Tuesday, August 14, 2018

Welcome

জাতীয় সংগীত

জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
পঞ্জাব সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছলজলধিতরঙ্গ
তব শুভ নামে জাগে, তব শুভ আশিষ মাগে,
গাহে তব জয়গাথা।
জনগণমঙ্গলদায়ক জয় হে ভারতভাগ্যবিধাতা!
জয় হে, জয় হে, জয় হে, জয় জয় জয় জয় হে।।

Monday, August 13, 2018

ড. উমাশঙ্কর রায়

অদৃশ্য

আজকাল -
রাতজাগা নিঃশ্বাস ধূলো হয়ে উড়ে
প্রভাতী আলোয় শতছিদ্র আলাপনে।
ইচ্ছেগুলো সারাদিন দোল খায়
মাকড়সার জালে -
সাড়ে তিন হাত ছাড়িয়ে -
ঘরের দরজা জানালায়।

আজকাল -
পাতা ঝরে না আর উঠোনে
বাহারি পাতা দেখবে বলে তাই-
মালি ছুটে ধু-ধু প্রান্তর পেরিয়ে
মহাভারতের পৃষ্ঠায় শান্ত তপোবনে ।
কেউ কি লিখেছিলো ঝরা পাতার ইতিহাস,
অথবা সবুজ শিরার অদৃশ্য ব্যথা সংগোপনে ?!

আজকাল -
দুরন্ত জাদুঘর ক্লান্ত - মানুষের ভিড়ে
শুধুই কি উৎসুক ? নাকি উৎসব -
ডানাহীন স্বপ্নের মমি ঘিরে ?
সুখী হবে বলে শতাব্দীর বুকে
কোনও নদী পুষে আজ আমাজন-কালো -

স্বাধীনতা, না-হয় হবে তুমি ক্যামেরাবন্দি -
বাঁচাতে - নিছক ভালো ।

সম্পাদকীয়

মানুষ চলে তার মনের দ্বারা। মানুষের সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা কিংবা সুখ, দুঃখ যাবতীয় অনুভূতি গড়ে উঠে তার মনের উপর ভিত্তি করে । প্রতিটি মানুষের মনের মধ্যেই শুভ শক্তির বিকাশ সাধিত হলেই সামাজিক শান্তি এবং সমৃদ্ধি সম্ভব। কুসংস্কার দমন সহ শান্তি, অগ্রগতি এবং প্রগতিশীলতার প্রশ্নে সাহিত্যের ভূমিকা বিশাল। সেই উদ্দেশ্যেই মনন স্রোতের আত্মপ্রকাশ। আজকের দিনে পুরো বিশ্ব মানুষের হাতের মুঠোয় পৌঁছে গেছে। কোনো বার্তা মানুষের কাছে খুব সহজেই পৌঁছে দেওয়া সম্ভব। তাই প্রযুক্তিকে বহুমুখী ব্যবহারে মধ্য দিয়ে 'মনন স্রোত'কে খুব কম সময়ের মধ্যে বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তাছাড়া আমরা চাই নতুন প্রজন্মের লেখক লেখিকাদের কাছে মনন স্রোত হয়ে উঠুক আত্মপ্রকাশের এক অন্যতম প্ল্যাটফর্ম। আমরা সেই লক্ষ্যেই কাজ করছি। প্রতিমাসে প্রকাশিত হয় বলেই লেখা সংগ্রহের ক্ষেত্রে 'মনন স্রোত'কে বাস্তবিক কিছু সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। তাই অল্প সময়ের মধ্যে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে ভুল ত্রুটি হওয়া স্বাভাবিক। অনিচ্ছাকৃত ভুল ত্রুটিগুলো পাঠকরা মার্জনা করবেন এই আশা রাখছি।

এই সংখ্যায় রাজ্যের এবং দেশ বিদেশের কয়েকজন বিশিষ্ট লেখক লিখেছেন। যারা লিখে মনন স্রোতকে সমৃদ্ধ করার কাজে সহযোগিতা করেছেন তাদের কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। সবশেষে একটি ই-ম্যাগাজিন হিসেবে মনন স্রোত তার সামাজিক দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সকলের সহযোগিতা কামনা করছে।
সকলকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।

জয় হিন্দ

                                      শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                                           জয় দেবনাথ

Sunday, August 12, 2018

মিঠুন দেবনাথ



অণুরাধা

(শেষপর্ব)

 

পূবের আকাশ তখনও রক্তবর্ণ ধারণ করে নাই | সারা রাত্র নিদ্রাহীন গ্রামবাসী এদিকে ওদিকে খোঁজ করিতে করিতে দক্ষিণের গ্রামে বালকের সন্ধান পাইয়াছে বলিয়া খবর পাইল | গ্রামবাসী খবর খানি পাইয়া অতি দ্রুত বরেনের নিকটে খবর পৌঁছাইতে হন্য হইয়া ছুটিতে লাগিল | ভোরের আবছা আলো ছায়ায় কিছুদূর ছুটিতে ছুটিতে কুকুরের শব্দ শুনিয়া গ্রামবাসী থমকিয়া দাঁড়াইল | কুকুরের গর্জন সহসা বাড়িতে লাগিল দেখিয়া গ্রামবাসী জঙ্গলের রাস্তা ধরিল |

         তখনও রবির ঘুম ভাঙে নাই ! বরেনের কোলে তার স্নেহের একমাত্র কন্যার শান্তির বিশ্রাম দেখিয়া গ্রামবাসীর বয়োজ্যেষ্ঠ নটোবরলাল মূর্ছা গেল | কেন না ইতিপূর্বে দুই গ্রামের  কেহই এমন বিভৎস দৃশ্য দেখে নাই | 

         দুটি চিতা জ্বলিল ! মুখাগ্নি করিবার লোক পর্যন্ত খুঁজিয়া পাওয়া যাইতেছিল না | শেষ পর্যন্ত জ্যেষ্ঠ নটোবরলাল মুখাগ্নি করিয়া গঙ্গাস্নান সারিল |

       সেই হইতে গ্রামখানির যেন অন্তরদাহ চলিতেছিল | পুরো গ্রামে কর্মের হিসাব লইয়া চিত্রগুপ্ত যেন খরম পদে বেড়াইতেছিল | বহুদিন গ্রামে কাক পক্ষী ডাকে নাই ! তুলসীতলায় প্রদীপ জ্বলে নাই | বিচার  চাইবে কে ?  বিচার হবে কার ! 

