Thursday, March 31, 2022

স্বাগতম!

সংখ্যা : মার্চ, ২০২২ইং

সম্পাদকীয়

কোথায় কি, পান্তাভাতে ঘি! এ যাবৎ কতকিছুই ভাবা হয়, অধিকাংশই করা হয়ে উঠে না। বেশিরভাগ সময়ই অন্তরায় হয় পরিস্থিতি। ভাবনার জগৎ বড় সুন্দর। ভাবনা থেকেই কিছু কিছু কবিতা আসে, তা নিয়েই যাপন হয় কিছু মানুষের। অনেক কবির। এই সংখ্যাটিতে আমরা সেটিই দেখানোর চেষ্টা করেছি। যাঁদের লেখা আমরা নিতে পারিনি, নিতান্তই ভুলভ্রান্তি ও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে তাঁদের কাছে আমাদের ক্ষমাপ্রার্থনা রইলো। মানবজাতির কল্যাণে সাহিত্যও অংশীদারিত্বের মাত্রা বৃদ্ধি করুক এ আশা রাখছি। সকলে কুশলে থাকুন।

বিনীত
সম্পাদক
মনন স্রোত


সম্মানিত পাঠক সমীপেষু

হৃদয় শীল

উদ্দেশ্য

আজো বুঝলো না । মানুষ হয়ে মানুষের কুলে জন্ম। কারুর কাছে সুখের কারণ কাছের গর্বের। এই দেহটা যে জীবনে চলার পথে নিমিত্ত মাত্র। প্রকৃতি উপাদানে তৈরি দেহ সৌন্দর্য, একদিন প্রকৃতিতে মিশে যাবে। তারই মধ্যে জাবতিক মায়া মমতা বন্ধন। তারই মধ্যে কে ধনী হতে পেরেছে কে গরিব। কে ভালো হতে পেরেছে কি খারাপ। সুখ কে সবাই সর্বদা দেহে আকর্ষণ করে। এগুলির মধ্যে সমাজের মধ্যে তোমার শ্রেষ্ঠ তা প্রকাশ করা। এগুলি মধ্যে একে অন্যের দুঃখকে ভাগ করে নেয়া উচিত। নিজর সুখ টাকে একে অন্যের সাথে ভাগ করে নেওয়া। এই দেহটা যে গুণের সমষ্টি। দেহ মৃত্যুর পরেও যেন মানুষ তোমাকে তাদের অন্তরে স্থান দিতে পারে। সেই ভাবনায়় গড়ে তুলো জীবন। শুধু চাই এই জিবনের চলার পথে কিছু প্রয়োজনীয় তার উপাদান। সেটা তোমার মধ্যে বিদ্যমান। ধৈর্য,শক্তি, নিষ্ঠা ,ভক্তি ,প্রেম, শ্রদ্ধা, দয়ালু , বুদ্ধি। 

মৌসুমী গোয়ালা

রঙের খেলা

এক ফোঁটা, দুই ফোঁটা, তিন ফোঁটা, রঙ
তরল ধারায় মিলাই অবিরাম।
খুঁজে পাইনা সে রঙটাকে,
যার পরশে স্নিগ্ধতা আরাম।

রঙের নেশায় বুঁদ হয়ে
পরতে পরতে মিশিয়ে চলি।
ইপ্সিত রঙের প্রবল আশে
আঁচড় কাটে আমার তুলি।

আঁকতে থাকে মরু প্রান্তর,
ধূসর কান্ডে নবীন পাতা।
অন্তর্মানসে প্রগাঢ় চেতনার প্রবাহ
বর্ষোপলেরর শিরে রঙিন ছাতা।

এলোমেলো ভাবে মিশে গিয়ে,
তৈরি করে নিরবচ্ছিন্ন বর্ণালি।
নির্বর্ষ তরলের অতল স্রোতে,
ভেসে যায় বিভ্রান্ত রঙ-গুলি।

