Sunday, January 26, 2020

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

প্রজাতন্ত্র দিবসের শুভেচ্ছা

সম্পাকীয়

ইংরেজ মহাকবি উইলিয়াম শেকসপিয়র তাঁর 'রোমিও অ্যন্ড জুলিয়েট' নাটকে বলেছেন নামে কি আসে যায়! কবির এই কথা মানব জীবনে সত্য হলেও একটি লিটল ম্যাগাজিন, সর্বোপরি সাহিত্যের ক্ষেত্রে পুরোপুরি প্রযোজ্য হতে পারেনি! বাংলা সাহিত্যের কাজের নামের বিশেষ গুরুত্ব আছে। আমাদেরকে উপলব্দী করতে শেখানো হয়েছে। লিটল ম্যাগের নামকরণ না হলে বাস্তবে তার অভিমুখ বুঝা কষ্টকর। "মনন স্রোত" মানে মননের স্রোত। আমরা এই রাজ্যে মননশীল একটা স্রোত বয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ করছি। এই সংখ্যা মূলত তারুণ্যের কবিতা।তারুণ্য মানে যে শুধু প্রেম ব্যপারটা সেরকম নয়। আবার প্রেমও। রোমিও জুলিয়েটের কথা তাই প্রসঙ্গক্রমে আসলো।এই সংখ্যায় যাঁরা লিখলেন সবাইকে কৃতজ্ঞতা।

আজ ভারতীয় গণতন্ত্রের সবচাইতে বড় উৎসবের দিনে মনন স্রোতকে প্রকাশ করতে পেরে আমাদের ভালো লাগছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন যারা এবার সবাইকে আবারও ধন্যবাদ। মনন স্রোতকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে এভাবেই সহযোগীতা করবেন এই প্রত্যাশা। 
জয় হিন্দ

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
 জয় দেবনাথ
  সম্পাদক

ছবিতে সুমন || ক্যামেরায় রাহুল বিশ্বাস

চন্দন পাল

কবিতা(৩)

কবিতা আমায় জিজ্ঞেস করে এই সৃষ্টিটাকি তোমার ? 
ক্ষণিক  নিরিক্ষী , বললামঃ না।
 অন্যকেউ হয়তো পাঠিয়েছে। 

কিন্তু না
 মনসায়রে ডুবেও পাইনি কোন  যাত্রী ।
এর মধ্যে তো কোন খবর আসেনি! 

 আরেকবার পরখ করতেই, মনে হল বিষয়বস্তু। 
 না কেউ  পাঠায়নি, আমার ই সৃষ্টি ভুলে গ্যাছি।

 যে জগতের বাড়ি থেকে আমি রচনা করেছিলাম, 
সে জগতের বাড়িতে কদাচিত ঢুকা যায়। 
জগত আবার এসো। পথ চিনাও । 

চৈতন্য ফকির

নদীমানুষ

সব ছিলো প্রতিশ্রুতি ভালোবাসা শ্রদ্ধাও।
ঋণ খেলাপের মতো তুমি সব কিছু খেলাপ করেও
হাসি হাসি শরীর নিরাময় হাসপাতাল সেজে থাকো!
এরকম যাদুবিদ্যা এ কে নন্দীর ম্যাজিকবাক্সে নেই। 
তুমিই প্রকৃত যাদুকর তূণে রাখা বিষমাখা তীর।

প্রিয় নদী হারিয়ে গেলে পিপাসায় রচিত হয় মৃত্যু।

অপাংশু দেবনাথ

কাঁথা

সেলাইও শিল্প হতে পারে মানুষটি জেনেছিলো 
বিয়ের কিছুদিন পরেই।
জীবনের সকল সম্পর্কগুলো 
বিনেসুতোয় সেলাইয়ের মন্ত্র শিখেছিলো বলে,
যাবতীয় বেদনার বলিকাষ্ঠ আগলে ছিলো আজীবন।

নিজের জন্য কিছুই চাইবার ছিলনা তার,
পড়ন্ত রোদের ক্ষণপ্রভা ঠাহর করতে পেরেও
এমন শীতে একটিও সেলাই করে রাখেননি কাঁথা।

