। সকলের কাছে সমাদৃত হোক এই প্রত্যাশা করি। সকলে খুব ভালো থাকুন।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত
  

ছবিতে মডেল শিল্পী সুমন || মনন স্রোত ডায়েরী থেকে

রুবেল হোসেন

শহীদের ভাই আমি

নদী দিয়ে গড়িয়ে গেছে 
অনেক অশ্রু জল, 
ইতিহাসের পাতায় পাতায় 
রইবে উজ্জ্বল। 
সময় পেরিয়ে গেছে 
বেশ অনেকটা, 
জঙ্গলী হামলায় হারিয়ে যাওয়া 
হাসানো ভাইটা। 
আটকাতে পারেনি কেউ
কোনও সেনাবল, 
মারণাস্ত্রে হামলা চালায়
শত শত দল। 
রক্তার্ত বক্ষ ছাতা 
কাঁপছে হৃদয় দ্বারা,
মায়ের মুখটি দেখার জন্য 
আজও দেয়নি সারা।
তিন রাঙ্গা পতাকার দিকে 
চাইলে গর্ব হয়, 
দেশের জন্য লড়বো আমি 
করবো না আর ভয়। 
কলম হাতে পত্র নিয়ে 
লিখছি একটুখানি, 
লিখবো শহীদ স্মরণ করে
অমর ভাইয়ের বাণী।

অদিতি সাহা

বাবা


সাত জনমের যদি কিছু হইয়া থাকে ভবে-
বারে বারে তোরই কোল বাবা! 
চাইছি আমি তবে। 
এই ভুবনের খরতাপে,তুই যে শীতল ছায়া। 
যতই কাছে থাকি তোরই, ততোই বাড়ে মায়া।। 
মায়ের মতো এই জগতে তুইও  তো বাবা আপন। 
হাত ধরে মোরে চলতে শেখাইলি,দেখাইলি কতো স্বপন।
ঘুম থেকে  রোজ জাগাইলি,মা মা বলে আমায়। 
দুহাত তুলে কোলে নিলি, স্নেহের আশিষ ছোঁয়ায়। আমার খুশি ছাড়া মনটা তোর চাইলো না তো কিছুই। 
সাজিয়ে রেখে আমায় সদা, মাঠে ঘাঠে নোংরা রইলি তুই।। 
বারো মাসের ছয় ঋতু, কতো কষ্ট করে খাটলি।
নিজের কষ্ট লুকিয়ে রেখে, আমার যতন করলি।। 
দিনের শেষের রোজগার দিয়ে, মেটালি মোর আবদার। 
মায়ের মতো জানি এই ভুবনে, বাবাও প্রতীক মমতার।। 
 পথে পথে ঘুরলি তুই মোরে            কাঁধে করে ।। 
সুযোগ পেলেই চুমুক দিয়ে দেখলি দুচোখ ভরে।। 
বড় হয়েও আজও রইলাম ছোটো, আমি তোরই কাছে। 
খুশির দোলায় মন ভরে যায়, তোর মতো বাবা আছে।

উর্মি সাহা

পথিক


কবি, তুমি থেমো না,,
তোমার পথ জলে জঙ্গলে সমৃদ্ধ--
তুমি তোমার পদ্যে পরিচিত নও,
তুমি তোমার যুদ্ধে বিকশিত।
পথিক তুমি থেমো না,,,
কবি তুমি প্রেমের জোয়ারে ভেসো না।
কবি তুমি বজ্র হও!
কঠিন হও,সত্যের তাগিদে।
স্তব্ধ করো প্রতিবন্ধকতা--,
রুদ্ধ করো অরাজকতার দরজা।
মেডেল মেমেন্টো তোমার প্রতীক নয়!!
তোমায় জয় চিহ্ন তোমার কলম।
তোমার শব্দে কাঁপুক এই পাথর শহর;
সন্ধি-প্রত্যয়ের সমন্বয়ে---,
জর্জরিত হোক মূর্খ লোকমহল।
তুমি নায়ক হও--,
তুমি নৈতিক হও,,,
জীর্ণকায় দেহগুলো সব--
চিঠি লিখুক তোমার নামে,
লোক দেখানো হোডিং গুলোর--
মাথা নামাও জাতির হাতে।
কবি,তুমি থেমো না!
চলুক তোমার পথ!!
উঁচু-নিচু উপত্যকা আর পাহাড় বেয়ে--,
মুষ্ঠিবদ্ধ হাত এগিয়ে দাও তুমি।
প্রশ্ন উঠবে হাজার!!!
যুদ্ধ আর ভালোবাসায় মাঝে দাঁড়িয়ে;
তুমি প্রেমিক হও,
সৈনিক হও মৃত্যু রুখতে।
রক্তস্রোতে তলোয়ার ভুলে--
কলম চালাও তর্ক ময়দানে,,,
কবি,তুমি থেমো না!!
তুমি অক্লান্ত পথিক হও।
কবি,তুমি মৃত্যুঞ্জয় হও।

অতনু রায় চৌধুরী

সময় 

জীবন পথে হেরে গিয়ে আজ দিশেহারা 
বোবা নিস্তব্ধ কোনো কথা বলছে না এরা ।
হারিয়ে গেছে স্বপ্ন সব, 
হারিয়ে গেছে বিলাসিতা ।
সময়ের কাঁটা এইভাবেই ঘুরে, 
হয়তো ছিল না ওদের জানা ।

মানুষ হয়ে মানুষকেই করত ওরা হাজারো অবহেলা 
সহজ সরল অনুভূতিগুলোকে নিয়ে করত প্রতিনিয়ত খেলা ।
প্রতিবাদ ছিল নিস্তব্ধ, ছিল না ন্যায় বিচার ।
সময় ঠিক ই জবাব দিয়ে দিল, 
বিনাশ হল ক্ষমতার ।

সোমা চক্রবর্তী

 আতঙ্ক 


সত্য ত্রেতা দ্বাপর কলি এরা চারটি ভাই।
মিলেমিশে একাকার পাপের হিসেব চাই।।

এই যুগ বলেছে সেই যুগ ভাই
কোন যুগের বিকল্প নাই,
পাপের বোঝা মাথায় নিয়ে
এখন যে ভাই মুক্তি চাই।

 বাড়ছে বাড়ি, বাড়ছে গাড়ি বাড়ছে কলকারখানা।
বাড়ছে পাপ, বাড়ছে চাপ বাড়ছে আতঙ্কের আস্তানা।।

 প্রলয় আসবে, আসবে প্রলয়
 সবার মুখে বুলি
হচ্ছে প্রলয় ঠিকই তো তাই
কেমন করে চলি।

 কি করব কি করব ভেবে পাচ্ছি না কুল।
 মরণব্যাধির লাইনে এখন দাঁড়িয়েছে মৃত্যুর ফুল।।

মন্বন্তর এর মন্বন্তর
আছেই শুধু জীবন্তর,
দুর্ভিক্ষের দুরন্তর 
বাড়ছে শুধু অন্তর অন্তর।

 ধরণী যে সইবে কত অন্যায় অত্যাচার,
 আতঙ্কের মশালে স্তব্ধ হয়ে যাবে;
 ধরণীর সব আধিকার।।

দেবব্রত চক্রবর্তী

চিতাভস্ম

একটি শশ্মানের পাশ কেটে যাচ্ছি
কিছু কয়লাও ছায় ছড়িয়ে আছে;
মাটির সামন্ত স্তুপে,
একটি কলসি পড়ে আছে শুধু
অহংকার কোথাও নেই।

কলসীর জল গড়িয়ে মিশে যাচ্ছে,
দাম্ভিকতা ও ভষ্মীভূত চিতায়,
আর কয়েকটি কড়ির মধ্যে 
কোটি টাকার আভিজাত্য।

শখের গাড়ি, বাড়ি, অভিলাষা
খর-কুটের মতোই জ্বলতে জ্বলতে
মিশে গেলো মাটিতে; আর
কিছু বিষাক্ত ধোঁয়ায় ।

মৃত্যুর আগেই আমার উপলব্ধি,
চিতাভস্মে।
ওপারে কিছু নেই
এ পৃথিবীতে স্বর্গ।

অনুপম দেব

মানুষ তুমি মানুষ হলে না

মানুষ ধর্মের হলে
জাতের নামে ভাগ হলে,
তবুও তুমি জাতির হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
মানুষ তুমি ধনী হলে

কাউকে আবার গরীব বানালে,
তবুও তুমি মানবতার হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
কীর্তনের ধ্বনি হলে
সকালের আজান হলে,
তবু তুমি মনুষ্যত্বের হলে না
কেননা মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
মানুষ তুমি পুরুষ হলে
আবার তুমি নারী হলে,
সেই নারীও রক্ষা পেলো না
কারণ মানুষ তুমি মানুষ হলে না।
নিজেরটা ভাবলে সদা তুমি
নিজের জন্য শোষণ করলে,
তবুও তুমি দেশের হলে না
মানুষ তুমি মানুষ হলে না।

পিয়াল দেবনাথ

ভারসাম্য

ঈশ্বর বলেন আমায় বিশ্বাস কর,
কর্ম বলে কর আমায়।
কেউ বলে টাকায় সর্বসুখ,
কেউ বলে খ্যাতনামায়।

জীবনের অসম পথে,
সব কি পাবি বল?
বারো মাস সুখের নামে,
মিলবে কিছু আগুন কিছু জল।

জীবন বাঁচবি যদি, করবি বোঝাপড়া,
ভুলবি না ভারসাম্য কঠিন।
ধন পেলে হয়ত শান্তি পাবিনা,
জীবনে সফল হয়ে ও হয়ত থাকবি প্রেমহীন ।

মিছিলের মুখ

জীবন কবিতা


শব্দগুচ্ছের দাবদাহে ভীষন পরিচিত শব্দ 
সমস‍্যা তোমায় ভীষণ ভালোবাসি
জানি তুমি বাসো!

দারুণ ভাবেই বাসো।

ভালোবাসা টা সমান্তরাল আপেক্ষিকতায়
টলছে শুধু হতাশার চিরকুট।
দুলছে পৃথিবীর দোলন গতি 
আর জীবন গতিতে পেয়েছি তোমায়,
তুমি আমি সমান্তরাল কোনে দাড়িয়ে  
চিৎকার করে বলবো একদিন 
ভালোবাসি.....ভালোবাসি।

অরিন্দম চক্রবর্তী

বেকারত্বের ছোঁয়া

চারদিকে কত হাহাকার, কিন্তু আমি বেশ আছি ,
শুধু একটু হাল্কা আশায় বাঁচি, এমনিতে বেশই আছি,
হাল্কা দারিদ্রতার ছোঁয়া আছে, সেটা ছাড়া সব ঠিকই আছে,
মাঝে মাঝে মধ্যপ্রদেশটাকে বোকা বানাই, অনেকটা ঐ দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর মতো।
অনেক সময় মনে হয় যদি ছোট থাকতাম কতনা ভালো হতো,
জীবনের এই কঠিন কঠিন সত্যগুলো আমাকে দেখে ভয় পেত,
কারন তদের আমি খেলার ছলে উরিয়ে দিতাম।
যদিও এমনটা ভাবার জন্য আমি মনকে একবারও দোষ দেইনা,
শুধু ভাবার সময় একটু মুচকি হেঁসে উড়িয়ে দি।
কারণ পোড়া মনের ভাবায় জীবন ধারা থেমে থাকেনা,
সে বাঁধন ছাড়া নদীর মতো আপন বেগে ধেয়ে চলছে,
তার গতিতে প্রতিনিয়ত পিশে যাচ্ছে কিছু মেরুদণ্ড। 
সেই মেরুদণ্ড গুলো অনেক চেষ্টা করছে একটু উঠে দাঁড়াতে, লড়াই করছে প্রতিনিয়ত,

কিন্তু এই চক্রগুহ ভেদ করে কিছু সিকি ছিটকে বেরিয়ে আসছে,
আর কিছু,,,, মেরুদণ্ড ভেংগে যাচ্ছে চিরতরে,
সেই মেরুদণ্ড গুলির মধ্যে আমারও একটি আছে,
জানি পরিণতি খুবি সন্নিকটে, কিন্তু আমার অজানা, তাই বেশ আছি।
প্রতিটি রাত শেষে শুধু একটা প্রশ্ন উঁকি দেয়,
আজকি ঠিক হবে আমার পরিণতি, এম্নিতেই ভালই আছি।

শাহেলী নমঃ

আমি সেই খুনি


এই মায়াৱ দুনিয়াতে.......
আমি যে এক মস্ত বড় অপৱাধী।
সমাজ আমাকে দেবেনা কাৱাদন্ড, কিন্তুু...
নিশ্চুপ আঘাতে হৃদয় আমাৱ খন্ড-বিখন্ড।
এই বসুন্ধৱা যেন এক ৱঙ্গমঞ্চ,
নিজেৱ সাথে নিজেই কৱছি অভিনয়!
নোনাজলে আঁখি ভাসলেও, ওষ্ঠে হাসি মলিন,
সবাৱ কথা ভাবতে গিয়ে....
নিজ ইচ্ছাটাই হয়েছে বিলীন।
কখনো আমি নাটকে প্ৰধান নায়িকা,
আবাৱ কখনো হতে হয় দাসী।
বেলাশেষে অবসৱ হলে মাঝে-মধ্যেই ভাবি,
আমি কী আদৌ আমাৱ মধ্যে আছি?
জীবন সমুদ্ৰে কবে আসবে ভাটা!
সেই প্ৰহৱ গুনি,
নিজস্ব স্বত্তা কে যে খুন কৱেছে, 
আমি সেই খুনি।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

অগ্রদূতী

"কবিতা"তোমার বহুমুখী রূপে 
বিমুগ্ধ আমি;
উন্মুক্ত কবরীতে শীতল ধারা
কাজলটানা চোখে অসীম উদারতা।

মেঘবর্ণ অবয়বে রূপোলী হাসি,
নানা শব্দ অলংকারে বিভূষিতা,তুমি  অনন‍্যা।
অবদাত তুমি;প্রণয়িনীও বটে
হৃদয় জুড়ে  অফুরান ভালোবাসা।

আত্মার সত্তা,না বলা ভাবনা যত
নীরবে নিস্বনে বলে যাও অনর্গল,
শুভ অশুভের বিচার আচারে নও আবদ্ধ
তুমি অপরাভূতা, উন্মুক্ত,জ্ঞানের দ‍্যোতিকা।

পথচলা বড্ড কঠিন বলে তুমি উন্মনা,
তবুও উত্তরণ এর পথ খোঁজ  অহর্নিশি।
তোমার শানিত বাক‍্যে বিদ্ধ অমানবিক মনুষ‍্যত্ব
আবার আবেগ তাড়িত চিত্তে ঝরাও অমৃত কথা।

'কবিতা' তুমি শান্ত,শিষ্টতা-নমনীয়তা তোমার প্রকৃতি,
আবার তুমি অকুতোভয়,প্রতিবাদী,দুরূহ,দুর্দম
নাদ ঝঙ্কারে জাগাও রোমহর্ষক শিহরন,
এই শটন সমাজে চেতনা জাগরনের তুমিই অগ্রদূতী।

কাউচার খান

অনুভূতি

তোমার চোখে বৃষ্টি হলেই আমার মনে ঝড় উঠে,
আমার চোখে তুফান এলে তোমার কি আর মন ছুটে!

