Saturday, March 28, 2020

আবেদন

COVID-19 করোনা দমনে প্রশাসনকে সহযোগীতা করুন। প্রশাসনের তৎপরতাকে শক্তি দিন। শপথ নিন, প্রতিজ্ঞ করুন জিতবে দেশ। হারবে করোনা।
ঘরে থাকুন। সুরক্ষিত থাকুন।

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম

সম্পাদকীয়

ভেঙে পড়তে পড়তে শক্ত হয়েছি আমরা, পৃথিবীর ঘোর অসুখের কথা য'বে থেকে জেনেছি!

দূর্বলতার কথা লুকিয়ে না রেখে বলে ফেলাই আসল সবলতা। বইমেলার সংখ্যাটা ধাক্কা খেয়েছে। আমরা এই মুহুর্তে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উপস্থাপন করতে পারিনি এই সংখ্যা। দুঃখিত ও ব্যাথিত। তবে নবীন প্রবীণের এই সংখ্যা কিছুটা হলেও মনকে ব্যথা ভুলাবে বলে আমার বিশ্বাস। 

মনন স্রোত ই-ম্যাগাজিন হিসেবে সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ। সেই জায়গা থেকে মানুষের জন্য কিছু করার কাজকে আরও তরান্বিত করতে মনন স্রোতকে সহযোগীতা করবেন এই বিশ্বাসই আমাদের পাথেয়। 

এই সংকটময় মুহুর্তে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সংখ্যা নিয়ে খুব দ্রুতই মিলিত হবো এই আশা রাখছি। চলুন একসাথে দূরে থাকি। সবাই ঘরে থাকুন। সুরক্ষিত থাকুন। 

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
জয় দেবনাথ
সম্পাদক
মনন স্রোত 

ছবিতে সুমন || ক্যামেরায় রনি

শৌভিক বাগচী

নেই নেই 

একাকীত্বের পৃষ্ঠায় 
যে ছবি থাকে 
তার কোন রং নেই |

উড়ে যাওয়া প্রজাপতির মতো 
যে হাতছানি দেয় 
তার কোন বিষ নেই |

হাতে হাত , খুব শক্ত করে 
যে ধরে রাখে 
তার কোন জাত নেই |

অধরে মিথুন এঁকে 
যে চুম্বন দেয় 
তার লিঙ্গভেদ নেই |

পড়ে থাকা সময় -সমিধে 
যে নিজেকে দেখে 
তার কোন ধর্ম নেই 

আর নীরবে সরবে 
যে রক্তাক্ত হয় অনুক্ষণ 
তার কোন বয়স নেই |

অভীককুমার দে

রূপান্তর

বুকের ভেতর একখন্ড মাটি, 
আমন- আউশ- বড়োর মতোই ঋতু আসে। 

নিজস্ব বীজ বপন করি
চারাগাছ বড় হয়। 

ঘরের ভেতর ঘরে পাখিটি
ফসলেই মুখ ঢেকে
মাটি ঢাকে সুখ এবং
পাখি উড়ে যেতেই বদলে যায় ঋতু। 


সুধীর দাস


আতঙ্ক

বিশ্বব্যাপী  আজ হল কী?
সুখের বদলে দুখের বাতাস বইছে আনাছে কানাছে
বৃদ্ধ কিংবা শিশু, যুবক কিংবা যুবতী, পুরুষ কিংবা নারী
অথবা রাস্তাঘাটের নিদ্রাহীন অনাহারী।
আতঙ্কিত জর্জরিত ভয়ে ভয়ে চালিত হৃদয় যেন কম্পিত।
করুনা নামক মারনব্যাধী ভাইরাসে।
বিশ্বের দরবারে যারা শক্তিশালী মারনব্যাধী অস্রসশ্রে পরিপূন্য 
তারাও যেন আজ ভয়ে কম্পিত।
চীন নামক দেশটিও আজ চাইছে মুক্তি সকলের তরে।
বিশ্ব যার নামে কাঁপে পারমাণবিক বোমায় যার প্রথম সাফল্য,
তারাও আজ যেন ভয়ে নিদ্রামগ্ন। 
করুনা নামক বিপজ্জনক ভাইরাস যেন আজ শয়তানের আরেক রুপ
বিশ্বব্যাপী নাম যার মহামারি ।

অনুপম দেব

ভাবছি কি লিখবো 

মেঘলা দিনে আমি আনমনা 

এই মনে শুধু তোমার আনাগোনা,
ভাবছি তোমায় নিয়ে ভাববো

নাকি একটি কবিতা লিখবো?

মেঘলা আকাশে নেই আজ তারাদের মেলা 
চন্দ্রালোতে ভাসতে চায় হৃদয় ভেলা,
ভাবছি স্বপ্নে ওই আকাশে তোমার ছবি আঁকবো 
নাকি একটি কবিতা লিখবো.

আচ্ছা একটা কবিতাই লিখবো
ছন্দে ছন্দে ডাইরির পাতার শূন্যতা পূর্ণ করবো,
কলমটা হাতে নিয়ে লিখতে বসলাম

কিন্তু বুঝতে পারছিনা কি লিখবো.

