Tuesday, October 20, 2020

উৎসব বয়ে আনুক একটি সম্প্রীতি ও নিশ্চিন্তের সকাল।

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

উৎসব সংখ্যাটি নিবেদন করেছে মুহূর্ত এক্সপ্রেস|| ফেসবুক পেজ :https://www.facebook.com/newsMuhurtaExpress/ || ইউটিউব লিঙ্ক : https://www.youtube.com/channel/UCavqddXiEInosbCusyvSZqQ


সম্পাদকীয়

সম্পাদকীয়

এই সংস্কৃতিতে আমরা যে বিষয়টা আমরা সময় দিয়ে শিখেছি সেটা হলো বিনম্রতা। এই উপমহাদেশে আমাদের শিল্পের সকল শাখায় এই বিষয়টাকে আমাদের কৌশলে বুঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মানুষ হিসাবে আজও যদি আমাদের এখানে কোথাও সীমাবদ্ধতা থাকে আমাদের, সেই দায়ভার আমাদেরই। শিল্প সংস্কৃতি এখানে সফল।

মহামায়া সংখ্যায় ত্রিপুরা রাজ্যের বরিষ্ঠ কবি এবং গদ্যকাররাও লিখেছেন। মনন স্রোতের জন্য যা বিশাল অণুপ্রেরণার। মনন স্রোত আনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সকল গুণীজনকে। এই সংখ্যাটি প্রকাশ করতে মনন স্রোতের যে সকল সদস্যরা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই সংখ্যাটি নিবেদন করেছে রাজ্যের বহুল প্রচারিত ইলেকট্রনিক সংবাদ মাধ্যম "মুহূর্ত এক্সপ্রেস", আমি সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। ভুলত্রুটির দায়ভার সম্পাদকের একার। এবারের শারদীয়া বয়ে আনুক একটি নিশ্চিন্তের সকাল। 


শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

ছবিতে : মনন স্রোত মডেল শিল্পী সুমন || ক্যামেরায় : পুষ্পেন্দু

সজীব পাল [ ধারাবাহিক]

সেদিন সে এসেছিল 
(শেষ পর্ব)
 

এক রজনী দিবস কত কোটি বছর ঢেকে দেয় তার মায়ায়।আলোহীন,প্রাণহীন মানুষগুলো ভেসে ওঠে ।ওঠে না কেবল তারাই যারা এক পৃথিবী আলো নিয়ে বুকের গহীনে আমরণ বাসা বেঁধেছে ।তারা এখন একমুখী জীবনের দূরত্ব অতিক্রম করেছে।তারা মিশে গেছে অনন্ত এক সন্ধ্যায় ।সেই সন্ধ্যায় সুখ নেই দুঃখ নেই কষ্ট নেই কেবল নিস্তব্ধতা ।তবুও তারা ভালো থাকুক,ভালো থাকুক নিগুঢ় দেশে উধাও হওয়ার মানুষগুলো।
নীপা এখন পাথরের চেয়েও কঠিন ।এক জীবনে মানুষের যে রূপান্তর,যে পরিবর্তন নিজেকে নিজের প্রিয় করে তুলে সেই পরিবর্তনের চরমে নীপা।তার এখন আর স্থায়ী কোনো যত্নে ঘুমানোর মতো কোনো কোল নেই ।
ঈশ্বর জানেন মেয়েরা কেন এত বাবার প্রিয় বা মেয়ের কাছে বাবা এত আপন ।

তিন মাস হল সৌরাংশ বাবু ইয়লোকে আর নেই ।তার মৃত্যুটা শুধু মৃত্যু নয় ।এই মৃত্যুর সাথে আরো দুইটা মানুষের জীবনের সুখ অস্বাভাবিকভাবে চিরতরে হারিয়ে গেছে ।

জগত জানে কারোর কারোর মৃত্যু কেবল মৃত্যু নয় মৃত্যু মানেই প্রিয় মানুষদের চোখের জলে বেঁচে থাকা।

সেকেরকোট নিউ ইকো পার্কে নীপা বসে আছে ।শরতের নরম কুয়াশা আলতোভাবে ছুঁয়ে আছে ঘাসের স্নিগ্ধ শরীর ।নীপা পায়ের জুতো জোড়া খুলে সেই ঘাসের উপর অদ্ভুত মায়ায় পা দুটো ফেলে রেখেছে ।পাশে বসে আছে রঞ্জিত ।রঞ্জিতের সাথে তার বিয়ে ঠিক হয়েছে ।রঞ্জিত সদ্য ডাক্তারি পাশ করেছে ।এখনো প্র্যাকটিস শুরু করেনি।তার ইচ্ছে বিয়ের পর কর্মজীবন শুরু করবে ।
রঞ্জিত অনেকক্ষণ ধরে নীপার কাঁধে হাত রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু সাহসে কোলাচ্ছে না।একটা সিগারেট ধরাতে পারলে হতো কিন্তু সাইনবোর্ডে লেখা "নো স্মোকিং"।এইসব লেখার কোনো মানে হয় না ।এগুলো নিছক ফাজলামি ছাড়া আর কিছুই না।অন্যের ব্যক্তিগত ইচ্ছে অনিচ্ছায় নাক গলানো স্বাভাব হয়ে গেছে মানুষের।
নীপা এখন কেমন যেন গম্ভীর মুখে থাকে সারাক্ষণ।মাঝে মধ্যে যদিও হাসি দেয় তা হল কৃত্রিম।এই কৃত্রিমতাকে রঞ্জিত বড্ড ভয় পায়।মনে হয় সেও যেন এই হাসির মতোই তার কাছে অপ্রকৃত।
রঞ্জিত অবিচল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,"এত সকাল সকাল এখানে ডাকলে যে কোনো সমস্যা হয়েছে ?"

" সমস্যা হবে কেন ! বাড়িতে এখন আর ভালো লাগে না ।মাও কথা বলে না । "

"তুমিও ত বেশি কথা বলো না ।মাকে যদি সবসময় কথা বলে সুস্থ না রাখো সেও তো একদিন....."

নীপা আবার মুখ ফিরিয়ে চুপ করে গেছে।রঞ্জিত এবার সাহস সঞ্চার করে কাঁধে হাত রাখল ।সে এই প্রথম এতটা কাছ থেকে কোনো নারীর শরীর স্পর্শ করল ।বুকের ভেতর কেমন যেন শব্দ হল ।
নীপা আনমনে বলল," আরো শক্ত করে ধরো ।জানো মনীষের ভালোবাসার স্পর্শ কোনো দিন পাইনি।সেই মানুষটাকে অনেক ভালোবাসতাম ।কিন্তু এই কথাটা তাকে বলার সুযোগ পাইনি কোনোদিন ।"

" এখন সেই কোথায় আছে ?"

" জানি না ।আগে যেখানে থাকতো সেখানে এখন আর থাকে না ।"

" এরপরে আর কোনোদিন দেখা হয়নি তার সাথে ?"

" সেদিন সে এসেছিল,কিন্তু স্বপ্নে না বাস্তবে তা জানি না ।আগের সেই মনীষ ।যাকে নিয়ে ঘর বাঁধার তুমুল বাসনা ছিল।চারিদিক বিষাদ অন্ধকার।বিছানায় ছটফট করছি ঘুম আসছেনা।কয়দিন ধরে ইনসোমনিয়ার জন্য ঘুমের ওষুধ খেয়েও কাজ হচ্ছে না ।মোবাইলে টাইমটা দেখলাম,রাত প্রায় দুইটা ।কোথাও কোনো শব্দ নেই ।মোবাইলের আলো দিয়ে জগ থেকে জল ঢেলে খেয়ে জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আছি ।জানালা দিয়ে ক্লান্ত রাস্তা গুলো দেখা যায়।ওদের দেখে মনে হল যেন এই ক্লান্ত শ্রান্ত রাস্তাগুলো রাতের বেলাও এদের বিশ্রাম নেই ।এরা স্বার্থহীন যোদ্ধা।এরা অন্ধকারকেও ভরশা দেয় আমরা জেগে আছি ।ল্যাম্প পোস্টে আলো জ্বলছে।হঠাৎ দেখলাম একটা লোক রাস্তায় পায়চারি করছে ।চোখের ভ্রমও হতে পারে। নিজেকে সম্পূর্ণ জাগিয়ে দেখি না এতো ভ্রান্তি নয়।কে এই লোক ! নিশুতি রাতে সে কি করছে এখানে ।একটু পরে সেই লোক আমাকে ডাকলো ।সেই কি স্পষ্ট কণ্ঠ ।বলল 'বাইরে এসো নীপা ।কতদিন তোমাকে দেখি না ।এসো আমরা আজ অন্ধকার পথে হারিয়ে যাই ।'আমার বুকের ভেতর ব্যথা শুরু হল।এই তো মনীষ !সুস্থ সবল আমার সেই মনীষ।আমিও বললাম ,' তোমার সব মনে পড়েছে মনীষ ?'
মনীষ অট্টহাসি দিয়ে বলল,'সব মনে পড়েছে। তুমি আসবে না কাছে?'

" আসবো আগে বলো কিভাবে মনে পড়ল ? সেদিন এইভাবে কেন অবহেলা করলে আমাকে ?কেন বলোনি তুমি অভিনয় করছ ?

" সেদিন আমি সত্যিই অসুস্থ ছিলাম নীপা ।আজ আমি সুস্থ ।মানুষ মৃত্যুর পর আর অসুস্থ থাকে না ।তোমার টানে আজও আমার এই জগত থেকে মুক্তি হয়নি।"

"তুমি মৃত,,,,!

সেই রাতে কী হয়েছে আর জানি না।যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম সেখানেই পড়ে গেছি।


অনেকদিন ধরে বারান্দায় যেখানে সৌরাংশ বাবু বসতেন সেখানে সবিতা বসে না ।এখানে বসলেই লোকটার অস্তিত্ব অনুভব হয়।মনে হয় সেও পাশে বসে কথা বলছে ।মৃত্যুর পরে একদিন সবিতা বারান্দায় বসে আছে ।অতীতের স্মৃতিগুলো ভাবতে ভাবতে মনে হল স্বামীও তার পাশে বসে ।
সবিতা রান্না সেরে রাতের এঁটো থালা বাসনগুলো ধুতে বসেছে।সে সারাদিন ব্যস্ত থাকতে চায় কিন্তু সম্ভব হয় না।তার অজান্তেই মন উদাস হয়।
কাজ শেষ করে সোফাতে বসেছে সবিতা।শরীরটা আজ একটু অন্যদিনের চেয়ে ফুরফুরে লাগছে ।ধীরে ধীরে বোধহয় মানুষটার স্মৃতি কালের স্রোতে মিলিয়ে যাচ্ছে ।এই তো জগতের নিয়ম।
কোথাও একটু কথা বলতে পারলে ভালো হতো।কিন্তু তার তেমন আত্মীয় নেই ।নেই বলতে আছে যোগাযোগ নেই তেমন।সবিতা ফোনটায় নাম্বার লিস্ট চেক করে মমিতাদের নাম্বার টা পেলো ।মমিতা তার পিসতুতো বোন।গুজরাট থাকে।স্বামীর বিশাল বিজনেস সেখানে।সবিতার অনেক ছোটো ।কলটা রিসিভ করলো একটা শিশু।
" হ্যালো কে বলছেন?"

" তোমার মা আছেন ?"

" মা'মনি তো ঘরে নেই !অফিসে গেছে ।আপনে কে ?মাকে কিছু বলতে হবে ?"

" বাবা তোমার মাকে বলো আগরতলা থেকে সবিতা আন্টি ফোন করেছিল,কেমন !"

"আচ্ছা ঠিক আছে বলব "

কলটা কেটে দিলো ।শরীরটা হঠাৎ কেমন যেন ঝিমুচ্ছে ।সবিতা ঢকঢক করে এক গ্লাস জল খেলো।শ্বাস ভারী হয়ে আসছে ।সে সোফাতেই শুয়ে পড়ল।ঘরে কেউ নেই।মেয়েটাও দুদণ্ড ঘরে থাকে না আজকাল।
এই সময় কাউকে পাশে পেলো বোধহয় শান্তিতে মরা যেতো ।

বিকালে রঞ্জিত আর নীপা ঘরে ফিরল।ঘন আঁধারের মতো ঘর নিস্তব্ধ ।দুজনেরই চোখ গেলো সোফাতে পড়ে থাকা সবিতার দিকে।কাছে গেলো না কেউই।নীপা ভেবেছে ঘুমিয়ে আছে মা।অথচ সে জানলোই না এই ঘুম চিরনিদ্রার ঘুম ।এই ঘুম কারোর ভাঙে না।
রঞ্জিত নীপাকে ঘরে পৌছে দিয়ে চলে গেছে ।নীপাও নিজের চলে গেছে ।

দেবব্রত চক্রবর্তী

ভোরের পাখি

ভিড়ের মাঝে হাঁরিয়ে যায়-
অনেক স্বপ্ন আশা,
আবার, একাকীত্বে দিন কেঁটে যায়।
অবেলায় কেউ খোঁজ নেয়নি;
সভ্যতার ক্রমবর্ধমান বিবর্তনে,
 খুঁজে নিই নতুন গল্প!

