Thursday, June 30, 2022

স্বাগতম!

সম্পাদকীয়

জীবনের সময় বৈচিত্রতার কোনো বিজ্ঞান নেই। এ স্বাভাবিক সত্যটুকুকে মেনে যারা হেঁটে যাচ্ছে জীবনের বাউলপথে তাঁদের গানের সুর কেমন? কতটুকু টানতে পারছে হৃদয়। কতটুকু ব্যথা পেলে আর ব্যথা পেতে হয় না, এর উত্তর কবিরা বলে যায় কবিতার ভেতর। ত্রিপুরার কবি সেলিম মুস্তাফা বলেন 'কবির স্বর্গের পাখি, তাঁরা যতদূর উড়ে যায় স্বর্গ ততদূর ছড়িয়ে পড়ে।' 

সংখ্যাটি কবিতাময়। দর্শনময়। যাঁরা লিখেছেন, তাঁদের শ্রদ্ধা। ভালো থাকবেন প্রিয় পাঠকেরাও। আপনাদের সক্রিয় পাঠ ও আলোচনা আমাদের অনুপ্রানিত করে। ধন্যবাদ।

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত, ত্রিপুরা

মনন স্রোত

গৌতম দাস

হাওয়া বইছে

প্রকৃতির বুকে এক ধ্বংসাত্মক হাওয়া বইছে।
গতি মাপার যন্ত্র আবিষ্কার হয় নি এখনও।
তছনছ করে দিচ্ছে সৃষ্টিশীল ভাবনা গুলোকে।
উর্বর সমাজে বিষ ছড়াচ্ছে এই হাওয়া।
ভালো মন্দের শ্রাদ্ধ হচ্ছে অনবরত।
পঙ্গু হচ্ছে মানবতা বন্ধ হচ্ছে একসাথে চলার মুধরতা।
খেলার মাঠে, লাইব্রেরীর টেবিলে অর্ধমৃত হাওয়া বইছে।
ঘরের  এক কোণে বইছে  বিনাশকারী হাওয়া ।
চিরতরে মূলোৎপাটন হোক এই বিষাক্ত হাওয়া।

মৌসুমী গোয়ালা

অনুরাগ              
 
নিজ ভাললাগাকে খুঁজে বেড়াই,
আগুন্তকের উন্মত্ত চোখের চাহনিতে।
 
আকুলতায় ভাসে দ্বন্দ্ব বিধুর মন,
আনমনা হই তার সান্নিধ্যে।

ইচ্ছের স্পর্শে উচ্ছ্বসিত হয়
অজ্ঞাত স্বপ্নের অতৃপ্ত সত্তা।

বাক্হীন অনুভূতি কাজ করে
ভ্রমের ছন্দ বিঘ্নিত আবেগে।

একাকী নিরবতায় আঁকা হয়
নিস্তব্ধ , নিরবচ্ছিন্ন প্রেমের ছবি।

অমিত রুদ্র পাল

দাফন

বুক খুদে খুদে একটি লাশ
দাফন করেছি বিমর্ষ হৃদয়ে
নিবারণ ফাঁপা গন্ধে কখনো
ফেঁপে ওঠে চোখে চুমু খায়, 
কখনো উগড়ে ঠোঁট ফেটে
বলে উঠে ভালোবাসি ।

বুক খুদে খুদে একটি লাশ
দাফন করেছি বিমর্ষ হৃদয়ে
কখনো বিশৃঙ্খলভাবে বেয়ে উঠে
অবাধ্যতার নয়ন ধুয়ে যায় 
কখনো চাবুক মেরে ত্রাণ করি,
অসহ্য সুখের দায়ে ! 
খুনি হয়ে শেষে খুন করি ?