          বরেনের বৌ গৃহ হারা হইয়া গ্রাম হইতে গ্রামান্তর ঘুরিয়া কেবল ঘটি বাটি ধুইতেই ব্যস্ত ছিল ! পূজা আর সমাপ্ত  হইয়া উঠিল না... অসমাপ্ত...

আবার কাক ডাকিল ! তাই লিখিলাম |









Saturday, August 11, 2018

ফরিদুজ্জামান

স্বাধীনতার অমর কাব্যের কবি

মুক্তির সংগ্রামে আদর্শের মৃত্যুপণ করেছোলড়াই
শেষ রক্ত বিন্দু ঢেলে মা মানুষ মৃত্তিকারঋণ শোধের চড়াই উৎরাই।
সাড়ে সাত কোটি বাঙালীর ভালোবাসারকাঙাল ছিলে তাই বাঙালীর মঙ্গল সাধনা
জীবনের চেয়ে বড়ো তোমার তেজদীপ্তধ্যান আর সম্মাননা।
পৃথিবীর ইতিহাসে তোমার সমকক্ষ কোন্বীর হলো মহীয়ান ?
অন্যায়কে স্তব্ধ করতে শিরস্ত্রাণ দেওয়ারআগে প্রস্তুত ছিলে দিতে প্রাণ বলিদান।

ধনলোভে-রাজ্যলোভে ইতিহাস জুড়ে কতোলুণ্ঠন অধ্যায়
পালাক্রমে ফিরে আসে বাংলাদেশের বুকেছুরির ফলায়।
শত্রুকে হটিয়ে দিয়ে ভাষারাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছিলপ্রাণের শপথ

সামসুন্নাহার ফারুক

তর্জনীর উচ্চারণ

কালিক ইতিহাস বার বার ছুঁয়ে যায়
মানচিত্রের অলিগলি হৃদয়ের সানুদেশ
বর্ণমালার ঐতিহ্য লালিত স্বপ্নরা ঢেউতোলে
ঝিলমিল রশ্মি ছড়ায় অভিকর্ষ প্রক্রিয়ায়
মুক্তির আবেগে রূপান্তর প্রোটন
মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিবের তর্জনীর উচ্চারণে
দেশময় স্ফুলিঙ্গ তোলে
উজ্জীবিত চেতনার অগ্নি শপথ
উদগীরণ করে টগবগে লাভা
বৈরী বাতাসে গর্জে ওঠে আত্মবিশ্বাস
জলন্ত বারুদে জীবন্ত আত্মাহুতি
পৃথিবীর বুকে জেগে ওঠে
প্রত্যয়ের দীপ্যমান ইতিহাস
আলোকোজ্জ্বল নুতন গ্রহ স্বাধীন স্বদেশ
নিউরণের কোষে কোষে অহমের অবভাসে
সাগ্নিক অঙ্গীকারের প্রিয় বাংলাদেশ
বাঙালী ছাড়া কে এমন পারে ?
কে পারে এমন আর ?

খোশনূর

দর্প ওরা লক্ষ বীরের

কে বলে সালাম নেই ?
নেই জব্বার বরকত? ওরা আছে
ওরা থাকবেই চিরকাল।  
ওরা মৃত্যুঞ্জয়ী, অমর অক্ষয় অম্লান
চারদিকে ওদের অনায়াস যাতায়াত
ওরা বীর শহীদ ঐতিহাসিক, ওরা অহংকার
মায়ের সুযোগ্য সন্তান, ধন্য ওদের জীবন
সবাইতো হয় না অমর
সবাইতো হয় না সাহসী মহাত্যাগী
রফিক শফিক সবাই আছে
কালের স্বাক্ষরে চিরঞ্জীব প্রত্যয়ে চিরভাম্বরবিস্ময়ে
একুশ শেখায় প্রতিবাদ
অধিকারের শ্লোগানে, বর্ণমালা রক্তে রাঙা
সেখানেই সূর্য শোভার বর্ণিল সভায় উজাড়করা প্রাণের নিবেদন
অন্যায়, অত্যাচার প্রতিরোধের অঙ্গীকারে
জীবন দর্শন স্বার্থত্যাগের সীমাহীন ডাক
হাহাকার তুচ্ছ করে জয়োল্লাসে বিশ্ব দেখাঅন্যচোখে। 

সেই বিষাদে সেই  আনন্দে ওদের জয়গাঁথালেখা
শহীদ মিনারে ফুলের সাজ মুঠো মুঠো 
ছড়িয়ে দেয়া জনস্রোতে বুকের কষ্ট বুকেইজ্বলুক
মা জননীর ঝাপসা চোখের দৃষ্টিপাতে
ওদের ছায়া ওদের মায়া আউল বাউলকরেও যদি
আছেই ওরা কোথায় যাবে কতো দূরেবুকেই আছে
অন্য কোনো  গোপন কক্ষে স্মৃতির সূতোয়বাঁধা
যেথায় বন্ধ ভাবনায় ছন্নছাড়া উদাস উধাওপথে
সময় মতো আসবে ওরা লক্ষ বীরের দর্পহয়ে।

