Sunday, January 26, 2020

সজীব পাল

নন্দিত মিলন

কয়েকজন বন্ধু মিলে আমরা পিকনিকে যাই । তখন আমার বয়স সতেরো কি আঠারো।আমি এত ভ্রমনপিপাসু নয়।,বন্ধুদের চাপে পড়ে ইচ্ছের বিরুদ্ধেও কখনো কখনো অনেক কিছুই করতে হয়।আমিও তা করলাম

বাড়ি থেকে মোরগ কেটেকুটে এনেছি ,এখানে শুধু রান্না করবো ।অজয় রান্না বসিয়েছে আমরা কয়জন তেল মশলা এগিয়ে দিচ্ছি ।সে খুব ভালো রান্না করে ।রায়ানকে পাঠিয়েছি শুকনা ডালপালা আনতে । আমরা সাতজন স্বল্প কাজেই আষ্টেপৃষ্টে লেগে আছি ।
ঘন্টাখানেক বাদে রান্নাশেষে সবাই মিলে ভাঁজা মাংস অর্ধেক খেয়ে বাকিটা ও ভাত সহ গাড়িতে রেখে আমরা ঘুরতে বের হই।

এই কোনো পার্ক বা চিড়িয়াখানা কোনোটাই নয়।অভয়ারণ্যের মতো দেখতে হলেও ঘন অরণ্যাবৃত নয়,লঘু জঙ্গল ।এইটা পিকনিকের জন্য গতবছর আবিষ্কার হয়েছে ।নতুন হিসেবে ট্যুরিস্টদের দারুন ভির হয় । আমরা ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে এসেছি ,কাজেই এখন তেমন লোক নেই। বড়ো বড়ো কিছু চেনা গাছ যেমন শাল,সেগুন,মেহগনি , ইত্যাদি তবে যেই গাছটার জন্য মন কাড়ে তা হলো কাজু-বাদাম গাছ।ডালা গুলি নিচু হয়ে নানারকম ভাবে বেঁকে আছে।
আমি আর নীল একদিকে ,বাকিরা অন্যদিকে । 
"আচ্ছা নীল গাছগুলো দেখে তোর কিছু ভাবতে ইচ্ছে করে?"

"হুম করে "

"কি ইচ্ছে করে?"

"ইচ্ছে করে দুইটা কাজু নিয়ে তোর মাথায় ঠাস করে ছুঁড়ে দিই। এখানে এসেছি চিন্তাভাবনা শূন্য হয়ে একটু হালকা মনে গভীর আনন্দ উপভোগ করতে, আর তুই বলছিস গাছ দেখে ভাবতাম !"

"এখন তো কাজু নেই ,তুই আমাকে ডাল ভেঙে ছুঁড়ে মার"

বকবক না করে দেখ কত মেয়ে,ইস একটারে যদি পেতাম,,,

নীলের সাথে আর কথা বলিনি ।ও আমার কথা পাত্তা দেয় না । তাছাড়া সে এখন মেয়েদের নিয়ে অশ্লীল কথা বলবে।মেয়েদের সে এক্কেবারে কথায় কথায় ব্যাডরুম পর্যন্ত নিয়ে যায়, তবুও সে আমার প্রিয় বন্ধু । কেন? সেই উত্তর জানি না । যতই আমাকে নীল উপেক্ষা করে ততই তাকে ভালো লাগে ।হয়তো দীর্ঘদিন একসাথে চলার অভ্যাসে ।আসল গল্পে আসা যাক ।
এখন বেলা দেড়টা ।শীতকালে বেলাছোট, সাড়ে চারটা না বাজতেই সূর্যকে নরম রক্তিম করে তুলে গোধূলি আকাশ। কথা না বলে হাঁটছি ।নীল আছে আপন মনে,,,,গুন গুন করে গান গাইছে ,গানের সুর ধরতে পারলেও কথা ধরতে পারছি না। জায়গাটা অতি নীরব।নীলের গুঞ্জনের সাথে পাখির কিচিরমিচির জবর মিলে গেছে ।নীল আমাকে বলল ,"বিড়ি খাবি?"