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

প্রথম পুরুষ

সেদিন ২৫শে বৈশাখ। টিভি, রেডিও, দেশ-বিদেশের বেশীরভাগ বাঙালী প্রোফাইল, বাঙালী পাড়া, বাঙালী রঙ্গমঞ্চরা কবির প্রতি প্রেম প্রকাশে ব্যতিব্যস্ত। প্রশ্ন রাখি নিজের কাছে, প্রেম, শ্রদ্ধা, এমন কিছু নিষ্পাপ অনুভূতি  বোঝানোর জন্য আনুষ্ঠানিকতার কী প্রয়োজন?  
          বলতে পারেন, একলা ঘরে নিজস্বের সাথে কথোপকথনের মাধ্যমে আমার একাকীত্বের খানিক ই.এম.আই. পরিশোধ। এমন সময়ে, মেসেঞ্জারে তুমি, সাথে কিছু কথা কিছু সুর 
"কোলাহল তো বারণ হোলো,এবার কথা কানে কানে..."
          তোমার পাগলামি শেষে, ধরলাম "ভালোবাসি, ভালোবাসি..."। শেষ হতে তুমি ঠাট্টা করে বলেছিলে, 'এভাবেই তোমার আমার মাঝে একজন "প্রথম পুরুষ"এর গল্প রয়ে গেল'...

রূপক পোদ্দার

গ্রামের দৃশ্য

যখনই আমি আসি আমার এই ছোট্ট প্রতাপগর গ্রামের কাছাকাছি , মায়ার বাঁধনে আমার মন বেঁধে রাখে।
যত দূর আর বহুদূরেই যাই না কেনো আমি, তবুও আমার এই মন পড়েই থাকে প্রতাপগরের এই গ্রামেই।
জানিনা কোন মায়ার বন্ধনে আমার এই মন হারিয়ে যায় অবচেতনের গহনে।
আছে কত গাছপালা আর সবুজের বসতি,
সবকিছুই যেন আপন করে নেয় বার বার এই প্রতাপগর গ্রাম আমাকে।
রাস্তার ধারে বয়ে যাওয়া সেই নদী আজ ও আমার মনের কোণে। 
সবুজে ভরা ফসলের জমি
মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে আমি, এই দৃশ্য আঁকি আমার চোখের জলের ছবি দিয়ে।
নক্ষত্রের সৌন্দর্য উপভোগ করি অবলীলায়।

সুজন দেবনাথ

অন্তরে রেখো সুজন


আমার আমির সঙ্গ না পেলে
নিত্য সকল কাজে,
আপন খোঁজাই মিছে প্রয়াস
অন্য হিয়ার মাঝে।

চেনা হয়নি নিজেকে আজো
করতে পারিনি বশ,
জীবনের মানে খুঁজতে গেছে
দিবসের পর দিবস।

পারিনাই নিজেরে সঙ্গ দিতে
ওগো পারিনি বন্ধু হতে,
আসা যাওয়া সবই তো একা, 
মিছে মায়া এ জগতে।

কাহার তরে এই জগতে আসা
কেন এ কান্না হাসা?
সকলই যদি বিলীন হবে, তবে
কারে কয় ভালোবাসা?

দু'দিনের তরে কতো চেনাচেনি
আরো কতো পরিচয়,
জানি একদিন আমিও বিলিন
হয়ে যাবে সবই ক্ষয়।

ভাবনার মাঝে কেটেছে আমার
কতো যুগ কতো কাল,
অন্তিমে আজি প্রভাতের শেষে
ঘনিয়ে এলো বিকাল।

বন্ধু নাহয় নাইবা হলাম, কারো
নাইবা হলাম স্বজন,
মিছে হলেও বন্ধু জেনো মোরে
অন্তরে রেখো সুজন।

শিমুল দাস

মা

তুমি তো ভরসা মা।
তুমি আবেগ।
তোমার অশ্রু ঝরিয়েও
বল তুমি মা আমি তো ভালো।
তোমার ব্যাথা মা বুঝে ক'জন
তারপরও মা সবারে করো আপন।
অক্লান্ত পরিশ্রম চোখে নেই ঘুম
সন্তান ভালো থাকুক মুখ ফুটে হাসুক।

আলমগীর কবীর

নির্মাণ

আকাশ থেকে নামছে দুটো তীর
অস্বচ্ছ নয়,আলতা রঙের ফলা
মধ্যে মানুষ,পুষ্প দলা দলা
গর্ভমুখের আকর্ষণে স্থির।

গর্ভমুখে একটুও সেই আলো
জ্বালো প্রদীপ,পান,সুপারি গোটা--
দরজা খোল,ঝিল্লি মুখর দেখি
শিথিল কর আকাশ তোমার বোঁঁটা।

ধাত্রী, তোমার দু'হাত বিদ্ধ আলো
রক্ত-রসে ভেসে যাচ্ছে ক্ষেত
গর্ভমুখে কাদের নৌকা বাঁধা? 
আকাশ থেকে নামছে কী সংকেত!