ছাপার অক্ষরে কত না বলা কথা,
 আশা-আকাঙ্ক্ষার কাল্পনিক রূপকথা---
বুনতে বুনতে আমরা-
 সাহিত্যের পাতায় প্রবেশ করি।

প্রস্তুত পাই খবর, কাগজে।
ভোরের কাক হয়ে ওরা--
দিনের পর দিন ছুটে বেড়ায়,
ক্যামেরার পিছনে পিছনে।

কলমে অসংখ্য শব্দ, কারোর- মনে হাসি ফোঁটাতে পারে; আবার কান্নার বন্যা বইয়ে দেয়।

কাশবনের স্নিগ্ধ শীতল হাওয়ায়,
মুগ্ধ আমাদের মন।
লেন্সবন্দি বিচিত্র সুন্দর-
ছবির পিছনে দাঁড়িয়ে
 সাংবাদিকতার কান্না দেখতে পাইনা।

 তবুও তারা সমাজ গঠনে-সভ্যতার ধুলোমাখা ইতিহাস ভবিষ্যতে পৌঁছে দেয়।

শুভজিৎ চক্রবর্তী

মহামায়া  

শরতের আগমনে চারিদিক
যেন কাশফুলের গন্ধে মোহিত,
অল্প অল্প কুয়াশায় আচ্ছন্ন চারিদিক মনে যেন এক আনন্দ জাগায়, কাশফুলের মুগ্ধতা যেন মায়ের আগমনের এক বার্তা নিয়ে আসে মহামারীতে পরিপূর্ণ আজ চারিদিক ,মনে এক অজানা ভয়ের অনুভূতি সৃষ্টি করে! কিন্তু মায়ের আগমনীতে মুছে যাবে এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি , ষষ্ঠী থেকে নবম যেন এক স্বপ্নের আলোড়নে সেজে ওঠে চারিদিক, অঞ্জলি এবং অন্যভোগে জেনো কাটে সারাদিন --সন্ধ্যায় আরতির গানে মেতে উঠি আমরা সকলে বিদায়ের দিন চলে আসে দশমী রূপে !মনে দুঃখ বেদনা জাগে মায়ের বিদায়ীতে, তবুও মনে আশা নিয়ে আমরা আবারও বলি আসবে মা তুমি বছর পরে||

উর্মি সাহা

নতুন ভোর

সভ্যতা ও সংস্কৃতির বিভাগ,
রাজশাহী তার মনোভাব।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিভীষিকায়,,
মিডিয়া জনতার বর্তমান পার্টনার।
শারদীয়ার উষ্ণতায়-
ঢাকের পিঠে কম্পনের আওয়াজ-
নির্ভয়তার উচ্চ শিখরে;
মাইক হাতে দৌড় চলছে গঞ্জে গঞ্জে।
রাজনৈতিক জটিলতায়,মৃত্যুদণ্ডে-
আক্ষায়িত কত শত পুত্র,
মাস্ক আর মর্গের মাঝ পথে-,
হেরেছে বেঁচে থাকার সুত্র।
মহামায়ার অসুর নিধন;
জাগিয়ে তোলে নারী শক্তি,
মায়ের কোলের সন্তান নাশে-- 
মিছিলে হাঁটে কর্তব্য বিমুখী প্রতিবেশী।
সাংবাদিক-এর কলমের দুঃশ্চিন্তার মাঝে,
কাকভোরে শিউলির উচ্চারণে মন্ত্র সাঁজে।
সাহস গুলো সব গুমরে মরছে-,
ইতিহাস গড়ছে বন্ধি প্রেম।
এইভাবেই কি মুক্ত দেশ!
মহামারীর অকালবোধনে,
সুই বুনছে বিজ্ঞান মহল-,
ক্যালেন্ডারের সাথে সখ্য ছেড়ে,
লিখছে কেবল সাংবাদিকের জ্যান্ত জীবন।
মায়ের ত্রিনয়নের সুধাধারায়-,
মহামারী মুক্ত হোক এই ধরা।
নতুন ভোরের নতুন আলোয় সাথে থাক;
মহামারীর নিধন সংবাদ আর চায়ের কাপ।

সংগীতা দাস

পাড়ের সন্ধান

ভাবের নদীর বুকে জলরাশির ভান্ডার,
দেখলেই যে লাগে অনিশ্চয়তার সংহার।
গভীরতার মাঝে হারিয়ে যাবার শখ,
সন্ধানের খুঁজে গিয়েছি অন্তিম পথ।

নদীর পাড়ে পাড়ে ঘুরে বেড়াই,
হাজারো অনুভূতিরা ছুটে পালাই।
তন্ন তন্ন করে গহীনতার নিমগ্নে,
অন্তরায় হয়েছি ব্যর্থতার সাথে।

জলের আয়নাতে দেখা যায় রূপের প্রতিচ্ছবি,
স্বচ্ছতার পরিচয় দিয়েছে হাজার তরী।
তলিয়ে যাবার ভয়ে যায় নি নিবিড়তায়,
কি করে পাবো পাড়ের সন্ধান তার.?

বাঁধ ভেঙে পড়ে পথের দ্বারে,
বিলীন হয়ে যায় আবেগের ঝড়ে।
স্তূপের পাহাড় পড়ে বিনষ্ট হয়ে, 
ভব নদীর পাড় ডিঙিয়ে যাবার তরে!

মন যদি হতো বৈরাগী,
তবে কি পাড়ের সন্ধান পেতে হতো দেরি!
যেতে যদি হয় অকুল পাতারে,
তবে ভব সমুদ্র পাড়ি দিতে হবে।

অনুপমা দেবনাথ

অহংকার

সুখ ,দুঃখতো সবার জীবনেই আসবে। 
ঠিক তেমনি  অহংকার,লোভ,লালসাও সবার জীবনে আসবে। 

কিন্তু যে ঠিক ভুল বুঝতে পারবে না সে কখনই বড় হতে পারবে না --
মানুষ সব থেকে বেশি ভুল করে যখন সে অহংকারি হয়। 
তাই আমরা যখন আমাদের মনের সমস্ত অহংকার কে ভেঙে ছুঁরে ফেলতে পারব, 
ঠিক তখনই আমরা আমাদের শরীরের বুঝা মুক্ত করে, হালকা হয়ে ,উপরে উঠতে পারব ত্রবং-----

লক্ষের শীর্ষে ঠিক পৌঁছতে পারবো। 

"আগে অহংকার ছার, তারপর বড় হও"

দিপ্সী দে

সাংবাদিকতা
   
  
সভ‍্যতার সিরিজ না হলেও প্রতিদিনের সিরিজ
অকপটে জীবনের কাব‍্য সমাজের কথা 

ক‍্যামেরায় ফ্ল‍্যাস বন্দি!
সাধারণের জন‍্য শাসকের বিরুদ্ধে  আওয়াজ।
স্বৈরাচারী দেশের বিপক্ষে ধিক্কার।
এই সভ‍্যতা তাদের দিয়েছে,
আইন্ডিন্টি সাংবাদিকতা।

ঝড় জলমগ্ন শহর অতিমারী 
শেখায় তাদের জীবন বাজি রাখার পন্থা।
তাদের একটাই ভালোবাসা ;
সাংবাদিকতা।
       

অতনু রায় চৌধুরী

অপেক্ষায়

চারদিকে মণ্ডপ সেজে উঠেছে, সেজেছে নতুন আলোতে এই শহর 
হাতে নেই টাকা তাই হল না এবার পূজোয় নতুন জামাকাপড়।
তবুও মুখে হাসি নিয়ে ঘুরছে কাজের সন্ধানে 
পেটের দায়ে শিক্ষিত যুবক আজ রাস্তায় লড়ি টানে।
নিজের স্বপ্ন ধ্বংস করে বাঁচিয়ে রাখে পরিবারকে 
বুকের মাঝে হাজারো আঘাত, তবুও বলে না সে কাউকে।
দিনশেষে আবারও নতুন ভোরের অপেক্ষা
গভীর রাতে মাথায় ঘুরে হাজারো রকম চিন্তা ।
জীবনযুদ্ধে চলতে চলতে এইভাবেই বয়স ফুরিয়ে যায়
যৌবন শেষে বৃদ্ধ বেশে শেষদিনের অপেক্ষায় ।

শাহেলী নমঃ

ভয় ,কৱোনা

স্কুল একদিন ও বন্ধ কৱোনা,
অফিস আদালত কামাই কৱোনা, 
আজ কৱোনাই সবকিছুকে বন্ধ কৱে দিল।

যুদ্ধে নামতে ভয় কৱোনা,
কঠিন কাজে পা বাড়াতে ভয় কৱোনা,
আজ কৱোনাই হয়ে উঠলো সাৱা বিশ্বেৱ কাছে একমাত্ৰ ভয়।
 
উহান থেকে কৱোনা আজ আমাৱ উঠানে,
শিহৱিত হই আমি প্ৰতি ক্ষনে ক্ষনে।
আহা.... একি অনাচার.......,
প্ৰতিদিন যে মৱছে মানুষ হাজাৱ হাজাৱ।
চাৱিদিকে বইছে আজ হতাশাৱ বাতাস,
এ কেমন পৱীক্ষা ঈশ্বর ,আমৱা যে খুবই উদাস।
প্ৰকৃতি ও তোমাৱ হাতে বাঁধা ,
ওৱিষ্যা থেকে ছুড়েছিলে এক ধাঁধা।
ইতালিতে ফেলেছিলে কঠিন ৱসগোল্লা,
গাড়ি বাড়ি ধ্বংস হলো, দেখলাম সবাই খুল্লমখুল্লা।
আম্ফানেৱ দাপটে উড়ে গেলো মাথাৱ ছাঁদ,
কবি সুকান্তেৱ বাণী মনে পড়ে দেখলে আকাশে চাঁদ।
দেবালয়েৱ দ্বাৱ আমাদের জন্য ৱুদ্ধ কেন ঈশ্বর?
তুমি ও কি কোয়াৱেন্টাইন এ আছো?
প্ৰমান কৱে দিলে তুমি আবাৱো,
তুমি বিৱাজমান মনুষ্যে....
ডাক্তার ,নাৱ্সদেৱ  বেশে আছো আমাদেৱই পাশে।

সুজন দেবনাথ

তুমি আসবে বলে 

তুমি আসবে বলে,
শরৎ যেন তাই
নব রুপের সাজে।
বাতাস যেন মুখরিত হয় 
আগমনী সুর বাজে।
তুমি আসবে বলে,
হাজার মুক্তা ঝিকিমিকি ঐ
শিশির ভেজা ঘাসে।
কাশের বনের ফুল গুলিও 
হাওয়ার দোলায় ভাসে।
তুমি আসবে বলে, 
সোনার রঙে সাজানো 
কৃষকের খেত-মাঠ।
শিউলি ছিটিয়ে সাজিয়ে রাখা 
গ্রাম্য পথ-ঘাট। 
তুমি আসবে বলে, 
শ্রমিক কৃষক মেতে উঠে সব 
সারি গানের সুরে।
হাতছানি আশে বুক বাঁধে ঐ মানুষ 
যারা রয়েছে আস্তাকুঁড়ে।
তুমি আসবে বলে, 
অসহায় নারী আত্মরক্ষার 
শক্তি খুঁজে পায়।
মত্যবাসী দুই হাত তুলে তাই
আছে তোমার অপেক্ষায়।
তুমি আসবে বলে,
সম্পর্ক আর মানবিকতার 
পথ চলা হোক সচল।
নরপিশাচ ডাস্টবিনের ঐ 
কীটগুলি হোক অচল।
তুমি আসবে বলে, 
গোটা বিশ্ববাসী আজ
তোমার পানে চায়।
সব অশুভ শক্তি বিনাশ করো
মাগো তারই বন্ধনা আমিও
রাখছি তোমার পায়।
 

পিয়াল দেবনাথ

দূর্গা

দু তিন বছর আগে শরৎ কালের সন্ধ্যায় যখন আকাশে ও বাতাসে পূজোর মৃদুমন্দ ডাক, সাথে ফুলের সুবাসে যখন বাড়ির বাহির দ্বার টা স্বতেজ হয়ে থাকত, কি আনন্দ টাই না হত। কিন্তু আজ মনের মধ্যে সেই রকম আভা আর অনুভব করতে পারিনা। চারিদিকে উৎসবের জলনিধির মাঝে আমি পাথরের ন্যায় অসাড়। বয়সের পাশা পাশি ইচ্ছা,আকাঙ্খার তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। চকলেট বা নুতন জামা পেয়েই মন টি খুশি হয়ে যায়না বলে, জীবন এখন আর সহজ ভাবে কাটেনা। আজ জীবনে কিসের যেন অনুপস্থিতি অনুভব করছি।
               সাল ২০১৬ ইং, দূর্গাপূজা। আমার হৃদয়ের নিষ্পাপ মন্দিরে মানব রুপী দূর্গার আরাধনা করেছিলাম। দেবীই বটে। তার লাবণ্য রূপ,চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি, জীবন যুদ্ধে শক্ত ও দৃঢ় হয়ে লড়াই করা সব মিলিয়ে সে আমার দৃষ্টি তে কোন দেবীর চেয়ে কিছু কম ছিল না। বহুকাল তপস্যা করে দূর্গার দর্শন আমার ভাগ্যে জুটেছিল। তবে সে দূর্গা কে আমার তৈরি কৃত্রিম মণ্ডপে তুলার ক্ষমতা আজ ও হয়ে উঠেনি।
               চোখ বুঝতেই হঠাৎ যে কখন ঘুমিয়ে পরলাম তা পরদিন ঢাকের আওয়াজে চোখ খুলবার পর বুঝলাম। আজ নাকি দশমী। লোকে সত্যি বলে -  কখন যে বিদায়ের ‌ক্ষণ এসে দাড়ায়, শুধু এক চোখের পলকের ব্যবধান। কাল যে রূপে মুগ্ধ হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম, আজ কিছুক্ষণ পর সেই রূপ আর আমার চিত্ত কে আন্দোলিত করবে না।তাকে মণ্ডপে রেখে পূজা করার সৌভাগ্য হবার আগেই, সকল স্মৃতির সহিত নদীর জলে ভাসিয়ে দেবার মুহূর্ত এসে হাজির। সে ফিরে আসবে না। নদীর জল স্বভাবতই পুরাতন স্থানের বালি অপর নতুন স্থানে স্থাপন করে; আগের জাগায় ফিরে আসে না।
                দূর থেকেই তাকে বিদায় জানাতে হল।লোকের ভিড়ে তাকে একটিবার কাছ থেকে দেখা ও  সম্ভব হয়ে উঠলো না। দূর্গার অনেক উপাসক রয়েছে। সুতরাং আমার মত তুচ্ছ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকে কেই বা মনে রাখবে! সে চলল বহু দূর, অনন্ত পথ ধেয়ে।
              আজ কিসের যেন অনুপস্থিতি অনুভব করছি। মনের মধ্যে আর আগেকার মত আবেগ ও উৎসাহ জন্মায় না। হয়ত জীবনের কিছু অংশ নদীর জলে ভেসে গেছে তার সাথেই।

শিপ্রা দেবনাথ

দেবী দুর্গা

মাগো তোমার প্রতিক্ষাতে মগ্ন ত্রিভূবন, 
তোমার আগমনে খুশি সবারই মন।   
শিউলি ফুল দিয়ে শুরু করি পূজার আয়োজন, 
করজোড়ে করি মাগো তোমার বোধন। 
ছোট্ট বেলাটা যেন ফিরিয়ে আনে সাঁঝের শিউলি ফুলের গন্ধ, 
বড় হয়ে বদলে যায় সবার, চেনা জীবনের ছন্দ। 
জগৎজননী তুমি মাগো, তুমি মুক্তিদায়িনী
দুর্গতিনাশিনী তুমি মাগো অসুরবিনাশিনী। 

বিশ্বজুড়ে জ্যান্ত অসুররা করছে সর্বনাশ,
মাটির অসুর আর কতকাল করবে মাগো নাশ
এবার করো মাগো তুমি , জ্যান্ত অসুরের বিনাশ   । 
আজ সব মায়ের বুকে শুধু সন্ত্রাসেরই ব্যথা, 
কখনো কি ভেবেছো মাগো, সেইসব মায়ের কথা ? 
শক্তিময়ী মাগো করো সর্বশক্তি দান, 
জ্যান্ত অসুরকে দমন করে বাঁচাও সব মায়ের মান। 

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য

ভাল্লাগে

ভাল্লাগে ভালোবাসতে তারে
যার চোখে আমি লজ্জার ভীষণ!
আমার মুখে তার প্রতি প্রেম,
 হাস্যকর ভীষণ যার কাছে 
তা মৃত্যুদণ্ড.....
তারে সারাক্ষণ ভেবে
অযৌক্তিক দুনিয়ায় 
শ্বাস নিতে ভাল্লাগে!
ভাল্লাগে দুর্ঘটনায় মুখোমুখিতে
অভিমানী হেসে ভালো আছিস...?
বলাটা!
ভাল্লাগে অতীতের বিকেলের মতো
বোকামিতে হাতড়ে বেড়ানো....!
আমার বাড়ি হয়ে তার বাড়ির দিকে ছোঁটা
রাস্তাটায় হয়তো সন্মুখ দুর্ঘটনা ঘটবে
এটা ভাবতে ভাল্লাগে!
ভাল্লাগে তার বাড়ির পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে 
তার কোকিল কন্ঠ উপভোগ করতে।
তার পূবের জানালায় চোখ না রেখে
তাকে আবছা দেখার স্বাদ নিতে ভাল্লাগে।
তারে নিয়ে টুকরো কথা লিখে
স্ট্যাটাসের দেওয়াল ভিড়িয়ে দিতে ভাল্লাগে।
ভাল্লাগে যে মানুষটার সাথে যোগাযোগ
সিল করা পোস্ট অফিসের মতো
তার লাস্ট সিন চেক করা,
যা আমার নিত্য বদঅভ্যাস!

