Saturday, July 18, 2020

মনন স্রোতের নতুন একটি সংখ্যায় আপনাকে স্বাগতম || এই মাসের সংখ্যা : দাগ ||

সম্পাদকীয়

জীবনের ডাকে হেঁটে যেতে গিয়ে আমরা কিছু দাগ রেখে যাচ্ছি পথে পথে। অথবা পাচ্ছি। ক্রমশঃ গভীর হচ্ছে বেঁচে থাকার অভিজ্ঞতা। অসময়ে একটি দাগ রাখার জন্য ভালোবেসে ডেকেছিলো মনন স্রোত। বিপুল সাড়া। এই সংখ্যা জুড়ে স্পন্দিত হচ্ছে জীবন। জীবনের দাগ।

মানব সভ্যতার সবচাইতে সুন্দরতম বিষয় হলো মানুষ তার ধারণাক কোনো নির্দিষ্ট পর্যায়ে সীমাবদ্ধ করে দিতে পারে না। মানুষ শব্দের মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখা এমনই। সমস্ত ব্যথাকে শিল্পের রূপ দেওয়ার পর মানুষের যে হাসি, সেটাই প্রকৃতির অংশ। মানুষের হাসিকে প্রকৃতি স্বেচ্ছায় নিজের অংশ বলে মেনে নিক।

এই কঠিন সময়ে দাঁড়িয়েও রাজ্য, বহিঃরাজ্য এবং বিদেশের যে সকল সন্মানিত লেখক লেখিকারা বরাবরের মতো এই সংখ্যাকেও সমৃদ্ধ করে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। সকলকে কুর্ণিশ।


শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত

দাগ : ছবিতে মনন স্রোত মডেল শিল্পী : সমুন // চিত্রগ্রাহক : রনি সরকার

সজীব পাল ( ধারাবাহিক)

সেদিন সে এসেছিল
পর্ব : দুই 

অফিস বন্ধের দিন ঘুম ভাঙতে চায় না সহজে নীপার।কোনো দিন বেলা দশটাও বেজে যায় উঠতে।ঘরিতে নয়টা চল্লিশ বাজে।সে এখনো ঘুমিয়ে আছে।
গতকাল রাতে সবিতাকে নীপা বলে রেখেছে তার অফিসের এক বন্ধু আসবে এবং দুপুরের খাবার খেয়ে যাবে।তাই সবিতা মেয়ের অফিসের সহকর্মী বন্ধু মনীষ আসবে শোনে খুব সকাল সকাল উঠে যায়।
নীপাকে কয়েকবার দরজা থেকে ডাক দিয়ে যায় কিন্তু এখনো ওঠেনি।সবিতা এবার তার ঘরে ঢুকলো।নীপার পড়নের নাইটি একেবারে হাঁটুর উপরে উঠে আছে।কি একটা বিশ্রী ব্যাপার! আজকাল সবাই বাড়িতে নাইটি পড়ে ।কিন্তু একটু বেশি ঢিলেঢালা হওয়ার দরুণ যাদের ঘুম খুব ভারী এবং ঘুমের মধ্যে ঘন ঘন একাত ওকাত করে,তাদের একটু সমস্যা হয় ।সবিতা নাইটিটা টেনে নামিয়ে পিঠে ধাক্কা দিয়ে ডাকলো,'আচ্ছা কয়টা বাজে তোর খবর আছে!"
নীপা একটু শব্দ করে বলল,' উঁহু '

'কি উঁহু!ওঠ তোর বাবা বসে আছে ।তুই জানস না তোর বাবা ইদানিং তোকে ছাড়া সকালে চা খায় না !যা ওঠ ওঠ।"
সবিতা ঘর থেকে বের হয়ে গেল।
সৌরাংশ বাবু ব্যাংকের চাকরি করত।গত মাসে তাকে দুই লক্ষ্য টাকার চুরির অপবাদে চাকরি থেকে বরখাস্ত করে দেয়।কিন্তু সৌরাংশ বাবু ব্যাপারটা ব্যাংকেই সীমাবদ্ধ রাখেননি কোর্ট পর্যন্ত নিয়ে ছেড়েছেন।দুই লক্ষ কেন সে তার আঠারো বছরে কর্মজীবনে কোনোদিন দুই টাকা এইদিক সেদিক করেনি।তার বিশ্বাস তার সহকর্মীই কেউ তাকে ফাঁসাচ্ছে।এতবড় একটা মিথ্যা অপবাদ তাকে একটুও ভাঙতে পারেনি।মানসিকভাবে এখনো সে যথেষ্ট দৃঢ় আছে।হয়তো অপবাদটা মিথ্যে বলেই।
চাকরিটা যাওয়ার পর থেকে সে পরিবারের সাথেই বেশ দিন কাটাচ্ছে ।

নীপা বাবার সামনে এসে বসল।বারান্দাটা বেশ বড়ো।'ইন্দো-জার্মান' বাঁশের তৈরি চারটে চেয়ার এবং একটি টি টেবিল।সৌরাংশ বাবু মেয়ের দিকে স্নিগ্ধ চোখে তাকিয়ে বললেন ," এত দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে হবে মা?"

"কেন হবে না বাবা !"

"দেরিতে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ব্যথা হয়।এবং অল্প বয়সে বুড়ি হয়ে যাবি।"

"তোমাকে এইসব কথা কে শেখায় বাবা ?যুক্তি ছাড়া কথা ।আচ্ছা মাকে চা দিতে বলো ।"
চা আগেই রাখা ছিল ।তার চোখে পড়েনি।সৌরাংশ বাবু মৃদু হেসে বললেন,' তোর ঘুম তো এখনো ঠিক মতো কাটেনি মা।যা আরেকটু ঘুমিয়ে আয়।আমি বসি আরেকটু ।নীপা বাবাকে চওড়া গলায় বলল,' বেশি কথা বলছ ত ।এখন দেখবে ঘরে চলে যাবো সত্যি সত্যি।"

বাপ মেয়ের সকালটা এইভাবে রাগ অভিমান দিয়ে শুরু হয়।মানুষ কতটা সরল হলে শিশুর মতো আচরণ করতে পারে এবং কতটা ভালোবাসা থাকলে অভিমান করা যায় তা বোধহয় এই বাপ মেয়ের সম্পর্ক না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না।সৌরাংশ বাবু চা-এ চুমুক দিয়ে মেয়েকে জিজ্ঞেস করলেন," আচ্ছা মা তোর অফিসের খবর কী?শুনলাম তোর প্রমোশন হতে পারে ব্যাঙ্গালোর?"

" হতে পারে কিন্তু আমি যাবো না।এত দূরে একা একা থাকতে পারব না।ভাবছি বসকে বলে এইটা মনীষকে পাইয়ে দেবো।"

"আচ্ছা মা তুই কি ছেলেটাকে মন টন দিয়েছিস?আমাকে বল,তাছাড়া তোকেও ত বিয়ে দিতে হবে মা । তোর যদি কোনো পছন্দের ছেলে থাকে তাহলে বলতে পারিস।"

নীপার মুখের হাসি হঠাৎ মলিন হয়ে গেল।মনীষকে কি সে কোনোদিন ভালোবেসে ছিল!তার প্রতি একটু দুর্বলতা কাজ করতো কিন্তু সেটা প্রাণবন্ত নয় ।সেটা নিছক অভ্যাস।দীর্ঘদিন এক সাথে কাজ করার কারণে।কিন্তু বাবার মুখে তার কথা শুনেই বুকটা এমন করল কেন ?তবে কি নিজের অজান্তেই মন নেওয়া দেওয়া হয়ে গেছে ?না এইটা হতে পারে না!মন কি এত সস্তা নাকি।
তার ছোটবেলার একটা কথা মনে পড়ে গেছে।নীপা তখন ক্লাস নাইনে পড়ে ।সবাই বলে নাইনে উঠলে নাকি প্রেম প্রেম ফুল ফোটে ।ক্লাসের টপার ছিল অমন।অমন যেমন ব্রিলিয়ান্ট তেমনি চঞ্চল দুরন্ত ।কম বয়সি মেয়েরা এই রকম ছেলেদের প্রতি একটু বেশি আকর্ষণ অনুভব করে।স্কুল ক্যান্টিনে বসে নীপা বান্ধবী পূজাকে বলছিল ," তোর অমনকে কেমন লাগে?"
তখন পূজা বলল,'" তুই কি তাকে ভালোবাসিস ?
তখনও পূজার মুখে এই কথা শুনে আজকের মতো হয়েছিল।নীপা বাবাকে কোনো উত্তর দেয়নি।চা-য়ের কাপ না নামিয়ে টেনে যাচ্ছে।
সৌরাংশ বাবু বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ পাল্টে বলে," মনীষকে আজকে কি খাওয়াবি?"

" কেন বাজার করোনি?"

সৌরাংশ বাবু ক্ষাণিক রসিকতা করে বললেন," তোর বন্ধু আসবে তুই বাজার করবি তুই রাঁধবি।আমার বন্ধু আসলে আমি করতাম।"

"ওহ"সে বাবার রসিকতা বুঝতে পেরে বলল," কিসের মাংস আনলে বলো ।

" খাসির মাংস।আর জাটকা ইলিশ।"

নীপা আর কথা বলল না।রান্না ঘরে চলে গেল মাকে সাহায্য করার জন্য ।

এগারোটার মধ্যে রান্না কমপ্লিট।নীপা স্নান করতে বাথরুমে ঢুকে কিন্তু তোয়ালে নিতে মনে নেই।বাথরুম থেকে বের হয়ে তোয়ালে নিয়ে পুনশ্চ ঢুকলো ।
সকালে মনীষকে যখন ফোন দেয় সে বলেছে এগারো কি বারোটার মধ্যে এসে যাবে।মনীষ নীপাকে শাড়িতে দেখতে খুব পছন্দ করে।তাই সে গোলাপি ডোরাকাটা শাড়ির সাথে মেসিং ব্লাউজ পড়েছে।বেশ মানিয়েছে ।সে নিজেই অনেকক্ষণ আয়নার ভেতরে মানুষটাকে দেখল।কিন্তু ওই আরশিনগরের মানুষটা সে নয়।ওই আরশিনগরের মানুষটার কোনো নিজস্ব পৃথিবী নেই ।মন নেই,ভালোবাসা নেই ।তার কেবল চেয়ে থাকার প্রতিবিম্ব আছে।যাকে ইচ্ছে করলেও এক জনমে ছুঁয়ে দেওয়া যাবে না ।তবুও তার দিকে এইরকম নিষ্পলক চেয়ে থাকার মধ্যে যেন নিজের মনের মানুষটার কথা ভাবার একটা আনন্দ আছে ভালো লাগা আছে।
এইসব কথা ভেবে সে হঠাৎ আঁতকে উঠলো!মনের মানুষ কে তার?
সবিতা পেছন থেকে তাকে ডাক দিলে সে হঠাৎ চমকে উঠে!অকারণেই ।
" কিছু বলবে মা ?"

"কিরে একটা ত বেজে গেল কই ছেলেটা ত এখনো এলো না !আরেকটা ফোন কর ।তোর বাবা সকালেও খায়নি ,কতক্ষণ আর বসে থাকবে ?"

" ফোন করেছিলাম মা ফোন সুইচ অফ ।মনে হয় চার্জ নেই ।বাবাকে খেয়ে নিতে বলো।আমি মনীষ আসলে খাবো।"

"আচ্ছা দেখি তোর বাবাকে বলে ।"
পেছনের দেয়ালে ওয়ালঘড়িটাতে সময় দেখে মনটা বিষন্ন হয়ে গেল ।মোবাইলটা হাতে নিয়ে আবার মনীষের নাম্বারে ফোন দিলো ।কিন্তু এখনো সুইচ অফ ।


রাত নয়টা বেজে গেল মনীষ এখনো আসেনি।নীপা নিজের ঘরে মন খারাপ করে বসে আছে।পৃথিবীর সবকিছু পলকে যেন মূল্যহীন মনে হচ্ছে!বুকের ভেতর এক করুণ নিশব্দ আর্তনাদ!এই আর্তনাদ কেবল সে শুনতে পাচ্ছে!তার এখন খুব চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে!কিন্তু কেন কাঁদবে!সে কে ?কিন্তু মন মানছে না।তাকে অনেকবার সবিতা এবং সৌরাংশ বাবু বলেছে ভাত খাওয়ার জন্য ।কিন্তু সে খায়নি।মনীষ আসবে রাত হলেও আসবে।অনেকবার ফোন করা হয়েছেকিন্তু এখনো সুইচ অফ বলছে।তবুও তার মন বলছে সে আসবে।
ধীরে ধীরে ঘড়ির কাঁটা ঘুরে যাচ্ছে কিন্তু মনীষ আসছে না।মা বাবার সামনে দাঁড়াতে এখন তার খুব লজ্জা লাগছে।বিকাল থেকে সে দরজা বন্ধ করে বসে আছে ঘরে।


মনীষ আজ তিনদিন আসছে না অফিসে।যে বাড়িতে ভাড়া থাকে ওই বাড়ির মালিক প্লাবন বাবুকে অফিস থেকে ফেরার পথে নীপা বাড়ি গিয়ে জিজ্ঞেস করে ," আপনার এখানে যে ভাড়াটিয়া মনীষ সে অনেকদিন অফিসে যায় না ফোনেও পাওয়া যায় না এখানেও নেই আপনে কি জানেন সে এখন কোথায় আছে ?"

" তুমি কে ?"

"আমি উনার সহকর্মী এবং বন্ধুও।আমার নাম নীপাঞ্জনা বর্মন ।"

" গত রোববার তোমাদের বাড়িতে কি ওর নিমন্ত্রণ ছিল ?"

"হ্যা ছিল কিন্তু ও যায়নি।"

" কিন্তু সে তো তোমাদের বাড়ি যাবে বলেই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেল সকাল সকাল ।কি মুশকিল ছেলেটা গেল কোথায়?"

" আপনার কাছে ওদের গ্রামের বাড়ির নাম্বার বা ঠিকানা আছে ?"

" নাম্বার নেই ,তবে সে একবার বলেছে ওর গ্রামের নাম দুলব নারায়ন।কিন্তু মা এর থেকে বেশি আমি জানি না।"

নীপা ব্যর্থ হয়ে ফিরে এলো প্লাবন বাবুর বাড়ি থেকে।একটা মানুষ হঠাৎ করে তো আর ভ্যানিশ হতে পারে না।এখানে কেউ তার আত্মীয় নেই ,যে ওখানে গিয়ে খোঁজ করবে।যদি বাড়িতে না গিয়ে থাকে তাহলে সে কোথায় যাবে !সে এখন কোথায় খুঁজবে তাকে!এতবড় একটা শহরের বুকে সে কোন কোণে আছে,কে জানে তার ঠিকানা ?
এতটা মন খারাপ নীপা র কোনোদিন হয়নি।যেন কতকাল মনীষকে সে দেখে না !বুকের ভেতর এক অদৃশ্য হাহাকার !চোখের মনি কোঠায় কান্নারা এসে ভীর করছে ,কিন্তু বৃষ্টির চেয়ে যে মেঘের আকাশ কঠিন,রুক্ষ এবং ভয়ার্ত তা বোধহয় বুকের গহীন জানে।তবুও কচি বৃক্ষের পাতার মতো মাটি মাংসে ঢাকা যে প্রাণটা দিবানিশি ঘড়ির কাটার মতো টিক টিক করে যাচ্ছে অনবরত,সে কোমল অনিশ্চিত হৃদয় তো মানছে না !সে কাঁদছে!

রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে মনীষের কথা চিন্তা করছে ।যেন পৃথিবীর এখন তার একমাত্র ভাবনা মনীষ।হঠাৎ মোবাইল ফোন বেজে উঠল নীপার।সে তারাতারি ফোন বের দেখলো মা'র নাম্বার ।কলটা রিসিভ করে বলল," বলো মা "

সবিতা গাঢ় কণ্ঠে বলল," তুই কোথায় এখন ?"

"এই ত আসছি ।গাড়ির জন্যে অপেক্ষা করছি।সব ঠিক আছে মা ? তুমি এইভাবে কথা বলছ যে ?"

সবিতা এইবার ফোনে জুরে কেঁদে ফেলে বলল," তুই তারাতারি হাসপাতালে চলে আয় ,তোর বাবা হার্ট অ্যাটাক করেছে।ডাক্তাররা কিছু বলছে না ।আমার ভীষন ভয় করছে মা ,তুই আয়।"

নীপা কোনো কথা না বলে কলটা কেটে একটা অটো ডেকে উঠে গেল,ড্রাইভারকে বলল সিটি হাসপাতালে যাওয়ার জন্য ।

চয়ন ধর

জীবনকথা 

মানুষ পৃথিবীতে জন্ম গ্রহন করে কী কারণে?  এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ হয়নি! এই পৃথিবীর মানুষ রূপী জীবগুলির মধ্যে সাদৃশ্য হচ্ছে সবাই মানুষ ।

কিন্তু ভেদাভেদ হচ্ছে ধনী, দরিদ্র, সাধারণ,  পাগল।
এর মধ্যে আমি সাধারণ । মনে সামান্য কিছু স্বপ্ন নিয়ে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠি আবার রাত্রে স্বপ্ন গুলি নিয়ে ঘুমিয়ে যাই । আজ ৬টি বছর সমান ভাবে এই কাজটি চালিয়ে যাচ্ছি । জানিনা আদৌ স্বপ্ন গুলি বাস্তবায়িত হবে কিনা! আমি কিচ্ছু জানি না!