তোমার পাড়ায় রোজ সকালে আমার পায়ের ছাপ পড়ে,
আমার পাড়ার নজরদারির তোমার কে আর খোঁজ করে!

তোমার জন্য যুদ্ধ বাধে আমার মনের সীমান্তে,
আমার জন্য যুদ্ধ হয় কি তোমার মনের ওই প্রান্তে?

তোমার বুকের পিঞ্জিরা'টা আমার তো ঠিকানা নয়,
আমার বুকের পিঞ্জিরা'তে তোমার নামে মিছিল হয়|

তোমার ভিতর আমি এখন আমার এ প্রাণ খুঁজে যাই,
আমার প্রাণের চিহ্ন নিখোঁজ তোমার কোনো খবর নাই!

পুনম মজুমদার

মাটির পসরা
                    
     উৎসবের মরসুমে
     মাটির পসরায় হাট সাজে।
     বিবর্ণ অভাবের চিত্রে
     হাজার হাজার চোখে
     শুধু মরুভূমি জাগে।
     সলতে বিহীন প্রদীপ হাতে
     বিক্রেতারা জোরে হাঁকে।
     কেহ করে দর-দাম
     কেহ বলে, হে রাম!
     এসবের এখন আর
     আছে নাকি রংবাহার!
     এভাবে যাওয়া আসা
     উষ্ণ নিঃশ্বাসে পথ চলা।
     শহরের সন্ধ্যা ডিঙিয়ে
     কুমোর পাড়ায় নামে
     নিশুতির নীরবতা।
     শত হেলা,শত পরখ সহে
     জমাট বাঁধা মাটির বুকে
     মাটির পসরা গুমরে কাঁদে
     হাজারো কুমোরের অব্যক্ত ভাষা হয়ে।

সঞ্জয় দত্ত

মাস্ক
              
কতো ক্লান্ত আমি,সুখ হয়তো ছেড়ে গেছে আমায়!
জীবন রক্ষার ভারটা নিয়ে বেশ আনন্দ বোধ করি।

বাজারে দাম আমার অনেক বেড়েছে।
নিজের সৌন্দর্য দেখে নিজেই অনুভূত হই।

দাম বেড়েছে বলে অনেকের চোখে ভালো খারাপ দুটোই।
যখন মূল্যবোধ হারিয়ে ফেলি
তখন শুধু অপবাদ।

নিজের ইচ্ছেটাকে কখনো ভালোবাসতে পারিনি,
আমার জীবনে বোধহয় ত্যাগ ছাড়া কিছুই নেই!

রাহুল শীল

মূল অনুষ্ঠান

প্রতিদিন সকালে একটা চিৎকার শুনি
বৃষ্টি এসে প্রতিবাদ সমাবেশ গড়ে তুলে,
বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠে দুটি ভিন্ন মঞ্চে।

প্রতীকী পোশাক খুলতে হয় মূল অনুষ্ঠানে
সময় পেলে একটু বক্তব্য রাখার সুযোগ আমিও পাই,
ওরা ধর্মীয় উৎসব আর ধর্ষণ একই পর্যায়ে নিয়ে আনে।

বিস্তারিত জানাতে পরবর্তী অনুষ্ঠান সূচী ‌ডাকতে হয়,
বিস্ময়কর সব তথ্য চোখের সামনে ভেসে ওঠে,
কিন্তু সমর্থক হিসেবে যারা থাকে তাদের সবাই ধর্ষণকারী।

অবশেষে হাসপাতাল চত্বরে ময়নাতদন্তের দায়িত্ব আমাকেই দেওয়া হয়!

পঞ্চদীপ দেবনাথ

দু'মুঠো ভাত

ক্ষিধের জ্বালা পারিনে সইতে
দাও  আমায় দু'মুঠো  ভাত,
রেল স্টেশনে  ভিক্ষা করি
আমি দিন রাত।
তোমরা তো বড় মানুষ
আছে গাড়ি - বাড়ি,
মোদের তো নেই ধন সম্পদ
আছে নিয়মজারী।
গাছ তলায় থাকি মোরা
থাকি রাস্তার মোড়ে,
বিধাতা ও মেঘ সেজে 
তাড়িয়ে দেয় দূরে।
শিক্ষা-দীক্ষা পাইনি মোরা
পাইনি ভালোবাসা,
দু'মুঠো ভাতের জন্যে
এই দুনিয়ায় আসা।

গোপাল বণিক

চাওয়া -পাওয়া

আশায় আশায় বুনেছিলে এক বুক স্বপ্ন।
কিন্তু কথা রাখলোনা কেউই,
অথচ-
সাগরে বাঁধ দিয়ে সেতু তোমরাই গড়েছিলে,
পাহাড় কেটে সমতল তোমরাই করেছিলে,
জমি চাষ করে ফসল....
সভ্যতার উন্নয়নের চাকায় লেপ্টে আছে তোমাদের কত রক্তঅশ্রু ঘাম।

যুগ যুগ ধরে মোমবাতির মতো আত্মবিলয়।
রঙিন স্বপ্ন আঁকবে বলে,
দিনরাত এক করে প্রতীক্ষা করেছিলে
বিনিময়ে পেলে শুধু এক বুক হতাশা।

এসো,তোমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ঘটে যাক
এক আগ্নেয় বিস্ফোরণ।
সেই ছাইভস্ম থেকে উঠে আসুক এক রঙিন স্বপ।
যে স্বপ্ন জন্ম দেবে এক নতুন ভোর।

পরিতোষ সরকার

রক্তিম আকাশে তোমার স্মৃতি

দিনের শেষে যখন বসন্তের লাল আবিরে
সেঝে উঠে পৃথিবী,
নীলরঙা জলাশয় যখন রক্তিম হয়ে উঠে,
জীবনানন্দের হায় চিলরা ডানা মেলে
নিজেদের প্রেমিকা আর ছোট চিলে কোঠার
উদ্দেশ্যে র‌ওনা দেয়,
সুকান্তের ঝলসানো চাঁদ উঁকি মারে
বিরাট আকাশের বুক চিড়ে;
তখন সকল ক্লান্তি ভূলে আমার প্রিয়াশ্রীর
কথা আর অসংখ্য স্মৃতি ভেসে আসে
মনের প্রতিটি আনাচে-কানাচে।
দু-একটা শ্রমিকের দল ঘরে ফিরে যায়,
জেলেরা নৌকা ঠেকায় তীরে।
আর আমি প্রিয়ার হাত ছোঁয়ার আশা নিয়ে
বসে থাকি কোনো একটা গাছের নিচে
উড়ে যাওয়া সারিবদ্ধ বলাকার পানে চেয়ে।

বিপাশা দেব

বহু সঙ্গমী

মেঘের ভাঁজে গোধূলি ল্যাং মারে
সন্ধ্যার মাস্তানকেও।

বহু সংগমির প্রথমে মুখ, পরে দেহ ..... 
পরে চাঁদের সাথে শোয়।
ফষ্টিনষ্টি চলে বহুক্ষণ.... 
সূর্য কড়া নাড়লে
দুজনের হাঁপিয়ে ওঠা
অপাপবিদ্ধ অবস্থান
দ্বিধাহীন ভাব
কি যেন দংশায়

দোষহীন জানলার কাঁচ 
স্টেশন পেরিয়ে ট্রেন ধরে

চরিত্রহীনদের এইতো বিজয়। 

সাধনা দেবনাথ

মা ও মেয়ে
                      

ও পাড়ার কমলী আজ আত্মহত্যা করেছে,

তার যে মস্ত বড় দোষ,মেয়ে জন্ম দিয়েছে।
মায়েরা ছেলের সবটাই শুনে বউয়ের একটাও না।
আরে হতভাগা তুই তোর মাকে বোঝাতে পারলি না।
তুমিও তো দাদুর মেয়েছিলে,আজকে আমার মা
সেই তুমিই আমার মেয়ে হয়েছে বলে ওর মুখটিও দেখছনা।
মেয়ে হয়েছে বলে শাশুড়ি,ননদ গায়ে দিল হাত
মেয়ে জন্ম দেওয়া কি একটা মায়ের এতই অপরাধ?
পৃথিবীতে মেয়েরাই তো অনুভব করতে পারে মায়ের যন্ত্রণা।
হতভাগা ছেলেদের তো অনুভব করা ভাগ্যেই জুটে না।
দুর্গা মাকে প্রণাম কর লক্ষ্মীকে নিত্য পূজা অর্চনা-
সব মেয়ে তো মায়েরই রূপ তোমরা সেটা মান না।
মেয়েই মা, মা ও মেয়ে পরম পিতার দান।
মেয়ে হয়েও তোমরা কেন কর মেয়েদের অপমান?

শুভশ্রী দাস

ভয় দেখাবেন না

আর যাই করুন,ভয় দেখাবেন না।
কারন ঐটা ছাড়া আপনারা আর কিছুই পারেন না।
জন্ম র সময় থেকেই, এটা করো না সন্তান এর অমঙ্গল হবে।
এখানে থাকো চুপটি করে,একটা কথা বোলো না।
টাকা থাকলেই যদি ভালো মানুষ হতো,
তাহলে তো আত্মহত্যা শব্দ টাই উঠে যেত ।
ছেলেদের ভয়ে একা রাস্তায় যেও না,
বরং ছেলেকেই সঙ্গ করো।
সে যেন ভালো ছেলে হয় ।
তোমার মতের ভালো ছেলে নয় ।
আমার মতের ছেলে।
মেয়েরা নাকি হিংসুটে আর বেয়াদব।
ছেলেরা কী সবটা ভালো ।
ভালো ছেলে যেমন হয়।
ভালো মেয়েও হয়।
আর যাই হোক ভয় দেখাবেন না।
সূর্যের তেজ এর মতো রাতের অন্ধকার ও।
দুই কে মানুষ ভয় পায়।
যিনি আদি সৃষ্টির মূল,তিনিই ধ্বংস ।
ভয় যদি পেতেই হয়, তাকেই পাব।
দয়া করে আপনারা ভয় দেখাবেন না।
কে বা বলতে পারে,
আমার ভয়েই আপনি ভীত ।তাই ভয় দেখাচ্ছেন ।

অভিজিৎ রায়

অনামিকা

যে ছেড়ে যেতে চাইছিল ছেড়ে দিলাম আমি।
বিধাতা যাকে ঠিক করে রেখেছিল
এখন বুঝতে পারলাম সে যে কত দামী।।
 

শুনেছি একটা মেয়েকে কখনো বিশ্বাস করা যায় না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যাকে বিশ্বাস না করে পৃথিবীতে স্বপ্ন দেখা যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ে কখনো সৎ হতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শিখিয়ে দিল সততা ছাড়া বাঁচাই যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ে কখনও ভালোবাসতে পারে না,
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শিখিয়ে দিল ভালোবাসা ছাড়া একটা মুহূর্তই বাঁচাই যায় না।।

শুনেছি একটা মেয়ের শশুর শাশুড়ীর কে অবহেলা করে।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে শশুর শাশুড়ীর কে ভগবান রূপে আগলে ধরে।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি বিয়ের পর আলক্ষী রূপে পরিচিত হয়।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে সংসারে আসার পর যেন স্বয়ং লক্ষী রূপে ভূষিত হয়।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি কখনো কষ্ট সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে হাসিমুখে অনেক অকল্পনীয় কষ্ট সহ্য করলেও কাউকে বুঝতে দেয় না।।

একটা মেয়ের নাকি কখনো দারিদ্রতা সহ্য করতে পারে না।
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যে ছোট বেলা থেকেই দারিদ্রতা ছাড়া কিছুই চুখে দেখলো না।।

শুনেছি একটা মেয়ের নাকি, ভালো কাউকে পেলে নিজের স্বামীকে ও ছাড়তে ভুলে না
কিন্তু এই সেই অনামিকা, 
যার ভালোবাসায় সামনে একটা কাটাও আসতে দেয় না।।

মনে প্রশ্ন জাগছে 
কে সে এই অনামিকা যার কথা শুনে বিশ্বাস হচ্ছে না।
এই অনামিকা তো সেই অনামিকা,
 যে ভগবান শিবের স্ত্রী গৌরী ছাড়া আর কেউই না।

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

রাত্রি এলো কাছে

অবশেষে রাত্রি এলো কাছে 
দুর্লঙ্ঘ পাহাড় ডিঙিয়ে একপা একপা করে 
ভেজা চোখে রাত্রি এলো 
বসনে সুসজ্জিত বাসরের সুগন্ধির মতো 
দুরারোধ্য আকর্ষণে চোখের পাতায় শিশিরের ভেজা বালু 
দুই হাতে রক্ত ক্ষত মা কালীর প্রসন্নতা 
চণ্ডীমূর্তি রাত্রি এলো 
ঘোলাজলে প্রতিবিম্ব ঢেউ খেলে 
এক থেকে শতকের রূপচিহ্ন ভেসে ওঠে 
ভাসানের আগে 

অবশেষে রাত্রি এলো কাছে 
প্রীতি ও শুভেচ্ছার সহস্র ডালা 
জোনাকির ক্ষীণ আলো সাজিয়ে 
 চন্দ্রিমার    অহংকার পদতলে মাড়িয়ে 
দুইহাতে চেপে ধরে 
রাত্রি এলো চরম প্রকাশে।   

মাহমুদ মুকিত

জীবন সারি


এই যে আকাশ কাঁদছে ভারি
দেখছে কি কেউ কার সাথে কার কখন আড়ি ? 
হঠাৎ কেন মাঝ দুপুরে নিকষ কালো সন্ধ্যে এলো
কেন-বা ওই রাতের তারা মান করে আজ খুব ঘুমালো ! 
কেউ জানে না,
ভিতর কেন জ্বলছে তবু বাইরে তার বুজছে আলো! 
কিসের ক্ষত কেমন করে
পঁচন ধরে, 
শুরুতেই নিঃশেষ হলো।
দিবস নিশি কতই খেলা 
কেউ দেখে না কারো জ্বালা
কেউ বোঝে না নিজের ছাড়া
ব্যথা কত তীব্র ভাবে দিচ্ছে নাড়া। 
আধ চক্রেই ধুঁকছে গাড়ি
ফিরছে সবে নিত্য বাড়ি
মুছে গেলে মেঘের আড়ি
জোছনা গায় সুখের সারি।

সংগীতা শীল

বকবকানি
     

সকালে ঘুম ভাঙে অনিমেষ কাকুর ঝাঁঝালো কন্ঠস্বরে । প্রতিদিন একই ডাইলগ "মজুমদার বাড়ির ছেলেকে দেখে কিছু শিখতে পারিস না? দেখ তো ছেলেটা  কেমন সারাদিন পড়াশুনা নিয়ে থাকে। আর তুই কিনা ক্রিকেট নিয়ে পড়ে থাকিস। দিন দিন অমানুষ হচ্ছিস; কাজকর্ম তো নেই, বাপের হোটেলে খাচ্ছিস দাচ্ছিস,  এভাবে আর কতদিন!"