শরীফ এম আফজাল হোসেন

ছড়া

লেঠো মুটে সবাই মিলে
করছে যে হই হই
শ্লোগানে মাতম করে
সোনার হরিন কই।
নেতা এখন সিংহাসনে
কোথায় পাবি তারে
পুলিশ এসে পাকড় করে
সবাই যারে ফিরে।
এমন দেশের এমন নেতা
কথা বলেই শেষ
কেউ রাখে না খোঁজ যে তারে
পালটে গেলে দেশ।
তবুও যে ভাই
কমতি যে নাই
চাটুকারীর দল
টু পাইস যে করছে কামাই
কতই যে কৌশল
জনগণের ভাত জোটে না
নেতার মাতামাতি
নিজের পকেট করছে ভারী
অন্যের পকেট কাটি।
এমন দেশ আর এমন নেতা
ধুত্তুরি ভাই ছাড়ো
নিজের হাতে নিজেই এবার
নিজের ভাগ্য গড়ো।

শেখ সামসুল হক

বন্ধু মানে বঙ্গবন্ধু
 

বন্ধু মানে বঙ্গবন্ধু
তারপর দেখি কেউ নাই কিছু নাই
আর যা আছে তা দেখি খাই খাই
আড়ালে আবডাল কখনো প্রকাশ্যে
হজম করে ফেলছে নির্বিকার
প্রতিকার হীন বোবা কান্না
গণতন্ত্রের আর্শিবাদ ধন্য
না মানলে মহাসংকট ঘরে বাইরে
বেদলের আখ্যাতিলক পেতে
সময় লাগে না রক্ষা কবচ নেই
নিউক্লিয়াসে ধান্ধাবাজির অস্থিরতা
এভাবেই চলছে দেশ দুনিয়া
সুখ শান্তির নাট্যশালা
তালা বন্ধ অন্ধ চোখ
দেখতে পায় না জগতি তামাশা
জমাট ব্যথার মোড়ামোড়ি চলে
বিস্ফারের পথ পায় খুঁজে
অবশেষে মনে পড়ে একজন;
জনের কথা
বন্ধু মানে বঙ্গবন্ধু।

 

ড. সুচরিতা চৌধুরী

মননের অপেক্ষায়

সব প্রাণীরই মন রয়েছে তার নিজের মতো করে।  কিন্তুু মননের ক্ষমতা রয়েছে শুধু মানুষেরই। মানুষ তার মানস সম্পদে এতোই সমৃদ্ধ যে প্রকৃতির সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠত্বের আসন অর্জন করতে পেরেছে।  এই অবস্থান মূলত: মানুষের চিন্তা ভাবনা ও যুক্তি প্রয়োগের ক্ষমতার স্বাক্ষর। আর, চিন্তা ও যুক্তির কর্মশালা যে মনই, এই বিষয়ে মানুষ মাত্রই একমত হবেন।

প্রাচীনকালে ভারতবর্ষে পঠন পাঠনের লিখিত মাধ্যম ছিলো না। প্রাচীন গ্রীসেও,আমরা জানি প্লেটো এবং তারও আগে সক্রেটিস আলোচনা এবং বক্তৃতার মধ্য দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে জ্ঞানের বিষয় পৌঁছে দিতেন। ভারতীয় দর্শনে আমরা এই তথ্য দেখি যে শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসনের মাধ্যমে তত্ত্বজ্ঞান অর্জনের কথা বলা হয়েছে। গুরু তথা শিক্ষকের কাছে শোনা বিষয়কে গভীরভাবে চিন্তা ও পর্যালোচনা করাই হলো মনন। এই পর্বে বিষয়টিকে গ্রহন বা বর্জনের একটি পর্ব থাকে। ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তাভাবনা, সুষ্ঠু বিচার ও বিবেচনাশক্তি মনন প্রক্রিয়ার অন্যতম শর্ত। মনন ক্রিয়ার জন্য এই কাজের প্রতি সচেতন প্রয়াসও প্রয়োজন। ব্যাক্তির ইচ্ছা এবং বিবেচনা শক্তির মেলবন্ধন না হলে মনন তার কাঙ্খিত মাত্রায় পৌঁছতে পারেনা।

মন হলো মানুষের সেই ইন্দ্রিয়,যার সহায়তা ছাড়া তার জীবন সুষ্ঠু ছন্দে বয়ে যেতে পারেনা।  আমরা অভিজ্ঞতায় দেখি যে ,বাইরের অন্য ইন্দ্রিয় সক্রিয় থাকলেও মনোযোগের অভাবে কোনো বিষয় আমাদের ফাঁকি দিয়ে যায়। খুব সাধারণ একটি উদাহরণ নেওয়া যায়,  যেমন - যেকোনো আলোচনা সভায় সব কথা সমানভাবে শুনিনা আমরা, কারণ অন্যমনস্ক হয়ে যাই মাঝে মাঝে। এই অমনোযোগ, অন্যমনস্কতা অথবা মনে না রাখতে পারা অর্থাৎ ভুলে যাওয়া কোনোটাই অস্বাভাবিক কিছু নয়। অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং সাধারণ পর্যায় এই সব-- মানুষের জীবনের।

মন নিয়ে এইসব কথা বলে যে বিষয়ের ভূমিকা তৈরী হলো - তা হলো ,মনের সমস্যা ।

আমাদের মন কম বেশি  ভুল ভাল , ভালো থাকা-মন্দ থাকা মিলিয়ে জীবন ছন্দের মূল কান্ডারীর ভূমিকা পালন করে।কিন্তু  মন যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, ভারসাম্য হারায় -তখন সেই মনের মালিকটি কেমন থাকে? কি অবস্থা হয় তার বর্তমান জীবনযাপনের ?
কি ব্যবস্থা হয় তার ভবিষ্যৎ জীবনের?কি ভূমিকা নিই আমরা সমাজের, পরিবারের অন্য মানুষেরা?  কি ভূমিকা নেওয়া উচিৎ?

