Saturday, December 28, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

সম্পাদকীয় প্যানেল

বছরের শেষ সংখ্যা এটি। সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এই একটা সংখ্যাই এটা প্রকাশের শত প্রতিকুলতার কষ্টকে ভুলিয়ে দিলো। ম্যাগাজিন মূলত চিৎকার করার একটি শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম। সামগ্রিক বিষয় এই ছোট্ট সংখ্যায় সব বিষয় সাজানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এই সংখ্যা সত্যিই অন্যরকম। তবুও আমরা কোনোভাবেই আত্মসন্তুষ্টির আওতায় আসবো না। প্রকাশের সাথে যুক্ত সংশ্লিষ্ট সবাইকে আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি এই সংখ্যা পাঠকমহলে দারুণভাবে সমাদৃত হবে।ভূল ত্রুটির সব দায়ভার আমারই। মার্জনাপূর্বক মনন স্রোতকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে সার্বিক সহযোগীতার হাত নিশ্চিত করবেন এই আশা রাখছি। সবাই ভালো থাকুন।

                                       শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                                             জয় দেবনাথ
                                                 সম্পাদক 
                                                মনন স্রোত 

সুমনদের ছবি ক্যামেরায় ধরেছেন রনি

পরিতোষ সরকার

বৃষ্টির ওপারে

সন্ধ্যার কপাল বেয়ে বাইরে

আজ তুমুল বৃষ্টি, গভীর
রাতেও ব‌ইছে সমতালে। 
আর ভিতরে....
আর ভিতরে ব‌ইছে অগোছালো
শয্যার উপর যৌবনের মহাঝড়। 

তুমি যখন অর্ধ-‌অচেতন,
আমার মধ্যে তখন উৎসুকের
প্রবল জ্বালা। হাত দুটি আমার
তোমার বুকে, আর তুমি আঁধার
শয্যায় পরে থাকা কাপড়টুকু 
মুষ্টিতে গুঁজে সহ্যের সীমা 
পার করেই চলছ। 
হয়তো এই ভাবেই প্রতিটি নারী
তার যন্ত্রণা লুকায় বৃষ্টির শব্দে
আর অগোছালো শয্যার কাপড়,
প্রতি রাতে।

সংগীতা দেব

প্রিয় অসুখ

অসুখ তো আসে না বলে।
না বলে বাসা বাঁধা কিছু অসুখ, প্রিয় হয়।
তুমি সেই প্রিয় অসুখ আমার,
এই অসুখ না থাকলে মনে হয়,
সকাল আমার আলো দেয় না,
রাত আমার কাটতে চায় না,
কাজগুলো  যেন আমার ছন্দ ছাড়া লাগে।
এখন আর নিজেকে আয়নায় দেখিনা,
শাড়ির আঁচলটা ও মাটির সাথে দোল খায়।
চুলগুলো ও বাঁধা মানছে না,
ঝড় তুলছে বাতাসের সাথে।
জানালার ফাঁকে দেখা,আমার ছোট্ট আকাশটা,
গম্ভীর বিষাদে মগ্ন,কোনো কথা বলছে না।
নিঃশ্বাস আমার ভারি হয়ে আসছে,
এতো অসুখ যার জন্য,সে তো জানছে না,
তবু ও অসুখ যে আমার,গভীরে জড়াচ্ছে।

সজীব পাল

একটা একলা মানুষ

জানি তুমি একলা ভীষন,একলা এই শহরে,
একলা থাকা মানুষগুলো দুঃখ গুণে রাতপ্রহরে।
ফুল চিনে না,ফল চিনে না নিয়ন বাতির আলোয়,
গাঁদা ফুলের গন্ধ তোমার চুলের ভেতর খানিকও।
তোমার জন্য ক্লান্ত আমি,ঠোঁটের কোণে ঘা যেমন,
মৃত্যু তো বেশ সরল জানি,তবুও ঠিক ভয় করে কেমন!
নেই ঠিকানা সুখ শহরের,বাড়ছে ব্যথার দাম
ব্যস্ত কেমন মানুষগুলো,কমছে মানুষের মান।
তুমি হেসে উঠলে বলে অবাক বৃক্ষের প্রাণ,
যার ভেতরে দুঃখ নদী,এই কেমন হাসির বান?

মোঃ রুবেল

প্রেমযজ্ঞ
      
সেদিন আকাশের বুকে নেমে এসেছিল-
এক প্রেমময় সন্ধ্যা।
তারাঘেরা ঝলমল আকাশ।।
আমার বাঁ পাশে বসা এলোকেশী প্রিয় মানুষটি।
যা আমার কাছে দলিলবিহীন ঐতিহাসিক মুহূর্ত ছিল।

আর ডানপাশের পকেটে ছিল--
কলমে ব্যক্ত মনের কোণে লুকোচুরি খেলায় মত্ত অভিবাসন কথার প্রেমপত্র।

কিন্তু সেই সন্ধ্যায় দুঃসাহসিকতার অভিযানে হার মানে নিদাগ প্রেমপত্র।
প্রিয় মানুষটির নিবিড় চোখে চোখে রেখে দেওয়া হয়নি প্রেমপত্র।

আমি তার অকর্ষিত ভালোবাসার জমিনে ভালোবাসার বীজ রোপণের এক দুর্গ আশায় --
এই নিদাগ প্রেমপত্র এখন জীবন ডায়েরির শেষপাতায় জুড়ে নিয়েছি।
রোজ মধ্যরাতে বিনিদ্র নয়নে কলমে ব্যক্ত প্রেমপত্র রপ্ত করি।
আজ আমি তার নামের প্রেমপত্রের নিত্য পূজারী।

সুব্রত দেববর্মা

শূন্য রাজকোষ


একদিন সুনীল আকাশ বলতে
সুবিশাল আসমুদ্রহিমাচল কে বোঝাতো।
এখন আকাশ মানে সমঝোতা
আকাশ মানে মুক্তির চুক্তিসই,
বোঝায় কাঁটাতারের বেড়ার ওপারে
আছে খুল-যা-সিমসিমের একফালি গুহা।

যেখানে বৈদিক যুগের জীবাষ্মের চরম অনিশ্চয়তা
তাতে প্রতিবেশীর মহাভোগ বিলাসিতা মাত্র,
জানিনা মানুষের কাছে শুন্য ছাড়া
আর কোনো রাজকোষ আছে কিনা।