এমন ডাইলগে বন্ধুরা সবাই কমবেশ অভ্যস্ত, এক কান দিয়ে ঢোকে, আরেক কান দিয়ে বেরিয়ে যায়। আর হজমীগুলির মত বিকালের মিটিংও মিস হয় না।
 সেদিন বন্ধুরা মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম, দেখলাম 'সোমু' বেশ চুপচাপ। 
'হৃত্তিক'টা হুট করে বলে উঠলো; "কিরে বাপের বেটা আজও গালি খেয়ে এলি নাকি!" হাসির কথায়  বেশ জমে উঠলো আড্ডা ।

  আমি চাপা সুরে সোমুকে বললাম, বন্ধু মন খারাপ করিস না। 
সোমু বললো বাবার কথায় কষ্ট পাইনারে, নিজের উপর রাগ হয়। 
শুধালাম কেন? 
বললো "যদি আমিও 'কিষাণে'র মতো হতে পারতাম মেধাবী ছাত্র! তাহলে হয়তো রোজ রোজ কথা শুনতে হতো না।"

হেসে বললাম হাতের আঙ্গুলগুলো কি সব সমান? কিষাণ পড়াশুনোতে খুব ভালো কিন্তু ও কি তোর মতো ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে?  রমেশের মতো গাইতে পারে! অপুর  মত ভালো নাচতে পারে?  ওরা সবাই পড়াশুনোয় অশ্বডিম্ব। হাহাহা! 
আবার অখিল সারাদিন পড়েও সেই টেনেটুনে পাশ করে। পারুলকে দেখ সারাদিন ঘুরেবেড়ায় তবুও ক্লাশে টপ করে প্রতিবার। আমি মনে করি সমসাময়িককে নকল নয়, এমন কাজ করবো যেন অন্যরা আমাকে নকল করে। তাহলেই  অভিভাবকদের বিশ্বাস বাড়বে, বকবে না।

সোমু কিছুই বললো না, কিন্তু অনুভব করলাম, তার  চোখগুলিতে আলাদা একটা দ্যুতি খেলছে।

আড্ডা শেষে যার যার বাড়ি ফিরে গেলাম। এভাবেই কেটে যায় কলেজ দিনগুলি।  একদিন শুনি মাস্টার কাকু ছেলেকে বকে বলছে "কি খেলা খেলিস, সোমুর মত অনারিয়াম আনতে পারিস না!"

গৌতম দাস

অবলার পথের কাঁটা
                                        
মুক্ত চিত্তে পথে হাঁটার সুযোগ নেই অবলার
শুধু কাঁটা আর কাঁটা।
হাটে ঘাটে মাঠে , তেল মেখে দাঁড়িয়ে থাকে।
কাঁটার মুখে বারবার পড়ে ঝাঁটা।
তবুও হয় না সাফ।

আরও ধৈর্য্য নিয়ে বসে, শক্ত করে বুকের পাটা।
অবলা মেধায় শ্রেষ্ঠ ইচ্ছা শক্তি যথেষ্ট।
দেশ দুনিয়ার নাম করবে একথা স্পষ্ট।
পথের কাঁটা বলে-তার কত সাহস?
সকালে বাজারে ,বিকালে যায় খেলায়
মেয়ে মানুষ!ঘরের রান্না করাটা মানায়।
উচ্চ মাধ্যমিক বাহ্ বেশ,কলেজ?অযথা টাকা নষ্ট।
কাঁটার তালে ,পরিবার বিয়ে দিতে হল সচেষ্ট।

যদি বলি জুতা কোথায়?প্রশ্নটা পাপে পূর্ণ।
ব্যাথার ঔষধ?এখনও আবিষ্কারে শূন্য।
শক্ত এই কাঁটা অতি জঘন্য।
শোনো বোনরা যদি হও সাদাসিধে!
নানা বর্ণের কাঁটা নির্দ্বিধায় পায়ে বেঁধে।।
ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে হল চুরমার।।
বাধা হয়ে দাঁড়াল পথের কাঁটা অবলার।।
নিঃশব্দ কান্নার ব্যাথা কী প্রাণেশয়।
সর্বনাশা কাঁটা যেন কারোর কাঁটা না হয়।
ধিক্কার! কাঁটার গায়ে অশেষ বসন্ত ফুটুক।
ভোরের তেজোমূর্তি আরও তেজি হয়ে উঠুক।

প্রীতম শীল

বেকারের আর্তনাদ
       
রাজনীতির যাঁতাকলে,
শিক্ষা আজ অসহায়।
লক্ষ বেকারের হতাশায়,
কার কি আসে যায়।
টাকার কাছে শিক্ষা আজ,
মেনেছে নিদারুণ হার।
টাকা দিয়ে মূর্খরাও জ্ঞানি হয়, 
গলায় দিয়ে অলংকার। 
বেকার বসে ভাবি হায়,
আমি বড়ো অসহায়।
এই জীবন রেখে লাভ কি?
আমি যে নিরুপায়।।
তবুও লড়াই করে,
শেষে ঝরে পড়ে।
পৃথিবী ত্যাগ করে।
ইতিহাস গড়ে বারে বারে।।
আমিও তাদেরই একজন,
এ জগৎ-সংসারে। 
অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
পৃথিবীর ঐপাড়ে।

আক্তার হোসেন

শীতের সকাল

ঘুম ভেঙেছে পাখিদের কোলাহলে,
ভ্রমরের গুঞ্জন শোনা যায় ফুলে ফুলে। 
শিশিরের বিন্দু ছড়িয়ে পড়েছে ঘাসে,
দোয়েলেরা ডাকছে তাদের প্রিয় কার্তিক মাসে।
কাশ ফুলগুলো দুলছে শীতের হিমেল হাওয়ায়,
হয়ে উঠেছি মনমাতানো তাদের আলতো ছোঁয়ায়। 
কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে বাংলার গ্রাম, 
তাহার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে শিমূল,পলাশ, জাম।
নদীর জল বয়ে যাচ্ছে ঢেউয়ের ছন্দে ছন্দে, 
হাঁস গুলো সব চলছে তাদের মনের আনন্দে।
ধানের শীষ বেয়ে পড়ছে শিশিরের কণা, 
গ্রামবাংলার অপরূপ দৃশ্যে মন হয়ে উঠে আনমনা।
খেজুরের রস তুলতে গাছিয়ারা যাচ্ছে আঁকাবাকা পথ বেয়ে,
অধীর অপেক্ষায় শিশুরা আছে তাদের পথ চেয়ে। 
পলাশের বনভূমির মাঝে উঁকি দিয়েছে সূর্যের সোনালী আলো, 
বাংলার শীতের সকাল কে আমি বাসিয়াছি ভালো।

পূজা মজুমদার

অকুতোভয়  

আমি ভয়ার্ত কোনো যোদ্ধা নই যে, 
সব মাথা পেতে মেনে নেবো।
আমি হেরে যাওয়া কোনো সৈনিক নই যে,
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের সব অনিয়মকে ভেঙে
দিতে পারি করে খান খান।

আমি দিতে পারি করে দুর সব যত
অন্ধকারের তিমির রাত।
গুড়িয়ে দিতে পারি আমি সব 
সমাজের যত কালো হাত।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের যত জঞ্জাল মুছে,
মানুষকে দিতে চাই পরিত্রাণ।

অন্যায় যদি দেখি হতে তবে,
দিই না কখনও প্রশ্রয়।
আমি চাই নি নিতে কখনও কভু, 
অনিয়মের কাছে আশ্রয়।

মৃত্যকে নিয়ে পথ চলি আমি, 
করি না কখনও মরণের ভয়।
অবিচারের কাছে তবুও আমি কখনও,
স্বীকার করিব না পরাজয়।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি চাই হতে সমাজের সেই
শহীদ মায়ের সন্তান।
অন্যায়কে ভেঙে দিয়ে যারা,
হয়ে আছেন গরিয়ান।

বেঁচে যদি থাকি আমি তবে 
করে যেতে চাই এই সংগ্রাম, 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমি
করেছি মুক্তি পণ।

আলমগীর কবীর

আমি

থাকি আমি সদা নীরব
বলতে চাইনা কোনো কথা,
আমার কোনো কথায় যদি
লাগে কারোর মনে ব্যাথা।

ইচ্ছে করে দেইনা জানি
কারোর মনে ব্যাথা আমি,
ভুলে যদি হয় দুঃখ
আমার কথায় একটুখানি।

কেউ যদি চায় আমার ক্ষতি
তাঁদের নামে লিখে ইতি,
মুছে দেব তাঁদের যত
আমার কাছে আছে স্মৃতি।

আমি কারোর চাইনা ক্ষতি
পারলে পাশাপাশি থাকি,
না পারিলে শুভ কামনা
এটাই হচ্ছে আমার নীতি।

আমি যারে বাসি ভাল
যদিও সে ব্যথা দিল,
তবুও চাই, আমি তাঁর
জ্বলোক আরো প্রদীপ আলো।

সজীব পাল

ঐতিহাসিক জীবন

যে আমাকে অগ্নিতে ঢেলে দিয়েছে,
আমি তারেই বেসেছিলাম ভালো !
অশ্বত্থ বটের মতো,
হয় তো বা-
সমুদ্রে ডুবে থাকা পাহাড়ের মতো।
জীবনের গতিপথে যত ধূসর ছাই 
তোমার নামে মারিয়েছি;তাতে ব্যথা নাই ,
অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড জানে আর জ্লন্ত অগ্নি
পোড়া পাখির ডানা পোড়ানো কত কঠিন!
অনামিকা তুমি নক্ষত্রের মূল
তাই কি এত তোমার অহমিকা?
তাই কি জীবনের সব জ্যোস্না 
নিমেষেই শোষন করে তুমি উজ্জ্বল তারা?
মনে পড়ে অনামিকা -
বিদীর্ণ আকাশে মেঘের মেলায়
কালো পর্দায় যে ফুটে ছিল জীবন্ত ছবিরা!

সৈকত সরকার

মানুষ যদি একলা হয়ে যায়


মানুষ যদি একলা হয়ে যায় তবে অমরত্বেও ঘৃণ ধরে, 
মানুষ যদি একলা হয়ে যায় তবে নীরবে অশ্রু ঝড়ে। 
একলা মানুষের -
রূপের কোনো দাম নেই গুনের কোনো দাম নেই
বিদ্যার কোনো দাম নেই বলের কোনো দাম নেই। 

নির্জন অট্টালিকা ঠিক যেনো মৃত্যু পুরী, 
অর্থ যতটা না পেট ভরায় তারচেয়ে বেশি দম্ভ বাড়ায় কিন্তু সেই দম্ভ দেখবে কে? 
জড় বস্তু কি দম্ভ বুঝে?? 
আর যেই যৌবন আকাশের চাঁদ ছিল একসময় তা মাটিতে নেমে অন্ধকার খুঁজে, 

আসলে নিজেকে বটগাছ দাবী করলেও প্রকৃত পক্ষে আমরা  একটি বিশুদ্ধ স্বর্ণলতা ছাড়া আর কিচ্ছু নই। 

কবিতা সাহা

অনিচ্ছাকৃত বিদায়
        
আমার আমিটা ভালোই ছিলাম,
সুখে ছিলাম বেশ।
এইতো সেদিন মনের দ্বারে,
হঠাৎ তোমার প্রবেশ।।
তোমার তুমিটা এখন ব্যস্ত ভীষণ,
পাই না কোনো খোঁজ।
নিদ্রাহীন রাতে বোবাকান্নায়,
আমার বালিশ ভেজে রোজ।।
সহস্র তারার উপস্থিতিতে,
তোমার আকাশ আলো।
তবে তুমি বিনে আমার আকাশ,
বড্ড অগোছালো।।
বিষাদগ্রস্ত তোমার মুখে,
হাসি ফোটাতে গিয়ে।
নোনাজল আর অবহেলা,
আমি পেয়েছি বিনিময়ে।।
এইতো সেদিন আমায় নিয়ে,
শত স্বপ্ন বুনেছিলে।
তবে আজ কি করে এত সহজে,
সব ভুলে গেলে?
মাঝপথে হাত ছাড়ার হলে,
ধরেছিলে কেন তবে?
একাকীত্বের দাবানলে পুড়ে
ছাই হচ্ছি নীরবে।।
অজুহাতের পাহাড় গগন ছুঁলো,
ইচ্ছেরা আজ মৃত।
বিরক্ত আর করবো না তোমায়,
তুমি থেকো নিজের মতো।।
তুমি চেয়েছিলে স্বাধীনতা তাই,
দিয়েছিলাম মুক্ত করে।
বিশ্বাস ছিল খাঁচার পাখি,
ফিরবে আবার ঘরে।।
কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,
মিথ্যে ছিল সব।
কথায় কথায় তর্ক থেকে,
সৃষ্টি কলরব।
অন্ধ বিশ্বাসের দরুণ সন্দেহ,
করিনি কভু তোমায়।
শেষমেশ আমায় অন্ধ প্রমাণ করে,
দিলে অনিচ্ছাকৃত বিদায়।

সংঘমিত্রা নিয়োগী

সময়

চলন্ত ট্রেনটি অপরিচিত স্টেশনে পৌঁছনোর প্রত‍্যাশায় বেগবান,
স্টেশন মাস্টারের সিগন্যাল এড়িয়ে ধাবিত ,
প্রতিটি ভোরে নতুন রোদ গায়ে মাখে,
রাতের আঁধারে গুহার পিঠে স্বপ্নেরা মাথা ঠুঁকে।
অজানা স্টেশনের ল‍্যাম্পপোস্ট দেখে স্বপ্নভঙ্গ ,
কুয়াশার সান্ধ‍্যভাষায় শেষদিনের কবিতার ভাবনা খেলায় মত্ত থাকে।
অকুল দীর্ঘ পথের মাঝবরাবর দাঁড়িয়ে "সময়" ভবিতব‍্যের রেখা আঁকে।
এ কোন্  শূন্যতার পাকে ঘোরছে!
অবশেষে গন্তব্যের চিরকুট ছেঁড়া বাতাসে মেশে।
যে বাতাস ধরতেই টুকরো টুকরো হয়ে উড়ে যায় ব‍্যয়িত সময়ের সাথে‌!
জীবনশৈলীর  এলোমেলো ঘড়ি  অঙ্কিত আকাঙ্ক্ষার গন্ডির বাইরে!!