মনচলি চক্রবর্তী

বর্ষণ মনোহরা

আকাশ জুড়ে  কালো মেঘের ঘনঘটা
 দূরন্ত হাওয়ার  সঙ্গে এলো  বৃষ্টির ছটা ।
সারাদিন শুধু  মেঘেদের গুরুগুরু
 ধরনীর বুকে ভরা বর্ষণের হল শুরু।
টিপ টিপ টুপটুপ বৃষ্টি উঠোন জুড়ে 
সুখের  স্মৃতি গুলো শুধু হৃদয়ে ঘুরে। 
মনের মাঝে   বৃষ্টি   ঝিরিঝিরি 
হাওয়ায় নাচছে আজ মঞ্জরি। 
মনের সব দুঃখ কষ্ট  আজ ধুয়ে গেলো
 প্রকৃতি ও  নতুন এক  রূপে সেজেে উঠলো।
মনের বদ্ধ  সব দুয়ার দিয়েদিলাম  খুলে 
সুখের স্মৃতি গুলো আসুক আজ পাখা মেলে।
সবুজ  গাছ ফুল ফল পাতা দৃশ্য  প্রকৃতির মনোহরা
বিষন্ন হৃদয় মনপ্রাণ আর জীবকুল আনন্দে  মাতোয়ারা।

মিঠু মল্লিক বৈদ্য

অন্ধকার ঘর

প্রতিবাদ হীন মানুষ গুলি আজ বড্ড ভীতু
যন্ত্রণার বোঝা বইতে বইতে নুঁয়ে গেছে কশেরুকা।
আত্মপরতায় বিলীন মনুষ‍্যত্ব
সর্বগ্রাসী স্পৃহায় আবৃত বিবেকবোধ।

জ্বলছে আগুন, সর্বহারা মজুর,
উন্নত সভ‍্যতার স্বপ্ন, কেড়ে নিচ্ছে
বাঁচার শেষ সম্বল,বুলড্রজারের সে-কি 
আসুরিক তান্ডব,উন্মূলিত যত্নের বাগ।

আধুনিকতার  পিছু ধাওয়া, স্বার্থান্বেষী 
কতৃত্বকারী; ঝুপড়ি ভেঙ্গে গড়বে ইমারত,
ইমারতের প্রতি ইটে রূধির চিহ্ন,
হাহাকারের বীভৎসতা, বাতাসে লাশের গন্ধ।

সদ‍্য আবির্ভূত শিশুটির অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ,
সকাল সন্ধ‍্যা যে শিশুটি চষে বেড়ায় -
ফেরিওয়ালা হয়ে স্বপ্নের করে বেচাকেনা 
আজ অধির স্বপ্ন ভঙ্গের যাতনায়।

তবুও নিশ্চুপ, হারিয়েছে জবাব চাওয়ার ভাষা,
মানুষগুলি আর শুনেনা বিবেকের আওয়াজ।
লাশকাটা ঘরে  নীরব কান্না,হাহাকারের আগুন
দেখেও পরে আছে বিবেকের অন্ধকার ঘরে।

লিটন শব্দকর


সেগুনপর্ব

এক উঠোন উড়ন্ত পাতার শব্দের খেলা থামলে
সেগুনদেহের জ্যামিতিক সমারোহের উৎসারণ।

বনের বাইরে থেকে ভেতরে সরু মেঠোপথ ধরে
চুপচাপ হেটে যায় পিপড়ের সারি মাটি ও ঘাসে,
স্রোতস্বতীর প্রতিশ্রুতির প্রয়োজন ঘনিয়ে আসে।