তবুও লোকে আফিম কিনে,কিনে শিকল।

অনির্বান রায় গুপ্ত

সকালের গল্প 

সকাল এ বারান্দায় বসে পেপার টা পড়ছিলাম,  তখন বৌমা এসে গরম লিকার চা দিয়ে গেলো র বলে দিলো আমায় তার বাচ্ছাকে আজ স্কুল এ দিয়ে আসতে হবে. আমিও এটাই চেয়েছিলাম মনে মনে.  কারণ ছিল স্কুল এ গেলে অনেকদিন পর আজ মিস ব্যানার্জী এর সাথে দেখা হবে.. আমার সাথে গতকাল ই কথা বলেছিলো ফোন এ. মিস ব্যানার্জী থাকেন পাশের পাড়ার 3 নম্বর গলির 4 নম্বর ফ্লাট এর 2nd  ফ্লোর এ. 
যাই হোক আমার নাতি তাকে নিয়ে স্কুল এ পৌছালাম তখন ঘড়িতে সকাল 7:45 বাজে ওদের pre nurshery school.. প্রায় 2 ঘন্টা সময় পাবো একটু গল্প করার র সাথে গরম চা বিস্কুট তো আছেই গনেশ এর চা এর দোকান এ.  স্কুল এর পাশে মোড়ের মাথায় দোকান টা ছিল.. প্রতিদিন সকাল 8 টা থেকে বেলা 10 টা অবধি আমাদের আড্ডা বসতো.. আজ এই 65 বছর বয়সে আমাদের বুড়ো বুড়ি দের আড্ডা টা একটু আলাদা ছিল. আমাদের আড্ডা তে প্রধান বিষয় ছিল নাটক,  গল্প,  কবিতা র বিষয় নিয়ে চর্চা করা. মাঝে মাঝে আমাদের কেউ আসতে পারতো না শারীরিক কারণে, যাই হোক আজ মিস্টার সেন আর মিস্টার দাস আমি র মিস ব্যানার্জী আছি..  স্কুল শুরু হওয়ার পরে  আমি মিস ব্যানার্জী গনেশ এর চা এর দোকান এ এসে বসলাম,  একটু পুরোনো দিন এর কথা না বললে তোমাদের সবার ই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে জানি তাই একটু খুলেই বলি এবার,  ওর ভালো নাম ছিল মাম্পি সরকার,  র আমার নাম ছিল সাহেব মজুমদার.. কলেজ এ পড়ার সময় থেকে আমাদের প্রেম ছিল.. তখন তো আর এখনকার দিন এর মতো মোবাইল ফোন ছিল না তখন চিঠি আদান প্রদান হতো.  যদি বড়োরা কেউ জেনে যেত তাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতাম আমরা. বাড়িতে ছোট থেকেই শাসন এর মধ্যে বড়ো হয়েছি.  তাও যখন আমাদের একটা ভালোবাসা শুরু হলো আমরা কোনোদিন ও হাত ধরে হাঁটিনি,   যতদূর মনে পরে একদিন গঙ্গার ধরে বসে একসাথে বাদাম ভাজা খেয়েছিলাম. কলেজ জীবনে অংক এ আমার মাথা টা খুব ভালো ছিল.. স্কুল কলেজ এ সবাই আমায় ভালো ছাত্র হিসেবেই জানতো.. আর মাম্পি বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়তো তবে হ্যা আর একটা ভালো গুন ছিল ওর,,  ও খুব ভালো ছবি আঁকতে পারতো..  কলেজ জীবন পার করে একটা চাকরি তে জয়েনও করেছিলাম কিন্তু ছোটবেলা থেকে নাটক অভিনয় এর স্বপ্নে বিভোর থেকে চাকরি তে মন বসাতে পারলাম না.  তাই মাম্পি র বাড়ী তে আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিতে চাইছিলো না কেউ ই.. তার একটি কারণ আমি ভালো কিছু কাজ করিনা .. যাই হোক একটা বিসনেস শুরু করলাম আমার এক বন্ধু র সাথে.. প্রথম বছর মোটামুটি কাজ করেছিলাম.. কিন্তু তাতে ছিঁড়ে ভেজেনি.. শেষ মেশ আমাদের বিয়ে টা আর হয়নি,  ক্রমে বহু বছর  কেটে গেছে.  আমিও নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি ভালো মতো নিজেও বিয়ে করে ছেলে পুলে মানুষ করলাম. তাঁদের কেও ঠিক মতো শিক্ষা  দিয়ে মানুষ করেছি..  আজ দুবছর হলো আমার বড়ো ছেলে বিয়ে করে একটা ছেলে র বাবা হয়েছে র আমার ছোট ছেলে টা সরকারি চাকরি করে ডালহৌসি তে,  আজ বাবা হিসেবে খুব গর্বিত কিন্তু কোনো একটা জায়গায় যেন আজ খুব একা হয়ে গেছি আমি.. আমার ছেলে দুটোর বয়স যখন 12-15 চলছে তখন ই আমার বৌ মারা যায়.. ওদের বড়ো করে তোলা সব কিছুই করেছি আমি একার হাতে.. 
হ্যা এখন একটু মাম্পি র কথা বলি তোমাদের. 
আমার সাথে বিয়ে টা ভেঙে যাওয়ার দু বছরের মধ্যে ও বিয়ে করে একজন সরকারি চাকরি ওয়ালা ছেলে কে.. মাম্পি র বাবা মা এর ও এরাম ইচ্ছে ছিল.. তাঁদের ইচ্ছে তাই পূরণ হয়েছিল  মাম্পি র বিয়ে হলো বেলেঘাটা নিবাসী অরূপ রায় এর সাথে. ছেলে টি ও ডালহৌসি তে চাকরি করতো..  কিন্তু ভাগ্য এর  কি নিদারুন পরিহাস.. আজ মাম্পি র একজন দিদা র ভাগ্য বলে ও আজ নিজের পৃত্তিভূমি তেই নিজের বাড়িতেই থাকে.. বাড়িতে গেলে ওর বর এর ছবি টাঙানো আছে মাম্পি র ছেলে বৌ দুজন এই সরকারি চাকরি করে.. তাই নাতনি কে সারাদিন দেখাশোনা ওই করে.. আজ এই বুড়ো বয়স এ চা এর দোকান এ বসে ছোটবেলা র সেই কথা গুলো মনে পড়ছে  র আমরা দুজন এই মাথায় পাকা চুল র দু একটা দাঁত পরে যাওয়া তোবড়ানো গাল এ হেসে উঠছিলাম ..  হটাৎ আমার মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো,,,,  """" এখন অনেক রাত,  তোমার কাঁধে আমার নিঃস্বাস """"" অনুপম রায় এর এই গান টা আমার খুব প্রিয় ছিল র মাম্পি কে এই গান টা আমি গেয়ে শোনাতাম..  ও আমার মোবাইল এ এই গান টা শুনে আমার দিকে একটু তাকালো.. আমি ফোন এ বলে দিলাম যে হ্যা দাদু ভাই ক্লাস এ  আছে..  আমি নিয়ে আসব ঠিক মতো তুমি চিন্তা করোনা বৌমা.. মাম্পি আমার এই কথা টা শুনে হাসলো আমি কারণ জিজ্ঞাসা করাতে বললো মনে পরে সন্তু ( আমায় ও এই নাম এ ডাকতো ) তুমি আমায় বলেছিলে যে আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাবে র তোমার বুক এ মাথা রেখে আমি ঘুমাবো তোমার ভালোবাসায়..  আমি বললাম হ্যা আমার মনে আছে কিন্তু মাম্পি তোমায় আমি এটাও বলেছিলাম যে আমার ভালোবাসা মিথ্যে হওয়ার নয় হয়তো তোমার সাথে বিয়ে হয়নি কিন্তু ভগবানের কি লীলা দেখো আজও আমি আর তুমি পাশাপাশি বসে আছি র নিজেদের দায়িত্ব্য পালন করে যাচ্ছি নিজেদের মতো করে.. 
সত্যি দুনিয়া টা বড়োই অদ্ভুত গো মাম্পি. আজও তোমায় ভালোবাসি,  আজও তোমার হাসি টা আমার কান্না গুলো ভুলিয়ে দেয়..  জানি না আর কিছু.. মাম্পি শুধু আমার হাত এ ওর হাত টা রাখলো.. জীবনে দ্বিতীয়বার তোমার হাত এর ছোঁয়া পেলাম  
বলতে বলতে আমাদের দুজনের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিলো..  কিন্তু হটাৎ ই স্কুল এর ঘন্টা বেজে গেলো..  তখন আমরা দুজন এই দুজনের নাতি নাতনি কে নিয়ে বাড়ীর পথ এ প বাড়ালাম..  কিন্তু মাম্পি বাড়ী যাওয়ার আগে একটা চিঠি আমার হাত এ গুঁজে দিলো.. আমি ইতস্তত করে চিঠি খুলে দেখলাম তাতে লেখা আছে তোর নাতি র সাথে আমার নাতনি র বিয়ে টা ফাইনাল করে রাখিস.. আমি চিঠি টা পরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ও অটো তে উঠে গেছে.. আমি একটু ওপরে তাকিয়ে আকাশ এর দিকে তাকালাম.. র নিজের মনে মনেই হাসলাম.. জানি না কপাল এ কি আছে ভবিষ্য্যত এ..  শুধু এইটুকুই বললাম ভালো রেখো ভগবান সবাই কে.. 
নাহলে এই বুড়ো বয়স এ এসে আর কি চাইতে পারি নিজের জন্যে.. যাইহোক নাতি কে নিয়ে বাড়ী এসে ক্লান্তি তে  ঘুমিয়ে পড়েছি কারণ আমার খুব জর ছিল.. 
সবাই কে ধন্যবাদ  জানাই  শুভ রাত্রি।

উৎপল দেবনাথ

ভ্রমর কথা 

তোমার বুকে রঙ মাখি চলো
মাঝরাত বাতাসের সুরে
ভ্রমর আর ফুলের বুকে।
শিহরিত মন ভীত শ্রাবণ 
তৃষ্ণার্ত ব্যাকুল দেহ
গাঢ় অন্ধকারের বুকে দূর্বল স্বপ্ন 
ভোরের শান্ত স্নিগ্ধ শীতল বাতাসে ক্লান্ত।
আমি জানি নে 
এক মুহূর্তে মনটা ভারী।

দিপ্সী দে

অবাক পৃথিবী

ভালো মন্দের জলসাঘরে আমরা বুঝি পুতুল
তাকিয়ে থাকি কোনো একদিন আসবে সে সময়
সকল মন্দ ভুলে আপন করবে আপন।
থামবে ঝড় উঠবে চাঁদ 
প্রয়োজন শুধুমাত্র অবকাশ।
যদি হতে চাও ভালো 
ভুলে যাও সব লেন দেন
যদি তুমি কবি হও
নীরবে লিখে যাও
ভালোমন্দের জলসাঘরে আপন মানে কালো
কবি হয়ে সে আছে ভালো।
পৃথিবী জুড়ে অসুখ সবার
আমি আছি ভালো।
অবাক পৃথিবী সব শূন্য।

পৌলমী সাহা

এ হলুদ বিকেলবেলায়

এ হলুদ বিকেল বেলায় 
ব্যস্ত শহর ক্লান্ত ভীষণ দিনের শেষে!
চোখ বুজে স্বপ্ন দেখে না আর,
 নীল আকাশে চোখ মেলে!
 সময়ের তাড়ণায় বন্দী সবাই,
 যান্ত্রিক চালকে  পরিণত হয়ে!
শব্দ দূষণের মাঝে অনেক কথাই,
 স্তব্ধতায় গুমড়ে মরে!
অনেক ইচ্ছেগুলোকে অনিচ্ছাক্রমে ,
দগ্ধ করে ফেলে!
দিশাহীন ভাবে যেন চলতে থাকে,
এ দিগন্তের বুকে!
নিজেকে হারিয়ে ফেললেও ,
অজানার ভিড়ে! 
তবুও বেঁচে থাকে অসীম লড়াইয়ে!
অগ্রগতির যুগে এটাই বোধহয়,
মোদের বাস্তবতা হয়ে চলে।।

পিযুষ রায়

আগুয়ান 

প্রতিবাদ,তুমি কোথায় ?
কোথায় তোমার ভাষা?
প্রিয়ঙ্কা থেকে মুন্নেসা,
প্রয়োজন যে তোমাকে ।
চারিদিকে শুধুই 
হানাহানি-রাহাজানি,
তবুও তুমি থাকবে নীরব?
ওঠো,জাগো,গর্জে ওঠো।
গর্জে ওঠো কলমের ধারায়,
গর্জে ওঠো সম্প্রতির সুরে ।
দিকে দিকে দেখা দেয়
এ সমজের কঙ্কালসার চেহারা।
তোমার নীরবতায় 
আজ তারা উদ্ভুদ্ধ-উত্তেজিত ।
ওঠো, জাগো
মেলে ধরো তোমার ভাষা 
ওরা জানে না, তোমার ক্ষমতা ।
ভাবে ওরা তাই, তুমি নগণ্য।
তুমি কৃষকের সম্পদ,
তুমি শ্রমজীবী-মেহানতী মানুষের সম্পদ ।
অশুভ, পুঁজিবাদ -সাম্রাজ্যবাদ 
এ দেশের বুক থেকে নিপাত যাক ।

সুজন দেবনাথ

চলো বদলে যাই

চলো বদলে যাই
আমার মতো অলস যারা
যাদের নিয়ে বাপ মায়ের চিন্তার শেষ নেই
চলো বদলে যাই
আমি মানুষ হয়ে জন্মেছি
এই বোধ নিয়ে চলো মানুষ হই
চলো আজ থেকে ছুঁড়ে ফেলে দেই-
সকল অলসতা,
চলো বিপদের পাশে দাঁড়ায়
চলো আমার সুপ্ত আমিকে জাগিয়ে দেই
বাপ মা যেন চিন্তার বদলে গর্ব করে-
তুমি মানুষ, আমি মানুষ।
চলো নতুন পরিচয় নিয়ে বাঁচি
যে পথে ভালোবাসা আছে
যে পথ সত্য
হোক না সে যতই কঠিন
চলো সত্যের পথেই হাঁটি
চলো নতুন ভারত গড়ি। 
জানো আমার যুগে-
স্বার্থপরতার মাত্রা সীমাহীন
হিংসা ঘৃণা অবিশ্বাস গ্রাস করছে ক্রমশ আমার দেশকে
তাই মানুষ হওয়াটা খুব জরুরি
এসো একতার হাত ধরি
চলো হৃদয়ের গান গায়
চলো বদলে যায়
চলো মানুষের মত মানুষ হই। 

সৈকত মজুমদার

অভিপ্রায় 

ভাবনার আকাশে এখন 
কালো মেঘের ভীড়,
নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়ায় 
বেঁচে থাকা দায়; তবুও 
সিগারেট হাতে এখনও দেখি 
অন্যায়ের বিরুদ্ধে নচিকেতা গায় !