আরে আমিতো কবি না
তবে কবিতা কিভাবে লিখবো,
সবাই কত সুন্দর করে কবিতা লিখে 
আমি না হয় তোমায় নিয়েই লিখবো!

সঞ্জয় দত্ত

বসন্ত  

কতকাল পেরিয়ে 
এসেছ তুমি ধেয়ে,
সুন্দর গগন আর
মলিন বাতাস নিয়ে।

পলাশ আর শিমুল 
ফুটিয়াছে কত ফুল,
আম,জাম,কাঁঠাল আর
লিচুর পুষ্ট মুকুল।

মিষ্টি মধুর সুরে 
বসন্তে কোকিল ডাকে,
গুন-গুন গুন-গুন করে
মৌমাছিরা উরে।

পিনাকী ভৌমিক

অসময়

সময়টা থমকে গেলো হঠাৎ! 
জীবনটা তো চলছে তার‌ই মতো করে ;
কিছু একটা অনুপস্থিতির আভাস পাচ্ছি!
কিসের অভাব! কিসের শূণ্যতা এটা?

বুকের মধ্যে অজানা এক ব্যথা 
দুমড়ে মুচড়ে সবকিছু তছনছ করে দিচ্ছে!
জানি না কখনো ঠিক হবে কি না 
সে ব্যথা অসহনীয় ব্যথা!
কষ্ট ছাড়া মানুষের আর কি আছের নিজের? 
তবু সে কষ্ট - এত কষ্ট কেন!

কতো রাত শুধু বসে থেকেই কাটিয়েছি 
কারো আসার অপেক্ষায়!
ভেবেছিলাম সে ব্যথা ও হয়তো ঠিক হবে । 
দুর্বিষহ যন্ত্রণার ছবি আঁকছে আমার হৃদয়; আমার অজান্তে!

আজ নিরালায় বসেভাবছি- 
একা পথে কি করে হাঁটবো?
যে স্মৃতিগুলো কেউ দিয়ে কেউ চলে গেলো
তা আবার পিঁছু ধাওয়া করবে না তো?

সেই স্মৃতিগুলো দিয়ে আবার নতুন কোন
স্মৃতি রচনা হবে না তো? 
এই অসময় শুধু ঘড়ির কথা বলে!

যমুনা মজুমদার

উত্তর  

পড়ন্ত বিকেল, রক্তিম সূর্য 
বইছে মনে ঝড়ো হাওয়া 
পড়ছে মনে স্মৃতি সব, 
ভাঙা চাঁদ যেন এক গোলক ধাঁধাঁ। 

ডায়েরির পাতায় জমেছে ধূলো 
জমেছে কত অভিমান,
নক্ষচূর্ণ আজ স্তূপাকার মাটি 
অক্ষরগুলো বলে দেয় আমার নাম। 

জমে আছে আজ হাজারো প্রশ্ন 
হয়ে আছে সব নিরুত্তর। 
নিরবতায় আজ হাজারো প্রশ্নের 
এক উত্তর ! 

অজয় মিত্র

বেকারত্ব

বেকারত্ব নয় কোনো শব্দ
এটা একটা শব্দ
নিজের সাথে নিজের আর সমগ্র বিশ্বের

বেকারত্ব নয় কোনো যন্ত্র
এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র
তোমাকে সমাজে মূল্যহীন করার

বেকারত্বে নেই কোনো শান্তি
আছে খালি অশান্তি
যা তোমাকে বাধ্য করবে ভুল ভ্রান্তি

বেকারত্বে নেই কোনো আশা 
পাবে খালি নিরাশা
সমাজ দিবে শুধু প্রতাশা

মোঃ রুবেল

এই বসন্ত নাইবা আমার 
                     
রঙিন বসন্তটা এখন আমার কাছে ফিকে।
পলাশ বনের লাল পলাশ এখনও আমার জন্য ফুটেনি।
তোমাকে রোজ বারের ন্যায় আর সজীব প্রেম নিবেদন হচ্ছে না।
হলুদ পাঞ্জাবী আর শাড়ির প্রেমিক-যুগল হয়ে  অতিক্রম করতে পারিনি কোনো নিভৃত গলি।
অনেক পথ হাঁটার ফলশ্রুতিতে ঘামে সিক্ত অবয়ব  মুছার হলদে আঁচলের আবদার গত হয়েছে।
রঙিন আবির লেপটে দেওয়ার অজুহাতে তোমার গালে নিযুত ভালোবাসা উষ্ণ পরশ থেকে আজ আমি বিরত।
এই বসন্ত আমার নয়।
কারণ এই বসন্তেই আমায় প্রত্যাখ্যান করা প্রিয়তমার অভিমানের জয়।

