আমার শৈশব কেটেছে নব্বইয়ের দশকের সোনালী দিনে।
তখনই বোধহয় মধ্যবিত্তের ঘরে কেইক কেটে জন্মদিন উৎযাপন শুরু।
বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজন, সবার বাড়িতে কেইক কেটে জন্মদিন পালনের ধুম।
ব্যতিক্রম কেবল আমাদের বাড়ি।
বাবার সামনে জন্মদিনের কথা বললে ভীষন চটে যেতেন।
একবার বড়দির তৎপরতায় ব্রিটেনিয়ার ফ্রুট কেইক দিয়ে আমার জন্মদিন পালিত হয়।
ব্যপারটা বাবার কাছে কতটুকু মনোগ্রাহী হয়েছিল জানিনা।
জন্মদিন পালন না হওয়া নিয়ে কষ্ট থাকলেও, তার থেকে বেশী কষ্ট ছিল বাবার ব্যবহার নিয়ে।
জন্মদিন ঘনিয়ে এলে, চোখের জলে বালিশ ভিজতো।
সময় গড়ালো।
স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি, জীবনকে বুঝতে শিখলাম।
বুঝে গেলাম, আট বছরের যে ছেলেটা চোখের সামনে বাবাকে নির্মমভাবে খুন হতে দেখেছে, ভিটেমাটি হারা ছিন্নমূল হয়ে, রিক্ত হাতে দেশান্তরি হয়েছে, তাঁর কাছে জন্মদিন নামক বিলাসিতা, কতটা বিরক্তিকর।
কালের স্রোতে জন্মদিন শব্দটা, আমার কাছেও তাৎপর্যহীন।
দু'বছর আগে কয়েকটা ছেলেমেয়ে আমার অজান্তে, আমার জন্মদিনকে বিশেষ করার চেষ্টায় মেতেছিলো।
বিষয়টা বেশিক্ষণ চাপা থাকেনি।
দুপুর গড়াতেই শুরু হয় ফিসফাস।
কয়েকজন সহকর্মীকে বলতে শুনলাম,
এই ধরনের আদিখ্যেতাসম্পন্ন শিক্ষকদের জন্যই শিক্ষকদের এতো বদনাম।
কেউ এই ঘটনার জবাবদিহি করলে, বলার মতো কথা থাকবে না আমাদের কাছে।
ছাত্রদের টিফিনের পয়সায় কেনা গিফ্ট নিতে, বিবেকে বাঁধলো না নির্লজ্জটার?
বাচ্চাগুলি ভীষন গা ঘেঁষা ছিলো বলে, তাঁদের কাছে মনের কষ্টটা লোকানো গেলো না।
বলেই দিলাম,
যদি সত্যি আমায় ভালোবাসিস, আর এক টাকারও জিনিস কিনবি না আমার জন্য।
পরের বছরটা, দুই হাজার উনিশ।
ক্লাশে ঢুকতেই সিলিং ফ্যানের উপর থেকে অসংখ্য গোলাপের পাপড়ি ঝড়ে পরলো মাথায়।
কোনোটাতে কলম দিয়ে আই লেখা, কোনোটাতে লাভ, কোনোটাতে ইউ, তো কোনোটাতে মেম।
বাচ্চাগুলি একসাথে চিৎকার করে উঠলো হ্যাপি বার্থ ডে মেম।
পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস না, ভালবাসা দিলাম।
নেবেন তো?
ছোট্টছোট্ট সেই হাতগুলি যে ভালবাসা সেদিন দিলো, সমগ্র পৃথিবীর সম্পদ দিয়েও তা কেনা যাবে না।
আমার কাছে সেই দিনটা অবিস্মরনীয় হয়ে থাকবে সারাজীবন।
No comments:
Post a Comment