গোপাল দে

সমাধান

ক্রোশের পর ক্রোশ চলতে চলতে
এক অসম সীমারেখায়
হঠাৎ থমকে দাঁড়ায় জীবন গাড়ি।
জরাজীর্ন এই পৃথিবীর পানে
উঁকি মেরে দেখে
কিছু প্রশ্ন নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে আছে
সঠিক উত্তরের আশায়।
এখানে দুর্বলের উপর অবাধে চলে
সবলের আসুরিক অত‍্যাচার,
কারণ কার্যের ধার না ধরে
প্রতিনিয়ত চলছে শোষণ,ধর্ষণ আর
মিথ‍্যাচারের গল্প।
কবির স্বপ্নে দেখা রঙিন পৃথিবী এখন
ধর্মযুদ্ধ আর ভ্রাতৃহত‍্যার নীরব সাক্ষী।
জীবনের জয়গানের স্বপ্ন এখানে গুমড়ে কাঁদে,
ভালোবাসার তুলিতে শেষ কালিবিন্দুটিও
অট্টহাসি দিয়ে শুকিয়ে যায় নিমেষে,
হাজার রক্তবিন্দু আজও প্রশ্ন করে,
পেতে চায় এই জীবনযুদ্ধের
নিশ্চিত সমাধান।

মিঠুন দেবনাথ

জীবন যুদ্ধ
 
যখন কেহ জিঞ্জেস করে
কেমন আছ তুমি?
ভালো নেই,এই উত্তর টা,
দিতে চাই না আমি।

যদি বলি ভালো নেই,
করা হবে নানাহ প্রশ্ন।
তার উত্তর দিতে বিরক্ত লাগবে যেই।

একটা ই তো ছোট্ট মাথা,
তার ভেতর শান্তি অশান্তির 
অজস্র মালা গাথা।
প্রতিনিয়ত ঘোরে চলে,
কত হিসেব কত যুদ্ধ কত চাওয়া ,
কত না পাওয়া ধ্বনি প্রতিধ্বনি
আর,
 সুখ দুঃখের মালা যে গাথা।।

শোনেনা জানেনা ত কেউ,
তবুও মচকী হেসে বলতে হয়,
ভালো আছি আমি।
কিন্তু, 
মনে যে প্রতিনিয়ত চলছে অশান্তির ঢেউ।।

কখনো পেটে থাকেনা 
এক গ্রাস ক্ষুধার অন্ন।
আবার কখনো নিজেকে করতে হচ্ছে 
ব‍্যবহারের পণ‍্য।।
জীবন ভেলা আর চায় না চলতে।
শান্তি অশান্তি সদা প্রস্তুত, 
জীবনের সাথে খেলতে।।

জীবন যুদ্ধে প্রতিনিয়ত,
হেরে চলে কতশত প্রান।
কেহ কি করবে তার হিসাব,
কেহ পাবে ও না তার ঘ্রাণ।।

মুখে থাকে মুচকি হাসি,
অন্তরেতে জলন্ত অগ্নিপিন্ড।
জীবন বাধা, হয়ে শান্তি  অশান্তির দাস দাসি।
জীবনকে প্রতিনিয়ত করে চলে খন্ড খন্ড।।

তবু বলি ভালো আছি।
দেহের তো হয়নি মরন, 
মরেছে তো মন।
আর আমি না মরে বেঁচে আছি।

আলমগীর কবীর

শুধু তোমায় ভালোবাসি বলে


এখন তুমি নেই
তাই তোমার ব্যবহৃত বস্রগুলোকে ছুয়ে বেড়াই।
মাঝে মাঝে তোমার ব্যবহার করা কম্বলটা গায়ে দিয়ে শুয়ে থাকি।

তোমাকে ভালোবাসি মানে শুধু তোমার রঙটাকে নয়।
তোমার ভালো মন্দ, দোষ গুণ, তোমার সবগুলোই ভালোবাসি।

তুমি যা কিছু ব্যবহার করো সেগুলোও আমার কাছে তোমার প্রতি ভালোবাসা।

তোমায় ভালোবাসি বলে, তোমার ভেতর থেকে আসা কার্বনডাইঅক্সাইডটা যখন আমার নাকে এসে পৌঁছায়, তখন আমি সেটাকে অক্সিজেন ভেবে গ্রহন করি।