সে জনা মাত্রই আমি দুর্বল,
সর্বত্র কিছুই তার ভাল্লাগে,
ভাল্লাগে না আজ শুধু
কবিতার কবি'কে...!

সম্রাট শীল

মহামায়া
      
শোভিত রূপে মহীয়সী হে মহামায়া,‌ তুমি জগত অপার।
তোমার আগমনীতে সেজে উঠেছে এই জগত সংসার।।
কৈলাস হতে তোমার আগমন হলো, এই ত্রিভুবনে।
দেখিব তোমারে নয়ন ভরে, আমি আপনমনে।।
এসেছ তুমি চারিদিনের জন্য, পিতার দুয়ারে।
দেখিব আমরা তোমারে নয়ন ভরে।।
তোমার আগমনীতে ধরনী হয়ে উঠুক, শস্য শ্যামলাতে পরিপূর্ণ।
গরীব- দুঃস্থদের মুখে উঠুক অমৃত অন্ন।।
অন্নপূর্ণা রূপে হোক, তোমার আগমন।
ক্ষুধার্তদের মুখে ফুটুক হাসি, ভরে উঠুক বিশ্বচরাচরের প্রানপণ।।
মহামায়া রূপ নিয়ে, মায়ায় আচ্ছন্ন করো এই জগত সংসারকে।
অজ্ঞানতার নাশ করে, জ্ঞানের ভাণ্ডারে পরিপূর্ণ করো এই চেতনাকে।।
এই বারের ঢাকের কাঠিতে মলিন হোক, সকলের এই হৃদয়।
কাটুক সকলের মনের ভয়, হোক মানবতার জয়।।

নীল সরকার

কেমন পরিচয়!

কেন এত কষ্ট পাই,
একা একা ভেবে।
পথ চেয়ে বসে থাকি,
ও আসবে তবে।

কুঁড়ে ঘরে চাঁদের হাসি,
হঠাৎ একদিন আসে।
আলেয়ার পিছু পিছু -
জীবনটা মোর ভাসে।

হৃদয়টা ওর বড়ই কোমল,
বিধাতার উপহার।
হাসিতে ওর প্রেম ঝড়ে,
শোভাষিত বকুলের বাহার।

কখন যে হারিয়েছে মম,
ওর প্রেমের তরে-
তুচ্ছ আমি হয়ে আছি তবে-
লোক চক্ষু আঁড়ালে।

ভাবিনি কখনো হবে এমন,
উন্মত্ত হবো আমি।
প্রেম কেন দিয়েছ তবে-
এমন কৃপণ করে,
হে অন্তঃযামী।

শ্রাবনের বাদলা হাওয়ায় জেনেছি -
সে তো আমার নয়!
ছিলেম শুধু বন্ধু আমি,
এটাই মোর পরিচয়।

ছেলেটা ছিল বড়ই ভালো,
দোষ তো ওর নয়!
কেন তবে হয়েছিল প্রেম,
এ কেমন  পরিনয়?

কাউকে তো দেয়নি দোষ,
আমারই চরম ভুল।
একা একা ঘরে বসে,
দিচ্ছি ভুলের মাসুল।

ভগবান তুমি ধন্য হও,
কি তোমার লীলা!
মরে গিয়েও বেঁচে আছি,
অর্ধ-জীবনের খেলা।

তোমার কাছে শেষ আর্তি,
ওরা যেন থাকে সুখে।
তোমার লীলায় ভবের খেলায়,
যেন আমি থাকি দুঃখে।

আমার যত সুখ আছে-
দিও ওদের ঘরে।
বেলা শেষে মরণ পথে-
ওর যেন আশ্রু নাহি ঝড়ে।

আক্তার হোসেন

ঢেউ

যদি আমি নৌকা হতাম 
ভাসতাম নদীর জলে,

ভাটার টানে চলতাম ছুটে 

ঢেউয়ের তালে তালে।

সুখ গুলো সব বিলিয়ে দিতাম
দরিয়ার ওই মাঝে,

দুঃখ নিয়ে চলতাম ছুটে 
শ্রাবণের ওই সাঝে।

দু–ধারের ওই গাছ গুলো সব 
ছুটতো আমার সাথে,

ফুল গুলো সব দুলবে হাওয়ায়
মন নদীর ওই ঘাটে।

হঠাৎ যদি দমকা হাওয়া

ছুটে আসতো ধেয়ে,

দরিয়ার মাঝে থেকে আমি 
দেখতাম চেয়ে চেয়ে।

তারই মাঝে মন নদীতে 
উঠতো যদি ঢেউ,

ঢেউয়ের বেগে আমায় খুঁজে 
পেতো না আর কেউ।

কবিতা সাহা

ভালো থেকো
          
বলি কজন পারে স্বজন হতে?
প্রিয়জনের প্রয়োজনেতে?
সবাই শুধু স্বার্থ খোঁজে,
যে যার ভালো আগে বোঝে।
অজুহাত দেখিয়ে দূরে সরে
স্বার্থ শেষে কেটে পরে।
মায়ার বাঁধন ছিন্নকরে,
প্রয়োজনে নতুন প্রিয়জন গড়ে।
সারা জীবন থাকবে পাশে,
কথা দিয়ে কাছে আসে।
তবে শেষ মেসেজ কিন্তু ভালো থেকো!
নিজের খেয়াল নিজে রেখো।
এখানেই রিলেশন এন্ডিং,
এটাই আজকাল ট্রেন্ডিং।
তারপর পিন করা নম্বরটিও ব্লকলিস্টে আসে,
কেউ হাসে কেউ জোয়ারে ভাসে।

দিপিকা রায়

জগৎ জননী

উতৃপ্ত তেজরশ্মির নেত্র রেখায়
করেছ বহন জগৎ সংসার। 

কম্পিত ত্রিশূল অন্যায় স্পর্শে
ছিন্ন করে মাগো বক্ষপিঞ্জরে। 

ধরহীন দেহ করো রাক্ষসদের, 
বাঁচে যারা নির্যাতনের বুকে। 

রাঙা হবে কন্ঠ তোমার, 
মাগো পাপীদের রক্ত ধারায়। 

উঠবে জোয়ার মাগো অগ্নিকুণ্ডে 
বর্ষিত লাভা অঙ্গ বেয়ে, 
সিংহ গর্জন ত্রিশূল তোমার
অসুর বিনাশ হবে আবার। 

এই প্রতীক্ষায় দিন গুণি, 
আসবে মহামায়া তোমার আগমনী।

সুপর্ণা কর

মা মহামায়ার আগমন

মা মহামায়ার আগমনে

প্রকৃতি আজ উদ্ভাসিত।
শিউলি আর কাশফুলের শোভায়
চারিদিক হলো সুবাসিত।।

মায়ের আগমনী গানে
মনে জেগে উঠলো এক নতুন আশা।
 মহাময়ার আগমনে

 ঘুচে যাক সকল দুঃখ-দুর্দশা।

মায়ের আগমনে

আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের রাশি।
   

চারিদিকে শুধুই হাহাকার!

তবুও যেন সবার মুখে,একটু মৃদু-হাসি।

হে মা দুর্গে, দুর্গতিনাশিনী

অসুরনাশিনীরূপে,বিনাশ করো সকল পাপ।
মাগো তোমার আগমনে,
উন্মোচিত হোক সকল অভিশাপ।।

মহালয়ার পূণ্যলগ্নে মায়ের আগমন বার্তা,
 শারদআকাশে ভাসছে।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে 

নতুন আশার আলোয় পুনরায় মা আসছে।।

সঞ্জয় দত্ত


মুক্তি নেই

আমিও মানুষ আর তুইও মানুষ,
তফাৎ শুধু মনোভাবের।
আজ দিন দুঃখি কাঁদে
শুধু নির্মম বিচারে।

আমারও স্বাধীনতা আছে
ইচ্ছে মতো উড়ার,
কেন কেড়ে নিয়েছিস বাক্ !
এখন পথ শুধু মরার।

শুস্ক বৃষ্টি ফোঁটার জীবনের ন্যায়
প্রাণ বাঁচাতে ধরেছি পা তোর,
কতো চিৎকার করে কেঁদে কেঁদে বলেছি,
ছেড়ে দে আমায়,করেছি হাত জোড়।

পাষণ্ড জানোয়ারের মতো 
অসময়ে খেয়েছিস যাদের!
একদিন দৃঢ় কন্ঠে কেউ বলে উঠবে,
মুক্তি নেই তোদের।

সৌরভ দেবনাথ

ওই পাখি 


কোথায় গেলে গো তুমি?
তোমার মনের ঘরে
আমায় একটু জায়গা দেবে কি?
যদি ডাকো তবে হব তোমার মন পূজারী
আর, 
যদি না ডাকো তবু বলব আমি তোমায় ভালোবাসি।
পাখি মনে পড়ে কি সেদিন রাত ১১ টা থেকে
তোমার মিঠুর কণ্ঠস্বর শ্রবণে শ্রবণে প্রেমময় বার্তা আদান প্রদানে,
সূর্যি মামা-কে জাগিয়ে ছিলাম আমরা দুজনে।

সেদিন প্রভাতে কোকিলের কুহু কুহু ডাক, শালিক পাখিরা আকাশে উড়ছিল,             
আর;
মোবাইল ফোনে বাজত শুধু তোমায় যে আমি ভালোবাসি,শুধু তোমায় যে আমি ভালোবাসি।

সত্যি সেদিন সকালটা ছিল খুব কোমল শুরু হয়েছিল চাঁদ মামার হঁাসি আর সূর্যিমামার উদয় দিয়ে।
মাঝে মাঝে বইত স্পর্শকাতর' হাওয়া, দেহের মাঝে লাগলেই মনে হয় পেয়েছে আমি তোমার কোমল হাতের ছোঁয়া।

তারপর ধীরে ধীরে হলো সকাল, জাগলো লোকজন চলল যানবাহন,
সেই যে ফোন রেখে ছিলাম সকাল পাঁচটা নাগাদ,
তারপর চিত্তের অজান্তে কখন যে নিদ্রুায়  দ্রবীভূত হয়ে গেলাম।

কিছুক্ষণ বাদে ঘুম থেকে উঠে দেখি আকাশটাও অনেক কষ্টের সহিত কাঁদছে।

জিজ্ঞাসা করলাম কিরে আকাশ তুই কাঁদছিস কেন?
আকাশ বলল ভাই আমার ভালবাসাটাও না তোর মত অসহায়।
কখনো কাঁদিস আবার কখনো চন্দ্র সূর্যের মতো বিরহকে ত্যাগ করে উজ্জ্বল হাসিতে মেতে উঠিস।।

প্রীতম শীল

ক্রসফায়ার 

পূজা আসলো বলে মনীষার মূখে হাসি নেই,বারান্দায় বসে মা পুরুনো ব্লাউজ সেলাই করছে। বাবা কুঁড়াল দিয়ে লাকড়ি কাটছে।
কুঠারের সাথে তাল মিলিয়ে হুম হুম শব্দ করছে। এই শব্দ লাকড়ি কাটতে সাহায্য করে কিনা জানিনা। 
--মা মনীষা এক গ্লাস জল দেতো!
--মনীষা চুপ করে রইলো।
-- কিরে জল দিতে বলছিতো।
--মনীষা চুপ করে রয়েছে।মেয়েরা অভিমান করলে বেশি সময় চুপ করে থাকে।এই স্বভাবটা বছর এগারোর মেয়েটাও রপ্ত করলো।
--বাবা মেয়ের অভিমান টা বুঝতে পেরেছে। কিচ্ছু বলেনি,ঘর গিয়ে মাটির ঘড়া থেকে তিন গ্লাস জল খেয়ে একটা দীর্ঘ্য শ্বাস নিলো।

লাকড়ি কাটা শেষ না করেই হাত মুখ ধুয়ে বাজার উদ্দ্যশো করে রওনা দিলো। 
মনীষার মা পিছন থেকে বলতে লাগলো কোথায় যাওয়া হচ্ছে শুনি?
-- বাজারে যাচ্ছি গো।
-- অবেলায় বাজারে কেনো?
-- দেখছনা মেয়েটার মুখের অবস্থা।
-- এখন না গেলেই নয়।
-- যাবো আর আসবো।

-- দাদা লাল ফ্রগটা কতো হবে?
-- ৪০০ টাকা মাত্র।
--না না ওটা না, হলুদ টা দেখান তো?
-- ৩৭০ টাকা।
--থাক সাদা টা দেখান?
-- ২৩০ টাকা।
--হ্যাঁ ওটাই দিন। সাথে ঐ সবুজ ব্লাউজ টাও দিন।

৩০০ টাকা দোকানদারের হাতে দিলেন। ১০ টাকা ফিরিয়ে দিলেন। গাড়ি করে যেতে ২০ টাকা লাগবে। মনীষার বাবা পাঁয়ে হেটেই রওনা দিলেন বাড়িতে। রোদের জোর আজ ততটা নেই, হাঁটতে অসুবিদে হচ্ছেনা। ভিষণ খুশি খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন, মেয়ের মুখে হাসিতো ফুটবে।বউটা হয়তো ছেঁড়া ব্লাউজটা ফেলে স্বামীকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলবে,আমার জন্যও এনেছো। এই সব কথা ভাবতে ভাবতে মনে মনে দারুন খুশি হচ্ছেন। 

চৌরাস্তার মোড়ে আসতেই, খুব দ্রুত যাওয়া  মোটর সাইকেল থেকে একটা বস্তা পড়লো। মনীষার বাবা লোক গুলোকে পিছু ডাকলেন,  তাড়া ছুঁটে চলে যাচ্ছে। তিনি বস্তা টা কুঁড়িয়ে নিলো,কি আছে এর ভেতর?
তখনই বাংলা সিনেমার মতো পিছনে পুলিশের আগমন। 
-- এই যে কি আছে বস্তায়?
-- জানিনা স্যার?
-- বস্তা নিয়ে পালাচ্ছো,আবার জানিনা।
-- বস্তার মুখ খুলো?