পৌষালী ভৌমিক

ছিল কী!

ছিল কী সব? 
তিক্ততার আগুনের এই স্পর্শ,
না বোঝার অনলে করুনাহীন দৃশ্য
ছিল কী সব?
মূক বধিরতার পেছনে জমা কথা,
চেয়েও না চাওয়ার সেই ব্যাথা
ছিল কী সব? 
জেনেও সেসব না জানার ভান, 
অযথা রাখা নিজের মান
ছিল কী সব? 
অশ্রু ভেজা রাতের কাহিনীতে,
পারলেনা যেন আপন করে নিতে
ছিল কী সব? 
একপথে হেঁটে চলা,
তবুও যেন অধরা
ছিল কী সব?
সত্যিই কি ছিল সব?

কণিকা দত্ত চৌধুরী

এ কেমন স্বাধীনতা


স্বাধীনতা তোমাকে জানাই আমার অন্তরের ভালোবাসা  আর  সুভাসিত অভিনন্দন। 
শত শত বীর পুরুষ, বীর শহীদদের জানাই কোটি কোটি প্রণাম। 
অক্লান্ত পরিশ্রম, নিপীড়ন, নির্যাতনের গ্লানি, অসহ্য যন্ত্রণা, নারী শোষণ। 
অবশেষে পূর্ণতা প্রাপ্তি স্বাধীনতার। 
স্বাধীনতা করেছ তুমি তিয়াত্তর বছর পার,
বলো স্বাধীনতা বলো?  জবাব দাও
আছে কি কোনো সঠিক উত্তর তোমার কাছে?   

নেই, এখন আর সুট বুট পরা খাকি পোষাকের আড়াল, নেই নীলচাষ, নেই কোন বাঁধা ধরা শৃঙ্খল। 
নেই পরাধীনতার কেন্দ্রীয় কারাগার !
তবুও কেন, কেন বলো স্বাধীনতা? 
কেন অবাক করছ তুমি আমাকে? 
স্বাধীন জনগণ উত্তর দাও? 
জবাব চাই আমার? 
কোথায় সেই বীর পুরুষদের আত্মবলিদান? 
আজও কেন সমাজের একশ্রেণীর মানুষ অসহায়, নিঃস্বহায়? 
আজও কেন শিশু থেকে আবাল বৃদ্ধবনীতরা সভ্য সমাজে ধর্ষিত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত? 
জবাব দাও আজও কেন মানুষের দুবেলা জুটে না অন্ন?
নোংরা দুর্ণীতিতে ভরা স্বাধীন সভ্য সমাজ !
নেই উপযুক্ত শাস্তি, ন্যায় বিচার। 
এমন স্বাধীনতা তো আমি চাইনা।
 যেখানে হানাহানি , বিদ্বেষ, লাঞ্ছনা, গঞ্জনা, শোষক, শোষিতার বর্বরতার খবরে 
রোজ করতে হয় দৃষ্টিপাত !
সুসজ্জিত জাতীয় পতাকা, আর
জয়হিন্দ, বন্দেমাতরমে হয়না স্বাধীনতা প্রাপ্তি। 
আমি চাই সুভাতৃত্বের বন্ধন, নারী জাতির সন্মান, মমত্ববোধ, ন্যায় বিচার, দুর্ণীতি মুক্ত সমাজ। 
তবেই হবে আমার স্বাধীনতা প্রাপ্তি;
গর্বিত হব আমি স্বাধীন ভারতীয় নাগরিক বলে।

লিটন শব্দকর

তুমি

তোমার টানা টানা চোখে
তাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস সুমেরীয়, 
সিন্ধু মহেঞ্জোদারো হরপ্পা
 আর নীল মিশরীয়।
নূপুরের রঙে বিলীন
হোয়াংহো ইয়াংসির বুক,
কাছাকাছি রূপেও চঞ্চল
 আহা ওই হাসিমুখ।
দুপুরের নদীর জলে মেশে
দাগী বসন্তবৌরী কিংবা
 ধনেশের পালকের রঙ;
পলির সবুজ আদর
কাছিমের ডিম বালির তলায়,
তোমার বয়স আমার 
চোখেই পড়েনা কোনদিন 
হেমন্তরাতের শিশির
 শিহরণ আঁকে যখন
জ্যোৎস্না জলের রেখায়।

প্রীতম ভট্টাচার্য্য

কথা রাখতে পারিনি      

যারা একটু নেতা টাইপের লোক, রাজনৈতিক দলের ক্ষমতা পরিবর্তনে তাদের কোন অসুবিধা হয় না। তারাও সময় মত বদলে যায়। অসুবিধা হল আমার মতো সাধারণ মানুষের। হঠাৎ করে বদলির কাগজ হাতে এলো। ধারণা ছিল না। তবে সরকারী চাকরি, যেখানে পাঠায়, যেতে তো হবেই।কিছুই করার নেই।আগরতলা থেকে ধূপতলি। দূরত্বটা নেহাৎ মন্দ নয় । তার আগেও আমি বেশ কয়েকবার বদলি হয়েছি বটে, তবে শহরের বাইরে কখনো যাই নি। 

তুলামুড়াতে আমার এক বন্ধু থাকে,বিপ্লব। সেই আমার জন্য বাড়িটা ঠিক করেছে। বাড়ির মালিক নেপাল মুড়াসিং বয়স্ক মানুষ। গাল ভর্তি হাল্কা হাল্কা  পাকাপাকা দাঁড়ি। চোখগুলো ছোট ছোট। চোখের চাহনিটাওকেমন যেন এলোমেলো। কোথাও যেন স্থির হয়েতাকিয়ে থাকতে পারে না। দেখেই মনে হয় যেন লোকটিপুরো পৃথিবীর উপর বিরক্ত। যদি পুরো পৃথিবী ধংসহয়ে যায় তাহলে তিনি আরাম পাবেন। আমি উনার সামনে গিয়ে তাকাতেই তিনি  চোখ সরু করে আমারদিকে তাকিয়ে রইলেন । চোখে মুখে সন্দেহ। যেন আমিকোনো জেল পলাতক আসামী। বাড়িতে প্রবেশ করতেই নেপাল বাবু বলল-

 

- কি দরকার আপনের ?

- আপনিই কি নেপাল মুড়াসিং?

- হ। কেরে?

- আমার এক বন্ধু বোধ হয় আপনার সাথে কথা বলেছে। ভাড়া থাকার ব্যাপারে ।

- হও। কইছে তো।  নাম কি?

- আমার নাম আদিত্য কর্মকার 

- এই নেন চাবি। আর একটু সাবধানে থাইকেন।

খেয়াল করলাম চাবি দেয়ার সময় লোকটার হাতকাঁপছে। আমি বেশ অবাক হলাম

- আপনি কি একাই থাকেন?

- হও। ছেলে বউ নিয়া উদয়পুরে থাকে। মাঝে মাঝে আসে। নাতিটা ইংলিশ স্কুলে পড়ে।

- ও। ঠিক আছে।

আমি চাবিটা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলাম ঘরের দিকে।

উদয়পুর শহর থেকে একটু দূরে হলেও ঘর ভাড়ার জন্য,যে বাসাটা ঠিক করা হল সেটা নেহাৎ মন্দ হবে বলে মনে না। ঘর গুলো কেমন হবে জানিনা, তবে চারদিকের পরিবেশ,দৃশ্যাবলী খুবই সুন্দর।একদিকে ক্ষেত, আরেকদিকে রাবার বাগান। ও এত কম দামেএখানে ঘর পাবো ভাবিনি। তাও আবার বিল্ডিং ঘর। যাই হোক ভালোই হয়েছে।

দরজাটায় চাবি ঢুকাতেই কেমন যেন অস্বস্থি হচ্ছে হটাৎ কেন জানি ঘরটায় ঢুকতে ইচ্ছে করছে না। যেনআমার অবচেতন মন আমাকে সাবধান করছে। অনেকবার চাবি ঘুরানোর পরও দরজাটা খুলছে না।অনেকদিন ধরে দরজা না খুলার কারণে মনে হয় মরিচাপড়ে গেছে। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ দরজাটা খুলেগেল। দরজাটা খুলে ভেতরে ঢোকার সাথে সাথেই একতীব্র পোড়া গন্ধ নাকে এসে বিঁধল। আমি দাঁড়িয়েপড়লাম। পরক্ষণেই গন্ধটা কেমন যেন কর্পুরের মতোউবে গেল। এটা কি মনের ভুল ছিল? নিশ্চয় মনেরভুল। এরকম বন্ধ একটা ঘর, যে ঘরে অনেকদিন কারোআসা যাওয়া নেই সেই ঘরে নিশ্চয় পোড়া গন্ধ থাকবেনা? আমি ঘরে ঢুকলাম ।  ঘরময় ধুলো বালিতেবাড়িতে নতুন ভাড়াটিয়া আসবে, ঘরটা পরিস্কার করে রাখলেই পাড়ত; মনে মনে বাড়িওয়ালার চৌদ্দ গোষ্ঠীনিয়ে বেশ কয়েকটা গালি হাঁকলাম। অফিস সেরেই এখানে এসেছি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।  

 

ঘরে  ইলেক্ট্রিসিটি  আছে কিন্তু বাল্ব গুলো জ্বলছে না।মনে হয়  সস্তার তিন বস্তা আর কি। গ্রামের কম দামেরভাড়া ঘরে এতো কিছু আশা করাও নিশ্চয় ভুল। এইসময়  আবার বাল্ব কোথায় পাবো। কি যে এক যন্ত্রণারমাঝে পড়লাম না। প্রচণ্ড  রাগ উঠছে। এখন আরবাইরে যেতে ইচ্ছে করছে না। আবার অন্ধকারে বসেথাকাও  সম্ভব  হবেনা।  অগত্যা যেতেই  ল 

 

বাজার বেশী দূরে নয় তবুও বাল্ব কিনে বাসায় ফিরতেফিরতে ৭ টা  বেজে গেল। প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে।বাল্বগুলো লাগিয়ে  রান্না ঘরের দিকে এগুলাম। খাবারবাড়ি থেকেই নিয়ে এসেছি। রুটি আর আলু ভাজা।  আবার নাকে পোড়া গন্ধ আসছে! কোথাও তো কিছুইপোড়ছে না তাহলে গন্ধটা আসছে কোথা থেকে? বাইরেথেকেও আসার উপায় নেই। জানালা গুলোতো সববন্ধ।আস্তে আস্তে গন্ধটা কেমন যেন অসহ্য লাগছে।আমি আর থাকতে পারলাম না। এতো তীব্র গন্ধ? যেনহাজারটা টায়ার একসাথে পোড়ানো হচ্ছে।আমি গিয়েজানালা গুলো খুলে দিলাম যাতে গন্ধটা বাইরে চলেযেতে পারে। তাতেও বেশ সুবিধা করতে পারলাম না। আমি দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। তারপরযেমন হঠাৎ করে গন্ধটা এসেছিল ঠিক তেমনি হঠাৎকরেই গন্ধটা চলে গেল। আমি যেন হাঁফ ছেড়েবাঁচলাম।

 

খেতে বসলাম ।  কেমন যেন অস্বস্তি  হচ্ছে। মনে হচ্ছেকেও যেন ঠিক আমার পিছনে নিশব্দে দাঁড়িয়ে আছে।তার নিশ্বাসের শব্দ যেন পাচ্ছি। কেও যেন আমার ঘাড়েতার গরম নিশ্বাস ফেলছে। আমি পিছনে তাকালাম।না,পিছনে কেউ  নেই। সবকিছুকেও আমি নিজের মনেরভ্রান্তি হিসেবে ধরে নিলাম। সারাদিন অনেক ধকলগেছে। যার ফলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। এই ক্লান্তমস্তিষ্কেরই হয়তো হেলুসিনেশন হচ্ছে। যে কারণেআমার এরকম অনুভুতি হচ্ছে। এসব নিয়ে মাথাঘামানোর কোনো কারণ নেই। আমি খাবার খেয়েল্যাপটপ টা নিয়ে বসলাম। অনেক কাজ পরে আছে।আজ যা যা হয়েছে সব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।এখানে একা আসা ঠিক হয়নি। জয়াকে নিয়ে আসাউচিত ছিল। একা আছি বলেই কি এরকম অনুভুতিহচ্ছে। হয়তো তাই হবে। ভেবেছিলাম এখানটায়সবকিছু ঠিক করে তারপর জয়াকে নিয়ে আসবো।নতুন জায়গা । আগে সবকিছু গুছিয়ে নিই। এখন কিজয়াকে একটা কল করবো? কি জানি কি করছেআমার একটা মাত্র বউ।

 

- হ্যালো জয়া ?

- হুম। আমিই এখন তোমাকে ফোন করতাম হলে । যাইহোক ভালোই করেছো কল করে।  কি করছো?

- কিছুনা অফিসের কাজ করছি

- এক্ষণ আবার অফিসের কি কাজ?

- কাজ আছে জয়া। অনেক কাজ আছে।

- খেয়েছো?

- হুম কিছুক্ষণ আগেই খেয়েছি। তুমি খেয়েছো?

মাত্র আটটা বাজে। আরও পরে খাবো। 

 

হঠাৎ করে রান্না ঘর থেকে  কিছু একটা শব্দ কানেআসছে।

 

জয়া একটু পড়ে কথা বলি?

- কেন? কি হয়েছে?

