Saturday, July 18, 2020

রাহুল শীল

টুয়েলভ মার্কশিট
       

স্কুলজীবনে থাকার সময় বুঝে গিয়েছিলাম "কিসমত হামারি কুত্তি চীজ হ্যা" অর্থাৎ ভাগ্যের সঙ্গ আমি পাবো না। যেকোনো সামান্য কাজ ভাগ্যের বিড়ম্বনায় বিলম্ব হয়। একটি সাধারণ কাজ করতে একশো জনের মধ্যে ৯৯ জন সফল হলে যে একজন সেই কাজটি বিনা কারণে সহজভাবে করতে পারে না তাদের দলে আমি পড়ি। পরীক্ষা দিয়ে এসে যতই সন্তুষ্টি অর্জন করি না কেন রেজাল্ট আমায় হতভম্ব করেই বরং যে বন্ধু ভুল উত্তর করে আসে সেও ঐ বিষয়ে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে যায়‌।যাই হোক এই ভাগ্য যে স্কুল জীবনেই ছিল তা কিন্তু নয় কলেজ জীবনের প্রথমে অনেক ঘুরিয়েছে আমায়। সেদিন সদ্য কলেজের প্রথম দিন। টুয়েলভ এর মার্কশিটের জেরক্স কপি চেয়েছিল ডিপার্টমেন্ট কর্তৃপক্ষ। সেজন্য কলেজের উল্টোদিকের জেরক্স দোকানে গিয়েছিলাম জেরক্স করাতে মার্কশিটটা। তাড়াহুড়ো করে আসল কপি টা না নিয়ে জেরক্স কপি নিয়ে কলেজে এসে জমা দিয়ে দিই। পাঁচ ছয় দিন পর ফাইলটা থেকে ভর্তির ফি কার্ড নিতে গিয়ে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছিল।তন্ন তন্ন করে খুঁজেও পেলাম না টুয়েলভের আসল মার্কশিট টা। মা'কে জানায়নি কিন্তু উনি মুখের নক্সা দেখে বুঝে গিয়েছিলেন 'ছেলে কিছু হারিয়ে ফেলেছে'।আমিও বললাম মা'কে, দুজন মিলে ঘরের মেঝে থেকে সিলিং সব খুঁজলাম-নো রেজাল্ট।তারপর জেরক্স দোকানে সন্ধান করতে বেরিয়ে পড়ি এই তালিকায় নিজের স্কুল সংলগ্ন দোকান, আমার স্থানীয় এলাকার দোকান, কলেজের জেরক্স দোকান ছিল। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার কলেজের জেরক্স দোকানে গিয়ে যখন হারানো মার্কশিটের খোঁজ নিয়,তখন মালিক একটু খোঁজাখুঁজি করে জানান উনার দোকানে কোনো মার্কশিট নেই বরং কয়েকটা আধার কার্ড রয়েছে। মানসিক ভাবে একেবারে দুর্বল হয়ে গিয়েছিলাম তখন- এখন কি করি!!।এত বড় হয়েও নিজের খামখেয়ালির জন্য মা-বাবা,আত্মীয়, স্কুল শিক্ষক-শিক্ষিকা সহ বন্ধুদের থেকে আসা অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। তারপর আমার কয়েকজন স্কুল শিক্ষক,টিউটর ও কলেজ প্রফেসরের কথা অনুযায়ী পর্ষদে যাই নতুন মার্কশিটের আবেদন করতে।নিয়ম অনুযায়ী জীবনে প্রথম স্থানীয় পুলিশ থানায় একজন বন্ধুর সাথে গিয়ে একটা ডায়েরি করি।তারপর পর্ষদ সংলগ্ন ব্যাংক থেকে ৩৫০টাকার চালান ভরি। কলেজ শেষ করে নিজের স্কুল হয়ে বাইকে করে পর্ষদে যেতে হয়েছে চারদিন। পর্ষদ জানিয়েছে প্রায় তিনমাস লাগবে নতুন মার্কশিট হাতে আসতে।তবে একটি কপি লিখে দিয়েছেন যা দিয়ে যাবতীয় বিভিন্ন কাজ,পরীক্ষা সংক্রান্ত ফর্ম ফিলাপ করা যাবে।বলে রাখা ভালো নতুন মার্কশিটের আবেদন ও করতে পারতাম না যদি আমার ফাইলে একটা পুরোনো ভাঁজ করা আসল মার্কশিটের জেরক্স কপিটা না থাকত। এটাকেই অনেক কপি জেরক্স করিয়ে নিজের কাছে রেখেছিলাম। এভাবেই দু সপ্তাহ গেল কলেজের ফিকার্ড জেরক্স করাতে কলেজের উল্টোদিকের দোকানে গিয়েছিলাম এবং দোকানের মালিককে বললাম এখনো আসল মার্কশিটটা না পেয়ে পর্ষদে নতুন একটি মার্কশিটের আবেদন জানানোর কথা। তখন উনি বললেন দাঁড়াও একটু! তিনি দোকানে লোকের হারানো নথিপত্রের ফাইল খুলতেই আমার চোখ পড়ে একেবারেই উপরেই থাকা আমার আসল মার্কশিটটায়। তখন মনে যে আনন্দ অনুভূতি জন্মালো তা বলে বোঝানো সম্ভব নয় এবং আজীবন মনে থাকবে।আসলে ভাগ্যের বিড়ম্বনায় বিনা কারণেই আমার এই অহেতুক যুদ্ধ করতে হয়েছে যার ফল শূন্যই।।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...