১. আমার এক বন্ধুর স্বপ্ন ছিলো সে গাড়ি কিনবে । ব্যাস আর কি, বাবাকে বললো আর পরদিনই  গাড়ি। কারন সে ছিলো উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তান।

২. এক বন্ধু যে কিনা অনেক দিন যাবত পেট ব্যাথায় ভুগছে। ভাবছে সে ডাক্তার এর কাছে যাবে। কিন্তু  ভাবতে ভাবতে প্রায় চারটি মাস কাটিয়ে যাওয়ার পর সে ডাক্তার এর কাছে গেল । যাবে কিভাবে, তার কাছে যে টাকা ছিলো না!

একটি ঘটনার কথা বলি, কিছু দিন আগে আমার স্বচোখে দেখা। একটা পাগল বাজারের একপাশে বসে আছে একটি লোক তার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সে পাগলটি লোকটির দিকে তাকিয়ে ডান হাত বাড়িয়ে দিল আর বাম হাতটি দিয়ে তর পেট দেখাতে লাগলো । ঐ ব্যক্তিটি তার পকেট থেকে ৫(পাঁচ)টাকা বের করে দিল আর পাগলটি সাথে সাথে একটি মিষ্টির দোকানে গেয়ে একটা পরটা নিয়ে  হাসতে হাসতে খেতে লাগলো ।

একটা পাগলও স্বপ্ন দেখে। প্রতিদিন কেউ একজন আসবে আর তাকে টাকা দেবে সে পড়টা কিনবে । এটাই তার স্বপ্ন। সীমাবদ্ধ পরিসরে সকলেরই স্বপ্ন থাকে।

ধনী,  দরিদ্র, সাধারণ,  পাগল সবাই স্বপ্ন দেখে ।আর এর মধ্যে মাত্র সামান্য পরিমান কিছু মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়। আব বাকিদের স্বপ্ন গুলি হাজারো স্বপ্নের ফাইলের নীচে চাপা পড়ে যায় । জীবিত থাকে স্বপ্ন গুলো আশার উপর । আশা আর স্বপ্ন দুটোকে আমার আলাদা মনে হয়।  

                   

পিনাকী ভৌমিক মুন

দাগ

গ্রামের নাম দুর্জয় নগর। সেখান থেকে অজয়নগরের দূরত্ব মাত্র ৫ মিনিটের হাঁটা পথ। এই ছোট দূরত্বের মাঝেই একটা সরকারী আবাসন আছে। সেই আবাসনেই গৌরববাবু ছোটখাটো একটা কাজ করেন যাকে চাকরিও বলা যেতে পারে। তার কাজ রাতের বেলা পাহাড়া দেওয়ার সেই আবাসন । গৌরববাবু এমনিতে সাহসী লোক বটে। কিন্তু সেই আবাসনেরই একজন বাসিন্দা জবা, কয়েক দিন আগে হঠাৎই গত হয়েছেন। জবাকে সবাই দিদি বলেই ডাকতো এবং মায়ের মতো সবাই শ্রদ্ধা করতো। তিনি সকলের বড্ড প্রিয় ছিলেন তার মিষ্ট ব্যবহারের জন্য। জবাদি আর গৌরববাবুর সম্পর্কটা বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো। তাই গৌরববাবুর কাছে জবাদির হঠাৎ চলে যাওয়ার ব্যাপারটা খুবই দুঃখের। জবাদি যাওয়ার পর গৌরববাবু কেমন যেনো মনমরা হয়ে থাকতেন। দেখলে বুঝা যেতো তিনি যেনো তাঁর জীবনের একজন খুব কাছের মানুষকে হারিয়েছেন। 

              এর পর প্রায় মাস খানেক পরের কথা, তিনি নিত্যদিনের মতোই সেই রাতে পাহাড়াদারের কাজ করছিলেন। আবাসন থেকে কেউ রাতে সাধারণতঃ অকারনে বাইরে বেরুতে পারেন না এবং রাত্রি ১১ টার পর নিয়ামানুসারে সমস্ত রুমের লাইটও বন্ধ করে দিতে হয়। কিন্তু গৌরববাবু এখন প্রায়দিনই লক্ষ্য করেন যে আবাসনের একজন মহিলা প্রতিদিনই কোন একটা কাজে বাইরে যান কিন্তু তিনি আর সেই মহিলাকে ফিরে আসতে দেখেন না। কিন্তু পরেরদিন সেই এক‌ই সময়ে আবার বেরিয়ে যেতে দেখেন। গৌরববাবু প্রথম কয়েকদিন খুব একটা গভীরভাবে ভাবেননি বিষয়টা নিয়ে। 
কিন্তু একদিন তিনি ভাবলেন এ‌ই রহস্যের সমস্যা উদঘাটন করবেন। সেই ভেবে তিনি সেই মহিলাকে পেছন থেকে ডাক দিলেন কিন্তু কোন সাড়া দেননি সেই মহিলা। উত্তর না আসায় সেই মাঝ রাতেই গৌরববাবু ঐ মহিলার পিছু ধাওয়া করলেন। মহিলার পেছন পেছন একটু এগোনোর পর কেনো যেনো গৌরববাবুর মনে হলো সেই মহিলার সাথে আমাদের জবা দির কিছুটা মিল আছে। যদি ও তিনি একে ভ্রম বলেই ভেবে নিয়েছিলেন। তারপর তিনি আরো এগোলেন সেই মহিলার পেছন পেছন। কিন্তু উনার কোন ধারণা ছিল না তিনি আসলে কোন রাস্তা ধরে কোথায় যাচ্ছেন। তবুও তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন এক‌ই ভাবে। হঠাৎ একসময় তিনি বুঝতে পারলেন যে এ রাস্তা তার জন্যে নিরাপদ নয়। যখনই এই ভাবনা আসে ঠিক এক‌ই সময় ঐ মহিলাও গৌরববাবুর দিকে ফিরে তাকালেন। গৌরববাবু যা দেখলেন তাতে তিনি হতচকিত ও বিস্মিত হয়ে গেলেন। এ কি! এতো জবা দি । কিন্তু তা কি করে হয় তা তো সম্ভব হতে পারে না, কারণ তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। তাহলে কি এতোদিনের সমস্ত অভিজ্ঞতা সবকিছুই অলৌকিক ছিল? এ সব প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যেই গৌরববাবু কে নাড়া দেয়। তিনি কিছুই বুঝতে পারলেন না। সেই রহস্যময়ী ছদ্মবেশী গৌরববাবু কে কিছু বলতে চাইছিলেন। কিন্তু গৌরববাবু ভয়ে সেখান থেকে দৌড়ে আবাসনে চলে আসেন। গৌরববাবু এখন যথেষ্ট বয়স্ক হয়েছেন।কিন্তু সেই রাতের অভিজ্ঞতা এখনো গৌরববাবুকে এখনো  শিহরিত করে। 
               তবে কি এগুলো বিভ্রান্তি নাকি এই সমস্ত অলৌকিক ঘটনার পেছনে কোন সত্যি লুকিয়ে থাকে যা আমাদের অজ্ঞাত বা জ্ঞাত! 


        

দিবাকর পাল

মায়ের বাংলা ভাষা

ভূপৃষ্ঠ হওয়ার পর 
প্রথম দেখা তুমি মা, 
তোমার ভাষায় প্রথম যে -
কথা বলি আমরা মা। 
একাধারে তুমি মা  
সৃষ্টির পালক 
অন্যধারে তুমি আবার 
বাংলা ভাষার সংহারক। 
মায়ের ভাষায় মধুর নেশা 
তাইতো সবার কবিতায়, 
আ-মরি বাংলা ভাষা।
বাঙ্গালী ওই ঘরে ঘরে রয়েছে 
বাংলা ভাষা 
আন্তজাতিকতায় স্থান পেয়েছে 
শত মায়ের আশা 
মায়ের ভাষাই , নিজের ভাষা 
বর্ণমালার সংকলন 
তাইতো আজ স্মরণ করি 
মায়ের ভাষার উৎকলন 
ভাষার জন্য কতো বিদ্রোহী প্রেমিক 
দিয়েছিলেন প্রাণ 
তাদের অবদানে আজ 
রয়েছে ভাষার ওই মান। 
রবি ঠাকুরও বাংলা ভাষার 
করেছেন কদর, 
বিশ্বচরাচরে আজ বিশ্বকবি সমাদর। 
বর্তমানে অনেক কবির
কদর নেই দেশে ,
ভালো লিখে ও
ঠায় হয়না,
কোন কবিতা আর উপন্যাস-এ।
কারন তাদের নেই পরিচয়
নাই কোন বেশ, 
নুন আনতে পান্তা পুরায় 
মনে তাদের ক্লেশ। 

কাউচার খান

বাঁচার লড়াই 
 

জীবন মানে সংগ্রাম, জীবন মানে লড়াই, 
এই সংগ্রাম লড়তে হয় শেষ শ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত |

কখনো কখনো আমি, তুমি কিংবা আমরা
নানান প্রকার  ডিপ্রেশন এ ভোগী, 
এই ডিপ্রেশন এর চাপে আমরা অনেকে বাঁচার স্বাদ ভুলে যাই আর বেছে নিই মুক্তির পথ হিসাবে আত্মহত্যার মতো নিছক কাজ |

মানুষের জীবনে ডিপ্রেশন আসাটা স্বাভাবিক এতে অস্বাভাবিক কিছু নেই, 
ডিপ্রেশন এর চাপে আত্মহত্যা করা মানুষের ধর্ম নয় |
বিভিন্ন প্রতিকূলাতার সম্মুখীন হয়ে লড়াই করে বেঁচে থাকাটা হল মানুষের প্রকৃত ধর্ম |

সব ব্যর্থতা মানে হেরে যাওয়া নয়, 
কিছু ব্যর্থতা সাফল্যের পথ সূচনা করে. 
তুমি ব্যর্থ না হলে নিজের তুমিটাকে চিনতে পারবে না, 
তাই জীবনে একবার হলেও ব্যর্থ হওয়া প্রয়োজন।

গৌতম দাস

আমি আত্মহত্যা করব
                                  

বর্বরতার মায়াজালে বিষাক্ত মন্ত্র ঢুকল
মনের গহিনে।
নিজেকে একা মনে হয় প্রিয়া তোমার বিহনে।
তব সুধাময় আলতো স্পর্শের স্মৃতি আজ জীবন্ত।
শোকের জলে ডুবুরি সেজে তোমায় খোঁজা একান্তই ভ্রান্ত।
বয়ঃসন্ধিতে নেশার জলে নিজেকে হারিয়েছি।
ভরা যৌবনে পরিপূর্ণ শোকে রেল লাইনে মাথা রেখেছি।
এই ধাপেও ব্যর্থ  হলাম শুভাকাঙ্ক্ষীর চোখে।
সমাজ বলে কুলাঙ্গার, কাপুরুষ ,নিষ্কর্মারা নিজেকে নিজে হারায়।
ছোট বাচ্চারও শুনে মুখ ফিরিয়ে নেয় ,কেঁদে বুক বাসায়।

মানসিক অবসাদের তরে আত্মহত্যা করতে চাই।
জানি এটা বড় মহাপাপ এর নেই কোন মাফ।
মা বলে সব সমস্যার সমাধান মৃত্যুতে নয়।
অন্যায়,শোক,হতাশাকে কেন কর ভয়?
সমস্যাকে আঁকড়ে ধরে এগিয়ে যেতে হয়।
বৃদ্ধ বিধবা আমি কুড়িটি বছর শূন্যতা বুকে পোষে আছি
আর তুমি আত্মহত্যা পথের পথিক হতে চাও।
মনের অন্ধকারে জ্ঞানের প্রদীপ জ্বালাও।
চন্দ্র, সূর্য ,পৃথিবীও অসহায় চিত্তে থমকে দাঁড়ায়
এই শোকেতে।
কী সুখ পাবে তুমি আত্মহত্যা করাতে?
কেন বার বার বল আমি আত্মহত্যা করব?
                             

সম্রাট শীল

শ্যামোলী কোচিং
              
আমার কাছে স্মরণীয় 
একটি কোচিং সেন্টার ছিল যার নাম,শ্যামোলী।
এত স্মৃতি জড়িয়ে তার সঙ্গে
কী আর বলি।।
সেই দিন গুলো আজও
অনেক মনে হয়।
শ্যামোলী কোচিং এর সঙ্গে সম্পর্ক
ছিল,অতি মধুময়।।
সেই কোচিং সেন্টারের অধ্যক্ষ ছিলেন আমার, প্রিয় দেবাশীষ স্যার।
শিক্ষা বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্রে উনার জ্ঞান ছিল অপার।।
শিক্ষা বিজ্ঞান ও দর্শনশাস্ত্র পড়তাম উনার কাছে।
এই দুই বিষয়ে জ্ঞান কিন্ত উনার ‌যথেষ্ট আছে।।
আরও প্রিয় দুজন, চিরঞ্জীব ও হিরন্ময় স্যার।
ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে বিদ্যা ছিল অপার।।
তাদের কাছে পড়েছি আমি নিজ আপন মনে।
ঐ সেন্টারে যেতাম ‌আমি, কয়েক বন্ধু একত্র জনে।।

আমরা কয়েক শুভার্থী ছিলাম  
ঐ সেন্টারে ,ভালোবাসা ছিল কিন্তু অপার।
এত আনন্দ পেয়েছি সেখান থেকে যে, কি বলবো আর।।
ঐ সেন্টারের পাশে কৃষ্ণচূড়া গাছের নীচে দাঁড়িয়ে, বন্ধুদের সঙ্গে কতো করতাম হাসি ঠাট্টা।
বেশ জমতো কিন্তু ঐ
খানিক সময়ের আড্ডা।।
সেই আড্ডায় কেউ ব‍্যস্ত থাকতো গ্ৰুপ স্টাডি নিয়ে।
আবার কেউ ব্যস্ত থাকতো প্রেম পাঠ নিয়ে।।

স‍্যার যখন এসে সেন্টারের দরজা খুলতেন তখন কে কোথায় বসবে তা নিয়ে করতাম বায়না।
কেউ বলতো এখানে বস,আবার কেউ বলতো এখানে বসনা।।
হঠাৎ করে আবার শুরু হতো বন্ধুদের মাঝে খুনসুটি, অভিমান।
কিছুক্ষণ পর সব ভুলে আবার
হয়ে উঠতাম এক প্রান।।

বর্ষাকালে সেন্টারে পড়ার সময় ,আকাশ হতে বৃষ্টি যখন নামতো।
তখন মনটায় কত না আনন্দ
জমতো।।
বৃষ্টির মূহুর্তে আমরা সকল বন্ধুরা যখন উল্লাসে মত্ত হতাম।
তখন কেউ ব্রেঞ্চ বাজাতে ব্যস্ত, আবার কেউ গান করতাম।।
পড়া শেষে বন্ধুরা মিলে কত আড্ডা দিতাম।

শীতকালের সকাল বেলা কুয়াশা যখন নামতো।
সেই সময়ে বন্ধুরা মিলে সাইকেল চালিয়ে পড়তে যেতে অনেক মজা হতো।।
দিঘীর পারের অমৃত রেস্টুরেন্ট,ডোনার্সে, বন্ধুরা মিলে স্যারদের সাথে গিয়ে কতকিছু খেতাম।। 
৫ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শিক্ষক দিবস,স্যারদের সাথে নিয়ে সেন্টারে পালন করতাম।
স‍্যারদের সাথে নিয়ে ক্ষানিক সময়ে ঐ দিন কিছু আনন্দ করতাম।।

 ২০১৮ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি ঐ দিন মনে ব্যথা,চোখে জল, হাসি, আনন্দের মাঝে কোচিং সেন্টার থেকে পাওয়া বিদায় সম্বর্ধনা।
ঐ দিন শেষ বারের মত সেন্টারে যাব ,এই কথা ভেবে অন্তরে হয়েছিল অনেক বেদনা।।
শেষের দিনে স্যারদের সাথে অনেক সময় কাটিয়েছিলাম।
সব কিছু ছেড়ে, স্মৃতি জড়িয়ে সেন্টার থেকে ঐ দিন বেরিয়ে পরেছিলাম।।

অনেক আনন্দ,ভালোবাসা
এখান থেকে পেয়েছিলাম।
এই সেন্টার থেকে আমি,
অনেক কিছু শিখেছিলাম।।
কেমন ভাবে যেন কেটে গিয়েছিল কয়েকটি বছর।
সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসার পর কয়েকদিন থমকে গেছিল, আমার মনে আনন্দের মোহর।।

সঞ্জয় দত্ত

থমকে গেছে পৃথিবী
          

প্রতিটি দিনের শেষে সুন্দর একটি
রাতের অপেক্ষায় থাকে পৃথিবী।
প্রভাতের সূচনায় রবির হাসিতে
ভরে উঠে অপরাজিত মনের ছবি।।

সমস্যায় সাবলম্বী থাকা মানুষ
ছিল অনেকটা কম,
দুরন্ত গাড়ি হঠাৎ থেমে গেলেও
ড্রাইভার বলে,গাড়ির আছে এখনো দম।
 
কোনো একটা ভয়াবহ কারণে
হঠাৎ থমকে গেছে জীবন!
লাশের গাড়ি বয়ে নিয়ে
যাওয়াই হলো মানুষের কর্মক্ষম।

শ্রীরাম চন্দ্রের বনবাসে যাত্রা   
রাজা দশরথের মৃত্যু,
হঠাৎ সৃষ্টি হয়েছে
এক মহামারীর সেতু।

দিনের শেষে পৃথিবী এখন
লাশের সংখ্যা গুনছে,
নদীর পাড়ে শ্বশানের ভীর
আর আগুনের শব্দ শুনছে।

প্রতি একশো বছর পর
পৃথিবীর নিজ কক্ষপথ হারিয়ে ফেলছে,
হঠাৎ ভুলে যাচ্ছে তার মানচিত্র
তাই পৃথিবী আজ আবার থমকে গেছে।

চয়ন সাহা

অযোগ্য 

আমার আমি টা প্রশ্নের মুখে! 
অনুভূতি শুন্য মৃতপ্রায় একটা মানুষ, 
অন্ধকারে নিজেকে বন্দী করলাম!
খুঁজে চলেছি কিছু একটা, 
কী তা এখনো সমাধা করতে পারি নি।

আজ নিজেকে নিজেই ছোট করেছি,
তবে কখনো নিজেকে বড়ো করার চেষ্টা করিনি,
তাই ছোটো হওয়াতে ফারাক পরে নি কখনো, 
কিন্তু আজ নিজেকে হারিয়ে ফেলার অনুভূতি গুলো প্রবল,

কতটা তুচ্ছ আর বেমানান এই সমাজে আমি! 
উপার্জন এর অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে আমি অযোগ্য! 
আমার যে কোন প্রতিপত্তি আর আভিজাত্য নেই,
তাই আমার গ্রহনযোগ্য হওয়াটা অনিশ্চিত!