সর্বনাশ এতো গাঁজা ভর্তি বস্তা। এই একে তুলো গাড়িতে। 
-- স্যার স্যার আমি কিচ্ছু জানিনা।
-- তোর মতো ধরা পড়লে সবাই বলে।
-- না স্যার আমি সত্যি জানিনা। একটা লোকের বাইক থেকে পড়লো,  আমি ডেকেছিলাম কিন্তু ওনারা শুনেন নি।
-- আর সিনেমা বানাতে হবেনা বাপ, উঠ গাড়িতে।
-- স্যার আমি গরীব মানুষ,আমি এই সব কাজ করতে পারিনা।
-- পারো কি না পারো,থানায় নিয়ে থার্ড ডিগ্রী দিলেই গলগলিয়ে বলবে।

-- মা বাবা এখনো আসছেনা কেন?
-- আসবে মা আসবে।
-- মা বাবা কি আমার জন্য জামা আনবে?
-- নিশ্চই আনবে।
-- কি মজা হবে বলো, বান্ধবীদের আমিও দেখিয়ে দেখিয়ে বলবো, দেখ এটা আমার নতুন জামা।
-- হুম বলিস মা।

-- কিরে বল কোথা থেকে নিলি গাঁজা গুলো?
-- না স্যার আমি কিচ্ছু জানিনা।
-- তবেরে!!!

-- স্যার আমায় একটু জল দেন! খুব তেষ্টা পেয়েছে। 
-- স্যার আমার মেয়ের জামা গুলো পৌঁছে দেবেন। ও মায়া মুখটা আমি আর সইতে পারছিনা। আসার সময় মেয়টাকে খুব খুশি দেখলাম
--সিনেমার কাহিনী করছো ব্যাটা। 
-- স্যার আরো কষিয়ে মারুন। সালা এই ভাবে কিচ্ছু বলবেনা। 
-- ঠিক বলেছো,হারামি খুব শক্ত।
-- প্লাস টা আনো! 
-- ওমা স্যার আমার নখ তুলবেন না।আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি স্যার।
-- তবুও বলবিনা। 
-- রামু গরম জল আন! 
-- বল সালা বল।

স্যার আসামীর অবস্থা ভালো নেই।আর মারবেন না। 
--স্যার ওর শ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে মনে হয়।
-- হুম।
-- কি করা যায়?
-- ক্রস ফায়ার।

--মা বাবার কি হলো?
-- আমার জামাটা এতো লাল কেন?

মা নির্বাক বসে আছে।
সাংবাদিকরা হাজারো প্রশ্ন করছে। 
মা কোনো উত্তর করছেনা।

গোপাল বনিক

তোমরাই পারো
           

আমি এক অন্ধকার কারাগারে বসে-
ভোরের আলোর স্বপ্ন দেখি।
যখন মানুষ সব হারিয়ে বিমর্ষ
পাহাড় থেকে সমতল,
শহর থেকে গ্রাম,
পথ চলছে এক বেদনার অশ্রু হাহাকারে।

আমার হাতে ছিলো বিদ্রোহের কলম,
দৃষ্টি ছিলো শ্যেন বিদ্যুতের মতো।
আমি এখনো শুনতে পাই কুরুক্ষেত্রের মাঠে-
শ্রীকৃষ্ণের পাঞ্চজন্য আওয়াজ।

হাঁক দিয়ে বলছে-
তোমরাই সরাতে পারো জগদ্দল জঞ্জালের স্তুপ,
তোমরাই ঘোচাতে পারো ভুকমারি ভাঙনের ত্রাস।
তোমরাই পারো শক্ত করে ধরতে নিজেদের হাত,
তোমরাই হবে আগামীর আয়ুবর্ধক মৃত সঞ্জীবনী সুধা।
হ্যাঁ হ্যাঁ তোমরাই!

গৌতম দাস

আর কত!

উর্বর সমাজে নর রাক্ষসের বীজ বুনছে কন্যা শিশু বিদ্বেষী দল।

তপ্তকন্ঠে ভস্মীভূত হোক তোদের বিষাক্ত বল।
অন্ধকার কুয়োর তলদেশে ওদের বসবাস।
জ্ঞানের আলোতে শক্ত এলার্জি যেন জীবন্ত অভিশাপ।

ভোরের তেজোমূর্তির রক্তিম নির্মল স্পর্শ 
স্নেহময়ী বসুন্ধরার স্নিগ্ধরূপ ওদের বাবার সম্পদ-
শ্রেণীগত ডিগ্রিধারী ওরা এই রূপ উপভোগ করে সারা বর্ষ।
ওরা চোখে ঘন কালো পর্দা বেঁধে বসে আছে,
সততা,মানবিকতা,বিশুদ্ধ রক্ত নেই তারার কাছে।
মাথা উঁচু করে বলে
কন্যা শিশুর পৃথিবীর রূপ দেখার অধিকার নেই,
ভূমিষ্ঠের পূর্বেই মৃত্যুর কোলে পাঠিয়ে দেয় সেই।
ভস্ম হয়ে যায় শিশুরা রক্ত চোখ ও কুকথার অগ্নিবাণে।

ওরা রক্ত পিপাসু মুখোশধারী আবার নানা দেবীর পরম ভক্ত।
দেবীর চরণে সর্বস্ব ঢেলে দেয়- ঐদিকে ভ্রুণ হত্যা পাপে যুক্ত।
এই নরপিশাচ আছে যত-
সুস্থ সমাজের অক্সিজেন,ভবিষ্যতের মা রূপীর  মুখে মাটি দিচ্ছে শতশত।

একুশ শতকেও থামছে না এই মহাপাপ
ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে,আর কত??
চলো সবাই কন্যা শিশুকে মার কোলে দেই ঠাঁই।
দেশ দুনিয়ায় কন্যার জয়গান গেয়ে যাই।
কন্যা শিশু হত্যা, অবহেলিত সমাজ 
চলো চিরতরে মূলোৎপাটন করি আজ।

পূজা মজুমদার

অকুতোভয়

আমি ভয়ার্ত কোনো যোদ্ধা নই যে, 

সব মাথা পেতে মেনে নেবো।
আমি হেরে যাওয়া কোনো সৈনিক নই যে,
অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবো।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের সব অনিয়মকে ভেঙে
দিতে পারি করে খান খান।

আমি দিতে পারি করে দুর সব যত
অন্ধকারের তিমির রাত।
গুড়িয়ে দিতে পারি আমি সব 
সমাজের যত কালো হাত।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি সাহসী মায়ের সন্তান।
সমাজের যত জঞ্জাল মুছে,
মানুষকে দিতে চাই পরিত্রাণ।

অন্যায় যদি দেখি হতে তবে,
দিই না কখনও প্রশ্রয়।
আমি চাই নি নিতে কখনও কভু, 
অনিয়মের কাছে আশ্রয়।

মৃত্যকে নিয়ে পথ চলি আমি, 
করি না কখনও মরণের ভয়।
অবিচারের কাছে তবুও আমি কখনও,
স্বীকার করিব না পরাজয়।

আমি উদ্যম,  আমি আগুয়ান, 
আমি চাই হতে সমাজের সেই
শহীদ মায়ের সন্তান।
অন্যায়কে ভেঙে দিয়ে যারা,
হয়ে আছেন গরিয়ান।

বেঁচে যদি থাকি আমি তবে 
করে যেতে চাই এই সংগ্রাম, 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার আমি
করেছি মুক্তি পণ।

চয়ন সাহা

কলম

সাদা কাগজ সাজিয়ে দিয়ে,
বুক চিড়িয়ে চলছি ছুয়ে।
তিন স্তম্ভের রক্ষনেও
শিরায় শিরায় রক্ত দিয়ে।
সাজিয়ে দিলাম শুন্য বুক
তবুও যেন মিলছে রোজ
রক্ত ঝড়ার অলীক সুখ।
এক বিন্দু রক্ত দিয়ে 
লিখে দিলুম নাম ঠিকানা,
আর এক বিন্দু রক্ত দিতেই
কেটে নিলো আমার ডানা।
তবুও কেমন লড়াই চলছে
বাঁচতে তাদের নেই যে মানা।
তিলে তিলে ঝড়িয়ে দিলুম
তাজা রক্তের বিন্দুকনা,
আশায় আছি তোমার হাতে
গর্জে উঠবে প্রতিবাদে 
আমার শিরার অত্যুষ্ণ রক্তের
লড়াইয়ের এই কলম খানা।

রুবেল হোসেন

মৃন্ময়ী দেবী

কবে মা তোর মুগ্ধ হাসিতে 
ভরবে জগৎ খানা,
সবুজ শ্যামল ধরণীর গায়ে 
করছে রাক্ষস হানা।
 
কবে মা তোর চণ্ডী রূপে
কাঁপবে কেবল বুক,
সন্ত্রাসবাদী দুষ্কৃতি কাজে
দেখবে চণ্ডীর মুখ। 

কবে মা তোর বাহন নিয়ে 
ছুটবি রথের ঘোড়া,
ধ্বংস করছে বিশ্ব খানা 
দুষ্ট লোকের জোড়া 

কবে মা তোর ত্রিনয়নে 
পাপের ছায়া ধুয়ে যাচ্ছে,
ত্রিশূলের ফলায় অগ্নিকাণ্ডে 
ন্যায় বিচার ফিরে পাবে। 

কবে মা তোর মৃন্ময়ী রূপে
প্রাণ প্রতিষ্ঠান হবে, 
জগৎ জুড়ে মুক্ত হাওয়ায় 
স্বাধীনতা খুঁজে পাবে।

সাধন নমঃ

মেয়েটি

আমি স্বপ্ন আঁকি ঐ মেয়েটির চোখে,
যার চোখ জুড়ে স্বপ্নেরা খেলা করে।
আমি গান বুনী তার দেওয়া স্বরলিপি  দিয়ে
যে গান ঢেউ তোলে সুরে সুরে।
আমি মাতাল হই মেয়েটির প্রেমসুখে
শুধু ছাপ ফেলে মোর চোখের কোনে।
আমি নির্বাক হই মেয়েটির প্রতিবাদে
হোক না সেই প্রতিবাদ ঘরে ঘরে।
আমি হাহাকারে ভাসি সেখানে
যখন সে ঘুরে ফিরে জীর্ণ বস্ত্রে।
সবাই দুর্গা খোঁজে কাশ বনে
আমার দুর্গাকে দেখেছি অনাহারে।
তবুও ভালোবাসি,ভালোবাসতে হয় বলে
নানা রঙে নানা আদলে।
আমি ভালোবাসি সেই মেয়েটিকে,
যার টানা টানা হরিণী চোখ,শরীরটা জীর্ন কালো।
তার চোখে ভালোবাসতে শিখেছি,
তাইতো ভালোবাসবো আরো।

শতরূপা ভট্টাচার্য

আত্মভাবনা

ভালোবাসি
বলতেই যে হয় ভালোবাসি
কিন্তু শুধুই কি বলার জন্যেই ভালোবাসি? 
শব্দটির মাপকাঠি বিচার করি? 
ভালোবাসি!

শব্দটির গভীরতা বোঝার ক্ষমতা আছে? 
কিছু ভালোবাসা তো প্রকাশিত না হয়ে বেশ ভালো আছে! 
কিছু আবার উচ্চ মানের প্রকাশক,
কিন্তু বাস্তবে মূল্যহীন এক শব্দ হয়ে যায়, 
ছোট্ট একটি প্রয়াস, কাউকে ভালোরাখার,
ভালো থাকার।
এটাই হয়তো জীবনের দায়িত্ব ।
কিন্তু সমাজ আজ সেই দায়িত্বের মূল্য দিতে পারেনা।
মন আর শরীরের দ্বন্দ্ব লেগে যাচ্ছে আজ,
কিছু ক্ষেত্রে শুধু শরীরের জয় হচ্ছে মনের হার হচ্ছে ।
আবার কিছু ক্ষেত্রে মন হয়ে যায় একাকীত্বের ভাগীদার । 
কথার কি আর কোনো শেষ আছে?
কলম চলা শুরু করলে তো সেই চলতেই থাকবে। 
শেষ পর্যায়ে শুধুই ভালোবাসি,
ওজন দিয়ে  ভালোবাসি । 
                  

চৈতী দে

শরৎ উৎসব  

শুভ্র শরতের স্বচ্ছ আকাশ 
মুক্ত মেঘের ছায়া, 
শষ্য-শ্যমল রূপালি চাঁদ 
ডাকছে উৎসব মায়া। 

শরৎ জুড়ে উৎসবেতে
নাচে সবার মন, 
ঢাকে কাঠি পড়ল বলে
নেই-তো  বেশিক্ষণ। 

শরৎকালে শারদীয়ায়
দূর্গা পূজা হয় , 
পূর্ণিমার জ্যোৎস্না রাতে 
লক্ষ্মী জেগে রয়। 

অামাবস্যার তমসাতে 
সাজে শ্যামা-শিব, 
ভাই ফোঁটারি আগমনে
বোন যে উদগ্রীব। 

শরৎ সাজে শাপলা-পদ্ম 
ফোটে দিঘীর ধারে,
উৎসবেতে মাতো সবাই 
শরৎ ঋতুর বরে। 

সমীর ভাদুড়ী

 মায়ের আগমনী বার্তা
          
নব আনন্দে জাগো
নব কিরণের আলোয় জাগো
নিজে জাগো অন‍্যকে জাগাও ।
আলস‍্য পরিহার করে এগিয়ে যাও
দুঃখের মধ‍্যেই সুখকে বরণ কর
কারণ দুঃখই জীবনের স্পর্শমণি ।
প্রেমের আলোয় সবাইকে আলোকিত কর
প্রেম  হল সবার জীবনের এক মহাসত‍্য
প্রেম ছাড়া এজীবনে সব কিছু অনিত‍্য
প্রেমের পরশে বিশ্বকে কর প্রেমময়
সবার আনন্দেই নিজের আনন্দ এই হোক পণ
সবাইকে কর প্রানের বন্ধু সবাইকে কর প্রানের ধন
এই জগৎ মাঝে কেহ নয় মোর পর
এই ভাবনা কে অবলম্বন করি জগৎ কল‍্যানে 
নিজ নিজ সু উচ্চ ভাবনাকে প্রস্ফুটিত করি। 