হ্যাঁ,আমি মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের কথা বলছি; আমরা যাদের 'পাগল' বলে চিহ্নিত করতে অভ্যস্ত । রাস্তায় এলোমেলো এইসব মানুষ; বাচ্চারা উত্যক্ত করছে তাকে  -- এই দৃশ্য দেখিনি আমরা --আছি কি এমন কেউ ? ঠিক ক' জন সেই মুহূর্তে একজন মননশীল সত্তা হিসেবে ভূমিকা নিয়েছি? কেউ -ই নিইনি  এই ভূমিকা তা নয় ।  তবে প্রশ্ন করি আসুন , নিজেকে -- আমি কি নিয়েছি আমার ভূমিকা ? এর সৎ উত্তরের উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলতে হবে মানুষের জন্য মানুষের গড়া মননস্রোত,  যেখানে বয়ে চলা হবে নিশ্চিন্ত ঠিকানার উদ্দেশ্যে --অজানায় ভেসে যাওয়া নয় ।

    সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছেন, সমাজ হলো মানুষের  পারস্পরিক সম্পর্কের একটি জটিল জাল। লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, তাঁরা উল্লেখ করেছেন যে এই জাল জটিল, কিন্তু এ ও উল্লেখ করেছেন যে, এটা সম্পর্কের জাল। সুতরাং  সম্পর্ক-বিহীন নিস্পৃহ, অনাগ্রহী,দর্শক হিসেবে নিজেকে যদি নিরাপদে রাখতে চাই আমরা,তবে সেই ভূমিকা যথার্থ সমাজ সদস্যের নয়। আমাদের দেশে, এখনো যেখানে বিভিন্ন শারীরিক রোগকেই সবক্ষেত্রে স্বাভাবিক বলে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয় নি,সেখানে মানসিক সমস্যাকে খোলা মনে স্পষ্ট দৃষ্টিতে দেখার সম্ভাবনা প্রত্যাশা করা কঠিন । এই কারনেই মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের পরিবারের সদস্যরা ও  এই নিয়ে বিব্রতবোধ করেন,যেন এটা তাদের সবারই  অপরাধ ।অথচ কত সত্যি অপরাধ বিনা দ্বিধায় সগর্বে করে চলে মানুষ ---- পাগলকে  হেনস্থা করা,বাড়িতে অথবা প্রতিষ্ঠানে শিশুশ্রম ব্যবহার করা, নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বিদ্যুতের অপচয় করা,সার্বজনীন মিলয়াতনের, অফিস বাড়ির সিঁড়ির কোনে থুথু ফেলা,  রাস্তায় জলের কলের ট্যাপ খুলে নেওয়া-- আরো কত কি'র মতো!  কিন্তুু এভাবে এক লক্ষ্যহীন জীবন চর্চার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে আমরা কি সত্যিকারের মননশীলতার ধর্ম থেকে নিজেকে বিচ্যুত করে ফেলছি না?  প্রতিটি মানুষ তার সাধ্যমতো সীমায় দাঁড়িয়েই যদি এইসব অসহায় জীবনগুলোর জন্য কি করা যায় তা ভাবতে শুরু করেন একটু একটু করে, আসবে সেই দিন যখন আমরা রাস্তায় এমন দৃশ্য আর দেখবো না।

একটা মানুষ যখন তার মনের উপর নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলে,তখন তার মতো অসহায় আর কেউই নয় । বিনা অপরাধে সে অন্যের বিরাগভাজন হয়। তার অসংলগ্ন আচরণ অন্যের কাছে তাকে বিদ্রূপের পাত্র করে তোলে। সব মানুষের কাছে, তাদের মননশীলতার কাছে এই আহ্বান -- দেখিতো একবার আমাদের সবার মিলিত চেষ্টায় মনহারা মানুষদের কাছে যাওয়া যায় কি না!  আমাদের সবার মননস্রোত ধারায় সেইসব মনকে সামিল করে নেওয়া যায় কিনা!  রোদ, বৃষ্টি, ঝড়, শীত, গ্রীষ্ম জুড়ে যাদের পথবাস, তাদের মনে ঘরের স্মৃতি ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আমাদের মননের কাছে আমাদেরই ফিরে আসা প্রয়োজন।  মনুষ্যত্ব রয়েছে সেই মননের অপেক্ষায়।

Friday, August 10, 2018

আগষ্ট মাসের লেখক তালিকা (২য় পাতা)

আগষ্ট মাসের লেখক তালিকা (১ম পাতা)

সেলিম মুস্তাফা

পুরানো আততায়ী

তোমাকে দেখেছি দূর থেকে, তোমাকে শুনেছি
শরনার্থী জনপথ তোমার সৌরভে নেশাতুর
ভালোবাসাময় ভালোবাসা
বিহবল করেছে তোমার উত্তল দেহদেশ
বিশাল হৃদয় --
তৃমি দেবী!
তীব্র বিষ রয়েছে কোথাও, কেউ
রয়েছে বিষাক্ত, উন্মাদ প্রেমিক!
সময়ের হলাহলে পরাজিত বিবর্ণ বিদ্রোহী-
তুমি তাকে আততায়ী বলো
সে নাকি গুপ্ত-ঘাতক - খুন করে প্রতি পলে পলে
সকালে ভিড়ের ট্রেন চলে যায়-
বাঁশি শোনা যায় যে তার।