" আছে তোর কাছে?"
আমরা প্রায় সময় বাড়ি থেকে দূরে কোথাও গেলে বিড়ি ফুঁকি । 
"এখানে ঢোকার মুখে দেখলাম কয়েকটা টঙ দোকান,ওখানে পাওয়া যেতে পারে। চল ।"

টাকাটা আমাকেই দিতে হলো ,নীলের কাছে নেই ।দোকানদার থেকে কয়েকটা দেশলাই কাঠি চেয়ে নিয়েছি আমাদের মেঝের কাঠি শেষ । 
দোকান থেকে সত্তর আসি মিটার দূরে অনেক লোকের ঠেসাঠেসি ।নীলকে বললাম চল এগিয়ে দেখি এত মানুষ দাঁড়িয়ে আছে কেন।কোনো দুর্ঘটনা সম্ভব ।নীলও সমোৎসাহে বলল চল । 

যা দেখলাম প্রথমে খুব অস্থির লাগলেও পরক্ষণেই বিষয়টি ধরে ফেলি ।যুগল পাগল ।পুরুষটির বয়স আন্দাজ করলে একত্রিশ কি পঁয়ত্রিশ ।কিন্তু মেয়েটির বয়স অনুমান করা দুর্বোধ্য ।তবে তিরিশের কম। মেয়েটি যথেষ্ট কালো ।নারীরা যতটা কালো হওয়া উচিত নয় ঠিক ততটাই কালো।পুরুষটি রোগাপাতলা,টিকালো নাক , বর্ণ ঈষৎ ফর্সা ।দুজনের অর্ধনগ্ন ।হাঁটুর অনেক উপরে ছেঁড়াতালি হাফ প্যান্ট (আন্ডারওয়ার বলা যেতে পারে) ।মেয়েটির বুক সম্পূর্ণ উন্মুক্ত ।বর্তুল স্তনদ্বয়,বৃদ্ধের স্তন ন্যায় ঝুলে আছে।
আশে পাশে লোকজন তুমুল কৌতুহল চোখে এই দৃশ্য দেখছে ।পুরুষটি মেয়েটির চঞ্চু কামড়ে ধরছে আর মেয়েটি হাসছে ।এই হাসির অর্থ কি স্পষ্ট বোঝা না গেলেও সে যে এই কাজে অত্যন্ত নন্দিত তা অনুমান করা যায় ।পুরুষটি তার প্রতিটা অঙ্গ, নাভি থেকে শুরু করে সব ছুঁয়ে যাচ্ছে অবলীলায় ।ওই যৌবনবতী নিথর এবং পায়ে উত্তেজনার এক চিকন আভাস।ওদের চতুর্দিক ঘিরে থাকা কাউকেই তোয়াক্কা না করে মিলন খেলা খেলে যাচ্ছে গভীর সুখে ।সবাই তার মজা লুটছে ।হয়তো পাগল বলে ! কিন্তু ওদের পাগল বলতে কণ্ঠে বাঁধে ।পাগলরা কি করে বুঝে নারীদের শরীর জুড়ে পুরুষদের সুখ!তবে একটা জিনিস বুঝতে পারছি না এখানে কাদের সভ্য বলবো ।আমরা যে এই যুগল মিলন প্রত্যক্ষ করছি আমরা সভ্য!নাকি ওরা যে এই সর্বসমক্ষে নিজেদের দৈহিক চাহিদার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে ওদের বলবো অসভ্য!পৃথিবী সৃষ্টি লগ্ন থেকে দীর্ঘকাল আদি মানুষ যখন তখন যেখানে সেখানে এই মিলনে মেতে ওঠতো ।এইভাবে মানুষ এক থেকে দুই হয়েছে ।তবুও এতকাল ধরে এই খেলা গোপন ।কেন জানি মনে হয় ওদের এই মিলনের মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর ইঙ্গিত দিতে চাইছেন ওরা যা করছে এইটাই পৃথিবীর ভবিষ্যত এবং সত্য ।লোকের আরো ভিড় বাড়ছে ।কেউ কেউ শব্দ করে বলছে, "পাগলার জোর আছে। পাগলি আজ শেষ ।"

নীল আমাকে বলল," সৌম্য চল , এখানে থেকে কাজ নেই ।"

" উঁহু,, তোর না সারাদিন মেয়েদের এই করতে মন চায় ওই করতে মন চায়, এখন কি হলো দেখ!"

" ধ্যাত,,,, ।"
আমরা চলে এলাম লোক অনবরত বেড়েই চলছে ।ওদের খেলাও সাঙ্গ হয় না। যেন যত লোক বাড়ছে ততই ওরা শক্তি পাচ্ছে। 

No comments:

Post a Comment

অনুপম রায়

সতেরো বছর পর সতেরো বছর পর কি অবসাদ সেটা ধারণা না থাকাই ভালো। যাদের তুমি রেখে গেছ আমাদের হয়ে, তারা এখন উন্মাদ শহরের এক কোণে বসে শ্বাস নেয়। জ...