মিঠু মল্লিক বৈদ্য

দিন গুনার অবসরে।

শাসক তুমি,বটে হে মহাজন!
মনে পড়ে কি?স্তব্দ নিশিথিনী
একাকীত্বের অতিবাহন, কিংবা
স্নেহ পরশ, রাখা ছিল যতনে।

লুকিয়েছিল কত,লোলুপ শার্দূল
ঐ চিরচেনা ক্ষেতের;পাশের বনে,
সংগোপনে;দিয়েছি ঠাঁই তোমায়,
এই চাঁদোয়া তলে। 

ক-ত বার তোমার অস্তিত্ব চাষে
হারিয়েছি স্থায়িত্ব,মিলেছে অখ‍্যাতি,
হয়নি প্রাক-কলন,দৃঢ় হাতে 
আঁকড়ে চলা অনর্গলে।

'সুহৃৎ'! বুঝেছি রূপ তোমার,
মিত্রতার আড়ালে 
শুধুই খলতা,
ক্ষুধা;প্রতিপত্তি আর ঐ আসনটার।

সময়ের ঘুর্ণিপাকে ঘুরছি
অজ রূপের আড়ালে।
নীরব,নির্বাক! নিরুত্তর!
ভুলতে বসেছো সব,অনাদরে।

পিপীলিকার আকারে,মৃত‍্যুর সারিতে
গুনছি দিন অসময়ের-
কখনে সরবে চরণ,দাম্ভিক পরিহাসে,
দেখবো আলো নতুন করে,মিত্রতার পরখে।

সাগর চৌধুরী

পুজো পর্ব

দাঁড়িয়ে সেথায় নুতন সাজে
মিষ্টি মুখো হাসির স্বরে
নীল গগনে ছড়িয়ে দেয়,
সাদা কাশের তুলো ।
সারা বেলা ছবি আঁকে,
মেঘের ভাঁজে মুখ খোঁজে,
অল্পতে তার মন ভরে যায়
হাসিতে ফোটে নতুন রঙা আলো ।
ছুট্টে বেড়াই সারা বেলা
কি জানি কিসের তাড়া ?
নেইকো নজর নিজের বেশে,
শুধু হাজার কাজের ভিড় ।
দিনের শেষে ঘুমিয়ে পড়ে
ক্লান্ত চোখেও স্বপ্ন গড়ে;
এসেছে যেন মিলন তিথির দিন ।
যায় না থাকা অপেক্ষাতে
মনের মাঝে বাঁশি বাজে
এ কিসের আগমনী ?
সবই যেন নতুন লাগে,
চেনা নুপুর কানে বাজে,
এ কোন বালার আগমন ?
নতুন দীপের আলো জ্বালা,
নতুন সুরে গান লেখা,
শব্দ গুলো জাগায় শিহরণ ।
হৃদয় পানে নুতন রং,
স্বপ্নে নুতন ছোঁয়া ।
গভীর তাহার ব্যঞ্জনায়,
স্পর্শে গান গাওয়া ।
তাহার মাঝে নুতন ছবি,
চির চেনা - তবু যেন
অপেক্ষা জাগিয়ে ব্যথা;
শুভ মুক্তির আনন্দে মত্ত সে-
নব রূপে, নব সাজে, নব নব গান গাওয়া।

শুভদীপ পাপলু

এখনি অন্ধ, বন্ধ কোরো না পাখা!

চিৎকার, প্রতিবাদ- প্রমুখ শরীরি বিনোদনসকল
আদপে একেকটি বয়সের তারতম্যে, পরিবর্তনশীল অভ্যেস।
প্রভূত রক্তনির্মম অভ্যর্থনা,
নিস্কাম গূঢ় সম্পর্কজনিত লোভ,
প্রণয়মুক্ত ব্যবধান, ইত্যাদি-
অসুস্থ সাপের মতো প্রত্যাশাবিষ রচনা করে চলেছে প্রতিক্ষণে!

এত অব্যক্ত বর্ণমালার ঘ্রাণ-
ক্রমশ ক্রমশ গভীরতম অহংকার!
এত প্রশ্নসূচক চিহ্ন,
মহীরূহসম অক্ষম হৃদয়ের সীমানাবিচ্ছিন্ন তর্পণ!
দৃষ্টিসংযোজিত এত এত অনুস্বার,
তথাপি হে অম্লান বিশল্যকরণী...
এত মহাকাব্যভুক তুমি!

পরিসংখ্যানের উন্মত্ত আয়োজন
বৈধতাকে দাঁড় করিয়েছে সংযমের সম্মুখে;
ক্ষমাপ্রার্থনার মতো দিকভ্রান্ত বিনিময়,
কেবলই মুখোশচরিতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রূপে জন্ম দেয়,
একের পর এক নৈরাশ্যের।

করোটিবেষ্টিত মগজজরায়ু নিয়মানুসারেই বিনিয়ন্ত্রিত,
একান্ত পিশাচসিদ্ধের স্থিতি!
অতঃপর, এ গ্রহে মানববন্ধন! বড় বেমানান...

লিটন শব্দকর

রোদসী

এমনও সময় আসে
ডাকবাক্সের উপর শিউলি ঝরার শুরু,
শুধু কোনো চাওয়া থাকেনা নীলখামের কাছে।
শুধু দুটো রোদ কথা চেয়ে চেয়ে
বারান্দায় মৃন্ময়ী ভোর সেজে বসে আছে।
সবটুকু বলার আকাল
হৃদেরও পেয়ে বসেছে সেই কখন,
পাঁচিলে অর্কিড ফোটে
শরত লুকোয় কবিতার আয়োজন।

অভিজিৎ রায়

প্রিয় বাবা


বাবা আমি গর্বিত তোমার সন্তান হতে পেরে।
কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠি তোমাকে আগলে ধরে।

তুমি আমাদের পরিবারের  মনে সাহস যোগিয়ে গেছো
তুমিই সময়ে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে শিখিয়েছ।।
তুমিই আমার উন্নত চিন্তন শক্তির বিকাশ ঘটিয়েছ।আবার তুমিই আমাদের  নিঃস্বার্থে সব  দিয়ে গেছো।

ছেড়া  হাওয়াই চপ্পল পরে জীবন কাটিয়ে দিলে।
ছোট থেকেই আজঅব্ধি হামেশাই সাপোর্ট করে গেলে।

সেই জীবন যুদ্ধে যতবারই আমি হেরে যাচ্ছিলাম ।
তোমাকে দেখেই আবার ঘুরে দাঁড়াতে শিখলাম।
ধন্য আমি বাবা তোমার ঘরে জন্মাতে পেরে। 
এমন বাবা যেন হয় প্রতি ঘরে ঘরে।
তোমার আদর মায়া মমতা যেন ভুলিনা কভু।
তুমিই আমার জাগ্রত ভগবান তুমিই আমার প্রভু।

জবা চৌধুরী

পুজোর ভাবনা

আমার পুজোর ভাবনায় চিরকালই ছিল আনন্দ আর অনায়াস। শ্রাবণের শেষে আকাশের নীলটা গাঢ় হলেই, আর সাথে কয়েকটা মিষ্টি স্বপ্নের মতো সাদা মেঘেদের আনাগোনা শুরু হলেই মন ঠিক জানতো-- মায়ের আসার সময় হয়েছে। সেই ছোটবেলা থেকেই দেখে এসেছি সেই ভাবনাগুলোকে সাকার করে দিয়ে একদিন হৈ হৈ করে পাড়ার ক্লাবের লোকজন মিলে মাদুর্গাকে এনে পূজো মণ্ডপে বসিয়ে দিতো। চারদিকে তখন শুধুই খুশির রঙ। রোজদিনের দুঃখ-কষ্ট ভুলে ম্যাজিকের মতো সবার মুখে তখন দেখতাম হাসি।

বড় হতে হতে পুজোর সময় এলেই মনে অনেক প্রশ্ন ভিড় করে আসতো। যে স্বর্গ থেকে মায়ের আসা, সেই স্বর্গটি কোথায়, কতদূর ? তারপর, মাত্র ওই চারটি দিনের জন্য যে বাপের বাড়ি আসা তাঁর, সেই বাপের বাড়িটিই বা কোথায় ? ওই প্রশ্নগুলো যখন মনে আসতো --- বন্ধুদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখেছি, সকলেই কনফিউসড আমারই মতো। একদিন আম্মাকে (ঠাকুমা) জিজ্ঞেস করতেই আম্মা শোনালো এক বিশাল কাহিনী। তখন আমার বয়স ওই দশ/বারো। ধর্ম বোঝা তো খুব কঠিন ব্যাপার ছিল সেই বয়সে। শুধু সেই বয়সে বলবো কেনো, এখনো অনেক কিছু বুঝি না। কিন্তু গল্পের কাহিনীটি খুব ভালো লেগে গেছিলো। সবচে' ভালো লেগেছিলো আম্মার বলা শেষ লাইনটি ---"সেই থেকে এভাবেই প্রতি বছর দুর্গামা তাঁর ছেলে মেয়েদেরকে নিয়ে মর্ত্যে, মানে, পৃথিবীতে আসেন।“

সেদিন ওই গল্প শুনতে শুনতে মাথার ভেতর কত প্রশ্ন ডিগবাজি খেলো। শুধু নানা কাহিনীর উপর বিশ্বাস রেখে পৃথিবীময় পূজো হয়ে চলেছে যুগের পর যুগ ধরে। অবাক হয়ে ভাবলাম আম্মার বিশ্বাসের কথা --- সকলের কথা। জানার ইচ্ছে থাকলেও কোনো প্রশ্ন করলাম না। কেমন যেন মনে হলো উল্টো-পাল্টা প্রশ্ন করলে আম্মার হয়তো মনে কষ্ট হবে। হয়তো বড়োরা কেউই খুশি হবেন না। তাই নিজেকেই থামিয়ে বুঝিয়েছিলাম সারা বছরের অপেক্ষায় থাকা সকলের এতো বড় যে একটা খুশি --- সে নিয়ে প্রশ্ন না-ই বা করলাম।

সবকিছুতেই একটা লজিক্যাল এক্সপ্ল্যানেশন না পেলে আমার মনের ভেতর প্ল্যাস্টিকের ব্যাগ-ভরা ‘কুরকুরে’র (স্ন্যাক্স) মতো একটা শব্দ বাজতে থাকে। ওই একটা ছোট্ট অশান্তি মতো। তবে একটি দিক নিয়ে ভাবনাটা এক্কেবারে বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অর্থাৎ, সেই থেকে কোনো ধর্মীয় কাহিনীর পেছনে আমার কোনো প্রশ্ন নেই।

যাকগে, সেসব হলো ছোটবেলার কথা। তারপর বড় হবার নানা ধাপ পেরিয়ে বিয়ের পর জীবনের প্রয়োজনে পাড়ি দিলাম সুদূর আমেরিকায়। বেশ কয়েক যুগ আমেরিকায় কাটিয়ে আজ যখন 'বার্ধক্যের যৌবনে' এসে পৌঁছেছি, আমার কাছে  পুজো'র সংজ্ঞা --তিথি, নিয়ম কাটিয়ে এক অন্য মাত্রায় পৌঁছে গেছে। বিদেশে আমাদের পুজো মানে দেশের আসল পুজোর দিনগুলোর আশেপাশের কোনো উইকেন্ড, পুজো মানে জাকজমকের সাথে ডেকোরেশন, অঞ্জলি, সাজগোজ, নানা ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যুক্ত থাকা, ম্যাগাজিন --- আরও কতো কী ! যে যার পছন্দের এরিয়াতে মাস তিনেক আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে শুরু করি আমরা।

দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর প্রতি বছরই নিমেষে যখন পুজোর আনন্দের দিনগুলো চলে যায়। বেশ অনেকটা ভরসা মনে নিয়ে "আসছে বছর আবার হবে" বলতে বলতে মাদুর্গাকে বিদায় জানিয়ে বাড়িতে ফিরি। আমেরিকার ব্যস্ত জীবনে উইকেন্ড-নির্ভর দেশীয় নানা উদযাপন সারা বছর ধরে চলতে থাকলেও, দুর্গাপূজো আমাদের বাঙালিদের কাছে চিরকালই সবচে' বড় উৎসব---সে আমরা যেখানেই থাকি না কেনো !

"আসছে বছর আবার হবে" --নিজেরই বলা এই সেদিনের কথাটি যেন এখনো স্পষ্ট হয়ে কানে বাজছে -- এরই মধ্যে করোনা ভাইরাস আমাদের পৃথিবীকে পাল্টে দিয়েছে নির্মমভাবে। ২০২০ সালের প্রথমদিক থেকেই পৃথিবীর নানা দেশে শুরু হয়েছে মৃত্যুর মিছিল।

সব ভালোলাগাকে ছাপিয়ে আজ মন আমার শংকিত। প্রায় দশ মাস হতে চলেছে অসুস্থ পৃথিবীতে শুধুই বয়ে চলেছে হতাশার হাওয়া। অনেকেই আমরা বুঝেও বুঝতে চাই না সামাজিক দূরত্বের অর্থ। অতি সহজ কথারা আমাদের কাছে যেন দুর্বোধ্য আজ। একগাল বোকা হাসি হেসে বলি, "আমার কিচ্ছুটি হবে না।" সামাজিকতা সেরে ঘরে ফিরে পরিবারের শারীরিকভাবে অসক্ত লোকেদের মধ্যে আমরাই করোনা ভাইরাসটি ছড়াচ্ছি। এভাবেই ইতিরেখা টেনে দিচ্ছি কতো শত জীবনে। যখন আমাদের জীবন কঠিন সংকটের সামনে, তাকে সামলাতে পারি আমরাই --- ঠিক তখনই আমাদের নিজেদের অযোগ্য অশিক্ষিত অবাধ্যতার শিকার হচ্ছি আমরা নিজেরাই।

সঙ্গত কারণেই এবছরের জন্য আমার অজানা-স্বর্গের মা'এর অজানা আসার পথকে নিজের মনেই শেষ ঠিকানা দিচ্ছি।  পৃথিবী আবার সুস্থ হোক।  আমরা আবারও  ঝলমলে সুন্দর শরতে দেবীমা'র পুজো করবো দল বেঁধে। তার আগে এবার পুজোর ভাবনা শুধুই হোক নিজেকে, পরিবারকে আর আমাদের সমাজকে সুস্থ রেখে করোনা ভাইরাসকে হারানোর।

মিঠুন দেবনাথ

একেই কি বলে আত্মনির্ভরতা!