নিপু দাস

সেদিনের বই মেলা

 বছর ঘুরে জমা টাকা নিয়ে বইমেলায় 
এবইয়ের গল্প কবিতা-
 ঐ বইয়ের প্রচ্ছদ কোন এক অসতর্ক মুহুর্তে পকেট চিচিং ফাক 
বাড়ি ফিরে কাকুতি মিনতি আর পুরনাে খবরের কাগজ বিক্রি সম্বল করে 
আবারও সেই বইমেলার নেশায় 
পকেট চেপে রেখে বই কিনে ফেলা 
ফিরতি পথে বাসের হ্যান্ডেলে বাদুড় ঝােলা মাঝপথে যাদুর পরশে উধাও বইয়ের থলি আবারও মেলায় পকেটহীন ঘােরাঘুরি ভিড়ে দাড়িয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা । 
দোকানীদের চোখ রাঙানী রক্ত চাহন,
আহারে সে দিনের সেই বই মেলা
তবে এখন দেখি বই মেলায়
বই পসারিদের রক্ত চাহনি নেই।
এখন যে প্রেমিক যুগলবন্দিদের ভীড় বেড়েছে বই মেলায়-
ফোচকার গন্ধে সাহিত‍্যকরাই হারিয়ে যাচ্ছে, 
এটাই কি তবে এখনকার দিনের বই মেলা?

পায়েল দেবনাথ

হোলি 
         
হোলি এসেছে, এসেছে হোলি 
তাইতো সবাই ছুটি গলি গলি, 
খুশিতে যে মন নাচে 
নতুন রঙে সবাই সাজে। 

রঙে রাঙিয়ে গেল আকাশ বাতাস, 
ছুটতে ছুটতে নিতে পারছি না শ্বাস! 
সারাদিন হৈ হুল্লোড় 
আনন্দেতে মন জুড়ালো। 
নাচে, গানে, মস্তিতে 
বলবো সবাই হোলি হে! 

সারাদিন ক্লান্তিতে 
ফিরে এসে বাড়িতে,
দেখি মা রেঁধেছে 
মাংস, মাছ ভেজেছে! 

বলি মা খিদে পেয়েছে 
দাও না কিছু খেতে, 
বললো মা, আগে স্নান করোগে 
গায়ে রঙ লেগেছে যে। 

খেয়ে দেয়ে পেট ভরে 
খেলতে যাবো মাঠে, 
খেলা শেষে ফিরবো এসে 
মা বলবে, বসো পড়তে! 

আমি বলবো পড়বো না মা 
আজ শুধু স্মৃতি, 
সারাবছর মনে রাখবো 
আজকের দিনের কীর্তি।

সুজন দেবনাথ

বইমেলা

কে কে যাবি বই মেলায় কে কে যাবি বল
আগরতলা হাঁপানিয়ায় বইমেলাতে চল 
বন্ধু বান্ধব নিয়ে  যখন বই মেলাতে যাই
নানান রঙের বই দেখে ভীষণ মজা পাই
সারি সারি বইয়ের দোকান কত রকম বই
চারিদিকে কত মানুষ আর কত হই-চই
একের পর এক স্টলে যখন আমি যাই
বহু লেখকের ভালো ভালো বই দেখতে পাই
এরই মাঝে অনেক বই হয়ে যায় কেনা
সেই সাথে  হয়ে যায় নতুন লেখক চেনা
নানান রঙের নানান বই সবার হাতে হাতে
পাঠকের যেন আত্মার সম্পর্ক বই মেলার সাথে
ইচ্ছে করে রোজই যেতে বই মেলাতে ভাই
জ্ঞানের মেলা বই মেলা এর তুলনা নাই
কত পাঠক অপেক্ষায় থাকে বই মেলার জন্য
বই মেলাতে এসে সবাই হয় যে অনেক ধন্য
মেলা আসে কিছুদিন পর আবার চলে যায়
মেলার স্মৃতি জড়িয়ে  থাকে,বই গুলোর আঙিনায়
যে মেলার জন্য সবাই থাকতো অপেক্ষায়
মেলা শেষে করুণ মনে আবার থাকে প্রতিক্ষায়। 

অনুপম রায়

তুলনা


এই আকাশে সূর্য চোখ নামিয়ে কথা বলে;
নিদারুণ কষ্টে 
বুকের ব্যাথায় চোখ জ্বলে।

ঐ আকাশে হয়তো হবে তোমার আমার দেখা,
যেখানে আলো সাজিয়ে দেবে জীবন রেখা।

শহরের বোনা রাস্তায়,
ল্যাম্পপোস্টের বাতি জ্বালায়;
ঐ শহরেই মুচকি হেসে
হাতটি তুমি ধরবে একা।

এই শহরে প্রেমের গন্ধ এখন আসেনা,
মাথার চুলের শ্যাম্পুর গন্ধ বাতাসে আর ভাসেনা;

নিয়তি এখন মুখ বাঁকিয়ে 
আবেগ দেয়না আর কপালে;
প্রেমে এখন লাশের গন্ধ
আসল প্রেমিক মিলেনা!