আমার শিক্ষা আছে,তবে চাইছে টা কে?
আমি নীতি বান,কী হবে তাতে?
আমার সততা আছে,তা যে মূল্যহীন!
আমি আদর্শবান,প্রয়োজন কার?

আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের একজন, 
আত্মসন্মান আর নীতিবোধ নিয়ে বাঁচতে শিখেছি!
জানেন দাদা......! 
আমার একটা চাকুরী চাই,সরকারী চাকুরী, 
এই সমাজে আমার যোগ্যতা প্রমাণ হবে তাতে!
আজ কেউ একজন আমায়,
অযোগ্য হওয়ার অনুভব করিয়েছে,

ভারী অদ্ভুত এই সমাজ,
অদ্ভুত সমাজে আমার আপনজন,
অর্থ বিনে অযোগ্য তাই,
ফেলনা হলো আমার মন!

আজ আমার আমি টা প্রশ্নের মুখে, 
ঘুমহীন রাত্রিযাপন করি চিন্তার ভাঁজে! 
হয়তো নিজের চোখে চোখ রাখা আর হবে না! 
কারোর কথায় এতো টা ঝড় আসতে পারে জানতাম না!
প্রতিক্ষণ শুধু গুড়িয়ে যাচ্ছি,
নিলাম তোমার ঋণের বোঝা, 
থাকবো চির কৃতজ্ঞ!
মানুষ হয়ে যোগ্য হলেও,
তোমার কাছেই অযোগ্য!!

সুজয় ঘোষ

তোমার স্মৃতি

একে বারে কয়েক টা দিনের আলাপ মাত্র ।
তাতেই মন তোলপাড় ।
প্রেম তো মোটেও নয় ,
বন্ধুত্বেই ছারখার ।
অনেক কথা , অনেক আলাপ ,
ভিডিওতেও বেজায় প্রলাপ ।
অবসর নেই একটুও সময় মাত্র ।

প্রেমিক তার ছিল আগেই ,
আমি হলাম শুধুই বন্ধু।
বন্ধুত্বেয় পেয়েছি যত্ন
উজাড় করে সিন্ধু।
অবশেষে সেই দিন ,
খুব যত্ন করে গেলে চলে ।
ভেবেছিলাম এই শেষ ,
তুমি হয়তো যাবেই ভুলে ।

কিন্তু আমি অবাক হলাম ।
তোমার পারদর্শী তার ।
তোমার সুখের মুহূর্ত গুলির 
আমায় করলে অংশীদার।

যদি বন্ধুর থেকে তোমার কাছে
প্রেমিকই হয় বড়ো,
তবে তোমার যত সুখ দুঃখ
কেনো আমার সাথে ভাগ করো !

বন্ধু নামক কলম দিয়ে
আঁকতে গিয়ে ছবি ,
আমার হৃদয় ভূমিতে আঘাত হেনে 
বানিয়েছ কবি। 
এখন আমার ছন্দে ছন্দে
প্রতি লাইনেই তুমি ।
আমার হৃদয়ে কাটা দাগের কথা
কভু ভুলবো না তো আমি ।

মন্দিরা শর্মা

দাগ

আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম।আমি তখন স্কুলে , যখন ঘটনাটি ঘটলো ! স্কুল ছুটির পর বান্ধবীর সাথে গল্প করতে করতে বাড়িতে আসলাম , দেখি সবাই কাঁদছে ! বাড়িতে সবাই ছিল , শুধু জ্যেঠু আর ভাই অনুপস্থিত ছিল। 

আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম , কি হল মা ? মা বলে উঠলো ,,, তোর জ্যেঠু আর তোর ভাই গাড়ি এক্সিডেন্ট করেছে ,তর অমুক কাকু এসে বলে গেলেন। আমি তখন কি করব, কি  বলবো বুঝতে পারছিলাম না !  বাড়িতে তখন ফোন ছিল না , সবাই শুধু কাঁদছি ।
একটু পর পাড়ার একজন এসে বললো , তারা  (বাপ-ছেলে )  দুজনেই মারা গেছেন ! আর একটু পর আরেকজন এসে বললো না না বাবা ঠিক আছে , ছেলে মারা গেছে । কোনটি সঠিক কোনটি ব্যঠিক তখনো জানি নি ,,,   

আমার পাশের  বাড়িতে একজনের মোবাইল ফোন ছিল , হঠাৎ জ্যেঠু অন্য আরেক জনের মোবাইল ফোন দিয়ে কল করে ওনাকে এবং বলে  আমি সুমন  (  আমার ভাই)কে নিয়ে   কুলাই হাসপাতাল থেকে এখন আগরতলা জিবি হাসপাতালে যাচ্ছি । ওদের কে বলো চিন্তা নি করতে । 

আর কোনো খবর নেই । জ্যেঠু ২ দিন পর বাড়িতে আসে , এবং কিছু জায়গা বন্দক দেয় । 
কারন ,,, ডাক্তার বলেছেন ,,,,, ভাই আমার কে বাঁচাতে গেলে অনেক রক্তের প্রয়োজন । অনেক টাকার দরকার ।  পাশাপাশি ঐ এক্সিডেন্ট র প্রভাব ভাইয়ের ডান হাতে পড়েছিল । ঐ হাত কে বাঁচাতে গেলে ও রক্তের প্রয়োজন। 

জ্যেঠু টাকা নিয়ে গেছে ,,,, সব কিছু করার পর ও ডাক্তার বলে ,,, দুঃখিত ।   বাঁচবে কিনা সন্দেহ আছে! 
 তার সব টা হাত কাটতে হবে । তবে যদি কিছু ভালো হয় । 

কিন্তু জ্যেঠু সম্মতি দেয় নি। 
ঐ দিন ই কলকাতা  আপেলো  হাসপাতালের উদ্দেশ্যে  রওনা দেওয়ার জন্য টিকিট কাটে । 
পরের দিন ভাইকে নিয়ে সেখানে যায় । কিছুদিন পর খবর পাই ,,, ভাই ভালো আছে , শুধু ডান হাতের অর্ধেক অংশ নেই ।  আজ ভাইয়ের অর্ধেক হাত নেই , তাতে কি জীবন টা তো আছে । 

এই ছিল আমার জীবনের একটা স্মরনীয় ঘটনা , একটা দুঃখময় কাহিনী , যা আমি কোনোদিন ভূলবো না । 

রাহুল শীল

টুয়েলভ মার্কশিট
       

স্কুলজীবনে থাকার সময় বুঝে গিয়েছিলাম "কিসমত হামারি কুত্তি চীজ হ্যা" অর্থাৎ ভাগ্যের সঙ্গ আমি পাবো না। যেকোনো সামান্য কাজ ভাগ্যের বিড়ম্বনায় বিলম্ব হয়। একটি সাধারণ কাজ করতে একশো জনের মধ্যে ৯৯ জন সফল হলে যে একজন সেই কাজটি বিনা কারণে সহজভাবে করতে পারে না তাদের দলে আমি পড়ি। পরীক্ষা দিয়ে এসে যতই সন্তুষ্টি অর্জন করি না কেন রেজাল্ট আমায় হতভম্ব করেই বরং যে বন্ধু ভুল উত্তর করে আসে সেও ঐ বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে যায়‌।যাই হোক এই ভাগ্য যে স্কুল জীবনেই ছিল তা কিন্তু নয় কলেজ জীবনের প্রথমে অনেক ঘুরিয়েছে আমায়। সেদিন সদ্য কলেজের প্রথম দিন। টুয়েলভ এর মার্কশিটের জেরক্স কপি চেয়েছিল ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ। সেজন্য কলেজের উল্টোদিকের জেরক্স দোকানে গিয়েছিলাম জেরক্স করাতে মার্কশিটটা। তাড়াহুড়ো করে আসল কপি টা না নিয়ে জেরক্স কপি নিয়ে কলেজে এসে জমা দিয়ে দিই। পাঁচ ছয় দিন পর ফাইলটা থেকে ভর্তির ফি কার্ড নিতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না টুয়েলভের আসল মার্কশিট টা। মা'কে জানায়নি কিন্তু উনি মুখের নক্সা দেখে বুঝে গিয়েছিলেন 'ছেলে কিছু হারিয়ে ফেলেছে'।আমিও বললাম মা'কে, দুজন মিলে ঘরের মেঝে থেকে সিলিং সব খুঁজলাম-নো রেজাল্ট।তারপর জেরক্স দোকানে সন্ধান করতে বেরিয়ে পড়ি এই তালিকায় নিজের স্কুল সংলগ্ন দোকান, আমার স্থানীয় এলাকার দোকান, কলেজের জেরক্স দোকান ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কলেজের জেরক্স দোকানে গিয়ে যখন হারানো মার্কশিটের খোঁজ নিয়,তখন মালিক একটু খোঁজাখুঁজি করে জানান উনার দোকানে কোনো মার্কশিট নেই বরং কয়েকটা আধার কার্ড রয়েছে। মানসিক ভাবে একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম তখন- এখন কি করি!!।এত বড় হয়েও নিজের খামখেয়ালির জন্য মা-বাবা,আত্মীয়, স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ বন্ধুদের থেকে আসা অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। তারপর আমার কয়েকজন স্কুল শিক্ষক,টিউটর ও কলেজ প্রফেসরের কথা অনুযায়ী পর্ষদে যাই নতুন মার্কশিটের আবেদন করতে।নিয়ম অনুযায়ী জীবনে প্রথম স্থানীয় পুলিশ থানায় একজন বন্ধুর সাথে গিয়ে একটা ডায়েরি করি।তারপর পর্ষদ সংলগ্ন ব্যাংক থেকে ৩৫০টাকার চালান ভরি। কলেজ শেষ করে নিজের স্কুল হয়ে বাইকে করে পর্ষদে যেতে হয়েছে চারদিন। পর্ষদ জানিয়েছে প্রায় তিনমাস লাগবে নতুন মার্কশিট হাতে আসতে।তবে একটি কপি লিখে দিয়েছেন যা দিয়ে যাবতীয় বিভিন্ন কাজ,পরীক্ষা সংক্রান্ত ফর্ম ফিলাপ করা যাবে।বলে রাখা ভালো নতুন মার্কশিটের আবেদন ও করতে পারতাম না যদি আমার ফাইলে একটা পুরোনো ভাঁজ করা আসল মার্কশিটের জেরক্স কপিটা না থাকত। এটাকেই অনেক কপি জেরক্স করিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলাম। এভাবেই দু সপ্তাহ গেল কলেজের ফিকার্ড জেরক্স করাতে কলেজের উল্টোদিকের দোকানে গিয়েছিলাম এবং দোকানের মালিককে বললাম এখনো আসল মার্কশিটটা না পেয়ে পর্ষদে নতুন একটি মার্কশিটের আবেদন জানানোর কথা। তখন উনি বললেন দাঁড়াও একটু! তিনি দোকানে লোকের হারানো নথিপত্রের ফাইল খুলতেই আমার চোখ পড়ে একেবারেই উপরেই থাকা আমার আসল মার্কশিটটায়। তখন মনে যে আনন্দ অনুভূতি জন্মালো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় এবং আজীবন মনে থাকবে।আসলে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় বিনা কারণেই আমার এই অহেতুক যুদ্ধ করতে হয়েছে যার ফল শূন্যই।।

পরিতোষ সরকার

মেঘ সোহাগী 

পৃথিবীর কোনো তকমা লাগা শহরে 
না-হয় তোমার উপবেশন।
আমি নির্জন বনানির মাঝখানে 
স্বপ্নহারা এক চিলেকোঠায় থেকে গেছি। 
বিশাল ব্যবধানের মাঝখানেও আমি 
রোজ তোমার রূপের ভরা নদীতে সকল-
অভিমান ডুবিয়ে স্নান সেরে নেই। 
আমার আকাশে এখন প্রতিদিন 
ছোট ছোট মেঘের জমাট বাঁধার অনুষ্ঠান হয়। 
সেই মেঘের ঘাঢ় প্রলেপে আমি তোমায় দেখি।
বিশাল এক বাগানে সারিবদ্ধ ভাবে দুলে যাওয়া
লাল, সাদা, হলদে আর সবুজের ফাঁকে ফাঁকে 
বিনি চুলের বন্ধন খুলে দিয়ে তোমায়
হেঁটে যেতে দেখি। 
আমার সমস্ত মনের শহরে তোমার 
চোখের পলক পরে, ঠোঁটের হাল্কা হাসি ঝড়ে। 

তোমার স্থায়িত্ব মনের আশা জুড়ে 
সমগ্র দিবস হয়তো হয়-না। 
বাতাসের ধাক্কায় ঘড়ির কাটার সাথে 
তুমি ভেসে চলে যাও,  ঐ শাল-সেগুন
আর গর্জন বনের উপর দিয়ে।
হঠাৎ বাঁশ বাগানের মাথার উপরে 
চাঁদের বিপরীত হয়ে বিলীন হয়ে যাও তুমি।
তবু আমি চেয়ে থাকি উড়ে যাওয়া মেঘের পানে
তোমার সোনালী মুখ আকড়ে ধরে।

মঞ্জিলা বসু

শেষ  চিঠি   
                                                      
শূণ্য চোখে যেদিন এসে
দাঁড়িয়ে ছিলাম নীল আকাশের নীচে 
সেদিন তুমি হাতটি ধরে দাঁড়িয়ে ছিলে পাশে এসে।
চোখের তারায় জ্বালিয়ে আলো
তাকিয়ে ছিলে যখন 
হৃদয়ের দ্বার খুলে দিয়ে আমি 
করে ছিলাম তোমায় আপন।
হাজার হাসি সুখ দুঃখ 
মান অভিমান শেষে 
বর্ষশেষে আজ আবার আমি 
দাঁড়িয়ে আছি নীল আকাশের নীচে।
কিন্তু আজ স্থানটি খালি
হাতটি আমার রিক্ত 
তুচ্ছ কথায় তুমি আমায় করে দিলে
হাজার অশ্রুতে সিক্ত।
সেদিন দুচোখে স্বপ্ন এঁকে
আমি তাকিয়ে ছিলাম তোমার তরে
তুমি ভুললে আমায় মোহের টানে
মরুভূমির বুকে জলবিন্দু সম।
আজও সে গল্প অজানা তোমার 
মনের গভীরের এ লড়াই শুধু যে আমার 
থাকুক যতই বেদনার জ্বালা
হৃদয় চিরে তা দেখাতে মানা।
আমার ভাগের সকল ভালো 
তোমার আকাশে উদয় হোক
তোমার যত বালাই  ছিল 
নিয়ে আমি বিদায় হলাম।

অদিতি সাহা

প্রদীপ-শিখা

 জন্মেছি যখন আমি কান্নায় চোখের জলে,

বাবা তখন ছুটে এল নিতে আমায় কোলে।

মায়ের তখন হুঁশ নেই,ঘুমে পরেছিল ঢুলে।
প্রতিবেশীরা সব দেখতে এল,আমায় দলে দলে।।

পেছন থেকে একজন হঠাৎ বললো আমায় চেয়ে,
ছেলে নয়তো অমুকের হায়!হয়েছে যে মেয়ে।।

মেয়ে মানেই তো অনেক ভেজাল,আস্ত হাতির বোঝা।
অমুক তোমার জীবন কঠিন, 
রইল না আর সোজা।।

ঠাকুরমা বললো নাতনি হায়রে-
আমি কি যে করি?
স্বামীর ঘরে পাঠাতে হবে দিয়ে কয়েক ভরি।।

নাতি যদি হত তবে,হতো বংশের আলো।
নাতনি মানে কপাল পুড়েছে,আর হলো না ভালো।।

ছেলে হলে বাজত শাঁখ,দিতাম উলু পাঁচ।
মেয়ে যখন তিন উলু দাও,
এটাই তো ধাঁচ।।

বাবা তখন চুপচাপ !সব কথা শুনে,
নিজ অন্তরে রাখলো ব্যাথা পুষে গুনে গুনে।

পারতাম যদি তখন বলতে কথা,দিতাম আমি জবাব।
মেয়ের জন্য কেমন করে স্নেহের এত অভাব?