ধূমপান ছেড়ে দিলে 
কি আসে যায় (? ) হয়তো 
এরই মধ্যে সুখ পাওয়া যায় !
ব্যর্থ প্রেমিক যেমন-
হুইস্কি ঢেলে পায়

দেবব্রত চক্রবর্তী

রাবণ সাঁজো

মাতৃজঠরে জন্ম নিয়ে ধুলোয় পুড়াই নারীর চিতা ,
আগুন জ্বলুক রাম রাজ্যে লঙ্কায় ও সুরক্ষিত সীতা। 
ধর্মের থান গলায় বেঁধে কি লাভ তোর মূর্খ জনতা, 
ধর্ম গুলো অন্ধ রে আজ পুড়ছে দেখ ধর্ষিতা।।

মুক্ত  মনে আবেগ ছাড়ো 
শক্ত হাতে অস্ত্র ধরো 
নিজেকে আজ বাঁচার লড়াই 
নয়তো এবার বিক্রি করো।

সাঁজতে হবে তোমায় নারী 
ঢাকতে হবে বক্ষ খানা 
ছাড়ো তো এসব, অনেক হয়েছে 
হও তো এবার বীরাঙ্গনা।

দেখতো এবার আসবে কে 
বক্ষ চুষে আগুন পোঁড়াতে 
রাবন সাঁজো তোমরাই আজ 
তোমাদের কে বাঁচাতে।।

গোপাল চন্দ্র দাস

হুড়াঘর

পিতামহ ভীষ্ম ছয় মাস শরশয্যায় থেকে ইচ্ছামৃত্যুর পর শবদেহ দাহ করার শোক পালন করার নাম হুড়াঘর বা মেড়ামেড়ীর অথবা বুড়িরঘর। বারো মাস বারো রাশি বারো সংক্রান্তি। নিজ কক্ষপথ থেকে সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের দিন-ক্ষণকে বাঙালী হিন্দুরা বলেন,মকরসংক্রান্তি।সংক্রান্তি অশুভের শান্তি,কখনো আবার অশান্তিও হয়ে যায়।
এমনি এক মকর সংক্রান্তিতে ঊনকোটি ত্রিপুরার কুমারঘাটে মনু নদীর চরে পবিত্র,সুবোধ,ভূবন,পরিমল,সুমন পনেরো বিশজন যুবক মিলে আমন ধানের ডাটা ও খরখুটো দিয়ে হুড়াঘর বা মেড়ামেড়ীর ঘর তৈরী করে। সাউন্ড বক্সের ধ্রিম ধ্রিম মিউজিক,মাংস ও বিলাতি মদের নেশায় নেচে গেয়ে বুঁদ হয়ে আছে সবাই।গভীর রাতে সবাই চলে যাওয়ার আগে হুড়াঘরের ভিতর খরখুটো দিয়ে ঠেসে দিয়ে যায়। আজ পবিত্র ও ভূবনের তেমন নেশা হয়নি। তারা স্থানীয় রবিদাস পাড়া থেকে দেশী মদ এনে হুড়াঘরে ঢুকে আকণ্ঠ পান করে খরবেত্তা উপরে চড়িয়ে এখানেই চাদড়মুড়ি দিয়ে  শুয়ে পড়ে।
          ভোরে যুবকরা কনকনে শীতে ঠান্ডা জলে স্নান করে আধো অন্ধকারে  হুড়াঘরের প্রবেশ পথে কাঁচা বাঁশের টুকরো কটা দিয়ে খরে আগুন ধরিয়ে দিল। বাঁশ বমের মত যতবার ফুটে ততবার ,সবাই মুখে আঙ্গুল বুলিয়ে আদিবাসিদের মত আনন্দে হর্ষধ্বনী করছে।
কিছুক্ষণ পর সুবোধ বলল,পবিত্র আর ভূবনকে দেখছি না যে? ওদের বাড়ির লোক‌ও ওদের খুঁজছে। নব্ব‌ই বছরের ভূবনের দাদামশাই লাঠিভর দিয়ে এসে নাক উঁচিয়ে গন্ধ শূঁকে বুক চাপড়িয়ে বলছেন,আমার নাকে নব্ব‌ই বছরের গন্ধ জমা করা আছেরে।এ গন্ধ সেই গন্ধ,যে বছর কলেরায় পুরা গ্রাম খালি করেছিল আর নদীর পারে জ্বলছিল কাতারে কাতারে শ্মশান।

প্রীতম শীল

যারা গড়ে ইমারত
           

আজ স্বচক্ষে দেখলাম হাজারো শ্রমিক, 
বহু কষ্টে সিঁড়ি বেয়ে ইমারত গড়ে! 
কিন্তু তাদের কারোই ছাদ নেই,
কলঙ্কহীন মাথার উপরে। 
তবুও দিনের পর দিন তারা কষ্ট করে,
হাড় ভাঙা মটমট শব্দে। 
দিন শেষে সামান্য মজুরী তবুও শ্রমিক, 
সব সয়ে যায় নিঃশব্দে। 
কারণ ঘাম ঝরানো টাকায় নেই গরম,
নেই কোনো অহংকার।
শান্ত মনে শ্রমিক তবুও গড়ে,
সুন্দর ইমারতের বাহার।
দেখেছি আমি ষাটোর্ধ্ব বয়সে, 
ষাট কিলো ওজন তুলতে।
বছর পনেরো ছেলেটা সেও এসেছিল, 
অভাবের জ্বালা ভুলতে।
দেখেছি মা জাতির মেয়েটা শাড়ি না পড়ে,
পুরুষের শার্ট গায়ে জড়িয়েছে।
আসলে টাকা কি সমাজে এতটাই,
প্রয়োজনের গন্ধ ছড়িয়েছে?
আমার তোমার শ্রম যারা কিনছে আজ,
হাটবাজারে অতি সস্তায়। 
হাঁড় ভেঙে একদিন চলে যাবো আমি তুমি,
তাতে কার কি আসে যায়।

প্রণব দাস

চিঠি
        
মা আমি তোমার অভি বলছি
তোমার কথা আজ বড্ড মনে পড়ছে
তাই একখানা চিঠি না লিখে পারলাম না,
তোমরা নিশ্চয়ই খুব ভালো আছো?
হ্যা আমিও ভালো আছি,,
শুধুই যে ভালো বলার জন্যে
বলতে মাগো খুব কষ্ট হয়,
আজ শুধুই তোমার কথা মনে পড়ছে,
সব ঠিকই চলছে কিন্তু ঘুমাতে গেলেই তোমার গল্পের কথা মনে পড়ে;
হ্যা মা তোমার অভি এখন একাই ঘুমাতে জানে 
তোমার ছোট্ট অভি এখন খুব বড় হয়ে গেছে 
তুমি কোনো চিন্তা করো না মা 
তোমার অভি চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ে।।
সাথে কেউ থাকুক কিংবা না থাকুক চোখের অশ্রু ঠিকই থাকে।
তোমাদের ছাড়া সেই অশ্রুই আমার ঘুমের সাথী।। 
তা কে আর দেখবো!?
কেউ তো এসে আর জিগ্গেস করবে না,
অভি ঘুমিয়েছিস কিনা??
তোমার সেই ডাক সেই কন্ঠস্বর ঘুমাতে এলেই কানে বেজে উঠে;
তবুও ঘুমিয়ে পড়ি একা একা।।
মনে পড়ে,
সেই দিনগুলোর কথা 
ছোটবেলায় যখন চোখে ঘুম আসতো না তোমার কন্ঠে সেই ঘুম পাড়ানি মাসি পিসির গানটা
তোমার মনে আছে কিনা জানিনা মা,,
কিন্তু সেই আওয়াজ আজও আমার কানে বেজে উঠে
হ্যা মা হ্যা তোমার অভি খুব বড় হয়ে গেছে একাই কলেজে যায়, 
নিজে বানিয়ে টিফিন খায় কিন্তু তোমার হাতের স্বাদ জিহ্ব থেকে যেন যেতে চায় না,
সময়ে তাগিদে খুবই ব্যস্ত হয়ে পড়েছি,
পড়াশোনা!!পড়াশোনা!! পড়াশোনা!! 
সামনেই সেমেষ্টার এক্সজাম
অনেক চাপ।
আমি এখন খুব সিরিয়াস 
তা তুমি হয়তো জানবে না!?
ছেলে আগরতলায় পড়ে তুমিও হয়তো গর্ব করো।।
কাছে থেকেও দূরে তুমিও 
কিন্তু অন্তরেতে অনেক কাছে যে তুমি মা,,,
তোমায় ছাড়া সত্যি ঘুম আসে না।
সকালে উঠেই কলেজ টিউশন আর ভালো লাগে না ।।
কিন্তু প্রশ্ন একটাই জাগে 
ভবিষ্যত!!
তুমি একদমই চিন্তা করো না মা,,
তোমার অভি সব পারবে 
দেখে নিও,,,
অনেক কথাই বলার ছিল সব তো আর বলা হয়ে উঠে না,,
তবে তা থাক
অন্য কোনোদিন নাহয় বলবো
হ্যা আরেকটি কথা বলার আছে-
বাবার খেয়াল রেখো,,
পঙ্কজকে বলো ভালো করে পড়াশোনা করতে 
পড়াশোনার যা ডিমান্ড এখন 
শুধুই কম্পিটিশান
অনেক বলে ফেলেছি 
ফোনে বলা সম্ভব হয়নি বলে চিঠি লিখলাম 
তুমি যে আমার জননী 
হ্যা তবে নিজের খেয়াল রেখো
তবেই দেখবে তোমার অভি
খুব ভালো থাকবে খুশি থাকবে 
হাসি মুখে থেকো
হাসি মুখ রেখো
ইতি তোমার অভি।।

গৌরাঙ্গ রক্ষিত

কি চেয়েছি আর কি যে পেলাম

প্রতিটা মুহূর্ত চেয়েছি তুমি ভালো থাকো , 
রোদ , বৃষ্টি কে উপেক্ষা করেই , 
ছুটে গেছি তোমার কাছে । 
পেয়েছি অনেক ভালোবাসা তোমার কাছে , 
হয়তো পারিনি আমি তোমার মতো করে ভালোবাসতে , 
কিন্তু আমি বেসেছি ভালো আমার মতো করেই ।
তোমার মতো, শক্ত ব্যাখ্যা ছিলনা ভালোবাসার
আমার কাছে।
সহজ ভাবে নিজের অনুভূতিতে, মিশিয়েছিলাম তোমায়।
তুমি উপর থেকেই জানলে, আমায় ভালোবেসে।
অনুভবে, আমার ভালোবাসার রঙে মিশে যেতে পারোনি।

সৈকত সরকার

না হলাম রবীন্দ্রনাথ, না হলাম রোদ্দুর। 

না হলাম রবীন্দ্রনাথ                 
না হলাম রোদ্দুর

ভগা জানে কদিন দৌড়াবো,দৌড়াবো আর কদ্দুর ।

না হলাম দুঁদে বুদ্ধিজীবী          
না হলাম শুদ্ধ গান্ডু

আমি উলঙ্গ রাজার সেই শিশুটা নির্ভয়ে ভাঙ্গি ফান্ডু ।

না হলাম ক্লাসের ফাস্ট বয়
না হলাম ব্যাকব্যাঞ্চার পুরো

আমাতে আমি জম্পেশ ভিলেন, আমাতে আমি হিরো।

পূজা মজুমদার

শুধুই আমি


দুনিয়ার ভাগাদরিতে তুমি যখন উলঝিয়ে থাকবে.....