দুপুরের ট্রেনও যায়
সে শুধু যায়না কোথাও, নীরব
এক গুহাহীর গুহার মানব -স্তুুপীকৃত অন্ধকার।

তুমি তাঁকে চেনো
না দেখেও দেখতে পাও বুকের ভেতর।

তবু ঘৃণা করো
সে-ও জানে, এ জন্ম জন্মান্তরের টান- বিনাশের
দেশহীন কালহীন মিলনের দ্বেষ
দেবী, তাকে কি এড়াতে পারে?
দূর থেকে দেখেছি শুধু - দূর থেকে শুনেছি
নিন্দার ছলে ভালোবেসেছো তাই
তোমার কাছে যেতে পারিনি।

কল্যাণব্রত বসাক

ফেনী ব্রিজ ( ৪র্থ পর্ব )

একদিন সারা সাব্রুম রটে গেলো ফেনী নদীর উপরে পাকা ব্রিজ হবে। আমি তখন বোধহয় টেন'এ পড়ি। আমাদের সে কি গর্ব। আমরাই তো প্রথম বাংলাদেশে যাই। রামগড় আমাদের থেকে কেউ বেশী চেনে নাকি!  নিজেদের মনে হতে লাগলো অনুশীলন সমিতির সদস্য।  যে সাব্রুমের গরু ছাগল পর্যন্ত নদী পেরিয়ে রামগড় যায় না, সে রামগড়ের প্রতিটি গলি আমরা ক'জনের মুখস্ত।

এই দুই পাড়ের মেলবন্ধনের কাজটা তো আমাদেরই করতে হবে। এ কি কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব!  রামগড় যাওয়া আসা বেড়ে গেলো।

এমনি একটা ছুটির দিনে দশটা সাড়ে দশটায় রামগড় সিনেমা হলে গিয়ে বসি। সাহস বেড়ে গেছে তত দিনে, তাই ফারুক,রুবেলদের ডাকিনি। সিনেমা শেষে যেই না বাজারে এসেছি অমনি বিডিআর ধরে ফেললো। নিয়ে গেলো আউট পোষ্টে।

প্রথমে গা' করিনি ভাবলাম মজা করছে।  সময় যত গড়াচ্ছে একটু একটু ভয় হচ্ছিলো।  দফায় দফায় জিজ্ঞাসা -- নাম কি?  বাড়ি কোথায়? কেন এসেছিস?  মুখের ফেনা বেরুবে এমন অবস্থা।

কি করে যেন খবর পেয়ে শাহ আলম, ফারুক এসে হাজির।  বাব্বা!  জল এলো বুকে।  শাহ আলমের বাবা চেয়ারম্যান গোছের কিছু ছিলেন।উনি একটা হাত চিঠি পাঠিয়েছিলেন বিডিআর আউট পোষ্টে। তাই রক্ষে। এতক্ষণে দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে। বাড়ি ফেরার সময় পেরিয়ে যাচ্ছে - যাবে।

ফেনী নদীর ধারে এসে দেখি বাবা, কাকা, পাড়া প্রতিবেশী ঠাঁই দাঁড়িয়ে। প্রায় কুড়ি পঁচিশজন হবে। রাতটা কি করে কাটাবো ওই ভেবেই গা কাঁপছে।

'পিছলা গাছ' বলে একটা হাঁড় বজ্জাত গাছের বেত দিয়ে যা মার মারলো --।  কি আর করি বেহুঁশ হওয়ার ভ্যান করতে হল শেষ পর্যন্ত। মরার মতো পড়ে রইলাম। কিছুক্ষণ বাদে চোখ খুলতেই আবার শুরু। ধোলাইয়ের পাশাপাশি জবাবদিহি।
- ক,  ক কৈচি -- কি কি খাইচত?
-- হেঁ হেঁ হেঁ -- কৈচি না,  যা দিছে ব্যাক খাইচি।
( মা বিলাপ ধরে কেঁদে উঠলো)
- গেছে রে গেছে বাংলাদেশে যাই হেতে ছালি খাই আইছে।
- হেঁ হেঁ হেঁ ধুর!  ছালি খাই ন।  ছালি ছাড়া অন্য তান ব্যাক খাইছি।
- বুজ্জি বুজ্জি জাত অ খাই আইচত। ওরে সব্বনাশ কইরলি রে -- বাবা ন ঠিক করি ক চে 'গোমাংস' মুখে তুলস ন।
- গরুর মাংস!
- 'গোমাংস' ক হিচামারা।
(আবার পিচলা বেতের কোঁয়াস কোঁয়াস বারি)

মন খারাপ হওয়ার অবস্থা। প্রথমত খেয়েছা বললে বাঁচবে, নাকি খাইনি বললে বাঁচবো!
দ্বিতীয়ত 'গোমাংস' নাকি 'গরুর মাংস'।

আসলে প্রতিদিন চাল ফুটিয়ে হয় ভাত। আর ঠাকুর ভোগ জাতীয় কিছু হলে হয়ে যায় অন্ন। এখন বুঝতেই পারছিনা যদি বলি খাই - কোনটা খাই 'গরুর মাংস' ডেইলির ভাত,  নাকি 'গোমাংস' অন্ন টাইপ প্রসাদ।

চলবে.........