আদর করো,যতন করো,ভালোবাসো আমায়।
খরতাপে আগলে রাখো স্নেহের শীতল ছায়ায়।।

একদিন আমি থাকবো না বোঝা,হব অনেক বড়।
এখন না হয় কষ্ট করে আমায় বড় কর।।

সমাদরে পালো আমায়,মায়ায় করো ঋণী,
আমিও তো একদিন হতে পারি "ডাক্তার কাদম্বিনী"।।

তোমরা যদি ভাবো এমন হয়ে নিজে নারী,
সমাজের দাড়িপাল্লায় পুরুষরা সব হয়ে যাবে ভারী।।

ছেলে মেয়েতে করিও না ভেদ,
সমান নজরে দেখো।
বাঁচতে দাও,বাঁচিয়ে রাখো,নিজে বাঁচতে শেখো।।

নিজ হাতে টেনেছে বিধি আমার কপালের রেখা।
ছেলে যদি হয় বংশের প্রদীপ,মেয়ে তাহার শিখা।।

সংগীতা শীল

তোমায় ভুলতে পারি না, ২০১৭


সন ছিলো ২০১৭ইং ২৩শে মে। মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিন। কপালে চুমু খেয়ে আদর করেছিলে। কি মিষ্টি লাগছিলো তোমায়। ঠিক মাস ছ-মাস আগের তুমিটাকে দেখে মনে তৃপ্তি অনুভব করছিলাম। আমার সাথে ছবি তুলবে বলেছিলে। আমিও জড়িয়ে ধরে ছবি নিলাম।
 
 কথায় কথায় বলতে সময় আর বেশী দিন নেই হাতে। বোনটাকে দেখিস। নিজের খেয়াল রাখিস। দিন ফুরিয়ে আসছে!
 রোজ দিনের এক কথা শুনতে কার ভালো লাগে! রাগ দেখিয়ে বলতাম "পরীক্ষাটাই দেবো না মা"। সেই পরীক্ষা পর্যন্তই ...
আমরাও অপেক্ষায় ছিলাম তোমাকে সুস্থ থেকেও আরো আরো সুস্থ করার আশায়। একটা চিন্তাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিলো বার বার; কখন পরীক্ষা শেষ হবে আর ভালো চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যাবো।
 অস্থিরতায় পরীক্ষা শেষে হাসিমুখে বাড়ি ফেরা, সেখানেই হয়তো দৃষ্টি পড়েছিল নিয়তির!
 অসুস্থতার সীমা অতিক্রান্ত করে নানা দুর্যোগ মোকাবিলার সন্মুখীন হতে হয়েছে তোমাকে। সেদিনই যদি না ফেরার দেশে চলে যেতে তাহলেও হয়তো মেনে নিতে পারতাম তোমার মৃত্যু।
 কিন্তু ওই লড়াইয়ে বহুদূর পাড়ি দিয়ে তুমি তো হাসি মজায় সুস্থ জীবনযাপন করছিলে। মৃত্যুর আভাস পেয়েও আমাদের সকলের সঙ্গে অভিনয় করে গেছো। একটিবারও বুঝতে দাওনি! কেন কেন? 
সময় পাল্টে দিয়েছে প্রতিচ্ছবির মতো আমাদের জীবন। এক নিমিষেই সব উল্টোপাল্টা হয়ে গেছে। বাবার কোল থেকে রথে চেপে চলে গেছো!
কিন্তু কেন-র জবাব এখনো পাইনি। তবে এটুকু বুঝতে পেরেছি তুমি অন্যের বোঝা হয়ে থাকতে নারাজ। আমাদের চলার পথে যদি তুমি বাঁধা হয়ে থাকো! হয়তো সেইজন্যই....
না উত্তরটা ঠিক মিলছে না....
ছেড়ে দিলাম ভগবানের কাছে।।

দিপিকা রায়

জীবনের স্মৃতি

ধোঁয়াশায় ঘিরে থাকা স্মৃতিগুলো
কলমের শিখায় আজ ধরলাম তুলে। 
গোপন ঘরে কত স্মৃতি কন্ঠ দিয়েছি খিল, 
সুযোগগুলো হাতছানি দিয়ে
ভাঙলাম এই কন্ঠ দ্বার। 

কালো মেঘে আবছা সেই রাত
নাচে,গানে, চিত্রপটে ঝলমলে ছিল
পূর্ণিমার ওই চাঁদ। 
তার মাঝে ঘোর অন্ধকার ছিলাম আমি, 
নাচ না জানা নর্তকী, 
গান না জানা গায়িকা, 
চিত্রকল্পে হাত না দেওয়া আর্টিস্ট ছিলাম আমি। 
সবার সামনে প্রশংসার বৃষ্টি ছিল
সর্ব বিদ্যায় পারদর্শী
তার মাঝে কন্ঠ বিহীন ছিল
আমার ধ্বনি। 

নতুন সুরে গানের কন্ঠ,দেখবো বলে
গিয়েছিলাম ওঁদের ঘরে
গান না জানা গায়িকা বলে, 
কটু কথায় দিল তাড়িয়ে। 

যোগ্য নেই ওনাদের মতো আমার
তাই বলে হাজারো অবতারণার বোঝা আজও নিয়ে বেড়ায়। 
ওনাদের জায়গায় দাঁড়াতে পারিনি বলে, 
যোগ্যহীন ট্যাগটা দিল আমার গায়। 

রাস্তার ধারে পাথরটাকেও আঘাত করে
দিল চোখে জল, 
জীবন্ত লাশের বুক চিরে
দাঁড় করালো ওঁদের শহর। 
কোটি কোটি টাকায় চাপা পড়ে
মরছে কত অহংকার। 
আজও বুকের দম্ভ নিয়ে 
পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।

তবুও ভাগ্যের কি খেলা
মিথ্যের ছলনা সাজিয়ে, 
সবার মনে করল বিষ আমায়। 

আপনজনের আঘাতে চাপা পড়ে গেছি আমি
পিতার ছায়ার পথটুকুও
দিল করে অন্ধকার। 
মুখ ফিরিয়েছিল ওই দিন
বাবা আমার, 
চা নিয়ে গেলাম তাতেও চুমুক দিল না একবার।
সন্তান হয়ে এটাই কি পাওনা?
ওঁদের কথায় অন্ধ হয়ে
হৃদয় থেকে করল দূর আমায়। 

দোষ ছিল এইটুকু
বড়ো লোকদের সামনে দাঁড়িয়েছি। 
ওঁদের মতো পারিনি হতে অহংকারী। 
তাই তো লাঞ্ছনা, অবহেলার ঘরটা, 
দিল সবাই। 

হ্যাঁ, যোগ্যহীন আমি সবার কাছে
ঘুমোতে পারিনি টাকার উপর। 
মাটির ঘরেই খুশি আমি, 
বুক ফুলিয়ে অহংকার করিনি কোনোদিন। 
দানে পাওয়া সব কিছুই শেষ হবে জানি, 
মিথ্যের প্রাসাদ যতই সাজাও
গরিবের সুখ পাবে না চিরদিন।

সমীর ভাদুরী

সেবাই ধর্ম
                   
যার যা অভাব তার তা পূরণ করাই সেবা,
দেশের দশের সমাজের জন‍্য সুকাজ করাই সেবা।
সেবা করতে হবে নিষ্কাম নিঃস্বার্থ ভাবাবেগ নিয়ে,
সেবকের মন হবে  শিশির ভেজা পুষ্পরাশির মতো সুন্দর ।
সেবকের মন হবে শিশু মনের মতো সুশ্রী,
সেবকের মন হবে সমুদ্র এবং আকাশের মতো অসীম।
সেবা ধর্মের পরম শত্রু কাপুরুষতা স্বার্থপরতা এবং আত্মাভিমান,
সেবা ধর্ম সকল জাতিকে এক করবে,
সেবা ধর্ম সবাইকে সবার আপন করবে,
এই মহামারি কালে সেবা ধর্মের জাগ্রত রূপ সুস্পষ্ট,
সেবা ভাবনাতেই ভারতবর্ষ আবার জেগে উঠবে।

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

পা হাঁটছে পথের খোঁজে

প্রতিপক্ষহীন যুদ্ধের কাছে হেরে যাচ্ছি 
মাঠের প্রান্ত থেকে প্রান্তে শুধু দৌড় 
এক অযাচিত অসম প্রতিযোগিতা বেঁচে থাকার 
সকল স্বপ্নের সৌধে ধ্বস্ত নামে 
নিঃসম্বল হাত দুটো উপরে ওঠতে চায় 
আশ্রয় খুঁজে নিরালম্ব ছায়াপথের 
আবার লজ্জায় তা ও নেমে আসে অধোমুখী 
0আ হাঁটছে পথের খুঁজে 
চোখ দেখছে সঙ্গীহীন চরাচর। 
হৃদয়ে একাকীত্ব স্বয়ংনির্ভর 
দূরে সরে থাকার শ্লোগানে মুখরিত ক্রন্দসী 

এতদিনে নিজের কাছে নিজেই বন্দি 
এক অদ্ভুত অনুভব...
যাত্রার গতি শ্রবণ নির্ভর 
শব্দরাই বাতলে দেয় পথ 
বুঝিলাম আমি কতো অসহায় 
সারাটি যুদ্ধের পর! 

                                                                            

রুবি দেববর্মা

জন্মদিন

আমার শৈশব কেটেছে নব্বইয়ের দশকের সোনালী দিনে।
তখনই বোধহয় মধ‍্যবিত্তের ঘরে কেইক কেটে জন্মদিন উৎযাপন শুরু।
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজন, সবার বাড়িতে কেইক কেটে জন্মদিন পালনের ধুম।
ব‍্যতিক্রম কেবল আমাদের বাড়ি।

বাবার সামনে জন্মদিনের কথা বললে ভীষন চটে যেতেন।
একবার বড়দির তৎপরতায় ব্রিটেনিয়ার ফ্রুট কেইক দিয়ে আমার জন্মদিন পালিত হয়।
ব‍্যপারটা বাবার কাছে কতটুকু মনোগ্রাহী হয়েছিল জানিনা।
জন্মদিন পালন না হওয়া নিয়ে কষ্ট থাকলেও, তার থেকে বেশী কষ্ট ছিল বাবার ব‍্যবহার নিয়ে।
জন্মদিন ঘনিয়ে এলে, চোখের জলে বালিশ ভিজতো।

সময় গড়ালো।
স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি, জীবনকে বুঝতে শিখলাম।
বুঝে গেলাম, আট বছরের যে ছেলেটা চোখের সামনে বাবাকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছে, ভিটেমাটি হারা ছিন্নমূল হয়ে, রিক্ত হাতে দেশান্তরি হয়েছে, তাঁর কাছে জন্মদিন নামক বিলাসিতা, কতটা বিরক্তিকর।

কালের স্রোতে জন্মদিন শব্দটা, আমার কাছেও তাৎপর্যহীন।
দু'বছর আগে কয়েকটা ছেলেমেয়ে আমার অজান্তে, আমার জন্মদিনকে বিশেষ করার চেষ্টায় মেতেছিলো।
বিষয়টা বেশিক্ষণ চাপা থাকেনি।
দুপুর গড়াতেই শুরু হয় ফিসফাস।
কয়েকজন সহকর্মীকে বলতে শুনলাম,
এই ধরনের আদিখ‍্যেতাসম্পন্ন শিক্ষকদের জন্যই শিক্ষকদের এতো বদনাম।
কেউ এই ঘটনার জবাবদিহি করলে, বলার মতো কথা থাকবে না আমাদের কাছে।
ছাত্রদের টিফিনের পয়সায় কেনা গিফ্ট নিতে, বিবেকে বাঁধলো না নির্লজ্জটার?

বাচ্চাগুলি ভীষন গা ঘেঁষা ছিলো বলে, তাঁদের কাছে মনের কষ্টটা লোকানো গেলো না।
বলেই দিলাম,
যদি সত‍‍্যি আমায় ভালোবাসিস, আর এক টাকারও জিনিস কিনবি না আমার জন‍্য।

পরের বছরটা, দুই হাজার উনিশ।
ক্লাশে ঢুকতেই সিলিং ফ‍্যানের উপর থেকে অসংখ‍্য গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরলো মাথায়।
কোনোটাতে কলম দিয়ে আই লেখা, কোনোটাতে লাভ, কোনোটাতে ইউ, তো কোনোটাতে মেম।
বাচ্চাগুলি একসাথে চিৎকার করে উঠলো হ‍্যাপি বার্থ ডে মেম। 
পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস না, ভালবাসা দিলাম।
নেবেন তো?

ছোট্টছোট্ট সেই হাতগুলি যে ভালবাসা সেদিন দিলো, সমগ্র পৃথিবীর সম্পদ দিয়েও  তা কেনা যাবে না।
আমার কাছে সেই দিনটা অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে সারাজীবন।

শিপ্রা দেবনাথ

গয়াতে পিন্ডদান

প্রায় বারো বছর আগে, আগষ্ট মাসের শেষের দিকে আমরা পরিবারের সবাই মিলে গয়াতে গিয়েছিলাম। আমার শাশুড়ীমার পিন্ডদান করার জন্য। গয়াতে যাবার পরের দিন সকালে আমরাসবাই মন্দিরে যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম। মন্দিরে যাওয়ার পথেই পিন্ডদানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে মন্দিরে প্রবেশ করি। বিস্নুপাদ মন্দির গয়ার অন্যতম প্রধান আকর্ষন। এই মন্দিরেই পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করা হয়। ফল্গুনদীর তীরে বসেই পিন্ডদান করা হয়। পিন্ডদানের সময় পান্ডারা  মন্ত্রপাঠ করতে করতে বিরাট অংকের টাকা চেয়ে নেয়। চাঁদা আদায় এর জুলুমবাজির জন্য গয়ার পান্ডরা এমনিতেই বিখ্যাত। তারপর আমরা  পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করার জন্য ফল্গুনদীতে যাই মানুষের মুখে শুনেছিলাম যে, ফল্গুনদীতে জল থাকে না। আমরা যেই সময়ে গিয়েছিলাম তখন ভাদ্র মাস ছিল, সেই সময়ে সব নদী নালা, পুকুর, জলাশয় জলে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু ফল্গুনদীতে জল ছিলোনা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। রামায়ণে অনুযায়ী এই নদী পূর্বে প্রবাহমান ছিল। রাজা দশরথের মৃত্যুর পরে এই নদীতে শ্রীরামের অনুপস্থিতিতে সীতাদেবী দশরথের পিন্ডদান করেছিলেন। সেই পিন্ডদানের সাক্ষী ছিল ফল্গুনদী,অক্ষয়বট ও তুলসী। শ্রীরাম ফিরে এলে সীতাদেবী পিন্ডদানের কথা জানান, কিন্তু অক্ষয়বট সত্যি স্বীকার করলেও তুলসী ও ফল্গুনদী মিথ্যা   সাক্ষী দেয়। এতে সীতাদেবী অভিশাপ দেন, সেই অভিশাপের পর থেকেই এই নদীর জল শুকিয়ে যায়। এই নদীর জল মাটির তলায় প্রবাহমান। পিন্ডদানের জন্য এই নদীতে হাতদিয়ে গর্ত খুঁড়ে জল বেরকরতে হয়, সেই জলেই পিন্ডদান করাহয়। আমরাও হাতদিয়ে মাটি খুঁড়ে   জল বেরকরে পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করি। পিন্ডদান করার পর আরও অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম বুদ্ধগয়া, রাজগীর,নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, সূর্যমন্দির, পাটনা এবং জাহানাবাদের আরও অনেক কিছু জায়গায়। কিন্তু এতোকিছু ঘুরাঘুরির পরেও শুধু একটাকথা বলতে চাই যে,ফল্গুনদীর সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের খুবই একটি স্মরনীয় ঘটনা, যেটা আমি কখনো ভুলতে পারবনা।  

গৌতম মজুমদার

চুরি
     

উঠলো সেদিন হঠাত্‍ করে
কাল বৈশাখীর ঝড়,
ছুটছি মোরা আম কুড়োতে
মাঠের তেপান্তর ।

গাছের নিচে ঝড়ছে কত
কাঁচা পাকা আম,
গাছের মালিক মোদের জ্যাঠু
সেটাকি জানতাম?

