দূর্গা
দু তিন বছর আগে শরৎ কালের সন্ধ্যায় যখন আকাশে ও বাতাসে পূজোর মৃদুমন্দ ডাক, সাথে ফুলের সুবাসে যখন বাড়ির বাহির দ্বার টা স্বতেজ হয়ে থাকত, কি আনন্দ টাই না হত। কিন্তু আজ মনের মধ্যে সেই রকম আভা আর অনুভব করতে পারিনা। চারিদিকে উৎসবের জলনিধির মাঝে আমি পাথরের ন্যায় অসাড়। বয়সের পাশা পাশি ইচ্ছা,আকাঙ্খার তালিকাও দীর্ঘ হয়েছে। চকলেট বা নুতন জামা পেয়েই মন টি খুশি হয়ে যায়না বলে, জীবন এখন আর সহজ ভাবে কাটেনা। আজ জীবনে কিসের যেন অনুপস্থিতি অনুভব করছি।
সাল ২০১৬ ইং, দূর্গাপূজা। আমার হৃদয়ের নিষ্পাপ মন্দিরে মানব রুপী দূর্গার আরাধনা করেছিলাম। দেবীই বটে। তার লাবণ্য রূপ,চোখের তীক্ষ্ম দৃষ্টি, জীবন যুদ্ধে শক্ত ও দৃঢ় হয়ে লড়াই করা সব মিলিয়ে সে আমার দৃষ্টি তে কোন দেবীর চেয়ে কিছু কম ছিল না। বহুকাল তপস্যা করে দূর্গার দর্শন আমার ভাগ্যে জুটেছিল। তবে সে দূর্গা কে আমার তৈরি কৃত্রিম মণ্ডপে তুলার ক্ষমতা আজ ও হয়ে উঠেনি।
চোখ বুঝতেই হঠাৎ যে কখন ঘুমিয়ে পরলাম তা পরদিন ঢাকের আওয়াজে চোখ খুলবার পর বুঝলাম। আজ নাকি দশমী। লোকে সত্যি বলে - কখন যে বিদায়ের ক্ষণ এসে দাড়ায়, শুধু এক চোখের পলকের ব্যবধান। কাল যে রূপে মুগ্ধ হয়ে এক দৃষ্টে তাকিয়ে ছিলাম, আজ কিছুক্ষণ পর সেই রূপ আর আমার চিত্ত কে আন্দোলিত করবে না।তাকে মণ্ডপে রেখে পূজা করার সৌভাগ্য হবার আগেই, সকল স্মৃতির সহিত নদীর জলে ভাসিয়ে দেবার মুহূর্ত এসে হাজির। সে ফিরে আসবে না। নদীর জল স্বভাবতই পুরাতন স্থানের বালি অপর নতুন স্থানে স্থাপন করে; আগের জাগায় ফিরে আসে না।
দূর থেকেই তাকে বিদায় জানাতে হল।লোকের ভিড়ে তাকে একটিবার কাছ থেকে দেখা ও সম্ভব হয়ে উঠলো না। দূর্গার অনেক উপাসক রয়েছে। সুতরাং আমার মত তুচ্ছ, ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশকে কেই বা মনে রাখবে! সে চলল বহু দূর, অনন্ত পথ ধেয়ে।
আজ কিসের যেন অনুপস্থিতি অনুভব করছি। মনের মধ্যে আর আগেকার মত আবেগ ও উৎসাহ জন্মায় না। হয়ত জীবনের কিছু অংশ নদীর জলে ভেসে গেছে তার সাথেই।
No comments:
Post a Comment