দারুণ রেজাল্ট। চারিদিকে জয়জয়কার।  গ্রামের ছেলে বলে কথা। পাড়াটা কয়েকদিন বেশ উৎসবের মেজাজেই কাটিয়েছে।  হাঁড়ির পর হাঁড়ি রসগোল্লার আগমনী জোয়ারে মানিকের দোকানের হাল খাতাটা বেশ ভারী হয়ে গেলো | তাতে বিপিনের কিছু আসে যায় না , বিপিন ততদিনে নিজেকে বেশ হাল্কা ভাবছিল , কারণ সে যেন অনেক বড় একটা যুদ্ধ জয় করেছে | তার চারিদিকে যত দু'পায়া প্রাণী , যার তার মুখে শুধু বিপিনের সুনাম | গর্বে বিপিনের বুকটা দুই ইঞ্চি এগিয়ে গেল | আর মাত্র বছর কয়েক অপেক্ষা , তারপর ছেলেটা ডাক্তার হলেই শহরে বাড়ি , দামী গাড়ি , নামী চেয়ার , বাহ্... বিপিনের স্বপ্নটা বেশ সাজানো | ঈশ্বর এতদিনে মুখ তুলে তাকিয়েছেন , না হলে সারা ভারতে এত সহস্র মেধাবী ছাত্র থাকা সত্ত্বেও বিপিনের ছেলে প্রথম একশোতে মাথা তুলে দাঁড়াতেই পারত না | 
      তারপর...কে এই বিপিন ? কী তার পরিচিতি ? — বিপিন তেমন মহান কেউ নন | বছর পঞ্চাশের নর্মালি বি.এ পাশ একজন তরুণ | বলা বাহুল্য , বিপিনের তেজ আর উদ্দীপনাই হাফ সেঞ্চুরিতেও বিপিনকে তারুণ্যের তকমা দিয়ে রেখেছে | বছরের পর বছর বিপিনের বাবা-মা ঝান্ডা আর ডান্ডা কাঁধে করে নিয়ে ঘুরলেও গরিবের পার্টি গরিবের মুখে অন্ন তুলে দিতে পারেনি ! বিপিন একটি বিপিএল কার্ডেরও দাবীদার হতে পারেনি | যাই হোক বত্রিশ বছর বয়সে বিয়েটা করার পর বিপিন ইউনিভার্সিটির দরজায় সিকিউরিটির গার্ড হিসাবে হাতে একটা ডান্ডা নিয়ে দাঁড়িয়েছে | সেই ডান্ডাতে কখনও কুকুর তাড়ায় কখনও মানুষ তাড়ায় | গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সিকিউরিটি গার্ড কম্পানি তাকে মাসিক দশ হাজার টাকা করে দেয় | প্রায় কুড়ি বছর ধরে ঠিক সেভাবেই চলছিল জীবন  | ইউনিভার্সিটির দরজায় বাবুদের সেলুট মারতে মারতে আর বই খাতা ব্যাগ সাথে নানান ছেলে-মেয়েদের আসতে যেতে দেখতে দেখতে নিজের ছেলেটাকেও বই-খাতা ব্যগ কাঁধে সেই দরজায় দেখবে বলে বিপিন কুড়ি বছর ধরে স্বপ্ন জমিয়েছে | অবশেষে ইশ্বর সাধক বিপিনের আর্তনাদ ভগবান শুনেছেন | 
     মনঃস্থির | আর কোনো কথা হবে না , ছেলেটাকে মেডিকেলেই দেবেন | সম্পদ বলতে জমানো টাকা লাখ চারেক , শ্বশুরবাড়ি থেকে হাজার পঞ্চাশেক , আর পৈত্রিক ভিটেভূমি কানি দুয়েক | তবুও ছেলে মেডিকেলে পড়বে , ডাক্তার হবে | যাইহোক সুপরামর্শে বিপিন ছেলেকে ডাক্তারিতে ভর্তি করিয়ে দিল | কিন্তু বর্তমানটা বিপিনের জানা ছিল না | স্বপ্ন আর বাস্তবের মধ্যে যে আকাশ পাতাল ফারাক সেটা বিপিনের মস্তিষ্কে কখনও ধরা দেয়নি কারণ  নিজের জীবনের অপ্রাপ্তি তাকে এতটাই স্বপ্নে বিভোর করে দিয়েছে সে বাস্তবের বিন্দু পর্যন্ত অনুভব করতে পারেনি ! যদিও দু'একজন জ্ঞানী মানুষ ডাক্তারির খরচ সম্পর্কে বিপিনকে কিছুটা পূর্বাভাস দিয়েছিল , কিন্তু সেই কথ বিপিনের মস্তিষ্ক তো দূরের কথা অন্তঃকর্ণ পর্যন্তই প্রবেশ করতে পারেনি | 
     ছেলে মেডিকেলে | প্রথম বছরেই খরচ আট লাখ টাকা | ব্যঙ্ক ব্যলেন্স শূন্য ,  শ্বশুরবাড়িও শূন্য , এক কানি জমিও শূন্য ! তবুও ডিপোজিটটা হল | ছেলে ডাক্তা হবে , আর মাত্র পাঁচ বছর |
     দ্বিতীয় বছরে প্রায় দশ লাখ লাগবে | কিন্তু টাকা কই ! ব্যঙ্ক লোন পায়নি , কারণ বিপিনের বাবা ব্যঙ্ক থেকে কৃষি লোন নিয়ে লোন পরিশোধ না করেই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে | সেই থেকে ম্যানেজার বাবুর কল্যাণে ব্যঙ্কে লাল দাগ | যদিও বহু কষ্টে নেতাদের হাত-পা ধরে একটা লোন সেংকশান করালো তাও গ্যারেন্টার ছাড়া হচ্ছে না | টাকা অতি দ্রুত জোগাড় করতেই হবে কারণ কর্তৃপক্ষ চাপ দিচ্ছে | টেনশনে বিপিনের রাতে ঘুম হয় না ; কোথায় থেকে জোগাড় করবে এত টাকা ? তাহলে কী বাকী এক কানি জমিটাও ! হ্যাঁ  , তাতে আর কত , না হয় লাখ দু'য়েক | মানুষ তো সুযোগ সন্ধানী , অপরের কষ্টের সময় তাকে দুটো মূল্য বেশি দিয়ে জিনিস কেনার চেয়ে তাকে ঠকিয়ে কমমূল্যে কিনতে পারাকেই শ্রেয় মনে করে | কিছু তেই কিছু হচ্ছে না ! বিপিনের ভগবান বোধহয় নাক ডেকে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন | হতাশায় বিপিনকে গিলে খাচ্ছে | হটাৎ পত্রিকায় বিজ্ঞাপন "O পজিটিভের একটি কিডনি চাই , কোনো সহৃদয় ব্যক্তি থাকলে  নিচের ফোন নম্বরে অতিসত্ত্বর যোগাযোগ করুন উপযুক্ত মূল্য দেওয়া হবে |"
      তাহলে কি সবার অজান্তে এটাই হবে বিপিনের সিদ্ধান্ত ! হ্যাঁ , বিপিন একমাসের জন্য কাজ থেকে ছুটি নিয়েছে | বাড়িতে বলেছে তার ডিউটি অন্য জায়গায় সিফ্ট হয়েছে | তাহলে... ছেলের কলেজের টাকাটা ?  "হুম , আমার লোন সাকসেস হয়েছে " — এটাই ছিল অপারেশন টেবিলে যাওয়ার পূর্বে বৌ এর প্রতি শেষ কথা ! 
     একমাস পর বিপিন বাড়ি ফিরেছে , আগের থেকে স্বাস্থ্যটা অনেক ভেঙে গেছে | তবুও বিপিনের মুখে হাল্কা নকল হাসি ছিল কেন না ছেলে মেডিকেলে আছে , আর তো মাত্র তিন বছর | তারপর ছেলে ডাক্তার , তখন না হয় বাবার সব সমস্যা সমাধান করে দেবে | মানুষ তো আশাতেই বাঁচে ...
    বিপিনের স্বাস্থ্য ভাঙছে প্রায়ই জ্বর থাকে , শরীর ভালো থাকে না , শরীরের ওজন কমছে , পা গুলো বেশ ফুলে গেছে , চলতে কষ্ট হচ্ছে , একটুতেই বিপিন হাঁফিয়ে যাচ্ছে | হটাৎ বিপিনের মায়ের প্রশ্ন , কী রে বাবা , তোর পেটের ডান পাশে এ লম্বা সেলাইয়ের দাগটা কীসের দাগ রে ? মায়ের কাছে কী আর সন্তান কিছু লুকোতে পারে ! মায়ের হাঁটুতে ঠেস দিয়ে হাউ মাউ করে বিপিন কেঁদে উঠল ! নিমেশেই বাড়িটা যেন মহাশ্মশানে পরিণত হয়েগেল | সঙ্গে সঙ্গে মায়ের মেজর স্ট্রোক আর বিপিন শয্যাশায়ী | এখানেই ছেলের মেডিকেলের পরিসমাপ্তি ! আজ বাড়িটাই হাসপাতাল | বিপিনের বৌ টা চব্বিশ ঘন্টার নার্স , আর ছেলেটা বাড়ির সামনে ছোট একটা টিনের একচালায় পান দোকান দিয়েছে | দিনভর দশ কাপ চা , দুটো নোনতা হয়ত দশ খিলি পান ...
      তাহলে কী এটাই আত্মনির্ভরতা ! এভাবেই কি আত্মনির্ভর হতে হবে বিপিনের ছেলেদের ?

সুস্মিতা মহাজন

আলোকবর্ষ 

এক আলোকবর্ষ অপেক্ষায় থাকবো তোমার,
তুমি একদিন ফিরবে এই বিশ্বাস নিয়ে।
তখন ছন্দহীন জীবন আবার ছন্দ পাবে,
তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস জাগবে।

ভাষাহীন কাব্যেরা ভাষা খুঁজে পাবে,
এক বিকেলে হঠাৎ কবিতা লিখবো।
তোমার ইচ্ছেদের নিয়ে আমি উড়বো,
প্রজাপতির পাখা নিয়ে পাখি হবো।

এক আলোকবর্ষ আমি তোমার অপেক্ষায় রব,
প্রকৃতি তখন সাজবে আবার নতুন সাজে।
সারি সারি গাছ দাঁড়িয়ে থেকে দেখবে মাথা তুলে,
তুমি কেমন আমায় ভালোবাসো আজও।

মাধুরী সরকার

আগামীর সকাল

আগামীর সকাল সেজে উঠবে
প্রস্ফুটিত গোলাপ মঞ্জুরির গোপন আহ্বানে,
যেখানে রোজ আবাদ হবে ভালোবাসার কবিতা।

সূক্ষ্ম ভালোবাসার বীজ বুনে উর্বর করে দিতে চাই,
পৃথিবীর রাজপথ অলিগলি।

সমুদ্রের তীব্র ঢেউয়ের ছন্দে সূর্য ডোবার সাক্ষী হয়ে থাকব,
প্রেমের হৃদকাব্য রচনার প্রাক্কালে।

সোনালী রোদ্দুর ভালোবাসায় বিভোর হয়ে খেলা করে, গোমড়ামুখো মেঘের সাথে।
ছন্দে ছন্দে রচিত হয় নতুন মাত্রা।

ভালোবাসার প্রতিটি খাঁজে, প্রেমের বিশালতায়,
শুরু করবো জীবনের অসমাপ্ত প্রেমের কবিতা।

আগামীর কাছে রেখে যাবো
কোনো এক সংকেত,
দুরন্ত স্বপ্নচারী জীবনের ভালোবাসার গভীরতা।

শ্রীমান দাস

বেমানান

যদি ভালোবাসায় প্রবাহিনীই হও,
তবে আজন্মকাল কলঙ্কের দাগ কেন বও?
কলকল স্রোতে যদি প্রেমকথা কয়,
কেন বুকে ভাসা তরীর বুকে ক্ষোভ জমে রয়?

উজানের কতো খ্যাতি - কতো গরিমা...
ভাটিতে তার ধ্বংসাবশেষ...শুধুই কালিমা।
যদি উদারতায় বাজতো বুকে মাঝি মল্লার গান,
কেন মোহনায় এসে আজ তুমিই বেমানান ?

উৎসমুখেও বেলেল্লাপনায় বিষাদ দেবে যদি,
সাগর অভিমুখে কেন বইতে গেলে নদী ?

রনিতা নাথ

এগিয়ে চলার নামই জীবন 

বাবা মায়ের নিরাপদ আশ্রয়ের ছায়ায় থাকতে পারে না অনেক শিশু। তাই বলে কি তাদের বাঁচার অধিকার নেই।সৃষ্টিকর্তা তার সৃষ্টিকে খুব যত্ন করেই  
পাঠান।পৃথিবী পুরোটাই আশ্রয়স্থল।শুধু খুঁজে নিতে হয় থাকার জায়গাটুকু।কোন আশ্রয়ই নিরাপদ থাকে না।নিজেকেই নিরাপদ বানাতে হয়।


শুধু মানুষ এই পরিচয় নিয়েই পৃথিবীর মূল সম্পদ যে সময় তাকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাওয়া নিজের ভেতর সত্তাকে জাগিয়ে রেখে।প্রতিটি মানুষের ভেতর কিছু প্রতিভা নিহীত থাকে।মানুষ নিজ প্রতিভাকে চিহ্নিত করতে পারে না কেবল অন্যের দিকে নজর রাখতে রাখতে।এক জীবন কাটিয়ে দিয়েও কেউ কেউ বলতে পারে না তার জীবনের লক্ষ্য কি ছিলো।হিজিবিজি ভাবনার ভেতর কখন জীবন ও সময় হারিয়ে যায় তা শেষকালে বুঝতে পারলেও কিছু করার থাকে না তখন। 

এক একটি জীবন বাগানের এক একটি ফুলের মতো।অনেক ফুল ঝরে যায় অসময়ে।আবার কিছু ফুল সৌন্দর্যের মোহে মাতিয়ে রাখে কেবল।যে ফুল গুলো দেবতার পুজোয় কাজে লাগে বাগানে সেই ফুলের কদর বেশী। 
প্রত্যেকটি মানুষকে সেই ফুলের মতো হওয়া প্রয়োজন।যাতে সংসারে সবাই কদর করতে পারে নিজ আগ্রহে ।

নিজেকে সেই জায়গায় উপনীত করতে হলে
সময়কে কাজে লাগিয়ে পরিশ্রমী হওয়াটাই জরুরি।পরিশ্রমে ক্লান্তি আসে না শরীর কিংবা মনে,যদি লক্ষ্য পূরণের ভাবনা স্থির হয়।যাদের বাবা মা নেই তাদের মাথার উপর পুরো আকাশটাই জীবনভরসার ছাদ।

শুধু নিজের ভাবনা চিন্তা গুলোকে সঠিক ভাবে খুঁজে নেবার চেষ্টা করতে হবে ধ্যানস্থ হয়ে।তবেই পৃথিবীটা কতো সুন্দর তা অনুভব হবে বাস্তব ও কল্পনার ভিড়ে সামঞ্জস্য রেখে।নিজেকে তৈরি করতে পরিস্থিতির সাথে মোকাবিলা সবাইকে করতে হয়।বাবা মা কেবল পথ দেখিয়ে দেন মাত্র।
সেই জায়গায় জীবনে বাবা মা'র অভাব থাকলেও সেটাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজের জীবনটা ঈশ্বরের সঙ্গে অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা।এই ভাবনায় এগিয়ে গেলেই কোন বাধাবিপত্তি জীবনপথকে অবরুদ্ধ করতে পারে না। 