কুড়িয়ে সব নিলাম মোরা
পুঁটলি ভর্তি করে,
হাসি মুখে বৃষ্টি ভিজে
আসছি মোরা ঘরে ।

বাবা তখন ঘুমুচিছল
মাথার নিচে বালিশ,
নন্দু দাদা এসেই করলো
বাবার কাছে নালিশ ।

হঠাত্‍ বাবা রাগের মাথায়
দিলো ভীষণ মার,
বজ্র বিদ্যুত গর্জে উঠে
আকাশ ছিল ভার ।

বৃষ্টি নামে চোখের মাঝে
নদী ভাসে জলে,
নন্দু দাদা এসব দেখে
ভয়ে গেল চলে ।

আমের পুঁটলি আমায় ধরে
বাবা ছাড়ে ঘর,
জ্যাঠুর কাছে মাফ চাওয়ালো
ফেলে পায়ের ' পর ।

সকল কথা শুনে জ্যাঠু
বুকে নিলো মোকে ,
প্রচুর আম দেবার পরে
ঝড় থেমেছে বুকে ।

বাবার কথায় জানতে পারি
এটাই নাকি চুরি,
কাউকে কিছু না জানিয়ে
যদি কিছু ধরি ।

আক্তার হোসেন

দেখতে চাই

তুমি দেখতে চাও আমাকে কাছ থেকে অনেক কাছে, 
আমি দেখতে চাই অনাবিল দূর থেকে দূরান্তে। 
তুমি দেখতে চাও আমাকে তোমার হাতে বসে থাকা এক পাখির মতো, 
আমি দেখতে চাই দূর আকাশে ক্রমাগত উড়তে থেকে। 
তোমার স্পর্শটা যেনো আমার কাছে অমাবস্যার চাঁদের মতো হয়ে থাকুক। 
যখনি তুমি আমার মুখপানে চেয়ে দেখবে তোমার মনে যেনো জোয়ার, ভাটার মতো ঢেউ বয়ে বেড়ায় 
আমিতো সেটাই চাই। 
তুমিতো দেখতে চাও আমাকে গোধূলির শেষে সন্ধ্যার আঁধারে জোনাকিপোকার আলোর মতো, 
আমিতো দেখতে চাই রাতের আধারে দূর আকাশের নক্ষত্রের মতো। 
তুমি দেখতে চাও তোমারই আঙিনায় থাকা কুমোড়ের ফুলের মতো, 
তুমি দেখতে চাও আমাকে খুবই কাছাকাছি, 
আমার জন্য সীমাবদ্ধ তোমার আঁকি।


অতনু রায় চৌধুরী

 দাগ

জীবন পথে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে বড় হয়ে উঠা এক মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে আমি। নিত্য দিনের অভাব আর অপূর্ন ইচ্ছেগুলোর মাঝে নিজেকে শান্ত রাখতে ভালো ভাবেই শিখে গিয়েছিলাম খুব তাড়াতাড়ি। কিন্তু সেই স্কুল জীবন থেকে গড়ে উঠা আমার এক স্বপ্ন যে স্বপ্নকে আজ ও ভুলে যেতে পারি নি। সেই স্বপ্নপূরণের তাগিদেই স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে যে বিষয়ে পড়াশোনা করলে আমার স্বপ্নপূরন হওয়া সম্ভব সেই বিষয় নিয়ে ভর্তি হয়েছিলাম। কলেজের অপরিসীম আনন্দ আড্ডাতে বন্ধুদের সঙ্গে নিজের অজান্তেই ভেসে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রতি সেমিস্টারে বেশ ভালো নম্বর পেয়ে যেতাম। ভালো নম্বর দেখে আমি আমার স্বপ্নপূরণ করতে পারব সেই বিষয়ে একদম নিশ্চিত ছিলাম। অন্যদিকে আমার কলেজের স্যার ম্যামেরাও আমার সেই স্বপ্নের চাকরি পেয়ে যাব বলে অনেকেটা আশা রাখতেন আমার উপর। কলেজের বন্ধুরাও ধরে নিয়ে ছিল কলেজ শেষ হলেই আমার স্বপ্নের চাকরি নিশ্চিত হবেই। ধীরে ধীরে কলেজ জীবন শেষ হয়ে দুই বছর পেরিয়ে যাবার পর অবশেষে সেই স্বপ্নের চাকরির বিজ্ঞপ্তি বেড়িয়েছে বলে খবর দিল আমার বাবার এক শুভাকাঙ্ঘী। তারপর সময় মতো সেই চাকরির পরীক্ষা জন্য আবেদন করতে সাহায্য করেছিল বাবার আর ও এক শুভাকাঙ্খী এবং তারপর আমি আমার কলেজ থেকে কিছু বই নিয়ে এসে বাড়িতে সেই স্বপ্নের চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করলাম।  চার মাস পরে সেই চাকরির পরীক্ষার দিনে প্রশ্নপত্র দেখে নিশ্চিত মনে পরীক্ষা দিয়ে ভেবেই নিয়েছিলাম আমার স্বপ্ন সত্যি হতে চলছে। তারপর বহু অপেক্ষার পর হঠাৎ এক সন্ধ্যায় অনলাইনে ফল প্রকাশ হতেই দেখতে পেলাম সেখানে আমার নাম নেই। সেই রাতের প্রতিটি মুহূর্ত আমি কীভাবে ছিলাম তা আমার মনে আজ ও এক গভীর দাগ কেঁটে রেখেছে।

সৌরভ শীল

সময়ের প্রতিদান
                        
সময় তাকেই দিও...
যে সময়ের মূল্য বোঝে।
সে হয়তো সুখে দুঃখে তোমায় খুঁজে,
সহানুভূতি তার নিও...
যে তোমাকে বুঝে
তোমার এক পলকে চাওয়ায় মনের কথা বোঝে।
ভালবাসা  তাকে দিও....
যে নিজেকে ভালবাসতে জানে।
যে নিজের মধ্যে নিজেকে চেনে।
সম্মান তাকে দিও...
যে নিজেকে সম্মান করতে জানে
সে নিজের মনের গভীরে অন্তরাত্মাকে মানে।
আশা কার কাছে রেখো.....
যে নিজেকে আলোকিত করতে জানে।
আশার আলো কে নিজেকে জাগিয়ে রাখে,
নিজের মধ্যে স্বচ্ছ চিন্তা থাকে।
চলে যাওয়ার সময় আর কি ফিরে পাবে
এই সময়ে বাঁচো 
তবেই তো সময় এর প্রতিদান পাবে...
সুন্দর সময়ের স্মৃতি মনের ডাইরিতে রয়ে যাবে।
                       

কবিতা সাহা

মৃত্যু শোক
         
দাদু তুমি জানো?
আজ তোমার কথা মনে পরছে খুব ।
আচ্ছা দাদু শোনো,
এখন তুমি কোন আকাশের তারা?
পশ্চিম না পূব?
এখন তুমি কোথায় দাদু?
দাও না একটু সারা,
আজও আমি অসম্পূর্ণ 
দাদু তোমায় ছাড়া।
কোথায় তুমি লুকিয়ে আছো?
দেখি না কেন আর!
তোমায় ছাড়া জ্যোৎস্না রাতো
লাগে যে অন্ধকার ।
আজও তুমি স্মরণীয় 
আমার মনের কোনে,
কোনোদিনও ভুলবোনা দাদু 
তোমায় এ জীবনে ।
সালটা ছিল দু'হাজার পনেরো
আর মাসটা নভেম্বর,
চিরতরে তুমি বিদায় নিলে, 
আধার করে ঘর।
দাদু!দাদু! হাজার ডাকেও,
দিলে না কোনো সারা;
শেষবার তোমায় দেখার জন্য,
সবাই উঠোন করলো ঘেরা।
অবুঝ মন তখনো দাদু দাদু বলে
ডাকছিল বারবার!
ততক্ষণে মায়ার বাঁধন ছিন্ন করে,
তুমি ত্যাগ করলে সংসার।
চারদিকে সেদিন মৃত্যুশোকে,
সবাই করছিল হাহাকার!
প্রিয়জনদের চোখে নোনাজল,
আর মুখে ছিল চিৎকার।
তা দেখেও
কালবৈশাখীর প্রাক্ মুহূর্তের মতো,
নিশ্চুপ ছিলাম আমি ।
একে একে মনে পরছিল সব ঘটনা,
আর তোমার সাথে করা
 ছোটোখাটো দুষ্টুমি।
যে দাদু আমায় দেখতে না পেলে
 হতো দিশেহারা,
সে দাদুই সেদিন নীরবে শুয়েছিল, 
যেন হয়ে সর্বহারা।
সেদিন আমি 
তোমার মুখপানে তাকিয়ে ছিলাম, 
অপলক দৃষ্টিতে।
আর ভাবছিলাম, 
দুজনে মিলে কতই না আম কুড়োতাম,
ঝড়-তুফান আর বৃষ্টিতে।
সেসব কথা ভাবতে ভাবতেই;
নীরবে পুড়ে ছাই হচ্ছিল বুক,
ততক্ষণে তুমি পুষ্পচন্দনে সেজে উঠেছিলে,
আর সবাই পড়ছিল গীতার শ্লোক।
এরপর তুমি আরাম করে  কাঁধে চড়ে;
হরি নাম শুনতে শুনতে,
চলে গেলে শ্মশানে।
হাসিমুখে বিদায় নিলে,
আর শূন্যতা সৃষ্টি করে গেলে;
সবার মনে!
জানো দাদু, আজ পাঁচ বছর পরও,
আমার মনে তোমার উজ্জ্বল উপস্থিতি।
খুব যত্ন করে আগলে রেখেছি,
তোমার লাঠি, শাল ও ফ্রেমবন্দি স্মৃতি ।
এখনো তোমার চেয়ারটা 
একি রকম আছে,
একবারটি ফিরে এসো দাদু,
লক্ষ্মীটি আমার কাছে ।

রূপালী মান্না

অগোচরে


জীবন জুড়ে ক্ষতের পাহাড় 
          হাসির প্রলেপ মাখি ।
          দৃষ্টির ভাঁজে বৃষ্টি জমে 
যা -     অগোচরে রাখি । ।

          মনের আয়নায় মুখ দেখলে যে 
           দাগগুলোই চোখে পরে । 
           এমন কোন ক্রীম কি নেই ? 
যাতে  - মনের ক্ষত সারে । ।

           অপমানের উচ্চস্বরে 
           গাইলি কোরাস সপ্তম সুরে । 
           স্বপ্ন হলো উড্ডীয়মান 
           যন্ত্রনারই বায়ুস্তরে । ।

          জীবন ঘরে তোর দুয়ারে 
           শান্তিটুকু কাম্য ছিল । 
           সবটুকু ধ্যান উজার করে 
           এটাই কি আজ প্রাপ্য ছিল ?

           বাস্তবতার ভিড়েতে আজ 
          আবেগ গুলো মানছে যে হার । 
          সিদ্ধান্ত দাঁড়ায়ে সম্মুখ 
          কবিত্ব আজ জীবনবিমুখ । ।

অসীম দেববর্মা

শেষ ইচ্ছা

জন্মদাতা - জন্মদাত্রী তোমরা কোথায়? 
দেখতে খুব ইচ্ছা করছে তোমাদের,
খুকী ডাকে কান ভরিয়ে দেওয়ার জন্যই একবার ফিরে এসো, 
মেকি  কান্নায় চোখ ভাসিয়ে বলবে আমাকে তোমরা ভালোবাসো! 
ক্ষণিকের আনন্দে ভুলে ছিলে
নতুনের সৃষ্টি দুই দেহ মিললে, 
জন্মের পর ডাস্টবিনে রেখে গেলে
জীবনের ঘরে কিছু সময় বাকী ছিল
তাই দেব দূতেরা কোলে তুলে নিল। 
দিন ভালোই যাচ্ছিল
হঠাৎ দেহে দুরারোগ্য রোগ ধরা দিল! 
কী বা-ই আমার বয়স 
দশ পেরুলেই নিঃশেষ জীবনের আয়েশ, 
সারা দেহে বিষময় জ্বালা - যন্ত্রণা
মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না একটু সান্ত্বনা। 
হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দেখি অন্য রোগীদের সবাই আসে
দেব দূতরা তো আছেই, 
কিন্তু মনে সাধ জাগে যাওয়ার সময় তোমরা থেকো পাশে! 
                         

সৈকত মজুমদার

এখনো ভাবায়

         চতুর্থ শ্রেণীর শেষ মুহূর্ত , বার্ষিক পরীক্ষা অনাগত । শ্রেণীকক্ষ স্বল্পতার জন্য তখন প্রাথমিক বিভাগের ক্লাস মর্ণিং সেসন এ চলতো। আমার স্কুলে আসা যাওয়ার দুটো রাস্তা । স্কুল সংলগ্ন নলুয়া ছড়া হয়ে আলপথ, নতুবা নলুয়া বাজার হয়ে মেইন রোড। 

         একদিন স্কুল ছুটির  পর সহপাঠীদের সঙ্গে বাজার হয়ে বাড়ির  উদ্দেশ্যে রওনা  হই। উপর বাজার আসতেই দেখি- ওপেন শেড এর এক কোণায় বসে এক পাগলী ভাত রান্না করছে মাটির  হাঁড়িতে। অনেকদিন আগেই শুনেছি, পাগলীর আগমনের খবর । তখন থেকেই দেখার জন্য উৎসুক ছিলাম । যাইহোক, আজকে প্রত্যক্ষ করলাম; আমরা সবাই দূর থেকে ভয়ার্ত চোখে দেখছি । আর পাগলী বিড় বিড় করে কি সব বলছে। একদম অস্পষ্ট । 

         এক সময় কৌতূহলবশতঃ আমি আস্তে আস্তে ওর ভাতের হাঁড়ির কাছাকাছি চলে যাই। এমন সময় আমাদের মধ্যে কেউ একজন দূর থেকে একটা ঢিল মারে হাঁড়ি লক্ষ্য করে এবং সবাই এক দৌড়ে পালিয়ে যায়। আমি কিছু বোঝে ওঠার আগেই চোখের পলকে পাগলী তার বসার আধলা ইট হাতে নিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসে! এক হাতে ইট অন্য হাতে আমার গায়ের  জামা আঁকরে ধরে ! মুহূর্তে আমি স্তম্ভিত , বাকরুদ্ধ (!) ভয়ার্ত স্বরে শুধু বলছি- “আমি মারিনি,,,,,” কিন্তু, পাগলী সেই কথা কিছুতেই  বুঝতে চাইছে না। বরং অগ্নিময় রূপ নিয়ে বলছে- “আর মারবি ??”

       আমার প্রাণ ওষ্ঠাগত ! এমন সময় একজন দোকানদার দৌড়ে এসে পাগলীর হাতের  ইট কেড়ে নেয় এবং আমাকে ওখান থেকে পালাতে বলে। 

সৌরভ দে

সংসার-সম্পর্ক

আমরা বর্তমানে আধুনিক সমাজব্যবস্থা এবং পুরাতন সমাজব্যবস্থার ভিতর অসংখ্য অনৈক্য এবং স্বল্প পরিমান ঐক্যের সন্ধান পাই। কবি বলিয়াছেন, 'কাঁচা এবং পাকার মধ্যে সর্বদা এক সংঘর্ষ চলিতেই থাকিবে'। তবে আজকে আমি লিখিব আমার দৃষ্টিগোচর এক বিরল পারিবারিক চরিত্র প্রসঙ্গে, যাহা খুজিয়া পাইতে মুশকিল।

     নিমাইবাবু, চল্লিশ বৎসর বয়সে বৈবাহিত জীবনে আবদ্ধ হইয়াছেন। চার পুত্র-কন্যা, স্ত্রীকে লইয়া তাহার সংসার। এইখানে নিমাইবাবুর চরিত্র চলিতমান সমাজচরিত্র হইতে সম্পুর্নরুপে ভিন্ন। তাহার পরিবারের নিত্যদিনের সাথী ছিল 'কলহ'। একমাত্র এই উপসর্গ ছিল তাহার বড়ো কু-অভ্যাস, যেটার দরুন সমাজ ছিল তাহার প্রতিদ্বন্দ্বী। নিমাইবাবুর ভু-সম্পত্তি আশাতীত থাকিলেও, আয়ের কোন প্রকার উৎস থাকিল না। যাহার দরুন আর্থিক দুর্বলতা তাহার একপ্রকার নিত্যদিনের সঙ্গী। তাহার জীবনের সর্বাপেক্ষা বড়ো প্রতিবন্ধকতা হইল তাহার নিম্নমানের ব্যবহার, যাহা উনাকে গোটা জগৎ হইতে ভিন্ন করিয়া রাখিয়াছে। উনার হীন চিন্তন প্রক্রিয়া গোটা এক উদীয়মান প্রগতিশীল পারিবারিক জীবনকে চরম অন্ধকারে নিমজ্জিত করিয়া দিল। বস্তুত এই বাক্য বলিলে সঠিক হইবে যে, ওই অন্ধকারময়  জীবন গুলিতে প্রারম্ভে কখনোই অভ্যন্তরীন স্নেহ-মায়ার রশ্মি পতিত হয় নাই। যাহা হইয়াছে তাহাকে বিমুখ করিবার যথেষ্ট উপকরনও উপস্তিত ছিল। এই সন্ধিক্ষন হইতে পৃথক হওয়া সম্ভব, পরন্তু সেইটা এক জটিল বিষয়।