বিনয় শীল

অন্ধকারের জীব

মানবে না তা জানি।
একটি অশ্রুবিন্দু ধরে -
এক সাগরের পানি।

বুঝি ! কী চাও তুমি!
আমার চোখের জলে ভাসুক
শতদীর্ন ভূমি।

তোমার চাওয়ায় ছল্।
ঝড়ো তান্ডবেও থাকুক -
শান্ত দিঘির জল।

তোমার ইচ্ছা- এই
তুমিই শুধু বকতে থাকবে
আমার বলতে নেই।

তোমার রহস্যময় হাসি |
আমায় তুমি রিক্ত করলে
সর্বস্ব মোর গ্রাসি।

তবু ভাবনা আমার নাই |
মনুষ্যত্বের শিকড় আঁকড়ে
বেঁচে থাকতে চাই।

তোমার চোরা-গুপ্তির রাত্ |
কিন্তু জেনো আসবে একদিন
আলোর সুপ্রভাত।

তুমি, সেদিন কোথায় যাবে ?        
আলোর মেলায় তুমি যে হায়
কেবল মুখ লুকাবে  !!

অশোকানন্দ রায়বর্ধন

চ   শ   মা

দুঃখকে মোছার জন্যে মায়াকথা সাজে রঙিন আলোয়
টুপ টুপ বৃষ্টি নীরবে বইলে কান্নার সমান
মঞ্চের আলোর পুকুরে ডুবে যায় সন্ধ্যার বাউল বসন

মিলিমিশি নাটকে আমার দুর্বল সংলাপ,
পোষাক পাল্টাই বারবার সাধুর ভণিতায়
কেবল ভুলে যাই চশমার কাঁচ পাল্টাতে
বনেদি সাধবাজারে আমি বেকুফ ক্লাউন

হালফিল ম্যারাথনের সাথে আমি বড়োই বেমানান
গবেট প্রাচীন আমি মায়াময় আলোয়
গুহামানবের মতো উবু হয়ে শান্তির প্যারেড করি ৷

Thursday, August 9, 2018

সঞ্জীব দে

আবিন্তা কবির এক মূল্যবোধের নাম
    

        মূল্যবোধ ,সততা ও উদ্দমশীলতার আরেক নাম আবিন্তা কবির । তাঁর পারিবারিক সু-সংস্কৃতি মায়ের শিক্ষা ,সমাজিক অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে তাঁকে আবিন্তা কবির হিসাবে গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে। আবিন্তা কবির আদর্শ সততা মূল্যবোধ আত্মবিশ্বাসকে অবলম্বন করে একজন সফল ব্যাবসায়ী হতে চেয়েছিলেন।আবিন্তা কবির সর্বদা মানুষের সাহার্যে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। তিনি বিশ্বের প্রচুর সেচ্ছাসেবি সংগঠনের সাথে যুক্ত রেখে দুস্ত অসহায় মানুষের পাশে তাদের বিভিন্নভাবে সাহার্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন ।এমনকি অক্সফোড বিশ্ববিদ্যলয়েও সে স্ট্যুডেন্ড কার্যকরি কমিটিতে ছিলেন। বুক অফ লাইফে যে ভাবে মনরোলো মানুষের সেবায় নিজেকে প্রয়োজনীয় করে তোলেছেন ঠিক সেই রকম আবিন্তা নিজেকে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে চান।বিশ্বস্ততা বা আস্তা ,সততা এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ মূল্যবোধের বসবর্তী হয়ে ভাগ্যাহতদের মঙ্গলার্থে জীবনের কিছুটা সময় তিনি ব্যয় করতে চান । তিনি মনে করেন যেই দেশের আলোবাতাস স্পর্শে তিনি বড় হয়েছেন সেই দেশের নাম বাংলাদেশ ।তাই তিনি দেশ ও সমাজের কাছে ঋণী । তাই তারও একটা নৈতিক কর্তব্য আছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। যেহেতু আগামী প্রজন্মের হাতে দেশের ভবিষ্যত তাই এখন থেকে সবার উচিত আগামী প্রজন্মকে তৈরী করে তোলা। অবিন্তা কবির নিজেকে জানতে চেয়েছেন নিজের কাজের মাধ্যমে। নিজেকে আবিস্কার ও প্রমান করে গেছেন বার বার । মার্কিন যুক্ত রাষ্ট্রের অক্সফোড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী অবিন্তার স্বপ্ন ছিল- অনেক স্বপ্ন ।  মাতৃ ভক্তি ও টান থেকে এবং পারিবারিক মূল্যবোধ থেকে তার মনে জন্ম নিল জন্মভূমি বাংলাদেশের প্রতি অগাধ টান , এবং দেশকে এগিয়ে নেওয়ার একটা বিরাট স্বপ্ন.ঊনিশ  বছরের তরুণী অবিন্তাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছিলেন। অক্সফোডের মিশ্র সংস্কৃতিপ্রতিভাময়ী  অবিন্তাকে আরো বেশি করে দেশাত্মবোধে তাকে তৈরী করতে সহায়ক হয়েছিল।,মা রুবা আহমেদ ও বাবা এহসানুল কবিরের একমাত্র সন্তান অবিন্তার অক্সফোডে থাকাকালীন একটাই লক্ষ্য ছিল ,খুব তাড়াতাড়ি দেশে ফিরবেন এবং দেশের মানুষের জন্য কিছু করবেন।
       কেউ কি জানতো ঊনিষ বছর চার মাসের একটি ,একটি প্রতিভাবান মূল্যবোধ সম্পন্ন বিবেকের তিনটি অক্ষরের জী-ব- ন থমকে দাঁড়াবে। জীবনের ফুটন্ত সকালবেলায় তিনটি তাজা ফুলের কলি রক্ত স্নাত হবে।ঐ নর পিশাচরা শুধু আবিন্তাকে খুন করে নি ,ওরা খুন করেছে দেশের বিবেক ও মূল্যবোধকে,ওরা শুধু রুবার বুককে ক্ষত বিক্ষত করেনি,ওরা ক্ষত বিক্ষত করেছে বাংলা মায়ের বুককে।।মাত্র ঊনিশ বছর বয়সে সুশৃঙ্খল পারিবারিক শিক্ষা ও মিশ্র সামাজিক অভিজ্ঞতা তার মনে খুব অল্প বয়সে জন্ম দিল বিশ্ব মানবিকতা বোধ। এই বোধ তাকে অন্যদের তুলনায় আলাদা ভাবে জানতে মোটেই অসুবিধা হয় না। সে মনে করতো আমাদের সকলের উচিত প্রতিদিনের কিছু সময় অসহায় মানুষের জন্য নিজেকে উতর্সগীত করা। মানুষের জন্য দেশের জন্য কিছু করার তীব্র আকাঙ্খা তাকে আমেরিকা থাকা সত্বেও তার মন পড়ে থাকতো স্বদেশের প্রতি। দেশাত্ববোধ কি তা জানতে হলে অবিন্তাকে জানতে হবে বাংলার যুবকদের।