- না এমনি আরেকটু পর কল করছি

- আচ্ছা সাবধানে থেকো

- আচ্ছা ঠিক আছে।

আমি ফোনটা রেখে পিছন ফিরে তাকালাম। আবারশব্দটা হলো। খুব ক্ষীণ কিন্তু স্পষ্ট যেন কেও আমারমাথার ভেতর চাপা স্বরে বলছে "চলে যা! চলে যা এখানথেকে! একটা শব্দই বারবার। শব্দটা কি শীতল! শেষ্মাজড়ানো। একেবারে বুকে গিয়ে বিঁধে যাচ্ছে শব্দটা।এসবি কি আমার উত্তপ্ত মস্তিষ্কের কল্পনা না সত্যি সত্যিএসব কিছু ঘটছে আমার সাথে? না এসব কি ভাবছি? নিশ্চয় আমার মনের ভুল! আমি আবার কাজে মনদিলাম। হঠাৎ বাল্বগুলো কেমন যেন কাঁপতে লাগলো।আমি বাল্বগুলোর দিকে তাকালাম। বাল্বগুলো কাঁপছে।যেন ভূমিকম্প হচ্ছে। তারপর হঠাৎ শব্দ করেবাল্বগুলো ফেটে গেল। ঘরময় অন্ধকার হয়ে গেল।নিকষ কালো। বাল্বের কাচগুলো আমার শরীরে এসেপড়েছে। হাত জ্বালা করছে। হাতে কি বিঁধেছে? আমিফোনের লাইটটা অন করলাম। হাতে কিছু কিছু জায়গাকেটে গেছে। আমি অবাক হয়ে বাল্বগুলো দেখছি। এরআগে কখনো বাল্ব এমনভাবে ফেটে যেতে দেখেনি। এইবাড়িতে আসার পর থেকেই কি সব অদ্ভুত অদ্ভুত ঘটনাঘটছে। এগুলোর কোনো মানে খুজে পাচ্ছি না আমি।হঠাৎ কি যেন ঝনঝন করে উঠলো। কে? কে ওখানে? খুব জোড়ে যেন কিছু একটা পড়ে গেছে। শব্দটা রান্নাঘর থেকে আসলো মনে হয়। আমি ধীরে ধীরে রান্নাঘরের দিকে এগুলাম।  কিসের যেন গন্ধ পাচ্ছি। আবারপোড়া গন্ধ? আমি ঘাড় ঘুরিয়ে বসার ঘরে চলেআসছিলাম। আমি থমকে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেওযেন খুব দ্রুত আমার সামনে দিয়ে চলে গেল। এতঅন্ধকারের মাঝেও যেন আমি স্পষ্ট দেখলাম। লাললাল চোখগুলো যেন এখনো আমার চোখে ভেসেআছে। কি ছিল এটা? এটাও কি চোখের ভুল? আমিকিছুই বুঝতে পারছি না। আমার মস্তিষ্ক কি আমাকেনিয়ে কোনো মজার খেলা খেলছে? আমি বিষয়টাকেমন থেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম। নিজেকে বুঝাতেলাগলাম আমি যা দেখেছি সবই ভুল। আমার চোখেরভুল। আমি আবার বসার রুমে চলে আসলাম।ল্যাপটপটা এখনো অন করা। কাজগুলো করে ফেলাউচিত। কিন্তু কাজে কেন জানি মন বসছে না। কেমনজানি অস্বস্তি হচ্ছে। কেও যখন আপনার দিকেসারাক্ষণ কঠিন চোখে তাকিয়ে থাকে তখন যেরকমঅস্বস্তি হয় ঠিক সেরকম। কেও যেন আমার দিকেসবসময় তাকিয়ে আছে। খুব কাছ থেকে যেন আমারউপর নজর রাখছে। আমার পাশে দাঁড়িয়ে যেন আমারদিকে তাকিয়ে আছি। আমি যেন তার উপস্থিতি টেরপাচ্ছি। মাঝে মাঝে যেন সে আমার শরীরের উপর তারগরম নিশ্বাস ছাড়ছে। মেঝেতে কি যেন ধপাস করেপড়ে গেল। আমি বসা থেকে উঠে পড়লাম। কিসেরশব্দ ছিল টা? আমি খুজতে লাগলাম। অন্ধকারেবিশেষ সুবিধা করতে পারছি না। ফোনের লাইটটা দিয়েখুজছি। হঠাৎ দেখতে পেলাম মেঝেতে ফুলদানিটাভেঙে পড়ে আছে। ফুলদানিটা ভাঙলো কি করে? ফুলদানিটার ভাঙা টুকরো এদিক সেদিক ছড়িয়েছিটিয়ে আছে।এ ঘরে আবার ফুলদানিই বা আসলো কথা থেকে।  " চলে যা!" কেও যেন কানের কাছে এসেবলে গেল। আমি চেচিয়ে উঠলাম কে? আবার বলেউঠলো, " চলে যা! বাঁচতে চাইলে চলে যা! কি হাড়কাপানো হিমশীতল গলার স্বর! হঠাৎ খেয়াল করলাম,ঘরের কোনায় কেও একজন ঘুটি শুটি মেড়ে বসেআছে। কালো একটা অবয়ব। আমি কে? বলে আতকেউঠলাম। আমার চিৎকার শুনে অবয়বটি একটু নড়েউঠলো। আমি আমার ফোনের লাইটি অবয়বটির দিকেতাক করলাম। একজন মহিলা উলঙ্গ হয়ে বসে আছে।সারা শরীর দগ্ধ। আগুনে পুড়ে গেলে যেরকম হয় ঠিকসেরকম। সারা শরীরে লাল বর্ণের দগদগে ঘা। কি বিশ্রীদেখাচ্ছে। অবয়বটি যেন আমার দিকে হামাগুড়ি দিয়েএগুচ্ছে। আমার হৃদস্পন্দন থেমে যাবার উপক্রমহলো। আমি নিজেকে বুঝাতে লাগলাম যা কিছু দেখছিসব কিছুই আমার মস্তিষ্কের কল্পনা  আমার মস্তিষ্কউত্তেজিত। এর বেশি কিছু না। আমার হ্যালুসিনেশনহচ্ছে। আমি বিজ্ঞানের ছাত্র। ভূতে বিশ্বাস করি না। করা উচিত ও না।  আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম। নিজেকেবুঝাতে লাগলাম তুমি কিছুই দেখনি। যা দেখেছ সবচোখের ভুল। চোখ খুললেই সবকিছু স্বাভাবিক হয়েযাবে। চোখ খুলতে কেন জানি সাহস হচ্ছে না। মনেমনে প্রার্থনা করছিলাম যেন চোখ খোলার পর সবকিছুঠিক আগের মত হয়ে যায়।মনে মনে গুরুদেবকে ডাকলাম,  চোখ খোলার পর যেন আমার চোখেরসামনে কোন খারাপ  কিছু না থাকে। আমি ধীরে ধীরেচোখ খুললাম-

মনে এই আশা নিয়ে যে চোখের সামনে কিছু থাকবেনা। সত্যিই চোখের সামনে কিছু ছিল না। আমি একটাদীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। তার মানে যা কিছু আমি দেখেছিতার সবকিছুই চোখের ভুল। কেমন জানি একটাপ্রশান্তি ছেয়ে গেল সারা মন জুড়ে। নিজের চোখকেভুল প্রমাণিত করে যেন আনন্দ হচ্ছিল। এখন পর্যন্তআমার সাথে যা কিছু ঘটেছিল তার সবকিছু মাথাথেকে ঝেড়ে ফেলতে চাইলাম। আমি চাইছিলামসবকিছু ভুলে যেতে কিন্তু কেন জানি সেই বিশ্রী কুৎসিতচেহারাটা বারবার চোখের সামনে ভেসে উঠছিল।নিজেকে কিছুতেই বুঝাতে পারছিলাম না যে আমিএতক্ষণ যা কিছু দেখেছি সব কিছুই আমার মনের ভুল।আমি ঘরের বাইরে  গিয়ে দাঁড়ালাম। আমার এখনপ্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে অক্সিজেন। আমি জোরেজোরে নিঃশ্বাস নিতে থাকলাম। বারান্দায় প্রচুর বাতাসবইছে। শরীরটা মুহূর্তেই জুড়িয়ে গেল। হটাৎ দেখি ঘরের আলো জ্বলে উঠেছে। এই যে কিছুক্ষণ আগে ভূমিকম্পের মতো হল, বাল্ব ভেঙ্গে গেলো,সেটা কি? আমিতো হাতেও ব্যাথা পেয়েছিলাম। বা হাতটা ধরে দেখি, কই না তো, রক্তের কোন দাগ নেইতো।  

কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আজ আকাশটা সত্যি খুবসুন্দর লাগছে।বেশ বড় একটা চাঁদ উঠেছে।

 

এই পর্যন্ত এই বাড়িতে আসার পর থেকে আমার সাথেযা কিছু ঘটেছে সবকিছু ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করলাম।এখন আমার প্রয়োজন একটা দীর্ঘ ঘুম। সকালে উঠেআবার সবকিছু নতুনভাবে শুরু করব। নতুন বাড়িঅনেক কাজকর্ম পড়ে আছে। সবকিছু পরিষ্কারপরিচ্ছন্ন করতে হবে। ঘরটাকে থাকার মতো করে গড়েতুলতে হবে। কাজটা সহজ নয়। কালকে প্রচুর পরিশ্রমকরতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণেবিশ্রাম। তাই ঠিক করলাম তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়বো।

 

আমি বিছানায় শুয়ে পরলাম। ঘুমাতে চেষ্টা করছি কিন্তুকেন জানি ঘুমাতে পারছিনা। বার বার সবকিছু মনেপড়ে যাচ্ছে। সেই পোড়া দুর্গন্ধময় কুৎসিত অবয়ব টাচোখের সামনে ভেসে উঠছে। কিছুতেই ভুলতে পারছিনা। নিজেকে বারবার বুঝাচ্ছি সেটা ছিল উত্তপ্তমস্তিষ্কের নিছক কল্পনা। কিন্তু ভুলতে পারছি না।

কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম টেরই পেলাম না। ঘুম ভাঙলোপ্রচন্ড কোন


দিপিকা রায়

বদমেজাজী


অভিমানী খাতাটার পৃষ্টা এখন
বন্ধই থাকে
খিটখিটে মেজাজ টা খুঁজে 
এক নিবিড় ছায়া। 
বিনা আবেগে এক ঘেয়ামীটা, 
যেন আঁকড়ে বসেছে। 

মানসিকতার সিঁড়িটা  এখন, 
এক জায়গায় স্থির থাকে না। 
পাথর চাপা বুকে
অজস্র বেদনার সমাগম। 
শুধু একাকীত্বের ছায়াটা এখন পিছুটান, 
এখনও মনের তীব্র ঝাঁজে
জ্বলছে এই জীবনখানা।

প্রসেনজিৎ দে

ইতিকথা


হঠাৎ শান্ত হয়ে যাবো একদিন 
সমস্ত হিসেব মিটে যাবে
থেকে যাবে শূন্যতা

কারো আর্তনাদ আমাকে জাগাবে না,
কারো বুক ভাঙা কান্নার ধ্বনি পৌঁছবে না... 

অচেতন হয়ে পরে থাকা দেহগুলি 
সাক্ষী হবে না, 
দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকবে আগুন, 
পড়ে থাকবে কিছু ছাই। 

পারিজাতের মতো ফুলগুলি,
এভাবেই পড়ে থাক।

মাধুরী সরকার

হাহাকার

আমি দুর্ভিক্ষ দেখিনি,
দেখেছি অসহায় দরিদ্র মানুষগুলোকে ধুঁকে ধুঁকে মরছে।

আমি স্বাধীনতার যুদ্ধ দেখিনি,
দেখেছি দেশমায়ের বীরসন্তানদের হাসিমুখে আত্মবলিদান।

রাজপ্রাসাদের ভোগবিলাসিতা দেখিনি আমি ,
দেখেছি অভুক্ত মানুষের উদর যন্ত্রণায় ছটফট করতে।

আমি সুখ দেখিনি নিপীড়িত মানুষের,
দেখেছি শুধু দুঃখের বেড়াজালে তাদের হাহাকার।

আমি হাসতে দেখিনি ঝুপড়িটাকে ,
শুধু তার অবিরত কান্না শুনেছি কেবল ।

আজব এ পৃথিবী জুড়ে আছে ত্রাসের রাজ,
সহানুভূতি আজ ভস্মীভূত গরল সাগরে।

মোঃ রুবেল

বাহুডোর
                
সোনালী স্বপ্ন পুষি বক্ষস্থলে,
অনাদিকাল তোমায় জড়িয়ে রাখবো সুখের বাহুডোরে।
এক লহমায় তোমার আপন করেছি,
কেবল একটি শব্দের বিনিময়ে।
ভালোবাসি শব্দে কত মায়া,
তা ভালোবাসার কাঙাল ছাড়া কেইবা বুঝে।

গোপাল দে

অশনি সংকেত
              

সভ‍্যতার ইমারত গড়তে গড়তে ওরা আজ খুব ক্লান্ত,
নিত‍্যদিনের নিয়মমাফিক কর্মসাধনে
ওরা হাঁপিয়ে উঠেছে খুব।
আর এদিকে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে
তুমি দিয়ে যাচ্ছো নির্বোধ হুকুম।
একবার ওদের জায়গায় নিজেকে দাঁড় করাও,
কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হও,
দেখবে জীবনটা গোলাপের বিছানা নয়।

হাজারো কন্টকাকীর্ণ পথ পাড়ি দিয়ে
ওরা সভ‍্যতার মেরুদন্ড টিকিয়ে রাখে।
তাই ওদেরকে আপন করে নাও,
অনুভব করো ওদের প্রাত‍্যহিক জীবন যন্ত্রণা।
যে অন‍্যায়,অত‍্যাচার আর শোষণে তোমার তাবেদারি,
সেটার ফল তুমি পাবেই।
হিসেব দিতে হবে তাদেরকেও,
যারা সে অন‍্যায়কে প্রশ্রয় দিয়েছিল,
বাহবা দিয়েছিল তোমার সকল দুঃষ্কর্মের।

আগ্নেয়গিরির পুঞ্জীভুত ক্ষোভ
ক্রমশ জড়ো হচ্ছে।
সময়ে সামলে নাও,
নইলে পূব আকাশে ক্রমশ বিস্তৃতি ছড়াবে
ধ্বংসের অশনি সংকেত।

শ্রীমান দাস

আতঙ্কের মৌনতা 
                               
ঘোর কাটেনি দায়িত্বহীন চিড়িয়াখানা প্রধানের
খাঁচা ভেঙে লোকালয়ে তান্ডবে মগ্ন হিংস্র জন্তুরা
শ্লোগান গুঞ্জরিত সহস্র মুখে অকাল মৌনতা ।

শোসকের রক্তচক্ষু প্রতি রাতেই ঘুম কাড়ে ।
রোদ ঝলমল দিবালোকেও অমানিশার হাতছানি ,
আতঙ্কের পারদ চড়ায় সন্ধ্যারাতের লোডশেডিং ।

পিঠ ঠেকা দেওয়ালে গুনগুনিয়ে ওঠে প্রতিবাদী দু'চার বুলি 
তাও আবার বিলীন হয় চার দেয়ালের মাঝে ,
পাছে থাবা বসায় নিশাচর মাংসাশী জানোয়ার ।

অপাংশু দেবনাথ

ভাবনার বীজবিন্দু

ভেবেই আৎকে উঠি,থাকবোনা কোনো একদিন
তোমাদের এমন অসংখ্য ছবিতে ।

দৃশ্যের পর চিত্র বদলে যাবে,
এক মঞ্চ থেকে আরেক মঞ্চে 
ছড়াবে তোমরা ঝকঝকে আলো।

অথচ আমার শরীরেও 
যথেষ্ট আলোকচ্ছটা সজ্জিত ছিলো
মাংশের স্তরে স্তরে।

ভাবনার বীজবিন্দু জুড়ে।

পঁচে গলে কোনো এক বিকেলে, 
মাংশের ভেতর লুকানো স্বপ্নপুঞ্জসহ
মাটি হয়ে গেছি কেউ টেরও পায়নি।

এখন শুধু পঁচা মাংশের গন্ধ,
ক্ষয়ে যাওয়া হাড়ের ফসিল,
মাটির ছন্নছাড়া নোনাধরা মুখ।

অনুজ অগ্রজের এমন মেধাময় দৃশ্য 
এ জীবনে ক'টা পাওয়া যায় বলো?
নাই বা পেলাম ক্ষতি কি!
লাভালাভের চিন্তা ছিলোনা বলেই ---

তোমাদের বলে রাখি,ছবিতে নাইবা থাকি। 
মনের আলো ঢেলে এভাবেই বর্ণময় করে রেখো আলোর অভিসারে।

রীনা তালুকদার

রীনা তালুকদার -এর
একগুচ্ছ  রুবাই

১।
ও চোখে তো জল রাখবার পাত্র ছিলো
সুখ নগরে গোলাপ রাঙানো হাসি ছিলো
আঁধার ঠেলে বাতিঘর জুড়ে আলোর ঝলকানি
বৃষ্টি নাচে চোখে মুখে; সে ছবিটা কোথায় হারিয়েছিলো ?