তোমার গায়ের ঘামের গন্ধ আমার কাছে পারফিউম সমতুল্য। আর মুখ থেকে আসা গন্ধটাও সুগন্ধি থেকে কম নয়।

 তুমি যেমন তোমার গায়ে তৈরী হওয়া ঘামের গন্ধটা স্বাভাবিকভাবে সাথে নিয়ে নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারো, তেমনি ঠিক আমিও পারি তোমার গন্ধটা আমার করে নিতে।

তোমার মুখের থুতু তোমার মুখে যেমন করে স্বাভাবিকভাবে থাকে,---
 ঠিক তেমন করে আমিও নিতে পারি তোমার মুখের থুতুখানি,  শুধু তোমায় ভালোবাসি বলে....।

নন্দিতা চক্রবর্তী

ছেড়া সুর 

কবিতার কথা আর মনে নেই,
হারিয়ে গেছে সে আজ কতদূর
কোন বিষয় ই তাকে টানে না
না ফেরার আনন্দে ভরপুর।

নীলাকাশ,  ছায়ামেঘ , টুপটাপ
কিছুতেই সুর আর বাজে না,
ছন্দ ভাবছে বসে চুপচাপ
কেন সে কবির তানে  সাজে না।

বাক্ হারা মূক পাখি চেয়ে রয়,
ব্যথায় ব্যথায় ভরা তার মন,
রসের আজ তো সে কেউ নয়,
নীরস ছন্দহীন এ জীবন।

যাক্ না সে যেতে পারে যতদূর,
ডাকবো না আর তাকে পিছু ডাক,
মুক্তির আনন্দে ভরপুর,
দূরে, আরো দূরে  চলে যায়,যাক্।

কবিতার কথা আর মনে নেই,
হারিয়ে গেছে সে  আজ কতদূর,
কান্না হাসির  সাথে দেখা নেই,
বেহাগের ছেড়া সাজে  বাজে সুর।

মোহাজির হুসেইন চৌধুরী

প্রেমের বিগলিত চোখে 

তুমি কোনদিন হারিয়ে যেয়োনা আমার কাছে 
আমি তোমার দু'বাহুর ডোরে পরাজিত হয়ে
তোমার করুণা চাই  --- ভালবাসা হয়ে 
হৃদয়ের কোষে কোষে বেঁচে থাকি চিরকাল। 

হে আমার সময় হে আমার নন্দিত আঁধার
আমাকে প্রেমের কাছে পরাজিত হতে দাও
প্রেমের বিগলিত চোখে আমি ভেসে যাই 
বিরামবিহীন অনন্ত মহানভে।                                           

গৌরব নাথ

আমাকে কেন?

তোর ঠোঁটের পাশে যে দুধের ফেনা লেগে থাকতো
ওটা শুধু আমার চোখেই কেন ঝলসে উঠতো?
ই- রিক্সার চাকার ভয়টা শুধু 
আমায়‌ই কেনো উত্তেজিত করতো?

মনোবিদ্যার হিউম্যান কন্সাসনেসের কনসেপ্টটা
তোর বদলে আমাকেই কেন বারবার পড়তে হতো?হয়তো তোর থেকে ওটা আমিই বেশী লিখেছি পাতায় ; তোর আঙুলে উঠার জন্য।

কেন আমাকেই বার বার তোর পেছনে থেকে বনকপোতের মতো ; ফাজলামো গুলোকে আশকাড়া দিতে হতো?

তানপোড়ায় লিরিক্সটা কেন আমাকেই ধরিয়ে দিতে হতো? কেন আমাকেই তোর গুমড়ো মুখে হল্লুকের কন্টেন্টটা প্রাঞ্জলিত করতে হতো?

তোর প্রত্যেকটা দুরন্তপনার ফতোয়া কেন আমাকেই জারি করতে হতো?
আর মুখটা যখন সামান্য দুটি একটি সংখ্যার দৌলতে হতোদ্যম হয়ে যেতো তখন আমার প্রতিই তর অভিনিবেশ কেন জাগতো?

বিসলারির বোতল ছিলাম নাকি
রোদেই শুধু তৃষ্ণাটা অনুভব করতে পারতি!
লালা গুলি শুকিয়ে যাওয়ার পর! 