পাহাড়ি তরুনাস্তি কাছিমের ছায়াতল স্বাচ্ছন্দ্যে
ক্ষিপ্র লামচিতা পারা হরিণের পিছু ধাওয়া করে
আবার মরা পাতারা ওড়ে সশব্দে মাটি ও ঘাসে।
প্রাচীন সেগুনের প্রসঙ্গ বনের বাইরের বাতাসে
অনেকানেক রাহাজানি চোর ও সাধুতা প্রকাশে।

লামচিতা,পারা হরিণ,পাহাড়ি তরুণাস্থি কাছিম
সব সুন্দর শৃঙখল স্রোতস্বতীর শরণাপন্ন যখন,
দুরে কোথাও সেগুনের মসৃণ পর্ব ফুরোয় তখন।

সপ্তশ্রী কর্মকার

বিদ্রোহীর আত্মা

নিয়মের কলকাঠি নেড়ে ধুমকেতু আসে, 
যখন আঁধাড়ের বাঁধ ভেঙ্গে 
অগ্নিসেতু গড়ে উঠে।
 
দুর্নিবার ঝড়ে দুর্জয়ের শিরে,
উড়িয়ে বিজয়ের জয় কেতন। 

বিদ্রোহী-শির অট্টহাসি হেসে যখন বলে,
মনের অট্টালিকার চাপা কান্না কি শুনতে পাও না?

কত লগ্ন বৃথা চলে যায় তোমার স্তব্ধ কলমে,
আমরা অপেক্ষায় থাকি দুরাশা ঘোচাবার। 

যাদু কলমে ইতিহাস লিখেছেন ল্যাংস্টন হাউজ, 
আর রক্ত প্রতিবাদী কথামালা লিখেছেন ম্যাড়ী ইভান্স।

 তাঁদের কবিতা সূর্যোদয়ের নগ্নতায় ভরে ওঠে,
 তাই আমি দেবো বাংলার বুকে অমিত শক্তি সাহস।

Wednesday, June 15, 2022

অর্ধেন্দু ভৌমিক

বোবাপাখি

বোবাপাখি কথা বলে 
একা, নিজের সাথে নিজে
ব্যথার বীজগণিতীয় সমাধান 
কোশ থেকে কোশে... 
হারানো স্বপ্নসব কাছে এলে
ক্যালকুলেটার ভুল অংক কষে
শূন্য শুধু শূন্য-

আবার নতুন করে কথা শিখি আমি ।

Sunday, June 5, 2022

অভীককুমার দে

স্বাধীনতা


এত যে মানুষ 
মরে গিয়ে জন্ম নিয়েছে স্বাধীনতা,

যে শরীর বেঁচে আছে মানুষের ,
সূর্যের লাল চোখের আলোয় স্বাধীনতার নামে;

সবুজ মন
মানুষের চোখেই আগুন জ্বালবে কেন ! 

আগুনের কাছে সে সব দিন-
কেবল ভয়াল রাতের অসুখ
মানুষের স্বাধীনতা জ্বলে পুড়েই ছাই ...

মুক্তিযুদ্ধ 
তারপর-
যা কিছু খাঁটি হলে
মানুষ 
তার মুখে স্বাধীনতার আলো কই ? 

তবুও
মানুষের স্বাধীনতা
মানুষের কাছেই।

দীপক দাস

সুন্দরের আপেক্ষিকতা

সেদিন বিয়ে বাড়ী থেকে স্কুলে এলে, আমার এক সহকর্মী আমাকে প্রশ্ন করল মেয়েটি সুন্দরী কিনা।আমি উত্তর দেবার পরিবর্তে তাকে জিজ্ঞাসা করি," তুমি কী জানতে চাও"? ও আমার প্রকৃতি বুঝে বলল" মেয়েটির রঙ কেমন"? বললাম কালো।মেয়েটির উচ্চতা কত জামতে চাইলে বললাম, পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি হবে। স্বাস্থ? - ভালো
আমি ভাবতে থাকি প্রকৃতপক্ষে আমরা যা জানতে চাই,সেটি হল মোয়েটি সুন্দরী কিনা!