সম্মুখে অগণিত পথ পারি দিতে হবে একা ...
হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে, থেমে থাকলে চলবে না।থেমে থাকার জন্য জীবন নয়।এগিয়ে চলার নামই জীবন। 

সোনালী রায় বাগচী

আধফোটা

কত কিছুই করা হলো না । 
নিশ্চয়তার লাল গিঁট খুলে দেখা হলো না জীবনকে।
তোমার সাথে হঠাৎ করে পালিয়ে যাওয়া হলো না 
ভুবনডাঙ্গার মাঠ ছাড়িয়ে আরো অনেক দূরে ।
চুমু খাওয়া হলো না তোমার ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে ।
তোমার চোখে চোখ রেখে একবারও বলা হলো না ,
নিজেকে কতটা ভাঙলে এমন করে তাকানো যায় ।
সেই যে একটা কুঁড়ে ঘরের স্বপ্ন দেখেছিলাম , 
নাম না জানা কোনো এক ঝিলের ধারে , মনে পড়ে? 
কথা দিয়েছিলে , 
ঝুমঝুমে কোন এক শীতের রাতে , 
ঘরের টিমটিমে আলোয় ভিজতে ভিজতে 
দুটো জ্বলন্ত শরীর ঘিরে এঁকে নেবো অজন্তা-ইলোরার গুহাচিত্র ।
হয়নি সেটাও । 
নিদেনপক্ষে তোমার কোলে মাথা রেখে 
কাটানো হয়নি একটা কবিতা যাপনের সন্ধ্যাও ।
কিছু বিগত ঈর্ষা তাই পুষে রাখি গোপন জঠরে ।
রক্তক্ষরণে প্রতিদিন উদযাপন করি
ভালোবাসার বহ্নুৎসব ।

চন্দন পাল

আন্টির জিৎ

    হীরাপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুজকামিজপরা  নতুন দিদিমনি এসেছেন ।  বিদ্যার্থীরা দিদিমনিকে 'আন্টি' বলে ডাকে । আন্টি বর্ণমালা, শব্দমালা উচ্চারণের সময় অপ্রচলিত উচ্চারণ করেন।  অদ্ভুত । 

    দ্বিতীয় শ্রেনীর ছাত্র 'দিবস' পড়াশোনায় ভাল ।  মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে ও হোমটাস্ক সম্পূর্ণ রাখে । আন্টির উচ্চারণ গুলি যে তার মা'র উচ্চারণের সাথে মিল খায়না, তা সে বুঝতে পারে ।  বাড়িতে গিয়ে মা'কে বলে -"মা নতুন আন্টিটা 'সিড়ি' কে 'সিডি',   'পড়া' কে 'পডা' বলেছে"।  দিবসের মা দিতি ছেলের কথার আমল দেয় না । কিন্তু পরদিন এসে যখন দিবস বলে "মা, আজ আন্টি  'ফোঁটা'কে  'ফোনটা',  'মানুষ'কে 'মানুমস্' বলেছে",  তখন দিতির সন্দেহ হয় । সে খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারে দিবসের কথাই ঠিক । দ্বিধা ও চিন্তাগ্রস্ত দিতি, তখন দিবসের বাবা 'ধৃতিমান'কে জিজ্ঞেস করলো, আন্টিটা এমন পড়াচ্ছেন কেন গো ? "ছেলেমেয়েরা তো একেবারে গোল্লায় যাবে"। ধৃতিমান না শোনার ভান করে খবর শুনে যাচ্ছিলো । পরদিন দিতি আবার বললো, "তুমি কিছু বলছো না যে !  আজ আন্টি 'ইলিশ' কে 'ইলিতস' আর 'প্রণাম' কে 'প্রমনাম' বলেছে, প্রিন্সিপাল কে জানাতে হবে তো" !  ধৃতিমান এবার দিতির কথার গুরুত্ব দিল। উচ্চারণ গুলি মনযোগ দিয়ে শুনে বলল, দেখো বাংলা বানানে বিদ্যার্থীরা প্রায়ই ি, ী  ড়,ণ,ষ, শ এর স্থানে ভুল করে। আন্টি স্রুতিলিখন পরীক্ষা করতে গিয়ে সেটা বুঝতে পেরেছেন, তাই তাদেরকে শুদ্ধলিখার কৌশল হিসাবে একটু ভিন্ন উচ্চারণ করে বুঝিয়েছেন সিডি মানে 'ড়' হবে, মানুমস মানে 'ষ' হবে। এতে করে  কিছু বানান খুব তারাতাড়ি শুদ্ধ লিখার আত্মবিশ্বাস হবে। আরও দেখবে আন্টি বিদ্যালয়ের বাইরে কিন্তু ঐরকম উচ্চারণ করেন না।

   দিতি, ব্যপারটি বুঝতে পারলো। সে আরও বুঝলো যে আন্টি, ছাত্র ছাত্রী দের জিরো নয় হিরো বানানোর চেষ্টাই করছেন।  আন্টির প্রতি সকলের আকর্ষণ ও সখ্যতা বেড়ে গেলো। 
  সেদিন স্কুল থেকে বেরিয়ে আন্টি দেখলো  দূরে একটি বাইক আসছে। তাতে দু'জনের ই মাথায় হেলমেট। আন্টি পত্রিকায় পড়েছিল ছিনতাইবাজরা এমনই হয়। স্বাভাবিক গতিতে  আসে তারপর পথচারীর পাশঘেষে যাওয়ার সময়  ছোঁ মারে। এতে পথচারী ব্যথা পেলো কি রক্তপাত হলো! তাদের কিছু যায় আসে না, কাজ হাসিল করে ভিড়ের মধ্যে মিশে গেলে বা তেমাথায় বাঁক নিয়ে নিলেই বীরপুঙ্গব ।
   খবরটি পড়ার পর থেকেই আন্টি ঠিক করে রেখেছিল তার সাথে যদি তেমন কিছু হয় সে ছেড়ে দেবে না। গয়না না বাঁচিয়ে চোরের জামা ধরবে। কিন্তু ঘটনা যে এক্ষুনি ঘটবে  এবং তার সাথেই ঘটবে কল্পনাতীত। 
   প্রাক্ সন্ধ্যাবেলা, দুচারজন ব্যস্ত লোক যার যার পথে চলছে। আন্টিও সচেতন চলছেন। পেছনে দ্বৈতহেলমেট বাহনটির আওয়াজ আরও কাছে এল, এবার কানের কাছে এলো, ফিরে তাকানোর আগেই গলায় কিসের স্পর্শ অনুভব করলো, আন্টির রক্ত উত্তেজিত হয়ে  উঠলো, পুর্বপরিকল্পনামতো  আন্টির হাত পেছনের আরোহীর জামায় চলে গেল। খামচি দিয়ে ধরা হাত বাইকের গতিতে এগিয়ে গেলো, আঙ্গুলে ব্যথা পাচ্ছিল তবু জামা ছাড়েনি। আন্টি চোর চোর বলে চেঁচিয়ে উঠলো। তিন-চার হাত গিয়ে আন্টির পড়ে যাওয়ার উপক্রম হল, ততক্ষণে আরোহী বাইক থেকে পড়ে, কঁকিয়ে উঠলো। জামার টানে  বাইকচালক টাল সামলাতে না পেরে আঁকাবাকা চলতে চলতে হাত বিশেক দূরে গিয়ে পড়লো। দূর্ঘটনা দেখে মানুষ দৌড়ে এলো। চালক বাইকের নিচে, উঠতে সময় লাগবে। আন্টি নিজের টাল সামলে দেখলো আরোহী কোনমতে উঠে  দৌড় দিতে উদ্যত, হাতে সুতার মত কি একটা আছে। আন্টি তার বাঁ হাতটা গলায় লাগিয়ে দেখে 'হার' নেই,! সঙ্গে সঙ্গে দুইলাফ দিয়ে একটা উড়ন্ত লাথি দিল চোরের পিঠে। আরোহী  আবার মুখ থুবরে পড়লো। সবগুলি ঘটনা এত তাড়াতাড়ি ঘটে গেলো যে উপস্থিত লোকেরা কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।
    তখন আন্টি চিৎকার করে বলে উঠলো 'হার চোর - আমার হার দে'।  আন্টি নিজেই আহত আরোহীর হাত থেকে, তার হারটা টেনে নিল। উপস্থিত লোকের আর বুঝতে বাকি রইলনা ওরা ছিনতাইবাজ । সঙ্গে সঙ্গে দুইবেটারে ধরে প্রসাদ দিতে শুরু করলো। তারপর পুলিশ এলো, ঘটনা শুনলো, আন্টির ঠিকানা নিল আর  ছিনতাইবাজদের পাকড়াও করে হাসপাতাল নিয়ে গেলো। 
   খবরটা চাউর হতেই, এহেন আন্টির বাড়িতে আট-দশ দিন মানুষের খুব আসা যাওয়া। কেউ সাবাশী দিয়ে গেলো কেউ গর্ব বোধ করে গেলো। 

দিতি জিজ্ঞেস করলোঃ তুমি ক্যারাটে শিখলে কিভাবে! 
আন্টি বললঃ আমাদের নবম শ্রেণিতে একজন মনিপুরী শারীরশিক্ষিকা ছিলেন। তিনি সর্বদা খেলার পাঠ  দিতে দিতে, আমাদের বিপদে মোকাবিলা করার পাঠও দিতেন ।  আমি বেশ কয়েকটা প্যাঁচ শিখে রেখেছিলাম। দিদিমনি শরীর হাল্কা রাখা ও চুজকামিজ পরার পক্ষপাতি ছিলেন ।
উপস্থিত যাদের শরীর ভারী ছিল তাদের নিয়ে একপ্রস্ত রসিকতা ও হাসিঠাট্টা হল। এইভাবে আন্টির দিনগুলি সুখেই কাটছিল। 

  এরমধ্যে একদিন থানার বড়বাবু আন্টিকে অনুরোধ করলো একটু সহযোগীতার জন্য।  ছিনতাইবাজরা যাতে শাস্তি পায় সবাই চায়। আন্টিও চায়, তাই এক বান্ধবী কে নিয়ে থানায় গেলো। প্রশাসনিক কাজ সেরে গ্যালারীর পাশ দিয়ে সাইকেলে বাড়ি ফিরছিল। গ্যালারীর পাঁচ ছটা যুবকের মধ্যে একজন  বলছিল "ঐমেয়েটাই চোর ধরেছিল "।   যদিও কথাটি অস্পষ্ট ভেসে আসছিল। আন্টি বান্ধবী কে বলল "ওদিকে তাকাস না। চালা তারাতাড়ি"।   কিন্তু হঠাৎ একটা যুবক বাইক নিয়ে এসে, আন্টির সাইকেল ঘেষে দাঁড়ালো। আন্টিকে জিজ্ঞেস করলো "তোমার নাম কিগো "। আন্টি আমল দিল না। সাইকেল পাশ কাটিয়ে এগিয়ে গেলো। এবার ছেলেটি আবার এগিয়ে এসে আরও বেশি পথ আটকে দাঁড়ালো। আন্টি ব্রেক কষলো। বলল আমার নামের আপনার কী দরকার, রাস্তায় কতজনের নাম জিজ্ঞেস করবেন, আদমসুমারীর চাকরি করেন নাকি,,,।  ছেলেটি আর এগুলো না। সে বন্ধু মহলে অপদস্ত হয়ে ঝাল মিটানোর জন্য আন্টির নজরদারি শুরু করলো। 

   একদিন পড়ন্ত বিকেলে আন্টি গৃহশিক্ষকতা সেরে শহরতলীর নির্জন পিচ রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। হঠাৎ গাছের আড়াল থেকে তিনটি ছেলে বের হয়ে আন্টির পথ আটকালো। এর মধ্যে গ্যালারীর সেই যুবকটিও আছে। ওরা আন্টি কে শিক্ষা দিতে মুখ চেপে ধরে ঝোপের দিকে নিয়ে গেলো। আন্টির জুতা ছিটকে গেলো। শক্ত ডালের খোঁচায় চুজ ছিঁড়ে পায়ে রক্ত বেরোল। আন্টি সুযোগ বুঝে একটি লাথি দিল যা গ্যলারীযুবকের বুকে লাগলো। কিন্তু আত্মরক্ষা বিদ্যায় তিনজনের সাথে কতক্ষণইবা পারা যায়। আন্টি বাঁচাও বলে চিৎকার করে উঠলো। ঠিক সে সময়ে বোডাসসসস,,,, করে বিকট আওয়াজ হয়ে রাস্তার পাশে একটি গাড়ি এসে থামলো। যুবকরা কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ঝোপের দিকে পালালো। ছেলেরা পালালো বটে কিন্তু যতটুকু হয়েছে ততটুকুইবা কতজনে সহজ ভাবে মেনে নেবে। আন্টির চোখ বেয়ে জল পড়ছিলো। আন্টি আহত পায়ে, ঝোপের ওপর থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে জড়িয়ে, বেরিয়ে এলো। তারপর সাইকেল টা তুলে নিয়ে, বাড়ির দিকে, একটু এগিয়ে যেতে দেখে, একটা জীপগাড়ি চাকা পাল্টাচ্ছে। সম্ভবত চাকা ফেটে যাওয়ায় বিকট আওয়াজ হয়েছিল। বাড়িতে গিয়ে মা-বাবাকে সব কথা বললো। অভিভাবক রা তাড়াতাড়ি ধৃতিমানের সাথে আলোচনা করলো। তারপর তাকে সঙ্গে নিয়ে থানায় অভিযোগ করল। 
   থানা বাবুরা সঙ্গে সঙ্গে  আন্টিকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলো, সেখানে কিছু পুলিশ নামিয়ে রেখে আন্টিকে নিয়ে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা করালো।  তারপর নামধাম, সময়,  আরও কিছু তথ্য লিখে আন্টিকে বাড়ি পৌঁছিয়ে দিল। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ধস্তাধস্তির চিহ্ন, আন্টির জুতা, ভাঙ্গা চুরি আর একটি মোবাইল পেলো। সম্ভবত আন্টির লাথিতে মোবাইল টি বুকপকেট থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল। মোবাইল সূত্র ধরে অপরাধীর বাড়ি সহজেই পাওয়া গেলো, কিন্তু অপরাধী পলাতক। 

   পলাতকের বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী। খবরটা জানাজানি  হতেই ব্যবসায়ীর মানসম্মান ডুবলো, নানা জনের শান্তনা বাক্যগুলি তাঁকে আরও কাটা কাটা দিতে লাগলো। দোকানদারি বন্ধ। কেউকেউ বলাবলি করছিল "ছেলেটা ব্যবসাটাকেও মারলো,  বাপটাকেও মারবে"। পুলিশ অভিযুক্তের খুঁজে বাড়ি আসে, না পেয়ে বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনের ঠিকানা নিয়ে চলে যায়। 