     এইখানে আমি বলিব, একটি পরিবার কিংবা মনুষ্যে মনুষ্যের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য বন্ধনের এক শ্রেষ্ঠ উপায় হইল পরস্পর পরস্পরের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন। আমার মনে হয় ইহা অবলম্বন করিলে একে-অন্যের প্রতি অথবা পারিবারিক জীবনে বা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ায় হিংসা-বিদ্বেষ স্বল্প মাত্রায় হইলেও লাঘব হইবে। এই বাক্য সঠিক যে মনুষ্য অর্থকে অধিক গুরুত্ব প্রদান করিয়া থাকে। বস্তুত এইপ্রকার ধারনা মনুষ্যকে একপ্রকার যান্ত্রিক মনুষ্যে পরিণত করিতে পারে। মনুষ্য যদি ভাবিয়া থাকে যে, সে বৃহত্তর জীবনে অংশগ্রহন করিবে, সমাজ জীবনের এক বড় কার্য পরিচালিত করিবে তবে সেটার প্রারম্ভ তাহার ক্ষুদ্র পরিবার হইতে এবং তাহার আঙ্গীনায় ক্ষুদ্র সামাজিক পরিবেশ থেকে।

প্রণব দাস

সেদিনের কথা
              

আজ ডায়েরি কলম হাতে একাকী বসে ভাবছি কিছু একটা লিখবো। হঠাৎ স্মৃতির দরজায় এসে দাঁড়ায় সেদিনের কথা। তখন আমি ক্লাস ইলেভেনে।সন্ধ্যা রাত্রি চলছে। আমি একলা বারান্দায় বসে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে সিওসি খেলছিলাম। গেমের নেশায় বড্ড আশকতো ছিলাম। আর সিওসি মানে তো ভালোবাসা। হঠাৎ পার্থ স্যারের ফোন পেয়ে হতচকিত হয়ে উঠি। গেম ছেড়ে ফোন ধরলাম।

-'শুভ সন্ধ্যা স্যার।'
-'শুভ সন্ধ্যা। আসলে তোর সাথে একটা কথা ছিল তার জন্য ফোন করা।'
-'হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার অবশ্যই।'
-'বলছিলাম কি কাল ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এর উদ্যোগে আমাদের বিআরসি হলে সাব ডিভিশন লেভেল একটা বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। তুই কি সেখানে অংশগ্রহণ করতে চাস?'
-'অবশ্যই স্যার। কিন্তু টপিক কি?'
-'ওয়াইল্ডলাইফ ভার্সেস ডেভেলপমেন্ট।'
-'ঠিক আছে স্যার।আমি বিষয়টির পক্ষে বিতর্ক করবো।'
-'ঠিক আছে। তাহলে আমি রাখছি।'

এই বলে স্যার ফোন রেখে দেয়। পরেরদিন সকালে স্নান সেরে আমি রেডি স্কুলে যাবো বলে। বন্ধু তুষার আমায় নিতে আসে। আমরা প্রতিদিন একসাথেই স্কুলে যাই। দুপুরে প্রতিযোগিতা শুরু হবে। মনে একটু ভয় এতো ভালো প্রিপারেশন নেই। অনেক প্রতিযোগীকে দেখে ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। সত্যি কি আমি পারবো? সাহস দেয় বন্ধুরা, প্রদীপ স্যারও মোটিভেট করেছে।কিভাবে বলতে হবে,বলছিলো তুই পারবি। বিতর্ক শেষে রেজাল্ট দেবে আমি একটু এক্সাইটেড ও ভয়মিশ্রিত মন। ঘোষণা হয় আমি প্রথম হয়েছি। কম্পিটিশন খুব টাফ। এখন যেতে হবে ডিস্ট্রিক্ট লেভেলে। কয়েকদিন পর  তেলিয়ামুড়া ডিস্ট্রিক্ট লেভেল কম্পিটিশন হয়। সেদিনও প্রথম হই। সুযোগ পাই স্টেট লেভেল প্রতিযোগিতায় যাওয়ার। কয়েকদিন পর প্রতিযোগিতা হবে। মাঝে কয়েকদিন হাতে সময় আছে। ততদিনে আমি দারুণভাবে প্রস্তুত। প্রতিযোগিতার দিন সকালে গাড়ি আসে। যেতে হবে সিপাহীজলা। সেখানে সব ডিস্ট্রিক্ট-এর পার্টিসিপেন্ট আসবে। সেদিনও মনে খুব ভয়। শুরু হয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা। প্রতিযোগিতা শেষে এখন ফলাফল ঘোষণা করার পালা। সাথেই পার্থ স্যার ছিল। খুব ভয় করছিল,কি জানি হবে। কিছুক্ষণ পরেই ঘোষণা হয় আমি প্রথম হয়েছি। খুশিতে ফোন করি প্রদীপ স্যারকে,'স্যার আমি প্রথম হয়েছি।'
তারপর ফোন করি বাড়িতে, বন্ধু তুষারকে, মামার বাড়ি, মাসির বাড়ির সবাইকে জানিয়ে দেই। সবাই খুব খুশি আমার ফোন পেয়ে। মনের আনন্দে আজ গেম নয় আমি সবাইকে ফোন করছি। সেদিনের কথা আজও আমায় বারেবার ডুবার অনন্তে।

দিপ্সী দে

 মন্থন 

আমার জীবনে স্মরনীয় বলে আলাদা করে কিছু নেই সবটাই বরণীয়।

প্রতিবার যখন বাবার জলের গ্লাসে জল ঢালি
মাঝরাতে মায়ের পায়ে সর্ষের তৈল লাগাই

নয়তো পকেটে হাজার টাকা রেখে হেঁটে বাড়ি চলে আসি
জীবনবোধ আমার জীবন দিয়ে হবেনা 
ঘুম থেকে উঠি বারোটা।

জীবনের সাথে খেলতে খেলতে আজ আর মাঝপথে থামি না।
জল খেতে ভুলে গেলেও বাবার ঔষধ কিনতে ভুলি না।
রাস্তার পাগল ও হার মানবে পাগলামিতে 
তবে মায়ের চিন্তার আবডালে সিরিয়াস হতে ভুলি না।

ওসব স্মরনীয় কিছু নেই সবটাই বরণীয়।

তনুজা রায়

অষ্টাদশের সুখটানে অষ্টাদশী

আজ দুবছর হল শ‍্যামলাল চাকরি থেকে অবসর।
পঞ্চাশ বছরের বিবাহিত জীবনে সংসারের  ব‍্যস্ততায় তেমন করে কোথায় ঘুরতে যাওয়া হয়নি।
 ঈশ্বরের কৃপায় ছেলে মেয়ে এখন নতুন জীবন সাজাতে ব‍্যস্ত!বড্ড একা মনে হল তাই শ‍্যামলাল ঠিক করল কোথায় ও একটা ঘুরতে যাবে। গিন্নি কে  সেই কথা বলতে গিন্নি  রণচন্ডীর মত ক্ষেপে গিয়ে বলল ও সব হবে না আমার গোপাল কে খাওয়া বে শুনি! শ‍্যামলাল তখন মুখ ভার করে বসে সিগারেট খেতে শুরু করল..... মনে পরতে লাগল  সেই স্কুল ছুটি র  গ্রীষ্মের দুপুরে  সরমা সাথে বসে আড্ডায় ব‍্যস্ত।  সরমা সিগারেট খাওয়া টা একদম পছন্দ করত না, বলত সামনে উচ্চমাধ‍্যমিক  সিগারেট খেতে খেতে  রোগ বাধিয়ে তবেই ছাড়াবে নাকি, দুজনে প্রায় সমবয়সী ছিল কিছু নিয়ে গেল থাকত।তবে শ‍্যামলালের গিন্নি সিগারেট খাওয়া নিয়ে কোন সুবিধা নেয়। সিগারেট টা শেষ হতে না হতে শ‍্যামলালের স্ত্রী বলে উঠল চল তবে ঘুরেই আসি।তবে কোথায় যাবে শুনি!  শ‍্যামলাল বলল আগে বাড়ি থেকে বের হয়। তারপর দু জনে গিয়ে উঠল র্দাজিলিং সেখানে একটি ছোট্ট কটেজে। একদিন কেটে গেল নিজেদের কে ঘুছিয়ে নিতে পরদিন 
সকালে শ‍্যামলাল বাইরের  পরিবেশ  একটু ঘুরে দেখার জন‍্য একায় বেরিয়ে পরল...... শ‍্যামলালের কটেজের ঠিক উল্টো দিকে এমনি এক বয়স্ক দম্পতি এসে উঠেছে। তবে সেটা শ‍্যামলালের অনেক দিন আগে ! ঘুরতে ঘুরতে একটা জায়গায় শ‍্যামলাল বসে আবার একটা সিগারেট ধরিয়ে নিল তবে আজ মুখ দিয়ে সিগারেট টান  টা যেন দীর্ঘ দিনের  ক্লান্তির আবসান করিয়ে যেন সুখ টানে পরিণত হল এমনি সময় উল্টো দিকের কটেজে থাকা সেই বয়স্ক ব‍্যাক্তি শ‍্যামলাল কে অনুসরণ করতে করতে তার কাছে এসে বসল, বল দেশলাই হবে শ‍্যামলাল দেশলাইটা পাজামার পকেট থেকে বের করে দিল। সিগারেট টা ধরিয়ে নিয়ে  নিজে থেকে  ওই লোক টি বলতে লাগল   আমার নাম  রামমাধব  রিটায়ার্ড র্কনেল আর  বলবেন না ভাই ঘরের গিন্নি সিগারেট খাওয়া পছন্দ করে না তাই দেশলাইর ও ঠিক  থাকে না।   এভাবেই দুজনের মধ্যে   গল্পের শুরু নানা  দেশের কথা,ঘরে কথা,ছোট বেলার নানা ঘটনা ঘরের ফেরার  কথা 
প্রায় ভুলে গিয়েছে .....  দুজনে। তখন  র্কনেল রামমাধবের ঘর থেকে  ডাক আসল দুপুরের খাওয়া  জন্য তারপর গল্প শেষ টেনে দুজনেই ঘরে দিকে ফিরল....   দু-তিন দিন এমনি করে কাটলো...।
তারপর আবার  রামমাধবের সাথে শ‍্যামলালের দেখা। সেদিন রামমাধব বল বন্ধু আজ চলুন আমার ঘরে আমার বৌ  বিরিয়ানি  রেঁধেছে 
আজ আপনাকে সঙ্গে নিয়ে খাব  শ‍্যামলাল বল আজ না বন্ধু  আমি খাওয়া দাওয়া করে 
বেড়িয়েছি আর নিতে পারবো। কিন্তু রামমাধব কিছুতেই ছাড়ার পাএ  না সেটা বুঝতে পেরে শ‍্যামলাল আর কথা বারালো না রামমাধবের কটেজে গিয়ে উপস্থিত হল বেডরুমের মত ছোট্ট রুমে শ‍্যামলাল কে বসিয়ে রামমাধব রান্না ঘরে গেলেন গিন্নি নিয়ে আসতে  শ‍্যামলালের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া জন‍্য। শ‍্যামলাল পাশে ঘরে বসে  অপেক্ষায় করছে অমনি সময়  রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে আসল রামমাধবের স্ত্রী,পড়নে ছিল  সাদামাটা একটি সিল্কের শাড়ির  শ‍্যামলাল রামমাধবের স্ত্রী মুখের দিকে তাকানো মাএই তার  সুগার টা যেন চট করে বেরে গেল। সেই অষ্টাদশী 'র সরমা মুখ টা ভেসে উঠল........... কিছুইতে  মন থেকে মেনে নিতে পার ছিল না,যে ও সরমা হতে পারে ...।রামমাধবের স্ত্রী যেন শ‍্যামলালের মুখের দিকে তাকিয়ে  কিছু একটা খোঁজার চেষ্টা করে চলছে........সেদিন রাতে আর  ঘুম আসল না চোখে  ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় দাড়িয়ে  সিগারেট টা ধরিয়ে নিলেন  কিন্তু তার  টান টা আজ আর  সুখ টানে  পৌছতে পারে নি..." রাতের আকাশ যখন নিস্তব্ধ হয় ' এই নিস্তব্ধতা ভেঙ্গে  মাঝে মাঝে ঝিঝিঁ পোকা ডাকে' বাঁকা চাঁদ উকি মারে মেঘের ভেলার ফাঁকে... তেমনি  অষ্টাদশী সরমা যেন  আজ আবার  সমানে ও এসে সিগারেটের ধোয়ার মতো মিলিয়ে গে আঁখি পাতে।
 

অনুপম রায়

গল্প

তখন। আরে তখন।। যখন বইয়ের সাথে কাটাকুটি খেলা হত।কোনো একটা কারণে বাবা-মা দুজনেই একপক্ষে আর অন্যপক্ষে আমি। বয়স সম্ভবত সাড়ে পাঁচ। রাগ হয়েছিল।অনেক রাগ। রাগের বশে সিদ্ধান্ত নিয়েছি বনবাসে চলে যাব। কিন্তু বন নাই। কী করা যায়?অনেক ভাবার পর মাথায় আরেকটা প্ল্যান এল।

বনবাসে আর যাব না। আমার যে পাঁচ নম্বর সাইজের ফুটবল টা আছে ওটাকে বালিশ বানিয়ে খাটের নীচে লুকিয়ে থাকব।।দীর্ঘ দুই বছর আমায় কেউ খুঁজে পাবেনা। এই দুইবছর আমি এখানেই কাটাবো। মা-বাবা আমায় অনেক খুঁজবে। খুঁজে না পেয়ে খু্ব কান্না করবে। তারপর দুইবছর পরে আমি বের হব।  আমায় 
দেখলে অনেক চকলেট, চিপস কিনে দেবে। 

আর দেরি না করেই প্ল্যান মত কাজে নেমে পড়ি। এখন আমি খাটের নীচে। কোনো মানুষজন নাই। আমি একলা মানুষ একটা খাটের নীচে। খাটের নীচে অন্ধকার। অন্ধকারে আমায় কেউ খুঁজে পাবেনা। মাথার নীচে ফুটবলটাকে বালিশের মত সেট করে দিলাম একটা ঘুম।

দু'ঘন্টা শেষ হয়ে গেছে। কেউ এখনো আমায় খুঁজতে আসেনি। প্রচন্ড ক্ষুধা লেগেছে। ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী ক্ষুধাময়। তবুও বের হওয়া যায় না। মান সম্মানের একটা ক্লাস আছেনা! লোকে দেখলে কী ভাববে !কিন্তু ক্ষুধার কী হবে?

দূর থেকে আইসক্রিমওয়ালার শব্দ। পঁত পঁত বাঁশির আওয়াজ। এ এক অদ্ভুত আওয়াজ। কখনো বিরক্তি লাগেনা। বেরিয়ে দৌড় দিয়ে ছুটে গেলাম মায়ের কাছে।মা একটা আইসক্রিম কিনে দিল। দাম দশ টাকা।

আমি আইসক্রিমটা খাওয়া শুরু করলাম। আইসক্রিমটা ছিল লাল রঙের।অনেকটা কমলার ফ্লেবার। কী যে মিষ্টি আইসক্রিম। পৃথিবীতে যে কত রকমের তৃপ্তি আছে তা বোঝা দায়!

আইসক্রিম খাওয়ার পর এখন আমার ঠোঁট মুখ লাল। জিহ্বাও লাল। এখন কী আবার চলে যাব খাটের নীচে? না থাক। আর যাব না।  আমার মান সম্মানের ক্লাসে এখন আইসক্রিমের রঙ। মানুষেরও অনেক রঙ। রঙে রঙে একাকার। ঠিক কি না?