পূজা মজুমদার

হারিয়ে গেছে সোনার অতীত


আমার কৃষক হারিয়ে গেছে - হারিয়ে গেছে কৃষি বাউল আমার হারিয়ে গেছে - হারিয়ে গেছে ঋষি ।

হাজার যন্ত্রে ঠাসা পৃথিবী - হাজার যন্ত্র মানব
হাতে পায়ে মানুষ মতোই - অন্তরেতে দানব ।

আমার নদী হারিয়ে গেছে - রয়ে গেছে কূল
হারা নদীর বাঁকে বাঁকে খুঁজি তোমার দুল ।

আমার বৃক্ষ হারিয়ে এখন সাজানো কাঠের গুড়ি 
ইমারতের শীর্ষে বসে তোমরা বাজাও তুড়ি।

আমার সকাল হারিয়ে এখন হারায় অলস বিকাল 
এই সে একাল চাইনি আমি হারিয়েছি সেকাল ।

ফেরিওয়ালার হাকের দুপুর হারিয়ে গেছে সাঝে 
কাক ডাকা ভোর - সোনার নুপুর - অজানারই মাঝে।

আমার গ্রামটি হারিয়ে গেছে - শহরের পর শহর 
কাদামাটির পথটি কাঁদে অট্টালিকার বহর।

আমার কলম হারিয়ে গেছে - মনে হাজার আঁকিবুকি 
শূন্য খাতা শূন্য পাতা - তাই পদ্য দেয়না উঁকি।

সোনার অতীত হারিয়ে আমি বর্তমানের একা
কাব্য আমার তাইতো এখন অশ্রু দিয়ে লেখা।

সৈকত সরকার

রাতপরী 


কবির কলমে আমি রাতপরী,পুলিশের খাতায় দেহ ব্যবসায়ী।

সংবাদ শিরোনামে মক্ষিকা রানী, 
যদিও সব একই কথা তবে বেশ্যাটাই চিরস্থায়ী।।

তোমরা রাজভোগ আমি নর্দমা
আমি গতর খাটাই
তোমার সাদা জামা, বলছো 'ব্যবসা কেনো করো ?'

বাবু
তোমরাইতো খদ্দের! 
পেট বলেছে বাঁচতে হলে খদ্দের তুমি ধরো!!

সকালের সাদা যখন রাতপরীর চোখের কাজলে কালো হয়ে যায়, তোমার সমস্ত উত্তাপ আমার তলপেটে স্থান পায়।

তারপর 
তোমরা আবার রাজভোগ আমি আবার নর্দমা ।

উর্মি সাহা

যুবকের প্রতি

এই সমাজ বড্ড বিষাক্ত,,
সমাজ আজ সত্যি বিষণ্ণ;
বাকহীন হয়ে আছে সমাজ প্রতিনিধি,
আর অলস হয়ে মরছে যুবক শ্রেণী।
চার দেওয়াল জুড়ে আঁকছে কতশত ফন্দি,
বর্তমান পৃথিবীটা ছোটো হয়ে----
সেই ছোট্ট বোকাবাক্সতেই বন্দি।।
যুব সম্প্রদায় ভুলেছে,নিজের দায়বদ্ধতা;
ভুলেছে বিবেকানন্দের পথপ্রদর্শিত কথা।
স্মার্ট ইন্ডিয়াতে হাতে উঠে না 'কর্মযোগ',,,
ইতিহাস হয়েছে যেন স্বামীজির 'রাজযোগ'।
শ্লোক ওঠে না আর বীর সন্ন্যাসীর,,,
চেঁচিয়ে আর বলে না কেউ----
   ''ওঠো,জাগো,লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত 
                            ••••••••••••••••••থেমো না।"  
যুবাদলেরকানে পৌঁছায় না জনগোষ্ঠীর বিলাপ--
ভিড় করে শুধু নম্বরলেস শবের সমাহার।
ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড,ডিজিটাল সোসাইটি----,,
অথচ,আজও পিছিয়ে উৎকৃষ্ট যুবক শ্রেণী।
রঙিন পোশাকেই লুকায়িত নর-নারী----
বুকের পাঁজর চিরে রক্ত ঝরায় নিপীড়িত গোষ্ঠী;;
যুবাদল ভুলেছে নিজস্ব কর্ম-
বৈষম্য করেছে ধর্ম আর বর্ণ।
এখন ওঠো,জাগো----নতুন সূর্যের সাথে---
সমাপ্ত হোক এই অভিশপ্ত রাত,,
আর চেঁচিয়ে,নব উন্মাদনায় বলো--
এবার শুনবে নবযুবাদের ডাক।