তখন আমায় পাশে ডেকে নিও

যেনো তোমার কাঁধে শুধুই আমি... শুধুই আমি। সময় যখন অপেক্ষার হবে কিছু এমনভাবে অপেক্ষা করবে যেখানে শুধুই আমিই আছি..... যেখানে শুধুই আমিই আছি।

যদি ভিজতে না পারি তোমার সঙ্গে  বাইরের বৃষ্টিতে ভিজতে গিয়ে আমায় তোমার মনে মিলিয়ে নিও....  দেখবে আমিও ভিজছি তোমার সাথে।

সময় যখন অপেক্ষার হবে কিছু এমন ভাবে 
তখন পাশে শুধুই আমিই....
তখন পাশে শুধুই আমিই।

যদি আমি ভেঙ্গে  পড়ি সময়ের সাথে লড়তে লড়তে 
কিছুটা এমনভাবে সামলে নিও
যেনো তোমারই ভরসা
শুধুই আমি...শুধুই আমি।

সময় যখন অপেক্ষার হবে 
কিছুটা এভাবে অপেক্ষা করবে

যেখানে শুধু তোমার জন্য
আমিই.... শুধুই আমি।

দুনিয়ার ভেজাল রং-এ যদি আমি বেরং মনে হই তোমায়....  তখন!
ভাববে না আমি নেই,

তোমার রঙিন দুনিয়া.... শুধুই আমি শুধুই আমি।

গোবিন্দ ধর

ত্রিপুরার সাহিত্যে আড্ডা একটি আত্ম সমীক্ষা


ত্রিপুরায় আড্ডার ইতিহাস আছে।গল্পকার প্রয়াত বিমল চৌধুরীর মহাশক্তি ঔষধালয়ের আড্ডাও ছিল স্মরণীয় ৷ আরও অনেক আছে ৷ সাব্রুমের এবিসিডি এবং নুনুর দোকানের আড্ডা অনেককে সমৃদ্ধ করেছে ৷
বিশেষ করে সাহিত্য আড্ডা ।আড্ডা মিলনের মননের উর্বরতা যোগায়।কামান চৌমুহনীর আড্ডা,ত্রিপুরা দর্পনের শারদ আড্ডা হয়ে আড্ডার বিস্তার সারা রাজ্যে।ধর্মনগর থেকে সাব্রুম,মহুরীতট থেকে দেওভ্যালী আড্ডার ছুঁয়ায় জেগেছেন হরিভূষণ পাল থেকে সেলিম মুস্তফা। কৃষ্ণকুসুম পাল থেকে চারুকৃষ কর।সুব্রত দেব থেকে সন্তোষ রায়।পীযুষ রাউত থেকে হরিহর দেবনাথ। কম বেশ আড্ডারু সকল সাহিত্যিকই।আড্ডা মানে প্রাণের জোয়ার।
সাহিত্য আড্ডায় জোনাকির আড্ডা স্মরণযোগ্য।তারপর আগরতলায় নানান গোষ্ঠীর সাহিত্য আড্ডার পাশাপাশি ধলাই প্রবাহের সাহিত্য আড্ডা,রাতাছড়ায় স্রোত সাহিত্য আড্ডা শুরু হয় নয়ের দশকের এক শারদ সন্ধ্যায়।তারপর ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৫ সাল থেকে সাহিত্য আড্ডা করে আসছে স্রোত। ২০০৩ সালে কুমারঘাট এই পক্ষ সাহিত্য আড্ডা বসে।সে সময়ও দীর্ঘ দিন কুমারঘাটকে জাগিয়ে রাখে এই পক্ষ।
জলজ সাহিত্য আড্ডা দীর্ঘ দিন থেকে ধর্মনগরের সাহিত্যের সলতে পাকিয়ে টিকে আছে জলজ।তা থেকে সাতদিন প্রকাশনা।তাও সফল বই প্রকাশসহ ধর্মনগর লিটল ম্যাগাজিন মেলা,সাহিত্য উৎসব, সাহিত্য পিকনিক করে আড্ডাকে সজীব রাখার মূল কারিঘর সন্তোষ রায় আমাদের নিকট মহীরুহ। 
কৈলাসহরেও অঙ্গীকার সাহিত্য আড্ডা থেকে বেশ কজন কবি সাহিত্যিক উঠে আসেন।সোমবার পত্রিকাকে কেন্দ্র করে কৈলাসহর মোটরস্ট্যান্ডে দীর্ঘ দিন সত্যজিৎ দত্ত, বিশ্বজিৎ দেব, নির্মল দত্ত, মলয় দে,মৃদুল বণিকসহ আড্ডায় আমিও বার দুয়েক উপস্থিত হয়েছি।হয়েছি সাতদিনের আড্ডা,অঙ্গীকারের আড্ডায়ও।সন্দীপন সাংস্কৃতিক সংস্থাও সাহিত্য আড্ডার আয়োজন করতেন।তাতেও আমার উপস্থিতি কমবেশ ছিলো।
কুমারঘাটের আড্ডায় নীলিমেশ পাল, গোবিন্দ ধর, পদ্মশ্রী মজুমদার, মোয়াজ্জেম আলী, অরূপরতন শর্মাদের উপস্থিতি  আড্ডাকে বেগবান করে।এই পক্ষ বলে একটি পাক্ষিক লিটল ম্যাগাজিনও তার ফসল।
কুমারঘাটে সর্বশেষ সমবেত আড্ডার আয়োজন করে দেও-মনু সাহিত্য মঞ্চ।কাঞ্চনপুরও কম নয়।সেই মন্বন্তর থেকে সত্যেন্দ্র দেবনাথের এই বনভূমি হয়ে আড্ডার হাত বদল হয়ে বর্তমানে রসমালাই,বনতট,দোপাতা"র কাণ্ডারী হারাধন বৈরাগী, অমলকান্তি চন্দ, দিব্যেন্দু নাথদের হাতে এসে পৌঁছে দেও নদীর স্রোতের মতো কলকল প্রবাহিত।
এই রকম এক উর্বরতার সাক্ষী স্রোত।স্রোত ক্রমাগত আড্ডার সলতে প্রজ্জ্বলিত করে কখনো কুমারঘাট তো কখনো রাতাছড়া,কাঞ্চনবাড়ি হয়ে পানিসাগর,কৈলাসহর।স্রোত সাহিত্য আড্ডা থেকেই এক সময়ে স্রোত লিটল ম্যাগাজিন।তারপর কোন এক সময় তা প্রকাশনা।আগামীদিন ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় তিরিশে নভেম্বর :২০১৯ বসবে আমন্ত্রিত সাহিত্যজনদের নিয়ে সীমিত জায়গায় সারস্বত সাহিত্য আড্ডা। দীপক বিশ্বাস বাবুর ভাড়া ঘরে সল্প জায়গা।সুতরাং আমাদের স্বপ্ন থাকলেও এক সাথে সকলের স্বর ও আড্ডার উষ্ণতা আমরা গ্রহণ করতে না পারার দায় নিয়েই এই আয়োজন।আশা করি প্রতিমাসে আমন্ত্রিত এই আড্ডায় আমরা গুণীজনদের সহযোগিতা পেয়ে সাহিত্যের সেবা করতে পারবো।সকলের সহযোগিতা আমাদের এগিয়ে চলার আলোকবর্তিকা হোক কামনা করি।

বিজন বোস

সময়

অনিচ্ছায় ঢুকে গেছি বদ্ধ ঝিনুকে
বেড়ে ওঠা মুক্তোর মতো আয়াসী যাপন ,
নিমেষে গলিত লাভা
গরল বিনাশী অমৃতময় তরল পানীয় ।
রাইফেল থেকে আসছে গোলাপ ,
নষ্ট ফুলের দুষ্ট কীট 
শুভ্রতার প্রতীক হতে 
প্রতিযোগিতায় সামিল .. .
সে তোমার প্রেম স্পর্শ ।
একদিন মনু নদীর তীরে
দেখেছি হিংসার জমকালো রিহার্সাল ,
সংঘ আগ্নেয়াস্ত্র তীব্র মতবাদ
গ্রীবা চেপে ধরেছিল 
তবু বাঁচার দুরন্ত ইচ্ছে জেগেছিল মনে 
যাইনি আত্মহত্যায় ,
শুনেছি দেশমাতার উদাত্ত আহ্বান ,
পরক্ষনেই বুঝেছি কেটে যাবে এই ভয়ার্ত রজনী 
আগত আনন্দ নিখিল জীবনের
গাঢ় আলিঙ্গন সুবাতাস আর অমল নিঃশ্বাস ।

Saturday, November 23, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছি

শ্রদ্ধাঞ্জলি || নবনীতা দেবসেন (১৩ জানুয়ারী ১৯৩৮ - ৭ নভেম্বর ২০১৯) || সাহিত্যের নক্ষত্রনারী

সম্পাদকীয় প্যানেল

এক ঘেয়ামী জীবনের বাইরের জীবনের নাম কবিতা। এখানে নীরবতার শব্দ হয়। শান্তভাবে বয়ে চলা নদী দেখলে বুঝা যায় গন্তব্য কোনো চুড়ান্ত বিষয় নয়। 

শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা- সহ
 জয় দেবনাথ
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক
মনন স্রোত