        গুলশান আক্রমণে ঝড়ে যাওয়া সুভাষিত ফুলের শোক এখনো বাংলার বুক থেকে মুছে যায়নি। যত দিন যাচ্ছে তত আরো তাজা আরো সতেজ হচ্ছে তাদের স্মৃতি। তিন বাংলাদেশি ফারাজ, অবিন্তা এবং ইশরাতের জন্য এখনো কাঁদছে বাংলাদেশ। পাশাপাশি স্মরণ করছে নিহত বিদেশিদের। সাধারণ মানুষের মধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ঐক্য গড়ে উঠছে।  দুইবছর পেরিয়ে গেছে পৈশাচিকতার। কিন্তু নৃশংসতার ক্ষত এখনো শুকায়নি। তবুও শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে এগিয়ে চলছে বাংলার মানুষ। এখনো শোকার্ত বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত গুলশানের সেই রেস্তোরাঁর সামনে ভালোবাসার পুষ্পাঞ্জলি দেয় নিহতদের জন্য,বুকে বুকে প্রজ্জোলিত করে প্রতিবাদের আগুন । রাজধানীর গুলশানের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে নারকীয় জঙ্গি হামলায় নিহত ফারাজ আইয়াজ হোসেন ও অবিন্তা কবির স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দের অংশীদার হতে দেশে ফিরেছিলেন। কিন্তু ঈদের আনন্দনগরীতে মৃত্যুপুরীর ভয়াবহতা নিয়ে হাজির হয় তাদেরই সমবয়সী বিপথগামী কিছু ঘাতক। শুধু বাংলাদেশই নয়, তারা দুজন এবং তাদের আরেক বন্ধু নিহত ভারতীয় তরুণী তারিশি জৈন যুক্তরাষ্ট্রের যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন সেখানেও সহপাঠীরা শোকে কষ্টে স্মরণ করছেন তাদের। ফারাজ আইয়াজ হোসেন ছিলেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী লতিফুর রহমানের দৌহিত্র এবং সিমিন হোসেন ও ওয়াকার হোসেনের সন্তান। ১৯৯৬ সালের ১৫ এপ্রিল ফারাজের জন্ম। মাত্র ২০ বছরের টগবগে তরুণ ফারাজ মৃত্যুর আগেও বন্ধুত্বের জন্য আত্মত্যাগের অনন্য নজির রেখে গেলেন। যা প্রকাশিত হয়েছে নিউইয়র্ক টাইমসে। গতকাল ছিল ফারাজের কুলখানি। ফারাজের পরিবারের সদস্যরা জানান, আমাদের চোখের সামনে সে ধীরে ধীরে বড় হয়েছে। আমরা দেখেছি কী গভীর মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে জীবনের প্রশস্ত জগতে পা রাখার জন্য সে প্রস্তুত হচ্ছিল। সে বিদায় নিয়েছে নির্মমতার শিকার হয়ে, কিন্তু মৃত্যুর মুহূর্তেও রেখে গেছে উঁচু নৈতিকতার স্বাক্ষর। সন্ত্রাসীদের হাত থেকে ছাড়া পেয়েও বন্ধুদের জন্য তার আত্মত্যাগের গল্প মানুষের মুখে মুখে ফিরছে। এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সারা দেশের মানুষের সঙ্গে শোকে মুহ্যমান হয়ে আছে তার পরিবারও। ফারাজ ছুটিতে বাড়ি আসে। ঈদের ছুটিতে পরিবারের সবাই মিলে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার কথা ছিল তার। নানা লতিফুর রহমান ও নানী শাহনাজ রহমান তাদের ছোট মেয়ে শেজি ও জামাই আরশাদ এবং তাদের দুই পুত্রসন্তান নিয়ে চলে যান। ফারাজের ভাই যারেফের ভিসার বিলম্বের জন্য ফারাজও যায়নি। ফারাজের মা সিমিন বলেছিলেন, ‘তুমি নানার সঙ্গে চলে যাও।’ আগে এ রকম হলেও এবার ফারাজ যেতে চায়নি। মা আর ভাইয়ের সঙ্গে রবিবার যাবে বলে থেকে যায়। শুক্রবার রাতেই গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় বন্ধুদের নিয়ে খেতে গিয়ে ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার নির্মম শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বিশ্বখ্যাত নিউইয়র্ক টাইমস তথ্য প্রকাশ করেছে যে, ফারাজ হোসেনকে চলে যেতে বললেও তার দুই বন্ধু অবিন্তা কবির ও তারিশি জৈনকে ছেড়ে চলে যেতে চায়নি। জঙ্গি সন্ত্রাসীরা ফারাজকে বাংলাদেশি মুসলিম বলে চলে যেতে বললেও সে যায়নি। অবিন্তা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক এবং তারিশি ভারতীয় নাগরিক বলে তাদের বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে জঙ্গিরা। ফারাজও তাদের সঙ্গে নৃশংসতার শিকার হয়। এখন এই তরুণ ফারাজ বন্ধুদের প্রতি তার ভালোবাসা, অসীম সাহস আর মানবিক গুণাবলির জন্য দেশে ও বিদেশে নানাভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। আটলান্টার ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর ছাত্ররা যৌথভাবে ফারাজ ও অবিন্তার স্মরণে বড় অনুষ্ঠান করেছে। তারা