 খবরগুলির কিছু কিছু পলাতক অপরাধীর কাছেও পৌঁছতো। 
  এভাবে বেশ কিছুদিন কেটে যায়। জাতীয় উৎসবের দিনে ছিনতাইবাজ ধরার জন্য সাহসিকতার পুরস্কারের জন্য আন্টির নাম ঘোষিত হয়, কিন্তু আন্টি নির্লিপ্ত, নির্বিকার ।  অন্যদিকে পলাতক অভিযুক্তকে অনুশোচনায় ঘিরে ধরে। কম শাস্তিতে সমস্যা সমাধানের জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে । শুভাকাঙ্ক্ষীদের শরণাপন্ন হয়ে বলে, উকিল মারফত একটা বিহিত করার জন্য। 
শুভাকাঙ্খীরা উকিলদের কাছে যাওয়ার পর  উকিল বললেনঃ দুটো পথ আছে, এক ক্ষতিপুরণ,  দুই,  ঘরের বৌ করে নেওয়া। 
  বেপরোয়া অপরাধী বিহিতের পরামর্শ শুনে জানালো যে, সে দ্বিতীয় প্রস্তাবে রাজি নয়।
  তখন উকিল বললঃ অপরাধীকে মনে রাখতে হবে, সে রাজি হলেই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না।  শিক্ষিত সম্ভ্রমী নারীরও বিয়েতে মত থাকতে হবে । আর টাকা দিয়ে সবার সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে আইনানুযায়ীই  অপরাধীর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।
অভিযুক্ত  ভেঙে পরে বলল, "আমাকে বাঁচান"। 

   ক্ষতি পূরনের ভাবনা বাদ দিয়ে, উকিলবাবু প্রথমে ধৃতিমানের সাথে যোগাযোগ করলো। তারপর দু তিনবারের চেষ্টায় আন্টির মা-বাবাকে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি করালো।
অভিবাবকরা বললো শেষ কথা আন্টিই বলবে।
   বিমর্ষতা কাটিয়ে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে আসা আন্টির সামনে পুরোনো কথা তোলার মত সাহস কেহই পাচ্ছে না।  শেষে সবাই, দিতির শরণাপন্ন হল।
   দিতিও খুব ইতস্তত করছিল। শেষে একদিন  একথা ওকথা বলার পর আন্টিকে পরোক্ষভাবে প্রস্তাবটি পারলো।
   আন্টি বললঃ  আমার বিয়ে হোক বা না হোক, সমস্যা সমাধানের জন্য মানহানিকারককে, আমার উচ্ছল জীবন ধ্বংসকারীকেই সোহাগ করে,  সারাজীবনের জন্য মেনে নেবো !   আমার কি কোন স্বপ্ন-স্বাধীনতা  ছিল না !
আন্টি রাজি হল না।

বিনয় শীল

আগমনীর দাবি

গতবার এসে দেখলি তো মা
ঠিক বলেছিলাম কি না?
বলেছিলাম না, পুরো পৃথিবীটাই
অশুভ শক্তির অধীনে।
তাই বোধ হয় কৈলাশে ফিরেই
ব্যবস্থা পাকা করে নিলি
অসুর নিধনে।

ওইতো গতবার অক্টোবরে ('১৯) এসে 
আবার চলেও গেলি।
মাঝে গেলো নভেম্বর মাস।
ডিসেম্বরেই বুঝি মর্ত লোককে
অসুর মুক্ত করতে 
মেরে বসলি
ভয়ঙ্কর এক বাণ!

সেই বাণ ঘুরতে ঘুরতে পড়লো 
কৈলাশের উত্তর পূর্বের
চৈনিক শহর উহানে।
সেখানে পড়েই সেটা 
শতে শতে,সহস্রে সহস্রে, 
লক্ষে লক্ষে, কোটিতে কোটিতে
বিভক্ত হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে 
ছড়িয়ে পড়েছে দিনকে দিন।
সাক্ষাৎ মৃত্যু বাণ-  COVID-19 ।

মা, মেরে তো দিলি! 
কিন্ত  তাতে হলো কি?
একবার ফিরে দেখলি ওদিকে ?
তোর নিক্ষেপ করা ভয়ঙ্কর
মারণ ভাইরাস Corona বাণ তো
হিতে বিপরীত করে চলেছে 
মর্তলোকে।

তোর ছোড়া বাণ করোনার কীর্তি
শোন তবে-
সে ডাকাতকে ছেড়ে দিচ্ছে,
ডাক্তারকে তুলে নিচ্ছে।
চিটারকে রক্ষা করে
টিচারকে মেরে দিচ্ছে।
সাধুকে কাবু করে
কপটকে প্রকট করছে।
কালোকে গহিন করে
আলোকে ঢেকে দিচ্ছে।
অসুরকে সরব করে 
দেবতাকে নীরব করছে ।

বুঝতেই তো পারছো মা,
এবার কিন্তু শিউলী ফুল
তোর জন্য বরণ ঢালা  সাজাচ্ছে না।
কাশবন হতাশ।
শরতের মেঘমালা শূণ্য আকাশ,
এসে কোথায় দাঁড়াবি?
কোথায় থাকবি?
কে দিবে তোরে পাদ্য অর্ঘ্য?
কে করবে তোরে আনন্দে আহ্বান?

এই প্রথম আগমনীতে 
করুণ সুর বেজে চলছে মর্তলোকে।
শুনতে পাচ্ছো মা ?
ঢের হয়েছে।
এবার আসার আগে কথা দিবি,
COVID-19 ফিরিয়ে নিবি ।

অপাংশু দেবনাথ

মনোপৃষ্ঠা

এখানে জলের দামে বিক্রি হয় ক্ষুধার্ত-সময়,
এখানে ফুলের গন্ধে ভরে থাকে বিষাক্তকথন,
এখানে ট্রাফিক জ্যামে স্তব্ধ দেখো শহরের মুখ।

শব্দশাপে কাঁপে মন,
নিজেকে সাজায় ছল।

কতোটা বালি উড়লে অন্ধ হয় চোখ
ঝড়ের প্রণয়বাতি জানে তার খুব
বানকুড়ালি কেটে যাবে, কাটবে অসুখ।

রৌদ্র না হয় ডাকেনি ফিরে
মেঘ তো মনের কথা জানে
কেনো পথ ধরেনি সে ঘিরে?

মানুষের ভাবনায় ফিরে আসে প্রসন্ন-ভ্রমর
মধুভান্ড নিয়ে ওড়ে স্বর্গের সিঁড়ি বেয়ে বিনয়
আমি অরূপের কাছে যাবো বলে ট্রাফিক জ্যামে 
রূপনগরী কি আগের মতোই সাজায় মনোপৃষ্ঠা!

সোমেন চক্রবর্তী

শরৎ- ১৪২৭ 

শরৎ নাকি বিসর্জনের ঋতু,
স্বাদ-গন্ধহীন গোটা বছরই'তো কেটে যাচ্ছে খুঁড়িয়ে 
তার চেয়ে কি ধূসর কিছু আছে? 

কাকে কাছে পেলে হাঁটা যায় মাইলফলকের পরেও?
কেউ কি বলতে পারে সুসময়ের গ্রহ নক্ষত্রগুলো কোন পঞ্জিকায় বাঁধা?
এসব অনিশ্চয়তার কথা লেখা হোক বালুচরে
জলের তোড়ে মুছে যাবে তো যাক,
চিরস্থির কিছু কি আছে এই মন্থনে?

কোজাগরী চাঁদের স্বপ্নে গা ভেজাও
শীতল পাটির কাছে সমর্পিত হয়েছ এবার
কোন জনমের ঋণ শোধ করবে বলে 
এই দুর্দিনেও চাঁদবমি করে শুক্লপক্ষীয় রাত।

এতসব গোঙানির শেষেও শরৎ আসে মায়ের মতো
মুমূর্ষু বাতাসে অলৌকিক শুশ্রূষা।
আমি জেদ ধরে থাকি বোধন ও ভোরের শিশিরের আশায়,
দেখবো আর কতটা দীর্ঘ হতে পারে এই কালো রাত!

অভীককুমার দে

নীলিকা

বৃষ্টি এলেই 
ভেতর লুকিয়ে নেটা সুখ তোমার
ছাতা মেলে ধরো, নিচে আমি
কখনো বোঝাতে পারিনি-
বৃষ্টি মানে ভিজে যাবার উৎসব। 

একসাথে ভিজে গেলে
সব রঙ মিশে যায়
মাটি ছুঁয়ে বয়ে যায় কষ্ট ধোয়া জল, 
একা কার নদী ?

মনের উত্তাপ বুদবুদ হলে
আমারও ভিজতে ইচ্ছে হয় নীলিকা। 

হারাধন বৈরাগী

মননস্রোত ও ব্রহ্ম

কবির সাথে নদীর সম্পর্ক মুহুরীকে দেখেই বুঝতে পার।রাতের ষ্টেশন মূলত তোমার এক প্রিয় জায়গা ,শান্ত অথচ নির্ভেজাল এমন কোলাহল ধনী ও গরীবের পায়ের নীচে সখ্যতার মানদণ্ড।বিদায় ও স্বাগত-এই দুয়ের মাঝে নরম চেয়ার যেন পাখি আর মানুষের মধ্যে ঘরে ফেরার নির্ভেজাল তাড়না। তোমার ঘরে ফেরার তুমুল অণুপ্রেরণা।

একজন নিজের বাড়িছেড়ে কি করে অন্যঘরকে ভরসা করতে পারে।অজানা এক ভিটার মাঝে বসতের মতো উদারতা গর্বের সাথে দেখাতে পারে।তুল্য কিছু না পেয়ে তোমার সর্বদা ভয় করে।আর মায়েরা তোমাকে দেখে বাপের বাড়ি ভুলে যায়। তোমারও মায়েদের দেখে মামারবাড়ী‌ বাড়ি মনে পড়ে।এই থেকে নারীকে তোমার মনে হয় নির্মানশিল্পী।নারী ঘর নাবাঁধতে আসলে নতুন কোনো ঘর তৈরী হয় না!নুতন কোনো মা হয়না।এ নুতন নয়, পুরোনো ও নয়।এ তোমার ‌পথচলা।

গ্রামজীবন আর নদীর মাঝে তফাৎ কমই করতে পারো। হাঁসমা আর গ্রামভারতের ভেতর বয়ে চলা অন্তঃসলিলা নদীটির পারে কিশোর দুইভাই যখন একসাথে বসে ভাত খায় ,ভাতের থালায় উঠে আসে উদ্যান হয়ে মায়াবিনী প্রকৃতি। এসব দৃশ্য বলা যায়‌না, বুঝা যায়।আফশোস হয়,এ কাউকে দেখাতে পারো না।এ বোঝা কতদিন বয়ে বেড়াতে হবে তুমি জান না!চোখের কোণে জল জমে যায়। সে জলও খুব খারাপ লাগে না!অথচ এ নিয়ত তোমাকে কাঠটুকরার মতো খেয়ে যায়।এমনকি কুকুরের সাথে মানুষের কোন একটা সাদৃশ্য দেখে ভয়ে ডিস্কব্র্যাক লকহওয়ায় মতো গ্রীষ্মদুপুরে আর্যাবর্ত তুমি।

তখন একটা আস্ত বাঁশবাগান‌  পুকুরে স্নান করে এসে বাঁশবেড়ার ছোট্ট রান্নাঘরের মাটিতে বসে ভেজা শরীরে খায় সিদ্ধচালের গরমভাত, দেশিআলু ,শিংমাছের সুক্তো। তখন মৃদু বাতাস শুকনো বাঁশপাতাপাখির মতো  উড়ে আসে রান্নাঘরে ।তৃষ্ণামাটির কলস ঘরের কোণ থেকে ঠাণ্ডাজল নিয়ে এসে একটি মাটির গ্লাস ভরে দেয়। পেটভরে খেয়ে উঠলে একটা হাতপাখা নিয়ে আসে পুকুর পাড়। তখন ঘরের পেছনের শেওলা জমানো ছোট্ট পুকুর হয়ে ওঠে সুবর্ণরেখা আমগাছ।বাঁশঝাড় শেকড়ের উপর বসে দেখে পুকুরে দেশি সাঁতারকাটাহাঁসেদের অনাবিল আনন্দ।সাঁতার কাটে কাঁচামাটির গন্ধ।

তখনই গলায় তুলসীমালা জড়িয়ে একজন বাস কন্ডাক্টর যাত্রীর উদ্দেশ্যে হাঁক ছাড়ে-সিট খালি। অথচ সিটে বসে আছো তুমি ডবল ভাড়ায়। তখন বুঝো একা নও তুমি,পাশে বসে আছে সমান্তরাল তোমার দ্বৈত পৃথিবী।তখন আত্মবিশ্বাসে টইটম্বুর হয়ে উঠো।এই যে সুস্থ আছো,প্রকৃতির কাছে কৃতজ্ঞ থাকো। ভাবো এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কি!

আর গলার স্বর নরম করে টগবগিয়ে তাকে বলো,- অনাহারীর একটা গল্প শোনাতে ।সে বলতে বলতে ঘুমিয়ে যায়।ভাবো রাত গভীর হয়েছে বলেই এত নিস্তব্ধতা!মানুষ তো চিরকালের জন্য এই পৃৃথিবীতে কোলাহল করতে আসে না।তাকে না জাগিয়ে বরং ঘুম থেকে উঠলে ,তার কাছে একটা  অনিদ্রার গল্প শুনবে বলে আগ্রহ নিয়ে বসে থাকো

অথচ জানো,রোগ একবার বড়লোক হয়ে গেলে শরীরটাকেও কিনে ফেলে! মৃত্যুর এক ঘন্টা পরে আর শরীরটা বসানো যায় না।শক্ত হয়ে যায়। ভাঙতে গেলে মটমট করে। এই শব্দ এতকালের চেনা।অথচ এই শব্দে আতকে উঠো, যেন এর তুল্য  পৃথিবীতে আর কোনো শব্দ হয় না। মনে‌ মনে তুলনা খুঁজতে গিয়ে ব্যার্থ হয়ে ভাবো এ যেন চণ্ডিদাসের বড়শি আর রামির পুকুরের বাতাসের মধ্যেকার ব্রহ্ম!

অশোক দেব

গন্তব্য

একটা কিছু আকাশ হতে পড়বে
নতুন মেঘে ঢাকবে তারা আমার

তোমার কাছে এলাম আমি একাই
নিজেকে নিজে ড্যাগার মারা শেখাই

একটা কিছু আকাশ হতে পড়বে
তখন তুমি আঁচল মেলে ধরবে? 

তোমার কাছে এলাম আমি নিঃস্ব
তোমার কাছে জোনাক ভরা বিশ্ব।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...