অনুপম দেব

পাগলামী

কোন ব্যক্তির জীবনের সাফল্য ও ব্যর্থতার মাঝে ফারাক এনে দিতে পারে ছোট একটি পাগলামি।

হ্যাঁ, পাগলামি।

জীবনের কোন একটা সময়ে পাগলামি করে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত জীবনটা বলদে দিতে পারে। আপনি যদি কোন সিদ্ধান্ত নিতে সময় নষ্ট করেন তা জানি না, তবে হঠাৎ করে কিছু করে ফেলার সিদ্ধান্ত আপনার জীবন চিত্র পাল্টে দিতে পারে।

আমি যদি পাগলামি করে একগম শেষ মিনিটে বি.এড কোর্সে ভর্তি না হতাম তবে এই সাহিত্য মহলের সাথে যুক্ত হওয়া ও একটি সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে পারলাম না হয়তো।

বিকেল 3.35 পর্যন্ত ভর্তি না হওয়ার ভাবনায় অনড় ছিলাম, কিন্তু 3.36 এর আগেই সিদ্ধান্ত নেই ভর্তি হবো।

তারপর ভর্তি হয়ে যাই। না হলে হয়তো নিজেকে হারিয়ে ফেলতাম কিছুটা সময়ের পর।

তাই জীবনের কোন প্রধান সিদ্ধান্ত পাগলামিতে নিতে হয়। জীবনের গতি প্রকৃতি বদলে দিতে পারে একটা পাগলামি।

সমীরণ বিশ্বাস

পরশ 

যখন মনে পরবে তোমায়,
তুমি আছো সেথায় সেথায়
আমারো মনের গভীর গহনে
মনের পটে আঁকা ক্ষণে ক্ষণে।

সেইদিন কোমল পরশে তোমার
অঙ্গ আমার উচ্ছসিত।
মন বলেছিল ক্ষণে,
তোমারে রাখি জড়ায়ে যতনে 
এ সুন্দরী নাহি আর এি-ভুবনে।

দিন-রাত হয়েছিল একাকার,
তন্দ্রা গিয়েছিল ঘুচে
এমন কোমল পরশের প্রহার,
জীবনে হয়তো নাহি পাবো আর।

তুমি কোমলতায় বিলীন, 
থেকেছো স্তব্দ
না দিয়েছো সাড়া,
তবুও তোমাতে মন দিশেহারা,
তোমারে ভুলা যায় না 
আমারো মনের পটে তুমি এক জীবনের ধারা।

ফিরবে কী কখনো ?
তোমার পরশ লাগি যদি মোর হৃদয় হয় উতলা।
উদবেলিত হয় মোর অঙ্গ যদি,
পাওয়ার তোমার সঙ্ম

ন হাসে,
আমারো ভাগ্যের পরিহাসে।
তোমাতে খেয়েছে যে দোলা,
চারিদিকে একই শব্দ,
হবেনা তোমাকে ভুলা 
যায়না ভুলা।
তোমারো লাগি রাত্রি জাগি
 কত রাএি হয় পার,
 ছবি তোমার ভেসে উঠে 
 আমি তোমাতে থাকি,
 ওই দুটি আঁখি।
ভেসে উঠে আমারো ভাবনার গহনে 
পলকে যায়না ফেলা চারিদিকে মোর আঁখি জুড়ে,
তোমার আঁখি ঘুরে।

চাউনিতে হয়েছিলাম মুগ্ধ
মনোরম দৃশ্য।
যেন কালো মেঘের ছায়া ঘুচল,
এ কী করেছো উতলা
তোমারে যায়না ভুলা, যায় না ভোলা।

প্রিয়াঙ্কা শীল

দোষী 

হ্যাঁ, সত্যিই আমি দোষী! 
কিন্তু সেটা শুধু তোর জন্যে।
কখনো দোষী হয়েছি -
তোকে নিয়ে অনেক বেশি 
 ভাববার জন্যে।
    
আবার কখনো দোষী হয়েছি-
তোর সাথে একটু কথা 
কথা বলার চাহিদায়।
দোষী হয়েছি -
তোর মধ্যে নিজের 
ভবিষ্যত পরিকল্পনা করে ।
    
দোষী হয়েছি -
তোর দুঃখের সময়ে তোর 
কাছে থাকতে না পেরে ।
দোষী হয়েছিলাম -
তোর গালভরা হাসিমুখটি 
দেখার জন্যে।
    
 দোষী হয়েছি-
 তোর সাথে শহরের বাইরে, 
 কোনো এক নির্জন গ্রামে 
 ঘোরার বাহানায়।
    
কোনো রেস্তোরাঁ বা কোনো হোটেল নয়,
রাস্তার পাশে ফুচকা আর চা কাকুর সেই চা,
তোর সাথে এ দুটোতেই অনেক খুশি খুঁজে পেতাম ।

কোনো দামি বাইক বা গাড়ি নয়,
শুধু তোর হাতটা ধরে ঘুরতে চেয়েছিলাম ,
আর তোর কাঁধে মাথা রেখে গল্প করতে চেয়েছিলাম।

আমার এসবের জন্য হলাম আমি দোষী।
দোষী হবার কারণটা ছিলি শুধুই তুই।
কারণ, আমি যে সবসময়ই তোর মনে আমার উপস্থিতিটা চাইছিলাম ।

তুই যে ছিলি আমার -
হাসিখুশির একমাত্র কারণ,
আমার আনন্দের মুহূর্তের সঙ্গী।
আমি কি আর কোনোদিনও-
তোর দেওয়া সেই কলঙ্কিত নাম দোষী 
থেকে নিজেকে কলঙ্কমুক্ত করতে পারবো না? 
হতে পারবনা আর তোর  স্বপ্নপরী ?
তোর উত্তরের আপেক্ষায় - আমি তোর দোষী ।

জয়ন্ত শীল

জীবন যুদ্ধ 

...তারপর, রোদ থেকে আগুনগুলো খুলে নিয়ে 
চোখের সাথে মিশিয়ে দিলাম, 
ওরা কথা বলতে পারে নি! 

পৃথিবী জেগে ওঠার পর, 
আমি লিপির অক্ষরগুলোকে তাবিজ বানিয়ে 
সমুদ্রে ফেলে দিলাম। 

স্পৃহা ভট্টাচর্য্য

আহরণ

দিনটা ছিল আমার বারো ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার দিন।অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের মতো আমিও খুব চিন্তায় ছিলাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয় বারোটায় রেজাল্ট দেবে। মনে খুব ভয়।যথারীতি বারোটায় রেজাল্ট দেওয়া হল। আর যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো রেজাল্ট আর লিস্টে আমার নাম অনেকটাই পেছনে। আমি মাত্র পঁয়ষট্টি শতাংশ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হই । ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছিলাম। স্যার ম্যাডামরা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিল আর সাহস দিয়েছিল পরবর্তীতে বোর্ডের পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার। মনে পড়ে কিছু বান্ধবীরা আমায় নিয়ে সেদিন উপহাস করেছিল। কষ্ট পেয়ে বাড়ি ফিরে বাবাকে যখন রেজাল্টের কথা বললাম বাবা বলেছিল,"চিন্তা করিস না মা তুই পারবি।" আমার উপর বাবার বিশ্বাস দেখে আমি একটা সাহস পেয়েছিলাম। জেদ চেপে ধরলাম এইবার আমি বাবার কথা রাখবোই। শুরু করি কঠোর পরিশ্রম। সামনেই পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ এখন রেজাল্টের পালা। দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে এল, চোখে ভাসছিল  আমাকে নিয়ে করা সেই অট্টহাসির ছবিগুলো। আমার রেজাল্ট দেখার সাহস ছিলনা তাই বাবাকে বললাম,"বাবা তুমি রেজাল্ট দেখে আমায় বলো।" রেজাল্ট প্রকাশ হলো, বাবা আমার রেজাল্ট দেখার পর একগাল মুখে হাসি নিয়ে আমার সামনে এসে বললো, "মা তুই পেরেছিস"। এটা শোনার পর আমি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কি বলছ বাবা? আমি কতো শতাংশ পেয়েছি?"। বাবা বললো "সাতাশি শতাংশ"। এটা শোনার পর আমি আনন্দে উৎফুল্ল। মা বাবা দুজনেই ভীষণ খুশি। তাদের মুখে হাসি দেখে আর চারিদিক থেকে বন্ধু-বান্ধব, স্যার-ম্যাডাম দের অভিনন্দনের ফোন কল দেখে আমিও আনন্দে আত্নহারা। ইতিমধ্যেই স্কুল থেকে ডেকে পাঠালো মার্কশিট নেওয়ার জন্য। নির্ধারত সময়ে পৌঁছলাম স্কুলে। প্রধানশিক্ষিকা সহ সকল স্যার ম্যাডাম গর্বিত হয়ে তাদের মূল্যবান আশির্বাদ দিলো আমায়।
তার একটু বাদেই যখন আমি দাড়িয়ে ওই মার্কশিট নেওয়ার অপেক্ষায়, আমার চোখ পড়লো আমাকে নিয়ে পরিহাস করা ওই বন্ধুদের উপর। জানতে পারলাম ওরা আমার থেকে কম নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তাই আমাকে অভিনন্দন জানাতে এলো না। 
ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো বড়দের মুখে শোনা একটি প্রবাদ বাক্য - "অহংকারে পতন" । এই কথাটির বাস্তবতা সেইদিনই প্রথমবার নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করলাম আর মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম যে জীবনে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে অহংকার করবোনা,কোনো ব্যক্তির খারাপ পরিস্থিতির উপহাস করবোনা কারণ এগুলো পতনের রাস্তা প্রশস্ত করে । 
জীবনের এই ঘটনা আমাকে এই নীতি শিক্ষার সাথে পরিচয় ঘটালো।

দেবব্রত চক্রবর্তী

স্মৃতি তে গাঁথা 

বয়স তখন উনিশ!
কলেজের প্রথম বর্ষ, গোঁফ না পাকালে ও মনের মধ্যে কলেজ সম্পর্কে ভাবনা গুলোর বাস্তবিকতা বয়ে চলছিল।
নতুন বন্ধু নতুন পাকা বাড়ির বিশাল বড় রুমে ক্লাস করা, লাইব্রেরী নামক বদ্ধঘরে অনেকটা সময় কাটানো, আর টিচার থেকে প্রফেসর সব কিছু যেন বড় হওয়ার কথাই জানিয়ে ছিল সেদিন। 
মনে আছে এখনও বাংলায় সাম্মানিক নিয়ে পড়া ছাত্র আমি, তখন বিকেলের বিজ্ঞান ক্লাসের পাশে বসে মোবাইলে ব্যস্ত, ড.নন্দিনী ম্যাম ডাক দেয় ''এই তোমরা ক্লাসে এসো''
হঠাৎ আমি আর আমার বন্ধু তাকিয়ে দেখি, বিজ্ঞানের ক্লাসে আমাদের কেন ডাক,,,,,;
অবশেষে বুঝলাম এটা সেমিনার ,তাই ডুকে পরলাম আগ্রহী ছাত্র হিসেবে, কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার পর আমাকে বললো তুমি বিজ্ঞান মেলায় প্রোজ্যেক্ট নিয়ে যাবে কি কলেজের হয়ে, আমি সঙ্গে সঙ্গে হ্যাঁ বললাম তখনও কিছু বুঝি নি ঘটনা কি! 
যথারীতি পর দিন থেকে প্রস্তুতি ডিসেম্বরের ২৬ , ২০১১ ইং।
পর পর ৪- ৬ দিন সার্ভে , তারপর প্রোজ্যেক্ট নিয়ে প্রস্তুতি করে মেলায় যাওয়া কি ছিল এই ৭-৮ দিন ওফঃ জীবনের অনেক বড় প্রাপ্তির আগে এই দিন গুলো অনেক বড় অভিজ্ঞতা, এই প্রস্তুতির ৭-৮ দিন এখনও মনে পরে, যে ঐ দিন গুলি সত্যিই দাগ রেখে গেছে। 
৪ ঠা জানুয়ারি ২০১২ ইং সকাল ৭টায় রওনা দেই, উমাকান্ত স্কুলে রাজ্য ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা আয়োজন করা হয়েছিল সে'বারে। 
৫দিন মেলা চলছিল ৪ঠা জানুয়ারি থেকে ৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত, এই পাঁচ দিনে আমার প্রোজ্যেক্টে Writing pad এ ৪৪ জন মন্তব্য করেছেন, যেখানে অন্যদের ২৫০-৩০০ মন্তব্য ছিল।
হতাশ হওয়ার ই কথা কিন্তু একজন ছিল যিনি হতাশ হন নি তিনি সেই ম্যাম যার ডাকে ইতস্ততঃ হয়ে সেমিনারে ডুকেছিলাম প্রোজ্যেক্ট গাইড তথা ড. নন্দিনী গুপ্তা ম্যাম। 
তারপর মেলা শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান, যেহেতু তেমন সাড়া পাই নি তাই অপেক্ষা না করে বাড়ি চলে আসি। গাড়ি থেকে নামবো ঠিক তখনই ম্যাম এর ফোন ''দেবব্রত কোথায়! তুমি তো সারা ত্রিপুরাতে উচ্চ ও কারিগড়ি শিক্ষায় প্রথম পুরস্কার পেয়েছো''
ওফঃ কি মিস করলাম সেদিন তবে আফসোস নেই কেন না পুরস্কার টা বিজ্ঞান মন্ত্রীর হাত থেকে তুলে নেন ড. নন্দিনী গুপ্তা, আমার গাইড টিচার। 
তারপর ২৮ শে ফেব্রুয়ারি ২০১২ ইং আগরতলা সুকান্ত একাডেমী অডিটোরিয়ামে বিশেষ সম্মান স্বর্ণ পদক সহ ''হোমি জাহাঙ্গীর'' পুরস্কারে ভূষিত করেন ত্রিপুরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পর্ষদ। 
এটা আমার জীবনের স্মৃতি তে গাঁথা অনেক বড় প্রাপ্তি ।


রুবেল হোসেন

বন্ধুর আশা

অন্ধকারে বন্ধ ঘরে একটি মনের আশা,  
আলো জ্বালাতে কবে আসবে মনটা করে শা' শা। 
দুটো চোখে রক্ত ঝরছে আসবে বন্ধু কবে,
আশায় আশায় বসে রয়েছি স্বপ্ন সফল হবে।
বুকের উপর পাথর রেখে চতুর্দিকে ঘুরি ,
আগের বন্ধু কোথায় পাব চোখের অশ্রু ঝরি।
মনকে বলি আসবে তোর রুদ্র এবং আকাশ,
দিনের পর দিন গুনেছি এক বারটি তাকাস।
ভাবিনি যে ফাঁকা রাস্তায় আমায় ছেড়ে যাবে,
দেখবে তুমি আমার মতো বন্ধু নাহি পাবে।
তোমার জন্য প্রাণ হারাতে এক বারটি ভাবিনি,
ভুল ভেবেছি আমার বন্ধু কখনো ছেড়ে থাকেনি।

আমার আশা আসবে তারা আসবে মধুর হেসে,
বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে বলবে ভালবেসে।
ভুল করেছি ভুল করেছি আর করবো না যে ,
মৃত্যুর আগে থাকবে তুমি আমার বুকের মাঝে ।
কখন আসবে বন্ধু তুমি তোমার প্রানের কাছে ,
তোমার জন্য দরজা খোলা আমার মনের মাঝে ।

কোথায় বন্ধু আয়, একটি বার শুধু আয় ,
তোদের পেলে আমার জীবন ধন্য হয়ে যায়
 ধন্য হয়ে যায়!

ভাশ্বতী হান্দল

দাগ

ফেলে আসা বিকেলের স্মৃতি গুলো 
আজও বড্ড  রঙিন 
সময়ের ধূসর পাণ্ডুলিপি তে লেখা আছে 
যার প্রতিটি অক্ষর ।
এখনো চোখে বন্ধ করলে  
চোখের সামনে জ্বলজ্বল করে ওঠে 
তার সেই আটপৌড়ে মেয়ে বেলার ছবি
কিশোরী বেলার প্রথম প্রেম ,
আর দুপাশে বেনী বাঁধা 
নিষ্পাপ দুই চোখের চাহনি।
তার কথা মনে পড়লে এখনো 
বুকের বাম দিকটা চিনচিন করে
মোচড় দিয়ে ওঠে 
ভুলতে চেয়েও ভুলতে পারিনি 
তার ওই মায়া ভরা হাসি মুখ
জীবনের গতি যতই অন্যপথে
 হেঁটে যাক না কেন 
মনের মধ্যে কেটে যাওয়া দাগ গুলো 
আজও পিছু ছাড়েনি ।

উজ্জ্বল ভট্টাচার্য্য

দুই হাজার কুড়ি'র বইমেলা            

স্মরণীয় বলতে আসলে কেমন
তা ঠিক ঠাক অভিজ্ঞতা নেই।
সত্যি বলতে কি, জীবনে এমন রঙিন সময় কখনোই আসেনি।
তবে, এবারের বইমেলাটা কেমন যেন একটা অনুভব উপহার দিয়েছে,
আসলে আমি ভাষায় গুছিয়ে তা ফোটাতে পারবো না।
ভীড় বাসে শ্রদ্ধেয় রূপঙ্কর স্যারের সঙ্গী হয়ে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা,
স্টলে স্টলে ঘুরপাকে বইয়ে হাত বুলানো,
স্যারের সাথে একই ফ্রেমে মুহূর্তবন্দী।
খিদের তাড়নায় রেস্টুরেন্ট মুখো হই
হঠাৎ প্রিয় মানুষ দেবু দা'র কল,
কই ?
ছুটে যাই,
গিয়ে পাই প্রিয় মানুষদের ভিড়,
অনুপম দা,দিপ্সী দি,সংগীতা শীল।
স্রষ্টার হাত থেকে অটোগ্রাফসহ "স্রোতের বিপরীত" নেওয়া,
জমিয়ে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা,
এরপর ট্রেন ধরে নিজ বাসার উদ্দেশ্যে,
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় ঘরে উপস্থিত।
এই দিনটাই আমার জীবনে কিছু দিলো,
স্মরণ করার মতো, মনে আনন্দ জাগানোর মতো।

মোঃ রুবেল

নিমূল হোক যুদ্ধের কালো ছাঁয়া

আচ্ছা। রাষ্ট্র পিতাগণ-
আর কটা তাজা প্রাণ অকালে ঝড়লে যুদ্ধ বাঁধবেনা।
কটা মায়ের কোল খালি হলে বাঁধবেনা যুদ্ধ।

বলুন পিতাগণ--
আর কটা বীরের নিষ্পাপ রক্তে ধুয়ে যাবে প্রাণনাশক হিংসা?
হৃদয় থেকে চিরতরে মুছে যাবে সাম্রজ্য বিস্তারের নেশা?
বলুন পিতাগণ--
আর কতটা ভালোবাসলে যুদ্ধের সবুজ নকশা মন থেকে নির্মূল হবে?
হবে না অহেতুক সাম্রজ্যের লড়াই।
পিতাগণ---
আমরা যুদ্ধ নয়,
প্রশান্তি চাই।
হিংসা নয়,
অহিংস ভালোবাসা চাই।

দেবাশীস চৌধুরী

চাষ

কলঙ্ক কালিমা সব তোমার পায়ে সমর্পন করে 
নতজানু হয়ে তাকিয়ে রয়েছি 
তোমার দিকে। 
জাগতিক দৃশ্যাবলির বর্ণনা করতে গিয়ে দেখি
আমি তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি
তুমি পরীক্ষার কক্ষে তালাবন্ধ অবস্থায় ছুটে এসেছো আমার বুকে -- 
আমার সমস্ত পাগলামো, খামখেয়ালিপনার ফসল তুমি !
আমি তোমার হৃদয় চাষের দায়ীত্ব নিলাম।।

রনিতা নাথ

স্টেশন 

কাছের মানুষটি যখন দেশমাটির ঘ্রাণ নিয়ে ভেজা দুটি চোখের পাতাকে নীরবে টুপ করে যত্নে তুলে রেখে যায় আমার দুটি চোখের পাতায়।তখন...