                               

বিপ্লব দে

একবার তোমাকে পেলে


চলো দু'জোড়া হাত একত্রে রেখে নৌকার চাপি
বিশ্বাস কর পেছনে ফেরার ভিয় নেই ।
ভবিষ্যত-ই আমাদের শেষ ঘাট ,
একবার নেমে গেলে আর নৌকায় চড়বোনা !
তুমি রাত্তিরে বের হলে ,
দরজাটা একটু খোলা রেখে যেও
আমি জানি তুমি আসবেই
যেমন আসে দিনের পরে রাত্রি ।
যদিও বা তোমার ফিরতে সময় লাগে
ভোরের আলো দরজা দিয়ে ঢুকে 
আলতো করে আমার গালে হাত বুলিয়ে
তোমার অনুপস্থিতি ভুলিয়ে দেবে !
তুমিতো জানোই একবার তোমাকে পেলে
আমি নিজেকে ভালোবাসতে ভুলে যাই ।

জয় দেবনাথ

প্রশ্ন

এমনও তো হতে পারতো যে,
আমাদের কখনো দেখা হয়নি; কথা হয়নি!

কখনো পাশ কেটে চলে যেতে তুমি
"এক্সিউজমি, প্লিজ সাইট"
আমি নিঃশব্দে সরে যেতাম!

তুমি তোমার মেরুতে, আমি আমার।
সমদূরত্বে দাঁড়িয়ে দুজন দুজনার থেকে দুহাজার কোটি স্কয়ারফিট দূরে!

এই যে স্মৃতি, অত স্মৃতি
এসব আবছা হয়ে গেলে আমরা কি সত্যিই একদিন দুজন দুজনার পর হয়ে যাবো? 
অচেনা হয়ে যাবো!
আমরা কি আসলে কেউ না? 

সুজন দেবনাথ

মুখোশ

দিনের আলোয় মুখোশ পইরা
ভালোপাইছিল যারা
একদিন মুখোশ খুইল্যা হৃদয় ভাইঙ্গা
চইল্যা গেছে তারা
বয়স আমার অল্প আছিল
তাই ঠকছি আমি প্রচুর
অখনে মানুষের চাইতে দাম বেশি ভাই
বন জঙ্গলের কচুর
সবই আছিল তাদের অভিনয়
জানছি আমি যেদিন
হৃদয় আমার ভাইঙ্গা চুইরা
এডাল্ট হইলাম সেদিন। 

অনুপম দেব

সরস্বতী  

আমরা শিক্ষার্থী সকলে মিলে 
বিল্বপত্র, দূর্বা ও অম্রমুকুল দিয়ে,
শুদ্ধচিত্তে তোমার চরণে দেই অঞ্জলি 

ওগো বিদ্যাদেবী
প্রফুল্লিত মন নিয়েll
দেবী পঞ্চমী তুমি বাগেশ্বরী 
হে মাতা তোমায় প্রার্থনা করি,,
           দাও আমাদের শুভমতি
           করো জ্ঞানী-গুণী অতি,,
জ্ঞানময়ী তোমার চরণ ধরি 
মাতা তুমিই ভারতী 
জ্ঞানসাগর বিদ্যাদেবী 

অভীককুমার দে

মাটির কবিতা

ভাংমুন থেকে স্বর্গধোঁয়া কার্পেটের মতো
রাস্তায় শুয়ে, নিচে থেকে উঁচু দেখছে, অথচ
উপর থেকে নিচের দিকে নদীটি, সবুজ

কতদূর বয়ে গেলে কবিতা- জল !