ছবিতে মননস্রোত শিল্পী সুমন : ক্যামেরায় রনি সরকার।

দীপক দাস

মিথ্যার অপরিহার্যতা

সদা সত্য কথাবলিবে,এ আপ্ত বাক্যটিআমাদের সবার শোনা।এই বাক্যটির পরিপ্রেক্ষিতে  মিথ্যার অপরিহার্যতা বিচার্য।তবে সত্য কী?যা ঘটে চলছে আমাদের  গোচরে  বা অগোচরে। কিছু আমাদের  জানার মধ্যে অধিকাংশ  জানা বা বোঝার বাইরে।দ্বিতীয়  প্রশ্ন  কথা কী?আমরা যা মনের ভাব প্রকাশের  জন্যঅপরের কাছে ব্যক্ত করি।তাহলে স্বভাবতই  বলতে হয় বলার পূর্বে আমার মনের  কথাগুলি মনের মধ্যে  রূপ  পরিগ্রহ  করে,তারপর বাক্যের আকারে বেরিয়ে  আসে। সত্যকথা তবে কী?যা আমাদের  মনের মধ্যে  আলোড়িত  হয় তাই।এখন প্রশ্ন সত্যকথা বলা উচিত  কী উচিত না।তার উপর আবার সদা সত্য কথা বলা।
আমার মনে হয় আমাদের  জীবনের  সমস্ত রকম গুরুত্বপূর্ণ  অবস্থায়  সত্যের চেয়ে মিথ্যাই জরুরি এবং  মিথ্যাই অপরিহার্য। 
পিতা মাতার অনাকাঙ্ক্ষিত  কন্যা সন্তানটিকে পিতা মাতা কখনো বলে না তুমি আমাদের  কাঙ্ক্ষিত  নও।শিশু অসংখ্য  বায়না ধরে, প্রায়  সমস্ত বায়না মেটানো হয় মিথ্যার সাহায্যে, এমনকি চঁাদ সূর্যকে ও শিশুটির  হাতে এনে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি  দিই।শিশুটিও ছোট বড় নানা মিথ্যা বাক্যবলে আদর আদায় করে নেয়। কখনো মাকে কখনো বাবাকে আলাদা আলাদাভাবে বলে তাকেই  সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। কোনটি সত্যি সেও জানেনা। সত্য মিথ্যা  একাকার এখানে।শিশুটি বড় হতে থাকে মা বাবার সাথে চলে অপূর্ব  সব মিথ্যার খেলা।
যৌবনে সে ভালোবাসে কোনো  নারীকে এবং বিশ্বাস  করে কোনো দর্শনে। 
দিন গড়িয়ে যায়।প্রিয়ার কলো চোখে সে আর খঁজে পায়না আগের আবেগ,অবশ্য  দুদিক থেকেই এটি সত্যি।তবু চলতে থাকে মিথ্যার খেলা।
ভালোলাগা দর্শনের  মোড়ক খুলেযখন সে সত্যের সন্ধান  করে তখন দেখে দুধের অধিকাংশই জল।অথচ সে আটকে আছে সেই  দর্শনের  পেছনে।উপায় কী চাকুরী  বদলী, ঠিকাদারি কিছুনা কিছু দরকার বেঁচে থাকার জন্য এবং এগুলো  মিথ্যাই একমাত্র  এনে দিতে পারে। 
বিভিন্ন  পেশার ক্ষেত্রে  মিথ্যারই জয়জয়কার। ডাক্তার  তার মরণাপন্ন  রোগীকে বলে চিন্তা নেই, আপনি  ভালো হয়ে উঠবেন। উকিল মক্কেলকে তার  পরাজয় জেনেওবলে একেসে আপনার জয় অনিবার্য। জ্যোতিষি হাত দেখে বলে পুত্র  সন্তান ঘরবাড়ি ও বিরাট  সাফল্যের  স্বর্নদ্বার আপনার জন্য  অপেক্ষা  করছে। রাজনীতি ব্যবসায়ীদেরঅধিকাংশের মিথ্যাই সম্বল।নিজের দোষকে অপরের  কাঁধে চাপানো,মিথ্যা প্রতিশ্রুতি রাজনীতির  স্বাভাবিক  আয়ুধ।কোনযুবককে কী বলা যাবে, তোমার চাকরি  হবেনা,না, বলা উচিত? বলে দেখছি  হয়ে যাবে।ইন্টারভিউ  দাও। আমাদের  হাত নেই।  বলতে হয় বলা দরকার।এবারপাঁচশালা পরিকল্পনায় মোট একশ কিলোমিটার  রেলপথ  হবে।সমস্ত রাজ্যের যোগফল হয়ত পাঁচ হাজার কিলোমিটার। অসম্ভব  জেনেও মিথ্যা দাবী।
মিথ্যা ও সত্যের ফারাক কতটুকু। মিথ্যাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সত্যের কাজ করছে।আনন্দিত করছে। উত্সাহিত  করছে জীবনকে।
প্রাণ এবং অপ্রানের মধ্যে  সত্যিকারের কী কোন ফারাক আছে?আলো মাটি,বাতাস,জল প্রাণহীন।আবার এদের মধ্যেই প্রাণের জন্ম।
তাই বলাযায় মিথ্যাই সত্য।আসুন আমরা মিথ্যার জয়গান গাই।পৃথিবীর  মধুরতম মিথ্যা,সব মানুষ  একদিন  সমান হবে,মানুষে মানুষে ভেদাভেদ মুছে যাবে।সেই  মিথ্যার স্বপ্নদেখতে সত্যি  অভ্যস্ত হই।

সংগীতা শীল

নীলাম্বরী 

নীল আকাশের অচিন দূরে
চলছি যখন ধ্রুব হয়ে
বৃষ্টি বিলাসী ঝরণার 
নৃত্যের তালে তালে।

সপ্ত সুখের নিসর্গতায়
নীলাম্বরীর লুকানো কথায়
ঝর তোলা বুকের মাঝে,
আবেগী মনের বাঁশির সুরে
অনুরাগী ভালোবাসার মলিনতায়
বিষন্ন আজ একাকিত্বতায়।

উল্লাসিত হাসির কম্পনে শান্ত স্থির সন্ধায়
ঝরাপাতা মাটিতে কানাকানি পড়ে যায়;
স্বপ্ন নীড় অদূর প্রিয়াসে
বাঁধন হারা হৃদয়ের কোটায়
মরীচিকা ধরে গেছে,
ছাপ নেওয়া কিঞ্চিত অনুভবগুলোতে।

ভালোবাসার বৃত্তটা একরাশ চুপকথায়
তখনও ছিলো এখনো আছে,
দূরত্বের কাছে হার মানিয়ে
মোড়কটাই বদলে গেছে।।

বিনয় শীল

ধনতেরাস


           গ্রাম-বাংলায় একটা শব্দ প্রচলিত আছে। সেই শব্দটি হল "তিরস" । এই তিরস শব্দের অর্থ হল পিপাসা, তৃষ্ণা, ইচ্ছা, কামনা বাসনা ইত্যাদি। ওই "তিরস" শব্দ থেকে তেরস শব্দ নিষ্পন্ন হয়েছে। পিপাসা বা তৃষ্ণার ব্যুৎপত্তিগত বিচার যাই হোক না কেন, উক্ত শব্দের অপভ্রংশ সূত্র ধরলে এই দাঁড়ায় যে, পিপাসা বা তৃষ্ণা > তেরস > তিরস।
           তিরসকে অবলম্বন করে একটা উদাহরণ টানলে ব্যাপারটা আরও সহজ হবে। যেমন- ' মাগো, আমার খুব জলের তিরস ধরছে।' মানে জলের পিপাসা বা জলের তৃষ্ণা লাগছে। প্রয়োজনীয়তা যখন আত্যন্তিক মাত্রায় জেগে ওঠে, তখন তা পিপাসা বা তৃষ্ণা শব্দে আত্মপ্রকাশ করে থাকে।
           এবার জলের পানের তৃষ্ণা থেকে জলতিরস বা জলতেরস, ধন লাভের তৃষ্ণা থেকে ধনতিরস বা ধনতেরস অথবা ধনতেরাস।
            হ্যাঁ, প্রশ্ন হতে পারে,  এটা বিশেষ তিথির সাথে যুক্ত কেন ? দেখুন, ভারতে সুপ্রাচীন কাল থেকেই সকল শুভকর্মাদি কোনো না কোনো তিথিকে কেন্দ্র করে সম্পন্ন হয়েছে। এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সম্ভবতঃ 'তৃতীয়া' -এর সাথে 'অক্ষয়' এমন একটা শব্দও যুক্ত আছে। যদিও বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তথাপি মনে হয় তৃতীয়ায় শুভকামনা যেহেতু অক্ষয় হয়, সুতরাং এই তৃতীয়ায় ধনলাভের শুভ তৃষ্ণাও অক্ষয়তা লাভ করে। এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। সাধারণ মানুষ অতশত বোঝেনা। ধর্মীয় একটা বিষয় যুক্ত আছে, -এটাই ব্যাবসার জন্য যথেষ্ট। তদুপরি স্বর্ণ-রৌপ্য সংক্রান্ত বিষয়। এই ধাতুগুলিতে এমনিতেই ভারতীয় হিন্দুদের একটা পবিত্রতার ভাব ও ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। ধনব্যাবসায়ীরা তৃতীয়া তিথির সাথে ধনতৃষ্ণার একটি ধর্ম ও যুক্তিনির্ভর যোগসূত্র খুঁজে পেলেন। আর তাকেই ব্যবহার করতে থাকলেন অত্যাধুনিক বানিজ্যিক প্রচারে।
                          
                     

অভীককুমার দে

মায়ের সোনা বাছুর

গরু পালন করছি ঘরে
ঘর নিজের করে নিয়েছে গরু। 

আমার ঘরের গাভী মা হয়েছে, দেখি
দামড়ারাও মায়ের মতই চেয়ে... 
যদিও সব মা গরু নয়। 
সব গরু মা হতে পারে না,
দুধ খাওয়াতে পারে না বলে
কিছু গরু হালের কাছে বন্ধক রাখে ঘাড়।

গাভী দুধ দেয়
সোনা ফলে
সোনা বাছুর মায়ের, অথচ 
দামড়া মনে করে দুধের ভেতর সোনা;
অতঃপর খুঁড়তে থাকে মাটি। 

দুলাল চক্রবর্তী

অমলিন  আশা

তোমার আগুনে জ্বলেছিলো
আমার প্রাণের বীণার তার,
ছিন্ন বীণায় বাজেনাতো সুর
করে শুধু হাহাকার।

গোধূলি বেলায় পাখিরা ফিরে
আপন কুলায়।
আমি পথহারা পথিক একা
পড়ে আছি পথধূলায়।
জীবন আমারে বলে দিয়েছিলো
সব আলেয়ার আলো,
অন্ধ ছিলাম তোমার রূপেতে
তোমায় বেসেছি ভালো।
আজো
খোলা জানালায় কান পেতে রই
যদি ডাকো তুমি ফিরে,
মনের আয়না বার বার বলে
ফিরে চলো নিজ নীড়ে।

অন্ধ তোমার ভালোবাসা টুকু
রইলো গোপনে তোলা,
হারিয়ে যেওনা হাজারো ভীড়ে
হয়ে যাবে পথভোলা।

বিজন বোস

ডিটেনশন ক্যান্প

রাষ্ট্র যখন বর্গী হয়
লুটের উৎসব জমজমাট
মেধা বিক্রির মহামেলা
সমাজব্যাপী মত্সনায়  ।

পূব আকাশে সোনালী সূর্য
থমকে দাঁড়ায়
মাটি ও মানুষের হৃদপিন্ড ছেঁড়া
চিত্কার শুনে ,
গন্ধশুঁকো  শিকারী কুকুর সোল্লাসে
বিজয় পটকার প্রতিযোগিতা বসায়
আর লণ্ডভণ্ড করে মানুষের স্বপ্নের বাগান।

ওদিকে ক্লান্ত প্রত্ননগরীর রক্ত আর ঘামে
স্বপ্নকে বন্ধক রেখেও 
এগিয়ে যেতে চায় যে কিশোর
তাকেও রেহাই দেয়না রাষ্ট্রের লান্পট্য ক্রোধ ।
বুকের রক্তে আর কত গল্প হবে
উন্মত্ত হস্তীর লুণ্ঠন আর কত সইবে দেশ ?
মাটিকে মাতৃজ্ঞানে পূজো করা
বুড়ো দুলাল তাঁতির 
স্বখেদ প্রশ্ন
আমরাতো যুদ্ধপরাধী নই--
তবু কেন পচে মরছি ডিটেনশন ক্যান্পে ?