লিটন শব্দকর

বকেয়া বসন্ত

মায়াপুকুরে অযুত শ্যাপলা ফুটে আছে
ফিরে তাকানোর বসন্ত ফাঁকির খাতায়,
খুব করে ছুটি চেয়েছিলো শেষ হুইসেল।

বসন্ত চলে এলে স্মৃতিগাছে দুটো পাখি
ধুলো ওড়া মেঠোপথটা এখন আর কই!
দুপুরবেলা কোকিলের দায়িত্ব ও কর্তব্য।

আমি দূঃখ শব্দে লজ্জা পাই ব্যস্ত দিনে
কাছাকাছি চেনা চুলের গন্ধের উষ্ণ ভ্রম,
জড়াতে জড়াতে ফুরিয়েছে সেই কখন।

বাকি রইলো শুধু কতকগুলি বসন্তকাল,
বসন্তবৌরি খাতায় লিখে যাচ্ছে নোটস্।

দুলাল চক্রবর্তী

এক সাথে পথচলা

একদিন হাত ধরে তোমায় এনেছিলাম
জীবনসঙ্গিনী করে,
রূপ দেখে নয়, মন দিয়ে তোমায়
বেঁধেছি ভালোবাসার ডোরে।

যৌবনের ডাকে ভেসেছি দুজনে মিলে
দিয়েছি সংসার-সমুদ্র পাড়ি,
সুখ-দুঃখকে সামনে নিয়ে চলি
দীর্ঘজীবন ধরি।

রোগে- শোকে,ভাগাভাগি করে তবে
শিয়রে রয়েছি জেগে,
অভিযোগ আর মান-অভিমান সেও
থাকতো কখনো লেগে।

তবুও,ভালোবাসা দিয়ে টেনেছি দু'জনে
রচেছি যে খেলাঘর,
দীর্ঘ সময় পথচলি হাত ধরে
কেউ হইনি কখনো পর।

বার্ধক্যের এই শেষ বেলাতেও চলি
একসাথে ধরে হাত,
দুজনা- দুজনে ভালোবাসিয়াছি
আজীবন রবো একসাথ।

অমিত রুদ্র পাল

গর্ভপাত 
   
ভোরের গর্ভ ফুটে সবেমাত্র জন্ম
সদ্যোজাত স্বল্প  প্রাণের ।
সবুজের গন্ধ দেহ কোষে মেখে
কচিকচি হাতে পায়ে চোখের
আঙ্গিনায় কুসুম তুলছে,হাঁটছে,
দৌড়ুচ্ছে ওরা...
শুধুমাত্র একটু পূর্বের উষ্ণতা ও
সন্ধ্যার তারার স্পর্শ পাবে বলে
মুখে ঠোঁটে স্যাঁতসেঁতে হাসির 
স্তব্ধতা গেঁথে লাঙল নিয়ে 
বিন্দু বিন্দু রক্ত বপন করছে প্রাণগুলো।
ভোরের গর্ভ ফুটে সবেমাত্র জন্ম
সদ্যোজাত স্বল্প প্রাণের।

অতনু রায় চৌধুরী

সব অচেনা

মুঠো খুলে তোমার কাছে বিলিয়ে দিলাম,
একটা ভোরের শীতে তোমার কোলে স্বপ্নটা জমা রাখলাম।
ঘড়ির কাঁটা আমাকে থামতে দিচ্ছে না,
তবুও শরীর জুড়ে বেড়ে চলছে তাপমাত্রা।
আমাকে হাঁটতে হচ্ছে একাই, চারদিকে সব অচেনা 
পাশে যে দাঁড়িয়ে আছে সেও তোমার থেকেই সৃষ্টি।
তাই আমি তাকে চেনার চেষ্টা করছি 
যদি জানতে পারতাম কীভাবে কতটা যত্নের শেষে সে বেঁচে উঠেছে।
তবে আমিও ঠিক একই ভাবে যত্নে গড়ে তুলতাম 
আমার স্বপ্নের ফসল গুলোকে।