যাবার সময় ঘনিয়ে এলেই বুঝতে পারি সময় কতটা দৌড়ে এগুচ্ছিলো।সৃজনের বাবার আপন মনে বেগ গোছানোর কাজে হাত লাগাতে লাগাতে
দেখতে থাকি,যাবতীয় জিনিস পত্রের সাথে কিভাবে ছেলের সাথে কাটানো সময় গুলোকে 
খুব যত্নে ঢুকাচ্ছিল মনের থলিতে।মনের কোণায় কোণায় চেপে রাখচ্ছিলো যতটা পারা যায়।তা নিয়েই বেরিয়ে পড়বে পতাকার মাঝে দেশ মানচিত্রের কথা স্মরণ করে। 

ট্রেন ধরার তাগিদে,পা উঠতে না চাইলেও কাঁধে বেগ সহ সৃজনকে কোলে নিয়ে একবার ঘরের চার দেওয়ালে চোখ রাখে। তারপর সৃজনকে বুকের সাথে মিশিয়ে চৌকাঠ পেরিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে উঠান থেকে যখন রাস্তায় গিয়ে একবার বাড়ির সবার দিকে ঘুরে দাঁড়ায় সৃজনের বাবা।
তখন সৃজনের ঠাম্মার চোখ থেকে কান্না বৃষ্টি ঝরে অবিরত।আমি নির্বাক। 

স্টেশনে গিয়ে ভিড় ঠেলে একটা খালি জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকি তিনজন।ছন্নছাড়া মানুষের ভিড়। সৃজনের বাবার চোখ স্থির রেললাইনের পাতে। 

সৃজনকে বুকের কাছে জড়িয়ে নিয়ে তার বাবা বলতে থাকে সব সময় ভালো থাকবি। মায়ের সাথে দুষ্টুমি কম করবি। মায়ের অসুখ হলে মা যেমন তোমায় ভালোবেসে খেয়াল রাখেন,তেমনি তুমিও মায়ের খেয়াল রেখো। আমি তো তোমাদের কাছে থাকবো না। তুমিই মাকে ভালো দেখতে পারবে। মনে থাকবে তো কথা।সৃজন চুপচাপ মাথা নাড়ে। 

কথা বলতে বলতেই ট্রেন বিকট আওয়াজ করে প্ল্যাটফর্মে ঢুকে।আওয়াজ শুনে সৃজন বাবার গায়ের জামাটাকে খুব শক্ত করে ধরে।বাবাও সাহস জোগায়।আমি আছি বাবা ভয় নেই।সৃজনকে কোলে নিয়েই দৌড়াতে দৌড়াতে জানলার পাশে একটি খালি সিট খুঁজতে থাকে সৃজনের বাবা।পেয়ে যেতেই সৃজনকে যখন আমার কোলে দিতে ফিরে দাঁড়ায়।তখন সৃজন ও তার বাবার কষ্টের নিঃশব্দ কান্না শুনতে পেয়ে আমার কান্না থেমে যায়। 

হৃদয়কে কতটা পাথর বানাতে পারলে বুকে আগলে রাখা সন্তানের কাছ থেকে নিজেকে আলগা করা যায়! 

আমি দেখেছি কিভাবে বাবা ও ছেলে পরস্পরের কাছ থেকে পরস্পর দূরত্বে চলে যাবার মূহুর্তে হৃদয়ে ভালোবাসার স্নেহে দুজনেই  তাকিয়েছিল একে অপরের দিকে অপলক।দূরে যেতে যেতে অদৃশ্য হবার আগে ভেজা দুটি চোখের পাতা আমার চোখে টুপকরে রেখে গিয়েছিলো একটি বাবার হৃদয়।

আবার ফিরে আসার অপেক্ষায় সৃজনকে নিয়ে  বাড়ির দিকে রওয়ানা হই।সৃজন কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে বাবা কেন আমাদের ছেড়ে চলে যায়। আমার কাঁধে মাথা রেখে ভাঙা গলায় বলে  
বাবা যখন আবার ছুটিতে আসবে তখন আমি আগে থেকেই বাবার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবো স্টেশনে।

মিঠুন দেবনাথ

২৫শে অাগস্ট

বিকেল চারটেয় কটূক্তি সহ তীব্র ভর্ৎসনা প্রাপ্তি | তারপর একছটাক বিলাতি হজম | দীর্ঘ ছয় ঘন্টা রাস্তায় গড়িয়ে গড়িয়ে কান্না | এক ফসলা ঝিরঝিরে বৃষ্টি | সারা অঙ্গে কাদা বালির আস্তরণ | মাঝে জনা চল্লিশেক লোকের আগমন , কেউ দিলো ধমক , কেউ দেখালো পুলিশের ভয় , কেউ দিলো আদর | কেউ আবার বুকে জড়িয়ে চুমো খেল | প্রশ্ন এল "বাবা তোর বাড়ি কোথায় , কাঁদছিস কেন ?" "—আমাদের বাড়িতে যাবি , রাতটা কাটাবি ? তোর বাড়িতে কে আছে ? কীসের জন্য এত কাঁদছিস ? খুব প্রিয় জিনিস হারিয়েছিস বুঝি ?" 
   কান্নার তেজ এতটাই বেশি ছিল যে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে হৃদয় অস্বীকার করল | 
    অচেনা শহর , অজানা গলি তার সঙ্গে কিছু জলন্ত স্মৃতি | হটাৎ এরই মাঝে তিনজন অল্পচেনা লোক সাইকেল নিয়ে পাশে দাঁড়ালো ; কিন্তু কান্নার আওয়াজ আর আবেগ দুটোই এত বেশি ছিল যে তারাও মতি ভ্রমে বুদ্ধিলোপে পালালো | তারপর আরও কিছু সময় কেটে গেলো | না , আর পাশে কেউ নেই ! একা , খুব একা ! পুরো শহর যেন অন্ধকার | ওই গোটা চল্লিশেক মানুষও ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে নিজের ঘরে চলে গেল | রাত মধ্য , এবার ছেলেটার কান্না থামলো , ছোট্ট কালভার্টের রেলিং এর উপর বসে বিরাট দীর্ঘশ্বাস ফেলে উপরের দিকে মুখ তুলে হাত জোড় করে ঈশ্বরকে বলল , "হে ঈশ্বর , তোমায় সহস্র প্রণাম , কারণ আমি বেঁচে আছি , হ্যাঁ , আমি বেঁচে আছি | "
    তখন রাত প্রায় বারোটা | হাতের মোবাইলটিতে ১% চার্জ বাকী রয়েছে | সন্ধ্যায় তো অনেক মানুষ পাশে ছিলো কিন্তু তখন আবেগটা এতই তীক্ষ্ণ ছিলো যে কারোর কথাতেই হৃদয় সায় দেয়নি | এখন তো রাত অনেক ভারী , কোথায় যাবে ! কোথায় থাকবে ! এই অচেনা শহরে রাত্রি যাপনের মতো কোনো আখড়া নেই | আবেগ প্রায় কেটে গেলে মনে প্রচন্ড ভয়ের উদয় হয় কারণ তার এক পকেটে কম্পানির দশ হাজার টাকা আরেক পকেটে একটি সোনার আংটি | আংটি টি সে বড় যত্ন করে বানিয়েছিল যে | এগুলো সে বাঁচাতে পারবে তো ? নাকি নিষ্ঠুর শহর এগুলিও ছিনিয়ে নেবে ! 
   না ... না না না আর বসে থাকলে থাকলে চলবে না , সুযোগ পেলেই নিশাচররা কামড়ে খাবে | চলতে হবে , হ্যাঁ , এক্ষুনি চলতে হবে কিন্তু উঠে দাঁড়ানোর শক্তি নেই | বিগত প্রায় তিনদিন ধরে শরীরে দানার প্রবেশ নেই | যতটুকু চলছে ওই পানির বলেই চলছে | কাঁপা কাঁপা পায়ে শক্তিহীন দেহে উঠে দাঁড়াতেই মাথা একটি চক্কর মারলো | সঙ্গে সঙ্গে চোখ দুটি বন্ধ করে নিজের মায়ের মুখ খানি মন দর্পণে প্রতিভাসিত হল ; ছেলেটির আপন বলতে কেবল তার মা'ই ছিল | মায়ের ছবি চোখের সামনে ভাসতেই ঈশ্বর যেন পায়ে শক্তি দান করল | হ্যাঁ , এবার চলতে থাকল , মনস্থির করল থাকার জায়গা যদি না পায় তবে সারা রাত চলতে থাকবে | তার দৃঢ় বিশ্বাস মানুষের দুনিয়া নিষ্ঠুর হলেও ঈশ্বরের দুনিয়া নিষ্ঠুর নয় | তিনি যেভাবেই হোক তাঁর বাধ্য সন্তানকে রক্ষা করবেন | ওই শক্তিহীন দেহ আর নিল্চল পা নিয়ে প্রায় এক কিলোমিটার পথ হাঁটার পর রাত বারোটায় কালীনগর স্ট্যান্ডের কোনো এক দোকানির বারান্দায় ছেলেটি লুটিয়ে পড়ল ...
    এমন সময় শেষ বারের মতো ফোন কল , "মিঠুন দা , তুমি কোথায় ?" শুধু একটি উত্তর , "আমি কালীনগর স্ট্যান্ডে |" ব্যস , সঙ্গে সঙ্গেই ফোন সুইচ অফ | 
      মিনিট দশেক কেটে গেলো | স্ট্যান্ডের পাহারাদার রাতের কুকুরগুলো ছেলেটিকে একা দেখে ভীষণ ভাবে চেঁচাতে শুরু করল | কুকুরের ভয়ে হাত পা প্রায় অবশ হয়ে আসছিল | এমন সময় দূর থেকে একটি টর্চের আলো ভেসে আসে , বাঁচার জন্য মনে প্রচন্ড জোর আসে , এই তো এই যেন সে জীবনের আলো দেখতো পাচ্ছে ! হে ঈশ্বর , তুমিই সব ... দেখতে দেখতেই সন্ধ্যার সেই তিন জন অল্প চেনা লোক সামনে এসে দাঁড়ালো | তাদের একজন বলে উঠল —
 —দাদা আমাদের ঘরে চল...
—উত্তরে ধ্যান না দিয়ে আমি প্রশ্ন করলাম " কী রে অর্পন , সে কী বলল ?" উত্তর এল...
— কী আর বলবে সে ! তুমি যখন রাস্তায় গড়াগড়ি দিয়ে কাঁদছিলে আমি তখন তাকে ফোন করে বললাম , কী রে , দাদা তো রাস্তায় গড়িয়ে কাঁদছে , কী করব ? সে উত্তর দিলো ... "রাস্তায় কোনো গাড়ি নাই , চাপা দিয়া দিতো..."
    উত্তরটি শুনেই বুকটা হু হু করে উঠল ! মনের প্রতি শুধু একটাই প্রশ্ন , কার জন্য এত কিছু ! কেন...
    তারপর ঈশ্বরে ধন্যবাদ দিয়ে আবার হাসি , করজোড়ে প্রার্থনা , ভালো থাকুক , পৃথিবীর সব মানুষ ভালো থাকুক...     
   না , এ কোনো পিতৃ বিয়োগের শোক নয় ; মাতৃ বিয়োগেরও নয় | সন্তান কিংবা ভাই-বোন হারানোরও শোক নয় | বাকীটা না হয় না বলাই থাক।

অভীককুমার দে

এক মৃত্যু ছায়ার মুখোমুখি


তখন আমি গ্রামীণ ব্যাংকের চুক্তিবদ্ধ কর্মচারী। গ্রামীণ শ্রমিকদের সরকার নিয়ন্ত্রিত শ্রম দিবসের প্রাপ্য পারিশ্রমিক প্রদানের কাজ করি। সেদিন সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বেরিয়েছি আদিপুর পঞ্চায়েতের উদ্দেশ্যে। দূরত্বের কারণে টাকাপয়সা নিয়ে একা যাওয়ার সাহস যোগাতে পারতাম না। তাই, সহকর্মী সম্রাটকে সাথে নিয়েই রওনা হলাম। সেই পথে ঐদিন আমাদের প্রথম যাতায়াত নয়। 

কিছুদূর যাওয়ার পর রাস্তার দুপাশে যেখান থেকে গভীর জঙ্গল শুরু হয়, সেখান থেকেই আমার বরাবর গা ভার হতে থাকে। সেদিনও মানসিক অবস্থা একই রকম। মাঝে প্রায় সাত কিমি রাস্তা বাড়িঘর শূন্য। নিস্তব্ধ পথ। 

আমার মোটর সাইকেলটি চালাচ্ছিল সম্রাট। ব্যাগ ভর্তি টাকা ও যাবতীয় সরঞ্জাম নিয়ে পেছনে বসেছিলাম আমি। আনুমানিক চার সাড়ে চার কিমি রাস্তা অতিক্রমের পর একটা বিকট শব্দ কানে এলো। মুহুর্তেই টলতে শুরু করলো মোটর সাইকেল। চিৎকার করে সম্রাট বলে উঠল-- 'অভীক, আমি বাম হাতটা লাড়াইতাম পারতাছি না।' সামনের দিকে ঝুঁকে দেখলাম, ওর বাঁ হাতের কনুই বেয়ে রক্ত গড়িয়ে প্যান্ট ভিজে যাচ্ছিল। 

হাতটি কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলায় খটখট করে কিছুদূর গিয়েই বন্ধ হয়ে গেছে মোটর সাইকেলের ইঞ্জিন। কোনোরকমে সাইকেলের স্ট্যান্ড দিয়ে রাস্তায় বসে পড়েছে সম্রাট। ডান হাত দিয়ে চেপে ধরলেও গলগল করে রক্ত ঝরছিল। হতভম্ব আমি, কি করবো কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। 

মিনিট খানেকের মধ্যেই একজন লোক ডানপাশের টিলা থেকে দ্রুত নেমে আসে। হাতে একটি দেশি বন্দুক। গায়ে মিলিটারির মত পোশাক। কাঠের মত কঠিন শরীর। চোখে উগ্র দৃষ্টি। সামনে এসেই বন্দুক তাক করে ধরলো আমার বুকে। মুহুর্তের জন্য একবার মায়ের মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। এক অদ্ভুত মৃত্যুর ছায়া শরীরকে মাটির সাথে ঠেসে ধরছিল। আমি তখন নিরেট পাথরের মতোই ! মৃত্যুকালীন যাপনের অনুভূতি আমাকে অস্থিরতা থেকে স্থির করে ফেলছিল ধীরে ধীরে। ততক্ষণে জীবনের ভাবনা সব হারিয়ে ফেলেছি। আচমকা এক ঝটকায় ছিনিয়ে নিলো টাকার ব্যাগ এবং বন্দুকের নলে ধাক্কা দিয়ে বলল-- 'যা, ভাগ'। 

বেঁচে থাকার একবিন্দু ক্ষীণ আলো বুকের কোথাও কামড় দিতেই সম্বিত ফিরে পেলাম। লক্ষ্য করলাম, যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে সম্রাট। চোখের সামনে এক অদ্ভুত অন্ধকার নেমে এসেছে আমাদের। গলা শুকিয়ে নিঃশ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম। তবুও, এক মুহুর্তের জন্য মনে হলো, আমরা বোধহয় বেঁচে যাবো। বাঁচতেই হবে আমাদের। রক্তাক্ত সম্রাটকে টেনে তুলে ছুটতে লাগলাম তৈনানীর দিকে। শরীর ভারি হয়ে উঠেছে। প্রাণপণে দৌড়াতে চেষ্টা করলেও ভারি পা টেনে নিয়ে যেতে পারছিলাম না। 

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...