সংগীতা দেব

বসন্তের অপেক্ষা

চারদিকে শুধু রঙিন ছবি।
রঙ আর রঙ আকাশে বাতাসে,
বুড়ো, ছোটো, মাঝারি সবার প্রাণে।
এই রঙ যেন আর বাঁধা মানে না
ছড়িয়ে পড়ছে সবার মাঝে।
এতো রঙের ছোঁয়ায়
ঢাকা পড়ে গেল,সবার দুঃখ গুলো।
মেতে উঠল সবাই,নানা রঙে সকলকে রাঙাতে।
আবারো এই বসন্তে
শুধু আমি বাদ পড়ে গেলাম,
রঙের ভাগ পেতে।
এবারো-কি বেরঙিন কেটে যাবে
পঁচিশটা বসন্ত পেড়িয়ে।
আমি উভলিঙ্গের বলে কি
আমায় রঙ মাখতে বারন!
আমরা কি সবার মতো
রঙিন হতে পারিনা,নানা রঙে?
সবাই দেখলে কেবল দূরে সরে যায়,
যা সবার সাথে মিশে যেতে পারেনা।
সবার মতো আমরাও রক্ত, মাংসে, অনুভূতিতে গড়া।
তবুও যেন অমিল আমরা সবার চোখে।
প্রতি বার মনে হয়,কেউ যেন বলবে
তুমিও এসো আমাদের মতো রঙিন হতে।
সেদিন আমার বসন্ত আসবে
ঢাকা পড়ে যাবে সবার মাঝে আমার অমিল।
দূরত্ব ঘুঁচে যাবে রঙের ছোঁয়ায়।
আবারো দীর্ঘ অপেক্ষায়, আমার বসন্তের।

অনুপম দেব

বাবুইর প্রেম 

পক্ষীদেশে আছিলো সুন্দরী একটা ময়না
       ওই দেশেরই এক  বাবুইর মনে ওই ময়নার লাইগ্গা প্রেমের আনাগুনা,
গুন্ডা কাক যে ময়নার দাদা জানতো ইডা বাবুই 
      এখন শুনি কি কয় এই প্রেমপাগলা মশাই,

একদিন ময়নার কাছে বাবুই পাখি কানে কানে কয়
    চল নীল গগনে উইড়া বেড়াই কিয়ের এতো ভয়?
ময়না তখন কয় বাবুইরে জানস না তুই গাঁধা!
       দেখতা পারলে মাইরা লাইবো কাক আমার দাদা,

বাবুল তাতে কি, আমি ইতা ডরাই না

তুমি আমার সঙ্গে থাকলে এইসবে কিছু যায় আয়ে না,
ময়না বলে দাদা আমার বড় গুন্ডা, লম্বা তার ঠোট,
একটা তর ঘাড়ে দিলে হইবি প্রেম ছাইড়া ফুড়ুৎI


সুজন দেবনাথ

যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও


যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও

যদি ব্যথার মতো ব্যথা দিতেই না পারো

তবে ব্যথা দিও না

ছোট খাটো ব্যথা না চাইতেই মেলে

পথে ঘাটে হাটে মাঠে

যদি পারো তো বড় ব্যথা দাও

যে ব্যথায় আমি অভ্যস্ত নই

আমায় এমন ব্যথা দাও

যে ব্যথায় আমি চূর্ণ বিচূর্ণ হবো

ক্ষত বিক্ষত হবো

হতে হতে একদিন মিশে যাবো 

কৃষ্ণ মেঘে, 
মিশে যাবো কালের অতলে
মিশে যাবো  মহাকালের অসীম শূন্যতায়

আমি হারিয়ে যেতে চাই পৃথিবীর বুক থেকে

ভালোবাসা আর চাইব না

কোনোদিনও না

ভালোবাসায় এখন  বদ  হজম হয়

আসলে ভালবাসার চাইতে এখন

ব্যথায় ভালো লাগে

মৌ মন্ডল (গাঙ্গুলী)

এই বেশ ভালো আছি

সংসারের চোরাস্রোতে আমি ঠিক কেমন আছি, 
সে প্রশ্ন কেবল আমার মধ্যেই সীমিত থাক। 
তুমি কেমন আছো? সেটাই বলো, 
তোমার ভালো থাকার প্রতিটা মহুর্ত আমাকে ছুঁয়ে যাক। 


বোকার মতো এমন প্রশ্ন কেনো করো? তুমি জানোনা....
আমাকে ভালো থাকতে নেই ভালো রাখতে হয়। 
একথা শোনা মাত্র যতই তুমি কানে তালা দাওনা কেনো, 
সবাই নয় তবে জেনে রাখা ভালো কেউ কেউ এভাবেও বেঁচে রয়। 

সাধারণ ঘরের সাধারণ মেয়েরা সব, 
ভালো থাকার চেয়ে ভালো রাখার মন্ত্রে সদা দীক্ষিত। 
তবুও অভিনয়ের সেরা শিরোপা পাবার লোভে, 
ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি এই বেশ ভালো আছি। 

দিপ্সী দে

ভালোবাসি
   
কত সহজে বলে দিয়েছো তুমি সূখী নোও
আমাকে ভালোবেসে তবে আমি  কি সূখী
জানতে চেয়েছো  কি কোনদিন?
কখনো আমার চোখের জল মূছে ছিলে?
তবে জল আনো আজ ও
প্রেমের গন্ধে আজ হৃদয় পোড়া বারুদের গন্ধ।
অনেক তো হল যায় না কি?
আবার কাছে আসা
দিনশেষে ভেজা বালিশ টা জানে
আমি তোমাকে যে ভালোবাসি।
   

অনুপম রায়

চব্বিশ ঘন্টার পাঁচ তারা

যদি আলো ভাঙা ভোরে, কেউ ডাকে বারেবারে
আসবো আমি তারই খোঁজে বিশ্ব হৃদয় জুড়ে;

যদি সূর্য্যিমামা ঠিক দুপুরে চোখ রাঙিয়ে দেখে,
বটের ছায়া নিয়ে যাব পথের আঁকেবাঁকে ;

যদি বিকেলগুলো সময় করে আড্ডা দিতে আসে,
পাখির ঝাঁকে আসবো আমি জমবে অবশেষে;

যদি তুলসীতলে প্রদীপ জ্বলে সন্ধ্যা নামার পরে,
পাখি,পথিক,রাখাল,আমি ফিরব ঘরে ঘরে;

যদি বিভোর নেশার স্বপ্নগুলো রাতের দেশে যায়,
আমি অবুঝ মশাল হাতে আলোর হাত বাড়ায়।

উৎপল দেবনাথ

ভ্রমর কথা 

ভ্রমরের গুনগুন
শুনেছি বললো ---
দিনের শেষে ভালোবাসুক।
পুষ্প রোদে ক্লান্ত 
অঙ্গে অঙ্গে জারিত 
দহনে দাহিত
কিছুটা তাপ আমারও বুকে 
তবুও প্রত্যাশা। 

সজীব পাল

যৌবনের ক্ষুধা

নারীর ভিতর থেকে শকুনের মতো খাদ্য খুঁজেছি,
এই পৃথিবীর একটা সমুদ্র ডিঙাবো বলে।
কেউ শব্দে কেউ নিঃশব্দে
অথবা কেউ আঙুল দেখিয়ে বলেছে,
"একে নির্বাসন দাও এই নারীভোগী।"
জানি কখনো কখনো মহামানব 
নীরবে উচ্ছন্নে যায় ।
এইটা তো তার দোষ নয়!
তার ভীতরে গড়ে ওঠা পাথরের সংঘর্ষ ।
এই যে স্ফীত যৌবনের কঠিন জ্বালা ।
একমাত্র পুরুষের ভিতর সৃষ্টি হওয়া 
কবিই জানে 'নারী পুরুষের 'মধুর সম্পর্ক ।
কত নারী হেঁটে গেছে-
কত যুগ যুগ ধরে পুরুষের হৃদয় ছুঁয়ে,
তবুও একবিন্দু স্পর্শের ক্ষুধা মিটে না।
তাই নারীর ভিতর খুঁজে যাই সুখ, সুখ এবং সুখ।

মুকিম মাহমুদ মুকিত

আবার ফেরা হোক

আবার ফেরা হোক 
সেই শিশির ভেজা ঘাসে,
ভিজে যাক পা ;
জমে থাকুক মাথার এলোকেশে
কুয়াশার বিচ্ছিন্ন শুভ্র কণা। 
আবার প্রতিক্ষায় চেয়ে থাকা হোক পথ
যেমতি থাকে শীতার্ত ভোরে 
শিডিউল হারানো সূর্যের আকাঙ্খা ;
অপূর্ণতায় লেগে যাক পূর্ণতার ঘুম। 
অথবা আকুতি থাকুক নওল ঊষার কাছে 
একটু ধীরে চলবার। 
গোধূলি লগ্নে নীলাম্বুধির পারে
আরও একবার হয়ে যাক,
শীতনিদ্রার অব্যর্থ আয়োজন। 
চোখের পাতা ঝাপসা হয়ে ভিজুক
ঘন কুয়াশায় মিলিয়ে যাক পথ,
হীম শীতে বাধ্য হয়ে বন্ধ হোক 
প্রকৃতি বিমুখ রথ। 

সৈকত সরকার

স্বাধীনতার সূর্য লাল। 

সময় নেই
এখন চাঁদ দেখার! 
ভাতের বড্ড আকাল!! 
ক্ষুদার্ত শিশু আধমরা হয়ে আছে, 
কিন্তু
ওরা ব্যাস্ত ভন্ডামি তে, 
ওরা ব্যাস্ত গদি দখলে। 
ওদের কান নেই, হৃদয় নেই,ঈমান নেই, 
বিবেক রঙ কাগজে বিকিয়ে গেছে।

ওরা সন্ধ্যায় চাঁদ খুজে
আমি খুঁজি রাস্তার বুকে একটুকরো পাথর,

আকাশের চাঁদ অপেক্ষা 
রাস্তার পাথর আমার অধিক প্রিয়,

কারণ-

শোষণের বিরুদ্ধে শোষিত যখন তা তুলে নেয়, 
বিপ্লবের আগুন অমাবস্যা জ্বালায়,

একরাশ ছাইয়ের পাহাড় ভেদ করে
জন্ম নেয় এক নতুন সকাল,

পুর্ব দিগন্তে সালাম দেয় 
স্বাধীনতার সূর্য লাল।

সুস্মিতা সিংহ

অণুগল্প 

কিছু প্রাণহীন বা কিছু প্রাণ বৃক্ষ মঞ্চে ছোট ছোট ক্রিস্টাল পাথরের মালা দিয়ে বরণ করার সময়টুকু পর্যন্ত আনন্দের  ছিল। হঠাৎ ক্লোরোফ্লোরো কার্বনের এ ডিবিতে আগুন লেগে যাওয়ার কারণে বিস্ফোরণ হয় কিছু মানুষ  আহত হয়, কিছু মানুষ ভেঙ্গে পড়ে, কিছু মানুষ সময়ের সুযোগ নিয়ে এই ঘটনার উল্টো দিকে হাঁটে। হঠাৎই সুপ্রিম কোর্টে ফাঁসি র রায় হয়ে যায় ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ডিবির এর মালিকের। হাসির ঘটনা বলে অনেকের কাছে বেশ আনন্দের ।
দোষ কার ছিল? ক্লোরোফ্লোরোর ডিবি আনা নাকি কাগজ কুড়িয়ে সেই ডিবিতে আগুন লাগানো প্রতিশোধ স্পৃহা মানুষের? কেনই বা তারা বডি স্প্রে সুগন্ধির কাজে লাগাল না এই বলে প্রশ্ন ওঠেনি উঠেছে বিস্ফোরণ নিয়ে!

