Saturday, July 18, 2020

স্পৃহা ভট্টাচর্য্য

আহরণ

দিনটা ছিল আমার বারো ক্লাসের টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়ার দিন।অন্যান্য ছাত্র ছাত্রীদের মতো আমিও খুব চিন্তায় ছিলাম। স্কুল কর্তৃপক্ষ থেকে বলা হয় বারোটায় রেজাল্ট দেবে। মনে খুব ভয়।যথারীতি বারোটায় রেজাল্ট দেওয়া হল। আর যেটার ভয় ছিল সেটাই হলো রেজাল্ট আর লিস্টে আমার নাম অনেকটাই পেছনে। আমি মাত্র পঁয়ষট্টি শতাংশ নাম্বার পেয়ে উত্তীর্ণ হই । ভেতর থেকে ভেঙে পড়েছিলাম। স্যার ম্যাডামরা আমার মনের অবস্থা বুঝতে পেরেছিল আর সাহস দিয়েছিল পরবর্তীতে বোর্ডের পরিক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার। মনে পড়ে কিছু বান্ধবীরা আমায় নিয়ে সেদিন উপহাস করেছিল। কষ্ট পেয়ে বাড়ি ফিরে বাবাকে যখন রেজাল্টের কথা বললাম বাবা বলেছিল,"চিন্তা করিস না মা তুই পারবি।" আমার উপর বাবার বিশ্বাস দেখে আমি একটা সাহস পেয়েছিলাম। জেদ চেপে ধরলাম এইবার আমি বাবার কথা রাখবোই। শুরু করি কঠোর পরিশ্রম। সামনেই পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ এখন রেজাল্টের পালা। দেখতে দেখতে রেজাল্টের দিন চলে এল, চোখে ভাসছিল  আমাকে নিয়ে করা সেই অট্টহাসির ছবিগুলো। আমার রেজাল্ট দেখার সাহস ছিলনা তাই বাবাকে বললাম,"বাবা তুমি রেজাল্ট দেখে আমায় বলো।" রেজাল্ট প্রকাশ হলো, বাবা আমার রেজাল্ট দেখার পর একগাল মুখে হাসি নিয়ে আমার সামনে এসে বললো, "মা তুই পেরেছিস"। এটা শোনার পর আমি খানিকটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম "কি বলছ বাবা? আমি কতো শতাংশ পেয়েছি?"। বাবা বললো "সাতাশি শতাংশ"। এটা শোনার পর আমি আনন্দে উৎফুল্ল। মা বাবা দুজনেই ভীষণ খুশি। তাদের মুখে হাসি দেখে আর চারিদিক থেকে বন্ধু-বান্ধব, স্যার-ম্যাডাম দের অভিনন্দনের ফোন কল দেখে আমিও আনন্দে আত্নহারা। ইতিমধ্যেই স্কুল থেকে ডেকে পাঠালো মার্কশিট নেওয়ার জন্য। নির্ধারত সময়ে পৌঁছলাম স্কুলে। প্রধানশিক্ষিকা সহ সকল স্যার ম্যাডাম গর্বিত হয়ে তাদের মূল্যবান আশির্বাদ দিলো আমায়।
তার একটু বাদেই যখন আমি দাড়িয়ে ওই মার্কশিট নেওয়ার অপেক্ষায়, আমার চোখ পড়লো আমাকে নিয়ে পরিহাস করা ওই বন্ধুদের উপর। জানতে পারলাম ওরা আমার থেকে কম নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে তাই আমাকে অভিনন্দন জানাতে এলো না। 
ঠিক তখনই আমার মনে পড়লো বড়দের মুখে শোনা একটি প্রবাদ বাক্য - "অহংকারে পতন" । এই কথাটির বাস্তবতা সেইদিনই প্রথমবার নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করলাম আর মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলাম যে জীবনে কখনো কোনো বিষয় নিয়ে অহংকার করবোনা,কোনো ব্যক্তির খারাপ পরিস্থিতির উপহাস করবোনা কারণ এগুলো পতনের রাস্তা প্রশস্ত করে । 
জীবনের এই ঘটনা আমাকে এই নীতি শিক্ষার সাথে পরিচয় ঘটালো।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...