দিপিকা রায়

কিছু কথা

অগোছালো ডায়েরীর পাতাগুলো, 
কিছু জীবন কথা লিখতে চায়। 
হয়তো কিছু বেদনার পাহাড় 
আবার হয়তো কিছু, 
অট্টহাসির গোলমাল। 
বল পেনের শেষ কালিটুকুও, 
শেষ কথা অব্দি থামতে পারে না।

অজস্র অভিনয়ের মুখোশ 
ভালো সাজার নাটক খুঁজে। 
কিছু হিংসা জলন্ত কাঠের মতো, 
ভেদাভেদের  শিকড় খুড়ে। 
অহংকারের দেওয়াল গুলো, 
আপন, পর মানুষ চিনে না। 
শুধু আড়ালে,ষড়যন্ত্রের মাপকাঠিতে, 
নিজেকে প্রতিবার প্রমাণ করে। 
নিজেকে জড়িয়ে রাখে, 
অর্থসম খোলসে।

মোঃ রুবেল

তারপর
     
তারপর থেকে,
রাতের বুক জুড়ে ভয়ানক অমাবস‍্যার দাপট।
এই ঘোর অন্ধকারে বাঁচা-মরার খেলা অনুষ্ঠিত হয়।
কত জীবনের রক্ত-দাগ গায়ে মেখেছে-
তা কেবল রাতই জানে। 
রাতের বুকে কান পাতলেই শোনা যায়-
শত-সহস্র কাতর কান্না শব্দ।
 
নিযুত অভিশপ্ত দাগ ঝেড়ে ফেলে,
রাত প্রেমের কবিতার ঘাড়ে ভর করে একটি রাত প্রসব করতে চায়--
নির্ভয় রাত, জ‍্যোৎস্না রাত, প্রেম ভরপুর রাত।।
তবে আমরা তার স্থায়িত্ব মেপে দেই।
কেবল বারো ঘন্টা।

সায়ন পাল

অনুভূতি

ঐ বোবা মেয়েটাও পৃথিবীতে বাঁচতে চায়,
সুন্দর ভুবনে উল্লাসে দিন কাটাতে চায়।
ইচ্ছে হয় দূর চিলের সঙ্গে উড়ে যেতে,
সংসার কাননের মনোহর মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে।
প্রতিবন্ধকতার দেওয়াল ভেঙে জীবনের ঘ্রাণ নিতে,
ঘর বাক্সে বন্দী না থেকে বাইরের সৌন্দর্যের ভাগীদার হতে।
কেন বাড়ির নিত্যকর্মের ব্রতী থাকবে মেয়েটা?
বাকশক্তি অধিকারীদের নিত্য সেবার সেবিকা হবে ছোট্ট জীবনটা?
সেও অনুভূতির ভাগীদার, আনন্দের দোলায় দুলতে চাই,
উল্লাসের রঙে ছোট্ট জীবন টাকে রাঙাতে চায়।
সেউজী পৃথিবীর নানা সুন্দর বস্তুর অংশীদার,
জীবনের সুখ উল্লাসের প্রতি তার ও যে আছে পূর্ণ অধিকার।।

সঞ্জয় দত্ত

মিনারের চোখ

ইতিহাস,
শুধু ইতিহাস বহন করে দাঁড়িয়ে আছে কয়েক শতাব্দী।
বুকে এঁকে রেখেছে আগামীর শিক্ষা।

নিগ্রহ হয়েছিল অনেকবার অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্যোগের।
শিরদাঁড়া ভাঙেনি কোনো অব্দে!

আগুনের চোখে চোখ রেখে সংযম করতে শিখেছে।
ভেবেছে শুধু অস্তিত্ব!

কখনো আবার মাথার উপর বজ্র এসে খেলা করে!
দেখেছে স্বদেশের স্থায়িত্ব।

দুটি পাহাড়ের তুমুল সংঘর্ষে নিহত হল কিছু বৃষ্টিবিন্দু!
ওরা বুঝে নি তাদের মায়ের স্নেহ!