জয়ন্ত শীল

পা 
 
আমাদের দুটো পা আছে। 
ইচ্ছে করলেই হেঁটে যেতে পারি 
গলির মোড় থেকে দেশ-দেশান্তর। 

অন্ধ স্ট্রিট লাইটে চোখ 
ঝলসে যাওয়ার পর 
এখন আর সেইভাবে হাটা হয় না। 

এইভাবেই হেঁটে হেঁটে একটি জীবন 
পার করে দিতে হবে আমাদের

প্রীতম ভৌমিক

সত্তা

বেঁচে থাকার সত্তা টুকু তোমার কাছে অমলিন।
কিন্তু সে যে বাস্তবে কুণ্ঠাগত অঙ্গীকার!
তোমার কাছে হয়তো এর ছলনা,
না হলে যে রাত-দূপুরের আর্তনাদ,
স্বপ্নে আবেগ হয়ে যন্ত্রণা দিত না।

তোমার কাছে হয়তো এটা আমার অভিনয়।
কিন্তু সে যে মনের গহীনবনের সত্তা।

শুনে তুমি বলতে সত্তা!
আমি বলতাম হ্যাঁ সত্তা।
উত্তরে তুমি জলের আলপনার মত হেসে উড়াতে।
আর বলতে সেটা কি গো?

আমি অবাক দৃষ্টিতে চাইতাম তোমার দিকে,
আমি দেখতাম তোমার চোখের মলিনতা।
ক্ষনিকের জন্য মনে হতো আমি ভন্ড!
ভাবতাম তুমিই ভুল,
কিন্তু পরক্ষণেই ভাবতাম না না আমিই ভুল।

সুব্রত দেববর্মা

১.

শুরুটা যেমনই হোক,শেষটা বোধহয় এমনই হয়।

রাত পৌনে দশটা।বইমেলার শেষ দিন।একে একে সব স্টল বন্ধ হয়ে আসছে। এক বাচ্চা মেয়ে তার মায়ের সাথে খেলনা স্টল গুছিয়ে বাড়ি ফিরছে,সাথে বড়ো বড়ো দুটো ব্যাগ।ওইটুকু মেয়ে ভারী ব্যাগটা পারছেনা দেখেদেখে মায়া হলো।গেট অব্দি এগিয়ে দিয়ে এলাম।ওইটুকু অব্দি ঠিকঠাক ছিল।শেষে গেট পার করার সময় আমাকে সুমিষ্ট হাসি সমেত বালিকাটি বললো "আঙ্কেল থ্যাংক ইউ, আমি ইস্কুলে পড়ি তো।মারে হেল্প করতো আইসি"।

বিশ্বাস করুন এই বইমেলার আমার সেরা মুহূর্ত এটাই।ভেবেছিলাম কিছু বই কিনে দেবো কিন্তু হায়রে মেলা প্রাঙ্গণ তখন ফাঁকা।

অনির্বান রায় গুপ্ত

নিদ্রা 

সারা রাত এর নিদ্রা হীন একাকী শহর বয়ে বেড়ায় অনুভব এর লেখা আর কলম এর অবিরত খসখসানি আওয়াজ.. ভুল বললাম 
নিঃশব্দ টাইপিং এ একটার পর একটা শব্দ লেখা হয়েছে একাকিত্ব অনুভব করেছি যত.. 