সুব্রত দেববর্মা

রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম বেশী

রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম 
যেখানে বেশি,সেখানে আমার দেশপ্রেম,
সেইটে আমার স্বভূমি।

রেশনকার্ড বন্ধক দিয়ে
একমুঠো চাল ভিক্ষা চাইছি,
একটা ডিটেনশন কেম্পে 
কিভাবে প্রেম চাইছো তুমি।

কোনো করপোরেশন আমার শহরের
আঁধার ঘোচাতে পারেনি,
আমি শুধু ইলেকট্রিক বিলে দিয়ে গেছি
ফাইভ পার্সেন্ট ইনক্রিজ।

পিএমসি ব্যাংক থেকে শুরু,
এই বিজনেস যে কোথায় থামবে
কোথায় অপমৃত্যুর পরসংখ্যান হবে ফ্রিজ।

জানিনা, আমি তা জানিনা।
শুধু এইটুকু জানি যে 
রাফাল থেকে একটি লেবুর দাম বেশি।

পূজা মুজমদার

ঋতুর অ'সুখ


আমি যে শয্যাশায়ী ঋতুর ব্যথায়,
চোখের বর্ন হলো ফ্যাকাসে হায়!

আমি চুপ করে সয়ে যাই সব...

সাতটা দিন........
সে কি কম যন্ত্রনার??

আমার মুখ দিয়ে যে আজ আওয়াজ থেমে থেমে 
আসে বারবার...
কারন ঋতু চলছে আমার।

ব্যথায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েছি কয়েরবার।

তবে এসকলের ভিরে না আমায় সুন্দর দেখাচ্ছে...
কচি শিশুর চেহারাটা যেমন
ঠিক তেমনই দেখাচ্ছে....

ঋতুকালীন সময়ে কাছাকাছি যদি কখনও হও
তবে মন ভরে আমার ওই মুখমন্ডলখানা তোমার চোখের পলকে চুমিও।

প্রীতম শীল

কাঁদো মাগো কাঁদো

বড়ই কৌতূহল জাগে মা,
কোথায় পাও এত সহিষ্ণুতা। 
মৌন ভাবে কিভাবে থাকো মা,
কি শক্তি দিলো তোমায় বিধাতা। 
আমরা যখন জ্বালিয়ে মারি তোমায়,
কেমনে হাসি মুখে থাক তুমি?
কেন তোমার কান্না পায় মাগো,
যখন খাবার খাইনা আমি?
তুমি যখন অনাহারী মাগো,
কান্না আমার কেন পায়না?
আড়ালে যখন কাঁদো মাগো,
কষ্ট কি তোমার হয়না?
যে সন্তান লালন করো তুমি,
আমরা কি যোগ্য তার।
হাসি মুখে সব সয়ে যাও মাগো,
একি তোমার মহান বিচার।
কাঁদো মাগো কাঁদো তুমি,
প্রসব ব্যাথার কালে।
জীবন ভর কাঁদো তুমি মাগো,
লোকের চোখের আড়ালে।


চৈতন্য ফকির

নকুলচন্দ্র মণ্ডল

১:২ এই ফাঁদে যতবার পা পড়ে
ঠিক তখন বাঁদরের মুখ গলায় কাঁটা হয়ে বিঁধে। 
তার পোশাকিভদ্রতার আড়ালে মুখোশ নাম
নকুলচন্দ্র মণ্ডল। 

বাঁদর যেমন অন্যের ডুগডুগি বাজনায়
নোচে চলে সেই নকুলও নেচে-কুঁদে 
উড়ে এসে কুমারঘাটে ১:২ এই ম্যাজিক শেখাতো।

এরকম ১:২ মিলাতে মিলাতে দেখা গেলো 
কারো ১ সাইড নিচে নামতে নামতে ১০০ ক্রস করে আছে
আবার কারো ২ সাইট এক নং জোড়ায় লটকে। 

এরকম পরিস্থিতিতে নকুল মণ্ডল তার প্রভুকে
১:২ খেলায় মালিক শুভঙ্করকে নিয়ে এলো
আর রাতের খাবার মমতাময় তুলতুলে রেডমিট।

মায়াময় হিপনোটিজম আর বিপুলচন্দ্রের অদক্ষতা 
পকেট থেকে ১:২ ম্যাজিক মেলাতে মেলাতে 
হঠাৎ তিনজন শিম্পাঞ্জি ও একজন অবিনাশ
তার চৌবাচ্চার চাবি হারিয়ে জলকাতর বহুদিন।

১:২ ম্যাজিক এখনো বাতাস ভার করে আর
আমাদের গোপাল নেপাল ও অনিমেষদের
নিচে এরকমই নামতে থাকে নতুন গল্প 
তারও একই মুখোশ সেও নকুলচন্দ্র মণ্ডল।

সামিন শুভ

খোলা চিঠি

আমার চেহারায় যন্ত্রণার ছাপ,
নিস্ক্রিয় যৌবণের সব উত্তাপ, 
তাই নাহি ঠাই, 
এপারে-ওপারে বিছায়েছি পাপ। 
চোখের নিচে জমা হাজার অনুতাপ।
নেই মাপ..... সুদূরে ম্লান আমার পাপেরি ছাপ।
চাই মাফ....
যদি পারো মাফ করো হে মহীয়ান, 
তোমাতেই সর্বস্ব আমার নিজ বলিদান।
হে মহান |

Sunday, October 6, 2019

মনন স্রোতে আপনাকে স্বাগতম || সবাইকে শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা।

সম্পাদকীয় পাতা

এর আগে মনন স্রোত এত কম সংখ্যক লেখা নিয়ে প্রকাশিত হয়নি! ধারাবাহিকতার একটা বিড়ম্বনার দিক হলো এর থেকে বেরিয়ে আসা যায় না। বিজ্ঞপ্তিতে আমরা শারদীয়ার জন্য লেখা চেয়েছিলাম। অজানা কারণে প্রচুর ধারাবাহিক লেখা আমাদের কাছে এসেছে। এই সংখ্যায় পুজোর লেখা বাছাই করা খুবই কষ্টকর ছিলো। একটা ধারাবাহিক সংখ্যাকে শারদীয়ার সংখ্যায় পরিণত করার মতো কাজ আসলে খুব একটা সহজ নয়। যাইহোক যারা এই সংখ্যায় লিখেছেন এবং যাদের লেখা আমরা এই সংখ্যায় প্রকাশ করতে পারিনি সবাইকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

ছোট হলেও এই সংখ্যায় যতটা সম্ভব গুণগতমান ধরে রাখার চেষ্টা করেছি। বিচার করার দায়িত্ব পাঠকের। সবশেষে মনন স্রোতকে তার সামাজিক দায়িত্ব পালনে আপনার এভাবেই সহযোগীতা করবেন এই আশা ব্যক্ত করে কথা বলার ইতি টানছি।

                  শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
                       অষ্টমী বৈষ্ণব
                   ভারপ্রাপ্ত সম্পাদিকা
                   শারদীয়া || মনন স্রোত

শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

সূর্যমুখী

বামুনের মেয়ে, রোজ নাইতে যাবেই যাবে বড় দীঘির ঘাটে।
অন্ধকারে পথ ঠাওরে, সূর্য উঠার আগে।
  সূর্যের প্রথম কিরণ চাই তার ভিজে কাপড়ে ভিজে শরীরে  ।
পাল্টাতে পারেনি কেউ আজ অবধি সেই আর্য কন্যার ব্রত।
শীত গ্রীষ্ম বারোমাস।
তারপর সূর্য মন্ত্র জপ-- ওম জবাকুসুমং--
কে যেন কানে ঢেলে দিয়েছিলো সূর্য প্রনামের নিয়ম।
ক্রমে সেই পুজা, প্রেমে পরিনত।
সুর্য স্তবে সূর্য তুষ্ট।
হতে তো হবেই --
একদিন রথে করে নেমে এলো সূর্য।
আধা ভিজে শরীরে চোখ বন্ধ একমনে সূর্য মন্ত্র জপ --
হঠাত জলদগম্ভীর সেই আওয়াজ।
কি চাও মেয়ে!
কেন আমারে কর বিচলিত!
সূর্য কনার মতো ঠিকরে পড়া রঙ নিয়ে ক্ষণিক বিস্মিত ক্ষণিক বিহ্বল মেয়ে ।
উঠলো বলে- তোমাকে চাই--
পতি হও, প্রেমিক হও--
আঁতকে সূর্য উঠলো বলে-
ওকি কথা!!
আমি যে দেবতারে!!
দেবতা আর মানুষের মিলন কি সম্ভব  কখোনো! অন্য বর চাও--
কাঁদলো মেয়ে কাটলো মেয়ে।
তবুও অনড় নিজ কথা খানিতে।
--পায়ে পড়ি ,কথা শোন বাড়াও হাত প্রভু। আমি যে তোমার প্রেয়সী প্রেমের পিয়াসি।
নইলে-- নইলে  করবো এ দেহ ত্যাগ তোমার সামনে। অভিশাপ আর অভিযোগে ছিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবী হবে আলোক বঞ্চিত।
ধ্বংস হবে সৃষ্টি।
--না না মেয়ে ওকি কথা!!
সৃষ্টির মূল্য বোঝ। নইলে তুমি যে পাপিষ্ঠা হবে।
তবুও নাছোড় মেয়ে।
শেষে সূর্য বলল--
তাহলে দাঁড়াও এখানে,-- যাবেনা কোথাও। আমি গিয়ে আসি পৃথিবীর চারিদিকে। যাবার সময়ে নিয়ে যাবো সাথে করে।
বলে সূর্য চলে গেলো আর এলোনা।
মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে, সূর্য স্তবে, সূর্যের আশায়।
দিন যায় রাত যায়।
কেউ তাকে নাড়াতে পারেনা।
ক্রমে মৃত্যু আসে নিয়ে যেতে তাকে।
তার ও চোখে আসে জল।
নিরুপায় তবু মরন সাথি হয়।

কিছু দিন পরে সেই স্থানে দুটি পাতা দিয়ে একটি কুঁড়ি দেখা দেয়।
বড় হয় সেই গাছ।
কলি দেখা যায় গায়ে-
ফুল ফোটে অপরূপ হলদে বরন যেনো মেয়েটার রঙ।
চেয়ে থাকে সে ফুল সূর্যের দিকে ।
হেলে পড়ে সূর্য, ফুল ও পড়ে হেলে।
দিন কাটে দিন ঢলে সূর্যের পানে চেয়ে।
যেনো আজও আছে বামুনের মেয়ে সূর্যের আশে।
সে ফুল দেখে লোকে ,দেখে সবাই, দেখে সূর্য নিঠুর।
ক্রমে তার নাম পড়ে' সূর্যমুখী'।
আজও যে ফোঁটে সূর্যের আশে তার পানে চেয়ে--