কিছু সময় মেদিনীর বর্ষাবরন দেখে উদ্বিগ্ন হই,
কিন্তু, আমার কিছুই করার থাকে না।

সৃজা ঘোষ

আড়ি

জীবনটা যায় জ্বলে পুড়ে 
মোমের মতো গলে,
দগ্ধ হচ্ছে মনের ভিতর
জ্বলছে দাবানলে ।

বলতো যারা পাশে অছি
নেইকো তারা পাশে,
দূর থেকে আজ তারাই যেন
মুখ লুকিয়ে হাসে।

দুঃখের দিনটা কাটছে মোদের
হোচট খেতে খেতে,
একলা চলার পথিক মোরা
যাকনা দুঃখে কেটে।

এ জীবনে চলতে গিয়ে
পাচ্ছি অনেক বাধা,
আজব এই দুনিয়াতে
সবই গোলক ধাঁধা।

সব দুঃখ পেরিয়ে যখন
দেবো সুখে পাড়ি,
তখন কিন্তু তাঁদের সাথে
থাকবে আমার আড়ি।

প্রীতম শীল

বউয়ের জ্বালা     

মা যখন উনুনের ধোঁয়াতে রান্না ঘরে,
বউ তখন এইস ডি মেকাপ করে।
খাবার পাতে আমি যখন খেতে যাই,
নানান রকম স্বাদের খাবার পাই।

মা আমার তিনটে বছর হলো প্রয়াত,
তখন থেকে বাসি খাবার যত।
ছেলে সন্তান সবই আমার বউয়ের যেন নয়,
মর্ডান মেয়ে স্বামী হলে এমনই হয়।

পাড়ার নরেশ কাকাকে দেখে দুঃখ হতো,
বেচারার বউ নেই না জানি কষ্ট কতো।
এখন বুজি বউয়ের জ্বালা ভাই এখানে নয়,
হারানোর চেয়ে থাকার বেলা বেশি হয়।

সারাদিনের কৈফিয়ত কতো প্রশ্নের জবাব,
সে দিন আমি বুঝেছি মায়ের অবাভ।
মাগো তুমি কখনো প্রশ্ন করোনি খাবার পাতে,
খাবারের পাতে শান্তি পেতাম তাতে।

আজ আমি প্রশ্ন বিদ্ব্য মাগো উত্তর নেই কাছে,
থাকলেও দিতে পারিনা ভুল হয় পাছে।
ঝামেলা হবে ভেবে চুপটি করে থাকি আমি, 
সংসারে স্বামী নয় যেন আমি আসামি।

নীলাঞ্জনা দেবনাথ

খোঁজ

একদিন হেঁটে যাবো পাহাড়ে--
অবাঞ্ছিত প্রশ্নের চারাগাছে! 
ছায়া দেয়ার জন্য থাকবে না কোনো মহীরুহ
রোদে পুড়ে শরীরের ঘাম মিশে যাবে কোনো পাহাড়ী নদীর বহমানতায়... 
পাথরের উপর ঝরে পড়া কোনো নির্ঝরনীর ছন্দে পায়ের নূপুর অদৃশ্য ভাবে বেজে উঠবে... 
সম্পর্কের গা বেয়ে উঠে যাওয়া স্বর্ণলতাগুলোকে উপড়ে ফেলে দিয়ে আমি হারাবোই.. 
অগোছালো শব্দের ডায়েরিটা সঙ্গী হবে আমার
যদি কোনোদিন সাজাতে পারি 
শব্দের চিলেকোঠা
তবে পাখি হয়ে উড়ে এসো... 
আমি পাহাড়ের চূড়ায় বসে দেখবো তোমার অবাধ আনাগোনা
নারী শব্দের অক্ষরগুলোকে মুছে 
মরুবালিরাশির উপর বৃষ্টির ফোঁটা দিয়ে লেখা হবে মানুষ শব্দটি। 
আমি সেদিন হারিয়ে গিয়ে খুঁজে পাবো পূর্ণতা...