আজ তোর শহর টা বড়োই একা,  না ভুল বলেছি,  ওটা আমার শহর হবে. 
ল্যাম্পোস্ট এর আলো গুলো একটা সীমা রেখা বেঁধে দেয় তার বাইরে টা অন্ধকার এ আবৃত. 
ক্রমশঃ ছায়া টাও মিলিয়ে গেলো নিজের অজান্তে. 
একটা ছোট হোর্ডিং হটাৎ চোখ এ পড়লো,  
কিছুটা ব্যাতিক্রমী গিটারের ক্লাসরুম,
বহুতলের রুফ টপ এর ওপর রেলিং এর ধারে দাঁড়িয়ে আলোর রোশনাই অন্ধকারের নীরবতা, 
একটাই আলো জ্বলছিল আজ মাঘী পূর্ণিমায়..  আকাশ এ প্রস্ফুটিত চাঁদ..  দেখো দুহাত ছড়িয়ে ঝাঁপ দিয়েছি এই সমুদ্রেতে 
চা এর ভাঁড় আর দু আঙ্গুল এর মাঝে জ্বলন্ত সিগারেট এর ধোঁয়ায় ভোরে গেছে শহরের ফুসফুস,, .... 
বার বার মনে পরে ট্রাম লাইন এর ধার দিয়ে  পথ চলা,  মাঝে মাঝে প্রিন্সেপ ঘাট এর ভেল পুরি খেতে খেতে একটা গোলাপ এর পাঁপড়ি ছুঁড়ে  মারতিস  আমায়. 
মনে পরে একদিন মেলায় কেনা গ্যাস বেলুন গুলো কিনে একটা কাগজ এ """ আমি তোমার অনি """ এটা লিখে উড়িয়ে দিয়েছিলাম তোর প্রতীক্ষায় 
সেদিন তোর হারানো কান এর দুল টা খুঁজে পেলি বুঝতে পারিসনি ওটা কার কাজ ছিল ঘরের কোনে হারিয়ে যাওয়া টা.... তু্ই হয়তো গভীর নিদ্রায় মগ্ন এলো চুলের  মাঝে, 
আহিরে একটা গান বার বার  মনে পড়ছিলো """ সেদিন দুজনে দুলেছিনু বনে ""''
এখন কোকিল ডাকছে আমাদের পাড়ার গঙ্গার ঘাট এর গাছ টাতে.. 
যদি তু্ই থাকতিস পাশে এলো মেলো হাওয়ায় চুল গুলো উড়ে যেত বারে বারে. 
আর আমি বসন্তের রং এ রাঙিয়ে দিতাম তোকে.. 
গোলাপি আবির কিনেছিলাম তোকে মাখবো বলে.. আজও আছে সেটা  কাগজ এর ঠোঙা বন্দি হয়ে টেবিল এর কোন টাতে.. 
তোর টোল পোড়া গাল দুটোয় একটু খানি আবির এর ছোঁয়া.. ভারী সুন্দর দেখাচ্ছিল তোকে.. 
একদিন হটাৎ ই তোকে ফোন করেছিলাম,,  ভাবিনি শুনবো WRONG NUMBER,  
গিটারে সুর ওঠে বেসুরো ভাবে """" এখন অনেক রাত ---- তোমার কাঁধে আমার নিঃস্বাস """"  
মাঝে মাঝে খুব রাগ হতো তোর ওপর কিন্তু বলতে পারতাম না ঘুম এর শহর পাল্টে যাবে বলে.. তাই লেখার ডায়েরি টা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম,,  আর কোনো এক প্রমিস ডে আর সাথে  শুকনো গোলাপ এর প্রতিশ্রুতি গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে উড়ে হায় হালকা বসন্তের হাওয়ায়,, 
 .. আর স্বপ্ন টা স্বপ্নই থেকে গেলো 
সুন্দর কোনো পাখির ডাকে আজ ভোর হলো... 
সুপ্রভাত..
আজ আবার এক বছর বাদে মেলা থেকে বেলুন কিনেছি,,  নিচে তার সুতোর সাথে একটা কাগজ এ লিখেছি ভালো থাকিস "" অনি "