ঝর্ণার পায়ে নূপুর বাঁধে জম্পুই, 
খুশিতে নেচে ওঠে মেয়ে
কাঞ্চনের বাড়ি আসে, শব্দ শোনায়;

কাঞ্চন নিঃশব্দে কবিতা শোনে, মাটির কবিতা। 

বিনয় শীল

কবিতার লজ্জা 

কবিতা,
তোমার প্রতিবাদ যখন 
কারো সুতোয় বাঁধা,
প্রতিকার তখন
বুক চাপরিয়ে মরে।

কবিতা,
হ্যাঁ, তোমাকে বলছি,
তোমার প্রতিবাদ যখন,
সুযোগ সন্ধানী,
প্রতিকার তখন
উত্তপ্ত অশ্রুতে
অঙ্গুষ্ঠ দেখায়।

কবিতা,
তোমার প্রতিবাদ যখন- 
ছাতার তল থেকে আসে,
প্রতিকার তখন
উদ্বাহু বন্ধনে ঝুলন্ত।

কবিতা, 
তোমার প্রতিবাদের
ভিত্তি যখন 
প্রতপ্ত রূঢ় বাস্তব,
শিরোপরে উন্মুক্ত আকাশ
প্রতিকার তখন 
অর্গলমুক্ত বায়ুতে
তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

দিপ্সী দে

 সমাজ সচেতনায় : সরস্বতী 


আজ থেকে কিছুকাল আগে সমাজে প্রচলিত 
ছিল যে মেয়েদের পেটে বেশী বিদ্যে মানে 
মেয়ে অকালে বিধবা হবে
এই ভাবনা ঘোষ গিন্নির সে তার পূত্রের জন্য 
বধু আনবে।

ছেলে কে বলতে বলেছেন মা আমি তোমার জন্য  দাসী আনতে যাচ্ছি।আজ ও বিয়ের আসরে শোনা যায় এই কথা।
মেয়ে জন্ম নিলে এখনো কোনো পরিবারের বউ 
এর দেহ গাছে ঝোলে।

আমরা যতই  আধুনিক হয় না কেন?
মেয়েদের আজ ও সণ্মান করতে পারি না।
যতই  বলি সমান অধিকার।কোথাও না কোথাও  শুনতে হয় তুমি মাইয়া মানুষ।মাইয়া মানইসের এত রাগ কেনে।

এখনো শুনতে হয় যতই  পড়ালেখা করো না কেরে ভাতের ডেগ মাজন লাগবো।
এই কাজের দায়িত্ব কি শুধু মেয়েদের।
আর এর সাথে পড়াশোনা আর আধুনিকতার কি সম্পর্ক।
তবে দেখা যায় সমাজে অনেক দিন ধরেই দেবী রূপে সরস্বতী র পূজা হয়ে আসছে সেখানে আবার মেয়েদের বিদ্যার অভাব দেখা যায়।
এখনো কোথাও  না কোথাও সমাজে মেয়েরা পড়াশোনা তে অবহেলা র শিকার।দেখা যায় পরিবারে অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেলে মেয়ে কে বিয়ে দেওয়ার কথা উঠে দায় এড়ানোর জন্য।


তবে সে সমাজে ঘটা করে সরস্বতী  
পুজা হয়। উচ্ছারিত হয় ইয়া কুন্দেনো তুষার ধবলা ইয়া শুভ্র বস্ত্রাবৃতা ইয়া বিনাবর দন্ড মন্ডিত করা  ইয়া শে্বত পদ্মাসনা ।

সে সমাজে সরস্বতী নিজে দাবী রাখে 
আমি মেয়ে বিদ্যার দেবী।মেয়েদের শিক্ষার অধিকার আছে।

উৎপল দেবনাথ

কাজলে রক্তের দাগ

রোজই লেখা হয় বেদনার চিঠি
বেদনা দিয়ে বেদনা খোঁজি।
তোমার চোখের কাজলে লাল রক্তের দাগ আমি দেখেছি
নিবৃত্তি হয়নি সেই নিবন্ধ।
কাজল কালো শয্যার দাগ কখনো দেখিনি
কখনো দেখিনি, ছদ্মবেশে তার আসল রূপ।
তুমি কি এই চেয়ে ছিলে?
উন্মাদের মতো চুঁয়ে পরা আগুনে ডুবে যাওয়া 
লাল অগ্নি শিখার মতো রক্তাক্ত হয়ে আমি ডুবে যাবো।
তোমার কোমরের বাঁধন রক্তাম্বরে বাঁধা
দীর্ঘনিঃশ্বাসে নির্ভীক শান্তির ভাবনা।
আজ বুকে উষ্ণতা ঢেলে দিয়ে 
অন্ধকারাচ্ছন্ন তসমা রাত্রি খোঁজো।