এখন প্রশ্ন, একটি মানুষ সুন্দর কী অসুন্দর - এ প্রশ্নটি আদৌ সংগত কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্ন মানুষের  সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী? মানুষকে কী সুন্দর বা কুৎসিত  এই দুভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তরটি খোঁজা যাক।প্রথমত প্রকৃতিতে জীব এবং উদ্ভিদ যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, সর্বত্রই বৈচিত্র্য। অগনন উদ্ভিদ ও প্রাণী।প্রত্যেকটি দেখতে অপরটির চেয়ে পৃথক।কাজেই এর চেয়ে ও সুন্দর একথাটিতো আসতেই পারেনা। ভিন্ন জাতীয়ের মধ্যে কী তুলনা চলে? সমজাতীয়ের মধ্যেও প্রতিটি প্রাণী অপর প্রাণীর চেয়ে দেখতে ভিন্ন। কাজেই তুলনার মাপকাঠি  কীহবে? কোন কিছু নির্ণয়ের জন্য একটি এককের প্রয়োজন। এখানে একক কী হবে?
মানুষের ক্ষেত্রে জমজ ছাড়া একটি মানুষের চেহারার সাথে অপর মানুষের চেহারার কী কোন মিল আছে? তাহলে সুন্দরের তুলনা হবে কী করে? আবার জলবায়ু ভেদে মানুষ কালো, ফর্সা বা বাদামী বর্ণের হয়।এখানে কালোর সাথে ফর্সা বা বাদামীর কী করে তুলনা হবে- প্রতিটি রঙ যেখানে ভিন্ন।আবার আমরা বলি মেয়েটি বা ছেলেটি সুন্দর। অথচ আর একজনের সাথে তুলনা করলে তাকে তখন সুন্দর মনে হয়না।  এক্ষেত্রে তার সৌন্দর্য  কী ঠিক নয়? এই মুহূর্তে যে সুন্দর সে অসুন্দ হয় কী করে? তাহলে বলা যেতে পারে,  প্রতিটি মানুষই সুন্দর।অথবা এভাবে বলতে পারি ছেলেটি বা মেয়েটির স্বাস্থ্য  ভালো ও সুগঠিত।তার শারীরিক ত্রুটি থাকলে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানুষই সুন্দর।
অন্তরের সৌন্দর্যই প্রকৃত সৌন্দর্য। কারণ নিজেকে সুন্দর করা অর্থাৎ চরিত্রকে সুন্দর করা এটা তার হাতে।চেষ্টা করলে তা করা যেতে পারে। অথচ যা আমার আয়ত্তাধীন নয় তারই ফল ভোগ করি আমরা।এসব যুক্তি হয়ত আমাদের অনেকের মনেই আসে কিন্তু আমাদের মনে যুক্তির অতিরিক্ত  একটাকিছু মনের গভীরে কাজ করে।প্রকৃতপক্ষে তারই নির্দেশে মানুষের জীবনের বহুলাংশ নিয়ন্ত্রিত হয়।একটি দল বা নীতির প্রতি আস্থাবান একজন লোককে, যুক্তি দিয়ে তার নীতির ভ্রান্তি প্রমাণ করা গেলেও দেখা যায়, সে সেই নীতিতেই বিশ্বাসী থাকে।