২।
তুমিতো আছোই পাশাপাশি হৃদয়ের বাঁকে
নীতি নিয়মের ফাঁকে ফাঁকে
খুঁজি তবু অমোঘ তৃষ্ণায়
তুমি ? নাকি প্রেম ? খুঁজি কাকে ?

৩।
বিশ্বাসের গাড়ী যাবে কতদূর
সামনে পিছনে মিথ্যে করে তাড়া
দেখা শূন্য শূন্য দূরবীণ দূর
নেই কেউ একা তুমি মনপুর।

৪।
উদাস আকাশ এক পশলা বৃষ্টির ছোট্
মিথ্যের মায়াজালে খেঁকশিয়ালি রোদ
ফাঁদ পেতে শূন্য মাঠে রংধনু দেখায়
বরাহনগরগামী ট্রেন ভুলে ভালে হারিয়েছে বোধ! 

৫।
এই হাতটা ষোল’র বাতাসেও দেখেছি
হাতে হাতে জোড়া তালিও দেখেছি
এক আয়নায় এক মুখে বার বার দেখা সুখ, দুঃখ, রাগ
সেই হাতে কার লিপস্টিকের দাগ দেখেছি !

৬।
না আর বলো না ; বিশ্বাস করো
নাও শব্দকে যত পারো টুকরো করো
আমিও শব্দ নির্মাণ কৌশল জানি
বিশ্বাস ভাঙ্গলেও নেই কানাকানি , তুমি কেনো করো !

৭।
যে গল্প শুনি সে তৃতীয় পক্ষের অমাবশ্যা
মনে মনে ভাবছি হয়ত পেলাম রক্ষা
একদিন নির্লজ্জ্য বিশ্বাস ভ্রুকুটি কেটে বলছে
নাটকের শেষ দৃশ্য মঞ্চায়ণ করছো তুমি নিজেই খামোকা।

৮।
অহেতুক বলে যাই অনেক কথা
শুনে যাও চুপ চাপ সয়ে যাও ব্যথা
আইবলের আড়ালে গেলে দূর
জানো কী হয় ? কাঁদে মন বেদনা বিধূরতা।

৯।
এতো কেন পোড়ে হৃদয় মন
রাত বিরাতে অকারণ
তুমি কী ছড়িয়েছো আগ্নেয় কণা ?
ধুমল বৃষ্টিতে ভিজছে বৃন্দাবন।

১০।
হরেক রকম কাজের ভিড়ে
ভুলে থাকা জীবন ঘিরে
পাজর জুড়ে একটি ছবি কার ?
হাতড়ে খুঁজে ভালোবাসা হৃদয় তীরে।

১১।
সোনালী পরশ দুই চোখ
ঘুম নেই বিনীত রাতের মুখ
আইবলে ফটোগ্রাফ মৌমাছি
অনুনয় ; সরিয়ে নাও রংধনু আকাশের বুক।

১২।
কী যেনো নেই শূন্যতার ঘাসফড়িং নেচে বেড়ায় চৌকাঠে
বার বার দরজায় ইয়েল লক নড়ে ওঠে কড়িকাঠে
চমকে যাই বেভুল ভুল থমকে যাই
শুনো কানে কানে ; এত কাছে এসো না নামতা পাঠে।

১৩।
যাই করি না কেন সারাক্ষণ
কেবলই তোমার হবার প্রশিক্ষণ
জোঁকে জোঁকে জড়িয়ে থাকা
বলতো সত্যিই তোমার হতে পেরেছে কি মন ?

১৪।
ঝরো ঝর বৃষ্টির ঝরানি বহুমুত্ররোগ
না দেখা দু:খ করে যায় শোক
জানো তো কে বুকে জড়িয়ে থাকে ?
শ্রাবণের তোমাকে প্লাবনে ভিজিয়ে রাখুক।

সোনালী রায় বাগচী

ভালো বাসতে বাসতে 

ভালো বাসতে বাসতে একদিন ঠিক পাখি হয়ে যাবো ।
খুব রঙিন একটা পাখি ।
হয়তো বা মাছরাঙা ।
অবিশ্রান্ত জল ছুঁয়ে থাকা কোনো এক গাছের ডালে বসে
অবাক বিস্ময়ে দেখে যাবো ,
নিস্তরঙ্গ নদীর বুকে কত ছবি এঁকে চলে 
জল পোকাদের ব্যস্ততা ।
আমার শীতলপাটি বিছানো বুকে
পাশাপাশি বসে গল্প করবে সুখ আর দুঃখ ।
কিংবা হয়তো বাবুই পাখি হবো । 
যে গাছতলায় একদিন কুড়িয়ে পেয়েছিলাম 
কান্নার খড়কুটো , 
সেখানেই না হয় বেঁধে নেবো একটা সাতমহলা ।
ঘরকন্নার আয়োজনে প্রতিদিন 
ভিজে উঠবে আমার ঠোঁট , আমার ডানা । 
পরিতৃপ্ত গৃহকোণ লিখে যাবে
আহ্লাদী সুখের রূপকথা ।
অথবা ধরো ফিনিক্স হলাম আমি ।
আমার আগুন রঙা ডানায় 
সেদিন মেখে নেবো রোদেলা ভোরের গন্ধ ।
এলোমেলো উড়ানে আকাশের গলিপথ পেরিয়ে
একদিন হয়তো খুঁজে পাবো আমার উদাসী ঘরের ঠিকানা ।

ভালো বাসতে বাসতে একদিন ঠিক পাখি হয়ে  যাবো ।

                

মনচলি চক্রবর্তী

আত্মমর্যাদা
 

রাইমা তার বাবাকে নিয়ে কেক খাবে বলে কেকের দোকানে গেল। শহরে কত বড় বড় সুন্দর কেকের দোকান। বেশ বড় ও সুন্দর দেখে একটি কেকের দোকানে রাইমা ও তার বাবা ঢুকে গেল। কত সুন্দর সুসজ্জিত ভাবে কেক গুলো থরে থরে সাজানো।রাইমা কেক খেতে খুব ভালোবাসে, সে একটা সুন্দর কেক পছন্দ করলো।  রাইমার বাবা যখন কেকের দাম মিটিয়ে দিয়ে যাচ্ছে তখন ওরা দেখে, দোকানের এক কোনে দাঁড়িয়ে আছে একটি ছ-সাত বৎসরের ছোট্ট ছেলে, উড়ো তেলহীন রুক্ষ্ম চুল, পরনের পোশাকেও দারিদ্র‍্যের ছাপ স্পষ্ট। সে রাইমার কেনা কেকটির দিকে আনমনা হয়ে তাকিয়ে ছিল। সে দৃষ্টিতে ঝরে পড়ছিল এক সীমাহীন আনন্দ। সুন্দর, সুসজ্জিত কেকটির যা দাম,  তা কিনে খাওয়া শিশুটির ক্ষমতা বাইরে।  রাইমা ও তার বাবার হঠাৎ খুব কষ্ট হল শিশুটির জন্য, তার চোখের দৃষ্টির গভীর অন্তরাল থেকে যেন বার বার এটাই প্রকাশিত হচ্ছে যে কেকটি তার খুব পছন্দ। কিন্তু কিছুই বলার মত বা কাছে ঘেঁষার মত সাহস সে অর্জন করে উঠতে পারছে না। রাইমার বাবা কেকের টাকা মিটিয়ে দিয়ে ভাবলেন যে শিশুটিকে কেকটি দিয়ে দেবেন আর অন্য একটি কেক নিজেদের জন্য নিয়ে নেবেন। উনি শিশুটিকে ডাক দিয়ে কেকটি তার হাতে তুলে দিতে যাবেন এমন সময় নতুন একটি লোকের আবির্ভাব ঘটলো দোকানে। লোকটি একজন রিক্সাচালক, যিনি দোকানের বাইরে এতক্ষন অপেক্ষা করছিলেন আর শিশুটি উনারি ছেলে। কেকটি উনার ছেলেকে দিতে দেখে লোকটি বললেন -"বাবু লাগবে না এত দামী কেক। আমরা খুব সাধারন মানুষ, এত দামী কেক আমাদের সইবে না। " উনি বলে চললেন- " আজ আমার ছেলের জন্মদিন। সে একটি কেক, চকলেট এসব কিনবে বলে এখানে এসেছে...."।
তখন রাইমা ও তার বাবা বললেন " তাতে কি, আমরা ওকে দিইনা এই সুন্দর কেকটা ওর জন্মদিনে উপহার হিসেবে"।  লোকটি সবেগে মাথা নেড়ে বললেন " না বাবু, তা হয়না, আমি যতটুকু কেনার সামর্থ্য রাখি ততটুকু কিছুই ওর জন্য কিনে নিয়ে যাবো। আমাদের এত দামী কেক খাওয়ার অভ্যেস নেই বাবু। আজ হয়তো আপনার উপহার নিলাম, তার খেতেও হয়তো ভালো লাগবে কিন্তু আরেকদিন সে ঠিক এমনি একটি কেক কিনে দিতে বাধ্য করবে আর আমি যদি না কিনে দিতে পারি, হয়তো তখন সে চুরির চেষ্টা করবে। অভ্যাসটা তার খারাপ হয়ে যাবে বাবু। আমরা খুব সাধারন, এসব জিনিষ আমাদের জন্য নয়। " 
রাইমা ও তার বাবার  অবাক, বিষ্মিত চোখের সামনেই লোকটি একটি পাঁচ টাকার ছোট কেক ও দুটাকার চকলেট কিনে ছেলের হাত ধরে দোকান থেকে বেড়িয়ে গেল। দোকানদার রাইমার বাবাকে বললো "স্যার ওরা আমার দোকানে আসে মাঝে মাঝে, কমদামী কেক, চকলেট কিনে নিয়ে যায়। আমি একদিন দিতে চাইলাম একটি ছোট কেক ছেলেটিকে, তার বাবা রাজি হল না। বললাম টাকা লাগবে না, তাও রাজী হল না। স্যার, লোকটি গরীব কিন্তু যা বুঝলাম তার আত্মমর্যাদা জ্ঞান প্রবল। " রাইমার বাবা মাথা নেড়ে সপ্রশংস দৃষ্টিতে বাবা ও ছেলের চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলেন।

গোপাল চন্দ্র দাস

নেতা

দুই বন্ধু।তারা যুক্তি করল--এবার থেকে চুরি করবে।একদিন এক ভদ্রলোকের পকেট কেটে দুহাজার টাকার একটি নোট পেলো।তা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া।কে নোটটি নেবে।যাকে পায় তার কাছ থেকে বুদ্ধি নেয়।শেষমেষ তারা এক রাজনৈতিক নেতার কাছে গেল।নেতার বুদ্ধিমতো নোটটাকে তারা দুটুকরো করে সমান অংশে ভাগ করে নিলো।দোকানে ছেড়া নোট নিয়ে চুর দুজন গেলো।পুলিশ চুরদের খুঁজছিল,দোকানে পেয়ে ধরে নিয়ে গেলো।পরদিন সকালে ঐ নেতা তাদের বেইলে নিয়ে এসে বললো,আজ থেকে তোমরা আমার অধিনে কাজ করবে।আমি তোমাদের সুন্দর করে  মাল ভাগ করে দেব।

দিব্যেন্দু নাথ

আমের মুকুল

তোমায় মনে করে, অভিশিক্ত দিনগুলোর কথা ভুলার চেষ্টা করি মাত্র। কি ছিল সেই দিনগুলিতে? আঁখির সঙ্গে সময় কাটানোর স্মৃতি। আঁখির বেইমানি! নাকি পুলকের দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যাওয়ার অভিশাপ। স্মৃতিপটে এখনও ভাসে,

