Saturday, December 28, 2019

অনির্বান রায় গুপ্ত

সকালের গল্প 

সকাল এ বারান্দায় বসে পেপার টা পড়ছিলাম,  তখন বৌমা এসে গরম লিকার চা দিয়ে গেলো র বলে দিলো আমায় তার বাচ্ছাকে আজ স্কুল এ দিয়ে আসতে হবে. আমিও এটাই চেয়েছিলাম মনে মনে.  কারণ ছিল স্কুল এ গেলে অনেকদিন পর আজ মিস ব্যানার্জী এর সাথে দেখা হবে.. আমার সাথে গতকাল ই কথা বলেছিলো ফোন এ. মিস ব্যানার্জী থাকেন পাশের পাড়ার 3 নম্বর গলির 4 নম্বর ফ্লাট এর 2nd  ফ্লোর এ. 
যাই হোক আমার নাতি তাকে নিয়ে স্কুল এ পৌছালাম তখন ঘড়িতে সকাল 7:45 বাজে ওদের pre nurshery school.. প্রায় 2 ঘন্টা সময় পাবো একটু গল্প করার র সাথে গরম চা বিস্কুট তো আছেই গনেশ এর চা এর দোকান এ.  স্কুল এর পাশে মোড়ের মাথায় দোকান টা ছিল.. প্রতিদিন সকাল 8 টা থেকে বেলা 10 টা অবধি আমাদের আড্ডা বসতো.. আজ এই 65 বছর বয়সে আমাদের বুড়ো বুড়ি দের আড্ডা টা একটু আলাদা ছিল. আমাদের আড্ডা তে প্রধান বিষয় ছিল নাটক,  গল্প,  কবিতা র বিষয় নিয়ে চর্চা করা. মাঝে মাঝে আমাদের কেউ আসতে পারতো না শারীরিক কারণে, যাই হোক আজ মিস্টার সেন আর মিস্টার দাস আমি র মিস ব্যানার্জী আছি..  স্কুল শুরু হওয়ার পরে  আমি মিস ব্যানার্জী গনেশ এর চা এর দোকান এ এসে বসলাম,  একটু পুরোনো দিন এর কথা না বললে তোমাদের সবার ই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে জানি তাই একটু খুলেই বলি এবার,  ওর ভালো নাম ছিল মাম্পি সরকার,  র আমার নাম ছিল সাহেব মজুমদার.. কলেজ এ পড়ার সময় থেকে আমাদের প্রেম ছিল.. তখন তো আর এখনকার দিন এর মতো মোবাইল ফোন ছিল না তখন চিঠি আদান প্রদান হতো.  যদি বড়োরা কেউ জেনে যেত তাই লুকিয়ে লুকিয়ে দেখা করতাম আমরা. বাড়িতে ছোট থেকেই শাসন এর মধ্যে বড়ো হয়েছি.  তাও যখন আমাদের একটা ভালোবাসা শুরু হলো আমরা কোনোদিন ও হাত ধরে হাঁটিনি,   যতদূর মনে পরে একদিন গঙ্গার ধরে বসে একসাথে বাদাম ভাজা খেয়েছিলাম. কলেজ জীবনে অংক এ আমার মাথা টা খুব ভালো ছিল.. স্কুল কলেজ এ সবাই আমায় ভালো ছাত্র হিসেবেই জানতো.. আর মাম্পি বাংলায় অনার্স নিয়ে পড়তো তবে হ্যা আর একটা ভালো গুন ছিল ওর,,  ও খুব ভালো ছবি আঁকতে পারতো..  কলেজ জীবন পার করে একটা চাকরি তে জয়েনও করেছিলাম কিন্তু ছোটবেলা থেকে নাটক অভিনয় এর স্বপ্নে বিভোর থেকে চাকরি তে মন বসাতে পারলাম না.  তাই মাম্পি র বাড়ী তে আমাদের সম্পর্ক টা মেনে নিতে চাইছিলো না কেউ ই.. তার একটি কারণ আমি ভালো কিছু কাজ করিনা .. যাই হোক একটা বিসনেস শুরু করলাম আমার এক বন্ধু র সাথে.. প্রথম বছর মোটামুটি কাজ করেছিলাম.. কিন্তু তাতে ছিঁড়ে ভেজেনি.. শেষ মেশ আমাদের বিয়ে টা আর হয়নি,  ক্রমে বহু বছর  কেটে গেছে.  আমিও নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছি ভালো মতো নিজেও বিয়ে করে ছেলে পুলে মানুষ করলাম. তাঁদের কেও ঠিক মতো শিক্ষা  দিয়ে মানুষ করেছি..  আজ দুবছর হলো আমার বড়ো ছেলে বিয়ে করে একটা ছেলে র বাবা হয়েছে র আমার ছোট ছেলে টা সরকারি চাকরি করে ডালহৌসি তে,  আজ বাবা হিসেবে খুব গর্বিত কিন্তু কোনো একটা জায়গায় যেন আজ খুব একা হয়ে গেছি আমি.. আমার ছেলে দুটোর বয়স যখন 12-15 চলছে তখন ই আমার বৌ মারা যায়.. ওদের বড়ো করে তোলা সব কিছুই করেছি আমি একার হাতে.. 