প্রীতম শীল

আগরতলা বইমেলা ২০২০
   

সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠেই স্নান করতে গিয়ে দেখি সাবান নেই, সকাল টা যে এতোটা খারাপ যাবে ভাবতে পারিনি পেষ্ট ও শেষ। তবুও মুচড়িয়ে মুচড়িয়ে কিছুটা পেলাম তাতে আমার সারলেও বাকিরা কয়লাতেই কাজ সারবে।কয়লা বলতে চুলোয় রান্না শেষে পুড়ন্ত কাঠকয়লা। গ্রামের লোকেরা আগে তা দিয়েই দাঁত মাঝতো। 
--মা ও মা সাবান যে শেষ কাল রাতে বলোনি কেন?
-- আমার আর কি তোরাই স্নান করিস আর আমি বলে বলে দেবো।
-- যা মোনার ঘর থেকে নিয়ে নে, মোনা মানে আমার ছোট ভাইয়ের ঘর থেকে।
-- আচ্ছা এনে দাওনা।
-- এই নে সাবান,  স্নান সেরে জানালায় রেখে দিস। 
সত্যি পৃথিবীতে মা ছাড়া বোধহয় কেউ এতো তাড়াতাড়ি সব কিছুর জোগাড় কেউ দিতে পারবেনা। স্নান সেরে সাবান টা রেখে দিলাম কথা মতো।
খাবার টেবিলে এলাম, সকাল সকাল টিফিনের আগে ভাত খাওয়া কেমন জানি গুড়া মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা করার মতো।
আগরতলা আসবো তাই ইচ্ছা না থাকলেও সকাল সকাল খেতেই হলো। যদিও পেট ও মন দুটুই চাইছিলনা,তবুও আমি দুটাকেই বলেছি ভাই একটু মানিয়ে নে। যেন কাজ করার আগেই কামলা কে খাবার দিয়ে বললাম যা এবার কাজে লেগে যা।।
রেডি হয়ে দুঘণ্টা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলাম, আমাদের গ্রাম থেকে অটোগুলো যেন রেল ইঞ্জিনের  মত,টাইম শিডিউল মেনে চলে। আসলে বেচারা অটো চালকদের আর দোষ কি,গ্রামটাই এমন।  হাজার চারেক লোকের বাস, প্রতি সোম আর বৃহস্পতি বারেই কাঁঠালিয়ায় হাট বসে। আমাদের গ্রাম থেকে চার কিমি দুরে।গ্রামের কিছু লোক এখোনো দিব্বি হেঁটেই চলে যায়। 
অবশেষে বেলা ১০ টায় কাঁঠালিয়া এলাম।মুলত এখান থেকেই কাঁঠালিয়া টু নাগেরজলা বাস পাওয়া যায়। বাস আসতেই কন্টাক্টর ডাক দিলেন,
--উঠেন দাদা উঠেন আগরতলা যাবেনতো?
--হ্যাঁ আগরতলা যাবো,  কিন্তু সিট তো ফুল।
-- আরে না না পিছনে খালি।
-- ভর্তি বাসেও পিছনে খালি পিছনে খালি কথাটা যেন কোনো কবি তাদের জন্য উক্তি করে গেছেন।
ঠেলে ঠুলে উঠলাম, বাসে দেখি সবাই মুখ ঢেকে আছে মাকস্ দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে পুরো বাসের লোক মিলে কোথাও হামলা দিছে যাচ্ছি। যাতে সি সি টিভিতে ধরা না পরি তাই মুখ ডাকা।  আশি বছরের বৃদ্ধ ও পড়েছেন, আহারে ওনারও মৃত্যু ভয়। করোনা ভাইরাস নাকি ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাই তিনিও পড়েছেন।কন্টাক্টর সোনামুড়া আসার পর সিট দিলেন, সিট টাকে মনে হলো রাজসিংহাসন আমি রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র। ঘুমিয়ে পড়লাম বাসের মধ্যে ঘুম যেন বাঙ্গালীয়ানা। দেখতে দেখতে বাস সিপাহীজলা পেরিয়ে ইউনিভারসিটি হয়ে আমার গন্তব্য স্থলে। বাধারঘাট এসেই বন্ধুকে ফোন,
--কিরে এলিনাযে আমায় নিতে।
-- সুমন বললো আমি রাস্তার বাপাশে, আমি তোকে দেখেছি। 
-- আমিও দেখেছি দাড়া আসছি। গ্রাম থেকে প্রথম শহড়ে এলে রাস্তা পারাপারে একটু ভয় লাগে। আমারও লেগেছিল প্রথমে।
সুমন আমার বন্ধু,ইউনিভারসিটিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ে। নিজের পড়াশোনা ততটা নেই বলে ওকে কোনোদিন তেমন ভাবে জানার আগ্রহ দেখায়নি। 
--খিদে লেগেছে বললাম কি রান্না করলি, 
--বললো ডিম। আসলে ডিম হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করা ছাত্রদের রুটিন রান্নার উপকরন।
বিকেল হলে বাধার ঘাট রেলষ্টেশ একটু ঘুড়ে এলাম। সন্ধ্যা ৭ টায় বই মেলাতে যাই। এক ঝাক কবিদের সাথে দেখা, কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিল আমি কি সত্যি কোনো স্বপ্নের দেশে আছি। যাই হোক মেলাতে ঘুরে ফিরে দুইটি বই ক্রয় করলাম।
 ১) অবেলার অসুখ 
২) অ্যান্টিবায়োটিক
রাত ৯ টা ৫৩ বাড়ি ফিরলাম বাড়া বাড়ি আমার নয় বন্ধুর,  তবুও ঘরটার জন্য মায়া লাগে। ছোট ঘর দুটো চেয়ার একটা পড়ার টেবিল আর দুজন কোনক্রমে ঘুমানোর মতো চকি। রাত টা পার করেই দিয়ে সকালে দিদিকে ফোন দিলাম-
-- আমি আসছি তোর বাড়ি
-- সত্যি বলছিস, তবে এতো সকাল কি করে?
-- আরে বই মেলাতে এসেছিলাম হাঁপানিয়া, বাধারঘাট সুমনের রুমে ছিলাম। আজ আসবো তোদের বাড়ি।
-- আয় আয়  বেশ মজা হবে।
রউনা দিলাম অটোতে, আমি ছাড়া কোনো পেসেঞ্জার নেই অটোতে। নিজেকে কেমন জানি একা একা লাগছিল। তখন বটতলা আসবে বলে একটা মেয়ে অটোকে দাঁড়াতে বললো। এতো মিষ্টি লাগছিল মুখটা, মায়াও ভিষণ।  আমার সাথেই বসেছিল।  চুপচাপ অটো চলছে দুজনে পাশাপাশি কথা কেউ কারো সাথে বলছিনা।যেন বাংলা সিনেমার মান অভিমানের পালা চলছে। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।
-- কোথায় যাবে তুমি
-- বটতলা
--তুমি
-- আমিও
ব্যাস এতোটুকুই। দেখতে দেখতে বটতলা। ড্রাইভারকে বললাম পুরোনো মোটর স্ট্যান্ড যাবে।হ্যাঁ সূচক সম্মিতি দিলেন। হটাৎ মেয়েটাও বললো আমিও যাবো।। আবার পাশাপাশি দুজনকে নিয়ে ড্রাইরার গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন। তার পর দুজন দুদিকে।
আড়ালিয়া যাবো অটো খুঁজতে ছিলাম। আঙ্গুর ওয়ালার ডাক,
-- নেন দাদা খাইয়া দেহেন মজা পাইলে নিয়েন!
-- কতো করে?
-- আরে আপনারা রেগুলার কাষ্টমার আপনাদের ঠকাবোনা।
-- মনে মনে ভাবলাম বাবার জন্মেও ওর থেকে আঙ্গুর কিনলাম না আমি বলে রেগুলার কাষ্টমার।
-- কতো করে?
-- ১ কেজি ২৫০ দেই
-- ওমা আমাদের সোনামুড়া তো ১ কেজি ১২০ টাকা। এখানে ১ কেজি ২৫০ টাকা?
-- আরে না দাদা আমি বলেছি ১ কেজি ২৫০ গ্রাম দেই, ১৫০ রাখুম।
-- ও তাই বলো।
-- দাও দাও।
অটোওয়ালা আড়ালিয়া আড়ালিয়া।
-- আমি যাবো!
-- উঠেন উঠেন।
অটো চালু হতেই আমি অবাগ, অটো নাকি হেলিকপ্টার। এতো সাউন্ড বাবার জন্মেও শুনিনি!

