Saturday, March 28, 2020

প্রীতম শীল

আগরতলা বইমেলা ২০২০
   

সকাল ৭ টায় ঘুম থেকে উঠেই স্নান করতে গিয়ে দেখি সাবান নেই, সকাল টা যে এতোটা খারাপ যাবে ভাবতে পারিনি পেষ্ট ও শেষ। তবুও মুচড়িয়ে মুচড়িয়ে কিছুটা পেলাম তাতে আমার সারলেও বাকিরা কয়লাতেই কাজ সারবে।কয়লা বলতে চুলোয় রান্না শেষে পুড়ন্ত কাঠকয়লা। গ্রামের লোকেরা আগে তা দিয়েই দাঁত মাঝতো। 
--মা ও মা সাবান যে শেষ কাল রাতে বলোনি কেন?
-- আমার আর কি তোরাই স্নান করিস আর আমি বলে বলে দেবো।
-- যা মোনার ঘর থেকে নিয়ে নে, মোনা মানে আমার ছোট ভাইয়ের ঘর থেকে।
-- আচ্ছা এনে দাওনা।
-- এই নে সাবান,  স্নান সেরে জানালায় রেখে দিস। 
সত্যি পৃথিবীতে মা ছাড়া বোধহয় কেউ এতো তাড়াতাড়ি সব কিছুর জোগাড় কেউ দিতে পারবেনা। স্নান সেরে সাবান টা রেখে দিলাম কথা মতো।
খাবার টেবিলে এলাম, সকাল সকাল টিফিনের আগে ভাত খাওয়া কেমন জানি গুড়া মরিচ দিয়ে আলু ভর্তা করার মতো।
আগরতলা আসবো তাই ইচ্ছা না থাকলেও সকাল সকাল খেতেই হলো। যদিও পেট ও মন দুটুই চাইছিলনা,তবুও আমি দুটাকেই বলেছি ভাই একটু মানিয়ে নে। যেন কাজ করার আগেই কামলা কে খাবার দিয়ে বললাম যা এবার কাজে লেগে যা।।
রেডি হয়ে দুঘণ্টা গাড়ির জন্য অপেক্ষা করলাম, আমাদের গ্রাম থেকে অটোগুলো যেন রেল ইঞ্জিনের  মত,টাইম শিডিউল মেনে চলে। আসলে বেচারা অটো চালকদের আর দোষ কি,গ্রামটাই এমন।  হাজার চারেক লোকের বাস, প্রতি সোম আর বৃহস্পতি বারেই কাঁঠালিয়ায় হাট বসে। আমাদের গ্রাম থেকে চার কিমি দুরে।গ্রামের কিছু লোক এখোনো দিব্বি হেঁটেই চলে যায়। 
অবশেষে বেলা ১০ টায় কাঁঠালিয়া এলাম।মুলত এখান থেকেই কাঁঠালিয়া টু নাগেরজলা বাস পাওয়া যায়। বাস আসতেই কন্টাক্টর ডাক দিলেন,
--উঠেন দাদা উঠেন আগরতলা যাবেনতো?
--হ্যাঁ আগরতলা যাবো,  কিন্তু সিট তো ফুল।
-- আরে না না পিছনে খালি।
-- ভর্তি বাসেও পিছনে খালি পিছনে খালি কথাটা যেন কোনো কবি তাদের জন্য উক্তি করে গেছেন।
ঠেলে ঠুলে উঠলাম, বাসে দেখি সবাই মুখ ঢেকে আছে মাকস্ দিয়ে। দেখে মনে হচ্ছে পুরো বাসের লোক মিলে কোথাও হামলা দিছে যাচ্ছি। যাতে সি সি টিভিতে ধরা না পরি তাই মুখ ডাকা।  আশি বছরের বৃদ্ধ ও পড়েছেন, আহারে ওনারও মৃত্যু ভয়। করোনা ভাইরাস নাকি ছাড়িয়ে যাচ্ছে, তাই তিনিও পড়েছেন।কন্টাক্টর সোনামুড়া আসার পর সিট দিলেন, সিট টাকে মনে হলো রাজসিংহাসন আমি রাজা কৃষ্ণ চন্দ্র। ঘুমিয়ে পড়লাম বাসের মধ্যে ঘুম যেন বাঙ্গালীয়ানা। দেখতে দেখতে বাস সিপাহীজলা পেরিয়ে ইউনিভারসিটি হয়ে আমার গন্তব্য স্থলে। বাধারঘাট এসেই বন্ধুকে ফোন,
--কিরে এলিনাযে আমায় নিতে।
-- সুমন বললো আমি রাস্তার বাপাশে, আমি তোকে দেখেছি। 