দুজনই তাদের নিজ নিজ ক্লাসের স্টুডেস্টস অ্যাকটিভিটিস কমিটির (এসএসি) প্রধান ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে তিন দেশের পতাকা রেখে সামনে ফুল দিয়ে ও বিভিন্ন মতামত লিখে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত শিক্ষার্থীর প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা জানানো হয়। ইমোরি ইউনিভার্সিটির জ্যাকসন নামের এক শিক্ষার্থী ফারাজ হোসেন ও অবিন্তাকে স্মরণ করে লিখেছেন, বন্ধুত্বের জন্য ফারাজের আত্মত্যাগ দেখিয়েছে, বন্ধুত্বের বন্ধন কতটা দৃঢ় হতে পারে। ফারাজ হোসেন ও অবিন্তা কবিরের স্মরণ আয়োজন হয় বিভিন্ন স্থানে। ফারাজের পাশাপাশি তার পরিবারের আর একটি বিষয় আমাদের অনেকের জন্যই অনুপ্রেরণার— তাহলো লতিফুর রহমান ও শাহনাজ রহমানের সব শিল্প-কারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশেই। দেশের বাইরে তাদের কোনো বিনিয়োগ নেই। দ্বিতীয় কোনো পাসপোর্টও তাদের নেই। তাদের তিন সন্তানের সব এই দেশে। ভবিষ্যৎও এই দেশেই। তাদের বর্তমান তিন নাতির সব স্বপ্ন বাংলাদেশকে ঘিরেই। তাদের সবার কাছে বাংলাদেশ প্রথম, বাংলাদেশই শেষ কথা। সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করেছে, তার পরিবারের কেউ গানম্যান নিয়ে চলেন না। অবিন্তা কবির (১৮) গুলশানে জঙ্গি হামলায় নৃশংসভাবে নিহত হওয়ার মাত্র তিনদিন আগে আমেরিকা থেকে দেশে এসেছিলেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। থাকতেন মিয়ামীতে। ইমোরি অক্সফোর্ড কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি। ২০১৯ সালে তার গ্রাজুয়েট হওয়ার কথা ছিল। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন বলে ২৭ জুন দেশে আসেন অবিন্তা। ইফতারের পরপরই তিনি তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বন্ধু ফারাজ আইয়াজ হোসেনের সঙ্গে দেখা করতে হলি আর্টিজানে যান। অবিন্তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে দেখা যায়, সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণীটি ছিলেন স্টুডেন্ট আক্টিভিটিজ কমিটির সঙ্গে জড়িত। তবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করলেও অবিন্তা তার প্রোফাইলে যুক্তরাষ্ট্র না লিখে  বাংলাদেশের নাগরিক উল্লেখ করেছেন। বাংলাদেশের প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। অবিন্তা কবিরের দাদা মনজুর মোরশেদ সুপার স্টোর ল্যাভেন্ডারের মালিক। ফারাজ ও অবিন্তার সঙ্গে তাদের আরেক বন্ধু ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলের শিক্ষার্থী ভারতীয় তারিশি জৈন নিহত হন। বাংলাদেশের কালচারাল ও করপোরেট জগতের প্রিয় মুখ ইশরাত আখন্দও মর্মান্তিকভাবে নিহত হন গুলশানের জঙ্গি হামলায়। ঘটনার পরদিন ইশরাতের শ্রীলঙ্কা যাওয়ার কথা ছিল। ইশরাতের বৃদ্ধা মা (৮২) বলেন, শ্রীলঙ্কা থেকে ফিরে এসে আমার সঙ্গে ঈদ করবে বলেও কথা দিয়েছিল মেয়ে। সেই মেয়েকে কবরে দিয়ে এলাম। ৪ জুলাই গাজীপুরে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এলাকায় অবস্থিত একটি কবরস্থানে ইশরাত আখন্দের লাশ দাফন করা হয়। তিনি তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) উপদেষ্টা ছিলেন। ইশরাত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান পরিচালনাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। দেশের বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ প্রতিষ্ঠান গ্রামীণফোনেও এক সময় কাজ করেছেন তিনি।

       কে জানতো এমন এক বিশেষ মূল্যবোধ সম্পন্ন মাত্র ঊনিশ বছরের একটি জীবন স্বদেশে ফেরার তিন দিন পর জীবনের আলো লুন্ঠিত হবে সন্ত্রাসের বিবেক হীন মুখে। হে রাষ্ট্র , রক্ত নয় ফিরিয়ে দাও বিবেক আর মুল্যবোধ আর নৈতিক জীবনের নিরাপত্তা।
        নিমেষে ঝড়ে গেল অবিন্তা সহ তিনটি তাজা মূল্যবান ফুল । দেশ হারালো অবিন্তাদের মতো এক বিশেষ মূল্যবোধ সম্পন্ন মনন শক্তি।

তথ্যসূত্রঃ
১/অবিন্তা কবিরের ডাইরী থেকে, সহযোগিতায় ইমদাদুল হক সূফী।
২/ বাংলাদেশের কয়েকটি পত্রিকা।

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...