উৎপল দেবনাথ

তোমার আকাশে আমি এখনো বেওয়ারিশ 

ধরো যদি হঠাৎ দেখা 
কোনো রাস্তার গলিতে,সন্ধ্যা নামার আগে,গোধূলিবেলায় 
ধরো যদি হঠাৎ মুখোমুখি।
হ্যাঁ! আমি জানি,আমার আসা বারণ ছিলো।
তুমি বলেছিলে, পরের বসন্তে দেখা যেন না হয় আর।
মনে আছে।
ধরো যদি হঠাৎ সেদিন বসন্ত 
শেষ বেলায় সন্ধ্যার শিমুল পড়ে আছে তোমার অপেক্ষায়
 ধরো যদি তোমার দেওয়া পুরোনো সেই বসন্তের শিমুল এখনো বেঁচে আছে বুকে।
ধরো যদি আবারও ছোঁতে চাই
জানি ছোঁয়া অকারণ।
আমি জানি তুমি তখন আমায় এড়িয়ে যাবে।
জানোতো এখন সেই স্মৃতিরা কথা বলে।
হ্যাঁ এটাও ঠিক আমিও কিন্তু তাদের সাথে বেশ গভীর সম্পর্কের টানাপুড়ানের কথা বলি।
আমি এখনো তোমার আকাশে বেওয়ারিশ গাঙচিলের মতো উড়ি।
সেই বিশাল আকাশে মনে হয় আমি এক ঝড়ে যাওয়া শিমুল।
তুমি তুলে তাকে বুকে জায়গা দাওনি
পাশ কাটিয়ে চলে এলে।
তখন কি তুমি আমায় প্রাক্তন ভেবেছিলে?
নামানে, তুমি হয়তো ভাবছো সে কেমন প্রশ্ন।
জানোতো আমি এখনো সেই প্রাক্তন কথাটা ভাবতে পারিনি।
যখন তুমি সামনে এলে,মনে হল বুকের পাজর ছিড়ে তোমায় লুকিয়ে রাখি।
দু-হাত ভরে এই বসন্তের আবির তোমার গায় মাখি।
আমি পারিনি। আমি পারিনি।

কৌশিক পাটারী

শকুন ও খায় মনুষ্য মাংস। 

দেশে যখন দ্বেষ ছড়ায়, 
খিদে পায় শকুনের ও। 
বায়না ধরে পিতার নিকট 
খাবে সে মনুষ্য মাংস। 

এনে দেয় পিতা, 
গরু কিংবা শূকরের মাংস। 
হবে না এতে শকুন পুত্রের, 
খাবে যে সে মনুষ্য মাংস। 

পুত্রের ক্ষুদা মেঠাতে  পিতা, 
বিচলিত হলো। 
গরু ও শূকরের মাংস নিয়ে, 
মন্দির ও মসজিদে রাখলো। 

শকুনের এই, হেন কান্ডে 
ধর্ম যুদ্ধ বাঁধে। 
হাজারো লাশ পড়ে মানুষের, 
মন্দির ও মসজিদে। 

সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব, 
মানুষই বটে। 
কূটনীতি ও শিখেছে শকুন, 
মানুষের নিকটে। 

যুদ্ধের ডংকা বাজিয়ে শকুন, 
আকাশে উড়ে বেড়ায়। 
লাশের গন্ধ পেলে শকুন, 
পুত্র সনে, মনুষ্য মাংস খায়। 

পুজা মজুমদার

আগুন লাগা ফাগুন


স্নিগ্ধ বাতায়নে বইছে আগুন, 
কোকিলের কণ্ঠে এসেছে ফাগুন। 
পত্র পল্লবে ফুটছে ফুল ভরে গেছে কানন
মধু আহরণে ভ্রমরের গুঞ্জন গুনগুন গান।
রঙিন নেশায় রাঙা প্রভাত পলাশ শিমুল,
ভোরের দোয়েল শিশ দিয়ে করছে ব্যাকুল।