অনির্বান রায় গুপ্ত

আলো নাকি অন্ধকার 

এখন তো রোদ নেই আছে রোদ এর আলো, 
এ জগতে যা আলোর উৎস তার পেছন টা শুধুই কালো. 
অন্ধকারের পরিধি যাচাই করাই কঠিন, 
স্বপ্ন গুলো আজ তাই বড়োই বেরঙিন. 
তোমার স্বপ্ন তোমার ই থাক চারিদিক তায় আলোয় ভরা, 
ওই দেখো অন্ধকারেই আকাশ জুড়ে ফুটছে কত তারা।

সংগীতা দেব

অনিচ্ছাকৃত মুক্তি

আজ তোমায়,ছেড়ে দিলাম অনিচ্ছাকৃত।
উড়িয়ে দিলাম মুক্ত পাখির মতো।
বন্ধনে যে তুমি,মুক্তির স্বাদ খুঁজতে।
আমার বন্ধনের মূল্য কিছুই ছিল না,
কত সহজেই ভুলে যাওয়া যায়।
বলে ফেলা যায়,কতটা মূল্যহীন ছিলাম।
চাওয়ার চাইতে, বেশিই ছিল সবকিছু,
তাই হয়তো মূল্যটা জানলেনা।
একটু গুরুত্ব পেতে চেয়েছিলাম।
তাই বলেই সারাদিন মেতে থাকতাম,
তুমি আর তোমার চিন্তারা শুধু মনে ভিড় করত।
তোমায় দিলাম মুক্তি,আমি যে মুক্তি পেলাম না!
আরো যেন জড়িয়ে পড়ছি, তোমার নেশার জালে।
ইচ্ছে করেই বন্দী করলাম, নিজের মাঝে দুঃখ।
মুক্তির মাঝে কি এতটা সুখ আছে!
যা আমার বন্ধনে ছিল না?
আমার বন্ধনের মায়া কি তুমি,এতো সহজেই পারবে কাটাতে?
অনেক ভাবনা আর প্রশ্ন মনে, মুক্তি দিলাম তোমায়।
ভালোবাসি,তাই মুক্তির মাঝেও
তোমার জন্য ভালোবাসা কাজ করে।

সামিন শুভ

অনুতাপ

আমি ভালোবেসে ছিলাম।  
নিজের বাস্তবতার চাক্ষুষ হতেই আমি পিছিয়ে ছিলাম।
রাতভর কষ্ট আমার সপ্নের গলা চেপে,
সাহসের ঠ্যাং ভেঙ্গে আমি ভীষণ কেঁদেছিলাম। 
যার যোগ্য নই তার স্বপ্ন দেখা পাপ,
নিজেতেই নিজে কত চেয়েছিলেম মাফ,
আমার ভীতর বাহিরে সত্যি ভীষণ অনুতাপ |
প্রতিরাত স্মৃতির কাটে কোন বিরহে,
বুকের মাঝখানে যেন বিষভরার চাপ |
অনুতাপ! 

সজীব পাল

নন্দিত মিলন

কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা পিকনিকে যাই । তখন আমার বয়স সতেরো কি আঠারো।আমি এত ভ্রমনপিপাসু নয়।,বন্ধুদের চাপে পড়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধেও কখনো কখনো অনেক কিছুই করতে হয়।আমিও তা করলাম

বাড়ি থেকে মোরগ কেটেকুটে এনেছি ,এখানে শুধু রান্না করবো ।অজয় রান্না বসিয়েছে আমরা কয়জন তেল মশলা এগিয়ে দিচ্ছি ।সে খুব ভালো রান্না করে ।রায়ানকে পাঠিয়েছি শুকনা ডালপালা আনতে । আমরা সাতজন স্বল্প কাজেই আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছি ।
ঘন্টাখানেক বাদে রান্নাশেষে সবাই মিলে ভাঁজা মাংস অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ও ভাত সহ গাড়িতে রেখে আমরা ঘুরতে বের হই।

