Saturday, July 18, 2020

শিপ্রা দেবনাথ

গয়াতে পিন্ডদান

প্রায় বারো বছর আগে, আগষ্ট মাসের শেষের দিকে আমরা পরিবারের সবাই মিলে গয়াতে গিয়েছিলাম। আমার শাশুড়ীমার পিন্ডদান করার জন্য। গয়াতে যাবার পরের দিন সকালে আমরাসবাই মন্দিরে যাওয়ার জন্য তৈরী হলাম। মন্দিরে যাওয়ার পথেই পিন্ডদানের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে মন্দিরে প্রবেশ করি। বিস্নুপাদ মন্দির গয়ার অন্যতম প্রধান আকর্ষন। এই মন্দিরেই পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করা হয়। ফল্গুনদীর তীরে বসেই পিন্ডদান করা হয়। পিন্ডদানের সময় পান্ডারা  মন্ত্রপাঠ করতে করতে বিরাট অংকের টাকা চেয়ে নেয়। চাঁদা আদায় এর জুলুমবাজির জন্য গয়ার পান্ডরা এমনিতেই বিখ্যাত। তারপর আমরা  পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করার জন্য ফল্গুনদীতে যাই মানুষের মুখে শুনেছিলাম যে, ফল্গুনদীতে জল থাকে না। আমরা যেই সময়ে গিয়েছিলাম তখন ভাদ্র মাস ছিল, সেই সময়ে সব নদী নালা, পুকুর, জলাশয় জলে পরিপূর্ণ থাকে। কিন্তু ফল্গুনদীতে জল ছিলোনা দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছি। রামায়ণে অনুযায়ী এই নদী পূর্বে প্রবাহমান ছিল। রাজা দশরথের মৃত্যুর পরে এই নদীতে শ্রীরামের অনুপস্থিতিতে সীতাদেবী দশরথের পিন্ডদান করেছিলেন। সেই পিন্ডদানের সাক্ষী ছিল ফল্গুনদী,অক্ষয়বট ও তুলসী। শ্রীরাম ফিরে এলে সীতাদেবী পিন্ডদানের কথা জানান, কিন্তু অক্ষয়বট সত্যি স্বীকার করলেও তুলসী ও ফল্গুনদী মিথ্যা   সাক্ষী দেয়। এতে সীতাদেবী অভিশাপ দেন, সেই অভিশাপের পর থেকেই এই নদীর জল শুকিয়ে যায়। এই নদীর জল মাটির তলায় প্রবাহমান। পিন্ডদানের জন্য এই নদীতে হাতদিয়ে গর্ত খুঁড়ে জল বেরকরতে হয়, সেই জলেই পিন্ডদান করাহয়। আমরাও হাতদিয়ে মাটি খুঁড়ে   জল বেরকরে পিন্ডদানের কার্য সম্পন্ন করি। পিন্ডদান করার পর আরও অনেক জায়গায় ঘুরতে গিয়েছিলাম বুদ্ধগয়া, রাজগীর,নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়, সূর্যমন্দির, পাটনা এবং জাহানাবাদের আরও অনেক কিছু জায়গায়। কিন্তু এতোকিছু ঘুরাঘুরির পরেও শুধু একটাকথা বলতে চাই যে,ফল্গুনদীর সেই অভিজ্ঞতা আমার জীবনের খুবই একটি স্মরনীয় ঘটনা, যেটা আমি কখনো ভুলতে পারবনা।  

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...