ঐ দূর গায়ের সবুজ মাঠে সুবোধ বালক,
আপন মনে ফাল্গুনী হাওয়া গায়ে মাখে সুখ।

রাখালের বাশিতে আজ ভালোলাগা সুর,
প্রিয়তমা সেই সুরে দূর গায়ে আনন্দিত বিভোর।

প্রজাপতি পাখা মেলে নিত্যনতুন কারুকার্য 
ভ্রমরের গুঞ্জন গান তুমি নেই আমি ধরি ধৈর্য।

ফাল্গুনী আগমনী মিটিং নদীতট তালবনে পাখির,
শিমুল, পলাশবনে সৌন্দর্য ছড়িয়ে উচ্চ করে শির।

বাতাসে দুলে দুলে তাল পাতা -
আনন্দ জানান,
বেপরোয়া রৌদ্রতেজ অভিযোগ গুটিয়ে মেঘের নেই অভিমান।

সাঁওতালি যোবার ভেঁপু বাজেনা  আর মনে দ্বারে
রমণীর খোঁপায় পড়া ফুল শুকিয়ে গেছে ঝরে।

দক্ষিণা পবনে বইছে ঝিরিঝিরি মাতাল হাওয়া
বেপরোয়া অভিমান প্রিয়তার আঁচলে ছাওয়া।

অনুভূতিরা হাওয়া দুলছে কত ভালবাসা প্রিয়জন,
এই শহরের বসন্ত নামে দেখি কত অপ্রিয় আয়োজন।

সেই যে সেবার হারিয়ে গেলে শহরে ঝুলছে কত বিজ্ঞাপন, 
নিখোঁজ বিজ্ঞাপনে আমিও একদিন  হবো তোমার প্রয়োজন।

তুমি নেই বসন্তও নেই
বিষাদের ফাগুন ভাজচ্ছি খই,
বাহিরে মাতাল হাওয়া ভিতরে আগুন
তুমিহীন বুকের ভিতরে ফুড়ুৎ চড়ুই হচ্ছে খুন।

সজীব পাল

গ্রাম ও মায়া 

একটা পুরুষ তার প্রিয়তমার দেহ ও মনের মাঝে সমস্ত সুখ খুঁজে পায় কিংবা একটা সন্তান দীর্ঘ বছর নিখোঁজ হওয়ার পর যখন অকস্মাত্ ফিরে আসে তখন 'মা'য়ের অনুভূতির মাঝে যে একটা সুপ্ত ভালোবাসা ফুটে ওঠে সন্তানের আগমনে অথবা একটা ছেলের মুখে মাকে পাওয়ার যে সন্তোষের ছবি ,আমি সেই সুখ খোঁজে পাই গ্রামের চেনা বৃক্ষের পাতায় পাতায় ।
কেন জানি বসন্ত বিকালে সবুজ প্রান্তরে বসলে, মনে নতুন শক্তি ,প্রবল উদ্দীপনা এবং ফুরফুরে বাতাসে নিজেকে মিশিয়ে এক জীবন্ত প্রাণ বলে অনুভব হয় ।
কি আছে গ্রামের পথ-ঘাট, নদী ,খেত ও মাটির মানুষের মাঝে? কেন তার এত মায়া! এমন নিবিড় মায়া বুকের বাপাশটায় স্পর্শ করে যায় যে তার কোনো বিকল্প হয় না ।

আমি ত সেই জীবনানন্দ যুগের আকাশ ও সবুজ শ্যামল রূপ দেখি নাই ! আমি দেখেছি একবিংশ শতাব্দীতে রোদের অনলে পোড়া ঘাসের মাঠ ,আমি দেখেছি জানলা দিয়ে, অশোকদের পুবের উঠানে বসানো বিদ্যুতের আলোয় রাতের অর্ধ কিবা পূর্ণ চাঁদ ।আমি শুনেছি বৃষ্টিতে মা তার আট বছরের সন্তানকে বলতে ," সোনা বৃষ্টিতে ভিজতে নেই ,অসুখ পড়বে ।" 
এই যে এত তুমুল পরিবর্তন গ্রাম,তবুও যেন মায়া এবং মাটির গন্ধ আজও লেগে আছে ।
আজও ঋতু পরিবর্তন হলে বুঝি,বসন্তের কোকিল আজও সুভাষ দার রান্নার ঘরের পেছনের সেই আম গাছের ডালে বসে বলে যায়,"দেখো আমি বসন্ত নিয়ে এসেছি ।"

ঘরের বারান্দায় পান চিবুতে চিবুতে ঠাকুরমার সেই রাজারানির কেচ্ছা আওড়াতে শুনি ।আজো তার মুখে সেই সরল সহজ বাংলার মানুষের জীবনকথা শুনি । এমনকি ক্ষীণ হলেও মানুষ আজও অন্যের দুখ কিবা সুখের ডাকে সামিল হয় ।
তাই আমিও আজ জীবনানন্দের মতো বলতে চাই ,"আমি বাংলার মুখ দেখিয়াছি, তাই পৃথিবী রূপ আর খুঁজিতে চাই না ।"

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...