এখন প্রশ্ন, একটি মানুষ সুন্দর কী অসুন্দর - এ প্রশ্নটি আদৌ সংগত কিনা? দ্বিতীয় প্রশ্ন মানুষের  সৌন্দর্যের সংজ্ঞা কী? মানুষকে কী সুন্দর বা কুৎসিত  এই দুভাগে ভাগ করা যায়?
উত্তরটি খোঁজা যাক।প্রথমত প্রকৃতিতে জীব এবং উদ্ভিদ যেদিকেই তাকানো যাক না কেন, সর্বত্রই বৈচিত্র্য। অগনন উদ্ভিদ ও প্রাণী।প্রত্যেকটি দেখতে অপরটির চেয়ে পৃথক।কাজেই এর চেয়ে ও সুন্দর একথাটিতো আসতেই পারেনা। ভিন্ন জাতীয়ের মধ্যে কী তুলনা চলে? সমজাতীয়ের মধ্যেও প্রতিটি প্রাণী অপর প্রাণীর চেয়ে দেখতে ভিন্ন। কাজেই তুলনার মাপকাঠি  কীহবে? কোন কিছু নির্ণয়ের জন্য একটি এককের প্রয়োজন। এখানে একক কী হবে?
মানুষের ক্ষেত্রে জমজ ছাড়া একটি মানুষের চেহারার সাথে অপর মানুষের চেহারার কী কোন মিল আছে? তাহলে সুন্দরের তুলনা হবে কী করে? আবার জলবায়ু ভেদে মানুষ কালো, ফর্সা বা বাদামী বর্ণের হয়।এখানে কালোর সাথে ফর্সা বা বাদামীর কী করে তুলনা হবে- প্রতিটি রঙ যেখানে ভিন্ন।আবার আমরা বলি মেয়েটি বা ছেলেটি সুন্দর। অথচ আর একজনের সাথে তুলনা করলে তাকে তখন সুন্দর মনে হয়না।  এক্ষেত্রে তার সৌন্দর্য  কী ঠিক নয়? এই মুহূর্তে যে সুন্দর সে অসুন্দ হয় কী করে? তাহলে বলা যেতে পারে,  প্রতিটি মানুষই সুন্দর।অথবা এভাবে বলতে পারি ছেলেটি বা মেয়েটির স্বাস্থ্য  ভালো ও সুগঠিত।তার শারীরিক ত্রুটি থাকলে তা উল্লেখ করা যেতে পারে।প্রকৃতপক্ষে প্রতিটি মানুষই সুন্দর।
অন্তরের সৌন্দর্যই প্রকৃত সৌন্দর্য। কারণ নিজেকে সুন্দর করা অর্থাৎ চরিত্রকে সুন্দর করা এটা তার হাতে।চেষ্টা করলে তা করা যেতে পারে। অথচ যা আমার আয়ত্তাধীন নয় তারই ফল ভোগ করি আমরা।এসব যুক্তি হয়ত আমাদের অনেকের মনেই আসে কিন্তু আমাদের মনে যুক্তির অতিরিক্ত  একটাকিছু মনের গভীরে কাজ করে।প্রকৃতপক্ষে তারই নির্দেশে মানুষের জীবনের বহুলাংশ নিয়ন্ত্রিত হয়।একটি দল বা নীতির প্রতি আস্থাবান একজন লোককে, যুক্তি দিয়ে তার নীতির ভ্রান্তি প্রমাণ করা গেলেও দেখা যায়, সে সেই নীতিতেই বিশ্বাসী থাকে।

Saturday, June 4, 2022

সুস্মিতা মহাজন

কলঙ্ক 

একসাথে অনেকগুলো মনকে পুড়তে দিলাম,
শেষে বললাম ভালো থেকো!
জানি এগুলো ছাঁই হবে,
একটা সময় দমকা হাওয়ায় সবটা উড়ে যাবে।
কিছুটা আগুনের তাপের দাগ হবে শরীরে, 
জমাট বাঁধা কালো ছাঁইপোড়া দাগ।

সুস্মিতা এস দেবনাথ

দহন

আজ কিছুদিন ধরে 
বিবেক আর মানবিকতাকে  তন্ন তন্ন করে খুঁজে চলেছি
শহরের প্রতিটি অলি গলি,
 রাজপথ,
যেথায় যেখানে দেখেছি মানুষ নামের জীব
ছুটে গেছি হন্যে হয়ে
দেখেছি সেথায় চেনা অচেনা কতো মুখ
খুঁজেছি একটা মানুষ
'মান' 'হুশ' সমৃদ্ধ মানুষ।

বিমুখ হয়েছি, আবার খুঁজেছি
পেয়েছি শুধু স্বার্থের বাজার
যেথায় দেদার বিকোচ্ছে মেরুদন্ড।