ছবিতে সুমন || ক্যামেরায় রনি

শর্মিষ্ঠা চৌধুরী

সূর্যমুখী

বামুনের মেয়ে, রোজ নাইতে যাবেই যাবে বড় দীঘির ঘাটে।
অন্ধকারে পথ ঠাওরে, সূর্য উঠার আগে।
  সূর্যের প্রথম কিরণ চাই তার ভিজে কাপড়ে ভিজে শরীরে  ।
পাল্টাতে পারেনি কেউ আজ অবধি সেই আর্য কন্যার ব্রত।
শীত গ্রীষ্ম বারোমাস।
তারপর সূর্য মন্ত্র জপ-- ওম জবাকুসুমং--
কে যেন কানে ঢেলে দিয়েছিলো সূর্য প্রনামের নিয়ম।
ক্রমে সেই পুজা, প্রেমে পরিনত।
সুর্য স্তবে সূর্য তুষ্ট।
হতে তো হবেই --
একদিন রথে করে নেমে এলো সূর্য।
আধা ভিজে শরীরে চোখ বন্ধ একমনে সূর্য মন্ত্র জপ --
হঠাত জলদগম্ভীর সেই আওয়াজ।
কি চাও মেয়ে!
কেন আমারে কর বিচলিত!
সূর্য কনার মতো ঠিকরে পড়া রঙ নিয়ে ক্ষণিক বিস্মিত ক্ষণিক বিহ্বল মেয়ে ।
উঠলো বলে- তোমাকে চাই--
পতি হও, প্রেমিক হও--
আঁতকে সূর্য উঠলো বলে-
ওকি কথা!!
আমি যে দেবতারে!!
দেবতা আর মানুষের মিলন কি সম্ভব  কখোনো! অন্য বর চাও--
কাঁদলো মেয়ে কাটলো মেয়ে।
তবুও অনড় নিজ কথা খানিতে।
--পায়ে পড়ি ,কথা শোন বাড়াও হাত প্রভু। আমি যে তোমার প্রেয়সী প্রেমের পিয়াসি।
নইলে-- নইলে  করবো এ দেহ ত্যাগ তোমার সামনে। অভিশাপ আর অভিযোগে ছিন্ন ভিন্ন হবে। পৃথিবী হবে আলোক বঞ্চিত।
ধ্বংস হবে সৃষ্টি।
--না না মেয়ে ওকি কথা!!
সৃষ্টির মূল্য বোঝ। নইলে তুমি যে পাপিষ্ঠা হবে।
তবুও নাছোড় মেয়ে।
শেষে সূর্য বলল--
তাহলে দাঁড়াও এখানে,-- যাবেনা কোথাও। আমি গিয়ে আসি পৃথিবীর চারিদিকে। যাবার সময়ে নিয়ে যাবো সাথে করে।
বলে সূর্য চলে গেলো আর এলোনা।
মেয়ে ঠায় দাঁড়িয়ে একমনে, সূর্য স্তবে, সূর্যের আশায়।
দিন যায় রাত যায়।
কেউ তাকে নাড়াতে পারেনা।
ক্রমে মৃত্যু আসে নিয়ে যেতে তাকে।
তার ও চোখে আসে জল।
নিরুপায় তবু মরন সাথি হয়।

কিছু দিন পরে সেই স্থানে দুটি পাতা দিয়ে একটি কুঁড়ি দেখা দেয়।
বড় হয় সেই গাছ।
কলি দেখা যায় গায়ে-
ফুল ফোটে অপরূপ হলদে বরন যেনো মেয়েটার রঙ।
চেয়ে থাকে সে ফুল সূর্যের দিকে ।
হেলে পড়ে সূর্য, ফুল ও পড়ে হেলে।
দিন কাটে দিন ঢলে সূর্যের পানে চেয়ে।
যেনো আজও আছে বামুনের মেয়ে সূর্যের আশে।
সে ফুল দেখে লোকে ,দেখে সবাই, দেখে সূর্য নিঠুর।
ক্রমে তার নাম পড়ে' সূর্যমুখী'।
আজও যে ফোঁটে সূর্যের আশে তার পানে চেয়ে--

অর্পিতা আচার্য

আগমনী

অনেক দূরের গন্ধ লেগে থাকে
তোমার আকাশ বার্তায়
সাদা মেঘের ফেনায়িত ধূম্রজালে ভর দিয়ে
ভোরের ভৈরবী পাঠিয়ে দাও মুঠো ভরে
রাত্রির প্রসব বেদনাক্লান্ত ঝিনুক-গহ্বরে
তারা কিছু মুক্তো বোনে
এই যে আজ রাত ভর জানালায় জাগবে
একটি ম্লান গাছের ডাল ,
সেই ডালে একটি চুপ পাখি , ভীতু পাখি
অন্ধকারের বুনোটে তিরতির কাঁপছে তার
ধূসর ছোট্ট বুক
তারও তো মননে শরৎ ভোর , ডানায় সমুদ্রস্বন

পাঠিয়ে দিয়েছ গুচ্ছ শিউলি সকাল
ইথার তরঙ্গে
পাঠিয়ে দিয়েছ মেঘ ছেঁড়া ছেঁড়া , ঝুলবারান্দায়
বিমগ্ন রাত্রি জুড়ে কালো ক্যানভাসে
বুলিয়ে শুভ্র তুলি আঁকবো তাকে

আমার এই দ্রবীভূত হৃদয় আকাশে

শৌভিক বাগচী

হীরামনি মাহাতো

হীরামনি রাত্রি দিয়ে গা ঘষে , জ্যোৎস্না দিয়ে ধোয় |তার তৈলচিক্কন চুলে অমানিশার পূজা হয় | গায়ে বিদ্যুৎ চমকে ওঠে | চোখে জল আসলে ঘোর  শ্রাবণে বৈষ্ণব মহাজন পদাবলী আঁকে|  হাসলে রতি   হিংসে করে|

হীরামনি এর মরদ দাঁতাল  | রোজ নিজের বিবমিষার মধ্যে নগ্নতাকে সহ্য করে হীরামনি শুধু কোল  ভরার আশায় | আবশ্যিক কর্ম শেষে মরদ ঘুমায় আর হীরামনি নদীর ধারে আসে | রাত্রি তার প্রসাধন , জ্যোৎস্না  তার রূপটান | হীরামনি নদীতে নামে  | বোঝে সে নামলেই নদীটা মরদ হয়ে যায় | নদীর জল তার স্তন ছোঁয় | হীরামনি শীৎকার করে |  তার নগ্নতার প্রতিটা বিন্দু তে জলকণার ফেনায়িত আবেগে সে শোনে মায়ি মায়ি ডাক | হীরামতি বলে , তুর মতো  বেটা হোক বটেক |

দিন যায় , মাস যায় | হীরামনি  গর্ভবতী হয় |  উদর স্ফীত হয় , স্বপ্নও স্ফীত হতে থাকে , ঠিক যেমন করে অনাগত কাল নিয়ে স্ফীত আশায় মানুষের মন স্বাস্থ্যবতী হয় | কিন্তু সব আশাই কি আর অমৃত দেয় ? অমৃতের পশ্চাতে থাকে দুরন্ত হলাহল |  কখন যে কাকে সে নীলে নীল করে দেবে সে বুড়ো বাবা র ও অজানা |  বুড়ো বাবার থানে মানত করেও শেষ রক্ষা হলো না | হীরামনি মৃত সন্তান প্রসব করলো |

অমন পাহাড়ি ঝর্ণা হীরামনি , কবির কাব্য যেন শুকিয়ে নিরস গদ্য হয়ে গেলো | হীরামনির সব রাগ গিয়ে পড়লো নদীটার ওপর | সেদিন রাতে চোখে শ্রাবণ নিয়ে সে দাঁড়ালো নদীর ধারে | সব খুলে নিরাভরণ সে ঝাঁপিয়ে পড়লো নদীর বুকে | তীব্র আক্রোশে জল এ আঘাত করতে করতে বললো , কেনে নাই দিলি , বল তুই , নে নে  আমার সব নে   তু  | নদী খল খল করে উঠলো | পূর্ণিমায় জলের টান ছিল বেশি | পাড়ে ওঠার চেষ্টাই করলো না হীরামনি | ভেসে যেতে লাগলো কোনো এক অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের দিকে | আর কেবলি জলস্রোতে শুনতে লাগলো ডাক , মায়ি মায়ি

মিঠুন দেবনাথ

মা , তুই কার !

গল্পের এক চরিত্রে কেউ কবিতায়  , কেউ গানে , কেউ ছন্দে , কেউ নৃত্যে বা কেউ আড়ম্ভর স্বাচ্ছ্যন্দে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে | আবার অন্যচরিত্রে কেউ চোখের জলে , কেউ ভ্রুন হত্যা করে , কেউ জীবন বলি দিয়ে , কেউ শরীর বিক্রি করে , কেউ লালসার শিকার হয়ে যে যেভাবে পারছে তোকে বরণ করছে |
   —আসলে দূর্গা তুই কেমন ? কী তোর চাহিদা ? কেন আসিস বছর বছর ? পাপের ধ্বংস করে অধর্ম বিনাশে পালক-সংহারক হিসাবে আসিস নাকি দুঃখ জর্জরিত মানব সমাজকে হিংস্রতার চরমতম পর্যায়ে নিয়ে যেতে আসিস !
     শুনলাম তুই নাকি মা শক্তিমাতা ? তবে কোথায় তোর শক্তি ? ও , তুই বুঝি মহিষাসুর মারতে মারতে ক্লান্ত হয়ে গেছিস , তাই আজ মানবাসুরের এত বাড়বাড়ন্ত ? কেন , তোর ত্রিশুল কি ভোঁতা হয়ে গেছে ? নাকি তোর তৃতীয় চোখ অন্ধ হয়ে গেছে ? যদি অন্ধ না ই হয়ে থাকে তবে যারা দিনে দুপুরে কিংবা রাতের অন্ধকারে তোকে কামড়ে হিঁচড়ে খায় , রক্তাক্ত করে তোর আঁচল , তারা কেন তোর অঞ্জলি দেয় ? কেন নিস্ তাদের অঞ্জলি ? তাদের কে কি চিনতে পারিস না তুই ? তোর ত্রিঁশুলে এক খোঁচায় কেন এইসব মানবাসুরদের হৃদপিন্ডটা ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারিস না  ?
    তবে কোথায় ভয় তোর ! কেন দ্বিচারিচতা ? নাকি আজকাল আমাদের অফিসের বাবুদের মতো তুইও ঘুষ খাওয়া শিখে গেছিস ! আকাশ ছোঁয়া উঁচু উঁচু প্যন্ডেল , বড় বড় সোনার গয়না এসব দেখে তুইও বুঝি লোভ সামলাতে পারিস না ! শত পাপ করেও মোটা টাকা চাঁদা দিয়ে দিলে আজ বুঝি তুইও খুব খুশি হয়ে যাস ... তাই না মা !
      আসলে জানিস মা , যখন দেখি টাকার অভাবে উপযুক্ত চাঁদা দিতে পারিনি বলে প্যান্ডেলের বাবুরা ভর্ৎসনা করেন তখন একটু একটু কষ্ট হয় | কিন্তু কাউকে বলি না ! কেন বলি না জানিস মা , মাত্র তিনদিনের জন্য তুই আসিস , তাই তোর যখন তৃতীয় নয়ন অন্ধ সেখানে আমার দুঃখের কথা তোকে কী আর বলব , তুই তো অতিথি ! তোর এখন আর আমায় দেখার বা কষ্ট অনুভব করার হৃদয় বা চোখ কোনোটাই নেই | যদি থাকত , তাহলে আমার লক্ষীটাও একটা জামা কিনতে পারত , আমার গনেশ-কার্তিকরাও একটা প্যান্ট কিনতে পারত ! তাই আমার নিষ্ঠুর হৃদয়ে আক্ষেপের সহিত একটা কথাই বার বার উঁকি মারে..

'মা , তুই কার !'
—তবে , জবাব চাইনি , ইচ্ছে হলে বলে যাস্...
   
          

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...