এই কোনো পার্ক বা চিড়িয়াখানা কোনোটাই নয়।অভয়ারণ্যের মতো দেখতে হলেও ঘন অরণ্যাবৃত নয়,লঘু জঙ্গল ।এইটা পিকনিকের জন্য গতবছর আবিষ্কার হয়েছে ।নতুন হিসেবে ট্যুরিস্টদের দারুন ভির হয় । আমরা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসেছি ,কাজেই এখন তেমন লোক নেই। বড়ো বড়ো কিছু চেনা গাছ যেমন শাল,সেগুন,মেহগনি , ইত্যাদি তবে যেই গাছটার জন্য মন কাড়ে তা হলো কাজু-বাদাম গাছ।ডালা গুলি নিচু হয়ে নানারকম ভাবে বেঁকে আছে।
আমি আর নীল একদিকে ,বাকিরা অন্যদিকে । 
"আচ্ছা নীল গাছগুলো দেখে তোর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করে?"

"হুম করে "

"কি ইচ্ছে করে?"

"ইচ্ছে করে দুইটা কাজু নিয়ে তোর মাথায় ঠাস করে ছুঁড়ে দিই। এখানে এসেছি চিন্তাভাবনা শূন্য হয়ে একটু হালকা মনে গভীর আনন্দ উপভোগ করতে, আর তুই বলছিস গাছ দেখে ভাবতাম !"

"এখন তো কাজু নেই ,তুই আমাকে ডাল ভেঙে ছুঁড়ে মার"

বকবক না করে দেখ কত মেয়ে,ইস একটারে যদি পেতাম,,,

নীলের সাথে আর কথা বলিনি ।ও আমার কথা পাত্তা দেয় না । তাছাড়া সে এখন মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলবে।মেয়েদের সে এক্কেবারে কথায় কথায় ব্যাডরুম পর্যন্ত নিয়ে যায়, তবুও সে আমার প্রিয় বন্ধু । কেন? সেই উত্তর জানি না । যতই আমাকে নীল উপেক্ষা করে ততই তাকে ভালো লাগে ।হয়তো দীর্ঘদিন একসাথে চলার অভ্যাসে ।আসল গল্পে আসা যাক ।
এখন বেলা দেড়টা ।শীতকালে বেলাছোট, সাড়ে চারটা না বাজতেই সূর্যকে নরম রক্তিম করে তুলে গোধূলি আকাশ। কথা না বলে হাঁটছি ।নীল আছে আপন মনে,,,,গুন গুন করে গান গাইছে ,গানের সুর ধরতে পারলেও কথা ধরতে পারছি না। জায়গাটা অতি নীরব।নীলের গুঞ্জনের সাথে পাখির কিচিরমিচির জবর মিলে গেছে ।নীল আমাকে বলল ,"বিড়ি খাবি?"

" আছে তোর কাছে?"
আমরা প্রায় সময় বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গেলে বিড়ি ফুঁকি । 
"এখানে ঢোকার মুখে দেখলাম কয়েকটা টঙ দোকান,ওখানে পাওয়া যেতে পারে। চল ।"

টাকাটা আমাকেই দিতে হলো ,নীলের কাছে নেই ।দোকানদার থেকে কয়েকটা দেশলাই কাঠি চেয়ে নিয়েছি আমাদের মেঝের কাঠি শেষ । 
দোকান থেকে সত্তর আসি মিটার দূরে অনেক লোকের ঠেসাঠেসি ।নীলকে বললাম চল এগিয়ে দেখি এত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কেন।কোনো দুর্ঘটনা সম্ভব ।নীলও সমোৎসাহে বলল চল । 