আর সহ্য হল না আঁখির। দ্রুত ছুটে যায় পুলককে খুঁজতে। সামনাসামনি হতেই আম ফুল হাতে পুলক আগে জিগ্যেস করে,
- এই যে, তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? লজ্জাবতীর মতো চুপসে যায় আঁখি। মেয়ে হয়ে কি করে আগে বলবে সে। যদিও সে জানে, পুলক তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। সবসময় তাকে আড়াল দৃষ্টিতে রাখে। কিন্তু পুলক ছেলে হয়ে, কেন এখনও বলেনি তাকে। এবার যেন রাগে ফুঁসে আঁখি। সবার খোঁচা-কথা, কেন সে সহ্য করবে? তারও তো মনের চাওয়া-পাওনা থাকতে পরে! এ কথাটা কেন পুলক বুঝাতে পারে না? - তার ভয়!- হতে পারে।  আমাকে হারানোর ভয়! কেন? আমিও তো তাকে...। মনে মনে বলে জিহ্ব কাটে আঁখি। 
- তুমি কিছু বলতে চেয়েছিলে তো? থতমত খেয়ে উঠে আঁখি। বিস্ময় আবেগ পুলক এক সাথে আঁকড়ে ধরে তাকে। খানিকটা তোতলিয়ে বলে,
- তু-থু-মি কি-খি-ছু বো-বো-ঝতে পারো না?
- কী ? এমন করে বলছো কেন? পুলক জানে, এটা আঁখির অপ্রকাশিত রাগের লক্ষণ। 
- সবাই তোমাকে হিংসা করে।
- কেন? কি হয়েছে?
- কাল স্যার থেকে কি বলে টাকা নিয়েছো।
- পাহাড় থেকে যারা রান্নার লাকড়ি এনেছে, তাদেরকে বিস্কুট খাওয়াবো বলে।
- তাহলে আমাদেরকে খাওয়াতে গেলে কেন?
- তোমরাও তো পুজোর কাজ করছো। 
- কেন? স্যার কিছু বলেছে! 
- না। বাকিরা আমাকে দেখে কীসব আজেবাজে বলাবলি করে, খোঁচা মেরে।
- কি বলে? 
- তুমি খুব চালাক! 
- কেন? আমি কি করেছি? এক্খন গিয়ে  জিগ্যেস করবো ওদেরকে। হাতে ধরে আটকায় আঁখি। বলে, 
- না গো। তুমি আর বাড়াতে যেও না। ওদের মুখে কিছু আটকায় না।
- তোমায় কেউ কিছু বললে আমার যে সহ্য হয় না।  লজ্জায় মাথা নুইয়ে নেয় আঁখি। ভাবে - মেয়ে হয়ে এ কি বললাম আমি!  এই প্রথম আঁখির ছোঁয়া পেল পুলক। তড়িৎ বর্তনীর হাই ভোল্টেজ শক্ যেন সারা শরীরে বর্তায়। হকচকিয়ে উঠে দেহমন। মনে হল কয়েক হাজার কোটি ইলেকট্রন তার পা ছুঁয়ে পাতালে চলে গেছে মুহূর্তে।  বিমুগ্ধ পুলকের উপরি ভাগ আঁখির দুর্বিনীত স্তনযুগলের উপর পড়ে আছে। নরম ছোঁয়ায় সে ভ্যাবাচ্যাকা। আঁখির মুখেও নীরব হাসি। ভাঙা ঠোঁটে না বলা, কথকতা! কিন্তু মনে ভয়! যদি কেউ দেখে ফেলে। সমাজে তার মাথা তুলে দাঁড়ানো দায় হবে। কিন্তু সে-ও চায়! এমন আনকোরা প্রেমিককে একবার বুকে জড়িয়ে নিতে। তার আগেই সোজা হয়ে যায় পুলক। শাড়ি পরা নাইনের আঁখি, তার হাতের আম ফুল নিয়ে লজ্জায় দৌড়ে পালায়, প্রতিমার ঘরের দিকে।

আজকাল দুজন পরস্পরের দূরবর্তী ঠিকানায় থাকলেও বাঙালি ভেলেন্টাইম দিনে, দুজন মনে মনে খুব কাছের মনে করে। কখনও যে সেই দৃশ্য, এক সাথে ভেসে উঠে স্মৃতিপটে, কেউ জানে না। আঁখিহার পুলকের মুখ পুলকিত হয়.... কিন্তু পুলকহারা আঁখিকে কাঁদায় বরাবরের মতো......

চন্দন পাল

ভাবনা (১) [ ধারাবাহিক ]
'পরশ্রীকাতরতা, প্রতিযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা' অর্থাৎ তিন 'প'। 

পরশ্রীকাতরতা থেকে লোভ আসে, লোভ মিটানোর জন্য শুরু হয় প্রতিযোগিতা, সৎ প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে শুরু হয় বাকচাতুরী, বাকচাতুরীর অঙ্গ হিসাবে দেখা দেয় স্তাবকতা বা তৈলমর্দন।
,,,, এই তৈলমর্দন দেখেই দাতা বুঝে যায়, আমি নিম্নমানের হলেও অনেক মানসম্পন্ন উচ্চবিত্ত নিম্নবিত্ত  আমার পৃষ্ঠপোষক। 
সুতরাং যে করেই হোক আমাকে ক্ষমতা ধরে রাখতে হবে। শুরু হয় কূটনীতি, দলবাজি, বাহুবল, বক্তৃতা শিল্প  আর মায়াকান্না  ।  
,,,,,অথচ আমরা পরশ্রীকাতর না হলে উপরোক্ত একটাও সমস্যা আসে না। সমাজ রাজনীতি  আপন নিয়মে উন্নয়ন ঘটিয়ে চলবে। তার ছোঁয়া আমরা সবাই পাবো। আমরা শুধু যার যার প্রতিভা ক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করে যা আহরন করবো তাতেই সন্তোষ থাকবো। একজন ডাক্তার, অধ্যাপক, ব্যবসায়ী, শিল্পী একদিনে বাড়ি গাড়ি অর্জন করেনি। এরজন্য তাঁকে অনেকদিন শৈশব কৈশোরের খেলা গুলি, আড্ডাগুলি, দূরদর্শনগুলি, স্বাধীনতা গুলি অনিচ্ছায়  বিসর্জন দিতে হয়েছে। আমরা যাঁরা পারিনি, নিজেরাও যদি সমকামনা করি তাহলে ঠিক হবে কি! জুকারবার্গ বা  এনড্রয়েড মোবাইল আবিস্কারকের কথাই ভাবা যাক্ না!
আজকে যাঁরা ঐশ্ব্যর্যবান, পুরুষানুক্রমে প্রজন্ম তার অধিকারী।  প্রজন্ম, তা রক্ষা করতে না পেরে, পরশ্রীকাতর হয়ে পড়লে,  ঠিক হবে কি! 
আবার এ জনমে একজন মিতব্যয়ী  স্বচ্ছতার সাথে যতটুকু এগিয়ে দিয়ে গেলো, তা আগামীদিনে প্রজন্মকে ঐশ্বর্য্যশালী করবে তাতেইবা অন্যকেহ পরশ্রীকাতর হওয়া ঠিক হবে কি!
 
দৈবযোগে ঐশ্বর্য্যশালী  বা পাকৃতিক দূর্যোগে সর্বশান্ত যে কেউ যে কোন সময় হতে পারে সেটা আলাদা বিষয়। সেজন্য স্বচ্ছ রাজনীতি ও প্রশাসন রয়েছে, যা আমরা আগেই তৈরী করতে পেরেছি। কারণ রাজনীতিজ্ঞরাও এখন আর পরশ্রীকাতর নয়।
,,,,আসুন পরশ্রীকাতরতা দূর করে সভ্যতাগর্বি সমাজ গড়ে তুলি। কখন যে আমার দেশ , ধনে, মানে, বিজ্ঞানে, সংস্কৃতিতে, সর্বোপরি  নিরাপত্তায় শ্রেষ্ঠ হয়ে যাবে বুঝতেও পারবো না। "আমরা সবাই রাজা"।

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

আজ আশ্বিনের শেষ কার্তিকের শুরু

এই দিনটা বিশেষ ভাবে বিশেষ, বাংলার এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে। জানি না বাংলার বাইরেও এইভাবে বিশেষ হয়ে উঠেছে কিনা এই দিন! আমি বারবার বলি আমাদের পুজো , লোকাচার অনুষ্ঠানগুলি গভীর ভাবে যদি দেখি দেখতে পাবো, কি পরিমান কৃষি ভিত্তিক সব। কিভাবে প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা ।

 যেমন ধরুন ঘট। আমরা  ঘট প্রতিস্থাপন করতে কি দিই ! পঞ্চপল্লব। এখন এই পঞ্চ পল্লব কি কি!
অশ্বথ বট পল্লব
কাঁঠাল বট পল্লব
অশোক বট পল্লব
যজ্ঞ ডুমুরের পাতা
আর আম্র পল্লব।
না পেলে আম্রপল্লব পঞ্চ পাতা বিশিষ্ট । 

তাহলে ঘট প্রতিস্থাপন করতে গেলে আমাদের কি করতে হবে! ঐ সমস্ত গাছ গুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। সব গুলি কিন্তু ওষুধি গুণ সম্পন্ন। তেমনি খুঁটি নাটি সব কিছু কাছ থেকে দেখলে বোঝা যাবে প্রকৃতির আরাধনাই করে চলেছি আমরা যুগের পরে যুগ ধরে। প্রকৃতির অনুদানেই যে সভ্যতা টিকে থাকবে বা থাকছে তার স্পষ্টিকরন অনেক আগেই আমাদের পূর্বপুরুষেরা করে গেছেন।   

এবার আসি আজকের দিনে কি কি হয় তা নিয়ে একটু আলোচনা করি। একেক পরিবারে একেক গ্রামে কি অঞ্চল বেসিসে আজকের দিনটি একেকভাবে পালিত হলেও আনুষঙ্গিক দিক দিয়ে বিচার করলে কিন্ত প্রায় এক। 

আজকের দিনে অনেকেই আশ্বিনের ভাত রেঁধে কার্তিকে খাওয়ার প্রচলন আছে। আজকে রাঁধবে , ঘট বসিয়ে পুজো দেওয়ার পরে ঠাকুর এসে ভাতের হাঁড়ির মুখ কলাপাতা দিয়ে  বাঁধবে। পরের দিন সেই পান্তা ভাত নারিকেল,গুড়, এঁটেল কলা দিয়ে মেখে খাওয়ার নিয়ম। এই নিয়মের সাথে জড়িত আছে অশ্বিনী কুমার দ্বয়ের পূজার কাহিনী। মানে স্বাস্থ্য সচেতনতা। কার্তিক মাসে আবহাওয়ার পরিবর্তন   হয় ।রোগে শোকে ভোগার প্রবণতা অত্যন্ত  বেশি থাকে। সাবধানতা অবলম্বন জরুরী। তার থেকেই এই লোকাচার নয়তো! সাধারনত নোয়াখালী বা চট্টগ্রাম অঞ্চলের  লোকেরাই এই ব্রত করে থাকেন বেশী। 

এছাড়াও অনেকে আজকের দিনে ধোঁয়াধায়ী করে নিরামিষ রাঁধবে তেল ছাড়া। জুমখাসার চালের ভাত রাঁধবে ফেন না গলিয়ে তারপর এর মধ্যে ঢেলে দেবে ঘি । আট আনাজ ফেলে রাঁধবে মটর ডাল বা খেসাড়ির ডাল। কেউ কেউ চালতা ফেলে দেয় সেই ডালে আবার কেউ আস্ত তেঁতুল তারপর ঘি ছড়িয়ে দিয়ে  খাওয়া। আট আনাজে এখন সব ধরনের আনাজই দেয় । নিয়মে   কিন্তু  এমন সব সব্জি যা সচরাচর আমরা খাই না। যেমন শাপলা, কচু, গাটি কচু, মাটির তলার আলু ইত্যাদি এমন সব যা নাকি এখান ওখান থেকে তুলে আনতে হয়। 

ধর্মনগরে দেখেছি আট রকমের সব্জি  ভাগ ভাগ করে নিয়ে সব্জিবালারা বাজারে বসে থাকতেন। ধর্মনগরে  এই দিনে আমার সহায়িকা  যে ভাবেই হোক ঘর থেকে খুঁজে খাজে ঠিক  আট পদের সব্জি বের করে কেটে কুটে তৈরী করে দিত। না তোমাকে আজকে খেতেই হবে #আট_আনাইজের_সব্জি। ধর্মনগরে সাংঘাতিক রকম ভাবে মানে সিলেটি লোকেরা এই #আটআনাইজের_সব্জি  রেঁধে খাওয়ার নিয়ম ।  

আমার মাকেও দেখি নানারকম নিয়ম করেন ।এর মধ্যে একটা হলো চালতা পাতা দিয়ে ঘর নোয়ানো। দুব্বা , গিলা, সর্ষে , মেথি, কাঁচা হলুদ সব একসাথে পাটায় বেটে চালতা পাতার মাঝখানে রেখে কাঠি দিয়ে গেঁথে সিঁদুর ফোটা দিয়ে তুলসি তলায় রেখে তারপর ধূপ ধুনো, শংঙ্খ উলুধ্বনির মাধ্যমে দুয়ারে দুয়ারে গুঁজে রেখে দেন বিকেল হলে ।  এখন চালতার সিজন। এভেলেবল।  চালতার গুরুত্ব বুঝতে হবে। আর বাদবাকি  বাটা জিনিসগুলিও শরীরের জন্য বিশেষ করে ত্বকের জন্য ভীষণ রকমের উপকারী। আবার ও সেই প্রকৃতির পূজাই কিন্তু করছি আমরা। 

তারপর সন্ধ্যা হলে চারিদিকে আলো জ্বেলে দেওয়া হয়।বাড়ি ঘরের কোন অঞ্চলই বাদ থাকে না । চারিদিকে আলোকময় । কেউ কেউ কলার খোলে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালান তো কেউ মোমবাতি আবার গ্রামাঞ্চলে অনেকেই কাঁঠালের সিজনে কাঁঠালের আঠা ছোট ছোট বাঁশে জড়িয়ে রেখে দেন। আজকের দিনে ক্ষেত খামার থেকে ঘরের পেছন অব্দি মশালের মতন জ্বালিয়ে দেন। 

কিসের থেকে এলো এই আগুন বা বাতি জ্বালানোর প্রক্রিয়া! ফসল রক্ষা করার তাগিদ থেকে কি! কার্তিক মাসে পোকা মাঁকড়ের উপদ্রব কিন্তু বেড়ে যায়। পোকামাকড় থেকে বাঁচতে বা ক্ষেতের ফসল রক্ষা করতেই কি!

 আবার অনেকে বলেন অলক্ষ্মী  পুজা। এখানে অলক্ষ্মী মানে কি! অসুখ বিসুখ ! একটা সংসার ছাড়খার করে দিতে পারে রোগ শোকের ভোগান্তি। রোজগারের প্রায় সবটাই শুধু নয় জমি জমা অব্দি সব চলে যায় অনেকের চিকিৎসার খরচ বা ব্যয়ভার বহন করতে গিয়ে । তাই রোগ শোক নামক অলক্ষ্মী কে সন্তুষ্ট কর। মনে করিয়ে দেওয়া যে সাবধান হও রোগ শোক থেকে। অনেকেই কিন্তু কার্তিক মাসকে বলে পেরইত্তা কার্তিক। আবার সেই ওয়েদার চেঞ্জ এর  কনসেপ্ট। আমি শুধু ভাবি কি আধুনিক ছিলেন আমাদের পূর্বপুরুষেরা!   