-- আমিও দেখেছি দাড়া আসছি। গ্রাম থেকে প্রথম শহড়ে এলে রাস্তা পারাপারে একটু ভয় লাগে। আমারও লেগেছিল প্রথমে।
সুমন আমার বন্ধু,ইউনিভারসিটিতে বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে পড়ে। নিজের পড়াশোনা ততটা নেই বলে ওকে কোনোদিন তেমন ভাবে জানার আগ্রহ দেখায়নি। 
--খিদে লেগেছে বললাম কি রান্না করলি, 
--বললো ডিম। আসলে ডিম হচ্ছে ভাড়া বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করা ছাত্রদের রুটিন রান্নার উপকরন।
বিকেল হলে বাধার ঘাট রেলষ্টেশ একটু ঘুড়ে এলাম। সন্ধ্যা ৭ টায় বই মেলাতে যাই। এক ঝাক কবিদের সাথে দেখা, কিছুক্ষনের জন্য মনে হয়েছিল আমি কি সত্যি কোনো স্বপ্নের দেশে আছি। যাই হোক মেলাতে ঘুরে ফিরে দুইটি বই ক্রয় করলাম।
 ১) অবেলার অসুখ 
২) অ্যান্টিবায়োটিক
রাত ৯ টা ৫৩ বাড়ি ফিরলাম বাড়া বাড়ি আমার নয় বন্ধুর,  তবুও ঘরটার জন্য মায়া লাগে। ছোট ঘর দুটো চেয়ার একটা পড়ার টেবিল আর দুজন কোনক্রমে ঘুমানোর মতো চকি। রাত টা পার করেই দিয়ে সকালে দিদিকে ফোন দিলাম-
-- আমি আসছি তোর বাড়ি
-- সত্যি বলছিস, তবে এতো সকাল কি করে?
-- আরে বই মেলাতে এসেছিলাম হাঁপানিয়া, বাধারঘাট সুমনের রুমে ছিলাম। আজ আসবো তোদের বাড়ি।
-- আয় আয়  বেশ মজা হবে।
রউনা দিলাম অটোতে, আমি ছাড়া কোনো পেসেঞ্জার নেই অটোতে। নিজেকে কেমন জানি একা একা লাগছিল। তখন বটতলা আসবে বলে একটা মেয়ে অটোকে দাঁড়াতে বললো। এতো মিষ্টি লাগছিল মুখটা, মায়াও ভিষণ।  আমার সাথেই বসেছিল।  চুপচাপ অটো চলছে দুজনে পাশাপাশি কথা কেউ কারো সাথে বলছিনা।যেন বাংলা সিনেমার মান অভিমানের পালা চলছে। আমি আর চুপ থাকতে পারলাম না।
-- কোথায় যাবে তুমি
-- বটতলা
--তুমি
-- আমিও
ব্যাস এতোটুকুই। দেখতে দেখতে বটতলা। ড্রাইভারকে বললাম পুরোনো মোটর স্ট্যান্ড যাবে।হ্যাঁ সূচক সম্মিতি দিলেন। হটাৎ মেয়েটাও বললো আমিও যাবো।। আবার পাশাপাশি দুজনকে নিয়ে ড্রাইরার গন্তব্যে পৌঁছে দিলেন। তার পর দুজন দুদিকে।
আড়ালিয়া যাবো অটো খুঁজতে ছিলাম। আঙ্গুর ওয়ালার ডাক,
-- নেন দাদা খাইয়া দেহেন মজা পাইলে নিয়েন!
-- কতো করে?
-- আরে আপনারা রেগুলার কাষ্টমার আপনাদের ঠকাবোনা।
-- মনে মনে ভাবলাম বাবার জন্মেও ওর থেকে আঙ্গুর কিনলাম না আমি বলে রেগুলার কাষ্টমার।
-- কতো করে?
-- ১ কেজি ২৫০ দেই
-- ওমা আমাদের সোনামুড়া তো ১ কেজি ১২০ টাকা। এখানে ১ কেজি ২৫০ টাকা?
-- আরে না দাদা আমি বলেছি ১ কেজি ২৫০ গ্রাম দেই, ১৫০ রাখুম।
-- ও তাই বলো।
-- দাও দাও।
অটোওয়ালা আড়ালিয়া আড়ালিয়া।
-- আমি যাবো!
-- উঠেন উঠেন।
অটো চালু হতেই আমি অবাগ, অটো নাকি হেলিকপ্টার। এতো সাউন্ড বাবার জন্মেও শুনিনি!

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...