হ্যা এখন একটু মাম্পি র কথা বলি তোমাদের. 
আমার সাথে বিয়ে টা ভেঙে যাওয়ার দু বছরের মধ্যে ও বিয়ে করে একজন সরকারি চাকরি ওয়ালা ছেলে কে.. মাম্পি র বাবা মা এর ও এরাম ইচ্ছে ছিল.. তাঁদের ইচ্ছে তাই পূরণ হয়েছিল  মাম্পি র বিয়ে হলো বেলেঘাটা নিবাসী অরূপ রায় এর সাথে. ছেলে টি ও ডালহৌসি তে চাকরি করতো..  কিন্তু ভাগ্য এর  কি নিদারুন পরিহাস.. আজ মাম্পি র একজন দিদা র ভাগ্য বলে ও আজ নিজের পৃত্তিভূমি তেই নিজের বাড়িতেই থাকে.. বাড়িতে গেলে ওর বর এর ছবি টাঙানো আছে মাম্পি র ছেলে বৌ দুজন এই সরকারি চাকরি করে.. তাই নাতনি কে সারাদিন দেখাশোনা ওই করে.. আজ এই বুড়ো বয়স এ চা এর দোকান এ বসে ছোটবেলা র সেই কথা গুলো মনে পড়ছে  র আমরা দুজন এই মাথায় পাকা চুল র দু একটা দাঁত পরে যাওয়া তোবড়ানো গাল এ হেসে উঠছিলাম ..  হটাৎ আমার মোবাইল ফোন টা বেজে উঠলো,,,,  """" এখন অনেক রাত,  তোমার কাঁধে আমার নিঃস্বাস """"" অনুপম রায় এর এই গান টা আমার খুব প্রিয় ছিল র মাম্পি কে এই গান টা আমি গেয়ে শোনাতাম..  ও আমার মোবাইল এ এই গান টা শুনে আমার দিকে একটু তাকালো.. আমি ফোন এ বলে দিলাম যে হ্যা দাদু ভাই ক্লাস এ  আছে..  আমি নিয়ে আসব ঠিক মতো তুমি চিন্তা করোনা বৌমা.. মাম্পি আমার এই কথা টা শুনে হাসলো আমি কারণ জিজ্ঞাসা করাতে বললো মনে পরে সন্তু ( আমায় ও এই নাম এ ডাকতো ) তুমি আমায় বলেছিলে যে আমায় তোমার কাছে নিয়ে যাবে র তোমার বুক এ মাথা রেখে আমি ঘুমাবো তোমার ভালোবাসায়..  আমি বললাম হ্যা আমার মনে আছে কিন্তু মাম্পি তোমায় আমি এটাও বলেছিলাম যে আমার ভালোবাসা মিথ্যে হওয়ার নয় হয়তো তোমার সাথে বিয়ে হয়নি কিন্তু ভগবানের কি লীলা দেখো আজও আমি আর তুমি পাশাপাশি বসে আছি র নিজেদের দায়িত্ব্য পালন করে যাচ্ছি নিজেদের মতো করে.. 
সত্যি দুনিয়া টা বড়োই অদ্ভুত গো মাম্পি. আজও তোমায় ভালোবাসি,  আজও তোমার হাসি টা আমার কান্না গুলো ভুলিয়ে দেয়..  জানি না আর কিছু.. মাম্পি শুধু আমার হাত এ ওর হাত টা রাখলো.. জীবনে দ্বিতীয়বার তোমার হাত এর ছোঁয়া পেলাম  
বলতে বলতে আমাদের দুজনের চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এসেছিলো..  কিন্তু হটাৎ ই স্কুল এর ঘন্টা বেজে গেলো..  তখন আমরা দুজন এই দুজনের নাতি নাতনি কে নিয়ে বাড়ীর পথ এ প বাড়ালাম..  কিন্তু মাম্পি বাড়ী যাওয়ার আগে একটা চিঠি আমার হাত এ গুঁজে দিলো.. আমি ইতস্তত করে চিঠি খুলে দেখলাম তাতে লেখা আছে তোর নাতি র সাথে আমার নাতনি র বিয়ে টা ফাইনাল করে রাখিস.. আমি চিঠি টা পরে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি ও অটো তে উঠে গেছে.. আমি একটু ওপরে তাকিয়ে আকাশ এর দিকে তাকালাম.. র নিজের মনে মনেই হাসলাম.. জানি না কপাল এ কি আছে ভবিষ্য্যত এ..  শুধু এইটুকুই বললাম ভালো রেখো ভগবান সবাই কে.. 
নাহলে এই বুড়ো বয়স এ এসে আর কি চাইতে পারি নিজের জন্যে.. যাইহোক নাতি কে নিয়ে বাড়ী এসে ক্লান্তি তে  ঘুমিয়ে পড়েছি কারণ আমার খুব জর ছিল.. 
সবাই কে ধন্যবাদ  জানাই  শুভ রাত্রি।

No comments:

Post a Comment

উর্মি সাহা

মন ব্যাথা . বক্রের মত বেঁকে গেছে আমার জিহ্বা৷ আর কথা আসে না! শুনি শেষ প্রার্থনা নয়তো বেজে ওঠা গির্জা ঘণ্টা। তবু দেখি যন্ত্রণা... যদি কোনো হ...