আজকের দিনে আরেকটা বিশেষ ব্রত করেন মহিলারা তা হল শাশুড়ি মায়ের ব্রত #গাঢ়ই। এখন নামটা ঠিক কি হবে বুঝতে পারছি না। গাড়োই না গাড়ই না গাঢ়ই!
লোকান্তরিত শাশুড়ি মায়ের প্রতি  শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। বা বলা যায় তর্পণ । তৃপ্তি সাধন।

 অতি সাধারণ নয় কিন্তু এই ব্রত! আসুন একটু ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ এবং পরিবার প্রথায় বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের মধ্য দিয়ে  নারী সবসময়ই পরের ঘর আলো করার জন্য জন্মায়। না না পরিস্থিতি এখনো যে কে সেই তা যতই লাফালাফি করি না কেন আমরা! এইবার এই পারিবারিক সম্পূর্ণতা বহন করে চলে নারী প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সম্পূর্ণ  অচেনা অজানা ঘর থেকে এসে বৌমা নামক সম্পর্কের বন্ধনের মাধ্যমে । এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গঠিত হয় শাশুড়ি আর বৌমার মধ্যে।শাশুড়ি এমন এক নারী যিনি  অচেনা অজানা এক পরিবারে এসে তাঁর তিল তিল করে গড়ে তোলা সম্পদ, তাঁর নাড়ী ছেঁড়া ধন তুলে দিচ্ছেন সম্পূর্ণ অচেনা অজানা আরেক নারীর হাতে। কত বড় ত্যাগ! এখানে বৌমা মেয়ের মতন কিন্তু মেয়ে নয়। শাশুড়ি মায়ের মতন কিন্তু মা নন। একটা সম্ভ্রম এবং শ্রদ্ধা  মিশ্রিত সম্পর্ক । গাঢ়ই যেন সেই মায়ের ত্যাগ স্বীকারকে স্বীকৃতি দেওয়া, কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। যে বৌমা হয়তো  নিজেও কোনদিন শাশুড়ি মা হয়ে সেই একই ত্যাগ করে যাবেন পরিবার বাঁচাতে সৃষ্টি বাঁচাতে।   

এটা একটা অনুভব । একটা বৃহত্তর অনুভব। এক নারী অনুভব করছেন শাশুড়ি নামক আরেক পূর্বনারীর লজ্জা, ঘৃণা, দুঃখ, বেদন, সুখ, শোক, অনুতাপ।

 অনুভব করছেন প্রথম ঋতুশ্রাবের যন্ত্রণা, অনুভবিত হচ্ছে সমগ্র নারী সমাজের ঋতুশ্রাবের কষ্ট। অনুভব করছেন প্রথম  যৌন মিলন, প্রথম সন্তান ধারন থেকে প্রথম প্রসব বেদনা, অবশেষে মেনোপজ.. সাথে অনুভব করছেন সেই স্বত্বা বা  সমগ্র নারী জাতির অস্তিত্ব তার নিজের মধ্যে। 
ধারন করছেন সমগ্র নারী জাতির একটু একটু করে  ফুরিয়ে যাওয়া এই বিশ্ব সংসার থেকে আর সবার মতন , অবশেষে  কোথাও থেকে যায় যদি অতৃপ্তি! কি করতে পারি তখন আমি!

গাঢ়ই আমি মনে করি তাই কেবল আচার বিশিষ্ট নয়। এখানে আচার নিমিত্ত মাত্র। এখানে সমগ্র সৃষ্টির আধার কে আরেক সৃষ্টি বা প্রকৃতির স্বীকৃতির মাধ্যমে ধারন ও  শ্রদ্ধা জ্ঞাপনও। এর চেয়ে আধুনিক আর কি কিছু আছে!! সমগ্রতা কে নিয়ে চলা! এত সাধারণ নয় এই ব্রত। প্রকৃতিকে রক্ষা কর কি নারী রূপে কি গাছপালা, নদ নদী, পুকুর জল রূপে। 

কি উপচার  লাগছে গো এই ব্রত করতে! হালের ও না জালের ও না এমন সব সামগ্রী । এই সময়ে অভাব চারিদিকে। ধান গাছ গর্ভবতী। আর কিছুদিন সময় দাও তাকে পুষ্ট হতে। তাই জুমের চাল। এমন সব সব্জি যা চাষ করে করা হয় না। কচু, গাটি কচু, মেটে আলু, চুবুই ইত্যাদি। অভাব এখন, কিন্তু প্রকৃতি নিজেই সাজিয়ে রেখেছে অভাব মেটানোর সামগ্রী। খুঁজে নিয়ে নাও শুধু। 
কি আশ্চর্য ভাবে প্রকৃতির পূজা করে চলেছেন আরেক প্রকৃতি ।

জল আমাদের জীবন । সেই জলে মাছের চাষ। এই ব্রতে  উঠোনের একপাশে তুলসী গাছের তলায় বা সামনে ছোট্ট পুকুর কেটে   কেউ পুঁটি কেউবা ছোট মাছ ছেড়ে দেয়। এটাই কি বলার চেষ্টা যে, ওরে মাছ গুলোকেও ছেড়ে দে কদিনের জন্য । গর্ভিণী তো সেও! 

পুকুর পাড়ে নদীর ঘাটে অনেক ব্রত করেন মহিলারা। কেন! জলের কাছে মনের কথা বলা! কে শুনবে আর নারীর বেদন ! কে অনুভব করবে!  ঠিক সেরকমই ছেড়ে যাওয়া শাশুড়ি মায়ের সংসারে শাশুড়ি মায়ের কিছু কথা মনে করা, অনুভব ব্যক্ত করা...

একটা সংসারের মূল যে ধারন করে নারী তার মূলেও যে   থাকে আরেক নারীর জীবনভর ত্যাগ, তিতিক্ষা, তপস্যা  সেটা অনুভব করাই তো গাঢ়ই। এভাবেই তো বয়ে চলে মনন স্রোত প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। ভুলে যাওয়া নয় মনে করা মনে করিয়ে দেওয়া পরবর্তী প্রজন্মকেও....
কত বড় কনসেপ্ট!!
এর চেয়ে আধুনিক আর কি হতে পারে! চিন্তার স্রোতে মননে যদি আধুনিক না হতে পারি তবে কিসে হব! আধুনিক পোশাক আসাক পরে!! দুটো বিদেশি ভাষা বলে! বিদেশি খাবার খেয়ে! না দুটো বিদেশি বই পড়ে!

আমাদের আচার বা লোকাচার পুজো আদি সমস্ত কিছুই সাংঘাতিক রকমের আধুনিক। প্রকৃতির সংগে লিপ্ত। প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতেই যে এই সমস্ত ব্রত, আচারের সৃষ্টি এতে  আর দ্বিমত  থাকতে পারে কি!  

দীপক দাস

নারীর অতীত ও ভবিষ্যৎ 

বর্তমান ভারতে যে সমস্যা  মারাত্মক  ব্যাধির আকার নিয়েছে  তা হল নারী  নির্যাতন।এই কাব্য আলেখ্য  সেই সমস্যাকে ছুঁয়ে  দেখবার সামান্য  প্রয়াস। নারী সম্পর্কে  নজরুল  বলছেন 
"বিশ্বে যা কিছু  মহান সৃষ্টি  চির কল্যাণকর
অর্ধেক  তার করিয়াছে  নারী,অর্ধেক  তার নর"
অথচ যুগ যুগ ধরে  নারী নির্যাতনের শিকার।রামায়ণ  মহাভারত  ভারতের  দুই  প্রাচীন  মহাকাব্যের কেন্দ্রীয়  দুই  নারী চরিত্রই পুরুষ  কর্তৃক নারী নির্যাতনের চরম দৃষ্টান্ত। একবার  নয় দু-দুবার সীতাকে  অগ্নি পরীক্ষার  মধ্য দিয়ে  সতীত্বের পরীক্ষা দিতে  হয়েছে, তবে রামচন্দ্রের  জন্য  কেন নেই  অগ্নি পরীক্ষার  ব্যবস্থা?দ্বিতীয়বার  অগ্নি পরীক্ষার  জন্য  আহুত  হলেন সীতা।
"উঠে  দাঁড়ালেন  সীতা/তারপর অগ্নি কুন্ড থেকে মুখ  ফিরিয়ে /পিছনে রেখে জনতার কৌতূহল /ব্রাহ্মণদের সর্বজ্ঞ  দৃষ্টিপাত/রাজপুরুষদের চকিত  ব্যস্ততা  আর/ইক্ষাকুতিলক রামচন্দ্রের  উত্কন্ঠা/হেঁটে  এলেন  রাজসভার বাইরে /কৃষ্ণা ধরিত্রীর বুকে কিছুক্ষণ  দাঁড়িয়ে  রইলেন /তপ্ত কাঞ্চনবর্ণা নারী/সামনে আদিগন্ত মাঠে শস্যের সোনালি  আভা/ওইখানে  তাঁর  জন্মের  পরিচয়/ওই কালো মাটির  বাসার দিকে /এগিয়ে  যান তিনি /দুহাত বাড়িয়ে  মাটি বুকে টানে/মাটির  কন্যাকে"।
তীব্র  অভিমানে  সীতা মাটির  বুকে আশ্রয় নেয়। মহাভারতের কেন্দ্রীয়  নারী চরিত্র  দ্রৌপদীকে রজঃস্বলা  অবস্থায়  টেনে  আনা হয় রাজ সভায়-
  " টেনে  ধরলেন  চুল,দুঃশাসন  এসে/সেই  মেঘবর্ণ   চুল যেখানে  ফাল্গুন মুখ বুজে শুয়েছিল  নরম নিশীথে/কন্দর্প নিন্দিত  কান্তি ভীমসেন এইচুলে খেলা করতেন /এই চুলের  সুগন্ধে স্নায়ু শান্ত রাখতেন  রাজা যুধিষ্ঠির /দুঃশাসন সেই  চুল টানতে  টানতে /এনে প্রকাশ্য সভায় দাঁড় করালেন /এক অসূর্যম্পশ্যা  মহিষীকে"।
তোমরা পুরুষেরা বাঁ হাতে ঠেলে  অন্দরে পাঠাও ডানহাতে  তোমরাই  গা থেকে  কাপড়  টেনে খুলে নাও উন্মুক্ত  বাজারে। 
মধ্যযুগের মনসামঙ্গল  কাব্যের  নায়িকা  বেহুলাকে মনে করুন-কিসের বিনিময়ে  সে ফিরে  পেল তার স্বামীর প্রাণ -শুনুন তার কথা
  " হে দেবতারা/আজ তোমাদের  সামনে এসে দাঁড়িয়েছি এই বলে/ফিরিয়ে  দাও এই শবের প্রাণ / ভিক্ষা  নয়, বিনিময়ে  দেব তোমাদের  যা কাঙ্খিত / বানিজ্যের  শর্তে / তোমরা  দেবে প্রাণ, আমি দেব,আর কিছু  নেই, তাই / আমার যৌবন/ দেবতারা প্রস্তুত হও/এই আমি ছিড়েঁ ফেলছি/আমার স্তনাংশুক /এই ছুঁড়ে  ফেললাম সব আভরণ / আর একবার মুহূর্তের জন্য  অবরুদ্ধ  করো দৃষ্টি / আমি  নগ্ন করলাম আমার   শরীর / আর এই নামিয়ে রাখলাম  মৃতদেহ / ওঠো জেগে ওঠো,মৃত,আমার  স্বভূমি / আমার নতুন জন্মের  আশ্রয় / জাগো লখিন্দর  জাগো"।
বেহুলা তার পরমপ্রিয় পুরুষের  জন্য  পুরুষদের  কাছেই  দিতে হল নারীর  শ্রেষ্ঠতম সম্পদ।
এই নির্যাতনের  ধারাবাহিকতা  আজও বহমান।বাংলাদেশের  একজন লেখিকা শুধু  মেয়েদের অধিকারের  কথা বলতে গিয়ে  দেশ থেকে বিতাড়িত  হয়েছেন।অথচ লেখিকা তসলিমা নাসরিনের  কবিতায়  বাংলাদেশের  প্রতি  অকৃত্রিম  ভালোবাসাই প্রকাশিত হয়েছে। দূর  প্রবাসে রাত্রির  বুকে মাথা রেখে বাংলাদেশের  কথা ভাবতে ভাবতে  কত বিনিদ্র রাত  তার কেটে যাচ্ছে  কে রাখে তার খবর?
"ভাত মাছ নিয়ে  আজকাল  ঘনঘন বসি খাবার টেবিলে /কবজি ডুবিয়ে ডাল নিই মাখি,মাছি  তাড়াবার মতো/ বাঁ হাতখানা মাঝে মাঝে  দুলে ওঠে স্ক্যানডিনেভিয়ার শীত নিয়ন্ত্রিত  ঘরে / পোকা মাকড়ের বংশ ও নেই  তবু কী যেন তাড়াই মনে  মনে / দুঃখ/ মাছের  মলিন  টুকরো  সবজি থালার কিনারের নুন/ আর ঘন ঝোল মাখা ভাত থেকে সরতে চায়না মোটে হাত/ ইচ্ছে করে  সারাদিন ভাত নিয়ে মাখামাখি  করি খাই/ খুব  গোপনে কী  বুঝিনা আমি  কেন সোনার চামচ ফেলে রেখে ভাতের  স্পর্শ  এত চাই/ আসলে  ভাত স্পর্শ  করলে ভাত নয়, হাতের  মুঠোয়  থোকা থোকা বাংলাদেশ  উঠে  আসে"।
সমাজের  শ্রেষ্ঠ  নারীদের যদি  এরূপ শিকার  হতে হয় তাই সাধারণ  অসহায়  নারীদের হাহাকারের শব্দে  বাতাস আজ ভারী হয়ে আছে। দিল্লির নির্ভয়া থেকে  সমগ্র  ভারতে কত নারী প্রতি দিন হারিয়ে  যাচ্ছে  কে দেবে তার পরিসংখ্যান? 
 তাই নারীকে  আপন ভাগ্য জয় করবার অধিকার  নিজেই অর্জন  করতে হবে।  এই সময়ে প্রত্যেক নারীকে  রাজকন্যা  চিত্রাঙ্গদা হয়ে  উঠতে হবে। যে নারী শুধু  লালিত্যের সাধনাই করবে না, বীরত্বের  সধনাও করবে
বিদ্যালয়ে শিক্ষাক্রমে নারীদের জন্য  জুডু, ক্যারাটে বাধ্যতামূলক করতে হবে।নারীদের  নিজেদের  দিকে  তাকানো দরকার।আত্মরক্ষায় যত্নবান হতে হলে শরীরচর্চা  আবশ্যিক  হওয়া চাই। এই বার্তাই  বর্তমান  সময়ে সমগ্র  নারী সমাজের  কাছে  পৌঁছে  দিতে চাই।

সেলিম মুস্তাফা

সম্পর্ক

আর অপেক্ষা না ।
নিজেদের মনের খবর আমরা 
ভালো জানি ।
অবিশ্বাসের কথা লেখার চল্ 
আর নেই ।

আবার যদি-বা দেখা হয়
পরস্পরের দিকে তাকিয়ে আমরা
নিশ্চই হাসবো, নীরবে ।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...