কেউ সস্তায়, কেউ বা স্বেচ্ছায়  বেচাকেনা করছে 
কেউবা বন্ধক রাখছে নিজেকে সিন্দুকে 
সুযোগ বুঝে দলবদলে খুলবে চাবি...
আর আমি দেখেছি কেমন করে 
এ শহরের হৃৎপিণ্ড পুড়ছে অনর্গল
ধুলো আর ধোঁয়ার ঝড়ে 
নয়তো বা মানুষ নামের মানুষের বিষবাস্পে।

শ্রীমান দাস

সময়

বুকের ভেতর বয়ে যাওয়া নদীটাকে
রোজ শুকোতে দিই,
আড়ালে, নিজের মতো করে।

নদী বেগবান হবার আগেই
থামিয়ে রাখি তার গতিপথ
কারণ,এখন সময় কালবৈশাখীর।

নদীকে উন্মাদ করতে চায়
ছলসমুদ্রের আছড়ে পড়া নোনা ঢেউ,
নদী তবু কঠোর হয়ে থাকে

নদী জানে 
এখন সময় নিজেকে ধরে রাখার।

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

কালু কামার


কালু কামার ৷ কে কালু কামার?  গায়ের রঙ কালো বলে কী কালু কামার?  নাকি কালো পাথরের সাথে ছেনিসঙ্গমে জাগিয়েছে প্রাণ তার জন্যে? যে দেবতারা জীবকে সৃষ্টি করে বলে অহংকৃত মিথমগজ জনারণ্যে দাপিয়ে বেড়ায়,  সেই দেবতার জন্মদাতা কালু কামার? 

এতোবড়ো ধৃষ্টতার জন্যেই ঊনকোটি দেবতারা স্বীকৃতি দেওয়ার সাহস পেলি না তোদের জনককে ৷ 

পরিচয়হীন কালু কামার ৷ মজাদার বাক্যবন্ধের জন্যে বিখ্যাত যে রমাকান্ত কামার ৷ তেমন কেউও হতে পারল না কালু কামার ৷ 

যুগে যুগে  পাহাড় কন্দরে জন্ম ও লালনে দেবতা গড়ে তোলে  তিলে তিলে ঘাম ও রক্তে ৷ 
নিভৃত লুঙ্গায় মশালের আলোয় আর মশার কামড়ের যন্ত্রণা ভুলে যে দেবকুলকে গড়ে তোলে কালু কামার, 

ত্রিভুবনবাসের আভিজাত্যে তারা কালু কামারকে চেনে না ৷ পিতা নেই তাদের ৷ তাদের গোষ্ঠীপতি স্বয়ম্ভুনাথ ৷ ঊনকোটিপতি ৷

কালু কামার আজো সাব অল্টার্ণ একলব্যপ্রতিম ৷

বিনয় শীল

বেয়াদব

সুতা নাতার ধূয়া তুলে
যুদ্ধবাজরা শান্তি ভুলে
ঝাঁকে ঝাঁকে বিমান দিয়ে
বোমার আঘাত হানছে।
গগনচুম্বী ভবন গুলো
বিকট শব্দে ভাঙছে ।।

যুদ্ধে তো নাই দাড়ি-কমা,
এদিক ওদিক ফেলছে বোমা,
বনভূমের দাবানল, 
শহর বুকে আনছে।
স্ব-জন হারা হয়ে মানুষ, 
অঝোর চোখে কানছে ।।

টেঙ্ক-মিসাইল-ফাইটার-বম্বার,
বিধ্বংসী সব অস্ত্র সম্ভার,
গুলি বৃষ্টি করতে সেনা,
ট্রিগার চেপে টানছে।
যুদ্ধ চাইতে শান্তি দামী,
কে কার কথা মানছে ।।

কামানের কি বিবরণ,
আগুন গোলার উদগীরণ,
জীবন ভূমি ধ্বংস করতে 
উল্কা বেগে ছুটছে।
এতেই কিছু বেয়াদপরা 
বেজায় মজা লুটছে ।।

মানবতার বন্ধু যারা,
সঙ্গোপনে জাগছে তারা,
অমানবিক ধ্বংস কান্ডে
ধৈর্য তাদের টুটছে।
চিতা সাজায় তোদের লাগি
কবর সারি খুঁড়ছে ।।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...