ড. রঞ্জিত দে

আশ্রয়

এখন ফাগুণ মাস
পলাশের বনে আগুনের ফুলকি,
বসন্ত বাতাসে হিমেশ ছোঁয়া নেই।
পাহাড়ি উপত্যকায় রাবার বাগান
সবুজ অরণ্য,ঝর্নার জল খলখল হাসে,
কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে লাল আধারের খেলা
ভ্রমর গান গেয়ে চলে
আমের বনে অফুরান পুষ্প মুঞ্জরী 
গাছে গাছে পাখী ডাকে।
নির্জণ দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার গান।
রাতের আঁধারে জোনাকি আলো,
পথ চলার সাথী,
আকাশে তারারা উঁকি মেরে দেখে,
বনের হরিণ শাবক ঘুমে কাতর।
আকাশে ঘোমটে আলোয়
পেঁচা উড়ে চলে
মুষিকেয়া ভীত হয়ে আশ্রয় খোঁজে,
শুধু মানুষ অসহায় যেন আশ্রয়হীন।

দীপক দাস

ময়লা ফেলা

সকাল আটটা।
শ্যামলীমায় ময়লার গাড়ী এসে দাঁড়াল
আট নাম্বার ব্লকের সামনে।
পরপর তিনবার বাঁশী বেজে উঠল।
সমীর তার ঘর থেকে
ময়লার প্যাকেট নিয়ে বেরিয়ে আসে। 
ময়লা ফেলে দিতে দিতে ভাবে ;
ঘরের ময়লাতো ফেলে দিলাম, 
মনের ময়লা ফেলব কোথায়? 
মনের ময়লা কী ফেলা যায়?

বিজন বোস

প্রকৃতি

পাথরের মূর্তি কল্পনায় জীবন্ত
ভক্তির নেই অন্ত
জগৎ জননী মা , ভক্তিতে গদ্ গদ্ ,
অথচ গর্ভধারিনী মা
কখনো ঘুরে রাস্তায়
কখনো বৃদ্ধাশ্রমে বসে পস্তায় ।

চিহ্নিত করেই ভ্রুণহত্যা
ভদ্রতার আলখাল্লায়,
মাকে হত্যা নয় ?
রিপুর বশে লোলুপ দৃষ্টি
চলতে-ফিরতে একা পেলে
চেতনায় অনাসৃষ্টি ,
মা হয় নস্টা !
দানব পুরুষের
কামের শিকার
তবু সে ভ্রষ্টা ।
উলঙ্গিনী কপালিনী
মাতৃভাবে পূজা
অথচ কালো বলে কত মেয়ে
অহর্নিশি পায় সাজা।

মাটি আর পাথরে নয়
পূজ মাতৃজাতি
সৃষ্টিতে অপরিহার্য
পুরুষ -প্রকৃতি ।

শ্রীমান দাস

বিনিদ্র রাতের শংসাপত্র

কতোবার বুজেছি দু'চোখ
বিনিদ্র রাতটাকে পরাস্ত করবো বলে,
প্রত্যুষে ধ্বনি তুলবে গনজাগরণ
জাগাবে এসে আমাদের প্রিয় রঙ
ঘুমোতে চেয়েছি তাই নিজের জন্য
নিজের মতো করে একটু হলেও।

অথচ, মন কেমনের রাত 
চোখের পর্দা জুড়ে শুধুই তোমার অবয়ব।
খানিকটা তন্দ্রাভাব এলেই
চোখের পাতায় অনুভব করি তোমায়
বুকের সোহাগ ঢেলে সহস্র চুম্বন ...

রাত পোহালেই আমাদের মিছিল
তোমারও অপেক্ষা সূর্য ওঠার,
কন্ঠে কন্ঠ মিলিয়ে বলবে,ভালোবাসি।
শাসকের দৃষ্টি এড়িয়ে দিয়ে যাবে
অগণিত চুম্বন ...

ভাবতে ভাবতেই বেজে উঠলো প্রভাত
দুয়ার খুলেই হাতে পেয়েছি
আরেকটি বিনিদ্র রাতের শংসাপত্র।

অভীককুমার দে

মাটির বাসন

মাটির কাছে 
কোনও দূরত্ব নেই,
দূরত্ব নেই হৃদয়ের কাছেও;

আমি পায়ের কাছে
নতজানু হই ,
ছন্দে ছন্দে তাল খুঁজি বুকের ভেতর ।

যেভাবে মানুষ জন্মায়
নিজের শরীরে
আমি তার মাটির বাসন;

শুধু
দূরত্ব থেকে দূরত্বে রাখি বুকের মানুষ।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...