যা দেখলাম প্রথমে খুব অস্থির লাগলেও পরক্ষণেই বিষয়টি ধরে ফেলি ।যুগল পাগল ।পুরুষটির বয়স আন্দাজ করলে একত্রিশ কি পঁয়ত্রিশ ।কিন্তু মেয়েটির বয়স অনুমান করা দুর্বোধ্য ।তবে তিরিশের কম। মেয়েটি যথেষ্ট কালো ।নারীরা যতটা কালো হওয়া উচিত নয় ঠিক ততটাই কালো।পুরুষটি রোগাপাতলা,টিকালো নাক , বর্ণ ঈষৎ ফর্সা ।দুজনের অর্ধনগ্ন ।হাঁটুর অনেক উপরে ছেঁড়াতালি হাফ প্যান্ট (আন্ডারওয়ার বলা যেতে পারে) ।মেয়েটির বুক সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ।বর্তুল স্তনদ্বয়,বৃদ্ধের স্তন ন্যায় ঝুলে আছে।
আশে পাশে লোকজন তুমুল কৌতুহল চোখে এই দৃশ্য দেখছে ।পুরুষটি মেয়েটির চঞ্চু কামড়ে ধরছে আর মেয়েটি হাসছে ।এই হাসির অর্থ কি স্পষ্ট বোঝা না গেলেও সে যে এই কাজে অত্যন্ত নন্দিত তা অনুমান করা যায় ।পুরুষটি তার প্রতিটা অঙ্গ, নাভি থেকে শুরু করে সব ছুঁয়ে যাচ্ছে অবলীলায় ।ওই যৌবনবতী নিথর এবং পায়ে উত্তেজনার এক চিকন আভাস।ওদের চতুর্দিক ঘিরে থাকা কাউকেই তোয়াক্কা না করে মিলন খেলা খেলে যাচ্ছে গভীর সুখে ।সবাই তার মজা লুটছে ।হয়তো পাগল বলে ! কিন্তু ওদের পাগল বলতে কণ্ঠে বাঁধে ।পাগলরা কি করে বুঝে নারীদের শরীর জুড়ে পুরুষদের সুখ!তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি না এখানে কাদের সভ্য বলবো ।আমরা যে এই যুগল মিলন প্রত্যক্ষ করছি আমরা সভ্য!নাকি ওরা যে এই সর্বসমক্ষে নিজেদের দৈহিক চাহিদার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে ওদের বলবো অসভ্য!পৃথিবী সৃষ্টি লগ্ন থেকে দীর্ঘকাল আদি মানুষ যখন তখন যেখানে সেখানে এই মিলনে মেতে ওঠতো ।এইভাবে মানুষ এক থেকে দুই হয়েছে ।তবুও এতকাল ধরে এই খেলা গোপন ।কেন জানি মনে হয় ওদের এই মিলনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর ইঙ্গিত দিতে চাইছেন ওরা যা করছে এইটাই পৃথিবীর ভবিষ্যত এবং সত্য ।লোকের আরো ভিড় বাড়ছে ।কেউ কেউ শব্দ করে বলছে, "পাগলার জোর আছে। পাগলি আজ শেষ ।"

নীল আমাকে বলল," সৌম্য চল , এখানে থেকে কাজ নেই ।"

" উঁহু,, তোর না সারাদিন মেয়েদের এই করতে মন চায় ওই করতে মন চায়, এখন কি হলো দেখ!"

" ধ্যাত,,,, ।"
আমরা চলে এলাম লোক অনবরত বেড়েই চলছে ।ওদের খেলাও সাঙ্গ হয় না। যেন যত লোক বাড়ছে ততই ওরা শক্তি পাচ্ছে। 

প্রীতম শীল

অকাল বোধন
      
বহুকাল ধরে শোষণ দেখেছি,
ইতিহাসের পাতায় পাতায়।
দেখেছি আমি বিধবা স্ত্রীকে,
স্বামীর সাথে জলন্ত চিতায়।
আজও কুমারী জ্বলছে এ যুগে,
কোন এক কালভার্টের নিচে।
কোন সে রাজত্ব কায়েম আছে,
এই নৃশংস বর্বরতার পিছে।
ইতিহাসে কোনো কালের মৃত্যু নেই,
নেই কোনো সংশোধন।
তাইতো মানব সমাজে দেবীদের,
হয় বারে বারে অকাল বোধন।

গৌরাঙ্গ রক্ষিত

অবুঝ মন 

বারে বারে দিয়েছো যে দুঃখ কষ্ট , 
তবু অবুঝ মন সব ভুলে ছুটে যায় তোমার কাছেই !
প্রতি ক্ষণে ক্ষণে দিয়েছো যে শুধুই কষ্ট ,  
সব অভিমানকে বন্দি করে ছুটে গেছি তোমার কাছেই ! 
প্রতিটা মুহুর্ত চেয়েছি তুমি ভালো থাকো , 
তোমায় যে বড্ড বেশি ভালবাসি ।
তাই আজ ও গেলাম , তোমার টানে ছুটে।
হাতে এলো শুধুই নিরাশার ছোঁয়া,
তবুও স্বপ্ন বোনা, 
যদি একদিন, বোঝে নাও ভালোবেসে।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...